বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on March 9, 2020
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
১.
মৌমাছি কখনোই মল-মূত্রের স্তুপে বসে না। সে বহু মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর পাড়ি দিয়ে সুন্দর সুন্দর ফুলের বাগিচা খোঁজে। দুর্গন্ধময় মলমুত্রের উপর বসে মশা-মাছি। তেমনি সমাজেও থাকে মৌমাছি ও মাছি চরিত্রের মানুষ। ঈমানদারের লক্ষণ সে চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত, সন্ত্রাসী, খুনি, ধর্ষকদের সঙ্গ দেয় না। একাজ বেঈমানদের্; তারাই সমাজে মাছি-চরিত্রের জীব। তাই যে শাসক দলের রাজনীতিতে থাকে চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, ব্যাংকলুট, শেয়ার মার্কেট লুট এবং গুম-খুনের রাজনীতি তাদের দলে দেখা যায় এরূপ মাছি-চরিত্রের মানুষের প্রচন্ড ভিড়। নানা দল ভেঙ্গে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয় সে দলের দিকে। এদের ভিড়ে গড়ে উঠে মহা জোট। তাদের কারণেই দেশে দুর্বৃত্তির জোয়ার আসে। আবরার ফাহাদের ন্যায় নিরপরাধ ছাত্রকে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যম্পাসে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়। নুসরতদের মত মেয়েদের লাশ হতে হয়।কোনটি মৌমাছি আর কোনটি মাছি –সেটি চিনতে যেমন অসুবিধা হয় না; তেমনি কে ঈমানদার আর বেঈমান -সেটি চিনতেও কোন বেগ পেতে হয় না।
পবিত্র কোর’আনে মৌমাছির নামে একটি সুরা আছে। সুরাটির নাম নামল। নামলের অর্থ মৌমাছি।মৌমাছির জীবন থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু শেখার আছে। ক্ষুদ্র এ জীবটির জীবন অতি কল্যাণময় ও সংগ্রামী। তার সমগ্র জীবনটাই কাটে হাজার হাজার ফুল থেকে বিন্দু বিন্দু মধু সংগ্রহ করে বিশাল মৌচাক গড়ায়। মৌমাছির জীবনে এটি এক অবিরাম জিহাদ্। এবং সেটি নিজের কল্যাণে নয়, বরং মানুষের কল্যাণে। এবং সে মধুতে মহান আল্লাহতায়ালা রেখেছেন নানা রোগ থেকে রোগমুক্তি।
ঈমানদারও তেমনি নিজ জীবনের সকল মেধা,অর্থ, শ্রম ও সময় বিনিয়োগ করে কল্যাণময় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায়। মানব সমাজে এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ কর্ম। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এটিই শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ পবিত্র ইবাদতে নিরাপত্তা ও কল্যাণ পায় অগণিত মানুষ। পায় জান্নাতে পথে চলার সিরাতুল মুস্তাকীম। এটিই হলো নবীজী (সাঃ)র শ্রেষ্ঠ সূন্নত। মৌমাছির ন্যায় ঈমানদারের জীবনেও এটি আমৃত্যু জিহাদ। এ জিহাদে প্রাণ গেলে তাঁকে মৃত বলা হারাম ঘোষিত হয়েছে। সে শহীদ হয়, মৃত্যুর পরও রেযেক পায় এবং সরাসরি জান্নাতে যায়।
২.
বাংলাদেশে বহু কোটি মানুষের জায়গা-জমি নাই, দিনে দু-বেলা খাবার জুটে না। অথচ জনগণের রাজস্বের শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিবের জন্ম শতবার্ষিকী নিয়ে বিশাল উৎসব হতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাটি মুজিবের অর্জন, তাই মুজিবকে সন্মান দেয়া প্রতিটি বাংলাদেশীর দায়িত্ব। অথচ এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কোন একটি মুসলিম দেশ ভেঁঙ্গে ক্ষুদ্রতর করায় কাজটি ইসলামের শত্রুপক্ষীয় কাফেরগণ নিজ খরচে ও নিজ রক্ত দিয়ে প্রকান্ড যুদ্ধ লড়ে সমাধা করে দিতে সব সময়ই রাজী। এবং সেটি যদি হয় পৃথিবীপৃষ্ঠে সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। মুজিবের অবদান এখানেই সামান্যই। কারণ, কাফের শত্রুগণ জানে, মুসলিম দেশ ভাঙ্গার যুদ্ধটি কখনোই মুসলিমদের যুদ্ধ নয়, এটি তাদের অতি নিজস্ব যুদ্ধ। লক্ষ্য এখানে মুসলিমদের মেরুদন্ড ভাঙ্গা। আরব ভূখন্ডকে তার ঔপনিবেশিক কাফেরগণ ২২ টুকরায় বিভক্ত করেছে।
ভারত তার নিজের সে যুদ্ধটি ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম দিনেই শুরু করতে প্রস্তুত ছিল। তারা শুধু অপেক্ষায় ছিল মুজিবের ন্যায় ভারতের প্রতি নতজানু দাস চরিত্রের এক বাঙালী নেতার। ১৯৪৭ সালে খাজা নাজিমুদ্দীন, শহীদ সহরোয়ার্দী, শেরে বাংলা ফজলুল হকের মত তৎকালীন বাঙালী মুসলিম নেতাগণ ভারতের আগ্রাসী অভিসন্ধির সাথে পুরাপুরি পরিচিত ছিলেন। ভারতে সাথে বন্ধুত্ব করার অর্থ বাঘের সাথে বন্ধুত্ব করা। তাঁরা চেয়েছিলেন ভারতের পরাধীনতা থেকে বাঁচতে। ফলে তাদের কেউই ভারতের জালে তারা ধরা দেননি। ফলে সেদিন অপূর্ণ থেকে যায় ভারতের সে আগ্রাসী আশা ।
কিন্তু ভারতের আশা পূর্ণ হয় ১৯৭১ সালে। মুজিবের ইশারা’ই ভারতের জন্য যথেষ্ট ছিল। ফলে মুক্তি বাহিনীকে নিজ সামর্থ্যে পুরা দেশ দূরে থাক, একটি জেলা বা একটি মহকুমাকেও স্বাধীন করতে হয়নি। খোদ মুজিবকেও রণাঙ্গনে আসতে হয়নি। বরং ভারত নিজ খরচে ও নিজ সৈন্য দিয়ে যুদ্ধজয় করে পুরা দেশ সেদিন মুজিবের হাতে তুলে দিয়েছিল। তবে ভারতে যুদ্ধ একাত্তরে শেষ হয়নি। পাকিস্তানের বাঁকি অংশকে খণ্ডিত করার কাজে ভারতের পুঁজি বিনিয়োগটি এখনো বিশাল। কিন্তু ভারতের দুর্ভাগ্য, সেখানে কোন মুজিব, তাজুদ্দিন, জিয়া বা ওসমানি জুটছে না। মুক্তি বাহিনীও সৃষ্টি হচ্ছে না। ভারতের আরো দুর্ভাগ্য হলো, পাকিস্তান এখন আর একাত্তরের পাকিস্তান নয়, দেশটি এখন পারমানবিক শক্তি। দেশটির হাতে রয়েছে বহু শত বালিস্টিক মিজাইল।
৩.
নবীজী (সা:) নিজে রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। ফলে তাঁর জীবনে রাজনীতিও ছিল। এবং তাঁর রাজনীতি ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, সে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা এবং সে ভূমিতে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কাজে লাগাতর এক জিহাদের রাজনীতি। এ রাজনীতিই হলো ইসলামের শ্রেষ্ঠ ইবাদত। ইবাদতে ব্যয় হয় জানমালের। নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতের কাজ এ ইবাদতের জন্য ব্যক্তিকে প্রস্তুত করা। সাহাবাদের জান ও মালের সিংহভাগ খরচ হয়েছে এ ইবাদতে। নবুয়ত লাভের পর নবীজী (সাঃ) তাঁর ১৩ বছর মক্কায় কাটান। কিন্তু সেখানে তিনি একখানি মসজিদও গড়েননি, কোন মাদ্রাসাও গড়েননি। বরং পূর্ণ মনযোগ দিয়েছেন এমন মানুষ গড়ায় যারা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ও প্রতিরক্ষায় যোগ্য মোজাহিদ হবে এবং প্রয়োজনে শহীদ হবে। সমগ্র মানব ইতিহাসের এরাই হলেন শ্রেষ্ঠ মানব। এরাই পরবর্তীতে ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা হয়েছেন। এবং বিশাল বিশাল প্রদেশের গভর্নর ও বিচারপতি হয়েছেন। নানা রণাঙ্গণে তাঁরা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ জেনারেল রূপে অবদান রেখেছেন।
ইসলামী রাষ্ট্র গড়াই নবীজী (সাঃ)র জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ার কাজটি এর সমকক্ষ হতে পারে না। হযরত মূসা (সাঃ)’য়ের জীবনে বড় আফসোস, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বে্ও তিনি একাজটি করে যেতে পারেননি। কারণ, তার সাহাবাদের জিহাদে অনাগ্রহ। তাদেরকে জিহাদে ডাক দিলে তারা বলেছিল, “হে মূসা, তুমি ও তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করো। আমরা অপেক্ষায় রইলাম।” ফলে তাঁর হাতে শরিয়তি বিধান থাকলেও তিনি সে শরিয়ত পালনের লক্ষ্যে খেলাফায়ে রাশেদা গড়ে যেতে পারেননি। ফলে বনি ইসরাইল ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব শক্তি রূপে খাড়া হতে। বরং তাদের ঘাড়ে আযাব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা ঘুরেছে নানা দেশের পথে-প্রান্তরে।
ইসলামী রাষ্ট্রের বিকল্প একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রই। লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও শরিয়ত পালন হয় না। ফলে পূর্ণ ইসলাম পালনের ফরজও আদায় হয়না। তাতে ইসলামের প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিমদের ইজ্জতও বাড়ে না। সে জন্য ইসলামী রাষ্ট্র চাই। মুসলিমদের আজকের পরাজয়ের কারণ বহু। তবে মূল কারণটি মুসলিমদের সংখ্যার কমতি যেমন নয়, তেমনি মসজিদ-মাদ্রাসার কমতিও নয়। বরং সেটি হলো, তারা নবীজী (সাঃ)র বহু ছোট ছোট সূন্নত আঁকড়ে ধরলেও ব্যর্থ হয়েছে ইসলামী রাষ্ট্রগড়া এবং সে লক্ষ্যে জিহাদের ন্যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতটি পালনে।
৪.
বাজারে প্রচার পেয়েছে, ভারতের বাংলাদেশী সেবাদাসগণ নাকি মুখে পাকিস্তানের নাম নিলে টুথপেষ্ট দিয়ে দাঁত মাজে। সম্প্রতি সেটি তারা ঘটা করে ঘোষণাও দিয়েছে। এর কারণ, তাদের মনিব মুসলিম-ঘাতক নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করা। তাদের এ কথা শুনে মোদি যে বিপুল ভাবে পুলকিত হবে এবং অন্যদেরও কাছেও যে সেটি বলে বেড়াবে -সেটি স্বাভাবিক। কারণ, বাংলাদেশীদের মগজ ধোলাইয়ের কাজে ভারতীয়দের বিনিয়োগটি বিশাল। এবং এ ঘোষণাটি হলো সে বিনিয়োগের সাফল্যের দলিল। বাংলাদেশের মাটিতে ভারত যে এরূপ মগজ ধোলাইকৃত বিপুল সংখ্যক মানুষ সৃষ্টি করতে পেরেছে -তা নিয়ে ভারতে উৎসব হওয়া উচিত। তবে যাদের মগজ এখনো ধোলাই হয়নি তাদের বুঝা উচিত, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা না পেলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ৪০ কোটি মুসলিম বিজিপি গুণ্ডাদের হাতে হত্যা, ধর্ষন ও নির্যাতনের শিকার হতো।
৫.
বলা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় আসছে। সেটি মুজিব শতবার্ষকী উৎসবে যোগ দিতে। তার আগমণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় ভারতসেবীদের গায়ে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের মাটিতে কারা ভারত সরকারের দালাল – তাদের চিনে রাখার এখনই সময়। নরেন্দ্র মোদি নিশ্চয়ই বিস্মিত হবে, তার আগমন নিয়ে ঢাকাতে আবার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কেন? কারণ গোলাম রাষ্ট্রের নাগরিকদেরও তো সে অধীকার থাকে না। বাংলাদেশ যেহেতু তাদেরই সৃষ্টি তাদের পাওনা তো স্রেফ আনুগত্য।
৬.
সাহাবায়ে কেরামদের যুগ এবং এ যুগের মুসলিমদের মাঝে পার্থক্য বহু ক্ষেত্রেই। তবে মূল পার্থক্যটি হলো, সে যুগে তাঁরা সংখ্যায় কম হলেও তাঁদের সবার জীবনে জিহাদ ছিল। আর জিহাদ্ শুরু হলে নানা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে ঐক্যও সৃষ্টি হয়। কারণ. জিহাদের ময়দানে সবাই হয় জান্নাতমুখি। জিহাদের ময়দানে তখন গুরুত্ব পায় মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার বিষয়। গুরুত্ব পায়, শত্রুর হামলার মুখে মুসলিম স্বার্থ ও অস্তিত্বের বিষয়। তখন দল, নেতা, পীর, মজহাব ও ফেরকা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সুযোগ থাকে না। বিশ্বশক্তি রূপে মুসলিমদের উদ্ভব ঘটেছিল জিহাদের বরকতেই।
৭.
নবীজী (সা:)র হাদীসঃ যে কোন দিন জিহাদে যায়নি এবং জিহাদের নিয়তও করেনি সে মুনাফিক। মদিনার মুনাফিকগণ নবীজী(সাঃ)’র পিছনে নামায পড়েছে এবং রোযাও রেখেছে। কিন্তু তারা জিহাদে যায়নি। জিহাদই তখন ঈমানদারকে মুনাফিকদের থেকে পৃথক করেছে। মুনাফিকের জীবনে নামায়-রোযা থাকতে পারে, কিন্তু জিহাদ যে থাকেনা -সেটি নবীজী(সাঃ)’র যুগেও দেখা গেছে। তাদের সংখ্যাটিও সেদিন কম ছিল না। ওহুদের যুদ্ধে নবীজী(সাঃ)র প্রস্তুতি ছিল এক হাজার জনের। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে ৩০০ জন্ই ছিটকে পড়ে। অর্থাৎ শতকরা ৩০ ভাগ। এরাই পরিচিতি পায় মুনাফিক রূপে। নবীজী(সাঃ)র যুগেই যখন এ অবস্থা, তাদের দল আজ যে কতটা ভারি -সেটি সহজেই অনুমেয়। এরাই ইসলামের ঘরের শত্রু। মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের নাশকতাটি বিশাল। দেশে দেশে তারাই অসম্ভব করে রেখেছে ইসলামের বিজয়কে। এরূপ ঘৃণ্য কর্মের জন্য জাহান্নামে তাদের স্থানটি হবে কাফেরদের চেয়েও নীচে।
পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহপাকের ঘোষণা, “তোমরা কি হাজিদের পানি পান করানো এবং ক্বাবার খেদমতকে সে ব্যক্তির সমান মনে করো যে ঈমান এনেছেন আল্লাহ ও আখেরাতের উপর এবং জিহাদ করেছেন আল্লাহর রাস্তায়। আল্লাহর কাছে তারা কখনোই সমান নয়। আল্লাহ কখনোই জালেমদের হিদায়েত দেন না।” – (সুরা তাওবা আয়াত ১৯ )।জিহাদ-বিমুখ লোকগুলি যে জালেম এবং তারা যে হিদায়েতের অযোগ্য মহান আল্লাহতায়ালা সেটিরই ঘোষণা দিয়েছেন উপরুক্ত আয়াতে ।
৮.
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহতায়ালাকে ভালবাসে -সে কখনোই তাঁর দ্বীনের পরাজয় নিয়ে খুশি, নিরব বা নিষ্ক্রীয় থাকতে পারে না। বরং ঈমানদার হওয়ার শর্তই হলো, কোর’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাটির বাস্তবায়নে নিজের সমুদয় সামর্থ্যের বিনিয়োগ। আল্লাহতায়ালার সে বহুল ঘোষিত ইচ্ছাটি হলো, “লি’ইউযহিরাহু আলাদ্দিনে কুল্লিহি” অর্থাৎ সকল ধর্মের উপর ইসলামের বিজয়। এ বর্ণনাটি এসেছে সুরা সাফ, সুরা তাওবাহ ও সুরা ফাতহ’য়ে। ইসলামের বিজয় সাধনে ঈমানদারের জীবনে জিহাদ তাই অনিবার্য।
অথচ তা্জ্জবের বিষয় হলো, মুসলিমদের নিজ দেশেই ইসলাম আজ পরাজিত। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে বিজয়ের উৎসব হচ্ছে ইসলামের শত্রুপক্ষের। পরাজয়ের সুস্পষ্ট সে আলামত্ হলো, মুসলিম দেশের আদালতে শরিয়তের আইনের বদলে কাফেরদের আইনে বিচার। প্রতিষ্ঠিত নেই মহান আল্লাহতায়ালার নিজ জমিনে তাঁর নিজ আইনের সার্বভৌমত্ব। এভাবে মুসলিমদের চোখের সামনে অবমাননা হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার। সামান্যতম ঈমান আছে এমন ব্যক্তি কি কখনো ইসলামের এহেন পরাজয় এবং আল্লাহতায়ালার এরূপ অবমাননা মেনে নিতে পারে? এরূপ পরাজয়ের ভূমিতেও যার মধ্যে জিহাদ নাই এবং শরিয়তের এরূপ বিলুপ্তি নিয়েও মাতম নাই -সে কি কখনো ঈমানদার রূপে নিজেকে পরিচয় দিতে পারে?
৯.
যারা উঁচু মানের জ্ঞানী তাদের জীবনে বেশীর ভাগ জ্ঞানলাভটি ঘটে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে। সেটি সার্টিফিকেট লাভের পর। এবং সেটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে তোলার কারণে। জ্ঞানলাভের কাজটি ছাত্র জীবনে শেষ হওয়ার নয়; বরং নামায-রোযার ন্যায় কবরে যাওয়ার পূর্ব-মুহুর্ত অবধি এটিয়ে চালিয়ে যাওয়ার কাজ। ইসলামে এটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কবিরা গুনাহ হলো অজ্ঞ বা জাহেল থাকা। এ পাপটি আরো গুরুতর পাপের জন্ম দেয়। নবীজী (সাঃ)র হাদীসঃ যার জীবনে পর পর দু’টি দিন অতিক্রান্ত হলো অথচ তার জ্ঞানের ভূবনে কোন বৃদ্ধি্ই হলো না তার জন্য ধ্বংস।
১০.
অন্য মুসলিমকে ভাই রূপে গ্রহণ করার মধ্যেই প্রকৃত ঈমানদারী। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া এটি এমন এক পরিচিতি যা অমান্য করার অর্থ আল্লাহতায়ালার হুকুমের অবাধ্যতা। তাই এটি সুস্পষ্ট বেঈমানী। অপর বিষয়টি হলো, ভা্ই যত দূরের দেশেই থাক, তাতে ভাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন হয় না। হাজার মাইল দূরের ভাইয়ের পায়ের ব্যথা তখন হৃদয়ে অনুভুত হয়। তাই নিজের ভাইকে ভারতে বা পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে হত্যা করা হলে -একমাত্র বিবেকহীন বেঈমানই নিরব থাকতে পারে।
১১.
মানবতা বিরোধী অপরাধের নামে ভোট-ডাকাত হাসিনা বহু ব্যক্তিকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। অথচ মানবতা বিরোধী অতি অসভ্য ও অতি নৃশংস অপরাধ লাগাতর ঘটছে ভারতে। এবং সে বীভৎস নৃশংসতার নায়ক হলো নরেন্দ্র মোদি। সারা বিশ্ব জুড়ে মোদির বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছে। বিশ্বের নানা দেশের পার্লামেন্টে তার সরকারের অসভ্য অপরাধের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয়েছে। অথচ এ মানবতা বিরোধী ঘৃণ্য অপরাধীকেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আমন্ত্রিত করে সন্মানিত করছে। একজন মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় তার ঘনিষ্ট বন্ধুকে দেখে। কারণ বন্ধু নির্বাচনে গুরুত্ব পায় নিজের চেতনা ও চরিত্রের সাথে ম্যাচিং। তাই মোদির চরিত্রের মাঝে কাশ পাচ্ছে হাসিনার চরিত্রও। প্রশ্ন হলো, নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার বন্ধু হতে পারে, কিন্তু তার মত এক অসভ্য খুনিকে বাংলাদেশের মুসলিম কেন বন্ধু রূপে গ্রহণ করবে? এক মুসলিম যে আরেক মুসলিমের ভাই -সেটি কি হাসিনা জানে না? তাই বাংলাদেশের মুসলিমগণ কেন তাদের ভারতীয় ভাইদের খুনিকে সন্মান দেখাবে? এরূপ অসভ্য কাজে কি ঈমান থাকে?
১২.
বড় বড় কথা চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত, খুনি ও ধর্ষকদের ন্যায় অতিশয় দুর্বৃত্তও বলতে পারে। ভোট-ডাকাত হাসিনাও বলছে সে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করবে। ভাল মানুষের লক্ষণ, মুখে যা বলে তা করে দেখায়। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে নিকৃষ্ট হলো তারাই, যারা যা মুখে বলে তা করে না।
১৩.
ঈমানদারের পরিচয় হলো, সে সব সময় পক্ষ নেয় নিরপরাধের। এবং কখনোই সাক্ষ্য দেয় না দুর্বৃত্তের পক্ষে। এটি বলা হয়েছে সুরা ফুরকানে। তাই বাংলাদেশে যারা চোর-ডাকাত ও ভোটডাকাত সরকারের সাফাই গায় এবং সে সরকারকে প্রতিরক্ষা দিতে লাঠি ধরে, কলম ধরে এবং বক্তৃতা দেয় -তারা কি ঈমানদার?
১৪.
রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ধ্যানধারণার বহমান স্রোতে ভাসায় কোন গর্ব নাই। সেকাজ কচুরীপানার।যারা নবী-রাসূলদের অনুসারি তারা স্রোতের বিপরীতে চলে। কারণ ইসলামের পথটি কখনোই স্রোতে ভাসার পথ নয়।
নবীজী (সাঃ)র আগমন কালে আরবের জনগণের মাঝেও ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও সমাজরীতি ছিল। কিন্তু মুসলিমগণ তাতে ভেসে না গিয়ে নিজেরাই নতুন স্রোত সৃষ্টি করেছেন। সর্বকালের মুসলিমদের জন্য সেটিই তো অনুকরণীয়।
১৫.
শয়তানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটি কখনোই মদ,জুয়া, নাচগান, সূদী ব্যাবসা, দেহব্যবসা বা সেক্যুলার রাজনীতিতে হয় না। বরং সেটি হয় ধর্মব্যবসায়। কারণ, সে বিনিয়োগে মানুষকে জাহান্নামে নেয়া সহজ হয়। শয়তানের সে বিনিয়োগের ফলেই ইহুদি ও খৃষ্টানগণ ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ফলে মূসা (আঃ)’য়ের শরিয়ত শুধু কিতাবেই রয়ে গেছে। এবং খৃষ্টানগণ ফিরে গেছে পৌত্তলিকতায়। তারা হযরত ঈসা(আঃ)’য়ের মুর্তি গড়ে গির্জাগুলোতে বসিয়েছে্। এজন্যই পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতেহা’তে তারা চিহ্ণিত হয়েছে পথভ্রষ্ট ও লালতপ্রাপ্ত রূপে। প্রশ্ন হলো, শয়তানের সে বিনিয়োগটি কি মুসলিমদের উপরও কম? সে বিনিয়োগের ফলেই ৫৭টি মুসলিম দেশের কোনটিতেই বেঁচে নাই নবীজী (সাঃ)র প্রতিষ্ঠিত ইসলাম -যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, জিহাদ ও প্যানি-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব। বরং তারা সরে গেছে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে এবং ভেসে চলেছে আত্মঘাতি হানাহানীতে। ৮/৩/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018