মুজিব ও মুজিবপন্থীদের দুর্বৃত্তির রাজনীতি এবং বাংলাদেশে দুর্বৃত্তপূজা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

মিথ্যা বেঁচে আছে তাই আওয়ামী লীগও বেঁচে আছে

বাংলাদেশীদের মাঝে সবচেয়ে বড় অজ্ঞতার ক্ষেত্রটি হলো খোদ শেখ মুজিবকে নিয়ে। তাকে নিয়ে গভীর অজ্ঞতা বিরাজ করছে শুধু সাধারণ মানুষের মাঝে নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু অধ্যাপক, আদালতের বহু বিচারক, বহু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, বহু লেখক, বহু বুদ্ধিজীবী ও বহু সেনা কর্মকর্তাসহ শিক্ষিত-অশিক্ষত সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। বর্তমান সরকার, সরকার সমর্থিত মিডিয়া, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের কাজ হয়েছে সে অজ্ঞতাকে বাঁচিয়ে রাখা এবং সে অজ্ঞতার উপর মুজিবকে নিয়ে মিথ্যার পাহাড় নির্মাণ করা। বাংলাদেশের বুকে মুজিবকে নিয়ে এ মিথ্যাচার পরিণত হয়েছে সভ্য ও ভদ্র রাজনীতি, সুশীল সংস্কৃতি ও সুস্থ্য জীবনবোধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় নাশকতায়। এ নিবন্ধে তারই কিছু উদাহরণ পেশ করা হবে। সবচেয়ে বড় উদাহরণটি হলো, মুজিবের প্রচারিত একটি নগ্ন মিথ্যাকে নিয়ে -যা আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, লেখক, মিডিয়াকর্মীগণ একটি জাতীয় মিথ্যায় পরিণত করেছে। সেটি একাত্তরের তিরিশ লাখ মানুষের নিহতের মিথ্যাটি।

আজ কোটি কোটি মানুষের মুখে ঘোষিত হচ্ছে তিরিশ লাখ নিহতের এই মিথ্যা। সাধারণ মানুষই শুধু নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, আদালতের বিচারপতি, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উঠে কিছু বলার সুযোগ পেলেই সে মিথ্যাটিকে নিঃসংকোচে বলে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সুবিচার, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে কি হবে, বাংলাদেশীদের একটি মিথ্যুকের জাতিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে আওয়ামী বাকশালীগণ যে কতটা সফল হয়েছে –মিথ্যার এই বিশাল জোয়ার হলো তারই প্রমাণ। ব্রিটিশদের ১৯০ বছরের শাসন ও পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরে বাঙালীগণ এতোটা মিথ্যুকে পরিণত হয়নি -যা আওয়ামী বাকশালীদের শাসনামলে হয়েছে। নবীজী (সা:) মিথ্যাকে সকল পাপের মা বলেছেন। মিথ্যাচারই হলো মানব চরিত্রের সবচেয়ে কুৎসিত দিক। অথচ মিথ্যা নিয়েএ বাঙালীর রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতি। সে সাথে একাত্তরের যুদ্ধের সবচেয়ে বড় অহংকারও। বাংলাদেশীগণ শুধু জাতীয় ফুল, জাতীয় ফল ও জাতীয় খেলারই প্রতিষ্ঠা দেয়নি, ৩০ লাখের মিথ্যাকে জাতীয় মিথ্যা রূপেও প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

