রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের টার্গেট কেন বাংলাদেশ?
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 23, 2020
- বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সন্ত্রাসের রাষ্ট্রীয় তান্ডবটি ইসলামের বিরুদ্ধে
পৃথিবী এখন যুদ্ধময়। ফ্যাসিবাদের নৃশংস যুদ্ধ চলছে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধেও। এ যুদ্ধের কারণগুলো বুঝতে হলে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্রের আন্তর্জাতিক ঘাঁটিগুলিকে অবশ্যই চিনতে হবে। কারণ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুসলিম দেশগুলির রাজনীতি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ আজ আর আভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। সেগুলি বৃহৎ শক্তিবর্গের নিজস্ব বিষয়ও। বুঝতে হবে, কোন দেশই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। বাংলাদেশের ন্যায় দেশগুলিতে বিদেশীদের অর্থ ও অস্ত্রই শুধু আসে না, ষড়যন্ত্রও আসে। দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে কলকাঠি চালানোর জন্য কৌশলী স্ট্রাটেজিস্টগণও আসে। তাছাড়া সমগ্র বিশ্ব জুড়ে চলছে প্রচণ্ড ইসলাম ভীতি। ফলে ইসলামবৈরী শক্তিগুলো বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে তারা নিজ রাডারের বাইরে থাকতে দিবে -সেটিই বা কীরূপে আশা করা যায়? ভারতীয় নেতাগণ তো ঘোষণাই দিয়েছে, বাংলাদেশকে তারা নিজ রাডারের বাইরে যেতে দিতে দিবে না।
তাছাড়া বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর ইসলামবৈরীতা নিয়ে সামান্যতম সংশয় নাই। তাদের নীতি সুস্পষ্ট। তারা মুসলিম জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বা মানবাধিকার নিয়ে ভাবে না। তারা ভাবে নিজেদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ নিয়ে। সেটি নিশ্চিত করতেই মুসলিমদের শক্তিহীন করতে চায়। কারণ, মুসলিমদের শক্তি বাড়লে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাড়ে। রাখালগণ ভেড়ার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে যেমন বড় বড় কুকুর পালে, এরাও তেমন জনগণকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে অধিনত দেশগুলোতে নৃশংস ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিপালন করে। কারণ গণতন্ত্র দিলে জনগণকে বিদেশী আধিপত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অধিকারও দিতে হয়। তখন আধিপত্য বাঁচে না। এজন্যই মুসলিম দেশগুলিতে গণতন্ত্রের মূল শত্রু হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। ডাকাতি করতে যেমন অস্ত্রের সন্ত্রাস লাগে, জনগণের অধিকারের উপর ডাকাতি করতে তেমনি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস লাগে। ভারত সরকারের কাছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কদর এজন্যই অপরিসীম। তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছে মিশরের জেনারেল আব্দুল ফাতাহ সিসি, সৌদি আরবের মুহম্মদ বিন সালমান এবং আমিরাতের মুহম্মদ বিন যায়েদের মত শাসকদের কদর অত্যাধিক।
আরেক বাস্তবতা হলো, যাদের গায়ে ইসলামের গন্ধ আছে -তাদেরকে কোন মুসলিম দেশের শাসক রূপে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রগণ রাজী নয়। ইসলামপন্থি মনে হলেই তাদের গায়ে তারা সন্ত্রাসের লেবেল লাগিয়ে দেয়। লেবলটি লাগানোর পর তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা, অপসারণের পর হত্যা এবং দলীয় নেতাকর্মীকে নির্মূল করার কাজকে জায়েজ করে নেয়। অবিকল সেটিই করা হয়েছে মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডক্টর মহম্মদ মুরসীর সাথে। ড. মুরসী কোন কালেই সন্ত্রাসী ছিলেন না। সন্ত্রাসের রাজনীতিকে তিনি সমর্থন করেছেন –সে প্রমাণও নাই। তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সন্মানিত প্রফেসর। ছিলেন হাফেজে কোর’আন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জনগণের ভোটে। কিন্তু তাঁকে যেমন মিশরের জেনারেলদের ভাল লাগেনি, তেমনি ভাল লাগেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যদেশগুলির শাসকদের। কারণ, তিনি ছিলেন মিশরের সর্ববৃহৎ ইসলামী দল ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সদস্য। সে পরিচয়ের কারণে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ করা, অপসারণের পর কারারুদ্ধ করা এবং জেলের মধ্যে তাঁকে হত্যা করা –এ সবই জায়েজ করে নেয়া হয়। এখন চলছে তাঁর দলকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র। আর এসবই চলছে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের সমর্থণ ও সাহায্য নিয়ে। দেশে দেশে ইসলাম নির্মূলের যুদ্ধে এটিই হলো আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনের স্ট্রাটেজী।
পাাশ্চাত্যে নেতাদের তীব্র আক্রোশটি শুধু ড. মুরসী ও তার দল ইখওয়ানুল মুসলিমীনের বিরুদ্ধে নয়। সেটি মিশরের জনগণের বিরুদ্ধেও। জনগণের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কেন মুরসীর মত একজন ইসলামপন্থিকে নির্বাচিত করলো? তাদের কথা, নির্বাচন যতই হোক, স্বীকৃতি পেতে হলে একমাত্র তাদের পছন্দের লোককে নির্বাচিত করতে হবে। ড. মুরসী যে তাদের পছন্দের লোক নয়, সেটি তারা গোপন রাখেনি। ফলে তাকে ভোট দেয়াই অপরাধ গণ্য হচ্ছে। সে অপরাধেরই শাস্তি পেতে হচ্ছে সাধরণ জনগণকে। তারা আজ নৃশংস রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার। ড. মুরসীর বিরুদ্ধে পাাশ্চাত্যে নেতাদের বৈরী মনোভাবটি মিশরের সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল আবুল ফাতাহ সিসিকে নিশ্চয়ই জানানোও হয়েছিল। তাদের সমর্থণ ও সাহায্য নিয়েই জেনারেল সিসি প্রেসিডেন্ট মুরসীর বিরুদ্ধে সামরিক ক্যু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল পাশ্চাত্য শক্তি সে ক্যু’কে শুধু সমর্থনই করেনি, সহায়তাও দিয়েছে। জেনারেল সিসির সৈন্যরা কায়রোর রাবা আল-আদাবিয়া ময়দানে প্রায় ১২ শত নিরীহ ও নিরস্ত্র নারী-পুরুষকে হত্যা করে। মুরসীর অপসারণের বিরুদ্ধে জনগণ সেখানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিল। মিশরের ইতিহাসে সেটি ছিল নৃশংসতম গণহত্যা। কিন্তু পাশ্চাত্যের দেশগুলি সে গণহত্যাকেও নিন্দা করেনি। ড. মুরসির মত ইসলামপন্থিকে নির্বাচিত করার জন্য যেন এটিই ছিল জনগণের পাওনা শাস্তি্। একই কারণে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে হিফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের উপর চালানো গণহত্যাকেও পাশ্চাত্যের দেশগুলি নিন্দা করেনি। ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার পর জেনারেল সিসি ড. মুরসীর দল ইখওয়ানুল মুসলিমকে সন্ত্রাসী দল রূপে ঘোষণা দেয় এবং দলটির নির্মূলে নামে। নির্মূলের লক্ষ্যে শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে এবং বহু হাজারকে কারারুদ্ধ করেছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলি জেনারেল সিসির সে নৃশংস নির্মূলকেও সমর্থন দিচ্ছে। ফলে সিসি সরকারের সে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তাদের কাছে আদৌ কোন অপরাধ রূপে গণ্য হচ্ছে না। বরং দেশে দেশে ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে তাদের নিজস্ব যুদ্ধে এ খুনিদেরকে পার্টনার রূপে গ্রহণ করছে।
মিশরে যেটি ঘটেছে সেটিই ঘটেছে আলজেরিয়াতে। ১৯৯২ সালে দেশটিতে নির্বাচন হচ্ছিল। নির্বাচনের প্রথম পর্বে ইসলামপন্থিদের বিপুল ভাবে বিজয়ী হতে দেখে সামরিক বাহিনী দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন আর হতে দেয়নি। সামরিক ক্যু করে ক্ষমতা নিজ হাতে নিয়ে নেয়। সে ক্যু’কে সমর্থন করে পাশ্চাত্যের দেশগুলি। ক্ষমতা হাতে পেয়েই ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে নির্মূল অভিযান শুরু করে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারি ইসলামপন্থিদের চিত্রিত করা হয় সন্ত্রাসী রূপে। তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় গণহত্যা। লক্ষাধিক মানুষকে তারা হত্যা করে। সামরিক বাহিনীর সে নৃশংসতাকেও পাশ্চাত্য দেশগুলি সমর্থণ করে। ২০০৬ সালে একই অবস্থা হয় ফিলিস্তিনে। নির্বাচনে হামাস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। কিন্তু হামাসের সে বিজয় যেমন ইসরাইলের কাছে ভাল লাগেনি, তেমনি ভাল লাগেনি ইসরাইলের পৃষ্টপোষক পাশ্চাত্য দেশগুলির। কারণ হামাসের গায়েও ইসলামের গন্ধ ছিল। ফলে বিজয়ী হলেও হামাসকে ক্ষমতায় যেতে দেয়া হয়নি। একই কারণে তুরস্কের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব আর্দোগানকে মেনে নিতেও পাশ্চাত্য দেশগুলির প্রচুর আপত্তি। বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধেও। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি মুসলিম দেশগুলিকে উসমানিয়া খেলাফতে ফিরিয়ে নিতে চান। তাঁর বিরুদ্ধেও সামরিক বাহিনী দিয়ে ক্যু করার চেষ্টা হয়েছে। রুঢ় বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের অবস্থান এরূপ ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাস-পীড়িত পৃথিবীতেই। ইসলামের শত্রুপক্ষের স্ট্রাটেজী বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ভিন্নতর নয়। তাই বাংলাদেশের দুঃসহ রাজনীতির বর্তমান নৃশংসতাগুলো বুঝতে হলে এ বাস্তবতাগুলোকে অবশ্যই নজরে রাখতে হবে।
টার্গেট কেন বাংলাদেশ?
ইতিহাসের জ্বলন্ত শিক্ষা হলো, মুসলিম হওয়ার অর্থই বিশ্বের তাবত শয়তানী শক্তির টার্গেট হওয়া। সেটি নবী-রাসূলদের জামানা থেকেই। ইসলামের প্রতিরোধে মুসলিম দেশগুলিতে জালেম শাসকগুলিকে প্রতিপালন করছে তো তারাই। সভ্যতর সমাজ নির্মাণের পথে তারাই বড় বাধা। তাই প্রতিটি মুসলিম দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চর্চার সবচেয়ে বড় দুষমন শুধু দেশী ফ্যাসিস্টগণ নয়, বরং সহযোগিতা দানকারি পাশ্চাত্যের দেশগুলিও। কারণ, ইসলামের বিজয়কে তারা ভয় পায়। ইসলামের জাগরণকে তারা দেখে নিজেদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দী সভ্যতার উত্থান রূপে। তেমন একটি ইসলাম বিরোধী চেতনার শিকার হলো আজকের বাংলাদেশ ও তার ১৭ কোটি মুসলিম। বাংলাদেশে চলছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নৃশংস দুঃশাসন। প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে গুম, খুন, ফাঁসি, সন্ত্রাস, চুরিডাকাতি ও ভোট-ডাকাতির নিরেট অসভ্যতা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য দেশগুলির কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে দেশটিতে ইসলামের জাগরণের বিরুদ্ধে। অতীতে অভিযোগ উঠেছিল যখন জামায়াতে ইসলামের দুই জন নেতাকে খালেদা জিয়ার ক্যাবিনেটে মন্ত্রী রূপে নেয়া হয়। তখন পাশ্চাত্য নেতাদের উপর যেন আসমান ভেঙ্গে পড়ে। ক্ষমতার করিডোরে ইসলামপন্থিদের উপস্থিতি তাদের কাছে যে কতটা অগ্রহণযোগ্য -সেটি ফুটে উঠে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে। নিন্মে তার উদাহরণ দেয়া যাক। বিষয়টি আজকের দুঃসহ অবস্থা বুঝতেও সহায়ক হবে।
