শ্রেষ্ঠ মানব এবং শ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মাণ কিরূপে?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on September 8, 2024
- সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
কিরূপে ঘটলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবটি?
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবটি ঘটেছে আরবে। এবং সেটি আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে। সে বিপ্লবের ফলে আরবের অসভ্য মানুষেরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবে পরিণত হয়েছে। এবং তারা জন্ম দিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার। কিন্তু কিরূপে সৃষ্টি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সে মানব এবং কিরূপে নির্মিত হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সে সভ্যতা -সেটিই হলো মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়। এবং সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয়ও। তবে সেটি বুঝা কোন জটিল রকেট সায়েন্স নয়। কে ছিলেন সে বিপ্লবের মূল নায়ক, কি ছিল তাঁর দর্শন এবং কি ছিল তাঁর রোডম্যাপ -সেগুলি বুঝলেই এ মহা বিপ্লবের রহস্য বুঝা যাবে। এবং সেদিনের সে দর্শন ও রোডম্যাপ অনুসরণ করলে াআজও সেরূপ একটি বিপ্লব সম্ভব। সে প্রতিশ্রতিটি মহান আল্লাহতায়ালার। কারণ এ বিপ্লবের মালিকানা (ownership) ও পথ দেখানোর দায়িত্ব একমাত্র তাঁরই।
সে মহাবিপ্লবের নায়ক ছিলেন সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহান নবীজী মহম্মদ (সা:)। সে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, তিনিই ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। সে বিপ্লবের মূলে ছিল আখেরাতে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদেহীতার ভয়। সেটি ছিল মৃত্যুহীন ও অন্তহীন কাল ধরে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধিভুত হওয়ার ভয়। এ তীব্র ভয় ব্যক্তির প্রতি দিনের ভাবনা, চরিত্র, কর্ম, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতির জগতে অনিবার্য করে তোলে এক মহাবিপ্লব। এ বিপ্লবে পথ দেখায় পবিত্র কুর’আন। জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে ঈমানদার ব্যক্তি প্রতি পদে পায় কুর’আনী নির্দেশনা। পায় কুর’আনী ভিশন ও মিশন। তখন এ মানুষটি সে শুধু বাঁচার জন্য বাঁচে না। বরং বাঁচে সে ভিশন ও মিশনকে বিজয়ী করার জিহাদ নিয়ে। এমন এক ভাবনা কারণে শুধু ব্যক্তির জীবনে বিপ্লব আসেনি, এমন বিপ্লবী মানুষেরা বিপ্লব অনিবার্য করে রাষ্ট্রের অঙ্গণে। নবীজী (সা:) এবং সাহাবাদের জামানায় তো সেটিই হয়েছে।
আখেরাতের ভয় ব্যক্তিকে পদে পদে সতর্ক থাকতে ও ভাবতে শেখায়। এবং প্রতিটি পাপ থেকে সতর্কতার সাথে বাঁচতে শেখায়। নবীজী (সা:)’র আমলে আরবের জনগণ মহান আল্লাহতায়ালাকে অবিশ্বাস করতো -বিষয়টি তা নয়। বরং আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বকে তারা শুধু বিশ্বাসই করতো না, প্রবল বিশ্বাস নিয়ে সন্তানের নাম আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান রাখতো। কিন্তু তাদের মূল সমস্যাটি ছিল অন্যত্র। তারা বিশ্বাস করতো না মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে এবং রোজ হাশরের বিচার দিনে জবাবদেহীতাকে। তারা বিশ্বাস করতো না জান্নাত ও জাহান্নামকে। নবীজী (সা:)’র যুগে পরকালে পুনরুত্থান নিয়ে আরব কাফিরগণ কি ভাবতো -ইতিহাস থেকে তাদের সে ভাবনা হারিয়ে যায়নি। মহান আল্লাহতায়ালা তাদের বক্তব্যগুলিকে রেকর্ড করে রেখেছেন পবিত্র কুর’আনে। তারই নমুনা হলো:
بَلْ عَجِبُوٓا۟ أَن جَآءَهُم مُّنذِرٌۭ مِّنْهُمْ فَقَالَ ٱلْكَـٰفِرُونَ هَـٰذَا شَىْءٌ عَجِيبٌ ٢
أَءِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًۭا ۖ ذَٰلِكَ رَجْعٌۢ بَعِيدٌۭ ٣
অর্থ: “বরং তারা বিস্মিত হলো যখন তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে একজন সতর্ককারী এলো (এবং মৃত্যুর পর আবার পুনরুত্থানের কথা শোনালো); (সে কথা শুনে) তারা বললো, “এটি তো বড়ই আশ্চর্য বিষয়! আমরা যখন মারা যাবো এবং পরিণত হবো মৃত্তিকায়, আমরা কি আবার পুনরুত্থিত হবো? (তারা আরো বললো) সুদূর পরাহত সে প্রত্যাবর্তন।” –(সুরা ক্বাফ, আয়াত ২-৩)। তারা আরো বলতো:
وَكَانُوا۟ يَقُولُونَ أَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًۭا وَعِظَـٰمًا أَءِنَّا لَمَبْعُوثُونَ ٤٧
أَوَءَابَآؤُنَا ٱلْأَوَّلُونَ ٤٨
অর্থ: “এবং তারা বলতো, আমরা যখন মারা যাবো এবং পরিণত হবো মৃত্তিকায় ও অস্থিতে, এরপরও কি আমরা আবার উত্থিত হবো তথা জীবিত হবো? (পুনরুত্থিত হবে কি) এমন কি আমাদের পূর্বপুরুষগণও?” –(সুরা ওয়াকেয়া, আয়াত ৪৭-৪৮)।
আখেরাতের উপর বিশ্বাস না থাকায় তাদের সকল চেষ্টা ও সামর্থ্য ব্যয় হতো একমাত্র দুনিয়াবী জীবনকে আনন্দময় করতে। তখন তাদের সকল কর্ম, রাজনীতি, যুদ্ধবিগ্রহ পরিচালিত হতো নিরেট স্বার্থপরতা থেকে। সে স্বার্থপরতার কারণে এমন কি নিজ সন্তানও তাদের কাছে আপদ ও শত্রু মনে হতো। তারা ভাবতো, সন্তানেরা তাদের ভোগের আয়োজনে ভাগ বসাবে। তেমন এক স্বার্থপর ভাবনার কারণেই আরবের মানুষদের মাঝে কন্যা সন্তানদের জীবন্ত দাফন করার রেওয়াজ ছিল। এ দিক দিয়ে তারা ছিল নিরেট সেক্যুলার তথা ইহজাগতিক। তাদের সে সেক্যুলার চেতনার অন্ধকার ভূমিতে নবীজী (সা:) এক আমূল বিপ্লব আনেন। তাঁর জীবনের প্রথম জিহাদটি ছিল জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে। সে জিহাদে নবীজী (সা:) হাতিয়ার রূপে বেছে নেন পবিত্র কুর’আনকে।
জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে এ কুর’আনী জ্ঞানের জিহাদকে মহান আল্লাহতায়ালা সুরা ফুরকানে ৫২ নম্বর আয়াতে “জিহাদান কবিরা” বলেছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে এটিই হলো মানব জীবনের সবচেয়ে বড় জিহাদ। এ জিহাদের ভূমি ব্যক্তির নিজের জীবন। এ জিহাদ পূর্ণ ভাবে হলে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত না হলেও ব্যক্তির কোন ক্ষতি হয়না। সে তাঁর মহান প্রভুর কাছে ফিরে যায় পূর্ণ মুজাহিদ ও পূর্ণ মুসলিম রূপে। আর ব্যক্তির জীবনে এ জিহাদটি না হলে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত হলেও তার নিজের কোন লাভ হয়না। সে নিজে ব্যর্থ হয় পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হতে।
ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজে এ বড় জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এ জিহাদে অবশ্যই বিজয়ী হতে হয়। নইলে ব্যর্থতা অনিবার্য। এবং ব্যর্থ হলে পূর্ণ ইসলাম পালনে সহায়ক মেলে না। তখন বাঁচতে হয় অপূর্ণাঙ্গ মুসলিম রূপে। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদে নবীজী (সা:)’র বিশাল বিজয়ের মূল কারণ, তিনি পুরোপুরি সফল হয়েছিলেন জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে পরিচালিত বড় জিহাদে। অথচ এ যুগে অন্যদের ব্যর্থতার মুল কারণ, তারা ব্যর্থ হয় এই বড় জিহাদে। পবিত্র কুর’আনী জ্ঞানের আলোকে নবীজী (সা:) তাঁর সাহাবাদের আখেরাতে পূর্ণ বিশ্বাসী রূপে গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন। জ্ঞানচক্ষুর সামনে তারা যেমন নিয়ামত ভরা জান্নাত দেখতেন, তেমনি দেখতেন লেলিহান আগুনে ভরা জাহান্নাম। এটিই ছিল তাদের প্রতিক্ষণের মারেফত তথা জাগ্রত সজ্ঞানতা। তারা বিশ্বাস করতেন, মৃত্যু এ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে না, বরং মৃত্যুহীন ও অন্তহীন এক জীবনি নিয়ে হাজির করে। কে জান্নাতে যাবে এবং কে জাহান্নামে যাবে -সেটি নির্ভর করে ঈমান ও আমলের উপর। ঈমান ও আমলের পরীক্ষা নেয়ার জন্যই এ দুনিয়ার জীবন। মহান আল্লাহতায়ালা সেটি জানিয়েছেন সুরা মুলকের ২ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًۭا ۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ
অর্থ: “তিনিই সেই মহান আল্লাহতায়ালা যিনি মৃত্যু ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মধ্য আমলের দিক দিয়ে কে উত্তম -সেটি পরীক্ষার জন্য; এবং তিনি পরাক্রমশালী ও গুনাহ মাফকারী।”
একই রূপ বয়ান এসেছে সুরা কাহাফের ৭ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى ٱلْأَرْضِ زِينَةًۭ لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًۭا
অর্থ: “নিশ্চয়ই জমিনের উপর আমার যা আয়োজন তাকে সোন্দর্যময় করেছি, সেটি এজন্য যে তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে আমলের দিক দিয়ে উত্তম।”
উপরের আয়াত দুটিতে যা কিছু বলা হয়েছে তার অর্থ দাঁড়ায়, সুন্দর এ পৃথবীর বুকে মহান আল্লহতায়ালার যা কিছু বিশাল ও বিচিত্র আয়োজন তার মূল লক্ষ্য একটিই, সেটি হলো জান্নাতের জন্য যোগ্য মানুষদের বাছাই করা। এবং সে বাছাইয়ের জন্য পরীক্ষা নেয়া। তাই এ সমগ্র পার্থিব জীবনটি পরীক্ষাময়। তিনি পরীক্ষা নেন যেমন প্রাচুর্য দিয়ে, তেমনি নানা রূপ বিপর্যয় দিয়ে। জান্নাতের যোগ্য হতে হলে অবশ্যই এ পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। যারা পরীক্ষার হলে হাজির হয়ে পরীক্ষা দেয়, আর যারা পরীক্ষার বাইরে আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত -এই উভয় দলের চিন্তা-ভাবনা ও কর্ম কখনোই একই রূপ হয়না। পরীক্ষা দিতে বসে কেউ ঘুমোয় না, আনন্দ-উৎসবও করে না। বরং প্রতিটি মুহুর্তে মনযোগ নিবদ্ধ থাকে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া নিয়ে। পার্থিব এ জীবন নিয়েও এরূপ একটি ধারণায় বিশ্বাসী হলে পাল্টে যায় ব্যক্তির কর্ম, চরিত্র, সংস্কৃতি ও রাজনীতি। পরীক্ষায় পাশের চিন্তা থেকেই শুরু হয় ঈমানদারের জীবনে আমূল বিপ্লব। তখন এ জীবনের আনন্দ-উল্লাস ও আরাম-আয়েশ অতি তুচ্ছ মনে হয়
সুরা মুলক ও সুরা কাহাফের উপরিউক্ত দুটি আয়াতটি পবিত্র কুর’আনের অতি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। এ আয়াতটিতে প্রকাশ পেয়েছে, মানব সৃষ্টির পিছনে মহান আল্লাহতায়ালার মূল উদ্দেশ্য ও দর্শনটি। এ আয়াত দুটিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবাণী রয়েছে প্রতিটি মানব সন্তানের জন্যও। সে সতর্কবাণীটি হলো, প্রতিটি নর ও নারীর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামতটি হলো তার নানাবিধ দৈহিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যে পরিপূর্ণ এ পার্থিব জীবন। এ জীবন পরিণত হতে পারে জান্নাত লাভের চাবীতে। তবে শর্ত হলো, সে জন্য পাশ করতে হয় ঈমান ও আমলের পরীক্ষায়। মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষায় পাশ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাগে না; অর্থশালীও হতে হয়না। বরং থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার উপর অটল বিশ্বাস এবং তাঁর এজেন্ডার সাথে একাত্মতা। থাকতে হয় সে এজেন্ডার বিজয়ে অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের বিনিয়োগ। এবং সে লক্ষ্যে প্রতিটি বিনিয়োগই হলো নেক আমল। অপর দিকে প্রতিটি পাপকর্ম হলো খেয়ানত। খেয়ানত এখানে মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত সামর্থ্যের তথা আমানতের। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বেজে উঠে এ পরীক্ষার শেষ ঘন্টাটি। তাই এ জীবনের সবচেয়ে বড় প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তাটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায়গুলি পাশ করা নয়। এমন পাশ তো বহু জালেম, ফাসেক ও দুর্বৃগগত্ত বেঈমানগণও করে। বরং সেটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত পরীক্ষায় পাশ করা। একমাত্র সে পাশই জান্নাতে নেয়। আমানতের ভয়ানক খেয়নাত হয় যদি এ পরীক্ষা পাশে মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত নিয়ামত-ভরা এ জীবনকে কাজে লাগানো না হয়।
