অধিকৃত বাংলাদেশ ও নতুন পরাধীনতা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 25, 2018
- বাংলাদেশ
- No Comments.
অধিকৃতি ইসলামের শত্রুপক্ষের –
বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন বাস্তবতা হলো, দেশটি এখন আর মুসলিমদের হাতে নেই্। ইসলাম ও মুসলিম –এ দুটি শব্দ পরিত্যক্ত হয়েছে এদেশের মূল পরিচিতি থেকে। বাংলাদেশের উপর বর্তমান অধিকৃতিটি ইসলামের শত্রুপক্ষের। মুসলিম হওয়াটি তাদের কাছে কোন গুরুত্বই বহন করে না। তারা গর্বিত ভারতপন্থি সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদী রূপে। দেশ শাসনে তারা নিজেরাও স্বাধীন নয়, তাজউদ্দীনের প্রবাসী সরকারের ন্যায় তারাও দিবারাত্র খাটছে ভারতের এজেণ্ডা পালনে। তবে পার্থক্যটি হলো, তাজউদ্দীনের বসবাস ছিল কলকাতায়, আর হাসিনার অবস্থান ঢাকায়। পাকিস্তান আমলে যারা ছিল ভারতের ট্রোজান হর্স তথা গুপ্ত সৈনিক, একাত্তরের পর তারা অবতীর্ণ হয়েছে প্রকাশ্যে ময়দানে। তাদের কারণে ভারতের দখলদারিটি স্রেফ বাংলাদেশের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক অঙ্গণে নয়; সেটি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক,বুদ্ধিবৃত্তিক ও ধর্মীয় আক্বীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও।ক্ষমতাসীন জোটটি যে ভারতপন্থি সেটি তারা গোপনও করে না। ফলে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পরিচিতি এখন ভারতীয় বলয়ভূক্ত একটি আশ্রীত দেশরূপে। ফলে বাংলাদেশে বুকে ভোট ডাকাতি বা শাপলা চত্ত্বরের ন্যায় গুরুতর অপরাধকর্ম ঘটলেও বিদেশীরা তা নিয়ে কিছু বলে না। তারা ভাবে এটি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা ভাবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতেরও কিছু করার অধিকার আছে।
ভারতের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশের উপর ভারতেসবীদের অধিকৃতি প্রথমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধজয়ের ফলে। পরবর্তীতে তা বার বার নতুন জীবন পেয়েছে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে। এ অধিকৃতির সাথে শুধু যে বাঙালী জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসী ক্যাডারগণ জড়িত –তা নয়।বরং জড়িত দেশের প্রশাসন,পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, বিচার ব্যবস্থা,নির্বাচনি কমিশন এবং মিডিয়া। কারণ, ভারতীয় পঞ্চম বাহিনী বা ট্রোজান হর্সদের অবস্থান শুধু দেশের রাজনীতির অঙ্গণে নয়, তাদের অবস্থান সর্বস্তরে ও সর্বপ্রতিষ্ঠানে। ভারত-বিরোধী নেতাকর্মীগণ তাই লাশ হয় শুধু লগি-বৈঠা ও পিস্তলধারী রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে নয়, আদালতের বিচারকদের হাতেও। তাদের হাতে ভোট ডাকাতির নির্বাচনও সুষ্ঠ নির্বাচন রূপে বৈধতা পায়।শাপলা চত্ত্বরের হত্যাকাণ্ডে তাই রাজনৈতিক গুণ্ডাদের পাশে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায়। তাদের সাথে জড়িত রয়েছে বাংলাদেশের ভিতরে ও বাইরে কর্মরত ভারতীয় গুপ্তচরগণও -যারা কখনোই চায় না বাংলাদেশের বুকে জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাক। সেটি চাইলে ভারত সরকার কি কখনো শেখ মুজিবের বাকশালী স্বৈরাচারকে সমর্থন দিত? সমর্থন দিত কি ভোট ডাকাতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত শেখ হাসিনার সরকারকে? ভারত চায় না বাংলাদেশের স্বাধীনতা। চায় না, দেশটির জনগণ তাদের নিজ নিজ ধর্মকর্ম ও আক্বীদা-বিশ্বাস নিয়ে স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠুক। ইসলামের শত্রুপক্ষের সে ষড়যন্ত্র স্রেফ ১৯৭১ থেকে নয়, বরং ১৯৪৭ সাল থেকেই। তবে হাসিনার সৌভাগ্য হলো, তার পিতার ন্যায় তাকে আর চোরা পথে আগরতলায় গিয়ে ভারতীয় গুপ্তচরদের সাথে গোপন বৈঠক করতে হয় না, সে বৈঠকগুলি বসে বঙ্গভবনে বা গণভবনে।
মুসলিমদের কীভাবে দাবিয়ে রাখা যায় -সে বিষয়ে ভারতীয় শাসকগণ সিদ্ধহস্ত। সে কাজে তারা হাত পাকিয়েছে ভারত ও কাশ্মীরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানারূপ নির্যাতনে নেমে। ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি -যা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে জনসংখ্যার চেয়ে অধীক। অথচ একমাত্র ঢাকা বা করাচী শহরে যতজন মুসলিম ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, আইনবিদ, কৃষিবিদ, হিসাবরক্ষক, শিল্পপতি,প্রফেসর এবং সামরিক ও বেসামরিক অফিসার বসবাস করে এবং তাদের হাতে যত গাড়ী ও দালানকোঠা আছে তা সমগ্র ভারতের ২০ কোটি মুসলিমের নাই। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে অন্যান্য শহরের কথা তো বাদই রইলো। সেদেশে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের স্থাপিত সাচার কমিশনের রিপোর্ট, ভারতীয় মুসলিমদের অবস্থা সেদেশের অচ্ছুৎ নমশুদ্রদের চেয়েও খারাপ। শুধু অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, পরিকল্পিত ভাবে অসম্ভব করা হয়েছে ইসলামি শিক্ষালাভ, শরিয়ত পালন এবং পরিপূর্ণ মুসলিম রূপে তাদের বেড়ে উঠা।সে অভিন্ন প্রকল্পটি এখন বাংলাদেশের মুসলিমদের উপরও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধান পালন ছাড়া কি পরিপূর্ণ ইসলাম পালন সম্ভব? সে ব্যর্থতা নিয়ে কি সম্ভব,মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে সত্যিকার মুসলিম রূপে পরিচয় দেয়া? সেরূপ পরিচয় দানটি যে অসম্ভব সেটি সুস্পষ্ট করা হয়েছে পবিত্র কোরআনের এ ঘোষাণায়ঃ “যারা (কোরআনে) নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা কাফের। –তারা জালেম। –তারা ফাসেক।”-(সুরা মায়েদা আয়াত ৪৪,৪৫,৪৭)। তাই নামায-রোযা পালনে যেমন আপোষ করে না, তেমনি আপোষ করে না শরিয়ত প্রতিষ্ঠায়।
ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির হাতে যখন বঙ্গ বিজয় হয় তখন বাংলার মুসলিম জনসংখ্যা যখন শতকরা ১০ ভাগও ছিল না।অথচ তখনও তিনি শরিয়ত ভিন্ন অন্য কোন আইনকে আদালতে স্থান দেননি। কারণ মুসলিমের কাছে শরিয়তী আইন ভিন্ন সব আইনই কুফরী আইন, ফলে মুসলিম ভূমিতে সেগুলি অবৈধ ও পরিতাজ্য। মুসলিম যেমন নিজ ঘরে মুর্তি রাখতে পারে না, তেমনি নিজ রাষ্ট্রে কুফরি আইনও রাখতে পারেনা। তাই কোন দেশে মুসলিমগণ শাসনক্ষমতা হাতে পেলে প্রথম দিন থেকেই নামায-রোযা, হজ-যাকাতের সাথে শরিয়তী আইনেরও প্রতিষ্ঠা শুরু করে। মুসলিম হওয়ার এটি এক অনিবার্য দায়বদ্ধতা। সেটি না করলে ঈমান থাকে না। আর ঈমান ভেঙ্গে গেলে কি ইবাদত কবুল হয়? কবুল হয় কি দোয়া-দরুদ? ওজু ভেঙ্গে গেলে যেমন নামায হয় না, তেমনি ঈমান ভেঙ্গে গেলে কোন ইবাদত ও দোয়াদরুদও কবুল হয় না। এমন কি হজের দিনে দোয়া কবুলের স্থান আরাফতের ময়দানে গিয়ে করলেও কবুল হয় না।ঈমানহীন,আমলহীন ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারহীন ব্যক্তিগণ যদি মুসলিম হওয়ার দাবী করে তবে তারা গণ্য হয় মুনাফিক রূপে। এমন ব্যক্তির নামায-রোযা, হজ্-যাকাত, দোয়াদরুদ তাকে মুনাফিফ হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে না। ওহুদের যুদ্ধের সময় এমন মুনাফিকদের সংখ্যা ছিল শতকরা ৩০ ভাগ। মদিনায় মসজিদে নববীর জায়নামাজে তাদের চেতনা যায়নি। তারা ধরা পড়ে তখন যখন মুসলিম জীবনে ওহুদের যুদ্ধ এসে হাজির হয়। নবীজী (সাঃ) সে যুদ্ধে মদিনা থেকে এক হাজার সঙ্গি নিয়ে জিহাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন, কিন্তু তাদের মধ্য থেকে ৩০০ জন ছিটকে পড়ে। তখন ধরা পড়ে তাদের মুনাফেকী।নবীজী (সাঃ)র পিছনে নামায পড়ে এবং রোযা রেখেও তারা মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচেনি। বর্তমান সময়ে তাদের সংখ্যা যে বহুগুণ বেশী হবে তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে?
তাই যে সমাজে জিহাদ নেই সে সমাজে কে সাচ্চা ঈমানদার,আর কি মুনাফিক সেটি চেনার অন্য উপায় নেই। তখন মুসলিম সেজে ইসলাম ও মুসলিমের ভয়ানক ক্ষতি করাটা এরূপ দুর্বৃত্ত ভণ্ডদের জন্য সহজ হয়ে যায়। তারা তখন টুপিদাড়ি ও মাথায় কালো পট্টি বেঁধে মুসলিমদের ধোকা দেয়। এজন্যই তারা জিহাদের শত্রু। কারণ জিহাদ তাদের আসল চেহারা ফাঁস করে দেয়। জিহাদ বন্ধ করেতই এ দুর্বৃত্তগণ ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদতকে সন্ত্রাস বলে। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলীতে ইসলামের বড় বড় ক্ষতিগুলো কাফেরদের দ্বারা হয়নি;হয়েছে এসব মুনাফিকদের হাতে। ভাষা, বর্ণ, আঞ্চলিকতার নামে মুসলিম বিশ্ব যেরূপ ৫৭টি দেশে বিভক্ত -সেটি কি নবীজী (সাঃ)র সূন্নত? এটি তো মুনাফিকদের কাজ। নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে তারা ছিল পরাজিত, কিন্তু এখন তারা বিজয়ী। ফলে বিপদ বেড়েছে ইসলাম ও মুসলিমের। ভাষা ও ভূগোলের নামে মুসলিমদের বিভক্ত রাখা এবং শরিয়তী বিধানকে পরাজিত রাখাই তাদের রাজনীতি। তারা সে বিজয়কে ধরে রাখার জন্য বিশ্বের তাবৎ কাফের শক্তির সাথে মৈত্রী গড়বে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? ব্যক্তির সাচ্চা ঈমানদারি ধরা পড়ে ইসলামের বিজয়ে আপোষহীন অঙ্গীকার থেকে। মুনাফিকদের জীবনে সে অঙ্গীকার থাকে না। এ কারণেই তারা দূরে থাকে জিহাদের ময়দান থেকে। কারণ জিহাদ জান ও মালের কোরবানী চায়, স্রেফ কথায় কাজ দেয় না। ফলে জান ও মাল বাঁচানো যাদের জীবনের মূল প্রজেক্ট,তারা পরিণত হয় জিহাদের শত্রুতে। তারা তখন জোট বাঁধে ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয়ে। এ পথেই তারা তাদের স্বার্থ দেখে। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মানব জাতির বিভাজনটি মূলতঃ তিন শ্রেণীতে। এক). ঈমানদার, দুই). কাফের, তিন). মুনাফিক।এবং মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মুনাফিকগণ গণ্য হয় কাফেরদের চেয়েও অধীকতর নিকৃষ্ট জীব রূপে। মুনাফিকদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহতায়ালার ক্রোধ যে কঠোর -সেটি বুঝা যায় পবিত্র কোরআনের এ আয়াতেঃ “নিশ্চয়ই মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের আগুনের সর্বনিম্ন স্তরে, তাদের জন্য জুটবে না কোন সাহায্যকারী।” –(সুরা নিসা,আয়াত ১৪৫)।তবে এ কোরআনী ঘোষণার মাঝে বিবেকমান মানুষের জন্য রয়েছে আরেকটি কঠোর হুশিয়ারি। সেটি হলো,পরকালে যাদের জন্য বরাদ্দ জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থান,দুনিয়াতেও কি তারা কোন সম্মানজনক স্থান পায়? বরং বিশ্বমাঝে তারা অপমানিত ও অসম্মানিত হয় দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়ে।
মুসলিম সমাজে শরিয়তের গুরুত্বটি অপরিসীম। এছাড়া কোন মুসলিম সমাজ বা রাষ্ট গড়ে উঠতে পারে না। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কোন জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস নয়; নামায-রোযার ন্যায় এটি ইসলামের অতি মৌলিক ও মামূলী বিষয়। বরং শরিয়ত পালিত না হলে যে ইসলাম পালন হয় না -সেটিই হলো ইসলামের বুনিয়াদী বিশ্বাস। এমন একটি বিশ্বাসের কারণেই সিরাজদ্দৌলার আমলেও বাংলার প্রতিটি আদালতে শরিয়তী আইন ছিল। শরিয়তী আইন ছিল মোঘল শাসিত ভারতে। কিন্তু ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কাফেরদের দখলদারী প্রতিষ্ঠার পর নির্মূল করা হয় শরিয়ত আইন।কাফেরদের হাতে অধিকৃত হওয়ার এটিই হলো সবচেয়ে বড় বিপদ। তখন অসম্ভব হয় দ্বীনপালন। ব্রিটিশগণ ভারতের জনসংখ্যার শতকরা একভাগও ছিল না, কিন্তু ভারত জুড়ে কুফরি ব্রিটিশ আইন প্রয়োগ করতে তারা কোনরূপ বিলম্ব করেনি। অথচ তাদের অনুসারি বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের দাবী,শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা শতভাগ মুসলিম হতে হবে। অথচ নবীজী বা খলিফায়ে রাশেদার আমলে মুসলিম ভূমিতে কি শতকরা ৮০ ভাগ মুসলিম ছিল? অথচ বাংলাদেশে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম। পরাধীনতার কুফলটি গভীর। বনের সিংহকে ২০ বছর খাঁচায় বন্দী রাখার পর দরজা খুলে দিলে সে খাঁচার বাইরে যায় না। স্বাধীন ভাবে বাঁচায় ও শিকার ধরায় তার রুচী থাকে না। গোলামী জীবন এভাবে শুধু বন্দী বাঘ বা সিংহের অভ্যাসেই পরিবর্তন আনে না, পরিবর্তন আনে মানব সন্তানের বিশ্বাস, অভ্যাস ও সংস্কৃতিতেও। অথচ কাফেরদের গোলামীর খাঁচায় বাঙালী মুসলিমদের জীবন কেটেছে ১৯০ বছর।বিশ্বর খুব কম মুসলিম জনগোষ্ঠির জীবনেই এত দীর্ঘকালীন কাফের শক্তির গোলামী এসেছে। দিল্লির মুসলিমগণ গোলাম হয়েছে বাঙলীদের ১০০ বছর পর ১৮৫৭ সালে। কাফেরদের জিন্দানে এরূপ দীর্ঘ গোলামীর ফলে বাঙালী মুসলিমের জীবনে বিলুপ্ত হয়েছে পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচার রুচী এবং অভ্যাস।বিলুপ্ত হয়েছে ইসলামের সনাতন বিশ্বাস ও সংস্কৃতি। বরং চেতনার গভীরে ঢুকেছে কুফরির শিকড়। এবং বিলুপ্ত হয়েছে শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ। ফলে বিশ্বের কোনে কোনে আজ যেখানে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে চলছে অদম্য জিহাদ, বাংলাদেশে মাদ্রাসার হুজুর বা মসজিদের ইমামগণ শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কথা মুখে আনতে রাজী নয়। তারা ভাবেন নামায-রোযা, হজ-যাকাত,দোয়া-দরুদ ও তাসবিহ পাঠ এবং বড় জোর তাবলীগ জামায়াতের ইজতেমায় অংশ নেয়াই হলো ইসলাম। এবং ভাবেন, পরকালে তাতেই মুক্তি মিলবে। কথা হলো, শরিয়তকে দূরে সরিয়ে কি ঈমান বাঁচানো যায়? পালিত হয় কি মহান আল্লাহতায়ালার গোলামী। নবীজী ও তার সাহাবাদের জীবনে একটি দিনও কি শরিয়তী আইনের বাইরে কেটেছে? শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা বাড়াতে বার বার তাদেরকে জিহাদের ময়দানে নামতে হয়েছে;পেশ করতে হয়েছে অর্থ ও রক্তের কোরবানী।বাংলাদেশের জন্য আরেক বিপদ হলো,বাংলাদেশ থেকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ বিদায় হলেও বিদায় নেয়নি এদেশে জন্ম নেয়া তাদের মানসিক গোলাম।
ইবাদত যেখানে অপরাধ
কাফেরদের জিন্দানে গোলাম হওয়ার নাশকতাটি বিশাল। স্রেফ নামাজ-রোযা বা হজ-যাকাতের মাধ্যমে সে ঈমান-বিনাশী নাশকতা থেকে বাঁচা যায় না। নামাজ-রোযা,হজ-যাকাত ও দোয়াদরুদের সে সামর্থ্য থাকে না বলেই অধিকৃত জীবনের নাশকতা থেকে বাঁচতে ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেসক্রিপশন হলো জিহাদ। জিহাদকে এজন্যই প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ করা হয়েছে। এরূপ জিহাদে জানমালের কোরবানীর চেয়ে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে উত্তম নেককর্ম নেই। পবিত্র কোরআনের তাই ঘোষিত হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালবাসেন যারা আল্লাহর রাস্তায় সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় সারি বেঁধে যুদ্ধ করে।” –(সুরা সাফ. আয়াত ৪)। অতএব যারা মহান আল্লাহতায়ালার ভালবাসা পেতে চান তাদের সামনে জিহাদ ভিন্ন অন্য রাস্তা নাই। এবং জিহাদের নির্দেশ পালনে যারা অনীহা দেখায় মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে ঈমানের দাবীতে সাচ্চা বলতেও নারাজ। পবিত্র কোরআনে সে ঘোষনাটি এসেছে এভাবে, “একমাত্র তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনে, অতঃপর আর কোনরূপ দ্বিধাদ্বন্দে ভোগে না এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। (ঈমানের দাবীতে) তারাই সাচ্চা।”–(সুরা হুজরাত, আয়াত ১৫)।জিহাদ যে প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ এবং জিহাদ থেকে দূরে থাকা যে মুনাফেকীর লক্ষণ –অধিকাংশ মোফাচ্ছিরদের মতে এ আয়াতটি হলো তার সুস্পষ্ট দলিল। তাই ঈমানের দাবীতে কে কতটা সাচ্চা সেটি যাচাইয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত মাপকাঠিটি নামায-রোযা বা হজ-যাকাত নয়। বেশী বেশী দোয়াদরুদ পাঠও নয়। সেটি হলো জিহাদে জান ও মালের বিনিয়োগ। নামায-রোযা পালনে ও তাসবিহ পাঠে নবীজী (সাঃ)র সাহাবীদের জীবনে কোন রূপ কমতি ছিল না। কিন্তু এরপরও তারা শুধু নামাযী,রোযাদার বা হাজীই ছিলেন না, তাদের প্রত্যেকে সশস্ত্র যোদ্ধাও ছিলেন। সকল সঙ্গিদের রণাঙ্গনে হাজির করার ক্ষেত্রে সমগ্র মানব ইতিহাসে মহান নবীজী (সাঃ)র এটি এক অনন্য সাফল্য। বিশ্বের আর কোন নেতা কি তার অনুসারিদের সিকি ভাগকেও সশস্ত্র যোদ্ধা রূপে রণাঙ্গণে প্রাণদানে হাজির করতে পেরেছে? অথচ মহান নবীজী (সাঃ)র সাফল্য এক্ষেত্রে শতভাগ। জিহাদে ঈমানদারদের এরূপ আত্মদান ও অর্থদানের কারণেই মুসলিম ভূমি শত শত বছর যাবত বেঁচেছে কাফিরদের হাতে অধিকৃত হওয়া থেকে। মুসলিম ভূমিতো তখনই শত্রুর হাতে অধিকৃত হতে শুরু করে যখন তারা ধর্মপালনকে স্রেফ নামায-রোযা, হজ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠে সীমিত করে। সে জিহাদী চেতনা বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশে আজ অনুপস্থিত। ফলে মুক্তি মিলছে না শত্রুপক্ষের অধিকৃতি থেকে।
