বিবিধ ভাবনা ৭৫
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 6, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. ঈমানের জোয়ার ও মুনাফিকির জোয়ার এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা
যে কোন দেশে ঈমানের জোয়ার যেমন স্পষ্ট দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় মুনাফিকির জোয়ারও। ঈমানের জোয়ার বুঝা যায় মুসলিমদের জীবনে জিহাদ ও শহীদদের বিপুল সংখ্যা দেখে। এবং দেশবাসীর মাঝে ঈমানের শূণ্যতা বুঝা যায়, জিহাদের অনুপস্থিতি এবং সে জিহাদে শহীদদের শূণ্যতা দেখে। ঈমানের অর্থ, এ কথার উপর পূর্ণ বিশ্বাস যে, জিহাদই হলো সর্বোচ্চ ইবাদত। এবং এ ইবাদতে কেউ নিহত হলে সে মৃত হয়না, বরং শহীদ হয়। সরাসরি বিনা হিসাবে সে জান্নাত পায় এবং নিহত হওয়ার পরও সে রিযিক পায়। ঈমানদারের এরূপ বিশ্বাসের কারণ, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কুর’আনে। এমন কুর’আনী বিশ্বাস দানা না বাঁধলে কারো জীবনে যেমন জিহাদ আসে না, তার মধ্যে শহীদ হওয়ায় আগ্রহও সৃষ্টি হয় না। এমন ব্যক্তির ইবাদত নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতে এসে থেমে যায়।
ঈমান ও জিহাদ মু’মিনের জীবনেএকত্রে চলে। ঈমান থাকলে জিহাদ থাকবেই। জিহাদ তো ঈমান নিয়ে বাঁচার লড়াই। আগুণ থাকলে তো উত্তাপ থাকবেই। ঈমানের দাবী অনেকেই করতে পারে। তবে ঈমানের দাবীতে একমাত্র তাঁরাই সত্যবাদী যাদের জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জানমালের বিনিয়োগসহ লাগাতর জিহাদ আছে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণাটি এসেছে পবিত্র কুর’আনের সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। তাই ঈমানদারের মনে ঈমানের প্লাবন এলে তার মাঝে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে জিহাদ। তখন প্রবল আগ্রহ বাড়ে শহীদ হওয়ায়। সমগ্র মানব ইতিহাসে ঈমানের সবচেয়ে বড় জোয়ার এসেছিল নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের আমলে। তখন এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যিনি জান ও মালে বিনিয়োগে জিহাদে যোগ দেননি। শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবা শহীদ হয়েছিলেন। মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জান ও মালে এমন বিনিয়োগ আর কোন কালেই ঘটেনি। তাই সাহাবাদের যুগটিকে হাদীসে মানব জাতির সমগ্র ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ বলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে সমগ্র বিশ্বে ঈমানের সবচেয়ে বড় জোয়ারটি এসেছে আফগানিস্তানে। মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশী মানুষ শহীদ হয়েছে এদেশটিতে। দেশটি ঘরে ঘরে শহীদ। সোভিয়েত রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে বিগত ৩০ বছরের যুদ্ধে বহু লক্ষ মুজাহিদ শহীদ হয়েছেন। যে দেশে মানুষ শহীদ হয়, সেদেশে অবশ্যই বিজয় আসে। কারণ, জিহাদে মুজাহিদগণ একাকী থাকে না, তাঁদের সাথে থাকে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুত ফিরিশতা বাহিনী। সেটিও পবিত্র কুর’আনে প্রতিশ্রুত। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ৫০টির বেশী মিত্র দেশ আফগানিস্তানে পরাজিত হয়েছে।
তবে অধিকাংশ মুসলিম দেশে প্রবল প্লাবন এসেছে মুনাফিকির। বাংলাদেশ তেমনি একটি দেশ। মুনাফিকির জোয়ারটি স্পষ্ট দেখা যায়। মুনাফিকগণ নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত পালনে আগ্রহী। এরা জোর গলায় বলে, “আমরাও মুসলিম”। এদের মুখে দাড়ি, হাতে তাসবিহ, মাথায় টুপিও দেখা যায়। নবী-রাসূলদের উপর বিশ্বাসের কথাও তারা জোরে শোরে বলে। নবীজী (সা:)’র যুগের মুনাফিকগণ এগুলি করতো। তারা দরুদ পড়ে, মিলাদ পড়ে। এরা মসজিদ গড়ে, মাদ্রসাও গড়ে। কাফের তো তারা যারা প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর দ্বীন ইসলামকে সরাসরি অস্বীকার করে। কিন্তু রাজনীতির অঙ্গণে কাফের ও মুনাফিকদের এজেন্ডা অভিন্ন। কাফেরদের ন্যায় মুনাফিকগণও ইসলামের বিজয় চায়না। শরিয়তের বিরোধীতা করে। কাফেরদের ন্যায় মুনাফিকদের বন্ধুত্বও ইসলামের চিহ্নিত শত্রুদের সাথে। ভারতের ন্যায় কাফের দেশের সৈনিকদের সাথে যুদ্ধ লড়া নিয়েই এদের অহংকার। তারা আনন্দ পায় যুদ্ধে কোন মুসলিম দেশ পরাজিত হলে।
মুনাফিকদের আদালতে শরিয়তী আইনের বিচারে থাকে না। শাসনতন্ত্রে থাকে না মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি। তাদের রাজনীতিতে থাকে জাতীয়তাবাদ, নীতিতে সেক্যুলারিজম, অর্থনীতিতে সূদ, পোষাকে বেপর্দাগী, সমাজের বুকে পুলিশ দিয়ে তারা বাঁচিয়ে রাখে বেশ্যাবৃত্তি, মদ ও জুয়া। এদের দুশমনি ইসলামকে বিজয়ী করার রাজনীতির বিরুদ্ধে। নিজেরা নামায পড়লেও ইসলামকে বিজয়ী করার রাজনীতিকে তারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাস বলে। এরাই হলো আধুনিক যুগের মুনাফিক। যেদেশে তাদের বিজয় সেদেশে ইসলাম ও শরিয়ত পরাজিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবল বিজয় এই মুনাফিকদের।
নবীজী (সা:)র যুগে মুনাফিকগণ ছিল প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ। সেটি বুঝা যায় ওহুদের যুদ্ধে ১০০০ যোদ্ধাদের মধ্য থেকে ৩০০ জন বেড়িয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে মহান নবীজী (সা:) নাই; ফলে এদেশে তাদের সংখ্যা যে শতকরা ৭০ বা ৮০ ভাগের বেশী হবে -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? এদের কারণেই বাংলাদেশে ইসলাম আজ পরাজিত। প্রতিষ্ঠ পেয়েছে চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম-খুন-ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তির প্লাবন।
মুনাফিক কবলিত দেশে আদালতে মহান আল্লাহতায়ালার আইন থাকে না। শরিয়তী আইন বিলুপ্ত করার ন্যায় গুরুতর অপরাধ ঘটলেও সে আইন প্রতিষ্ঠার জিহাদ শুরু হয় না। জিহাদ শুরু হলেও তাতে লোক থাকে না। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকলে শরিয়তের প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে লাগাতর জিহাদ শুরু হয়ে যেত। পুলিশ যেমন দেশের আইন অমান্য করাকে সমর্থন করেনা, তেমনি কোন ঈমানদারও মহান আল্লাহতায়ালার আইনের অবমাননা সহ্য করতে পারে না। যারা সহ্য করে তারাই তো নিরেট মুনাফিক। এ মুনাফিকগণই তো মহান আল্লাহতায়ালার জমিনে তাঁর দ্বীনের পরাজয়কে বাঁচিয়ে রেখেছে।
২. সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাজ এবং সবচেয়ে বড় পুরস্কার
দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দেশকে পাহারা দেয়ার কাজটি অতি ব্যয়বহুল। কারণ দুর্বৃত্তরা সশস্ত্র। তাদের বাহিনীও বিশাল এবং সংঘবদ্ধ। তারা ক্ষমতায় গেলে তাদের হাতে থাকে সরকারী পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, আদালতের বিচারক বাহিনী এবং তাদের দলের গুণ্ডাবাহিনী। ফলে এদের নির্মূলে নামলে বহু জানমালের কুরবানী দিতে হয়। রাস্তায় তাদের মোকাবেলায় খাড়া হলে গালি খেতে হয়, নির্যাতিত ও নিহত হতে হয়।
অথচ এ কাজটি না করলে সমাজে শান্তি আসে না। সভ্য সমাজও নির্মিত হয়না। তখন রাষ্ট্র পরিণত হয় জনগণকে জাহান্নামে নেয়া বাহনে। কিন্তু নিজের খেয়ে কে বনের মহিষ তাড়াবে? সবাই তো চায় নিজের স্বার্থ নিয়ে নিরাপদে বাঁচতে। কে লড়াই জড়িয়ে পড়তে চাইবে? কিন্তু দুর্বৃত্তদের নির্মূল, ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা তো মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব এজেন্ডা। তাঁর এ এজেন্ডা পালনে লোক চাই। তাই মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর এ বিশাল কাজকে কিছু লোকের করুণা, লোকপ্রম, সদিচ্ছা ও স্বেচ্ছাশ্রমের উপর ছেড়ে দেননি। স্রেফ রাজনীতি ও সমাজসেবার পর্যায়েও রাখেননি। একাজকে মহান আল্লাহতায়ালা সর্বোচ্চ ইবাদত তথা জিহাদের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি একাজের মুজুরী দেন অনন্ত কালের জান্নাত দিয়ে। একাজে কারো প্রাণ গেলে তাকে বিনা বিচারে জান্নাত দেন।
মহান আল্লাহতায়ালা শুধু ব্যক্তির জীবনে বিপ্লব চানা না, বিপ্লব চান সমাজ ও রাষ্ট্র জুড়ে। ব্যক্তির জীবনে নৈতিক ও চারিত্রিক বিপ্লব আনতে যেমন কুর’আন শিক্ষা, নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করছেন তেমনি রাষ্ট্র জুড়ে বিপ্লব আনতে “আ’মিরু বিল মা’রুফ” তথা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং “নেহি আনিল মুনকার” তথা দুর্বৃত্তির নির্মূলকে তিনি মুসলিম জীবনের ফরজ তথা বাধ্যতামূলক মিশনে পরিণত করেছেন। ইসলামের সমাজ বিপ্লবের ভিত্তি তো মুসলিম জীবনের এ ফরজ মিশন। এ মিশন মুসলিম জীবনে জিহাদের জন্ম দেয়।
যার জীবনে সে জিহাদ নাই সে ঈমানশূণ্য। সুরা আল-ইমরানের ১৪২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছ: “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনো জানলেন না তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করলো এবং কারা ধৈর্য ধরলো।” জিহাদ না করে যারা নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের মাঝে জান্নাতে পৌঁছার স্বপ্ন দেখে তাদের জন্য এ আয়াতে রয়েছে গুরুতর হুশিয়ারী বার্তা। এ আয়াতটির মূল ছবক হলো, জান্নাতের ভাবনা থাকলে জিহাদের ময়দানে অবশ্যই থাকতে হবে।
যার যার নামায-রোযা তাকেই পালন করতে হয়। তেমনি সমাজ বিপ্লবের জিহাদে নিজের দায়িত্ব নিজে পালন করতে হয়। এ দায়িত্ব পালনের মাঝেই ঈমানদারী। সকল ঈমানদার যখন নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা পালন করে -তখনই রাষ্টে বিপ্লব আসে। একমাত্র তখনই ইসলাম বিজয়ী হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মত দেশে সে ফরজ পালন হয়নি। বরং নিজেদের ভোট ও নিজেদের রাজস্বে বিজয়ী করা হয় ইসলামের শত্রু পক্ষকে। পরকালে কি এ ভয়ানক অপরাধের শাস্তি ভুগতে হবে না?
