মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর ও ভারতীয় স্ট্রাটেজী
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on June 11, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
মনমোহন সিংয়ের সফর ও আতংক বাংলাদেশে
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আগামী ৬-৭ সেপ্টম্বর -এ দুই দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আশা করা হচ্ছে তাঁর এ সফর কালে ট্রানজিট, পানিবন্টন, সমূদ্রসীমা, মাইগ্রেশন, ছিটমহল ইত্যাদী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এবং চুক্তিও সাক্ষরিত হবে। মনমোহনের এ আগমন নিয়ে আনন্দ বইছে বাংলাদেশের ভারতপন্থি রাজনৈতিক শিবিরে। অপর দিকে আতংক বাড়ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশীর মাঝে। তাদের ভয়, তাঁর এ সফরে হয়তো বাংলাদেশের আরো কিছু ভূমি, আরো কিছু সম্পদ এবং আরো কিছু স্বার্থ আবারো লুন্ঠিত হবে! পাকানো হবে হয়তো নতুন ষড়যন্ত্র। হয়তো বাংলাদেশীদের গলায় পরানো হবে আরো কিছু নতুন শিকল। তবে এমন ভয় অমূলকও নয়। কারণ, ভারতের সাথে তাদের পূর্বের অভিজ্ঞতাগুলো আদৌ সুখের নয়। এ অবধি দেশটির সাথে বাংলাদেশের যত চুক্তিই হয়েছে তার সবগুলিতেই বাংলাদেশের লোকসান ছাড়া কোন লাভ হয়নি।
শেখ হাসিনার প্রথমবার ক্ষমতায় আসাতে ১৯৯৬ সালে চুক্তি হয়েছিল গঙ্গার পানিবন্টন নিয়ে। তাতে পদ্মায় পানি বাড়িনি। সে চুক্তি যে কতটা ব্যর্থ এবং বাংলাদেশের জন্য যে কতটা ক্ষতিকর সেটি বোঝার জন্য গভীর গবেষণার প্রয়োজন নেই, কলকাতায় ভাগিরথির তীরে একবার দাঁড়ালেই টের পাওয়া যায়। আমি সেটি নিজে চোখে দেখিছি। ফারাক্কায় বাঁধ দিয়ে পানি তুলে নিয়ে বৈশাখ-জৈষ্ঠের খড়া মৌসুমেও ভাগিরথিতে আনা হয়েছে কূল উপচানো থৈ থৈ পানির জোয়ার। সে পানিতে কলকাতা বন্দরে সমূদ্রগ্রামী জাহাজও চলে। আর পদ্মার বুকে তখন ধুধু করা ধুসর বালি। জাহাজ দূরে থাক, নৌকা চালানোও কঠিন। এ বাঁধের ফলে দ্রুত মরুভূমি হতে চলেছে সমগ্র উত্তর বঙ্গ। বাংলাদেশের জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতির উপর ফারাক্কার বাঁধ যে মরণছোবল হানছে সে তথ্য বেরিয়ে আসে এমনকি বিশ্বব্যাংকসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা রিপোর্টে। কিন্তু হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীদের তা নিয়ে দূশ্চিন্তা নেই। তারা বরং গর্ব ভরে উৎসব করে সে পানিচুক্তির সফলতা নিয়ে।
ভারত বাঁধ দিতে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র নদীর উজানে টিপাইমুখে। এটি আন্তর্জাতিক নদী আইনের পরিপন্থি। ভাটির দেশ বাংলাদেশ, ফলে বাংলাদেশের অনুমতি না নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক নদীর উপর উজানে ভারতের বাঁধ নির্মানের অধিকার নেই। অথচ ভারত বাঁধ নির্মান শুরু করেছে অনুমতি না নিয়েই। কিন্তু তা নিয়ে হাসিনা সরকারের মুখে কোন প্রতিবাদ নেই। অতীতে তাঁর পিতার পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ উঠেনি ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে। অথচ বাংলাদেশের দেশপ্রেমিকদের চোখে এনিয়ে ঘুম নেই। গর্দানে রক্তনালী চেপে ধরলে তাতে ত্বরিৎ প্রাণনাশ ঘটে। কারণ এতে বাধাপ্রাপ্ত হয় মগজের রক্ত প্রবাহ। তেমনি নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হলে মারা পড়ে সে দেশের ভূ-প্রকৃতি। এবং পাল্টে যায় জলবায়ু। দেশ তখন মরুভূমি হয়। সীমান্ত রক্ষার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ তাই দেশের নদীগুলির পানির প্রবাহ রক্ষা করা। তাই কোন দেশের দেশপ্রেমিক সরকার শুধু দেশের মানুষ বা সীমান্ত বাঁচাতে যুদ্ধ করে না, যুদ্ধ করে নদী বাঁচাতেও। অথচ তা নিয়ে কোন ভাবনা নেই বর্তমান সরকারের। বরং শেখ হাসীনাসহ দেশের তাবত ভারত-ভক্ত রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীগণ ভারতের সাথে বন্ধুত্বকে বিশাল অর্জন বলে অভিহিত করছেন। বছর দুয়েক আগে তাদেরই কয়েকজন টিপাইমুখ দেখতে ভারতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে বলেছিলেন, টিপাইমুখ বাঁধের ফলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তাতে নাকি সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনায় পানি থৈ থৈ করবে। শেখ মুজিবও এমন এক অন্ধ ভারত-ভক্তি নিয়ে ভেবেছিলেন, ফারাক্কার ফলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে না। একই রূপ ধারণা নিয়ে তিনি ভারতের সাথে সীমান্ত-বানিজ্য চুক্তি করেছিলেন। বলেছিলেন, এতে ভারত ও বাংলাদেশ –উভয় দেশের বাণিজ্য বাড়বে। এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আসবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। ভারতের বাণিজ্য বিপুল ভাবে বাড়লেও দ্রুত সম্পদ পাচার হয়েছে বাংলাদেশের। ফলে এসেছিল ভয়াবহ দুভিক্ষ। তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। মহিলারা কাপড়ের অভাবে ঝাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল।
হাসিনা সরকারের কাজ হয়েছে তাঁর পিতার স্মৃতিকে শুধু জ্যান্ত করা নয়, বরং ব্যর্থ রূপে প্রমাণিত তাঁর নীতিগুলোকেও পুনরায় চালু করা। মুর্তিপুঁজা, গরুপুঁজা, লিঙ্গপুঁজা, স্বর্পপুঁজার ন্যায় নানা রূপ আদিম অজ্ঞতা ধর্মের নামে বেঁচে আছে বাপদাদার অজ্ঞতার প্রতি এমন অতিভক্তির কারণেই। তাই বাংলাদেশের সংবিধানে আবর্জনার স্তুপ থেকে ফিরে এসেছে সমাজতন্ত্র ও সেক্যুলারিজম। আবার শুরু করা হয়েছে ভারতের সাথে আত্মঘাতী সীমান্ত বাণিজ্য। তবে এবার সেটি শুধু সীমান্ত বানিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সমগ্র দেশই এখন ভারতীয় বাজার।
ক্ষুদ্র মনের মানুষের বিশাল দেশ
বাংলাদেশীদের দুর্ভাগ্য, প্রতিবেশী রূপে তারা বৃহৎ দেশ পেয়েছে বটে কিন্তু বড় মনের প্রতিবেশী পাইনি। বনের বাঘ-ভালুক যেমন আশেপাশের জীবগুলোকে নিজের খাদ্য মনে করে এবং যখন তখন সেগুলো আহার করাকে নিজের অধিকার ভাবে, তেমনি অবস্থা ভারতের। পাড়ায় বাঘের আগমন তাই কোন সুখবর আনে না। দিল্লির সাথে তাজউদ্দিনের ৭ দফা চুক্তি এবং শেখ মুজিবের ২৫ দফা চুক্তি, সীমান্ত বাণিজ্যচুক্তি ও ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তিসহ অন্যান্য বহু বিষয়ে ভারতের সে আগ্রাসী চরিত্রকেই অতি নগ্ন ভাবে প্রকাশ করেছে। ভারতের স্বার্থপর ছোট মনের প্রথম প্রকাশ ঘটে যখন একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজযের পর পাকিস্তান আর্মির অব্যবহৃত হাজার কোটি টাকার অস্ত্র নিজ দেশে যায়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানী। ফলে সে অস্ত্র কেনায় বাংলাদেশের জনগণের রাজস্বের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছিল। ভারতের এ কাণ্ডটি ছিল নিতান্তই রুচিহীন এবং অবাক করার মত বিষয়।
শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধির সাথে সীমান্ত চুক্তি করে বাংলাদেশের নিজস্ব ভূমি দক্ষিণ বেরুবাড়ী এবং সে ভূমি-সংলগ্ন ছিট মহল ভারতকে দিয়ে দেন। প্রতিদানে আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম -এ দুটি ছিটমহলকে বাংলাদেশের সাথে সংযোগ করতে বাংলাদেশ পাবে ভারত থেকে তিন বিঘা আয়তনের একটি প্লট। চুক্তির পর পরই ভারত বেরুবাড়ীকে নিজ দেশের সীমানাভূক্ত করে নেয়। পরিবর্তন আনে নিজ দেশের মানচিত্রে। এবং সংশোধন আনে সংবিধানে। কিন্তু বাংলাদেশকে ভারত তার প্রাপ্য তিন বিঘা জমি আজও দেয়নি। ভারতের সমস্যা, দেশটির সংবিধানে অন্যের ভূমি গ্রাস করার বিধান আছে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করার অনুমতিও আছে, কিন্তু নিজ দেশের এক ইঞ্চি ভূমিকেও বিচ্ছিন্ন করার অনুমতি নাই। তাই কাশ্মির, নিজামের হায়দারাবাদ, মানভাদর এবং সিকিমকে ভারতভূক্ত করতে ভারতীয়দের কোন অসুবিধা হয়নি। অসাংবিধানিকও মনে হয়নি। কিন্তু প্রচণ্ড সাংবিধানিক বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, বাংলাদেশকে মাত্র তিন বিঘা জমি দিতে। অথচ বাংলাদেশের জন্য এ প্লটটি হল অতি গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রয়োজন মানবিক প্রয়োজনে। অঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম -এ দুটি ছিটমহলের ২০ হাজার মানুষের বসবাস ভারতের অভ্যন্তরে, বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের সাথে যোগাযোগের এ তিন বিঘা জমিটিই হল একমাত্র সংযোগ লাইন। ভারতীয়দের কথা, তাদের সংবিধানে তিন বিঘা দূরে থাক এক ইঞ্চি জমি দেয়ারও বিধান নেই। ভাবটা এমন, তারা দিতে চাইলেও সংবিধান দিতে দিচেছ না। প্রশ্ন হল, এই যদি সাংবিধানিক আইন হয়, তবে কেন চুক্তি করা হল? তাছাড়া ভারতীয় সংবিধান যে সংশোধিত হয়নি তা তো নয়, এ অবধি বহু কারণে বহু বার সেটি সংশোধিতও হয়েছে। কিন্তু সেটি সম্পূর্ণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে তিন বিঘা জমির ক্ষেত্রে!
