শিক্ষাঙ্গণে ইসলামের এজেন্ডা ও শয়তানের এজেন্ডা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on July 28, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
শিক্ষা যখন শয়তানের অস্ত্র
শয়তান ও তার অনুসারীদের মূল কর্মক্ষেত্রগুলি পতিতাপল্লী, ক্লাব-ক্যাসিনো, নাচের ঘর, নাট্যশালা, মদ্যশালা, পূজামন্ডপ ও মন্দির নয়। সেটি হলো শিক্ষাঙ্গণ। এখানেই শয়তান ও তার অনুসারীগণ তাদের সর্ব প্রকার সামর্থ্য বিনিয়োগ করে মানুষকে গণহারে ইসলাম থেকে দূরে সরাতে, শয়তানী দলের সৈনিক করতে এবং জাহান্নামের যাত্রী বানাতে। সেটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে শয়তানী শক্তির বিনিয়োগ যেমন বিশাল, তেমনি বিশাল হলো সাফল্যটি। বাংলাদেশে আজ যারা ইসলামের শত্রু শক্তি তাদের অধিকাংশের জন্ম পতিতাপল্লীতে বা হিন্দুর ঘরে হয়নি, তারা তো বেড়ে উঠেছে এই শিক্ষাঙ্গণ থেকেই। দেশে দেশে মানব ইতিহাসের অতি ভয়ংকর অপরাধী, যুদ্ধাপরাধী ও দ্বীনের শত্রুগণ গড়ে উঠেছে বিদ্যাশিক্ষার কেন্দ্রগুলি থেকেই। নাস্তিকতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ, বর্ণবাদ, কম্যুনিজম, উপনিবেশবাদ, ও সাম্রাজ্যবাদের ন্যায় মানবধ্বংসী মতবাদের অনুসারীগণও বন-জঙ্গলে গড়ে উঠেনি। তারা যেমন নিজেরা গড়ে উঠেছে, তেমনি অন্যদের সেসব মতবাদে দীক্ষা দিয়েছে শিক্ষাঙ্গণের ক্লাসরুমে। একটি দেশের ধ্বংসের বীজ শিক্ষালয়েই রোপিত হয়। এজন্যই যারা কোন জাতির নীতি-নৈতিকতা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করতে চায় তারা তাদের কাজের শুরুটি কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের অঙ্গণে করে না। সেটি করে এই শিক্ষাঙ্গণে। তেমন একটি স্ট্রাটেজীকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্ট, ন্যাশলিস্ট, কম্যুনিস্ট ও নাস্তিকগণ সর্বপ্রথম দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে দখলে নেয়। শিক্ষার সে অধিকৃত অঙ্গণ থেকে ইসলামের এই চিহ্নিত শত্রুগণ দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, সেনা বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও বুদ্ধিবৃত্তিতে বিপুল সংখ্যক সৈনিক পায়। ফলে সমগ্র দেশ তাদের হাতেই অধিকৃত। দেশ জুড়ে ইসলামের আজ যেরূপ পরাজয় এবং গুম, খুন, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও নৃশংস স্বৈরাচারের যেরূপ সয়লাব -তার কারণ তো ইসলামের শত্রুপক্ষের ফ্যাসিবাদী অধিকৃতি।
শিক্ষানীতিতেই প্রকাশ পায় একটি দেশের শাসক চক্রের রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আদর্শিক এজেন্ডা। একটি দেশ ভবিষ্যতে কোথায় পৌঁছবে এবং সে দেশের জনগণই বা কীরূপ চেতনা ও চরিত্র নিয়ে গড়ে তুলবে -সে বিষয়টি নির্ভূল ভাবে ধরা পড়ে দেশের শিক্ষানীতিতে। কি পড়ানো হয় এবং কি শেখানো হয় -তা থেকে। মুসলিম বিশ্ব আজ যেরূপ বিভক্ত মানচিত্র, ভাতৃঘাতি যু্দ্ধ, বিদেশী শক্তির অধিকৃতি, নৃশংস গণহত্যা, শহরের পর শহর ধ্বংস ও উদ্বাস্তুকরণ প্রক্রিয়ার শিকার -তার শুরুটি আজ হয়নি। পরাজয়, অপমান ও ধ্বংসের পথে মুসলিম উম্মাহর যাত্রাটির শুরু বহু আগে থেকেই। শুরুটি হয়েছে শিক্ষাখাতে। এবং সেটিই বেগবান হয়েছে ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার পর। কাফিরদের হাতে অধিকৃতির ভয়ানক কুফলটি শুধু রাজনৈতিক গোলামী ও অর্থনৈতিক শোষন নয়। বরং সবচেয়ে বড় নাশকতাটি হলো, এটি অসম্ভব করে মুসলিম সন্তানদের মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা। গাড়ির দু’টি চাকার ন্যায় শাসক শক্তির রাজনৈতিক এজেন্ডা ও শিক্ষানীতি সব সময়ই একত্রে এবং একই লক্ষ্যে চলে। ফলে যখনই কোন দেশ ঔপনিবেশিক শত্রুশক্তির হাতে অধিকৃত হয়, তখন সে দেশের শিক্ষানীতি কখনোই দখলদার শক্তির আদর্শিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক নাশকতামূলক স্ট্রাটেজী থেকে মুক্ত থাকে না। তখন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মূল লক্ষ্য হয়, দখলদার বিদেশী শাসনের প্রতি অনুগত সেবাদাস সৃষ্টি। দখলদার শক্তি নিজেদের সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসনিক দফতরে লোকবল পায় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে। বিদ্যাশিক্ষা এভাবে ছাত্রদের স্বাধীনতাবিরোধী, ধর্মবিরোধী, নৈতিকতাবিরোধী অপরাধী এবং জাহান্নামের উপযোগী করে গড়ে তোলে। ব্রিটিশদের হাতে প্রণীত ভারতের শিক্ষানীতি তো সেটিই করেছে।
ব্রিটিশ প্রণীত শিক্ষানীতির নাশকতা
ভারতের বুকে সাম্রাজ্যবাদী শাসন বাঁচাতে যে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক দখলদার ব্রিটিশের প্রশাসন, সেনাবাহিনী, গুপ্তচর বাহিনী ও পুলিশ বিভাগে কাজ করেছে এবং তাদের পক্ষে দু’টি বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে -তারা তো সৃষ্টি হয়েছে ব্রিটিশদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। পশু-পাখীকে পোষ মানাতে সময় লাগে, কিন্তু মানুষকে পোষ মানাতে সময় লাগে না। পশু প্রভুর জন্য প্রাণ দেয়না। কিন্তু পোষমানা মানুষটি শ্রম দেয়, মেধা দেয় এবং প্রয়োজনে রক্তও দেয়। এখানেই শিক্ষার কেরামতি। এজন্যই শিক্ষাঙ্গণ দখলে নেয়ায় ইসলামের শত্রুপক্ষের এতো আগ্রহ। সেজন্য মুসলিম দেশে এমন কি খৃষ্টান মিশনারীগণও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। শিক্ষাঙ্গণেই নির্মিত হয় ছাত্রদের চেতনা, চরিত্র ও মূল্যবোধ। তাই দেশ শত্রুর দখলে গেলে শিক্ষাঙ্গণ পরিণত হয় শত্রুর সেবক তৈরীর কারখানায়। সেটিরই বাস্তব প্রমাণ হলো ভারতে ব্রিটিশ প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিতগণ শুধু ভারতেই ব্রিটিশ শাসনকে ১৯০ বছর বাঁচিয়ে রাখেনি, ব্রিটিশ শাসনের সম্প্রসারণে এসব ভারতীয়গণ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় গিয়ে যুদ্ধ করেছে এবং বিপুল সংখ্যায় প্রাণও দিয়েছে। সে বাহিনী যোগ দিয়েছেন জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী এবং কাজী নজরুল ইসলামও।
ভারতীয়দের মাঝে ধর্মীয় জ্ঞান, ধর্মপ্রেম, দেশপ্রেম ও নৈতিকতার জন্ম দেয়া ব্রিটিশদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ছিল না। বরং তাই গুরুত্ব পেয়েছে যা জরুরি ছিল ব্রিটিশের দক্ষ গোলাম হওয়ার জন্য। ফলে ছাত্রদের মাঝে দুর্নীতি, হত্যা ও গণহত্যার ন্যায় গুরুতর অপরাধ কর্ম থেকে বাঁচার নৈতিক সামর্থ্য সৃষ্টি হয়নি। ব্রিটিশ শাসন শেষ হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামবিরোধী রাজনীতি, শরিয়ত-বিরোধী আইন-কানুন এবং সংস্কৃতি তো বেঁচে আছে এই মানসিক গোলামদের কারণেই। ফলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্যগণ বিদেশী ব্রিটিশ শাসন বাঁচাতে নিরীহ জনগণের উপর গুলী চালাতো, তারাই এখন দেশী স্বৈরশাসকদের গদি বাঁচাতে গণহত্যা চালায়। ২০১৩ সালের মতিঝিলের শাপলা চত্বরের গণহত্যা তারই প্রমাণ। আদালতে যে শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা না দিলে মুসলিমের মুসলিমত্ব বাঁচে না, সে শরিয়তের পালন অসম্ভব করে রেখেছে এই মানসিক গোলামগণ। তৎকালে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের স্থাপিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা না নেয়ার পিছনে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মূল যুক্তিটি ছিল, ব্রিটিশদের প্রণীত শিক্ষানীতির ঈমান-ধ্বংসী, নৈতিকতা-ধ্বংসী ও দেশপ্রেম-ধ্বংসী নাশকতা থেকে জনগণকে বাঁচানো। যে শিক্ষা সিরাতাল মুস্তাকীমের সন্ধান দেয় না এবং বাঁচায় না জাহান্নামের আগুন থেকে -সে শিক্ষায় কি কোন ঈমানদারের আগ্রহ থাকতে পারে? ব্রিটিশপ্রণীত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা নেয়া থেকে যারা সেদিন নিজেদের বাঁচিয়েছে, আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা বেঁচেছে ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী শাসন বাঁচাতে শ্রম, মেধা ও রক্ত দেয়ার ন্যায় হারাম কাজ থেকে।
আজও যারা মুসলিম দেশগুলিতে শরিয়ত, হুদুদ, শুরা, জিহাদ ও খেলাফার ন্যায় ইসলামের মৌল বিষয়গুলির প্রতিষ্ঠা রুখতে যুদ্ধ শুরু করেছে এবং কাফিরদের সাথে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন গড়েছে তারাও কোন কাফির দেশের পূজামন্ডপ, মন্দির, গীর্জা বা সেনানিবাসে পয়দা হয়নি। পতিতাপল্লী বা জঙ্গলেও বেড়ে উঠেনি। বরং বিপুল সংখ্যায় সৃষ্টি হয়েছে মুসলিম দেশের সেক্যুলার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। ইসলামবিরোধী শক্তির হাতে দেশ অধিকৃত হওয়ার ভয়ানক বিপদটি তো এখানেই। তখন দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনের ন্যায় শিক্ষানীতিও কাজ করে, আখেরাতের ভাবনা, কুর’আনের দর্শন ও মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমানী দায়বদ্ধতা থেকে ছাত্রদের দূরে সরাতে। ছাত্রগণ তখন কাফির , নাস্তিক, গো-পূজারী, মুর্তিপূজারী বা অন্য কোন ধর্মে দীক্ষিত না হলেও তাদের পক্ষে কঠিন হয় প্রকৃত মুসলিম রূপে গড়ে উঠা। কারণ, কীরূপ চেতনা, চরিত্র ও মিশন নিয়ে ছাত্ররা বেড়ে উঠবে -সে বিষয়টি তাদের নিজেদের ও তাদের ধর্মপ্রাণ পিতা-মাতার হাতে থাকে না। সেটি নির্ধারণ করে এবং ছাত্র চেতনায় প্রতিষ্ঠা দেয় শিক্ষানীতির প্রণেতাগণ। এবং শিক্ষাজনীত চেতনায় দূষণের কারণেই ছাত্র জীবনে এবং কর্ম জীবনে তাদের জন্য সহজ হয় ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামাটিও। মুসলিম দেশগুলিতে ইসলাম যেভাবে পরাজিত এবং বিজয়ীর বেশে যেভাবে ইসলামের শত্রুগণ -তার কারণ তো নিজ দেশের শিক্ষানীতিতে গড়ে উঠা ইসলামের শত্রুগণ।
মুসলিমদের বিপদ তাই স্রেফ বিদেশী কাফির শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ায় নয়। একই রূপ ভয়ানক নাশকতা ইসলামবিরোধী স্বদেশী-স্বৈরাচারী শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়াতেও। তখন শিক্ষাঙ্গণ পরিণত হয় সরকারের আয়ু বাড়াতে প্রয়োজনীয় লোকবল সরবরাহের ইন্ডাস্ট্রিতে। জনগণের পার্থিব বা পরকালীন কল্যাণ সে শিক্ষানীতিতে গুরুত্ব পায় না। স্বৈরাচারী শাসকদের স্বভাব হলো, তারা শুধু দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণই দখলে নেয়না, দখলে নেয় জনগণের চেতনার ভূমিও। রাজনৈতিক ময়দান দখলে রাখতে কাজ করে দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনিক ক্যাডার বাহিনী। তাদের চেতনার ভূমিতে দখল জমানোর কাজটি করে দেশের শিক্ষানীতি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকগণ তখন দুর্বৃত্ত শাসকের আজ্ঞাবহ সৈনিকে পরিণত হয়। এরা ভোটডাকাতীর সর্দারনীকেও শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় বলে কুর্ণিশ করে –যেমনটি ২০১৮ সালের ভোটডাকাতির পর দেখা গেছে। রাজনীতি, প্রশাসন ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণ এভাবেই স্বৈরশাসকের হাতে অধিকৃত হয়। দুর্বৃত্তদের শাসন এভাবেই দীর্ঘায়ু পায়। সে অধিকৃত অঙ্গণে পবিত্র কুর’আনের তথা ওহীর জ্ঞানের কোন স্থান থাকে না। ইসলামী ধ্যান-ধারণাকে সরিয়ে সেখানে পরিকল্পিত ভাবে প্লাবন আনা হয় কুফরি ধ্যান-ধারনার। ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী কাফির শক্তি ও মুসলিম নামধারি স্বদেশী স্বৈরাচারী শক্তির মাঝে নীতিগত, আদর্শগত ও কৌশলগত পার্থক্য সামান্যই। কাফিরদের ন্যায় মুসলিম নামধারি স্বৈরাচারী শাসকদের যুদ্ধটিও শরিয়ত, হুদুদ, শুরা ও খেলাফার ন্যায় আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত মৌল বিধানগুলোর বিরুদ্ধে। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসকগণ যে লক্ষ্যে মুসলিম দেশে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল সে অভিন্ন লক্ষ্যটি তো ইসলামের দেশী দুশমনদেরও। এরই ফল হলো, মুসলিম ভূমি থেকে সাম্রাজ্যবাদী শাসন বিলুপ্ত হলেও বহাল তবিয়তে এখনো বেঁচে আছে তাদের শিক্ষানীতি এবং সে সাথে ইসলাম বিরোধী রাজনীতি, আইন-আদালত ও প্রশাসন। ফলে বেঁচে আছে তাদের রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যও।
ইসলামের রাষ্ট্রীয় নীতি ও শিক্ষানীতি
ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় নীতি ও শিক্ষানীতি কাজ করে অভিন্ন লক্ষ্যে। সে লক্ষ্যটি হলো, সুবিচার ও ন্যায়-নীতির প্রতিষ্ঠা এবং অবিচার ও দুর্বৃত্তির নির্মূল। শিক্ষানীতির কাজ হলো রাষ্ট্রীয় নীতিকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজে প্রশিক্ষিত লোকবল জোগানো। রাষ্ট্র একমাত্র তখনই জনজীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। রাজনীতি ও শিক্ষা –উভয়ই ইসলামে উচ্চতর ইবাদত এবং একটি অপরটির পরিপূরক। এ দুটির একটি ব্যর্থ হলে অপরটি ব্যর্থ হতে বাধ্য। রাজনীতি হলো জিহাদ এবং শিক্ষাদান হলো অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। নবীজী (সা:)’র যুগে ইসলামের শুরুটি হয়েছিল শিক্ষাদানের মধ্য দিয়েই। সুস্থ্য ও কল্যাণমূলক রাজনীতির পরিচয় হলো, সে রাজনীতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় শিক্ষার উন্নয়ন ও সংস্কার। শিক্ষা ও রাজনীতির খাত ব্যর্থ হলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, প্রাসাদ, কলকারখানা গড়ে দেশে উন্নতি আনা যায় না। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা থাকলেই দেশের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আইন-আদালত পায় পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য মানুষের জোগান। এমন রাষ্ট্রে অন্যায়ের নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠায় সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সমগ্র রাষ্ট্রীয় লোকবল এক অটুট বাহিনীতে পরিণত হয়। তখন শিক্ষাব্যবস্থার মূল কাজ হয়, ছাত্রদের নেক আমলের নিয়েতে ও সামর্থ্যে সমৃদ্ধি আনা। লক্ষ্য হয়, জান্নাতের যোগ্য রূপে তাদেরকে গড়ে তোলা।
দেশে শিক্ষা বিপ্লব শুরু হলে শুরু হয় নৈতিক, চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক বিপ্লব। তখন বিরামহীন প্রতিযোগিতা শুরু হয় উত্তম মানব রূপে বেড়ে উঠায় ও মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় হওয়ায়। দেশ জুড়ে তখন প্লাবন শুরু হয় নেক কর্মের। ফলে নৈতিক বিপ্লবের সাথে আসে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। ইসলামের গৌরব যুগে তো সেটি ঘটেছিল। এ কারণেই সে যুগে বিপুল সংখ্যায় গড়ে উঠেছিল সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। ফলে দ্রুত বিস্তার ঘটেছিল ইসলামের এবং অতি অল্প সময়েই গড়ে উঠেছিল সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। আইনের শাসন, সামাজিক শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা এতোটাই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল যে রাষ্ট্রপ্রধান এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ দেহরক্ষী ছাড়াই দিনে বা রাতে একাকী রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারতেন। দারিদ্র্য এতোটাই নির্মূল হয়েছিল যে মক্কা-মদিনার ন্যায় শহরগুলিতে যাকাতের অর্থ নেয়ার লোক পাওয়া যেত না। বিশ্বের আর কোথাও কি কোন কালে এমনটি দেখা গেছে?
কেন ব্যর্থ হয় সভ্য মানুষ গড়ার শিল্প?
হি্ংস্র পশু কবলিত জঙ্গলে কখনোই নিরাপদ মানব-বসতি গড়ার প্রকল্প সফল হয় না। তেমনি সফল হয়না, স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অধীনে সভ্য মানব ও উন্নত সভ্যতা নির্মাণের প্রকল্প। সভ্য মানুষ গড়ার শিক্ষানীতিকে তারা অচল করে দেয়। ডাকাত সর্দার চায় জনপদে বেশী বেশী ডাকাত উৎপাদিত হোক। তাতে বিশাল ডাকাতদল গড়া সহজ হয়। তেমন নীতি স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদেরও। এ জন্যই বাংলাদেশের ন্যায় স্বৈরাচার অধিকৃত দেশে সভ্য মানব গড়ার শিক্ষানীতিকে প্রতিষ্ঠা দেয়া অসম্ভব। বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যবহৃত হচ্ছে দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কাজে। বাংলাদেশের বুকে গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি ও নানারূপ দুর্বৃত্তির যে জোয়ার –সেটির কারণ তো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীগণ। তাই সভ্যতর সমাজ নির্মাণে প্রথমে নির্মূল করতে হয় দর্বৃত্তদের শাসন। আর শাসন ক্ষমতা থেকে দুর্বৃত্তদের নির্মূলের কাজটি লাগাতর যুদ্ধের পথ।
শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণে শুধু অপমান ও দুর্ভোগই বাড়ে, তাতে শান্তি মেলে না। শান্তি চাইলে যুদ্ধ ছাড়া সেটি অসম্ভব। সে জন্য অশান্তির নায়কদের নির্মূল জরুরি। নইলে নিজ সন্তানদের সভ্য ও ঈমানদার রূপে গড়ে তোলাও অসম্ভব হয়। মুসলিম জীবনে জিহাদ এজন্যই অনিবার্য। অন্যায়ের নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ইসলামে এ জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। এটিই ইসলামের মূল মিশন। পবিত্র কুর’আনে সে মিশনের ঘোষণাটি এসেছে এভাবে, “আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচণ্ড রণশক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ উপকার। সেটি এজন্য যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর ও মহা পরাক্রমশালী।” (সুরা হাদিদ, আয়াত ২৫)। উপরুক্ত আয়াতে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, রাসূল প্রেরণ ও কুর’আন নাযিলের উদ্দেশ্য শুধু এ নয়, মুসলিমগণ স্রেফ নিজে কুর’আন তেলাওয়াত করবে, নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করবে ও রুহানী পরিশুদ্ধি অর্জন করবে। বরং মূল বিষয়টি হলো, সকল প্রকার অন্যায়ের নির্মূল এবং ইনসাফের প্রতিষ্ঠা। পৃথিবীপৃষ্ঠে সভ্য সভ্যতা নির্মিত হয় এবং মানব সন্তানেরা জান্নাতের উপযোগী হয় তো -এ পথেই।
তাছাড়া আরেক বাস্তবতা হলো, মুসলিমগণ যুদ্ধ না চাইলেও শয়তান ও তার অনুসারীগণ সব সময়ই যুদ্ধ চায়। কারণ, শয়তানের এজেন্ডাই হলো ইসলামের নির্মূল, মুসলিম ভূমির উপর অধিকৃতি ও মুসলিমদের গোলাম বানানো। ইসলাম পৃথিবীর কোথাও প্রতিষ্ঠা পাক –সেটি তারা চায়না। তাই ইসলাম শুধু শান্তির কথাই বলে না, দুর্বৃত্ত শাসকদের নির্মূলে বিরামহীন যুদ্ধের কথাও বলে। এরূপ অবিরাম জিহাদ ছাড়া মুসলিমের বাঁচে না। পূর্ণ ইসলাম পালনের স্বাধীনতাও মেলে না। তাছাড়া স্বৈরাচারী শাসক মাত্রই গণবিরোধী ও অবৈধ। এ শাসন জুলুম, নির্যাতন ও অবিচারের প্রতীক। তাই এ অবৈধ শাসনকে বৈধতা দেয়াই প্রচণ্ড বেঈমানী। তাতে গাদ্দারী হয় মহান আল্লাহতায়ালার মিশনের সাথে। এরূপ স্বৈরশাসন বাঁচিয়ে কখনোই দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা দেয়া যায়না। শয়তানী শক্তির অবিরাম হামলার মুখে প্রতিরক্ষার এই জিহাদ জান ও মালের বিপুল কুরবানী চায়। চায়, মেধা ও শ্রমের বিনিয়োগ। এটিই ইসলামের কুর’আনী মিশন। উপরুক্ত আয়াতে এ কথাও বলা হয়েছে, মহান আল্লাহতায়ালা দেখতে চান, সে মিশনকে সফল করতে কারা নিজেদের জান ও মালের বিনিয়োগ করে। সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের নির্মূলের কাজটি কখনো নিরস্ত্র ইবাদতে সম্ভব নয়; এ লক্ষ্যে সশস্ত্র ইবাদত অপরিহার্য। সে সশস্ত্র ইবাদতটি হলো জিহাদ। সে জিহাদে মুসলিমগণ যাতে পর্যাপ্ত রণশক্তি পায় সে জন্য তিনি লৌহ নাযিল করেছেন –যেমনটি বর্ণিত হয়েছে সুরা হাদীদের উপরুক্ত আয়াতে।
