অপরাধীদের রাজনীতি ও ভোটডাকাতির নির্বাচন
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 25, 2018
- বাংলাদেশ
- No Comments.
বাংলাদেশে অপরাধীদের বিচরন শুধু সন্ত্রাস, চুরিডাকাতি, খুণ-গুম বা ব্যভিচারীতে নয়, বরং পুলিশ, প্রশাসন, আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে। বস্তুতঃ সমগ্র দেশ অধিকৃত তাদের হাতে। অপরাধীদের সবচেয়ে বড় ভীড়টি দেশের রাজনীতিতে। বিশেষ করে সরকারি দলে। রাজনীতি এখন আর নিঃস্বার্থ জনসেবার হাতিয়ার নয়, ব্যবহৃত হচ্ছে হীন স্বার্থ শিকারের অস্ত্র রূপে। হিংস্র জীব যেমন শিকার শেষে বনে গিয়ে আশ্রয় নেয়, তেমনি দুর্বৃত্ত অপরাধীগণও নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে বা কৃত অপরাধের শাস্তি এড়াতে সরকারি দলের রাজনীতিতে যোগ দেয়। অফিস-আদালত, সেনানিবাস, হাট-বাজার বা লোকালয়ে অপরাধ কর্ম সংঘটিত হলে সেটির তবুও বিচারের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু রাজনীতিতে সে সম্ভাবনা নেই। কারণ, আদালত, সেক্রেটারিয়েট, ডাকাতপাড়া বা পথে ঘাটে দুষ্কর্মে লিপ্ত কোন অপরাধীকে পুলিশ ধরলে তার পক্ষে মিছিল হয় না, লগি বৈঠা নিয়ে তাকে বাঁচাতে কেউ যুদ্ধ শুরু করে না। অথচ কোন দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাকে দূর্নীতি বা কোন বিদেশী শক্তির গুপ্তচর বা এজেন্ট হওয়ার গুরুতর অভিযোগে হাতে নাতে ধরলেও তার বিচার করা অসম্ভব। বিচারের আগেই অপরাধী নেতাকে নির্দোষ ঘোষনা দেওয়া হয় রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে। এবং সে নেতার বিরুদ্ধে বিচারের যে কোন উদ্যোগকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আখ্যা দিয়ে সরকার ও বিচারকদেরই উল্টো রাজপথে লাঠি দেখানো হয়।
পাকিস্তান আমলে তাই শেখ মুজিব এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁর সাথীদের বিচার করা সম্ভব হয়নি। অথচ অভিযুক্তরা যে ভারতকে সাথে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল তা নিয়ে এখন আর কোন বিতর্ক নেই। বরং সে ষড়যন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্টতা এখন গণ্য হচ্ছে আত্ম-গরিমার বিষয় রূপে। অথচ দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে শত্রুদেশের সাথে মিলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া যে কোন সভ্য দেশেই মৃত্যদন্ড বা যাবজ্জীবন কারদন্ড হওয়ার মত মারাত্মক অপরাধ। বাংলাদেশের বহু লোকের কাছে আগরতলা ষড়যন্ত্রটি যত গৌরবময় কর্ম রূপেই গণ হোক না কেন, পাকিস্তান সরকারের কাছে সেটি ছিল দেশোদ্রোহ-মূলক জঘন্য অপরাধ। ভারত বা অন্য যে কোন দেশে এরূপ ষড়যন্ত্র হলে সেখানেও এটাকে ভিন্ন ভাবে দেখা হত না। কিন্তু পাকিস্তান সরকার সে অপরাধের বিচার করতে পারিনি। পাকিস্তানের আদালত শেখ মুজিবকে কাঠগড়ায় তুলেছিল ঠিকই কিন্তু বিচারের কাজ শেষ করতে পারিনি। আগরতলা ষড়যন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্টতা শেখ মুজিবকে কোন শাস্তি দেওয়া দূরে থাক, সেটিই তাকে হিরো বানিয়ে দেয়।
অর্থহরণ, নারীহরণ, দস্যূবৃত্তি ও দেশের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি যে কোন সমাজেই জঘন্য অপরাধ। তবে বড় অপরাধ হলো, জনগণের ভোটের অধিকার তথা মত-প্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকারের ন্যায় মৌলিক মানবিক অধিকারগুলি ছিনিয়ে নেয়া। সে অপরাধের প্রধান আসামী হলো শেখ হাসিনা নিজে। বাংলাদেশে সে অপরাধটি সবার চোখের সামনে সংঘটিত হয়েছে ১৯১৪ সালের নির্বাচনে। ১৫৩ সিটে কোন নির্বাচনই হয়নি। যে সব সিটে নির্বাচন হয়েছিল সে সব সিটে শতকরা ৫ জনও ভোট দেয়নি। ভোট অতি মূল্যবান সম্পদ এটি। ভোট লুন্ঠিত হলে তাতে লুন্ঠিত হয় ব্যক্তির মানবিক পরিচিতি ও মর্যাদা। এ অধিকার অর্জনে রাষ্ট্রে বিশাল বিপ্লব আনতে হয়। মানুষ উপার্জন বাড়ায়, উন্নত সমাজ গড়ে এবং সভ্য রাষ্ট্র নির্মান করে তো সে মানবিক মর্যাদা বা অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে। মানবতার মূল শত্রু হলো তারাই যারা মানুষের স্বাধীন মানুষ রূপে মানুষের বাঁচার সে অধিকারই ছিনিয়ে নেয়। এ অপরাধ হলো সমগ্র দেশবাসীর বিরুদ্ধে। ডাকাত দলের হামলায় কিছু লোকের ক্ষতি হলেও তাতে সমগ্র জাতি পিছিয়ে পড়ে না। কিন্তু স্বৈরাচারি শাসকেরা বিপর্যয় ডেকে আনে সমগ্র জাতির জীবনে। এরাই মানর ইতিহাসের বড় ডাকাত। মানব জাতির যত ক্ষতি এসব দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারিদের হাতে হয়েছে তা চোর-ডাকাতদের হাতে হয়নি। যে কোন সভ্যদেশে সামরিক ক্যু ও সরকার বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকার হনন এ জন্যই অতি গুরুতর অপরাধ। এতে সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মানের মূল লক্ষ্যই ব্যহত হয়ে যায়। দেশ তখন পরিণত হয় কারাগারে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি অপরাধীদের অভয় অরণ্য হওয়ায় এমন অপরাধ কোন অপরাধই নয়।
শেখ মুজিব গণতন্ত্র হরণ করেছেন, সকল বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করেছেন, সকল সরকার-বিরোধী পত্রিকার দফতরে তালা ঝুলিয়েছেন। তার আমলে নিহত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক কর্মী। কোন কোন হত্যার পর প্রচন্ড দম্ভ দেখিয়েছেন শেখ মুজিব স্বয়ং নিজে। এমন কুরুচি কোন সভ্য মানুষের থাকে না। অথচ বন্দী সিরাজ সিকদারকে পুলিশি হেফাজতে হত্যা করার পর পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” বলে উল্লাস করেছেন। কাউকে বিনাবিচারে হত্যা করার অধিকার কোন ব্যক্তি বা সরকারেরই থাকে না। শেখ মুজিবেরও ছিল না। কিন্ত্র আওয়ামী লীগ শাসনামলে কারাধীন অবস্থায় শুধু সিরাজ সিকদারকেই হত্যা করা হয়নি, প্রাণ হারিয়েছেন মুসলিম লীগ সভাপতি জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরি। শেখ মুজিবের দলীয় ক্যাডারদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত হয়েছেন নেজামে ইসলামী নেতা মৌলভী ফরিদ আহম্মদসহ আরো অনেকে।
অপরাধ কর্ম প্রতি সভ্য বা অসভ্য সব সমাজেই ঘটে। তবে সভ্য সমাজের বৈশিষ্ঠ হলো সে সমাজে অপরাধের বিচার হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। অথচ অসভ্য সমাজে সেটি হয় না। এভাবেই ফুটে উঠে সভ্য সমাজ থেকে অসভ্য সমাজের পার্থক্য। অপরাধীর বিচারে সর্বপ্রথম যেটি জরুরী, সেটি হলো অপরাধকে ঘৃণা করা সামর্থ্য। এবং সে সাথে অপরাধীকে নিছক অপরাধী হিসাবে দেখা। বিচারের আগে কে কোন দলের, কে কোন ভাষা বা বর্ণের অপরাধীর সে পরিচয়টি গুরুত্ব পেলে সুবিচারই অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই সুবিচারের সামর্থ সবার থাকে না। এ জন্য চাই মানসিক, চারিত্রিক ও নৈতিক সুস্থ্যতা। স্বৈরাচারি শাসক, দুর্বৃত্ত বিচাররক, আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী, ঔপনিবেশিক লুটেরাদের সে সামর্থ থাকে না। তারা তো নিজেরাই ঘৃন্য অপরাধের নায়ক। তারা বরং ন্যয় বিচারকেই অসম্ভব করে তোলে। এরা শুধু প্রশাসন ও রাজনীতিকেই দখলে নেয় না, দখলে নেয় দেশের আদালতকেও। তাদের অন্যায় কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষকেই তারা রাজনৈতিক শত্রু জ্ঞান করে এবং বিচার ছাড়াই তাদের হত্যা করে। সে হত্যাকে জাযেজ করার জন্য তারা বড়জোর আদালতের নামে মেঠো আদালত বসায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা সে দেশের কালো ও রেড ইন্ডিয়ানদের নির্মূলকে জায়েজ করার জন্য সে দেশে বহু হাজার মেঠো আদালত বসিয়েছে। একই মানসিকতার কারণে বাংলার মসলিন শিল্পের তাঁতীরা ঔপনিবেশিক ইংরেজদের কাছে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হয়েছে। তাদের সে অপরাধে হাতের আঙ্গুলও কাটা হয়েছে। দেশের শাসনক্ষমতা অপরাধীদের হাতে গেলে ন্যায় বিচার যে কতটা অসম্ভব হয়ে পড়ে এ হলো তার সামান্য নমুনা।
একই রূপ অবস্থা শেখ মুজিব ও তার অনুসারি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-বুদ্ধিজীবীদের। আওয়ামী লীগ তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে সুবিচার প্রতিষ্ঠার বদলে সর্বপ্রথম তার নিজদলের শত শত নেতা-কর্মীদের উপর থেকে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে বহু মামলা ছিল খুণের মামলা। সে সাথে মামলার বন্যা শুরু হয়েছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। একই রূপ ঘটনা ঘটেছে সত্তরের দশকে আওয়ামী শাসনামলে। বহু হাজার বিহারী, হাজার হাজার রাজাকার , শত শত আলেম ও বহু হাজার বামপন্থি কর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। লুন্ঠিত হয়েছে তাদের ঘরবাড়ি ও সহায়সম্পদ। লুন্ঠিত হয়েছে রিলিফের মাল। অপরাধ কর্মের প্রচন্ড প্লাবন শুরু হয়েছিল মুজিব আমলে। কিন্তু শেখ মুজিব ও তাঁর স্বৈরাচারি সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থাই নেয়নি।
সন্ত্রাসী অপরাধীদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে জিম্মি হয় জনগণ। এবং সে জিম্মিদশার অর্থ নিরেট বন্ধিদশা। তখন সমগ্র দেশ পরিণত হয় জেলখানায়। জিম্মিদের কথা বলার অধিকার থাকে না। স্বাধীন মত প্রকাশ ও মিছিল-মিটিংয়ের অধিকারও থাকে না। জিম্মিদের তখন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সামনে মাথা নিচু করে থাকতে হয়। দল গড়া, মুক্ত রাজনীতি ও ভোটদানের অধিকারও থাকে না। সেটি যেমন একদলীয় বাকশালী রাজনীতির প্রবর্তক মুজিব দেয়নি, তেমনি সে বাকশালী রাজনীতির সেবক শেখ হাসিনাও দিচ্ছে না। শেখ হাসিনার পিতা বিরোধী দলগুলো নিষিদ্ধ করেছিলেন। হত্যা করেছিলেন ৩০ হাজার নেতাকর্মীদের। একই পথ ধরেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলো নিষিদ্ধ না করে বিলুপ্ত করেছেন তাদের রাজনীতি। এবং হত্যা, গুম ও ফাঁসির মঞ্চে হাজির করছেন বিরোধী দলীয় নেতাদের।
চোর-ডাকাতদেরও শখ হয় ভদ্রলোক সাজার। সে শখ পূরণে ডাকাতির মাল থেকে তারাও দান খয়রাত করে। ভদ্র লেবাসও পড়ে। তাই অতিশয় নৃশংস স্বৈরাচারিরও শখ হয় গণতন্ত্রি সাজার। ঘটা করে তারাও নির্বাচনের আয়োজন করে। মিশরের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবুল ফাতাহ সিসি এবং সিরিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের ন্যায় নৃশংস স্বৈরাচারি শাসকেরাও তাই ইমেজ বাড়াতে নির্বাচনের আয়োজন করে। সে সব নির্বাচনের লক্ষ্য, বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়টি সুনিশ্চিত করা। একই কারণে মুজিব গণতন্ত্র হত্যা করলেও নির্বাচনের আয়োজন করতো। হাসিনাও তেমনি ২০১৪ সালে নির্বাচন আয়োজন করেছিল। এবং তেমন একটি নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরেও হতে হচ্ছে। দেহ পাক-পবিত্র না হলে নামায হয় না। তেমনি গণতন্ত্র ছাড়া নির্বাচন হয় না। নির্বাচনের নামে যা হয় তা হলো নিবিড় ভোটডাকাতি। গণতান্ত্রিক অধিকার যে সরকারি দলের হাতে কতটা পদদলীত সেটি বুঝা যায়, নির্বাচনী প্রচার কালে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দলে দলে গ্রেফতার করা থেকে। দেশের পুলিশ বাহিনী পরিণত হয়েছে সরকারী দলের গুণ্ডা বাহিনীতে। এ বিশাল সরকারি গুণ্ডাবাহিনীর হাতে আগামী নির্বাচন যে আরেকটি ভোটডাকাতির নির্বাচন হবে -তা নিয়ে কি তাই সন্দেহ থাকে? ২০/১২/১৮
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018