সন্ত্রাসী স্বৈরাচারিদের অপরাধনামা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 16, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
একা নয় ঘাতকেরা
সন্ত্রাসী ঘাতকেরা কোন সমাজেই একা নয়। একার পক্ষে রাষ্ট্রের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা দূরে থাক,কোন গৃহে একাকী ডাকাতি করাও অসম্ভব। বিপুল জনগণের সহযোগিতা না পেলে ফিরাউন,নমরুদ,হালাকু,চেঙ্গিজ,হিটলার,স্টালীন ও পলপটদের মত ভয়ানক নরঘাতকগণ কি কখনোই রাষ্ট্রের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা করতে পারতো? বুশ-ব্লেয়ারও কি পারতো একাকী আফগানিস্তান ও ইরাকে আগ্রাসন চালাতে এবং দেশ দু’টির লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে? প্রতি সমাজেই এমন লোকের সংখ্যা প্রচুর যারা এ ধরণের মনুষ্য রূপধারী নৃশংস বর্বর জীবদেরকেই শুধু নয়,ইতর গরু-ছাগলকেও ভগবান বলতে রাজী। দক্ষিণ এশিয়ার বুকে এদের সংখ্যা তো আল্লাহতায়ালার উপাসনাকারিদের চেয়েও অধীক। নির্বাচনে এরা শুধু নৃশংস নরঘাতকদের ভোট দিয়ে বিজয়ীই করে না,তাদেরকে মাথায় তুলে উৎসবও করে। তাই হিটলার বা নরেন্দ্র মোদীর ন্যায় নরঘাতকগণ যেমন বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছে,তেমনি গণন্ত্রের ঘাতক ও ৩০-৪০ হাজার মানুষের প্রাণসংহারি বাকশালী মুজিবও নির্বাচিত হয়েছে। এসব বর্বরদের কোন যুদ্ধই একাকী লড়তে হয়নি। তাদের পক্ষ অস্ত্র ধরেছে লক্ষ লক্ষ মনুষ্য রূপধারী জীব।
যে গ্রামে অপরাধী চরিত্রের মানুষদের সংখ্যা অধিক,সে গ্রামে সহজেই বিশাল ডাকাত দল গড়ে উঠে।কোন রাষ্ট্রে এমন মানুষদের সংখ্যা বাড়লে সেখানে সন্ত্রাসী স্বৈরাচারিদের দুঃশাসন শুরু হয়। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষদের তখন লাশ হতে হয়। দুর্বৃত্ত-অধিকৃত এমন সমাজে নবীদের ন্যায় পুতঃপবিত্র চরিত্রের মহামানুষেরাও অত্যাচারিত হয়েছেন। স্বৈরাচারি সরকারের বড় অপরাধ হলো, সমগ্র রাষ্ট্রকে তারা দুর্বৃত্ত উৎপাদনের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত করে। জনগণকে তারা নিজেদের দুর্বৃত্তির সহযোগী করে গড়ে তোলে। তারই দৃষ্টান্ত হলো আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আজ যেরূপ সন্ত্রাসী স্বৈরাচার চেপে বসেছে তা কি দুনিয়ার কোন সভ্য দেশে আশা করা যায়? এমন কি বাংলার বুকেও কি আজ থেকে শত বছর আগে কল্পনা করা যেত? যারা বলে,“জনগণ কখনোই ভূল করে না” -তারা মিথ্যা বলে। বরং প্রকৃত সত্য হলোঃ জনগণ শুধু ভূলই করে না,স্বেচ্ছায় তারা ভয়ানক অপরাধের সাথে নিজেদের সম্পৃক্তও করে। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার কাছে গুরুতর অপরাধ শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নয়। অপরাধ হলো, ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষের আরোপিত যুদ্ধের মুখে নীরব থাকাও। এমন নীরবতা দেশে আযাব ডেকে আনে। একারণে,অতীতে আযাবগুলো স্রেফ ফিরাউনের ন্যায় দুর্বৃত্ত শাসকদের উপরই আসেনি, জনগণের উপরও এসেছে। বাংলাদেশে আজ যে সন্ত্রাসী স্বৈরাচারের বিজয় -তার জন্য কি জনগণ কম অপরাধী? জঙ্গলের গভিরতা বুঝে বাঘ-ভালুকেরা বাসা বাঁধে। তেমনি উপযোগী পরিবেশ খোঁজে সন্ত্রাসী স্বৈরাচারেরা। আজ থেকে ৬০ বছর আগে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী স্বৈরাচারিদের জন্য এতটা উপযোগী ছিল না। ফলে তখন বাকশালী গণতন্ত্র, পিলখানায় ৫২ জন সেনা-অফিসার হত্যা, ২০১৩ সালের শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যা, ২০১৪ সালের ভোটবিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ভোট-ডাকাতির নায়কদের ন্যয় অপরাধীগণ জনগণের মাঝে নামতে সাহস পায়নি। রক্ষিবাহিনী ও র্যাব-এর ন্যায় ঘাতক বাহিনীও তখন অস্তিত্ব পায়নি। তখন নিরীহ মুসল্লিদের হত্যা করে তাদের লাশ ময়লার গাড়িতে তুলে লাশ গায়েবের সাহস কোন সরকারই দেখায়নি।
ফলে আজ থেকে ৬০ বছর আগে ১৯৫৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল,তেমন একটি নির্বচনের কথা আজ ভাবাই যায় না। বিগত ৬০ বছরে বাংলাদেশের আলোবাতাসে পরিবর্তন না এলেও দারুন ভাবে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের চেতনা,চরিত্র ও রুচি। ৬০ বছর আগে কোন পরিবার থেকে ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়ে সে পরিবারের সদস্যদের রাস্তায় মুক্ত আকাশের নীচে বসানো হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের বুকে বহুলক্ষ বিহারী নারী-পুরুষ-শিশু আজ নর্দমার পাশে বস্তিবাসী। ডাকাতপাড়ায় যেমন ডাকাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠে না তেমনি বাংলাদেশেও এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ উঠেনি। বরং খোদ সরকার এগিয়ে এসেছে জবর দখলকারি ডাকাতদের সহায়তায়। ডাকাতদের নামে সরকার দখলকৃত বাড়ির দলীল করে দিয়েছে। যে দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বের ৫ বার প্রথম হয়,এমন নিষ্ঠুর ডাকাতিতে কি অন্য কোন দেশ সেদেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারে? ভয়ানক অপরাধ প্রবনতা গণমুখিতা পেয়েছে। কোন জাতির লোকেদের মাঝে পরিবর্তন না এলে মহান আল্লাহতায়ালাও সে জাতির ভাগ্যে পরিবর্তন আনেন না। সে ঘোষণাটি তিনি পবিত্র কোরআনে দিয়েছেন। বলা হয়েছে,“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদের পরিবর্তন না করে।” –(সুরা রা’দ আয়াত ১১)। অথচ নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যা ঘটেছে সেটি চেতনা ও চরিত্র নির্মাণে উপরে উঠা নয়,বরং নীচে নামা।এমন জাতির কল্যাণে কি মহান আল্লাহতায়ালা এগিয়ে আসেন?
নৃশংস ও বীভৎস সন্ত্রাস
সন্ত্রাসের আভিধানিক অর্থঃ স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে অস্ত্রের ব্যবহার। ডাকাতেরা গ্রামগঞ্জ ও রাস্তাঘাটে সেটি করে অস্ত্র দেখিয়ে। বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাস সৃষ্টির সে ভয়ানক অপরাধটিই সংঘটিত হচ্ছে সমগ্র রাষ্ট্র জুড়ে।সেটি রাস্তায় দলীয় ক্যাডার,পুলিশ,গোয়েন্দা পুলিশ,র্যাব,বিজিবী ও সেনাবাহিনী নামিয়ে। রাস্তার অস্ত্রধারি ডাকাতদের তুলনায় সরকারের এ সন্ত্রাসী কর্মগুলো আরো বর্বর ও ধ্বংসাত্মক। এরূপ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের লক্ষ্য,সমগ্র দেশের উপর তাদের রাজনৈতিক দখলদারি এবং দেশজুড়ে লুন্ঠন। রাস্তার ডাকাতগণ মানুষের অর্থলুন্ঠন করে। কিন্তু ত্রাস সৃষ্টিতে ডাকাতদের সামর্থ সীমিত। দেশের রাজনীতি,আদালত,পুলিশ,প্রশাসন,সংস্কৃতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর তাদের দখলদারি থাকে না। পুলিশ অফিসার,সেনাবাহিনীর সদস্য এবং আদালতের বিচারকদের লাঠিয়ালে পরিণত করার সামর্থও চোর-চোডাকাতদের থাকে না। কিন্তু সন্ত্রাসী সরকারের থাকে। ফলে ডাকাতের লুন্ঠনে কোন দেশেই দুর্ভিক্ষ নেমে আসে না। কিন্তু সেটি আসে সরকারি ডাকাতদলের লুন্ঠনে। সরকারের এরূপ দস্যুবৃত্তির কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনবার ভয়ানক দুর্ভিক্ষ এসেছে। দুইবার এসেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক দস্যুদের লুন্ঠনে। তৃতীয় বার এসেছে শেখ মুজিবের শাসনামলে ১৯৭৪ সালে। ব্রিটিশ দস্যুদের লুন্ঠনে প্রথম বার দুর্ভিক্ষ এসেছিল ১৭৭০ সালে (বাংলা সন ১১৭৬),এটিকে বলা হয় ছিয়াত্তরের মনন্তর। সে ছিল ভয়াবহ মহা দূর্ভিক্ষ। তাতে বাংলার প্রায় একতৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু হয়। কোন কোন হিসাব মতে অধিকৃত বাংলা ও বিহার জুড়ে প্রায় দেড় কোটির মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী সরকারের লুন্ঠনে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষেও মারা যায় বহু লক্ষ মানুষ।
অপরদিকে স্বৈরাচারের আভিধানিক অর্থঃ দেশ পরিচালনায় শাসকের বা শাসক দলের স্বেচ্ছাচারিতা তথা খেয়ালখুশির প্রাধান্য। স্বৈর-শাসকদের হাতে দেশ অধিকৃত হলে কবরে শায়ীত হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র। নির্বাচন তখন তামাশায় পরিণত হয়। তখন নিষিদ্ধ হয় সরকার বিরোধী সকল পত্র-পত্রিকা,বই-পুস্তক ও টিভি চ্যানেল। লুপ্ত করা হয় কথাবলা ও লেখালেখীর স্বাধীনতা। কোন দেশেই এরূপ স্বৈরাচার স্রেফ স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে হাজির হয় না। হাজির হয় ভয়ানক সন্ত্রাস নিয়েও। কারণ স্বৈরাচার তো বাঁচে সন্ত্রাসের মাধ্যমে। জনগণের মাঝে গ্রহনযোগ্যতা বা নির্বাচনি বিজয় নিয়ে তারা ভাবে না। বরং ভাবে সন্ত্রাসের হাতিয়ারগুলোকে আরো শানিত করা নিয়ে। শেখ মুজিব তাই শুধু একদলীয় বাকশালী শাসন,বিরোধী দলগুলির নিষিদ্ধকরণ ও সকল পত্রপত্রিকার অফিসে তালা ঝুলিয়েই খুশি হননি। পাশাপাশি দেশ জুড়ে ত্রাস সৃষ্টিতে রক্ষিবাহিনীও নামিয়েছেন। মুজিবের সে সন্ত্রাসে মৃত্যু ঘটে ৩০-৪০ হাজারের বেশী বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মীর। শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ একই রূপ সন্ত্রাস,চুরিডাকাতি ও স্বৈরাচার নিয়ে হাজির।
আদালত যেখানে ঘাতকের হাতিয়ার
স্বৈরাচারি ও সন্ত্রাসী শাসকগণ শুধু রাজনীতি,পুলিশ,প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর উপরই কবজা করে না। কবজায় নেয় দেশের আইন-আদালত ও বিচার ব্যবস্থাকেও। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ন্যায় বিচারকগণও তখন পরিণত হয় সন্ত্রাসী সরকারের ঘাতক লাঠিয়ালে। তখন নির্বাসনে যায় ন্যায় বিচার। এমন সরকারের আমলে আদালতে উঠার অর্থই হলো কারাগারে বা রিমান্ডে গিয়ে অপমানিত,অত্যাচারিত ও শাস্তির মুখোমুখি হওয়া। আদালত পরিণত হয় অত্যাচারের নির্মম হাতিয়ারে। এমন সন্ত্রাসী সরকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ধর্মচর্চার উপরও। ফিরাউন-নমরুদ কখনোই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত মুসা (আঃ)র ন্যায় মহান ব্যক্তিদেরকে দ্বীন প্রচারের সুযোগ দেয়নি। প্রতিযুগে একই রীতি শয়তানি শক্তির। ফলে স্বৈরাচারি শাসনামলে অসম্ভব হয় স্বাধীন ও নির্ভেজাল ধর্মপালন। অধিকৃত হয় মসজিদও। তখন মসজিদের ইমামের মুখ থেকে তখন তাই ধ্বনিত হয় যা দেশের স্বৈরাচারি সরকার চায়। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার পবিত্র জিহাদকে তখন মসজিদের মেম্বর থেকে সন্ত্রাস বলে চিহ্নিত করা হয়। মসজিদের মেম্বর থেকেই ৮০ বছরের বেশী কাল ধরে হযরত আলী (রাঃ)ন্যায় ব্যক্তির বিরুদ্ধে গালিগালাজ করা হয়েছে। কারণ, সেটিই ছিল উমাইয়া শাসকদের নীতি। অধিকৃত আদালত তখন সে রায়ই শোনায় যা স্বৈরাচারি সরকার চায়। এরূপ আদালতের অত্যাচার থেকে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ),ইমাম শাফেয়ী (রহঃ),ইমাম মালেক (রহঃ)এবং হযরত ইমাম হাম্বলী (রহঃ)র ন্যায় বিখ্যাত ইমামগণও তাই রক্ষা পাননি। তারা অসম্ভব করেছে সুশাসন ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। দেশে স্বৈরশাসনের এটিই সবচেয়ে গুরুতর বিপদ।
ঔপনিবেশিক লুন্ঠনকারি বা মোঙ্গল বর্বরেরা যখনই দেশ দখল ও লুন্ঠনে বের হতো তখন সাথে শুধু নৃশংস সৈনিকই থাকতো না,থাকতো একপাল ঘাতক বিচারকও। এসব ঘাতক বিচারকগণই ভারতসহ বহু অধিকৃত দেশের স্বাধীনতাকামী মহান সৈনিকদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। এরূপ সন্ত্রাসী স্বৈরাচারিদের শাসনামলে সুবিচার আশা করাটি বৃথা। তখন বিচারের লক্ষ্য হয়,স্রেফ স্বৈরাচারকে নিরাপত্তা দেয়া। বিচারকগণ এরূপ পেশা বেছে নেয় স্রেফ নিজেদের রুটিরুজি নিশ্চিত করতে,আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে নয়। এরা পেটের গোলাম। এমন বিচারকদের কারণেই ফিরাউনের আদালতে দুর্বৃত্ত ফিরাউন ও তার সহচরদের কখনোই বিচার হয়নি। বরং বিচার বসেছে মানব সভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান হযরত মূসা (আঃ) ও তাঁর নিরপরাধ সহচরদের বিরুদ্ধে। এরূপ বিচারের লক্ষ্য,নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে জায়েজ করা। এরূপ সন্ত্রাসী শাসকগণ আল্লাহর শরিয়তি আইন প্রতিষ্ঠা হতে দিতে রাজি নয়। কারণ সেটি হলে,আইন তখন দুর্বৃত্ত শাসক ও তাদের সহচরদেরও আদালতে তোলে। যে আাইন চোর-ডাকাত, ঘুষখোর ও দুর্বৃত্তদের হাত কাটে বা পিঠে চাবুক মারে সে আইন কি কখনোই চোর-ডাকাত ও দুর্বৃত্তরা চাইবে? বাংলাদেশের মত দুর্বৃত্ত-অধিকৃত দেশে এজন্যই শরিয়তের প্রতিষ্ঠার এতো বিরোধীতা।
অধিকৃত আদালত
বাংলাদেশের ইতিহাসে অতিশয় ঘৃণ্য অপরাধ ঘটেছে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির এবং ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে। নানারূপ জঘন্য অপরাধ যে কোন দেশেই ঘটতে পারে। কিন্তু আদালতের ব্যর্থতা স্পষ্টতর হয় সে অপরাধের বিচার না হওয়ার মধ্য দিয়ে। নির্বাচনের নামে কোন দেশে ভোট ডাকাতি হলে আদালতের দায়িত্ব হয় সে নির্বাচনকে বৈধতা না দিয়ে নির্বাচনের আয়োজকদেরকেই আসামীর কাঠগড়ায় খাড়া করা। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হয়নি। ডাকাতপাড়াতেও ডাকাতদের নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে। সে সংস্কৃতিতে গুরুত্ব পায় নৃশংস ডাকাতদের সম্মান দেখানো। ডাকাতি কর্মে যে যত দুর্বৃত্ত ও নৃশংস,সেই তত বেশী সম্মান পায়। সবচেয়ে নৃশংস ডাকাতকে সর্দারের আসনে বসানো হয়। ফিরাউন-নমরুদের মত দুর্বৃত্ত রাজাদের শাসনে সবচেয়ে বেশী মর্যাদা পেয়েছে তো তারাই। এমনকি তাদেরকে ভগবানের মর্যাদাও দেয়া হয়েছে। স্বৈরাচার-প্রবর্তিত সে সংস্কৃতিতে শুধু রাজাকে নয়,রাজার পোষা কুকুর-বিড়ালকে সম্মান দেখানোই রীতি। দুর্বৃত্ত শাসকের ঘাতক বিচারকগণও তখন “মাই লর্ড” বা “মহামান্য” বলে অভিহিত হয়। ভারতবাসীর স্বাধীনতার চরম শত্রু ও সাম্রাজ্যবাদি ব্রিটিশের পদলেহী বিচারকগণ তো সে উপাধিতেই ব্রিটিশ ভারতের আদালতগুলিতে সম্মানিত হয়ে এসেছে। যুগে যুগে বর্বর স্বৈর-শাসকগণ স্রেফ অস্ত্রের জোরে বাঁচেনি, তারা যুগ যুগ বেঁচেছে এবং সম্মান পেয়েছে -এমনকি ভগবান রূপে আখ্যায়ীত হয়েছে জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া জাহিলিয়াত এবং অপসংস্কৃতির কারণে। তেমন এক জাহিলিয়াত এবং অপসংস্কৃতির জন্ম ও প্রচন্ড পরিচর্যা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের স্বৈরাচারি সরকারের পক্ষ থেকেও। এমন অপসংস্কৃতির কারণেই দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পরম শত্রু এবং বিদেশী শক্তির গোলামও জাতির পিতা, জাতির নেতা বা জননেত্রীর খেতাব পায়।
ডাকাতপাড়ায় ডাকাতদের বিচার হয় না। বাংলাদেশের তেমনি ভোট ডাকাতদেরও বিচার হয় না। অবৈধ নির্বাচনও তখন বৈধ নির্বাচন রূপে স্বীকৃতি পায়। প্রধানমন্ত্রী,মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য রূপে সন্মান পায় ভোট ডাকাতগণ। কথা হলো জন্ম সূত্রেই যে সরকার অপরাধী,তেমন সরকার থেকে কি ভাল কিছু আশা করা যায়? জীবাণু মাত্রই রোগ ছড়ায়। তেমনি অপরাধীগণও দেশজুড়ে অপরাধ ছড়াবে সেটিই স্বাভাবিক? নেকড়ে বাঘ সব জঙ্গলে একই রূপ হিংস্র। তেমনি অভিন্ন হলো সব দেশের ও সব সময়ের স্বৈরাচারি শাসকগণ। তাই নমরুদ-ফিরাউন মারা গেলেও আজকের নমরুদ-ফিরাউন বেঁচে আছে সে অভিন্ন স্বৈরাচার নিয়ে। সেটি যেমন মিশরে,তেমনি বাংলাদেশসহ বহুদেশে। মিশরের স্বৈরাচারি সরকারের সেনাবাহিনী ২০১৩ সালের ১৪ই আগষ্টের রাতে কায়রোর রাবা আল -আদাবিয়ার ময়দানে এক হাজারের বেশী নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। নিহতদের অপরাধ,সে দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জনাব মুরসীর বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুর্ত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তারা রাস্তায় ধর্ণা দিয়ে বসেছিল। কিন্তু সে হত্যাকান্ডের অপরাধে কাউকে আদালতে তোলা হয়নি। কারো শাস্তিও হয়নি। লক্ষণীয় হলো,এরূপ গুরুতর অপরাধও বিচারকদের কাছে কোন অপরাধ রূপে গণ্য হয়নি! সম্প্রতি মিশরের সর্বোচ্চ আদালত সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসনী মোবারককে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল খুনের মামলা থেকে বেকসুর খালাস করে দিল। নির্দোষ রূপে ঘোষণা দিল হুসনী মোবারকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের। তাদের বিরুদ্ধে বিচারকগণ কোন অপরাধ খুঁজে পায়নি। বরং সে বিচারকগণ অপরাধ খুঁজে পেয়েছে ২০১১ সালে সংঘটিত গণবিপ্লবের বিরুদ্ধে -যা স্বৈরশাসক হুসনী মোবারককে ক্ষমতা থেকে হঠিয়েছিল। ফলে সে বিপ্লবে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা এখন জেলে। অথচ ২০১১ সালের সে বিপ্লবে হুসনী মোবারাকের স্বৈরাচারি সরকার ৮ শতের বেশী নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষকে রাজপথে হত্যা করেছিল। সে হত্যাকর্মকে দ্রুততর ও নৃশংস করার স্বার্থে রাজপথে ট্যাংক,কামান ও মেশিনগান নামানো হয়েছিল। মানুষ খুন হয়েছিল দিনের আলোতে এবং রাজপথে। অথচ মিশরের আদালত কোন খুনিকে খুঁজে পায়নি। সে অপরাধে কারো শাস্তিও হয়নি। স্বৈরাচারিদের হাতে দেশ অধিকৃত হয়ে ন্যায় বিচার যে কতটা অসম্ভব হয় এ হলো তার নজির। জঙ্গলে মানুষ খুন হলে কারো শাস্তি হয় না।তেমনি ৮ শতের বেশী মানুষ হত্যাতেও মিশরে কারো শাস্তি হলো না।স্বৈরাচার এভাবেই জনপদে বন্যতা নামিয়ে আনে।
মিশরে স্বৈরাচারি সরকার গণবিক্ষোভ থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি করে শত শত প্রতিবাদি মানুষের বিরুদ্ধে ফাঁসির হুকুম দিচ্ছে। বিচারকগণ সে ফাঁসির হুকুম দিচ্ছে শত শত মানুষের বিরুদ্ধে একসাথে। আসামী পক্ষের আইনজীবীগণ যুক্তি পেশেরও সুযোগ পাচ্ছে না। এমন কি রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিলে নামার অপরাধে কয়েকশত স্কুলছাত্রীকে ৪ বছরের জেল দিয়েছে। একই অবস্থা বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিচারকগণও স্বৈরাচারি সরকারের অতি নিষ্ঠুরগুলোকেও অপরাধ রূপে দেখতে রাজি নয়। তাদেরকে আদালতে তুলতেও রাজী নয়। ২০১৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশের শাপলা চত্বরে হিফাজতে ইসলামের নিরস্ত্র সমাবেশ রুখতে সেনাবাহিনী,র্যাব,বিজিবি ও পুলিশ নামানো হলো। অসংখ্য মানুষ নিহত হলো,এবং আহত হলো সহস্রাধিক। কিন্তু দেশের আদালতে সে হত্যাকান্ড নিয়ে কোনরূপ তদন্ত হলো না,কারো বিরুদ্ধে কোন বিচারও বসলো না। কারো কোন শাস্তিও হলো না। স্বৈরাচারি সন্ত্রাসীদের হাতে দেশ অধিকৃত হলে দেশের সমগ্র বিচার ব্যব্স্থা, প্রসিকিউশন ও আদালত যে কতটা ঘাতকদের হাতে অধিকৃত হয় -এ হলো তার নজির। তখন জঙ্গলে পরিনত হয় সমগ্র দেশ। তখন মানুষ শুধু পথেঘাটেই মারা যায় না,মারা পড়ে আদালতেও।
আস্তাকুরে ন্যায়বিচার
জাতি কতটা সভ্য ও উন্নত -সে বিচার জনসংখ্যা,অর্থনীতি বা সামরিক শক্তি দিয়ে হয় না। বড় বড় প্রাসাদ দিয়েও হয়না। সাম্রাজ্যবাদী দস্যুগণও উন্নয়নে বিস্ময়কর ইতিহাস গড়ে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী আগ্রাসন,দস্যুবৃত্তি ও গণহত্যা তো বেড়েছে তাদের দ্বারাই। তাদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে দুটি ভয়ানক বিশ্বযুদ্ধ। দু’টি বিশ্বযুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে তারা হত্যা করেছে। আনবিক বোমা ফেলেছে জাপানের দুটি জনবহুল নগরীর উপর। বিশ্বযুদ্ধ থামলেও ধ্বংস ও গণহত্যা। ভয়ানক ধ্বংস ও গণহত্যা উপহার দিয়েছে ভিয়েতনাম,আফগানিস্তান ও ইরাকসহ নানা দেশে। সে সব অধিকৃত দেশে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ নারী-শিশুকে তারা হত্যা করেছে। যুদ্ধ তো নিজেই দুর্বলের বিরুদ্ধে অপরাধ। অপরাধটি অগণিত মানুষ হত্যার ও দেশ ধ্বংসের। ইতিহাসের কাঠগড়ায় তারা গণহত্যার আসামী। এখন সে অপরাধীরাই ড্রোন নিয়ে বিশ্বময় যুদ্ধে নেমেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এরূপ খুনিগণকে কি সভ্য রূপে চিত্রিত করা যায়? মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে প্রতিটি জাতির মূল্যায়ন হয় সুবিচারের প্রতিষ্ঠায় সে জাতির সফলতা দিয়ে।
মুসলমানদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণাঃ “তোমরা্ই হচ্ছো শ্রেষ্ঠ উম্মত;সমগ্র মানব জাতির জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে;তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করো,অসৎ কাজে নিষেধ করো এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করো।” –(সুরা আল -ইমরান আয়াত ১১০)। বলা হয়েছে,“নিশ্চয়ই আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ;এবং অবতীর্ণ করেছি তাদের সাথে কিতাব ও মিযান (ন্যায়দনন্ড) যাতে মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে।” -(সুরা হাদীদ আয়াত ২৫)। তাই নবীরাসূল প্রেরণের লক্ষ্য স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান ও তাঁর ইবাদতের দিকে মানুষকে ডাকা নয়,বরং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সৎকাজের প্রতিষ্ঠা ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। সৎকাজের প্রতিষ্ঠা ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠায় কতটা সফল হলো তা দিয়েই নির্ণীত হয় জাতির মর্যাদা।তাই স্বৈরাচারি সন্ত্রাসীদের ক্ষমতায় বসিয়ে কি সভ্য জাতি রূপে বেড়ে উঠা সম্ভব? ইসলামে অজ্ঞ ও অঙ্গিকারহীনদের বিচারকের আসনে বসিয়ে কি ন্যায় বিচারের প্রতিষ্ঠা সম্ভব? বাংলাদেশের ব্যর্থতা কি এ ক্ষেত্রে কম? বিশ্বের দরবারে ৫ বার যারা সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্ত দেশের খেতাব পায় সে দেশের মানুষ মহান আল্লাহতায়ালার দরবারেই বা কি মর্যাদা আশা করতে পারে? দেশে মসজিদ-মাদ্রাসা,চাল-ডাল,গরু-ছাগল,পোষাক-শিল্প বাড়িয়ে বা বিদেশে মনুষ্যজীব রপ্তানী করে কি মর্যাদা বাড়ানো যায়?
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018