সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা ও সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা প্রসঙ্গ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on June 23, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
অজ্ঞতার নাশকতা
অজ্ঞতার অন্ধকারে যাদের বসবাস, তাদের কাছে অজ্ঞতা নিয়ে বাঁচাই অহংকারে পরিণত হয়। সেরূপ অহংকার দেখা যায় ভারতের প্রায় শত কোটির হিন্দুর মাঝে। তাদের কাছে মুর্তিপূজা, দেব-দেবী পূজা, লিঙ্গপূজা, গরুপূজার ন্যায় আদিম অজ্ঞতাও তখন অহংকারে পরিণত হয়। তখন অসম্ভব হয় তা থেকে বেরিয়ে আসা। একে বলা যায় inertia of belief and culture অর্থাৎ ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির স্থিতিশীলতা। ভারতীয় হিন্দুরা তাই বহু হাজার বছরের সনাতন অজ্ঞতা, বর্ণবাদ ও জাত-পাতের অসুস্থ সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচছে। ভারতে বিজ্ঞানী, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যাটি বিশাল; এবং তাদের অর্জনও অনেক। কিন্তু তারা সেই আদিক অজ্ঞতাগুলি পরিত্যাগের নাম নিচ্ছে না। বরং বাঁচছে মুর্তিপূজা, লিঙ্গপূজা, গরুপূজা ও গোমূত্র সেবন নিয়েই। ভারতে বুকে সভ্যরাষ্ট্র নির্মাণের পথে এরূপ অজ্ঞতাই হলো সবচেয়ে বড় বাধা। দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ের সাথে তীব্রতর হচ্ছে আদিম অজ্ঞতার জোয়ার। ফলে শত বছর আগে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণের কাজটি না হলেও আজ সেটি উৎসবভরে হচ্ছে।
যাদের জ্ঞান শুধু ক্ষুদ্র পার্থিব জীবন নিয়ে সীমিত এবং কিছুই জানে না অন্তহীন আখেরাতের জীবনকে নিয়ে -সে অজ্ঞতার পরিণাম তো ভয়াবহ। মানবের আসল ঠিকানা তো আখেরাত। তাই প্রস্তুতি নিতে হয় আখেরাতের জীবনে সফল হওয়া জন্য। সে সফলতাটি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায় এবং জান্নাত পাওয়ায়। প্রতিটি মানুষ এ দুনিয়ায় কয়েক দিনের মুসাফির মাত্র। পৃথিবীর সবগুলি মহাসাগরের সমুদয় পানির সাথে এ ফোটা পানির তূলনা চলে -কারণ উভয়ই সীমিত। কিন্তু অনন্ত-অসীম আখেরাতের সাথে কি এ ক্ষুদ্র পার্থিব জীবনের তূলনা হয়? এ পৃথিবীতে মৃত্যু অনিবার্য; কিন্তু মৃত্যু নেই আখেরাতে। আখেরাত নিয়ে অজ্ঞ থাকার বিপদ তাই ভয়াবহ। সে অজ্ঞতা জাহান্নামে হাজির করে। ফলে এ অজ্ঞতাই হলো মানব জীবনের সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা। বিষ যেমন দেহের বিনাশ ঘটায়, অজ্ঞতা তেমনি ঈমানের মৃত্যু ঘটায়। এ অজ্ঞতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সেরা ডিগ্রি লাভ -এমন কি নবেল প্রাইজ প্রাপ্তিতে দূর হয়না। সে জ্ঞানের একমাত্র উৎস ওহীর জ্ঞান। সে জন্যই পবিত্র কুর’আন থেকে শিক্ষা লাভ ইসলামে এতো গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি ফরজ। সে ফরজ আদায় না হলে নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত -এমন কি তাহাজ্জুদ পড়েও মানুষ শেখ হাসিনার ন্যায় নৃশংস জালেম, খুনি, ভোটচোর ও ভোটডাকাত হয়।
জাহান্নামে পৌঁছতে জ্ঞানবান হতে হয় না। সিরাতাল মুস্তাকীম তথা সত্যপথটিও চিনতে হয়না কিন্তু জান্নাতে পৌঁছতে হলে জান্নাতের পথ “সিরাতাল মুস্তাকীম”টি অবশ্যই চিনতে হয়। তখন অজ্ঞতা ছেড়ে কুর’আনী জ্ঞানের পথ ধরতে হয়। ইসলামে জ্ঞানার্জনকে তাই নামাজ-রোজা আগে ফরজ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশে বহু হাজার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বহু লক্ষ শিক্ষক শিক্ষাদানের কাজে জড়িত। কিন্তু সে অজ্ঞতা থেকে বাঁচার ফরজটি আদায় হচ্ছে না। ফলে বাঁচছে সীমাহীন অজ্ঞতা নিয়ে। মুসলিম উম্মাহর আজকের নানামুখী ব্যর্থতার মূল কারণ হলো এ শিক্ষাগত ব্যর্থতা। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতে ফরজ যতই পালন করা হোক না কেন -তা দিয়ে জ্ঞানার্জনের ফরজ আদায় না করার যে ভয়াবহ আযাব, সেটি দূর হয়না। এবং দূর যে হয়নি -তার প্রমাণ আজকের ব্যর্থ মুসলিমগণ। তাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায়। বাংলাদেশে সে ব্যর্থতার চিত্রটি ধরা পড়ে গুম, খুন, ধর্ষণ, বৈচারিক হত্যা, বিচার-বহির্ভুত হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, ব্যাংক লুট, ট্রেজারী লুট এবং উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লুটের ন্যায় নানা রূপ দুর্বৃত্তি থেকে। কোটি কোটি বাংলাদেশীর নামাজ-রোজা এবং লাখ লাখ বাংলাদেশীর হজ্জ-যাকাত দুর্বৃত্তির এ জোয়ার থেকে দেশকে বাঁচাতে পারছে না।
জান্নাতে যেতে হলে দুনিয়ার বুকেই ঈমান ও আমলের পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। প্রশ্ন হলো এ পৃথিবীতে যারা সভ্য, ভদ্র ও ঈমাদার রূপে বাঁচতে ব্যর্থ হয় এবং প্লাবন আনে দুর্বৃত্তির, তারা কি কখনো জান্নাতের যোগ্য বিবেচিত হয়? মহান আল্লাহতায়ালা তো জান্নাতকে অসভ্য, অভদ্র ও বর্বর দুর্বৃত্তদের পুরস্কৃত করার জন্য নির্মাণ করেননি। তাদের জন্য নির্মাণ করেছেন জাহান্নাম। মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের ভূল-ত্রুটি ও গুনাহকে তিনি মাফ করে দেন। কিন্তু যারা অবিশ্বাস করে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তে এবং যাদের যুদ্ধটি তাঁর দ্বীনকে পরাজিত রাখায় -তাদের তাওবা কি কখনো তিনি কবুল করেন? মাফ করেন কি তাদের গুনাহ? পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের ন্যায় সেক্যুলার দেশগুলির শিক্ষাব্যবস্থা পরিণত হয়েছে ছাত্রদের কুর’আনী জ্ঞানে অজ্ঞ রাখা এবং তাদেরকে জাহান্নামের যাত্রী বানানোর হাতিয়ারে। বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ রাজস্ব দিয়ে সরকারের সে নীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছ। শয়তান ও তার অনুসারীরা এভাবে কই’য়ের তেলে কই ভাজছে। কি বিস্ময়! এ ভয়াবহ বিপদ থেকে মুক্তি দেয়া নিয়ে মুসলিমদের মাঝে কোন চিন্তাভাবনা নেই।
অজ্ঞতা থেকে বাঁচা এবং জ্ঞানবান হওয়া -আরেকটি কারণে অতি জরুরি। মানব সৃষ্টির মূল কারণ, সে বাঁচবে মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা রূপে। খলিফার নিজের এজেন্ডা নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতা থাকে না। সে কখনোই সার্বভৌম হয়না। তাকে বাঁচতে হয় তার মনিবের তথা মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা নিয়ে। সেভাবে বাঁচতে হলে তাকে অবশ্যই জানতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে। সে এজেন্ডার সাথে একাত্মতার উপর নির্ভর করে এ জীবনের মূল সাফল্য। একমাত্র সে একাত্মতাই ব্যক্তিকে জান্নাতে নেয়। জান্নাতে পৌঁছায় ব্যর্থ হলে অবশ্যই তাকে জাহান্নামে যেতে হয়। কারণ, আখেরাতে এ দুটি স্থান ছাড়া তৃতীয় কোন স্থান নাই। কিন্তু যে ব্যক্তি জানলোই না মহান আল্লাহতায়ালার কি সে এজেন্ডা -সে তাঁর সাথে একাত্ম হবে কিরূপে? পরিতাপের বিষয় হলো, এ বিষয়ে গভীর অজ্ঞতার শিকার এ পৃথিবীর অধিকাংশ মানব। মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্ট এ পৃথিবীতে তারা বসবাস করছে স্রষ্টার সে এজেন্ডা না জেনেই। এর চেয়ে বড় অজ্ঞতা এবং মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে এর চেয়ে বড় গাদ্দারী আর কি হতে পারে? বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে সে অজ্ঞতাটি এমন কি তাদেরও যারা নিজেদের আল্লামা, আলেম, মুফতি, মুফাচ্ছির, ইমাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক রূপে পরিচয় দেয়। জ্ঞানবান হলে তো তাদের মাঝে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদ দেখা যেত। তখন নির্মিত হতো ইসলামী রাষ্ট্র। উত্তাপ না থাকলে সেটিকে কি আগুন বলা যায়? তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার তাড়না না থাকলে তাকে কি জ্ঞানী বলা যায়? প্রশ্ন হলো এমন অজ্ঞ, নিষ্ক্রিয় ও গাদ্দারদের কি নেয়ামত-ভরা জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন?
বড় রকমের একটা ধাক্কা না খেলে পাথর তার স্থান থেকে নড়ে না, লক্ষ-কোটি বছর সেটি এক জায়গাতেই স্থির থাকে। বিজ্ঞানে এটিকে inertia of rest বলা হয়। সেটি অবিকল সত্য দর্শন ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। দর্শনের ও সংস্কৃতির অঙ্গণে বড় রকমের একটি ধাক্কা বা বিপ্লব না আসলে মানুষ তার বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে ত্যাগ করে না। পশুদের জীবনে তেমন একটি দর্শনের ধাক্কা না আসাতে পশুদের বাঁচার সংস্কৃতিতে তাই পরিবর্তন আসে না। তাই হাজার হাজার পূর্বে গরু-ছাগল ও বাঘ-ভালুক যেভাবে বাস করতো আজও সেরূপে বাস করে। দর্শনহীন অজ্ঞ মানুষও তেমন পশুতে পরিণত হয়। তারাও ব্যর্থ হয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব আনতে। নবী-রাসূলদের কাজ হলো, মানবের চেতনার ভূমিতে সেরূপ একটি ধাক্কা দেয়া তথা বিপ্লব আনা। যারা নিজেদের নবী-রাসূলদের অনুসারী রূপে দাবী করে, সে কাজটি তাদেরও করতে হয়। বস্তুত সমাজে যারাই বিপ্লব আনতে চায়, তাদের সবাইকে এরূপ ধাক্কা দেয়ার কাজটি করতে হয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার বুকে সে ধাক্কা দেয়ার কাজটি যথার্থ ভাবে হয়নি। নবীজী (সা:) ও তাঁর হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাহাবাগণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিশাল ভূ-খণ্ড জুড়ে জনগণের চেতনার ভূমিতে সেরূপ একটি ধাক্কা দেয়ার কাজটি করেছিলেন; ফলে তারা সফল হয়েছিলেন সেসব দেশে সফল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব আনতে। কিন্তু তাঁরা ভারতে আসেননি; ফলে ভারতের বুকে সেরূপ একটি ইসলামী বিপ্লব আদৌ আসেনি।
ভারতে কেন ইসলাম বিজয় পায়নি?
দক্ষিণ এশিয়ার বুকে মুসলিমদের সামরিক বিজয় এসেছে বটে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে ধর্মীয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে বিপ্লব আনতে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশী মুসলিমের বাস ভারতীয় উপমহাদেশে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ -এ তিনটি দেশে মুসলিমদের সংখ্যা ৬০ কোটির অধিক। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে পৃথিবীর এ গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তে একটি শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এ এলাকায় মুসলিমগণ । অথচ এ এলাকায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের। এ ব্যর্থতার হেতু কি? মূল কারণ, যে মুসলিমগণ ভারত জয় করেছিলেন তাদের যুদ্ধ জয়ে যথেষ্ঠ সামর্থ্য থাকলেও ছিলনা ধর্মীয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে পর্যাপ্ত ইসলামী প্রশিক্ষণ ও পরিপক্কতা। মু্সলিম হওয়াতে তাদের ছিল বিশাল অপূর্ণতা। তাদের এজেন্ডা যতটা সাম্রাজ্য বিস্তারে ছিল, ততটা ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় ছিল না। যে জিহাদটি কুর’আন দিয়ে করতে হয়, সে জিহাদটিই তারা করেননি। কারণ, সেটির সামর্থ্যও তাদের ছিল না।
এমন কি যেসব সুফিদের হাতে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার, এমন কি তারাও নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের ন্যায় ইসলামের পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করেননি। তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন নিজেদের মনগড়া ইসলাম। সুফিদের ইসলামে নবীজী (সা:) ও সাহাবাদের প্রতিষ্ঠিত বিশুদ্ধ ইসলাম দেখা যায় না। নবীজী (সা:)’র ইসলামে ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ, সে রাষ্ট্রের পরিচালনা, আদালতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, কুর’আন শিক্ষা, রণাঙ্গণে জিহাদে এবং সে জিহাদের নিজ অর্থ ও রক্তের বিনিয়োগ। কিন্তু নবীজী (সা:)’র ইসলামের সে বিশুদ্ধ চিত্র সুফিদের ইসলামে নজরে পড়েনা। তারা বহু সুফি খানকাহ প্রতিষ্ঠা করলেও কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ দেখাননি। সে লক্ষ্যে কোন জিহাদও লড়েননি। ফলে নবীজী (সা:) যেরূপ ১০টি বছর রাষ্ট্রপ্রধান রুপে প্রশাসন চালালেন, ইসলামের শত্রুশক্তির নির্মূলে যেরূপ অসংখ্য জিহাদ লড়লেন এবং তাঁর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে খেলাফতে রাশেদা চালালেন -সে সূন্নতগুলি এসব সুফিদের কাছে আদৌ গুরুত্ব পায়নি। অথচ ইসলাম বিশ্বব্যাপী দ্রুত প্রচার পেয়েছে এবং মুসলিমগণ বিশ্বশক্তির মর্যাদা পেয়েছে এবং মুসলিমদের জান, মাল ও ইজ্জত সুরক্ষা পেয়েছে তো সে সূন্নত নিয়ে বাঁচার কারণে। অথচ সুফিদের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসলিমদের কাছে নবীজী (সা:)ও তাঁর সাহাবাদের সূন্নত গুরুত্ব পায়নি। ফলে সুফিদের প্রতিষ্ঠিত ইসলাম বেঁচে থাকলেও বেঁচে নাই নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলাম। এরই ফল হলো, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে বাজার পাচ্ছে পীর-মুরিদী ও তাবলিগ জামায়াতের বিভ্রান্তিকর ও অপূর্ণাঙ্গ ইসলাম। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো “উদখুলো ফিস সিলমে কা’ফফা।” অর্থ: পূর্ণ ভাবে প্রবেশ করো ইসলামে। ইসলামে অপূর্ণাঙ্গ ইসলাম পালনের কোন সুযোগ নাই। এরূপ অপূর্ণাঙ্গ ধর্মপালনে কেউ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। অথচ অপূর্ণাঙ্গ ইসলাম নিয়ে বাঁচাটিই সুফিগণ জায়েজ করে দিয়েছেন। নবীজী (সা:)র বিশুদ্ধ কুর’আনী ইসলামের বিরুদ্ধে এই হলো সুফিদের নাশকতা।
অজ্ঞতা ও গাদ্দারী মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে
মুসলিম জীবনে কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতা যেমন গভীর, তেমনি গভীর হলো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে গাদ্দরী। এরই পরিণাম হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্ট এ পৃথিবীতে তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার সৈনিকদের সংখ্যাটি অতি নগন্য। একারণেই বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে জাতীয়তাবাদী, ফ্যাসিবাদী, সমাজবাদী, হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লড়াইয়ে বহু লক্ষ নেতাকর্মী জুটলেও মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লড়াইয়ে তেমন লোকবল নেই। একারণেই দেশটিতে বেঁচে নাই নবীজী (সা:)’র ইসলাম। নবীজী (সা:)’র ইসলাম বাঁচলে সেটি খালি চোখেই দেখা যেত। তখন প্রতিষ্ঠা পেত ইসলামী রাষ্ট্র; এবং সে রাষ্ট্রে দেখা যেত শুরা ভিত্তিক শাসন, আদালতে শরিয়তী আইনের বিচার, স্কুল-কলেজে কুর’আন শিক্ষা, দুর্নীতির নির্মূলে ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় জিহাদ, এবং সে সাথে প্রতিষ্ঠা পেত ইসলামের সমাজকল্যাণ পলিসি ও প্যান-ইসলামী মুসলিম ঐক্য। কিন্তু বাংলাদেশে নবীজী (সা:)’র সে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়নি। বরং বিজয় পেয়েছে শয়তান ও তার অনুসারীদের এজেন্ডা। এবং সাধারণ মুসলিমগণ বাঁচছে প্রকৃত ইসলামের অনুসরণ ছাড়াই।
ডাক্তার, বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, আইনবিদ বা অন্য কোন পেশাবিদ হওয়াটি কারো উপরই ফরজ নয়। এসব না হওয়াতে কেউ জাহান্নামে যাবে না। কিন্তু ফরজ হলো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাটি জানা এবং সে এজেন্ডার সাথে পুরোপুরি একাত্ম হওয়া। একাত্ম না হলে কিরূপে সে পাবে সিরাতাল মুস্তাকীম? জান্নাতেই বা যাবে কিরূপে? তাছাড়া প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা না জানলে কি জ্ঞানার্জনের ফরজ আদায় হয়? পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলিতে বহু লক্ষ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা পেলেও জ্ঞানার্জনের সে ফরজ আদায় হচ্ছে না। ফলে দূর হচ্ছে না মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা বিষয়ে অজ্ঞতা। বরং দিন দিন সে অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াত আরো গভীরতর হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক নামাজী, রোজাদার, হাজী, মাদ্রাসার শিক্ষক, পীর, মসজিদের ইমাম জাহিলিয়াতের সে স্রোতে ভেসে একাত্ম হচ্ছে সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী ও ফ্যাসিবাদী শিবিরে। ফলে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাটি বিজয় না পেয়ে স্রেফ কিতাবেই থেকে যাচ্ছে। সুরা তাওবা, সুরা ফাতাহ ও সুরা সাফে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার সে এজেন্ডাটি হলো:
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ
অর্থ: “তিনি সেই মহান আল্লাহ যিনি পথনির্দেশনা ও সত্য দ্বীনসহ তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন এ জন্য যে, সেটি বিজয়ী হবে সকল ধর্ম ও সকল জীবনদর্শনের উপর। এবং যদিও সেটি মুশরিকদের কাছে অপছন্দের।” মহান আল্লাহতায়ালার সে এজেন্ডাটি সুরা আনফালের ৭ নম্বর আয়াতে ঘোষিত হয়েছে এভাবে:
يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُحِقَّ ٱلْحَقَّ بِكَلِمَـٰتِهِۦ وَيَقْطَعَ دَابِرَ ٱلْكَـٰفِرِينَ
অর্থ: “আল্লাহ চান, তাঁর কালামে পাকের দ্বারা সত্যকে সত্য রূপে প্রতিষ্ঠা দিতে এবং চান, কাফিরদের শিকড় কাটতে।” সুরা আনফালের ৮ নম্বর আয়াতে সে এজেন্ডাটি ঘোষিত হয়েছে এভাবে:
لِيُحِقَّ ٱلْحَقَّ وَيُبْطِلَ ٱلْبَـٰطِلَ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُجْرِمُونَ
অর্থ: “তিনি চান সত্যকে সত্য রূপে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা রূপে প্রতিষ্ঠা দিতে; এবং যদিও অপরাধীদের কাছে সেটি অপছন্দের।”
মহান আল্লাহতায়ালা হুকুম দিলে তাঁর নিজের এজেন্ডাটি মুহুর্তের মধ্যে বাস্তবায়ীত হয়ে যেত। কারণ, কোন কিছু সৃষ্টি হওয়ার জন্য তাঁর পক্ষ থেকে “কুন তথা হয়ে যাও” বলাটিই যথেষ্ট। কিন্তু সেভাবে নিজের এজেন্ডাকে বিজয়ী করা মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা নয়। তিনি চান, তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করবে তাঁর সেসব ঈমানদার বান্দাগণ -যারা জান্নাতের প্রত্যাশী। ঈমানদারদের জন্য এটিই হলো নির্ধারিত হোম ওয়ার্ক -যার মধ্য দিয়ে তিনি তাদের ঈমান ও আমলের পরীক্ষা নেন। একাজটি তিনি নিজে করলে বা ফিরেশতাদের দিয়ে করিয়ে নিলে ঈমানদারদের পরীক্ষা নেয়ার জন্য আরেক পৃথিবী নির্মাণ করতে হতো।
জান্নাতের পথ ও জাহান্নামের পথ
মহান আল্লহতায়ালার অস্তিত্বে যারা অবিশ্বাসী এবং বিদ্রোহী তাঁর এজেন্ডার বিরুদ্ধে -তাদেরকে শাস্তি দেয়াই তাঁর ঘোষিত নীতি। সেটি তাই নিশ্চিত জাহান্নামের পথ। অপরদিকে যারা মহান আল্লহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদে -তারা রয়েছে জান্নাতের পথে। তাদেরকে পুরস্কৃত করতেই অপেক্ষায় রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত ভরা জান্নাত। মুসলিমদের দায়বদ্ধতা হলো, পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি এজেন্ডার সাথে একাত্ম হওয়া। সে একাত্মতার পথটিই হলো সিরাতাল মুস্তাকীম তথা জান্নাতের পথ। সে এজেন্ডার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা অবাধ্যতা ব্যক্তিকে কাফিরে পরিণত করে। সেরূপ বিদ্রোহ বা অবাধ্যতা গণ্য হয় মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে যুদ্ধ রূপে। এরূপ ব্যক্তিগণ নিজেদেরকে মুসলিম রূপে দাবী করলে তারা চিহ্নিত হয় মুনাফিক রূপে।
অপর দিকে যাদের মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হওয়ার তাড়না, তারা কখনোই এরূপ বিদ্রোহীদের সামনে নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকে না। আগুনের পরিচয় যেমন উত্তাপে, তেমনি ঈমানদারের পরিচয় বিদ্রোহী বেঈমানদের বিরুদ্ধে বিরামহীন জিহাদে। তখন মু’মিনের জীবনে যেমন হিজরত আসে, তেমনি আসে নিজ গৃহ থেকে বহিস্কৃতি ও নির্যাতন। আসে শাহাদত। এপথটিই হলো মহান আল্লাহতায়ালা থেকে মাগফিরাত লাভ ও জান্নাত লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ পথ। সে ঘোষণাটি পবিত্র কুর’আনে বহুবার এসেছে। যেমন সুরা ইমরানের ১৯৫ নম্বর আয়াত বলা হয়েছে:
فَٱلَّذِينَ هَاجَرُوا۟ وَأُخْرِجُوا۟ مِن دِيَـٰرِهِمْ وَأُوذُوا۟ فِى سَبِيلِى وَقَـٰتَلُوا۟ وَقُتِلُوا۟ لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّـَٔاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّـٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ ثَوَابًۭا مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ عِندَهُۥ حُسْنُ ٱلثَّوَابِ ١٩٥
অর্থ: “অতঃপর যারা হিজরত করেছে, নিজ গৃহ থেকে যাদেরকে উৎখাত করা হয়েছে, আমার পথে যারা নির্যাতিত হয়েছে এবং যারা যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের পাপকর্মগুলিকে দূরীভূত করে দিব এবং অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতে -যার পাদদেশে থাকবে প্রবাহিত নদী। এটিই হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার। এবং আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম পুরস্কার।”
এ বিষয়ে সুরা তাওবার ২০, ২১ ও ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَهَاجَرُوا۟ وَجَـٰهَدُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ ٱللَّهِ ۚ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَآئِزُونَ ٢٠
يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍۢ مِّنْهُ وَرِضْوَٰنٍۢ وَجَنَّـٰتٍۢ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌۭ مُّقِيمٌ ٢١
خَـٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥٓ أَجْرٌ عَظِيمٌۭ ٢٢
অর্থ: “যারা ঈমান আনলো, হিজরত করলো এবং আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ও জান দিয়ে জিহাদ করলো তাদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা। তারাই হলো সফলকাম। তাঁদের রব তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে সুসংবাদ দিচ্ছেন রহমত, সন্তোষ ও জান্নাতের -যেখানে তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী সুখশান্তি। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রয়েছে মহা প্রতিদান।”
নবীজী (সা:)’র যুগে সাহাবাদের মাঝে প্রতিযোগীতা দেখা যেত মহান আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদে নিজ মেধা, নিজ অর্থ, নিজ শ্রম ও নিজ রক্তের বিনিয়োগে। সেটি ছিল মাগফিরাত লাভ ও জান্নাত লাভের প্রতিযোগীতা। সভ্যতর রাষ্ট্র ও উচ্চতর সভ্যতা তো সেখানেই নির্মিত হয় যেখানে শুরু হয় জনগণের মাঝে এমন নেক আমলে প্রতিযোগীতা। সে প্রতিযোগিতায় নবীজী (সা:)’র শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবী শহীদ হয়ে গেছেন। সেরূপ প্রতিযোগিতার নির্দেশ এসেছে সুরা হাদীদের ২১ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
سَابِقُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ ٱللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ ذُو ٱلْفَضْلِ ٱلْعَظِيمِ ٢١
অর্থ: “(হে ঈমানদারগণ!) প্রতিযোগিতা করো তোমাদের প্রতিপালক থেকে মাগফিরাত লাভে এবং জান্নাত লাভে। আসমান ও জমিনের প্রশস্ততার ন্যায় প্রশস্ত হলো সেই জান্নাত। সেটি প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদেরকে। এটিই হলো আল্লাহতায়ালার পক্ষে থেকে সেই নিয়ামত -যা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে থাকেন। এবং আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামতের অধিকারী।”
উপরিউক্ত আয়াতটি যে বার্তা দেয় তা হলো, ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস নিয়ে বাঁচা নয়, বরং সেটি হলো করুণাময় সে রাব্বুল আলামীন থেকে মাগফিরাত লাভ এবং জান্নাত লাভের বিরামহীন প্রতিযোগীতা নিয়ে বাঁচা। তেমন এক পবিত্র প্রতিযোগিতায় সৃষ্টি হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হওয়ার তাড়না। তখন আগ্রহ বাড়ে জিহাদের ন্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নিয়ে বাঁচার তাড়না। যার জীবেন জিহাদ নাই, বুঝতে হবে সে ব্যর্থ হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হতে। এমন ব্যক্তিরাই শয়তানের সেপাহীতে পরিণত হয়। মুসলিম ভূমিতে এরাই ইসলামের পরাজয় ডেকে এনেছে। এবং প্রতিষ্ঠা দিয়েছে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ ও সেক্যুলারিজমের ন্যায় হারাম মতবাদকে। এরা নিজেদের যতই মুসলিম রূপে দাবী করুক না কেন -তারা ইসলামের শত্রু। ইসলামের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করাই তাদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি। ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু মহান আল্লাহতায়ালা, তাঁর নবী-রাসূল, তাঁর কিতাব, পরকাল, ফিরেশতা, রোজ হাশর ও জান্নাত-জাহান্নামের উপর বিশ্বাস নয়। বরং সেটি হলো, তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ নিয়ে বাঁচায়। কারণ, মু’মিনের ঈমান নিছক বিশ্বাস নয়, বরং সে ঈমানের প্রকাশ ঘটাতে হয় সে বিশ্বাসকে বিজয়ী করার জিহাদে।
ঈমানের দাবী সূদখোর, ঘুষখোর, নৃশংস খুনি, জালেম শাসক এবং স্বৈরাচারী ভোটডাকাতও করতে পারে। তবে ঈমানের পরিমাপে মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব মাপকাঠি রয়েছে। সেটি হলো জিহাদ। ঈমানের পরিমাপে জিহাদের গুরুত্ব যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও চুড়ান্ত -সেটি বুঝা যায় সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। উক্ত আয়াতে একমাত্র তাদেরকেই ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী বলা হয়েছে যাদের জীবনে জিহাদ রয়েছে। ঈমান কাকে বলে সেটি বুঝার জন্য এটি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। এ আয়াতটি বলা হয়েছে, প্রকৃত ঈমানদার একমাত্র তারাই যারা মহান আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদে নিজের জান ও বিনিয়োগ করে। অর্থাৎ সে জিহাদের শহীদ হওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত। সে জিহাদ নির্ভুল পরিমাপ দেয়, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে কে কতটা একাত্ম। জিহাদে যাদের আগ্রহ নাই, বুঝতে হবে তাদের আগ্রহ নাই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করায়। এবং তারা আগ্রহী নয় তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠাতেও। তারা নিজেদেরকে নামাজী, রোজাদার, হাজী, আলেম, আল্লামা, ইমাম, মুফতি, মোহাদ্দেস ও শেখ রূপে পেশ করতে পারে, কিন্তু ব্যর্থ সত্যিকার ঈমানদার হতে।
সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা ও সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা
যারা সাচ্চা ঈমানদার তাদেরকে মহান আল্লাহতায়ালা শহীদ ও সিদ্দিকের মর্যাদা দেন। শহীদ তো সেই যে সর্ব-অবস্থায় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে শাহাদত দেয় তথা সাক্ষ্য দেয়। শুধু কথা বা লিখনী দিয়ে নয়, এমন কি প্রাণ দিয়েও। এবং সিদ্দিক হলো তারাই যারা সর্বদা সত্যবাদী। প্রকৃত ঈমানদারের থাকে এ দুটি গুণই। প্রকৃত ঈমানদারগণ যুদ্ধের ময়দানে শহীদ না হলেও তাদের থাকে শহীদ হওয়ার খালেছ নিয়েত ও পূর্ণ প্রস্তৃতি। প্রতিটি ব্যক্তি পুরস্কার পায় তাঁর নিয়েত ও প্রস্তুতির কারণে। লক্ষ্যসাধন বা সাফল্য আসে তো একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। তাই যার থাকে শহীদ হওয়ার খালেছ নিয়েত ও প্রস্তুতি -তাকে মহান আল্লাহতায়ালা শহীদ ও সিদ্দিকের মর্যাদা দেন। ঈমানদারের জন্য সে মর্যাদাকর বয়ানটি এসেছে সুরা হাদীদের ১৯ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦٓ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلصِّدِّيقُونَ ۖ وَٱلشُّهَدَآءُ عِندَ رَبِّهِمْ لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُورُهُمْ ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَكَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَحِيمِ
অর্থ: “এবং যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর, তারাই হলো তাদের রবের কাছে সিদ্দিক এবং শহীদ। তাদের জন্য রয়েছে প্রতিদান ও নূর। এবং যারা অবিশ্বাস করলো এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা বললো তারাই হলো জাহান্নামের বাসিন্দা।”
এ ক্ষেত্রে আজকের মুসলিমদের ব্যর্থতাটি বিশাল। তারা মহান আল্লাহতায়ালা, তাঁর নবী-রাসূল, তাঁর কিতাব, পরকাল, ফিরেশতা, রোজ হাশর ও জান্নাত-জাহান্নামের উপর বিশ্বাসী হলেও ব্যর্থ হয়েছে আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদ নিয়ে বাঁচতে। ফলে তারা ব্যর্থ হয়েছে শহীদ ও সিদ্দিকদের মর্যাদায় উত্তীর্ণ হতে। একারণেই তাদের উপস্থিতি নাই মহান আল্লাহতায়ালা থেকে মাগফিরাত লাভ এবং জান্নাত লাভের প্রতিযোগিতায়। ফলে প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে যেরূপ সফলতা দেখাতে পেরেছিলেন -সেরূপ সফলতার ধারে কাছে নাই আজকের মুসলিমগণ। তাদের জীবনে নানা রূপ ব্যস্ততা থাকলেও তাদের জীবনে ব্যস্ততা দেখা যায় না পৃথিবী পৃষ্ঠের সর্বশ্রেষ্ঠ এই নেক আমলে। এখানে শূণ্যতাটি কুর’আনী দর্শনের। আজকের মুসলিমদের সকল ব্যর্থতার মূল কারণ এখানেই। এমন কাজে তো একমাত্র তারাই নিজেদের জান ও মালের বিনিয়োগে আগ্রহী হয় -যাদের থাকে মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা ও তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার প্রবল তাড়না।
সেকালে মুসলিমদের দর্শনে তথা চেতনার ভূবনে পবিত্র কুর’আন যে বিশাল বিপ্লব এনেছিল, আজকের মুসলিমগণ ব্যর্থ হয়েছে সেরূপ একটি বিপ্লব আনতে। তারা শুধু সংখ্যাতেই বেড়েছে, ঈমান ও আমলে নয়। ফলে লক্ষ লক্ষ মসজিদ গড়লেও তারা ব্যর্থ হয়েছে এক খানি ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে। ফলে দেড় শত কোটি মুসলিম বাঁচছে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা না দিয়ে। তাদের অপরাধের নমুনা, তারা আদালতে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে শরিয়তের বদলে কাফিরদের প্রণীত আইন। এবং ইসলামের বদলে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, ফ্যাসিবাদ, রাজতন্ত্র, ও সেক্যুলারিজমকে। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় বিদ্রোহ এবং এর চেয়ে বড় গাদ্দারী আর কি হতে পারে? হিন্দুদের কাছে মুর্তিপূজা, লিঙ্গপূজা, দেব-দেবী পূজার সনাতন মিথ্যা যেমন অহংকারে পরিণত হয়েছে, তেমনি মুসলিমদের কাছেও অহংকার ও সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং গাদ্দারী নিয়ে বাঁচা। মুসলিম জীবনে এর চেয়ে বড় অজ্ঞতা ও এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে? ২৩/০৬/২০২৪
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018