রোযার কাঙ্খিত ভূমিকা ও মুসলিমদের ব্যর্থতা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on May 6, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, ইসলাম
- No Comments.
আধ্যাত্মীক বিপ্লব ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লব এবং রোযা
মানব জাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সাফল্যের জন্য আধ্যাত্মীক বিপ্লব যেমন জরুরী,তেমনি অপরিহার্য হলো রাষ্ট্রীয় বিপ্লব। পাখির দুটি ডানা সবল না হলে যেমন উড়তে পারে না তেমনি আধ্যাত্মীক বিপ্লব ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লব –এ দুটি বিপ্লব একত্রে না হলে উচ্চতর সভ্যতাও নির্মিত হয় না। অর্জিত হয় না ইসলামের মূল লক্ষ্য।রাষ্ট্রের বুকে শয়তানের অধিকৃতি মেনে নিয়ে কি ইসলাম পালন হয়? আসে কি আধ্যাত্মীক উন্নয়ন? নবীজী এ দুটি বিপ্লব একত্রে পরিচালিত করে সমগ্র মানব জাতির সামনে অনুকরণীয় সূন্নত রেখে গেছেন। দ্বিমুখি এ বিপ্লবের পথ বেয়ে তিনি যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অসংখ্য মানব গড়ে গেছেন,তেমনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতাও গড়ে গেছেন। যারা রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখে স্রেফ মসজিদ-মাদ্রাসা,পীরের মাজার¸সুফী খানকা বা হুজরায় বসে আধ্যাত্মীক বিপ্লব ও সে সাথে দুই জাহানের কল্যাণ ভাবেন তারা কি নবীজী (সাঃ)র সে সূন্নত থেকে আদৌ শিক্ষা নিয়েছে? তাদের দ্বারা কোথাও কি আল্লাহর শরিয়তি বিধান বিজয়ী হয়েছে? নির্মিত হয়েছে কি ইসলামি রাষ্ট্র ও সভ্যতা? এসেছে কি আধ্যাত্মীক উন্নয়ন? বরং তাতে আধ্যাত্মীকতার নামে মুসলিম জীবনে এনেছে নবীজী (সাঃ)র প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকীম থেকে বিশাল বিচ্যুতি ও ভ্রষ্টতা। অপর দিকে আধ্যাত্মীক বিপ্লবকে গুরুত্ব না দিয়ে যারা শুধু ইসলামের নামে রাজনৈতীক দল ও রাজনৈতীক বিপ্লব নিয়ে ভাবেন তাদের দ্বারাই বা ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানে কতটুকু সফলতা এসেছে? এবং কতটুকু এসেছে চারিত্রিক বিপ্লব? তারাও কি নবীজী(সাঃ)র সূন্নতকে পুরাপুরি আঁকড়ে ধরতে পেরেছে?
ইসলামে আধ্যাত্মীক বিপ্লব ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লব –এ উভয় বিপ্লবই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোনটাই পরিহারের উপায় নাই। বরং একটি আরেকটির পরিপুরক। আধ্যাত্মীক মানুষ সৃষ্টি ছাড়া যেমন ইসলামি রাষ্ট্র নির্মান সম্ভব নয়,তেমনি ইসলামি রাষ্ট্র ছাড়া আধ্যাত্মীক বিপ্লবের জন্য উপযোগী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও পরিবেশ সৃষ্টি করা অসম্ভব। রাষ্ট্র ইসলামি না হলে তখন সে রাষ্ট্র স্বভাবতই অধিকৃত হয় শয়তানের খলিফাদের হাতে। তখন সে রাষ্ট্র জুড়ে গড়ে উঠে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংগঠিত করার শত শত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।সূদী ব্যাংক,মদ্যশালা,পতিতাপল্লি,জুয়া, নাচ-গানের আসর ও অশ্লিল সিনেমা-নাটক –শয়তানের এরূপ হাজারো প্রকল্প তখন রাতদিন কাজ করে জনগণের মন থেকে তাকওয়া ও আধ্যাত্মীকতা বিলুপ্ত করার কাজে।তাই ইসলামের ইতিহাসের বড় বড় আধ্যাত্মীক ব্যক্তিগণ কাফের রাষ্ট্রে গড়ে উঠেনি।বৃক্ষও বেড়ে উঠার জন্য নিয়মিত পরিচর্যা চায়।তেমনি পরিচর্যা অপরিহার্য হলো তাকওয়া ও আধ্যাত্মীকতা-সম্পন্ন মানুষ গড়ায়।সেটি কি কাফের কবলিত রাষ্ট্রে সম্ভব? সম্ভব নয় বলেই নবীজী (সাঃ)কে বহু অর্থ, বহু শ্রম ও বহু রক্ত ব্যয়ে ইসলামি রাষ্ট্র গড়তে হয়েছে। আধ্যাত্মীক মানব সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলামে যেমন কোরআনের জ্ঞানার্জন,নামায-রোযা,হজ-যাকাত ও তাহাজ্জুদের বিধান আছে,তেমনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের কাজে জিহাদকেও ফরজ করা হয়েছে।বরং মুসলমানদের সবচেয়ে বেশী অর্থ,বেশী রক্ত,বেশী মেধা ও বেশী শ্রমের বিনিয়োগ হয়েছে ইসলামের শত্রু শক্তির দখলদারি থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করার কাজে।শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবী সে কাজে শহীদ হয়েছেন।বদরের যুদ্ধের ন্যায় বড় বড় বহু যুদ্ধ হয়েছে রোযার মাসে।
যে কোন রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের জন্য বিপ্লবের শুরুটি ব্যক্তির হৃদয়ে হওয়া জরুরী। রোযা সে কাজটি করে ব্যক্তির জীবনে আধ্যাত্মীক বিপ্লব এনে।সে বিপ্লব তখন প্রবল বিপ্লব আনে ব্যক্তির কর্ম, আচরণ,সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে। ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানে তখন সৃষ্টি হয় যোগ্য জনবল। রোযা গড়ে আল্লাহর সাথে বান্দাহর নিবীড় সম্পর্ক।সে সম্পর্কের ফলে মু’মিনের আপোষহীন অঙ্গিকার বাড়ে মহান আল্লাহর জমিনে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠায়। পানাহার-বিহীন কষ্টকর ইবাদতটি মু’মিনের জীবনে এভাবেই নীরবে বিপ্লবে আনে। মু’মিন ব্যক্তি ক্ষুধা-পিপাসার বেদনা নীরবে সয় শুধু মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,রোযাদার রোযা রাখে শুধু আমার উদ্দেশ্যে,আমিই তাকে পুরস্কৃত করবো।-(হাদীস)।নামায ও হজ-যাকাতে ব্যক্তির মাঝে রিয়াকারি বা প্রদর্শনীর ভাব থাকাটি স্বাভাবিক।বহু সূদখোর,ঘুষখোর ও ব্যভিচারী দুর্বৃত্তরাও তাই ঠাটবাট করে নামাজে হাজির হয়।তেমনি বহু স্বৈরাচারি খুনি শাসকও বার বার হজ-ওমরা করে।তাই রাষ্ট্রে ও সমাজে কতটা আধ্যাত্মীকতা বাড়লো সেটির বিচার নামাযীর বা হাজীর সংখ্যা দিয়ে হয় না।মসজিদ-মাদ্রাসা গণনা করে বা দাড়ি টুপিধারিদের সংখ্যা দেখেও হয় না। বরং সেটি বুঝা যায় সে রাষ্ট্রে কতজন কতটা নফল রোযা রাখলো,রাত জেগে জেগে কতজন তাহাজ্জুদ পড়লো,কোরআনের জ্ঞানে কতটা সমৃদ্ধি আসলো,কতজন সে জ্ঞান নিয়ে দেশেবিদেশে দাওয়াতি কাজে নামলো এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কতজন জানমালের কোরবানী পেশ করলো -সে সংখ্যা দিয়ে।নবীজী (সাঃ)র আমলে সে আধ্যাত্মীকতা এতটাই প্রবল ছিল যে সাহাবীগণ দিনের পর দিন নফল রোযা রাখতেন। দিবাভাগের অনেকাংশ যেমন নবীজী (সাঃ)র সান্নিধ্যে কোরআনের জ্ঞানার্জনে কাটিয়ে দিতেন,রাতের বেশীর ভাগ কাটাতেন তাহাজ্জুদে।আর পাহাড়-পর্বত অতিক্রম করে নানা জনপদের মানুষের কাছে আল্লাহর বানি পৌঁছে দিয়েছেন। আধ্যাত্মীকতার উত্তাপতো তো স্রেফ মু’মিনের ব্যক্তিজীবনে আবদ্ধ থাকে না। আগুনের উত্তাপ যেমন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি ছড়িয়ে পড়ে ব্যক্তির আধ্যাত্মীকতাও। সে আধ্যাত্মীকতার উত্তাপ তখন রাষ্ট্রের বুকে প্রবল বিপ্লব আনে।তখন বিলুপ্ত হয় রাষ্ট্রের বুকে শয়তানি শক্তির দখলদারি। এবং প্রতিষ্ঠা পায় আল্লাহর শরিয়তি নিজাম। ইসলামি রাষ্ট্র বিপ্লবের এটিই তো রোডম্যাপ।
আধ্যাত্মীক বিপ্লব জন্ম দেয় রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের
প্রতিটি বক্তিই সমাজের বুকে নিজ নিজ পরিচয় নিয়ে চলা ফেরা করে।সে পরিচয়ের গুণেই ব্যক্তি নিজে এক আত্মপরিচয় পায়। তার চেতনা,কর্ম,আচরণ ও ব্যক্তিত্ব তখন এক বিশেষ গুণে গড়ে উঠে।রাজা,রাজপুত্র,দাসপুত্র,ভিখারি,চোর-ডাকাত –এরাই সবাই মানব সন্তান। কিন্তু সমাজে এদের পরিচয় যেমন ভিন্ন,তেমনি ভিন্ন হলো তাদের আত্মপরিচয়,আচরণ,ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধ।রাষ্ট্রের বুকে শাসকের খলিফাগণ বিশেষ এক মর্যাদা,ব্যক্তিত্ব ও দায়িত্ববোধের অধিকারি হয় তো সে বিশেষ পরিচয়ের কারণেই। প্রশ্ন হলো মুসলমানের সে পরিচয়টি কি? সে পরিচিতিটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত খলিফার।সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত খলিফা হওয়ার ধারণাটি আত্মসচেতন মু’মিনের চেতনায় একটি বিশেষ মর্যাদা,চেতনা,ব্যক্তিত্ব ও দায়িত্ববোধ দেয়। মু’মিনের আধ্যাত্মীকতার মূল ভিত্তি হলো মহান আল্লাহপ্রদত্ত সে পরিচয়। জেলা বা থানা পর্যায়ে যারা সরকারের খলিফা বা প্রশাসক তাদের আমলনামার মূল্যায়ন হয় তারা দায়িত্বপালনে কতটা সফল তা থেকে। সে মূল্যায়নের ভিত্তিতেই তাদের প্রমোশন বা ডিমোশন হয়। তেমনি পরকালে ব্যক্তির আমলনামার হিসাব হবে আল্লাহর খলিফা রূপে ব্যক্তি কতটা সক্রিয় ছিল সেটির। সে বিচারে ফয়সালা হবে সে জান্নাতের যোগ্য না জাহান্নামের। কৃষক,শ্রমিক,ব্যবসায়ী বা চিকিৎস্যক বা অন্য কোন পেশাদারি হওয়ার প্রশ্ন সেদিন গুরুত্ব পাবে না। রোজ হাশরের বিচার দিনের সে ভয়টি ঈমানদার ব্যক্তিকে প্রতি মুহুর্তে মনযোগী করে আল্লাহর খলিফা রূপে আপোষহীন দায়িত্বপালনে। আল্লাহর সান্নিধ্যে আল্লাহর সফল প্রতিনিধি রূপে পৌঁছার তীব্র কামনাটি তাকে রাষ্ট্রীয় বিপ্লবে বিপ্লবী করে তোলে। এভাবেই আধ্যাত্মীক বিপ্লব রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের জন্ম দেয়। তাই নবীজী (সাঃ)র প্রতিজন সাহাবাই ছিলেন আমৃত্যু বিপ্লবী। ফলে বিপ্লব এসেছিল বিশাল ভূভাগ জুড়ে।
সরকারের খলিফা রূপে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা বা থানা প্রশাসকগণ সরকারের বিরুদ্ধে কোনরূপ বিদ্রোহ ও অবাধ্যতা সহ্য করে না। সেটি করলে তাদের চাকুরি থাকে না। তেমনি মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে অবাধ্যতা ও তার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সহ্য করে না আল্লাহর খলিফাগণও। তেমন প্রকাশ্য বিদ্রোহকে সহ্য করাটি গণ্য হয় গাদ্দারি রূপে। অথচ আজ কের মুসলমানদের পক্ষ থেকে সে গাদ্দারিটা কি কম? মহান আল্লাহর শরিয়তি হুকুম অমান্য হচ্ছে বাংলাদেশের ন্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে। আল্লাহর শরিয়তি বিধানকে আস্তাকুঁরে ফেলা হয়েছে। আদালতে বিচার হচ্ছে কাফেরদের প্রণীত আইনে। সে আইনে জ্বিনাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। কিন্তু মুসলমানদের মাঝে তা নিয়ে প্রতিবাদ কই? অথচ হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর খেলাফত কালে যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করেছিলেন।প্রশ্ন হলো,মহান আল্লাহর শরিয়তের ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ববোধ কি শুধু খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)এর? সে দায়িত্ব তো আল্লাহর খলিফা রূপে প্রতিটি ঈমানদারের। যার মধ্যে সে অবাধ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নাই তার মুখে আল্লাহর নামের জপ যতই হোক,যতই শোভা পাক দাড়িটুপি,যতই পালিত হোক হজ-ওমরাহ -তার মধ্যে যে আধ্যাত্মীকতা নাই তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে?
খেলাফতের এক গুরু দায়িত্ব দিয়েই মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন। খেলাফতের সে দায়িত্ব পাওয়ার কারণেই মানবসৃষ্টি ফেরেশতাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। নিজের এ খলিফাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করে তাই মহান আল্লাহতায়ালা ফেরশতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁকে সিজদা করতে। পার্থিব জীবনে তাঁর এ খলিফাগণ বিফল হোক এবং আখেরাতের জীবনে জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়ুক সেটি পরম করুণাময় মহান আল্লাহর কাম্য হতে পারে? তিনি তো চান তার মানবসৃষ্টির সামগ্রিক সাফল্য -সেটি যেমন পার্থিব জীবনে,তেমনি পরকালীন জীবনে। তিনি চান তাঁর প্রতিটি মানব শিশু ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠুক। নিজের এ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও খলিফার প্রতি মহান আল্লাহতায়ালার মহব্বত এতই গভীর যে তাদের জন্য যেমন ফুলেফলে শস্যে ভরা সুন্দরতম পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তেমনি আখেরাতে বসবাসের জন্য অফুরুন্ত নিয়ামতভরা জান্নাত সৃষ্টি করেছেন। এবং সেটি অনন্ত অসীম কালের জন্য।সে জান্নাতপ্রাপ্তির পথ প্রদর্শন করতেই লক্ষাধিক নবীরাসূল পাঠিয়েছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন। মহান রাব্বুল আলামীনের সাথে মু’মিনের আধ্যাত্মীক সংযোগের মূল ভিত্তি তো সে কিতাব ও নবী-রাসূল। কিন্তু ইবলিস শয়তান মানুষের সে শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেয়নি। আল্লাহর হুকুম অমান্য করে সেদিন সে আদম (আঃ)কে সেজদাও করেনি। মানুষের বিরুদ্ধে তার শত্রুতা চিরকালের। সে চায়না মানুষ সিরাতুল মোস্তাকীম বেয়ে পথ চলুক এবং মহানিয়ামত ভরা জান্নাতে গিয়ে পৌছুক। তাই পথভ্রষ্ট করাই তার এজেন্ডা।খেলাফতের দায়িত্বপালনে ঈমানদারকে তাই মানব-দুষমন এ শয়তান ও তার বাহিনীর এজেন্ডাকেও বুঝতে হবে।
খেলাফতের দায়ভার ও রাষ্ট্রবিপ্লবের লড়াই
ঈমানদারের চেতনায় যে ধারণাটি সদাসর্বদা কাজ করে তা হলো,এ পৃথিবী পৃষ্ঠে তার নিয়োগটি কোন রাজা-বাদশাহ,প্রেসিডেন্ট,প্রধানমন্ত্রী,দলনেতা বা পীরের খলিফা রূপে নয়।পরকালে তাদের থেকে মু’মিনের চাওয়া-পাওয়ারও কিছু নাই। সে তো নিয়োগপ্রাপ্ত খলিফা মহান আল্লাহতায়ালার। খলিফার সে দায়িত্ব পালনের কাজটি সুচারু ভাবে আদায় হলে পরকালে তার যে পুরস্কার মিলবে তা পৃথিবীর সকল চাকুরিজীবীর বেতনের অর্থ দিয়েও কেনা যাবে না। জান্নাতের এক ইঞ্চি ভূমি কেনা যাবে না সকল রাজা-বাদশাহর সমুদয় সম্পদ দিয়েও। পরকালে আল্লাহতায়ালা তার খলিফাদের এমন জান্নাতের দ্বার উম্মুক্ত করে স্বাগত জানাবেন। মানব জীবনে এর চেয়ে মহামর্যাদাকর প্রাপ্তি আর কি হতে পারে? তাই ইহকালে ও পরকালে মু’মিনের প্রকৃত মর্যাদা তো মহান আল্লাহর খলিফা রূপে দায়িত্ব পালনের মাঝে। সে মহামর্যাদাকর দায়িত্ব পালনে প্রকৃত মু’মিন যে প্রয়োজনে সর্বস্ব বিলিয়ে দিবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? সে দায়িত্ব পালনের কাজটি যথার্থ না হলে শাস্তিও কি কম? সে তখন শয়তানের খলিফা হয়ে যায়। তখন তার বাসস্থান হয় জাহান্নামে।
আল্লাহর খলিফা হওয়ার এরূপ মহান পরিচয়টি মু’মিনের চেতনায় বদ্ধমূল হওয়ায় প্রচন্ড বিপ্লব আসে তার মগজে। সে বিপ্লবের ফলে পবিত্রতা শুরু হয় তার কর্ম ও আচরণে।তখন সে শুধু নেক আমলের সুযোগ খুঁজে। সদা সতর্ক হয় প্রতিটি গুনাহ থেকে বাঁচার। সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড আল্লাহমুখিতা।তখন আল্লাহর রাস্তায় জানমালের কোরবানী পেশ করার সুযোগটি তার কাছে বিপদ নয়,আশির্বাদ মনে হয়। সে তখন আল্লাহর রাস্তায় মূলবান কিছু পেশ করা এমনকি শহীদ হওয়ার রাস্তা খুঁজে। এটিই তো মু’মিনের তাকওয়া। আল্লাহর ভূমি তে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় আসে তো এমন তাকওয়া-সম্পন্ন মানুষের কারণে। ফলে অনিবার্য হয়ে উঠে ইসলামি বিপ্লব।
সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা প্রসঙ্গে
মানব জীবনের সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা ও মুর্খতা হলো মানুষের মূল পরিচয় ও দায়িত্বটি না জেনে বসবাস করা।কোন অফিসে নিজের দায়িত্বটি না জেনে চাকুরি করার ন্যায় এ এক চরম দায়িত্বহীনতা।এমন অজ্ঞতায় মানুষ ব্যর্থ হয় মানবিক পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠতে। তখন ব্যর্থ হয় আল্লাহর খলিফা রূপে দায়িত্বপালনে। নবী-রাসূলদের মূল মিশনটি ছিল,সে অজ্ঞতা থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া এবং তাদেরকে মুল পরিচয় ও দায়িত্বের কথাটি স্মরণ করিয়ে দেয়া। সে সাথে আল্লাহপ্রদত্ত খলিফার পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। অথচ কোটি কোটি মানুষের জীবনে বছরের পর বছর কাটছে,এবং মৃত্যু ঘটছে সে পরিচয়টি না জেনেই।এ ব্যর্থতা যেমন ব্যক্তির,তেমনি রাষ্ট্রেরও।রাষ্ট্রের মূল কাজটি নিছক রাস্তাঘাট,স্কুল-কলেজ ও কল-কারখানা গড়া নয়। বরং মানুষকে তার মূল পরিচয়টি ও জীবনের মূল মিশনটি নিয়ে সচেতন করা। কাফের রাষ্ট্রে সে মূল কাজটি হয় না। তেমনি সেক্যুলারিস্টদের দ্বারা অধিকৃত মুসলিম রাষ্ট্রেও সেটি হয় না। অনৈসলামিক রাষ্ট্রের মূল বিপদটি তো এখানেই।তাই ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার চেয়ে অধিক নেক আমল দ্বিতীয়টি নেই। একাজ তো কোটি কোটি মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর। ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানের জিহাদ এজন্যই ইসলামে শ্রেষ্ঠ ইবাদত।রাজনীতির লড়াইয়ে অংশ নেয়া এজন্যই নবীজী (সাঃ)র শ্রেষ্ঠ সূন্নত। সব মানুষেরই মৃত্যু আছে। কিন্তু মৃত্যু নেই তাদের যারা ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানের সে জিহাদে শহীদ হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে মৃত বলতে বার বার নিষেধ করেছেন। শাহাদতের পরও যে তাদের খাদ্যপানীয় দেয়া হয় সে ঘোষণাটিও এসেছে পবিত্র কোরআনে।
ঈমানদারের মিশন ও শয়তানের মিশন এবং রোযা
শয়তানের মূল এজেন্ডাটি হলো, মানব জাতির জন্য জান্নাতের পথে চলাটি অসম্ভব করা। আদি পিতা আদম (আঃ) এবং বিবি হাওয়াকে জান্নাত থেকে বের করার মধ্য দিয়েই শয়তানের এজেন্ডা শেষ হয়নি। বরং সে দুষমনিটা লাগাতর। মানব সন্তানেরা যাতে আবার জান্নাতে ফিরে যেতে না পারে -সেটিই শয়তান ও তার অনুসারিদের সর্বদেশে এবং সর্বসময়ে মূল লক্ষ্য। আর জান্নাতের পথ থেকে দূরে রাখার সহজতম উপায় হলো পৃথিবীপৃষ্টে পূর্ণতর ইসলাম-পালন অসম্ভব করা। সে লক্ষ্যটি পূরণ হয় ইসলামী রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে। তখন অসম্ভব হয় শরিয়ত, হুদুদ, শুরা, খেলাফত, মুসলিম ঐক্য ও জিহাদের ন্যায় ইসলামের মৌল বিধানগুলি মেনে চলা। তখন অসম্ভব হয় পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচা।সেজন্যই শয়তানী শক্তি পৃথিবীর কোথাও ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হতে দিতে রাজী নয়। মুসলিম রাষ্ট্রে রাস্তাঘাট, কল-কারখানা, পশুপালন, কৃষিখাত ও দালানকোঠায় বিপুল সমৃদ্ধি এলেও তাতে শয়তানের কোন আপত্তি নেই। কারণ তাতে জাহান্নামের পথে নেয়ার শয়তানী প্রকল্পে কোন ব্যাঘাত ঘটেনা। কিন্তু ব্যাঘাত ঘটে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলে। তখন বিলুপ্ত হয় শয়তানী প্রকল্প। তাই পূর্ণ মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো শয়তানের পক্ষ থেকে অনিবার্য লড়াইয়ের মুখোমুখি হওয়া। নবীজী (সাঃ)র ন্যায় মহামানব হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নবীজীকেও সে লড়াই লড়তে হয়েছে।এবং যেখানেই লাগাতর লড়াই, সেখানেই চাই লাগাতর প্রশিক্ষণ। মুসলিম জীবনে প্রশিক্ষণের পর্বটি তাই আমৃত্যু। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত তো ঈমানদারের জীবনে সে প্রশিক্ষণই পেশ করে। সে সাথে চাই ঈমান ও তাকওয়ার বল। এবং সে বলটি আসে পবিত্র কোরআনের জ্ঞান থেকে। তাই কোরআনের জ্ঞান ছাড়া প্রকৃত ঈমানদার গড়ে তোলা যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব হলো ইসলামী রাষ্ট্র গড়া। তখন ঘরে ঘরে গড়ে উঠে ইসলামচ্যুৎ মানুষ এবং দেশের রাজনীতিতে বিজয়ী হয় শয়তানী পক্ষ। ফলে পরাজিত হয় ইসলাম। বাংলাদেশে ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে তো সেটিই হয়েছে। আর তাতে উৎসব বেড়েছে শয়তানের মহলে।
যে পরীক্ষা অনিবার্য
সমগ্র সৃষ্টিকূলে মানব যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সে প্রমাণটি ঈমানদারকে লাগাতর দিতে হয়। সেটি তার চিন্তা-চেতনা,কর্ম ও আচরণের মধ্য দিয়ে। তাকে প্রমাণ পেশ করতে হয়,মহান আল্লাহর খলিফা রূপে দায়িত্ব পালনে সে কতটা তৎপর ও আন্তরিক।খেলাফতের দায়িত্ব পালনের কাজটি তাকে করতে হয় সর্ব-সামর্থ্য দিয়ে। আমৃত্যু সে মিশন নিয়ে বাঁচায় অনিবার্য হয়ে পড়ে শ্রম,মেধা ও জান-মালের কোরবানী। অপরিহার্য হয় ছবর।পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা “তোমরা কি ধারণা যে এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেন নাই তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈয্যশীল।”-সুরা আল-ইমরান আয়াত ১৪২)।নবী-রাসূলগণ ও তাদের সাহাবাগণ তাই আজীবন জিহাদ করে গেছেন।জিহাদ হলো সিরাতুল মোস্তাকীমের অবিচ্ছিন্ন অংশ। তাই জিহাদ থেকে দূরে থাকার অর্থ সিরাতুল মোস্তাকীম থেকে দূরে থাকা। তখন অসম্ভব হয় জান্নাতপ্রাপ্তি। মুসলিম রাষ্ট্রের মুল কাজটি হলো জনগণের সামনে ইসলামের এ চিত্রটি তুলে ধরা এবং এমন চেতনাসর্বস্ব ঈমানদার গড়া। অথচ সেক্যুলার রাষ্ট্রের কাজ হয় ইসলামের সে চিত্রকে গোপন করা। তাই সেক্যুলারিস্ট কবলিত রাষ্ট্রে মর্দেমুমিন মোজাহিদ না গড়ে মশামাছির ন্যায় বিপুল সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় দুর্বৃত্ত। মৃত্যু ঘটে ন্যায়নীতি ও মানবতার।দুর্বৃত্তদের দখলে যায় তখন সমগ্র রাষ্ট্র।এমন অধিকৃত রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি তখন জনগণকে জাহান্নামের দিকে টানে।রাষ্ট্র তখন সবচেয়ে বিপদজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। পরিণত হয় মানব-শত্রু শয়তানের হাতিয়ারে।
মানব জাতির সবচেয়ে বড় বড় ক্ষতিগুলো কোন কালেই বন্যপশুর হাতে হয়নি। হয়েছে রাষ্ট্রের হাতে। তখন শুধু হাজার মানুষের প্রাণহানীই হয় না, ঈমানহানিও হয়। ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয় পরকালে। ইহকালে এ শয়তানি শাসকগণ বড় জোর জেল জুলুম বা প্রাণ নাশ করে। কিন্তু শয়তানের হাতে অধিকৃত এ রাষ্ট্রগুলির মূল কাজ তো শুধু প্রাণনাশ, জেলজুলুম বা অর্থ লুটপাঠ নয়। সেটি তো কোটি কোটি মানুষকে জাহান্নামের পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করা। এবং সে জাহান্নামে অনন্ত অসীম কালের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা। মানুষের এতবড় ক্ষতি কি কোন বন্য পশু করতে পারে? আর এটিই তো শয়তানের মিশন।বাংলাদেশের মত অধিকাংশ মুসলিম দেশে তো সে মিশনের পতাকাধারিরাই বিজয়ী। ফিরাউন ও নমরুদের ন্যায় দুর্বৃত্ত শাসকগণ যে কাজগুলো অতীতে করেছে,আজ সে কাজগুলোই করছে আধুনিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের বুকে শয়তানের প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন অসংখ্য,সেসব প্রতিষ্ঠানে শয়তানের খলিফা গড়ার প্রশিক্ষণও লাগাতর। আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অবাধ্যতা কে তীব্রতর করাই এগুলোর মূল কাজ। এসব দুর্বৃত্ত শাসকদের হাতে হাজার মানুষ যেমন লাশ হচ্ছে তেমনি তাদের পাপাচারের রাজনীতি,শিক্ষানীতি,সংস্কৃতি,প্রশাসন,অর্থনীতি ও বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি নারী,শিশু ও সাধারণত মানুষকে জাহান্নামের দিকেও ধাবিত করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের মুসলমানগণ নিজেদের ও নিজেদের শিশু সন্তানদের সে বিপদটিই নীরবে দেখছে।সামান্যতম ইসলামি জ্ঞান ও চেতনা থাকলে কি এ বিপদ থেকে বাঁচার তাগিদে বহু আগে থেকেই জিহাদ শুরু হতো না?
অথচ জাহান্নামের ভয়াবহ আগুণ থেকে রক্ষা করতেই মহান আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে লক্ষাধিক নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন।হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন এ লক্ষ্যে আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ রাসূল।এবং পবিত্র কোরআন হলো সর্বশেষ হেদায়েতের গ্রন্থ। আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত বিধান ও নবীজী(সাঃ)র সূন্নত হলো রাষ্টকে শয়তানের অধিকৃতি থেকে মুক্ত করা এবং সে রাষ্ট্রে ইসলামের নিজস্ব রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এবং সেসব প্রতিষ্ঠানে জান্নাতে উপযোগী মানুষ গড়ায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এটিই নবীরাসূল ও তাদের অনুসারিদের শ্রেষ্ঠ সূন্নত। এবং এটিই আল্লাহর নির্দেশিত সূন্নত। তাই মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে স্রেফ নামের পরিবর্তন হয় না,মু’মিনের জীবনে লাগাতর যুদ্ধও শুরু হয়।এমন কাজের জন্য জরুরী হলো এমন কিছু ধ্যানমগ্ন মানুষ যাদের একমাত্র ধ্যান শুধু আল্লাহর কাছে প্রতি মুহুর্তে প্রিয়তর হওয়ার ভাবনা। আর রোযা তো দিবারাত্র সে ধ্যানমগ্নতাই বাড়ায়। রাষ্ট্র বিপ্লবের জিহাদে রোযার প্রশিক্ষণ তাই অপরিহার্য।
রোযা গড়ে যিকরের সংস্কৃতি
ঈমানদারের মূল শক্তি ঈমান ও তাকওয়ার বল।সে শক্তিই তাকে জান্নাতে পৌছায়। ঈমান ও তাকওয়ার অভাবে বিস্ময়কর আবিস্কারকরগণও অতীতে জাহান্নামমুখি হয়েছে।অতীতের ন্যায় জাহান্নামমুখি হচ্ছে আজকের প্রতিভাধর আবিস্কারকগণও।তাই পবিত্র কোরআনে হুশিয়ারি:“হে ঈমানদারগণ,তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেরূপ তাঁকে ভয় করা উচিত। এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরন করো না।” –(সুরা ইমরান, আয়াত ১০২)। তাকওয়া হলো সেই ভয় যা মানুষকে প্রতিক্ষণ ও প্রতিকর্মে আল্লাহর প্রতিটি হুকুমে অনুগত করে। অনুগত করে তাঁর প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকীমে চলায় এবং দূরে রাখে প্রতিটি অবাধ্যতা থেকে। তাকওয়া সমৃদ্ধ মু’মিনের জীবনে প্রতিক্ষণ চলে আল্লাহর যিকর বা স্মরণ। সে স্মরণ শুধু আল্লাহর নামের জপ নয়,বরং নিজ জীবনে আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশ কতটা নিখুঁত ভাবে পালিত হলো সে ফিকর। মহান আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে কতটা দূরে থাকা হলো এবং তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার কাজে নিজের পক্ষ থেক কোথায় কি কি আরো করণীয় -দিবারাত্রের সে ভাবনা। ঈমানদারের জীবনে এভাবেই শুরু হয় এক বিরামহীন হিসাব-নিকাশ। যার জীবনে সে হিসাব-নিকাশ নাই,বুঝতে হবে তার জীবনে পরকালে জবাবদেহীর ভয়ও নাই। এরূপ নিকাশ নিকাশের ভয়ে খলিফা হযরত উমর (রাঃ)ছিলেন সদাসর্বদা অস্থির। রাতের আঁধারে তিনি না ঘুমিয়ে বরং মদিনারা রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতেন। খোঁজ নিতেন কোন গৃহে কোন ব্যক্তি শোকে-দুঃখে কাতরাচ্ছি কিনা। সে অস্থিরতায় তিনি ভৃত্যুকে উঠের পিঠে চড়িয়ে নিজে রশি ধরে জেরুজালেমের পথে শতাধিক মাইল হেঠেছেন। নিজ কর্মের হিসাব নিকাশ নিয়ে তার অমর বানিটি হলোঃ “আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাবটি নাও।”
মু’মিনের যিকর ও ফিকর তাই শুধু জায়নামাযে সীমিত থাকে না,বরং নীরবে কাজ করে তার সমগ্র চেতনা,কর্ম ও আচরণে সর্বমুহুর্ত জুড়ে।এমন যিকরের ফলে মু’মিনের প্রতিক্ষণ কাটে ইবাদতে। নবীজীর (সাঃ)র হাদীসঃ “আফজালুর ইবাদত তাফাক্কু” অর্থঃ শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো চিন্তাভাবনা। কোরআন পাঠ ও নামায-রোযার ন্যায় ইবাদত তো এরূপ যিকর ও ফিকরকেই বলবান করে। তখন মু’মিনের চেতনা রাজ্যে আসে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে তথা শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় নিজের জানমাল বিলিয়ে দেয়ার প্রেরণা। আসে সার্বক্ষণিক চিন্তামগ্নতা। তাই মু’মিনের চিন্তামগ্নতা সাধু-সন্নাসীর বনবাসের ধ্যান নয়।পীর বা সুফির অলস জপমালাও নয়। বরং অনলস এক সমাজ বিপ্লবীর প্রতিক্ষণের জিহাদী ভাবনা। সে লাগাতর ভাবে আল্লাহর দ্বীনকে বিশ্বময় বিজয়ী করা নিয়ে।এমন ব্যক্তিরাই তো আল্লাহর ওলী বা বন্ধুতে পরিণত হয়।আল্লাহতায়ালার ওয়াদা,তিনি তাঁদেরকে অন্ধকার থেকে আলোকে নিয়ে আসেন।এমন যিকিরকারিকে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর আরশে বসেও স্মরণ করেন। এটি তাঁর প্রতিশ্রুত ওয়াদা। তাই পবিত্র কোরআনের ঘোষণা,“অতঃপর তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাকে স্মরণ করবো।”–(সুরা বাকারা)। আর ওয়াদা পালনে আল্লাহতায়ালার চেয়ে আর কে উত্তম? আর রোযা হলো মু’মিনের দিনভর ও রাতভরের যিকর। এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ যিকর। ফলে দীর্ঘ এ যিকিরের ফলে সেও স্থান পায় মহান আল্লাহর স্মৃতিতে।
মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মু’মিনের এরূপ যিকর যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বর্ননাটি বার বার এসেছে পবিত্র কোরআনে। যার জীবনে আল্লাহর যিকর ও তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার ফিকর নাই তার উপর সওয়ার হয় শয়তান। আর শয়তান তাকে জাহান্নামের পথে ধাবিত করে। সে কঠোর হুশিযারিটিও এসেছে পবিত্র কোরআনে। বলা হয়েছে,“এবং যারাই করুণাময়ের যিকর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল তাদের উপর আমরা শয়তানকে নিয়োজিত করে দেই এবং সে তার সহচরে পরিণত হয়। এবং তারা (শয়তান) তাদেরকে সত্য পথ থেকে ফিরিয়ে দেয়। অথচ (সে পথভ্রষ্টতার পরও) তারা ভাবে তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত।”–(সুরা জুখরুফে,আয়াত ৩৬ ও ৩৭)। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি এক ভয়ংকর হুশিয়ারি। ফলে যে ব্যক্তির জীবনে আল্লাহর যিকর নাই, তার ঘাড়ে শয়তান যে নিশ্চিত ভাবেই চেপে বসবে এবং শয়তান যে তাকে অনিবার্য ভাবেই পথভ্রষ্ট করবে সেটিও মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুতি।এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে? তখন সে ব্যক্তিকে তার ঘাড়ে বসা শয়তানটি সূদের পথ,ঘুষের পথ,চুরি-ডাকাতির পথ,বেপর্দাগী ও ব্যাভিচারির পথে ধাবিত করে। আল্লাহর অবাধ্যতার পথে চলা তার জন্য তখন অতি সহজ হয়ে যায়। সে তখন শয়তানের সার্বক্ষণিক সৈনিকে পরিণত করে। বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলোতে এ শয়তানের সৈনিকেরাই কি আল্লাহর শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করে রাখেনি?
মু’মিনের জীবনে যিকর ও আধ্যাত্মীকতা
মু’মিনের সালাম-কালাম,রাজনীতি-অর্থনীতি,সাহিত্য-সংস্কৃতি,আচার-আচরণ তথা সবকিছুর মধ্যে থাকে আল্লাহর যিকর। সর্বক্ষণ চলে আল্লাহর প্রিয় হওয়ার সর্বাত্মক সাধনা। মু’মিনের জীবনে এভাবেই অনিবার্য হয় আধ্যাত্মীক বিপ্লব। ফলে মুমিনের রাজনীতি ও সংস্কৃতি আল্লাহবিমুখ বা সেক্যুলার না হয়ে যিকরের রাজনীতি ও যিকরের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। রাজপথের মিছিলে মু’মিনের মুখ থেকে তাই জয় বাংলা,জয় হিন্দ বা জয় আরবের শ্লোগান বেরুয় নয়।বরং গগন কাঁপানো আওয়াজ উঠে “আল্লাহু আকবর।”। যার জীবনে এমন যিকির আছে সে কি সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থার বানি বিলুপ্ত করতে পারে? বরং সে তো কঠোর শপথ নেয় রাষ্ট্রের সর্বত্র জুড়ে আল্লাহর শরিয়তি আইন প্রতিষ্ঠার। ব্যাংকে বসে সে তখন সূদ খায় না,অফিসে বসে সে ঘুষ খায় না এবং সংসদে বা মাঠে ময়দানে দাঁড়িয়ে শরিয়তের বিরুদ্ধে সে বক্তৃতাও দেয় না। এজন্যই কোন মু’মিন ব্যক্তি ইতিহাসের কোন কালেই সেক্যুলারিস্ট,সোসালিস্ট ও জাতিয়তাবাদী হয়নি। কখনোই সে কাফের শক্তির অস্ত্র কাঁধে নিয়ে যুদ্ধ করেনি। কাফেরদের খুশি করতে কোন মুসলিম ভূমিকে খন্ডিতও করেনি। বরং অকাতরে অর্থ ও রক্ত দিয়েছে ইসলামের বিজয়ে এবং মুসলিম রাষ্ট্রের ভূগোল বাড়াতে।
রোযা আনে এক মাসের ধ্যানমগ্নতা। সেটি শুধু তার সেহরী,ইফতারি ও তারাবিহতে নয়। বরং যখনই ক্ষুধা,পিপাসা ও যৌনতার মোহ,তখনই তীব্রতর হয় আল্লাহর স্মরণ বা যিকর। বস্তুত নামায-রোযা, হজ-যাকাতের ন্যায় প্রতিটি ইবাদতের মূল লক্ষ্যই হলো মু’মিনের জীবনে সে যিকরকে জাগ্রত রাখা। মুমিনের উঠাবসা, চলাফেরা, কাজকর্ম ও বিশ্রামে সর্বত্রই চলে আ্ল্লাহর যিকর। পবিত্র কোরআনে নামাযকেও যিকর বলা হয়েছে। যিকর বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনকেও। এ বিষয়ে কোরআনের আয়াতঃ “ইন্না নাহনু নাজ্জালনা যিকরা ওয়া ইন্না লাহু হাফিজুন”। -(সুরা হিজর আয়াত ৯)। পবিত্র কোরআনকেও বলা হযেছে যিকর। মহান আল্লাহর ভাষায়, “আল কোরআনু যিয যিকর” অর্থঃ কোরআনে হচ্ছে যিকর-সর্বস্ব। -(সুরা ছোয়াদ আয়াত ১)। যারা জ্ঞানী ঈমানদার তাদেরকে বলা হয়েছে আহলুয যিকর অর্থাৎ যারা যিকর করে। তাদের সম্মানে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “অতঃপর তোমরা যদি না জেনে থাক তবে যারা যিকর করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো।” –(সুরা নাহল, আয়াত ৪৩)। এবং সমগ্র ইবাদতের মাঝে রোযাই হলো সবচেয়ে দীর্ঘকালীন যিকর। নামাযের যিকর নামায-কালীন কয়েক মিনিটের। হজের যিকর জিল হজ মাসের মাত্র সামান্য কয়েকটি দিনের। এবং হজের সে যিকর দরিদ্র মানুষের জীবনে আসে না। কিন্তু রোযার যিকর রমযানের সমগ্র মাস ধরে ও প্রতিটি সাবালক নরনারীর জীবনে। রোযা এভাবে আল্লাহর যিকরকে মু’মিনের জীবনে বছরের বাঁকি মাসগুলোর জন্য অভ্যাসে পরিণত করে।
যে নাশকতা সেক্যুলারিজমে
আল্লাহর যিকরকে ভূলিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে শয়তানের আয়োজনটি বিশাল। সে আয়োজন বাড়াতে শয়তানী শক্তি গড়ে তুলেছে সেক্যুলার রাজনীতি,সেক্যুলার শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সাহিত্য। সেক্যুলারিজমের মূল কথাঃ আল্লাহর যিকর বা স্মরণের স্থান রাজনীতি নয়,সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতিও নয়।সেক্যুলারিস্টদের দাবী,আল্লাহর যিকরকে জায়নামাজে রেখে রাজনীতিতে আসতে হবে। সেক্যুলারিস্টগণ এভাবেই মুসলমানের রাজনীতিকে যিকরশূন্য করে। আর রাজনীতি হলো রাষ্ট্র ও সমাজের ইঞ্জিন। রাজনীতি যখন যিকরশূন্য হয় তখন যিকরশূণ্য হয় দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি, আইন-আদালত, অর্থনীতি ও প্রশাসন। তখনে রাষ্ট্রের প্রতি স্থলে পরাজিত হয় ইসলাম। ব্যক্তি আল্লাহর যিকর শূন্য হলে তার উপর যেমন শয়তান চেপে বসে তেমনি রাষ্ট্রের রাজনীতি, সংস্কৃতি,প্রশাসন ও আইন-আদালত যিকরশূণ্য হলে রাষ্ট্রের সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে চেপে বসে শয়তান। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ তো তেমনি এক শয়তান অধিকৃত দেশ। ফলে দেশটির রাজপথে নিহত ও আহত হচ্ছে টুপিধারি মুসল্লি। সংবিধান থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে আল্লাহর নাম। নিষিদ্ধ হচ্ছে তাফসির মাহফিল। এবং বাজেয়াপ্ত হচ্ছে ইসলামি বই। এবং বাংলাদেশের উপর নেমে আসছে মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুত আযাব। মুসলমানের ঈমান-আমল ও মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে এভাবেই ঘটে সেক্যুলারিজমের জঘন্য নাশকতা।সেক্যুলারিজম এজন্যই হারাম।বিষপানে দেহের মৃত্যু ঘটে, আর সেক্যুলারিজমে মৃত্যু ঘটে ঈমান-আক্বীদার। তাই মুসলমান যেমন মুর্তিপুজারি,গো-পুজারি ও নাস্তিক হতে পারে না,তেমনি সেক্যুলারিস্টও হতে পারে না।
সেক্যুলারিজম মুসলিম ভূমিতে শয়তানের বিজয়কেই সুনিশ্চিত করে। মুসলমানদের আজকের বিভক্তি,মুসলিম ভূমিতে শত্রুশক্তির বিজয় ও দুর্বৃত্তিতে মুসলিম দেশগুলোর বার বার বিশ্ব রেকর্ড কি শয়তানের সে বিজয়ই প্রমাণ করে না? অথচ ঈমান ও তাকওয়া গভীরতর হলে নির্মূল হয় সেক্যুলারিজম।মু’মিনের তাকওয়া শুধু মুর্তিপুজার বিরুদ্ধেই যু্দ্ধ করে না,যুদ্ধ করে সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধেও। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম ভূমিতে সেক্যুলারিজম নির্মূল হয়নি।বরং প্রবলতর হয়েছে। সেক্যুলারিজমের প্রভাবে মানুষ রোযা রেখেও অতিশয় ভোগবাদী ও বস্তুবাদী হয়। ফলে রোযার মাসেও সেক্যুলারিস্ট রোযাদাররা দ্রব্যমূল্য বাড়ায় এবং বাসের ভাড়া ও ঘুষের রেটে বৃদ্ধি ঘটায়। লক্ষ লক্ষ রোযাদার সেক্যেুলারিস্টদের পক্ষে ভোট দেয়,অর্থ দেয়, শ্রম দেয় এবং প্রয়োজনে রাজপথে তাদের পক্ষে অস্ত্রও ধরে। সেটি যেমন বাংলাদেশে তেমনি মিশর, সিরিয়াসহ বহু দেশে। ফলে গত ২৬/০৭/১৩ তারিখে ১২০ জন রোযাদার লাশ হলো কায়রোর রাজপথে। লাশ হচ্ছে বাংলাদেশেও।
মুসলিম দেশগুলিতে কোটি কোটি মানুষের রোযা-তারাবিহ সত্ত্বেও তাকওয়া ও আধ্যাত্মীকতা যে বাড়েনি সেটি কি এরপরও বুঝতে বাঁকি থাকে? কোটি কোটি মুসলমানের ইবাদত তাদের জীবনে বিপুল আনুষ্ঠিকতা বাড়ালেও মহান আল্লাহর কাছে জবাবদেহীতার ভয় বাড়াতে পারিনি।এখানেই রোযার ব্যর্থতা। ইবাদতের এমন ব্যর্থতা কি সাহাবাদের জামানায় কল্পনা করা যেত? তবে এ ব্যর্থতাটি রোযার নয়। বরং ব্যর্থতা এখানে রোযার মূল দর্শনটি না বুঝার।স্রেফ কোরআনের বার বার তেলাওয়াতে মগজে বিপ্লব আসে না। সেজন্য কোরআনের জ্ঞানের সাথে আত্মার গভীর সংযোগটি জরুরী। ঘুমুন্ত বা পথহারা বিবেক তো একমাত্র সে জ্ঞানেই জেগে উঠে। শুধু মুখ ঠোট ও জিহ্বার সংযোগে সেটি সম্ভব নয়। তেমনি রোযার মাসে স্রেফ পানাহার বন্ধ রাখায় চেতনায় ও আমলে বিপ্লব আসে না। সে জন্য চাই মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের যিকর ও ধানমগ্নতা।কিন্তু সেক্যুলার ব্যক্তির জীবনে তো সেটি আসে না। তার ধ্যানমগ্নতা শুধু ভোগের আয়োজন বৃদ্ধিতে। ফলে রোযার মাসে সে সূদ খাবে,ঘুষ খাবে,দ্রব্যমূল্য বাড়াবে এবং নানা ভাবে অন্যের পকেটে হাত দিবে সেটিই তো স্বাভাবিক। সেক্যুলারিজমের বিষ পানে ঈমান যে বাঁচে না এ তো তারই প্রমাণ।রোযা তখন নিছক আনুষ্ঠিকতায় পরিণত হয়। -(২৭/০৭/২০১৩) পরিবর্ধিত (১১/০৫/২০১৯)।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018