নবীজী (সা:)’র ইসলাম, ইসলামী রাষ্ট্র এবং মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 25, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিকল্প নাই ইসলামী রাষ্ট্রের
ইসলামী রাষ্ট্রের বিকল্প নাই। বিকল্প নাই সে রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক শক্তির। ইসলামী রাষ্ট্রৃ এবং সে রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক শক্তি না থাকলে মুসলিমদের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরুর কোন নিরাপত্তা থাকে না। তখন স্বাধীনতাও বাঁচে না। পূর্ণ ইসলাম পালনও তখন সম্ভব হয়না। তাই সভ্য মানুষ শুধু ঘর গড়ে না, রাষ্ট্রও গড়ে। এবং মুসলিমগণ গড়ে শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র। সেরূপ একটি রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যর্থ হলে লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে বা জনশক্তিতে কয়েকগুণ বৃদ্ধি ঘটিয়েও কোন লাভ হয়না। তখন শত্রু শক্তির হাতে অধিকৃতি, গণহত্যা, গণধর্ষণ, ধ্বংস এবং গোলামী নিয়ে বাঁচতে হয়। সে করুণ চিত্রটি দেখা যায় গাজা, জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, কাশ্মীর, আরাকান, উইঘুরের ন্যায় মুসলিম ভূমিতে। নারী-পুরুষসহ হাজার হাজার শিশুকে সেখানে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ ঘরবাড়ী ও দোকানপাট ধ্বংস করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন উদ্বাস্তু হয়েছে। এসবই হলো শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র না থাকার খেসারত।
মুসলিমদের সংখ্যা আজ প্রায় ১৫০ কোটি। মসজিদের সংখ্যা বহু লক্ষ। রাষ্ট্রের সংখ্যা ৫০টির অধিক। কিন্তু তাতে কি মুসলিমদের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরু কোন নিরাপত্তা পাচ্ছে? বেঁচেছে কি স্বাধীনতা? অতীতে সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বশক্তি রূপে মুসলিম উম্মাহর যেরূপ উত্থান ঘটে -সেটি স্রেফ নামাজ-রোজা ও হ্জ্জ-যাকাতের কারণে ঘটেনি। সে বিজয় ও গৌরব শত শত মসজিদ নির্মাণের কারণেও অর্জিত হয়নি। বরং সেটি সম্ভব হয়েছে নবীজী (সা:)’র নেতৃত্বে শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার কারণে। সে কাজে অর্ধেকের বেশী সাহাবা শহীদ হয়ে গেছেন। এটিই ছিল মুসলিমদের সবচেয়ে ব্যয়বহুল খাত। অথচ মুসলিমগণ তাদের বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে এ খাত থেকে। ফলে ১৫০ কোটি মুসলিম ব্যর্থ হয়েছে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে।
পৃথিবীপৃষ্ঠে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রটি শয়তানী শক্তির দখলে গেল বিপদ বাড়ে মুসলিমদের। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ও তাঁর শরিয়তী বিধান তখন কুর’আনেই থেকে যায়। মুসলিমগণ হারায় নিজেদের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা। অথচ রাষ্ট্রটি ইসলামী হলে এবং সে রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক শক্তিতে বৃদ্ধি ঘটলে মুসলিম উম্মাহর শক্তি, নিরাপত্তা ও ইজ্জত সুরক্ষা পায়। তাই নবীজীী (সা:) তাঁর নবুয়তী জীবনের প্রথম ১৩ বছরে কোন মসজিদ বা মাদ্রাসা গড়েননি, কিন্তু মদিনায় হিজরতের সাথে সাথে একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দেন। এবং সে রাষ্ট্রের ভূগোল বাড়াতে জিহাদের পর জিহাদ শুরু করেন। তাই দেশের ভূগোলে বৃদ্ধি আনা নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত। এতে মুসলিমদের ভূ-রাজনৈতিক শক্তি বাড়ে। আর সে রাষ্ট্রের ভূগোল বাড়াতেভূ-রাজনৈতিক শক্তি বাড়লে বিশ্বের দরবারে ইজ্জত ও গুরুত্ব বাড়ে। সেরূপ একটি শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র না থাকায় সাড়ে ৬ কোটি ব্রিটিশের বিশ্বের মঞ্চে ও জাতিসংঘে যে গুরুত্ব ও শক্তি আছে -তা ১৫০ কোটি মুসলিমের নাই। মহান নবীজী (সা:) বিষয়টি ষোল আনা বুঝতেন, তাই তিনি পবিত্র কুর’আনের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্র নির্মাণেও বিশাল গুরুত্ব দেন। এবং ১০টি বছর সে রাষ্ট্রে তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এবং ইন্তেকালের পূর্বে সাহাবাদের রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটান্টিনোপল দখলে নেয়ার জন্য নসিহত করে যান। সাহাবাগণ নবীজী (সা:)’র সে সূন্নতকে অব্যাহত রাখেন এবং তাঁর সে গুরুত্বপূর্ণ নসিহতকে বিজয়ী করেন তুর্কী বীর সুলতান মুহম্মদ ফাতেহ। কন্সটান্টিনোপল দখলে নেয়ার পর শহরটির নাম রাখা হয় ইস্তাম্বুল। পরে সেটি উসমানিয়া খেলাফতের রাজধানীতের পরিণত হয়।