মিথ্যা একবার প্রতিষ্ঠা পেয়ে গলে তা সেটি যত ভূয়াই হোক সাধারণ মানুষ তা নিয়ে আর প্রশ্ন তোলে না। এমন কি তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বিজ্ঞানী বা সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক হলেও। বাংলার ভূমিতেই শুধু নয় সমগ্র ভারত জুড়ে বহু মিথ্যাই এভাবে বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে। মিথ্যাকে যে কতটা বিকট ভাবে কোটি কোটি মানুষের মাঝে শুধু বাঁচিয়ে রাখা নয় বরং তাকে ধর্মের পূজণীয় বিষয়ে পরিণত করা যায় তারও কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। মিথ্যা একবার প্রতিষ্ঠা পেল সে মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলাও অধর্ম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হয়। শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরামকে ভারতবর্ষের হিন্দুগণ ভগবান মনে  করে। ভগবান মানেই তো অমানবিক, অলৌকিক, স্বর্গীয় ও পূজনীয় কিছু। হিন্দু পুরোহিতগণ হিন্দুদের ভাবতেই দেয় না, কি করে তাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাম মানুষের গর্ভে জন্ম নিল? উপাস্য ভগবান কি মানুষের গর্ভে জন্ম নেয়? এ নিয়েও প্রশ্ন তুলতে দেয় না, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরামের জন্মের আগে এ পৃথিবী পৃষ্টে কে ভগবান ছিল? ভগবান যখন মাতৃগর্ভে তখন এ বিশ্বকে কে চালালো? ভারতের বাইরে এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার যে বিশাল ভূ-ভাগ সেখানে তো শ্রীরাম নাই, শ্রীকৃষ্ণও নাই। সেখানে কে ভগবান? ভগবান ছাড়াই কি তবে বিশ্ব চলছে? গরু, সাপ,শকুনের ন্যায় ইতর প্রাণীগুলোই বা কি করে পূজণীয় ভগবান হলো? এ ইতর পশুগুলি কি মানুষের কোন উপকার করতে পারে? হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের এসব নিয়ে ভাবনা স্বাধীনতা দিলে কেউ কি হিন্দু থাকতো? মিথ্যা বেঁচে আছে বলেই হিন্দু ধর্মও বেঁচে আছে। একই ভাবে খৃষ্টান ধর্মে মিথ্যা বেঁচে আছে তাদের গড বা ঈশ্বর যীশুর মানব গর্ভে জন্ম নিয়ে।

 

 বাংলাদেশীদের যা নিয়ে ভাবতে দেয়া হয়না

আসা যাক বাংলাদেশীদের জাতীয় মিথ্যাটি নিয়ে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের   জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি অর্থাৎ ৭৫ মিলিয়ন। দাবী করা হয়, পাকিস্তানী সেনাদের হাতে মারা গিয়েছিল তিন মিলিয়ন তথা ৩০ লাখ। যুদ্ধকালীন ৯ মাসে ৩০ লাখের মৃত্যু হলে প্রতিদিন ১১ হাজারের বেশী মানুষকে নিহত হতে হয়। ৭৫ মিলিয়নের মাঝে ৩ মিলিয়ন মারা গলে প্রতি ২৫ জনের এক জনকে মরতে হয়। অর্থাৎ যে গ্রামে ১০০০ মানুষের বাস সেখানে মরতে হয় ৪০ জনকে। সে গ্রামে কেউ মারা না গেলে পাশের গ্রামের ১০০০’য়ের মাঝে মারা যেতে হয় ৮০ জনকে। স্কুলের যে ছাত্রটি পাটিগণিতের ঐকিক নিয়ম বুঝে সে সহজেই এ হিসার কষে ফেলতে পারে। সারা বাংলাদেশে যত হাজার গ্রাম আছে সে সব গ্রামে এই হারে মারা না গেলে তিরিশ লাখের হিসাব মিলবে না। বাংলাদেশে তখন ৬৮ হাজারের বেশী গ্রাম ছিল। প্রশ্ন হলো, পাক আর্মী নদী-নালা, বিল-হাওয়ার, পাহাড়-পর্বত পাড়ি দিয়ে ১০ হাজার গ্রামেও কি যেতে পেরেছে? মানব হত্যা তো সেখানেই হয় যেখানে যুদ্ধ ও প্রতিরোধ হয়। কথা হলো ৬৮ হাজার গ্রামে কি যুদ্ধ হয়েছিল? যুদ্ধ না হলে সেখানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পৌঁছবে কেন?  শুধু মানুষ খুনের নেশায় পাকিস্তানী সেনা বাহিনী গ্রামে গ্রামে ঘুরলে জেলা শহর, মহকুমা শহর ও থানা শহরগুলো কারা পাহারা দিল? ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্তে যুদ্ধই বা করলো কারা? মনে রাখতে হবে যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে যোদ্ধার সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫ হাজার যা জেনারেল নিয়াজী লিখেছেন তার বই “Betrayal of East Pakistan” য়ে।

৩০ লাখের নিহত হওয়াটি যে বিকট মিথ্যা -তা নিয়ে মুজিবভক্তগণ কখনোই জনগণকে চিন্তা-ভাবনার সুযোগ দেয়নি। জনগণ চিন্তাভাবনা করলেই মিথ্যা মারা পড়ে। তাই তারা চালিয়েছে দেশজুড়ে বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস। তাদের কথা, তারা যা বলবে বা লিখবে ,অন্যদেরও তাই বলতে ও লিখতে হবে। মিথ্যুকদের এটাই স্বভাব। মুজিবের প্রচারিত মিথ্যাগুলো আজ বেঁচে আছে বলেই আওয়ামী লীগ আজও বেঁচে আছে। এবং এ মিথ্যা বিলুপ্ত হলে বিলুপ্ত হবে আ্‌ওয়ামী লীগও। মুর্তিপুজারীগণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেলে সবাইকে মুর্তিপূজারী বানাতে চায়। সেটিই দেখা ভারতে যাচ্ছে  হিন্দুত্ববাদী বিজিপি’র ক্ষমতায় আসার পর। তাই যেসব আদিবাসীগণ মুর্তিপুজারী নয়, মোদি সরকার তাদেরকে হিন্দুত্বের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। তেমনি মিথ্যুকেরা ক্ষমতা হাতে পেলে সবাইকে মিথ্যুকে পরিণত করে। এবং সেটিই ঘটেছে বাংলাদেশে।

বিগত ৫১ বছরে বাংলাদেশে কত বার আদমশুমারী বা সেনসাস হলো। কোন একটি আদম শুমারীতে “একাত্তরের পরিবারে কেউ পাকিস্তান আর্মী, বিহারী, রাজাকার বা মুক্তিবাহিনীর হাতে মারা গেছে কিনা” -এরূপ একটি প্রশ্ন রাখলেই একাত্তরের নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা এবং কারা কাদের হাতে মারা গেছে -সে তথ্যটি বহু আগেই জানা যেত। এটি কি জটিল রকেট সায়েনন্স? কিন্তু যাদের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতি মিথ্যা নিয়ে –সত্য আবিস্কার নিয়ে তাদের কি আগ্রহ থাকে? তারা তো চায় মিথ্যাকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখতে। সত্য আবিস্কারের মাঝে তাই তারা নিজেদের রাজনীতির বিপদ দেখে। একাত্তরের নিহতদের নিয়ে সুষ্ঠ জরিপ হলে মিথ্যা মারা যাবে – এ ভয়েই মিথ্যার মূল প্রবক্তা শেখ মুজিব থেকে শুরু করে কোন মিথ্যাজীবী আওয়ামী বাকশালীই একাত্তরের প্রকৃত নিহতদের সংখ্যাটি বের করায় কোন রূপ আগ্রহ দেখায়নি। জরিপেও উদ্যোগ নেয়নি। বরং আগ্রহ রাজাকারের তালিকা বের করা নিয়ে। কারণ এখানেও রয়েছে রাজনীতির কাঁচামাল।  

 

সনাতন লড়াই: মিথ্যার সৈনিক ও সত্যের সৈনিক

যুগ যুগ ধরে মানব জাতির ইতিহাসে একটিই মূল যুদ্ধ। সেটি হলো মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের যুদ্ধ। এটিই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সনাতন লড়াই। নবী-রাসূলগণ তো আমৃত্যু সে যুদ্ধই লড়ে গেছেন। সে লড়াই তথা জিহাদ নিয়ে বাঁচতে হয় প্রতিটি ঈমানদারকে। নামায-রোযার কাজ কাউকে নামাযী ও রোযাদার বানানো নয়, বরং এই লাগাতর জিহাদে সৈনিক বানানো। বাংলাদেশে মিথ্যার সুনামী দেখে নিশ্চিত বলা যায়, বাংলাদেশে সত্যের পক্ষে সৈনিক নেই। বরং অধিকাংশ মানুষ লড়ছে মিথ্যার সৈনিক রূপে। সেটি যেমন রাজনীতির অঙ্গণে, তেমনি নির্বাচনে, বুদ্ধিবৃত্তিতে ও শিক্ষা-সংস্কৃতির অঙ্গণে। তাই মিথ্যুকেরা বাংলাদেশে প্রবল ভাবে বিজয়ী। মিথ্যার পক্ষ মানেই দুর্বৃত্তির পক্ষ। কারণ মিথ্যা ও দুর্বৃত্তি একত্রে চলে। এবং বাংলাদেশে দুর্বৃত্তির পক্ষের সৈনিক শুধু বাকশালী ফ্যাসিস্টগণ নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক প্রফেসর, আদালতের বিচারপতি, সেনা কর্মকর্তা, প্রশাসনের সচিব, বুদ্ধিজীবী ও কবি সাহিত্যিক। তাই এদেশে রাতে জনগণের ভোট ডাকাতি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত প্রফেসর, বহু বুদ্ধিজীবী, বহু কবি-সাহিত্যিক, বহু মিডিয়া কর্মী দল বেঁধে বিবৃত্তি দেয় এবং আদালতের বহু বিচারকগণ রায় দেয়, দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে। তথা কথিত এসব শিক্ষত জনেরা যে কীরূপ মিথ্যার সুনামীতে ভেসে চলে -এই হলো তার নমুনা।

তাই যারা দেশে ভারতসেবী ফ্যাসিস্ট শক্তির বিনাশ চায় এবং নির্মূল করতে চায় মিথ্যার সুনামীর, তাদের সামনে দেশ জুড়ে সত্যের সুনামী আনা ছাড়া বিকল্প পথ নাই। একমাত্র সত্যের সুনামীই চলমান মিথ্যার সুনামীকে নির্মূল করতে পারে। এবং একমাত্র তখনই মিথ্যুকগণ আবর্জনার স্তুপে নিক্ষিপ্ত হতে পারে। নইলে আওয়ামী বাকশালীদের হাতে মিথ্যা গেলানোর কাজ শেষ হবে না। সত্য তখন রাজনীতির মাঠ, স্কুল-কলেজের ক্লাসরুম, পত্রিকার পাতা এবং চায়ের স্টলসহ সর্বত্র মারা যেতে থাকবে। অথচ সত্যের পক্ষে এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াই হলো পবিত্র জিহাদ। আমৃত্যু এ জিহাদ করেছেন নবী-রাসূলগণ। মুসলিমদের উপর ফরজ শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত নয়। বরং সত্যের পক্ষে ও মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রতি মুহুর্তে ও প্রতি ক্ষেত্রে সাক্ষী দেয়া। নামাযে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত দাঁড়ালেই চলে, কিন্তু সত্যের পক্ষে এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কাজটি সর্বসময়ের। একাজে কোন কাজা নাই। একাজটি না করলে শয়তান বিজয়ী হয় এবং পরাজিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন।

অথচ কি বিস্ময়! ১৬ কোটি মুসলিমের বাংলাদেশে মিথ্যা নির্মূলের কোন জিহাদ নাই। বরং যা আছে তা হলো মিথ্যার সুনামীকে দিন দিন তীব্রতর করার কাজ। দেশবাসীর রাজস্বের অর্থ ব্যয় হচ্ছে মিথ্যার এ সয়লাবকে তীব্রতর কাজে। এভাবে গুরুতর পাপের ভাগী হচ্ছে জনগণ। শয়তানী শক্তির হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হওয়ার ভয়ানক ক্ষতি তো এজন্যই। তাই সবচেয়ে বড় ইবাদত হলো, দেশকে শয়তানী শক্তির দখলদারী থেকে মুক্ত করা। কোন ঈমানদার কি একাজে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে? এ নিষ্ক্রিয়তার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে কি জবাব দিত হবে না? মিথ্যার রাজনীতি মানেই তো দুর্বৃত্তির ও অপরাধের রাজনীতি। মুজিব সে রাজনীতিকেই প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেছে। এটাই মুজিবের লিগ্যাসি। এবং শেখ হাসিনা ও তার সহচরগণ মিথ্যার তথা দুর্বৃত্তির সে রাজনীতিকেই দিন দিন তীব্রতর করছে। কোন ঈমানদার কি এ রাজনীতির সাথে সংযুক্ত হতে পারে? সম্পৃক্ত হলে সে কি আর মুসলিম থাকে? ঈমানদার হওয়ার শর্তই হলো, সে সব সময় সত্যের পক্ষ নিবে এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। ঈমানদারকে তো এভাবেই প্রতি মুহুর্তে ঈমানের পরীক্ষা দিতে হয়।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীগণ হলো মিথ্যা ও দুর্বৃত্তির সৈনিক। তাদের কাজ, মিথ্যাকে সর্বস্তরে প্রতিরক্ষা দেয়া এবং সত্যের প্রচারে বাধা দেয়া।  প্রচলিত মিথ্যাগুলি নিয়ে জনগণকে ভাবতে না দেয়াই তাদের নীতি। কারণ তারা জানে, জনগণ ভাবতে শুরু করলে মুজিবের প্রচারিত মিথ্যাগুলি কর্পুরের ন্যায় হাওয়ায় উড়ে যাবে। তখন মারা পড়বে তাদের রাজনীতির বাণিজ্য। ভাববার সুযোগ না দিয়ে সে মিথ্যাগুলোকে বরং প্রতিদিন গিলানো হচ্ছে –যেমন অবুঝ শিশুদের গেলানো হয় তাদের নিত্যদিনের খাবার। মিথ্যা গিলানোর কাজে ব্যবহৃত করছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও মিডিয়া। যারা মুজিবের রটানো মিথ্যাকে মিথ্যা বলে -তাদেরকে এরা রাষ্ট্রদ্রোহী বলে। যেন শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এক। এখন বুঝানো হচ্ছে শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্র এক। তাই  মুজিব ও হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বললে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা হয়। অথচ চালক ও গাড়ী যেমন এক নয়, তেমনি এক নয় রাষ্ট্র ও নেতা। চালক ভূল করলে তাকে জেলে তোলা হয়, গাড়ীকে নয়। তেমনি সরকারের অপরাধ করলে তার শাস্তি হয়। তাই সরকারের বিরোধীতার রাষ্ট্রের বিরোধীতা নয়। অথচ এ সহজ সত্যকে স্বৈরাচারী সরকার বুঝতে দিতে রাজী নয়। কারণ এ সত্য বিষয়টি মেনে নিলে মিথ্যাজীবী সরকারের গদি বাঁচে না।

 

প্রতিষ্ঠা পেয়েছে দুর্বৃত্ত পূজা

স্বৈরাচার কোথাও একাকী আসে না। জনগণের অধিকার হননের সাথে সাথে স্বৈরাচারী শাসক মাত্রই প্রতিষ্ঠা দেয় দুর্বৃত্তপূজা। স্বৈরাচার মানেই হলো অতি নিকৃষ্ট মাপের রাষ্ট্র জুড়ে দুর্বৃত্তি। তাই দুর্বৃত্ত পূজা বাড়লে বাড়ে স্বৈরাচারী শাসকের নিজের পূজাও। অপর দিকে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি জনগণের আগ্রহ বাড়লে দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারীগণ তখন বাজার পায় না। বরং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু হয়ে যায়। যেমন জিহাদ হয়েছে নবীজী (সা:)’র আমলে আরবের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। এজন্যই স্বৈরাচারী শাসক মাত্রই প্রতি দেশে ও প্রতি যুগে ইসলামের দুশমন। এরাই যুগে যুগে নবী-রাসূলদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। পবিত্র কুর’আনে স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তির আদি রূপ তুলে ধরা করা হয়েছে ফিরাউনের কাহিনী বর্ণনার মধ্য দিয়ে। তার আমলে দুর্বৃত্তপূজা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, দুর্বৃত্ত শিরোমনি ফিরাউন নিজেকে পূজনীয় খোদা রূপে প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছিল। দুর্বৃত্তপূজারী জনগণ তখন ফিরাউনের বাহিনীতে যোগ দিয়ে হযরত মূসা (আ:)’র ন্যায় এক মহান নবী ও তাঁর গোত্রের লোকদের হত্যায় ধাওয়া করেছিল। মহান আল্লাহতায়ালা ফিরাউন ও তার অনুসারী দুর্বৃত্তপূজারীদের সাগরে ডুবিয়ে হত্যা করেছিলেন। 

বাংলাদেশের স্বৈরাচারী শাসকচক্রের হাতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে একই রূপ দুর্বৃত্তপূজা। পূজার অর্থ কোন মুর্তি বা ছবির সামনে গিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুল দিয়ে, মাথা নুইয়ে, পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জাননো। হিন্দুরা সে পূঁজার কাজটিই করে থাকে মন্দির, মন্ডপ বা নিজ ঘরে স্থাপিত মুর্তি ও ছবির সামনে দাঁড়িয়ে। ইসলামে সে পূজার রীতি নাই। ইসলামে সেটি হারাম। অথচ বাংলাদেশের বুকে সে হারাম হিন্দুত্বের প্রতিষ্ঠা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পূজার সে রীতি চালু করেছে শুধু আওয়ামী লীগের অফিসগুলোতে নয়, বরং স্কুল-কলেজেও।  মহান আল্লাহতায়ালা ও ইসলামের বিরুদ্ধে এই হলো আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ও জঘণ্য অপরাধ। এমনকি ভারতেও মুসলিম সন্তানদের এরূপ পূজায় বাধ্য করা হয় না যা হচ্ছে বাংলাদেশে। এবং সে পূজনীয় ব্যক্তিটি হলো শেখ মুজিব। আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক উকিলের কাছে শেখ মুজিব গণ্য হয়েছিল ফিরাউন রূপে। তাই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট মুজিব নিহত হওয়াতে তিনি বলেছিলেন, “ফিরাউনের পতন হয়েছে।” ফিরাউনকে যেমন মিশরে পূজণীয় করা হয়েছিল তেমনি পূজণীয় করা হয়েছে মুজিবকেও। মুজিবকে পূজনীয় করতে তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বলেও প্রচার করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজের গেটে মুজিবের মুর্তি বা ছবি বসিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্য করা হচ্ছে সে মুর্তি বা ছবির গা ছুয়ে বা পা ছুয়ে ভিতরে প্রবেশে। অনেকে মুজিবের ছবিতে ও তার মুর্তির পায়ে ফুল দিয়ে সন্মান জানায়। ইসলামে এটি বিশুদ্ধ শিরক।

শিরক হলো সবচেয়ে বড় গুনাহ। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার অন্য সব গুনাহ মাফ করতে পারেন, কিন্তু মাফ করেন না শিরকের এই কবিরা গুনাহ। অথচ শেখ হাসিনার সরকার শিরকের ন্যায় কবিরা গুনাহতে বাংলাদেশের নাগরিকদের বাধ্য করছে। এভাবে পূজার সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়ে জনগণকে হিন্দুধর্মে দীক্ষা দেয়া হচ্ছে । কাফের ব্রিটিশগণ তাদের ১৯০ বছরের শাসনেও এরূপ কবিরা গুনাহতে মুসলিমদের বাধ্য করেনি। তাই শেখ হাসিনা ও দল শুধু ভোটের উপরই ডাকাতি করছে না, বরং প্রতি দিন ও প্রতি ক্ষণ ডাকাতি করছে মুসলিমদের ঈমানের উপর। এভাবে এ দুর্বৃত্তগণ দিন দিন নিঃস্ব করছে বাঙালী মুসলিমের ঈমানের ভান্ডার। ফলে ১৬ কোটি মুসলিমের দেশে অসম্ভব হচ্ছে ইসলাম বিজয়ী করা ও আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তার শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজ। অথচ নামায-রোযার ন্যায় প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ হলো আদালতে শরিয়তী আইনের বিচার নিয়ে বাঁচা। যারা সেটি করে না, পবিত্র কুর’আন তাদেরকে কাফের, জালেম ও ফাসেক বলেছে। -(সুরা মায়েদা আয়াত ৪৪,৪৫ ও ৪৭)

 

হিন্দুত্বের প্রচারে শেখ হাসিনা

কোন দৃষ্টিমান, জ্ঞানবান ও বিবেকমান মানুষের কাছেই এখন এটি গোপন থাকার বিষয় নয়, শেখ হাসিনা ও তার অনুসারীদের এজেন্ডা হলো জনগণকে শুধু ইসলাম থেকেই দূরে সরানো নয়, বরং হিন্দুত্বে দীক্ষা দেয়া। ভারত সরকারও হাসিনার সরকার থেকে সেটিই চায়। ভারতের ইচ্ছা পূরণে হাসিনাও সে কাজে ময়দানে নেমেছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশ, এ বছর জন্মষ্টমী উপলক্ষে শেখ হাসিনা জনগণকে নসিহত করেছে, শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ অনুসরণের। কথা হলো, শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ তো মুর্তি পূজার। সেটি তো শতভাগ হিন্দুত্বের। তার আদর্শ গ্রহণ করলে একজন মুসলিম নারী বা পুরুষ মুসলিম থাকে কি করে? এরূপ হিন্দুত্বের নসিহত একজন হিন্দুকে হিন্দু ব্রাহ্মণ দিতে পারে। একজন মুসলিম কি কোন মুসলিমকে দিতে পারে? সেরূপ হিন্দুত্বের নসিহত দিলে কেউ কি মুসলিম থাকে? মুসলিম তো বাধ্য মহান নবীজী (সা:)’র আদর্শ অনুসরণে এবং হারাম হলো শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ। শেখ হাসিনা যে কতটা হিন্দুত্বের প্রচারে নেমেছে –এ হলো তার প্রমাণ।

পূজা ছাড়া হিন্দুত্ব বাঁচে না। তাই যেখানেই হিন্দুত্ব সেখানেই পূজা। তেমনি মুজিব পূজা ছাড়া বাঁচে না আওয়ামী লীগও। হিন্দুরা যেমন পূজার গণ্ডি বাড়াতে বাড়াতে সাপ-শকুন-গরুর ন্যায় ইতর জীবকেও ভগবানের আসনে বসিয়েছে। হিন্দুত্ববাদী বাঙালীগণও তেমনি মুজিবের ন্যায় একজন মিথ্যচারী অপরাধীকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতার আসনে বসিয়েছে। অথচ মুজিবের অপরাধের তালিকাটিতো অতি বিশাল। গণতন্ত্র হত্যা, বিচার বহির্ভুত মানব হত্যা, মানবিক অধিকার হত্যা, নৃশংস স্বৈরাচার, প্রচণ্ড ইসলামবৈরীতা এবং ভারতের নগ্ন দালালী – এসবই তো মুজিবের অপরাধ। মুজিবের পূজার অর্থ তো দুর্বৃত্ত ফিরাউনের পূজার ন্যায় নিরেট দুর্বৃত্ত পূজা। একই রূপ পূজাসুলভ মানসিকতার কারণে শেখ হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাত এবং গুম, খুন,ফাঁসি, সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতির এক নৃশংস দুর্বৃত্তকে অনেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে। একাজ যে শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারগণ করে -তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রফেসর, আদালতের বহু বিচারপতি, প্রশাসনের বহু সচিব, সেনাবাহিনীর বহু জেনারেল, বহু সাংবাদিক এবং বহু বুদ্ধিজীবীরাও তার মত ভোট ডাকাতকে মাননীয় বলে। দুর্বৃত্তপূজার এ জঘন্য পাপাচার বাঙালী মুসলিমদের জীবনে যে কতটা গভীর ভাবে ঢুকেছে -এ হলো তারই নমুনা।

অথচ কোন সভ্য ও ভদ্র মানুষই কোন চোরডাকাত বা ভোটডাকাতকে মাননীয় বলে না। এমন দুর্বৃত্তদেরকে ঘৃণা করাই সভ্য ও ভদ্র সমাজের রীতি। এটিই হলো সভ্য সংস্কৃতি। যার মধ্যে মানবতা বেঁচে আছে এবং শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে -সে কি কখনো কোন দুর্বৃত্তকে সন্মান করতে পারে? সাপ-শকুন-গরুকে ভগবানের আসনে বসানো ভয়ানক অপরাধ। জাহান্নামে যাওয়ার জন্য কাউকে খুন বা ধর্ষণ করার হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, এরূপ পশুপূজাই যথেষ্ঠ। তখন নামায-রোযা কোন কাজ দেয় না। তেমন ভয়ানক অপরাধ এবং বেঈমানী হলো কোন দুর্বৃত্ত ও অপরাধীকে সন্মান করা। ইসলাম তাদের নির্মূলের হুকুম দেয়। তাই তাদের সন্মান করা মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের সাথে গাদ্দারী। অথচ সে গাদ্দারীর প্রবল প্রকাশ ঘটছে বাংলাদেশের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে।

 

হাবু ডাবু খাবে কি দুর্বৃত্তির জোয়ারে?

ইসলাম যে শান্তির ধর্ম -সেটি বেশী বেশী মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ায় ও বেশী বেশী নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত পালনে প্রমাণিত হয় না। বাংলাদেশে কি সেগুলি কম হচ্ছে? তাতে কি শান্তি আসছে? শান্তির আবাস নির্মাণে যে ফরজটি অবশ্যই পালন করতে হয় সেটি হলো, “নেহী আনিল মুনকার” তথা দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং “আমারু বিল মারুফ” তথা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। দুর্বৃত্তদের নির্মূল এবং ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা দেয়া ইসলামে ফরজ। নির্মূলের সে কাজই মুসলিমের রাজনীতি। নির্মূলের সে কাজকে ইসলাম পবিত্র জিহাদের মর্যাদা দিয়েছে। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম সে ফরজ পালনের মধ্য দিয়েই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মাণ করতে পেরেছিলেন।

কিন্তু বাংলাদেশীরা দারুন ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে এ ফরজ পালনে। ফলে ব্যর্থ হচ্ছে দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুনীতির বিজয় আনতে। ইসলাম যে শান্তির ধর্ম -সেটি প্রমাণেও তাই ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ এ কাজে ব্যর্থ হলে বাঁচতে হয় দুর্বৃত্তির জোয়ারে হাবুডাবু খেয়ে। বাংলাদেশ তো তারই প্রমাণ। বাংলাদেশীরা যেন জেনে বুঝে নীরবে দুর্বৃত্তপূজা ও দুর্নীতিতে হাবু ডাবু খাওয়ার পথই বেছে নিয়েছে। সেটি বুঝা যায়, দেশে দুর্বৃত্ত নির্মূলের জিহাদ না দেখে। এ পথ যে নিশ্চিত জাহান্নামের পথ সে হুশই বা ক’জনের? ১৯/১১/২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *