অনৈসলামী রাষ্ট্রের নাশকতা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on May 2, 2024
- Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সবচেয়ে বড় অপরাধ কর্ম ও সবচেয়ে বড় নেক কর্ম
অনৈসলামী রাষ্ট্রের নাশাকতা বহুবিধ ও অতি ভয়ঙ্কর। এরূপ সবচেয়ে বড় নাশাকতাটি হলো, অগণিত মানুষকে পরিকল্পিত ভাবে জাহান্নামে নেয়ার। এবং সেটি অনন্ত-অসীম কালের জন্য। এ বিশ্বচরাচরে এটিই হলো সবচেয়ে বড় নাশকতা। এমন ভয়ানক কাজটি লক্ষ লক্ষ মন্দির ও তার মুর্তিপূজারী পুরোহিতগণও করার সামর্থ্য রাখে না। এতবড় নাশকতার কাজটি হিংস্র জীব-জন্তু, প্রাণনাশী রোগ-জীবাণু, সুনামী, ঘুর্ণিঝড় বা ভূমিকম্প ঘটায় না। এগুলির কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাননাশ ঘটলেও সেগুলি কাউকে জাহান্নামে নেয় না। কিন্তু জাহান্নামে নেয়ার কাজটি কারে অনৈসলামী রাষ্ট্র। অনৈসলামী রাষ্ট্র সে কাজটি করে রাষ্ট্র ও সমাজের বুকে শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করে। এমন রাষ্ট্র জনগণকে শয়তানের সৈনিকে পরিণত করে। তখন অনৈসলামী রাষ্ট্র শক্তশালী হয় জনগণের অর্থ ও শ্রমে।
এজন্যই শয়তানের মূল এজেন্ডা এবং সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট মন্দির, মুর্তি, পতিতালয়, ক্যাসিনো, মদ্যশালা ও সূদী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা নয়, বরং সেটি হলো অনৈসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। এমন প্রতিটি রাষ্ট্র শয়তানের দুর্গে পরিণত হয়। এবং রাষ্ট্রের প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, স্কুল-কলেজ, আদালত পরিণত হয় শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করার হাতিয়ারে। তখন প্নয়োজন পড়ে না শয়তানের নিজে ময়দানে নামার, শয়তানের কাঙ্খিত সকল কাজগুলি করে দেয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি। শয়তানী শক্তিবর্গের অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটি হয় এমন রাষ্ট্রের নির্মাণে এবং সে রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দেয়ায়। এবং অনৈসলামী রাষ্ট্র কোথাও একবার নির্মিত হলে সেখানে শয়তানের বাকি প্রকল্পগুলি চালু রাখার কাজটি তখন সহজ হয়ে যায়।
কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, জালেম ও ফাসেকদের সবচেয়ে বড় অপরাধ কর্মটি চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, ধর্ষণ ও নির্যাতন নয়, বরং সেটি হলো অনৈসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। পৃথিবী পৃষ্ঠে এমন রাষ্ট্রই হলো সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক সৃষ্টি। এমন রাষ্ট্রের কর্ণধারদের পরিচয় সেক্যুলারিস্ট, ন্যাশনালিস্ট, কম্যুনিস্টবর্ণবাদী, স্বৈরাচারী, পুঁজিবাদী, ফ্যাসিবাদী ও রাজতন্ত্রী রূপে। কিছু লোকের চুরি-ডাকাতি, খুন-খরাবী, ধর্ষণ, সন্ত্রাসের কারণে রাষ্ট্র কখনোই জাহান্নামের বাহন হয়না। কিন্তু জাহান্নামের বাহনে পরিণত হয় প্রতিটি অনৈসলামী রাষ্ট্র। ফলে এরূপ রাষ্ট্রের নির্মাণে অংশ নেয়াই হলো মানব জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ কর্ম -যা জাহান্নামে হাজির করে। এবং এ জীবনে সবচেয়ে বড় বাঁচাটি হলো এমন রাষ্ট্রের নাশকতা থেকে বাঁচা। তাই সবচেয়ে বড় নেক কর্ম হলো এমন অনৈসলামী রাষ্ট্রের নির্মূলে মুজাহিদ হয়ে যাওয়া। সেটি সম্ভব না হলে অতি বড় মাপের ইবাদত হলো এমন রাষ্ট্র থেকে হিজরত করা।
প্রতিটি দেশেই দখলদার শয়তানী শক্তি অতি সশস্ত্র। মহান আল্লাহতায়ালার অধিকৃত ভূমি থেকে তারা সে দখলদারী ছাড়তে রাজী নয়। অথচ সে দখলদারীর নির্মূল ছাড়া ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ অসম্ভব। এবং অসম্ভব হলো অনৈসলামী রাষ্ট্রের নাশকতা থেকে জনগণকে বাঁচানো। স্রেফ কুর’আন পাঠ, নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়া-দরুদের ন্যায় ইবাদতে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে অনৈসলামী রাষ্ট্রের ন্যায় শক্তিশালী শয়তানী প্রকল্পের বিলুপ্তি ঘটে না। সে নির্মূলের কাজে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের জিহাদে নামতে হয়েছে। অর্ধেকের বেশী সাহাবীকে শহীদ হতে হয়েছে। এটিই হলো নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের এটিই হলো একমাত্র রোডম্যাপ -যা অতীতে বিশাল বিজয় দিয়ে।
ইসলামের রাষ্ট্রের শক্তি ও সামর্থ্যের কথা শয়তানের অনুসারীগণ জানে। ইসলামের রাষ্ট্রের মাঝেই থাকে বিশ্বশক্তি রূপে মুসলিমদের বেড়ে উঠার বীজ। ইসলামের প্রসার তখন দ্রুততর হয়। তখন নির্মিত হয় ইসলামী সভ্যতা। ইসলামের রাষ্ট্র না থাকলে মসজিদ-মাদ্রাসায় দেশ ভরে গেলেও সে সম্ভাবনতা থাকে না। এজন্যই ইসলামের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করা সকল শয়তানী শক্তির মূল এজেন্ডা। অনৈসলামী রাষ্ট্রের শাসকগণ এজন্যই চায়, মুসলিমগণ ব্যস্ত থাকুক কুর’আন তেলাওয়াত, নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়া-দরুদের ন্যায় ইবাদত নিয়ে এবং মসজিদ-মাদ্রাসার নির্মাণ নিয়ে; এবং দূরে থাকুক ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ থেকে। শয়তানী শক্তির সে খায়েশ পূরণ করে চলেছে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির বিশাল আলেম সমাজ ও সাধরণ মুসলিমগণ। এজন্যই লক্ষ লক্ষ মসজিদ ও হাজার হাজার মসজিদ গড়লেও ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণের জিহাদে তাদের দেখা যায়না। দেশের আদালতে শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা নিয়েও তারা ভাবে না। আলেমগণ নামাজ-রোজার সাথে মসজিদ-মাদ্রাসায় চাকুরি, ওয়াজ মহফিলে বক্তৃতা এবং বিয়ে-শাদী ও জানাজায় দাওয়াত পেলেই খুশি। তাদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে এমন কি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে অনৈসলামী রাষ্ট্রগুলি দীর্ঘায়ু পাচ্ছে।
রাষ্ট্র কিরূপে জাহান্নামের বাহন হয়?
রোগ-জীবাণু কিরূপে মৃত্যু ঘটায় -সেটি জানতে হয়। নইলে মহামারীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে। রোগ-জীবাণুর নাশকতার বিষয়গুলি জানা এজন্যই অতি জরুরি। তেমনি জানতে হয়, অনৈসলামী রাষ্ট্রগুলি কিরূপে কোটি কোটি মানুষকে জাহান্নামে নেয় -সে বিষয়টি জানা। মানব জীবনের এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। সে পাঠ থেকে শিক্ষা না নিলে জাহান্নাম থেকে বাঁচাটি অসম্ভব হয়। এবং অসম্ভব হয় জান্নাতে যাওয়া। অনৈসলামী রাষ্ট্রগুলি কিভাবে মানুষকে জাহান্নামে নেয় -সেটি কোন গোপন বিষয় নয়। শয়তানী শক্তিবর্গ সে কাজটি সবার চোখের সামনে করে। সেটি করে শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির নামে।
মানব জীবনের মূল মিশনটি শুধু পানাহারে বাঁচা নয়। বরং সেটি হলো নিজেকে জান্নাতের যোগ্য রূপে গড়ে তোলা। সেটি ইবাদতের মাধ্যমে। বস্তুত ইবাদত ছাড়া অন্য কারণে মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়নি। এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা হলো,
وَمَا خَلَقْتُ ٱلْجِنَّ وَٱلْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থ: “আমি জ্বিন ও মানবকে ইবাদত ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি।” –(সুরা দারিয়াত, আয়াত ৫৬)
প্রশ্ন হলো, ইবাদতের অর্থ কি? এবং ইবাদতের শুরু কোথা থেকে? এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কোনটি? ইবাদতের উৎপত্তি আরবী শব্দ আবদ তথা দাস বা গোলাম থেকে। ইবাদতের অর্থ গোলামী নিয়ে বাঁচা। গোলামী এখানে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমের। এরূপ গোলামী মানুষকে মুসলিম, ঈমান ও মুত্তাকী বানায়। এবং তাঁর কোন একটি কুর’আনী হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ব্যক্তিকে কাফিরে পরিণত করে। ইবাদতের শুরুটি নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের মধ্য দিয়ে হয় না। বরং সেটি হয় কালেমায়ে শাহাদাত পাঠের মধ্য দিয়ে। শাহাদাতের অর্থ সাক্ষ্যদান। সাক্ষ্যদানটি হলো মহান আল্লাহতায়ালাকে যে সকল কিছুর একক সৃষ্টিকর্তা -সেটির। সাক্ষ্য দিতে হয় তাঁর সর্বসামর্থ্য, সার্বভৌমত্ব, কুর’আনী বিধান ও সকল গুণাবলীর উপর। সাক্ষ্য দিতে হয় তাঁর নবী-রাসূল, আসমানী কিতাব, ফিরেশতা, রোজ হাশরের বিচার দিন এবং আখেরাতের জান্নাত ও জাহান্নামের উপর। বস্তুত ঈমানের শুরু এখান থেকেই। নামাজ-রোজা আদায় করেও কোন ব্যক্তি যদি সাক্ষ্যদানের কাজটি না করে তবে সে কাফিরে পরিণত হয়।
সত্যের পক্ষে শাহাদতের হুকুম এসেছে পবিত্র কুর’আন। যেমন সুরা বাকারার ১৪৩ নম্বর আয়াতের বলা হয়েছে:
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَـٰكُمْ أُمَّةًۭ وَسَطًۭا لِّتَكُونُوا۟ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًۭا
অর্থ: “এবং এভাবে তোমাদের বানিয়েছি মধ্যমপন্থী একটি উম্মত রূপে, যাতে তোমরা সাক্ষ্যদানকারী হতে পারো সমগ্র মানব জাতির সামনে; এবং রাসূল হবেন তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষ্যদাতা।”
উপরিউক্ত আয়াত থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহতায়ালার মানব জাতির আদালতে তাঁর নিজের পক্ষে সাক্ষ্যদাতা চান। নইলে একক সৃষ্টিকর্তা রূপে তাঁর নিজের পরিচয়, তাঁর সর্বময় ক্ষমতা, তাঁর সার্বভৌমত্ব, তাঁর দ্বীন, তাঁর কুর’আন এবং তাঁর গুণাবলী মানুষের কাছে অজানা থেকে যায়। এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ফেরেশতাদের নয়, এ কাজ মুসলিম উম্মাহর। এ কাজের জন্যই মুসলিম উম্মাহর সৃষ্টি। সাক্ষ্য দেয়াকে আরবীতে শাহাদত বলা হয়। এবং যারা শাহাদত দেয় তাদেরকে শহীদ বলা হয়। মহান আল্লাহতায়ার কাছে শহীদদের মর্যাদা বিশাল। কারণ, তারা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে সাক্ষ্য দেন শুধু মুখের কথা, ওয়াজ বা লেখনী দিয়ে নয়, বরং নিজের জীবন কুরবানী করে। এরূপ সাক্ষ্যদানই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাই যারা শহীদ হয় তাদেরকে মৃত বলাকে তিনি হারাম করেছেন। তাদের সকল গুনাহ তিনি মাফ করে দেন এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে নেন।
ঈমানদারকে এ বিষয়েও সাক্ষ্য দিতে হয়, মানবের জন্ম কোন বানর জাতীয় জীব থেকে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে হয়নি। বরং শুরুটি হয়েছিল আদি পিতা হয়রত আদম (আ:) ও বিবি হাওয়া থেকে। এ সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে পবিত্র কুর’আনে। এ পরম সত্যকে অবিশ্বাস করলে কেউ কি মুসলিম থাকে? সে তো কাফির হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের স্কুলে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞানের বই’য়ে সাক্ষ্য দেয়া হয়, মানব বিবর্তনের মাধ্যমে বানর মানুষে পরিণত হয়েছে। এটিকেই বলা হয় ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব (theory of evolution)। বিশ্বের বহু দেশে এ তত্ত্বকে সত্য বলে স্বীকার করা হয়না। তুরস্ক, সৌদি আরব, কোরিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশেই এ তত্ত্ব স্কুলে পড়ানো হয়না। অথচ বাংলাদেশে শেখানো হচ্ছে, ডারউইনের এ তত্ত্বই নাকি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক সত্য। এবং আরো পড়ানো হয়, এ তত্ত্বকে নাকি অস্বীকার করা অসম্ভব! অথচ এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয় না, যে অসংখ্য বানর আজও বানর রূপে বেঁচে আছে , সেগুলি মানুষ হতে ব্যর্থ হলো কিরূপে? বিবর্তন প্রক্রিয়া থেকে তারা বাদ পড়লো কিরূপে?
ইসলামে মিথ্যা বলাই শুধু হারাম নয়, হারাম হলো মিথ্যার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়াও। তাই ঈমানদার যেমন মিথ্যা বলে না, তেমনি মিথ্যার পক্ষে সাক্ষ্যও দেয়না। ঈমানদারদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে সুরা ফুরকানের ৭২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
وَٱلَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا۟ بِٱللَّغْوِ مَرُّوا۟ كِرَامًۭا
অর্থ: “এবং তারাই ঈমানদার যারা মিথ্যার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়না। এবং যখন অর্থহীন কোন কিছু দেখে তখন তার পাশ দিয়ে ভদ্র ভাবে অতিক্রম করে।”
ইসলামে সত্য বলা যেমন ফরজ, তেমন ফরজ হলো মিথ্যাকে পরিহার করা। কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছে উল্টোটি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এদেশটির রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণের ন্যায় বিদ্যালয়েও জনগণের রাজস্বের অর্থে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা দেয়া হচ্ছে। ছাত্রদের পরিণত করা হচ্ছে মিথ্যার পক্ষে সাক্ষ্যদাতায়। বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজটি হচ্ছে মুসলিম জনগণের অর্থে প্রতিপালিত শিক্ষকদের দ্বারা। এটি তো মুসলিম সন্তানদের কাফির বানানোর শয়তানী প্রজেক্ট। অনৈসলামী রাষ্ট্র তো এভাবেই দেশবাসীকে জাহান্নামে নেয়।
তবে বাংলাদেশের ন্যায় দেশে পাপের ভাগী শুধু মিথ্যাসেবী সরকার ও স্কুলের শিক্ষকগণ নয়, বরং জনগণও। কারণ, শিক্ষাদানের নামে ঈমানধ্বংসী মিথ্যার যে বীজ ছিটানো হচ্ছে -সে পাপের কাজে বিনা প্রতিবাদে অর্থ জুগাচ্ছে দেশের জনগণ। এভাবে জনগণ ভয়ানক পাপ কিনছে মিথ্যার প্রসারে বহু হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দিয়ে। জনগণের এমন বিনিয়োগে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীগণ বেড়ে উঠে মিথ্যার পক্ষে লড়াকু সৈনিক রূপে। এ কারণেই অনৈসলামী রাষ্ট্রের জনগণ কখনোই আর সাধারণ নাগরিক থাকে না, তারা পরিণত হয় ভয়ানক অপরাধীতে। তখন আযাব যখন বেঈমান শাসকের উপর আসে না, আসে সাধারণ জনগণের উপরও।
রাষ্ট্র যখন শয়তানের হাতিয়ার
প্রতিটি বক্তির জীবনেই যুদ্ধ থাকে। সে যুদ্ধে যেমন ব্যক্তির নিজের এজেন্ডা থাকে, তেমনি থাকে অন্যদের এজেন্ডা। যাদের জীবনে কোন যুদ্ধ নাই -বুঝতে হবে তারা মৃত। রা ঈমানদার তারা বাঁচে সত্যের পক্ষে যুদ্ধ নিয়ে। এটি তাঁর জিহাদ। এবং যারা বেঈমান তারা বাঁচে মিথ্যার পক্ষে যুদ্ধ নিয়ে। বস্তুত এরূপ যুদ্ধের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় ব্যক্তির ঈমানদারী ও বেঈমানী। এমন কি কোন রাষ্ট্রই নিরপেক্ষ ও নিষ্ক্রিয় নয়। প্রতিটি রাষ্ট্রেরই এজেন্ডা থাকে, তেমনি ভূ-রাজনৈতিক পক্ষও থাকে। ইসলামী রাষ্ট্র সর্বসামর্থ্য নিয়ে পরিণত হয় সত্যের পক্ষের শক্তিতে; আর অনৈসলামী রাষ্ট্র পরিণত হয় শয়তানের হাতিয়ারে। অনৈসলামী রাষ্ট্রে শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজ হয় মূলত দু’টি উপায়ে। এক). স্কুল-কলেজে কুর’আন শিক্ষা, আদালতের শরিয়তী আইন ও মুসলিম জীবনে জিহাদকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে। এভাবে অসম্ভব করে সিরাতাল মুস্তাকীম চেনা ও সে পথে চলা। দুই). মিথ্যা ধর্ম, মিথ্যা মতবাদ, মিথ্যা দর্শন ও মিথ্যা ধ্যানধারণার প্রচার দিয়ে। এভাবে সহজ করে জাহান্নামের পথ চলা।
ইসলামের প্রতিষ্ঠা রোধে সবচেয়ে বড় বাধাটি কোন মন্দির, গীর্জা, পতিতাপল্লী বা চোর-ডাকাতের বস্তি থেকে আসে না। সেটি আসে প্রতিটি অনৈসলামী রাষ্ট্র থেকে। এমন রাষ্ট্র অসম্ভব করে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণ ইসলাম পালন। এমন রাষ্ট্রের মূল এজেন্ডা হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিজয়কে প্রতিহত করা। তখন অসম্ভব হয় মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তার শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। এজন্যই শরিয়তের আইনে গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো অনৈসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় অংশ নেয়া এবং সে রাষ্ট্রের সুরক্ষায় সৈনিক হওয়া। যুদ্ধ এখানে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। ফলে এমন দুর্বৃত্ত-অধিকৃত রাষ্ট্রের নির্মূলের জিহাদটি হলো মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ কর্ম। তবে সে নির্মূল কর্মের মাঝে মুসলিম জীবনের মিশন শেষ হয়না। তাকে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদে নামতে হয়। এবং এ জিহাদ হলো মুসলিম জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এবং জিহাদ হলো, সেরূপ একটি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের পর সেটিকে প্রতিরক্ষা দেয়া। এরূপ জিহাদে যারা নিজেদের জান ও মালের বিনিয়োগ করে একমাত্র তারাই হলো সত্যিকার ঈমানদার -যার ঘোষণা এসেছে সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। এবং যারা সে জিহাদে থেকে দূরে থাকে -তারা হলো কাফির বা মুনাফিক। এমন মুনাফিক নবীজী (সা:)’র যুগেও ছিল। সেরূপ মুনাফিকের নমুনা হলো আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার ৩০০ সহচর।
মুসলিম বা ঈমানদার হওয়ার দাবী সূদখোর, ঘুষখোর, মদখোর, মিথ্যাবাদী এবং ফ্যাসিস্ট খুনিও করতে পারে। অথচ সুরা হুজরাতে মহান আল্লাহতায়ালার বয়ানে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয়েছে তা হলো, যার মধ্যে তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ নাই, বুঝতে হবে তার মধ্যে ঈমানও নাই। এমন বেঈমান ব্যক্তি ঈমানের দাবী করলে বুঝতে হবে সে ছদ্দবেশী মুনাফিক। এমন ব্যক্তি নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত যতই পালন করুক -তা দিয়ে কি তার মুনাফিকি দূর হয়? আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার ৩০০ সহচর তাই নবীজী (সা)’র পিছনে নামাজ পড়েও মুনাফিক হওয়া থেকে নিজেদের বাঁচতে পারিনি। তাই ইবাদত শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়া-দরুদ পালন নয়। বরং মুসলিম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলি মসজিদ ও জায়নামাজে হয় না, সেগুলি হয় মসজিদের ও জায়নামাজের বাইরে। কিন্তু সে ইবাদতে বাধা দেয়াই অনৈসলামী রাষ্ট্রগুলির মূল নীতি।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018