তাই বাস্তবতা হলো, প্রতিটি মানুষের প্রতিক্ষণের বসবাসটি পরীক্ষার মধ্যে। এবং সর্বক্ষণ পরীক্ষার মধ্যে থাকার ভাবনা নিয়ে বাঁচাই হলো তাকওয়া। মহান আল্লাহতায়ালার সার্বক্ষণিক নজর ব্যক্তির প্রতিটি কথা ও প্রতিটি আমলের দিকে। তিনি শুধু রেজেকদাতা ও প্রতিপালকই নন, বরং প্রতিটি কর্মের পরীক্ষকও। প্রতিটি ব্যক্তির প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য চিন্তার খবর তিনি রাখেন। প্রত্যেকের দুই কাঁধে আসীন রয়েছেন দুইজন ফিরেশতা। ফলে কোন মানবই তাঁর রাডারের বাইরে নয়। এ পরীক্ষায় তারাই ভাল ফল পায় যাদের প্রতিক্ষণের ব্যস্ততা এমন কাজে -যা মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করে। সে সাথে এমন কাজ থেকে বিরত থাকে -যা তাঁর অপছন্দের। যে ব্যক্তি প্রতিক্ষণ এমন সজ্ঞানতা নিয়ে বাঁচে, সে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে পরীক্ষা দেয়ার আগে নিজেই নিজের পরীক্ষা নেয়। এভাবেই পদে পদে নিজেকে যোগ্যতর করে মাগফিরাত লাভে। মু’মিনের কর্ম, আচরণ এবং বাঁচার সংস্কৃতিতে এভাবেই ঘটে যায় আমূল বিপ্লব। এরূপ বিপ্লবের মূল কারণ, মগজে ঘটে যাওয়া দর্শনের বিপ্লব। সেরূপ বিপ্লব যার জীবনে ঘটেনি, তার পক্ষে অসম্ভব হলো এ পরীক্ষায় পাশ করা। পরীক্ষার হলও তখন তার কাছে ফুর্তি-ভরা সার্কাস বা রঙ্গমঞ্চ মনে হয়। তখন পরীক্ষায় মনযোগী না হয়ে ভোগে ও আনন্দ-ফুর্তিতে মত্ত হয়।
ব্যক্তির দর্শনে যে আমূল বিপ্লবটি আনে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান -দর্শনের জগতে সেটিই হলো সবচেয়ে বড় বিপ্লব। একমাত্র সে বিপ্লবের ফলেই মানব ফেরেশতাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর হয়। সে বিপ্লবের ফলে পাল্টে গেছে তাদের বাঁচার এজেন্ডা, কর্ম ও চরিত্র। কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতা নিয়ে কি কখনো সেরূপ বিপ্লবের কথা ভাবা যায়? দর্শনে বিপ্লব এলে ঈমান ও নেক আমলের ধারণাই পাল্টে যায়। অন্যের কল্যাণে অর্থদান, বস্ত্রদান, চিকিৎসাদান, গৃহদান -এ সবই নেক আমল। মসজিদ-মাদ্রাসা গড়াও নেক আমল। তবে সবচেয়ে বড় নেক আমলটি হলো, মানুষকে জাহান্নামে আগুন থেকে বাঁচানো। সে কাজে ব্যক্তির একার সামর্থ্য অতি সামান্য। তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো, সর্বশ্রেষ্ঠ সে নেক কাজে পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের সামর্থ্যকে কাজে লাগানো। যেমনটি নবীজী (সা:) করেছিলেন। ফলে সে সময় সংঘটিত হয়েছিল মানব ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে বড় নেক কর্মটি। প্রতিষ্ঠ পেয়েছিল ইসলামী রাষ্ট্র। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাওয়াতে সেদিন বহু কোটি মানুষ বেঁচেছিল জাহান্নামের আগুন থেকে। রাষ্ট্রের দ্বারা সে বিশাল কাজটি একমাত্র তখনই সম্ভব যখন রাষ্ট্রের উপর প্রতিষ্ঠা পায় মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন। এবং যখন প্রতিষ্ঠা পায় দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং সুশিক্ষা-সুবিচার প্রতিষ্ঠার বিরামহীন জিহাদ। এবং প্রতিষ্ঠা পায় কুর’আনে ঘোষিত তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক পলিসি। তখন সসম্ভব হয় সেরূপ একটি রাষ্ট্রের বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মাণ। মুসলিমদের গৌরবযুগে তো সেটিই হয়েছিল। তাই প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সে পবিত্র এজেন্ডার সাথে পূর্ণ ভাবে একাত্ম হওয়া। নবীজী (সা:) আমলে যারা সে এজেন্ডার সাথে একাত্ম হয়নি তাদেরকে কাফির ও মুনাফিক বলা হয়েছে। সে মুনাফিকদের নামাজ-রোজা তাদেরকে মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচাতে পারিনি।
তাই ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু মহান আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাস করা নয় বরং তাঁর এজেন্ডার সাথে পুরোপুরি একাত্ম হওয়াও। এবং যারাই একাত্ম হয়, তারাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার আমৃত্যু সৈনিকে পরিণত হয়। তাদের জীবনে তখন বিরামহীন জিহাদ শুরু হয় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও সে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্য। দর্শনের বিপ্লব এভাবেই মুসলিম জীবনে রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব আনে। নির্মিত হয় উচ্চত নতুন সভ্যতা। ইসলামের প্রাথমিক যুগে তো সেটিই দেখা গেছে। অপর দিকে কুর’আন তেলাওয়াত, কুর’আন মুখস্থ এবং নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করেও যারা ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হতে, বুঝতে হবে তাদের চেতনা রাজ্যে বিপ্লব আসেনি। বুঝতে হবে, পাল্টায়নি তাদের দর্শনের মডেল। এদের বাঁচাটাই তখন ভয়ানক আযাবের কারণ হয়। সে আযাব যেমন জাহান্নামে, তেমনি এ পার্থিব জীবনে।
অজ্ঞতার নাশকতা
মানবের সবচেয়ে বড় শত্রু তার নিজের অজ্ঞতা। অজ্ঞতার কারণেই মানব যেমন তার সুপ্ত সামর্থ্য আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়, তেমনি ব্যর্থ হয় সভ্য ও উন্নত জীবন নিয়ে বেড়ে উঠতে। আর সে ব্যর্থতার কারণে ব্যর্থ হয় সভ্য রাষ্ট্র নির্মানে। ব্যক্তির বিস্ময়কর দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য তখন অজানা ও অব্যবহৃত থেকে যায়। অজ্ঞতার কারণে মানুষ পথ হারায় এবং জাহান্নামে আগুনে গিয়ে হাজির হয়। অপর দিকে অজ্ঞতার অন্ধকারে যাদের বসবাস, তাদের কাছে অজ্ঞতা নিয়ে বাঁচাই অহংকারে পরিণত হয়। সেরূপ অহংকার দেখা যায় ভারতের প্রায় শত কোটির হিন্দুর মাঝে। মূর্তিপূজা, দেব-দেবী পূজা, লিঙ্গপূজা, গরুপূজার ন্যায় আদিম অজ্ঞতা নিয়েও তাদের কত গর্ব! অজ্ঞতার এমন গর্বে অসম্ভব হয় সে অজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসা। একে বলা যায় inertia of belief and culture অর্থাৎ ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির স্থিতি অবস্থা। সেরূপ একটি অবস্থার কারণে ভারতীয় হিন্দুরা বহু হাজার বছর পূর্বের অজ্ঞতা, বর্ণবাদ ও জাত-পাতের অসুস্থ সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচছে। এমন অজ্ঞতার কারণে কোন কালেই কোন সভ্য রাষ্ট্র ও সভ্যতার জন্ম দিতে পারিনি। এমনকি আধুনিক যুগেও তারা ইতিহাস গড়ছে মুসলিম নির্মূলের গণহত্যায়। এমন কি ইতিহাস গড়ছে গোমুত্র সেবনে ও মসজিদ ধ্বংসে।
ভারতে বিজ্ঞানী, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যাটি বিশাল; এবং তাদের অর্জনও অনেক। কিন্তু তারা ভারতবাসীদের বাঁচতে পারছে অজ্ঞতার নাশকতা থেকে। তারা আদিম অজ্ঞতাগুলি পরিত্যাগের নাম নিচ্ছে না। বরং আজও বাঁচছে মূর্তিপূজা, লিঙ্গপূজা ও গরুপূজা নিয়ে। ভারতে বুকে সভ্য রাষ্ট্র ও উন্নত সভ্যতার নির্মাণের পথে এরূপ অজ্ঞতাই হলো সবচেয়ে বড় বাধা। দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ের সাথে তীব্রতর হচ্ছে আদিম অজ্ঞতার জোয়ার। ফলে শত বছর আগে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণের কাজটি না হলেও আজ সেটি বিপুল উৎসবভরে হচ্ছে। এবং এমন নৃশংস অসভ্যতার পিছনে বিপুল জনসমর্থনও রয়েছে।
যাদের জ্ঞান শুধু ক্ষুদ্র পার্থিব জীবন নিয়ে সীমিত এবং কিছুই জানে না অন্তহীন আখেরাতের জীবনকে নিয়ে -সে অজ্ঞতার পরিণাম তো ভয়াবহ। মানবের আসল ঠিকানা তো আখেরাত। তাই প্রস্তুতি নিতে হয় আখেরাতের জীবনে সফল হওয়া জন্য। সে সফলতাটি তো জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায় এবং জান্নাতের যোগ্য রূপে গড়ে তোলে। মানব জীবনে এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। প্রতিটি মানুষ এ দুনিয়ায় কয়েক দিনের মুসাফির মাত্র। পৃথিবীর সবগুলি মহাসাগরের সমুদয় পানির সাথে এ ফোটা পানির তূলনা চলে -কারণ উভয়ই সীমিত। কিন্তু অনন্ত-অসীম আখেরাতের সাথে কি এ ক্ষুদ্র পার্থিব জীবনের তূলনা হয়?
এ পৃথিবীতে মৃত্যু অনিবার্য; কিন্তু মৃত্যু নেই আখেরাতে। আখেরাত নিয়ে অজ্ঞ থাকার বিপদ তাই ভয়ানক। সে অজ্ঞতা জাহান্নামে হাজির করে। ফলে এ অজ্ঞতাই হলো মানব জীবনের সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা। এ অজ্ঞতার নাশকতা তাই ভয়ানক। বিষ যেমন দেহের বিনাশ ঘটায়, অজ্ঞতা তেমনি ঈমানের মৃত্যু ঘটায়। এ অজ্ঞতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সেরা ডিগ্রি লাভ -এমন কি নবেল প্রাইজ প্রাপ্তিতে দূর হয়না। সে জ্ঞানের একমাত্র উৎস ওহীর জ্ঞান। সে জন্যই পবিত্র কুর’আন থেকে শিক্ষা লাভ ইসলামে এতো গুরুত্বপূর্ণ। সেটি ফরজ। সে ফরজ আদায় না হলে নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত -এমন কি তাহাজ্জুদ পড়েও মানুষ নৃশংস জালেম, খুনি, ভোটচোর ও ভোটডাকাত হয়।
প্রসঙ্গ: সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার
জাহান্নামে পৌঁছতে জ্ঞানবান হতে হয় না। নানা ধর্ম ও নানা মতের নামে গড়ে উঠা অসংখ্য পথের মাঝে যে কোন একটিকে বেয়ে চললেই চলে। সে পথটি যে নিশ্চিত জাহান্নামে পৌঁছাবে -তা নিয়ে সন্দেহ নাই। কিন্তু জান্নাতের পথ মাত্র একটিই। সেটিই হলো কুর’আন বর্ণিত সিরাতাল মুস্তাকীম। জান্নাতে পৌঁছতে হলে জান্নাতের পথ “সিরাতাল মুস্তাকীম”টি অবশ্যই চিনতে হয় এবং সেটি পদে পদে অনুসরণ করতে হয়। সকল আবিষ্কারের মাঝে মানব জীবনে সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হলো জান্নাতের এ পথটির আবিষ্কার করা। এ পথটি আবিষ্কারে ব্যর্থ হওয়ার শাস্তি অতি ভয়ানক; সেটি জাহান্নামের আগুন। তবে এ পথটি আবিষ্কারের সামর্থ্য কোন জাহেল বা অজ্ঞ ব্যক্তির থাকে না, সে জন্য ওহীর জ্ঞানে জ্ঞানী হতে হয়। মহান আল্লাহতায়ালঅ এজন্যই নামাজ-রোজা ফরজ করার আগে কুর’আনের জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছেন।
বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশে বহু হাজার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বহু লক্ষ শিক্ষক শিক্ষাদানের কাজে জড়িত। কিন্তু কুর’আনী জ্ঞানদানের ফরজটি আদায় হচ্ছে না। ফলে আবিষ্কৃত হচ্ছে না সিরাতাল মুস্তাকীম। কারণ, সিরাতাল মুস্তাকীম চিনতে হলে তো কুর’আন বুঝতে হয়। ফলে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ যে পথে চলেছিলেন সে পথে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলির মুসলিমগণ চলছে না। তারা বেছে নিয়েছে নিজেদের পছন্দমত পথ। সেটি সেক্যুলারিজম, লিবারালিজম, সোসালিজম, নাস্তিকতবাদ, স্বৈরাচার, জাতীয়তাবাদ ও গোত্রবাদের পথ। মুসলিম উম্মাহর আজকের নানামুখী ব্যর্থতার মূল কারণ, এই শিক্ষাগত ব্যর্থতা। এ শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রদের সত্যের আবিষ্কারক বানাতে পারিনি। আর সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থ হলে বাঁচতে হয় মিথ্যা নিয়ে। ফলে ছুটছে জাহান্নামের পথে। শিক্ষাব্যবস্থা এ ভাবেই পরিণত হয়েছে শয়তানের হাতিয়ারে।
ব্যর্থতা সিরাতাল মুস্তাকীম চেনায়
নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের ফরজ ও সূন্নতগুলি যত সুচারু ভাবে পালন করা হোক না কেন -তা দিয়ে জ্ঞানার্জনের ফরজ আদায় হয়না। ফলে অজ্ঞ বা জাহিল থাকার আযাবও দূর হয়না। জ্ঞানের শুণ্যতা কেবল জ্ঞানই দূর করতে পারে। তাই নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত দিয়ে সিরাতাল মুস্তাকীম চেনার কাজটিও হয়না। সে কাজটি কুর’আনী জ্ঞানের। সিরাতাল মুস্তাকীম চেনার কাজটি যে হয়নি -তার প্রমাণ আজকের ব্যর্থ মুসলিমগণ। বুঝতে হবে, সিরাতাল মুস্তাকীমে শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়াদরুদের ন্যায় ইবাদত থাকে না, সে পথে অবশ্যই থাকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদ। থাকে দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং থাকে সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশে তো এর কোনটাই তো নাই। বরং যা আছে তা হলো গুম, খুন, ধর্ষণ, বৈচারিক হত্যা, বিচার-বহির্ভুত হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, ব্যাংক লুট, ট্রেজারী লুট এবং উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লুটের জোয়ার। এ দেশে কুর’আনের জ্ঞান নিয়ে বেড়ে উঠার কাজটি হলে তো চলমান দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে লাগাতর জিহাদ শুরু হতো; জনগণ এ ভাবে দুর্বৃত্তির জোয়ার ভেসে যেত না। দুর্বৃত্তির জোয়ারে ভেসেই তারা প্রমাণ করেছে তারা সিরাতাল মুস্তাকীমে নাই।
কোন পথ জান্নাতে নেয় এবং কোন পথ জাহান্নামে নেয় -তা নিয়েই বস্তুত পবিত্র কুর’আনের মূল আলোচনা। কারণ, নিজের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে জান্নাতে নেয়াই মহান আল্লাহতায়ালার মূল এজেন্ডা। এবং জান্নাতে যাওয়ার চেয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাও কোন ব্যক্তিরই থাকতে পারে না। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ও ব্যক্তির এজেন্ডা যখন একাকার হয় -একমাত্র তখনই রাষ্ট্রে বিপ্লব আসে। সেরূপ একাত্মতা দেখা গেছে নবীজী (সা:) ও সাহাবীদের জীবনে। কিন্তু সে একাত্মতা নেই আজকের মুসলিমদের জীবনে। তাদের অনেকেই বরং বাঁচে স্বৈরাচারী, জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, সেক্যুলার ও লেবারেল এজেন্ডা নিয়ে। জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচা। এবং তাদের মাঝে এতোটা প্রবল ভাবে কাজ করেনা জান্নাতে যাওয়ার তাড়না। ফলে বিজয়ের বদলে জুটছে পরাজয়।
ব্যর্থতা নিয়েতে ও বিনিয়োগে
ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার নিয়েত ও বিনিয়োগ। ব্যক্তির এ জীবনের সমগ্র বাঁচাটাই ভয়াবহ আযাবের কারণ হয় এবং তাকে জাহান্নামে নেয় যদি তার নিয়েত ও বিনিয়োগ ভূল পথে হয়। কাউকে পুরস্কৃত করার আগে মহান আল্লাহতায়ালা দেখেন তার নিয়েত এবং বিনিয়োগ। কোন পথে ও কাকে বিজয়ী করায় তার সামর্থ্যের বিনিয়োগ হলো -তার উপর নির্ভর করবে তার পুরস্কার বা শাস্তি। নিয়তের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির ঈমান, চেতনা ও প্রায়োরিটি কথা বলে। এবং নিয়তের পথ ধরেই ব্যক্তি তার সামর্থ্যের বিনিয়োগে নামে। তাই হযরত উমর (রা:) থেকে বর্ণীত বোখারী শরিফের প্রথম হাদীস: “ইন্নামাল আমালু বিন নিয়াত।” অর্থ: “নিশ্চয়ই আমলের মূল্যায়ন হবে তার নিয়তের ভিত্তিতে।”
ব্যক্তির আমল শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তার রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, সমাজসেবা ও যুদ্ধবিগ্রহের ন্যায় প্রতিটি কর্ম। তাই শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতে আল্লাহতায়ালার উদ্দ্যেশে নিয়েত রাখলে চলে না, বরং মহান আল্লাহতায়ালকে খুশি করা ও তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার নিয়েত থাকতে হয় প্রতিটি কর্মে। এমন কর্ম যেমন এ জীবনে পুরস্কার আনে, তেমনি পুরস্কার আনে আখেরাতে। অপর দিকে যাদের এজেন্ডা হলো জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, সমাজতন্ত্র, দলতন্ত্র, ফ্যাসিবাদকে বিজয়ী করা -তাদের নিয়তে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন বা তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কোন অভিপ্রায় থাকে না। বরং তাদের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে থাকে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সে নিয়েত ও বিনিয়োগ তাদেরকে জাহান্নামে হাজির করে।
নিয়ত ও বিনিয়োগই ব্যক্তির জীবনে পরিবর্তনের সুচনা করে। তবে সে কতটা সফল হবে বা বিফল হবে -সেটি ব্যক্তির নিজের হাতে থাকে না। সেটি থাকে মহান আল্লাহতায়ালা হাতে। সেজন্যই সফল হওয়ার জন্য যেমন পুরস্কার নাই, তেমন বিফল হওয়ার জন্যও শাস্তি নাই। পুরস্কার পায় নেক নিয়েত ও নিক আমল বা বিনিয়োগের প্রতিদানে। ঈমানদারের ঈমানী দায়বদ্ধতা হলো তাকে একাত্ম হতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে। এবং আমৃত্যু নিয়েত থাকতে হয় তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করায় নিজের সর্ব সামর্থ্যের বিনিয়োগের। এই নিয়েত ও বিনিয়োগই তাকে আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয়তর করে। কিন্তু আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে যাদের নিয়েত নাই এবং নিজ সামর্থ্যের কোন বিনিয়োগও নাই -তাদের দায় আল্লাহ নেন না। তাদের ভাগ্যও তিনি পরিবর্তন করেন না। সেটি ঘোষিত হয়েছে সুরা রা’দ’য়ের ১১ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا۟ مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন কওমের অবস্থার ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে।”
তাই মানুষকে তার নিজের ও নিজ কওমের পরিবর্তনের দায় নিজ হাতে নিতে হয়। আল্লাহতায়ালার খলিফা রূপে এখানেই ব্যক্তির মূল দায়িত্ব। তাই নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকাটি গুরুতর অপরাধ। এটি চরম দায়িত্বহীনতা। বুঝতে হবে জান্নাতে যেতে হলে মৃত্যুর আগে জান্নাতের মূল্য পরিশোধ করতে হয়; সেটি অর্পিত খেলাফতের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে। দায়িত্ব পালনের এ অঙ্গণে ব্যক্তিকে তার ঈমান ও আমলের পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। যারা ফেল করে তাদেরকে অবশ্য জাহান্নামে যেতে হয়। পবিত্র কুর’আনে এ নিয়ে সামান্যতম অস্পষ্টতা নেই। ঈমান ও আমলের পরীক্ষায় পাশ করতে হলে দুর্বৃত্তির প্লাবনে ভাসা থেকে যেমন বাঁচতে হয়, তেমনি বাঁচতে হয় দুর্বৃত্তি নির্মূলের জিহাদ নিয়ে। দুর্বৃত্তির প্লাবনে ভাসা লোকদের জন্য নির্ধারিত স্থান তো জাহান্নাম। মহান আল্লাহতায়ালা তো তাঁর জান্নাতকে অসভ্য, অভদ্র ও বর্বর দুর্বৃত্তদের পুরস্কৃত করার জন্য নির্মাণ করেননি। সেসব অপরাধীদের জন্য নির্মাণ করেছেন জাহান্নাম।
মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের ভূল-ত্রুটি ও গুনাহকে মাফ করে দেন। কিন্তু যারা অবিশ্বাস করে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তকে এবং যাদের যুদ্ধটি তাঁর এজেন্ডা ও দ্বীনকে পরাজিত রাখায় -তাদের তাওবাকে কি কখনো কবুল করেন? মাফ করেন কি তাদের গুনাহ? তারা তো ইসলামের শত্রু পক্ষের। তাদের জাহান্নামে নেয়াই তো মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষিত নীতি। পরিতাপের বিষয় হলো, সেক্যুলার দেশগুলির শিক্ষাব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলিতে নীবর। কিরূপ হবে সঠিক নিয়েত এবং কিরূপ হবে সঠিক বিনিয়োগ -তা নিয়ে এ শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুই শেখায় না। এ শিক্ষাব্যবস্থা পরিণত হয়েছে ছাত্রদের কুর’আনী জ্ঞানে অজ্ঞ রাখা এবং আল্লাহতায়ালার বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী রূপে গড়ে তোলার হাতিয়ারে। এ শিক্ষাব্যবস্থা এভাবেই ছাত্রদের জাহান্নামে নেয়। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের ন্যায় মুর্সলিম দেশগুলির জনগণ রাজস্ব দিয়ে সরকারের এ যন্ত্রকে বাঁচিয়ে রেখেছে। শয়তান ও তার অনুসারীরা এভাবে কই’য়ের তেলে কই ভাজছে।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018