সাতচল্লিশের স্বাধীনতা ও একাত্তরের আত্মঘাত
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 19, 2020
- Bangla Articles, ইতিহাস
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ষড়যন্ত্র ইতিহাসের বিরুদ্ধে
বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের অপরাধ বহুমুখি। তাদের লক্ষ্য মূলত ৪টিঃ এক), ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদারি; দুই). বাংলাদেশে ইসলামী চেতনার বিনাশ; তিন). গণতন্ত্র হত্যা; চার). দেশের সম্পদের উপর চুরি-ডাকাতি। এদের দাপট এতোই যে, ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বললে আবরার ফাহাদের ন্যায় লাশ হতে হয়। অথবা ইলিয়াস আলী এবং আরো বহুশত মানুষের ন্যায় গুম হয়ে যেতে হয়। ইসলামপন্থিদের রুখতে এরা শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যা ঘটাতেও কসুর করে না। এরা পঞ্চমুখ ভারতীয় নেতাদের প্রশংসায়। অথচ শহীদ সহরাওয়ার্দী, খাজা নাযিমুদ্দীন, মাওলানা আকরাম খান, নুরুল আমীনের মত যেসব বাঙালী মুসলিম নেতাগণ বঙ্গীয় এ ভূমিকে ১৯৪৭ সালে ভারতের বুকে বিলীন হওয়া থেকে বাঁচালো -তাঁদের কথা এরা মুখে আনে না। যেন বাংলাদশ নামক ভূমির জন্ম মুজিবের হাতে এবং সেটি ১৯৭১’য়ে। অপর দিকে ভারতের বুকে চলছে যে মুসলিম বিরোধী গণহত্যা, নারী ধর্ষণ ও ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ –তার নিয়েও এরা মুখ খুলতে রাজি নয়। ভারতে দিনদুপুরে পুলিশের সামনে যেভাবে বাবরী মসজিদ ধুলিস্যাৎ হলো –সেটিও তাদের কাছে অপরাধ নয়। মনিব চুরি-ডাকাতি, খুন-ধর্ষণ করলেও গোলাম যেমন নিন্দা না করে জোগালের কাজ করে -তেমনি অবস্থা ভারতসেবী বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের। কিন্তু এরাই অনাসৃস্টি বলে পাকিস্তানের সৃষ্টিকে এবং চরিত্রহনন করে পাকিস্তান আন্দোলনের নেতাদের।
১৯০ বছর ব্রিটিশের গোলামীর পর বাঙালী মুসলিমেরা স্বাধীনতা পায় ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট। এ বিশাল সত্যকে অস্বীকার করার অর্থ ইতিহাসকে অস্বীকার করা। ১৯৭১’য়ে ভারতের বিজয় এবং পাকিস্তানের পরাজয়কে বড় করতে গিয়ে ১৯৪৭’য়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে খাটো করা হয় পরিকল্পিত ভাবে। সেটি বাংলার ইতিহাসে বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের অপরাধকে আড়াল করা এবং তাদের নামকে বড় করার স্বার্থে। সে সাথে বাংলাদেশের উপর ভারতীয় আধিপত্যকে জায়েজ করার স্বার্থে। অথচ ১৯৪৭’য়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অস্বীকার করলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। ১৯৪৭’য়ে প্রতিষ্ঠা পায় পাকিস্তান। আজকের বাংলাদেশ যা কিছু পেয়েছে তা পেয়েছে পাকিস্তান থেকেই। তাই বাংলাদেশের ইতিহাস বুঝতে হলে অবশ্যই জানতে হয় পাকিস্তানের ইতিহাস। বাংলাদেশ কেন ১৯৪৭’য়ে ভারতের প্রদেশ না হয়ে পাকিস্তানের প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান হলো –এটি ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে বাঙালী মুসলিমের বহুদিনের ব্যাথা-বেদনা, ক্রন্দন ও জীবন দর্শন –যা পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ ভিন্নতার কারণেই ১৯৪৭’য়ে বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলিগণ একসাথে চলতে পারিনি; তাদের রাজনৈতিক পথ ভিন্নতর হয়। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসের বইগুলিতে সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি পরিকল্পিত ভাব লুকানো হয়েছে। সেটি বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের কৃত নৃশংস অপরাধগুলিকে আড়াল করার লক্ষ্যে। ১৯৭১’য়ে পূর্ব পাকিস্তানের সেক্যুলারিস্টগণ বাঙালী হিন্দুদের সাথে একই মহনায় এবং একই লক্ষ্যে মিলিত হয়। সে মিলনের লক্ষ্য ছিল যেমন পাকিস্তানের বিনাশ, তেমনি বাঙালী মুসলিমদের মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাকেই বানচাল করা।
১৯৪৭’য়ের ১৪ই আগষ্ট শুধু ব্রিটিশ শাসনের গোলামী থেকে মুক্তির দিন ছিল না, বরং মুক্তির দিন ছিল অখন্ড ভারতের কাঠামোয় হিন্দুদের হাতে গোলাম হওয়ার মহাবিপদ থেকেও। কাশ্মিরী মুসলিমদের জীবনে ১৯৪৭’য়ের ১৪ই আগষ্ট আসেনি, ফলে তাদের জীবনে স্বাধীনতাও আসেনি। ফলে আজও তারা ভারতীয় হিন্দুদের হাতে খুন হচ্ছে, ধর্ষিতা হচ্ছে এবং নৃশংস ভাবে নির্যাতিতও হচ্ছে। ১৭৫৭ সালে পশাশীর ময়দানে স্বাধীনতা হারানোর পর ১৯৪৭’য়ের ১৪ই আগষ্টই বাঙালী মুসলিম জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে ১৯৪৭’য়ের ১৪ই আগষ্টের সে বিশাল অর্জনকে পরিকল্পিত ভাবে ভূলিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি মূলত বাঙালী মুসলিমের চেতনার ভূমিতে ভারতসেবীদের দখলদারী। এর লক্ষ্য, বাঙালীর ইতিহাসে একাত্তরের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নেই এবং মুজিবের চেয়ে বড় মানবও নাই –সে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। কারণ, সত্য বেঁচে থাকলে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা দেয়া যায় না। তাই মিথ্যাকে বাঁচাতে হলে সত্যকে দাফন করতে হয়। ১৯৪৭’য়ের স্বাধীনতার পিছনে বলিষ্ঠ একটি দর্শন ছিল। এবং সেটি বাঙালী রূপে নয়, বরং মুসলিম রূপে বিশ্ব মাঝে মাথা তুলে দাঁড়ানোর দর্শন। তাই ইতিহাসের বইয়ে ১৯৪৭’য়ের ১৪ই আগষ্ট হাজির করলে হাজির হয় বাঙালী মুসলিমের মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার স্বপ্ন। তখন মারা পড়ে ভারতসেবী সেক্যুলারিস্ট বাঙালীর চেতনা। এবং সেটি হলে মুজিবসহ একাত্তরের নেতাকর্মীগণ গণ্য হয় ইসলাম ও মুসলিমের ঘৃনীত দুষমন রূপে।
১৯৪৭’য়ের দর্শন ও স্বাধীনতা
ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিনগুলিতে ভারতীয় মুসলিমদের সামনে চুড়ান্ত লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় এমন একটি মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা যেখানে তাদের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরু নিরাপত্তা পাবে। সুযোগ পাবে নিজ ধর্ম নিয়ে স্বাধীন ভাবে বাঁচার। এবং সুযোগ পাবে সে দেশটিকে ইসলামের দুর্গ রূপে গড়ে তোলার। সে সময়টি ভারতীয় মুসলিমদের জন্য ছিল অতিশয় ক্রান্তিলগ্ন। ব্রিটিশগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা ভারত ছেড়ে শীঘ্রই চলে যাবে। হিন্দুরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল সমগ্র ভারতের শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে নেয়ার। ফলে বিপদ ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের পদতলে পিষ্ট হওয়ার। একবার ভারত জুড়ে হিন্দু শাসন প্রতিষ্ঠা পেলে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসা কঠিন হতো। সে মহাবিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের। সে লড়াইয়ে জিতবার জন্য প্রয়োজন ছিল ভারতীয় মুসলিমদের মাঝে অটুট ঐক্য। প্রয়োজন ছিল এমন একজন সুযোগ্য নেতার যিনি সে ঐক্য গড়ে তোলার যোগ্যতা রাখেন। এবং যোগ্যতা রাখেন সে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়ার। তখন প্রয়োজন ছিল, স্বাধীন পাকিস্তানের কেসটি ব্রিটিশ শাসকদের দরবারে বুদ্ধিমত্তার সাথে পেশ করার। এবং প্রয়োজন ছিল, ভারতীয় মুসলিমদের শান্তুপূর্ণ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবী না মানলে গুরুতর একটি রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ অনিবার্য এবং তাতে ব্রিটিশদের নিরাপদে ঘরে ফেরাও যে অসম্ভব হবে -সে ভয়াবহ খবরটিও ব্রিটিশের মনে যুক্তি সহকারে বদ্ধমূল করা।
ব্রিটিশের আদালতে ভারতীয় মুসলিমদের মামলাটি কে সুন্দর ভাবে পেশ করতে পারবে -সে প্রশ্নটি সেদিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তখন মুসলিম লীগ ছিল বহু ভাগে বিভক্ত। মুসলিম নেতাদের মাঝে তখন প্রতিটি প্রদেশে চলছিল প্রচণ্ড বিবাদ। বাংলায় ফজলুল হকের মত নেতা নিছক ক্ষমতার লোভে জোট বেঁধেছিলেন হিন্দু মহাসভার মত প্রচণ্ড মুসলিম বিদ্বেষীদের সাথে, গড়েছিলেন শ্যামা-হক কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা। ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশী মুসলিমের বাস ছিল বাংলায়। কিন্তু তাঁরা সমগ্র ভারতের মুসলিমদের কি নেতৃত্ব দিবে, নিজেরাই লিপ্ত ছিল প্রচণ্ড কলহবিবাদে। অথচ ভারতের বুকে তখন নতুন ইতিহাস নির্মিত হতে যাচ্ছে। আগামী বহুশত বছরের জন্য নির্মিত হতে যাচ্ছে রাজনীতির এক নতুন প্রেক্ষাপট। এমন মুহুর্তের জন্য একটি জাতিকে শত শত বছর অপেক্ষা করতে হয়। ব্রিটিশদের চলে যাওয়ার পর ভারতের শাসনভার যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের হাতে যায় তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে হিন্দুরা পাবে যা ইচ্ছে তাই করার অধিকার। এমনটি হলে মুসলিমদের জন্য শুধু মনিবের বদল হবে, স্বাধীনতা আসবে না। বরং ঘাড়ে চাপবে ব্রিটিশের চেয়েও নৃশংসদের শাসন। বাংলার মুসলিমগণ হিন্দু-মানস ও হিন্দু জমিদারদের নির্মম অত্যাচার ও শোষণ দেখেছে নিজ চোখে এবং নিজ ঘরের আঙিনায়। সেটির বিরুদ্ধে তবুও ব্রিটিশ আদালতে অভিযোগ তোলা যেত। কিন্তু সমগ্র ভারতের শাসন যদি হিন্দুদের হাতে যায় তখন দুর্বিসহ এক মহাবিপর্যয় নেমে আসবে ভারতীয় মুসলিমদের জীবনে।
বাঙালী মুসলিমের ১৯৪৭-পূর্ব প্রজ্ঞা
রাষ্ট্রের শাসনভার হিন্দুদের হাতে গেলে পরিনতি যে কতটা তভয়াবহ হবে -তা নিয়ে বাঙালী মুসলিম মনে সামান্যতম সংশয়ও ছিল না। বাংলার মুসলিমদের মাঝে শিক্ষার হার তখন শতকরা ৭ ভাগও ছিল না। অথচ সে নিরক্ষরতা সত্ত্বেও হিন্দু শাসনের নাশকতা টের পেতে তারা বিন্দুমাত্র ভূল করেনি। তাই গান্ধি বা নেহেরুকে তারা বন্ধু রূপে গ্রহণ করেনি। বাঙালী মুসলিমদের সেদিনের প্রজ্ঞা রক্ষা করেছিল হিন্দুদের গোলাম হওয়া থেকে। অথচ আজ কোথায় সে প্রজ্ঞা? বাংলাদেশে আজ বহুশত প্রফেসর, বহুশত বিচারপতি, বহু হাজার আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবী। কিন্তু তারা গণতন্ত্র হত্যাকারি এক ফ্যাসিস্টকে নেতা, পিতা, বন্ধু বলছে। ভোটচোরকে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী বলছে। এ হলো তাদের প্রজ্ঞার নমুনা। আজকের এ ডিগ্রিধারিগণ যে কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দিচ্ছে, বাংলার নিরক্ষর গ্রামীন জনগণের ১৯৪৭ সালের কাণ্ডজ্ঞানটি তার চেয়ে বহুগুণ উত্তম ছিল। কাণ্ডজ্ঞান আসে বিবেকের সুস্থ্যতা, চিন্তাভাবনার সামর্থ্য, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও নৈতিক সততা থেকে; বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট থেকে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়েও নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। বরং বিপদ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের কুশিক্ষা মনের সে মহৎ গুণগুলি ধ্বংস করে দিতে পারে। বাংলাদেশের আজকের শিক্ষাব্যবস্থা তো সে ধ্বংস-প্রক্রিয়াকেই প্রকট ভাবে বাড়িয়েছে। আজকের দুর্নীতিগ্রস্ত বাংলাদেশ তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত দুর্বৃত্তদেরই সৃষ্টি।
বাংলার নিরক্ষর মানুষগুলোর ১৯৪৭ সালে সবচেয়ে বড় প্রজ্ঞাটি হলো, তারা ভাষা ও আঞ্চলিক ক্ষুদ্রতার উর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন। বাংলার সীমানা পেরিয়ে এক অবাঙালী জিন্নাহকে তারা নেতা রূপে গ্রহণ করেছিলেন, হিন্দু স্বার্থের কোন সেবাদাসকে নয়। গণতন্ত্রের হত্যাকারি কোন ফাসিষ্ট নেতাকেও নয়। এটি ছিল এক অপূর্ব বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টি। নইলে সেদিন পাকিস্তানই প্রতিষ্ঠা পেত না। এটি কি অস্বীকারের উপায় আছে, সুলতান মহম্মদ ঘোরীর হাতে দিল্লি বিজয়ের পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাই ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এবং সেটি সম্ভব হয়েছিল বাঙালী মুসলিমদের প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির কারণে। তাদের সে প্রজ্ঞার কারণেই উপমহাদেশের রাজনীতির সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ বাংলা পরিণত হয় মুসলিম লীগের দুর্ভেদ্য দুর্গে। পাকিস্তান গড়ার চুড়ান্ত লড়াইটি হয় বাংলার রাজধানী কলকাতায়। সেটি ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগষ্ট জিন্নাহর ঘোষিত ডাইরেক্ট এ্যাকশন দিবস পালন কালে হিন্দু গুন্ডাদের হাতে ৫ হাজারের বেশী মুসলিমের প্রাণ দানের মধ্য দিয়ে। প্রয়োজনে বিপুল রক্ত দিয়েই যে মুসলিমগণ পাকিস্তান বানাবে -এ ছিল সেদিনের ঘোষণা। জিন্নাহর “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান”এর এ ছিল বলিষ্ঠ বহিঃপ্রকাশ। ব্রিটিশ শাসকচক্র সেটি বুঝতে ভূল করেনি। কংগ্রেস নেতা গান্ধিও বুঝতে ভূল করেনি। ফলে পাকিস্তানের জন্মের বিষয়টি সেদিন কলকাতার রাস্তায় চুড়ান্ত হয়ে যায়। ব্রিটিশ ও কংগ্রেস –উভয়ই পাকিস্তান দাবীকে মেনে নেয়। বাঙালী মুসলিমদের সে প্রজ্ঞা ও প্রাণদান ভারতসেবী সেক্যুলারিস্ট বাঙালীদের কাছে যতই নিন্দিত হোক, কৃতজ্ঞতা ভরে তা যুগ যুগ স্মরণ রাখবে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ পাকিস্তানের জনগণ। বাংলাদেশ আজ ভারতীয় আধিপত্যের গোলাম। কিন্তু বাঙালী মুসলিমদের সৃষ্ট পাকিস্তান যেরূপ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে পরিণত হচ্ছে –সেটিও কি কম গর্বের?
অখন্ড ভারতের প্রবক্তরা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা ও জিন্নাহর বিরোধীতা করবে -সেটি স্বাভাবিক। কারণ সেটি তাদের রাজনীতিতে বেঁচে থাকার মূল বিষয়। ভারতের মদদপুষ্ট বাঙালীরাও তাঁকে ঘৃনা করবে সেটিও স্বাভাবিক। কারণ, ভারতের অর্থে সে লক্ষ্যেই তারা প্রতিপালিত হয়। বরং সেটি বাংলাদেশের মাটিতে ভারতসেবী রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার বিষয়ও। কিন্তু যারা ভারতীয় মুসলিমদের স্বাধীনতা ও কল্যাণ দেখতে চান তারাও কি জিন্নাহর অবদানকে অস্বীকার করতে পারেন? তার নেতৃত্বেই তো গড়ে উঠেছিল বিশ্বের সর্ব বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। জিন্নাহই একমাত্র নেতা যিনি ভারতের সূন্নী-শিয়া, দেওবন্দী-বেরেলভী, বাঙালী-বিহারী, পাঞ্জাবী-পাঠান, সিন্ধি-বেলুচ তথা নানা ফেরকা ও নানা ভাষার মুসলিমদের একত্রিত করতে পেরেছিলেন। এটি ছিল এক বিশাল অর্জন; এবং বহুলাংশে অসাধ্য কাজ। একাজটি অন্য কারো হাতে কি হয়েছে? কার হাতেই বা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল? অথচ মুসলিমদের মাজে একতা প্রতিষ্ঠা করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অথচ বহু নেতা ও বহু আলেম এমন মহান কাজে উদ্যোগ নেয়া দূরে থাক, আগ্রহ পর্যন্ত দেখাননি। ব্যস্ত থেকেছেন নিজেদের মাদ্রাসা বা হুজরা নিয়ে। সমগ্র ভারতের মুসলিমদের একতাবদ্ধ করা দূরে থাক, অধিকাংশ নেতা বা আলেমগণ তো ব্যস্ত থেকেছেন নিজ নিজ ফেরকা¸ মজহাব ও অঞ্চল ভিত্তিক বিভক্তি গড়া নিয়ে। অথচ বিভক্তি ও বিভেদ গড়া ইসলামে হারাম।
খাঁচার জীবন ও স্বপ্ন দেখার সামর্থ্য
মুসলিমগণ রাষ্ট্র গড়ে এজন্য নয় যে, সেখানে শুধু ঘর বাঁধবে, সন্তান পালন করবে ও ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। বরং দায়ভারটি আরো বিশাল। সেটি ইসলামী রাষ্ট্র গড়া এবং সে রাষ্ট্রে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা করা। পূর্ণভাবে ইসলাম পালন তো একমাত্র এভাবেই সম্ভব। ইসলাম মানব জাতির জন্য কি দিতে চায় সেটিকে বিশ্ববাসীর সামনে দর্শনীয় (showcasing) করা। ঈমানদারের জীবনে এটিই তো মূল কাজ। এটি তো মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা তথা প্রতিনিধি হওয়ার দায়ভার। মুসলিমকে তাই শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা গড়লে চলে না, ইসলামী রাষ্ট্র্ও গড়তে হয়। মুসলিম জীবনে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ও সবচেয়ে রক্তাত্ব লড়াই তো ইসলামী রাষ্ট্র্ গড়া নিয়ে। এ দায়ভার পালন করতে গিয়েই মক্কার মুসলিমগণ নিজেদের ঘরাবাড়ি ছেড়ে মদিনায় গিয়েছিলেন। এবং নিজ অর্থ, নিজ শ্রম ও নিজ রক্তের বিনিয়োগ ঘটিয়েছিলেন। নবীজী (সাঃ)র সাহাবীদের শতকরা ৭০ ভাগের বেশী শহীদ হয়েছেন সে দায়ভার পালনে।
খাঁচার বন্দিদশা সিংহকে যেমন শিকার ধরার দায়ভার থেকে দূরে রাখে, তেমনি অমুসলিম দেশের বন্দিদশী মুসলিমদেরকে ভুলিয়ে দেয় ইসলামী রাষ্ট্র গড়া ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দায়ভার। কেড়ে নেয় ইসলামী সমাজ ও সভ্যতা নির্মাণের সামর্থ্য। তাই কোন দেশে অমুসলিমদের শাসনাধীনে শরিয়ত বা ইসলামী সভ্যতার প্রতিষ্ঠা ঘটেছে ইতিহাসে তার নজির নেই। এজন্যই ব্রিটিশ ভারতের পরাধীনতার দিনগুলিতে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দূরে থাক, মুসলিমগণ তার স্বপ্নও দেখতে পারিনি। সে স্বপ্ন যেমন হোসেন আহম্মদ মাদানীর ন্যায় দেওবন্দি আলেমগণ দেখেননি, তেমনি মাওলানা মওদূদীও দেখেননি। তাবলিগ জামায়াতের মাওলানা ইলিয়াসও দেখেননি। তারা বড় জোর মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা, বই লেখা, পত্রিকা প্রকাশ করা বা ওয়াজ-নসিহতে অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু ইসলামের মিশন বা নবীজী (সাঃ)র সূন্নত শুধু এগুলো নয়। খাঁচার পরাধীনতার সবচেয়ে বড় কুফল হল, স্বাধীন জীবনের সাধই কেড়ে নেয়। কেড়ে নেয় লড়বার আগ্রহ। আনে স্থবিরতা। এজন্যই হিজরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ক্ষেত্র বিশেষে সেটি ফরজ। হিজরত দেয় জালেমের জিন্দান থেকে মুক্ত হয়ে নিজের সমগ্র সামর্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠার সুযোগ। তাই যে দেশে যত মোহাজির সে দেশে তত উন্নয়ন। পাকিস্তানে পারমানবিক বোমাসহ বহু কিছু দিয়েছে মোহাজিরগণ। অথচ বাংলাদেশে বিহারী মুহাজিরদের ঘরবাড়ী ও দোকানপাট কেড়ে নিয়ে বস্তিতে পাঠানো হয়েছে। এটি এক নিরেট অসভ্যতা এবং এসেছে একাত্তরের চেতনা থেকে।
ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়াটি বেওকুফি। প্রথমে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, তারপর সেটির ইসলামীকরণ। ব্রিটিশ শাসনামলে শরিয়ত বা খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবী তুললে সেটির বিরুদ্ধে প্রবল বিরোধীতা আসতো ভারতীয় হিন্দুদের পক্ষ থেকেই শুধু নয়, ব্রিটিশের পক্ষ থেকেও। যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার উসমানিয়া খেলাফতকে ধ্বংস করলো তাদের শাসনাধীনে থেকে খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবী তুললে সেটি কি তারা মেনে নিত? বরং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রকল্পটি তখন নর্দমায় গিয়ে পড়তো।পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বড় ফায়দাটি হলো, ১৯৪৭য়ের ১৪ই আগষ্টের পর দেশটির বিশাল মূসলিম জনগোষ্ঠির স্বপ্নই পাল্টে গেল। ফলে যেসব দেওবন্দী আলেম বা জামায়াতে ইসলামীর যে সব নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানে হিজরত করলেন তারা তখন স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এ হলো সবচেযে বড় সুফল। দীর্ঘ গোলামী জীবনের পর এলো এক মহা সুযোগ। জামায়াতে ইসলামের নেতারা তখন ব্রিটিশ শাসনাধীন গোলামী জীবনের দলীয় গঠনতন্ত্র তাড়াতাড়ি পাল্টিয়ে ফেললেন। সিদ্ধান্ত নিলেন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অংশ নেয়ার এবং পাকিস্তানকে একটি ইসলামী রাষ্ট্র রূপে গড়ে তোলার।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানঃ কেন এতো পার্থক্য?
কোনটি খাঁচার পাখি আর কোনটি বনের পাখি -সেটি বুঝতে কি বেশী বিদ্যাবুদ্ধি লাগে? তেমনি কে স্বাধীন দেশের আর কে পরাধীন দেশের -সেটিও কি বুঝতে বেগ পেতে হয়? তেমনি দুই ভিন্ন চেতনার মানুষের মাঝের ভিন্নতাগুলিও সহজে ধরা পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে একাত্তরের চেতনাধারীগণ তেমনি এক ভিন্ন চরিত্র নিয়ে হাজির হয়েছে। অন্যদের থেকে তাদের ভিন্নতাটি যেমন দেহের নয়, তেমনি পোষাক-পরিচ্ছদ বা খাদ্যেরও নয়। বরং সেটি চেতনার। চেতনা একটি জাতির জীবনে ইঞ্জিনের কাজ করে। কখনো সেটি সামনে নেয়, কখনো বা পিছনে নেয়। এবং ইসলামী চেতনা শুধু সামনেই নেয় না, জান্নাতেও নেয়। অপর দিকে অনৈসলামিক চেতনাগুলি যেমন গুম, খুন, ফাঁসি, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির দিকে নেয়, তেমনি নেয় জাহান্নামেও। পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশে পিছনে টানার চেতনাধারীগণই এখন ক্ষমতায়। সে নাশকতামূলক চেতনাকে তারা একাত্তরের চেতনা বলে।
একাত্তরের চেতনা যে কতটা আত্মঘাতি এবং বাংলাদেশকে যে কতটা পিছনে নিয়ে গেছে সেটি বুঝার যায় পাকিস্তানের সাথে তুলনা করা উচিত। কারণ উভয়ের যাত্রা তো একই সাথে শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ আজ অধিকৃত ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের হাতে। পাকিস্তানে আজ বহুদলীয় গণতন্ত্র। নির্বাচনের নামে সেখানে ভোটডাকাতি হয় না। বিরোধী দলগুলি শুধু রাজপথে নয়, পার্লামেন্টেও বিপুল সংখ্যায়। সে দেশে লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়ে। পুলিশ সে সব সমাবেশে হামলা করে না। বাংলাদেশের ন্যায় গুম, খুন ও ফাঁসীর রাজনীতি সেখানে নাই। পত্র-পত্রিকার রয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। পত্রিকার সম্পাদককে গুন্ডা লেলিয়ে অপমান ও মারপিট করা হয় না। অসংখ্য টিভি চ্যানেল সেখানে মুক্তভাবে কাজ করছে। গণতন্ত্র চর্চায় বাংলাদেশ যে পাকিস্তান থেকে কতটা পিছিয়ে পড়েছে সে হুশ কি বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের আছে? আর প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে? পাকিস্তান এখন বহুশত মিজাইল এবং বহু পারমানবিক বোমার অধিকারি। সেগুলির পাশাপাশি ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান তারা নিজেরাই তৈরী করে। লক্ষণীয় হলো, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের এরূপ পিছয়ে পড়া গণ্য হচ্ছে একাত্তরের চেতনার বিজয় রূপে। পাকিস্তানের নাম শুনলে যে বাকশালীরা দাঁত মাজে অন্ততঃ তাদের তো এনিয়ে লজ্জা হওয়া উচিত।
বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ বড্ড খুশি ইসলামের ভারতীয় মডেল নিয়ে। ইসলামের এ মডেলে নামায-রোযা আছে, হজ্ব-যাকাত এবং তাবলিগও আছে। কিন্তু শরিয়তের প্রতিষ্ঠার কোন ভাবনা নেই। জিহাদও নেই। এটি এক অপূর্ণাঙ্গ ইসলাম। ভারত সরকার ইসলামের এ ভারতীয় মডেলকেই আওয়ামী লীগ সরকারের হাত দিয়ে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করাতে চায়। তাই শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে রাজপথে না নামলে কি হবে, লাগাতর বেড়ে চলেছে তাবলিগ জামাতের ইজতেমায় লোকের সমাগম। শেখ হাসিনা নিজেও তাবলিগ জামাতের দোয়ার মজলিসে হাজির হয়। পাকিস্তানে শরিয়ত প্রতিষ্ঠিত না হলেও, সে সম্ভাবনা বিলুপ্ত হয়নি। প্রবর্তিত করেছে ব্লাফফেমী আইন। ফলে মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে লিখলে বা বললে প্রাণদণ্ড হয়। প্রাসাদ গড়তে ভূমি চাই। তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে উপযোগী দেশ চাই। পাকিস্তান মুসলিমদের জন্য সে ভূমিটা দিয়েছে। ফলে যতদিন পাকিস্তানে থাকবে, সে সম্ভাবনাও থাকবে। অথচ বাংলাদেশে আজ শরিয়ত দূরে থাক, গঠনতন্ত্রে বিসমিল্লাহ রাখাই অসম্ভব হচ্ছে। অসম্ভব হয়েছে জিহাদের উপর বই প্রকাশ করা। জিহাদকে বলা হচ্ছে সন্ত্রাস। ইসলামী সংগঠনগুলোকে জঙ্গি সংগঠন বলে নেতাদের জেলে ঢুকানো হচ্ছে।
হুমকি অস্তিত্বের বিরুদ্ধে
বাঘের পাল দ্বারা ঘেরাও হলে বিশাল হাতিও রেহাই পায় না। তাই যে জঙ্গলে বাঘের বাস সে জঙ্গলের হাতিরাও দল বেঁধে চলে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হল, মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এক দেশ। ঘেরাও হয়ে আছে আগ্রাসী হিন্দুদের দ্বারা। ফলে বাংলাদেশ এক অরক্ষিত দেশ। এদেশটির সীমাবদ্ধতাও প্রচুর। যে কোন দেশের প্রতিরক্ষার খরচ বিশাল। প্রতিরক্ষার খরচ কমাতে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের জন্ম হয়েছে। আর ভারতের ন্যায় বিশাল আগ্রাসী দেশের মোকাবেলায় সে খরচ তো আরো বিশাল। এ বাস্তবতার দিকে খেয়াল রেখেই বাংলার তৎকালীন নেতা খাজা নাযিমউদ্দিন, সোহরাওয়ার্দী, আকরাম খান, নুরুল আমীন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী সভায় লোহোর প্রস্তাবে সংশোধনী এনেছিলেন এবং পাকিস্তানে যোগ দেবার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পূর্ব বাংলা এভাবেই পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল সেদেশের সবচেয়ে বড় প্রদেশে রূপে। অথচ এরূপ পাকিস্তানভূক্তিকেই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছে পাকিস্তানে উপনিবেশিক শাসন। মিথ্যাচার আর কাকে বলে? কোন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন গড়তে হলে যুদ্ধ লড়তে হয়। প্রয়োজন পড়ে মীর জাফরদের। প্রয়োজন পড়ে লর্ড ক্লাইভ ও পলাশীর। প্রশ্ন হল, ১৯৪৭’য়ে কে ছিল সেই মীর জাফর? কে ছিল ক্লাইভ? তবে সে মীর জাফর কি ছিলেন সোহরাওয়ার্দী? খাজা নাজিমুদ্দিন বা আকরাম খাঁ -যারা বাংলাকে পাকিস্তান ভূক্ত করেছিলেন? আর সে ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনীই বা কোথায়? মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর আব্দুল জলিল, মেজর খালিদ মোশাররফ কি তবে সে ঔপনিবেশিক সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন?
১৯৪৭’য়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পর দেশটির প্রধানতম সমস্যা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। সে সমস্যার সমাধানটি আদৌ পাকিস্তানকে খন্ডিত করার মধ্যে ছিল না। নিজ ভূমিতে ভারতকে ডেকে আনার মধ্যেও ছিল না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ রূপে শুধু পাকিস্তানের রাজনীতিতে নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর রাজনীতিতে এবং সে সাথে বিশ্ব রাজনীতিতে বাঙালী মুসলিমগণ প্রভাব ফেলতে পারতো। কিন্তু শেখ মুজিব সে সুযোগ থেকেও তাদেরকে বঞ্চিত করেছে। বাঙালী মুসলিমদদের বিরুদ্ধে এটি হলো মুজিবের আরেক ঘৃণ্য অপরাধ। তবে জনগণও নির্দোষ নয়। জনগণের অপরাধ, তারা নির্বাচিত করেছে মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্র হত্যাকারি এক ফাসিস্টকে। তার পক্ষে শুধু যে ভোট দিয়েছে তা নয়, অর্থ, সময় এবং রক্তও দিয়েছে। সে সাথে পরম বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছে ভারতীয়দের। অপর দিকে ভারতের প্রতি অন্ধ মোহ গ্রাস করছে শুধু সেক্যুলারিস্টদেরই নয়, বহু ইসলামপন্থিকেও। ১৬ই ডিসেম্বর এলে ১৯৭১’য়ের ভারতীয় বিজয় এবং বাংলাদেশের উপর ভারতের অধিকৃতিকে নিজেদের বিজয় বলে এরা উৎসবও করে। বাঙালী মুসলিমের চিন্তা-চেতনার ভূমিতে এ হলো ভয়ানক এক আত্মঘাতি রোগ। দৈহিক রোগ না সারলে তা প্রতিদিন বাড়ে। তেমনি বাড়ে চেতনার রোগও। এবং চেতনার এ রোগ অতি সংক্রামকও। তাই যে রোগটি এক সময় ভারতপন্থি বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের ছিল সেটি এখন অন্যদেরও গ্রাস করছে। বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের বিরুদ্ধে এর চেয়ে ভয়ানক হুমকি আর কি হতে পারে? ১ম সংস্করণ ০৭/০৬/২০১১; ২য় সংস্করণ ১৯/১১/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018