স্বাধীনতার নামে অধিকাংশ মুসলিম দেশে যা চলছে তা হলো ইসলামের শত্রু শক্তির হাতে দীর্ঘ পরাধীনতারই ধারাবাহিকতা। সে অধিকৃতি যে এখনো শেষ হয়নি সেটি সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যায় মুসলিম দেশের আদালতগুলোর দিকে তাকালে। সেখানে পূর্ণ অধিকৃতি কুফুরী আইনের। দেশের উপর মুসলিমদের দখলদারির প্রমাণ কি মসজিদ-মাদ্রাসা ও নামাযীর সংখ্যা? ভারতের ন্যায় কাফের শাসিত দেশে কি মসজিদের সংখ্যা কি কম? নামাযীর সংখ্যাও কি নগন্য? সেটি তো বুঝা যায় দেশে সার্বভৌমত্ব কোন আইনের। ঈমানদার ব্যক্তি একজন কাফের থেকে ভিন্নতর পরিচয় পায় মহান আল্লাহতায়ালা উপর তার ঈমান ও আমলের কারণে। তেমনি একটি মুসলমিমদেশ কাফের দেশ থেকে ভিন্নতর পরিচয় পায় সেদেশে শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠা থেকে। মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও নিয়োগপ্রাপ্ত খলিফা রূপে ঈমানদারকে শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠ করলে চলে না, তাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ অন্য যে দায়িত্বটি পালন করতে হয় তা হলো কোরআনে বর্নিত শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা। বস্তুত সে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে প্রকাশে ঘটে মহান রাব্বুল আলামীনের উপর সাচ্চা ঈমানের।সে সাচ্চা ঈমানের বলেই ঈমানদার ব্যক্তি হাজির হয় জিহাদের ময়দানে।যার মধ্যে ঈমানের সে গভীরতা নাই সে ব্যক্তি সারা জীবন নামায-রোযায় কাটালেই কখনোই জিহাদে হাজির হয়না। জিহাদ মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ ইবাদত। অন্য কোন ইবাদতে প্রাণ গেলে সরাসরি জান্নাত প্রাপ্তির নসিব হয়না। কিন্তু জিহাদে প্রাণ গেলে সে সুযোগ জুটে। নিহত হওয়ার পরও সে নতুন জীবন পায়। নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তাদের আমলে যত জিহাদ সংগঠিত হয়েছে তা আর কোন কালেই হয়নি। ফলে ইসলামের সমগ্র ইতিহাসে তারাই সবচেয়ে গর্বের। তাদের কর্মের উপর পবিত্র কোরআনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এরূপ মহান মর্যাদা লাভের কারণ, ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় তাদের বিনিয়োগটি ছিল সর্বাধিক। মুসলিমগণ সেদিন বিশ্বশক্তির মর্যাদা পেয়েছে স্রেফ নামায-রোযা ও দোয়া-দরুদের বরকতে নয়, সে সাথে বিশাল বিনিয়োগটি ছিল জান ও মালের।কিন্তু বাংলাদেশীদের মাঝে কোথায় সে সাচ্চা ঈমানদারী? কোথায় সে শ্রেষ্ঠ ইবাদত পালনে আগ্রহ? ইসলামের বিজয়ে কোথায় সে জানমালের বিনিয়োগ? তারা তো অর্থ ও ভোট দিয়েছে, এমন কি প্রাণ দিয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষকে বিজয়ী করতে। এবং নিজ দেশের ভিতরে ডেকে এনেছে ভারতের ন্যায় একটি কাফের দেশকে। ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে দেশ অধিকৃত হলে সাচ্চা ধর্মপালন যে কতটা অসম্ভব হয় তার প্রমাণ হলো বাংলাদেশ। ইবাদতও তখন নিয়ন্ত্রিত হয়। হক কথা বলা এবং জিহাদের ন্যায় ইসলামের শ্রেষ্ঠ ইবাদতটি তখন শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়। বরং সিদ্ধ ও প্রশংসনীয় কর্ম হয় মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও ইসলামের শত্রুশক্তির বিজয়ে অর্থ, শ্রম ও মেধার বিনিয়োগ।
ভারতের স্বপ্ন পূরণের রাজনীতি
দেশ ইসলামের শত্রুপক্ষের দখলে গেলে যে বিপদগুলি আসে বাংলাদেশে তার সবগুলিই এসেছে। আরো বহু বিপদ যে এখনো আসার পথে পাইপ লাইনে রয়েছে –তা নিয়েও কি কোনরূপ সন্দেহ আছে? বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতা অনেক। তবে বড় ব্যর্থতাটি হলো,তারা ব্যর্থ হয়েছে বাংলার মুসলিম ভূমিতে ইসলামের শত্রুপক্ষের অধিকৃতি রূখতে। অথচ মুসলিম ভূমিতে কাফের বাহিনীর হামলা হলে জিহাদ আর ফরজে কেফায়া থাকে, সেটি তখন ফরজে আইন হয়ে যায়। নামাযে কাজা চলে কিন্তু এ ফরজ পালনে কাজা চলে না। সে ফরজ পালনে ব্যর্থতা যেমন ১৭৫৭ সালে হয়েছে, তেমনি ১৯৭১’য়েও হয়েছে। যাদের জীবেন এরূপ ভয়ানক ব্যর্থতা, তাদের জীবনে কি আযাবের কোন শেষ সীমানা থাকে? এখন শুধু ব্যর্থতা নয়, শুরু হয়েছে বিদ্রোহের পর্ব। মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এখন এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে,দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দূরে থাক, যেখানেই ইসলাম ও মুসলিম –এ শব্দ দুটি আছে সেখানেই কাঁচি চালানো হচ্ছে। শুরু হয়েছে কাফের রাষ্ট্র ভারতের স্বপ্ন পূরণের রাজনীতি। ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতে যেটি ঘটেছে বা ঘটছে সেটিই এখন ঘটছে বাংলাদেশে। কারণ সেটি না হলে কি ভারতের স্বপ্ন পূরণ হয়। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু নামটি এখনো বহাল তবিয়তে আছে; কিন্তু আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি তারা কেটে ফেলেছে। যারা ইসলামের শত্রুপক্ষে সব দেশেই তারা একই চরিত্রের হয়।ভাষা, বর্ণ বা ভূগোলের নামে তাদের মাঝে বিভক্তির কোন দেয়াল থাকে না।তাই দেয়াল নাই বাংলাদেশ বা ভারতে বসবাসকারি ইসলামের শত্রুদের মাঝেও। বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে আজকের যে দেয়াল সেটির জন্ম একাত্তরে নয়। সেটি সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদীদেরও গড়া নয়। এটি নিরেট পাকিস্তানের লিগ্যাসী। এবং যা কিছু পাকিস্তানী সেগুলি বর্জন করাই সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের রাজনীতি। ফলে তাদের দখলদারি দীর্ঘায়ীত হলে সেদিন বেশী দূরে নয় যখন পাকিস্তানের গড়া সে দেয়ালকেও তারা বিদায় দিবে। বাংলাদেশ তখন বিলুপ্ত হবে ভারতে কোলে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রদেশ রূপে পূর্ব পাকিস্তানের যে মানচিত্রটি গড়ে উঠছিল তার পিছনে ছিল ভারতীয় হিন্দুদের থেকে ভিন্নতর একটি প্রবল চেতনা –তা পুষ্টি পেয়েছিল প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব থেকে। মুজিব ও হাসিনার চেতনায় ইসলাম না থাকায় ১৯৪৭’য়ের সে মুসলিম চরিত্রটিও তাদের রাজনীতিতে নেই। বরং আছে ভারতীয় হিন্দুদের চেতনার সাথে অভিন্নতা। চেতনার সে অভিন্নতার কারণেই তারা ভারতীয় কায়দায় জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকেও মুসলিম শব্দটি কেটে দিয়েছে। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল হয়ে গেছে সলিমুল্লাহ হল। এমন কি কাজী নজরুল ইসলামের নামের সাথে ইসলাম শব্দটিও তাদের সহ্য হয়নি। ফলে ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ হয়ে গেছে নজরুল কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে কোরআনের আয়াত ছিল, সেটিও মুজিবামলে বিলুপ্ত করা হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধ একই রূপ বৈরীতা নিয়ে শেখ হাসিনা সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করেছেন মহান আল্লাহতায়ালার উপর আস্থার ঘোষণাটি। মুজিবের ন্যায় হাসিনার রাজনীতিতে্ও ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে শত্রুতা যে কতটা তীব্র তা কি এরপরও বুঝতে বাঁকি থাকে? সামান্য ঈমান থাকলে কোন মুসলিম কি এমন ইসলাম এ মুসলিম বিরোধী এজেণ্ডা নিয়ে রাজনীতি করে? শেখ মুজিবের ন্যায় শেখ হাসিনা ও তার অনুসারিদের লক্ষ্য,ভারতীয় শাসকচক্রকে খুশি করা।তারা ভাবে,ভারত খুশী হলেই তাদের গদী বাঁচবে। আর ভারতকে খুশী করতে হলে ভারতীয় এজেণ্ডাকে অবশ্যই নিজেদের এজেণ্ডা রূপে গ্রহণ করতে হবে। মুজিবকে এজন্যই ২৫ সালা দাসচুক্তি স্বাক্ষর করেত হয়েছিল। ছেড়ে দিতে হয়েছিল ফারাক্কায় পদ্মার পানি তূলে নেয়ার অধীকার। সীমান্ত বাণিজ্যের নামে ভারতীয় পণ্যের জন্য খুলে দিতে হয়েছিল দেশের সীমান্ত।
তবে হাসিনার কাছে ভারতের দাবীর তালিকাটি আরো বিশাল। ভারত শুধু বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে করিডোর নিয়ে খুশী নয়। ভারতের কাছে আরো গুরুতর ভয় রয়েছে। দেশটির প্রচণ্ড ভয় বাংলাদেশে ইসলামের উত্থান নিয়ে। এভয় ভারতীয় শাসক মহলের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।মধ্যপাচ্যে ইসলামের উত্থান ঠ্যাকাতে সমগ্র পাশ্চাত্য শক্তি একজোট হয়েও হিমশীম খাচ্ছে। ভারতের ভয়, বাংলাদেশে ১৬ কোটি মুসলিমের জীবনে জোয়ার উঠলে সে জোয়ার ঠ্যাকানো কি ভারতের একার পক্ষে সম্ভব হবে? তখন অসম্ভব হবে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে তার নিজের লোকদের বাঁচানো। ভারত জানে,বাঙালী মুসলিম জীবনে পাকিস্তানের পক্ষে জোয়ার উঠাতেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি এড়ানো সম্ভব হয়নি। তাদের ভয়,বাঙালী মুসলিম আবার ইসলামের পতাকা নিয়ে জেগে উঠলে আবারো ভারতের মানচিত্রেও হাত পড়তে পারে। ফলে হাসিনার উপর চাপানো দায়ভারও বেড়েছে। ইসলাম ও মুসলিমের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া ছাড়া শেখ হাসিনার সামনে ভিন্ন পথ নাই। ইসলামপন্থিদের দমনে ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবীকে ঠ্যাঙ্গারে হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। ফলে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যা ও হত্যার পর তাদের লাশগুলো ময়লার গাড়িতে তুলে গায়েব করা এবং বিচারের নামে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের ফাঁসি দেয়ায় হাসিনা এতটা নির্মম। আর এতে শাবাস মিলছে ভারতের শাসক মহল থেকে।কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনী যে কাজটি করছে, দিল্লি সরকার চায় বাংলাদেশে সে কাজটি হাসিনা সরকারও করুক। বাংলাদেশ তাই আরেক কাশ্মীর। ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের নির্মূলে হাসিনা এজন্যই এতোটা বেপরোয়া।তাছাড়া একাজে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় পঞ্চম বাহিনীর লোক কি কম? তারা শুধু রাজনীতির ময়দানে নয়, তারা দলে ভারী দেশের মিডিয়া, পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী এমন কি বিচার ব্যবস্থাতেও। হাসিনা সরকারের এজেণ্ডা কোন গোপন বিষয় নয়। দেশের স্বার্থের চেয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের গদীর স্বার্থ ও ভারতীয় স্বপ্ন পূরণের স্বার্থ। দেশের স্বার্থ গুরুত্ব পেলে বহু খুন ও বহু হাজার কোটি টাকার ডাকাতির সাথে জড়িতদের অবশ্যই আদালতে তোলা হতো। কিন্তু তা না করে সরকার ব্যস্তু ইসলাম ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলে।
নতুন পরাধীনতা
একাত্তরে ভিন্ন পতাকা মিললেও বাঙালী মুসলিমদের প্রকৃত আজাদী মেলেনি। বরং মিলেছে নতুন পরাধীনতা। যাদের হাতে বাংলাদেশ আজ অধিকৃত তারা সাধারণ চোর-ডাকাত,খুনি বা দুর্বৃত্ত নয়। তাদের অপরাধও সাধারণ অপরাধ নয়। তাদের অপরাধটি কোটি কোটি জনগণকে জাহান্নামের পথে টানার। এবং তাদের ঘোষিত যুদ্ধটি তাদের মহান অআল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। এ অপরাধীদের সামর্থ্য বিশাল। সাধারণ চোর-ডাকাত, সন্ত্রাসী ও খুনিদের পকেটে থানা-পুলিশ, সেনাবাহিনী, আইন-আদালত, প্রশাসন ও দেশের রাজনীতি থাকে না। কিন্তু এ দুর্বৃত্তদের পূর্ণ দখলদারি সেগুলোর উপরও। তাছাড়া সাধারণ চোর-ডাকাতগণ জনগণের পকেটে হাত দিলেও তারা জনগণকে জাহন্নামের আগুনে টানে না। রাষ্ট্রের বুকে তারা কোরআনের তাফসির মহফিল নিষিদ্ধ করে না। আলেমদেরও কারাবন্দী করে না। তারা নিষিদ্ধ করে না জিহাদ বিষয়ক বই এবং জিহাদকে।কিন্তু যাদের হাতে আজ বাংলাদেশ অধিকৃত তারা এর সবগুলিই করে। স্বৈরাচারী শাসকদের গুণগান গাওয়ার জন্য কোনো কালেই এত ভাঁড়, এত চাটুকার, এত পত্র-পত্রিকা ও এত রেডিও-টিভি চ্যানেল ছিল না -যা রয়েছে বাংলাদেশের ন্যায় অধিকৃত রাষ্ট্রে। অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহেল সমাজে শাপশকুন, পাহাড়-পর্বত, গরুবাছুর ও মুর্তিকে দেবতা বলার জন্য যেমন অসংখ্য ভক্ত ও পুরোহিত থাকে, বাংলাদেশেও তেমনি ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তদের প্রশংসা গাওয়ার জন্য রয়েছে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী, মিডিয়াকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সে সাথে বুদ্ধিজীবীর লেবাসে বিশাল এক পাল ভাঁড়। ধর্মের নামে জাহিলী আচার বাঁচাতে যেমন প্রতিষ্ঠা পায় হাজার হাজার পুঁজামণ্ডপ,বাংলাদেশের বুকেও তেমনি দুর্বৃত্তদের সে দখলদারি বাঁচাতে রাজস্বের অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষা,সংস্কৃতি ও মিডিয়ার নামে বিশাল বিশাল সরকারি ও বেসরকারি অবকাঠামো। মণ্ডপ গড়া হয়েছে মুজিবের ন্যায় বাকশালী স্বৈরাচারির প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়ার ও তার প্রশংসা গাওয়ার।গড়া হয়েছ অসংখ্য নাট্যশালা, নৃত্যশালা, মদ্যশালা ও পতিতাপল্লী। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এরা দিবারাত্র খাটছে জনগণকে জাহান্নামের পথে টানার কাজে। এমন কাজে তারা একা নয়, তাদের পিছনে রয়েছে ভারতসহ ইসলামবিরোধী আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন। বাংলাদেশীদের জীবনে তাই আজ ভয়ানক দুর্দিন।
রোগজীবাণু দেহে ঢুকলে গায়ে জ্বর-ব্যাথা উঠে ও শরীর শয্যাশায়ী হয়। চিকিৎসা না হলে মৃত্যু ঘটে। তেমনি দুর্বৃত্তদের হাতে দেশ অধিকৃত হওয়ার বিপদও ভয়ানক। দেশে তখন চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, ধর্ষণ ও সর্বপ্রকারের পাপকর্ম বাড়ে। সরকারি চোর-ডাকাতদের থেকে দেশের সরকারি ব্যাংক ও কোষাগারও তখন রক্ষা পায় না। দুর্বৃত্তিতে দেশ তখন বার বার বিশ্বরেকর্ড গড়ে এবং ধাবিত হয় দ্রুত ধ্বংসের দিকে। এমন রাষ্ট্রের জনগণ বঞ্চিত হয় কোরআনী শিক্ষা, পরিশুদ্ধ সংস্কৃতি ও জান্নাতমুখি সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে। তখন অসম্ভব হয় শরিয়তী আইন পালনের ন্যায় ফরজ কাজ। তখন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ গণ্য হয় ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদত জিহাদ এবং হক কথা বলা। ফিরাউন-নমরুদ যেমন নিজেদের অধিকৃত রাষ্ট্রে ইসলাম প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল, তেমনি ইসলামের এ আধুনিক শত্রুগণও দখলকৃত রাষ্ট্রে শরিয়ত পালন ও জিহাদের ন্যায় ইসলামের ফরজ বিষয়গুলিও নিষিদ্ধ করে। এরূপ অধিকৃতির ভয়ানক বিপদটি হলোঃ রাষ্ট্রীয় জাহাজটি তখন জনগণকে জাহান্নামের দিকে নিতে চায়। একারণেই ইসলামে বড় নেককর্মটি স্রেফ ঘরের আগুন নিভানো নয়। স্রেফ ডাকাতদের হাত থেকে ব্যক্তি বা জনপদকে বাঁচানোও নয়।বরং সর্বশ্রেষ্ঠ নেককর্মটি হলো শত্রুপক্ষের দখলদারি থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচানো। এ কাজটি স্রেফ অর্থ বা শ্রম চায় না, জানের কোরবানীও চায়। শয়তানী শক্তির দখলদারি থেকে রাষ্ট্র বাঁচলে দেশের কোটি কোটি মানুষ পথ পায় জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচারও। বাঁচে দুর্বৃত্ত শাসনের দুর্বিসহ যাতনা থেকে।এমন বাঁচাটিই মুসলিম জনগণের আসল আজাদী। ইসলামে সে কাজ চিত্রিত হয়েছে পবিত্র জিহাদ রূপে। এরূপ পবিত্র কাজে যারা নিহত হয় তাদের মৃত বলা হারাম ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহতায়ালা। বলা হয়েছে তারা জীবিত;যদিও সাধারণ মানুষ তা অনুধাবন করে না। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৪)।
বাংলাদেশের বুক থেকে ঔপনিবেশিক দুর্বৃত্তদের ১৯০ বছরের অধিকৃতি শেষ হয়েছিল ১৯৪৭য়ে। শেষ হয়েছে পর্তুগিজ ও মগদের দস্যুবৃত্তিও। কিন্তু শেষ হয়নি ইসলামবৈরী দেশী স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তদের দখলদারি। বরং দিন দিন তা প্রবলতর হচ্ছে। স্বৈরাচারি শাসকদলের খুনিরা শুধু যে পথে ঘাটে মানুষ খুন করছে তা নয়; খুনের কাজে তারা জনগণের রাজস্বে পালিত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আদালতকেও ব্যবহার করছে। এভাবে তারা কইয়ের তেলে কই ভাজছে। দেশের ব্যাংক ও শেয়ার মার্কেট থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়,পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে না। সে ডাকাতদের গ্রেফতার করে তাদেরকে আদালতেও তোলে না। ফলে তাদের শাস্তিও হয় না। কিন্তু শাস্তি হয়, এমন কি ফাঁসিতে ঝুলানো হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে। কারণ, সরকারের মূল লক্ষ্য রাজনৈতীক প্রতিপক্ষ নির্মূল। মুসলিম জীবনের মিশন ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল।মিশন, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। পবিত্র কোরআনে সেটি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে বার বার। ফলে মুসলিম মাত্রই ইতিহাস গড়বে সকল প্রকার দুর্বৃত্তির নির্মূলে। অথচ বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ছে উল্টোপথে চলায় তথা দুর্বৃত্তিতে।সমগ্র প্রশাসন পরিণত হয়েছে দুর্বৃত্তিকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার হাতিয়ারে। প্রতি দেশেই কিছু চোর-ডাকাত ও নানাজাতের দুর্বৃত্ত থাকে। তাদের দমনের জন্য থাকে হাজার হাজার পুলিশ, গোয়েন্দা কর্মী ও আদালত। তাদের দমিত করার কাজটি যথার্থ ভাবে না হলে জনজীবনে আযাব ডেকে আনার জন্য সে মুষ্টিমেয় দুর্বৃত্তরাই যথেষ্ট। কিন্তু চোর-ডাকাত ও খুনীদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে রাষ্ট্রের প্রশাসন, পুলিশ এবং আদালতও তখন তাদের সহযোগী হয়ে পড়ে। তখন দুর্বৃত্তের পক্ষে দাঁড়ায় দেশের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এমন কি প্রেসিডেন্টও।তাদের সৃষ্ট আযাব তখন দুর্বিসহ হয়ে উঠে। দুর্বৃত্তিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়াও তখন অতি সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে। দেশটির ইতিহাস তাই কলংক গড়ার ইতিহাস। সেটি যেমন বাকশালী স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার ও দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বচাম্পিয়ান হওয়ার, তেমনি তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি হওয়ার। তেমনি ১৯৭৩-৭৪’য়ের দুর্ভিক্ষে লাখে লাখে মৃত্যু বরণের। বনে জঙ্গলের পশুপাখীও কোন কালে এভাবে না খেয়ে মারা পড়েনি যে ভাবে মারা পড়েছে মুজিবামলে। এভাবে বাঁচলে কি বিশ্বমাঝে ইজ্জত বাড়ে?
একাত্তরে পাকিস্তানকে পরাজিত করা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিবছর দুইবার উৎসব হয়। প্রতিবারই সেটি মাসব্যাপী; একবার মার্চে, আরেকবার ডিসেম্বরে।বাঙালীর সমগ্র ইতিহাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ বিজয় চিহ্নিত হয় সবচেয়ে বড় গর্বের কাণ্ড রূপে। বিশ্বের বহুদেশই বহু যুদ্ধ জয় করেছে, বিশাল বিশাল সাম্রাজ্যও প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু বছরে মাসব্যাপী এরূপ উৎসব পালনের ইতিহাস একমাত্র বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের। অথচ সে বিজয়টি তাদের নিজ বাহুবলে অর্জিত হয়নি। সেটি ছিল ভারতীয় সেনবাহিনীর একান্তই নিজস্ব বিজয়। যে পাকিস্তানকে পরাজয় করা নিয়ে এতো উৎসব সে পাকিস্তান এখন ৫৭টি মুসলিম দেশের মাঝে একমাত্র পারমানবিক বোমার অধিকারী এবং সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। সেদেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সংসদীয় গণতন্ত্র। অথচ বাংলাদেশের এখনো নিচে নামা শেষ হয়নি। বাংলাদেশ সৃষ্টির ৪৪ বছর পরও বাকশালী স্বৈরাচার থেকে মুক্তি মেলেনি। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ সালে যে মানের নির্বাচন হয়েছিল,আজকের বাংলাদেশে তেমন একটি নির্বাচন নিতান্তই স্বপ্নের বিষয়। বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের জন্য আরেকটি অতি অপ্রিয় সত্য কথা হলো, বিগত বহু হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গীয় বদ্বীপের সকল চোর-ডাকাত মিলে যত সম্পদ লুণ্ঠন করেছে ও যত মানুষ হত্যা করেছে তার চেয়ে বেশী লুণ্ঠন ও বেশী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হাতে। একমাত্র মুজিব আমলে ৩০ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। বন্দী সিরাজ শিকদারকে বিচার বহির্ভূত ভাবে হত্যা করে মুজিব সংসদে দাড়িয়ে আস্ফালন করেছিলেন,“কোথায় আজ সিরাজ শিকদার?” তার আমলে সরকারি প্রশাসন, পুলিশ ও রক্ষিবাহিনী পরিণত হয়েছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাতিয়ারে। লুণ্ঠনে লুণ্ঠনে সুজলা সুফলা দেশটিকে তখন তলাহীন ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত করা হয়েছিল। কাপড়ের অভাবে নারীগণ বাধ্য হয়েছিল মাছধরা জাল পড়তে। পূর্বকালে কোন সময় কি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের কোষাগারে ডাকাতি হয়েছে? অথচ শেখ হাসিনার আমলে সেটিও অহরহ হচ্ছে। ডাকাত পাড়ায় ডাকাতদের বিচার হয় না, বাংলাদেশেও এসব ডাকাতদের তাই বিচার হয়নি।
দেশে রোগভোগের প্রচন্ড মহামারি দেখেই বুঝা যায়, রোগ-জীবাণু ও মশামাছির উপদ্রব কতটা প্রকট। তাতে প্রমান মেলে,পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়ে বাঁচায় জনগণ কতটা ব্যর্থ। তেমনি সমগ্র রাষ্ট্র জুড়ে দুর্নীতির সয়লাব দেখেই বলা যায়, দেশে দুর্বৃত্তরা কতটা বিজয়ী এবং দুর্বৃত্ত নির্মূলে দেশের সরকার ও জনগণ কতটা ব্যর্থ । দূর্বৃত্তিতে যে দেশ বিশ্বে ৫ বার প্রথম স্থান অধিকার করে সেদেশে দুর্বৃত্তদের শিকড় যে কতটা গভীর এবং দুর্বৃত্তদের সংখ্যা যে কত বিপুল –সেটি বুঝতে কি বেশী বিদ্যা-বুদ্ধি লাগে? দুর্বৃত্ত-অধিকৃত এমন রাষ্ট্রে কি সভ্য সমাজ নির্মিত হয়? প্রতিষ্ঠা পায় কি ন্যায়নীতি ও শান্তি? বরং যা ব্যাপক ভাবে বাড়ে তা হলো লুণ্ঠন,সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও খুন। বাড়ে উলঙ্গতা, অশ্লিলতা ও ব্যাভিচার। দুর্বৃত্তদের হাতে তেমন দখলদারির কারণে ডাকাতি হচ্ছে স্রেফ ব্যবসায়ী ও গৃহস্থের ঘরে নয়, রাষ্ট্রের অর্থভান্ডারেও। সরকারি দলের ডাকাতদের হাতে সরাকারি ব্যাংক, সরকারি প্রকল্প ও বিদেশীদের দেয়া ঋণের হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি হয়ে যাচ্ছে। রেহাই পাচ্ছে না তারাও যারা সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পেতে চায়। হাত পড়ছে তাদের সবার পকেটে। ডাকাতদের এখন আর ডাকাত দল গড়তে হয় না। তারা বরং নির্ভয়ে সরকারি দলে যোগ দেয়। তাতে ডাকাতির পরিধি যেমন বাড়ে, তেমনি প্রটেকশনও বাড়ে। তখন গ্রামগঞ্জে নেমে জনগণের ঘরে হানা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। রাজনৈতীক নেতাকর্মীর বেশে ডাকাতগণ তখন সরাসরি হাত দেয় হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি ভাণ্ডারে। এমন দুর্বৃত্ ডাকাতদের গায়ে হাত দেয়া দূরে থাক, জনগণ প্রাণভয়ে তাদের সম্ভ্রম করে চলে। নিরস্ত্র মানুষ সাহস পায় না ডাকাতদের বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিবাদের। বাংলাদেশে এসব ডাকাতদের পুরা নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত দেশের পুলিশ বাহিনী, মন্ত্রী বাহিনী, সরকারি উকিল বাহিনী, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আদালতের বিচারকগণ। এতে ফল দাঁড়িয়েছে, যে দেশের মানুষ পকেটমারকে পিটিয়ে হত্যা করে,সেদেশের মানুষ স্টেট ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি হলেও প্রতিবাদ মিছিলে নামতে ভয় পায়।
দেশবাসী কি গরু-ছাগল?
বাংলাদেশের মূল সমস্যাটি দেশের ভূমি বা জলবায়ু নয়। বরং দেশের সরকার। দেশের জনগণকে সরকার মানুষ ভাবতেই রাজী নয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যা কিছু হচ্ছে তা দেখে প্রশ্ন জাগে, শেখ হাসিনা ও সঙ্গিসাথিরা শুধু বাংলাদেশের জনগণকেই নয়,বিশ্ববাসীকেও কি গরু-ছাগলের চেয়ে বেশী কিছু ভাবে? গরু-ছাগলের সামনে লজ্জাশরমের চিন্তা থাকে না। তাদের সামনে উলঙ্গ হতে তাই ভাবনা জাগে না। বাংলাদেশের জনগণকে মানুষ ভাবলে শেখ হাসিনার সরকার যা করছে তাতে তার নিজেরই লজ্জা হতো। মনুষত্ব বিসর্জন দিলে সে শরমটুকুও থাকে না। পশুরা আরেক পশুর সামনে উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করে তো সে পশুত্বের কারণে। লজ্জা-শরম না থাকার কারণেই চোরেরা চুরি করে, সন্ত্রাসীর ডাকাতি করে এবং পতিতারা খরিদদারদের সামনে কাপড় খুলে। মানবরূপী এসব জীবগুলো মানব দেহ নিয়ে চলাফেরা করলেও আসলে তারা মানবতাশূণ্য। বাংলাদেশ সরকারের আজ যে সীমাহীন দুর্বৃত্তি তা কি কোন ভদ্রলোক ভাবতে পারে? এরূপ সততা ও ভদ্রতার জন্য কি দরবেশ হওয়া লাগে? পরকালে বিশ্বাস নেই এমন বহু নাস্তিকও স্রেফ লজ্জা-শরমের কারণে চুরি-ডাকাতি বা ব্যাভিচারে নামে না। মানুষকে তারা ধোকাও দেয় না। লোকলজ্জার ভয় এভাবে কোটি কোটি মানুষকে চুরি-ডাকাতি, ধোকাবাজী, ধর্ষন, অশ্লিলতা ও দেহব্যবসার পথ থেকে দূরে রাখে। এমন লজ্জাশীল মানুষেরা না খেয়ে মারা যেতে রাজী, কিন্তু পাপের পথে নামে না। কারো পকেটে তারা হাত দেয় না। কিন্তু লজ্জাশরম বিলুপ্ত হলে নানা প্রকারের দুর্বৃ্ত্তি তখন রীতিতে পরিণত হয়। শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ক্ষেত্রে তো সেটিই হয়েছে।
দেশবাসীকে যারা গরু-ছাগল ভাবে তাদের মনের সে কুৎসিত ভাবটি প্রকাশ পায় তাদের কর্ম ও আচরনে। কর্মে ও আচরনে তারা অতি বেপরওয়া ও ভাবনাশূন্য হয়। কারণ,গরু-ছাগলের সামনে জবাবদেহীতার ভয় থাকে না। গরু-ছাগল প্রতিবাদী বা বিদ্রোহী হয় না। তারা ভাবে, গরু-ছাগলের জন্মই তো জবাই হওয়ার জন্য। এমন একটি চেতনার কারণেই শাপলা চত্বরে শত শত নিরীহ মুসল্লীকে হত্যা ও আহত করার পরও শেখ হাসিনাও তাই জনসম্মুখে জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। এবং তার সামান্যতম শরমও হয় না হত্যা ও গুমের রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ায়। হাসিনার বিশ্বাস, দেশ-শাসনের বৈধ অধিকার একমাত্র তার ও তার পরিবারের। সে সাথে ভাবে, অধিকার রয়েছে যত্র তত্র মানব হত্যারও। তার আগে সে অধিকারের দাবীদার ছিল শেখ মুজিবও। সিরাজ শিকদার এবং সে সাথে প্রায় ৩০ হাজার মানব হত্যায় তিনি আদালতের ধার ধারেননি। এমন ভাবনা যে শুধু মুজিব ও মুজিবকন্যা হাসিনার –বিষয়টি তাও নয়। সে বিশ্বাসটি সকল মুজিব ভক্তদের। অতীতে নমরুদ এবং ফিরাউনের ভক্তগণও মনে করতো, তাদের স্বৈরাচারি প্রভুর অধিকারটি শুধু পুঁজা ও রাজস্ব পাওয়া নয়, বরং যাকে ইচ্ছা তাকে হত্যা করারও। হত্যা কর্মে তারা কখনোই বিচার-আচারের ধার ধারেনি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)র ন্যায় মানব ইতিহাসের দুই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির হত্যা প্রকল্পে এরূপ জাহেল জনগণ তাই নমরুদ ও ফিরাউনকে সমর্থণ করেছিল। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)কে তারা তাদের জন্মভূমিতে ইসলাম প্রচারের সুযোগ দেয়নি। সুযোগ দেয়নি বসবাসেরও। তাদেরকে তাই নানা দেশের পথে পথে ঘুরতে হয়েছে। নমরুদ ও ফিরাউনের ন্যায় প্রতিযুগের স্বৈরাচারিগণ এভাবেই নিজভক্ত দুর্বৃত্তদের প্রতিপালন করে। শেখ হাসিনা ও তার স্বৈরাচারি পিতা মুজিব সে কাজটিই বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে করেছেন। বাংলাদেশের এ মুজিবভক্ত দুর্বৃত্তরা ইসলামপন্থিদের যে শুধু নিজ দেশে বেঁচে থাকা অসম্ভব করছে তা নয়, ইসলামপন্থি নেতাদের বাংলার মাটিতে জানাজা ও কবর হতে দিতেও তাদের প্রবল অনিচ্ছা। সম্প্রতি (২০১৫ সালে) সে ঘোষণাটি দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের জনৈক মন্ত্রী। ইসলামপন্থিগণ বেঁচে থাকুক বা মৃত্যুর পর জানাজা পাক -সেটি হতে দিতে তারা রাজী নয়। অথচ এরূপ বর্বর ঘোষণাটি এমনকি নমরুদ ও ফিরাউনের পুঁজারীরাও দেয়নি।
শেখ হাসিনা যে দেশবাসীকে গরুছাগলের চেয়ে যে বেশী কিছু মনে করেন না সে প্রমাণটি নতুন করে দিলেন ২০১৪ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে ১৮৫ জনের বিশাল বহর নিয়ে হাজির হয়ে। জাতিসংঘ দপ্তরটি কূটনীতির কেন্দ্র।১৮৫ জনের সে বিশাল দলের কি ছিল কূটনৈতীক লক্ষ্য? তিনি বিশাল দল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন নিউয়র্ক শহরের বিলাসবহুল হোটেলে। যেন প্রমোদভ্রমন;এবং সেটি জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী জাতিসংঘ গিয়েছিলেন ৬৯ জনের বহর নিয়ে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সফরসঙ্গি ছিলেন মাত্র ১৪ জন। প্রশ্ন হলো, ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতীক কাজকর্মের পরিধি ও পরিমাণ কি অধিক? মূল পার্থক্যটি হলো, মোদী ও নওয়াজ শরীফ –উভয়েই নিজ দেশের জনগণকে গরু-ছাগল ভাবেন না। ফলে জনগণের সামনে তাদের জবাবদেহীতার ভয় আছে। অহেতুক কিছু করলে আগামী নির্বাচনে ভোট হারাবার ভয়ও আছে। সে সাথে লজ্জাবোধও আছে। কিন্তু সে ভয় হাসিনার নাই। নাই সে লজ্জাবোধও। মোদী ও নওয়াজ শরীফকে জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে হয়। কিন্তু হাসিনার তো ভোটের প্রয়োজন পড়ে না। অর্ধেকের বেশী সিটে নির্বাচন না দিয়েও তিনি নির্বাচন জিতেন। হাসিনার প্রয়োজন তো বিশাল লাঠিয়াল বাহিনীর। তাদের খুশি করতেই হাসিনার প্রমোদ ভ্রমনের প্রয়োজনটি তাই নওয়াজ শরীফ ও নরেদ্র মোদীর চেয়ে অধিক। তাছাড়া এ বিশাল বাহিনীর প্রমোদ ভ্রমণে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে তার একটি মুদ্রাও হাসিনাকে দিতে হয়নি। সে অর্থ গেছে জনগণের পকেট থেকে। তাই এরূপ প্রমোদ ভ্রমণ বছরে একবার কেন, মাসে মাসে করলেই বা হাসিনার ক্ষতি কি? অথচ ১৮৫ জনের বিলাস ভ্রমনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা দিয়ে অনেকগুলি স্কুল বা হাসপাতাল গড়া যেত। কিন্তু স্বৈরাচারি শাসকদের মগজে কি সে ফিকির থাকে? তাদের ফিকির তো বেশী বেশী লুণ্ঠন এবং নিজেদের গদি বাঁচানো নিয়ে।
অস্ত্রের রাজনীতি
বাংলাদেশে মানবাধীকার, গণতন্ত্র, ভোট বা নির্বাচনের রাজনীতি এখন কবরে শায়ীত। শেখ হাসিনা চালু করেছেন নিরেট অস্ত্রের রাজনীতি। তার কাছে ভোট নয়, বন্দুকের নলই হলো ক্ষমতার মূল উৎস। শেখ হাসিনা তার পিতার পথ ধরেছেন। নির্বাচনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতেই শেখ মুজিব একদলীয় বাকশাল চালু করেছিলেন। অস্ত্রের এ রাজনীতিতে গুরুত্ব পায় অস্ত্রধারী দলীয় ক্যাডার, রক্ষিবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। এমন রাজনীতিতে যার হাতে বন্দুক নাই তার রাজনীতিও নেই। মুজিবের হাতে তাই শুধু বিরোধী দলীয় নেতাদের রাজনীতি মারা পড়েনি, আস্তাকুরেঁ গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল তার নিজদলের বন্দুকহীন নেতাকর্মীদেরও। মুজিবের কাছে অস্ত্রধারী দলীয় ক্যাডার বা রক্ষিবাহিনীর কমান্ডারের যে গুরুত্ব ছিল তা দলের অস্ত্রহীন প্রবীন নেতাদের ছিল না। আস্তাকুঁরে যাওয়ার সে মর্মবেদনাটি ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্টে মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মালেক উকিল অতি জোর গলায় প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন,“ফিরাউনের নিপাত হয়েছে।” দলের নেতাগণ সে মৃত ফিরাউনের জানাজাও পড়েনি। বরং খন্দোকার মুশতাকের সামনে গিয়ে সারিবদ্ধ হয়েছে তার মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে। অস্ত্রের রাজনীতির এই হলো পরিনতি। কিন্তু শেখ হাসিনা তার পিতার ব্যর্থ রাজনীতি থেকে কোন শিক্ষাই নেননি। ফলে প্রবল প্রতাপে ফিরে গেছেন পিতার অস্ত্রের রাজনীতিতে। শিক্ষা নেয়নি আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও। ফলে মুজিবামলের ন্যায় বেড়েছে রাজনৈতীক হত্যা, বেড়েছে গুম ও রিম্যান্ডে নিয়ে নির্যাতনের কৌশল। শেখ মুজিব আইয়ুবের কারাগারে নিরাপদে ছিলেন। তাকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে রিমান্ডে গিয়ে নির্যাতিত হতে হয়নি। তার গায়ে লাঠির বাড়ি দূরে থাক একটি আঁচড়ও লাগেনি। অথচ তিনি ছিলেন পাকিস্তান ধ্বংসী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী। কিন্তু মুজিবের কারাগারে তার রাজনৈতীক শত্রুরা নিরাপত্তা পাননি। তাই মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরিকে জেলের মধ্যে লাশ হতে হয়েছে। লাশ হতে হয়েছে সিরাজ সিকদারকে। লাশ হতে হয়েছে মুজিব-বিরোধী শিবিরের ৩০-৪০ হাজার রাজনৈতীক নেতা-কর্মীকে। হত্যা, খুন, গুম ও গণতান্ত্রিক অধিকার লুন্ঠনের মধ্যেই ছিল মুজিবের পরম আনন্দ। মুজিবের মানসিক রোগ “স্যাডিজম” প্রবল ভাবে বেঁচে আছে হাসিনার মাঝেও। এ রোগের প্রধান লক্ষণ, অন্যকে নিহত বা নির্যাতিত করার মধ্যেই নিজের আনন্দ। মুজিবের ন্যায় শেখ হাসিনাও তাই শুরু করেছেন “এক লাশের বদলে দশটি লাশ ফেলা”র রাজনীতি। দেশের মানুষ কি বলবে, বিশ্ববাসী কি ভাববে -তা নিয়ে শেখ মুজিবের কোনরূপ লোকলজ্জা ছিল না। তেমনি নাই মুজিব-কন্যা হাসিনারও।
ভোটের রাজনীতিকে বিদায় দেয়ার প্রয়োজনেই শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথাকে বিলুপ্ত করেছেন। কারণটি সুস্পষ্ট। নিজ দলের খেলোয়াড়কে রিফারি বানালে নিজের খেলোয়াড়দের পেনাল্টি থেকে বাঁচানো যায় এবং লাল কার্ড দেখানো যায় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে। ভোট ডাকাতির নির্বাচনও তখন বৈধ নির্বাচনের সার্টিফিকেট পায়। এমন দলীয় রিফারি হলো নির্বাচনী কমিশনার। শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নিযুক্ত রেফারি তো ইতিমধ্যেই লালকার্ড দেখিয়ে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে। ফলে তারা অধিকার হারিয়েছে রাজনৈতীক অংশগ্রহনের। নির্বাচন এখন প্রহসনের হাতিয়ার। তাই যে নির্বাচনে দেশের অর্ধেকের বেশী সিটে একজন মানুষও ভোট দিল না, এবং যে সব সিটে নির্বাচন হলো সে সব সিটেও শতকরা ৫ ভাগের বেশী ভোটার হাজিরই হলো না –তেমন এক প্রহসনের নির্বাচনের দোহাই দিয়ে শেখ হাসিনা আজ ক্ষমতাসীন। দাবী করছেন তিনিই দেশের নির্বাচিত ও বৈধ প্রধানমন্ত্রী। চুরি-ডাকাতির অর্থকে নিজের অর্থ রূপে দাবি করতে চোর-ডাকাতের লজ্জা হয়না। তেমনি ভোটডাকাতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সিটে বসতে শেখ হাসিনারও লজ্জা হয়না। এমন নির্লজ্জ প্রতারণাকারিদের থেকে কি আদৌ কল্যাণ আশা করা যায়? কোন বিবেকমান ভদ্র মানুষ কি এরূপ চুরি-ডাকাতিকে বৈধতা দেয়? গরু-ছাগল ও গাছপালা কখনোই চোর-ডাকাতের উপদ্রব নিয়ে ভাবে না। নির্বাচন নিয়েও ভাবে না। ভোট ডাকাতি হলেও তারা তাই প্রতিবাদ করে না। তাই হাসিনারও দাবী, দেশের গরু-ছাগল, গাছপালা ও উদ্ভিদগণ যেমন তার নির্বাচনি বিজয়কে নিঃশব্দে মেনে নিয়েছে,তেমনি জনগণেরও উচিত সে বিজয়কে মেনে নেয়া। কিন্তু সভ্য মানুষ তো এ নিয়ে ভাবে। এরূপ চিন্তাভাবনার মধ্যেই তো বিবেকবোধ ও মানবতা। তাই এমন ভোটারহীন ও ভোটহীন নির্বাচনকে একজন সভ্য নাগরিক নির্বাচন রূপে মেনে নেয় কি করে? এমন নির্বাচনকে বৈধতা দিলে চোর-ডাকাতদের কি শাস্তি দেয়ার বৈধতা থাকে? ভোট ডাকাতদের তুলনায় চোর-ডাকাতদের অপরাধ তো নগন্য। তারা কিছু মানুষের পকেটে হাত দিলেও সমগ্র দেশবাসীর অধিকার ছিনতাই করে না। দেশের রাজনীতি, পুলিশ, প্রশাসন, আদালত, সেনাবাহিনী, ব্যাংক ও রাজস্ব ভান্ডারের উপরও মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে না।
লজ্জাহীনতার নাশকতা
মহান নবীজী (সাঃ) লজ্জাকে ঈমানের অর্ধেক বলেছেন। যার লজ্জা নেই, তার ঈমানও নাই। ফলে নির্লজ্জ ব্যক্তিদের চরিত্রও নাই। চরিত্রহীনদের সবচেয়ে বড় রোগটি এই লজ্জাহীনতা। মানুষ তাদের চোর-ডাকাত বলুক, চরিত্রহীন বা লম্পট বলুক, খুনি বা স্বৈরাচারি বলুক –তা নিয়ে এরূপ অপরাধীদের একটুও ভাবনা হয় না। ভাবনা নেই বলেই চুরিডাকাতি, ধোকাবাজি, মানুষ খুন ও লাম্পট্যে তাদের সামান্যতম লজ্জা হয় না। তাদেরা লজ্জা হয়না এবং বিবেকে দংশন হয় না স্বৈরাচারি শাসনেও। তারা যেমন খুন-খারাবি করতে পারে, তেমনি ধর্ষণে উৎসবও করতে পারে। লজ্জাশরমের কারণেই ভদ্র মানুষ সচারাচর কথা বা ওয়াদার হেরফের করে না। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি মাথায় নিয়ে সে নিজ চরিত্রকে বাঁচায়, কথা ঠিক রাখে। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, মানুষের ব্যক্তিত্ব তার জিহবায়। মানুষের অতি অমূল্য গুণ হলো এই ব্যক্তিত্ব। মানব চরিত্রের সবচেয়ে মূল্যবান এ অলংকারটি গড়ে উঠে ঈমানের উপর ভিত্তি করে। পরকালে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মহা পুরস্কারটি জুটবে সমূন্নত ব্যক্তিত্বের জন্য;সুঠাম ও শক্তিশালী দেহের জন্য নয়। সেরূপ ব্যক্তিত্ব ধোকাবাজ মিথ্যুকদের থাকে না। জিহবা দিয়ে কথা বলার সামর্থ্যটি মহান আল্লাহতায়ালা অন্য কোন জীবকে দেননি। মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিরূপে সমগ্র সৃষ্টিকূলে মানবের যে মহান মর্যাদা তার অন্যতম কারণ এই জিহবা। মহান আল্লাহতায়ালার প্রশংসা, সত্যের পক্ষে সাক্ষি, হকের প্রচার ও মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রধানতম হাতিয়ার হলো জিহবা। এ জিহবা দিয়েই মু’মিন ব্যক্তি তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্মগুলি করে। একারণেই স্বৈরাচারি শাসক মাত্রই জিহবার উপর নিয়ন্ত্রন বসায় এবং বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়। এভাবেই মু’মিনদের তারা নিরস্ত্র করে।
অপর দিকে বেঈমানেরা বড় বড় গুনাহর কাজে ব্যবহার করে এই জিহবাকে। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই অস্ত্রটিকেই তারা অধিক ব্যবহার করে। জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এজন্যই মানুষ-খুন, ধর্ষন বা চুরিডাকাতির প্রয়োজন পড়ে না। দেহের এ ক্ষুদ্র অঙ্গ দিয়েই সেটি সম্ভব। মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে অবিশ্বাস, বিদ্রোহ ও মিথ্যা উচ্চারনই সে জন্য যথেষ্ট। এ জিহবা দিয়েই দুর্বৃত্ত মানুষেরা দেশে গৃহযুদ্ধ, সংঘাত ও বিপুল রক্তপাত ডেকে আনে। একাত্তরে রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করতে শেখ মুজিবকে তাই একটি তীরও ছুড়তে হয়নি। তাকে রণাঙ্গনেও থাকতে হয়নি। মহান নবীজী (সাঃ)র হাদীসঃ যে দুটি অঙ্গের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামী হবে তার একটি হলো জিহবা, অপরটি হলো যৌনাঙ্গ। এ জিহবা দিয়েই মানুষ শুধু কোন ব্যক্তিকে নয়, সমগ্র জাতিকে ধোকা দেয় ও সে জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করে। টানে জাহান্নামের পথে। এভাবে জাতির জীবনে ডেকে আনতে পারে ভয়ানক দুর্যোগ। শেখ মুজিব তো সেকাজটিই করেছেন। এই জিহবা দিয়েই তিনি সমগ্র দেশবাসীকে বার বার ধোকা দিয়েছেন, এবং অর্জন করেছেন রাজনৈতিক বিজয়। গণতন্ত্রের নামে বড় বড় বক্তৃতা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্রকেই কবরে পাঠিয়েছিলেন। কেড়ে নিয়েছিলেন অন্যদের দলগড়া, মতপ্রকাশ ও রাজনীতির স্বাধীনতা। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। স্বাধীনতার কথা বলতেন, আর ভারতের সাথে সই করেছিলেন ২৫ সালা গোলামী চুক্তি। সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উপহার দিয়েছিলেন ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার কাজে পিতার ন্যায় একই রূপে জিহবাকে ব্যবহার করছেন শেখ হাসিনা।
রোগটি ঈমানহীনতা
পশুর ক্ষেত্রে লজ্জাহীনতটি জন্মগত; সেটি চারিত্রিক দুর্বলতা নয়। ঈমানহীনতাও নয়। কিন্তু মানব লজ্জাহীন হয় ঈমানহীনতার কারণে। লজ্জা হলো ঈমানের অলংকার। মানব মনে যখনই ঈমানের বৃদ্ধি ঘটে, চরিত্র ও আচরণেও তখন বিপ্লব শুরু হয়। চারিত্রিক সে বিপ্লবে বাড়ে লজ্জাশীলতা। মহান নবাজী (সাঃ) ছিলেন মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈমানদার ব্যক্তি;সে কারণে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ লজ্জাশীল ব্যক্তিও। আরবের অসভ্য মানুষগুলো ইসলাম কবুলের সাথে সাথে তাই দ্রুত উলঙ্গতা, অশ্লিলতা ও লজ্জীহীনতা ছেড়ে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিলেন। এমন লজ্জাশীল মানুষগুলো কি মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে নির্লজ্জ হওয়ার কথা ভাবতে পারে? এমন ঈমানদারেরা দেশের সংবিধান থেকে মহান আল্লাহতায়ালার উপর আস্থার ঘোষণাটি সরায় কি করে? রুখে কি শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠা? বাজেয়াপ্ত করে কি করে জিহাদ বিষয়ক বই? এগুলো তো বেঈমানির আলামত। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে এরূপ বেঈমানি ও বিদ্রোহ নিয়েই শেখ হাসিনা ও তার সেক্যুলার মিত্রদের রাজনীতি। এমন বেঈমানি ও বিদ্রোহ নিয়ে রোজ হাশরের বিচার দিনে মহান আল্লাহতায়ালার সামনে একমাত্র নিরেট নির্লজ্জরাই দাঁড়ানোর সাহস করতে পারে। ঈমানদারির লক্ষণ তো হলো আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের প্রতি সর্বাবস্থায় আনুগত্য এবং তাঁর শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠা নিয়ে অটল আপোষহীনতা।
বেঈমানগণ যে কর্ম ও আচরণে গরু-ছাগলের চেয়েও নিকৃষ্টতর হতে পারে -সে ভাষ্যটি কোন বান্দার নয় বরং খোদ মহান আল্লাহতায়ালার।সে সুস্পষ্ট ঘোষণাটি এসেছে পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনে। সেটি ব্যক্ত করতে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার ব্যবহৃত শব্দমালাটি হলো, “উলায়িকা কা আল আনয়াম, বাল হুম আদাল”। অর্থঃ “তারাই হলো গবাদি পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট”। এরূপ বর্ণনার কারণটিও সহজে বোধগম্য। গরু-ছাগলেরা কখনোই মহান আল্লাহতায়ালার জমিনে তাঁর শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে না। পশুরা কখনোই কাফের বা মুনাফিক হয় না। মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে তারা কখনোই বিদ্রোহ করে না। বরং সকল পশু, সকল কীটপতঙ্গ, সকল গাছাপালা এবং সকল সৃষ্টি মহান আল্লাহতায়ালার নামে নিয়মিত তাসবিহ পাঠ করে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা সে সাক্ষ্যটি বার বার দিয়েছেন এভাবে:“সাব্বাহা লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতে ও মা ফিল আরদি”, এবং “ইউসাব্বিহু লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতে ও মা ফিল আরদি।” অর্থ:“আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তারা সবাই আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে”। ফলে পশু থেকে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব স্রেফ তাসবিহ পাঠে প্রমাণিত হয় না। মানুষ পশু নয়, বরং মহান আল্লাহতায়ালা খলিফা। তাই পশুর উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার যোগ্য খলিফা রূপে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে।ঈমানদারের জীবনে সেটিই হলো মূল এজেণ্ডা। পশুর এজেণ্ডা সেটি নয়। খলিফা রূপে দায়িত্ব পালনের প্রধানতম বিষয়টি হলো ইসলামের বিজয় তথা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। সাহাবায়ে কেরামের জান ও মালের বেশীর ভাগ হয়েছে খেলাফতের সে দায়িত্ব পালনে। তাই শরিয়ত প্রতিষ্ঠার নিয়ে মানব সন্তানকে গরু-ছাগল, গাছপালা ও উদ্ভিদের ন্যায় নিরব ও নিষ্ক্রীয় হলে চলে না। স্রেফ দোয়াদরুদেও সে কাজ সমাধা হয় না। সাহাবায়ে কেরামের ন্যায় তাকেও শরিয়ত বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হয়।
অথচ বেঈমানদের জীবনে যেমন তাসবিহ পাঠে রুচি থাকে না, তেমনি রুচি থাকে না শরিয়ত প্রতিষ্ঠায়। তারা বরং যুদ্ধ শুরু করে শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। এমন শয়তানদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে মুসলিম জনগণ তখন ব্যর্থ হয় ইসলামি এজেণ্ডা নিয়ে বাঁচায়। ব্যর্থ হয়, প্রকৃত মুসলিম রূপে জীবন যাপনে। এমন অধিকৃত রাষ্ট্রে তখন বার বার আযাব নেমে আসে। পশুবৎ বেঈমানদের উদ্দেশ্যই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলদ্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শ্রবন করে না। এরাই হলো পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর; তারাই গাফেল” –(সুরা আ’রাফ আয়াত ১৭৯)। বেঈমান ব্যক্তিগণ শয়তানের পক্ষ নিবে এবং ইসলামের বিজয় রোধে যুদ্ধে নামবে –তাদের চরিত্রের এ ইতর রূপটি নিয়ে সর্বজ্ঞানী ও সর্বস্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালার চেয়ে আর কে বেশী জানে? আচরনে এরা যে পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতর -পবিত্র কোরআনের সে বর্ণনা কি কখনো ভূল হতে পারে? পশুরা মুসলিম ভূমিকে খণ্ডিত করে না। আল্লাহতায়ালার দ্বীনের সৈনিকদের ফাঁসিতে ঝুলায় না;গুলি করে তাদের হত্যাও করে না। জনপদে বোমা বর্ষণও করে না। শরিয়তী বিধানের বিরুদ্ধে আওয়াজও তোলে না। বিশ্বের তাবৎ পশু মিলেও সমগ্র ইতিহাসে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে হত্যা করেনি। কিন্তু পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট জীবরা সেরূপ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বিগত দুটি বিশ্বযুদ্ধেই। এরাই সিরিয়ার বুকে তিন লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে। বহু লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে আলজিরিয়া, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাকে। সে হত্যাকাণ্ড এখনও অব্যাহত রয়েছে। গ্যাস চেম্বার, আবু গারিবের জেল,গোয়ান্তো নামো বে’য়ের কারাগার ও শাপলা চত্ত্বর তো মনুষ্যরূপী এরূপ নিকৃষ্ট জীবদেরই সৃষ্টি। মহান আল্লাহাতায়ালা তাদের চরিত্রের ইতর রূপটি বর্ণনায় যে কতটা নির্ভূল –এ হলো তারই প্রমাণ। আরো কথা হলো, খোদ মহান আল্লাহতায়ালা যাদেরকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন তাদের থেকে কি মনুষ্যসুলভ আচরন আশা করা যায়? করা যায় শান্তি ভিক্ষা? তাছাড়া শান্তি কি ভিক্ষার বিষয়? ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু সে শান্তি অর্জনে শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবাকে শহীদ হতে হয়েছে। একই রূপ মূল্য দিয়ে মু’মিনদের কিনতে হয় জান্নাতের শান্তিও। বাংলাদেশের মানুষও শান্তি চায়। কিন্তু সেটি কি ইসলামের বিপক্ষ শক্তিকে ক্ষমতায় রেখে? সেটি কি ইসলামের পথ? এমন শত্রুপক্ষকে ক্ষমতায় রাখায় বিপদটি শুধু পার্থিব জীবনে নয়, বরং তাতে ভয়ানক বিপদ বাড়ে অনন্ত-অসীম আখেরাতের জীবনেও। কারণ, সুসভ্য সমাজের নির্মাণই শুধু নয়, ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠাও তারা অসম্ভব করে। ২৮/০৩/২০১৬
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018