৩. কানা, বধির ও বিবেকহীন বিদেশী কুটনীতিকগণ
ঢাকা শহরে বিশাল এক পাল বিদেশী কুটনীতিকের বসবাস। তারা পত্রিকা পড়ে। দেশের রাস্তাঘাট ও হাটিবাজার দিয়েও চলাফেরা করে। তাদের চোখের সামনে দেশজুড়ে ভোটডাকাতি হলো, দিনের ভোট রাতে দেয়া হলো, মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে প্রকাণ্ড গণহত্যা হলো, কত মানুষ গুম-খুন-ফাঁসীর শিকার হলো, কত মানুষ জেল হাজতে মারা গেল –কিন্তু এসব নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া নাই। এসব কি এসব কুটনীতিকগণ দেখে না? এসব দেখেও তারা না দেখার ভান করে। যেন বাংলাদেশে কিছুই হয়নি। এসব কুটনীতিকগণই শুধু নয়, তাদের সরকারও এ নিয়ে পুরাপুরি নীরব। অথচ তারা বিশ্বময় মানবাধিকার, সভ্য সমাজ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে। কোন সভ্য সরকার কি অসভ্য ভোটডাকাতদের সঙ্গ দেয়? করে কি বন্ধুত্ব? শুধু তাই নয়, এক ভোট ডাকাতকে নানা আন্তর্জাতিক ফোরামে ডেকে নিয়ে তার বক্তৃতাও শোনে। কোন ডাকাতকে কি কোন কালে এভাবে সন্মানিত করা হয়েছে?
তাই যারা ইউরোপ ও আমেরিকায় বসে পাশ্চাত্য দেশের সরকারগুলির কাছে লবিংয়ের কথা ভাবেন -তাদের এ নিয়ে বোধোদয় হ্ওয়া উচিত। এসব বিদেশী শক্তিবর্গ বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক বা মানবিক অধিকার নিয়ে ভাবে না। তারা ভাবে শুধু নিজেদের বানিজ্যিক ও কুটনৈতিক স্বার্থ নিয়ে। তাই নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইটি বাংলাদেশের জনগণকে নিজে থেকেই লড়তে হবে। এ লড়াই অন্য কেউ লড়ে দিবে না। এটিই রূঢ় বাস্তবতা।
৪. দায়ভার শতভাগ সত্যের পক্ষে থাকার
যুদ্ধে বা লড়াইয়ে বিজয়ী করার শতভাগ দায়ভার মহান আল্লাহতায়ালার। ঈমানদারের কাঁধে যে দায়ভার -সেটি হলো ইসলামের বিধানগুলিকে শত ভাগ সঠিক ভাবে আঁকড়ে ধরা। তথা সদা সিরাতুল মুস্তাকীমে থাকা। এ দায়িত্বটি শতভাগ বান্দার। পথ ভ্রষ্ট হওয়া বা সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার পরিণতিটি ভয়াবহ। এ ভ্রষ্টতা জাহান্নামে নেয়। রাজনীতির লড়াইয়ে স্রেফ বিজয়ী হওয়ার জন্য মিথ্যাচার করা ও দুর্বৃত্তদের সাথে আঁতাত করা হারাম। মহান আল্লাহতায়ালা বান্দার আমল নামায় বিজয় দেখতে আগ্রহী নয়। কারণ, সেটি তো তাঁর দান। তিনি দেখতে চান কতটুকু সত্যের পথে অবিচল থাকলো -সেটি। কিন্তু এখানেই তথাকথিত ইসলামপন্থীদের বড় বড় ভূল হয়। নিছক বিজয়ের জন্য সেক্যুলারিস্ট বা কাফেরদের সাথে কোয়ালিশন করা হয়, সত্যকে বিসর্জন দেয়া হয়, এবং সুবিধামত মিথ্যা কথাও বলা হয়। ইসলামের শত্রুদের খুশি রাখতে সে গোপন করাকে হিকমত রূপে প্রচার দেয়া হয়। জিহাদ, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, ইসলামী রাষ্ট্রের ন্যায় ইসলামের মৌল বিষয়গুলি নিয়েও উচ্চবাচ্য করা হয়না। এগুলি কি বিচ্যুতির লক্ষণ নয়?
৫. দায়ভার সত্য বলার ও মিথ্যানির্মুলের
ঈমানদারের দায়ভার হলো কোনটি সত্য এবং কোনটি মিথ্যা -সেটি জনসম্মুখে জোর গলায় প্রকাশ করা। ঈমানদারকে আজীবন সত্যের পক্ষে ও মিথ্যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে হয়। মু’মিনের জীবনে এটিই আমৃত্যু জিহাদ। এ জিহাদে জিহবা ও কলম হলো মূল হাতিয়ার। চুড়ান্ত পর্যায়ে অস্ত্রও ব্যবহার করতে হয়। সত্য প্রকাশ না করলে সত্য বিজয়ী হবে কীরূপে? মিথ্যাকেই বা পরাজিত করা যাবে কীরূপে? সত্য পক্ষে সাক্ষ্যদানের কাজ না হলো মিথ্যাচারীগণই সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়। একাজ নবী-রাসূলদের। রোগজীবণুর নির্মূল ছাড়া যেমন রোগমুক্তি ঘটে না, তেমনি মিথ্যা ও দুর্বৃত্তির নির্মূলে জরুরী হলো মিথ্যুক ও দুর্বৃত্তদের নির্মূল। নইলে সত্য প্রতিষ্ঠা পায়না। মিথ্যার নির্মূলে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবীগণ শুধু নিজেদের জিহ্বাকেই কাজে লাগাননি, অস্ত্রও হাতে তুলে নিয়েছেন।
দুর্বৃত্ত শক্তির লক্ষ্য, সত্যকে গোপন করা। নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে এরা লাগামহীন মিথ্যার প্রচার করে। এ কাজে এরা বুদ্ধিব্যবসায়ী ও সাংবাদিক নামধারী মিথ্যাব্যবসায়ী ভাড়া করে। এরাই বাংলাদেশে বিশাল মিথ্যাচার করেছে ১৯৭১’য়ের যুদ্ধ নিয়ে। মিথ্যার শক্তি বিশাল। এ শক্তির বলে গরু, সাপ, শকুন ও ফিরাউনকে ভগবানের আসনে বসানো পায়। তেমনি ভোটডাকাতও বলে মাননীয় বলে প্রতিষ্ঠা দেয়া যায়। তখন পরিত্যক্ত হয় আল্লাহতায়ালার নবী-রাসূলের শিক্ষা। নিগৃহিত, নির্যাতিত ও হত্যার শিকার হয় সত্যসেবী মুজাহিদগণ। বাংলাদেশে সেটিই হচ্ছে।
৬. গণতন্ত্র বর্জন মুসলিম দেশগুলিতে
২২টি আরব রাষ্ট্র। কিন্তু ১টিতেও গণতন্ত্র নাই। ৫৭টি মুসলিম দেশের মাঝে পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও নাইজিরিয়া –এই ৫টি মাত্র দেশ গণতান্ত্রিক। একমাত্র এ ৫টি দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। এদেশগুলিতে স্বাধীন পত্রিকা বের হয়। এক্ষেত্রে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশের ব্যর্থতাটি বিশাল। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে বা পাকিস্তান আমলে যে নির্বাচন হতো -সেরূপ নির্বাচন বাংলাদেশে হয়না। নির্বাচনের নামে দিনের ভোট আগের রাতে ডাকাতি হয়ে যায়। অন্যরা সামনে এগুচ্ছে, আর বাংলাদেশ পিছনে যাচ্ছে।
গণতন্ত্রের অর্থ শুধু নির্বাচন নয়। এটি মত প্রকাশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মিছিল-মিটিংয়ের পূর্ণ স্বাধীনতা।এটি জানমাল, ইজ্জত-আবরু ও ন্যায় বিচার নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতা। শেখ হাসিনা এসব কিছুই হরণ করেছে। আদালত হারিয়েছে নিরপেক্ষ বিচারের স্বাধীনতা। তাদেরই ফাঁসিতে ঝুলায় যাদের সরকার ফাঁসি দিতে চায়। জামিন পাওয়া না পাওয়াটি সরকারের হাতে, আদালতের হাতে সেটি নাই। গণতান্ত্রিক অধিকার ছাড়া বাঁচাটাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে গা সওয়া হয়ে গেছে। ফলে ৮০ লাখ মানুষের হংকংয়ে ২০ লাখ মানুষের মিছিল হয়, কিন্তু ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে এক লাখ মানুষের মিছিলও হয়না। পিপাসা না থাকলে ঘোড়াকে নদীর তীরে নেয়া যায়, কিন্তু তাকে পানি পান করানো যায় না। তেমনি গণতন্ত্রের ক্ষুধা না থাকলে গণতন্ত্রের নামে মানুষকে রাস্তায় নামা যায় না। ফলে ২০ লাখ মানুষের মিছিল হংকং সম্ভব হলেও বাংলাদেশে সেটি অসম্ভব। তাই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জনগণের চেতনায় গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষুধা সৃষ্টি করতে হবে। সে কাজটি প্রতিটি সুবোধ মানুষের।
৭. আল্লাহতায়ালার সৈনিক ও শয়তানের সৈনিক
যারা মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক তাঁদের জন্য অশেষ নিয়ামত ভরা জান্নাত। যারা শয়তানের সৈনিক তাদের জন্য জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুণ। কিন্তু শয়তানের সৈনিকের জীবনে যে লাগাতর লড়াই ও ত্যাগ, সেরূপ লড়াই ও ত্যাগ আল্লাহর সৈনিকদের জীবনে কোথায়? শয়তানের সৈনিকগণ শয়তানকে বিজয়ী করেছে এবং পরাজিত করেছে ইসলাম ও ইসলামের শরিয়তী বিধানকে। ভারতের এজেন্ডাকে বিজয়ী করেছে বাংলাদেশের মাটিতে। অথচ আল্লাহতায়ালার সৈনিকদের মাঝে তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার ভাবনা নাই, সে লক্ষ্যে জিহাদ ও কুরবানীও নাই। বরং তাদের কাজ হয়েছে শয়তানী শক্তির বিজয়কে মেনে নেয়া।
শুধু তাই নয়, শয়তানের বিজয়কে তারাও নিজেদের বিজয় মনে করে উৎসব করে যারা নামায পড়ে ও রোযা রাখে। সেটি দেখা যায় ১৬ ডিসেম্বর এলে। ১৬ই ডিসেম্বর হলো ভারতীয় সেনা বাহিনীর নিরেট বিজয়ের দিন। হিন্দুদের হাজার বছরের ইতিহাসে আর কোন দিনই হিন্দুগণ এরূপ বিজয় পায়নি। সে বিজয় ভারতীয় হিন্দুদের ঘরে তুলে দেয় বাঙালী জাতীয়তাবাদীগণ। শত শত বছর পরও বাঙালী মুসলিমগণ মুসলিম ইতিহাসের পাঠকদের কাছে ঘৃণা কুড়াবে।
মুসলিম ইতিহাসে কোন দিনই কাফেরদের বিজয় ও মুসলিমদের বিজয় একই রণাঙ্গণে একত্রে ঘটেনি। কোন রণাঙ্গণে কাফেরগণ বিজয়ী হলে পরাজিত হয় মুসলিমগণ। উভয়ের বিজয় একই সাথে হয় না। ১৬ই ডিসেম্বরকে বিজয়ের দিন রূপে পালন করে ভারত। সেদিনের বিজয় নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি বলেছিলেন অথচ সেদিনে উৎসব রূপে পালন করে ভারতের মিত্র বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের সাথে এমন কিছু সংগঠন যারা নিজেদের ইসলামী রূপে পরিচয় দেয়। এটি হলো ইসলামের নামে বিশাল বিচ্যুতি। অথচ এই ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ভূমিতে নেমে এসেছিল ইসলামপন্থীদের উপর নিদারুন গণহত্যা। গণহত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয় অবাঙালী নারীপুরুষ। তাদের অপরাধ, ভারতীয় কাফেরদের সাথে জোট বেঁধে একটি পাকিস্তানের ন্যায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ভাঙ্গার হারাম কাজকে সমর্থন করেনি। অবাঙালীদের নিজ গৃহ থেকে টেনে হিঁচড়ে বস্তিতে নামানো হয়। বাংলাদেশে ভূমিতে এভাবে বাঙালীর হাতে সৃষ্টি হয় বহু লক্ষ অবাঙালী রোহিঙ্গা।
বাঙালীর এ কদর্য ইতিহাস আজ ইতিহাসের বইতে পড়ানো হয় না। সত্য কথা বলা যে ইবাদত সে কথাও তারা ভূলে গেছে। দেশে সত্যসেবীদের সংখ্যা এতোই আকাল যে সে সত্য কথাগুলি সভাসমিতি বলাও হয়না। অথচ সত্য কথা বলার সাহস না থাকলে মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক হয় কি করে? মুসলিমই বা হয় কি করে? বাঙালী মুসলিমদের এ চারিত্রিক কদর্যতা কি মহান আল্লাহতায়ালা দেখছেন না? ০৬/১১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018