অপর দিকে কোন মুসলিম দেশকে ভাঙ্গা বা ক্ষুদ্রতর করার পরিণতিটি ভয়াবহ। সে খণ্ডিত মুসলিম ভূমি সহজেই শত্রু শক্তির হাতে অধিকৃত হয়। তখন অসম্ভব হয় সে অধিকৃত দেশে পূর্ণ ইসলাম-পালন। তখন বিলুপ্ত হয় সে অধিকৃত ভূমিতে স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও শান্তি । তখন অসম্ভব হয় সে অধিকৃত ভূমিতে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। তাই মুসলিম দেশের ভূগোল ভাঙ্গার কাজটি কোন কালেই ঈমানদারদের কাজ ছিল না। সে হারাম কাজটি সংঘটিত হয়েছে ভিতরের ও বাইরের কাফির ও মুনাফিক শত্রুদের পক্ষ থেকে। এবং তারাই মুসলিম বিশ্বে ৫০টির বেশী রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। ১৯১৭ সালে আরব জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টগণ ইংরেজদের সহযোগিতা নিয়ে উসমানিয়া খেলাফা ভেঙ্গেছে এবং জন্ম দিয়েছে ২২টি আরব রাষ্ট্রসহ ইসরাইলের। এরই পরিণতি হলো, আরব ভূমিতে ইসরাইল হলো সবচেয়ে শক্তিশালী শত্রুরাষ্ট্র এবং মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি এখন ইসরাইলীদের হাতে অধিকৃত।
অপর দিকে ইসলাম থেকে দূরে সরা বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টগণ ১৯৭১ সালে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গে। সে ভূগোল ভাঙ্গার পরিণতি হলো, দক্ষিণ এশিয়ার বুকে দাপট বেড়েছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের। ফলে বাঙালি মুসলিমদের বাঁচতে হচ্ছে ভারতীয় রাডারের নীচে। এবং ভারতীয়দের স্বার্থ বাঁচাতে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে ভারতসেবী শেখ হাসিনার নৃশংস ফ্যাসিবাদের। এদেশে ইসলামীপন্থী নেতাদের ফাঁসিতে চড়ানো হয় এবং মুসলিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হয় -যেমন ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হিফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ জমায়েতের উপর হয়েছে। বস্তুত মুসলিম উম্মাহর পতনের শুরু তখন থেকেই যখন মুসলিমগণ নিজে দেশের ভূগোলে বৃদ্ধি না ঘটিয়ে সেটিকে খণ্ডিত করা শুরু হয়। এজন্যই কোন মুসলিম দেশের ভূগোল বৃদ্ধির ন্যায় ভৌগলিক সীমানার সুরক্ষা দেয়ার কাজটিও পবিত্র জিহাদ। সে পবিত্র জিহাদ শহীদ হওয়ার রাস্তা খুলে দেয়। অপর দিকে হারাম হলো মুসলিম দেশের ভূগোল ভাঙ্গা। এটি কবিরা গুনাহ। মুসলিম উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়ের কারণ, তারা ফরজকে বাদ দিয়ে কবিরা গুনাহর হারাম পথটি ধরেছে।
বিদ্রোহ ফরজ বিধানের বিরুদ্ধে
অধিকাংশ মুসলিমই বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে, মহান আল্লাহতায়ালা শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করেননি, তিনি ফরজ করেছেন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও সে রাষ্ট্রের সুরক্ষাকে। এটি শুধু মুসলিমদের ঈমান বাঁচানোর বিষয় নয়, বরং তাদের জান-মাল, ইজ্জত-আবরু ও স্বাধীনতা বাঁচানোর বিষয়ও। সেরূপ একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও সেটির প্রতিরক্ষার দায়ভারটি কখনোই মুষ্টিমেয় সংখ্যক সেনাসদস্যদের নয়, বরং সেটি প্রতিটি মুসলিমের। সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে সশস্ত্র জিহাদের জন্য সদাপ্রস্তুত থাকার যে হুকুমটি এসেছে -সেটি তো প্রতিটি ঈমানদারের উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহতায়ালার সে নির্দেশটি হলো:
وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
অর্থ: “এবং শত্রুদের মোকাবেলায় তোমরা সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদের প্রস্তুত রাখো এবং প্রস্তুত রাখো তোমাদের যুদ্ধের ঘোড়াগুলিকে; এরূপ প্রস্তুতি নেয়ার মাধ্যমে তোমরা সন্ত্রস্ত করো আল্লাহর শত্রুদের এবং তোমাদের নিজেদের শত্রুদের।” তাই প্রতি ঈমানদারকে যেমন নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়, তেমনি সর্বাত্মক প্রস্তুত থাকতে হয় শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের। তবে পার্থক্য হলো, নামাজের ওয়াক্ত দিনে মাত্র ৫ বার এবং রোজার জন্য ১২ মাসের মাঝে মাত্র এক মাস প্রস্তুত থাকলেই চলে। কিন্তু জিহাদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় প্রতি দিন ও প্রতিটি মুহুর্ত। তাই নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের গৃহে শুধু জায়নামাজ ছিল না, উন্নত মানের ঢাল-তলোয়ার, বর্ম, তীর-ধনুকও ছিল। নবীজী (সা:)’র গৃহে ছিল ৯ খানি তলোয়ার। যাদের আর্থিক সামর্থ্য ছিল তারা প্রশিক্ষিত ঘোড়াও রাখতো। কিন্তু সে প্রস্তুতি আজ ক’জন মুসলিমের? প্রতিরক্ষার দায়িত্ব মুষ্টিমেয় সংখ্যক সৈনিকের হাতে তুলে দিয়ে আজকের মুসলিমগণ নিজেরা নিষ্ক্রিয় থাকছে। এখানে চরম বিদ্রোহ বা অবাধ্যতাটি ঘটছে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে। এবং সেটি শত শত বছর :ধরে। সে বিদ্রোহের শাস্তিও তারা কম পায়নি। সে শাস্ত্রি হলো, প্রতিটি মুসলিম দেশ অধিকৃত হয়েছে ইসলামের দেশী-বিদেশী শত্রুদের হাতে। এবং অধিকৃত এ দেশগুলির কোনটিতে সর্বশক্তিমান মহান প্রভুর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইন যেমন বাঁচেনি, তেমনি বাঁচেনি তাদের নিজেদের ই্জ্জত, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা। শত্রুর হামলার বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে সশস্ত্র প্রস্তুতি দেখা যায় একমাত্র আফগানিস্তানে। ফলে মাথাপিছু অস্ত্রের হার সবচেয়ে বেশী হলো আফগানিস্তানে। এরূপ প্রস্তুতির সুফলও পেয়েছে। একমাত্র তারাই পরাজিত করতে পেরেছে ব্রিটিশ, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় তিনটি বিশ্বশক্তিকে।
রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো, জনগণের স্বাধীনতা, জান-মাল ও ইজ্জতের সুরক্ষা দেয়া। মহান আল্লাহতায়ালার এ কাজকে ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছেন। রাষ্ট্রের উপর যে দায়িত্বটি ফরজ সেটি হলো, মুসলিম জনগণকে জিহাদের জন্য সদাপ্রস্তুত রাখা এবং তাদের সাথে নিয়ে জিহাদ সংগঠিত করা। নাগরিকদের দায়িত্ব হলো, সে জিহাদে নিজেদের জান, মাল, মেধা, শ্রম ও রক্তের বিনিয়োগ ঘটানো। ইসলামের গৌরব কালে রাষ্ট্রের খলিফাগণ তো সেটিই করেছেন। আর যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জিহাদ সংগঠিত হয়, সে রাষ্ট্রের উপর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নানারূপ রহমত ও নিয়ামত নেমে আসে। এজন্যই ইসলামের গৌরবকালে শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ সংগঠিত করাটি খলিফাগণ নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্ব মনে করতেন। অথচ আজ মুসলিম জীবনে সে জিহাদ নাই; ফলে নির্মিত হয়নি কোন ইসলামী রাষ্ট্র। এরই ফল হলো, মুসলিমদের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়লেও তাদের শক্তি ও ইজ্জত একটুও বাড়েনি। বরং সেগুলি দারুন ভাবে কমেছে। জিহাদই হলো ইসলামকে বিজয়ী করা ও নিজেদের জান-মালের সুরক্ষা দেয়ার কাজে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত একমাত্র হাতিয়ার। অথচ সে হাতিয়ার মুসলিমদের হাতে নাই। বরং বিস্ময়ের বিষয় হলো, বহু মুসলিম এবং বহু ইসলামী দল জিহাদ ছাড়াই ইসলামকে বিজয়ী করার স্বপ্ন দেখেন। এরই ফল হলো, নবীজী (সা:) জিহাদের যে সূন্নত রেখে গেলেন সে সূন্নত মুসলিম জীবনে বেঁচে নাই। বরং যাদের জীবনে সে সূন্নত বেঁচে আছে তাদেরকে সন্ত্রাসী,উগ্রবাদী ও জঙ্গি বলা হয়। এসবই হলো মুসলিম দেশে সেক্যুলারাইজেশন ও ডিইসলামাইজেশনের ফল।
নবীজী (সা)’র ইসলাম ও ইসলামী রাষ্ট্র
যেখানেই নবীজী (সা:)’র ইসলাম নিয়ে বাঁচার তাড়না, সেখানেই গড়ে উঠে ইসলামী রাষ্ট্র। কারণ, কাফির ও মুনাফিক অধিকৃত দেশে কখনোই পূর্ণ ইসলাম পালনের কাজটি হয়না। নবীজী (সা:) যুগেও কাফির অধিকৃত মক্কায় সেটি সম্ভব হয়নি। কারণ, মক্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ কাফেরগণ সেটি হতে দেয়নি। পূর্ণ ইসলাম পালনের কাজটি সম্ভব করতেই ইসলামী রাষ্ট্রের যেমন ফরজ, তেমনি ফরজ হলো সে লক্ষ্যে নিরাপদ দেশে হিজরত। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের সে কাজটি ত্বরান্বিত করতেই নবীজী (সা:) ও তাঁর সাথীদের উপর ফরজ করা হয় মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত। সেদিন মদিনায় হিজরত না করলে অসম্ভব হতো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। তখন মুসলিমদের বাঁচতে হতো অপূর্ণাঙ্গ মুসলিম রূপে। এবং তখন বাঁচতে হতো অনৈসলামিক কোন দেশে কাফির ও মুনাফিক শক্তির গোলামী মেনে নিয়ে। তাতে সম্ভব হতো না বিশ্ববাসীর সামনে পূর্ণ ইসলামকে তুলে ধরার কাজ। তখন মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা এবং কুর’আনী বিধান স্রেফ কুর’আনেই থেকে যেত।
মহান নবীজী (সা:) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁকে বেছে নেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমলকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজে। এ ক্ষেত্রে নবীজী (সা:)’র সাফল্য ছিল অভূতপূর্ব। সেটি ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং সে রাষ্ট্রে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব এবং শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা। সে ইসলামী রাষ্ট্রের কারণে প্রতিষ্ঠা পায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতি। সেটিই হলো ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল। প্রতিটি ঈমানদারের দায়িত্ব হলো, নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সে নেক আমলের সূন্নত নিয়ে বাঁচা। সে সূন্নত নিয়ে বাঁচার তাড়নাতেই সাহাবাগণ জন্ম দিয়েছিলেন খোলাফায়ে রাশেদা।
মক্কা থেকে মদিনীয় হিজরতের বছরটি মুসলিম ইতিহাসে এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে হিজরী সাল গণনার শুরু হয় হিজরতের বছর থেকে। লক্ষণীয় হলো, মদিনায় হিজরতের পর পরই নবীজী (সা:) ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দেন এবং ১০টি বছর তিনি সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। সে রাষ্ট্রের কারণেই মুসলিম উম্মাহর উদ্ভব ঘটে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বশক্তি রূপে। এবং নির্মিত হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তাই ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ হলো নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ লিগ্যাসি বা সূন্নত। তাই যে ভূমিতে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা নাই, বুঝতে হবে সে ভূমিতে নবীজী (সা:)’র প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত ইসলাম বেঁচে নাই। ইসলামের নামে যা বেঁচে আছে তা হলো বিকৃত ও অপূর্ণাঙ্গ ইসলাম।
আজ মুসলিমগণ যে ইসলাম নিয়ে বাঁচে সে ইসলামে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন স্থান নাই। জিহাদেরও কোন স্থান নাই। জিহাদ তো তাদের জীবনে থাকে যাদের জীবনে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তাড়না থাকে। তাড়না থাকে পূর্ণ ইসলামের প্রতিষ্ঠা দিয়ে বাঁচার। এবং তাড়না থাকে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হওয়ার। যারা শুধু নামাজ-রোজা ও হ্জ্জ-যাকাত পালন, পীর-মুরিদী ও তাবলিগ করাকে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম মনে করে তারা কেন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদে নামবে? নিজেদের জান-মালেরই বা কেন বিনিয়োগ করবে? অধিকাংশ মুসলিম ভূমি অধিকৃত হয়ে আছে স্বৈরাচারী রাজ-বাদশাহ, সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদীদের হাতে। নবীজী (সা:)’র যুগে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় বাধা আসতো কাফিরদের থেকে। কিন্তু আজ সে বাধা আসছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলির দখলদার স্বৈরাচারী শাসকদের থেকে এবং তাদের সমর্থক মুসলিমনামধারী স্তাবকদের থেকে। ইসলামী রাষ্ট্র না থাকায় কুর’আনের দর্শন, শরিয়তী আইন, ইসলামের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি, শিক্ষা নীতি, বিচার ব্যবস্থা, অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারর জিহাদের ন্যায় ইসলামের মূল এজেন্ডাগুলি শুধু কিতাবেই রয়ে গেছে। ফলে অতীতে ইসলামী রাষ্ট্রের কারণে মুসলিমগণ যে শক্তি, বিশ্বজোড়া মর্যাদা ও নিরাপত্তা পেয়েছিল, আজকের মুসলিমগণ তা থেকে বঞ্চিত। তারা আজ বিভক্ত ও অধিকৃত এবং গুম, খুন, ধর্ষণ ও অপমানের শিকার।
ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ কেন ব্যর্থ হয়?
অসভ্য, বর্বর ও অপরাধী মানুষেরাও ঘর বাঁধে। তারাও শিকার ধরে, মাছ ধরে, ও পশু পালন করে। তাদের অনেকে চাষবাদও করে এবং বস্ত্র বুনে। এরূপ বহুবিধ কর্মে সক্ষম হলেও তাদের অনেকেই রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারে না। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ হাজার হাজার বছর যাবত রাষ্ট্র ছাড়াই বসবাস করেছে। তারা বসবাস করেছে গ্রোত্রীয় পরিচয় নিয়ে বা পরিচয় ছাড়াই। তাদের দ্বারা রাষ্ট্র নির্মাণের ন্যায় সভ্য কাজটি হয়নি। কারণ, রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য শুধু পানাহারে বাঁচার সামর্থ্য থাকলে চলে না। সে কাজে লাগে সমৃদ্ধ চেতনা, দর্শন ও বিবেকবোধ। লাগে জান, মাল, মেধা, শ্রম ও সময়সহ সকল উচ্চতর মানবিক সামর্থ্যের বিনিয়োগ। কিন্তু অসভ্য, অজ্ঞ ও দর্শনহীন মানুষের সে সামর্থ্য থাকে না।
গুহা ও জঙ্গলেও আমৃত্যু বসবাস করা যায়। কিন্তু রাষ্ট্র ছাড়া জান-মাল ও ইজ্জতের সুরক্ষা, সুশিক্ষা, আইনের শাসন, মিথ্যা ও দুর্বৃত্তির নির্মূল, সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা, এবং সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ে বসবাসের কাজটি হয় না। তাই সভ্য রাষ্ট্র -বিশেষ করে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণই হলো মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম। সভ্য ও ভদ্র মানুষের পরিচয়ের মেলে কি ধরনের বাড়ীতে সে বসবাস করে তা দেখে। গৃহে দেয়াল নাই, দরজা-জানালা নাই, মেঝেতে দুর্গন্ধময় আবর্জনার স্তুপ -এমন গৃহের বাসিন্দাকে কখনোই কেউ সভ্য, ভদ্র, রুচিবান ও বিবেকমান বলবে না। এমন গৃহের বাসিন্দকে সবাই অসভ্য, অভদ্র, বর্বর ও মানসিক দিক দিয়ে অসুস্থ বলবে। তেমনি যে দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, সন্ত্রাসের প্লাবন এবং শাসন ক্ষমতায় ভোটডাকাত দুর্বৃত্ত অধিষ্ঠিত -সে দেশ কখনোই সভ্য ও উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদা পায় না। সেটি তো অসভ্য ও বর্বর রাষ্ট্র। সভ্য ও উন্নত রাষ্ট্রের পরিচয় একমাত্র তখনই মেলে যখন সে রাষ্ট্রের শাসক ও জনগণের ঈমান, বিবেক, দর্শন, চেতনা, শিক্ষা ও যোগ্যতার মান উন্নত এবং রাষ্ট্রের বুক থেকে অবিচার ও দুর্বৃত্তির নির্মূল দেখে।
জনগণ যত বেশী ঈমানদার, জ্ঞানবান, বিবেকবান ও সভ্যতর হয়, ততই বাড়ে উন্নত রাষ্ট্র-নির্মাণের তাড়না। তখন বাড়ে সে রাষ্ট্রের সামর্থ্যও। ইসলামের আগে আরবদের কোন রাষ্ট্র ছিল না। তাদের কোন শক্তি, প্রতিপত্তি ও ইজ্জতও ছিল না। বহু হাজার বছর তারা কাটিয়েছে মরুর বুকে গোত্রীয় জীবনের কোন্দল, সংহিংসতা, অসভ্যতা ও বর্বরতা নিয়ে। মুর্তিপূজার সনাতন অজ্ঞতা ছিল তাদের ধর্ম । সেখানেো কোন সভ্য আইন ছিল না; আইনের শাসনও ছিল না। সেখানে দুর্বলের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা ছিল না। মানুষ হাটে বাজারে গরু-ছাগলের ন্যায় বিক্রি হতো। নারীদের কোন মর্যাদা ছিল না, জীবিত কবর দেয়া হতো কন্যা সন্তানদের। “জোর যার মুল্লুক তার” -জঙ্গলের এ নীতিই ছিল আরবদের নীতি। কিন্তু ইসলাম কবুলের পর এই আরব মুসলিমগণই স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তারা প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্বশক্তি রূপে। তাদের সে গৌরবের কারণ, তারা সফল হয়েছিলেন মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দিতে। এরূপ অতি উচ্চাঙ্গের মানবিক কাজটি অন্য কোন জাতির দ্বারা আর কোন কালেই হয়নি। এরূপ কাজ কোটি কোটি মসজিদ, মাদ্রাসা বা পীরের খানকা গড়ে সম্ভব নয়। সেটি সম্ভব হয়েছিল একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার মধ্য দিয়ে। এবং সেরূপ একটি রাষ্ট্র নির্মাণই হলো মহান নবীজী (সা)’র সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্ম। তার সে রাষ্ট্রটি কোন সেক্যুলার রাষ্ট্র ছিল না, সেটি ছিল পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্র নির্মাণের ফলে বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বাস্তবায়ন ঘটে। সে এজেন্ডাটি হলো: لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ অর্থাৎ সকল ধর্ম, সকল মতবাদ ও সকল জীবন-দর্শনের উপর ইসলামের বিজয়। মহান আল্লাহতায়ালার সে এজেন্ডা বিজয়ী হওয়ার সুফল হলো ইসলামী রাষ্ট্রের কোটি কোটি মানুষ জাহান্নামের আগুনে পড়া থেকে উদ্ধার পায় এবং জান্নাতের পথ পায়। নবীজী (সা:)’য়ের নির্মিত সে রাষ্ট্রের কারণে কোন দুর্বৃত্ব স্বৈরশাসক ইসলামের মৌলিক শিক্ষাকে কলুষিত করতে পারিনি। অথচ সেরূপ একটি রাষ্ট্র না থাকায় হযরত মূসা (আ:)’য়ের উপর তাওরাতে নাযিলকৃত শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা ঘটেনি। সে আইন কিতাবেই রয়ে গেছে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হযরত ঈসা (আ:)’য়ের দেয়া তাওহিদের শিক্ষাও। ধর্মের মাঝে পৌত্তলিকতা ঢুকিয়েছে খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষা নেয়া স্বৈরাচারী রোমান রাজা কন্সটান্টটাইন।
মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণের কাজটি সহজ। সূদখোর, ঘুষখোর, মিথ্যাবাদী এবং নৃশংস স্বৈরাচারী শাসকগণও সেগুলি গড়তে পারে। এমন কি বাংলাদেশের ন্যায় যে দেশটি দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বরেকর্ড গড়েছ, সে দেশেও লক্ষ লক্ষ মসজিদ এবং হাজার হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। গুম, খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতির প্লাবনে ডুবা এ দেশটিতে বহু কোটি নামাজী ও রোজাদার দেখা যায়। এমন দেশে তাবলিগের ইজতেমায় ২০ লাখ মানুষ জমায়েত হয়। কিন্তু তাদের মানবিক, চারিত্রিক ও ঈমানী শূণ্যতাটি প্রকট ভাবে ধরা পড়ে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের ব্যর্থতা থেকে। ঘুষখোর, সূদখোর, মিথ্যাবাদী, প্রতারক ও সেক্যুলার রাজনীতির দুর্বৃত্ত নেতা-কর্মীগণও নামাজী, রোজাদার ও হাজী হতে পারে। কিন্তু তারা কখনোই রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদের মুজাহিদ হতে পারে না। কারণ এ জিহাদ শুধু অর্থ ও সময়ের কুরবানী চায় না, রক্ত ও প্রাণের কুরবানীও চায়। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদে তো সেই নামতে পারে, যে প্রকৃত ঈমানদার এবং নিজ নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে বিজয়ী। নামাজী, রোজাদার ও হাজী তো ঘুষখোর, সূদখোর মিথ্যাচারী ও স্বৈরাচারী খুনী শাসকগণও হতে পারে। কিন্তু ঈমানদার হতে হলে হৃদয়ে কুর’আনী জ্ঞানের নূর থাকতে হয়। আলো যেমন অন্ধকার দূর করে, কুর’আনের নূর তেমনি মনের অন্ধকার তথা জাহিলিয়াত দূর করে। মনের ভূবনে অন্ধকার তথা অজ্ঞতা নিয়ে আর যাই হোক কখনোই ঈমানদার হওয়া যায় না। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা যা প্রথম ফরজ করেন সেটি নামাজ-রোজা বা হজ্জ-যাকাত নয়, সেটি হলো পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জন। জিহাদ এখানে অজ্ঞতার নির্মূলে। নামাজ দিনে মাত্র ৫ বার, কিন্তু এ জিহাদ সর্বক্ষণ। নফসের বিরুদ্ধে বিরামহীন এ জিহাদে একমাত্র সেই বিজয়ী হয় যার হৃদয়ে রয়েছে কুর’আনী নূরের তথা জ্ঞানের অস্ত্র। পবিত্র কুর’আনে সে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের নির্দেশ এসেছে এভাবে:
فَلَا تُطِعِ ٱلْكَـٰفِرِينَ وَجَـٰهِدْهُم بِهِۦ جِهَادًۭا كَبِيرًۭا
অর্থ: “অতএব কাফিরদের অনুসরণ করো না, এবং এই (কুর’আন) দিয়ে বড় জিহাদটি লড়ো”। -( সুরা ফুরকান, আয়াত ৫২)। মুমিনের এ বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদকে বলা হয়েছে বড় জিহাদ। বড় জিহাদ বলার কারণ, এ জিহাদের ময়দানেই নির্ধারিত হয় ব্যক্তির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। কে মুসলিম হবে এবং কে কাফির হবে, জান্নাতের পথ যাবে, না জাহান্নামের পথে যাবে -সে বিষয়টি। কোন ব্যক্তির জীবনে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় আছে কি? মুমিনের জীবনে শত্রুশক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্রের যুদ্ধটি শুরু হয় বুদ্ধিবৃত্তিক এ জিহাদে বিজয়ের পর। সে লাগাতর যুদ্ধটি হয় চেতনার ভূমিতে। যুদ্ধ এখানে মিথ্যার নির্মূলে। বুদ্ধিবৃত্তিক এ জিহাদে ব্যক্তির চেতনার ভূমিকে বাঁচাতে হয় কাফিরদের প্রচারিত মিথ্যা ধর্ম, মিথ্যা মতবাদ ও মিথ্যা দর্শনের আগ্রাসন থেকে। এ লড়াইয়ে হেরে গেল চেতনার ভূমি অধিকৃত হয় কুফরি ধ্যান-ধারণায়; তখন অসম্ভব হয় মুসলিম রূপে বাঁচা। এমন ব্যক্তিরাই মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়ে ইসলামের শত্রু পক্ষের সৈনিক হয়। মুসলিম দেশগুলিতে এরাই ইসলামী বিধানকে পরাজিত এবং অনৈসলামীক ধ্যান-ধারণাকে বিজয়ী করে রেখেছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের মূল অস্ত্রটি হলো পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান। এ জিহাদের মধ্য দিয়েই ইসলামের পথে যাত্রা শুরু হয়। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা প্রথমে নামাজ-রোজা ফরজ না করে কুর’আনের জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছেন। নামাজ-রোজা সঠিক ভাবে করার জন্য কুর’আনের নূরে আলোকিত মন চাই। তাই মুসলিম হওয়ার কাজটি শুধু মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস করলেই হয় না, হৃদয়কে আলোকিত করতে হয় পবিত্র কুরআনের জ্ঞানে। কুরআনের সে জ্ঞানকে মহান আল্লাহতায়ালা নূর তথা আলো বলে অভিহিত করেছেন। মন থেকে জাহিলিয়াতের অন্ধকার সরকয়, কুর’আনী জ্ঞানের এ নূর। তাই যার মধ্যে কুর’আনী জ্ঞান নাই, তাকে বাঁচতে হয় মনের ভূবনে জাহিলিয়াতের গভীর অন্ধকার নিয়ে। সে কুর’আনী নূরের উপর বিশ্বাস যেমন ফরজ, তেমনি ফরজ হলো তা থেকে মনকে আলোকিত করা। তাই নির্দেশ দেয়া হয়েছে:
فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱلنُّورِ ٱلَّذِىٓ أَنزَلْنَا ۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعচْمَلُونَ خَبِيرٌۭ
অর্থ,: “অতঃপর ঈমান আনো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর এবং সেই নূরের উপর (কুর’আনের উপর) যা আমি নাযিল করেছি; এবং তোমরা যা কিছু করো -সে বিষয়ে আল্লাহ খবর রাখেন।” –(সুরা তাগাবুন, আয়াত ৮)। তবে কুর’আনী নূর লাভ শুধু কুর’আনের তেলাওয়াতে জুটে না, সে জন্য কুর’আনের বাণীগুলিকে বুঝতে হয়। তাই কুর’আন বুঝা ফরজ করা হয়েছে, তেলাওয়াত নয়। সে কুর’আনী নূরের সাথে নিজেদের বন্ধনকে মজবুত করার তাগিদেই মিশর, সিরিয়া, ইরাক, মরক্কো, সুদান, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, আলজিরিয়ার ন্যায় বহু দেশের জনগণ মাতৃভাষাকে কবরে পাঠিয়ে কুর’আনের ভাষাকে নিজেদের ভাষা বানিয়েছে।
বদরের ময়দানে যে ৩১৩ জন সাহাবী জিহাদে খাড়া হয়েছিলেন তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ ছিলেন মক্কা থেকে আগত মোহাজির সাহাবী। সশস্ত্র জিহাদে নামার পূর্বে মক্কায় অবস্থান কালে তারা বড় জিহাদটি লড়েছেন নিজের নফসের বিরুদ্ধে। এবং সেটি কুর’আনী জ্ঞানের অস্ত্র দিয়ে। নফসের বিরুদ্ধে সে জিহাদে যারা বিজয়ী হয়েছিলেন -তাদেরকেই প্রথম সারিতে দেখা গেছে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের সশস্ত্র জিহাদে। তারাই প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন খোলাফায়ে রাশেদাকে। তারাই ইসলামের বাণীকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আজকের মুসলিমদের মাঝে ক’জনের হৃদয়ে রয়েছে কুর’আনী জ্ঞানের সে নূর? ফলে ক’জন তাদের চেতনা ভূমিকে পরিশুদ্ধ করতে পেরেছে নানারূপ জাহিলী বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা থেকে? পবিত্র কুর’আন বুঝার সামর্থ্য যার নাই, তার মনে কুর’আনী নূর আসবে কোত্থেকে? ফলে জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে সে জিহাদে কবিরা করবে কীরূপে? সে তো বরং নামাজ-রোজা পালন করেও ভেসে যাবে জাতীয়তাবাদ, সুবিধাবাদ, পুঁজিবাদ, সেক্যুলারিজম, সমাজতন্ত্রের ন্যায় নানা রূপ জাহিলিয়াতের স্রোতে। বাংলাদেশে তো এরূপ স্রোতে ভাসা লোকদেরই বিশাল বিজয়। ফলে এদেশে প্রচণ্ড অভাব পরিশুদ্ধ মনের মুজাহিদের। এজন্যই বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদে লোকবল নাই। কারণ, এদেশে কোটি কোটি নামাজী ও রোজাদার থাকলেও নিজের নফসের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে এমন ঈমানদার নাই। ঘুষখোর, সূদখোর ও মিথ্যাচারী নামাজী-রোজাদারদের দিয়ে আর যাই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের পবিত্র জিহাদটি হয়না। এসব সেক্যুলারিস্ট দুর্বৃত্তগণ বরং ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের পবিত্র জিহাদকে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী বলে ঈমানদারদের উপর নির্যাতন করবে বা তাদেরকে হত্যা করবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। মিশর ও বাংলাদেশের মত দেশে তো সেটিই তো অহরহ হচ্ছে। তারা বরং হাসিনার ন্যায় এক ভোটডাকাত দুর্বৃত্তকে ক্ষমতায় বসিয়ে মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী বলবে। যে কোন প্রকারের দুর্বৃত্তিই গুরুতর অপরাধ; কিন্তু দুর্বৃত্তিকে সমর্থন করাও কি কম অপরাধ? বাংলাদেশে এরূপ অপরাধীদের সংখ্যাটি তো বিশাল। এদের কারণেই তো দুর্বৃত্তগণ বিজয়ী হয় এবং অসম্ভব করে ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। এমন দেশে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ ব্যর্থ হবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?
কীরূপে সম্ভব হয়েছিল ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ?
পৃথিবী পৃষ্ঠে সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণকর প্রতিষ্ঠানটি মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল বা কল-কারখানা নয়; সেটি হলো ইসলামী রাষ্ট্র। কোথাও কোন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলে সে রাষ্ট্রের অবকাঠামো ও তার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সর্বমুখি কল্যাণকর্মের কারখানায় পরিণত হয়। জনগণের জন্য কল্যাণ করা এবং অকল্যাণ থেকে তাদের বাঁচানোই তখন সে রাষ্ট্রের নীতিতে পরিণত হয়। তখন বিপ্লব আসে যেমন নৈতিক, আধ্যত্মিক ও চারিত্রিক অঙ্গণে, তেমনি দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং সুবিচার-সুশাসনের প্রতিষ্ঠায়। সবচেয়ে বড় বিপ্লবটি আসে চরিত্রবান ও দায়িত্ববান মানব গড়ার ক্ষেত্রে। এরূপ কল্যাণকর কাজে রাষ্ট্রের সামর্থ্যটি বিশাল। রাষ্ট্রের হাতে থাকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রশাসন, মিডিয়া, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আদালত। তখন রাষ্ট্র পরিণত হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ারে। রাষ্ট্রের অবর্তমানে সে কাজটি লাখ লাখ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে হয় না।
ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত হলে সমগ্র রাষ্ট্র পরিণত হয়ে জনগণকে জান্নাতে নেয়ার বাহনে। তখন রাষ্ট্র সে মহা কল্যাণকর কাজটি করে প্রতিটি জনপদে কুর’আন-হাদীস চর্চা, সুশিক্ষা, প্রশিক্ষণ, মিডিয়া ও চারিত্রিক পরিশুদ্ধির মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গণ তখন পরিণত হয় শিক্ষাঙ্গণে। মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাল মানুষগুলি সর্বাধিক সংখ্যায় গড়ে উঠেছিলেন নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের আমলে। এর ফলে মুসলিমগণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন বিশ্বশক্তি রূপে এবং তারা গড়তে পেরেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। তাদের সে সাফল্যের মূল কারণ, তাদের হাতে ছিল বিশাল ইসলামী রাষ্ট্র। এর ফলে তারা পেয়েছিলেন ভাল মানুষ গড়ার বিশাল রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানসমূহ। কিন্তু সেরূপ রাষ্ট্র অন্য কোন নবী-রাসূলের হাতে ছিল না। ফলে নবীজী (সা:) সে সাফল্য পেয়েছেন, তাঁরা তা পাননি।
এ পৃথিবী পৃষ্ঠে সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণকর্মটি মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট, হাসপাতাল ও কল-কারখানা গড়া নয়, সেটি হলো ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণের আগে সেগুলি গড়লে শত্রুশক্তি তা সহজেই দখলে নিয়ে নেয়। বাংলাদেশ ও মিশরের ইসলামপন্থীরা সেটি হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। তাদের গড়া বহু প্রতিষ্ঠান তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। তবে মাথা টানলে নাক, কান, চোখ সবকিছুই আসে। তাই ইসলামী রাষ্ট্র গড়লে সকল কল্যাণ কর্মের জোয়ার শুরু হয়ে যায়। নবীজী (সা:) তাঁর ১৩ বছরের মক্কী জীবনে একটি মসজিদও গড়েননি। একটি মাদ্রাসাও নির্মাণ করেননি। সর্বপ্রথম যে কাজটি সমাধা করা জরুরি, নবীজী (সা:) সেটিই সর্বপ্রথম করেন। প্রাসাদ গড়তে হলে প্রথমে বেছে বেছে উন্নত মানের ইট-পাথর ও রড-সিমেন্ট সংগ্রহ করতে হয়। তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে হলে প্রথমে সে রাষ্ট্রের গভর্নর, প্রশাসক, জেনারেল, সৈনিক, বিচারক, শিক্ষক, বিচারপতি, আলেম রূপে যারা কাজ করবে তাদের তৈরী করতে হয়। পাকিস্তান গড়ার আগে সে কাজটি হয়নি, তাই ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার পাকিস্তান প্রকল্প ব্যর্থ হয়ে গেছে।
নবীজী (সা:) ১৩টি বছর ধরে মক্কার বুকে যে কাজটিই দিবারাত্র করেছেন সেটি হলো মানুষ গড়ার কাজ। নবীজী (সা:)’র নিজ হাতে গড়া সে মানুষগুলিই হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তাঁরা যখন বাংলাদেশের চেয়েকর ৫০গুণ বৃহৎ রাষ্ট্রের শাসক ছিলেন তখনও তাদের জন্য কোন প্রাসাদ বানাতে হয়নি। তারা সে কাজটি করেছেন নিজেদের পুরনো মাটির ঘরে বাস করে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের জন্য চাকর-বাকর বা পাহারাদারের নিয়োগ করা হয়নি। সেদিন মানুষ গড়ার সে কাজে মূল উপকরণটি ছিল পবিত্র কুর’আন। কুর’আন শুধু হিদায়েতের গ্রন্থ নয়, এটি বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের অস্ত্রও। বহু বড় বড় সাম্রাজ্য তারা দখলে নিয়েছেন, কিন্তু সেসব দেশের রাজপ্রাসাদের বিলাস সামগ্রী কখনোই খলিফার ঘরে তোলা হয়নি, সেগুলি দরিদ্র মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়া। খলিফা হযরত উমর (রা:) মদিনা থেকে জেরুজালেমের ৫৭০ মাইল পাড়ি দিয়েছেন একজন মাত্র সহচর এবং একটি মাত্র উঠ নিয়ে। সে উঠের পিঠে পালাক্রমে কখনো খলিফা হযরত উমর (রা:) উঠেছেন, কখনো বা তাঁর সহচর উঠেছেন। সমগ্র মানব ইতিহাসে এমন নজির কি একটিও আছে? সেদিন খলিফাসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি দায়িত্বশীল যে তাড়নাটি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতেন তা ছিল মহা আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়া ও তাঁর মাগফিরাত পাওয়ার তাড়না। অথচ বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান বা মেম্বরও রাস্তায় একাকী নামে না। মন্ত্রী ও এমপিগণ নামে একপাল সঙ্গি ও গাড়ির বহর নিয়ে।
মুসলিম জীবনে জিহাদ শুরু হয় ইসলাম কবুলের সাথে সাথে। সে’টি যেমন নিজ মনের জাহিলিয়াত ও খায়েশাতের বিরুদ্ধে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের বুক থেকে জাহিলিয়াত সরাতে। মুসলিম জীবনে সে জিহাদের শুরুটি কুর’আন নাজিলের প্রথম দিন থেকেই। পবিত্র কুর’আনে জাহিলিয়াতে বিরুদ্ধে এ জিহাদকে “জিহাদে কবিরা” তথা বড় জিহাদ বলা হয়েছে। এবং সে জিহাদ লড়তে বলা হয়েছে কুর’আন দিয়ে অর্থাৎ কুর’আনের জ্ঞান দিয়ে। নবীজী (সা:)’র নবুয়তপ্রাপ্তির শুরু থেকে প্রথম ১২ বছর কোনরূপ নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ছিল না, ছিল শুধু কুর’আন বুঝা এবং কুর’আনের শিক্ষাকে কাজে লাগানো। অথচ আজকের মুসলিম জীবনে নামাজ-রোজা বেড়েছে, কিন্তু সবচেয়ে অবহেলিত হয়েছে কুর’আন বুঝার কাজটি। তাদের কাছে গুরুত্ব পায় স্রেফ কুর’আন তেলাওয়াত, কুর’আন বুঝা নয়। ফলে নবীজী (সা:) তাঁর মিশনটি যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, আজকের মুসলিমগণ তার ধারে কাছেও নাই। ফলে তারা বাঁচছে নিজ মনে জাহিলিয়াতের ঘন অন্ধকার নিয়ে। ফলে ইসলাম-পূর্ব আরব কাফিরদের ন্যায় আজকের মুসলিমগণও বাঁচে গোত্রবাদ, জাতীয়তাবাদ ও ইহজাগতিক স্বার্থচেতনা নিয়ে তথা সেক্যুলারিজমের জাহিলিয়াত নিয়ে। তারা শুধু নামেই মুসলিম রয়ে গেছে। এমন কি যারা মোল্লা, মৌলবী, আলেম রূপে পরিচিত, তাদেরও অনেকে সত্যিকার ঈমান ও উন্নত চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠতে পারিনি। তাদের মধ্য থেকে অনেকে এ যুগের দুর্বৃত্ত ইয়াজিদদের জান্নাতি বলে ভূষিত করে এবং তাদের রাজনীতির সমর্থক ও প্রচারকে পরিণত হয়।
লক্ষণীয় হলো, মক্কার বুকে ১৩ বছর কাটানোর পর মদিনায় হিজরতের সাথে সাথে নবীজী (সা:)’র এজেন্ডা পাল্টে যায়। সেখানে পৌঁছে প্রথম দিনেই তিনি মসজিদে নববী নির্মাণ করেন। মদিনাকে রাজধানী করে এবং মসজিদে নববীকে সেক্রেটারিয়েট তথা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ে প্রতিষ্ঠা দেন ইসলামী রাষ্ট্রের। সে রাষ্ট্রই পরবর্তীতে রোমান ও পারস্যের ন্যায় দুটি বিশ্বশক্তিকে পরাজিত করে সর্ববৃহৎ বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের এটিই হলো নবীজী (সা:)’র পদ্ধতি তথা mcthodology। সে প্রক্রিয়ার বিবরণ ইতিহাসের বইয়ে আজও বেঁচে আছে।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018