অপরাধীদের রাজনীতি এবং বাঙালী মুসলিমের বিপদ
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 27, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিকল যেখানে ইঞ্জিন
জাতীয় জীবনে মূল ইঞ্জিনটি হলো রাজনীতি। এ ইঞ্জিনই জাতিকে সামনে টানে। একটি জাতি কোন দিকে যাবে -সেটি দেশের ক্ষেত-খামার, ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা ও মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে নির্ধারিত হয় না। সে সিদ্ধান্তটি হয় রাজনীতির ময়দানে। রাজনীতির যিনি কর্ণধার –তিনিই দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনিই দেশের ড্রাইভার; অন্যরা যাত্রী মাত্র। তাই যারা জাতির ভাগ্য পাল্টাতে চায় তারা নিজেদের সমগ্র সামর্থ্য নিয়ে রাজনীতির অঙ্গণে লড়াইয়ে হাজির হয়। একাজ দোয়া দরুদে সম্ভব নয়। তাই মদিনায় হিজরতের প্রথম দিনেই নবীজী (সা:) নিজের ঘর না গড়ে ইসলামী রাষ্ট্র গড়ায় হাত দেন এবং রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসেন। অপর দিকে যারা জাতির পরাজয় ও পতন চায় –সে শত্রুরাও যুদ্ধে নামে রাজনীতির ড্রাইভিং সিটকে দখলে নয়ার লক্ষ্যে। তাই একটি জাতির ব্যর্থতা, বিপর্যয় ও লাগাতর নীচে নামা দেখে নিশ্চিত বলা যায় দেশের রাজনীতি সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিকদের হাতে নাই; দেশ অধিকৃত হয়েছে শত্রুপক্ষের হাতে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মূলত সেটিই ঘটেছে। ফলে জোয়ার এসেছে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও স্বৈরাচারের রাজনীতির। তাই যারা বাংলাদেশের কল্যাণ চায়, তাদের সামনে শত্রুপক্ষের অধিকৃতি মুক্তির যুদ্ধ ছাড়া ভিন্ন পথ নাই।
দেশের উন্নয়ন বা সুখ-সমৃদ্ধির জন্য জরুরী নয় যে, জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে বিপ্লব আসতে হবে। বরং বিপ্লব আনতে হয় নেতৃত্বে এবং দেশের রাজনীতিতে। রাজনীতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ পায় পথ-নির্দেশনা। পায় পথ চলায় ভিশন ও মিশন। রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে পায় উপরে উঠার অনুকরণীয় মডেল। রাজা আলেকজান্ডারের আমলে গ্রীস যখন বিশ্বশক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে তখন গ্রীসের জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তন এসেছিল দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বে। তেমনি আরবের মুসলিমগণ যখন বিশ্বের প্রধানতম শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে তখনও আরবের জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে কোন বিপ্লব আসেনি। বরং বিপ্লব এসেছিল নেতৃত্বে ও রাজনীতিতে। রাজনীতির ইঞ্জিন তখন বিস্ময়রকর গতিতে সামনে চলেছে।
রাজনীতি হলো সমাজসেবার সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। কৃষক, শ্রমিক, ডাক্তার, মসিজেদর ইমাম বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসব হয়ে এ বিশাল কাজ করা যায় না। যারা সমাজের কল্যাণে বিশাল ভূমিকা রাখতে চায় এবং চায় নিজ স্বপ্নের বাস্তবায়ন -তাদের সামনে রাজনীতির চেয়ে উত্তম কোন ক্ষেত্র নাই। মুসলিম সমাজে এ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ মহান নবী (সা:) এবং তাঁর সাহাবীগণ। রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে বসানো নবীজী (সা:)’র মহান সূন্নত। সে আসনে বসেছেন যেমন খোদ নবীজী (সা:), তেমনি নবীজী (সা:)’র ওফাতের পর বসেছেন তাঁর শ্রেষ্ঠতম সাহাবাগণ। তাঁরা ছিলেন এমন সাহাবা যারা জীবদ্দশাতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালনের পাশাপাশি যারা মহান আল্লাহতায়ালার রাস্তায় নিজের সমুদয় সামর্থ্য ও জানমাল কোরবানী করতে চায় -এ কাজটি মূলত তাদের। কিন্তু সমাজ সেবার এ সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যমটি যদি ক্ষমতালিপ্সু ও স্বার্থশিকারী দুর্বৃত্তদের হাতে হাইজ্যাক হযে যায় -তখন অনিবার্য হয়ে উঠে সে জাতির পতন ও পরাজয়। সে জাতির জীবনে বিপর্যয় আনার জন্য কি তখন কোন বিদেশী শত্রুর প্রয়োজন পড়ে? ঝাড়ুদারের কাজেও সততা লাগে, নইলে রাস্তা থেকে আবর্জনা দূর হয় না। আর রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব তো রাষ্ট্র থেকে আবর্জনারূপী দুর্বৃত্তদের নির্মূল এবং সে সাথে সুনীতির প্রতিষ্ঠা। কোরআনের ভাষায় “আমারু বিল মারুফ” এবং “নেহী আনিল মুনকার।” সে কাজে গুরুত্ব দিয়ে পবিত্র কোর’আনে নির্দেশ: “তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন একটি দল থাকতে হবে যারা কল্যাণের পথে মানুষকে ডাকবে এবং ন্যায়ের নির্দেশ দিবে ও অন্যায়ের পথ থেকে রুখবে, এবং তারাই হল সফলকাম।” -(আল-ইমরান, আয়াত ১০৪)।
উপরুক্ত আয়াতের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিম জীবনের মূল মিশনটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ধর্ম-কর্মকে নিছক নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতের মাঝে সীমিত করলে সে মিশন নিয়ে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব। সে জন্য যা অপরিহার্য হলো, মানব-সৃষ্ট সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর সকল সামর্থ্যকে কাজে লাগানো। সেটি সম্ভব হয় একমাত্র রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়েই; নইলে দখলে যায় শত্রুশক্তির হাতে। এজন্যই রাজনীতির এ জিহাদে অর্থদান, শ্রমদান, মেধাদান -এমনকি প্রাণদান সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল। অর্ধেকের বেশী সাহাবী এ পথে শহীদ হয়েছেন। অথচ বাংলাদেশের অবস্থা ভিন্নতর। দেশটির লাখ লাখ মসজিদে নামাযীর অভাব হয় না। এ দেশে বহু কোটি মানুষ রোযা রাখে। বহু হাজার মানুষ প্রতিবছর হজ্ব করে। বহু লক্ষ মানুষ প্রতিদিন কোর’আন তেলাওয়াতও করে। অথচ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলে নিজেদের সামর্থ্যের বিনিয়োগ করছে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তবে রাজনীতিতে নামাযী-রোযাদারগণ যে অংশ নিচ্ছে না -তা নয়। বরং তারাও ভোট দেয়; অর্থ দেয় এবং রাজপথে লড়াইও করে। তবে সেটি ইসলামের শরিয়তী বিধানকে বিজয়ী করতে নয়। বরং তারা বিজয়ী করে সেসব ইসলাম বিরোধী সেক্যুলারিস্টদের –যারা বিজয় চায় না ইসলামের। ফলে তাদের ভূমিকা ইসলামের সাথে গাদ্দারীর।
নবীজী(সা:)’র আমলে আজকের ন্যায় লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রসা ছিল না। কোটি কোটি নামায়ীও ছিল না। সংখ্যায় স্বল্প সংখ্যক হয়েও তাঁরা আরব ভূমি থেকে দূর্নীতি ও দুর্বৃত্তদের নির্মূল করেছিলেন। নির্মূল করেছিলেন আবু লাহাব ও আবু জেহেলদের মত ইসলাম বিরোধী নেতাদের। অথচ বাংলাদেশে ঘটেছে উল্টেটি। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের ভোটে নির্বাচিত হয় এবং তাদেরই অর্থে প্রতিপালিত হয় ইসলাম-বিরোধী সেক্যুলারিস্টগণ। এবং রাজনীতির ময়দানটি অধিকৃত হয়ে গেছে অতি দুষ্ট ও দুর্বৃত্ত চরিত্রের লোকদের হাতে। অথচ দেশে আইনের শাসন থাকলে এরূপ দুর্বৃ্ত্তদের পক্ষে নেতা হওয়া দূরে থাক, রাস্তার ঝাড়ুদার হওয়াও অসম্ভব হতো। কারণ, দূর্নীতিবাজদের দিয়ে রাস্তার আবর্জনা পরিস্কারের কাজটিও যথার্থভাবে হয় না। কারণ খুঁটে খুঁটে আবর্জনা তোলার কাজেও সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল হওয়াটি জরুরী। তাছাড়া জাতীয় জীবনে প্রকৃত আবর্জনা হলো এ দূর্নীতিবাজেরা; প্রতিটি সভ্য দেশেই আবর্জনার ন্যায় তাদেরও স্থান হয় আস্তাকুঁড়ে। দুর্বৃত্ত নির্মূলে ইসলাম অতি কঠোর ও আপোষহীন। তাই যারা চুরি করে, কোর’আনের বিধান হলো তাদের হাত কাটা। তাই যে দেশে চোরডাকাত ও ভোটডাকাতের ন্যায় দুর্বৃত্তগণ নির্মূল না হয়ে শাসন-ক্ষমতায় বসে –তখন কি বুঝতে বাঁকি থাকে দেশের মানুষ ইসলামের অনুসরণ থেকে কতটা দূরে?
দায়ী দুষ্ট রাজনীতি
বাংলাদেশের ব্যর্থতা এজন্য নয় যে, দেশটি সম্পদে দরিদ্র। বা দেশের ভূগোল বা জলবায়ু প্রতিকুল। ব্যর্থতার জন্য মূলত দায়ী দেশের দুষ্ট রাজনীতি। গাড়ি না চললে -সে জন্য ইঞ্জিন বা চালক দায়ী, গাড়ির বগি বা যাত্রীগণ নয়। তখন বুঝা যায়, রাজনীতির ইঞ্জিনটি মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত পথ বেয়ে এগুচ্ছে না। প্রদর্শিত সে পথটি হলো সিরাতুল মোস্তাকিম -যা দেখানো হয়েছে পবিত্র কোর’আন ও নবীজী (সা:)’র সূন্নতে। সিরাতুল মোস্তাকিম শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও ইবাদত-বন্দেগীর পথই দেখায় না। দেখায় সঠিক রাজনীতি, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির পথও। আল্লাহর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ না করে রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবারে শান্তি আসবে এরূপ বিশ্বাস করাই তো কুফরি তথা ঈমান-বিরুদ্ধ। এটি শিরক। এমন বিশ্বাস নিয়ে কি কেউ মুসলিম থাকতে পারে? আল্লাহর প্রদর্শিত পথ তথা ইসলাম ছাড়াই শান্তি ও সমৃদ্ধি সম্ভব হলে তো ইসলামের প্রয়োজনই ফুরিয়ে যায়। অথচ তেমন একটি ইসলাম বিরোধী চেতনার প্রতিফলন ঘটছে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও আইন-আদালতে। এ ক্ষেত্রগুলোতে ইসলামের প্রয়োজনই অনুভব করা হচ্ছে না। ইসলাম সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে মসজিদ-মাদ্রাসা ও কিছু পরিবারে। এবং রাষ্ট্রের বাঁকি এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে সূদ, জুয়া, মদ, পতিতাবৃত্তি, ব্যভিচার, ঘুষ, চুরি-ডাকাতি ও সন্ত্রাসের ন্যায় নানাবিধ হারাম কাজে।
ইসলামের আগমন শুধু ব্যক্তি জীবনের পরিশুদ্ধির লক্ষ্যে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধির লক্ষ্যেও। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধি ছাড়া কি পরিশুদ্ধ মানব গড়া যায়? সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবেশ যদি পাপের জোয়ারে প্লাবিত হয়, তবে কি কোন মানব শিশু সিরাতুল মুস্তাকীম পায়? সে তো তখন সে জোয়ারে ভাসতে থাকে। মহান নবীজী (সা:)’র হাদিস: প্রত্যেক মানব শিশুর জন্ম হয় মুসলিম রূপে। কিন্তু সে ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে হয়ে অমুসলিম হয় (পারিবারীক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়) পরিবেশের প্রভাবে। কোন শিশুই তার পরিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সামর্থ্য নিয়ে জন্ম নেয় না। যারা নবেল প্রাইজ পায় সে সামর্থ্য এমন কি তাদের প্রবীন বয়সেও সৃষ্টি হয়না। সে সামর্থ্য অর্জিত হয় একটি বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এজন্য চাই, ওহীর তথা কোর’আনের জ্ঞান। তাই কোন শিশুকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচাতে হলে তাকে শুধু পানাহার দিলে চলে না; জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতার অন্ধকার পরিবেশ থেকে মুক্তি দিতে হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র অন্ধকারাচ্ছন্ন হলো সিরাতুল মুস্তাকীম পায় না এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগণও। তাই সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল হলো, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াত-মুক্ত করা। রাষ্ট্রের শক্তিশালী অবকাঠামো কোর’আনের জ্ঞানে অজ্ঞ সেক্যুলারিস্টদের হাতে অধিকৃত রেখে কি রাষ্ট্র বা সামাজের পরিবেশকে জাহিলিয়াত-মুক্ত করা যায়? সেটি অসম্ভব বলেই মহান নবীজী (সা) তাঁর কর্মের পরিধি মসজিদ নির্মাণ ও কোর’আনের জ্ঞান বিতরণের মাঝে সীমিত রাখেননি। বরং তিনি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন এবং নিজে সে রাষ্ট্রপ্রধান রূপে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দুর্বৃত্তদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হওয়ার বিপদ
মানব জীবনের সবচেয়ে বড় নাশকতাটি মহামারি, ভূমিকম্প বা ঘুর্ণিঝড়ে ঘটে না। সেটি ঘটে অপরাধীদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে। মহামারি, ভূমিকম্প ও ঘুর্ণিঝড়ে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও রাজনীতি পাল্টে যায় না। অথচ দুর্বৃত্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রের ড্রাইভিং সিটে বসলে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলি তখন জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার বাহনে পরিণত হয়। একটি বাসের সকল যাত্রী মাতাল হলেও তাদের সঠিক গন্তব্যস্থলে পৌঁছে -যদি চালক সুস্থ্য হয় এবং জ্ঞান রাখে সঠিক পথের। কিন্তু চালক নিজেই যদি মাতাল বা অজ্ঞ হয় তবে সকল যাত্রীর দোয়াদরুদে কোন লাভ হয় না। ভূল পথে চলাটি তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। এজন্যই ইসলামে শ্রেষ্ঠ নেক কর্মটি মসজিদ বা মাদ্রাসা নির্মাণ নয়, বরং সেটি হলো রাষ্ট্রকে অনৈসলামিক শক্তির হাত থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্র নায়কের আসনে ঈমানদার ব্যক্তিকে বসানো। বাংলাদেশীদের জন্য বিপদের বড় কারণ, দেশটি অধিকৃত হয়েছে ভয়ানক অপরাধীদের হাতে। এ অপরাধজীবী দুর্বৃত্তদের নাই পবিত্র কোর’আনের তথা সিরাতুল মুস্তাকীমের জ্ঞান। তাদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হওয়ায় রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে জনগণকে পথভ্রষ্ট করার হাতিয়ারে। ফলে ভ্রষ্ট্তা বাড়ছে শুধু শিশুদের নয়, বয়স্কদেরও। শিক্ষা ও সংস্কৃতির নামে সোসল ইঞ্জিনীয়ারিং হচ্ছে জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে। মৌলবাদ বলে পরিহার করা হচ্ছে ইসলামের শরিয়তী বিধানকে।
ইসলামের প্রতি ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তদের আচরনকে শুধু ভ্রষ্টতা বললে ভূল হবে, বরং এটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে পূর্ণ বিদ্রোহ। আর সে বিদ্রোহই প্রবল ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। মুষ্টিমেয় কিছু ইসলামি দল ছাড়া দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো আল্লাহর প্রদর্শিত সে সিরাতুল মোস্তাকিমের অনুসরণ দূরে থাক, সেটির প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না। আল্লাহর বিরুদ্ধে এটি হলো সীমাহীন ঔদ্ধত্য। এমন আচরণের তুলনা চলে সুবিজ্ঞ চিকিৎস্যকের দেওয়া প্রেসক্রিপশনের বিরুদ্ধে মরনাপন্ন রোগীর ঔদ্ধত্যের সাথে। এরাই রাজনীতিকে পরিণত করেছে খুন, গুম, লুট, ধর্ষণ, সন্ত্রাস এবং নানাবিধ অপরাধের হাতিয়ারে। মশা-মাছি যেমন রোগের বিস্তার ঘটায়, দুর্বৃত্তগণও তেমনি দুর্বৃত্তায়ন ঘটায় দেশ জুড়ে। এরই ফলে রাজনৈতিক দলের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী, সামরিক বাহিনীর শত শত অফিসার, হাজার হাজার সরকারি আমলা, বহু হাজার ধনি ব্যবসায়ী এবং বিপুল সংখ্যক ধর্মব্যবসায়ী পরিণত হয়েছে সার্বক্ষণিক অপরাধজীবীতে। দেশের সকল ডাকাত দলে বা সন্তাসী বাহিনীতে এতো দুর্বৃত্তের সমাবেশ ঘটেনি যা ঘটেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। দুর্বত্তদের যারা যত বেশী দলে ভেড়াতে পারে -তারাই রাজনীতিতে বেশী প্রভাবশালী ও প্রতাপশালী। রাজনীতির নামে রাস্তায় লগিবৈঠা দিয়ে পিঠিয়ে মানুষ হত্যা বা যাত্রীভর্তি বাসে আগুণ দেওয়া – রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কোন অপরাধই নয়। বরং ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে সেটিকে তারা অপরিহার্য মনে করে। বাংলাদেশের ইতিহাস এমন বীভৎস অপরাধ কর্মে ভরপুর। খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে এমনকি সংসদেও। গণতন্ত্রের নামে দেশে বার বার নির্বাচন হয়; কিন্ত মিথ্যা ওয়াদা ও ধোকাবাজীর উপর যে দেশে নিয়ন্ত্রণ নেই, সে দেশে দুর্বৃত্তদের কি নির্বাচনে পরাজিত করা যায়? নির্বাচন বরং তাদের সামনে ক্ষমতা দখলে রাস্তা খুলে দেয়।
নির্বাচন পরিণত হয়েছে নাশকতার আরেক সফল হাতিয়ারে। ডাকাতি হয় ব্যালটের উপর। এবং বিজয়ী হয় ভোট-ডাকাতেরা। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ভোটডাকাতেরা দখলে নেয় দেশের প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, আইন-আদালত ও মিডিয়াসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ফলে বাংলাদেশে বার বার নির্বাচন হলেও শোষন, লুটপাঠ, দুবৃত্তি ও দূর্নীতি থেকে দেশবাসীর মূক্তি মিলছে না। বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। অপরাধজীবিদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে বিপর্যয় শুরু হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র জুড়ে। জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ইস্যু তাই রাজনীতির ময়দান থেকে পথভ্রষ্টদের নির্মূল। ইসলামে এটিই পবিত্র জিহাদ। নবীজী (সা:)’র আমলে মুসলিমদের সবচেয়ে বেশী কোরবানী পেশ করতে হয়েছে রাজনীতির ময়দানের আবর্জনা সরাতে। সেদিন সে কাজে বড় বাধা রূপে খাড়া হয়েছিল আবু লাহাব, আবু জেহলের মত দুর্বৃত্ত নেতারা। এসব দুর্বৃত্তদের নির্মূলে মুসলিমদের যত রক্তক্ষয় হয়েছে তা নামায-রোয়া, হজ্ব-যাকাত বা অন্য কোন বিধান প্রতিষ্ঠা দিতে হয়নি।
সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি মানব উন্নয়নে
রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা এজেন্ডা কি? সেটি কি শুধু সরকার পরিবর্তন? সেটি কি নিছক নির্বাচন? লক্ষ্য কি শুধু রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ও কলকারাখানা নির্মাণ? পণ্য বা মানব রপ্তানীতে বৃদ্ধি আনা? বাংলাদেশে এ অবধি নির্বাচন ও সে সাথে সরকার পরিবর্তন হয়েছে বহুবার। নানা দল নানা এজেন্ডা নিয়ে ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু দেশ কতটুকু সামনে এগিয়েছে? জনগণের জীবনে উচ্চতর মানবিক মূল্যবোধই বা কতটুকু প্রতিষ্ঠা পেয়েছে? তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এ জন্য দরিদ্র নয় যে, সেখানে সম্পদের অভাব। বরং দারিদ্র্যের কারণ, তারা যেমন ব্যর্থ নিজেদের মূল্য বাড়াতে, তেমনি ব্যর্থ খনিজ বা প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য বাড়াতে। এটিই তাদের সবচেয়ে বড় অক্ষমতা। একটি দেশের প্রাচুর্য্য তো বাড়ে সে দেশে মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর কতটুকু মূল্য সংযোজন হলো তার উপর। তাই উন্নয়ন বাড়াতে হলে মূল্য বাড়াতে হয়। পাট, তূলা, চা, কফি, তেল, গ্যাস, তামা, কপার, ইউরেনিয়াম, বক্সাইট, টিনের ন্যায় অধিকাংশ কৃষি ও খনিজ সম্পদের উৎস হলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। কিন্তু এ সম্পদের কারণে বেশী লাভবান হচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো। কারণ, এসব কৃষি ও খণিজ সম্পদের উপর সিংহভাগ মূল্য সংযোজন হয় পাশ্চাত্য দেশগুলির কারখানায়। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো রয়ে গেছে কাঁচামাল বা খনিজ সম্পদের জোগানদার রূপে। তাই যারা উন্নয়ন চায় -তারা বিদ্যালয় ও কারখানা গড়ে। বিদ্যালয় মূল্য বাড়ায় মানব সন্তানের; এবং কারখানা মূল্য বাড়ায় পণ্যের।
বাংলাদেশে সবচেয়ে ব্যর্থ খাতটি মানব উন্নয়নের খাত। জাতি তখনই সবচেয়ে বেশী লাভবান হয় যখন মূল্য সংযোজন হয় মানুষের উপর। কারণ, মানুষই হলো আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তেলের বা সোনার মূল্য হাজারো গুণ বাড়লেও সেটি কি গুণবান ও সৃষ্টিশীল মানুষের সমান হতে পারে? মানুষের উপর মূল্য সংযোজন হলে সে মানুষটি মহৎ গুণে বেড়ে উঠে। তখন সে মানুষটি মূল্য বাড়ায় প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের উপরও। কম্পুউটির বিজ্ঞানী বিল গেটসের উৎপাদন ক্ষমতা কি কোন তেলের খনির চেয়ে কম? শিক্ষাখাত ব্যর্থ হলে বিল গেটসগণ অনাবিস্কৃত থেকে যায়। এজন্যই শিল্পোন্নত দেশগুলোর শিক্ষাখাতে তথা মানব সম্পদের উন্নয়নে বিনিয়োগটি বিশাল। মানুষের মূল্য বৃদ্ধি বা গুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বা উদ্যোগ নেওয়া এজন্যই ইসলামে এতো গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার সওয়াব এজন্যই এতো বেশী। কারণ, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজই হলো মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যবৃদ্ধি তথা মহত্তর গুণ নিয়ে বেড়ে উঠায় সহায়তা দেওয়া। তাদের কারণে সমাজ ও রাষ্ট্র তখন বহুগুণে সমৃদ্ধ হয়। এমন রাষ্ট্রের বুকেই নির্মিত হয় উচ্চতর সভ্যতা। মানুষ গড়ার এ মহান কাজটিই এ জন্যই তো মুসলিম রাজনীতির মূল এজেন্ডা। তখন রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়, মানুষকে জান্নাতের যোগ্য করে গড়ে তোলা। এমন মানুষের গুণেই ইসলামী রাষ্ট্রের বুকে আল্লাহর সাহায্য ও শান্তি নেমে আসে। নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে তো সেটিই হয়েছিল। ইসলামে এমন রাজনীতি তাই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটিই শুরু থেকেই হয়নি। এজন্যই দেশটি তার ইতিহাসে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি ও সর্বাধিক দূর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র রূপে।
মুসলিমের এজেন্ডা ও অমুসলিমের এজেন্ডা
রাজনীতির মূল ইস্যুটি নির্ধারিত হয় জনগণের ধর্ম, জীবনদর্শন, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজন থেকে। তাই পূঁজিবাদী ও সমাজবাদী দেশের রাজনৈতিক এজেন্ডা কখনোই এক হয় না। তেমনি এক হয় না মুসলিম ও অমুসলিম দেশের রাজনৈতিক এজেন্ডা। ব্যক্তির মনের গভীরে লালিত আদর্শ বা বিশ্বাস শুধু তার ধর্ম-কর্ম, ইবাদত-বন্দেগী, খাদ্য-পানীয়ের ব্যাপারেই নিয়ম বেঁধে দেয় না, নির্ধারিত করে দেয় জীবনের মূল এজেন্ডাও। তা থেকেই নির্ধারিত হয় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচী। তাই আরবের কাফেরদের এজেন্ডা ও মুসলিমদের এজেন্ডা কখনোই এক ছিল না। মুসলিম যখন বিজয়ী হয় তখন সমাজ থেকে শুধু মূর্তিগুলোই অপসারিত হয়নি। অপসারিত হয়েছিল তাদের প্রচলিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ। কারণ, একটি মুসলিম সমাজ কখনই অমুসলিম বা সেক্যুলার মূল্যবোধের অধীনে গড়ে উঠতে পারে না। যেমন প্লেনের ইঞ্জিন নিয়ে কোন রেল গাড়ী সামনে এগুতে পারে না। রাজনীতি যেমন জাতির ইঞ্জিন, তেমনি সে ইঞ্জিনের জ্বালানী হলো জনগণের চেতনায় লালিত দর্শন। মুসলিমদের ক্ষেত্রে সেটি হলো পবিত্র কোর’আন।
যে রাজনীতিতে উচ্চতর দর্শন নেই, সে রাজনীতিতে ইচ্ছা ও এজেন্ডা থাকে না উচ্চতর ও মহত্তর লক্ষ্যে চলার। তখন নেমে আসে জগদ্দল পাথরের ন্যায় স্থবিরতা। স্রোতহীন জলাশয়ে যেমন মশামাছি বাড়ে, তেমনি দর্শন-শূণ্য স্থবির রাজনীতিতে বৃদ্ধি ঘটে দর্শনশূণ্য দুর্বৃত্ত কীটদের। সেটিরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ। নবীজী(সা:)’র আমলে আরবের স্থবির ও পাপাচার-পূর্ণ জীবনে মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যে প্রচন্ড বিপ্লব ও গতি সৃষ্টি হয়েছিল তার কারণ, রাজনীতির ইঞ্জিন তখন আল্লাহপ্রদত্ত দর্শন পেয়েছিল। চালকের পদে বসেছিলেন মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানবগণ। অথচ সে প্রচন্ড শক্তি থেকে দারুন ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের আজকের রাজনীতি। কারণ, বাংলাদেশের ড্রাইভিং সিটে বসে স্বৈরাচারি চোর-ডাকাত ও ভোট-ডাকাতগণ। দেশটির রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অঙ্গনে ইসলাম ও আল্লাহর নাম নেওয়া তাদের কাছে সাম্প্রদায়ীকতা। তাদের দাবী, রাজনীতিতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করার। স্বৈরাচারি আওয়ামী-বাকশালী আমলে নিষিদ্ধ হয়েছিল ইসলামের নামে রাজনীতির সে মৌলিক নাগরিক অধিকার। সরকারি মহলে নিষিদ্ধ হয়েছিল বিসমিল্লাহ। অপসারিত হয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রোম থেকে কোর’আনের বানী ও মহান আল্লাহতায়ালার নাম। এভাবেই দর্শনশূণ্য এবং সে সাথে ইসলাশূণ্য হয়েছিল মুজিবামলের রাজনীতি। এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মুজিব-পূজা ও পূজাজীবীরা। ফল দাঁড়িয়েছিল, সবচেযে বড় ও দ্রুত ধ্বংস নেমেছিল নীতি-নৈতিকতা, আইন-শৃঙ্খলা ও অর্থনীতিতে। সৃষ্টি হয়েছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ -যাতে প্রাণ হারিয়েছিল বহু লক্ষ মানুষ। এবং বিলুপ্ত হয়েছিল দেশের স্বাধীনতা, মানবতা ও ন্যূনতম মানবিক অধিকার। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের পায়ের তলায় পিষ্ট হযেছিল দেশের সার্বভৌমত্ব। এবং গণতন্ত্র ও মানবতার কবরের উপর প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মুজিবের এক দলীয় বাকশালী স্বৈরাচার।
লক্ষ্য: ইসলামকে পরাজিত রাখা
মুজিবামলের ন্যায় আবার দাবী উঠেছে, রাজনীতিতে ইসলাম নিষিদ্ধ করার। এ দাবী উঠানোর হেতু কি? কারণ একটিই, তা হলো বাংলাদেশকে নীচে নামানোর কাজকে আবার তীব্রতর করা। শয়তান সেটিই চায়। ইসলামী দর্শন, আইন ও মূল্যবোধের পরাজয়ের মধ্যেই তাদের আনন্দ। রাজনীতির ইঞ্জিনকে দর্শনশূণ্য করাই তাদের মূল লক্ষ্য। বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের প্রভু ভারতও সেটিই চায়। সত্তরের দশকেও মুজিব সেটিই করেছিল। দাবীটি আজও এসেছে সেই একই আওয়ামী বাকশালীদের পক্ষ থেকে। কারণ, প্রচন্ড ইসলামী ভীতি। ভয়ের কারণ, বাংলাদেশের ৯১% ভাগ মানুষ মুসলিম। আরো কারণ, দেশটিতে দ্রুত ভাবে বাড়ছে ইসলামী জ্ঞানচর্চা এবং সে সাথে নতুন প্রজন্মের মনে প্রবলতর হচ্ছে ইসলামী চেতনা। বাড়ছে ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক শক্তি।
ইসলামের বিজয় মানেই শরিয়তের প্রতিষ্ঠাসহ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে ইসলামী বিধানের পূর্ণ-প্রয়োগ। এবং সে সাথে সেক্যুলার মূল্যবোধ ও রীতি-নীতির বিলুপ্তি। তখন রাজনৈতিক পরাজয় ঘটে ইসলাম-বিরোধী শক্তির। নিজেদের জন্য এমন একটি পরাজয় বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ মেনে নিতে রাজী নয়। তাই সেরূপ অবস্থা সৃষ্টির আগেই ইসলামপন্থীদের সংগঠিত হওয়াকে তারা নিষিদ্ধ করতে চায়। আর সংগঠিত হতে না পারলে ইসলামপন্থীগণ লড়াই করবেই বা কি করে? একাকী কারো পক্ষেই বড় কিছু করা সম্ভব নয়। রাজনীতির ক্ষেত্রে তো নয়ই। তখন ইসলামের শত্রুদের পক্ষে সহজেই সম্ভব হবে দেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে নিজেদের বিজয়ী অবস্থানকে ধরে রাখা। এজন্যই তাদের মুখে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নির্মূলের ধ্বনি। এমন একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে বিগত ১৪ শত বছর ধরেই দেশে দেশ কাজ করছে ইসলামের চিহ্নিত দূষমনগণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের ন্যায় শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিমের দেশে ইসলামের এমন শত্রুগণ বিজয় পায় কি করে? যেখানে ইসলামের পরাজয়, সেখানেই কি পরাজয় নয় বাঙালী মুসলিমের? এমন একটি পরাজয় মেনে নিলে কি মুসলিম থাকা যায়? বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি কি কম আত্মঘাতী? ১ম সংস্করণ ২৫/১০/২০০৮; ২য় সংস্করণ ২৭/০২/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018