ভারতীয়দের চেয়েও ভারতীয়
ভারতীয়দের চেয়েও ভারতীয় -এমন বহু ব্যক্তির বসবাস বাংলাদেশে। বিশেষ করে রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে। এমন কি দেশের শীর্ষ পর্যায়ে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে ভারতীয় স্বার্থের সেবাটাই তাদের কাছে বড়। সম্প্রতি তেমন এক উদাহরন পেশ করলেন শেখ হাসিনা। ভারত মাত্র তিন বিঘা জমি বাংলাদেশকে দিতে রাজী হয়নি। অথচ শেখ হাসিনা সিলেট-মেঘালয় সীমান্তের তামাবিল এলাকার ২৬১ একর বাংলাদেশী ভূমি ভারতকে দিয়ে দিয়েছেন। এতবড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংসদে কোন বিতর্ক হয়নি। বিরোধী দল বা অন্য কারো সাথে তা নিয়ে পরামর্শও করা হয়নি। নিজের জমি বা পৈতীক সম্পত্তি দিতে কারো অনুমতি লাগে না, পরামর্শও লাগে না। যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়া যায়। বাংলাদেশের ২৬১ একর ভূমিকে শেখ হাসিনা যেন সেটাই ভেবেছেন। অথচ এ জমির মালিক শেখ হাসিনা নন, বরং দেশ। সরকার নির্বাচিত হয় দেশের ভূ-খণ্ড হেফাজতের জন্য, বিলিয়ে দেয়ার জন্য নয়।
তাছাড়া তামাবিলের এ ভূমি নিয়ে কোন কালেই কোন বিতর্ক ছিল না। ১৯৫৮ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নূনের মাঝে দুই দেশের সীমান্ত ও ছিটমহল নিয়ে আলোচনা হয় এবং আলোচনা শেষে সীমান্ত চুক্তিও হয়। সে সময়ও সিলেটের তামাবিল সীমান্ত নিয়ে কোন কথা উঠেনি। অথচ সেটি বিতর্কিত করা হয় আওয়ামী লীগ আমলে। বিতর্ক পাকিয়ে সে ভূমি অবশেষে ছিনিয়েও নেয়া হল। গর্তের কীটও জানে কখন বাইরে বেরুতে হয় এবং কখন খাবার খুঁজতে হয়। তেমনি ভারতও জানে, স্বার্থ উদ্ধারের মোক্ষম সময় কোনটি। তাই যে দাবী পাকিস্তান আমলে উঠলো না, এমন কি যে দাবী বাংলাদেশের অন্য কোন সরকারের আমলেও উঠলো না, সে দাবী উঠলো আওয়ামী লীগ শাসনামলে। এবং সেটি পুরণও হয়ে গেল। অথচ তামাবিল এলাকা দখলের জন্য ২০০১ সালের ১৫-১৬ এপ্রিল তারিখে এক ব্যাটেলিয়ন বিএসএফ সৈন্য নিয়ে ভারত হামলা করে। বাংলাদেশের বিডিআর জোয়ানেরা সে হামলা প্রতিহত করে নিজেদের রক্ত দিয়ে। তারা ২১ জন বিএসএফ সৈন্যকে হত্যা করে এবং নিজেরা হারায় দুইজন সাথীকে। কিন্তু ২০১১ সালে এসে ভারতকে সে ভূমি পেতে কোনরূপ যুদ্ধ করতে হল না। ভারতের হাতে সেটি তুলে দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশ্ন হল, বিডিআর জোয়ানরা যে দেশপ্রেম দেখাতে পেরেছে সে দেশপ্রেম তাঁর মধ্যে কৈ?
স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি ও বিবেকহীনতা
১৯৭৪ চুক্তি স্বাক্ষরের ১৮ বছর পর ১৯৯২ সালে এসে তিন বিঘা করিডোরটি ভারত খুলতে রাজি হয়। সেটিও দিনে মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য, এবং সেটি লিজের ভিত্তিতে। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ৪,০৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ সীমান্তের নানা স্থান দিয়ে চোরা পথে দিবারাত্র মানুষ পারাপার হয়। সেটি রুখবার সামর্থ ভারতের কোন কালেই ছিল না। আজও নেই। কিন্তু তিন বিঘার করিডোরটি নিয়ন্ত্রন করেছে অতি কঠোর ভাবে। নির্ধারিত সময় বাদে পারাপারের কোন উপায় নেই। অথচ অঙ্গরপোতা ও দহগ্রামের ২০ হাজার বাংলাদেশীর ট্রানজিটের প্রয়োজনটি কয়েক ঘন্টার নয়। সেখানে কোন হাসপাতাল নেই, থানা এবং কোট-কাছারিও নেই। এসবের জন্য দিবারাত্র যে কোন সময় জরুরী প্রয়োজন দেখা দেয়। সে প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশের মূলভূমিতে আসতে হয়। কিন্তু তাদের জন্য ভারত সে সুযোগ দিতে রাজি নয়। নেহাযেত এক অমানবিক অবস্থা। অবরুদ্ধ এলাকার ছেলেমেয়েদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগও নেই। অথচ ভারতীয়দের বিবেক তাতে গলেনি। বিএসএফ সেখানে দিবারাত্র পাহারা দেয়। করিডোরটি যেন তাদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি!
অথচ বাংলাদেশের উপর তাদের দাবীটি বিশাল। তিনবিঘার করিডোরটি দিবারাত্র খোলা রাখাকে ভারতীয়রা নিজ নিরাপত্তার প্রতি হুমকি ভাবে। অথচ তারাই বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত থেকে পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত শত শত মাইলের ট্রানজিট চায়। ট্রানজিট চায় চট্রগ্রাম ও চালনা বন্দরে যানবাহন নিয়ে পৌঁছার জন্যও। এবং সেটি বছরের প্রতি দিন, প্রতি রাত ও প্রতি মুহুর্তের জন্য। একটি নয়, কয়েকটি রুট দিয়ে। শুধু স্থলে পথে নয়, নৌ-পথেও। এই হল ভারতীয়দের বিবেক ও চেতনার মান! এমন বিবেকহীন স্বার্থপর প্রতিবেশীর সাথে ইচ্ছা করলেই কি বন্ধুত্ব গড়া যায়? পাকিস্তান পারেনি। শ্রীলংকা পারেনি। নেপাল এবং ভূটানও পারছে না। ভারত বন্ধুত্ব চায় না, চায় প্রতিবেশীর আত্মবিসর্জন বা আত্মসমর্পণ। আত্মবিসর্জনের পথ ধরে সিকিম ভারতের বুকে গুম হয়ে গেছে। আর মুজিব ধরেছিল আত্মসমর্পনের পথ। হাসিনার কাছে আজও সেটিই অনুকরণীয় মডেল। ফলে ভারত যা চায় তা পেতে তাদের মুজিব আমলেও যেমন অসুবিধা হয়নি। হাসিনার আমলেও হচ্ছে না। তাই মুজিব দিয়েছিল দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়ন, আর হাসিনা দিল তামাবিলের ২৬১ একর ভূমি। মুজিব দিয়েছিল ফারাক্কার অনুমোদন, আর হাসিনা দিচ্ছে টিপাইমুখের বাঁধের অনুমোদন। তবে এমন আত্মসমর্পণ ছাড়া তাদের সামনে ভিন্নতর পথও খোলা নেই। এমন আত্মসমর্পণে তারা প্রচণ্ডভাবে দায়বদ্ধও। ভারত সে আত্মসমর্পণটি ক্রয় করেছে বিপুল বিণিয়োগের মাধ্যমে। সেটি শুধু একাত্তরের যুদ্ধে নয়, তার পূর্বে এবং পরেও। পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশের সৃষ্টি যে ভারতের বিশাল বিনিয়োগের ফল –তা নিয়ে ভারতপন্থি বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের মনে সন্দেহ নাই। তারা জানে, শেখ মুজিবের বক্তৃতায় বাংলাদেশে স্বাধীন হয়নি। মুক্তিবাহিনীর দ্বারা কিছু ব্রিজ ভাঙ্গা বা কিছু পাকসেনা ও রাজাকার নিধনের ফলেও হয়নি। এমন বহু বক্তৃতা ও বহু ভারতীয় সৈন্য হত্যা বিগত ৬০ বছর ধরে উলফার বিদ্রোহী ও কাশ্মীরের মোজাহিদদের দ্বারা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কি তাদের স্বাধীনতা এসেছে? বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ভারতী সৈন্যের যুদ্ধ ও তাদের প্রাণদানের বিনিময়ে -সেটি শুধু ভারতের দাবী নয়, ভারতপন্থি বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের দাবীও। সে কথাটি তারা মাঝে মধ্যে স্মরণও করিয়ে দেয়। ভারত-বিরোধীতাকে তারা ভারতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা বা নিমক-হারামী বলে তো সে যুক্তিতেই। তাই বাংলাদেশের ভূমি বিলিয়ে দিয়ে শেখ মুজিব বা শেখ হাসীনা যেটি করছেন সেটি শুধু তাদের আত্মসমর্পিত নীতি নয়, বরং নিমক হালালীও। অন্যের নিমক খেয়ে রাজনীতি করলে এ ছাড়া ভিন্ন পথ আছে কি?
লক্ষ্য রাজনৈতিক ও সামরিক
মনমোহন সিংয়ের সফরে কতগুলি চুক্তি সাক্ষরিত হবে সেটি বড় বিষয় নয়। সেসব চুক্তি শেখ হাসিনার কিছুদিন আগের দিল্লি সফর কালেও সাক্ষরিত হতে পারতো। এ সফরের আসল লক্ষ্য রাজনৈতিক ও সামরিক। পাড়ার বড় সন্ত্রাসীটি নিজ দলীয় ছোট সন্ত্রাসীর গৃহে সময় সময় দিনে-দুপুরে পদধুলি দেয়। লক্ষ্য খোশআলাপ বা পানাহার নয়, বরং তার কাছে সে যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে খবর জানিয়ে দেয়া। এবং সে হুশিয়ারিও দেয়া, তার বিরুদ্ধে কিছু হলে নিস্তার নেই। মনমোহন সিং তাই নিছক পাড়া বেড়াতে বা পানাহারে আসছেন না। স্রেফ খোশআলাপ বা চুক্তি সই করতেও নয়। দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ট্রানজিট, সীমান্ত চুক্তি ইত্যাদির নামে এ সফর অনুষ্ঠিত হলেও আসল লক্ষ্য, হাসীনা বিরোধীদের হুশিয়ার করে দেয়া। আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা কি করে আরো বেশী বাড়ানো যায় তা নিয়ে নতুন রাস্তা বের করা। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত পুতুল সরকার ও সৈন্যদের মনবল বাড়াতে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরাও বার বার সফর করেন। মনমোহন সিং আসছেন শেখ হাসিনা মনবল বাড়াতে, সে সাথে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে যে, শেখ হাসিনার সরকার একা নন। বস্তুত ভারত তাঁকে যে কতটা ভালবাসে এবং তাঁর পিছনে যে কতটা শক্ত ভাবে অবস্থান নিয়েছে সেটি জানিয়ে দেয়াই এ সফরের মূল উদ্দেশ্য। এমন একটি হুশিয়ারি কিছু দিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু হলে ভারত এবার বসে থাকবে না।
শেখ হাসিনা ভালই জানেন, তাঁর ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়। দেশের আর্মি, পুলিশ বা র্যাবও নয়। বরং ভারত। তাছাড়া বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকার জন্য জনসমর্থন কোন ফ্যাক্টরও নয়। জনগণের সমর্থন না নিয়েও যে এক যুগ ক্ষমতায় থাকা যায় সেটি দেখিয়ে গেছেন সাজাপ্রাপ্ত দুর্বৃত্ত এরশাদ। আর ব্রিটেশেরা থেকে গেছে ১৯০ বছর।
হাসিনার ক্ষমতালিপ্সা ও আশাহত বিদেশী বন্ধুরা
সম্প্রতি লন্ডনের প্রখ্যাত সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনমিষ্ট কিছু সত্য কথা প্রকাশ করেছে। সেটি হল, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় ভারতের বিপুল অর্থ ও সমর্থনের বলে। এ হল ঢাকাস্থ কূটনৈতীক মহলের ভিতরের কথা। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি আদৌ কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না, নিরপেক্ষ তো নয়ই। বরং ছিল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিদেশীদের চাপিয়ে দেয়া একটি পক্ষপাতদুষ্ট সরকার। এসেছিল একটি ষড়যন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দিতে। সে কথা এখন আর কোন গোপন বিষয় নয়। সে ষড়যন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল ব্রিটিশ সরকারও। ফলে বিলেতের রক্ষণশীল পত্রিকা “ইকোনমিষ্ট”এর সে খবর অজানা থাকার কথা নয়। সে ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল মার্কিন সরকারও। এসব বিদেশী সরকারগুলো সম্প্রতি মুখ খুলেছে এ জন্য নয় যে তারা বিরোধী দলগুলির পক্ষে। মূল কারণটি, শেখ হাসিনাকে যে কারণে তারা ক্ষমতায় এনেছিল এবং তাকে রাজনীতির যে রোড ম্যাপ দেয়া হয়েছিল তা থেকে তিনি বার বার বিচ্যুত হচ্ছেন। এতেই তাদের গোস্বা।
পাশ্চাত্যের নির্দেশিত রোডে ম্যাপে বাংলাদেশে ইসলামের জাগরণ ও প্রতিষ্ঠা রুখতে যা কিছু করনীয় সে সবের পূর্ণ অনুমতি থাকলেও তাদের নিজস্ব লোকদের গায়ে হাত পড়ুক সেটি তারা কখনই চাইনি। ফলে শেখ হাসীনার সরকার যখন ইসলামপান্থিদের রাজপথে পিটাচ্ছিল বা গ্রেফতার করে নির্যাতন করছিল তখন তারা মুখ খুলেনি। কিন্তু এখন খুলছে। তাদের কথা, শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের লোকরাই তাদের একমাত্র লোক নন। বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির মাঠে তাদের আরো বহু টিম রয়েছে। সে সব টিমে বহু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ও আছে। বহু অর্থ ও বহু যত্নে গৃহপালিত এনজিও কর্তাব্যক্তিগণ হলেন সেসব খেলোয়াড়দেরই অন্যতম। পাশ্চাত্যের কথা, শেখ হাসিনার সরকারকে চলতে হবে তাদেরকেও সাথে নিয়ে।
কিন্তু সমস্যা হল, শেখ মুজিবের যেমন ব্যক্তিগত এজেণ্ডা ছিল, তেমন এজেণ্ডা রয়েছে শেখ হাসিনারও। শেখ মুজিবের বাকশালী হওয়ার পিছনে কাজ করেছিল তাঁর প্রচণ্ড ক্ষমতালিপ্সা। সে লিপ্সা পূরণে অন্যরা এগিয়ে না আসলেও ভারত এগিয়ে এসেছিল। ফলে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতের কোলে। এর ফলে তাঁর এক কালের বহু ভক্তরাই দূরে সরিয়েছিল। এমনকি তাদের হাতে তাঁকে নিহতও হতে হয়েছিল। রক্তের একই জিন প্রভাব ফেলছে শেখ হাসিনার উপরও। ক্ষমতার অতি অদম্য লিপ্সা শেখ হাসিনারও। সে লিপ্সা পূরণে ব্রিটিশ ও মার্কিনীরা গত নির্বাচনে সাহায্য দিলেও ভারত ছাড়া এখন আর কেউ সাহায্য দিচ্ছে না। ফলে তাঁকেও উঠতে হচ্ছে একমাত্র ভারতের কোলে। তাছাড়া তার কিছু অদ্ভুদ বিশ্বাসও আছে। সে বিশ্বাস অনুযায়ী বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ মুজিবের চেয় শ্রেষ্ঠতর কেউ যেমন নেই, তেমনি আজকের বাংলাদেশেও শেখ হাসিানার শ্রেষ্ঠতর কেউ নেই। অনুরূপ বিশ্বাস তাঁর দলের ক্যাডারদেরও। তাই বাংলাদেশে কাউকে যদি নবেল প্রাইজ দিতে হয় তবে সেটি তাকেই দিতে হবে। তার দলীয় ক্যাডার বাংলাদেশের এ্যাটর্নি জেনারেল তো সেটি প্রকাশ্যে বলেছেন।
শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী ক্যাডারদের কাছে ডক্টর ইউনুসের বড় অপরাধ, তাঁর নবেল প্রাইজ প্রাপ্তি। এজন্যই তিনি শেখ হাসিনা ও তাঁর ভক্তদের কাছে ঘৃনার পাত্র। ডক্টর ইউনূসকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীন ব্যাংক থেকে হঠিয়ে অপদস্থ করা হল, তেমনি এক ঘৃনার কারণেই। মার্কিন প্রশাসন এ নিয়ে খুশি নয়। খুশি নয় ব্রিটিশসহ ইউরোপীয় সরকারগুলিও। কারণ, ডক্টর ইউনুস তাদের অতি ঘনিষ্ট লোক। তাঁর সাথে তাদের সহযোগিতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। তাদের প্রত্যাশা ছিল এবং সে সাথে অনুমতিও ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু ইসলাম পন্থিদেরও নির্মূল করবে। কিন্তু সে সীমানা অতিক্রম করে হাত তুলেছে ডক্টর ইউনূসের উপরও। হিলারি ক্লিন্টন তাই বাধ্য হয়ে শেখ হাসিনাকে জানিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন, কীভাবে তাঁকে ক্ষমতায় আনা হয়েছে। ব্রিটিশের একই রূপ ক্ষোভ। ডক্টর ইউনূসের সম্প্রতি বিলেতে আগমন এবং ‘গার্ডিয়ান’সহ লন্ডনের নামকরা পত্রিকায় গুলোতে যে ভাবে তাঁর বক্তব্যকে তুলে ধরা হয়েছে তাতেই প্রমাণ মেলে ব্রিটিশ সরকার হাসিনা সরকারের উপর কীরূপ বিক্ষুব্ধ। এতটাই বিক্ষুব্ধ যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ বহুমন্ত্রী লন্ডনে এসেছিলেন তারেক জিয়াসহ আরো কিছু ব্যক্তিকে বাংলাদেশে নিয়ে বিচার করতে, কিন্তু তারা কোন পাত্তাই পাননি। হাসিনা সরকার তাই আন্তর্জাতিক ভাবে অতি বিচ্ছিন্ন সরকার, যেমনটি ছিল শেখ মুজিবের সরকার। মুজিবের সে নিঃসঙ্গতার কারণে বাংলাদেশে যখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নেমে আসে তখন কোন বিদেশী সরকার এগিয়ে আসেনি। বর্তমান সরকারের এরূপ নিঃসঙ্গ অবস্থায় মনমোহনের বাংলাদেশ সফর তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিঃসঙ্গ শেখ হাসিনার পাশে ভারত যে প্রবল ভাবে আছে সেটি জানিয়ে দেয়ার এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রয়োজনীয় সময়ও। নিঃসঙ্গ মুজিবকে সাহস জোগাতে এক সময় ইন্দিরা গান্ধিও ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন।
ভারতীয় বিনিয়োগ ও স্বার্থসিদ্ধি
হাসিনাকে নিয়ে পাশ্চাত্য সরকার সমূহের যে মূল্যায়ন তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মুল্যায়ন ভারতের। ভারত চায় শেখ মুজিব ও তার পরিবারের ইমেজকে প্রবলতর করতে। বিদেশীদের কাছে মুজিব পরিচিত ছিলেন একজন ব্যর্থ রাষ্ট্রনায়ক রূপে। তার আমলের বাংলাদেশকে তারা বলেছেন “ভিক্ষার ঝুলি”। অথচ ভারতের কাছে সে আমলটিই ছিল সবচেয়ে স্বর্ণযুগ। সে বিশ্বাস আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও। এত বড় মতের মিল অন্য কোন দেশের নেতাদের সাথে নেই। ভারতের এমন বিশ্বস্থ বন্ধু অন্য কোন দেশে নাই। এবং সেটির পিছনে মুজিব পরিবার। ভারতের কাছে মুজিব পরিবার তাই মূল্যবান এ্যাসেট। এজন্যই মুজিব পরিবার ও ভারতের শাসক ইন্দিরা গান্ধী পরিবারের যোগসূত্র মজবুত করা তাদের অন্যতম লক্ষ্য। সে লক্ষ্য পূরণেই সম্প্রতি বাংলাদেশে সফর করতে এসেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। তারা জানে, ভারতীয় স্বার্থের এতবড় সেবক ভারত আর কোন কালেই পায়নি। ভারতের স্বার্থে যে কোন ভারতীয়র চেয়েও মুজিবের অবদানটি ছিল অনেক বড়। ১৯৪৭-এর পূর্বে ভারতীয় হিন্দুরা চায়নি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পাক। ১৯৪৭-এর পর চায়নি দেশটি বেঁচে থাক। পাকিস্তান ভাঙ্গতে তাদের লাগাতর ষড়যন্ত্র চলে ১৯৪৭ সাল থেকেই। ১৯৬৫ সালে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যুদ্ধ লড়েও সে চেষ্টা সফল হয়নি। সেটি সফল হয় ১৯৭১ সালে। এবং সেটি মুজিবের কারণে। ফলে খণ্ডিত হয় তাদের প্রধানতম শত্রু পাকিস্তান। এতবড় কৃতজ্ঞতার কথা ভারত ভূলে কিভাবে?
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে লক্ষ লক্ষ সৈন্য রাখতে ভারতের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হত। এখন সে ব্যায়ভার নেই। তবে সে অর্থ বাঁচিয়ে ভারত যে শুধু তার অর্থনীতি মজবুত করছে তা নয়। বরং বিপুল ভাবে বিনিয়োগ করছে প্রতিবেশগুলোর দেশের রাজনীতিতেও। সে বিনিয়োগের অংশ রূপেই গত নির্বাচনের শেখ হাসিনার বিপুল অর্থপ্রাপ্তি ঘটেছিল। বস্তুত বাংলাদেশে ভারতের মূল বিনিয়োগটি কখনই দেশের কৃষি বা শিল্পের ন্যায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ছিল না। আজ যেমন নয়, তেমনি অতীতেও নয়। বরং ১৯৪৭ সাল থেকেই সেটি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিপুল হারে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃক্তিক তাঁবেদার পালনে। এরাই আজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় স্বার্থের বড় পাহারাদার। এরাই গঙ্গার পানি-বন্টন চুক্তিকে সফল চুক্তি বলে উৎসব করে। এবং টিপাইমুখ বাঁধের ফলে সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনায় পানি থৈ থৈ করবে সে কিসসাও শোনায়। এরাই ভারতীয় সাংস্কৃতিক শিল্পি ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে গলা জড়িয়ে বন্ধুত্ব ও সম্পৃতির ঐক্যতান ধরে।
ভারত সরকার কোন খয়রাতি প্রতিষ্ঠান নয়। প্রতিটি বিনিয়োগ থেকে মুনাফা তোলাই সেদেশের সরকার সমুহের সরকারি দায়িত্ব। তেমনি মুনাফা তুলছে বাংলাদেশের গত নির্বাচনে তাদের কৃত বিশাল বিনিয়োগ থেকেও। সে বিনিয়োগেরও ফল রূপে শেখ হাসিনা থেকে বিনা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের ২৬১ একর জমি ছিনেয়ে নিল। এখন নিচ্ছে ট্রানজিট। নিচ্ছে সীমান্ত বাণিজ্যের সুযোগ। ভারত তার একাত্তরের বিনিয়োগ থেকেও একই ভাবে বিপুল মুনাফা তুলেছে। সূদে-আসলে তাদের মুনাফা তোলার সুযোগ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষ সেদিন লাখে লাখে না খেয়ে মরেছে।
ভারতীয়দের ইসলামভীতি
ভারতীয়দের মনে ধরেছে প্রচণ্ড ইসলামভীতি। তারা দেখছে, মুসলিম বিশ্ব জুড়ে ইসলামের পক্ষে দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে জোয়ার। মানুষ ফিরছে ইসলামের দিকে। তাদের ভয়, ইসলামের প্রতি এরূপ প্রবল আগ্রহই বাংলাদেশীদেরকে ভারত বিরোধী করবে। এতকাল একাত্তরের ঘটনা নিয়ে বিচার বসেছে সেক্যুলার চিন্তার মডেল নিয়ে। এতে অপরাধী গণ্য হচ্ছে ইসলামপন্থিরা আর মহত্তর রূপে চিত্রিত হচ্ছে ভারত ও ভারতপন্থিদের ভূমিকা। সেক্যুলার মডেলে ব্যাভিচারও প্রেম মনে হয়। একাত্তরের মূল্যায়নে ইসলামী মডেল গুরুত্ব পেলে ভারত ও ভারতপন্থিরা গণ্য হবে ঘৃণ্য শত্রু রূপে। ভারত ও ভারতপন্থিরা তাই ইসলামকে ভয় পায়। তাদের ভয়, দেশটি তখন ইসলামের বিপ্লবের দেশে পরিনত হবে। সে ভয়ের কথা ১৯৭২-য়েই প্রকাশ করেছিলেন ভারতের বিজেপী নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। সে ভয়ের কথা সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তাঁর কথায় বাংলাদেশের ২৫% জনগণ ইসলামী মৌলবাদী সংগঠনের সমর্থক। তাঁর কাছে এ চিত্রটি অতি ভয়ংকর। এমন জনসমর্থন তো পাকিস্তানের মৌলবাদী সংগঠনগুলোরও নাই। ফলে বাংলাদেশের যে চিত্রটি মনমোহন সিংয়ের চিত্তকে সর্বদা আচ্ছন্ন করেছে তা দেশের চলমান স্বৈরাচারি শাসন নয়। ভেঙ্গে পড়া আইনশৃঙ্খলা বা সন্ত্রাসও নয়। সীমান্তের চোরাচালান বা ভারতের সাথে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্যিক ঘাটতিও নয়।ারতেভাভভভারততত বরং মৌলবাদী সংগঠনের প্রতি ২৫% ভাগ জনসমর্থনের এ চিত্র। পাকিস্তানের আনবিক বোমার চেয়েও ভারতের জন্য এটি বিপদজনক। ভারত জানে, বিশ্বশক্তির মঞ্চ থেকে সোভিয়েত রাশিয়াকে যে শক্তি বিদায় দিল সেটি ন্যাটোর সামরিক জোট নয়। মার্কিনীদের পারমানকি অস্ত্রও নয়। বরং আফগানিস্তানের মৌলবাদী দরিদ্র মুসলমানেরা। ইসলাম তাদেরকে অপরাজেয় শক্তিতে পরিণত করেছে। ভারতের ভয়, বাংলাদেশের মানুষও আজ সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। ইসলামের এ জাগরণকে কি ভাবে কীভাবে রুখা যায় সেটিই যে এ সফরে অত্যাধিক গুরুত্ব পাবে তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে?
রাজনীতিতে সংঘাত ও ভারতীয় ইন্ধন
বাংলাদেশে ভারতের প্রধান আগ্রহটি ব্যবসা বানিজ্য নয়, পানিবন্টন বা সীমান্ত নিয়ন্ত্রনও নয়। বরং সেটি বাংলাদেশের রাজনীতি। ভারতীয়দের কাছে তাদের নিজ দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির চেয়ে এটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতি তাদের এত আগ্রহের কারণ, দেশটির ভৌগলিক অবস্থান এবং ১৬ কোটি জনগণ। বাংলাদেশের এ বিশাল জনগণ ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে ভারতের প্রতিরক্ষা। বিপর্যস্ত হবে ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্তের ৭ টি প্রদেশে ভারতীয় শাসন। সেখানে এখন রীতিমত যুদ্ধ চলছে, মোতায়েন রয়েছে তিন লাখের বেশী ভারতীয় সৈন্য। অবরুদ্ধ গাজার ১৫ লাখ ফিলিস্তিনী দুশ্চিন্তায় ফেলেছে মধ্যপ্রাচ্যর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ইসরাইলকে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ লাখ নয়, ১৬ কোটি|
ভারত চায় বাংলাদেশকে যে কোন ভাবে নিজ প্রভাব বলয়ের মধ্যে ধরে রাখতে। বাংলাদেশকে ভারত নিজ ভূগোলের বহির্ভূত কোন বিদেশী স্বাধীন ভূমি ভাবে না। ভাবে, নিজ প্রতিরক্ষা সীমানার অন্তর্ভূক্ত একটি এলাকা রূপে। ভারতীয়দের কাছে অজানা নয়, ভারত বিরোধী ক্ষোভ শুধু উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ৭টি প্রদেশে সীমিত নয়, সেটি প্রবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও। ভারতের ভয়, এ ক্ষোভ দ্রুত দমিত না হলে বাংলাদেশীরা মিত্র হতে পারে ওপারের বিদ্রোহীদের। তখন ভারত বিরোধী অভিন্ন রণাঙ্গনের অংশে পরিনত হবে বাংলাদেশও। তাই ভারতের স্ট্রাটেজী, উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ৭টি প্রদেশে যুদ্ধ জিততে হলে সে যুদ্ধ জিততে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও। আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সে যুদ্ধের দায়ভার দিতে চায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে। তাই হাসিনার জন্য ভারত সরকারের সাহায্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল ভারতের কাছে হাসিনার গুরুত্ব। এ জন্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাড়ছে সংঘাত ও উত্তাপ। যেন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। তাই এ উত্তাপপূর্ণ রাজনীতির জন্য দায়ী শুধু শেখ হাসীনা ও তাঁর দলীয় সরকার নয়, বরং বেশী দায়ী ভারত। কারণ, ভারতের চানক্য নীতির মূল কথা, প্রতিবেশী দেশে বিভেদ ও সংঘাত সৃষ্টি করে তাকে দুর্বল কর, অবশেষে দখল কর। ভারতীয় মদদে সেটি যেমন ১৯৭৪ সালে সিকিমে হয়েছিল, তেমনি ১৯৭১-এ পাকিস্তানেও হয়েছিল। দীর্ঘকাল ধরে শ্রীলংকা ও নেপালেও হয়েছে। আর আজ সেটিই হচ্ছে বাংলাদেশে।
ভারতীয় ড্রোন
ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ৭টি প্রদেশের যুদ্ধ চলছে বিগত প্রায় ৫০ বছরেরও বেশী কাল ধরে। থামার কোন নামই নিচ্ছে না। বরং দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে চীনও জড়িয়ে পড়েছে। ফলে আফগানিস্তানের যেমন মার্কিনীদের পরাজয় অত্যাসন্ন, তেমনি উত্তরপূর্ব সীমান্তের রাজ্যগুলিতে পরাজয় ঘনিয়ে আসছে ভারতীয়দেরও। কোন যুদ্ধই কোন দেশের পক্ষে এখন আর একাকী লড়া সম্ভব নয়। পারছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী। তারা ৪০টির বেশী দেশকে এনেছে আফগানিস্তানে। এরপরও হিমসিম খাচ্ছে। ভারতও তার যুদ্ধে পার্টনার চায়। বাংলাদেশকে টানছে একারণেই। ভারত চায়, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নিরাপদ ট্রানজিট যা উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ৭টি প্রদেশে সৈন্য ও রশদ পৌঁছতে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এভাবে ভারতের স্ট্রাটেজী হল, চলমান যুদ্ধের সাথে বাংলাদেশকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা। আফগানিস্তানের যু্দ্ধে একই ভাবে পাকিস্তানকে টেনেছে মার্কিনীরা। এবং সেটি শুরু হয়েছিল জেনারেল পারভেজ মোশাররফের আমলে। তবে মার্কিনীদের সাথে জেনারেল মোশাররফ যতটা জড়িয়েছিল, বর্তমান জারদারী সরকার জড়িয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী। মোশাররফকে সরিয়ে বেনজির ভূট্টোর পিপল’স পার্টি ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছিল মার্কিনীদের সাথে তালবান বিরোধী যুদ্ধে আরো নিবীড় পার্টনার হওয়ার শর্তে। তেমন পার্টনারশিপে বেনজির ভূট্ট্রো রাজী হওয়াতেই জেনারেল মোশাররফকে সরতে হয়েছে। মোশাররফ ড্রোন হামলার সুযোগ দেয়নি, অথচ সে সুযোগ লাগাতর দিচ্ছে জারদারী সরকার। সোয়াতে বা ওয়াজিরস্থানে পাক বাহিনীর হামলা শুরুতে হয়নি, কিন্তু জারদারীর আমলে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। মার্কিনী প্ররোচনায় পাকিস্তান এখন সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে নিজ দেশের তালেবানদের বিরুদ্ধেও। ফলে সমগ্র পাকিস্তান পরিনত হয়েছে রণাঙ্গণে।
ইসলামের জাগরণ রুখতে মার্কিনীরা যা কিছু আফগানিস্তানে করছে বাংলাদেশে সেটিই করতে চায় ভারত। এক্ষেত্রে ভারত সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্টনার। মোলবাদী নির্মূলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে চলছে মার্কিনীদের ড্রোন হামলা। অপর দিকে ভারতও বসে নাই। হাসিনা সরকার নিজেই পরিনত হয়েছে ভারতীয় ড্রোনে। ভারত এ জোট সরকারকে ক্ষমতায় আনায় সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছে এরূপ একটি লক্ষ্যেকে সামনে রেখেই। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উলফা নেতাদের উপর আঘাত হানতে ভারতকে মার্কিনীদের মত ড্রোন হামলা করতে হচ্ছে না। ইসলামপন্থিদের ধরতেও তাদের ময়দানে নামতে হচ্ছে না। সে কাজ শেখ হাসিনা নিজেই করছেন। পূর্ব রনাঙ্গণের বহু বিদ্রোহী এবং বহু ইসলামপন্থি এখন বাংলাদেশের জেলে। বাংলাদেশ এভাবে জড়িত হয়ে পড়ছে এক অঘোষিত যুদ্ধে। আর এমন যুদ্ধ শুরু হলে কি সহজে থামে? মার্কিনীরা শত চেষ্টা করেও গত ১০ বছরে আফগানিস্তানে থামাতে পারছে না। এরপর যখন ট্রানজিট দিয়ে ভারতীয় রশদ ও সৈন্য পারাপার শুরু হবে তখন তার উপর বিদ্রোহীদের যে হামলা হবে সে কথা কে হলফ করে বলতে পারে? সেরূপ হামলা শুরু হলে হামলাকারিদের উপর ভারতীয় ড্রোনের হামলাও যে শুরু হবে তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? আজ বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশী লাশ হচ্ছে। তখন নিরপরাধ মানুষ বিপুল সংখ্যায় লাশ হবে দেশের অভ্যন্তরে, যেমনটি হচ্ছে পাকিস্তানে। তখন ভারত বিরোধীতা বিস্ফোরণে পরিণত হবে, এবং সেটি সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে।
অকার্যকর হচ্ছে নির্বাচন
এ যুদ্ধে শেখ হাসিনা ও তাঁর দলকে অবিরাম সংশ্লিষ্ট রাখার স্বার্থেই ভারত অন্য কোন দলীয় বা সামরিক সরকারকে বাংলাদেশে দেখতে রাজী নয়। তাই ভারতের মূল স্ট্রাটেজী, শেখ হাসিনাকে যে করেই হোক দীর্ঘকাল ক্ষমতায় রাখা। এজন্য পরিকল্পিত ভাবে অকার্যকর করা হচ্ছে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে। কাশ্মিরে জনসমর্থনহীন গোলাম মুহাম্মদ বখশী সরকারকে ১১ বছর ক্ষমতায় রেখে নেহেরু সরকার যেমন কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমন করেছিল তেমন নীতি এখান বাংলাদেশকে ঘিরেও। অথচ নির্বাচনের নামে কাশ্মিরেও বার বার নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে জনপ্রিয় কাশ্মিরী নেতাকর্মীদের বছরের পর বছর কারারুদ্ধ করে। ফলে পুতুল বখশি সরকারকে কেউই হারাতে পারিনি। যেমন আফগানিস্তানের কারজাইকেও কেউ নির্বাচনে হারাতে পারছে না। অধিকৃত দেশে এমন সাঁজানো নির্বাচন ঘটানোয় ভারতের অভিজ্ঞতা তাই বিশাল। শেখ হাসিনা ভারতের সে অভিজ্ঞতাকে যে কাজে লাগাবে তা নিয়েও কি কোন সন্দেহ আছে? বরং ভারতীয় অভিজ্ঞতার প্রয়োগ জোরেশোরে শুরুও হয়ে গেছে। ফলে অসম্ভব হয়ে উঠছে অভঅঅসম্ভব নিদদিনির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হটানো। যেমন অসম্ভব করা হয়েছিল শেখ মুজিবের ক্ষেত্রে। বিরোধী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশি হামলা, মামলা ও কারারুদ্ধ করার যে ব্যাপক তৎপরতা – সেটি তো সে লক্ষ্যেই।
মনমোহন সিংয়ের এ সফরে অনেক কিছুরই আয়োজন হবে। অনেক বড় বড় কথা হবে, অনেক চুক্তিও হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অলিখিত চুক্তিটি হবে শেখ হাসিনাকে কি করে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় রাখা যায় তা নিয়ে। তেমনি একটি পরিকল্পনা শেখ মুজিবকে নিয়েও হয়েছিল। কিন্তু সেটি পণ্ড হয়ে যায়। মুজিবকে বাঁচানোর সে ব্যর্থতা নিয়ে ভারতীয় র’ এবং দিল্লির শাসক মহলে আজও মাতম হয়। এবার তারা চায়, আরো হুশিয়ার হয়ে এবং আরো সুক্ষ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে ইসলামপন্থিদের গ্রেফতার ও তাদের উপর নির্যাতন, সংবিধানের ১৫ম সংশোধন –এসব মূলত সে ভারতীয় প্রজেক্টেরই অংশ বিশেষ। তাই সন্দেহ নেই, মনমোহন সিংয়ের এ সফর শেখ হাসিনা ও তার সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতি গুরুত্বপূর্ণ ভারতের জন্যও। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য এ সফরে যে কোন কল্যাণই নেই, বরং সম্ভাবনা বাড়বে দেশের রাজনীতি আরো সংঘাতপূর্ণ ও রক্তাত্ব হওয়ার -তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? ১৬/০৮/১১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018