বাংলাদেশের বিপদ ও সম্ভাবনা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

বিপদের শুরুটি কোথায়?

সকল পতনের শুরুটি দর্শন, বিশ্বাস ও চেতনার বিভ্রাট বা অসুস্থতা থেকে। ব্যক্তির দর্শন বা চেতনাই তাকে কর্ম ও আচরণে পথ দেখায়। আরবগণ যে মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্ম দিল তার মূলে কোন শিল্প বা বিজ্ঞানের বিপ্লব ছিল না, এর মূলে দর্শনের বিপ্লব। এ বিপ্লব মানুষকে ফেরেশতায় পরিণত করেছিল। যে ব্যক্তি গো-মুত্র সেবন করে, মূর্তিকে ভগবান বলে, দলিতদের অচ্ছুৎ বলে এবং লিঙ্গকে পূজা দেয় -তার অসুস্থতা দৈহিক নয়, সেটি মনের। যে জাতির জীবনে চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম-খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের প্লাবন এবং দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে প্রথম হওয়ার রেকর্ড -তা থেকে নিশ্চিত বলা যায়, সে জাতির চেতনার ভূমিটি সুস্থ নয় বাংলাদেশীদের মূল রোগটি এখানেই। দেহের রোগ বড়জোর মহামারী আনে, কিন্তু তাতে জাতির পতন ঘটে না। কাউকে সে রোগ জাহান্নামেও নেয় না। কিন্তু দর্শনে বিপর্যয় জাতীয় জীবনে পতন আনে এবং আখেরাতে জাহান্নামে নেয়। তাই মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে লক্ষাধিক নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছিল দেহের রোগ সারাতে নয়, বরং দর্শনের বা বিশ্বাসের রোগ সারাতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কি করে শুরু হলো বাঙালি মুসলিমের দর্শনে ও চেতনায় এতো অসুস্থতা? এরও দীর্ঘ ইতিহাস আছে?

যক্ষা, কোভিড, স্ট্রোক -এ ধরণের মারাত্মক রোগগুলি আঘাত হানলে দেহের উপর আছড় রেখে যায়। তেমনি জাতীয় জীবনে আছড় রেখে যায় ঔপনিবেশবাদ, ফ্যাসিবাদ ও জাতীয়তাবাদ আঘাত হানলে। পরিতাপের বিষয় হলো বাঙালি জীবনে আঘাত হেনেছে এ তিনটি মারাত্মক ব্যাধিই। তবে বাংলাদেশীদের জন্য বাড়তি বিপদের কারণ, জনগণের অশিক্ষা ও অজ্ঞতা। জীবননাশী রোগগুলি দেশের সবচেয়ে অপুষ্টির শিকার দুর্বল মানুষদের জীবন সর্বপ্রথম কেড়ে নেয়। তেমনি দুষ্ট মতবাদগুলি ভয়ানক বিপর্যয় আনে সবচেয়ে অজ্ঞ ও অশিক্ষিত জাতির জীবনে। ফলে কম্যুনিজমের নামে যেরূপ গণহত্যা, যুদ্ধ ও বিপর্যয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে সৃষ্টি করেছে সেরূপ বিপর্যয় পাশ্চাত্য বিশ্বে সৃষ্টি হয়নি। জ্ঞানবান মানুষেরা সহজেই রোগের উপস্থিতি টের পায় এবং আরোগ্যের চেষ্টা করে। কিন্তু অজ্ঞদের সে হুশ থাকে না।  বাঙালি মুসলিম জীবনে সংকট এজন্যই জটিলতর হয়েছে। দেশ নীচে নামছে এবং দেশবাসী চেতনা ও চরিত্রে দিন দিন অসুস্থতর হচ্ছে -তা নিয়ে শাসক শ্রেণীর মাঝে যেমন ভাবনা শূণ্যতা; সে ভাবনা শূণ্যতা সংক্রামিত হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও। ফলে দিন দিন রোগ বাড়ছে, কিন্তু চিকিৎসার আয়োজন নাই।

আকাশে কালো মেঘ দেখেও ঝড়ের আলামত টের না পাওয়াটি অজ্ঞতা। তেমনি ভয়ানক অজ্ঞতা হলো প্রচণ্ড বিচ্যুতি ও পথভ্রষ্টতার মধ্যে থেকেও বোধোদয় না হয়। ইসলামের মূল যুদ্ধটি তাই অজ্ঞতার নির্মূলে। মহান আল্লাহতায়ালার পবিত্র কুর‌’আনে এ যুদ্ধকে জিহাদে কবিরা বলেছেন। এবং এ যুদ্ধ লড়তে বলেছেন পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান দিয়ে। অজ্ঞতা নির্মূলের এ যুদ্ধটি মানবের জন্ এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে নামাজ-রোজার আগে কুর’আনের জ্ঞানার্জন ফরজ করা হয়েছে। শুরুর এ কাজটি শুরুতে না হলে জীবনের আর কোন কাজই সঠিক পথে হয় না, এমন কি ইবাদতও নয়। অথচ বাংলাদেশে শুরুর সে কাজটিই যেমন শুরুতে হয়নি, তেমনি আজও হচ্ছে না। 

বরফের টুকরো ফ্রিজে না রেখে রোদে রাখলে তা দ্রুত হাওয়ায় হারিয়ে যায়। তেমনি ধর্ম, দর্শন, বিশ্বাস ও ও মূল্যবোধ সহায়ক পরিবেশ না পেলে দ্রুত বিলুপ্ত হয়। একারণেই আরবের বুকে প্রতিষ্ঠা দেয়া নবীজী (সা:)’র ইসলাম আজ আরব ভূমিতে বেঁচে নাই। নবীজী (সা:)’র ইসলামে ছিল মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, শরিয়তী আইন, শুরা ভিত্তিক শাসন, দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ, সার্বজনীন মানবাধিকার  ও গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সবার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা। আজ সে ইসলাম স্রেফ নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতে সীমিত হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে রাজতন্ত্র ও নৃশংস স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদ। একই কারণে বাংলাদেশেও বেঁচে নাই নবীজী (সা:)’র ইসলাম। বাকশালী ফ্যাসিস্টগণ তাদের দীর্ঘকাল দখলদারীতে বাংলাদেশে গড়েছিল এক ইসলামবৈরী পরিবেশ। তাদের লাগাতর যুদ্ধটি ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে। অসম্ভব করেছিল নবীজী (সা:)’র ইসলাম নিয়ে বেড়ে উঠা।  ফলে বাঙালি জীবন থেকে ইসলামী দর্শন, মূল্যবোধ  ও মুসলিম ভাতৃত্ববোধ দ্রুত বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে আজ থেকে ১০০ বছর আগে বাংলার মানুষ ইসলামের যতটা কাছে ছিল, এখন ততটাই দূরে। শত বছর পূর্বে বিছমিল্লাহ, নারায়ে তাকবির বা আল্লাহতায়ালার উপর আস্থা নিয়ে অন্ততঃ বাঙালি মুসলিমদের মাঝে কোন বিরোধ ছিল না। অথচ এখন ঈমানের সে মৌল বিশ্বাসটি বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে উল্লেখ করাও অসম্ভব। ১০০ বছরে আগে বাঙালি মুসলিমগণ বিহারী, পাঞ্জাবী, গুজরাতী, সিন্ধি, পাঠানদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একত্রে রাজনীতি করেছে। খেলাফত আন্দোলন গড়ে তুলেছে এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছে। এবং ২৩ বছরে নানা বর্ণ ও নানা ভাষার মানুষের সাথে অখণ্ড পাকিস্তানে একত্রে বসবাস করেছে। সেরূপ একতা ও প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্বের কথা  কি আজকের বাংলাদেশে ভাবা যায়? এক সময় কোন মুসলিম দেশ ভেঙ্গে যাওয়াতে মুসলিমের হৃদয়ে ক্রন্দন উঠতো। কারণ বিভক্তি মানেই তো উম্মাহর শক্তিহানী। মহান আল্লাহতায়ালা একতা ও সংহতিকে ফরজ করেছেন এবং বিভক্তিকে হারাম করেছেন। অথচ সে চেতনা বাঙালি মুসলিমের চেতনা থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। বরং বছর ঘুরে প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর এলে যারা নিজেদেরকে ইসলামী শিবিরের সৈনিক মনে করে তারাও হিন্দুত্ববাদী, সমাজবাদী ও জাতীয়তবাদী ফ্যাসিস্টদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামে পাকিস্তান ভাঙ্গা নিয়ে উৎসব করতে।  ইসলামী ও অনৈসলামীদের মধ্য ১০০ বছর আগে যে বিভাজন ছিল এখন সেটি নাই। ইসলাম থেকে তথা সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বহু পথ দূরে সরে তথাকথিত ইসলামপন্থীরাও এখন অনৈসলামী শক্তির কাছাকাছি এসে গেছে। তারাও ইসলাম বিরোধী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের সাথে জোটবদ্ধ হয়। এসবই হলো বাঙালি মুসলিমের secularisation তথা ইসলাম থেকে দূরে সরার দলিল।  

শিক্ষার নামে ঈমানধ্বংসী নাশকতা

বাঙালি মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে শয়তানের যে হাতিয়ারটি সবচেয়ে সফল ভাবে কাজ করেছে সেটি হলো সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা। এ শিক্ষাব্যবস্থা মুসলিম সন্তানদের চেতনায় লাগাতর বিষ ঢেলেছে এবং নীরবে ঈমান হত্যার কাজ চালিয়েছে। এ শিক্ষাব্যবস্থার মূল প্রবর্তক ছিল ব্রিটিশ শাসকেরা। বাংলাদেশে সেটি আজও বেঁচে আছে। মুসলিম দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ হতে হয় সন্তানদের ঈমানে লাগাতর কুর’আনী জ্ঞানের পুষ্টি জোগানো। সে কাজটি না হলে জ্ঞানার্জনের ফরজ আদায় হয়না। তখন ঈমানের মৃত্যু হয়। তাই জ্ঞান দানে ও জ্ঞানার্জনে ফরজ বিষয়টি কাউকে বিজ্ঞানী, ডাক্তার বা অন্য কোন পেশাদার বানানো নয়, বরং ঈমানদার বানানো। কিন্তু বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষাদানে ফরজ পালন হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থা পরিণত হয়েছে শয়তানের ঈমান হত্যার হাতিয়ারে। এ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিতরা শয়তানের সৈনিক রূপে বাংলাদেশে ইসলামের উত্থানকে রূখছে। ঔপনিবেশিক শাসনামলেও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এ কাজেই ব্যবহৃত হয়েছিল। মুসলিম সন্তানদের ঈমান হত্যায় এটিই হলো সবচেয়ে সফল ঔপনিবেশিক প্রকল্প। এ প্রকল্প এতোটাই সফল হয়েছে যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আড়াই লাখ ভারতীয় মুসলিমকে ইরাক ও ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে খলিফার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামাতে সমর্থ হয়েছিল! তারা যুদ্ধ করেছিল ব্রিটিশ কাফির বাহিনীকে বিজয়ী করতে। ঈমান বেঁচে না থাকাতে   এরূপ জঘন্য হারাম কাজে অংশ নিতে তাদের বিবেক সামান্যতম দংশন হয়নি।

অতি পরিতাপের বিষয় হলো, ব্রিটিশ কাফির  বাহিনীতে যোগ দেয়ার গুরুতর অপরাধ থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারিনি বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তি কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও জেনারেল আতাউল গণি উসমানী। কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি, আর আতাউল গণি উসমানী হলো জাতীয় বীর। এই হলো বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মান! ১৯৭১’য়ে মৃত ঈমানের এমন লোকদের বিপুল সংখ্যায় দেখা গেছে ভারতীয় কাফিরদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এক পৌত্তলিক শক্তিকে বিজয়ী করতে। অপর দিকে যেসব ডিগ্রিধারী সেক্যুলারিস্ট বাঙালি মুসলিম ১৯১৭ ও ১৯৭১ সালে ব্রিটিশ ও ভারতীয় কাফিরদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়নি -তাদের অপরাধটিও কি কম? ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর দেশটির রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তাদের বেশীর ভাগই যুদ্ধ লড়েছে ইসলামের বিরুদ্ধে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর তাদের যুদ্ধ ছিল মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনকে বিলুপ্ত রাখার কাজে। 

বিষ যেমন প্রাণের বিনাশ ঘটায়, সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থাও তেমনি বিনাশ ঘটায় ঈমানের। মড়ক ধরায় চেতনা ও দর্শনে। তাই মুসলিম দেশগুলিতে মহান আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাস ও আস্থা বিলুপ্ত করতে সেক্যুলারিস্ট ও নাস্তিকদের লাঠি ধরতে হচ্ছে না, দেশের শিক্ষ্যাব্যবস্থাই সেটি ত্বরিৎ সমাধা করছে। ফলে বাংলাদেশে জনসংখ্যার শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম -এ পরিসংখ্যানটি নিছক বইয়ের পাতায় রয়ে গেছে; দেশবাসীর কাজ-কর্ম, ঈমান-আক্বীদা, নীতি-নৈতিকতা, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে সে মুসলিমত্বের হদীস মেলে না। বরং বেড়েছে মূর্তি নির্মাণ, মূর্তির সামনে মাথা নত করে খাড়া হওয়া ও হাতে মঙ্গল প্রদীপ নিয়ে মিছিলের রেওয়াজ। এ শিক্ষাব্যবস্থার ফলেই সফল ভাবে সমাধা হয়েছে কোর্ট-কাচারি, আইন-আদালত, প্রশাসন ও রাজনীতি থেকে ইসলাম সরানোর কাজ। আল্লাহতায়ালার দ্বীনের এরূপ প্রকাশ্য অবমাননা স্বচক্ষে দেখার পরও রুখে দাঁড়ানোর লোক দেশে শতকরা ১০ জনও নাই। থাকলে বাংলাদেশে শরিয়ত দাবী নিয়ে অন্ততঃ কয়েক কোটি মানুষের মিছিল হতো; ঢাকা শহরে মানুষের সুনামী দেখা যেত। মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তকে বিজয়ী করতে নবীজী(সা:)’র সাহাবাদের অর্ধেকের বেশী যেখানে শহীদ হয়েছেন, সে কাজে বাঙালি মুসলিম এমন কি মিছিলে নামতে রাজী হবে না -সেটি কি ভাবা যায়? অথচ বাংলাদেশের এটিই বাস্তবতা। এদেশের ছাত্ররা কোটা বিলুপ্তি, শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের জন্য রাস্তায় নামে, কিন্তু আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কেউ রাস্তায় নামতে রাজী নয়। নীরব ও নিষ্ক্রিয় এ মুসলিমগণ স্রেফ মুসলিম নাম নিয়ে বাঁচে, ঈমান নিয়ে নয়। বনি ইসরাইলীদের ন্যায় তারাও ইসলামকে বিজয়ী করার কোন দায় তাঁরা নিজ কাঁধে নিতে রাজী নয়।

 

ঈমান সংহারে সেক্যুলারিজম   

মানবের যে ভয়ানক রোগটিকে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর‌’আনে বার বার বর্ণনা করেছেন সেটি হলো পরকালকে বাদ দিয়ে স্রেফ দুনিয়া নিয়ে ভাবা ও ব্যস্ত থাকা। মহান করুণাময়ের পক্ষ থেকে পবিত্র কুর‌’আনে এ রোগের কথা বার বার তুলে ধরার কারণ, এ রোগই মানবের সবচেয়ে বড় বিপদটি ঘটায়। এ রোগ যেমন এ পৃথিবী পৃষ্ঠে দুর্বৃত্তির প্লাবন আনে, তেমনি পরকালে জাহান্নামে নেয়। যে ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়, তার জন্য অসম্ভব হলো জান্নাত পাওয়া। তাই ক্যান্সার, হৃদ রোগ বা অন্য কোন গুরুতর দৈহিক রোগের কারণে এ মানব জীবন ব্যর্থ হয়না, কিন্তু নিশ্চিত ব্যর্থ হয় পার্থিব মোহ তথা ইহজাগতিকতার কারণে। পবিত্র কুর’আনে এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা পক্ষ থেকে এ রোগের অসংখ্যবার উল্লেখ। উদ্দেশ্য, এ রোগের বিপদ নিয়ে সাবধান করা।  সুরা ক্বিয়ামার ২০ ও ২১ নম্বর আয়াতে তাঁর বয়ান:

كَلَّا بَلْ تُحِبُّونَ ٱلْعَاجِلَةَ ٢٠

وَتَذَرُونَ ٱلْـَٔاخِرَةَ ٢١

অর্থ: “কখনোই না, (তোমাদের রোগ হলো) তোমরা দুনিয়ার জীবনকে ভালবাস; তোমরা উপেক্ষা করো আখেরাতকে।”।  সুরা আ’লার ১৬ ও ১৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন:

بَلْ تُؤْثِرُونَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا ١٦

وَٱلْـَٔاخِرَةُ خَيْرٌۭ وَأَبْقَىٰٓ ١٧

অর্থ: “বরং তোমরা তো প্রাধান্য দিচ্ছো দুনিয়ার জীবনকে। অথচ আখিরাতের জীবন সর্ব্বোত্তম ও চিরস্থায়ী।”  

ইহজাগতিক কল্যাণের ভাবনা নিয়ে বাঁচাই হলো সেক্যুলারিজম। রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে সেক্যুলারিস্টদের তত্ত্ব হলো, রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে ধর্মের কোন স্থান থাকতে পারেনা। রাষ্ট্র পরিচালনা হবে স্রেফ সেক্যুলার চেতনা তথা ইহজাগতিক কল্যাণের ভাবনা নিয়ে। বহু মুসলিম দেশের সেক্যুলারিস্টগণ সে কথাই বলে। তুরস্কের রজব তাইয়েব আর্দোগানের মত অনেক ইসলামপন্থীরাও এমন কথা বলে। অথচ এমন ধারণা ইসলামে হারাম। কারণ, আখেরাতের ভাবনামুক্ত এরূপ ইহজাগতিক নীতি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা সাথে সাংঘর্ষিক। সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধটি এখানে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। আল্লাহতায়ালা চান, ব্যক্তির প্রতিটি কথা, কর্ম, লেখনী, নীতি ও আচরণের মধ্যে শুধু পার্থিব কল্যাণের ভাবনা থাকবে না, অবশ্যই থাকবে হয় আখেরাতের কল্যাণের ভাবনা। মু’মিন ব্যক্তি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত বাঁচবে আখেরাতের ভাবনা নিয়ে।

মগজকে যেমন দেহ থেকে পৃথক করা যায়না, মু’মিনকে তেমনি পৃথক করা যায়না আখেরাতের ভাবনা থেকে। তাঁর রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, অর্থনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিচার-আচার, প্রশাসন  ও যুদ্ধ-বিগ্রহ আখেরাতের ভাবনা থেকে মুক্ত হতে পারে না। ঈমানদার ব্যক্তি যখন পথের উপর থেকে একটি কাঁটা সরিয়ে দেয়, কাউকে সালাম দেয় বা আপ্যায়ান করে তার মধ্যেও থাকে তার পরকালের ভাবনা। ঈমানদারের জন্য বেঈমান হওয়া যেমন অসম্ভব তেমনি অসম্ভব হলো আখেরাতের ভাবনশূণ্য হওয়া। তাছাড়া রাষ্ট্র হলো পৃথিবীপৃষ্ঠে সবচেয়ে বৃহৎ ও সবচেয়ে শক্তিশাল প্রতিষ্ঠান। মানবের কল্যাণে রাষ্ট্রের ক্ষমতা অন্য সকল প্রতিষ্ঠার চেয়ে বহুগুণ অধিক। আর মানবের জন্য সবচেয়ে বড় কল্যাণ তো তাকে জান্নাতে পৌঁছতে সাহায্য করা। রাষ্ট্র এ কাজে শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। মহান আল্লাহতায়ালা তো সেটিই চান। সেজন্যই নবীজী (সা:) তো রাষ্ট্রকে জান্নাতের বাহনে পরিণত করেছিলেন। অপরদিকে শয়তান চায় রাষ্ট্রকে জাহান্নামের বাহনে পরিণত করতে। মুস‌লিমের উপর ফরজ হলো রাষ্ট্র পরিচালনায় সে অনুসরণ করবে নবীজী (সা:)’‌র সূন্নত। এবং যে নবীজী (সা:)কে অনুসরণ করে সেই তো মহান আল্লাহতায়ালাকে অনুসরণ করে -যা বলা হয়েছে সুরা নিসা ৮০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ ٱللَّهَ

অর্থ: “যে অনুসরণ করে রাসূলকে সেই অনুসরণ করে আল্লাহকে।”‍ তাই একজন ঈমানদার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় প্রকল্পগুলিকে আখেরাতে ভাবনা থেকে মুক্ত রাখে কি করে? ইসলামের এজেন্ডাকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজে তাকে তো রাষ্ট্র ও তার বিশাল অবকাঠামোকে ব্যবহার করতে হয়। সেটিই তো নবীজী (সা:)’র সূন্নত।                                                                       

যারা জান্নাতে যেতে চায়, মৃত্যুর আগেই তাদের জান্নাতের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। জান্নাতের মূল্য পরিশোধ করতে হয় নিজের জান ও মাল মহান অ।ল্লাহতায়ালার কাছে বিক্রয় করে। মৃত্যুর পর সেরূপ বিক্রয়ের কোন সুযোগ থাকে না। ক্রয়কৃত মু’মিনের জান-মাল মহান আল্লাহতায়ালা নিজের কাছে উঠিয়ে নেন না, বরং বান্দার কাছেই রেখে দেন। সেটি এজন্য যে, তা খরচ হবে তাঁর এজেন্ডাকে পৃথিবী পৃষ্ঠে বিজয়ী করার কাজে। সেটিই হলো মু’মিন ব্যক্তির সাথে মহান আল্লাহতায়ালার কৃত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির শর্ত। প্রকৃত মু’মিন হতে হলে তাকে অবশ্যই মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে দায়বদ্ধ হতে হয়। সে চুক্তির বর্ণনা এসেছে সুরা তাওবার ১১১ আয়াতে। বলা হয়েছে,  

إِنَّ ٱللَّهَ ٱشْتَرَىٰ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلْجَنَّةَ ۚ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّۭا فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَٱلْإِنجِيلِ وَٱلْقُرْءَانِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِۦ مِنَ ٱللَّهِ ۚ فَٱسْتَبْشِرُوا۟ بِبَيْعِكُمُ ٱلَّذِى بَايَعْتُم بِهِۦ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ

অর্থ‍: “নিশ্চয়ই আল্লাহ মু‌’মিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে যে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা হত্যা করে এবং নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুর‌’আনে এ বিষয়ে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পালনে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম হতে পারে? অতএব আল্লাহর সাথে যে সওদা করেছো তা নিয়ে আনন্দিত হও। এবং সেটাই মহাসাফল্য।”   

এরূপ একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হলে ঈমানদারের দায়িত্ব হয়, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে সঠিক ভাবে জানা। নইলে বিক্রয়কৃত জান-মালের বিনিয়োগে ভুল হয়। তখন বান্দার কাছে গচ্ছিত মহান আল্লাহতায়ালার আমানতের খেয়ানত হয়। পবিত্র কুর’আনে বর্ণিত মহান আল্লাহতায়ালার সে এজেন্ডাটি হলো:

لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ

অর্থ: “সকল ধর্ম, সকল মতবাদ ও সকল জীবন দর্শনের উপর তাঁর দ্বীনের তথা ইসলামের বিজয়।” মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার একই রূপ বর্ণনা এসেছে সুরা তাওবা, সুরা ফাতাহ ও সুরা সাফ’য়ে।

সাহাবায়ে কেরামের কৃতিত্ব হলো তারা যেমন মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের শর্তটি প্রতিক্ষণ চেতনায় ধারণ করে বেঁচেছেন, তেমন স্মরণে রেখেছেন মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার কথা। ফলে তাদের দ্বারা তাদের রব’য়ের গচ্ছিত আমানতের খেয়ানত হয়নি। তার প্রমাণ, নবীজী (সা:)‌’র এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যিনি নিজের জান ও মালের বিনিয়োগে জিহাদে হাজির হননি। শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সাহাবা জিহাদে শহীদ হয়েছেন|। মানব ইতিহাসে অন্য কোন ধর্মের অনুসারীগণ এমন ইতিহাস গড়েনি।  

কিন্তু আজকের মুসলিমদের মাঝে জান্নাত ক্রয়ে সে আগ্রহ নাই। তাদের চেতনায় মহান আল্লাহতায়ালার সাথে কৃত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির কোন ধারণাই নাই। তারা নিজেদের জান-মালের উপর নিজেদের মালিকানা দাবী করে। ফলে ইচ্ছামত তা বিনিয়োগ করে। এমন কি বিনিয়োগ করে ইসলামের শত্রুপক্ষে এবং জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, ফ্যাসিবাদ, সেক্যুলারিজম, কম্যুনিজমের ন্যায় হারাম মতবাদকে বিজয়ী করতে। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ও দ্বীন নিজ দেশে পরজিত হতে দেখেও তারা প্রতিরোধে ময়দানে নামে না। সশস্ত্র জিহাদ দূরে থাকে, নিহত হওয়ার ভয় নাই এমন শান্তিপূর্ণ মিছিলে যোগ দিতেও তারা রাজী নয়। অথচ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখলে এরা যে কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেদের সকল সামর্থ্য বিক্রয় করতে রাজী। এমন কি ঘর-বাড়ী ও পরিবার-পরিজন ছেড়ে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে যেতে রাজী। এরাই তো কারবালায় হযরত ইমাম হোসেন (রা:)’র লাশের উপর দিয়ে ঘোড়া দাবড়িয়েছে এবং তাঁর মস্তককে খণ্ডতি করে এজিদের কাছে পেশ করেছে। এরাই ১৭৫৭ সালে পলাশীর ময়দানে ইংরেজ বাহিনীকে বিজয়ী করেছে এবং ১৯৭১’য়ে ভারতীয় কাফির বাহিনীকে বিজয়ী করেছে। এই হলো মুসলম নামধারীদের আসল চিত্র। এরা নামে মুসলিম, কিন্তু বাস্তবে বেঈমান। ফলে মুসলিমদের সংখ্যা বিপুল বাড়লেও ইসলামের বিজয় বাড়ছে না। তারা ব্যর্থ হচ্ছে এমন কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তেও। এরই প্রমাণ, ২২টি আরব রাষ্ট্রের কোথাও গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকার স্থান নাই। তারা পিছিয়ে পড়েছে এমন কি পৌত্তলিক কাফিরদের থেকেও।      

 

বেঈমানী কিরূপে জন্ম নেয়?

বেঈমানী জন্ম নেয় অজ্ঞতার গর্ভে। জাহেল তথা অজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষে ঈমানদার হওয়া তাই অসম্ভব। ইসলামে প্রবেশ করতে হলে প্রথমে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। শয়তানের এজেন্ডা তাই কুর‌’আনের জ্ঞানে মানুষকে অজ্ঞ রাখা। অপর দিকে ঈমানদার হওয়ার যুদ্ধের শুরুটি অজ্ঞতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ দিয়ে। কিন্তু সে অজ্ঞতা কি বাঙালি মুসলিম জীবনে কম? শরিয়ত পালন না করলে যে পূর্ণ ইসলাম পালনের কাজটি হয় না -সে বোধই বা ক’জনের? দেশের আদালতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা না দিলে মহান আল্লাহতায়ালার খাতায় যে কাফের, জালেম ও ফাসেক রূপে চিত্রিত হতে হয় (যেমনটি ঘোষিত হয়েছে সুরা মায়েদার ৪৪,৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে) -সে হুশই বা ক’জনের? সে হুশ থাকলে তো প্রতিটি মুসলিম দেশে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা নিয়ে জিহাদ শুরু হয়ে যেত। জিহাদ যে শুরু হয় নাই তার মূল কারণ, কুর’আনে জ্ঞানে অজ্ঞতা। তারা জানে না মুসলিম হওয়ার দায়বদ্ধতা।

অজ্ঞতাই হলো শয়তানের প্রধান হাতিয়ার। শয়তান তার এ শক্তিশালী হাতিয়ারের বলে প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশে বিজয়ী। ক্যান্সারের রোগীও নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারে, মনের খুশিতে সে আনন্দ-ফুর্তিতে অংশ নিতে পারে -যদি সে তার দেহে লুকিয়ে থাকা গুরুতর রোগটির উপস্থিতি টের না পায়। অজ্ঞতা এভাবেই ভয়ানক বিপদকেও ভুলিয়ে রাখে। এরা ভূলে থাকে জাহান্নামের আগুনকেও। কুর’আনী জ্ঞানে অজ্ঞতার কারণে এমন কি নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করেও অনেককে দেখা যায় সেক্যুলার রাজনীতির সৈনিক রূপে শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝান্ডা নিয়ে ময়দানে খাড়া হতে। মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে এরূপ বিদ্রোহ যে তাদেরকে নিশ্চিত জাহান্নামে নেবে -সে হুশটুকুও তাদের থাকে না। বাংলাদেশের ন্যায় শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী বিধানকে বিজয়ী করার কাজে প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকার মূল কারণ হলো এই গভীর অজ্ঞতা। পরিতাপের বিষয় হলো, অজ্ঞতার বিরুদ্ধে যে লড়াইকে মহান আল্লাহতায়ালা সুরা ফুরকানের ৫২ নম্বর আয়াতে “জেহাদান কবিরা” বললেন, সে জিহাদে মুজাহিদ নাই।  অথচ এখান থেকেই কাজের শুরু হওয়া উচিত ছিল। ফলে দিন দিন প্রবলতর হয়েছে অজ্ঞতা। এতে বিজয় বেড়েছে শয়তানের।    

বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে শয়তানের হাতের অজ্ঞতার অস্ত্রটিকে শক্তিশালি করছে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা। সেটি স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কুর’আনী জ্ঞান চর্চার কাজকে অসম্ভব করে। একাজে শয়তানী প্রকল্পের সহায়ক শক্তি হলো বাংলাদেশের সেক্যুলার রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও এনজিও কর্মী। তাদের এ ভূমিকার জন্য ভারত, ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নসহ ইসলামী বিরোধী সকল শক্তির কাছে তাদের অসামান্য কদর। তাদের প্রতিপালনে তারা ব্যয় করে শত শত কোটি টাকা। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এটি হলো তাদের সম্মিলিত স্ট্র্যাটিজী। আন্তর্জাতিক মহলে ভূয়শী প্রশংসা পাচ্ছে ইসলামকে দমিয়ে রাখার তথা কুর’আনী জ্ঞানে অজ্ঞ রাখার এই বাংলাদেশী মডেল। ফলে হাসিনার আমলে  RAB ও পুলিশের হাতে ভয়ানক ভাবে মানবাধিকার লংঘিত হলেও তা নিয়ে পাশ্চাত্যের নেতৃবৃন্দ নিন্দা দূরে থাক, মুখ খুলতেও রাজী হয়নি।  

শূণ্যস্থান বলে এ জগতে কিছু নেই। শূণ্যস্থান থাকে না চেতনা রাজ্যেও। সুশিক্ষার ব্যবস্থা না হলে দেশবাসীর মনের ভূবনটি অবশ্যই কুশিক্ষার দখলে চলে যায়। তখন ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয়ে অর্থদান, শ্রমদান ও রক্তদানের কাজটি কুশিক্ষাপ্রাপ্ত জনগণই নিজ গরজে সমাধা করে দেয়। ইসলামকে পরাজিত করার কাজে কুশিক্ষা তখন সফল হাতিয়ার রূপে কাজ দেয়। একারণে যারা ইসলামের বিজয় চায় তারা সর্ব প্রথম যেটিকে গুরুত্ব দেয় সেটি হলো দেশবাসীর সুশিক্ষা। এবং বন্ধ করে দেয় কুশিক্ষার সকল প্রতিষ্ঠানকে। এরূপ কাজটি ছিল নবী-রাসূলদের। মুসলিমদের দায়ভার হলো, সে কাজকে চালু রাখা। মুসলিমদের জ্ঞানবান করার এজেন্ডা তো সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালারও; তাই তিনি তাঁর সর্বশেষ নবী (সা:)কে সর্বপ্রথম যে নির্দেশটি দিয়েছিলেন সেটি নামাজ-রোজার জন্য ছিল না, সেটি ছিল কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জনের।

আধুনিক যুগে ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব এবং সেক্যুলার শিক্ষার ভয়ানক নাশকতার বিষয়টি অন্য যে কোন মুসলিম দেশের শিক্ষাবিদ ও আলেমদের যারা তুলনায় সবচেয়ে বেশী বুঝেছেন -তারা হলো ইরানী আলেমগণ। ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর ক্ষমতাচ্যুত মহম্মদ রেজা শাহের প্রতিষ্ঠিত সকল সেক্যুলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাঁরা তিন বছরের জন্য বন্ধ রেখেছিলেন। কারণ, সেগুলি ছিল ইসলামের শত্রু উৎপাদনের কারখানা। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পেলেও দেশটির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও আলেমগণ সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার বিপদটি বুঝতে পারেননি। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ যে শিক্ষাব্যবস্থা গড়েছিল ঈমানশূণ্য গোলাম তৈরী করার কারখানা রূপে -সেগুলিকেই তারা অক্ষত রাখে এবং পাকিস্তানের শত্রু উৎপাদনের কাজ  চালু রাখতে দেয়। সেটির পরিণাম বুঝা যায় ১৯৭১‌’য়ে। ফলে একাত্তরে যারা পাকিস্তানে ভাঙ্গার ব্রত নিয়ে ভারতীয় কাফির শিবিরে প্রশিক্ষণ নিতে হাজির হয় -তারা ছিল এই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উৎপাদিত ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারিস্টগণ। তারা ছিল জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদ, সেক্যুলারিজম ও রুশপন্থী ও চীনপন্থী কম্যুনিজমের স্রোতে ভাসা লোক। এ শিক্ষাব্যবস্থা তাদেরকে শিকড়শূণ্য করেছিল; ফলে কচুরিপানার মতই তারা সেদিন ভেসে গিয়েছিল। অথচ একটি মুসলিম দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মূল কাজ স্রেফ অংক, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও ইতিহাস পড়ানো নয়, বরং ইসলামের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের বন্ধনকে মজবুত করা এবং হারাম মতবাদের স্রোতে ভাসা থেকে বাঁচানো; এবং সে সাথে জান্নাতের সিরাতাল মুস্তাকীম দেখানো। পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা সে কাজে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাও।  

লক্ষ্যণীয় হলো, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেদিন যারা ইসলামের পক্ষের শক্তি ছিল তারাও ব্রিটিশদের প্রতিষ্ঠিত সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার ভয়ানক বিপদটি বুঝতে পারেননি; ফলে তারা সেদিন ইসলামী শিক্ষার প্রবর্তন নিয়ে কোন আন্দোলন করেননি। এর কারণ, পাকিস্তানের আলেমগণ শিক্ষাবিদ ছিলেন না, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীও ছিলেন না। কারণ, দ্বীনী মাদ্রাসাগুলিতে এ বিষয়গুলি পড়ানো হয়না। ফলে আরবী উচ্চারণ ও আরবী ব্যাকারণের পণ্ডিত হলেও তারা রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের ব্যাকারণ জানতেন না। ফলে তারা ব্যর্থ হয়েছেন সঠিক পথ খুঁজে পেতে এবং জনগণকে সঠিক পথ দেখাতে। এরই ফলে হলো, বহাল তবিয়তে থেকে যায় ব্রিটিশের প্রবর্তিত ইসলামের শত্রু উৎপাদনের কারখানা। ফলে ইসলামের নামে অর্জিত হলেও পাকিস্তান ব্যর্থ হয় ইসলামী রাষ্ট্র রূপে প্রতিষ্ঠা পেতে।

পাশ্চাত্যের যৌন ফিল্ম এবং রাশিয়া ও চীনের সমাজতান্ত্রিক বই ও পত্র-পত্রিকা যাতে অবাধে প্রবেশ করতে পারে -সেজন্য স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের সেক্যুলার সরকার দেশের দরজা পুরোপুরি খুলে দেয়। সেটি ছিল ছাত্রদের নজর রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর জন্য। যুবকদের চেতনায় মহামারি বাড়াতে এগুলোই পরবর্তীতে ঈমাননাশী ভয়ানক জীবাণুর কাজ করে। পাকিস্তান আমলে দেশের রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটগুলোকে সে জীবাণু-ব্যবসায়ীদের হাতে লিজ দেয়া হয়েছিল। এভাবে দেশের এবং সে সাথে ইসলামের ঘরের শত্রু বাড়ানো হয়েছিল বিপুল হারে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই যারা বিরোধীতা করেছিল এবং দেশটি প্রতিষ্ঠার পর যারা তার বিনাশে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছিল -তারা হলো সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট এবং কম্যুনিস্টরা। কম্যুনিজম তার জন্মস্থানেই মারা গেছে, কিন্তু মারা যাওয়ার আগে মরণ ছোবল মেরে যায় মুসলিমদের ঈমানের ভূমিতে এবং সে সাথে পাকিস্তানের বুকে। উসমানিয়া খেলাফত বিলুপ্তির পরম মুসলিম উম্মাহর এতো বড় ক্ষতি আর কেউ করেনি।  

 

ইম্যুউনিটি ইসলামের বিরুদ্ধে!

ভারতের ন্যায় এক অতি হিন্দুত্ববাদী দেশ দিয়ে পরিবেষ্ঠিত এক ক্ষুদ্র দেশে নিজেদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্ম নিয়ে বাঁচতে হলে চিন্তা-চেতনায় বলিষ্ঠ ইম্যুউনিটি তথা প্রতিরোধ শক্তি চাই। রোগের বিরুদ্ধে মানব দেহে সে ইম্যুউনিটিই বাড়ায় ভ্যাকসিন বা টিকা। তখন কোভিড, কলেরা, যক্ষা বা পলিওর মত ভয়ংকর রোগের মধ্যে থেকেও মানুষ নিরাপদে বাঁচতে পারে। কুর’আনের জ্ঞান ও ইসলামের দর্শন মূলত ঈমানদারের চেতনায় সে ইম্যুউনিটিই তীব্রতর করে। তখন উলঙ্গতা, অশ্লিলতা ও নানা রূপ কুফরির মাঝেও মুসলিমগণ ঈমান নিয়ে বাঁচতে পারে। হিজরতের আগে মক্কার মুসলিমগণ তো তেমন এক ইম্যুউনিটির কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠ কাফেরদের মাঝেও বলিষ্ঠ ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠতে পেরেছিলেন। অথচ মুসলিম অধ্যুষিত সেক্যুলার রাষ্ট্রগুলোতে ইসলামী ইম্যুউনিটি গড়ার সে কাজটি হয়নি। বরং উল্টোটি হয়েছে। ইম্যুউনিটি গড়া হয়েছে চেতনায় ইসলামের প্রবেশ রুখতে; এবং সেটি ইসলাম-বর্জিত শিক্ষার মাধ্যমে। চেতনায় ইসলামের বিরুদ্ধে ইম্যুউনিটি গড়ে তোলার কারণে দুরূহ হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের মনের গভীরে ইসলামের ইতিহাস, মৌল ধ্যানধারণা ও শিক্ষার প্রবেশ।

ইসলামী চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠাকে সাম্প্রদায়িক বা মৌলবাদ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের ন্যায় বহু মুসলিম দেশে সেটি অসম্ভব করা হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে সেটি অসম্ভব ছিল মক্কার কাফের সমাজেও। নবীজী (সা:)’কে ইসলামের প্রচারের কাজ তাই লুকিয়ে লুকিয়ে করতে হতো। এমন প্রকাশ্যে নামাজ পড়াও বিপদজনক ছিল। দ্বীনের এ অপরিহার্য কাজের জন্য যে অনুকূল অবকাঠামো দরকার সেটি যেমন কাফের অধ্যুষিত মক্কায় সম্ভব হয়নি, তেমনি ভারতের ন্যায় অমুসলিম দেশে এবং বাংলাদেশের ন্যায় অনৈসলামিক রাষ্ট্রেও সম্ভব নয়। নবীজী (সা:)’কে তাই মদিনায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে। রাষ্ট্রের কাজ নিছক হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, ব্রিজ বা কলকারখানা নির্মাণ নয়। বরং সেটি হলো, মুসলিম নাগরিকদের ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। তাদের জান্নাতের যোগ্য রূপে গড়ে তোলা। এবং সে সাথে অনৈসলামের বিরুদ্ধে প্রতিটি নাগরিকের মনে চেতনাগত ইম্যুউনিটি গড়ে তোলা। কোন রাষ্ট্রের জিম্মায় এর চেয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই। খাদ্য-পানীয় তো বিশ্বের সব দেশেই জুটে। এমন কি পশুও গহিন জঙ্গলে বা মরুভূমিতেও না খেয়ে মরে না। কিন্তু মুসলিম মন ও মানস প্রকৃত নিরাপত্তা পায় এবং ঈমানী পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠে একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রে। ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ তো এজন্যই প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয। একাজ জিহাদ। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের সে কাজটি না হলে কুফরির বিশ্বব্যাপী স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। তখন সে শুধু বেঁচে থাকে পারিবারিক মুসলিম নামটি নিয়ে, নবীজী (সা:)’র ইসলাম ও মুসলিম চরিত্র নিয়ে নয়। সোভিয়েত রাশিয়ার কম্যুনিস্ট কবলিত মুসলিমগণ বহুলাংশে হারিয়ে গেছে তো একারণেই। একই কারণে বহু মুসলিম হারিয়ে যাচ্ছে পাশ্চত্যের দেশগুলিতেও।

বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট একটি দেশ হলে কি হবে, ১৯৭১’য়ে যে দর্শনের উপর দেশটি জন্ম নিয়েছিল তাতে মুসলিম রাষ্ট্রের কাঙ্খিত সে মুসলিম চরিত্রটি প্রতিষ্ঠা পায়নি। বরং চেতনার ভূমিতে ঢুকানো হয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজমকে পরিচিত করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষবাদ রূপে। অথচ কুর’আন ও সূন্নাহ মতে এ তিনটি মতবাদের যে কোন একটিকে বিশ্বাস করাই হারাম। মুসলিম হওয়ার অর্থ ধর্ম-নিরপেক্ষ হওয়া নয়, বরং সর্ব-অবস্থায় ইসলামের পক্ষ নেয়া। নিজেকে মুসলিম দাবী করে ইসলামের বিজয়ে পক্ষ না নেয়াটি নিরেট মুনাফিকি। এবং ইসলামের পক্ষ নেয়ার অর্থ, মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশিত এই কুর’আনী জীবন বিধানের বিজয়ে নিজের অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্ত দেয়া। শতকরা ৬০-৭০ ভাগের বেশী সাহাবী তো সে কাজে শহিদ হয়েছেন। তাই মুসলিম কখনো জাতীয়তাবাদী হয় না। সেক্যুলারিস্টও হয় না। ধর্মনিরপেক্ষও হয় না। বরং প্রতি পদে এবং রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি ক্ষেত্রে ইসলামের পক্ষ নেয়। সে তার পরিচয় ভাষা বা ভূগোল থেকে পায় না। বর্ণ বা গোত্র থেকেও নয়। পায় ঈমান থেকে।

আর সমাজতন্ত্র? সেটি আজ  খোদ সোভিয়েত রাশিয়াতেই আবর্জনার স্তুপে গিয়ে পড়েছে। অথচ শেখ মুজিব সে আবর্জনাও বাংলাদেশের মুসলিমদের মাথার উপর চাপিয়েছিল। সংবিধানভুক্ত করেছিল। এবং সে জন্য জনগণ থেকে মুজিব কোন রায় নেয়নি। অথচ ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে এটি কোন ইস্যু ছিল না। শেখ মুজিব বাঙালি মুসলিমদের মাথার উপর এ অনৈসলামিক মতবাদগুলি চাপিয়েছিল নিছক তাঁর প্রভু দেশ ভারত ও রাশিয়াকে খুশি করার জন্য। ইসলামের বিরুদ্ধে মুজিবের গুরুতর অপরাধ, একাত্তরের পর ছাত্র-ছাত্রীদের মনে কুফরি ধ্যান-ধারণা বিরুদ্ধে কুর’আনী জ্ঞানের ভ্যাকসিন না দিয়ে বরং টিকা লাগিয়েছিল ইসলামের বিরুদ্ধে। সেটি হচ্ছে ইসলামবিরোধী ধ্যান-ধারণা সম্বলিত শিক্ষানীতির মাধ্যমে। আর সে অপরাধ কর্মটি করা হয়েছে জনগণের দেয়া রাজস্বের অর্থে। এ ভাবে দুরূহ করা হয়েছে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের মনে ইসলামের মৌল শিক্ষার প্রবেশ। জিহাদ বা শরিয়তের প্রতিষ্ঠার ন্যায় ইসলামের এ মৌল বিষয়গুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজ  গ্রহন-যোগ্যতা পাচ্ছে না –সেটি তো একারণেই। নতুন প্রজন্ম পাচ্ছে না ভ্রষ্ট মতবাদগুলোর মোকাবেলায় ইসলামী ইম্যুউনিটি। ফলে জোয়ারের পানির ন্যায় তাদের চেতনায় ঢুকেছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির দর্শন -যার মূল কথাটি আজও অবিকল সেটিই যা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে বলা হতো।

 

রাজনীতি: অপরাধের হাতিয়ার

 ইসলামে রাজনীতি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এটি পবিত্র জিহাদ। এ জিহাদ মিথ্যা ও দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং সত্য ও সুবিচারকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার। রাজনীতি এভাবে মুসলিম জীবনে কাজ করে  ইসলামকে বিজয়ী করার হাতিয়ার রূপে। অথচ বাংলাদেশে রাজনীতি পরিনত হয়েছে অপরাধের হাতিয়ারে। রাজনীতির অঙ্গণে অপরাধীদের দখলদারীর ইতিহাসটি অতি পুরানো। ইসলাম ও বাঙালি মুসলিম স্বার্থের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের রাজনীতি ছিল শেখ মুজিবের। তার রাজনীতিতে প্রচণ্ড লাভবান হয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। হিন্দুগণ তাদের হাজার বছরের ইতিহাসে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন বিজয় পায়নি। তারা প্রথম বিজয় পায় ১৯৭১ সালে। এবং সে বিজয়টি তাদের ঘরে তুলে দেয় মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্টগণ। সেটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে বিজয়ী করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপর ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়ে। এজন্যই ভারতীয় শিবিরে শেখ মুজিব হলো সমগ্র বাঙালিদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। হিন্দুত্ববাদীদের আনুসারী বাঙালিগণ এ জন্যই তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে। অথচ এই ভারতের বুকে মুসলিমগণ প্রতিদিন হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার। ধ্বংস করা হচ্ছে মসজিদ। এবং বহু লক্ষ আসামী মুসলিমের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে কনসেন্ট্রেশন শিবিরে বন্দী করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীগণ চায়, মুজিবের ভারতসেবী রাজনীতিই হোক বাংলাদেশীদের রাজনীতির মডেল। এবং বাংলাদেশীগণ বাঁচুক ভারতের প্রতি নিঃশর্ত গোলামী নিয়ে।

যে দেশটি ইসলামী নয় সেদেশে বসবাসী মুসলিমদের চেতনায় ইসলামের প্রতিরক্ষায় ইম্যুউনিটি গড়ার ফরয কাজটি করে মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম-মাশায়েখ, ইসলামী সংগঠন, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ। তাঁরা সেটি করেন কুর’আন-হাদীস ও ইসলামী দর্শনের জ্ঞান বাড়িয়ে। নবীজী (সা:)’র মক্কী জীবন তো সেটিরই সূন্নত পেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার যেমন সে কাজ করেনি, সে কাজটি সঠিক ভাবে হয়নি আলেমদের পক্ষ থেকেও। ইসলামী সংগঠনগুলো ব্যস্ত ক্যাডার-বৃদ্ধি, অর্থ-বৃদ্ধি ও ভোট-বৃদ্ধির রাজনীতি নিয়ে, কুর’আনের জ্ঞান ও ইসলামী দর্শন বাড়াতে নয়। তারা গড়ে তোলেনি বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে লড়াকু সৈনিক। তাদের অর্থের বেশীর ভাগ ব্যয় হয় দলীয় প্রচার ও আমলা প্রতিপালনে। সে সাথে দেশের মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোও যাদের হাতে অধিকৃত তাদের চেতনায় ইসলামের বিজয় নিয়ে কোন ভাবনা নেই। মসজিদ ও মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটিগুলোতে দখল জমিয়ে আছে পার্থিব স্বার্থ হাছিলে মগ্ন মোড়ল-মাতবর, রাজনৈতিক ক্যাডার ও আলেমের লেবাস ধারী কিছু রাজনৈতিক বোধশূন্য ব্যক্তি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়লেও ইসলামের বিজয় বাড়ছে না। বরং রাজ্যে ভয়ানক ভাবে দূষণ বাড়ছে মুসলিমদের চেতনা। এমন এক দূষণ প্রক্রিয়াই ফলেই অখণ্ড ভারতের মোহ জেগে উঠছে এমন কি ইসলামীপন্থী বহু কর্মীর মাঝেও। এদের অনেকে এখন বলে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিই ভূল ছিল।

 

আগ্রাসী ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা

১৯৭১’য়ে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত যে বিশাল সামরিক বিজয় পেল তাতে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিচয়ই শুধু পাল্টে যায়নি, পাল্টে গেছে বাঙালি মুসলিমদের মনের মানচিত্রও। সামরিক বিজয় কোন পরাজিত দেশেই একাকী আসে না। সাথে আনে আদর্শিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিজয়ও। বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতের একাত্তরের বিশাল বিজয় তাই একাত্তরে এসে থেমে যায়নি। তারা বিরামহীন বিজয় পাচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। একাত্তরে তাদের লক্ষ্য শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গা ছিল না, ছিল বাংলাদেশে ইসলামী চেতনার বিনাশও। তাছাড়া তাদের এ যুদ্ধটি নিছক পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ছিল না, ছিল ইসলাম ও বাংলাদেশের বাঙালি ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধেও। পাকিস্তান-বিরোধী যুদ্ধটি শেষ হয়েছে একাত্তরেই। কিন্তু শেষ হয়নি বাংলাদেশের মাটি থেকে ইসলামপন্থীদের নির্মূলের কাজ।

ভারতের স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য, বাংলাদেশে ইসলামের পুণর্জাগরণকে যে কোন ভাবে প্রতিহত করা। কারণ, ভারত জানে, বাংলাদেশে ইসলামের পুণর্জাগরণ ঘটলে এ এলাকায় ক্ষমতার ১৭ কোটি মানুষের বিশাল বিস্ফোরণ ঘটবে। সেরূপ একটি বিস্ফোরণ ঘটায় বাঙালি মুসলিমগণ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। ভারত কখনোই চায়না বাংলাদেশে ইসলামের পুণর্জাগরণ আসুক এবং বাংলাদেশ পরিণত হোক আরেক পাকিস্তানে। ভারত জানে, বাংলাদেশের সে সামর্থ্য ইদানিং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের চেয়ে অধিক। তাই বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তার মাত্রাও অনেক গভীর‌।

বাংলাদেশের রাজনীতির উপর দখলদারীকে ভারত তার নিজ নিরাপত্তার জন্য -বিশেষ করে উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্যের জন্য, এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে যে, সে অবস্থান থেকে পিছু হটার সামান্যতম সম্ভাবনা নাই। বিজিপি’র বদলে কংগ্রস ক্ষমতায় আসলেও নয়। বস্তুত সে লক্ষ্য অর্জনের জন্যই ভারত ১৯৭১’য়ে যুদ্ধ লড়েছিল। অন্য দেশের জনগণকে স্বাধীনতার দেয়ার জন্য ভারত কোন কালেই কোন যুদ্ধ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। ভারতের অতীতের প্রতিটি যুদ্ধই ছিল অন্য দেশকে গ্রাস করার লক্ষ্য। সামরিক বলে কাশ্মীর, হায়দারাবাদ, গোয়া, মানভাদারকে ভারতভুক্ত করা হলো তার উদাহরণ। বাংলাদেশ নিয়েও ভারতে নীতি ভিন্নতর নয়। এটি সুনিশ্চিত, আগামীতে যারাই ক্ষমতায় আসুক সেটিই হবে ভারতের নীতি।  এর অর্থ, স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে বাংলাদেশকে প্রতিক্ষণ লড়াইয়ের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই বাঁচতে হবে। এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে অবশই নির্ভরযোগ্য বন্ধু খুঁজতে হবে। বাঙালি মুসলিমগণ এমন এক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মুখোমুখী পড়েছিল ১৯৪৭ সালেও। স্বাধীনতা বাঁচানোর তাগিদে সেদিন সোহরাওয়ার্দী, নাজিমুদ্দীন, শেরে বাংলা ফজলুল হকের ন্যায় প্রজ্ঞাবান বাঙালি মুসলিম নেতাগণ পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিলেন।              

                                    

ভারতের বাংলাদেশ ভীতি

ভারতের রয়েছে প্রচণ্ড বাংলাদেশ-ভীতি। ভয়ের মূল কারণ, ইসলাম। ভারতীয়রা মুর্খ নয়। তারা জানে, ইসলামী দর্শন এবং কুর’আনের জ্ঞান জোগায় যে কোন আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি। যে শক্তির বলে আফগান জনগণ ব্রিটিশ বাহিনী ও পরে সোভিয়েত বাহিনীকে পরাজিত করেছিল সেটি অস্ত্রবল ছিল না। অর্থবলও নয়। বরং সেটি ছিল কুর’আনী দর্শনের বল। সে শক্তির বলে তারা মার্কিনীদেরও পরাজিত করেছে। ২০ বছরের যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তার ৫০টি মিত্রদেশকে কখনোই বিজয়ের কাছে ভিড়তে দেয়নি। আর বাংলাদেশীরা আফগানদের থেকে সংখ্যায় প্রায় ৫ গুণ। এতবড় বিশাল জনশক্তির মাঝে ইসলামী চেতনার বিস্ফোরণ হলে তাতে কেঁপে উঠবে সমগ্র ভারত। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ ও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির মূলে ছিল তো এই বাঙালি মুসলিমগণই। জমিনে বীজ থাকলে তা পুণরায় গজিয়ে উঠতে পারে। ভারত সেটি বুঝে । ভারত ইসলামের সে বীজ বাংলার মাটি থেকে ধ্বংস করতে পারিনি। এখানেই ভারতের ভয়।

বাংলাদেশের মূল শক্তি তাই তার ভূগোল নয়, সম্পদও নয়। বরং সেটি এই মুসলিম জনশক্তি। আর এই জনশক্তির সাথে কুর’আনী জ্ঞানের যোগ হলে জন্ম নিবে রাজনৈতিক অঙ্গণে এক মহাশক্তি। মরুর নিঃস্ব আরবেরা বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল তো তেমন এক মিশ্রণ হওয়াতেই। ভারত তাই বাংলাদেশের মানুষকে কুর’আনের জ্ঞান থেকে দূরে সরাতে চায়। এজন্যই প্রতিটি বাংলাদেশীর উপর চলছে ভারতের পক্ষ থেকে বছরের প্রতিদিন এবং প্রতি ঘন্টা নজরদারী। মুজিবকে দিয়ে পাকিস্তানে আমলে চালু করা দ্বীনিয়াত বইটি স্কুলে নিষিদ্ধ করেছিল। হাসিনা বাজেয়াপ্ত করছে জিহাদ বিষয়ক সকল বই। নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল কুর’আনের তাফসির ও জুম্মার খোতবার উপর।

 

অরক্ষিত বাংলাদেশ

বাঘের পাল দ্বারা ঘেরাও হলে বিশাল হাতিও রেহাই পায় না। তাই যে জঙ্গলে বাঘের বাস সে জঙ্গলের হাতিরাও দল বেঁধে চলা ফেরা করে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, দেশটি মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এক দেশ। ঘেরাও হয়ে আছে আগ্রাসী হিন্দুদের দ্বারা। ফলে বাংলাদেশ দারুন ভাবে এক অরক্ষিত দেশ। তাই এদেশটির সীমাবদ্ধতা প্রচুর। যে কোন দেশের প্রতিরক্ষার খরচ বিশাল। আর ভারতের মত একটি বিশাল আগ্রাসী দেশের বিরুদ্ধে সে খরচ তো আরো বিশাল। এ বাস্তবতার দিকে খেয়াল রেখেই বাংলার তৎকালীন শীর্ষ স্থানীয় নেতা খাজা নাযিমউদ্দিন, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আকরাম খাঁ, নূরুল আমীন, মৌলভী তমিজুদ্দীন খান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী সভায় লহোর প্রস্তাবে সংশোধনী এনেছিলেন এবং পাকিস্তানে যোগ দেবার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সংশোধনীর কারণ, ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ গৃহীত লাহোর প্রস্তাবে বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করার কথা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর আব্দুল জলিল লিখেছেন, অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা। সে সত্য বিষয়টি পাকিস্থানপন্থীরা ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালেই বুঝেছিলেন। কিন্তু মেজর আব্দুল জলিল বুঝেছেন পাকিস্তান ভাঙ্গার পর।

১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল সেদেশের সবচেয়ে বড় প্রদেশে রূপে। অথচ এরূপ স্বেচ্ছায় পাকিস্তানভূক্তিকেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলে বাংলার বুকে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন। এটি নিরেট মিথ্যাচার। কোন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন গড়তে হলে যুদ্ধ লড়তে হয়। প্রয়োজন পড়ে দেশী মীর জাফরদের। প্রয়োজন পড়ে লর্ড ক্লাইভ ও পলাশীর। প্রশ্ন হলো, ১৯৪৭’য়ে কে ছিল সেই মীর জাফর? কে ছিল ক্লাইভ? সে মীর জাফর কি ছিলেন সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও আকরাম খাঁ -যারা বাংলাকে পাকিস্তান ভূক্ত করেছিলেন? আর ঔপনিবেশিক বাহিনীই বা কোথায়? কোথায় করলো তারা যুদ্ধ? জেনারেল ওসমানী, মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর আব্দুল জলিল, মেজর খালিদ মোশার্রফ কি তবে সে উপনিবেশিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন?

 

 নতুন স্বাধীনতা: শত্রুরা মানতে রাজী নয় এ স্বাধীনতা

বাংলাদেশীগণ বিস্ময়কর ইতিহাস গড়েছে ২০২৪’য়ের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার ন্যায় ভারতের সেবাদাসী ফ্যাসিস্টকে শাসন ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করে। বহু ব্যর্থতার মাঝে এ হলো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার এক বিরাট বিজয়। বাংলার ইতিহাসে এটি এক গৌরবের দিন। হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হলো এক নতুন স্বধীনতা। কিন্তু এ স্বাধীনতার শত্রু অনেক। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা বাঙালি মুসলিমের ১৯৪৭’য়ের স্বাধীনতা যেমন চায়নি, ২০২৪ সালের স্বাধীনতাও চায়না। স্বাধীন বাংলাদেশকে তারা শত্রু মনে করছে। তাদের পছন্দের বাংলাদেশ তো এক পরাধীন এবং ভারতের প্রতি নতজানু বাংলাদেশ -যেমনটি ছিল শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার সময়। সম্প্রতি (আগস্ট, ২০২৪) কলকাতার এক টিভি চ্যানেলের সাথে সাক্ষাতকারে ভারতের সাবেক সেনা প্রধান শঙ্কর রায় চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশ এখন আর ভারতের বন্ধু দেশ নয়, এখন শত্রু দেশ। ভারত সরকারকে এখন থেকে সতর্ক থাকতে হবে।”

প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কিরূপে ভারতের শত্রু দেশে পরিণত হলো? বাংলাদেশ কি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে?  না, বাংলাদেশ কোন যুদ্ধ শুরু করেনি। দেশটির জনগণ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন হয়েছে মাত্র। ভারত সে স্বাধীনতা মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার প্রতি ভারতীয়দের ঘৃণা যে কতটা তীব্র -সেটির প্রকাশ ঘটছে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাম্প্রতিক বক্তব্যে। প্রকাশ পাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়ার টক শো’তে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার এ ভারতীয় শত্রুগণ বলে, “ভারত নাকি ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল।” তাদের এ দাবী যে কতবড় মিথ্যা -সেটি বুঝে উঠা  কি এতোই কঠিন? অথচ ১৯৭১ সাল থেকে ভারত সে প্রকান্ড মিথ্যাকেই জোর গলায় শুনিয়ে আসছে।  ভারত তো একাত্তরে বাংলাদেশীদের গলায় গোলামীর শিকল পরিয়েছিল। বাংলাদেশে মানুষ সে গোলামী থেকে এবার মুক্তি পেল। ভারত সেটি চায়নি। ভারতের ১৯৭১’য়ের প্রকল্প এভাবে যে ব্যর্থ হবে -ভারত তা ভাবতে পারিনি। তাই মনের তীব্র আক্রোশে ক্ষোভ ঝাড়ছে বাংলাদেশীদের প্রতি।    

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *