সংগঠিত হতে হবে সংগঠন ছাড়াই

ফিরোজ মাহবুব কামাল

মুসলিমের ব্যর্থতা

শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও ইসলামী রাষ্ট্র বিপ্লবের জন্য কি বাংলাদেশ প্রস্তুত? মাত্র কয়েক শত মুসলিম নিয়ে নবীজী (সা:) মাত্র ১৩ বছরের মধ্যেই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করেন। বদেরর যুদ্ধে সে রাষ্ট্র মাত্র ৩১৩ জন সৈন্য জোগার করতে পেরেছিল। অথচ মাত্র ১০ বছেরর মধ্যে নবীজী (সা:) সে রাষ্ট্রকে বাংলাদেশের চেয়ে ১৫ গুণ বৃহৎ রাষ্ট্রে পরিণত করে ইন্তেকাল করেন। সাহাবাগণ সে রাষ্ট্রকে আরো বহু গুণ বৃহৎ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। প্রশ্ন হলো, বাংলার ১৬ কোটি মুসলিম কতকাল অপক্ষা করবে সেরূপ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়। অথচ তারা যে কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দেয়নি -তা নয়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা রক্তাক্ত যুদ্ধ করেছে। কিন্তু সেরূপ একটি যুদ্ধ তারা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং সে রাষ্ট্র মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও আইনকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার জন্য করেনি। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে গিয়ে তারা এ ব্যর্থতার কি ব্যাখ্যা দিবে?

একটি দেশ যখন বিপ্লবের জন্য তৈরী হয়ে যায় তখন সেদেশের রাজপথ পূর্ণ হয়ে যায় লাখো লাখো বিপ্লবী চেতনার জনগণে। জনতার সে সমুদ্র কি কোন স্বৈরাচারী শাসকের কামান বা গোলা-বারুদ থামাতে পারে? ১৭৮৯ সালের ফরাসী বিপ্লব কালে ফ্রান্সের রাজা যেমন পারেনি, তেমন ১৯১৭ সালে রাশিয়ার জার পারেনি এবং ১৯৭৯ সালে ইরানের শাহও পারেনি। বিপ্লব থামাতে ইরানের স্বৈরাচারী শাহ রাস্তায় ট্যাংক নামিয়েছিল। সে ট্যাংকের মোকাবেলা করেছে নিরস্ত্র জনগণের বিশাল জোয়ার। ট্যাংক আর কত মানুষকে হত্যা করতে পারে? ট্যাংকের তলায় বহু হাজার মানুষ পিষ্ট করার পর অবশেষে ট্যাংকের চালকেরাই ক্ষান্ত দিয়েছিল। হাজার হাজার নিরীহ মানুষের হৃদয়-নিংড়ানো রক্ত সেদিন সাধারণ সৈনিকদের বিবেকও জাগিয়ে তোলে। তারা বুঝতে পারে, নিজ দেশের নিরপরাধ মানুষ হ্ত্যা কখনই কোন সৈনিকের চাকুরি হতে পারে না। সেরূপ গণহত্যা কি জায়েজ হয় দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারী সরকারকে বাঁচাতে? এটি তো জঘন্য যুদ্ধাপরাধ। সৈনিকের কাজ তো আগ্রাসী শত্রু হত্যা, নিজ দেশের নিরীহ নাগরিকদের হত্যা নয়। ফল হলো, শহিদের রক্ত সেদিন ট্যাংকের উপর বিজয়ী হয়েছিল। আর এভাবেই সেদিন মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সেক্যুলার , সবচেয়ে স্বৈরাচারী এবং সবচেয়ে পাশ্চাত্য-প্রভাবিত দেশে ইসলামপন্থীদের বিজয় এসেছিল। বিপ্লবের আগে সে দেশে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে পানির চেয়ে মদ বেশি ব্যবহৃত হত। বাংলাদেশেও বিপ্লব দেখা গেল ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে। ছাত্র-জনতার সুনামীতে ভেসে গেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নৃশংস স্বৈরশাসন। তবে এটি ছিল স্বৈরাচার বিরোধী ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিপ্লব। এটি ইসলামী বিপ্লব ছিল না। ইসলামী বিপ্লবের জন্য জনগণের নিয়েত ও প্রস্তুতিটি ভিন্নতর হতে হয়। সেটি এ ছাত্র-গণআন্দোলনে ছিল না।    

 

দল ছাড়াই যে কাজটি সম্ভব

জনগণের মনের ভূবনে বিপ্লবে না এনে রাষ্ট্রীয় বিপ্লব অসম্ভব। বিপ্লবের শুরুতে জ্ঞানী বা বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাটি তাই গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুর’আনের প্রথম হুকুম “ইকরা” অর্থ “পড়” অবতীর্ণ করে মহান আল্লাহতায়ালা জ্ঞানার্জনের সে গুরুত্বটি সুস্পষ্ট করেছেন। ইসলামী বিপ্লবের ক্ষেত্রে এটিই হলো শুরুর দিকের প্রথম মাইলফলক। একটি দেশে যখন বিপ্লবী চেতনার জোয়ার বইতে থাকে, তখন সে জোয়ারে আন্দোলিত হয় সমগ্র দেশের লোক। আর জ্ঞানের জোয়ার সৃষ্টি করতে কোন দল লাগে না, বিশাল দলীয় দফতরও লাগে না। মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত মানুষগুলো গড়ে উঠেছিল তখন যখন তাদের কোন দল, কোন দলীয় দফতর এবং কোন দলীয় চেতনা ছিল না। দলীয় চেতনা সব  সময় ব্যবহৃত হয় জনগণের স্বাধীন জ্ঞানচর্চাকে ব্যহত করতে। ১৭৮৯ সালে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সফল ফরাসী বিপ্লব শুরু করতেও কোন রাজনৈতিক দল, দলীয় দফতর বা নেতার প্রয়োজন পড়েনি। মূলে ছিল রুশো-ভল্টেয়ারের ন্যায় বহু দার্শনিকদের বিপ্লবী দর্শন -যাতে গুরুত্ব পেয়েছিল মানুষের সমতা (equality), স্বাধীনতা (liberty) এবং ভাতৃত্বের (brotherhood) ন্যয় বিপ্লবী দর্শন। এ দর্শনের চর্চা যতটা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে নগর-বন্দর, গ্রাম ও মহল্লার হাজার হাজার চায়ের দোকানে, কফি শপে, ক্লাবে ও ঘরোয়া বৈঠকখানায়। ফ্রান্সের প্রতিটি শহর ও প্রতিটি গ্রাম তখন প্লাবিত হয়েছিল এ বিপ্লবী চিন্তার প্লাবনে। সে প্লাবনে দোল খাচ্ছিল তখন ফ্রান্সের কৃষক-শ্রমিক-যুবক-বৃদ্ধ তথা সর্বস্তরের মানুষ। এক অভিন্ন দর্শন এবং অভিন্ন স্বপ্ন তাদের মধ্যে সেদিন অটুট ঐক্যের জন্ম দিয়েছিল। ঐক্য গড়তে সেদিন কোন দল বা দলের সদস্যপদের প্রয়োজন পড়েনি। মানুষ তখন একতাবদ্ধ হয়েছিল আদর্শের টানে। এমন এক আদর্শিক বিপ্লব এসেছিল নবীজী (সা)’র যুগেও। তেমন একটি অসাধারণ ঐক্য দেখা গেল বাংলাদেশে হাসিনার স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী এ আন্দোলনটি কোন দল গড়ে তুলেনি, বরং গড়ে উঠেছে নির্দলীয় ভাবে। নির্দলীয় হওয়াতে নানা মতের ছাত্র ও জনগণ এতে যোগ দিয়েছে এবং আন্দোলনের মালিকানা নিজ হাতে নিয়েছে। এ আন্দোলনের মালিকানা কোন দলের হাতে থাকলে অন্য দলের বা নির্দলীয় ছাত্র ও জনতা এতে যোগ দিত না। প্রাণও দিত না। তারা দর্শেকের সারিতে থাকতো।  

দল ছাড়াও যে একটি বিপ্লব কিরূপ সফল হতে পারে তার আরেক উদাহরণ হলো ১৯৭৯ সালের ইরান-বিপ্লব। এ বিপ্লব ছিল অতি শক্তিশালী স্বৈরশাসক ইরানের মহম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে। এ বিপ্লবের নায়ক ইমাম খোমেনীর কোন রাজনৈতিক দল বা দলীয় দফতর ছিল না, কিন্তু ছিল একটি শক্তিশালী দর্শন। ইসলামের শত্রুগণ ইসলামের পক্ষের অগণিত যোদ্ধাকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু ইসলামের দর্শনকে হত্যা করতে পারে না। তাই বিপ্লবের লক্ষ্যে জরুরি হলো, ইসলামের সে বিপ্লবী দর্শনকে শক্তিশালী করা। ইরানের বিপুল সংখ্যক জনগণের অন্তরে অভিন্ন স্বপ্ন ও অভিন্ন জীবন লক্ষ্যের জন্ম দিয়েছিল সে ইসলামী দর্শন। আর সে স্বপ্নের রাজ্যে ও সে লক্ষ্যে পৌঁছতেই তারা রাজপথে হাজির হয়েছিল। তখন জনতার মাঝে জন্ম নিয়েছিল অটুট একতা। জীবনের দর্শন, স্বপ্ন ও কাঙ্খিত লক্ষ্যটি যখন অভিন্ন হয়, তখন একতা গড়তে দলের প্রয়োজন হয় না। অনৈক্য তো তখনই গড়ে উঠে যখন ধর্ম, দর্শন ও বাঁচবার লক্ষ্যটা জনে জনে ভিন্নতর হয়। ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যে চলা লোকগুলো যেমন পৃথক পৃথক ট্রেন বেছে নেয়, তেমনি রাজনীতিতে বিভিন্ন দলও বেছে নেয়। তখন দলাদলির সাথে রক্তাক্ত হানাহানিও শুরু হয়।

নবীজী (সা:)’র যুগে এবং খোলাফায়ে রাশেদার আমলে মুসলিমদের মাঝে যে একতা গড়ে উঠে তা তো অভিন্ন দর্শন ও অভিন্ন লক্ষ্যের কারণে। তখন সে একতা গড়তে কোন দল ময়দানে ছিল না। জীবন-দর্শন অতি শক্তিশালী হওয়ায় সেদিন কোন দলীয় সদস্যপদের বাঁধনে জনগণকে বাঁধার প্রয়োজনও পড়েনি। দলীয় বন্ধন তো তখনই অপরিহার্য হয় যখন চিন্তা-চেতনা ও দর্শন অতি দূর্বল। মুসলিম সমাজে কঠোর দলীয় ক্যাডার পদ্ধতি, প্রচণ্ড ফেরকাপরস্তি ও কট্টোর পীরমুরীদের যে বন্ধন তার কারণ তো দর্শনের দূর্বলতা। কুর’আনের দর্শন ব্যক্তিকে প্রচণ্ড অনুপ্রেরণা দেয় অন্য ভাইয়ের সাথে মিলিত হতে। বহু দিনের হারানো ভাইকে ফিরে পাওয়ার আনন্দটাই ভিন্ন। হাদীস মতে এক মুসলিম হলো অপর মুসলিমের  ফিরে পাওয়া হারানো ভাই। আর সেটির প্রকাশ ঘটে শুধু মুসলিমের মুখের কথায় নয়, বরং আচরণ ও কর্মের মধ্য দিয়েও। মদিনার আনসারগণ তাদের বসত বাড়ির ভিটাকে সমান দুই ভাগ করে মক্কা থেকে আসা তাঁর মোহাজির ভাইকে দিয়েছিলেন। সেটি সম্ভব হয়েছিল তাঁদের মাঝের গভীর ভাতৃত্ববোধের কারণে

এমনই এক প্রবল মুসলিম ভাতৃত্ববোধ দেখা গেছে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কালে। একটি শক্তিশালী মুসলিম সভ্যতার রাষ্ট্র (civilisational state) গড়ার তাড়নায় সেদিন বাঙালি, বিহারী, গুজরাতী, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, অসমীয় ও অন্যান্য  ভাষা ও অঞ্চলের মুসলিমগণ কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে পাকিস্তান আন্দোলন গড়ে তোলে। যে অবাঙালি মুসলিম তাঁর নির্বাচনি এলাকা থেকে জিততে অসমর্থ ছিল, তাকে বাংলার কোন আসনে খাড়া করে জিতিয়ে দেয়া হয়েছে। এবং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর ভারত থেকে প্রাণ বাঁচাতে আসা অবাঙালি মুসলিমদের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের বহু জেলায় আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে।  

কিন্তু পাকিস্তানে সৃষ্টি এবং মুসলিমদের এরূপ প্যান-ইসলামী ঐক্য ইসলামের শত্রুপক্ষের ভাল লাগেনি। তাই মুসলিমদের এই প্যান-ইসলামী চেতনার ধ্বংস করতে ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের চেতনার গর্ভে প্রসব করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এর আগের বাঙালি বলতে বুঝানো হতো স্রেফ হিন্দুদের। তাই শরৎ চন্দ্র চট্টপ্যাধ্যায় লিখেছেন, “আমাদের পাড়ায় ছিল বাঙালি ও মুসলিমদের মাঝে ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতা।” বাঙালি জাতীয়তাবাদের জোয়ার ১৯৪৭ সালে থাকলে তো বাংলা বিভক্ত হতো না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ভারত থেকে শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের নিরিড় পরিচর্যা। এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদকে পরিণত করা হয় বাঙালি মুসলিমের প্যান-ইসলামী চেতনা ও পাকিস্তান ভাঙ্গার হাতিয়ারে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক নেতা রূপে খাড়া করা হয় শেখ মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি, বাকশালী ফ্যাসিস্ট, দুর্বৃত্তির লালনকর্তা এবং ভারতের পরীক্ষিত সেবাদাসকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিষাক্ত ভাইরাস কোভিড ভাইরাসের মতই অতি বিষাক্ত ও সংক্রামক। সেটি বুঝা যায় যখন দেখা যায় এই বিষাক্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদ লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে নৈতিক দিয়ে অসুস্থ ও ভয়ানক অপরাধীতে পরিণত করেছে। তাদের সে অপরাধের শিকার হয় তৎকালে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী প্রায় ৬ লাখ বিহারী মুসলিম। ১৯৭১’য়ে ১৬ই ডিসেম্বরের পর হাজার হাজার বিহারী রমনীকে ধর্ষণ করা হয় এবং তাদের প্রত্যেককে তাদের নিজ গৃহ থেকে নামিয়ে পথে বসানো হয়েছে। এবং তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাব-বাণিজ্যকে দখলে নেয়া হয়। মুসলিম দূরে থাক, সামান্য বিবেক আছে এমন কোন কাফির ব্যক্তিও কি এমন অপরাধ কর্ম করতে পারে? এমন জালিমদের নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের কি সামান্যতম মূল্য আছে?

 

দলের নামে একতার বদলে দলাদলি বেড়েছে

দল গড়া একমাত্র তখনই জায়েজ যখন লক্ষ্য হয় মুসলিমদের একতাবদ্ধ করা। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটি হয়নি।  ইসলামের নামে বহু দল গড়া হয়েছে, প্রতি দলে অসংখ্য ক্যাডারও গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু তাতে মুসলিমদের একতা বাড়েনি। দেশে ইসলামের বিজয়ও আসেনি। এবং বাড়েনি আল্লাহতায়ালার আইনের প্রতিষ্ঠা। বরং সামান্য কারণে তথাকথিত ইসলামী দলগুলি ভেঙ্গে গেছে। কর্মীদের মাঝে দলাদলীর ন্যায় বিভক্তির কবীরা গুনাহর চর্চা বাড়ানো হয়েছে। নিজ দল, নিজ মত ও নিজ পথের সাথে ঐকমত্য নাই এমন মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃনা করার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়েছে। এতে একতার বদলে গভীরতর হয়েছে অনৈক্য। অথচ একতার বিষয়টি মুসলিমের  রাজনীতির বিষয় নয়, এটি ধর্মীয় দায়বদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতা। ইসলামে এটি নামাজ-রোজার ন্যায় ফরজ। সে ফরজ দায়বদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতাটি গড়ে উঠে ব্যক্তির মনে ইসলামের দর্শন সবল করার মধ্য দিয়ে। ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার এ জিহাদে দলীয় এজেন্ডা, দলীয় নেতার দর্শন ও পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের দলীয় বিষয়গুলি গুরুত্ব পেলে সেখানে একতা আসবে কি করে? তখন একতার বন্ধণ গড়তে সেক্যুলারিষ্টদের ন্যায় দল, সদস্যপদ ও দলীয় বন্ধনকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এটিই হলো ইসলামপন্থীদের সেক্যুলারীকরণ।

 

দর্শনে দীক্ষা দিতে হবে আম-জনতাকে

দর্শন শুধু দার্শনিকদের বিষয় নয়, দর্শন নিয়ে বাঁচতে হয় প্রতিটি জীবিত মানুষকে। দর্শন না থাকার অর্থ উদ্ভিদ বা পশু হয়ে যাওয়া। মহান নবীজী (সা:)’র সবচেয়ে বড় সফলতা হলো তিনি তাঁর সাহাবাদের উঁচু মানের দার্শনিকে পরিণত করতে পেরেছিলেন। চিন্তা-ভাবনাকে তিনি উত্তম ইবাদতের মর্যদা দেন। নবীজী (সা:)’র হাদীস: “আফজালুল ইবাদাহ তাফাক্কুহ।” অর্থ: শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো চিন্তাভাবনা করা। ফলে সে আমলে ভেড়ার রাখাল, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণও রাজনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, সমাজ বিপ্লব, প্রশাসন, সংস্কৃতি, যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়ে যে জ্ঞান রাখতেন তা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধিকাংশ প্রফেসরও রাখে না। নবীজী (সা:)’র সাহাবাগণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী ছিলেন না; কিন্তু তারাই পরিণত হয়েছিলেন মানব ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক, প্রশাসক, বিচারক, আইনবিদ, গভর্নর, সেনাপতি, শিক্ষাবিদ, যুদ্ধবিদ ও সমাজবিদ। পরবর্তী কালে মুসলিমগণ শত শত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়লেও সে মাপের মানুষ তৈরী করতে পারিনি। চিন্তা-চেতনার ইঞ্জিনকে সচল করলে মানুষের সামর্থ্যে এ রকমই বিপ্লব আসে। নবীজী (সা:) সে কাজটিই করেছিলেন।

তাই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে কুর’আনী দর্শনের চর্চাকে শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত রাখলে চলে না, সেটি হতে হয় চায়ের দোকান, ড্রয়িং রুম, পার্ক, কর্মক্ষেত্র, রাস্তাঘাটসহ মানব-মিলনের প্রতিটি অঙ্গণে। এজন্য কি দল, দলীয় দফতর ও ক্যাডার পদ্ধতির প্রয়োজন আছে? বরং দলীয় পরিচিতি থাকলে দর্শনের প্রসার বাধাগ্রস্ত হয়। যেমন পানিকে পাত্রে ভরলে সেটি আর চারদিকে ছড়ায় না। তাছাড়া দল ও দলীয় নেতার পরিচয়ে ইসলামী রাষ্ট্র বিপ্লবের কাজ শুরু হলে সাথে সাথে সেটি শত্রুর টার্গেটে পরিণত হয়। তখন সে দলীয় নেতাদের ক্রয়ে বা তাকে দাবিয়ে রাখার কাজে দুর্বৃত্ত সরকার ও কাফের শক্তিবর্গের বিপুল অর্থ বিনিয়োগ শুরু হয়। কেউ হাজার বা লাখ টাকায় বিক্রি না হলে তাকে কোটি টাকায় ক্রয় করা হয়। দুর্বৃত্ত আগ্রাসীদের হাতে জঘন্য অপরাধ ঘটলেও অধিক অর্থপ্রাপ্তীর লোভে বিক্রিত হওয়া এসব নেতারা প্রতিবাদে টু’শব্দটি পর্যন্ত করেনা। আফগানিস্তান বা কাশ্মিরে মুসলিম নিধন হলেও তারা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামে না। শত্রুরা তখন সফলতা পায় ইসলামী দলকে নিষ্ক্রিয় করতে ও নেতাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিতে।

অথচ দর্শনের চর্চা তৃণমূলে নামলে শত্রুদের জন্য ইসলামের প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিপ্লবের বীজ যদি সারা দেশের শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, প্রতিটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন শত্রুপক্ষ সে দর্শনের অনুসারীদের খুঁজে পাবে কি করে? তারা যেটি পায় সেটি হলো দর্শন। কিন্তু দর্শনকে কারাগারে আটক করা যায় না, কামানের গোলায় হত্যাও করা যায় না। এমন একটি অবস্থার জন্যই ইরানের বিপ্লবের মুখে ইরানের শাহ ও তার মিত্র মার্কিনীরা দিশেহারা অবস্থায় পড়েছিল। একই সংকটে পড়েছে ইসরাইলীরা। তারা হামাস ও ইসলামী জিহাদের  ন্যায় সংগঠনের দর্শনকে হত্যা করতে পারছে না। ফলে বিলুপ্ত করতে পারছে না তাদের ইসরাইল-বিরোধী জিহাদকে।

 

বিজয় যেভাবে অনিবার্য হয়

মুসলিমদের শক্তির মূল উৎস্য হলো মহান আল্লাহতায়ালা। এবং পবিত্র কুর’আন হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের রোড-ম্যাপ। এ জন্যই শত্রুপক্ষ আঘাত হানে কুর’আনী দর্শনের বিরুদ্ধে। এতে সুবিধাও রয়েছে। তখন ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষের যুদ্ধটি কোন ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে না হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে তথা আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে হয়। তখন ময়দানে মাত্র দুটি পক্ষ থাকে। একটি সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার পক্ষ এবং অপরটি শয়তান ও তার অনুসারীদের পক্ষ। তখন কোন পক্ষে যোগ দিতে হবে -তা নিয়ে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে কোন অস্পষ্টতা থাকে না। কোনটি জিহাদ আর কোনটি জিহাদ নয় -এ অস্পষ্টতার কালো মেঘও তখন মুসলিমদের চেতনার আকাশ থেকে বিলুপ্ত হয়। সূর্যের আলোর মত সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তখন ঈমানদারের মনে সুস্পষ্ট হয়। ইসলামী রাষ্ট্র বিপ্লবের পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মাইল-ফলক। কারণ, ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের লড়াইটি যে শতকরা শত ভাগ খালেছ জিহাদ –জনগণে সে ধারণাটিই হলো বিপ্লবের জন্য মূল শক্তি।

শত ভাগ খালেস জিহাদে মুসলিমের কোন কিছু হারানোর ভয় থাকে না। নিহত হওয়াও তখন মহা বিজয় মনে হয়। সেটি শাহাদত। মু’মিন তখন দেখতে পায় অফুরন্ত নিয়ামত-ভরা জান্নাতের রাজপথ – মহান আল্লাহতায়ালা যার প্রতিশ্রুতি পবিত্র কুর’আনে বার বার দিয়েছেন। মহা আনন্দের সাথে তখন সে দিকেই ঈমানদার ব্যক্তি বিদ্যুৎ বেগে ধাবিত হয়। জান্নাতের এক ইঞ্চি ভূমিও হিমালয়-সম সোনা দিয়ে কেনা যায় না।  সে নিয়ামত-ভরা জান্নাতে সে পায় এক মৃত্যুহীন অনন্ত জীবন। দুনিয়াদার সেক্যুলার মানুষ অধিক টাকার চাকুরির লোভে নিজ দেশ ও নিজ ঘর ছেড়ে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেয়। অনেকে সাগর পাড়ি দিতে মারাও যায়। অথচ প্রকৃত মুসলিমরা নিজ অর্থ ব্যয়ে শত শত মাইল ব্যাপী মরুভূমি পাড়ি দেয় এবং পাহাড়-পর্বত ও সাগর অতিক্রম করে স্রেফ শতকরা শত ভাগ খালেছ জিহাদের ময়দান খুঁজতে। তাই আফগানিস্তান ও সিরিয়ার সাম্প্রতিক জিহাদে দেখা গেছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকা থেকে হাজার হাজার মুজাহিদকে চাকুরি-বাকুরি ও আরাম-আয়াশ ছেড়ে রণাঙ্গণে প্রাণ দিতে। তাড়না এখানে মহান আল্লাহতালায়ালাকে খুশি করা, মাগফিরাত লাভ ও জান্নাত লাভ।

যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, জান্নাতই তাদের জন্য একমাত্র প্রতিদান নয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সামরিক বিজয়েরও। সে সামরিক বিজয়ের প্রতিশ্রিত এসেছে সুরা সাফের ১৩ নম্বর আয়াতে।  সে বিজয়টি নিশ্চিত করতে আল্লাহতায়ালা অতীতে হাজার হাজার ফেরেশতাকে রণাঙ্গনে পাঠিয়েছেন। অতীতে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর টুকরোও মিজাইলে পরিণত হয়েছে। যেমনটি হয়েছিল মক্কার উপর হামলাকারি আবরাহার বিশাল হাতি বাহিনীকে ধ্বং করতে। মশাও সৈনিকে পরিণত হয়েছে নমরুদকে হত্যা করতে। এবং সাগরও যুদ্ধে নেমেছে ফিরাউন ও তার বাহিনীকে নিজ পেটে গ্রাস করতে।  কাফের শক্তির পক্ষে এজন্যই যুগে যুগে অসম্ভব হয়েছে প্রকৃত ঈমানদারদের পরাজিত করা। ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির ১৭ জন সৈনিকের ভয়ে বাংলার রাজা লক্ষণ সেন পালিয়েছিল তো সেটুকু জানার কারণেই। তবে এরূপ বিজয়ের লাভের জন্য শর্ত হলো, যুদ্ধকে শতভাগ বিশুদ্ধ জিহাদ হতে হয়। এম.পি ও মন্ত্রী হওয়ার পার্থিব স্বার্থের লক্ষ্যে পরিচালিত ইসলামের লেবাসধারীদের সেক্যুলার রাজনীতিকে আর যাই হোক জিহাদ বলা যায় না। তাতে আল্লাহতায়ালার সাহায্য আশা করা যায় না।

কোন সাচ্চা ঈমানদার কি আল্লাহর দ্বীনের বিদ্রোহীদের সাথে কোয়ালিশন গড়তে পারে? মুসলিম রূপে দাবী করলেই কি রাজনীতি ইসলামী হয়? মুসলিম দেশগুলিতে সেক্যুলারিজম, কম্যুনিজম, জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ ও রাজতন্ত্রের ন্যায় হারাম মতবাদ নিয়ে রাজনীতি করছে তো তারা -যারা নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করে। অথচ তাদের রাজনীতি আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়ত প্নতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। যারা এমন রাজনীতি করে তারাই তো ইসলামের শত্রু। এরূপ শত্রুদের সাথে কি ঈমানদারদের কোয়ালিশন হয়? তাদের সাথে আপোষমূলক রাজনীতি মার্কিনীদের থেকে প্রশংসা আনতে পারে, কিন্তু তাতে কি মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য জুটে? আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার মত বিশ্বশক্তির পরাজয় এবং পতন হয়েছে তো সে খালেছ জিহাদের কারণে। এমন খালেছ জিহাদ করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য লাভকে অনিবার্য করে তুলে। রাহমানুর রাহীম মহান আল্লাহতায়ালা তেমন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পবিত্র কুর’আনে একবার নয়, বহুবার দিয়েছেন। সেরূপ সাহায্যপ্রাপ্তি জুটেছিল বদরের যুদ্ধে। সে সময় মুসলিমদের নিজেদের বিনিয়োগটিও ছিল অতুলনীয়।

বদরের যুদ্ধটি মুসলিমদের জন্য ছিল অতিশয় ক্রান্তিকাল। সে যুদ্ধে ৩১৩ জন মুসলিম মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন মক্কার কাফের বাহিনীর বাছাই করা ১ হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে। যে কোন ব্যক্তির এতে বিচলিত হওয়ার কথা। তাছাড়া মদিনা থেকে তাঁরা সেদিন একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বের হননি। তাঁরা বেরিয়েছিলেন সিরিয়া থেকে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে যে বাণিজ্য-বহর মক্কার দিকে ফিরছিল -সে বাহিনীকে উচিৎ শিক্ষা দিতে। এটি বুঝাতে যে, মুসলিমদের উপর হত্যা ও নির্যাতনের নীতি অব্যাহত থাকলে মক্কার কাফেরদের বাণিজ্যের উপরও আঘাত পড়বে। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা ছিল অন্য রকম। ফলে ঘনিয়ে আসে যুদ্ধ। যুদ্ধের শুরুর আগে নবীজী (সা:) সাহাবাদের মনের কথা জানতে চাইলেন, বিশেষ করে আনসারদের থেকে। আনসারদের মধ্যে থেকে তাদেরই এক নেতা সা’দ বিন মুয়াজ দাঁড়িয়ে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমরা বনী ইসরাইলের মত নই যে বলবো, আপনি ও আপনার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করুন এবং আমরা অপেক্ষায় থাকলাম। বরং আপনি যদি সাগরেও ঝাঁপ দেন তবুও আপনি আমাদেরকে সাথে পাবেন।” এ ছিল সে যুদ্ধে সাহাবাদের বিনিয়োগ। একজন মানুষ এর চেয়ে অধিক আর কি বিনিয়োগ হতে পারে? তাদের সে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তিকে সেদিন সুনিশ্চিত করেছিল। পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সে সাহায্য প্রেরণের কথা বলছেন এভাবে,

وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدْرٍۢ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌۭ ۖ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ١٢٣

إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيَكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلَـٰثَةِ ءَالَـٰفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ١٢٤

بَلَىٰٓ ۚ إِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَـٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ ءَالَـٰفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ١٢٥

অর্থ: “আর বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে আল্লাহ তো তোমাদেরকে সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।  স্মরণ কর, যখন তুমি মু’মিনদেরকে বলছিলে, “তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন সহস্র ফেরেশতা নাযিল করে তোমাদেরকে সহায়তা করবেন? হ্যাঁ নিশ্চয়ই, যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং সাবধান হয়ে চল তবে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে আল্লাহ পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফিরিশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।”-(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১২৩-১২৫)। বদরের যুদ্ধ শেষে মুসলিমগণ সেদিন রণাঙ্গণে অনেক ছেড়া মস্তক পেয়েছিলেন -যাতে কোন ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল না। বলা হয়ে থাকে, এগুলি ছিল ফিরেশতাদের দ্বারা ছিন্ন মক্কার কাফিরদের মস্তকের লাশ।  

মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যের বরকতেই ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী পরাজিত করেছে বিশাল রোমান বাহিনীকে। পরাজিত করেছে সে আমলের বিশ্বশক্তি পারস্য সাম্রাজ্যকে। মুসলিমদের লড়াই কখনোই কোন ভাষা, ভূগোল, বর্ণ বা সম্পদের বিবাদ নিয়ে ছিল না। ছিল না কোন সামরিক নেতা বা রাজ পরিবারের সাম্রাজ্য বাড়াতে। বরং সে লড়াইগুলি হয়েছিল আল্লাহতায়ালার জমিনে তাঁরই সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তী বিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এ লড়াইগুলির লক্ষ্য ছিল, মহান আল্লাহতায়ালার অধিকৃত ভূমিকে স্বাধীন করার এবং তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। মহান আল্লাহতায়ালার সে ঘোষিত এজেন্ডা হলো, “লি ইউযহিরাহু আলাদ্দীনে কুল্লিহী” অর্থাৎ সকল ধর্ম, সকল জীবনদর্শন ও সকল মতবাদের উপর তাঁর নিজের পক্ষ থেকে নির্ধারিত দ্বীনের বিজয়। এবং সে দ্বীন হলো ইসলাম। ফলে এ লড়াইয়ের চেয়ে খালেছ জিহাদ আর কি হতে পারে? জিহাদের মালিকানা একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার। এ জন্যই পবিত্র কুর’আনে জিহাদকে বলা হয় “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।” এর অর্থ: আল্লাহর পথে জিহাদ। তাই ইসলামকে বিজয়ী করার প্রতিটি লড়াই’য়ের মালিকানা হলো খোদ মহান আল্লাহতায়ালার। তাই নিজের দ্বীনকে বিজয়ী করার সে লড়াইয়ে তিনি ফেরেশতাদের নামিয়ে সাহায্য করবেন– তা নিয়ে কি সন্দেহ করা চলে? যে ব্যক্তি সন্দেহ করে -তাকে কি মুসলিম বলা যায়? সেটি তো তাঁর কুর’আনী বাণীর প্রতি অবিশ্বাস। মুসলিম হওয়ার অর্থ হলো, এ পবিত্র জিহাদে মহান আল্লাহতায়ালার আনসার হওয়া -যার সুস্পষ্ট হুকুম এসেছে সুরা সাফ’য়ের ১৪ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে,

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُونُوٓا۟ أَنصَارَ ٱللَّهِ كَمَا قَالَ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّـۧنَ مَنْ أَنصَارِىٓ إِلَى ٱللَّهِ ۖ قَالَ ٱلْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ۖ فَـَٔامَنَت طَّآئِفَةٌۭ مِّنۢ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ وَكَفَرَت طَّآئِفَةٌۭ ۖ فَأَيَّدْنَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ عَلَىٰ عَدُوِّهِمْ فَأَصْبَحُوا۟ ظَـٰهِرِينَ

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। যেমন মরিয়ম-পুত্র ঈসা তাঁর অনুসারীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজে কে আমার সাহায্যকারী হবে?  তাঁর অনুসারীগণ বলেছিলেন, আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী। অতঃপর বনি ইসরাইলীদের মধ্য থেকে একদল ঈমান আনলো, এবং এক দল অবাধ্য হলো। যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমি শক্তিশালী করলাম শত্রুদের মোকাবেলায় এবং তারা বিজয়ী হলো।” –(সুরা সাফ, আয়াত ১৪)।  জিহাদের বিজয় দানের বিষয়টি একান্তই মহান আল্লাহতায়ালার নিজের। ঈমানদারগণ সে লড়াইয়ে আল্লাহর সাহায্যকারী মাত্র। আর এরূপ সাহায্যকারী হওয়ার মধ্য দিয়েই চুড়ান্ত পরীক্ষাটি হয় বান্দাহর ঈমানদারীর। নইলে সে বিজয়ের কাজটি মহান আল্লাহর “কুন, ফা ইয়াকুন” য়ের সামান্য নির্দেশেই হতে পারতো। গৌরব যুগের মুসলিমদের থেকে আজকের মুসলিমদের মূল পার্থক্য হলো: সে যুগের মুসলিমগণ শুধু নামাজী, রোজাদার ও হাজী হওয়াকে গুরুত্ব দিতেন না, তারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারী সৈনিক তথা আনসার রূপে। সে দায়িত্ব পালনে নবীজী(সা:)’র অর্ধেকের বেশি সাহাবা শহীদ হয়ে গেছেন। অথচ আজকের মুসলিমগণ মহান আল্লাহতায়ালার আনসার হতে রাজী নয়, তারা মোনাজাত করেই বিজয় আনতে চায়। 

 

শুরুর কাজটিই হচ্ছে না

ইসলামের শেষ নবী (সা:) এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর আদর্শ আজও হাদীসের গ্রন্থে ও ইতিহাসের কিতাবে রয়ে গেছে। এবং চিরকাল থাকবেন সর্বশক্তিমান মহান রাব্বুল আলামীন। সে সাথে থাকবে তাঁর বিশাল ফেরেশতা বাহিনীও। মুসলিমদের হাতে রোমান সাম্রাজ্য পরাজিত হয়েছে, রোমান রাজধানী কন্সটান্টিনোপল দখলে এসেছে, পারস্য সাম্রাজ্যের ন্যায় বিশ্বশক্তি পরাজিত ও বিলুপ্ত হয়েছে। এরূপ বড় বড় বিজয় এসেছে নবীজী(সা:)’র ইন্তেকালের পর। তাঁর সাহায্যে এরূপ বিজয় আজও আসতে পারে। তবে সাহায্য প্রেরণের আগে মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের নিজস্ব বিনিয়োগটি দেখতে চান। সেরূপ দেখাটিই মহান আল্লাহর সর্বকালের সূন্নত। তাই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজের শুরু হতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার এ পবিত্র মিশনে ঈমানদারদের নিজস্ব বিনিয়োগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। সেটি নিজ সময়, মেধা, শ্রম, অর্থ ও রক্তের বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে। বান্দার এ বিনিয়োগের পরই শুরু হয় মহান আল্লাহর অফুরন্ত বিনিয়োগ। তখন শুরু হয় লাগাতর বিজয়ও। মহান আল্লাহ সে বিজয়ের খোশ খবর শুনিয়েছেন এভাবে,

وَلَا تَهِنُوا۟ وَلَا تَحْزَنُوا۟ وَأَنتُمُ ٱلْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

অর্থ: “তোমরা হীনবল হয়ো না, দুঃখিতও হয়ো না। তোমরাই হবে বিজয়ী, যদি তোমরা মু’মিন হও।”-(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৩৯)। এবং আল্লাহতায়ালার সাহায্য জুটলে যা অসম্ভব হয় তা হলো পরাজয়। পবিত্র কুর’আনে সে সুখবরটিও এসেছে এভাবে,

إِن يَنصُرْكُمُ ٱللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ

অর্থ: “আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করলে তোমাদের উপর বিজয়ী হবার কেউ থাকবে না।”- (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৬০)। আর প্রকৃত ঈমানদারদের বিজয় যে সুনিশ্চিত এবং তাদের পরাজয় যে অসম্ভব -সেটি শুধু পবিত্র কুর’আনের শিক্ষাই নয়, মুসলিম ইতিহাসেরও। উপরিউক্ত আয়াতে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হলো, বিজয়ী হতে হলে সত্যিকার ঈমানদার হতে হয়। বেঈমান বা মুনাফিকদের জন্য কোন বিজয় নাই; না এ দুনিয়ায়, না আখেরাতে।

মুসলিমদের আজকের ব্যর্থতা ও পরাজয়ের কারণ ইসলাম নয়। কুর’আনী রোডম্যাপও নয়। বরং সকল ব্যর্থতার কারণ, মুসলিমগণ নিজেরাই। তাদের মূল ব্যর্থতাটি প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায়। প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার অর্থ, মহান আল্লাহতায়ালার আনসার তথা সাহায্যকারী রূপে বেড়ে উঠা। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে মুসলিম দেশে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন বিলুপ্ত করা হলেও তাঁর পক্ষে জিহাদে নামার লোক নেই। বরং অধিকাংশ মুসলিম পরিণত হয়েছে শয়তানের জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, ফ্যাসিবাদী, রাজতন্ত্রী ও সেক্যুরারিস্ট প্রজেক্টকে বিজয়ী করার আনসারে। এভাবে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সামর্থ্যের সিংহভাগ তারা ব্যয় করেছে সমাজ ও রাষ্ট্র জুড়ে বিদ্রোহ, দুর্বৃত্তি ও পাপাচার বাড়াতে। তারা মুসলিম দেশগুলিতে বিজয়ী করছে শয়তানের এজেন্ডাকে। ফলে কোথাও বেঁচে নাই নবীজী (সা:)’র হাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ইসলাম -যাতে ছিল মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা, ছিল দুর্বৃত্তি ও অবিচারের নির্মূল এবং সুনীতি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ, ছিল শুরা ভিত্তিক শাসন, এবং ছিল প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্ব। মুসলিম নামধারী শয়তানের আনসারদের সাহায্য করা ও তাদেরকে বিজয়ী করা তো মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত নয়। বরং সূন্নত হলো তাদেরকে আযাব দেয়া – এ পার্থিব জীবনে এবং আখেরাতে। মুসলিম বিশ্বে সে ভয়ানক আযাবটি এসেছে শত্রুশক্তির নির্মম অধিকৃতি, গণহত্যা, নির্যাতন, শোষণ ও নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে।       

ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজে শুরুর কাজটি শুরুতেই করতে হয়। শুরুর সে কাজটি হলো প্রতিটি মুসলিমকে গড়ে উঠতে হয় পূর্ণ ঈমানদার রূপে। ইসলাম কবুলের সাথে সাথেই শুরু করতে হয় পূর্ণ মু’মিন তথা ঈমানদার হওয়ার লড়াই। সে লড়াই’য়ে মূল হাতিয়ার হলো কুর’আনী জ্ঞান। এ জ্ঞানই যোগায় ঈমানের খাদ্য। তাই ঈমানকে বাঁচাতে হলে ও সে জ্ঞান বলবান করতে হলে সর্বপ্রথম চাই কুর’আনী জ্ঞান। সে জ্ঞানের আলোকে পূর্ণ-কুর’আনীকরণ করতে হয় আক্বীদা-বিশ্বাস ও চেনতাকে। নবীজী (সা:) তো সেভাবেই মু‌’মিন গড়ার কাজের শুরু করেছিলেন। অথচ আজকের মুসলিমদের ব্যর্থতা এক্ষেত্রে প্রকট। তারা নামাজ-রোজা পালনে আগ্রহী হলেও কুর’আনী জ্ঞানার্জনে আগ্রহী নয়। বড় জোর তারা না বুঝে কুর’আন তেলাওয়াতে রাজী। ফলে তাদের মনের গভীরে প্রবেশ করছে না কুর’আনের আলো। ফলে ফাঁকিবাজি রয়ে যাচ্ছে পূর্ণ ঈমানদার হওয়ায়। ফলে নিজেকে মুসলিম রূপে পরিচয় দিলেও রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, আইন-আদালত, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে কুর’আনী বিধান অনুসরণের কাজটি হচ্ছে না। বিস্ময়ের বিষয় হলো, কুর’আনের বিধান অনুসরণ না করেই তারা স্বপ্ন দেখে সিরাতাল মুস্তাকীমে চলার!

কুর’আনের জ্ঞানশূন্য মানুষদের দিয়ে ইসলামের নামে রাজনৈতিক দল গড়ে লাভ হয় না। বড় জোর পার্লামেন্টে কিছু সিট জুটে ও মন্ত্রিত্ব মেলে। অজ্ঞ ও অশিক্ষিতদেরও বিপুল সংখ্যায় দলের ক্যাডার বানানো যায়। তাদের দিয়ে কি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ হয়? যারা ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখে অন্ততঃ তাদের চেতনায় পবিত্র কুর’আনের বাণী সূর্য্যের ন্যায় প্রজ্বলিত রাখতে হয়। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজটি কখনোই অজ্ঞ ও অশিক্ষিতদের দিয়ে হয়না। মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এ কাজটি কুর’আনী জ্ঞানে জ্ঞানবান মুত্তাকীদের। কারণ, এ লক্ষ্যে প্রতি কদম পথ চলতে হয় কুর’আনী জ্ঞানের আলোতে। অজ্ঞতায় বাড়ে পথভ্রষ্টতা ও ব্যর্থতা। ভ্রষ্টতার সে পথটি তো জাহান্নামের। ঈমানদারকে সিরাতাল মুস্তাকীম দেখায় পবিত্র কুর’আনের নূর। সে নূর তো তারাই পায় -যারা পবিত্র কুর’আনের বাণী বুঝার সামর্থ্য রাখে। যারা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন বুঝলো না, সে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী যারা ঔষধও সেবন করলো না -তাদের রোগ সারবে কিরূপে? অথচ সেরূপ আচরণ হচ্ছে পবিত্র কুর’আনে প্রদত্ত মহা আল্লাহতায়ালার প্রেসক্রিপশনের সাথে।

কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতার ফলে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজই শুধু ব্যর্থ হচ্ছে না, ব্যর্থ হচ্ছে ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার কাজও। শুরুর কাজটি তাই শুরুতে হচ্ছে না। কুর’আনী জ্ঞানের শূণ্যতা নিয়ে কোটি কোটি মুসলিম নামাজী ও রোজাদার হচ্ছে বটে, তবে সত্যিকার ঈমানদার হওয়ার কাজটি হচ্ছে না। সে ব্যর্থতাটি বুঝা যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের বিলুপ্তি দেখে। বুঝা যায় ইসলামী রাষ্ট্রের অনুপস্থিত দেখে। এবং সে ব্যর্থতা আরো বুঝা যায় মুসলিমদের মাঝে জিহাদশূণ্য ও দেয়াল ঘেরা বিভক্তি দেখে।  প্রশ্ন হলো, এ দারুন ব্যর্থতা নিয়ে কি জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচা যায়? যারা জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচতে চায় এবং যেতে চায় জান্নাতে -তাদের সামনে পথ মাত্র একটি। সেটি পবিত্র কুর’আনকে আঁকড়ে ধরার পথ। এবং কুর’আনকে আঁকড়ে ধরার পথটি তো কুর’আন বুঝার পথ। কুর’আন না বুঝে সেটি কি আদৌ সম্ভব?

একমাত্র তারাই সিরাতাল মুস্তাকীম পায়, যারা পবিত্র কুর’আনকে শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে। সে ঘোষণাটি পবিত্র কুর’আনে বার বার এসেছে। একমাত্র তখনই ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার কাজটি যেমন সফল হয়, তেমনি সফল হয় ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। এবং ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ সফল হলেই গড়ে উঠে সত্যিকার মুসলিম রূপে গড়ে উঠা এবং পূর্ণ ইসলাম পালনের সহায়ক পরিবেশ। প্রশ্ন হলো, এ পৃথিবী পৃষ্ঠে এর চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ কি অন্য কিছু হতে পারে? কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ক’জন মুসলিম আজ সম্পৃক্ত? তাদের মেধা, অর্থ, সময়, দৈহিক বল ও রক্ত নানা কাজে ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু ক’জন মুসলিম মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সে সামর্থ্যকে ব্যয় করছে তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে? প্রশ্ন হলো, রোজ হাশরের বিচার দিনে হিসাব দেয়ার আগে তারা কি নিজেদের হিসাব নিজেরা নিবে না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *