আওয়ামী দুঃশাসনের দুই পর্ব

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 আওয়ামী দুঃশাসন ও হাসিনার বড়াই

মানব চরিত্রে পরিবর্তন আসে তার দৈহীক গুণের কারণে নয়। জলবায়ু, ভূগোল বা সম্পদের গুণেও নয়। বরং ধ্যান­-ধারনা ও বিশ্বাসের কারণে। ধ্যান­-ধারনা ও বিশ্বাস পাল্টে গেলে তাই চরিত্রও পাল্টে যায়। নবী-রাসূলগণ তাই মানব চরিত্র পাল্টাতে তাদের বিশ্বাসে হাত দিয়েছেন। নবীজী (সাঃ)র  আমলে সাহবাদের চরিত্রে যে মহান বিপ্লব এসেছিল এবং যেভাবে নির্মিত হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা -সেটি জীবন ও জগত নিয়ে তাদের বিশ্বাসে আমূল বিপ্লব আসার কারণে। সে বিশ্বাস পাল্টাতে কাজ করেছেন মহান আল্লাহর নাযিলকৃত ওহীর জ্ঞান নিয়ে। সে রূপ কোন ধ্যান-ধারণা ও জ্ঞানের বিপ্লব আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জীবনে বিগত সত্তর বছরেও আসেনি। বরং তাদের সর্বাত্মক প্রয়াস পুরনো ও ব্যর্থ বিশ্বাসগুলোকে ধরে রাখায়। ফলে আওয়ামী লীগের বয়স বাড়লেও দলটির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনে কোনরূপ চারিত্রিক পরিবর্তন আসেনি। বরং বয়সের ভারে চোরডাকাতের জীবনে যেমন চুরিডাকাতিতে নৃশংস অভিজ্ঞতা আসে তেমনি নৃশৃংসতা এসেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জীবনেও। ফলে রাজনৈতীক সমাবেশ করা, মিছিল করা,পত্রিকা প্রকাশ করার ন্যায় জনগণের মৌলিক অধিকার হননে মুজিব যেরূপ বাকশালী একদলীয় শাসন চালু করেছিল, হাসিনা সেটি করছে বাকশাল চালু না করেই। ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিব যেরূপ ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছিল, হাসিনা সে ধারাটি শুধু বজায় রাখেনি বরং ২০১৪ এবং ২০১৮ নির্বাচনে তার চেয়েও নৃশংস রূপ দিয়েছে।  মুজিব ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলকে সংসদের ৭ সিটে বিজয় দিয়েছিল, হাসিনা তার চেয়ে এক সিটও বেশী দেয়নি।  

মুজিব দেশে লাল বাহিনী, রক্ষিবাহিনী, দলীয় স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী নামিয়ে তিরিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ খুন করেছিল, কিন্তু ঢাকার রাজপথে একরাতে ৭ হাজার ৫ শত ৮৮ জন সেনা ও পুলিশ নামিয়ে শত শত মানুষ হত্যার ন্যায় নৃশংসতা দেখাতে ভয় পেয়েছিল। ফলে তার হাতে শাপলা চত্ত্বরের ন্যায় গণহত্যা হয়নি।কিন্তু শেখ হাসিনা সে গণহত্যাটি ঘটিয়েছে কোনরূপ দ্বিধাদ্বন্দ না করেই, এবং তেমন একটি ভয়ানক নৃশংসতার পরও হাসিনা বলছে সে রাতে কিছুই হয়নি। দূর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে,অথচ তারপরও হাসিনার বড়াই,দেশ তার আমলেই সবচেয়ে বেশী উন্নতি করেছে। দেশ যে কতটা দ্রুত দূর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে সেটির কিছুটা বিবরণ পাওয়া যায় শেখ হাসিনার প্রতি লেখা জনৈক লায়েকুজ্জামানের লেখা একটি খোলা চিঠিতে। সে চিঠি থেকে কিছুটা উদ্ধৃতি দেয়া যাকঃ “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একটু খোঁজ-খবর নিয়ে দেখুন মন্ত্রী-এমপিরা কি করেছেন এলাকায়। .. তারা আচার-আচরণে, চলনে-বলনে কেবল আপনাকেই তুষ্ট রাখে বাক্যবাণে, কারণ আপনি হচ্ছেন তাদের কামাই-জামাই করার তাবিজ। ..বড় হচ্ছে মালপানি। বৃহত্তর ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত একজন এমপি আগে ভাঙাচুরা একটা গাড়ি ব্যবহার করতেন, এখন তার দামি গাড়ি তিনটি। আগে থাকতেন ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে, এখন ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক। ওই এমপির নির্বাচনী এলাকার দলীয় কর্মীদের অভিযোগ, যারা টাকা নিয়ে আসেন তারা এমপির বাসার দোতলায় যেতে পারেন, যারা টাকা আনেন না তাদের ঠিকানা নিচে, তারা ওপরের তলায় পৌঁছতে পারেন না। ..চট্টগ্রামে বনকর্মীদের ত্রাহি অবস্থা, চেটেপুটে যারা খাচ্ছে তাদের কিছু বলার ক্ষমতা নেই বনকর্মীদের। এক ক্ষমতাধর মন্ত্রীর নিকট আত্মীয় তারা। হয়তো আপনার কাছে রিপোর্ট আছে অথবা নেই- কম করে হলেও ১০০ এমপিকে এলাকায় যেতে হয় হয়তো পুলিশ না হয় প্রাইভেট বাহিনী নিয়ে। ..কয়েক মাস আগে রাজশাহীর এক এমপিকে নিজের নির্বাচনী এলাকা থেকে ফিরতে হয়েছে দু’হাতে পিস্তলের গুলি ছুড়তে ছুড়তে। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের রোষানল থেকে জীবন বাঁচাতে গুলি ছুড়ে পালাতে হয়েছে এমপিকে। এক কমিউনিস্ট মন্ত্রীর ভাগ্নে কিভাবে লুটে খাচ্ছে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ দুই দপ্তরের টেন্ডার- চোখ মেললেই তা দেখা যাবে। ওই কমিউনিস্ট মন্ত্রী ঢাকার প্লট বরাদ্দ দিচ্ছেন তার নির্বাচনী এলাকার নিকট আত্মীয়দের নামে। সরাসরি কোটার ওই প্লট পেতে অন্যরা গেলে তিনি বলে দেন প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ লাগবে। বৃহত্তর ফরিদপুরের আরেক জাঁদরেল মন্ত্রীর সোনার ভাই তো এলাকায় মন্ত্রীর জনপ্রিয়তা তলানিতে এনে ঠেকিয়েছেন। জেলার সব কাজে মন্ত্রীর ভাইয়ের পার্সেন্টেজ লাগবে, কাজের আগে বাড়িতে তার ভাগের টাকা পৌঁছে দিতে হয়। মন্ত্রী আবার জনসভাতে ভাইয়ের প্রশংসা করে বলেন, এমন ভাই পাওয়া যায় কপাল ফেরে। নিশ্চুপ হয়ে যান কর্মীরা, ধমকের ভয়ে কেউ সত্য কথাটা বলেন না মন্ত্রীকে। দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার এক জেলা সদরের হায়ার করা একদা বাম নেতা এমপি তো বহাল তবিয়তে লুটে যাচ্ছেন তার দুই পুত্রধন আর এক মদের ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে। ওই জেলার পাশে সীমান্ত এলাকার আরেক এমপি পুরো নির্বাচনী এলাকার টাকা রোজগারের সেক্টরগুলো তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ রেখেছেন নিজের হাতে, অন্য দুই সেক্টরের একটি দিয়েছেন ছেলেকে, আরেকটি বউকে। উত্তরবঙ্গের এক মন্ত্রী মাঠে ছেড়ে দিয়েছেন তার ছেলেকে। টয়লেট নির্মাণের টেন্ডার হলেও তার ছেলে হাজির হয় সেখানে। দু’চারজন মন্ত্রী-এমপি বাদে বেশির ভাগেরই একই অবস্থা। এতো গেল কামাই রোজগারের দিক। এতো গেল এমপি-মন্ত্রীদের কথা। আপনার আশপাশ দিয়ে যারা আছেন তাদের খবর কি? নিজের এলাকায় তারা কত বিঘা জমি কিনেছেন, ক’টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান করেছেন একটু খবর নিলেই জানতে পারবেন ওই সব ফুটন্ত গোলাপের কথা, সর্বশেষ তারা বিসিএস নিয়োগে ডাক তুলেছেন ১০ লাখ করে। ওই সব হচ্ছে আপনার নাগের ডগায় বসে। আপনার আশপাশেই তারা টাকা বানানোর মেশিন বসিয়েছে”।

আওয়ামী যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন যে শুধু দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি সংকটে পড়ে তা নয়। প্রচণ্ড ধস নেমে আসে দেশের প্রবাহমান ন্যায়নীতি, আচার-ব্যাবহার ও মূল্যবোধেও। ভয়ানক দুর্বৃ্ত্তিতে নামে তখন সমগ্র প্রশাসন। চোরডাকাতগণ তখন যেন প্রবল বল পায়। তাদের কারণে তখন ধ্বস নামে দেশের শেয়ার বাজারে। সীমাহীন ডাকাতি শুরু হয় দেশের অর্থ ভান্ডারে। সন্ত্রাসীরা তখন দল বেঁধে প্রকাশ্য রাজপথে নেমে আসে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজীবী তখন খুনিতে পরিণত হয়। হলমার্ক, ডিস্টিনী, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ন্যায় কোম্পানীগুলো যেভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করলো -সেটি কি আর কোন আমলে হয়েছে? সরকারি চোর-ডাকাতদের কারণেই পদ্মাসেতুর বরাদ্দকৃতত ঋণ বাতিল হয়ে গেল। ফলে পিছিয়ে গেল পদ্মা সেতুর ন্যায় দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এতে শুধু পদ্মা সেতু পিছিয়ে গেল না, বহু বছরের জন্য পিছিয়ে গেল সমগ্র দেশ। আমরা এমনিতেই বিশ্বের বহু দেশ থেকে নানা ভাবে পিছিয়ে আছি। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় আছে? এখন তো অতি দ্রুত সামনে এগুনোর সময়। কিন্তু বর্তমান সরকার সে এগিয়ে যাওয়াই অসম্ভব করে রেখেছে। দূর্নীতির দায়ে পদ্মা সেতু ভেস্তে গেলে কী হবে, সে দূর্নীতির দায়ে কারো কি কোন শাস্তি হয়েছে? বিশ্বব্যাংক এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী হৈ চৈ করলেও হাসিনা সরকারের কি তাতে ঘুম ভেঙ্গেছে? বাংলাদেশ মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে যেভাবে শত শত মানুষকে হত্যা করা হলো এবং গুম করা হলো অসংখ্য লাশ হলো সেটিই বা আর কোন কালে হয়েছে? আজ যেভাবে ইসলামপন্থিদের ধরে ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে সেটি কি আবু জেহল ও আবু লাহাবের আমলের বর্বরতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় না? শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এটিই কি ইসলামপন্থিদের প্রাপ্য? বায়তুল মোকাররম মসজিদের গেটে পুলিশ তালা পর্যন্ত ঝুলিয়েছে, এভাবে মুসল্লিদের মসজিদের ঢুকতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। কোন মুসলিম দেশে কি সেটি ভাবা যায়? সরকার পরিকল্পিত ভাবে দেশকে একটি সংঘাতের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

 

মিথ্যার সয়লাব ও বেইজ্জতি দেশবাসীর

আবহমান কাল থেকেই মানব জাতির মাঝে দুটি পক্ষ। একটি সত্যের, অপরটি মিথ্যার। নির্ভেজাল সত্যটি আসে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। সে সত্য থেকেই মানুষ পায় কোনটি ন্যায় এবং কোনটি অন্যায় তার একটি নির্ভূল ধারণা। সে ধারণাটি দৈহীক বলেও আসে না, কলকারখানায়ও আবিস্কৃত হয় না। মানব জাতিকে সত্যের সন্ধানটি দিতেই করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবীকে লক্ষাধিক নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। সে মহাসত্য বিধানটি হলো ইসলাম। মানব জীবনে সবচেয়ে বড় কর্মটি হলো সে সত্যের অনুসরণ। এর চেয়ে বড় মহৎ কর্ম এ সংসারে দ্বিতীয়টি নাই। সে সত্য অনুসরণের ফলেই মু’মিন ব্যক্তি মৃত্যুর পর জান্নাত পায়। এবং এ পৃথিবীও নেক আমলে ভরে উঠে। এটিই ইসলামী মিশন। অপরদিকে শয়তান ও তার অনুসারিদের লক্ষ্য হলো ইসলামের সে কোরআনী সত্যকে সর্বভাবে প্রতিরোধ করা। সে কাজে তাদের মূল অস্ত্রটি হলো অসত্য তথা মিথ্যা। যারাই কোরআনী সত্যের অনুসারি নয়, তারাই মূলত শয়তানের অনুসারি। তাদের রাজনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি, ইতিহাস –সবকিছুই তখন হয়ে পড়ে মিথ্যা নির্ভর। সত্যের অনুসারিদের পরাজিত করতে তারা তখন মিথ্যাকে সর্বভাবে বলবান করে। নর্দমার কীট যেমন আবর্জনায় বেচে থাকে এরাও তেমনি মিথ্যার উপর বেঁচে থাকে। আল্লাহ প্রদত্ত সত্যের আলোকে নিভিয়ে দিতে শয়তানি পক্ষটি এজন্যই যুগে যুগে মিথ্যার জাল বিস্তার করেছে। আর মিথ্যার বিজয় এলে মিথ্যুক দুর্বৃত্তরাও তখন মর্যাদা পায়। সে মিথ্যার প্রবল জোয়ারের কারণেই নমরুদ ফিরাউন বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে খোদা রূপে স্বীকৃত পেয়েছে। উপাস্য রূপে  স্বীকৃতি পেয়েছে কোটি কোটি গরুবাছুর, শাপশকুন, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত ও প্রাণহীন মুর্তি। একই ভাবে মিথ্যার উপাস্যদের কাছে অতি নৃশংস খুনি ও স্বৈরাচারি শাসকেরা্ও রাষ্ট্রের নেতা, দেশের বন্ধু, জাতির পিতা এরূপ নানা খেতাবে ভুষিত হয়েছে। দেশে শয়তানের এ পক্ষটি ক্ষমতায় আসলে তাই সে দেশে মিথ্যার জোয়ার শুরু হওয়াটাই নিয়ম। বাংলাদেশ আজ সে জোয়ারেই প্লাবিত। কারণ, বাংলাদেশে আজ যারা ক্ষমতাসীন তারা ইসলামের পক্ষের শক্তি নয়। তাদের অবস্থান যে ইসলামের বিপক্ষে -সেটি তারা গোপনও রাখেনি। ইসলামের শরিয়তি বিধানের পরাজয় এবং ইসলামপন্থিদের হত্যা ও নির্যাতনের মাঝেই যে তাদের উৎসব -সেটিও তারা জাহির করছে বার বার। এদের কারণেই বাংলাদেশে আজ মিথ্যার প্রচন্ড সয়লাব। সে মিথ্যার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।

আওয়ামী সরকারের আবিস্কৃত মিথ্যার সংখ্যা অসংখ্য। সেটি যেমন মুজিব আমলে, তেমনি হাসিনার আমলে। মুজিবামলেই রচিত হয়েছিল একাত্তরে  তিরিশ লাখ নিহতের গাঁজাখোরি মিথ্যাটি। বলা হয়েছিল, বাংলা ভাষা ও বাঙালীর নির্মূলই হলো পাকিস্তান সরকারের মূল লক্ষ্য। মিথ্যাচারিরা স্বভাবতঃই বিবেকশূণ্য হয়। প্রকট মিথ্যাকে সত্য থেকে পার্থক্য করার জন্য যে কান্ডজ্ঞান লাগে সে কান্ডজ্ঞানের মৃত্যুটা এখানে জরুরী, নইলে গরুছাগলকে যেমন দেবতা বলা যায় না,তেমনি ফিরাউন-নমরুদকে ভগবান এবং মুজিবের ন্যায় বাকশালী গণশত্রুদের নেতা, পিতা বা বন্ধু বলার রূচি সৃষ্টি হয় না। বাংলাদেশের বুকে আওয়ামী শাসন মূলত সে মিথ্যার আবাদই বিপুল ভাবে বাড়িয়েছে। তাই নয় মাসে তিরিশ লাখ মানুষকে হত্যা করতে হলে যে প্রতিদিন ১১ হাজার মানূষ হত্যা করতে হয় সে হিসাব করার মত বিবেকটুকুও আওয়ামী বাকশালীদের ছিল না।

আরেক মিথ্যা আবিস্কার করে সরকারের লোকেরা বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। সেটি রানা প্লাজা ধসে যাওয়ার ১৭ দিন পর সে ধ্বংসস্তুপ থেকে রেশমাকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে। সত্য ঘটনা থেকে মানুষের নজর কাড়ার ক্ষেত্রে অলীক মিথ্যার সে সামর্থ্যটি বিশাল। হাসিনা ও তার দলবল সেটি বুঝে, তাই তাদের দ্বারা ঘটে রেশমা কাহিনীর আবিস্কার। শুধু দেশবাসীর নয়, বিশ্ববাসীর নজরও সে ঘটনাটি কেড়ে নিয়েছিল। এভাবে সরকার প্রমাণ করতে চেয়েছিল তার সরকারের পরিচালিত উদ্ধার কাজটি কতই না চমৎকার ও সফল। সরকার তেমন একটি অহংকার নিয়েই তো উদ্ধারকাজে বিদেশীদের সহায়তা দানের প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু মিথ্যা দিয়ে অপরাধীদের যেমন কলংকমোচন হয় না, তেমনি সে পথে তাদের ইজ্জতও বাড়ে না। কারণ মিথ্যাকে বেশী দিন গোপন রাখা যায় না। রেশমা উদ্ধারের কাহিনীটি যে অলীক মিথ্যা ছিল -সেটি আজ আবিস্কৃত হয়েছে। আবিস্কৃত সে সত্যটি আজ বিশ্বব্যাপী বিপুল প্রচারও পাচ্ছে। লন্ডনের বহুল প্রচারিত ডেইলী মিরর তা নিয়ে এক নিবন্ধ ছেপেছে। সেরূপ খবর ছাপা হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। আর এতে কালিমা লেপন হচ্ছে শুধু শেখ হাসিনার মুখে নয়, বাংলাদেশীদের মুখেও। দেশে মশা মাছি ও গলিত আবর্জনার বাড়লে ম্যালেরিয়া,কলেরা ও টাইফয়েডের ন্যায় রোগভোগও বাড়ে। তাতে মানুষের মৃত্যুও বাড়ে। দুষিত পরিবেশে বসবাসের এটিই বিপদ। তেমনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেল অথচ বাকশালী স্বৈরাচার নেমে আসলো না, দেশের সম্পদ লুন্ঠিত হলো না বা পথে ঘাটে মানুষ লাশ হলো না –সেটি কি ভাবা যায়? গোখরা শাপ যেমন বিষ নিয়ে চলাফেরা করে,আওয়ামী লীগও তেমনি বেঁচে থাকে গণতন্ত্রধ্বংসী, অর্থনীতি ধ্বংসী তথা দেশধ্বংসী এক নাশকতামূলক চরিত্র নিয়ে। হাসিনার দুঃশাসন কি সেটিই প্রমাণ করছে না?

 

মুজিবী দুঃশাসনের দিনগুলি

মুজিবী দুঃশাসনের সে দিনগুলি বাংলাদেশের মানুষ আজ প্রায় ভূলতে বসেছে। অথচ আওয়ামী লীগ ও আজকের হাসিনা আমলের এ দুঃশাসন বুঝতে হলে মুজিবী দুঃশাসন বুঝাটি অতি জরুরী। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয় বলেই বোকাদের পা একই গর্তে বার বার পড়ে। অথচ নবীজী (সা:) বলেছেন, ঈমানদের পা কখনোই একই গর্তে বার বার পড়ে না। কারণ অতীত ইতিহাস থেকে তারা শিক্ষা নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমানদের ক্ষেত্রে সে জ্ঞানলাভটি ঘটেনি। ফলে একই গর্তে তাদের পা বার বার পড়ছে। ফলে তাদের জীবনে আওয়ামী দুঃশাসন বার বার নেমে আসছে। আওয়ামী নেতাকর্মীদের কাছে স্বর্ণযুগ হলো মুজিবামল। নবাব শায়েস্তা খাঁর আমল তাদের কাছে কিছুই না। মুজিবই হলো তাদের কাছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী। কিন্তু কীরূপ ছিল সে মুজিবামল? মুজিবকে চিনতে হলে ইতিহাসের সে পাঠটি নেয়া অতি জরুরী। তবে সমস্যা হলো সে আমলের প্রকৃত চিত্রটি বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় মেলে না। সুপরিকল্পিত ভাবে সে বিবরণগুলি গায়েব করা হয়েছে। স্থান পেয়েছে শুধু মুজিব বন্দনা। কিন্তু সে ইতিহাসটি বেঁচে আছে বিদেশী পত্র-পত্রিকায়। এ নিবন্ধে সে আমলের বিদেশী পত্রিকা থেকেই কিছু উদাহরণ পেশ করা হবে। বাংলাদেশ সে সময় কোন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য,জ্ঞান-বিজ্ঞান বা খেলাধুলায় চমক সৃষ্টি করতে না পারলেও বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনাম হয়েছিল দুর্ভিক্ষ, দুর্নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস, ব্যর্থ প্রশাসন ও স্বৈরাচারের দেশ হিসাবে।

১৯৭৪ সালের ৩০ শে মার্চ গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছিল,“আলীমুদ্দিন ক্ষুধার্ত। সে ছেঁড়া ছাতা মেরামত করে। বলল, যেদিন বেশী কাজ মেলে, সেদিন এক বেলা ভাত খাই। যেদিন তেমন কাজ পাই না সেদিন ভাতের বদলে চাপাতি খাই। আর এমন অনেক দিন যায় যেদিন কিছুই খেতে পাই না।” তার দিকে এক নজর তাকালে বুঝা যায় সে সত্য কথাই বলছে। সবুজ লুঙ্গির নীচে তার পা দু’টিতে মাংস আছে বলে মনে হয় না। ঢাকার ৪০ মাইল উত্তরে মহকুমা শহর মানিকগঞ্জ। ১৫ হাজার লোকের বসতি। তাদের মধ্যে আলীমুদ্দিনের মত আরো অনেকে আছে। কোথাও একজন মোটা মানুষ চোখে পড়ে না। কালু বিশ্বাস বলল,“আমাদের মেয়েরা লজ্জায় বের হয় না-তারা নগ্ন।” আলীমুদ্দিনের কাহিনী গোটা মানিকগঞ্জের কাহিনী। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাহিনী,শত শত শহর বন্দরের কাহিনী। এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে ৫০ লাখ টনেরও বেশী খাদ্যশস্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য পাঠানো হয়েছে তারা পায়নি।”

 

আন্তর্জাতিক ভিক্ষার ঝুলি

১৯৭৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে লন্ডনের নিউ স্টেট্সম্যান লিখেছিল,“বাংলাদেশ আজ বিপদজনক ভাবে অরাজকতার মুখোমুখি। লাখ লাখ লোক ক্ষুধার্ত। অনেকে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। .. ক্ষুধার্ত মানুষের ভীড়ে ঢাকায় দম বন্ধ হয়ে আসে।.. বাংলাদেশ আজ দেউলিয়া। গত আঠার মাসে চালের দাম চারগুণ বেড়েছে। সরকারি কর্মচারিদের মাইনের সবটুকু চলে যায় খাদ্য-সামগ্রী কিনতে। আর গরীবরা থাকে অনাহারে। কিন্তু বিপদ যতই ঘনিয়ে আসছে শেখ মুজিব ততই মনগড়া জগতে আশ্রয় নিচ্ছেন। ভাবছেন, দেশের লোক এখনও তাঁকে ভালবাসে;সমস্ত মুসিবতের জন্য পাকিস্তানই দায়ী। আরো ভাবছেন,বাইরের দুনিয়া তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসবে এবং বাংলাদেশ উদ্ধার পাবে। নিছক দিবাস্বপ্ন.. দেশ যখন বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে,তখনও তিনি দিনের অর্ধেক ভাগ আওয়ামী লীগের চাইদের সাথে ঘরোয়া আলাপে কাটাচ্ছেন। .. তিনি আজ আত্মম্ভরিতার মধ্যে কয়েদী হয়ে চাটুকার ও পরগাছা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন।…সদ্য ফুলে-ফেঁপে ওঠা তরুণ বাঙালীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের শরাবখানায় ভীড় জমায়। তারা বেশ ভালই আছে। এরাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা- বাংলাদেশের বীর বাহিনী। .. এরাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বাছাই করা পোষ্য। আওয়ামী লীগের ওপর তলায় যারা আছেন তারা আরো জঘন্য। .. শুনতে রূঢ় হলেও কিসিঞ্জার ঠিকই বলেছেনঃ “বাংলাদেশ একটা আন্তর্জাতিক ভিক্ষার ঝুলি।”

১৯৭৪ সালে ২রা অক্টোবর,লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় জেকুইস লেসলী লিখেছিলেন,“একজন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,আর অসহায় দৃষ্টিতে তার মরণ-যন্ত্রণাকাতর চর্মসার শিশুটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হতে চায় না, তাই কথাটি বোঝাবার জন্য জোর দিয়ে মাথা নেড়ে একজন ইউরোপীয়ান বললেন, সকালে তিনি অফিসে যাচ্ছিলেন,এমন সময় এক ভিখারি এসে হাজির। কোলে তার মৃত শিশু। ..বহু বিদেশী পর্যবেক্ষক মনে করেন বর্তমান দুর্ভিক্ষের জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। “দুর্ভিক্ষ বন্যার ফল ততটা নয়,যতটা মজুতদারী চোরাচালানের ফল”-বললেন স্থানীয় একজন অর্থনীতিবিদ।.. প্রতি বছর যে চাউল চোরাচালন হয়ে (ভারতে) যায় তার পরিমাণ ১০ লাখ টন।”  ১৯৭৪ সালের ২৫ অক্টোবর হংকং থেকে প্রকাশিত ফার ইস্টার্ণ ইকোনমিক রিভিয়্যূ পত্রিকায় লরেন্স লিফসুলজ লিখেছিলেন,“সেপ্টেম্বর তৃতীয় সপ্তাহে হঠাৎ করে চাউলের দাম মণ প্রতি ৪০০ টাকায় উঠে গেল। অর্থাৎ তিন বছরে আগে -স্বাধীনতার পূর্বে যে দাম ছিল – এই দাম তার দশ গুণ। এই মূল্যবৃদ্ধিকে এভাবে তুলনা করা যায় যে,এক মার্কিন পরিবার তিন বছর আগে যে রুটি ৪০ সেন্ট দিয়ে কিনেছে,তা আজ কিনছে ৪ পাউন্ড দিয়ে। কালোবাজারী অর্থনীতির কারসাজিতেই এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।..২৩শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে শেখ মুজিব ঘোষণা করলেন,“প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোট ৪,৩০০ লঙ্গরখানা খোলা হবে।” প্রতি ইউনিয়নের জন্য রোজ বরাদ্দ হলো মাত্র দুমন ময়দা। যা এক হাজার লোকের প্রতিদিনের জন্য মাথাপিছু একটি রুটির জন্যও যথেষ্ট নয়।”

নিউয়র্ক টাইমস পত্রিকা ১৯৭৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারিখে লিখেছিল,“জনৈক কেবিনেট মন্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে একজন বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ বললেন, “যুদ্ধের পর তাঁকে (ঐ মন্ত্রীকে) মাত্র দুই বাক্স বিদেশী সিগারেট দিলেই কাজ হাসিল হয়ে যেত,এখন দিতে হয় অন্ততঃ এক লাখ টাকা।” ব্যবসার পারমিট ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগারদের ঘুষ দিতে হয়। সম্প্রতি জনৈক অবাঙালী শিল্পপতী ভারত থেকে ফিরে আসেন এবং শেখ মুজিবের কাছ থেকে তার পরিত্যক্ত ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানাটি পুনরায় চাল করার অনুমোদন লাভ করেন। শেখ মুজিবের ভাগিনা শেখ মনি -যিনি ঐ কারখানাটি দখল করে আছেন-হুকুম জারি করলেন যে তাকে ৩০ হাজার ডলার দিতে হবে। শেখ মুজিবকে ভাল করে জানেন এমন একজন বাংলাদেশী আমাকে বললেন,“লোকজন তাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করুক,এটা তিনি পছন্দ করেন। তাঁর আনুগত্য নিজের পরিবার ও আওয়ামী লীগের প্রতি। তিনি বিশ্বাসই করেন না যে, তারা দুর্নীতিবাজ হতে পারে কিংবা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।”

 

পথেঘাটে লাশ ও জালপড়া বাসন্তি

দেখা যাক, প্রখ্যাত তথ্য-অনুসন্ধানী সাংবাদিক জন পিলজার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সম্পর্কে কি বলেছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর লন্ডনের ডেইলী মিরর পত্রিকায় লিখেছেন,“একটি তিন বছরের শিশু -এত শুকনো যে মনে হলো যেন মায়ের পেটে থাকাকালীন অবস্থায় ফিরে গেছে। আমি তার হাতটা ধরলাম। মনে হলো তার চামড়া আমার আঙ্গুলে মোমের মত লেগে গেছে। এই দুর্ভিক্ষের আর একটি ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান এই যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫০ লাখ মহিলা আজ নগ্ন দেহ। পরিধেয় বস্ত্র বিক্রি করে তারা চাল কিনে খেয়েছে।” পিলজারের সে বক্তব্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সে অভিমতের প্রমাণ মেলে ইত্তেফাকের একটি রিপোর্টে। উত্তর বংগের এক জেলেপাড়ার বস্ত্রহীন বাসন্তি জাল পড়ে লজ্জা ঢেকেছিল। সে ছবি ইত্তেফাক ছেপেছিল। পিলজার আরো লিখেছেন,“সন্ধা ঘনিয়ে আসছে এবং গাড়ী আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম-এর লরীর পিছনে পিছনে চলেছে। এই সমিতি ঢাকার রাস্তা থেকে দুর্ভিক্ষের শেষ শিকারটিকে কুড়িয়ে তুলে নেয়। সমিতির ডাইরেক্টর ডাঃ আব্দুল ওয়াহিদ জানালেন,“স্বাভাবিক সময়ে আমরা হয়ত কয়েক জন ভিখারীর মৃতদেহ কুড়িয়ে থাকি। কিন্তু এখন মাসে অন্ততঃ ৬০০ লাশ কুড়াচ্ছি- সবই অনাহার জনিত মৃত্যু।”

লন্ডনের “ডেইলী টেলিগ্রাফ” ১৯৭৫ সালের ৬ই জানুয়ারি ছেপেছিল,“গ্রাম বাংলায় প্রচুর ফসল হওয়া সত্ত্বেও একটি ইসলামিক কল্যাণ সমিতি (আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম) গত মাসে ঢাকার রাস্তা,রেল স্টেশন ও হাসাপাতালগুলোর মর্গ থেকে মোট ৮৭৯টি মৃতদেহ কুড়িয়ে দাফন করেছে। এরা সবাই অনাহারে মরেছে। সমিতিটি ১৯৭৪ সালের শেষার্ধে ২৫৪৩টি লাশ কুড়িয়েছে- সবগুলি বেওয়ারিশ। এগুলোর মধ্যে দেড় হাজারেরও বেশী রাস্তা থেকে কুড়ানো। ডিসেম্বরের মৃতের সংখ্যা জুলাইয়ের সংখ্যার সাতগুণ।.. শেখ মুজিবকে আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বোঝা বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ছোট-খাটো স্বজন প্রীতির ব্যাপারে তিনি ভারী আসক্তি দেখান। ফলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া বাঁকী পড়ে থাকে।.. অধিকাংশ পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস,আর্থিক ও রাজনৈতিক সংকট রোধ করার কোন সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম এ সরকারের নেই। রাজনৈতিক মহলো মনে করেন, মুজিব খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বুনিয়াদ আরো নষ্ট করে দেবেন। তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন। ডেইলী টেলিগ্রাফের আশংকা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। জরুরী অবস্থা জারি করেছেন, আরো বেশী ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। অবশেষে তাতেও খুশি হননি, সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে তিনি একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। আওয়ামী লীগ যাকে নিয়ে গর্ব করে, এ হলো তার অবদান।

১৯৭৫ সালের ২১শে মার্চ বিলেতের ব্রাডফোর্ডশায়র লিখেছিল,“বাংলাদেশ যেন বিরাট ভুল। একে যদি ভেঙ্গে-চুরে আবার ঠিক করা যেত। জাতিসংঘের তালিকায় বাংলাদেশ অতি গরীব দেশ। ১৯৭০ সালের শেষ দিকে যখন বন্যা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল ডুবে যায় তখন দুনিয়ার দৃষ্টি এ দেশের দিকে – অর্থাৎ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নিবদ্ধ হয়। রিলিফের বিরাট কাজ সবে শুরু হয়েছিল। এমনি সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুণ জ্বলে উঠল। –কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ যখন শুরু হলো,তখন জয়ের কোন সম্ভাবনাই ছিল না। একমাত্র ভারতের সাগ্রহ সামরিক হস্তক্ষেপের ফলেই স্বল্পস্থায়ী-কিন্তু ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী- যুদ্ধের পর পাকিস্তানের পরাজয় ঘটে এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়।” পত্রিকাটি লিখেছে, “উড়োজাহাজ থেকে মনে হয়,যে কোন প্রধান শহরের ন্যায় রাজধানী ঢাকাতেও বহু আধুনিক অট্রালিকা আছে। কিন্তু বিমান বন্দরে অবতরণ করা মাত্রই সে ধারণা চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। টার্মিনাল বিল্ডিং-এর রেলিং ঘেঁষে শত শত লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, কেননা তাদের অন্য কিছু করার নাই। আর যেহেতু বিমান বন্দর ভিক্ষা করবার জন্য বরাবরই উত্তম জায়গা।”

পত্রিকাটি আরো লিখেছে, “আমাকে বলা হয়েছে,অমুক গ্রামে কেউ গান গায়না। কেননা তারা কি গাইবে? আমি দেখেছি,একটি শিশু তার চোখে আগ্রহ নেই,গায়ে মাংস নেই। মাথায় চুল নাই। পায়ে জোর নাই। অতীতে তার আনন্দ ছিল না, বর্তমান সম্পর্কে তার সচেতনতা নাই এবং ভবিষ্যতে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না সে।” দেশে তখন প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ চলছিল। হাজার হাজার মানুষ তখন খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছিল। মেক্সিকোর “একসেলসিয়র” পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিবকে যখন প্রশ্ন করা হলো, খাদ্যশস্যের অভাবের ফলে দেশে মৃত্যুর হার ভয়াবহ হতে পারে কিনা,শেখ মুজিব জবাব দিলেন,“এমন কোন আশংকা নেই।” প্রশ্ন করা হলো,“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,পার্লামেন্টে বিরোধীদল বলেন যে,ইতিমধ্যেই ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে।” তিনি জবাব দিলেন,“তারা মিথ্যা বলেন।” তাঁকে বলা হলো,”ঢাকার বিদেশী মহলো মৃত্যু সংখ্যা আরও বেশী বলে উল্লেখ করেন।” শেখ মুজিব জবাব দিলেন,“তারা মিথ্যা বলেন।” প্রশ্ন করা হলো,দুর্নীতির কথা কি সত্য নয়? ভুখাদের জন্য প্রেরিত খাদ্য কি কালোবাজারে বিক্রী হয় না..? শেখ বললেন, “না। এর কোনটাই সত্য নয়।”-(এন্টার প্রাইজ,রিভার সাইড,ক্যালিফোর্নিয়া, ২৯/০১/৭৫)।

বাংলাদেশ যে কতবড় মিথ্যাবাদী ও নিষ্ঠুর ব্যক্তির কবলে পড়েছিল এ হলো তার নমুনা। দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে, সে দুর্ভিক্ষে হাজার মানুষ মরছে সেটি তিনি মানতে রাজী নন। দেশে কালোবাজারী চলছে,বিদেশ থেকে পাওয়া রিলিফের মাল সীমান্ত পথে ভারতে পাড়ী জমাচ্ছে এবং সীমাহীন দুর্নীতি চলছে সেটি বিশ্ববাসী মানলেও তিনি মানতে চাননি। অবশেষে পত্রিকাটি লিখেছে,“যে সব সমস্যা তার দেশকে বিপর্যস্ত করত সে সবের কোন জবাব না থাকায় শেখের একমাত্র জবাব হচ্ছে তাঁর নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতা বৃদ্ধি। জনসাধারণের জন্য খাদ্য না হোক,তার অহমিকার খোরাক চাই।” -(এন্টার প্রাইজ,রিভার সাইড, ক্যালিফোর্নিয়া,২৯/০১/৭৫)।

 

কবরে  শায়ীত হলো গণতন্ত্র

শেখ মুজিব যখন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন তখন লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফে পিটার গিল লিখেছিলেন,“বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দেশ থেকে পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু লাথি মেরে ফেলে দিয়েছেন। গত শনিবার ঢাকার পার্লামেন্টের (মাত্র) এক ঘণ্টা স্থায়ী অধিবেশনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে ক্ষমতা অর্পণ করেছে। অনেকটা নিঃশব্দে গণতন্ত্রের কবর দেয়া হয়েছে। বিরোধীদল দাবী করেছিল,এ ধরণের ব্যাপক শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিন দিন সময় দেয়া উচিত। জবাবে সরকার এক প্রস্তাব পাশ করলেন যে,এ ব্যাপারের কোন বিতর্ক চলবে না। .. শেখ মুজিব এম.পি.দের বললেন, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র ছিল “ঔপনিবেশিক শাসনের অবদান”। তিনি দেশের স্বাধীন আদালতকে “ঔপনিবেশিক ও দ্রুত বিচার ব্যাহতকারী” বলে অভিযুক্ত করলেন।” অথচ পাকিস্তান আমলে শেখ মুজিব ও তাঁর আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পদ্ধতির গণতন্ত্রের জন্য কতই না চিৎকার করেছেন। তখন পাকিস্তানে আইউবের প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির গণতন্ত্রই তো ছিল। গণতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগের পতাকা তলে যে কতটা মেরুদণ্ডহীন ও নীতিহীন মানুষের ভীড় জমেছিল সেটিও সেদিন প্রমাণিত হয়েছিল। এতদিন যারা গণতন্ত্রের জন্য মাঠঘাট প্রকম্পিত করতো -তারা সেদিন একদলীয় স্বৈরাচারি শাসন প্রবর্তনের কোন রূপ বিরোধীতাই করল না। বরং বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এতবড় গুরুতর বিষয়ে যখন সামান্য তিন দিনের আলোচনার দাবী উঠল তখন সেটিরও তারা বিরোধীতা করল। সামান্য এক ঘণ্টার মধ্যে এতবড় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিল। অথচ গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে এক টাকা ট্যাক্স বৃদ্ধি হলে সে প্রসঙ্গেও বহু ঘণ্টা আলোচনা হয়। ভেড়ার পালের সব ভেড়া যেমন দল বেঁধে এবং কোন রুপ বিচার বিবেচনা না করে প্রথম ভেড়াটির অনুসরণ করে তারাও সেদিন তাই করেছিল। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের দাবী যে কতটা মেকী,সেটির প্রমাণ তারা এভাবেই সেদিন দিয়েছিল। দলটির নেতাকর্মীরা সেদিন দলে দলে বাকশালে যোগ দিয়েছিল, এরকম একদলীয় স্বৈরচারি শাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের বিবেকে সামান্যতম দংশনও হয়নি।

১৯৭৪ সালে ১৮ অক্টোবর বোষ্টনের ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরে ডানিয়েল সাদারল্যান্ড লিখেছিলেন,“গত দুই মাসে যে ক্ষুধার্ত জনতা স্রোতের মত ঢাকায় প্রবেশ করেছে,তাদের মধ্যে সরকারের সমর্থক একজনও নেই। বন্যা আর খাদ্যাভাবের জন্য গ্রামাঞ্চল ছেড়ে এরা ক্রমেই রাজধানী ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে সরকার এদেরকে রাজপথের ত্রিসীমানার মধ্যে ঢুকতে না দিতে বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যককে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে সারাদিন দুই এক টুকরা রুটি খেতে পাওয়া যায, মাঝে মাঝে দুই-একটা পিঁয়াজ ও একটু-আধটু দুধ মেলে। ক্যাম্পে ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। “যে দেশে মানুষকে এমন খাঁচাবদ্ধ করে রাখা হয় সেটা কি ধরনের স্বাধীন দেশ”- ক্রোধের সাথে বলল ক্যাম্পবাসীদেরই একজন। ক্যাম্পের ব্লাকবোর্ডে খড়িমাটি দিয়ে জনৈক কর্মকর্তা আমার সুবিধার্থে প্রত্যেকের রুটি খাওয়ার সময়সূচির তালিকা লিখে রেখেছেন। “তালিকায় বিশ্বাস করবেন না”-ক্যাম্পের অনেকেই বলল। তারা অভিযোগ করল যে, রোজ তারা এক বেলা খেতে পায়- এক কি দুই টুকরা রুটি। কোন এক ক্যাম্পের জনৈক স্বেচ্ছাসেবক রিলিফকর্মী জানাল যে, “সরকারী কর্মচারীরা জনসাধারণের কোন তোয়াক্কা করে না। তারা বাইরের জগতে সরকারের মান বজায় রাখতে ব্যস্ত। এ কারণেই তারা লোকদেরকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যাচেছ। বিদেশীরা ভুখা-জনতাকে রাস্তায় দেখুক এটা তারা চায় না।”

১৯৭৪ সালে ৩০ অক্টোবর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় পিটার প্রেসটন লিখেছিলেন, “এই সেদিনের একটি ছবি বাংলাদেশের দৃশ্যপট তুলে ধরেছে। এক যুবতি মা -তার স্তন শুকিয়ে হাঁড়ে গিয়ে লেগেছে,ক্ষুধায় চোখ জ্বলছে – অনড় হয়ে পড়ে আছে ঢাকার কোন একটি শেডের নীচে,কচি মেয়েটি তার দেহের উপর বসে আছে গভীর নৈরাশ্যে। দু’জনাই মৃত্যুর পথযাত্রী। ছবিটি নতুন,কিন্তু চিরন্তন। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা দুনিয়ার সবচেয়ে -কলিকাতার চেয়েও -বীভৎস শহরে পরিণত হয়েছে। সমস্ত বীভৎসতা সত্ত্বেও কোলকাতায় ভীড় করা মানুষের যেন প্রাণ আছে,ঢাকায় তার কিছুই নাই। ঢাকা নগরী যেন একটি বিরাট শরণার্থী-ক্যাম্প। একটি প্রাদেশিক শহর ঢাকা লাখ লাখ জীর্ণ কুটীর,নির্জীব মানুষ আর লঙ্গরখানায় মানুষের সারিতে ছেয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলে যখন খাদ্যাভাব দেখা দেয়,ভুখা মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসে। ঢাকায় তাদের জন্য খাদ্য নেই। তারা খাদ্যের জন্য হাতড়ে বেড়ায়,অবশেষে মিলিয়ে যায়। গেল সপ্তাহে একটি মহলের মতে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই মাসে ৫০০ লোক অনাহারে মারা যাচ্ছে। এর বেশীও হতে পারে,কমও হতে পারে। নিশ্চিত করে বলার মত প্রশাসনিক যন্ত্র নাই।.. জন্মের পর পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সাহায্যের এক অভূতপূর্ব ফসল কুড়িয়েছিলঃ ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড। আজ সবই ফুরিয়ে গেছে। কোন চিহ্ন পর্যন্ত নেই। রাজনীতিবিদ, পর্যবেক্ষক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান -সবাই একই যুক্তি পেশ করছে যা অপরাধকে নিরাপদ করছে, দায়িত্বকে করছে অকেজো। তাদের মোদ্দা যুক্তি হলো এই যে, বাংলাদেশের ঝুলিতে মারাত্মক ফুটো আছে। যত সাহায্য দেয়া হোক না কেন, দুর্নীতি, আলসেমী ও সরকারী আমলাদের আত্মঅহমিকার ফলে অপচয়ে ফুরিয়ে যাবে। বেশী দেয়া মানেই বেশী লোকসান।”

 

সামনে গুরুতর বিপদ

পাত্রের তলায় ফুটো থাকলে পাত্রের মালামাল বেড়িয়ে যায়,তবে তা বেশী দূর যায় না। আশে পাশের জায়গায় গিয়ে পড়ে। তেমনি বাংলাদেশের তলা দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া সম্পদ হাজার মাইল দূরের কোন দেশে গিয়ে উঠেনি,উঠেছিল প্রতিবেশী ভারতে। আর এ ফুটোগুলো গড়ায় ভারতীয় পরিকল্পনার কথা কি অস্বীকার করা যায়? পাকিস্তান আমলে ২৩ বছরে পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ ছিল,সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারী বন্ধ করা। এ কাজে প্রয়োজনে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বসানো হত। অথচ শেখ মুজিব সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারি বন্ধ না করে ভারতের সাথে চুক্তি করে সীমান্ত জুড়ে বাণিজ্য শুরু করেন। এভাবে সীমান্ত বাণিজ্যের নামে দেশের তলায় শুধু ফুটো নয়,সে তলাটিই ধসিয়ে দিলেন। তলা দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সম্পদ তখন ভারতে গিয়ে উঠল। ভারত বস্তুত তেমন একটি লক্ষ্য হাছিলের কথা ভেবেই সীমান্ত বাণিজ্যের প্রস্তাব করেছিল। অথচ পাকিস্তান আমলে ভারত এ সুবিধার কথা ভাবতেই পারেনি। অথচ মুজিব সেটাই বিনা দ্বিধায় ভারতের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের বাজারে তখন আর রাতের আঁধারে চোরাচালানকারী পাঠানোর প্রয়োজন পড়েনি। দিন দুপুরে ট্রাক-ভর্তি করে বাংলাদেশের বাজার থেকে সম্পদ তুলে নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা তখন পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানার যন্ত্রাংশ খুলে নামে মাত্র মূল্যে ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়।

তলাহীন পাত্র থেকে পানি বেরুতে সময় লাগে না,তেমনি দেশের তলা ধসে গেলে সময় লাগে না সে দেশকে সম্পদহীন হতে। ভারতের সাথে সীমান্ত বাণিজ্যের দাড়িয়েছিল, ত্বরিৎ বেগে দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল বাংলাদেশে। শেখ হাসিনা সে মুজিবী আমল ফিরিয়ে আনতে চায়। সম্প্রতি শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরি পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের সাথে অভিন্ন মুদ্রা ও অভিন্ন ভিসার। উপদেষ্টাগণ তো মনিবের মেজাজ বুঝে কথা বলেন।  তাই ইকবাল সোবহান চৌধুরি যে কথা বলেছেন, সেটি হাওয়া থেকে বলেননি। বরং হাসিনা সামনে কোন দিকে যাবেন তারই আভাস দিয়েছেন মাত্র। প্রশ্ন হলো, যে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের ভোটদানের অধীকারের উপর নৃশংস ডাকাতি হওয়াতেও রাস্তায় নামলো তারা কি দেশের স্বাধীনতার উপর ডাকাতি রুখতে রাস্তায় নামবে? অথচ স্বাধীনতা বাঁচাতে শুধু রাস্তায় নামলে চলে না, যুদ্ধেও নামতে হয়। কিন্তু সে সম্ভাবনা কোথায়? বাংলাদেশের সামনে গুরুতর বিপদের কারণ তো এখানেই। ১৪/০২/২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *