সালাফিদের ইসলাম ও নবীজী (সা:)’র ইসলাম
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on September 24, 2021
- Bangla Articles, ই-বুকস, ইসলাম
- 2 Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সালাফি মতবাদের উৎপত্তি ও বিচ্যুতি
নবীজী (সা:) এবং খোলাফায়ে রাশেদার শাসন শেষ হওয়ার পর মুসলিমদের মাঝে নানা রূপ বিদয়াত, বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় কবর পূজা, মাজার পূজা ও সৌধ পূজার ন্যায় নানা রকম শিরক। সরাসরি মহান আল্লাহতায়ালাকে ডাকার বদলে শুরু হয় পীরদের মাধ্যমে করুণাময়ের দরবারে দোয়া পেশ। প্রবলতর হয় শিয়া মতবাদ ও সুফি ধারণা। সেসব বিদয়াত ও বিচ্যুতি থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন নজদের মহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব। তাঁর জন্ম হয় নজদে ১৭০৩ সালে (তবে কারো কারো মতে ১৭০২ সালে) এবং মৃত্যু ১৭৯৭ সালে। তিনি একজন আলেম দ্বীন ছিলেন এবং বসরা ও বাগদাদে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন ইমাম তায়মিয়া ও ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বলীর দ্বারা। সে সাথে প্রভাবিত হয়েছিলেন একজন ভারতীয় আলেমের দ্বারাও। ভারতীয় সে আলেম হলেন মহম্মদ হায়াত আল সিন্ধি। ভারতে তখন মোঘল শাসনের অতি দুর্বল অবস্থা। ভারতীয় মুসলিমগণ তখন হিন্দু উত্থানের ফলে নির্মূলের মুখে। মহম্মদ হায়াত আল সিন্ধি মহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবকে বুঝান, আদি ইসলামের দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া মুসলিমদের মুক্তির পথ নাই। মহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নিজেও দেখতে পান, মুসলিমগণ বিচ্যুৎ হয়ে পড়েছে ইসলামের মূল ধারা থেকে। নানারূপ বিদয়াত ঢুকেছে তাদের ধর্ম-কর্মে। তিনি হাত দেন মুসলিমদের আক্বিদা পরিশুদ্ধির কাজে। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল, মুসলিমদের তাওহিদের দিকে ফিরিয়ে আনা। এ নিয়ে তাঁর বিখ্যাত কিতাবটি হলো “কিতাব আল তাওহিদ।” তার প্রচারিত ধর্মমতকেই বলা হয় সালাফি ইসলাম। অনেকে সেটি ওয়াহাবী ইসলামও বলে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে তারা আহলে হাদীস রূপে পরিচিত। আধুনিক কালে সালাফি মতের বিখ্যাত আলেম হলেন মহম্মদ নাসিরউদ্দীন আলবানী ও আব্দুল আজীজ বিন বায।
তবে মহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব শুধু ধর্মীয় সংস্কারের কথাই বলতেন না, তিনি রাজনৈতিক সংস্কারের কথাও বলতেন। তাই বলা যায়, তিনি রাজনীতি বর্জিত সেক্যুলার ছিলেন না। রাজনৈতিক পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্যই তিনি ১৭৪৪ সালে কোয়ালিশন গড়েন নজদের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও গোত্রীয় নেতা মহম্মদ ইবনে সউদের সাথে। মহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবকে মহম্মদ ইবনে সউদ নিজের ধর্মগুরু রূপে গ্রহণ করেন। মহম্মদ ইবনে সউদকে বলা হয় সৌদি আরবের বর্তমান রাজবংশের জন্মদাতা। ১৭৭৩ সালে মহম্মদ ইবনে সউদ নজদ দখল করতে সমর্থ হন এবং দিরি’য়াকে রাজধানী করে এক স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দেন। কিন্তু ১৮১৮ সালে উসমানিয়া খলিফার বাহিনী সে রাজ্যকে দখলে নিয়ে নেয়। কিন্তু ইবনে সউদের বংশধরগণ নিজেদের রাজ্য নির্মাণের আশা ছাড়েনি। ব্রিটিশের সহায়তা নিয়ে আব্দুল আজীজ বিন সউদ উসমানিয়া খেলাফতের স্থানীয় প্রতিনিধিকে হত্যা করে আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠা দেয়। সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর সালাফিদের হাতে দায়িত্ব পড়ে ধর্মীয় পুলিশ বিভাগের। প্রশাসনে সালাফিগণ পরিচিতি পায় মুতায়’য়ুন রূপে। ধর্মীয় ব্যাপারে ফতওয়া দান, মসজিদের আযানের সাথে সাথে দোকানপাট বন্ধ, মসজিদে জামায়াতে নামায, মহিলাদের হিযাব, মহিলাদের একাকী রাস্তায় বেরুনো, নারী-পুরুষের পৃথকীকরণ, অশ্লিলতা থেকে সমাজকে মুক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ে কড়া নজরদারী রাখার কাজটি ছিল সালাফিদের।
সালাফিদের পূর্বের ক্ষমতাকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বহুলাংশেই খর্ব করা হয়েছে। সৌদি সরকার এখন নিজেই নানা শহরে সিনেমা হল করার পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশ্চা্ত্য সংস্কৃতিকে নিজ দেশ ডেকে আনাই এখন সরকারের পলিসি। যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্ব সৌদি আরব পাশ্চাত্যমুখী একটি আধুনিক ট্যুরিজমের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। যে সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয় মহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব আন্দোলন শুরু করেছিলেন সে উদ্দেশ্য এখন আর বেঁচে নাই। সালাফিগণ এখন পরিণত হয়েছে সৌদি রাজবংশের খাদেমে। ইসলাম বাঁচানোর বদলে এখন তাদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সৌদি রাজবংশকে বাঁচানো। সৌদি বাদশাহ এখন সালাফিদেরকে নিজেদের রাজনৈতিক মতলব হাছিলে ব্যবহার করছে। সরকারী বাহিনীর হাতে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটলেও সালাফী আলেমদের কাজ হয়েছে সেটিকে জায়েজ ঘোষণা দেয়া। সেটি দেখা গেছে আশির দশকে মক্কায় বহু শত ইরানী হাজীদের হত্যার ঘটনায়। মক্কার পবিত্র শহরে হজ্জের মাসে সংঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ডকে নিন্দা না করে সেটিকে বরং সালাফি আলেমগণ সমর্থন করেছে। সৌদি সরকার মক্কা-মদিনার এ পবিত্র ভূমিত মার্কিনীদের ন্যায় বিদেশী কাফেরদের ঘাঁটি গড়তে দিলেও এসব সালাফিগণ সেটির প্রতিবাদ করেনা। বিন লাদেনের সাথে সৌদি সরকারের বিতণ্ডার মূল কারণ হলো এটি। এরূপ নানা বিচ্যুতির মাঝে এখন সালাফি আলেমদের বসবাস। যারা সাহস করে সৌদির নীতির বিরোধীতা করে সৌদি সরকার তাদের নির্মূলে লেগে যায়। শত শত আলেম এখন সৌদি আরবের জেলে। বহু আলেমকে হত্যাও করা হয়েছে। সৌদি শাসক গোষ্ঠির নীতি এখন প্রচণ্ড সেক্যুলার। রাজনীতির অঙ্গণে আলেমদের কোনরূপ ভাগীদার করতে তারা রাজী নয়। সৌদি শাসকদের কৌশলটি হলো, মানুষের আক্বিদা মেরামতের কাজে সালাফি আলেমদের ব্যস্ত রেখে সমগ্র দেশকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত করা। সে কাজে তারা সফলও হয়েছে। দেশবাসীকে তারা বঞ্চিত করেছে স্বাধীন ভাবে কথা বলা, লেখালেখী করা ও রাস্তায় প্রতিবাদের ন্যায় মৌলিক অধিকার থেকে। মসজিদের ইমামদের স্বাধীনতা নাই নিজের ইচ্ছামত খোতবা দেয়ার। তাদের তাই পাঠ করতে হয় যা সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে তাদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়।
যে পাপ বিভক্তি গড়ার
সৌদি সরকার ধর্মকে ব্যবহার করছে মুসলিম বিশ্বজুড়ে নিজেদের প্রভাবকে শক্তিশালী করার কাজে। সে লক্ষ্যে সৌদি সরকার দেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাজ হলো বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে তাদের সালাফি মতবাদের প্রচারকে পরিণত করা। এজেন্ডা হলো, আক্বিদার শুদ্ধির নামে অন্যদের সালাফি আক্বিদায় গড়ে তোলা। এ সালাফি চেতনায় রাজনৈতিক ভাবনা নেই। এখানে রাজনীতি ছেড়ে দিতে হয় স্বৈরাচারি বাদশাহদের হাতে। সৌদি সরকারের বৃত্তি পেয়ে ছাত্রদের অধিকাংশই আসছে বাংলাদেশে, পাকিস্তান, ভারতের ন্যায় হানাফী মজহাবের দেশ থেকে। হানাফীদের প্রতিটি নামায যে সূন্নত মোতবেক হয় -তা নিয়ে শাফেয়ী, মালেকী বা হাম্বলী মজহাবের লোকদেরও এতকাল কোন অভিযোগ ছিল না। ইমাম আবু হানিফাকে বলা হয় ইমামে আযম। অথচ সালাফিদের পক্ষ থেকে নবীজী (সা:)’র একটি বিশেষ সূন্নতকে প্রতিষ্ঠা দিতে গিয়ে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য বাড়ানো হচ্ছে অন্য একটি সূন্নতের বিরুদ্ধে। ফলে হানাফীদের মধ্যে বাড়ছে বিভাজন। হানিফা মজহাব থেকে নতুন দীক্ষাপ্রাপ্ত সালাফিদের আক্বিদাই শুধু পাল্টে যাচ্ছে না, পাল্টে যাচ্ছে তাদের পোষাক পরিচ্ছদ ও মাথার টুপি-চাদরসহ নামায আদায়ের ধরণও। যেন এগুলিই মুসলিমদের মূল সমস্যা। এতো কাল বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মহ্ল্লার মসজিদের নামাযীগণ যেরূপ একই নিয়মে নামায পড়তো ও তাসবিহ-তাহলিল করতো -এখন সেটি হচ্ছে না। বাড়ছে নামায পড়ার ধরণ নিয়ে দ্বন্দ। যে বিবাদ এক কালে সৌদি আরবে সীমিত ছিল, সালাফিগণ সে বিবাদকে বিশ্বময় করছে। এবং সেটি শুধু নামাযের মধ্যে গুটিকয়েক সূন্নত পালন নিয়ে। বিভিন্ন মুসলিম দেশে সে ধর্মীয় বিবাদকে তীব্রতর করতে সৌদি আরব বিপুল অর্থ তুলে দিচ্ছে সে সব দেশের সালাফিদের প্রতিষ্ঠিত মসজিদ-মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির হাতে। কথা হলো, সূন্নত নিয়ে এরূপ বিবাদ বাড়ানো হলে ইসলামকে বিজয়ী করার ফরজ জিহাদের সুযোগ সৃষ্টি হবে কীরূপে? এরূপ বিভক্তি ও বিবাদ তো ভয়ানক পাপের পথ। এতে খুশি হয় শয়তান। এবং ভয়নাক আযাব নামিয়ে আনে মহান আল্লাহতায়ালার।
নবীজী (সা:)’র কোন একটি সূন্নতের বিরুদ্ধে অবজ্ঞা গড়া যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো তা নিয়ে বিভক্তি গড়া। অথচ সালাফিগণ সে দুটি হারাম কাজের পরিচর্যা দিচ্ছে বিভিন্ন মুসলিম দেশে। কথা হলো, মুসলিমদের মাঝে আর কতো বিভক্তি? এভাবে বিভক্তি গড়ে কি মুসলিমদের কল্যাণ করা যায়? একতা গড়া নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ফরজ। অথচ মুসলিমগণ সে ফরজ বাদ দিয়ে অতি ব্যস্ত বিভক্তির ন্যায় হারাম কাজ নিয়ে। তাবলিগ জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেছে নানা দেশে বিশাল বিশাল মারকায। তাদের লক্ষ্য জনগণকে নামাযের পথে আনা। তাবলিগ জামায়াত এ কাজে বড় বড় ইজতেমা করে এবং নিজ কর্মীদের সে সব ইজতেমায় প্রশক্ষিণ দেয়। অথচ ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, আদালতে শরিয়ত পালন, ছাত্রদের কুর’আন শিক্ষা –এসব ফরজ বিষয় নিয়ে তাদের তেমন ভাবনা নাই। সে লক্ষ্যে কোন চেষ্টাও নয়। নির্বাচন এলে বাংলাদেশে এসব তাবলিগীগণ ইসলামী দলের প্রার্থীদের হারাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেয়। রাজনীতি যে তারা করে না -তা নয়। তাদের রাজনীতি হলো ইসলামের শত্রুদের বিজয়ী। তারা এতেই খুশি যে, দেশের সেক্যুলারিস্ট ও ন্যাশনালিস্ট নেতাগণ ইজতেমার আখেরী মুনাজাতে হাজির হয়। দেওবন্দীগণ প্রতিষ্ঠা দিয়েছে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান জুড়ে অসংখ্য মাদ্রাসা্। তাদের ইসলামেও রাজনীতির জিহাদে নাই। ইসলাম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভাবনা নাই। তাদের ব্যস্ততা স্রেফ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা নিয়ে। ভারতে এরা কংগ্রেসকে ভোট দেয়। এসব বহুবিধ ফেরকার অনুসারীদের মেহনতে বিশ্বজুড়ে শুধু নানাবিধ ফিরকার প্রসার বেড়েছে। ইসলামের বিজয় বাড়েনি। বাংলাদেশের বহু গ্রামে ও প্রতি জনপদে এখন সালাফি আলেম পাওয়া যায়। তাবলিগী ও দেওবন্দী ফেরকারও বহুলোক পাওয়া যায়। কিন্তু সে সকল জায়গায় ইসলামের বিজয়ে জানমালের কুর’বানী দিতে রাজী এমন মুজাহিদ নেই। নবীজী (সা:) যেরূপ দ্বীনের বিজয়ে লড়াকু ঈমানদার গড়ে তুলেছিলেন সেরূপ ঈমানদার গড়ার কাজে ব্যর্থতাটি আজ বিশাল। ফলে দ্বীনের নামে নানা মতের প্রসার বাড়লেও নবীজী (সা:)’র বিশুদ্ধ ইসলাম কোথা্ও বেঁচে নাই। নবীজী (সা:)’র বিশুদ্ধ ইসলামের অর্থ তো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, শুরা ভিত্তিক নেক বান্দাদের শাসন, শরিয়ত ও হুদুদের প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের নির্মূল, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, মুসলিম ঐক্য, শুরা ভিত্তিক শাসন এবং জিহাদ। কিন্তু এ ব্যর্থতা নিয়ে সালাফিদের ভাবনা নাই। তাদের ভাবনা মানুষের আক্বিদার মেরামত নিয়ে।
সালাফিদের ইসলাম ও নবীজী (সা:)র ইসলাম
সালাফিদের গর্ব ও ভাবনা সৌদি আরবকে নিয়ে। এমন ভাবে তারা সৌদি আরবের প্রশংসা করে যেন তাদের চেতনা ও আক্বিদার প্রতিফন ঘটিয়েছে সৌদি আরব। এটি ঠিক যে সৌদি আরবের সালাফিগণ বহু শত মাযার ও স্মৃতিসৌধ ধ্বংস করেছে। গুড়িয়ে দিয়েছে সাহাবায়ে কেরামের কবরের চিহ্নগুলোও। কিন্তু দ্বীন বলতে কি শুধু কবরস্থান, মাযার ও স্মৃতিসৌধ ধ্বংস বুঝায়? নবীজী (সা) শুধু মুর্তিই ভাঙ্গেননি, তিনি পূর্ণাঙ্গ ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। নবীজী (সা:)’র নবুয়তী জীবন ছিল মাত্র ২৩ বছরের। এই ২৩ বছরের মধ্যে তিনি শুধু মানুষের আক্বিদাকে বিশুদ্ধ করেননি, বিশুদ্ধ করেছেন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকেও। মজবুত করেছেন মুসলিম উম্মাহর একতা। রাষ্ট্রীয় পরিশুদ্ধির কাজে নবীজী (সা:) ১০ বছর রাষ্ট্রীয় প্রধানের আসনে বসেছেন। সৌদি আরবে সালাফিদের শাসনকাল এক শত বছরের বেশী হয়েছে। তারা রাষ্ট্রকে বিশুদ্ধ করা দূরে থাক তারা কি নিজেদের আক্বীদাকেও বিশুদ্ধ করতে পেরেছে? বরং তারা নিজেরা বিচ্যুৎ হয়েছে সে আক্বিদা থেকেও যা নিয়ে মহম্মদ বিন আব্দুল ওহাব তাঁর সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
রাষ্ট্র হলো মানব সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। আক্বিদার বিশুদ্ধ করণের কাজে এ প্রতিষ্ঠানটি যেমন সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার, তেমনি শক্তিশালী হাতিয়ার হলো আক্বিদার দূষিত করণের কাজে। আক্বিদা থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যক্তির আমল, আচরণ, বুদ্ধিবৃত্তি ও রাজনীতি। কে হবে দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারী এবং কে হবে ন্যায় পরায়ন শাসক -সেটি তো আক্বিদাই ঠিক করে দেয়। মানুষের আক্বিদা তাই শুধু ইবাদত-বন্দেগী ও বিশ্বাসের বিষয় নয়, সেটি মানুষের কর্ম, আচরণ ও রাজনীতির বিষয়ও। এসবের মধ্য দিয়েই ব্যক্তির আক্বিদা দৃশ্যমান হয়। রাষ্ট্রের শাসক যদি বিশুদ্ধ ইসলামী আক্বিদার হয় তবে রাষ্ট্রের রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা নীতি, আইন-আদালত, মিডিয়া সে সুস্থ্য আক্বিদার প্রচারে ও দূষিত আক্বিদার বিলোপে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। আক্বিদার পরিশুদ্ধিতে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজে রাষ্ট্রের শক্তি ও গুরুত্ব যতটা মহান নবীজী(সা:) বুঝেছিলেন -তা কি এসব সালাফিগণ বুঝে? রাষ্ট্রকে স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত রেখে কি জনগণের আক্বিদা ঠিক করা যায়? তাই মানুষের আক্বিদায় শুদ্ধি আনায় সামান্যম তাড়না থাকলে সালাফিদের উচিত ছিল সৌদি রাজবংশের আক্বিদায় পরিবর্তন আনা। উচিত ছিল, স্বৈরাচারী শাসকের বদলে মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা ও জনগণের খাদেমে পরিণত করা। আক্বিদা সঠিক হলে কেউ কি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা দেয়?
নবীজী (সা:) শুধু নামায-রোযা, হজ্জ-যাকাত, তাসবিহ-তাহলিল ও আচার-আচরণের সূন্নত রেখে যাননি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত রেখে গেছেন রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে। রাষ্ট্র যেমন জনগণকে জান্নাতে নেয়ার বাহন হতে পারে, তেমনি জাহান্নামে নেয়ার বাহনও হতে পারে। তাই রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধিটি ব্যক্তির পরিশুদ্ধির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই কোন ঈমানদারই এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিকে কোন দুর্বৃত্তের হাতে অধিকৃত হতে দেয় না। মদিনায় হিজরতের পর নবীজী (সা:) যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনি নিজে রাষ্ট্রীয় প্রধানের আসনে বসছেন। তাঁর ওফাতের পর সে আসনে বসেছেন তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণ। কোন স্বৈরাচারি দুর্বৃত্ত সে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ধারে কাছেও ভিড়তে পারিনি। সাহাবাগণ সে আসন পাহারা দিয়েছেন। খোলাফায়ে রাশেদার আমল পর্যন্ত সে নীতি বহাল ছিল। ঈমানদারের আক্বিদার অঙ্গণে নবীজী (সা:)’র এ সূন্নতকে অবশ্যই স্থান দিতে হয়, নইলে আক্বিদা পরিশুদ্ধ হয় কি করে? পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, “মাই ইইতির রাসূলা ফাকাদ আতাল্লাহ”। অর্থ: যে অনুসরণ করে নবীকে সেই অনুসরণ করে আল্লাহকে। অথচ কি বিস্ময়, সালাফিদের আক্বিদায় নবীজী (সা:)’র সূন্নতের অনুসরণ কই? খলিফার বদলে তারা হয়েছে নৃশংস স্বৈরাচারী রাজা।
কারা প্রকৃত সালাফ?
খোলাফায়ে রাশেদার খলিফাগণ হলেন মুসলিম ইতিহাসের আসল সালাফ। “সালাফ” শব্দটি একটি আরবী শব্দ। এর অর্থ, যারা অগ্রবর্তী তথা প্রথম যুগের বা প্রথম সারীর। তাই প্রকৃত সালাফি কখনোই আজকের সৌদি আলেমগণ নন, তারা হলেন সাহাবায়ে কেরাম বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদার খলিফাগণ। আজ যারা সালাফী হওয়ার গর্ব করে তাদের চেয়ে অধিক সালাফী তো ইমাম হানিফা (রহ:)। যারা প্রকৃত সালাফি হতে চায় তাদের অনুসরণ করা উচিত নবীজী (সা:) ও তাঁর প্রথম সারীর সাহাবাদের -যারা মক্কাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা যে সূন্নত রেখে গেছেন তাতে গুরুত্ব পেয়েছিল তাকওয়া ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্যতা। তাতে রক্তের, বংশের বা গোত্রের কোন প্রভাব বা যোগসূত্র ছিল না। তাই খলিফা হযরত আবু বকর (রা:) ও হযরত উমর (রা:)’য়ের মৃত্যুর পর তাদের সন্তানদের কেউ খলিফা হননি। অথচ তারা নিঃসন্তান ছিলেন না। অন্যরা অধিক যোগ্যবান ছিলেন বলেই তাঁরা নিজ সন্তানদের খলিফার পদে বসাননি। এটিই তো প্রকৃত সালাফিদের রীতি। কিন্তু আজকের সৌদি সালাফিদের মাঝে কোথায় ইসলামে আসল সালাফিদের আক্বিদা? সৌদি বাদশাহগণ যা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে তা রোমান ও পারসিক রাজাদের সূন্নত। ফলে সৌদি সালাফিদের সালাফি হওয়ার দাবীটি যে ভূয়া –তা নিয়ে কি সন্দেহ থাকে?
সালাফিগণ রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং সরকার বদলের আন্দোলন থেকে সযত্নে দূরে থাকে। তাদের যুক্তি, এরূপ সরকার বদলে নাকি দেশে গোলযোগ, প্রাণনাশ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অথচ তাদের আসল চিত্রটি ভিন্ন। নিজেদের স্বার্থে সরকার বদলের কাজে গোলযোগ, গণহত্যা ও বিশৃঙ্খলা ঘটনাও তাদের কাছে জায়েজ গণ্য হয়। সৌদি সালাফিগণ বিকট গণহত্যায় সমর্থণ ও সহযোগিতা দিয়েছে ২০১৩ সালে মিশরে সামরিক বাহিনীর সন্ত্রাসের রাজনীতিতে। সে দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যেমে ক্ষমতায় এসেছিল ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতা ডক্টর মুহম্মদ মুরসী। ডক্টর মুহম্মদ মুরসী ছিলেন হাফিজে কুর’আন। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। ছিলেন অতি ভদ্র ও শান্তিবাদী জনপ্রিয় নেতা। মিশরের ইতিহাসে তিনিই হলেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট। তাঁর অপরাধ তিনি ইসরাইলের বন্ধু ছিলেন না। তাঁর আরো অপরাধ তিনি ছিলেন ইসলামী। তাঁর নির্বাচিত হওয়াকে সৌদি রাজ পরিবার পছন্দ করেনি। তিউনিসিয়ায় বিন আলীকে সরানোর মধ্য দিয়ে আরব জগতে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের যে বসন্ত শুরু হয়েছিল তা সৌদি সালাফিদের পছন্দ হয়নি। তাদের মনে ভয় ঢুকেছিল, গণবিপ্লবের জোয়ার সৌদি আরবেও আঘাত হানবে এবং তাতে উৎখাত হবে সৌদি রাজবংশ। ফলে সৌদিগণ সচেষ্ট হয় সে জোয়ার মিশরের আটকে দেয়ায়। সে জন্যই সৌদি আরবের রাজা প্রেসিডেন্ট মুরসির বিরুদ্ধে জেনারেল আব্দুল ফাতাহ সিসির সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করে। এভাবে সমর্থণ করে সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের পথ।
প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েই জেনারেল সিসি শুরু করে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ড, জেল-জুলম ও নির্যাতন। ৭০ হাজারের বেশী ইখওয়ান কর্মীকে কারাবন্দী করে। ২০১৩ সালের ১৪ আগষ্ট কায়রোর রাবা আল আদাবিয়া চত্ত্বরে এক রাতে সিসির সেনাবাহিনী প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছিল নারী, পুরুষ ও শিশু। মুরসীর অপসারণের প্রতিবাদে শত শত পরিবারের নারী-পুরুষ-শিশু সবাই মিলে সে সন্ধায় রাবা আল আদাবিয়ার চৌরাস্তায় অবস্থান নিয়েছিল। ব্যক্তির পরিশুদ্ধ আক্বিদা সব সময়ই তাকে খুন, জুলুম ও নির্যাতনকে ঘৃণা করতে শেখায়। কিন্তু সালাফিগণ সেদিন কোন বিশুদ্ধ আক্বিদার প্রমাণ রাখতে পারেনি। তারা বরং খুনি জেনারেল সিসির পক্ষ নিয়েছে। এটিই কি তবে পরিশুদ্ধ আক্বিদার নমুনা? এখানে আক্বিদাটি তো নিরেট জালেম দুর্বৃত্তদের।
