অসভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের আওয়ামী মডেল
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on January 12, 2025
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট অসভ্যতা
সভ্যরাষ্ট্র নির্মাণের যেমন রেসিপি আছে, তেমনি রেসিপি আছে অসভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের। মানব জাতির ইতিহাস এ দুটো রেসেপিকেই চোখের সামনে তুলে ধরেছে। মুসলিমের ঈমানের প্রতিক্ষণ পরীক্ষা হয়, তারা কোন রেসেপিকে গ্রহণ করে – তা নিয়ে। মহান নবীজী শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের বিধান দিয়ে যাননি, দিয়ে গেছেন সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের রেসেপিও। সে রেসিপি অনুসরণ করেই নির্মিত হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র ও সভ্যতা। মুসলিমদের উপর ফরজ হলো নবীজীর সে রেসেপির অনুসরণ করা। এবং যারা নবীজীকে অনুসরণ করে, একমাত্র তারাই অনুসরণ করে আল্লাহকে। এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতাটি বিশাল। তারা নবীজী’র দেয়া সে রেসেপিকে কাজে লাগায়নি; বরং প্রয়োগ করেছে শেখ মুজিবের দেয়া অসভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের রেসেপি। মুজিবের সে রেসেপির মূল উপাদান হলো, অবাধ দুর্বৃত্তি, দলীয় ফ্যাসিবাদ, কর্ম ও চেতনায় ইসলামশূণ্যকরণ এবং ভারতসেবী দাসত্ব। সে রেসেপিকে কাজে লাগানোর কাজে শেখ মুজিব রাষ্ট্রকে হাতিয়ারে পরিণত করেছিল। হাসিনা সে অসভ্য ধারাকে চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল।
রাষ্ট্রের শক্তি ও সামর্থ্য বিশাল। কোন অসভ্য দুর্বৃত্তের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে প্লাবন আসে দুর্বৃত্ত উৎপাদনে। পাগলা হাতির ন্যায় রাষ্ট্র তছনছ করে দিতে পারে ধর্ম পালন ও সভ্য জীবন-যাপনের প্রতিটি আয়োজন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রের সে নাশকতা দেখা গেছে ফ্যাসিস্ট মুজিব ও হাসিনার শাসনামলে। দেশ তখন অধিকৃত হয়েছিল ভয়ংকর চোর-ডাকাত, লম্পট ও সন্ত্রাসীদের হাতে। মুজিব ক্ষমতায় বসেই যুদ্ধ শুরু করে বিরোধীদের নির্মূলে এবং গড়ে তুলে রক্ষিবাহিনীর ন্যায় এক ভয়ানক দানবীয় দুর্বৃত্ত বাহিনীকে। বলা হয়ে থাকে ৩০ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী তাদের হাতে খুন হয়েছে। সে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পায় বেহারীদের বাড়ী দখল, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকুরি দখল এবং বিহারী মেয়েদের উপর ধর্ষণের স্বাধীনতা। সেটি ছিল জঙ্গলে বীভংসতা। দেশে তখন আইন-শৃঙ্খলার কোন বালাই ছিলনা। বিহারী মেয়েদের উপর ধর্ষণে নামে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের ক্যাডার, মুক্তি বাহিনীর সদস্য, বাংলাদেশ রাইফেলস (BDR) এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। বিহারী মেয়েদের গৃহে বন্দী করে পুরুষদের বস্তিতে নামিয়ে দেয়। বিহারী নারী ধর্ষণ তখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের স্পোর্টসে পরিণত হয়। অত্যাধিক ধর্ষণের ফলে অনেক লম্পট লিঙ্গে ব্যাথার কাহিনীও শোনায়।
একাত্তর পরবর্তী খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামাল সিদ্দিকী এ গ্রন্থের লেখককে ধর্ষণের কিছু লোমহর্ষক কাহিনী শুনিয়েছিলেন। মুক্তি বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার মেজর আব্দুল জলিল তখন খুলনায়। একটি বাসায় তিনটি বিহারী মেয়ে বন্দী রেখে সে লাগাতর ধর্ষণ করতো। মেয়েদের মা জনাব কামাল সিদ্দিকীর কাছে এসে মেয়ে তিনটিকে মুক্ত করার অনুরোধ করেন। ডিসি কামাল সিদ্দিকী মেয়ে তিনটি ছাড়ার কথা বললে মেজর জলিল সে অনুরোধে সাড়া দেয়নি। জনাব কামাল সিদ্দিকী বিষয়টিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দীন এবং যশোর ক্যান্টনমেন্টের মেজর মঞ্জুরকে জানান। তখন এরূপ অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে। কিন্তু কোন একটি ধর্ষণেরও বিচার হয়নি। অবস্থা এমন দাড়িয়েছিল বিহারীদের হত্যা, তাদের গৃহ ও সম্পদের উপর ডাকাতি এবং তাদের মহিলাদের উপর ধর্ষণ করলে কেউ কোন প্রতিবাদ করতো না। কারো কোন শাস্তি হতো না। সে সময় এমন অপরাধে বাধা দেয়ার কেউ ছিল না। বরং এরূপ লাম্পট্য ও দুর্বৃত্তি সেদিন স্বাভাবিক রীতি বা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। কারণ যেসব প্রবীন আওয়ামী দুর্বৃত্তরা সে সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, তারা ছিল এসব দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয়দাতা।
তখন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের কাজ হয় গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী, সেগুন বাগিচা, ওয়ারীসহ সমগ্র দেশ জুড়ে অবাঙালিদের ঘরবাড়ী ও দোকানগুলি দখলে নেয়া। ঢাকার মীরপুর ও মহম্মদপুর ছিল বিহারীদের বসতি এলাকা। এ দুটি এলাকাই পরিণত হয় বিহারীশূণ্য দুর্বৃত্তদের বসতিতে। বিহারীদের স্থান হয় জাতিসংঘ পরিচালিত জেনেভা ক্যাম্পে, কোন গৃহে নয়। অবৈধ দখলের মাধ্যমে শেখ ফজলুল হক মনি বিশাল বাড়ি ও প্রেসের মালিক বনে যায়। দখলকৃত সে প্রেস থেকে দৈনিক বাংলার বাণী নামে একটি পত্রিকা বের করা শুরু করে। বিশাল বাড়ির মালিক হয়েছে শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাকসহ অধিকাংশ মুজিব পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা। মোফাজ্জেল হোসেন মায়া ঢাকার নবাবপুর রোডের একটি মার্কেটের মালিক হয়ে যায়। বস্তুত একাত্তরে স্বাধীনতা পরিণত হয় বিহারী হত্যা, বিহারীদের বাড়ি দখল ও বিহারী মেয়েদের ধর্ষণের স্বাধীনতা। তাদের সে স্বাধীনতায় লক্ষাধিক বিহারী সেদিন প্রাণ হারিয়েছিল। সে সাথে হামলার শিকার হয়েছে এবং প্রাণ হারিয়েছে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামী ইসলামীর ন্যায় পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থীরা দলের বহু হাজার নেতাকর্মী। তাদের ঘরবাড়ীও লুট করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন, ড. হাসান জামানের ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাকিস্তানপন্থী শিক্ষকগণ। কিন্তু সে আওয়ামী শাসনামলে সাধারণ জনগণ কোন স্বাধীনতা পায়নি। বরং তারা হারিয়েছিল নির্বাচনে ভোটের অধিকার। গণতন্ত্র তখন কবরস্থ হয় এবং নিষিদ্ধ হয় সকল রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠা পায় একদলীয় বাকশাল। ১৯৭৪’য়ের দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারায় বহু লক্ষ মানুষ। বাসন্তিরা শাড়ির অভাবে জাল পড়তে বাধ্য হয়। সমগ্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি পরিণত হয় সন্ত্রাসের হাতিয়ারে। এ পরিস্থিতি মুজিবের ছেলে বিয়ে করলো সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে। এসবই হলো অসভ্য রাষ্ট্র নির্মাণে মুজিবের রেসেপি।
ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বে বাংলা বিজয়ের পর সুলতানী আমল, মোগল আমল, ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমল পার হয়েছে। কিন্তু কোন আমলেই এতো হত্যা, এতো ধর্ষণ, ঘরবাড়ী ও সম্পদের উপর এতো বেআইনী দখলের কান্ড কখনোই হয়নি। কি বিস্ময়ের বিষয়! এই আওয়ামী অসভ্য আমলের নৃশংস দুর্বৃত্তদেরকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে একাত্তর নিয়ে বহু বই লেখা হয়েছে। পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকারদের নিয়ে বহু কিছু লেখা হয়েছে, কিন্তু এই বাঙালি দুর্বৃত্তদের বর্বর কর্ম নিয়ে এক খানি বইও লেখা হয়নি। বাঙালি বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও লেখকগণ যেন এসব অপরাধের কিছুই দেখেনি বা কিছু শোনেনি! গরু-ছাগলের সামনে কেউ খুন হলে বা ধর্ষিত হলেও গরুছাগল নীরবে ঘাস খায়; কোন প্রতিবাদ করে না। সেরূপ এক অভিন্ন অবস্থা দেখা যায় একাত্তর পরবর্তী জয়বাংলা ঘরানার বাঙালি বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও লেখকদের।
রাষ্ট্রের দায় এবং জনগণের দায়
সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণে অপরিহার্য হলো: সরকারকে কিছু অনিবার্য দায়িত্ব পালন করতে হয়, এবং দায়িত্ব পালন করতে হয় জনগণকেও। নইলে অসম্ভব হয় সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণ। জনগণের দায়িত্ব হলো, তাদের সামনে যখন কোন খুন, চুরিডাকাতি, জবরদখল, নির্যাতন ও ধর্ষণের কান্ড ঘটে -সেগুলির পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া। সেটি যেমন জনগণের সামনে, তেমনি আদালতে। সাংবাদিক ও লেখকদের দায়িত্ব হলো তা লিখে প্রকাশ করা। শাক্ষি গোপন করা ইসলামে কবিরা গুনাহ -যা মানুষকে জাহান্নামে নেয়। আর সরকারের দায়িত্ব হলো প্রতিটি অপরাধীকে বিচারে আঁওতায় আনা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যেমন মুজিব আমলে হয়নি, তেমনি জিয়ার আমলেও হয়নি। বরং উভয় আমলেই দুর্বৃত্তিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে তাদের দখলে নেয়া বিহারীদের ঘরবাড়ী ও দোকানপাটের মালিকানা দিয়ে। সে ডাকাতির জন্য কাউকে কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। কোন সভ্য দেশে এমনটি ঘটে। এটি নিরেট অসভ্য রাষ্ট্রের রীতি। এভাবেই একাত্তরে ঢাকার মীরপুর ও মহম্মদ পরিণত হয়েছিল নৃশংস ডাকাতদের আবাসিক এলাকায়। এরূপ কান্ড ঘটেছে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে। এভাবেই বাংলাদেশের দ্রুত যাত্রা শুরু হয় অসভ্য বর্বরতার দিকে। এবং তারই পরিণতি হলো দেশটি বিশ্বের ২০০টি দেশকে হারিয়ে দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম স্থানও অধিকার করে। কথা হলো, মহান আল্লাহতায়ালা কি এমন দুর্বৃত্তদের পরকালে জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন? বেশী বেশী মসজিদ নির্মাণ করে এবং নামাজ-রোজা পালন করে কি এ অপরাধ থেকে মুক্তি মেলে? ডাকাতি করা ঘরে বসে সারা রাত তাহাজ্জুদ পড়লেও কি তা কবুল হয়?
কোভিডের ন্যায় লাম্পট্যও অতি সংক্রামক। শাস্তি না দিলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তখন সেটি জাতীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। মুজিবের আমলের সে অসভ্যতা ও বর্বরতা হাসিনার আমলে এসে ব্যাপক ভাবে সংক্রামিত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিকে। লম্পটদের ধর্ষণের শিকার হয় বিহারী মেয়েদের জায়গায় বাঙালি মুসলিম মেয়েরা। মুজিব আমলের ন্যায় হাসিনার আমলেও ধর্ষণ উৎসবের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মী ধর্ষণে সেঞ্চুরীর উৎসবও করে বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাসে। সে খবর পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। কিন্তু সে বীভৎসতা শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের বিবেকে নাড়া দেয়নি। ফলে সে লম্পটকে গ্রেফতার করা হয়নি, শাস্তিও দেয়া হয়নি। তাই ধর্ষিতারা কোন বিচার পায়নি। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বার বার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে একুশে ফেব্রেয়ারী ও থার্টি ফাস্টের রাতে। দলীয় ক্যাডারদের নিয়মিত নারী সরবরাহ করা হতো ঢাকার বিভিন্ন ছাত্রী হোস্টেল থেকে। ইডেন কলেজ থেকে নারী সাপ্লাইয়ের কাহিনী তো পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
আওয়ামী দুর্বৃত্তদের এরূপ অবাধ স্বাধীনতার মাঝে সাধারণ মানুষ হারিয়েছিল ভোটের অধিকার। নিষিদ্ধ হয়েছিল সকল রাজনৈতিক দল। বন্ধ হয়েছিল সকল বিরোধী পত্রিকা। এবং ১৯৭৪ সালে বহু লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায় মুজিবের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে। দরিদ্র বাসন্তিরা শাড়ির অভাবে জাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল। পুলিশ, রক্ষিবাহিনী ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি পরিণত হয়েছিল নৃশংস সন্ত্রাসের হাতিয়ারে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনে সংকটে পড়েছিল বাঙালি মুসলিমের ইসলাম পালন। পুলিশী বাধার মুখে পড়েছিল ওয়াজ মাহফিল। বায়েজাপ্ত করা হয়েছে জিহাদ বিষয়ক বই। আলেমদের পায়ে ডান্ডাবেরি পড়িয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে এবং কারাবন্দী করা হয়েছে। অপর দিকে জনগণকে ধোকা দিতে মধ্য প্রাচ্যের শেখদের অর্থে থানায় থানায় প্রাসাদতুল্য মসজিদ গড়ে ইসলাম প্রেম দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো, আল্লাহতায়ালার দ্বীন পালনের কাজ কি শুধু মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়িয়ে চলে? সেটি সম্ভব হলে নবীজী ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের জীবনে এতো যুদ্ধ কেন? কেনই বা তাদেরকে রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসতে হলো?
নবীজী’র যে সূন্নত মুসলিমদের বিশ্বশক্তির ইজ্জত দিল
নবীজী’র জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটি হলো, রাষ্ট্রের ইসলামীকরণ তথা ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য চাই রাষ্ট্রীয় শক্তির পূর্ণ ব্যবহার। চাই রাজনৈতিক, সামরিক ও প্রশাসনিক বল। নইলে দুর্বৃত্ত শক্তির নির্মূল যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। এবং অসম্ভব হয় বিদেশী শক্তির হামলার প্রতিরোধ। সে জন্য চাই রাষ্ট্রের বিশাল ভূগোল। ছোট্ট এক টুকরো ভূমির উপর কি বিশাল দুর্গ গড়া যায়? শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র ও শ্রেষ্ঠ সভ্যতার নমুনা রূপে বিশ্বমাঝে মাথা তুলে দাঁড়াবার জন্য তো চাই দেশের বিশাল ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র। চাই নানা ভাষা, নানা অঞ্চল ও নানা বর্ণের মানুষের মাঝে গভীর একতা ও সম্পৃতি। নবীজী তাই দ্রুত ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা বাড়াতে মনোযোগী হয়েছিলেন। ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা বাড়াতে তাঁকে রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়তে হয়েছে। এবং মৃত্যুর আগে সাহাবাদের নসিহত করে যান, রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানি কন্সটান্টিনোপল (আজকের ইস্তাম্বুল) দখল করার। এটি ছিল নবীজী’র ভূ-রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি ও ভিশন। মুসলিমদের জানমালের সবচেয়ে বড় কুর’বানী হয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রের শক্তি ও নিরাপত্তা বাড়াতে। পরিপূর্ণ দ্বীন পালন, সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মাণ ও বিশ্বমাঝে সুমহান বিশ্বশক্তির মর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে দাড়ানোর সামর্থ্য সৃষ্টি হয়েছে তো এভাবেই। মুসলিমদের সামনে এরূপ রাষ্ট্র নির্মাণই হলো নবীজী’র সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত। মুসলিমগণ আজ সে সূন্নত নিয়ে বাঁচে না বলেই আজ তারা শক্তিহীন, স্বাধীনতাহীন ও ইজ্জতহীন। ফলে ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, রোহিঙ্গা, উইঘুর ও ভারতীয় মুসলিমদের পাশে দাঁড়াবার কেউ নাই।
এরূপ বেহাল অবস্থার মূল কারণ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যে আসনে মহান (সা:) ও তাঁর খলিফাগণ বসেছেন, সে পবিত্র আসনে বসেছে মুজিব-হাসিনার ন্যায় চোর-ডাকাত, দুর্বৃত্ত ও কাফের শক্তির সেবাদাসেরা। আজ সে আমলের ন্যায় বিশাল ভূগোল যেমন নাই, তেমনি নেই সে সামরিক বলও। স্বৈরাচারী শাসকগণের মূল যুদ্ধটি মূলত ইসলামের বিরুদ্ধে। মুসলিম ভূমিতে তারা বিলুপ্ত করতে চায় জনগণের মাঝে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও শরিয়ত পালনের সামর্থ্য। মুসলিমদের পতনের শুরু তো তখন থেকে যখন আলেমগণ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও সংস্কারকে বাদ দিয়ে স্রেফ মসজিদ ও মাদ্রাসার চার দেয়ালের মাঝে নিজেদের ধর্ম-কর্মকে সীমিত করে। পতনের মূল কারণ, সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি রূপে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে নবীজী যে মহান সূন্নত রেখে যান সেটির প্রতি গুরুত্ব না দেয়া। পরিতাপের বিষয় হলো, আলেমগণও সরেছে নবীজীর প্রতিষ্ঠিত ইসলাম থেকে। শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় জিহাদে অংশ নেয়া দূরে থাক,আলেম-উলামা ও মুফতিগণ জিহাদের কথা এবং শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কথা মুখে আনতেও ভয় পায়। তাদের ভয়, না জানি ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের নজরে সন্ত্রাসী রূপে চিহ্নিত হতে হয়। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহকে আর কি ভয়, তাদের বেশী ভয় স্বৈর শাসকদের নিয়ে। অথচ ঔপনিবেশিক ইউরোপীয় কাফের শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার পূর্বে শরিয়তই ছিল সমগ্র মুসলিম বিশ্বের আদালতে একমাত্র আইন।।
মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা, সংহতি ও ভূগোল বৃদ্ধি ইসলাম ধর্মে অতি পবিত্র ইবাদত। সত্যিকার মুসলিমগণ এ কাজে যেমন অর্থ দেয়, তেমনি প্রাণও দেয়। জিহাদের রশদ বৃদ্ধিতে হযরত আবু বকর (রা:) তার ঘরের সমুদয় সম্পদ নবীজী’র সামনে এনে পেশ করেছিলেন। অন্যান্য সাহাবাদের অবদানও ছিল বিশাল। মু’মিনের অর্থদান ও আত্মদানে মুসলিম ভূমিতে শুধু মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যাই বাড়ে না, সে সাথে বিলুপ্ত হয় দুর্বৃত্তদের শাসন এবং প্রতিষ্ঠা পায় মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধান পালনের সহায়ক পরিবেশ। যে দেশে জিহাদ নাই, সে দেশে সেরূপ পরিবেশ গড়ে উঠে না। বরং শাসক রূপে ঘাড়ে চেপে বসে চোর-ডাকাতগণ। হাসিনা ও তার পিতা মুজিবের আমলে বাংলাদেশে অবিকল সেটিই হয়েছে। মুসলিমদের গৌরব কালে মুসলিমদের জানমাল, শ্রম ও মেধার বেশীর ভাগ ব্যয় হয়েছে জিহাদে, ফলে নির্মিত হয়েছে সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা।
জিহাদে ধরা পড়ে মুনাফিকি
কে মু’মিন আর কে মুনাফিক -সেটি কোন কালেই মসজিদের জায়নামাজে ধরা পড়েনি। ধরা পড়েছে জিহাদে। ওহুদের যুদ্ধের সময় নবীজী’র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজার। কিন্তু তাদের মধ্যে ৩০০ জন তথা শতকরা ৩০ ভাগই ছিল মুনাফিক যারা নবীজী’র জিহাদী কাফেলা থেকে সিটকে পড়ে। সিটকে পড়া এ মুনাফিকগুলি যে শুধু নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করতো তা নয়, মহান নবীজী’র পিছনে দিনের পর দিন নামাজ পড়েছে। রোজাও রেখেছে। জিহাদ এভাবেই সাচ্চা মু’মিনদের বাছাইয়ে ফিল্টারের কাজ করে। মুখোশ খুলে যাবে এ ভয়ে মুনাফিকগণ সে ফিল্টারের মধ্য দিয়ে যেতে ভয় পায়। এজন্যই দেশকে তারা জিহাদ মুক্ত রাখতে চায়। তাদের পক্ষ থেকে জিহাদের বিরুদ্ধে এজন্যই এতো প্রচারণা।
শত্রুর বিজয় এবং বাঙালি মুসলিমের পরাজয়
মুসলিম জনসংখ্যাটি আজ বিশাল। কিন্তু কোথায় সে সামরিক ও রাজনৈতিক বল? কোথায় সে ইজ্জত? শক্তি ও ইজ্জত তো বাড়ে অর্থত্যাগ ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে। মুসলিম জীবনে যদি সেরূপ বিনিয়োগ না থাকে তবে কি শক্তি ও ইজ্জত থাকে? রাজনৈতিক বল বাড়াতে যেমন চাই আত্মত্যাগী বিশাল জনবল, তেমনি চাই বিশাল ভূগোল। বিশাল ভূগোলের কারণেই ভারতের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি আজ বিশাল। অথচ ভারতে বাস করে বিশ্বের সর্বাধিক দরিদ্র মানুষ। মুসলিম উম্মাহর সামরিক ও রাজনৈতিক বল বাড়াতেই ইখতিয়ার মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির ন্যায় মহান তুর্কি বীর বাংলার বুকে ছুটে এসেছিলেন। তেমনি এক মহান লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে উপমদেশের মুসলিমগণ নানা ভাষা, নানা প্রদেশ ও নানা বর্ণের ভেদাভেদ ভূলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম দেয়। সেটাই ছিল ১৯৪৭’য়ের লিগ্যাসি। এর মূলে ছিল প্যান-ইসলামীক চেতনা। কিন্তু ইসলামের শত্রুপক্ষের কাছে পাকিস্তানের জন্ম শুরু থেকেই পছন্দ হয়নি। হিন্দু, খৃষ্টান, ইহুদী, নাস্তিক, বামপন্থী এরা কেউই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকে মেনে নিতে পারিনি। কারণ ইসলাম ও মুসলিমের শক্তি ও গৌরববৃদ্ধিতে তারা কেউই খুশি নয়, বরং সেটিকে নিজদের রাজনৈতিক এজেন্ডার বিরুদ্ধে হুমকি মনে করে। ফল দেশটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয় ১৯৪৭ থেকেই। সে ষড়যন্ত্রের সাথে নিজেকে জড়িত করে শেখ মুজিব। ১৯৪৭’য়ে শুরু করা ষড়যন্ত্রটি সফল হয় ১৯৭১’য়ে। তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পদতলে মৃত্যু ঘটে তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃবহৎ মুসলিম রাষ্ট্র অখণ্ড পাকিস্তানের। অথচ পাকিস্তানের সৃষ্টিতে বাংলার মুসলিমদের ভূমিকা ছিল উপমহাদেশের আর যে কোন ভাষার মুসলিমদের চেয়ে অধিক। তারাই ছিল দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক।
বিশাল স্বর্ণ খণ্ডকে যে ব্যক্তি মামুলী পাথর খণ্ড মনে করে, সে স্বর্ণ খণ্ডটি হারিয়ে গেলে তারা কাছে দুঃখ জাগে না। তেমনি এক গভীর অজ্ঞতা ও চিন্তাশূণ্যতার কারণে বিশাল উসমানিয়া খেলাফত ভেঙ্গে যাওয়াতে মুসলিমদের মাঝে দুঃখ জাগেনি। দুঃখ হয়নি পলাশীর প্রান্তরে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার স্বাধীনতা অস্ত যাওয়াতেও। বরং ইংরেজ বাহিনীর বিজয় উৎসব দেখতে হাজার হাজার বাঙালি মুসলিম সেদিন রাজধানী মুর্শিদাবাদের সড়কের দু’পাশে ভিড় জমিয়েছিল। সে অসুস্থ চেতনার কারণে বাংলার বুকে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে বড় রকমের জিহাদও সংঘটিত হয়নি। বাঙালি মুসলিমদের জীবনে একই রূপ অজ্ঞতা পুনরায় দেখা দেয় ১৯৭১’য়ে। ফলে কাফেদের বিজয় উৎসবও তাদের নিজেদের উৎসবে পরিণত হয়েছে। ঢাকার রাস্তায় ভারতীয় সেনাদের অনুপ্রবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন দুপাশে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড বিজয়-উল্লাস করেছে। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে মুজিবের বিশাল সাফল্যের বড় কারণ, ভারতের সাথে ষড়যন্ত্রের সে গোপন বিষয়টি মুজিব গোপন রাখতে সমর্থ হয়েছিল। জনগণ জানলে কি তার মত ভারতীয় চর ও ষড়যন্ত্রকারীকে ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে ভোট দিত? বাংলার মুসলিমদের বড় ব্যর্থতা, তারা একাত্তরে ইসলামের মূল শত্রুদের চিনতে ভয়ানক ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ঘুমের ঘোরে গোখরা সাপকে গলায় পেঁচিয়ে নেয়ার বিপদ তো ভয়াবহ। একাত্তরে সেটিই ঘটেছে। সে ভূলের পরিনাম হলো, আজ লুণ্ঠিত হচ্ছে শুধু পদ্মা-তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর পানি নয়, টান পড়েছে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বেও।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ১৯৪৭’য়ের নেতৃবর্গ এবং ১৯৭১’য়ের নেতৃবর্গ
- অসভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের আওয়ামী মডেল
- মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি এবং অর্জিত বিপর্যয়
- গণতন্ত্র ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নতুন সমীকরণ
- বাঙালি মুসলিমের রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণ
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- January 2025
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018