রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গণহত্যা ও আগ্রাসন যেখানে গণতন্ত্র
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 16, 2021
- Bangla Articles, আর্ন্তজাতিক
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
নেশা আধিপত্য বিস্তারের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণধারদের বড্ড অহংকার মার্কিন গণতন্ত নিয়ে। অহংকার মার্কিন বিচার ব্যবস্থা ও মার্কিন মূল্যবোধ নিয়েও। যেমন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়ার অহংকার চেপেছিল হিটলারের মাথায়। সে অহংকারে হিটলার পদানত করতে চেয়েছিল সমগ্র ইউরোপকে। বহু কোটি মানুষের তাতে প্রাণনাশ হয়েছিল। তেমনি অহংকার চেপেছে মার্কিনীদের মাথায়ও। নেশা এখানে আধিপত্য বিস্তারের। হিটলার যেটি ইউরোপময় করতে চেয়েছিল, অতীতের মার্কিন প্রেসিডেন্টগণ সেটিই চেয়েছে বিশ্বময় করতে। সে জিদ নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা করে। আরো জিদ, যারাই মার্কিন আধিপত্যের বিরোধীতা করবে তাদের ঘাড়ে পৌঁছে দিবেন মার্কিন বিচার। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বহুবার সে কথা শুনিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। তার দাবী, যারা মার্কিনীদের ঘৃনা করে তারা সেটি করে মার্কিন গণতন্ত্র, মার্কিন বিচার ও মূল্যবোধের প্রতি ইর্ষার কারণে।
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার তেমনই এক ব্যাখা সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তৎক্ষনাৎ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি কি সত্যই তাই? প্রশ্ন হলো কি সেই মার্কিন গণতন্ত্র? কি সেই মার্কিন বিচার ও মূল্যরোধ? তাদের রাজনীতি, তাদের গণতন্ত্র ও মূল্যবোধ আজ আর কোন গোপন বিষয় নয়। যেখানেই তারা গেছে সেখানেই তারা সেটিকে সাথে নিয়ে গেছে। অতীতে জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লেবারনের মানুষ তাদেরকে অতি কাছে থেকে দেখেছে। এখন দেখছে আফগানিস্তান ও ইরাকের মানুষ। সবগুলি দেশেই হত্যা, সন্ত্রাস, দস্যুতা ও জবর দখলকে তারা নিজেদের জাতিও নীতিতে পরিণত করেছিল। এসব দেশের মানুষ মার্কিনী গণতন্ত বলতে কতটুকু গণতন্ত বুঝে, আর কতটুকু বুঝে এ্যাটম বোমা, নাপাম বোমা, আগুণে বোমা, ক্লাস্টার বোমা আর গুয়ান্তোনামো বে’র কনসেনট্রেশন ক্যাম্প সেটি কি বুঝার জন্য কি বুশের ওয়াজ শুনার প্রয়োজন আছে। বিশ্ববাসী কি এতটাই মুর্খ ও বিবেক শূণ্য যে এসব স্বচক্ষে দেখেও তা বুঝবে না? মানব শিশু রূপে জন্ম নেওয়ার কারণেই যেমন কেউ মানবতা পায় না তেমনি নির্বাচিত হলেই কেউ সভ্যতর হয়না। বুশ যেমন নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছেন, তেমনি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম ব্যক্তি হিটলারও এসেছিল। ফলে গণতন্ত্র নিয়ে বড়াই চলে না। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে হত্যা, সন্ত্রাস, দস্যুতাকে বিশ্বময় ছড়াচ্ছে তাতে মার্কিন গণতন্ত্র কতটা “ডিমোক্রাসি” আর কতটা “ডিমোনক্রাসি” বা দৈত্যতন্ত্র সেটিই এখন বিবেচনার বিষয়।
তালেবানদের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলার বড় বাহানা ছিল তারা দেশটিতে মানাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিবে। আফগানিস্তান দখল হলো, সরকারও প্রতিষ্ঠা হলো -কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে কি? জনগণ পেয়েছে কি তাদের মৌলিক অধিকার? এসেছে কি স্থিতিশীলতা? দেশটি আজ বহু টুকরায় বিভক্ত। ক্ষমতায় বসিয়েছে সেসব জঘন্য খুণীদের যারা মানবহত্যাকে দেশের সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে । দেশটিতে খুণোখুণি বন্ধ হোক তা নিয়ে এদের সামান্যতম আগ্রহও নেই। আর তেমনি একটি পরিবেশে মার্কিন বাহিনীও সুযোগ পেয়েছে যত্র তত্র মানুষ খুণ করার। ফলে কে তাদের বিচার করবে? বন্য পশু জঙ্গলে শিকার ধরলে যেমন বিচার হয় না তেমনি বিচার নেই এ খুণীদেরও। বনের পশুহত্যাকে জঙ্গলের গাছ-পাথর ও অন্য পশুরা যেমন নীরবে দেখে তেমনি মার্কিনীদের নৃশংস হত্যাকান্ডকে নীরবে দেখেছে আফগানিস্তানের পুতুল সরকার। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব তোলা হয়েছিল দুনিয়ার কোন আদালতই যেন মার্কিন খুণীদের বিচারের বৈধতা না পায়। এবং সেটি পাশও হয়ে গেছে। যেন বৈধতা পেল সমগ্র বিশ্বটাকেই তারা আফগাস্তান বানানোর। যথেচ্ছাচারে এরা দেশ দখল করবে, শত সহস্র বোমা ফেলে মানুষ খুণ করবে, যারাই বিরোধীতা করবে তাদের ঘর বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে, নারী-শিশুকে পঙ্গু করবে – এসব বর্বরতাও জাতিসংঘ আইনে বৈধতা পেল। তবে সে প্রস্তাবটি পাশ করাতে ব্যর্থ হলেও তাদের অসুবিধা ছিল না। যে আইন তাদের খেয়ালখুশিকে বৈধতা দেয় না সেটিকে তারা বৈধতা দেয় না; বুড়ো আঙ্গুল দেখায়। যেমনটি করেছে ইরাককের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর ক্ষেত্রে। তারা নিজেরাও জানে তাদের এ নিষ্ঠুরতা ইতিহাসের বর্বরতম অপরাধ।
হত্যা মূল্যবোধের
মার্কিন কর্মকর্তাগণ অধিকৃত দেশের নিরীহ মজলুমের প্রতিরোধ যুদ্ধকে বলছে সন্ত্রাস। আর পরদেশে নিজেদের আগ্রাসন এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকর্মকে বলছে স্বাধিনতা ও গণতন্ত্রের লড়াই। এভাবে বিশ্বজুড়ে প্রসার বাড়াচ্ছে এক বিকৃত মূল্যবোধের। ফলে তারা শূধু গণহত্যার নায়কই নয়, মূল্যবোধের হন্তাও। সাধারণ খুণী, দূর্বৃত্ত ও দস্যুদের থেকে তাদের মূল পার্থক্য মূলত এখানেই। কারণ সাধারণ দূর্বৃত্তরা মানুষ খুণ করলেও সে খুণকে ন্যায্য বা যথার্থ বলে দাবী করে না। ফলে তাদের হাতে প্রাণনাশের ঘটনা ঘটলেও তাতে মূল্যবোধের মৃত্যু হয় না। ফলে হত্যাকান্ড যেমন প্রশংসনীয় হয় না, তেমনি হত্যার নায়ক বিচারও এড়াতে পারে না।
কিন্তু মার্কিনী সন্ত্রাসে বিশ্বের মূল্যবোধই বদলে যাচ্ছে। আর তার প্রভাব পড়ছে জাতিসংঘের উপর। এর প্রমাণ, যে যুদ্ধ জাতিসংঘের অনুমোদন পেল না, যার পক্ষে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের সমর্থণ ছিল না এবং যা ছিল জাতিসংঘ সংবিধানের সম্পূর্ণ লংঘন -তেমন এক অবৈধ যুদ্ধে ইরাক অধিকৃত হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শাস্তি না দিয়ে বা তিরস্কার না করে বা ইরাক থেকে আগ্রাসী বাহিনীর অপসারণের ব্যবস্থা না করে বরং ইরাকের উপর আগ্রাসী মার্কিন বাহিনীর অধিকার মেনে নিল। এবং অধিকার দিল সেদেশের অর্থ-ভান্ডারে হাত দেওয়ার। আর এ ভাবেই পুরস্কৃত করা হলো এ অপরাধি দেশটিকে। মূল্যবোধ এভাবে বিকৃত হয়েছে বলেই নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধারের বিরুদ্ধে যে কোন বিচারকে নিষিদ্ধ করে যে প্রস্তাব এনেছিল সেটিও পাশ হয়ে গেল।
মূল্যবোধের এ বিকৃতির কারণেই প্রশ্রয় পাচেছ মার্কিনী খুণীচক্র। নিজেদের কু-কর্মকেও তারা হিতকর্ম বলছে। আন্তর্জাতিক দস্যুতাকেও স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য বলছে। ইরাক ও আফগানিস্তানের নিরস্ত্র মানুষকে যেভাবে হত্যা করছে সেটিকেও গণতন্ত্রের পক্ষে প্রয়োজনীয় কর্ম বলে প্রচার করছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববাসীকে এ বর্বর কাজে তাদের পিছে সারিবদ্ধ হতে বলছে। আর এমন চেতনা যে শুধু মাকিন প্রশাসনে ভর করেছে তা নয়, বরং গ্রাস করেছে দেশটির জনগণের বিবেকবোধকেও। ফলে তৃতীয় বিশ্বের কোন নিরক্ষর গ্রাম্য কৃষক ইরাকের উপর মাকিন আগ্রাসনকে যেভাবে অন্যায় বলতে পারলো -তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ দূরে থাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রফেসরও তা পারিনি। পারিনি অধিকাংশ লেখক, কলামিষ্ট, বুদ্ধিজীবী, কংগ্রেস ও সিনেট সদস্যরাও।
মার্কিন মূল্যবোধ ও বিচারবোধ যে কতটা বীভৎস পথে পা বাড়িয়েছে তারই প্রমাণ হলো গুয়ান্তানামো বে’র কারাগার। যারা কোন দিন আমেরিকায় গেল না, সেখানে গিয়ে কোন যুদ্ধও করলো না, কোন মার্কিনীকে হত্যাও করলো না –এরূপ শত শত নিরপরাধ মানুষকে নিয়ে তোলা হয়েছে কিউবার গুয়ান্তানামো দ্বীপের কারাগারে। তারা যে অপরাধ করেছে সে প্রমাণও মার্কিনীদের হাতে নেই। আইনের ভাষায় যথার্থ ভাবেই তারা নিরপরাধ। এমন মানুষদের বন্দী করে রাখা দুনিয়ার যে কোন আইনেই অবৈধ। এমন কাজ করে থাকে দূর্বৃত্ত হাইজাকারগণ। অথচ মার্কিনীরা সেটিই করেছে। গুয়ান্তানামো কারাগারের এসব নিরাপরাধ ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে হাতবাঁধা, চোখবাঁধা, পায়ে লোহার শিকলপড়া অবস্থায়। চিড়িয়াখানায় রাখা বাঘ-ভালুককেও চলাফেরার জন্য জায়গা দেয়া হয়; কিন্তু তাদের তা দেয়া হয়নি। নিষ্ঠুরতায় হিটলার ও তার কনসেনট্রেশণ ক্যাম্পকেও হার মানায়। আর এটিকেই প্রেসিডেন্ট বুশ বড় গর্ব করে বলছে মার্কিন বিচার। গোঁ ধরেছেন এমন বিচার বিশ্বময় প্রতিষ্ঠা করে ছাড়বেন। অর্থাৎ মার্কিন আধিপত্যের বিরোধীদের ধরে ধরে গুয়ান্তানামো দ্বীপে হাজির করবেন। অথবা গুয়ান্তানামো দ্বীপের বর্বরতাকে হাজির করবেন বিশ্বের কোনে কোনে। একবিংশ শতাব্দী এ ভাবেই পরিণত হবে মার্কিন আধিপত্যের শতাব্দী। এটি রুখতে কোন আন্তজাতিক আইন তাদের পায়ে বেড়ি পড়াক -মার্কিনীরা সেটি মানতে রাজী নয়।
মৃত জাতিসংঘ
মার্কিনীদের আগ্রাসী অভিপ্রায়ের কারণেই জাতিসংঘকে পরিণত হয়েছে মরা লাশে, এখন শুধু এর দাফনই বাঁকি। ফলে বিবেকমান কোন মানুষের পক্ষে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করাই এখন দুরুহ। এমন তীক্ততা নিয়ে এমন কি মিস্টার হ্যানস ব্লিক্সের মত মৃদুভাষী কুটনৈতিকও মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের প্রকাশ্যে “বাস্টার্ড” বলতে বাধ্য হয়েছেন। তার সে বেদনাভরা অভিব্যক্তির বিস্তারিত বিবরণ ছেপেছে ২০০৩ সালের ১১ জুনের দৈনিক গার্ডিয়ান। হ্যানস ব্লিক্সের দুঃখের কারণ মার্কিন কর্তৃপক্ষ ইরাকের উপর হামলাকে জায়েজ করতে তার রিপোর্টের ভাষাকে মার্কিনীদের জন্য অনুকূল করতে বলেছিল। কিন্তু তিনি তা না করায় পেন্টাগণ তার বিরুদ্ধে জঘন্য প্রচারণায় চালায়। অবশেষে তার কাজকে বন্ধ করতে বাধ্য করে।
লক্ষাধিক সৈন্য, হাজার হাজার স্পাই ও শত শত অস্ত্র বিশেষজ্ঞ মাঠে নামিয়েও মার্কিন কর্তৃপক্ষ যেখানে বিগত দুই মাসে তথাকথিত “উইপন্স অব মাসডিসট্রাকশন” আবিস্কার করতে পারলো না, হ্যানস ব্লিক্সের ক্ষুদ্র অস্ত্রপরিদর্শক দলকে সে কাজ মাত্র দুই সপ্তাহে সমাধা করতে বলেছিল। তাকে একদিনও বাড়তি সময় দিতে রাজী হয়নি। ইরাকে অস্ত্র থাক আর না থাক সেটি বড় কথা নয়, মার্কিনীদের লক্ষ্য ছিল জাতিসংঘ পরিদর্শক দলের রিপোর্ট যেন তাদের হামলার পক্ষে দলিল হিসাবে কাজ করে। এবং সেটি সত্বর। কোন বিবেকমান মানুষের জন্যই এটি মেনে নেওয়া ছিল অপমানজনক। সম্ভব হয়নি হ্যানস ব্লিক্সের পক্ষেও। এক সময় তিনি সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ফলে মার্কিনীদের মতিগতি বুঝার সামর্থ্য বা কুশলতা যে তার ছিল না তা নয়। তাছাড়া তিনি দীর্ঘকাল কাজ করেছেন জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ পদে। ফলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাঁড়ির খবর তিনি রাখেন। ফলে তিনিই যদি মার্কিন কর্তাব্যক্তিদের বাস্টার্ড বলেন তবে যারা মাকিন ক্লাস্টার বোমা, কামানের গোলা ও নানা বিধ সন্ত্রাসের শিকার তারা তাদেরকে কি বলবে?
ইরাকে গণহত্যা ও লুন্ঠন
ইরাক দখলের দুই মাস অতীত হলো। অথচ আজও তারা কিছুই করতে পারি। চলছে প্রশাসনিক শূণ্যতা। নাই নিরাপত্তা। নাই পানি ও বিদ্যুৎ সাপ্লাই। নাই খাদ্য-রেশন। পানিহীন, বিদ্যুৎহীন, খাদ্যহীন ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় মানুষ অতি অবর্ণনীয় দুরাবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। অথচ যেটি সফল ভাবে চালাতে পারছে সেটি হলো গণহত্যা। গত ২০০৩ সালের ১৩ জুন একদিনেই মার্কিন বাহিনী ৯৭ জনকে হত্যা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের শিক্ষাবিদ ও গবেষকগণের বরাত দিয়ে ১৪ জুনের (২০০৩ সাল) গার্ডিয়ান খবর ছেপেছে এ অবধি ১০ হাজার বেসামরিক ইরাকীকে হত্যা করা হয়েছে। এবং হত্যাকান্ড চলছে অন্যভাবেও। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ঔষধ না থাকায় বহু মানুষ মারা যাচ্ছে বীনাচিকাৎসায়। ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে কলেরা। মনে হচ্ছে দখলদার মার্কিনীদের এসব দিকে ভ্রক্ষেপও নাই। অথচ ইতিমধ্যে তারা দেশটির তেলের খনিতে হাত দিয়েছে। শুরু করেছে তেলোত্তলন। চালু করেছে রিফাইনারি। তেলের খনিগুলোকে সঁপে দিচ্ছে মার্কিন কোম্পানীগুলোর হাতে। ঘরে ঢুকে দস্যু যেমন সিন্দুকে হাত দেয় এরা তেমন হাত দিয়েছে ইরাকের অর্থভান্ডারে। এবং এটিকেও বলছে মার্কিন বিচার।
প্রতারণা ফিলিস্তিনীদের সাথে
অপর দিকে একই রূপ অভিনব মার্কিন বিচার চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে ফিলিস্তিনীদের উপর। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রশাসন প্রণয়ন করেছে তথাকথিত ’রোড-ম্যাপ’। স¤প্রতি এটি নিয়ে দরবার করতে প্রেসিডেন্ট বুশ মধ্যপ্রাচ্য সফর করলেন। এ রোড-ম্যাপ ফিলিস্তিনীদের শান্তি ও স্বাধীনতা কতটুকু নিশ্চিত করবে সেটি বলা না হলেও ফিলিস্তিনীদের বলা হচ্ছে ইসরাইলীদের শান্তি ও নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে। বলা হচ্ছে অস্ত্র পরিত্যাগ করতে। অথচ ইসরাইল প্রত্যহ হেলিকপ্টার গানশিপ ও ট্যাংক নিয়ে ফিলিস্তিনের বস্তিতে ঘুরছে ও মানুষ খুণ করছে তা নিয়ে মার্কিনীদের কোন বক্তব্য নেই। আজ অবধি যতজন ইসরাইলী ফিলিস্তিনীদের হাতে মারা গেছে তার চেয়ে বহু গুণ বেশী ফিলিস্তিনী মারা গেছে ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর হাতে। অথচ তাদেরকে সন্ত্রাসী না বলে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে ফিলিস্তিনীদের। ইতিহাসে অন্যের দেশদখল সব সময়ই নিন্দিত হয়েছে এবং প্রশংসিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। মার্কিনীরা ফিলিস্তিনীদের মুক্তিযুদ্ধকে বলছে সন্ত্রাস। অথচ ভূলে যায়, সেটি হলে বড় সন্ত্রাসী বলতে হয় প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকেও। কারণ তিনিও অস্ত্র হাতে ইংরেজ উপনিবেশিক শক্তির দখলদারির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। ফলে মার্কিন বিচারবোধ যে কতটা বিকৃত, কতটা অমানবিক ও কান্ডজ্ঞান বর্জিত সেটি এর পরও বুঝতে বাঁকি থাকে? এমনই এক অসুস্থ্য বিবেকবোধের কারনে ইয়াসির আরাফত ফিলিস্তিনীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হলে কি হবে তাকে তারা মানতে রাজি নয়। তার সাথে কথা বলতেও ইচ্ছুক নয়। কথা বলার জন্য মার্কিন চাপে আবু মাজেনকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়েছে।
অপরদিকে যে ইসরাইল ফিলিস্তিনকে গ্রাস করলো এবং দখলকৃত ভূমি থেকে সৈন্য অপসারণের জাতিসংঘ প্রস্তাবকে বার বার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো সে ইসরাইলই হলো মার্কিনীদের পরম মিত্র। ইসরাইল বলেছে ১৯৬৭ সালের আগ্রাসনে অধিকৃত ভূমি থেকে তারা পিছু হঠবে না। রাজি নয় অধিকৃত পশ্চিম তীরে যে হাজার হাজার ইহুদী পল্লী নির্মাণ করেছে সেগুলি উঠিয়ে নিতে। রাজি নয় ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে যাদেরকে তারা নিজ গৃহ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তাদের ঘরে ফিরতে দিতে। অথচ ফিলিস্তিনীদের সেটি মৌলিক অধিকার। তাদের ঘরে ফেরার সে অধিকার মেনে নিয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে। ইসরাইল রাজি নয় ১৯৬৭ সালে দখল করা জেরুজালেম শহরটি ফিরত দিতে। অথচ এটিও জাতিসংঘ প্রস্তাব অনুযায়ী ফিলিস্তিনীদের প্রাপ্য।
অতীতে ফিলিস্তিন নিয়ে বহু কনফারেন্স হয়েছে। ওসলো, মাদ্রিদ, প্যারিস, ক্যাম্প ডেভিড, আকাবা, শারমাল শেখসহ বহুস্থানে বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ইসরাইল ভূমি থেকে পূর্ণ ভাবে হাত গুটাতে যেমন রাজি নয়, তেমনি রাজি নয় ফিলিস্তিনী উদ্বাস্তুদের নিজ গৃহে ফিরবার অধিকার দিতে। ইসরাইলী কর্মকর্তাগণ সে কথা অতীতের ন্যায় এবারও স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও মার্কিনীদের কাছে শান্তির শত্রু ইসরাইল নয়, বরং শত্রু হলো তারা যারা জাতিসংঘ প্রস্তাবের বাস্তাবায়ন চায়। প্রেসিডেন্ট বুশ এর পরও ফিলিস্তিনী নেতাদের নাকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের মূলা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এটি যে প্রচন্ড প্রতারণা সেটি বুঝবার সামর্থ কি ফিলিস্তিনীদের নেই? কথা হলো, যে ব্যক্তি ইরাকে অস্ত্র আছে বলে অবিরাম মিথ্যা বলতে পারে, ইরাকের উপর বেআইনী হামলা ও জবর দখলকে গণতন্ত্র বলতে পারে, হাজার হাজার ইরাকী জনগণের মার্কিন বিরোধী মিছিলের পরও যে ব্যক্তি সেটিকে মার্কিনীদের প্রতি ইরাকীদের “আহলান সাহলান” বলতে পারে -তার পক্ষে স্বাধীন ফিলিস্তিনের মিথ্যা প্রতিশ্র“তি দেওয়া কি এতই কঠিন?
মার্কিনীদের কাজ শুধু আগ্রাসনের নতুন ক্ষেত্র তৈরী করা নয়, বরং আগ্রাসনের পুরনো ক্ষেত্রগুলোকে আরো অশান্ত ও রক্তাত্ব করা। ফলে যে আগ্রাসন ও অশান্তি আজ ফিলিস্তিনে বেঁচে আছে তা যে আফগানিস্তান ও ইরাকেও আরো বহু কাল বেঁচে থাকবে এবং আর বহু দেশে সেরূপ অবস্থা সৃষ্টি হবে তা নিয়ে তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? কারণ, দুর্বৃত্ত শক্তি শুধু দুর্বৃত্তিই বাড়াতে পারে; সুনীতি নয়। এবং সেটি যদি বিশ্বশক্তি হয় তখন বিপদ সমগ্র বিশ্ববাসীর –বিশেষ করে যারা শক্তিহীন তাদের। ১ম সংস্করণ ১৫/০৬/২০০৩; ২য় সংস্করণ ১৬/০১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018