জিহাদে ব্যর্থতার মূলে শিক্ষায় ব্যর্থতা
শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদে অস্ত্রের চেয়েও অধিক জরুরি হলো যোদ্ধার জিহাদী চেতনার। অস্ত্র নিজে যুদ্ধ করে না; যুদ্ধ করে অস্ত্র বহনকারী ব্যক্তিটি। তাই যোদ্ধার জিহাদী চেতনা না থাকলে অস্ত্রের বিশাল ভান্ডার কাজ দেয়না। শিক্ষায় ব্যর্থতা থেকে জন্ম নেয় জিহাদে ব্যর্থতা। শিক্ষাঙ্গণে ইসলামী জ্ঞানের বিস্তার যত গভীর ও অধিক হয়, জিহাদের ময়দান ততই লড়াকু মুজাহিদ পায়। সিরাজুদ্দৌলার ভান্ডারে গোলাবারুদ, কামান ও লোক-লস্কর কম ছিল না। কিন্তু পলাশীতে তিনি যুদ্ধে হেরেছেন তাঁর বাহিনীতে জিহাদী চেতনাসম্পন্ন মুজাহিদ না থাকায়। একই কারণে মুসলিমগণ অতীতে বহু যুদ্ধে হেরেছে। জিহাদী চেতনা সৃষ্টির সে কাজটি করে কুর’আনী জ্ঞান। তাই দেশে কুর’আনী জ্ঞানদান না থাকলে জিহাদ যেমন বিলুপ্ত হয়, তেমনি বিলুপ্ত হয় ইসলামী রাষ্ট্র। তখন যা অনিবার্য হয় তা হলো শত্রু শক্তির নৃশংস অধিকৃতি। ১৯০ বছর ব্রিটিশের গোলামী করে বাঙালি মুসলিমগণ সেটি প্রমাণ করেছে।
তাই মুসলিম ভূমিতে শয়তানী শক্তির এজেন্ডা দেশের কৃষি ক্ষেতে আগুন দেয়া নয়, কলকারখানা ও রাস্তাঘাট ধ্বংস করাও নয়; বরং সেটি হলো মুসলিম ভূমিতে কুর’আনী জ্ঞানের চর্চা হতে না দেয়া। বাংলাদেশে তাই শত শত আলেমকে কারাবন্দী করা হয়েছে। পাঠ্য বই থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে কুর’আন-হাদীস থেকে জ্ঞানদান। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে জিহাদ বিষয়ক বই। ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে বাংলাদেশের ইসলামবিরোধী পক্ষটির সফলতাটি বিশাল। ফলে নবীজী (সা:)’র ইসলাম –যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তী আইনের বিচার, কুর’আন শিক্ষা, জিহাদ এবং জাতীয়তাবাদমুক্ত প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব, তা বাঙালি মুসলিমদের মাঝে বেঁচে নাই। সেটি তাদের কাছে বিদেশী বা অপরিচিত মনে হয়। বাঙালি মুসলিম জীবনে এটি এক বিশাল বিচ্যুতি। তাদের রাজনীতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতিতে হিন্দুত্ববাদ, অর্থনীতিতে সূদ এবং সংস্কৃতিতে পতিতাপল্লী, মদ্যশালা, জুয়ার পরিচর্যা। তারা ছিটকে পড়েছে পবিত্র কুর’আনের ইসলাম থেকে তথা সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে। শয়তানী শক্তির এই অধিকৃতি তাই শুধু রাজনৈতিক নয়। সেটি আদর্শিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক। এ অধিকৃত থেকে বাঁচতে হলে শুধু বিশাল সেনা বাহিনী গড়লে চলবে না। উন্নত মানের অস্ত্র কিনলেও বিজয় জুটবে না। কৃষির বিস্তার, রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কলকারখানা প্রতিষ্ঠা দিলেও স্বাধীনতা বাঁচবে না। বরং সে লক্ষ্যে প্রতিটি শিক্ষালয়ে ও প্রতিটি গৃহে পবিত্র কুর’আন বুঝার ব্যবস্থা করতে হবে। একমাত্র তখনই ঘরে ঘরে লড়াকু মুজাহিদ গড়ে উঠবে। এবং একমাত্র তখনই স্বাধীনতা ও ইজ্জত বাঁচবে।
যে ভয়ানক পাপটি অশিক্ষা ও কুশিক্ষায়
নামাজ-রোজা পরিহার করাটি ইসলামে কবিরা গুনাহ। এ গুনাহ ব্যক্তিকে নিশ্চিত জাহান্নামে পৌঁছায়। কিন্তু সে গুনাহর বাইরেও ভয়ানক গুনাহর কাণ্ডটি ঘটে অশিক্ষা ও কুশিক্ষার কারণে। নামাজী ও রোজাদার হয়েও অশিক্ষিত ও কুশিক্ষিত ব্যক্তিটি তখন ইসলামের শত্রুতে পরিণত হয়। তার পক্ষে সত্যিকার ঈমানদার হওয়াই তখন অসম্ভব হয়। বাংলাদেশে যারা ইসলামবিরোধী ফ্যাসিস্ট দুর্বৃত্তদের ভোট দিয়ে, শ্রম দিয়ে, অর্থ দিয়ে ও বুদ্ধি দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের মাঝে নামাজী ও রোজাদারের সংখ্যা কি কম? কিন্তু তাদের সে নামাজ-রোজা জাতীয়তাবাদ ও ফ্যাসিবাদের ন্যায় হারাম রাজনীতি থেকে বাঁচাতে পারিনি। ওজু ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য ওজুর ৪টি ফরজ ভেঙ্গে যাওয়া জরুরি নয়, একটি ফরজ নষ্ট হলেই ওজু ভেঙ্গে যায়। তেমনি মুসলিম হওয়ার জন্য। মুসলিম হওয়ার জন্য শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত শুদ্ধ হলে চলে না, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, বিচার-আচার, যুদ্ধ-বিগ্রহসহ জীবনের প্রতিটি কর্ম ও আচরণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী হতে হয়। কোন একটি ক্ষেত্রে অবাধ্যতা বা বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটলে সেটি ব্যক্তিকে কাফেরে পরিণত করে। সে অবাধ্যতা থেকে বাঁচার জন্যই প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরজ হলো কুর’আন-হাদীসের জ্ঞান। অশিক্ষা ও কুশিক্ষার বড় নাশকতা হলো, এটি অসম্ভব করে ইসলামের বিধানগুলি জানা। ফলে অসম্ভব করে ঈমানদার হওয়া।
সিরাতাল মুস্তাকীমে চলায় আলোকিত মন ও আলোকিত পথ লাগে। ঈমানদার ব্যক্তি তার মনের আলো ও পথের আলো –উভ্য়ই পায় পবিত্র কুর’আন থেকে। সুরা হাদীদের ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “এবং যারা ঈমান আনলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর, তারাই হলো সিদ্দিক ও শহীদ; তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের জন্য রয়েছে নূর তথা আলো ও প্রতিদান।” এই কুর’আনী নূর তথা আলোর কারণেই ঈমানদারগণ তাদের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও যুদ্ধবিগ্রহে পথ হারায় না। তাদের জন্য সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা তাই সহজ হয়ে যায়। সুরা আল ইমরানের ১৩৮ নম্বর আয়াতে পবিত্র কুর’আনকে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের পক্ষ থেকে সমগ্র মানব জাতির জন্য বয়ান এবং মুত্তাকীনদের জন্য রোডম্যাপ ও মাওয়েজাতুল হাসানা তথা উত্তম ওয়াজ বলে বর্ণনা করেছেন। সর্বজ্ঞানী মহাপ্রভুর সে বয়ান, সে রোডম্যাপ এবং সে ওয়াজটি বুঝতে হলে তাই পবিত্র কুর’আন বুঝতে হয়। যে ব্যক্তি পবিত্র কুর’আনের কথাগুলো বুঝলোই না, সে তা থেকে ফায়দা পাবে কি করে? মানুষের মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা যত বিশালই হোক তা কি মহান আল্লাহতায়ালার ওয়াজ বা নসিহতের সমকক্ষ হতে পারে? সে নসিহতের মধ্যেই থাকে হিদায়েত তথা জান্নাতের পথ। সে যে হিদায়েত পেল, সেই মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামতটি পেল। পবিত্র কুর’আনে সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে: “হে মানবকুল! তোমাদের কাছে এসে গেছে তোমাদের প্রতিপালকের উপদেশ বাণী এবং এসে গেছে তোমাদের হৃদয়ের সমুদয় রোগের নিরাময় বিধি (আত্মিক, নৈতিক, মানসিক ও ঈমানী রোগের চিকিৎসা); এবং মু’মিনদের জন্য এসেছে হিদায়েত ও রহমত। (অতএব) বল, এগুলিতেই হলো আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া। সুতরাং (সে করুণার প্রাপ্তিতে) তারা আনন্দ প্রকাশ করুক, যা কিছু তারা সঞ্চয় করে তা থেকে এটি উত্তম।” -(সুরা ইউনুস, আয়াত ৫৭-৫৮)।
অনৈসলামিক সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধটি শুধু এই নয়, তারা শরিয়ত, হুদুদ, জিহাদ, মুসলিম ঐক্য ও খেলাফার প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করে। বরং তার চেয়েও ভয়ানক অপরাধটি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান থেকে মানব সন্তানদের বঞ্চিত করে। সে অপরাধটি ঘটায় শিক্ষাঙ্গণে। সেটি কুর’আন শিক্ষাকে অসম্ভব করে। তাই গুরুতর অপরাধ শুধু কাউকে বিষ পানে হত্যা করা নয়, বরং ভয়ানক অপরাধটি কুশিক্ষা দেয়ায়। বিষের কারণে কিছু লোকে দৈহিক মৃত্যু ঘটে; কিন্তু কুশিক্ষার কারণে বিশাল গণহত্যা ঘটে দেশবাসীর বিবেক ও ঈমানের ভূমিতে। দেহের মৃত্যু জাহান্নামে নেয় না, কিন্তু বিবেকের মৃত্যু নিশ্চিত জাহান্নামে নেয়। দেশের অনৈসলামিক সরকার কুশিক্ষার মাধ্যমে চেতনায় বিষ পান করানোর কাজটিই গণহারে করে। এটিই হলো পৃথিবী পৃষ্ঠে সবচেয়ে ভয়ানক অপরাধ। এরূপ অপরাধ আযাব নামিয়ে আনে। বনি ইসরাইলের আলেমগণ তাওরাতের শিক্ষাকে জনগণের দৃষ্টি থেকে আড়াল করে আযাব ডেকে এনেছিল। মুসলিম দেশের সরকারগুলিও তেমনি আযাব ডেকে আনছে পবিত্র কুর’আনের শিক্ষাকে আড়াল করে। সে কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের বহুলক্ষ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে পবিত্র কুর’আন শিক্ষা দেয়ার জন্য কোন স্থান নেই। শিক্ষার নামে এগুলি গভীরতর করছে অশিক্ষা ও কুশিক্ষার অন্ধকার; এবং সেটি হচ্ছে জনগণের রাজস্বের অর্থে। সে গভীর অন্ধকারে অসম্ভব হচ্ছে সিরাতাল মুস্তাকীম খুঁজে পাওয়া। এভাবে জনগণের জন্য অসম্ভব করছে জান্নাতে পৌঁছা। মানবকুলের এতবড় ক্ষতি কোন হিংস্র পশু বা রোগ-জীবাণু করে না।
সিরাতাল মুস্তাকীম খুঁজে পাওয়া ও সে পথে টিকে থাকার সামর্থ্য বাড়াতেই কুর’আনের জ্ঞানার্জন প্রতিটি নরনারীর উপর ফরজ। তাছাড়া কুর’আনী জ্ঞানের গুরুত্ব আরেকটি কারণেও। সেটি হলো, ঈমানদারকে বাঁচতে হয় আমৃত্যু পরীক্ষার মধ্যে জীবন কাটিয়ে। জালেমের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধটিও মূলত সে পরীক্ষারই অংশ। নইলে কে জালেমের পক্ষ নিল এবং কে তার বিরোধীতা করলো –সে বিষয়টি জনগণের সামনে গোপন থেকে যায়। পরীক্ষা হয় কে কতটা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় ও অন্যায়ের নির্মূলে নিজ মেধা, নিজ শ্রম ও নিজ রক্তের বিনিয়োগ করলো –সেটিরও। সে বিনিয়োগে ব্যক্তির সামর্থ্য ও অঙ্গীকার বাড়ায় পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান। ব্যক্তির আমলের ওজন বাড়ে বস্তুত সে জ্ঞানের ভিত্তিতেই। অতি পরিতাপের বিষয় হলো, এই কুর’আনকে বাদ দিয়েই বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের শিক্ষানীতি।
যে শিক্ষানীতি মহান আল্লাহতায়ালার
মহান আল্লাহতায়ালা শুধু ইবাদতের বিধানই দেননি, দিয়েছেন শিক্ষার বিধানও। শিক্ষার বিধানই ব্যক্তিকে ইবাদতের সামর্থ্য দেয়। দেয় মানবিক গুণে ও সত্যিকার ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার সামর্থ্য। মানব জীবনের সকল ব্যর্থতার জন্ম শিক্ষার ব্যর্থতা থেকে। এ জীবনের মূল মিশন হলো, মিথ্যার নির্মূলে এবং সত্যের প্রতিষ্ঠায় সকল দৈহিক, আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যের বিনিয়োগ। সে বিনিয়োগই ব্যক্তিকে জান্নাতে নেয়। এবং এ মিশনে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ নিশ্চিত জাহান্নামে পৌঁছা। মু’মিনের জীবনে প্রতিটি মুহুর্ত এজন্যই জিহাদময়। ইসলামের পক্ষে লড়ায়ের সামর্থ্যটি কখনোই অংক শাস্ত্র, চিকিৎসা বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান বা অন্য কোন বিজ্ঞানের জ্ঞানে বেড়ে উঠে না। বাড়ে না জায়নামাজে, বনে-জঙ্গলে বা সুফি খানকায় একাকী ধ্যানে বসাতেও। সেটি বাড়ে মহান আল্লাহতায়ালার মিশনকে নিজ জীবনের মিশন রূপে গ্রহণ করে বাঁচার বাসনা থেকে। সে পবিত্র বাসনাটি জাগিয়ে তোলে ওহীর জ্ঞান। সে জ্ঞান যেমন চিত্তে পরিশুদ্ধি আনে, তেমনি বিবেকে জাগরণ আনে। অজ্ঞ, অশিক্ষিত ও কুশিক্ষিত ব্যক্তি কখনোই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হয়না, একাত্ম করার কাজটি করে ওহীর জ্ঞান। সে জ্ঞানের টেক্সট বুক হলো পবিত্র কুর’আন। যারা এই কিতাবের জ্ঞান পায়, তারাই সিরাতাল মুস্তাকীম পায়। এ কিতাব থেকে পাঠ গ্রহণ এজন্যই প্রতিটি নরনারীর উপর বাধ্যতামূলক। সে লক্ষ্য পূরণে কুর’আন শিক্ষাকে তাই শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য হতে হয়; একমাত্র তখনই ছাত্রগণ পায় আল্লাহতায়ালার মিশনের সাথে একাত্ম হওয়ার সামর্থ্য। এরূপ উচ্চতর মানব গড়ার কাজটিই রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। শিক্ষাদানের সে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যেমন কাফিরদের হাতে অধিকৃত দেশগুলিতে সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় ইসলামে অঙ্গীকারহীন সেক্যুলারিস্টদের হাতে অধিকৃত দেশগুলিতেও। অথচ সে কাজটি শিক্ষাঙ্গণে না হলে ছাত্রগণ তখন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পায় এবং বাঁচতে অভ্যস্ত হয় শয়তানের মিশনের সাথে একাত্ম হয়ে। একারণেই ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে অধিকৃত দেশে নামাজী ও রোজাদারের সংখ্যা কোটি কোটি হলেও অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় সৈনিক পাওয়া যায়না। বরং ঘটে উল্টোটি। তখন বিদেশী কাফির শক্তিও নিজ পক্ষে মুসলিম দেশের অভ্যন্তরে লক্ষ লক্ষ ক্যাডার পায়। যেমন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকশক্তি পেয়েছে ভারতে এবং ভারত পাচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, সৌদি আরব, আমিরাত, মিশর, লিবিয়ার ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে। মিথ্যা ও দুর্বৃত্তির নির্মূল না করার বিপদটি বিশাল। সেগুলি দিন দিন বাড়ে এবং অসত্য, অন্যায় ও দুর্বৃত্তির সুনামী আনে। তেমন এক কারণেই মুসলিম দেশ হয়েও বাংলাদেশ বিশ্বরেকর্ড গড়েছে দুর্নীতিতে।
শিক্ষানীতি ছাড়া রাষ্ট্রীয় নীতি সফল হয়না। সেটি যেমন শয়তানী শক্তির বেলায়, তেমনি ইসলামের বেলায়। তাই শিক্ষানীতি যেমন শয়তানের রয়েছে, তেমনি রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার। শয়তানের শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য: মানবকে জান্নাতে কাজে নেয়ার মহান আল্লাহতায়ালার প্রজেক্টকে ব্যর্থ করা। শয়তানী শক্তিবর্গ এভাবেই তাদের নিজ শাসনকে বাঁচিয়ে রাখে এবং অব্যাহত রাখে নানারূপ ঈমানধ্বংসী নাশকতা। এ লক্ষ্য পূরণে শক্তিবর্গ যেমন হাজার হাজার মন্দির ও মুর্তি গড়ে, তেমনি স্কুল-কলেজও গড়ে। এজন্যই শয়তানী শক্তিকে রাজনীতি ও শিক্ষানীতির অঙ্গণে বহাল রেখে আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা বাস্তবায়ন অসম্ভব। এ কারণেই নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ তাদের মিশনকে মসজিদ গড়ায় ও নামাজ-রোজায় সীমিত রাখেননি। দেশের সকল অঙ্গণ থেকে দুর্বৃত্তদের অধিকৃতিও নির্মূল করেছেন। সে লক্ষ্য পূরণে যুদ্ধের পর যুদ্ধ লড়েছেন এবং তাঁর সাহাবাগণ একাজে জান ও মালের বিশাল কুরবানীও পেশ করেছেন।
মুসলিম জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব যে কতটা অপরিসীম সেটি বুঝতে হলে মহান আল্লাহতায়ালা কাছে মুসলিমের মর্যাদা এবং তাঁর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়ভারটি বুঝা জরুরি। মুসলিম জনগোষ্ঠির মর্যাদাটি সমগ্র মানবসৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ উম্মাহর। এখানে দায়ভারটি মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার। তাঁর খলিফা রূপে মু’মিনের জীবনে মূল মিশনটি হলো, অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। লক্ষ্য, নানারূপ ভ্রান্ত ধর্ম ও ভ্রান্ত মতাদর্শের উপর আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয় –যা পবিত্র কুর’আনে বার বার বলা হয়েছে। এ কাজটি না হলে কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে যত বিপ্লবই আসুক -তা দিয়ে মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো যায় না। অপর দিকে ব্যক্তির মর্যাদা ও তাঁর উপর দায়ভার যত বেশী, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনও তত অধিক। অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত ও অযোগ্য জনবল দিয়ে কি মহান আল্লাহতায়ালা খলিফার দায়িত্ব পালন সম্ভব? স্বৈরাচারী রাজার খলিফাকেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রচুর প্রশিক্ষণ দিয়ে ময়দান নামানো হয়। নইলে তার শাসন বাঁচে না। মু’মিনের জীবনে শিক্ষার সে প্রয়োজন মেটাতেই নবীজী (সা:)’র শিক্ষক রূপে পাঠানো হয়েছে হযরত জিবরাইল (আ:)’র ন্যায় শ্রেষ্ঠ ফেরেশতাকে। নবীজী (সা:) নিজে শিক্ষক হয়েছেন তাঁর মহান সাহাবাদের। এবং তাদের পাঠদানে টেক্সট বুক রূপে ব্যবহৃত হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব আল-কুর’আন।
মুসলিম উম্মাহর আজকের বিপর্যয়ের মূল কারণ, আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’য়ালার সে শিক্ষানীতি মুসলিম দেশগুলিতে বেঁচে নাই। শিক্ষকের যে আসনে বসেছিলেন খোদ নবীজী (সা:), সে আসনটি আজ দখলে নিয়েছে ওহীর জ্ঞানে অজ্ঞ ও ইসলামে অঙ্গীকারহীন সেক্যুলার ব্যক্তিবর্গ। দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তারাই শিক্ষক। বিপদের আরো কারণ, টেক্সট বুক রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে কাফির, ফাসেক, জালেম ও সেক্যুলারিস্টদের রচিত বই। শিক্ষায় এতো শূণ্যতা, অপূর্ণতা ও ভ্রষ্টতা নিয়ে কি মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার দায়িত্ব পালন করা যায়? শিক্ষার এ ভয়ানক ব্যর্থতার কারণে অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত ও আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মানুষের দ্বারা ভরে গেছে মুসলিম উম্মাহর রাজনীতি, প্রশাসন, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিসহ প্রতিটি অঙ্গণ। মুসলিমদের নিজ ঘর এবং নিজ দেশে এভাবে বেড়েছে ইসলামের শত্রুদের অধিকৃতি। ফলে অন্যদের আর কি পথ দেখাবে, তারা নিজেরা ইসলামের পরাজয় বাড়িয়েছে খোদ মুসলিম ভূমিতে।
লক্ষ্য: জাহান্নামে নেয়া
সিরাতাল মুস্তাকীমের পথটি স্রেফ নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়া-দরুদের নয়; জিহাদ এ পথের একটি গুরুর্তপূর্ণ এবং অপরিহার্য অংশ। যে পথে জিহাদ নাই, বুঝতে হবে সে পথটি আর যাই হোক সিরাতাল মুস্তাকীম নয়। তাই জান্নাত পৌঁছতে হলে জিহাদ পরিহারের সুযোগ নাই। তাই জানতে হয় জিহাদ বিষয়েও। অথচ জিহাদমুক্ত শিক্ষা নীতিই বাংলাদেশের শিক্ষা নীতি। লক্ষ্য এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে পরিকল্পিত ভাবে দূরে রাখা। এ শিক্ষানীতির প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ আমল থেকেই। একমাত্র শয়তানই এমন শিক্ষানীতিতে খুশী হতে পারে। কারণ, লক্ষ্য এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের জাহান্নামে নেয়া।
মু’মিনকে প্রতিক্ষণ বাঁচতে হয় অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার দায়বদ্ধতা নিয়ে। এজন্যই তো ঈমানদারগণ মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা। জান্নাত তো তারাই পাবে যারা এ অর্পিত দায়ভার পালনে নিষ্ঠাবান। এটিই সফলতার পথ। সাহাবাগণ তো সে পথেই বেঁচেছেন। সে সফলকামদের নিয়ে পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের বয়ানটি হলো: “তোমাদের মধ্যে অবশ্যই একটি দল থাকবে যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে এবং নির্মূল করবে অন্যায়কে। এবং তারাই হলো সফলকাম।” -(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০৪)। যারা এ জীবনে সফল হতে চায় -উপরুক্ত আয়াতটি তাদের জন্য অতি শিক্ষণীয়। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের একজন ছাত্র বা ছাত্রী তাঁর ২০টি বছরের শিক্ষা জীবনে একটি বারের জন্য পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত এরূপ নির্দেশ একটি বারের জন্য শুনবার ও বুঝবার সুযোগ পায় না। প্রশ্ন হলো, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহতায়ালার এ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটি বুঝলোই না, উক্ত নির্দেশ সে পালন করবে কীরূপে? অথচ এ নির্দেশ পালনের সাথে জড়িত তাঁর অনন্ত-অসীম কালের পরকালীন জীবনের সফলতা।
নিরস্ত্র চোর ধরতেও বহু পথ দৌড়াতে হয়। সে কাজটি দোয়াদরুদে হয় না। আর সশস্ত্র দুর্বৃত্ত শাসকগণ তো বাঘ-ভালুকের চেয়েও হিংস্র ও নৃশংস। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নৃশংস হিংস্রতায় দেশটির ৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ৬০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। এবং মাটির সাথে মিশে গেছে দেশটির বহু শহর। ধ্বংসের কাজে যুদ্ধাপরাধী বাশার আল-আসাদ রাশিয়া এবং ইরানকে ডেকে এনেছে। দেশটির ইতিহাসে কোন কালেই এতো বীভৎস নৃশংসতা ঘটেনি। একই রূপ নৃশংসতার কারণে মায়ানমারের দশ লাখের বেশী রোহিঙ্গা মুসলিম আজ গৃহহীন। ভস্মিভূত হয়েছে তাদের ঘরবাড়ি। এখন বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ভিটায় ক্যান্টনমেন্ট বানানোর কাজ চলছে। নিছক বক্তৃতা, বিবৃতি এবং ওয়াজ-নসিহতে কি এরূপ হিংস্র দুর্বৃত্তদের মন গলে? অতীতে নবী-রাসূলদের নসিহতও এরূপ দুর্বৃত্তদের উপর কোনরূপ প্রভাব ফেলেনি। তাদের নির্মূলে আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত পথটি হলো সশস্ত্র জিহাদের। এরূপ মানবরূপী হিংস্র হায়েনাদের বিরুদ্ধে খালি হাতে দাঁড়ানো নবীজী (সা:)’র সূন্নত নয়। সেটি নিছক নির্বু্দ্ধিতা। এরূপ হিংস্র মনুষ্যপশুদের সামনে দাঁড়ানোর ঝুঁকিটি বিশাল। তাই যে স্বার্থপর ব্যক্তিটি শুধু নিজের, নিজ পরিবার ও নিজ গোত্র বা দলের স্বার্থে বাঁচে সে কখনোই অন্যকে বাঁচাতে নিজের শ্রম, মেধা, অর্থ ও জানের বিনিয়োগ করে না। অথচ এরূপ নৃশংস দুর্বৃত্তদের নির্মূলের কাজটি না হলে সভ্য সমাজ নির্মাণের কাজটি ব্যর্থ হয়। এবং ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহতায়ালার “আ’মিরু বিল মারুফ ও নেহী আনিল মুনকার”য়ের এজেন্ডা। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা এ কাজকে জিহাদ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছেন। এবং সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি রেখেছেন এ পথে জান-মাল-মেধা-শ্রমের কুরবানীর। সে পুরস্কারটি হলো অনন্ত-অসীম কালের জন্য জান্নাতপ্রাপ্তি। তাদের মৃত বলাকে তিনি হারাম করেছেন। কিন্তু যারা ইসলামের বদলে ভাষা, জাতি, গোত্র, বর্ণ, দল বা কোন সেক্যুলার আদর্শের নামে অর্থ ও প্রাণ দেয়, তারা কি সেটি আশা করতে পারে? অথচ আল্লাহতায়ালার এ বয়ানকে ছাত্রদের নজর থেকে গোপন করাই হলো বাংলাদেশের শিক্ষানীতি।
ইসলামের শত্রুপক্ষের দখলদারী থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করার গুরুত্বটি অতি অপরিসীম। সে কাজটি না হলে কুর’আনের শিক্ষাদান বাঁচে না। প্রকৃত ইসলামও বাঁচে না। তখন বাধাগ্রস্ত করা হয় সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। তাতে ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহতায়ালার মিশন। তখন যা বাঁচে তা হলো কুশিক্ষা। তখন চলে শিক্ষার নামে দূষিত ও বিষাক্ত আদর্শের বিষ পান। তাতে মৃত্যু ঘটে ঈমানের। তখন শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের শাসকচক্রের কাজ হয় জাহান্নামের পথে পথচলাটি সহজ করা। অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকও করা হয় –যেমনটি দেখা গেছে কম্যুনিস্ট ও ফ্যাসিবাদী দেশগুলোতে। এটিই হলো অনৈসলামিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাই রাষ্ট্রের উপর থেকে এই অপরাধীদের দখলদারী বিলুপ্তির কাজটি নিছক রাজনীতি, সমাজসেবা বা মানবসেবা নয়, এটিই হলো ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। বিশ্ববাসীর জন্য এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জনহিতকর কাজ। সর্বশ্রেষ্ঠ এই ইবাদতের শুরুটি ইসলামী শিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে। ওহীর জ্ঞান তখন সে অপরাধীদের নির্মূলে প্রশিক্ষিত সৈনিক জুগায়। বেসরকারি পর্যায়ে কিছু স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা নির্মাণ করে রাষ্ট্র-পরিচালিত কুশিক্ষার সুনামী রোধ করা অসম্ভব। এজন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গণে চাই পরিশুদ্ধি। এবং পরিশুদ্ধির শুরুটি হতে হয় শিক্ষাঙ্গণ থেকে। এবং ছড়িয়ে দিতে হয় প্রতিটি গৃহে ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে। অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা যেহেতু ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ মিশন, জিহাদ হলো সে মিশন নিয়ে বাঁচার একমাত্র পথ। তাই যে পথে জিহাদ নেই, সে পথে মহান আল্লাহতায়ালার মিশন নিয়ে বাঁচার অঙ্গীকারও নাই। সে পথটি বস্তুত পথভ্রষ্টদের পথ। এ পথই জাহান্নামে নেয়।
আলো ও আঁধার একত্রে চলে না। তেমনি একত্রে চলে না একই ভূমিতে স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের শাসন ও ইসলাম-পালন। লোকালয়ে হিংস্র পশু ঢুকলে সেটি বধ করা জন-জীবনে নিরাপত্তার জন্য জরুরি। তেমনি জরুরি হলো দেশের উপর দুর্বৃত্ত শাসন জেঁকে বসলে সে শাসনের নির্মূল। নইলে সে রাষ্ট্রে সভ্য ও নিরাপদ জীবন অসম্ভব হয়ে উঠে। এ অবস্থা থেকে মুক্তিকল্পে ইসলামের ফরজ বিধান হলো জিহাদ। মু’মিনের জীবনে জিহাদ তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। প্রতিটি দুর্বৃত্ত শাসকই বিষয়টি বুঝে। তাই স্বৈরাচারী সরকারের রাজনৈতিক ক্যাডার, প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী জিহাদের শত্রু। তারা নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ও দোয়াদরুদ নিষিদ্ধ করতে ময়দানে নামে না। তারা নিষিদ্ধ করে জিহাদ। ফলে নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের অনুমতি দিলেও জিহাদের কথা মুখে আনতে দিতে রাজি নয়। এজন্যই চায় জিহাদশূণ্য শিক্ষা নীতি, চায় জিহাদশূণ্য জুম্মার খোতবা ও জিহাদশূণ্য কুর’আনের তাফসির। ঔপনিবেশিক কাফির শক্তির হাতে যখনই কোন মুসলিম দেশ অধিকৃত হয়েছে, তখনই পবিত্র কুর’আনের জিহাদ বিষয়ক আয়াতগুলির উপর শিক্ষাদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে জিহাদবিরোধী সে পলিসিটি এখন আর শুধু দখলদার কাফিরদের নীতি নয়, সে নীতিটি এখন মুসলিম নামধারি সকল স্বৈরাচারী শাসকদেরও। তাই ব্রিটিশ আমলের ন্যায় হাসিনার আমলেও পুলিশ নামিয়ে বাংলাদেশে জুম্মার খোতবায় ও তাফসির মহফিলে জিহাদের বয়ান বন্ধ করা হয়েছে।
ষড়যন্ত্রটি জাহান্নামে নেয়ার
সিরাতাল মুস্তাকীমে চলার জন্য শুধু নিয়েতই যথেষ্ট নয়, সে জন্য চাই সে পথটি সঠিক ভাবে চেনা ও সে পথে চলার প্রয়োজনীয় সামর্থ্যও। বস্তুত সে সামর্থ্যটিই মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সামর্থ্য। সে সামর্থ্যটি এমনিতেই সৃষ্টি হয় না। শিক্ষানীতির মূল দায়িত্বটি হলো ছাত্রদের মাঝে সে সামর্থ্য সৃষ্টি করা। সে জন্যই শিক্ষাদান ও শিক্ষালাভ গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। সে সক্ষমতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হলে শিক্ষা নীতির সফলতা কোথায়? বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, চিকিৎস্যক বা অন্য কোন পেশাদার হওয়ার সামর্থ্যটি অনেক কাফির, ফাসেক ও মুনাফিকেরও থাকে। অথচ তাদের থাকে না সিরাতাল মুস্তাকীম চেনা ও সে পথে চলার সামর্থ্য। কারণ, সেটি জুটে একমাত্র পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানে। এ জন্যই মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রদত্ত সে জ্ঞানই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ দান। ফলে যে শিক্ষানীতিতে সে জ্ঞান বিতরণের ব্যবস্থা নাই -সেটি মুসলিম দেশের শিক্ষানীতি হয় কি করে? এমন শিক্ষানীতিতে বিজয় আসে শয়তানের। এবং পরাজিত হয় ইসলাম। বাংলাদেশে সেটিই হয়েছে।
তাছাড়া মুসলিম জীবনে কুর’আন শিক্ষা ফরজ তথা বাধ্যতামূলক হওয়ার আরেকটি গুরুতর কারণও রয়েছে। সিরাতাল মুস্তাকীমের পথে যে চলে তার জীবনে অনিবার্য কারণেই পদে পদে জিহাদ হাজির হয়। কারণ, জিহাদ সিরাতাল মুস্তাকীমেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই জিহাদের পথকে বাদ দিয়ে জান্নাতে পৌঁছার ভিন্ন রাস্তা নেই। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের ঘোষণাটি হলো: “তোমদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৪২)। তাই ঈমানদারের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো জিহাদ-পূর্ণ সিরাতাল মুস্তাকীমে চলার প্রস্তুতি। জিহাদে যার নিয়েত নাই এবং প্রস্তুতিও নাই –তার পক্ষে অসম্ভব হলো সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। মুনাফিকের জীবনে নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত থাকাটি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার জীবনে জিহাদে নামার প্রস্তুতি যেমন থাকে না, তেমনি ঈমানী বলও থাকে না। তাই ছিটকে পড়ে সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে। সেটি দেখা গেছে নবীজী (সা:)’র আমলেও। ওহুদ যুদ্ধ কালে যে তিন শত মুনাফিক জিহাদে যোগ দেয়া থেকে পিছু হটে, তাদেরকে দেখা গেছে নবীজী (সা:)’র পিছনে নামাজ পড়তে। জিহাদ এভাবে ফিল্টারের কাজ করে -যা ঈমানদারদের পৃথক করে মুনাফিকদের থেকে।
শিক্ষাদানের নামে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে ষড়যন্ত্রটি বিশাল। ষড়যন্ত্রটি ছাত্র-ছাত্রীদের জাহান্নামের দিকে ধাবিত করার। জাহান্নাম থেকে তো একমাত্র তারাই বাঁচে যার জিহাদে যোগ দেয়। সে জন্য জরুরি হলো জিহাদ বিষয়ক জ্ঞান। অথচ সে বিষয়ে জ্ঞানদান না করাই বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম দেশের শিক্ষানীতি। সরকারের পক্ষ থেকে জিহাদকে সন্ত্রাস বলা হয় এবং জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করা হয়। নবীজী সা: ও তাঁর সাহাবীদের জীবনে জিহাদ ছিল, অধিকাংশ সাহাবী সে জিহাদে শহীদ হয়েছেন। তবে কি তারা সন্ত্রাসী ছিলেন? তাছাড় আল্লাহর শরিয়তী বিধান যে দেশে বিলুপ্ত সে দেশে জিহাদ তো মুসলিম জীবনে অনিবার্য হয়ে উঠে। কারণ শরিয়তের বিলুপ্তি কি কোন মুসলিম মেনে নিতে পারে? মেনে নিলে কি তাঁর ঈমান থাকে? সে যে এতে কাফের, জালেম ও ফাসেক হয়ে যায় সে ঘোষণাটি এসেছে সুরা মায়েদা ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে। প্রশ্ন হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের রাজস্বের অর্থে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থায় যদি জিহাদের বিধান এবং জিহাদের ময়দানে পরীক্ষার বিষয়গুলিকে লুকানো হয় -তবে সাধারণ মানুষ জিহাদের পথে চলার প্রস্তুতি নিবে কীরূপে? শিক্ষানীতির কাজ তো জ্ঞানের সে সর্বশ্রেষ্ঠ ভান্ডারকে ছাত্রদের সামনে উম্মোচিত করা। সেটি গোপন করা নয়।
পবিত্র কুর’আনে বনি ইসরাইলের আলেমদের ভারবাহি গাধা বলা হয়েছে। এর কারণ, তাওরাতে বর্ণিত মহান আল্লাহতায়ালার অতি গুরুত্বপূর্ণ হুকুমগুলি নিজেরা যেমন পালন করেনি, তেমনি সেগুলি লুকিয়েছিল মানুষের দৃষ্টি থেকে। সে অভিন্ন কাজটিই করছে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা মুসলিম সন্তানদের থেকে লুকিয়ে রেখেছে পবিত্র কুর’আনের শিক্ষাকে। এরূপ হারাম শিক্ষাদানে তারা এতোটাই সফল যে, ছাত্রদের কাছে অপরিচিত রয়ে গেছে নবীজী (সা:)’র আমলের ইসলাম –যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, কুর’আন শিক্ষার নিবিড় আয়োজন, শরিয়তী বিচার, দুর্বৃত্তির নির্মূলে জিহাদ, জাতীয়তাবাদ-বর্ণবাদ-গোত্রবাদী চেতনার বিলুপ্তি এবং প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব। ইসলামী বিধানের বিলুপ্তির লক্ষ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস পূর্ণ করেছে ইসলামী চেতনা-বিনাশী সাহিত্য দিয়ে। স্থান পেয়েছে কাফির, ফাসিক ও পৌত্তলিকদের লিখনী। কিন্তু স্থান পায়নি পবিত্র কুর’আন ও হাদীস। অনুকরণীয় আদর্শ রূপে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মহম্মদ (সা:) ও তাঁর মহান সাহাবাগণও স্থান পাননি। সে স্থান দখলে নিয়েছে ইসলামী চেতনাশূন্য বা ইসলামবিরোধী ব্যক্তিবর্গ। একটি মুসলিম দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ছাত্রদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে কতটা শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে -এ হলো তারই নজির। এখানে ষড়যন্ত্র মূলত মুসলিম সন্তানদের জাহান্নামে নেয়ার। খোদ ইবলিস শয়তান স্বহাতে এ শিক্ষানীতিটি প্রণয়ন করলে কি এর চেয়েও অধিক খারাপ ও ভিন্নতর হতো? ১ম সংস্করণ ২৫/০৩/২০১৮; ২য় সংস্করণ ২৮/০৭/২০২২।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018