শেখ হাসিনার মুর্তিপ্রেম ও বাংলাদেশের পরাজিত মুসলিম
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 12, 2020
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিজয় মুর্তিপ্রেমের
বাংলাদেশে এখন প্রবল ভাবে বিজয়ী মুর্তিপ্রেমের চেতনা। তাদের হাতেই দেশ এখন অধিকৃত। এ মুর্তিপ্রেমের ধ্বজাধারী হলো একাত্তরের চেতনাধারীরা। দেশবাসীর উপর একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার চাপাতে শেখ মুজিব জনগণ থেকে ভোট নেননি। মুজিবের ন্যায় সব স্বৈরাচারীর একই চরিত্র। শেখ হাসিনাও তাই একই পথ ধরেছে। জনগণের উপর মুর্তিপূজা ও মুর্তিনির্মাণের সংস্কৃতি চাপাতে জনগণ কি ভাবে -তা নিয়ে তাঁর ভাবনা নেই। নিজের খায়েশ পূরণে যা কিছু মনে হয়েছে সেটিকেই জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া দেশ জুড়ে মুর্তিনির্মাণের প্রকল্প চালু করতে যে শত শত কোটি টাকা খরচ হবে –সে টাকা তো নিজের পকেট থেকে যাবে না। আসবে জনগণের পকেট থেকে। অতএব কইয়ের তেলে কই ভাজো –অতএব ভাবনা কিসের? তাছাড়া হাসিনা তো জনগণের ভোট নিয়ে তো ক্ষমতায় আসেনি। অতএব নাই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতাও। ফলে জনগণ কি চাইলো কি না চাইলো -তা নিয়েই বা তোয়াক্কাই বা কিসের? সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যারা মুর্তির বিরুদ্ধে কথা বলছে তারা রাজাকার, তারা পাকিস্থানপন্থি। মুর্তির বিরুদ্ধে কথা বলাটি চিত্রিত হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ রূপে। সে অপরাধে আদালতে মামলাও দায়ের করা হচ্ছে। যেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও মুর্তি এক এবং অভিন্ন। এবং জনগণের জানমাল বাঁচাতে চরম ভাবে ব্যর্থ হলে কি হবে, আদালতের কাজ হয়েছে মুর্তিকে বাঁচানো। রাস্তায় রাস্তায় সরকারি দলের গুন্ডা ও পুলিশকে নামানো হচ্ছে মুর্তিবিরোধীদের ঘাড় মটকাতে এবং মুর্তনির্মাণকে প্রতিরক্ষা দিতে। যেন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছিল মুর্তিপূজা ও মুর্তিনির্মাণের সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার জন্য।
কিছুদিন আগে বাজারে আরেক যুক্তি ছাড়া হয়েছে, যারাই ভারত বিরোধী তারাই বাংলাদেশ বিরোধী। পত্রিকায় প্রকাশ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের প্রতি নত হয়েই আমাদের চলতে হবে। ভারতের একাত্তরের প্রকল্পটি দিন দিন এভাবেই পরিস্কার হচ্ছে। ভারতপূজা ও মুর্তিপূজার সাথে বাংলাদেশের সৃষ্টিকেও একাকার করা হচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধকে এরাই স্বাধীনতার যুদ্ধ বলে প্রচার করে। অথচ এ মিথ্যটি বলা হয় একটি বিশাল সত্যকে আড়াল করার জন্য। ভারতের ইতিহাস তো অন্যদেশ দখলের। কাশ্মির, নাগাল্যান্ড, সিকিমসহ অনেক দেশ তো সে দখলদারীর শিকার। অন্যদের স্বাধীনতায় আগ্রহী হলে তারা তাদের গ্রাস করতো না। নেকড়ে থেকে নেকড়ের আচরণই আশা করা যায়। অন্য কিছু আশা করা বেওকুফি। যুদ্ধটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য হলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জেনারেল ওসমানীর কাছে আত্মসমর্পণ করতো। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করেছে ভারতীয় জেনারেল অরোরার কাছে। ভারত এভাবে মূল সত্যটি ১৯৭১’য়ের ১৬ই ডিসেম্বরেই প্রকাশ করে দিয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধটি ছিল ভারতের নেতৃত্বে, ভারতের পরিকল্পনায়, ভারতের অর্থে এবং ভারতীয় সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত ভারতেরই একটি occupational war। যুদ্ধ শেষে ভারত তার বিশ্বস্ত খলিফা শেখ মুজিবকে ক্ষমতায় বসায় –যা অধিকৃত দেশগুলিতে occupational আর্মির কর্তাগণ চিরাচরিত করে থাকে।
বাংলাদেশে হাসিনার ন্যায় ভারতসেবীদের রাজনীতি বুঝতে হলে তাই ভারতের এজেন্ডাকে প্রথমে বুঝতে হবে। নইলে হিসাবে ভূল হবে। ভারত শুধু বাংলাদেশের উপর সামরিক ও রাজনৈতিক অধিকৃতি নিয়ে খুশি নয়, তারা চায় সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকৃতিও। নইলে পূরণ হবে না তাদের দীর্ঘ দিনের অভিলাষ। সকল প্রকার ধোঁয়াশা দূর করে ভারতের সে এজেন্ডা এখন সূর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্টতর হচ্ছে। একাত্তরের চেতনাধারীরা ভারতের সেবাদাস রূপে যেমন একাত্তরে খেটেছ, সে সেবাদাসী চরিত্রটা এখনও তারা জারি রেখেছে। একাত্তরের সে চেতনা নিয়েই তারা এখন মুর্তিনির্মাণ ও মুর্তিপূজার প্রকল্প নিয়ে রাস্তায় নিয়েছে। এবং সেটি ভারতের সাংস্কৃতিক এজেন্ডাকে পূরণ করতে।একাত্তরে ভারতীয় প্রকল্পের বিরোধী ছিল রাজাকারগণ। ভারতীয় সেবাদাসগণ তাদের শত্রুদের চিনতে কখনোই ভূল করে। এবং ভারতও ভূল করে না। ফলে একাত্তরের ন্যায় এখনো যারা তাদের প্রকল্পের বিরুদ্ধে খাড়া হচ্ছে তাদেরকে তারা রাজাকর বলছে।
হাসিনার মুর্তিপ্রেম
মুর্তিপ্রেমী বাংলাদেশীদের প্রধান শেখ হাসিনার মুর্তিপ্রেমের বিষয়টি আদৌ নতুন কিছু নয়। আগেও মুর্তির সামনে দাঁড়িয়ে উনি এমন সব কথা বলেছেন -যা একজন গোঁড়া মুর্তিপূজারীর মুখেই শোভা পায়। হিন্দু থেকে উনাকে পৃথক করাই তখন কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষ যা বলে তা তো তার চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ। জিহ্ববার উপরই তো মানুষের ঈমান। কে হিন্দু, আর কে মুসলিম -সেটি কারো গায়ে লেখা থাকে না। সেটি বুঝা যায় তার কথা থেকে। শেখ হাসিনার চেতনার সঠিক পরিচয়টি পেতে উদাহরণ দেয়া যাক। উনি ২০১১ সালের ৫ই অক্টোবর রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গা পূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো বাহনে চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে—তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখে-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।”-(দৈনিক আমার দেশ, ৬ই অক্টোবর, ২০১১)।
হিন্দুরা তাদের মন্দিরের মুর্তিকে মা বলে, দেবীও বলে। দেবীর আগমনে ফসল ভাল হয়, পৃথিবী ধন-ধান্যে ভরে উঠে –সে কথাও বলে। এরূপ কথার মধ্যে তাদের পৌত্তলিক বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটে। এটিই তাদের ধর্ম। কিন্তু এরূপ কথা কোন মুসলিম বল্লে কি তাঁর ঈমান থাকে? সে তো সরাসরি কাফের হয়ে যায়। ইসলামে এরূপ বিশ্বাসকে বলা হয় শিরক। একটি মাত্র বাক্য উচ্চারণের মধ্য দিয়ে যেমন একজন মুসলিম হতে পারে, তেমনি কাফেরও হতে পারে। মুসলিমকে বিশ্বাস করতে হয় এ পৃথিবীতে যা কিছু হয় -তা হয় মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায়। গাছের একটি পাতাও তার ইচ্ছা ছাড়া গজাতে পারে না, মাটিতেও পড়তে পারে না। কোন দেবদেবীর এখানে কোন দখলদারি নাই। ফলে হাসিনা যা বলেছেন তা আদৌ কোন মুসলিমের কথা হতে পারে না। বরং সে কথার মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি মুসলিম নন। এবং নিজেকে প্রকাশ করেছেন একজন পৌত্তলিক মুশরিক রূপে। সেটির পক্ষে আরো দলিল মিলছে সাম্প্রতিক তার পিতার মুর্তি নির্মাণের আগ্রহ থেকে। তাঁর দাবী, তিনি নামায-রোযা পালন করেন। কিন্তু কোন নামাযী কি কখনো মুর্তিকে মা ও দেবী বলতে পারে? নামায-রোযা তো নবীজী (সাঃ)’র যুগে মুনাফিকগণও পালন করতো। কিন্তু তারাও কোনদিন মুর্তির সামনে গিয়ে এমন কথা বলেনি -যা হাসিনা ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে বলেছেন? সে যুগের মুনাফিকগণ মুর্তি বানিয়েছে -সে প্রমাণও নেই। সেটি করলে তারা সরাসরি কাফের রূপে চিহ্নিত হয়ে যেত।
মুসলিম-সংস্কৃতি তো মুর্তি ভাঙ্গার
মুর্তি নির্মাণ ইসলামে হারাম। ব্যাভিচারকে প্রেম বললে যেমন হালাল হয় না, তেমনি মুর্তিকে ভাস্কর্য বললেও হালাল হয় না। মুর্তি নির্মাণ হালাল হলে সবচেয়ে বেশী মুর্তি নির্মিত হতো মক্বা ও মদিনায়। কারণ মুসলিম ইতিহাসের যারা সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি তাদের বেশীর ভাগের জন্ম সেখানে। কিন্তু সেখানে কোন মুর্তি নাই। বরং মুসলিমের সংস্কৃতি তো মুর্তি ভাঙ্গার। জাহিলিয়াতের যুগে ক্বাবা শরীফে ৩৬০টি মুর্তি ছিল। সে মুর্তিগুলিকে ভাঙ্গা হয় নবীজী (সাঃ)’র নির্দেশে। তাই যারা নিজেদের নবীজী (সাঃ)’র উম্মত রূপে দাবী করে তারা মুর্তি গড়ে কি করে?
হিন্দু ধর্মে মুর্তি গড়ার প্রথা আছে। মুর্তিকে পূজা দেয়াই হিন্দুদের ধর্ম। খৃষ্টান ধর্মেও যিশু খৃষ্ট ও মা মেরীর মুর্তি গড়া হয়। খৃষ্টান দেশগুলিতে শুধু চার্চে নয়, রাস্তাঘাটেও মুর্তির ছড়াছড়ি। বৌদ্ধ ধর্মে বুদ্ধের মুর্তি গড়া হয়। কিন্তু ইসলাম এক্ষেত্রে অনন্য। এ ধর্মে মুর্তির কোন স্থান নেই। পূজার জন্যও নয়, স্মৃতির জন্যও নয়। বাংলার বুকে মুসলিম শাসনের শুরু ৮ শত বছরের বেশী কাল আগে। অনেক বিখ্যাত শাসক এদেশ শাসন করেছেন। কিন্তু কারো নামে কি কোন মুর্তি গড়া হয়েছে? ভারতেও মুসলিম শাসনের বয়স ৮ শত বছরের বেশী কাল ধরে। সেখানেও কি কোন মুর্তি গড়া হয়েছে? মোঘল বাদশা তার স্ত্রীর স্মৃতিতে তাজমহল গড়েছেন, কিন্তু তার স্মৃতি অমর করতে কোন মুর্তি গড়েনি। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়দে আযম মুহম্মদ আলী জিন্নাহ। সেদেশের মানুষ কায়েদে আযমকে মনেপ্রাণে ভালবাসে। কারণ মুহম্মদ ঘোরি’র হাতে দিল্লি বিজয়ের পর আর কেউই উপমহাদেশের মুসলিমদের এতবড় উপকার করেনি যা কায়েদে আযমের হাত দিয়ে হয়েছে। অথচ পাকিস্তানে তার একটি মুর্তিও গড়া হয়নি।
বাংলাদেশের মুর্তিপ্রেমীকগণ তুরস্কের উদাহরণ দেয়। তুরস্কে মুর্তি নির্মাণ শুরু ধর্মহীন সেক্যুলারিস্টদের হাতে উসমানিয়া খেলাফত বিলুপ্তির পর। তুর্কিদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন সুলতান মহম্মদ ফাতেহ যিনি রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটান্টিনোপল জয় করেন। তার নামেও কোন মুর্তি গড়া হয়নি। দ্বিতীয় বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন সুলাইমান দি গ্রেট। তার নামেও কোন মুর্তি গড়া হয়নি। তবে বিশ্ববিখ্যাত মসজিদ গড়া হয়েছে। কামাল পাশার ন্যায় কট্টোর ইসলাম বিরোধী ফ্যাসিস্টদের হাতে তুরস্ক অধিকৃত হলে সেক্যুলারিস্ট দুর্বৃত্তগণ শুধু মুর্তিই গড়েনি, আরবীতে আযান দেয়াও নিষিদ্ধ করেছিল। এবং নিষিদ্ধ করেছিল মহিলাদের হিযাব। এবং পানির ন্যায় সহজলভ্য করেছিল মদ। হাজার হাজার আলেমকে তারা হত্যা করেছিল। এবং হাজার বছর ধরে চলে আসা তুর্কি ভাষায় যে আরবী বর্ণমালা ব্যবহার করা হতো সেটিও বিলুপ্ত করেছিল। এভাবে জনগণকে তারা ইসলাম থেকে দূরে টেনেছিল। বাঙালী সেক্যুলারিষস্টগণ কি তবে বাংলাদেশকে সেদিকেই নিতে চায়? অবশ্য ভারত তো সেটিই চায়। “ঘরওয়াপসি”(অর্থঃ ঘরে ফেরা)’র নামে ভারতীয় শাসকদলের ক্যাডারগণ শুরু করেছে মুসলিমদের মুর্তিপূজায় ফিরিয়ে আনার প্রকল্প।
লক্ষ্য কালচারাল কনভার্শন
শেখ হাসিনা আরেক স্লোগান তুলেছেন, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।” এর মধ্যে লুকিয়ে আছে হাসিনার হিন্দু মনের গভীর ষড়যন্ত্র। যার মধ্যে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে সে কি কখনোই এমন কথা বলতে পারে? এতকাল দুর্গাপূজা, কালীপূজা, স্বরস্মতী পূজার ন্যায় পূজাগুলি হিন্দুদের উৎসব রূপে পালিত হতো। কিন্তু হাসিনার লক্ষ্য হলো, সেগুলিকে মুসলিমের উৎসব রূপেও প্রতিষ্ঠা দেয়া। হাসিনা যেরূপ ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনের মুর্তির সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হিন্দুয়ানী বিশ্বাসের ঘোষণা দিছেন, সে ঘোষণাটি কি বাংলাদেশের কোন ঈমানদার মুসলিম দিতে পারে? হাসিনা জানে, বাঙালী মুসলিমদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যেটি সম্ভব তা হলো হিন্দুদের পূজা-পার্বনের সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে নেয়া। একেই বলা হয় কালচারাল কনভার্শন তথা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। হিন্দু না করলেও এটি হলো হিন্দুচেতনার ভূমিতে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র।
তবে কালচারাল কনভার্শনের বিপদটি হিন্দু ধর্মে ফিরে যাওয়ার বিপদের চেয়ে আদৌ কম নয়। ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলি নিয়ে বাঁচতে হলে ইসলামী সংস্কৃতিও লাগে। তাই ইসলাম শুধু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিপ্লব আনে না, সাংস্কৃতিক বিপ্লবও আনে। মাছ যেমন পানিতে বেড়ে উঠে, মানব শিশুও তেমনি তার সংস্কৃতির মাঝে বেড়ে উঠে। সংস্কৃতির প্রভার শুধু স্কুল-কলেজ, পূজা-পার্বনে সীমিত থাকে না, প্রভাবিত করে ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা এবং আচার-আচরণ। ফলে পূজা-পার্বন ও নাচগানের সংস্কৃতিতে যে শিশু গড়ে উঠে সে যে মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, ঈদ, মিলাদ-মহফিল ও ওয়াজমহফিলের সংস্কৃতিতে গড়ে উঠা শিশু থেকে ভিন্নতর হবে সেটাই স্বাভাবিক। হিন্দু, খৃষ্টান বা সেক্যুলার সংস্কৃতিতে যা তীব্র ভাবে হয়, তা হলো ইসলাম থেকে দূরে সরার কাজ। ফলে তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে পূর্ণ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা। তখন নীরবে পরাজয়টি ঘটে চেতনা রাজ্যে।
বাংলার বুকে কালচারাল কনভার্শনের কাজটি তীব্র ভাবে হয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের শাসনামলে। মুসলিমদের খৃষ্টান করার কাজে ব্যর্থ হওয়ার পর তারা এদিকে মন দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের সফলতাটিও কম নয়। কাফের শাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম চেতনায় সাধারনত যে ইম্যুনিটি বা প্রতিরোধ ক্ষমতাটি থাকার কথা তারা সেটি বিলুপ্ত করতে পেরেছিল। বিস্ময়ের বিষয় হলো, ইংরেজদের সে ইসলাম বিরোধী প্রকল্পকে সফল করতে বহু আলেমও তাদের সঙ্গ দিয়েছিল। কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদকে তারা ওহাবীদের সন্ত্রাস বলে আখ্যা দিয়েছিল। হাসিনার সাথেও এমন আলেমদের সংখ্যা কম নয়।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সাংস্কৃতিক কনভার্শনের সে কাজটি তারা তীব্রতর হয়েছে। পৌত্তলিক সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয় প্রতি বছর ২১শে ফেব্রেয়ারীতে শহীদ মিনারের নামে গড়া স্তম্ভে নগ্ন পদে ফুল দেয়ার মাধ্যমে। মন্দিরের সংস্কৃতি এভাবেই নেমে আসে স্কুল-কলেজের অঙ্গণে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শুরু হয় মুজিবের ছবি পূজা। মুজিবের ছবির সামনে মাথা নুইয়ে, হাত জোর করে প্রমাণ দিয়ে ও তার ছবিতে ফুল দিয়ে যে পূজার সংস্কৃতি শুরু হয়। এখন সেটি আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে; শুরু হয়েছে মুজিবের মুর্তি নির্মাণ এবং সে মুর্তিতে ফুলদানের রীতি। পৌত্তলিকগণ যেমন মন্দিরের মুর্তিদের পায়ে পূজা দেয়, সেটিই হচ্ছে মুজিবের মুর্তির সামনে।
দেশে দু’টি পক্ষ
বাংলাদেশে এখন দু’টি পক্ষ। একটি বিজয়ী পক্ষ, অপরটি পরাজিত পক্ষ। বিজয়ী পক্ষের নেতৃত্বে দিচ্ছেন ভোট ডাকাত হাসিনা। এবং তার সাথে রয়েছে তারই নিজের দল আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য ভারতমুখি দল। সে সাথে আছে দেশের পুলিশ বাহিনী, সেনা বাহিনী, বিচার বাহিনী ও প্রশাসন। দেশের বাইরে তাদের পক্ষে রয়েছে ভারত। এবং পরাজিত পক্ষটি হলো দেশের নিরস্ত্র ও নিরীহ জনগণ। জনগণের পাশে তাদের কেউই নাই যাদেরকে তারা রাজস্ব দিয়ে আরাম-আয়াশে প্রতিপালন করে। তাদের অর্থে পালিত হচ্ছে এমন এক নৃশংস শত্রুপক্ষ যারা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে গুম, খুন, সন্ত্রাস, ফাঁসি, ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিভীষিকা। কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের মৌলিক মানবাধিকার। প্রতিবাদ নিয়ে রাস্তায় নামা গণ্য হচ্ছে অপরাধ রূপে। আদালত ইতিহাস গড়েছে বিচার হীনতায়। ভোট ডাকাতি হলেও আদালত সে নির্বাচনকে বৈধ ঘোষণা দেয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবী’র হাতে শাপলা চত্ত্বরে যে গণহত্যা হলো, সে অপরাধেরও কোন বিচার হয়নি। বিচারকগণ ব্যবহৃত হচ্ছে সরকার বিরোধীদের ফাঁসিতে ঝুলানোর কাজে। এবং সে সাথে সরকারের নৃশংস তান্ডবগুলিকে জায়েজ করার কাজে। দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সকল দলের সম্মতিতে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু হয়েছিল, আদালত সেটিও কেড়ে নিয়েছে। এবং এভাবে সহজ করে দিয়েছে স্বৈরাচারি সরকারের ভোট ডাকাতি।
বাংলাদেশের ন্যায় দেশে পরাজিত হওয়ার বিপদটি বিশাল। পরাজিতদের ভোটের যেমন ইজ্জত নাই, তেমনি ইজ্জত ও নিরাপত্তা নাই তাদের জান ও মালের। এবং অধিকার থাকে না পূর্ণদ্বীন পালনের। শরিয়ত পালন ছাড়া কি পূর্ণদ্বীন পালন হয়? অথচ বাংলাদেশে সেটি নিষিদ্ধ। শরিয়তের দাবী তোলা চিত্রিত হচ্ছে জঙ্গিবাদ রূপে। অথচ সুরা মায়েদে ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে যারা শরিয়ত পালন করে না তাদেরকে কাফের, জালেম ও ফাসেক রূপে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্র গড়ে শুধু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ও কলকারখানা গড়ার জন্য? সেটি তো শরিয়ত পালনের জন্য। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ও কলকারখানা তো কাফের দেশেও গড়া যায়। মুসলিমগণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে কাফেরদের থেকে ভিন্ন পরিচয় পায় তার ঘর-বাড়ী ও দৈহিক বৈশিষ্ঠের কারণে নয়, বরং নামায-রোযার ন্যায় কারণে। তেমনি মুসলিম রাষ্ট্র কাফের রাষ্ট্র থেকে ভিন্ন পরিচয় পায় আদালতে শরিয়তী বিধানের কারণে। পরকালে ঈমানদারগণ কাফেরদের থেকে ভিন্নতর বাসস্থান পাবে দুনিয়ার বুকে এই ভিন্নতর নিয়ে বাঁচার কারণে। সে ভিন্নতা এ দুনিয়ার জীবনে বিনষ্ট হলে পরকালেও কি কাফেরদের থেকে ভিন্ন স্থান মিলবে? রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ও কলকারখানা না গড়ায় কেউ জাহান্নামে যাবে না। কিন্তু জাহান্নামে যাবে শরিয়ত পালন না করায়। কারণ, তাতে বিদ্রোহ হয় মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে।
যে বিপদ পরাজিত হওয়ার
ইসলামী বিরোধী শক্তির হাতে পরাজিত হওয়ার বিপদ অতি ভয়ানক। প্লাবনের জলে যেমন সব কিছু ভেসে যায়, তেমনি দেশে ইসলামের শত্রুশক্তির বিজয় আসলে মুসলিমদের ঈমাদ-আক্বিদাও বিলুপ্ত হতে থাকে। এজন্যই শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো শত্রুশক্তির হাতে পরাজিত হওয়া থেকে বাঁচা। এজন্যই শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো জিহাদ। এবং ফরজ হলো সর্বাবস্থায় সর্ব শক্তি দিয়ে জিহাদের জন্য প্রস্তুত থাকা –যার নির্দেশ এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে।
ইসলামের মোদ্দা কথা হলো, শরিয়ত পালন ছাড়া পূর্ণ ইসলাম হয় না। মহান আল্লাহতায়ালার এমন কি একটি মাত্র হুকুম অমান্য করা হলো শয়তানের সূন্নত। শরিয়ত পালন না করায় শয়তানের সে সূন্নতই পালিত হচ্ছে। শুধু নামায, রোযা, হজ্ব,যাকাত পালনে শরিয়ত পালনের সুযোগ সৃষ্টি হয় না। মসজিদ ও মাদ্রাসায় দেশ পূর্ণ করলেও সে সুযোগ আসে না। এজন্য জরুরী হলো শয়তানী শক্তির শাসনের অবসান এবং ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। সেজন্য জরুরি হলো জিহাদ। কারণ, একমাত্র জিহাদই শত্রুশক্তির দখলদারি থেকে মুক্তি দেয়, এবং সুযোগ করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। রাষ্ট্র তখন জনগণের শত্রু রূপে নয়, বরং কল্যাণকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। একমাত্র তখনই মুর্তি নির্মাণ ও মুর্তিপূজার সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়। সে পথ না ধরলে হাসিনার অবৈধ সরকারের হাতে জনগণের অর্থে যেভাবে মুর্তি নির্মাণ শুরু হয়েছে -সেটি থামবে না। এবং মুর্তিনির্মাণ শুরু হলে তো মুর্তিপূজাও শুরু হয়। তখন মুর্তিপূজা বাঙালী মুসলিমের সংস্কৃতিতে পরিণত হবে। তখন প্রতিটি শহর, প্রতিটি থানা, প্রতিটি ইউনিয়ন এবং প্রতিটি স্কুলে স্থাপিত হবে মুজিবের মুর্তি। নগ্ন পায়ে সে মুর্তির সামনে গিয়ে হিন্দুদের ন্যায় প্রণাম করাটি রীতিতে পরিণত হবে। তখন পুলিশে কাজ হবে জনগণের জানমাল নয়, বরং মুজিবের এ মুর্তিগুলিকে পাহারা দেয়া। জনগণের রাজস্বের অর্থ এভাবে মুর্তিপূজার ন্যায় পাপ বাঁচাতে ব্যয় হবে।
কুফরির এ জোয়ার রুখতে প্রতিটি ঈমানদারেরই কিছু করণীয় আছে। নবীজী (সাঃ) শুধু নামায-রোযা ও দোয়া-দরুদের মাধ্যমে ক্বাবার বুক থেকে মুর্তিগুলি নির্মূল হয়নি। প্রতিটি মুসলিমকে সে জন্য জিহাদে নামতে হয়েছে। জান ও মালের বিপুল বিনিয়োগও করতে হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও দোয়া-দরুদের হিসাবই হবে না, হিসাব হবে ইসলামের শত্রুশক্তির নির্মূলে কার কি ভূমিকা ছিল -সেটিরও। মুসলিম ভূমিতে পৌত্তলিক শক্তির দখলদারি প্রতিষ্ঠা পেলে তখন জিহাদ ফরজ হয়ে যায়। এবং সে দখলদারী নীরবে মেনে নেয়া কবিরা গুনা। সে গুনাহর ফলে আরো অনেক গুনাহর রাস্তা খুলে যায়। বাংলাদেশে গুম, খুন, ধর্ষণ ও মুর্তিপূজার জোয়ার আসছে –তা তো সে গুনাহরই ধারাবাহিকতা।
বাংলাদেশের মুসলিম প্রজাদের অপরাধও কম নয়। তারা ইসলামের দুশমন শক্তির দখলদারি শুধু নীরবে মেনেই নেয়নি, বরং প্রতিটি মুর্তি নির্মূল হচ্ছে পুরাপুরি তাদেরই অর্থে। ফলে ভয়ানক এ পাপটি শুধু হাসিনার একার নয়, জনগণেরও। শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতে কি এ পাপ থেকে মুক্তি মিলবে? রাস্তায় নেমে কিছু মিটিং করলেই কি সে পাপ মোচন হবে? মিছিল মিটিংয়ে কি নবীজী (সাঃ)’র সূন্নত পালন হয়? নবীজী (সাঃ) কি স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতে ধর্মপালন সীমিত রেখেছিলেন? পথ তো একটাই। যে ভাবে নবীজী (সাঃ) মক্কার উপর থেকে কাফেরদের অধিকৃতি নির্মূল করেছিলেন এবং নির্মূল করেছিলেন কাব্বার ভিতরের মুর্তিগুলি –সে পথ ছাড়া কি মুসলিমদের সামনে ভিন্ন পথ আছে? ১২/১২/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018