২০০৩ সালের ২ জুলাই দৈনিক গার্ডিয়ান বাংলাদেশের উপর জনৈক সাংবাদিক জন ভিডলের লেখা একটি প্রতিবেদন ছাপে। প্রতিবেদনটির সারকথা হলো, এক). বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে। তারা শিক্ষা, বিচার, আইন, চিকিৎসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও নানা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অনুপ্রবেশ করছে। এমনকি দুইটি মন্ত্রনালয়ের উপরও দখল জমিয়েছে। দুই). ক্ষমতাসীন দলের কর্মী ও মৌলবাদীরা সংখ্যালঘু মহিলাদের ধর্ষণ করছে ও তাদের উপর নানা ভাবে নির্যাতন করছে। তিন). প্রাণ বাঁচাতে সংখ্যালঘুরা দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ী জমাচ্ছে। অভিযোগের সাথে চারটি খবরও ছেপেছে। প্রথমটি পার্বা দেলুয়া নামক গ্রামে জনৈক পূর্ণীমা রাণীর উপর গণধর্ষণের খবর। বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছিল ১৮ মাস আগে। দ্বিতীয়টি ফাহিনজানা নামক গ্রামে ২০০ জন মৌলবাদীর দ্বারা ১০টি খৃষ্টান বাড়ী-লুন্ঠন। তৃতীয়টি ঢাকার অদূরে কামালপুরে কতিপয় গুন্ডা কতৃক অর্থের দাবীতে খৃষ্টানদের মারধর। চতুর্থটি দেউতলা বাজারে হিন্দুদের দেশত্যাগে ভীতিপ্রদর্শন। কোন জেলায় বা কোন থানায় পার্বা দেলুয়া ও ফাহিনজানা গ্রাম বা কোথায় সে দেউতলা বাজার -রিপোর্টে সে কথা উল্লেখ করা হয়নি। শেষোক্ত তিনটি ঘটনার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়নি কোন দিন, সন ও তারিখ। ফলে সাংবাদিকতার জন্য যেগুলো অতিশয় জরুরী সেগুলিও পূরণ করা হয়নি। ফলে অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে এ রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে তদন্তের রাস্তাও খোলা রাখা হয়নি।
অভিযোগ আনা হয়েছে, গত দুই বছরে হাজার হাজার সংখ্যালঘু বাংলাদেশী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে গেছে। এতে নাকি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং নাটকীয় ভাবে বেড়েছে মুসলিম জনসংখ্যা। এর পক্ষে তিনি ঢাকা স্ট্যাটিসটিক্সের কথা বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কি সে ঢাকা স্ট্যাটিসটিক্স? বাংলাদেশে এমন কিছুর অস্তিত্ব আছে কি? জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও হ্রাস নিয়ে নির্ভরযোগ্য হিসাব দিয়ে থাকে প্রতি ১০ বছর পর পর অনুষ্ঠিত দেশের জনসংখ্যা গণনা বা সেন্সাস। বিগত সেন্সাসে সংখ্যালঘু হ্রাসের এমন বিষয় ধরা পড়েনি যা জন ভিডল বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এমনকি ভারত থেকেও পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ হিসাবে বলেছেন, ভারত নাকি তেমন তথ্য প্রকাশ করে না। এটিও কি বিশ্বাস যোগ্য? যে ভারত মুসলমানদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করার জন্য সদা ব্যস্ত এবং ফুঁলিয়ে ফাঁফিয়ে নানা তথ্য প্রায়ই প্রকাশ করে থাকে, তারা এমন বিপুল হিন্দু জনসংখ্যা স্থানান্তরের কথা কেন বলবে না যার জন্য বাংলাদেশ হিন্দু শূণ্য হতে যাচ্ছে?
জন ভিডলে বৃটিশ সরকারকেও তিরস্কার করেছেন। সেটির কারণ, বাংলাদেশকে রাজনৈতিক নিপীড়নমূক্ত দেশরূপে বৃটিশ সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা। লক্ষনীয় হলো, বাংলাদেশের এ সুনাম আওয়ামী সরকারের আমলে ছিল না। বরং আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। মানুষ জেল-জুলুম, হত্যা ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। সে আওয়ামী সন্ত্রাস ও নির্যাতন থেকে বাঁচাতে বহু বাংলাদেশীকে বৃটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বর্তমানে বদলে যাওয়ায় বৃটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, আর কোন বাংলাদেশীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হবে না। বাংলাদেশের এটি এক বিরাট অর্জন, কিন্তু আওয়ামী প্রতিপক্ষ সেটিকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারছে না। সেটিরও প্রকাশ ঘটেছে এ নিবন্ধে।
ষড়যন্ত্র ইসলামকে বদনাম করায়
এ নিয়ে দ্বিমত নেই যে সন্ত্রাস বাংলাদেশের প্রধানতম সমস্যা। প্রতিটি নাগরিক সন্ত্রাসের হাতে জিম্মি। কিন্তু প্রচন্ড আপত্তি রয়েছে গার্ডিয়ান যে ভাবে সেটিকে চিত্রিত করেছে তা নিয়ে। সন্ত্রাসীরা সর্বার্থেই দূর্বৃত্ত। ধর্ম নিয়ে তারা বাচবিচার করে না, তাদের লক্ষ্য এলাকায় প্রতিপত্তি, অর্থলাভ ও নারী-সম্ভোগ। হিংস্র পশু যেমন মানুষের ধর্ম দেখে আক্রমন করে না, এরাও তেমনি হিন্দু মুসলিম বাছবিচার করে হানা দেয় না। অথচ গার্ডিয়ানের সংবাদদাতা এসব দূর্বৃত্তদের উপরও একটি ধর্মীয় পরিচয় এঁটে দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের ইসলামী মৌলবাদী বলে চিত্রিত করেছেন। সন্ত্রাসের অপরাধে এ অবধি বহু মানুষ বাংলাদেশের আদালতে দন্ডিতও হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ক’জন ইসলামী দলের সদস্য বা মৌলবাদী সে তথ্য তিনি দেননি। সন্ত্রাসের কবলে প্রতিবছর যে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে তাদেরই বা ক’জন সংঘালঘু? বরং সংখ্যালঘুদের বেছে বেছে যে দেশে নির্মূল করা হচ্ছে ও তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে সেটি বাংলাদেশ নয়, বরং ভারত। অথচ সে তথ্য তিনি তার নিবন্ধে উল্লেখ করেননি। গার্ডিয়ান সংবাদদাতার এ রিপোর্টকে শুধু অপপ্রচার বা পক্ষপাতদুষ্টতা বলে ভূল হবে, বরং এটি জঘন্য ষড়যন্ত্র। গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জনকন্ঠ সম্পাদক তোয়াব খানের নাম নিয়েছেন। আরো যাদের নাম নিয়েছেন তারা হলেন আওয়ামী ঘরানার অতি পরিচিত বুদ্ধিজীবী এবং সাউথ-ইস্ট এশিয়া ইউনিয়ন এ্যাগেনেষ্ট ফান্ডামেন্টালিজমের সভাপতি কবির চৌধূরী, ’হটলাইন বাংলাদেশ’এর পরিচালক রোজালিন কোষ্টা এবং আওয়ামী উলামা লীগ নেতা আব্দুল আওয়াল।
নিজের বক্তব্য প্রমাণ করতে জন ভিডাল যেসব সাক্ষীসাবুদ হাজির করেছেন তারা সবাই পক্ষপাত দুষ্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে এরা একটি বিশেষ মহলের চিহ্নিত ব্যক্তি। কোন আদালতে এমন পক্ষপাত দুষ্ট ব্যক্তিদের মতামত গৃহীত হতে পারে না। পানি ঘোলা করে মাছ ধরার খায়েশ পূরণ করতে আওয়ামী লীগ এ সব মত্লববাজ ব্যক্তিদের ময়দানে নামাবে সেটিই স্বাভাবিক। এ লক্ষেই গড়ে তোলা হয়েছে বিদেশী সাংবাদিকের সাথে এ আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের যোগসাজেশ। বিগত নির্বাচনকে অগ্রহনযোগ্য করার লক্ষ্যেও এ মহলটি বাংলার বদলে ইংরাজীতে বই লিখে বিদেশীদের কাছে বিতরনের ব্যবস্থা করেছিল। ফলে তাদের রাজনীতিতে বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে বিদেশী প্রভূদের গুরুত্ব যে অধিক সেটি কি প্রমাণিত হয় না? একটি দেশের বিরুদ্ধে এটি কি কম ষড়যন্ত্র? অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারদলীয় কর্মীদের দ্বারা ধর্ষণে সেঞ্চুরির উৎসব হয়েছে, থানার অভ্যন্তরে নারী ধর্ষিত ও খুন হয়েছে, রাজপথে নারীকে বিবস্ত্র করা হয়েছে। মসজিদে, মাদ্রাসায় এবং পত্রিকা অফিসে হামলা হয়েছে। ফেনীর জয়নাল হাজারীদের মত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়িয়েছি। জনসভায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা একটির বদলে দশটি লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। লাঠি দেখানো হয়েছে আদালতকে। সিরাজ সিকদারের মত জেলবন্দীকে হত্যা করে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে আওয়ামী নেতা শেখ মুজিব বলেছিলেন, ”কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’ হাজার হাজার বিরোধী কর্মীদের হত্যা করতে রক্ষী বাহিনী নামানো হয়েছে। এ সবই তো সন্ত্রাসের ইতিহাস। এবং হয়েছে আওয়ামী নেতাদের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে। বাংলাদেশ জুড়ে আজ যে সন্ত্রাসের আধিপত্য সেটির শুরু হয়েছিলতো এভাবেই।
চেতনায় ইসলাম ভীতি
বাংলাদেশে সন্ত্রাসের শিকড় এতই গভীরে পৌছেছে যে অতীতে সেনাবাহিনী নামিয়েও নির্মূল করা যায়নি। সন্ত্রাসীদের হাতে বহু মানুষ প্রতিনিয়ত আহত ও নিহত হচ্ছে। ধর্ষিত হচ্ছে নারী। এ সন্ত্রাসের শিকার যেমন মুসলিমগণ হচ্ছে তেমনি হচ্ছে অমুসলমানরাও। তবে অধিকাংশই যে মুসলিম তা নিয়ে সন্দেহ নাই। কিন্তু সে সত্যটি গার্ডিয়ান ছাপেনি। সাংবাদিকের আসল মতলব তাই দেশের আইনশৃঙ্খলা বা জননিরাপত্তা নয়। মূল উদ্দেশ্য অন্যত্র। নিবন্ধের বাঁকি অংশে তা প্রকাশ পেয়েছে। আর সেটি হলো ইসলাম ভীতি এবং সে ভীতি থেকে প্রসুত ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এরও গভীরে রয়েছে ইসলামের উত্থান রোধকল্পে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র।
সংবাদদাতা জন ভিডাল ইসলামপন্থি একটি দলের নাম নিয়ে লিখেছেন যে দলটি বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। তাদের কাছে সে দলটি হলো জামায়াতে ইসলামী। দলটির অগ্রগতিকে তিনি দেখেছেন শরিয়ত প্রতিষ্ঠার পূর্বাভাস রূপে। এ ইসলামি দলটির অগ্রগতিকে জন ভিডাল সাংবাদিক-সূলভ নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে দেখেননি, দেখেছেন ইসলামের শত্রুর দৃষ্টি নিয়ে। ইসলামের বিরুদ্ধে তিনি তার নিজ মনের বিষাক্ত বিষের প্রকাশ ঘটিয়েছেন একজন বাংলাদেশী আইনজ্ঞের জবান দিয়ে। উক্ত আইনজ্ঞ নাকি বলেছেন, ”দেশে একটি নিরব বিপ্লব হতে চলেছে। আমরা অন্ধকার যুগের দিকে ফিরে যাচ্ছি।” অর্থ দাঁড়ায়, ইসলামের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত আগ্রহকে তিনি দেখেছেন আদিম বর্বরতার প্রতি আগ্রহরূপে। ইসলামের প্রতি এরূপ শত্রুতা-সূলভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একজন সাংবাদিক কি কখনও নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ট হতে পারে? জন ভিডালের এখানেই ব্যর্থতা। তিনি আভির্ভূত হয়েছেন ইসলামের প্রতিপক্ষ এক রাজনৈতিক কর্মী রূপে। ভিড়ে গেছেন তোওয়াব খান ও কবির চৌধুরিদের দলে। তার এ নিবদ্ধের মূল সূত্র যে তারাই সেটিও তিনি গোপন রাখেননি। সাংবাদিকতার লেবাসে তিনি কলম ধরেছেন বাংলাদেশে ইসলামের সম্ভাব্য উত্থান রুখতে। ফলে এ নিবন্ধের লক্ষ্য, মার্কিন নেতৃত্বে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে যে ক্রসেড শুরু হয়েছে সে ক্রসেডে বাংলাদেশকেও একটি টার্গেট রাষ্ট্র রূপে চিহ্নিত করা। তিনি বৃটিশ সরকারকে উস্কিয়েছেন যেন বিষয়টিকে গুরুতর বিষয় রূপে গ্রহণ করে। লক্ষণীয় যে এ বিষয়ে তার ও আওয়ামী লীগের লক্ষ্য অভিন্ন। ইসলামের বিরুদ্ধে এ ক্রুসেডে আওয়ামী লীগ মার্কিনীদের ঘনিষ্ট মিত্র হতে যে আগ্রহী তা জানিয়ে পুস্তক প্রকাশ করে মার্কিন প্রশাসনের কাছে পৌঁছিয়েছে। তারা জানিয়েছে বাংলাদেশ তালেবান কবলিত হচ্ছে। সেটি রুখতে হলে তাদের সহয়তা ছাড়া উপায় নেই এবং সে সহয়তা তারা দিতেও প্রস্তুত। তবে সে জন্য তাদের দাবী তাদেরকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। ক্ষমতার বাইরে থেকেও কি করে ইসলামের উত্থানরোধে পাশ্চাত্যের সহায়তা করা যায় সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আওয়ামী বুদ্ধিজীবী বাহিনী কবির চৌধুরির নেতৃত্বে ’সাউথ-ইস্ট এশিয়া ইউনিয়ন এ্যাগেনষ্ট ফান্ডামেন্টালিজম’ নামে এনজিও খুলে ময়দানে নেমেছেন। ফলে জন ভিডল যে প্রজেক্ট নিয়ে সাংবাদিকতা করছেন সেটি তার একার নয়। বরং এ রিপোর্টে যেটি প্রকাশ পেয়েছে সেটি হলো আন্তর্জাতিক ইসলামের শত্রু মহলের সাথে তাদের কোয়ালিশনের বিষয়টি। আর এ কারণেই হংকংয়ের “ফার ইষ্টার্ন ইকনমিষ্ট রিভিউ” এবং লন্ডনের গার্ডিয়ান বা বিভিন্ন ভারতীয় পত্রিকায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে নিবন্ধগুলো ছাপা হয় তার সাথে এ বাহিনীর ঘনিষ্ট যোগসূত্র লক্ষ্য করা যায়।
জন ভিডাল তার নিবন্ধে জামায়াতে ইসলামের দুই জনকে কেন মন্ত্রী করা হলো সেটিকে আক্রমনের বিষয়ে পরিণত করেছেন। অথচ জামায়াতের দুই জন মন্ত্রী হয়েছেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, কোন সামরিক বা স্বৈরাচারি সরকারের হাত ধরে নয়। এটি নিছক এ কারণে যে বিগত নির্বাচনে এ দলটি গণরায় অর্জন করেছিল। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি জন ভিডালের সামান্যতম আগ্রহ থাকলে এটি কি আদৌ সমালোচনার বিষয় হতো? জামায়াত থেকে স্রেফ দুই জন কেন, সমগ্র মন্ত্রী পরিষদই গঠিত হতে পারে যদি সে লক্ষ্যে তারা প্রয়োজনীয জনসমর্থন পায়। কিন্ত দুই জন মন্ত্রীকে যারা কবুল করতে পারছে না, তারা কি সেটি মেনে নিবে? অথচ যে কোন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হক রয়েছে নিজ বিশ্বাস ও আশা-আকাংখা নিয়ে বেড়ে উঠার। সে হক তো বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরও। কিন্তু সেটি দেশী ও বিদেশী ইসলাম বিরোধী মহল মানতে রাজি নয়।
মানতে রাজী নয় “রুল অব দি গেম”
এটা ঠিক, বাংলাদেশের মানুষ ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। এবং সেটি শুধু বাংলাদেশের ব্যাপার নয়, একই চিত্র সমগ্র মুসলিম বিশ্বজুড়ে। এটি সুনিশ্চিত যে, ইসলাম-প্রেমী মানুষের ক্রমর্বধমান গণজোয়ারে ধর্মে অঙ্গিকারহীন সেক্যুলার গোষ্টি ভেসে যাবে এবং প্রতিটি মুসলিম দেশই তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কথা হলো, একটি জনগোষ্ঠী এ ভাবে ধর্মে আকৃষ্ট হবে এবং নিজেদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তার প্রতিফলন ঘটাবে -সেটি তো তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার। সে অধিকার তো জন্মগত। পাশ্চাত্যের মানুষ যদি মদ্যপান, ব্যভিচার, উলঙ্গতা ও সমকামিতার ন্যায় আদিম পাপাচার নিয়ে বাঁচাকে নিজেদের মৌলিক অধিকার ভাবে তবে মুসলমানদেরও অধিকার রয়েছে ইসলামী বিশ্বাস ও তার শরিয়ত-সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচার। এটিই হতে হবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির “রুল অব দি গেম” তথা মূলনীতি। কিন্তু সমস্যা হলো পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহ সে মূল নীতি মানতে রাজি নয়। তারা শুধু নিজ পণ্যের বাজারই চায় না, চায় তাদের আদর্শ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বাজারও। তারা তো সেটিই চায় -যা তাদের সামগ্রিক আধিপত্য বিস্তারে সহায়ক। এজন্য শুধু গণতন্ত্র হত্যাই নয়, গণহত্যাও চাপিয়ে দিতে রাজি। ইরাক, আফগানিস্তান, মিশর, ফিলিস্তিন ও কাশ্মিরে নিরাপরাধ মানুষ হত্যাকে একারণেই এরা স্পোর্টসে পরিণত করেছে। আলজেরিয়ার নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের বিজয়কে রুখতে এজন্যই এরা একটি বর্বর সামারিক অভ্যূত্থাণকে উস্কিয়ে দিয়েছিল। প্রশ্ন হলো, এরূপ দুশমনি নিয়ে কি গণতন্ত্রের বন্ধূ হতে পারে?
বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের ক্যাবিনেটি ইসলামপন্থি দুইজন মন্ত্রী নিয়ে জন ভিডলের যে আপত্তি -তার মূল কারণ তো ইসলামবৈরী মানসিকতা। এরূপ মানসিকতার কারণেই এসব মন্ত্রীদের যখন প্রহসনের বিচারে ফাঁসীতে চড়ানো হয়, পাশ্চাত্যে তখন কোন প্রতিবাদ উঠেনি। বিশ্ব এখন একটি উত্তপ্ত রণাঙ্গণ। ইসলামের শত্রু শক্তি এ যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে অনেক আগেই। বহু লক্ষ মুসলিম নর-নারী এ যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। বহু নগর-বন্দর বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রতিটি যুদ্ধেই শত্রুকে চিনতে হয়। এক্ষেত্রে অজ্ঞতা চলে না। কারা শত্রু –সে বিষয়টি এখন পরিস্কার। গার্ডিয়ানে জন ভিডল যেটি লিখেছেন সেটি তার একার কথা নয়। মর্কিন আধিপত্যবাদীদের বক্তব্যকেই তিনি তুলে ধরেছেন মাত্র। লিখেছেনও আধিপত্যবাদী এ্যারোগ্যান্স বা উদ্ধতা নিয়ে। বাংলাদেশে কে মন্ত্রী হবার যোগ্য সে বিষয়ে জন ভিডলে যেভাবে নাক গলিয়েছেন সেটি সে এ্যারোগ্যান্সেরই প্রকাশ। মন্ত্রী কাদেরকে করা যাবে বা যাবে না সেটিই শুধু নয়, বাংলাদেশের ন্যায় দেশে কি রূপ আইন হবে, নারীরা কি ভাবে পোশাক পড়বে, বাচ্চাদের কি শেখানো হবে সেটিও তারা নির্ধারণ করতে চায়। এরূপ উদ্ধতা চাকর-বাকরের সামনে চলে। ভদ্র ও আত্মসন্মানী ব্যক্তির সাথেও কি চলে?
সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ ও অনিবার্য সংঘাত
মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন এখন আর শুধু দেশ দখল নিয়ে খুশি নয়। খুশি নয় ম্যাগডোনাল্ড বা কোকাকোলার বাজারীকরণ নিয়ে। তাদের দাবী তাদের সংস্কৃতি, রূচিরোধ, মূল্যবোধ ও পাচাচারকে বিনা প্রতিবাদে গ্রহন করতে হবে। তাদের রুচী, আইনকানুন ও সংস্কৃতির বিপরীত যা কিছু তা স্বয়ং মহান আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে আসলেও বা নবীদের সূন্নত হলেও -সেটিকে তারা বর্বরতা বলবে। সে সাথে সেগুলি পরিহারের দাবীও তুলবে। যেমনটি করছে ইসলামি শিক্ষা ও শরিয়তের বিরূদ্ধে। আফগানিস্তান, ইরাকসহ যেখানেই তারা দখল জমিয়েছে -সেখানেই শরিয়তের শাসনকে অসম্ভব করে তুলছে। এমন কি সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ চাইলেও। আফগানিস্তান দখলের পর তারা সে বিষয়টি অতি স্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছে। অন্যদের নিয়ে এরূপ বলা ও নির্দেশ দেয়াকে তারা মনে করে তাদের নাগরিক অধিকার। এবং সেগুলিকে মেনে না নেয়াকে বলে সন্ত্রাস। যুদ্ধ যে মূল্যবোধ ও বিচার বোধকে কতটা বিষাক্ত করতে পারে -এ হলো তার নমুনা।
পাশ্চাত্য শুধূ তাদের সামরিক আধিপত্যকেই বিশ্বময় করতে চায় না, বিশ্বময় করতে চায় তাদের মদ্যপান, উলঙ্গতা, ব্যাভিচার ও সমকামিতার ন্যায় নানাবিধ পাপাচারকেও। এগুলি প্রতিষ্ঠা দিতে চায় তথাকথিত গ্লোবাল ভিলিজের সংস্কৃতি রূপে। চায়, সে গুলিকে বিশ্ববাসীর মূল্যবোধে পরিণত করতে। লক্ষ্যনীয় হলো, পাশ্চাত্যের এ ঔদ্ধতাপূর্ণ দাবীকে মেনে নেওয়ার জন্য প্রতিটি মুসলিম দেশ তাঁবেদার ও দাস-চেতনার কিছু মানুষও পেয়েছে। এরাই এনজিও বা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে মার্কিন সেবাদাস রুপে কাজও শুরু করেছে। অপর দিকে যারাই এ মার্কিন এ্যারোগ্যান্সের বিরুদ্ধে মাথা তুলছে তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়ীত করে তাদের বিরুদ্ধে সকল বিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে। অপর দিকে লাঠিয়াল রূপে মাঠে নামিয়েছে হামিদ কারজাইদের মত নব্য মীরজাফরদের। ফলে শুধু আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন বা আলজেরিয়াই নয়, প্রতিটি মুসলিম দেশের রাজিনীতি এদের কারণে সংঘাতপূর্ণ হতে চলেছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে সামনে এগুনোই তারা অসম্ভব করেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে ষড়যন্ত্র নিছক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশটির সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও ধর্মীয় ঈমান-আক্বিদার বিরুদ্ধেও।
তবে এ ষড়যন্ত্রের শুরু আজ নয়, বরং দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই। ষড়যন্ত্রটি শুধু একটি মাত্র ক্ষেত্রেও নয়। বরং সর্ব ক্ষেত্রে। এবং জন ভিডল এ কাজে একা নন। ইসলাম বিরোধী স্রামাজ্যবাদী পাশ্চাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানতম শত্রু হলো ভারত। ১৯৭১ এ বাংলাদেশের সৃষ্টিতে ভারত এ জন্য যুদ্ধ করেনি যে তার পূর্ব সীমান্তে পারমানবিক শক্তিধর আরেক পাকিস্তানের উদ্ভব হবে। একাত্তরের যুদ্ধটি ছিল ভারতের একান্তই নিজস্ব যুদ্ধ যা ১৯৬৫’য়ে অসম্পূর্ণ ছিল। এটি ছিল বাংলার ভূমিতে ভারতের occupational war. এ যুদ্ধকে বাংলাদেশীদের জন্য liberation war রূপে দেখার কোন হেতু নাই। ভারতসেবী বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ যে মুক্তিযোদ্ধাদের ময়দানে নামায় তারা পূর্ব পাকিস্তানের একটি জেলাকেও স্বাধীন করতে পারিনি। তাদের কাজটি ছিল, পাশে দাঁড়িয়ে নিছক ভারতকে বিজয়ী করা।
দলীতকরণের প্রক্রিয়া এবার বাংলাদেশে
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের ষড়যন্ত্রকে বুঝতে হলে হিন্দু আধিপত্যবাদের অতীত ইতিহাসকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ সে অতীতেই প্রথীত রয়েছে ভারতীয ষড়যন্ত্রের মূল শিকড়। ইতিহাসের নিরেট সত্য হলো, পূর্ব বাংলার মুসলিম জীবনে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত শুরু হয় ১৯৪৭’য়ে। বৃটিশের ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও আসন্ন অখন্ড ভারতের শৃঙ্খল ভেঙ্গে তখন তারা যাত্রা শুরু করে। তবে সে শৃঙ্খলমুক্তি ভারতের ২০ কোটি মুসলিমের জীবনি আজও ঘটেনি। ফলে ১৯৪৭’য়ের স্বাধীনতার গুরুত্ব বুঝতে হলে অধুনা ভারতের ২০ কোটি মুসলিমের অবস্থার দিকে তাকাতে হবে। ভারতীয় মুসলিমদের আজ যে অবস্থা, সেরূপ অবস্থা বাংলাদেশের মুসলিমদের জন্যও হতে পারতো -যদি তারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের পক্ষ না নিত।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ মাত্র এ ২৩ বছরে বাংলার তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষ যে সংখ্যক ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, কৃষিবিদ, আইনবিদ, শিক্ষক, প্রফেসর ও সরকারি চাকুরিজীবী তৈরী করেছে, ভারতের ২০ কোটি মুসলিম তার সিকি ভাগও করতে পারিনি। ঔপনিবেশিক শাসনামলে তারা যে তিমিরে ছিল এখন তা থেকেও নীচে নেমেছে। সে দূর্দশারই এক করুণ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে ২০০৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনের পরিচালিত এক সমীক্ষায়। তাতে প্রকাশ পেয়েছে, ভারতের হিন্দুদের মাথা পিছু বাৎসরিক গড় আয় ৪৬১ ডলার এবং মুসলমানদের ১০৯ ডলার। অর্থাৎ মুসলমানদের মাথাপিছু আয় হিন্দুদের আয়ের সিকি ভাগের কম। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বাৎসরিক গড় আয় প্রায় ৪০০ ডলার অর্থাৎ ভারতের মুসলিমদের প্রায় চারগুণ। মুসলিমদের জনসংখ্যা ভারতের জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ হওয়া সত্ত্বেও সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে তাদের সংখ্যা শতকরা মাত্র ৩ ভাগ। ১৯৪৭’য়ের পর ২০০৩ সাল অবধি দাঙ্গায় নিহত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ যার অধিকাংশই মুসলিম। ভারতের ২০ কোটি মানুষ দলিত রূপে পরিচিত। তাদের কোন সামাজিক মর্যাদা নাই। সে দলিতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধেও। দরিদ্র, দলিত ও নির্যাতিত রাখার সে হিন্দু প্রজেক্ট মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে কতটা নির্মম ও নৃশংস –উপরুক্ত পরিসংখ্যান সেটিই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ভারত সরকারের সাচার কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতীয় মুসলিমদের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন দলিতদের চেয়েও খারাপ। ১৯৪৭’য়ে বাঙালী মুসলিম নেতাদের দুরদৃষ্টির কারণেই বাংলার মুসলিমগণ সেদিন ভারত সরকারের নিঃস্বকরণ, দলিতকরণ ও নির্মূলকরণ প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পেয়েছিল। নইলে ভারতীয় মুসলিম আজ যেভাবে দলিতদের স্থানে পৌঁছেছে, সেখানে স্থান হতো বাংলাদেশী মুসলিমদেরও।
কিন্তু ১৯৭১’য়ের পর হিন্দু ভারতের সে দলিতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় বাংলাদেশেও। ভারতের প্রতি নতজানু আওয়ামী নেতৃত্ব সে সুযোগটি ভারতের হাতে তুলে দেয়। এ দাস-নেতৃত্বের হাতে একটি মুসলিম দেশে কাফের বাহিনীকে আমন্ত্রণের ন্যায় জঘন্য হারাম কাজটিও সেদিন অনুষ্ঠিত হয়। ফলে পুণরায় হিংস্র হায়েনার কবলে পড়লো বাংলাদেশের মুসলিমগণ। ১৯৪৭’য়ে উন্নয়নের যে ধারা পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল সেটি পশ্চিম পাকিস্তানে অব্যাহত থাকায় তারা তিন-তিনটি প্রকান্ড যুদ্ধের পরও পারমানবিক শক্তির অধিকারি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে একাত্তরের পর বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়িতে অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে তলার রাষ্ট্রটিতে। সুজলা সুফলা বাংলাতে সেদিন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির ইতিহাস রচিত হয়েছিল। সৃষ্টি হয়েছিল অসংখ্য জাল পড়া বাসন্তি। ডাস্টবিনে উচ্ছিষ্ট খাবারের তালাশে ক্ষুদার্ত মানুষেরা সেদিন কুকুরের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। বাংলার সমগ্র অতীতে ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।
অর্থনৈতিক মেরুদন্ডকে স্থায়ী ভাবে বিচূর্ণ করার লক্ষ্যে একাত্তরে সামরিক দখলদারির শুরুতেই ভারত দেশটির শিল্প, অর্থনীতি ও শিক্ষার মত গুরত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোকে বিধ্বস্ত করে দেয়। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুন্ঠন করে সেগুলি ভারতে নিয়ে যায়। সীমান্ত বাণিজ্যের নামে বিলুপ্ত করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সীমান্ত। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে দেশটি তলাহীন পাত্রে পরিণত হয়। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য-সামগ্রীও চলে যায় ভারতে। সমগ্র সীমান্ত জুড়ে শুরু হয় চোরাকারবারি। দেশ পরিণত হয় ভারতীয় পণ্যের একচ্ছত্র বাজারে। ফলে ধ্বংস হয় দেশীয় শিল্প এবং বিপর্যস্ত হয় অর্থনীতি। তাঁবেদার রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও অনুগত লাঠিয়াল ছাত্রবাহিনী ও অনুগত শিক্ষকদের দিয়ে বিধ্বস্ত করে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে। কথা হলো, এভাবে কি স্বাধীনতা বাঁচে? নিরাপত্তা পায় কি জনগণ? রক্ষা পায় কি অর্থনীতি? বস্তুতঃ স্বাধীনতা, অর্থনীতি ও জনগণ কোনটাই সেদিন বাঁচেনি। স্বাধিনতার নামে উপহার দেওয়া হয় নয়া পরাধিনতা। দূর্ভীক্ষে মৃত্যু ঘটানো হয় বহু লক্ষ মানুষের। রক্ষীবাহিনীর হাতে মৃত্যু ঘটে তিরিশ হাজারের বেশী রাজনৈতিক কর্মীর।
নাশকতা বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে
তবে ধ্বংসপ্রক্রিয়ার এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের কোমর ভাঙ্গার কাজ এখনও শেষ হয়নি। দেশটির ভবিষ্যত বিপন্ন করতে তারা এখন নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে দেশটির বিরাট ভূ-ভাগ বিপর্যস্ত করার পর এবার ফারাক্কার চেয়েও ক্ষতিকর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। প্রণয়ন করেছে ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারাসহ ভারত থেকে আসা সকল নদীর উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে পানি অপসারণের ১২৪ বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট। এত দিন পানির যে প্রধানতম ধারাটি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল সেটিই নিয়ে যাবে মধ্য, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে। এতে বিপর্যস্ত হবে বাংলাদেশের কৃষি শুধু নয়, বরং সমগ্র ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, প্রকৃত অর্থে দেশটির সমগ্র অস্তিত্ব।
বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে যারা ভাবে, ইতিহাস থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে। কারণ, কারা শত্রু আর কারা মিত্র -সে জ্ঞানটি একমাত্র ইতিহাস থেকেই অর্জিত হতে পারে। বুঝতে হবে, অর্থনৈতিক পঙ্গুসাধনই ভারতীয় ষড়যন্ত্রের একমাত্র লক্ষ্য নয়। এ পঙ্গুত্বকে স্থায়ী করতে তারা দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্বকেও অনিবার্য করতে চায়। কারণ জাতির জীবনে বুদ্ধিবৃত্তিই তো ইঞ্জিন। ফলে বাংলাদেশের অন্য কোন ক্ষেত্রে ভারতীয় পুঁজির বিনিয়োগ না হলেও বিস্তর বিনিয়োগ হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষেত্রগুলোতে। মিডিয়া, সাহিত্য, শিক্ষাঙ্গণ ও বুদ্ধিবৃত্তির অন্যান্য ক্ষেত্রজুড়ে ভারতীয় সেবাদাসদের রমরমা অবস্থান তো একারণেই। ফলে নিজেদের শোষণ ও ষড়যন্ত্রের পক্ষেও ভারত বাংলাদেশে বিপুল সমর্থক পাচ্ছে। তাদের পক্ষে কলম ধরছে বহু সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী। এরা যে কতটা বিবেক শূণ্য এবং দেশপ্রেমশূণ্য তার প্রমাণ, বাংলাদেশের ইজ্জতহানীর কাজকে তারা নিজেদের ব্যবসায় পরিণত করছে। তারা শুধু জন ভিডেলের মত সাংবাদিকদের কাজে মিথ্যা বয়ানই দেয়নি, বানোয়াট ভিডিও বানিয়ে বিদেশে পাচারেরও চেষ্টা করেছে। লক্ষণীয় হলো, মুজিব আমলের তলাহীন ঝুড়ির অবস্থান থেকে বাংলাদেশে যতই উপরে ঊঠছে ততই বাড়ছে তাদের ষড়যন্ত্র। একারণেই বাংলাদেশ আজ বহুমুখি ষড়যন্ত্র। একটি তার ভূগোল ও ভূপ্রকৃতির বিরুদ্ধে এবং অপরটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধিনতা নিয়ে বেড়ে ঊঠার বিরুদ্ধে। এ লক্ষ্যে এক দিকে যেমন কবির চৌধুরীর মত ব্যক্তিদের এনজিওগুলি বিদেশী শত্রুদের সাথে কোয়ালিশন গড়েছে, তেমনি রাজনৈতিক ময়দানেও ক্রসেডারদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে বিশাল পঞ্চম বাহিনী। বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের একটি দেশ। জনশক্তির গুণেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। সম্পদে এটি আফগানিস্তানের চেয়ে দূর্বল নয়, তেমনি শক্তিহীনও নয়। অথচ রাশিয়ার মত বৃহৎ শক্তির পতন হয়েছে এ নিঃস্ব আফগানীদের হাতেই। হাজার হাজার পারমানবিক বোমা ও ব্যালিস্টিক মিজাইলের মালিক হওয়া সত্ত্বেও সোভিয়েত রাশিয়া পরাজয় এড়াতে পারিনি। তেমন একটি পরাজয়ের ভয় যে ভারতের নাই -তা নয়। আছে বলেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইসলামে অঙ্গিকার নিয়ে তাই এত আক্রোশ।
মুক্তি নাই আত্মসমর্পণে
যুদ্ধজয়ে জিহাদের বিকল্প নেই। এবং জিহাদই দিতে পারে উন্নততর সভ্যতার নির্মাণের অপ্রতিরোধ্য জজবা। বুঝতে হবে, বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে শত্রুর যুদ্ধটি বহুমুখি। একদিকে যেমন চলছে ১৭ কোটি মানুষকে ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য করার প্রচেষ্টা, তেমনি চলছে পানিশূণ্য করে মারার ষড়যন্ত্র। চলছে ফ্যাসিবাদের নৃশংসতা। চলছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। এ মুহুর্তে বাঁচার পথ মাত্র একটিই। তা হলো, মহান আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাসকে তীব্রতর করা। সে সাথে ইসলামের পথে অর্থ, মেধা ও শ্রমসহ নিজ সামর্থ্যের বিপুল বিনিয়োগ। নিজেদের শক্তি বাড়াতে হলে শক্তিতে পরিণত করতে হবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে। এবং রাজনীতিকে পরিণত করতে হবে পবিত্র জিহাদে। লড়াই যখন শতভাগ জিহাদ হয়, একমাত্র তখনই মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। পবিত্র কোর’আনে ঘোষিত এটি অতি মোদ্দা কথা। মহান আল্লাহতে বিশ্বাস তীব্রতর হওয়ার কারণেই ফিরাউনের ধ্বংসে হযরত মূসা (সাঃ)কে য্দ্ধুও করতে হয়নি। হযরত মূসা (সাঃ) জানতেন না যে তাঁর লাঠির আঘাতে সমুদ্র বুক চিরে পথ করে দিবে। কিন্তু আল্লাহতায়ালার উপর অটল বিশ্বাস নিয়েই তিনি সাগরের দিকে ধেয়ে চলেছিলেন। ফিরাউন ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করার কাজ মহান আল্লাহপাক তখন নিজ হাতে নিয়েছিলেন। মহান আল্লাহপাক তাঁর নিজের কাজটি করতে কখনোই বিলম্ব করেন না। তবে মুসলিমের মূল কাজটি তো আল্লাহর সাহায্যকারি (আনসারুল্লাহ) হয়ে যাওয়া। আর মহান আল্লাহতো এমন সাহায্যকারিদের সাহায্য করতে সদাপ্রস্তুত। মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যের বদৌলতে বাংলাদেশের চেয়েও দরিদ্র অবস্থান থেকে মুসলিমগণ এক কালে বিশ্বের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। আমরা যে কারণে সে সাহায্য এখনও পাচিছ না সেটি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার একনিষ্ঠ সাহায্যকারি রূপে নিজেদের গড়ে তুলতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
শত্রুর কাছে আত্মাসমপর্ণে মূক্তি নেই। শেখ মুজিব ভারতের কাছে পরিপূর্ণ ভাবেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তার দলের ভারতপ্রেমের ইতিহাসটি বড়ই করুণ। ভারতকে খুশী করতে গিয়ে ইসলামের চর্চা ও ইসলামের প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইসলামী দলগুলোর নেতাদের জেলে তুলেছিলেন। ভারতের সাথে স্বাক্ষর করেছিলেন ২৫ সালা দাস-চুক্তি। দেশের সমগ্র সীমান্তকে ভারতীয় পণ্যের জন্য উম্মূক্ত করেছিলেন এবং ভারতীয়দের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ভূমি বেরুবাড়ী। কিন্তু এত কিছু করার পরও ভারতীয় নিষ্ঠুর শোষণ ও শোষণজনিত দূর্ভীক্ষ থেকে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন বাঁচেনি।
চিহ্নিত শত্রুর কাছে আত্মসমপর্ণের পথটি শুধু অপমানেরই নয়, সে পথটি আত্মবিনাশেরও। তাই আত্মসমর্পণ বাড়াতে হয় একমাত্র আল্লাহতে। আর এটি মুসলিমের উপর ঈমানী বাধ্যবাধকতাও। একমাত্র এ পথেই আসে বিজয় ও ইজ্জত। পবিত্র কোর’অআনের ভাষায়, “ওয়া মা নাছরু ইল্লা মিন ইন্দিল্লাহি।” অর্থ: এবং বিজয় নাই একমাত্র আল্লাহর সাহায্য ছাড়া। -(সুরা অআনফাল, আয়াত ১০ )। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে তাই প্রতিটি বাংলাদেশীর মনে মহান আল্লাহতে আত্মসমর্পণকে তীব্রতর করতে হবে। আর এ বিশ্বাস বা ঈমানই তো মুসলিমদের শক্তির মূল ঊৎস। একমাত্র এ বিশ্বাসই বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারে বহু মুখী ষড়যন্ত্র থেকে। প্রতিটি জীবিত দেহকে যেমন কোটি কোটি জীবাণুর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করেই বেঁচে থাকতে হয়, তেমনি প্রতিটি উন্নয়নকামি জাতিকেও বাঁচতে হয় শত্রুর অবিরাম ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে। সত্যতো এটাই, মুসলিমগণ তখনই সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল যখন তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী ষড়যন্ত্র ও হামলা হয়েছে। নবীজী (সাঃ)’র ১০ বছরের মদীনার জীবনে যতগুলো হামলা ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে -বাংলাদেশীরা তা বিগত হাজার বছরেও করেনি। কিন্তু তাতে কি বাংলাদেশীদের ইজ্জত বা বিজয় বেড়েছে? জাতি যে কারণে ধ্বংস ও পরাজিত হয় -সেটি হলো জিহাদে আগ্রহ না থাকা। মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য জুটে জিহাদে নামার পর, আগে নয়। বাংলাদেশের মুসলিমদের জীবনে তাই প্রতিরোধের সামর্থ্য ও জিহাদে আগ্রহ বৃদ্ধিই আজকের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। নইলে পরাজয় এবং দাসত্বই যে আমাদের নিয়তিতে পরিণত হবে –তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? তাছাড়া পরাজয় নিয়ে নয়, জিহাদ নিয়ে বাঁচার মধ্যেই তো প্রকৃত ঈমাদারি। (১ম সংস্করণ: নিবন্ধটি মূল পেপার রূপে পেশ করা হয় ২০০৩ সালে ২৪ আগষ্ট বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (বিডিআই)’য়ের আয়োজিত লন্ডনের “টয়েনবি হল” এর সুধী সমাবেশে; ২য় সংস্করণ, ২৩/১/২০২০)।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018