শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বাঙালি মুসলিমের ভয়ানক ব্যর্থতা ও দুর্গতি
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on July 8, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
শিক্ষার গুরুত্ব ও কুশিক্ষার প্লাবন
ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি হলো: কোন জাতির ব্যর্থতার শুরুটি কৃষি, শিল্প ও অর্থনীতি থেকে হয় না। সেটির শুরু ব্যর্থ শিক্ষা খাত থেকে। তেমনি জাতির উত্থান, বিজয় ও গৌবরবময় জীবনের শুরুটিও শিক্ষাঙ্গণ থেকে। অথচ এ নিয়ে গভীর অজ্ঞতা কি বাংলাদেশের বড় বড় ডিগ্রিধারী ব্যক্তি, নেতা-নেত্রী, আলেম-উলামা ও বুদ্ধিজীবীদের মাঝে কম? সেটি বুঝা যায় শিক্ষাখাতের প্রতি ভয়ানক অবহেলা থেকে। দেশটিতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, মেট্রো ও কল-কারখানা গড়ায় যত বিনিয়োগ, সেরূপ বিনিয়োগ মানুষ গড়ায় নাই। ফলে বিপুল ভাবে বাড়ছে দুর্বৃত্ত মানুষের সংখ্যা এবং তাতে প্রবল প্লাবন এসেছে দুর্বৃত্তিতে। সেটি যেমন দেশের প্রশাসন, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে, তেমন সাধারণ মানুষের জীবনে। এতে অসম্ভব হচ্ছে ভদ্র ভাবে বাঁচা ও সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ।
জ্ঞানের গুরুত্ব বুঝা যায় সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত থেকে। তিনি প্রথম মানব হযরত আদম (আ:)কে সৃষ্টি করে শুধু তাঁর পানাহারের ব্যবস্থাই করেননি, সে সাথে জ্ঞানদানও করেছেন। মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত সে জ্ঞানের কারণেই হযরত আদম (আ:) ফেরেশতাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর বিবেচিত হন। সে কারণেই তাঁকে সিজদা করতে ফিরেশতাদের প্রতি হুকুম দেন। সে হুকুমটি এতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে সেটি অমান্য করায় ইবলিস অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়।
মানবের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাটি দেহের গুণে নয়, বরং জ্ঞানের গুণে –সে বিষয়টি সর্বজ্ঞানী মহান স্রষ্টা মানব সৃষ্টির শুরুর প্রথম মুহুর্তেই বুঝিয়ে দেন। ইজ্জত, বিজয় ও গৌরবের পথে চলতে হলে জ্ঞানের বিকল্প নাই। একমাত্র জ্ঞানের এ পথটিই জান্নাতে নেয়। অপর দিকে অজ্ঞ থাকার শাস্তিটি ভয়ানক। সেটি বেঈমানী, মুনাফিকি,দুর্বৃত্তি, ভ্রষ্টতা, পরাজয় ও অপমান আনে এবং পরিণামে জাহান্নামে হাজির করে। মহান আল্লাহতায়ালা চান, তাঁর সর্বশ্রষ্ঠ এই মানব সৃষ্টি তার নিজের সে কাঙ্খিত মর্যাদাটি বহাল রাখুক এবং সফল হোক দায়িত্ব পালন। সেটি শুধু দৈহিক স্বাস্থের কারণে সম্ভব নয়। সেজন্য অপরিহার্য হলো ঈমানী বল। এবং সে ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জরুরি হলো মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া ওহীর জ্ঞান। পবিত্র কুর’আন হলো সে জ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস। এজন্যই ইসলামের মিশনের শুরুটি নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করার মধ্য দিয়ে হয়নি। সেটির শুরু ওহীর জ্ঞানার্জনকে ফরজ করার মধ্য দিয়ে। তাই “ইকরা” তথা “কুর’আন পড়ো” হলো পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার প্রথম হুকুম।
পরিতাপের বিষয় হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সেই প্রথম হুকুমের প্রতি আজকের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় অবহেলা। এবং সে অবহেলাটি বাঙালি মুসলিমদের মাঝে ভয়ানক। তারা ইতিহাস গড়েছে কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতায়। অথচ মুসলিমদের অতীতের সকল গৌরবের মূলে ছিল কুর’আনী জ্ঞান। সে জ্ঞান লাভের তাড়নায় তারা মাতৃভাষা পাল্টিয়েছে। আজকের মুসলিমগণ ভূলেই গেছে, যে জ্ঞানের কারণে হযরত আদম (আ:) ফেরেশতাদের থেকে সিজদা পেয়েছিলেন, একমাত্র সে জ্ঞানের বলেই মুসলিমগণ সমগ্র মানব কূলে বিজয় ও মর্যদা দিতে পারে। অতীতে সে বিজয় তারা পেয়েছিলও। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো, আজকের মুসলিমগণ অতীত ইতিহাসের সে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা থেকে কোন শিক্ষাই নেয়নি।
সুস্থ দেহ নিয়ে বাঁচার জন্য রাব্বুল আলামিন নানারূপ খাদ্যশস্য, ফলমূল, মাছ-গোশতো ও পানীয় দিয়েছেন। অপর দিকে আত্মা বা বিবেকের সুস্থতা বাঁচাতে দিয়েছেন ওহীর জ্ঞান। খাদ্য-পানীয় তিনি পশু-পাখিদেরও দেন। কিন্তু মানবের জন্য তাঁর বিশেষ দানটি হলো ওহীর জ্ঞান। এটিই হলো তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ দান। একমাত্র এ জ্ঞানের বদৌলতেই মানুষ জান্নাতের পথ পায়। এবং এ জ্ঞানের অজ্ঞতায় অনিবার্য হয় জাহান্নাম।
লক্ষাধিক নবী-রাসূল এসেছেন মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নতকে তথা ওহীর জ্ঞান দানকে প্রতিষ্ঠা দিতে। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে সে পবিত্র সূন্নত নিয়ে বাঁচতে। তারা ইতিহাস গড়েছে অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও অজ্ঞতায়। লাখো বাঙালি মুসলিমের মাঝে এমন একজনও পাওয়া যাবে না ব্যক্তি পবিত্র কুর’আনের বানী বুঝার মত ভাষা জ্ঞান রাখে। পবিত্র কুর’আনের ন্যায় মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দানটির সাথে বাঙালি মুসলিমের গাদ্দারীর নমুনাটি হলো, বাংলাদেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান শেষ হয় ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পবিত্র কুর’আনের একটি আয়াত বুঝার সামর্থ্য সৃষ্টি না করে। অথচ মুসলিমের জন্য এটিই হলো শিক্ষাদানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই প্রতিটি মুসলিমের উপর শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতই ফরজ নয়, ফরজ হলো পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জন। সেটি শুধু মোল্লা-মৌলভী, মসজিদের ইমাম বা মাদ্রাসামর ছাত্র-শিক্ষকদের উপরই ফরজ নয়, বরং ফরজ হলো প্রতিটি নারী-পুরুষের উপর।
নামাজ-রোজা পালন না করে কেউ মুসলিম হতে পারে না, তেমনি মুসলিম হতে পারে না পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জন না করে। কারণ, মুসলিম হতে হলে তো অবশ্যই ঈমান বাঁচাতে হয়। আর ঈমান বাঁচাতে হলো তো ঈমানের খাদ্য কুর’আনী জ্ঞান চাই। ইসলামের গৌরব যুগে মুসলিমগণ এই মৌলিক বিষয়টি বুঝতে আদৌ ভূল করেননি। তাই পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জনের ফরজ পালনের তাড়নায় মিশর, সিরিয়া, ইরাক, সূদান, লিবিয়া, আজজিরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, মৌরতানিয়ার ন্যায় বহু অনারাব দেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষাকে কবরে পাঠিয়ে পবিত্র কুর’আনের ভাষাকে আপন করে নিয়েছে। সে মহান কাজের পুরস্কারও তারা পেয়েছে। তাঁরা ইতিহাস গড়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতির নির্মাণে। ইতিহাস গড়েছেন নানা গোত্র, নানা বর্ণ ও নানা ভাষার মানুষের মাঝে একতা গড়ে। অথচ সে জ্ঞান থেকে দূরে সরে বাঙালি মুসলিমগণ বিশ্বরেকর্ড গড়েছে দুর্বৃত্তিতে ।
বাঙালি মুসলিমগণ কুর’আন চর্চা বলতে বুঝে অর্থ না বুঝে কুর’আন তেলাওয়াত; কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জন নয়। তারা কুর’আনের তেলাওয়াত খতম করা নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু কুর’আন বুঝা নিয়ে নয়। পবিত্র কুর’আনের সাথে এর চেয়ে বড় অবমাননা আর কি হতে পারে? কুর’আনের প্রতি এরূপ অবহেলা ও অবমাননা নিয়ে কেউ কি মুসলিম থাকে? মহান আল্লাহতায়ালা আমলের ওজন দেখেন, সংখ্যা নয়। তাই কুর’আনের একটি আয়াত বুঝার যে ওজন, তা কি সে আয়াতটি হাজার বার না বুঝে পড়লে অর্জিত হয়? বুঝতে হবে, মহান আল্লাহতায়ালা কুর’আনের জ্ঞানার্জন ফরজ করেছেন, না বুঝে তেলাওয়াত নয়।
ব্যর্থতার শো-কেস
বাঙালি মুসলিমগণ এখন বিশ্বের বুকে নানারূপ ব্যর্থতার শো-কেস। দুর্বৃত্তি নিয়ে বাঁচা এবং দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়া এখন বাংলাদেশীদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, মিডিয়া ও বিচার বিভাগের বিপুল সংখ্যক মানুষ বাঁচে দুর্বৃত্তিতে রাসরি সংশ্লিষ্ট হয়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পরিণত হয়েছে নীরব দর্শকেফলে দেশ জুড়ে প্লাবন এসেছে গুম, খুন, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, ব্যাংক লুট, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের। নেপাল, শ্রীলংকা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মত দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব হলেও বাংলাদেশে সেটি অসম্ভব। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সামর্থ্য হারিয়েছে একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের। বিশ্ববাসীকে তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে, অশিক্ষা ও কুশিক্ষা নিয়ে বাঁচার পরিনাম কতটা ভয়াবহ। এবং দেখাচ্ছে কোন পথ ধরলে দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম হওয়া যায়।
বিপদের আরো কারণ, এতো ব্যর্থতা ও বিপর্যয় নিয়েও ব্যর্থতার নায়কদের মাঝে কোন রূপ লজ্জা-শরম নাই। বরং রাজস্ব ভান্ডার, বাজেটের অর্থ, ব্যাংকের সঞ্চয় ও বিদেশী ঋণের অর্থের উপর লাগাতর পুকুরচুরিকে এরা উন্নয়ন বলে এবং ভোটডাকাতিকে বলে সুষ্ঠ নির্বাচন। এবং জনগণের বাক স্বাধীনতা হরণ, পত্রপত্রিকার কণ্ঠরোধ, মিছিল মিটিংয়ের স্বাধীনতা হরণ, দলীয় নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ ও বিচার বহির্ভুত হত্যাকে বলা হয় গণতন্ত্র। এদেশে এমনকি ডাকাতি নিয়েও উৎসব হয়! এবং সেটি তাদের দ্বারা যাদের দায়িত্বই হলো ডাকাতদের দমন! সেরূপ একটি উৎসব হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সফল ভোটডাকাতি শেষে রাজার বাগের পুলিশ হেড কোয়ার্টারে।
জনগণ পরিণত হয়েছে খাঁচার বন্দী জীবে। উন্নয়নের উৎসব হচ্ছে শাসক দলের পক্ষ থেকে। সভ্য মানুষ মাত্রই নিজের আজাদীকে ভালবাসে, গলায় গোলামীর শিকলকে নয়। গলায় শিকল পড়িয়ে উন্নয়নের বয়ান শোনানো কখনোই কোন সভ্য কাজ নয়। সেটি বয়ান খাঁচার পশুকে শোনালে সে প্রতিবাদ করে না, কারণ পশুর পানাহার হলেই চলে। কিন্তু কোন সভ্য, ভদ্র, ও শিক্ষিত মানুষ সে বয়ানে খুশি হয় না। কারণ, সে গলার রশিমুক্ত আজাদী চায়। মানুষ যত বেশী ভদ্র, সভ্য ও শিক্ষিত হয়, সে মানুষটি ততই আজাদী চায়। তাকে খাঁচার বন্দী পশু বানানো যায়না। ভোটডাকাত হাসিনা যে ভাবে ভোটের অধিকার ও মৌলিক মানবিক অধিকার কেড়ে মানুষকে গোলাম বানিয়েছে সেটি কি ইউরোপ-আমেরিকার কোন দেশে সম্ভব? এমন কি ভারত বা নেপালেও কি তা সম্ভব?
যে সংকটটি সাংস্কৃতিক অঙ্গণে
মানুষ যেভাবে বাঁচে সেটিই তার সংস্কৃতি। সংস্কৃতি হলো মানুষের বাইরের রূপ। সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় ব্যক্তির ভিতরের রূপ অর্থাৎ তার জ্ঞান, বিবেকবোধ, ঈমান, তাকওয়া, দর্শন, স্বপ্ন, আবেগ ও ভাবনার মান। তাই সুশিক্ষিত, সভ্য ও ঈমানদার মানুষেরা যে জ্ঞান, বিবেক, দর্শন, চরিত্র এবং জীবন-যাপনের প্রক্রিয়া নিয়ে বাঁচে, সেভাবে অশিক্ষিত, অসভ্য ও বেঈমান মানুষেরা বাঁচে না। ফলে একই রূপ হয় না উভয় জনগোষ্ঠির রাজনীতি, বু্দ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতির মান। অশিক্ষিত, অসভ্য ও বেঈমান মানুষের ধর্মটি যেমন অপধর্ম, তেমনি তাদের সংস্কৃতি হলো অপসংস্কৃতি। ধর্ম ও অধর্ম এবং সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি -এগুলি কখনোই গোপন থাকে না। দেশ জুড়ে গুম, খুন, ঘুষ, ধর্ষণ, মিথ্যাচার, বিনাবিচারে হত্যা, অপহরণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতির, ব্যাংক-ডাকাতি এবং স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় একটি অপরাধী জনগোষ্ঠির অপসংস্কৃতি। বাংলাদেশে চলছে সে অপসংস্কৃতির প্লাবন। সে অপসংস্কৃতির সাথে মিশ্রন ঘটেছে একুশের স্তম্ভপূজা, নববর্ষের মঙ্গল প্রদীপ, বসন্ত বরণের নাচগান, মুজিবের ছবিপূজা এবং তার মুর্তিপূজার ন্যায় নিরেট হিন্দুত্ববাদ। বাঙালি দুর্বৃত্তদের অপধর্ম ও অপসংস্কৃতি এখানে একাকার হয়ে গেছে। ঈমানদারের ধর্মীয় আচার ও সংস্কৃতি কি কখনো এরূপ হতে পারে?
ইসলাম যে সংস্কৃতির জন্ম দেয় তাতে মানুষ লাগাতর ঈমানদার, সভ্যতর ও সৎকর্মশীল হয়। তখন সভ্য ও ঈমানদার মানুষের সাথে নির্মিত হয় সভ্য সমাজ ও সভ্য রাষ্ট্র। এ পথই হলো মহান নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের পথ। এ পথ ধরেই মুসলিমগণ অতীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। সে সংস্কৃতির নির্মাণে জরুরি হলো সুশিক্ষা। সে শিক্ষার সিলেবাসে অবশ্য থাকতে হয় ওহীর জ্ঞান তথা কুর’আন-হাদীসের জ্ঞান। বস্তুত সে জ্ঞানই হলো ঈমান ও বিবেকের খাদ্য। ওহীর জ্ঞানের অভাবে জন্ম নেয় যে অপধর্ম ও অপসংস্কৃতি -তা দেয় বেঈমান ও দুর্বৃত্ত হওয়ার শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দেয় পাপাচারে তথা দুর্বৃত্তিতে। অপধর্ম ও অপসংস্কৃতির সে ধারকগণ তখন দ্রুত ধাবিত হয় আদিম অজ্ঞতার দিকে। এটিই হলো ভারতপন্থী বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের পথ। এ পথ বেয়েই বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয়েছে। সে অপধর্ম ও অপসংস্কৃতিকে বলবান করতেই তারা শুধু পতিতাপল্লী, জুয়া-ক্যাসিনা, সূদী ব্যাংক, ও মদ্য়শালাই নির্মাণ করেনি, সেগুলির সাথে নাচগান, বর্ষবরণ, বসন্তবরণ, একুশে বরণ ও পূজা-পার্বনের নামে দেশ জুড়ে হাজার হাজার ইন্সটিটিউট গড়ে তুলেছে। জনগণকে জাহান্নামে নিতে অজ্ঞতা, অপসংস্কৃতি, দুর্বৃত্তি ও পাপের ইন্সটিটিউটগুলি একত্রে কাজ করছে। অজ্ঞতার ইসলামী পরিভাষা হলো জাহিলিয়াত। শয়তান তাই শুধু অজ্ঞতাই বাড়ায় না, প্লাবন আনে অপসংস্কৃতিতেও।
বিপদটি ভয়ানক
বাংলাদেশের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি,ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ইসলামের শত্রুপক্ষের তথা শয়তানের অনুসারীদের বিজয়টি বিশাল। রাজনীতির অঙ্গণে তারা সে বিশাল বিজয়টি পেয়েছে ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ২০১৮ সালের ভোটডাকাতির মাধ্যমে। তাদের বিজয়ের ফলে বিপন্ন হয়েছে শুধু বাঙালি মুসলিমের রাজনৈতিক স্বাধীনতাই নয়, বরং বিপন্ন হয়েছে তাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও পূর্ণাঙ্গ ইসলাম-পালন। নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণের নামে তারা নিয়ন্ত্রিত করছে ইসলামপন্থীদের রাজনীতিকেও। তারা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কুর’আন-হাদীস চর্চাকে নিষিদ্ধ করে অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াতের প্লাবন এনেছে। সে সাথে এনেছে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির প্লাবন। এরই ফলে স্তম্ভপূজা, মুর্তিপূজা ও ছবিপূজা আজ আর শুধু মন্দিরে হচ্ছে না, মন্দিরের বাইরেও নেমে এসেছে। এ থেকে বুঝা যায় বাংলাদেশের উপর তাদের বিজয়টি কত বিশাল। অজ্ঞতা ও অপসংস্কৃতির এ প্রবল জোয়ারের মুখে মুসলিম রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সে জোয়ারে ভেসে চলেছে বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম নর-নারী।
বাঙালি মুসলিমগণ আজ এক ভয়নাক বিপদের মুখে। বাঙালি মুসলিমদের উপর চাপানো হয়েছে এক বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। সে যুদ্ধ দিন দিন প্রবলতর হচ্ছে। এ যুদ্ধে ইসলামের দেশী শত্রুদের সাথে যোগ দিয়েছে বিপুল সংখ্যক বিদেশী শত্রু -বিশেষ করে অখন্ড ভারতের প্রবক্তা হিন্দুত্ববাদীগণ। তারা প্রশ্নবদ্ধ করছে এবং অভিযোগ করছে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টি নিয়ে। পাকিস্তানের সৃষ্টিকে তারা মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক সৃষ্টি রূপে অভিহিত করছে। এ হিন্দুত্ববাদীদের আফসোস এ নিয়ে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি না হলে ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশ ভারতভূক্ত হতো। তাতে এ বিশাল জনগণের উপর হিন্দুত্বের বিজয় সহজতর হতো। এবং বিলুপ্ত হতো এ উপমহাদেশে মুসলিম শক্তির উত্থানের বিপদ। তখন পেত অর্থনৈতিক পণ্যের সাথে সাংস্কৃতিক পণ্যের বিশাল বাজার। এরূপ ভারতসেবীদের হাতে অধিকৃত হয়েছে যেমন বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণ, তেমনি সাংস্কৃতিক অঙ্গণ। তাই বাঙালি মুসলিমদের জিহাদ শুধু ফ্যাসিবাদ, দুর্বৃত্তি ও বিদেশী আধিপত্যের বিরুদ্ধে নয়, বরং অজ্ঞতা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধেও। এ জিহাদে পরাজয়ের পরিণতিটি ভয়াবহ। তখন অজ্ঞতা ও অপসংস্কৃতির জোয়ারে ভেসে যেতে হয় জাহান্নামের পথে। ভয়ানক বিপদের কারণ হলো, বাংলাদেশে সে জোয়ারটিই প্রবল। কিন্তু সে বিপদ নিয়ে ভাবনাই বা ক’জন বাংলাদেশীর?
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018