রক্তাত্ব বাংলাদেশঃ জনগণ কি আঙ্গুল চুষতে থাকবে?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on July 21, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
লাশ ফেলার রাজনীতি
বাংলাদেশে এখন লাশ ফেলার রাজনীতি ও প্রশাসন। পুলিশের গুলিতে বিগত ফেব্রেয়ারি ও মার্চ -এ দুটি মাসেই নিহত হয়েছে ২০০ জনের বেশী নিরপরাধ নিরীহ মানুষ। হত্যা করা হয়েছে মায়ের কোলের শিশু ও গৃহিনী নারীকেও। অতীতে কখনোই আন্দোলন দমাতে এভাবে শিশু ও নারীদের হত্যা করা হয়নি। গত ২৯/৩/১৩ তারিখে কোন হরতাল ছাড়াই এক দিনে নিহত হয়েছে ৭ জন। তাদের মধ্যে ৩ জন নিহত হয়েছে চাপাঁইনবাবগঞ্জ,২ জন সিরাজগঞ্জে এবং ২ জন খুলনায়। গত ২৮শে ফেব্রেয়ারির এক দিনে হত্যা করা হয়েছে ৭০ জনকে।পাকিস্তান আমলের সমগ্র ২৩ বছরে সব মিলে পুলিশের গুলিতে রাজপথে এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। স্বৈরাচারি এরশাদের আমলে একদিনে ২জন নিহত হয়েছিল। আর তাতেই “চারিদিকে দেখি লাশের মিছিল” নামে গণসঙ্গিত লেখা হয়েছিল। লেখা হয়েছিল “ঝরাও রক্ত,ছড়াও রক্ত,যত খুশী তুমি পার;রাজপথে আজ জনতা জেগেছে,যত খুশী তুমি মার।” আওয়ামী লীগ কর্মী ও বামপন্থিরা সেদিন সে গান আর হারিমোনিয়াম নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। অথচ আজ এত খুন,কিন্তু সে খুনের বিরুদ্ধে বামপন্থিরা শুধু নীরবই নয়,খুন নিয়ে তারা বরং উৎসব করছে। তারা চায়,আরো খুন আরো লাশ। লাশের রক্তমাংস নিয়ে তারা সকাল বিকাল নাশতা করতে চায়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রেয়ারিতে ঢাকায় নিহত হয়েছিল ৪ জন। আর তাতে আব্দুল গাফফার চৌধুরি গান লিখেছিলেন “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রেয়ারি,আমি কি ভূলিতে পারি?” আজও সে গানটি ফেব্রেয়ারি মাস এলেই গাওয়া শুরু হয়। আব্দুল গাফফার চৌধুরি আজও বেঁচে আছেন। কিন্তু তিনি আজ নীরব কেন? আজ ৪ জন নয়,২০০ জনের বেশী শহীদের রক্তে লালে লাল হয়ে গেছে সমগ্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ কি এত শহীদের রক্ত ভূলতে পারে? কিন্তু আব্দুল গাফফার চৌধুরি আজ ২০০ জন শহীদের রক্তকে শুধু ভূলেই যাননি,বরং তিনি কলম ধরেছেন খুনিদের পক্ষে। এই হলো আব্দুল গাফফার চৌধুরিদের বিবেক! তবে একুশে ফেব্রেয়ারির গানও তিনি বিবেক নিয়ে লেখেননি। লিখেছেন আওয়ামী রাজনীতি নিয়ে। লক্ষ্য ছিল ৪ নিহতের লাশ নিয়ে তৎকালীন মুসলিম লীগের সরকারকে নাকানি চুবানি দেয়া। নিহতদের রক্ত নিয়ে তিনি সেদিন যেমন রাজনীতি করেছেন,আজও করছেন। এজন্যই তার কলমে তাই এত খুন এত রক্তপাতের বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ উঠে না।
খুনিদের সর্দার রূপে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
হত্যার চেয়ে বর্বর অপরাধ এ ভূপৃষ্টে আর কি হতে পারে? সরকারের বড় দায়িত্ব হলো মানুষের জানমালের নিরপত্তা দেয়া।কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে বেছে নিয়েছে নিরস্ত্র মানুষ-হত্যা।সে জন্যই পুলিশকে দিয়েছে প্রতিবাদী মানুষকে দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ। সভ্য দেশে এরূপ গুলি চালনোর ক্ষমতা পুলিশের সেপাই দূরে থাক অফিসারদেরও থাকে না। এমন কি বাংলাদেশেও বহু খুনের জঘন্য অপরাধীকে জেলা জজ ফাঁসীতে ঝুলাতে পারে না। সে জন্য হাই কোর্ট থেকে তারা রায়ের পক্ষে অনুমোদন নিতে হয়। অথচ বাংলাদেশের পুলিশ পাখি শিকারের ন্যায় মানুষ শিকার করছে। গত ২৯/০৩/১৩ তারিখে সাংবাদিকগণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীরকে জিজ্ঞেস করেন,পুলিশ কেন নির্বিচারে এত মানুষকে হত্যা করছে? হত্যাপাগল পুলিশের পক্ষ নিয়ে তিনি পাল্টা জিজ্ঞেস করেছেন,পুলিশ কি তবে আঙ্গুল চুষবে? অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন,অসংখ্য মানুষ হত্যা করে পুলিশ ঠিক কাজই করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এখানে আবির্ভুত হয়েছেন জঙ্গলের বাদশাহ বা খুনিদের সর্দার রূপে,কোন সভ্যদেশের দায়িত্বশীল মন্ত্রী রূপে নয়।কথা হলো,কোন সভ্য দেশে এভাবে বিনাবিচারে মানুষ খুন কি সরকারের নীতি হতে পারে?
অথচ পুলিশের উপর জনতার পক্ষ থেকে কেউ গুলি ছুড়েছে সে প্রমাণ আজ অবধি নাই।বড় জোর কেউ পাথর মেরেছে। সে পাথর থেকে বাঁচার জন্য তাদের মাথায় হেলমেট ছিল।বুকে বর্ম ছিল। জনগণকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ক্যাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে পারতো। সভ্যদেশে বড়জোর পানির কামান ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এভাবে জনতার উপর গুলি বর্ষণের কথা কি ভাবা যায়? নির্বিচারে মানুষ হত্যাকে সরকার যে কতটা সহজ ভাবে নিয়েছে এ হলো তার নমুনা। মানুষ হত্যা করে খুনি সন্ত্রাসীরা। পুলিশের দায়িত্ব হলো জনগণকে তাদের হাত থেকে নিরাপত্তা দেয়া। অথচ আজ পুলিশ নিজেই পরিণত হয়েছে ভয়ানক খুনিতে।আর সে খুনি বাহিনীর সর্দারে পরিণত হয়েছে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং সে সাথে প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট মন্ত্রীর ভাষায় পুলিশ আজ আর নীরবে আঙ্গুল চুষছে না বরং অগণিত মানুষকে পথেঘাটে লাশ করছে। অথচ যখন পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারগণ প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ঘুরে,বিশ্বজিৎ দাশের ন্যায় নিরীহ মানুষকে কুপিয়ে কুপিয়ে লাশ করে তখন কিন্তু পুলিশ ঠিকই নীরবে দাড়িয়ে আঙ্গুলই চুষে। এবং তখনও আঙ্গুল চুষে যখন সরকারি দলের দুর্বৃত্তগণ শেয়ার মার্কেট,ব্যাংক,সরকারি রাজস্বভান্ডার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করে।এবং যেসব ডাকাত মন্ত্রীদের দূর্নীতির কারণে পদ্মাসেতু প্রকল্প বানচাল হয়ে গেল পুলিশ কিন্তু তাদের গায়ে একটি আঁচড়ও দেয়নি। অথচ তাদের সকল মুরোদ ও সকল বীরত্ব নিরস্ত্র ও নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে।
গণদুষমন রূপে সরকার ও পুলিশ
সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার জনগণের মৌলিক অধিকার। সে অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সে দায়িত্ব পালনে সরকারের চাকর রূপে নয়,জনগণের প্রহরী রূপে কাজ করে পুলিশ। এবং পুলিশের কাজ শুধু চোর-ডাকাত-খুনিদের থেকেই জনগণকে পাহারা দেয়া নয়,বরং দুর্বৃত্ত মন্ত্রী ও প্রশাসনের হাত থেকে পাহারা দেয়াও।তাই যে কোন সভ্যদেশে পুলিশ শুধু চোরডাকাতদেরই নয়, দুর্বৃত্ত মন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্মকতাদেরও হাজতে তোলে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে না। এখানে পুলিশ পরিণত হয়েছে নিছক সরকারের পাহারাদার চাকরে। পুলিশ আবির্ভূত হয়েছে হিংস্র গণশত্রুর বেশে। তাই সরকারের বিরোধীদের পক্ষ থেকে যখনই রাজপথে কোন মিছিল বা জনসভা হয় তখন পুলিশের কাজ হয় সে মিছিলে ত্বরিৎ জমা হয়ে সমবেত জনগণকে লাঠি পেটা করা,তাদের উপর ক্যাঁদানে গ্যাস ছুড়া ও গুলিবর্ষণ করা। সে সাথে দিবারাত্র পাহারা দেয় শুধু মন্ত্রীদেরই নয়,সরকারের সমর্থকদের প্রতিটি মিছিল ও সমাবেশকে। সেটিই দেখা গেল শাহবাগের সমাবেশে। সরকার পুলিশকে দিয়ে শুধু সমাবেশের পাহারাদারির ব্যবস্থাই করেনি,স্কুলে স্কুলে নির্দেশ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রী সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা যেমন করেছে তেমনি নিয়মিত খাদ্যপানীয় সরবরাহ করেছে। অথচ পত্রিকায় ও টিভিতে বার বার খবর দেয়া হচ্ছে,এবং ছবিও ছাপা হচ্ছে,পুলিশ জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের গ্রেফতার করছে বিভিন্ন মিটিং থেকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হচ্ছে, নেতাকর্মীরা সেখানে গোপন মিটিংয়ে জমা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো,প্রকাশ্যে বা গোপনে জমা হওয়া কি মৌলিক নাগরিক অধিকার নয়? এমন মিটিং করা কি দেশের আইন বা সাংবিধান বিরোধী? এমন বহু গোপন ও প্রকাশ্য মিটিং তো সরকারি দল আওয়ামী লীগও করছে। জামায়াত ও শিবির কর্মীদের মিটিং যদি দন্ডনীয় হয়,তবে তো দন্ডনীয় হবে আওয়ামী লীগের মিটিংও। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না কেন? অথচ জামায়াত ও শিবির কর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ ও সরকার এখানে সংবিধান বিরোধী ও প্রচলিত আইনবিরোধী কাজ করছে। দেশের আদালতের দায়িত্ব ছিল এমন অপরাধে সরকারের দায়িত্বশীলদের হাজতে তোলা ও শাস্তি দেয়া। কিন্তু আদালত সে কাজ করেনি। বরং এখানে আদালতও পরিণত হয়েছে সরকারের আজ্ঞাবহ সেবাদাসে।
কোন ডাকাত সর্দারই একাকী ডাকাতি করতে পারে না। যে কোন ডাকাতি হামলার জন্য তাকেও ডাকাত দল গড়তে হয়। তেমনি কোন দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারিও কোন দেশে একাকী তার দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারি শাসন চালাতে পারে না। সেকাজের জন্য শুধু রাজনৈতীক দল হলেই চলে না। বরং রাজনৈতীক ক্যাডারদের পাশাপাশি আজ্ঞাবহ একপাল দুর্বৃত্ত পুলিশ,দুর্বৃত্ত প্রশাসক বাহিনী ও দুর্বৃত্ত বিচারকও পালতে হয়। ফিরাউন,হালাকু,চেঙ্গিস ও হিটলারের আমলে যে শুধু দেশের রাজপ্রাসাদ দৃর্বৃত্ত কবলিত হয়েছিল তা নয়,দুর্বৃত্তদের দিয়ে পূর্ণ করা হয়েছিল দেশের প্রশাসন,পুলিশ ও আদালতেও। ডাকাত সর্দার যেমন এক পাল ডাকাত নিয়ে পথে নামে,এরাও তেমনি এক পাল পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে চলাফেরা করে। রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে আজ্ঞাবহ এরূপ দুর্বৃত্তদের বসানোর কারণেই স্বৈরাচারি শাসককে কোন কুকর্মই নিজ হাতে করতে হয় না। সে কাজ তার আজ্ঞাবহ দুর্বৃত্তগণই অতি সুচারু ভাবে সমাধান করে। ফলে আগে রাজনৈতীক বিরোধীদের হত্যায় আওয়ামী লীগকর্মীদের যেভাবে লগিবৈঠা,চাপাতি ও কুড়াল নিয়ে রাজপথে নামতে হতো,এখন সে কাজের দায়িত্ব নিয়েছে দেশের প্রশাসন,পুলিশ ও আদালত। ফলে বিগত চার বছরের শাসনে যতজন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে মারা গেছে তার চেয়ে বহুগুণ মারা গেছে পুলিশের হাতে। নিরপরাধ মানুষকে রিম্যান্ডে নিয়ে পা থেকে মাথা অবধি নির্যাতন করা এখন একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। সাধারণ ডাকাতগণ তাদের লুন্ঠন কর্মে পুলিশী প্রটেকশন পায়না। জনগণের হাতে তাই বহু ডাকাতকে মারা পড়তে হয়। কিন্তু পুলিশী প্রটেকশন পাচ্ছে আওয়ামী ডাকাতগণ। তারা তাই নিশ্চিন্তে হাত দিয়েছে দেশের সমুদয় সম্পদ লুন্ঠনে। ফলে দেশের রাজস্ব-ভান্ডার,ব্যাংক,শিল্পপ্রতিষ্ঠান কোন কিছুই আজ নিরাপত্তা পাচ্ছে না।
দেশ অধিকৃত অপরাধিদের হাতে
দেশ আজ পুরাপুরি আওয়ামী দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত। দুর্বৃত্তরা কখনোই জনগণের সম্মতি নিয়ে পকেটে হাত দেয় না। তাদের মতামতের তোয়াক্কাও করে না। বরং তারা সেটি করে গায়ের জোরে। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে বাংলাদেশ যখন অধিকৃত হয়েছিল তখন সে অধিকৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য জন-সমর্থণ বা জনগণের রায়কে তারা গুরুত্ব দেয়নি। বরং সে অধিকৃতি বাঁচাতে যেমন আজ্ঞাবহ পুলিশ ও সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছিল,তেমনি তাঁবেদার প্রশাসন ও আদালতও গড়ে তুলেছিল। যুগে যুগে গণ-শত্রুগণ এভাবে তাদের সাহয়্য নিয়েই শত শত বছর শাসন করেছে। নিরাপরাধ মানুষকে তারা যেমন ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে,তেমনি হাজার হাজার মানুষকে কারাবন্দীও করেছে। আওয়ামী লীগ জানে,তাদের জন-সমর্থন তলায় ঠেকেছে।সুষ্ঠ নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে।সে খবরটি তাদের অভিভাবক ভারতও জানে। তাই জেনে বুঝেই তারা সাম্রজ্যবাদীদের অনুসৃত সনাতন কৌশলটি বেছে নিয়েছে। বেছে নিয়েছে গণ-নির্যাতনের পথ। সে লক্ষ্যেই দেশের পুলিশ বাহিনী,প্রশাসন ও আদালতে বেছে বেছে তাদের প্রতি অনুগতদের নিয়োগ দিয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি রূপে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী সামসুদ্দিন মানিকসহ অনেকের নিয়োগ কি সেটিই প্রমাণ করে না? আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ন্যায় একটি আদালত গড়ে তুলেছে এমন বিচারকদের দিয়ে। সে সাথে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজও নিজ হাতে নিয়েছে।বাংলাদেশের মত দেশে সরকারি প্রশাসন হাতে থাকলে কাউকে কি নির্বাচনে পরাজিত করা সম্ভব? ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্বৃত্ত এরশাদকেও তাই কেউ নির্বাচনে হারাতে পারিনি।আওয়ামী লীগ সেটি জানে।তাই তারা তত্তাবধাক সরকারের পদ্ধতিটি বাতিল করে দিয়েছে আজ্ঞাবহ বিচারকদের দিয়ে।
স্বৈরাচারি শাসন কখনোই ভোট নিয়ে বাঁচে না। বাঁচে বাহুবল ও নির্যাতনী শক্তির জোরে। আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা তাই জনসেবা বা জনসমর্থন নয়,বরং লুন্ঠন। আর লুন্ঠনের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে নাগরিক নির্যাতন। সেটি যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে,তেমনি জানমালের নিরাপত্তা কেড়ে নিয়ে। বনেজঙ্গলে তবু পশু হামলা থেকে বাঁচা যায়,কিন্ত বাংলাদেশের পুলিশ,ডিবি ও র্যাব থেকে বাঁচা কঠিন। এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি যে কত নৃশংস অপরাধিদের হাতে অধিকৃত হয়ে পড়েছে তার একটি বেদনাদায়ক বিবরণ ছেপেছে দৈনিক “আমার দেশ” তার ৩১শে মার্চ তারিখের সংখ্যায়। সাধারণ মানুষ আজকাল রাজপথ থেকে খুনি,সন্ত্রাসী বা ডাকাতদের হাতে ছিনতাই বা উধাও হচ্ছে না। ছিনতাই হচ্ছে,ছিনতাইয়ের পর নির্যাতিত হচ্ছে এবং নির্যাতনের পর লাশ হয়ে ফিরছে পুলিশ,ডিবি এবং র্যাবের হাতে। সম্প্রতি বিনাকারণে গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মাওলানা শেখ নূরে আলম হামিদী। ডিবি পুলিশের নির্যাতনে মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার শরীরের কোনো অংশই রক্ষা পায়নি। কারাগারে অসুস্থ হলেও তিনি চিকিৎসা পাননি। দেশের হাসপাতালও যে কতটা দুর্বৃত্তকবলিত সে প্রমাণও তিনি পেয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎকরা তাকে প্রেসক্রিপশন দিলেও ওষুধ দেয়া হয়নি।সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতনে পুলিশ যে কতটা আওয়ামী দুর্বৃত্তদের সহযোগী ও পার্টনার সে প্রমাণও তিনি পেয়েছেন। ২২শে ফেব্রুয়ারি কাঁটাবন মসজিদ থেকে আটকের পর হামিদীসহ তার সঙ্গে থাকা আরও চারজনকে শাহবাগিদের কাছে নির্যাতনের জন্য ছেড়ে দিয়ছিল পুলিশ। ২৫ দিন কারাভোগের পর ব্রিটিশ সরকারসহ বিভিন্ন মহলের হস্তক্ষেপে জেল থেকে মুক্ত হলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি তিনি।এখনও তিনি সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎধীন আছেন।
মাওলানা হামিদীর সাথে যে বর্বরতাটি ঘটেছে,আওয়ামী লীগের প্রকৃত চরিত্র বুঝার জন্য সেটুকুই যথেষ্ট। এজন্য ইতিহাসের বই পাঠের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া ইতিহাসের বইয়েও তো বিকৃত করা হয়েছে। দৈনিক “আমার দেশ” যে বিবরণটি ছেপেছে এখানে সেটিই তুলে ধরা হলো। মাওলানা হামিদীর বাড়ি বৃহত্তর সিলেটে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের হামিদনগরের বরুণায়। তার বাবা বরুণার পীরসাহেব মাওলানা শায়খ খলীলুর রহমান হামিদী। তিনি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের আমির এবং বরুণা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস। মাওলানা হামিদী ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করে বরুণা মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন এবং ১৯৯৯ সালে লন্ডন যান। সেখানে আনঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম সেন্টারের অধীনে মসজিদ,মাদরাসা,বয়স্ক শিক্ষা,স্যানিটেশন,অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস,মেডিকেল সেন্টার,মাদকাসক্ত পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্যক্রম পরিচালনা করেন। হেফাজতে ইসলাম ইউকের পক্ষ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার অনুদান গরিব-অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়—বাংলাদেশের যে কোনো দুর্যোগ মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ায়। ঘূর্ণিঝড়, সিডর, বন্যা ও শীতকালে অসহায়দের পাশে থাকে হেফাজতে ইসলাম।
মাওলানা হামিদী বরুণায় ১৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে জানুয়ারি মাসে লন্ডন থেকে দেশে আসেন। প্রতি বছরই বরুণায় এ সম্মেলন হয়ে থাকে। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এ মাহফিলে। এ সম্মেলনে বিদেশ থেকে যারা এসেছিলেন, তাদের বিমানে তুলে দিতেই ঢাকায় আসেন তিনি,আর এসেই গ্রেফতার হন। মাওলানা হামিদী এসব ঘটনা আমার দেশ-এর কাছে তুলে ধরে বলেন, “মাহফিলে যুক্তরাজ্য,যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা,ভারত,অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ থেকে মেহমান এসেছিলেন। তাদের পৌঁছে দিতে ঢাকায় আসি। ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের ফ্লাইট ছিল। আমি, আমার ভাগ্নে হাফিজ আহমদ বিন কাসেম,আহমদ জুবায়ের জুয়েল, হুসাইন আহমদ খানসহ চারজন ঢাকায় আসি তাদের পৌঁছে দিতে। উত্তরায় একটি হোটেলে রাতে ছিলাম। ২২ ফেব্রুয়ারি নিউমার্কেটে যাই কেনাকাটার জন্য। পথে আমরা কাঁটাবন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যাই। নামাজ শুরুর সামান্য আগে আমরা চারজন মসজিদে প্রবেশ করি। তিনি বলেন,নামাজ শেষ হতে না হতেই মসজিদের ভেতর টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। আমাদের চোখ জ্বলছিল। অজুখানায় গিয়ে চোখে পানি দিলাম। গ্যাসের এতই তেজ যে চোখে ঠিকভাবে দেখছিলাম না। নিচে নেমে আসার মুহূর্তে হঠাৎ একজন লোক আমার পাঞ্জাবি খামচে ধরে টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে; ছিঁড়ে ফেলে পাগড়ি। এ সময় টুপি পড়ে গেল। তখন আমিও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ঘুষি মারলাম। তখনও আমি বুঝতে পারিনি যে,সে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য। এরপর পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করলো। পিটিয়ে আহত করে আমাদের টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে আনল। হ্যান্ডকাফ পরাল। হাঁটিয়ে শাহবাগের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। আমি তাদের বারবার বললাম,আমি ব্রিটিশ নাগরিক। দেশে বেড়াতে এসেছি। কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনল না। শাহবাগ মঞ্চের কাছে নিয়ে গেল। জামায়াত-শিবির আখ্যায়িত করে আমাদের সেখানকার লোকদের হাতে তুলে দিল গণধোলাইয়ের জন্য। শাহবাগিরা আমাদের দিকে তেড়ে এলো। আমাদের কিছু না করতে শাহবাগিদের আমি বারণ করলাম। তারা আমাদের আর মারতে সাহস পেল না। আমাদের গালাগাল এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করল। আমাদের গাড়িটিও পুলিশ শাহবাগে নিয়ে এলো। পুলিশের সামনে মঞ্চের লোকরা সেটি ভেঙে ফেলল।”
মাওলানা শেখ নূরে আলম হামিদী আরো বলেন,“তারপর আমাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। এশা পর্যন্ত সেখানে রাখল। আমার পায়ে যেখানে গুলি লেগেছিল, সেখান থেকে রক্ত ঝরছিল। আমি একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমাদের খাবার পানিও দেয়া হলো না। আসর, মাগরিব ও এশার নামাজের জন্য অজুর পানিও দেয়া হলো না। দিতে বললে পুলিশ জানাল,জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে কিছু দেয়া হবে না। তিনি অভিযোগ করেন,শাহবাগ থানায় জমা নেয়া পাউন্ড ছাড়া লক্ষাধিক টাকা এখনও পাইনি। গাড়িটিও ফেরত দেয়া হয়নি। তিনি বলেন,সেদিন রাতে ডিবি অফিসে নিয়ে গেল। আমার ভাগ্নের চোখ বেঁধে প্রথমে তাকে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। তার জন্ম পবিত্র মক্কায়।সে কোরআনে হাফেজ এবং একজন নামকরা কারি। পরে আমাকেও চোখ বেঁধে একটি রুমে নেয়া হলো। ডিবি পুলিশের কয়েকজন মিলে আমাকে লাঠি দিয়ে পেটালো। রাতে ডিবি গারদে রাখলো। সেখানে থাকা অবস্থায় আমি সকালের দিকে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। পরে শাহবাগ থানায় আনা হলো। কিন্তু প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ দিল না। জামায়াত-শিবির, ভাংচুর,ককটেল বিস্ফোরণ প্রভৃতি অভিযোগে মামলা দেয়া হলো। এরপর সেখান থেকে চালান দেয়া হলো আদালতে। দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করল আদালত। থানায় নিয়ে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের কোনো জায়গা বাকি রাখেনি পেটাতে। পেটানোর সময় থানার লোকরা বলত,গোপালগঞ্জের টাইগার।শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ডিবিতে নেয়ার পর আমার কাছে থাকা আনুমানিক ২৯ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল, ক্রেডিট কার্ডসহ সবকিছু সেখানকার একজন এসআই জমা নেন। তিনি ক্রেডিট কার্ড থেকে কয়েকবার শপিং করেছেন, জানতে পেরেছি স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর টাকাসহ কোনো কিছুই আর ফেরত দেয়া হয়নি।”
অপরাধে ডুবন্ত দেশঃ দায়িত্বহীন পুলিশ!
শেখ হাসিনার শাসানামলে দেশ যে কতটা চোর-ডাকাত কবলিত এবং দেশবাসীর সম্পদ যে কতটা অরক্ষিত তারও একটি রিপোর্ট ছেপেছে দৈনিক মানব জমিন তার ৩১শে মার্চ ২০১৩ তারিখ সংখ্যায়। তা থেকে উদ্ধতি দেয়া যাকঃ “হলমার্ক, ডেসটিনি, ইউনিপেটুইউ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, আইসিএল -মাত্র এ কয়টি প্রতিষ্ঠানই লুটে নিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর নকশা কেলেংকারি করে রাজস্বের ১১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হাসীনার অতি কাছের সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন। পদ্মা সেতুর নকশা চুড়ান্ত অনুমোদন না করেই এ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। লুন্ঠিত অর্থ চলে গেছে ইউকে,ইউএসএ,কানাডার মত দেশে, দুদক সে প্রমানও পেয়েছে। হলমার্ক ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট ৫টি প্রতিষ্ঠান লুটেছে ৩,৬০০ কোটি টাকা। হলমার্ক সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাকে ভিত্তি করে ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে এলসি জালিয়াতি ও ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ডাকাতি করেছে ২,৬৮৫ কোটি টাকা। ডেসটিনি লুটেছে ৩,৩০০ কোটি টাকা। মাল্টি লেভেল মার্কিটিং কোম্পানি লুটেছে ৩,৭০০ কোটি টাকা। অস্তিত্বহীন আবাসন প্রকল্পের কথা প্রচার করে গ্রাহকদের ১৫০০ কোটি হাতিয়ে লাপাত্তা হয়েছে ম্যাক্সিম গ্রুপের এমডি হাবিবুর রহমান। তার সে লুটের কাজে সহযোগিতা করেছে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড.আলাউদ্দীন এবং ফরিদপুর-১ এর এমপি আব্দুর রহমান। লুন্ঠিত এ ১৭ হাজার কোটি টাকার একটি কানা কড়িও সরকার উদ্ধার করতে পারিনি।” কথা হলো,এসব দুর্বৃত্ত ডাকাতগণ যখন দিনের পর দিন,বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার কোটি ডাকাতি করছিল তখন সরকারের পুলিশ, ডিবি, দুদক, প্রশাসনিক কর্মকতা ও মন্ত্রীগণ কি করছিল? তারা কি তখন বসে বসে আঙ্গুল চুষেনি? অথচ এখন তারাই বিরোধীদলের নেতাকর্মি ও সাধারণ মুছল্লিদের শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশ ভন্ডুল করতে সর্বশক্তি নিয়ে নেমেছে। এ থেকে কি প্রমানিত হয়? জনগণের রাজস্বের অর্থে প্রতিপালিত এসব প্রতিষ্ঠানের মূল কাজটি জনগণের জানমাল পাহারা দেয়া নয়,বরং সেটি হলো সরকারের গদি পাহারা দেয়া। আর একটি অজনপ্রিয় দুর্বৃত্ত সরকারের গদি পাহারা দেয়ার কাজ কি এতই সহজ? পুলিশের কাজ এখন শুধু শুধু হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রীদের পাহারা দেয়া নয়,বরং জেলা,থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী ক্যাডারদের জানমাল ও বাড়ীঘর পাহারা দেয়াও। পুলিশ,ডিবি,দুদক ও প্রশাসনিক কর্মকতাদের সব সময় তো সে কাজেই শেষ হয়ে যায়। জনগণের জানমালের পাহারা দেয়ার ফুরসত কোথায়? সামর্থই বা কোথায়? সরকার তাই পুলিশের এজেন্ডা থেকেই সেটি বাদ দিয়ে দিয়েছে।তাই যতদিন এ সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন শুধু জনগণের জানমালই শুধু বিপদে পড়বে না,বিপদে পড়বে দেশও।অথচ এ গণশত্রুদের বেতন জোগাতে হবে জনগণকেই।
জনগণ কি আঙ্গুল চুষবে?
দেশ আজ ধ্বংসের মুখে। তবে এ মুহুর্তে আওয়ামী লীগের নিপাতও অনিবার্য। ১৯৭৫ সালে স্বৈরাচারি মুজিব নিজে মরে গেলেও তার দল বেঁচে যায়। কিন্তু এবার শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও তার দল যে বাঁচছে না সেটি সুনিশ্চিত। এতবড় দুর্বৃত্তকবলিত একটি দলকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে বড় দুর্বৃত্তি দেশে আর কি হতে পারে? কিছু বিষাক্ত গোখরা বা কিছু হিংস্র নেকড়েকে বাঁচানোর মধ্যে দেশের এত বড় অকল্যাণ নাই। তাতে দেশ ধ্বংস হয় না। কিন্তু আওয়ামী লীগের মত একটি দল বাঁচলে অসম্ভব করবে শুধু গণতন্ত্রকেই নয়,স্বাধীন দেশরূপে বাংলাদেশের বেঁচে থাকাটিও। তাছাড়া তাদের মূল এজেন্ডাটি শুধু গণতন্ত্র ও দেশধ্বংস নয়,বরং ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের উপর আঘাত হানাটিও। সুখের বিষয় যে,বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সেটি বুঝতে শুরু করেছে,ফলে বিপুল সংখ্যায় তারা ময়দানে নেমে এসেছে। এতবড় গণবিস্ফোরণ আউয়ুব বা মুজিবের বিরুদ্ধে হয়নি,এরশাদের বিরুদ্ধেও হয়নি। আগের কোন গণ-আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ কাফনের কাপড় পড়ে ময়দানে নামেনি। হাজার হাজার নারীও ঝাঁটা নিয়েও রাস্তায় নামেনি।দেশের কোথাও পূর্বে এরূপ লক্ষ লক্ষ মুসল্লির সমাবেশও হয়নি। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ এতটাই ক্ষিপ্ত যে হরতালের ডাক দিলেই মানুষ স্বতস্ফুর্ত ভাবে সেটি পালন করে। এ আন্দোলন তাই শুধু ছাত্র আন্দোলন বা রাজনৈতীক আন্দোলন নয়।এ আন্দোলন ছাত্র-অছাত্র,রাজনৈতীক-অরাজনৈতীক,নারী-পুরুষ, শহুরে ও গ্রামীন তথা সকল মানুষের আন্দোলন। ফলে হাসিনার বুঝতে বাঁকি নাই,তার দুঃশাসনের শেষ দিনটি আজ ঘনিয়ে এসেছে। স্বৈরাচারি শাসকের নিজের কুরসি ছাড়া অন্য কিছুর উপর দরদ থাকে না। ফলে দেশ ধ্বংস হলেও তাতে তাদের আপত্তি থাকে না। পতনের মুখে সিরিয়ার বর্তমান স্বৈরাচারি শাসক বাশার আল আসাদ তাই নিজ দেশের জনগণের উপর লাগাতর বিমান হামলা করছে। প্রশ্ন হলো,এ অবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ কি করবে? তারা কি বসে বসে আঙ্গুল চুষবে? সরকার তো সেটিই চায়।সরকার চায় দেশের ইসলামপন্থিগণ নিজেদের ভিন্ন ধর্মীয় ফেরকাগত বিশ্বাস নিয়ে বিভেদে লিপ্ত হোক এবং সে সুযোগে তারা আরো কিছুকাল শাসন ও শোষনের সুযোগ পাক। অতীতে ব্রিটিশ শাসকগণ তেমন একটি উদ্দেশ্য নিয়েই কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার ন্যায় বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তেমনি একটি লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারও আলেমদের উপর অর্থবিনিয়োগ করছে। বহুদিনের ফেরকাগত বিরোধকে তীব্রতর করতে আলেমের লেবাসধারি কিছু পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে ময়দানেও নামিয়েছে।
একতা ছাড়া পথ নেই এবং লড়াই ছাড়া মুক্তি নাই
ঘরে আগুন লাগলে বা দেশে যুদ্ধ শুরু হলে সে যুদ্ধে দেশকে বাঁচানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ থাকে না। দেশ বাঁচলেই নানা দলের নানা রাজনীতি থাকে। তাছাড়া ইস্যু এখানে শুধু দেশের স্বাধীনতা ও রাজনীতি বাঁচানো নয়,বরং ইসলাম বাঁচানো। সরকার শুধু দেশেরই শত্রু নয়।তাদের দুষমনি স্রেফ জামায়াতে ইসলাম,ইসলামী ছাত্রশিবির,হিজবুত তাহরির বা বিএনপির বিরুদ্ধে নয়। তারা ইসলামেরও ঘোরতর শত্রু। সে শত্রুটা যে কতটা প্রকট সেটি প্রমান করেছে সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থার কথাটি বিলুপ্ত করে। কোন কাগজে আল্লাহর নাম লেখা থাকলে কোন ঈমানদারকে আল্লাহর সে পবিত্র নাম মুছে দেয়ার সাহস রাখে? বরং সে কাগজকে সে সম্মান করে। অথচ আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থার বানিটি মুছে দিয়ে মহা বেঈমানি করেছে। আল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানটি তারা আরো সুস্পষ্ট করেছে যারা নাস্তিক,মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর মহান রাসূলের বিরুদ্ধে যারা অকথ্য ভাষায় ইন্টারনেট-ব্লগে গালিগালাজ করেছে তাদের সাথে জোট বাঁধার মধ্য দিয়ে। তারা জোট বেঁধেছে ভারতের সাথেও। ফলে এ সরকারের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত ও আযাব অনিবার্য। তাই এমুহুর্তে চাই সকল ঈমানদারদের মাঝে একতা। দলগত,ফেরকাগত বা আদর্শগত বিরোধ নিয়ে বিভক্ত থাকলে তা কেবল আযাবই নামিয়ে আনবে। এমন বিভক্তির বিরুদ্ধে মহান আল্লাহতায়ালার হুশিয়ারিটি অতি কঠোর। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন,“তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসার পরও পরস্পরে বিভক্ত হলো ও মতবিরোধ সৃষ্টি করলো।এবং তাদের জন্য রয়েছে বিশাল আযাব।” –(সুরা আল ইমরান,আয়াত ১০৫)। মুসলমানদের জন্য বিভক্তি তাই কোন গ্রহনযোগ্য পথ হতে পারে না। নিষিদ্ধ পথ হলো এটি। লড়াই ছাড়া যেমন মুক্তি নাই, তেমনি একতা ছাড়াও কোন পথ নাই। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে, “তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশি তথা কোরআনকে দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না” –(সুরা আল ইমরান,আয়াত ১০৪)। একতার পথ বেয়েই আসে মহান আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয়। তাছাড়া দেশের সকল শয়তানি শক্তি আজ একতাবদ্ধ। অথচ একতাবদ্ধ হওয়াটি তাদের কাছে ধর্ম নয়। এটি নিছক তাদের রাজনীতি। ইসলামে বিরুদ্ধে তাদের এ একতা পরকালে ভয়ানক আযাবই বাড়াবে। অথচ মুসলমানের কাছে একাতাবদ্ধ হওয়াটি নিছক রাজনীতি নয়,এটি তার ঈমানদারি। একতার মধ্য দিয়েই ঘটে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য। এবং এ পথেই আসে আখেরাতের মহাকল্যাণ। তাই শুধু দেশ বাঁচাতে নয়,আখেরাত বাঁচাতেও এ মুহুর্তে একতাবদ্ধ হওয়া ছাড়া মু’মিনের সামনে ভিন্ন পথ আছে কি? ৩১/০৩/১৩
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018