কায়রোর রাবা আল আদাবিয়া চত্ত্বরের গণহত্যায় কামান ও মেশিন গান ব্যবহার করা হয়। নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে এ ছিল মিশরীয় সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ। হিউমান রাইটস ওয়াচের হিসাব মতে সে নৃশংসতায় আহতের সংখ্যা ছিল হলো ৩,৯৯৪ জন। যারা আহত হয়নি তাদের জেলে নেয়া হয়। সৌদি সরকার ও সালাফিগণ সে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে সন্ত্রাস বলেনি, নিন্দাও করেনি। বরং সন্ত্রাসী বলেছে নিরস্ত্র ইখওয়ানুল মুসলিমকে। রাষ্ট্র ও রাজনীতির অঙ্গণে পরিশুদ্ধির কাজটি না হলে রাষ্ট্র যে কতবড় ভয়ানক দুর্বৃত্ত দানবীয় শক্তির হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে, তার উদাহরণ হলো সৌদি আরব, মিশর, বাংলাদেশ, বাইরাইনের ন্যায় স্বৈরশাসন কবলিত দেশগুলা। তাই নবীজী (সা:) শুধু আক্বিদা পরিশুদ্ধির কাজ করেননি, রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধির কাজও করেছেন।এবং রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধির কাজটিই হলো মানব ইতিহাসের সবচেয়ে উপকারী এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাজ। এ কাজে শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবীকে শহীদ হতে হয়েছে। কিন্তু সালাফিদের এ কাজে রুচি নাই। নিজেদের সামর্থ্যের বিনিয়োগও নাই।
সালাফিদের জিহাদ বিরোধীতা
জিহাদের বিরুদ্ধে সালাফিদের যুক্তি হলো, জিহাদ ঘোষণা ও পরিচালনার দায়িত্বটি কোন একটি দেশে সরকার প্রধান বা আমীরের; কোন ব্যক্তি বা দল জিহাদের ঘোষনা দিতে পারেনা। সালাফিরা একথা বলে তাদের প্রভু সৌদি বাদশাহদের ন্যায় জালেমদের গদি বাঁচানোর স্বার্থে। কারণ, জিহাদের এরূপ ব্যাখা দিলে সৌদি রাজাদের ন্যায় স্বৈরাচারী শাসকদের লাভ হয়। এ কথা বলে জনগণকে জিহাদ থেকে দূরে রাখা যায়। আফগানিস্তানে জিহাদ চললো ৩০ বছেরর বেশী কাল ধরে। প্রথম ১০ বছর সে জিহাদ চলেছে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং পরে ২০ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে। বিশ্বের মুসলিম আলেমগণ এ জিহাদকে শতভাগ জিহাদ বলেছে। এমনকি আশির দশকে সৌদি আরবের সরকারও সে যুদ্ধকে জিহাদ বলেছে ও বিপুল আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, সে জিহাদ কি তখন কোন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরিচালিত হয়েছে? সে জিহাদ পরিচালিত হয়েছে কিছু ব্যক্তি ও দলের পক্ষ থেকে। তখন সালাফিদের এসব যুক্তি কোথায় ছিল? আফগানিস্তানের তালেবানগণ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ৫০টি দেশের বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় লাভ করলো। সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি বিশাল বিজয়। কিন্তু তালেবানদের এ বিজয়ে সৌদি আরব খুশি নয়। বরং তাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। অখুশি ও দুশ্চিন্তার বিষয়টি প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
তাছাড়া সালাফিদের যুক্তিটি কুর’আন বিরোধীও। সুরা নিসার ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,”হে ঈমানদারগণ,তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো, (জিহাদে) বেরিয়ো পড় দলে দলে বিভক্ত হয়ে অথবা সমবেত ভাবে।” এখানে কোন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়নি। রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর কথাও বলা হয়নি। জিহাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জনগণকে। তারা সে জিহাদ যেমন নানা দলে বিভক্ত হয়ে করতে পারে, তেমনি এক সাথেও শুরু করতে পারে।
সাবা’র ৪৬ নম্বর আয়াতে বিষয়টি আরো পরিস্কার। উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, “(হে নবী) বলুন, তোমাদের প্রতি আমার একটাই ওয়াজ (নসিহত), সেটি হলো (জিহাদে) খাড়া হয়ে যাও জোড়া বেঁধে, অথবা (সেটি সম্ভব না হলে) একাই।”জিহাদ শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না। অর্থ দিয়ে ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য দিয়েও হয়। দৈহিক বল, বুদ্ধিবৃত্তিক বল ও আর্থিক বলের ন্যায় জিহাদের নানাবিধ সামর্থ্য মহান আল্লাহতায়ালা সবাইকেই দিয়েছেন। ঈমানদারের দায়ভার হলো সে সামর্থ্যকে ইসলামের বিজয়ে কাজে লাগানো। কথা হলো, নিজ দেশে জালেম শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আরেক শাসকের অনুমতি লাগবে কেন? রোজ হাশরের বিচার দিনে প্রতিটি ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালার সামনে একাকী কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রকে সেখানে হাজির করা হবেনা। নিজের পক্ষ থেকে জিহাদ কতটা পালিত হয়েছিল -সেদিন সে হিসাব অবশ্যই দিতে হবে। তাই জিহাদের ঘোষণাটি কোন রাষ্ট্র না দিলে ব্যক্তি সে দায়িত্ব থেকে মুক্তি পায় কি করে? তাছাড়া কোন দেশে জালেম শাসক ক্ষমতায় থাকলে জিহাদ ঘোষণার জন্য কি আরেক শাসক হাওয়ায় নির্মিত হবে? ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়া যায় না। জিহাদে বিজয়ী না হয়ে কি জিহাদের পক্ষে কোন সরকার গঠন করা যায়?
আক্বিদাটি দুর্বৃত্ত স্বৈরশাসকের
আক্বিদা শুধু ঈমান, আমল ও শিরক-বিষয়ক ধ্যান-ধারণার বিষয় নয়। সেটি রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ও। মুসলিম জীবনের অতি অপরিহার্য ইবাদত হলো রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি। রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি হলো মু’মিনের জীবনে ইসলামকে বিজয়ী করার পবিত্র জিহাদ। সত্যিকার ঈমান থাকলে সে জিহাদ থাকবেই। বস্তুত ঈমানদারের ঈমান দেখা যায় দুর্বৃত্ত শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে। আর বেঈমানী দেখা যায় স্বৈরাচারী শাসকের প্রতি আনুগত্যের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজ হাতে রাখার জন্য নবীজী (সা:) বহু যুদ্ধ করেছেন। নিজে আহত হয়েছেন; শত শত সাহাবী সে কাজে শহীদ হয়েছেন। আজীবন নামায-রোযা-যাকাত পালন করে কেউ জান্নাত পাবে -সে নিশ্চয়তা নাই। কিন্তু শত্রুর বিরুদ্ধে কয়েক মুহুর্তের জিহাদে কেউ যদি শহীদ হয়ে যায় -তাঁর জন্য গ্যারান্টি রয়েছে জান্নাতের। সে গ্যারান্টি নিয়ে সন্দেহ করাই হারাম। সালিফিগণ সে জিহাদ থেকে যে শুধু দূরে থাকছে তা নয়, বরং কাফেরদের সাথে সুর মিলিয়ে সে পবিত্র জিহাদকে সন্ত্রাস বলছে। এমন কি ইখওয়ানুল মুসলিমীনের নিরস্ত্র রাজনীতিকেও তারা সন্ত্রাস বলছে। ইখওয়ানুল মুসলিমীন শান্তিপূর্ণ ভাবে ইসলামের বিজয় ও প্রতিষ্ঠা চায়। তাদের সে নিরস্ত্র রাজনৈতিক লড়াই রুখতে সৌদি সালাফিগণ কোয়ালিশন গড়েছে আরব বিশ্বের সকল নৃশংস স্বৈরাচারী দুর্বৃত্ত শাসকদের সাথে।
সালাফিগণ জিহাদ থেকে দূরে থাকার পক্ষে সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার কথা বলে। অথচ জিহাদের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রে শান্তি, সমৃদ্ধি, দুর্বৃত্তমুক্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা পায়। সন্তানের জন্ম দানে যেমন প্রসব বেদনা থাকে তেমনি শান্তি, দুর্বৃত্তমুক্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতিষ্ঠায় জিহাদের বেদনা তথা জান-মালের কুর’বানী অনিবার্য। সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার নামে নবীজী (সা:) যদি শুধু মানুষের আক্বিদা পরিশুদ্ধি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন এবং নিজের কর্মকে মসজিদে সীমিত রাখতেন -তবে কি ইসলামী রাষ্ট্র কখনো নির্মিত হতো? তা হলে মুসলিমগণ কি গড়ে উঠতো পারতো বিশ্বশক্তি রূপে? জন্ম দিতে পারতো কি মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা? সভ্যতা-সংস্কৃতি কখনোই তাঁবুতে, মসজিদ-মাদ্রাসা ও সুফি খানকায় গড়ে উঠে না। সে জন্য বিশাল ও শক্তিশালী রাষ্ট্র লাগে। হযরত ঈসা (আ:) ও হযরত মূসা (আ:) খোলাফায়ে রাশেদা গড়তে পারেনি। তাঁরা দ্বীনের দ্রুত প্রসারও দিতে পারেননি। ফলে তাঁদের অনুসারীগণ কোন বিশ্ব শক্তি এ বিশ্ব সভ্যতাও গড়তে পারিনি। কারণ, তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন রাষ্ট্র গড়তে। হযরত মূসা (আ:)’র ব্যর্থতার মূল কারণ তাঁর অনুসারীদের সালাফি চেতনা। তাদেরকে যখন মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হলো অধিকৃত কানানকে (ফিলিস্তিন) দখলদার মুক্ত করে সেখানে শরিয়তী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দেয়ার, তারা বলেছিল, “হে মুসা, তুমি ও তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করো, আমরা অপেক্ষায় রইলাম।” আজকের সালাফিদের ন্যায় সেদিনের ইহুদী সালাফিদেরও যুদ্ধে গিয়ে শত্রুদের হত্যা করা ও নিজেদের নিহত হওয়ার কাজটি ভাল লাগেনি। তারা সেদিন নিজেদেরকে শান্তিবাদী রূপে জাহির করেছিল। তারা বেছে নিয়েছিল সামাজিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথ। এরূপ বিদ্রোহের ফলে তাদের উপর নেমে আসে ভয়ানক আযাব। তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কানানে প্রবেশ; ৪০ বছর যাবত তাদেরকে সিনা উপত্যাকার মরুভূমিতে ঘুরতে হয়েছে। হযরত ঈসা (আ:)’র মৃত্যুর প্রায় ৩০০ বছর পর রোমান রাজা কন্সটান্টাইন নিজে খৃষ্টান হয়ে খৃষ্টান ধর্মকেই দারুন ভাবে কলুষিত করে। ধর্মের বলে নয়, বিশাল সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের বলে সে তার রাজ্যের সকল প্রজাকে খৃষ্টান হতে বাধ্য করে। যারা খৃষ্টান হতে চায়নি তাদের হত্যা করে। সে নৃশংস স্বৈর শাসক পৌত্তলিক রোমান সংস্কৃতিকে খৃষ্টান ধর্মের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। ফলে শুরু হয় পৌত্তলিক কায়দায় যীশুর মুর্তিগড়া ও গীর্জার মাঝে মুর্তিপূজা। কিন্তু সে দূষিতকরণের কাজটি ইসলামের ক্ষেত্রে হয়নি। কারণ ইসলাম যখন বেড়ে উঠে ও প্রতিষ্ঠা পায় তখন রাষ্ট্র স্বৈর শাসকদের হাতে অধিকৃত হয়নি। রাষ্ট্রের উপর দখল প্রতিষ্ঠা করেন খোদ নবীজী (সা:) ও তাঁর নিজের হাতে গড়া মহান সাহাবাগণ। ইসলামের ইতিহাসে এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। এরই ফলে ইসলাম তার কুর’আনীক বিশুদ্ধতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পেরেছে।
সব ধর্মেই রাজা-বাদশাহদের স্বভাব অভিন্ন। তারা কাজ করে নিজেদের শাসন বাঁচানোর এজেন্ডা নিয়ে, ধর্মীয় বিধানের সেখানে গুরুত্ব থাকে না। রোমান সম্রাটগণ খৃষ্টান ধর্মকে যেরূপ দূষিত করেছিল, ইসলামকেও সেরূপ দূষিত করেছে পরবর্তী কালের স্বৈরাচারি মুসলিম রাজা-বাদশাহগণ। সেটি শুরু হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ইয়াজিদের ন্যায় স্বৈরাচারী শাসকদের হাতে কুক্ষিগত হওয়াতে। তখন ইমাম হোসেন (রা:)’র ন্যায় তৎকালীন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও জান্নাতের যুব-সর্দারকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তখন সরকারের এজেন্ডা হয় ন্যায় ও সুবিচারের বদলে অন্যায় ও অবিচারের প্রতিষ্ঠা। সৌদি আরবের সালাফিগণ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যাদের অনুসরণ করে সেটি যেমন নবীজী (সা:)’র সূন্নত নয়, তেমনি খোলাফায়ে রাশেদারও নয়। তারা অনুসরণ করে ইয়াজিদ, হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ন্যায় স্বৈরাচারী শাসকদের। অপরদিকে সালাফি মতবাদের দরবারী আলেমদের কাজ হয়েছে তাদের নৃশংস স্বৈরাচারকে সমর্থণ করা। মসজিদের ইমামদের কাজ হয়েছে এ দুর্বৃত্ত শাসকদের “জিল্লুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহর ছায়া বলে মসজিদে মসজিদে খোতবা পাঠ করা। দেশ স্বৈরশাসকের দখলে গেলে মসজিদ ও ধর্মকর্ম কীরূপে দুর্বৃত্তদের অধীনে যায় -এই হলো তার নমুনা।
একজন মুসলিম শাসককে দেশ শাসনে সর্বদা ঈমানদারীর পরিচয় দিতে হয়। তাঁর এজেন্ডা হয়, দেশ থেকে দুর্বৃত্তদের নির্মূল, এবং ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। অথচ সৌদি সালাফিদের কাজ হয়েছে নিজেদের শাসন বাঁচাতে মানব হত্যার ন্যায় জঘন্য অপরাধকে সংঘটিত করা। এরই উদাহরণ হলো, কিছু কাল আগে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রখ্যাত সৌদি কলামিস্ট জামাল খাসোগীর নৃশংস হত্যা। অথচ খোশেগী কোন সন্ত্রাসী ছিলেন না। কোন রাজনীতিকও ছিলেন না। তিনি শুধু তাঁর লেখাতে সৌদি নীতির সমালোচনা করতেন। তাঁকে হত্যা করার জন্য এক দল খুনিকে ইস্তাম্বুলে বিমান যোগে পাঠানো হয়। সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে জামাল খাসোগীকে খুন করে তার দেহকে কেমিক্যাল দিয়ে গলিয়ে দেয়া হয়। এ খুনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের সাথে জড়িত ছিল যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমান। নইলে কি সেই হত্যাকান্ড সৌদি কনস্যুলেটে সম্ভব হতো? যে খুনির প্রাণদন্ড হওয়া উচিত ছিল, সে খুনিই হতে যাচ্ছে সৌদি আরবে বাদশাহ। বিশ্বব্যাপী এ খুনের নিন্দা হয়েছে। কিন্তু সে খুনের নিন্দা হয়নি সৌদি সালাফি মহলে। বরং সেই খুনিকে “মোজাদ্দেদ” বলে বয়ান দিয়েছেন ক্বাবা শরীফের ইমাম এবং সালাফি মতের বিশেষ ধর্মীয় নেতা শেখ সুদায়সী। এই হলো সালাফি ইসলামের আক্বিদা। এবং এরাই নাকি মুসলিমদের আক্বিদাকে ত্রুটিমুক্ত করবে!
নামায-রোযা প্রতিষ্ঠায় রক্তের খরচ হয় না, কিন্তু জান, মাল, মেধা ও শ্রমের বিপুল খরচ হয় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় মহান নবীজী (সা:) তাঁর ১০ বছরের শাসনে যে সূন্নতগুলির প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন, প্রতিটি মুসলিম শাসককে সে সূন্নতগুলিরই প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। সেগুলি বাদ দিয়ে নিজেরা ইচ্ছামত কিছু প্রবর্তন করাই হলো বিদয়াত। সৌদি সালাফিগণ বিদয়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলে, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ খাতে তারাই প্রতিষ্ঠা দিয়েছে রাজতন্ত্র ও স্বৈরশাসনসহ অসংখ্য বিদয়াত। প্রশ্ন হলো, সে বিদয়াতের বিরুদ্ধে সালাফিদের যুদ্ধ কই?
কেন এতো গণতন্ত্র বিরোধীতা
সালাফীগণ গণতন্ত্রের বিরোধীতা করে। কারণ দেখায়, নবীজী (সা:) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দেননি। প্রশ্ন হলো, নবীজী (সা:) কি তবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন? রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন কি খোলাফায়ে রাশেদাগণ? শরিয়তে মুহাম্মদীতে রাজতন্ত্রের কোন স্থান নাই। তাই সেদিন খলিফার পুত্র খলিফা হননি। অথচ সৌদি সালাফিগণ সূন্নতবিরোধী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। নবীজী (সা:)’র জীবদ্দশাতে গণতন্ত্রের প্রয়োজন ছিল না বলেই তিনি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা দেননি। গণতন্ত্র হলো সরকার নির্বাচন ও দেশ শাসনের একটি প্রক্রিয়া। নবীজী (সা:) নির্বাচিত হয়েছিলেন মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। যখন শাসক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে রায় এসে যায় তখন জনগণের রায় দেয়ার কোন হক থাকে না। সেটি হলে তাতে চ্যালেঞ্জ করা হয় মহান আল্লাহতায়ালার রায়ের বিরুদ্ধে। হযরত দাউদ (আ:) এবং হযরত সুলাইমান (আ:) ছিলেন নবী। তারাও শাসক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেনর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। ফলে তাদের ক্ষেত্রেও জনগণের রায় দানের হক ছিল না। জনগণের রায় তো তখন লাগে যখন ওহী মারফত মহান আল্লাহতায়ালার রায় আসা বন্ধ হয়ে যায়। সে সমস্যাটি দেখা গিয়েছিল নবীজী (সা:)’র ওফাতের পর। তখন সাহাবাগণ সর্বসম্মতিতে একটি পদ্ধতি গড়ে তুলেন। সেটিই ছিল সাহবাদের এজমা তথা সন্মিলিত সিদ্ধান্ত। নিঃসন্দেহে সে পদ্ধতিটি রাজতন্ত্র ছিল না। সেটি ছিল শুরা ও বাইয়েত ভিত্তিক শাসক নির্বাচন। এভাবেই তারা সেদিন অস্ত্রের জোরে বা রক্তের উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে দিয়ে শাসক নির্বাচনের নতুন একটি পদ্ধতি গড়েন। এবং সে পদ্ধতির বাইরে যাওয়াই হলো বিদয়াত। অথচ সে বিদয়াত প্রতিষ্ঠা দিয়েছে সউদী রাজতন্ত্র।
সময়ের তালে যুদ্ধাস্ত্রের ধরণ, গুণ ও মানে ব্যাপক পরিবরর্তন এসেছে। নবীজী(সা:) নিজে ঢাল, তরবারী ও বর্শা দিয়ে যুদ্ধ করতেন। কিন্তু এখন নবীজী(সা:)সে সূন্নতটি যুদ্ধে প্রয়োগ হয়না। এখন প্রয়োগ হয় মেশিন গান, ট্যাংক, কামান, মিজাইল, বোমা ও যুদ্ধ বিমানের। বিজয়ের স্বার্থে তাই নতুন অস্ত্রকে বেছে নিতে হয়। সময়ের প্রভাবকে তাই এড়ানো যায় না। তেমনি প্রশাসনে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির সাথে আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করার বিকল্প নাই। খোলাফায়ে রাশেদার আমলে রাষ্ট্র মদিনা ভিত্তিক ছিল। জনসংখ্যাও ছিল কম। ফলে মুসলিমদের মাঝে পরামর্শ করা বা মতামত জানা সহজ ছিল। সহজ ছিল তাড়াতাড়ি বায়াতের আয়োজন করা। এখন রাষ্ট্রের বিস্তৃতি হাজার হাজার মাইল জুড়ে। ফলে দেশের কোটি কোটি নাগরিককে এক জায়গায় রায় গ্রহণের বা মতামত জানার জন্য একত্রিত করা সহজ নয়। জনমত জানার আধুনিকতম পদ্ধতি হলো তাদের রায়শুমারী। এছাড়া অন্য যে দুটি পদ্ধতি অবশিষ্ঠ থাকে তার একটি হলো রাজতন্ত্র এবং অপরটি হলো যুদ্ধবিগ্রহ করে ক্ষমতা দখল। সাহাবায়ে কেরামের সময় সে দুটি পদ্ধতিই বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু নবীজী (সা:)’র মহান সাহাবাগণ সে দুটি পদ্ধতি কোনটিই গ্রহণ করেননি। ফলে আজ সে পরিত্যক্ত দুইটি পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হয় কি করে?
গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সালাফিদের যে অভিযোগ, সেটি নবীজী (সা)’র সূন্নতের প্রতি দরদের কারণে নয়, বরং সে আচরণটি স্বৈরাচারী রাজা বাদশাহদের প্রতি দরদের কারণে। গণতন্ত্রকে তারা বিদয়াত বলে, কিন্তু রাজতন্ত্রকে বিদয়াত বলে না। ইসলামই প্রথম রাজতন্ত্রকে দাফন করে গড়ে তোলে খেলাফত প্রথা। পাশ্চাত্য জগতে গণতন্ত্র আবিষ্কারের ১৩ শত বছর আগেই ইসলাম জনগণকে ইজ্জত দেয়। এভাবে শুরু থেকেই ইসলাম জনগণের ক্ষমতায়ন করে এবং তাদের রায়ের গুরুত্ব দেয়। কিন্তু রাজা-বাদশাহগণ সব সময়ই জনগণকে শত্রু মনে করে। জনগণের সে ইজ্জত ও ক্ষমতা এজিদগণ প্রতি যুগেই কেড়ে নিয়েছে। এবং প্রতিষ্ঠা দিয়েছে হারাম রাজতন্ত্র। ইয়াজিদের সে হারাম সূন্নত নিয়েই দেশ শাসন করছে সৌদি রাজবংশ।
সালাফিদের শত্রুতা তাই শুধু গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং তাদের প্রকৃত শত্রুতাটি জনগণের রায়ভিত্তিক যে রাজতন্ত্র বিরোধী পদ্ধতিটি ইসলাম শুরু থেকেই গড়ে তুলেছিল তার বিরুদ্ধে। সৌদি সালাফিগণ এজন্যই গণতন্ত্রের এতো বিরোধী। এভাবে তারা দীর্ঘায়ীত করছে মুসলিম বিশ্বে দুর্বৃত্তদের স্বৈরশাসন ও বাড়িয়ে চলেছে জনগণের নিদারুন দুর্গতি। এবং বাধাগ্রস্ত করছে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। এভাবেই তারা অসম্ভব করছে নবীজী (সা:)’র প্রবর্তীত সনাতন ইসলামের দিকে মুসলিম জনগণের ফিরে যাওয়া। ২৪/০৯/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
সালাফীদের মতে জেহাদের ঘোষণা আসবে সরকারপ্রধান থেকে, কোন ব্যক্তি বা কোন দল থেকে নয়। এ কারণে তারা জেহাদ নামক ইসলামের এই এবাদতকে বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী না ।তাদের দৃষ্টিতে জেহাদের শর্ত পাওয়া যাচ্ছে না ।তাই জিহাদ করা যাবেনা। বাংলাদেশে এই তত্ত্বটি এখন বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে জনাব আব্দুর রাজ্জাক ইউসুফ এবং ডঃ আবু বকর মোহাম্মদ জাকারিয়া সহ প্রভাবশালী সালাফীদের এই গ্রুপ থেকে।তারা এটাকেই প্রোমোট করছে।
ভাই সিরাজুল ইসলামের অভিমত পড়লাম। জিহাদের বিরুদ্ধে সালাফিদের অভিমন জানলাম। সালাফিরা একথা বলে তাদের প্রভু সৌদি বাদশাহদের ন্যায় জালেমদের গদি বাঁচানোর স্বার্থে। আফগানিস্তানে জিহাদ চললো ৩০ বছেরর বেশী কাল ধরে। প্রথমে ১০ বছর সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং পরে ২০ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে। মুসলিম আলেমগণ এ জিহাদকে শতভাগ জিহাদ বলেছে। এমনকি সৌদিগণও সে যুদ্ধকে জিহাদ বলেছে ও সহায়তা দিয়েছে। প্রশ্ন হলো এ জিহাদ কি কোন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরিচালিত হয়েছে?
তাছাড়া সালাফিদের যুক্তিটি কুর’আন বিরোধী। সুরা নিসার ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,”হে ঈমানদারগণ,তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো, (জিহাদে) বেরিয়ো পড় দলে দলে বিভক্ত হয়ে অথবা সমবেত ভাবে।” এখানে কোন রাষ্ট্রের কথা বলা হয়নি। বিশাল রাষ্ট্রীয় সেনা বাহিনীর কথাও বলা হয়নি। জিহাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জনগণকে।
সাবা’র ৪৬ নম্বর আয়াতে বিষয়টি আরো পরিস্কার। বলা হয়েছে, “(হে নবী) বলুন তোমাদের প্রতি আমার একটাই ওয়াজ (নসিহত), সেটি হলো (জিহাদে) খাড়া হয়ে যাও জোড়া বেঁধে, অথবা (সেটি সম্ভব না হলে) একাই।”জিহাদ শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না। বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য দিয়েও হয়।
অতএব জালেম শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আরেক শাসকের অনুমতি লাগবে কেন? রোজ হাশরের বিচার দিনে প্রতিটি ব্যক্তিকে একাকী দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রকে সেখানে হাজির করা যাবেনা। তাই জিহাদের ঘোষণাটি কোন রাষ্ট্র না দিলে ব্যক্তি দায়িত্ব মুক্ত হয় কি করে? তাছাড়া কোন দেশে জালেম শাসক ক্ষমতায় থাকলে জিহাদ ঘোষণার জন্য আরেক শাসক কি হাওয়ায় নির্মিত হবে?