অর্জিত হচ্ছে কি মাহে রামাদ্বানের রহমত?
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 8, 2021
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
কোথায় সে রহমত প্রাপ্তি?
বছর ঘুরে প্রতি বছর আসে মাহে রামাদ্বান। এটি রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। পবিত্র এ মাসটিতে কোটি কোটি মানুষ রোযা রাখে, তারাবীহ নামায পড়ে এবং বিস্তর নফল ইবাদতও করে। কানায় কানায় পূর্ণ হয় প্রায় প্রতিটি মসজিদ। তেলাওয়াত করা হয় সমগ্র কোর’আন। মোনাজাতে চোখের পানিও ফেলা হয়। একবছর-দুইবছর নয়, প্রতি বছর আসছে এ পবিত্র মাস। প্রতি বছর একই ভাবে রোযা, ইফতারি, তারাবীহ, লায়লাতুল ক্বদর -সবই পালিত হচ্ছে। লক্ষ্য, মহান আল্লাহতায়ালার রহমত লাভ। যারা তাঁর ইবাদত করে -তাদের জন্য সে রহমত প্রতিশ্রুতও। পবিত্র কোর’আনে সে প্রতিশ্রুতের কথা বার বার শোনানো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কতটুকু অর্জিত হচ্ছে মহান করুণাময়ের পক্ষ থেকে রহমত? রহমতের আলামত কি এই, মুসলিমগণ কাফেরদের হাতে দেশে দেশে পরাজিত, লাঞ্ছিত ও অত্যাচারিত হবে? লাখে লাখে খুন হবে এবং লুন্ঠিত হবে তাদের আজাদী? অধিকৃত হবে দেশ? মুসলিম শহরগুলো মাটির সাথে মিশে যাবে? হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন ও নিজ ভিটাবাড়ি থেকে উচ্ছেদের মুখে পড়বে জনগণ? এ পরাজয় ও গ্লানি শুধু ফিলিস্তিন, সিরিয়া, আফগানিস্তান, কাশ্মির, ইরাক, আরাকান, চেচনিয়া, বসনিয়া, কসভো ও মিন্দানাওর মুসলিমদের নয়। একই পরাজয় ও একই অপমান নিয়ে বেঁচে আছে বিশ্বের প্রায় তাবত মুসলিম।
সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, পাকিস্তান, তুরস্ক, উযবেকিস্তান, কিরগিজিস্তানের ন্যায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যখন নিজ দেশে অমুসলিম হানাদার বাহিনীকে ঘাঁটি নির্মান এবং সে ঘাঁটি থেকে মুসলিম দেশের উপর হামলার অধিকার দেয় -তাদের পরাজয় ও অপমান কি অধিকৃত ইরাকের চেয়ে কম? যেসব মুসলিম দেশর অর্থনীতি চলে অমুসলিম দেশগুলোর খয়রাতে -তাদের অপমানও কি কম? অপমান তাই সকল মুসলিমের। মহান আল্লাহতায়ালার সামান্য রহমতে পাহাড় স্বর্ণে পরিণত হতে পারে। পাথর ফেটে পানি বের হতে পারে। সাগর পরিণত হয় সড়কে -যেমনটি মুসা (আ:)’য়ের সময় হয়েছিল। সে মহান আল্লাহতায়ালার রহমতে কি মুসলিমদের আজকের অপমান, পরাজয় ও দুঃখ দূর হতে পারে না? আসতে পারে না কি বিজয়? যে জাতির লোক ঈমান আনে, নামায পড়ে, রোযা রাখে, হজ্ব করে, যাকাত দেয় -তাদের উপর মহান আল্লাহতায়ালার রহমত তো প্রতিশ্রুত। কিন্তু কোথায় সে রহমত? যদি এসেই থাকে তবে সেটির আলামত কি এই পরাজয় এবং গ্লানি?
মাহে রামাদ্বান যে মুসলিম জীবনে করুণাময়ের রহমত বয়ে আনছে না -সেটি নিয়ে এখন আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। মুসলিমদের ইবাদত তাদেরকে আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দায় পরিণত করবে এবং তাঁর রহমতের হকদার করবে -সেটিই তো কাঙ্খিত ছিল। কিন্তু সেটি যখন হচ্ছে না তখন এ ব্যর্থতা নিয়ে প্রতিটি মুসলিমের বোধোদয় হওয়া উচিত। কেন হচ্ছে না সেটির কারণ খুঁজে বের করা উচিত ছিল। বছরের পর বছর যে ঔষধ সেবনে রোগমুক্তি ঘটে না –সেটি যে কোন বুদ্ধিমান রোগীকেই ভাবিয়ে তোলে। ইবাদত কি আদৌ ইবাদত –এ প্রশ্ন উঠা উচিত। কিন্তু ইবাদতের এ ব্যর্থতা ক’জন মুসলিমকে ভাবিয়ে তুলছে? এ প্রশ্ন কি কখনো উঠে, রোযা কেন ফরজ করা হয়েছিল? যে লক্ষ্যে রোযা ফরজ করা হয়েছিল –সেটিই বা কতটা অর্জিত হচ্ছে?
মুমিনের দায়িত্ব ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ
মহান আল্লাহতায়ালা চান, মু’মিনগণ পৃথিবী পৃষ্টে তাঁর খলিফা রূপে দায়িত্ব পালন করুক। তিনি চান, তাদের হাতে নির্মূল হোক অসত্য ও অন্যায় এবং নির্মিত হোক উচ্চতর সভ্যতা। এবং চান, মানব জাতিকে তারা জান্নাতের পথ দেখাক। এ দায়িত্বগুলো অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। সমগ্র মানব জাতির শান্তি ও সাফল্য নির্ভর করে তাদের দায়িত্ব পালনের উপর। সামান্য রাজ-বাদশাহর খলিফাকেও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকতে হয়। নইলে রাজার এজেন্ডা শুধু কিতাবেই থেকে যায়। যোগ্যতার বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রের প্রতিটি কর্মচারিকে ট্রেনিং নিতে হয়। সে ট্রেনিংয়ে কে কতটা অংশ নিল এবং নিজের যোগ্যতা বৃদ্ধিতে কে কতটা সফল বা ব্যর্থ হলো -তার ভিত্তিতেই পদন্নতি বা পদচ্যুতি হয়। আর মুসলিম তো হলো এ জমিনের বুকে সর্ব-শক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা। এ দুনিয়ার বুকে এর চেয়ে দায়িত্বশীল পদ দ্বিতীয়টি আছে কি? দায়িত্বপালন সফল হলে মিলে জান্নাত। বিফল হলে পৌঁছে জাহান্নামে। অযোগ্য ও দায়িত্বহীন মুসলিমদের নাশকতা এজন্যই ভয়ানক। তখন ব্যর্থ হয় ইসলামকে বিজয়ী করার প্রজেক্ট এবং বিশ্বজুড়ে সুনামী আসে পাপাচারের। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা তখন শুধু কোর’আনেই থেকে যায়।
ঈমানদারদেরকে যোগ্যতর করার কাজে অপরিহার্য যে প্রশিক্ষণ -সেটির গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। সে লক্ষ্যে মহান আল্লাহতায়ালার আয়োজনটি অতি বিশাল এবং তূলনাহীন। সে জন্য রয়েছে ইনটেনসিভ ট্রেনিং কোর্স। পবিত্র কোর’আনের গভীর জ্ঞান, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ও যিকরের ন্যায় ইবাদত হলো সে কোর্সের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ তথা বাধ্যতামূলক হলো সে ট্রেনিং কোর্সে নিয়মিত অংশ নেয়া। সে ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠে কাঙ্খিত মর্দে মুমিন। মাহে রামাদ্বানে রোযাকে দেখতে হবে সে ট্রেনিং কোর্সেরই অংশ রূপে। মুসলিম বিশ্বের বর্তমান দুর্দশার কারণ, তাঁরা ব্যর্থ হয়েছে ট্রেনিং কোর্স থেকে শিক্ষা নিতে। ফলে তারা দারুন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার দায়িত্ব পালনে। বরং পরিণত হয়েছে শয়তানের খলিফায়। শয়তান চায়, মানব সন্তানগণ তাদের সামর্থ্যের বিনিয়োগ করুক ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ, জাতীয় স্বার্থ, আঞ্চলিক স্বার্থ ও গোত্রীয় স্বার্থকে বিজয়ী করতে এবং পরিত্যক্ত হোক ইসলামকে বিজয়ী করার এজেন্ডা। শয়তান তার এজেন্ডায় সফল হয়েছে। ফলে মুসলিমদের মাঝে বেড়েছে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে গাদ্দারী। ফলে ৫৭টি মুসলিম দেশের কোথাও ইসলাম বিজয় পায়নি। নামায, রোযা, হজ্ব-যাকাত যে কারণে ফরজ করা হয়েছিল সেটিও অর্জিত হয়নি।
যে ব্যর্থতা রোযায়
মাহে রামাদ্বানের মাসে আমরা পাপমোচনের রাস্তা খুঁজি। আমরা মাসটিকে নিছক রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের মাস রূপে মান্য করি। এ লক্ষ্যে রোযা রাখি, ইফতারি দেই, তারাবীহ পড়ি এবং লম্বা লম্বা মোনাজাতও করি। সর্বত্র মহান আল্লাহতায়ালার কাছে করুণা চাওয়ার আধিক্য। কিন্তু ভূলে যাই মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের থেকে কি চান সেটি। যে লক্ষ্যে রামাদ্বানের রোযা ফরজ করা হয়েছিল তা নিয়ে তেমন আত্মজিজ্ঞাসাও নেই। মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোর’আনে বলেছেন, “ইয়া আইয়োহাল্লাযীনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাযীনা মিন কাবলিকুম লা’আল্লাকুম তাত্তাকুন।”-(সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩। অর্থ: “হে ঈমানদারগণ, (রামাদ্বানের) রোযা তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর -যেন তোমরা তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পার।” অর্থ দাঁড়ায়, পবিত্র রামাদ্বানে মহান আল্লাহতায়ালা বান্দাহ থেকে যেটি চান, সেটি হলো এই তাকওয়া। মহান আল্লাহর খলিফা রূপে দায়িত্বপালনের কাজে এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ। ইহকাল ও পরকালের মূক্তি এবং মহান আল্লাহর করূণা লাভের এটিই হলো মূল চাবি। রামাদ্বানে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত আসে এ তাকাওয়ার পথ ধরেই। মাথা টানলে চোখ-কান-নাক যেমন এমনিতেই এসে যায়, তেমনি তাকওয়া তথা আল্লাহতায়ালার ভয় অর্জিত হলে তাঁর রহমত অর্জনে কোন বিঘ্নতা ঘটে না। সেটি আসে তাকওয়ার পুরস্কার রূপে। সে প্রতিশ্রুতি তো করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালার। মহান আল্লাহতায়ালা তার মোমেন বান্দাহর দিলের আকুতি ততটুকুই বুঝেন যতটুকু বুঝেন গভীর জঙ্গলে বা সমুদ্রে জন্ম নেওয়া ক্ষুদ্র কীটের প্রয়োজন। মু’মিনের দিলের কথা মুখে উচ্চারিত না হলেও তিনি দিলের ভাষা বুঝেন। আর তাকওয়া সৃষ্টিতে ব্যর্থ হলে লম্বা মোনাজাত বা নফল ইবাদতের কোন মূল্য থাকে কি? নিছক মোনাজাত ও নফল ইবাদতে সেটি সম্ভব হলে হয়তো ইতিমধ্যেই সেটি জুটতো। কারণ সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে সেগুলোই সবচেয়ে বেশী বেশী হচ্ছে।
মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তাকওয়ার গুরুত্ব যে কত অধিক সেটির বর্ণনা পবিত্র কোরআনে বহুবার বহুভাবে এসেছে। বলা হয়েছে, “ইয়া আইয়োহাল্লাযীনা আমানু আত্তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি ওয়া লা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন।”-(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০২)। অর্থ: “হে ঈমানদারেরা, আল্লাহকে ভয় করো যে ভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত এবং আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারি (মুসলিম) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।” পবিত্র এ আয়াতে সম্বোধন করা হয়েছে তাদেরকে যারা নিজেদেরকে ঈমানদার রূপে দাবী করে। আল্লাহপাক ঈমানদারদের কল্যাণ চান। তিন চান, আখেরাতে তারা মুক্তি পাক। এবং কীরূপে মুক্তি সম্ভব সেটিই বর্ণীত হয়েছে উক্ত আয়াতে। নিছক মহান আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান আনলে যে পরকালে মুক্তি বা কল্যাণ জুটবে না -সেটিই বলা হয়েছে এ আয়াতে। ঈমান আনার পরও ঈমানদারকে বহু দূর যেতে হয়। অর্জন করতে হয় গভীর তাকওয়া তথা আল্লাহতায়ালার ভয়। এবং সে ভয়কে হতে হয় যথাযত ভয়। তাকওয়া আনে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত এবং দেয় জান্নাতের চাবি। ব্যক্তির জীবেন তাকওয়া দৃশ্যমান হয় মহান আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতা থেকে বাঁচার প্রবল আগ্রহে। ফলে যে ব্যক্তির জীবন কাটে তাঁর হুকুমের অবাধ্যতায় তাকে কি তাকওয়ার অধিকারী বলা যায়? অথচ মুসলিম দেশের রাজনীতি, আইন-আদালত, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ প্রতি ক্ষেত্র ছেয়ে আছে মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে অবাধ্যতা। যে শরিয়ত পালন না করলে পবিত্র কোর’আনে কাফের, জালেম ও ফাসেক বলা হয়েছে, মুসলিম দেশে সে শরিয়তের প্রতিষ্ঠাই নাই। ফলে কোথায় সে তাকওয়া? মাহে রামাদ্বান থেকে কোথায় সে তাকওয়া অর্জন?
উপরুক্ত আয়াতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে পূর্ণ মুসলিম হওয়ার উপর। হুশিয়ার করা হয়েছে, পূর্ণ মুসলিম না হয়ে কেউ যেন মৃত্যু বরণ না করে। পরম করুণাময়ের পক্ষ থেকে এটি এক গুরুতর সাবধান বাণী। কিন্তু ব্যর্থতা কি এ ক্ষেত্রেও কম? প্রশ্ন হলো, মুসলিম হওয়ার অর্থ কি? মুসলিম হওয়ার অর্থ, ইসলামের নির্দেশাবলীর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। মুমিন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালা অবশ্যই ক্ষমা করেন। কিন্তু সে ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য পূর্বশর্ত আছে। সেটি যেমন তাকওয়া অর্জন, তেমনি ইসলামে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। পূর্ণ আত্মসমর্পণ না করে নিছক দয়া ভিক্ষায় যে লাভ হয় না -সেটিই এ আয়াতে সুস্পষ্ঠ করা হয়েছে।
তাকওয়ার সংস্কৃতি ও বিদ্রোহের সংস্কৃতি
মহান আল্লাহপাক মহা দয়াময়। কিন্তু সে দয়া মোত্তাকী বান্দাহদের জন্য। অবাধ্যদের জন্য যা বরাদ্দ তা হলো জাহান্নামের আগুন। সে আগুন থেকে বাঁচার জন্যই ঈমানদারের উপর ফরয হলো তাকওয়া অর্জন। জান্নাতের এটিই চাবী। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতসহ ইসলামের প্রতিটি ইবাদতের মূল লক্ষ্য বস্তুত এটিই। বছরের পর বছর ইবাদত-বন্দেগীর পরও যদি তাকওয়া সৃষ্টি না হয় এবং পূর্ণ ভাবে আত্মসমর্পিত হয় না তাঁর হুকুমের প্রতি -তবে সে ইবাদতকে কি ইবাদত বলা যায়? আত্মসমর্পণের বিপরীত হলো বিদ্রোহ। বিদ্রোহটি ঘটে তাঁর হুকুমের অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে। এমন বিদ্রোহীদেরকে কাফের বলা হয়। আর এরূপ বিদ্রোহীদের প্রতি কৃপা দেখানো আল্লাহতায়ালার সূন্নত নয়। পবিত্র কোর’আনে এমন বিদ্রোহীকে শাস্তির ঘোষনা শোনানো হয়েছে বার বার। অথচ সেরূপ বিদ্রোহ মুসলিম জীবনে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
রোযা কতটুকু সফল হচ্ছে -সে বিচার রোযার সংখ্যা, তারাবিহ নামাযে হাজিরা, নফল ইবাদত বা ক্বদরের রাতে অশ্রুপাত দিয়ে হয়না। সে বিচারটি হয়, ক’জনের জীবনে কতটা আল্লাহভীতি এবং আল্লাহতে আত্মসমর্পণ অর্জিত হলো -তা থেকে। কিন্তু কতটুকু অর্জিত হচ্ছে সেসব লক্ষ্য? মুসলিম জীবনে আজ যেরূপ নৈতিক স্খলন, পাপাচার, ও দূর্নীতির তান্ডব এবং কোরআনী আইন যেভাবে পরিত্যক্ত -এসব কি তাকওয়ার লক্ষণ? আলামত কি আল্লাহতে আত্মসমর্পণের? তাকওয়ার অর্থ এমন ভয় যা ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমের প্রতি আনুগত্যশীল করে। যেখানে সে আনুগত্য নেই, বুঝতে হবে সেখানে ভয়ও নেই। যার মনে আল্লাহভীতি আছে সে কি কখনো তাঁর নির্দেশের অবাধ্য হতে পারে? অবাধ্যতার লেশমাত্র সম্ভাবনাতেই প্রকৃত মুমিনের আত্মা ভয়ে কেঁপে উঠে। একমাস ধরে রোযা মানুষকে সে আনুগত্যই শেখায়। রামাদ্বান তাই লাগাতর প্রশিক্ষণের মাস। পানাহার ও যৌন-সম্ভোগ মানুষের আদিম জৈবিক তাড়না। এ তাড়নায় মানুষ মেহনত করে, উপার্জন করে, সঞ্চয় ও সম্ভোগও করে। তবে সে উপার্জন ও সম্ভোগের মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালা হারাম-হালালের বিধিনিষেধ বেঁধে দিয়েছেন। তাকওয়া হলো সেগুলো মেনে চলা।
অন্য সময়ে হালাল –এমন বহু কিছই রোযাকালীন সময়ে হারাম। রামাদ্বান এভাবে হালাল বিষয়ের উপরও লাগাম টেনে ধরা হয়। যে চালক গাড়ীচালনায় ব্রেকের প্রয়োগ জানে না সে বিপদ ডেকে আনে। তাই প্রবৃত্তির উপর কখন লাগাম টানতে হয় মানুষকে সেটি জানতে হয়। রোযা এভাবেই বহু বস্তুকে ছাড়তে শেখায়। রোযা সংযমকে এভাবে অভ্যাসে পরিণত করে। ক্ষুদ্র খাদ্যকণা মুখে দিতেও সে ভয় পায়। এমনকি একান্ত একাকীতেও নয়। নামায বা হজ্বের মধ্যে রিয়াকারি বা প্রদর্শণীর ভাব থাকতে পারে। কিন্তু রোযাদার গোপনে পানাহারের সুযোগ পেলেও সেটি করে না। কারণ, ভয় এখানে সর্বদৃষ্টিমান মহান আল্লাহতায়ালার। তখন ক্ষুধার্ত থাকার কষ্টকে বরং মেনে নেয়। এরূপ প্রশিক্ষণ চলে মাসব্যাপী। এভাবেই মুসলিম জীবনে সৃষ্টি হয় তাকওয়া তথা মহান আল্লাহতায়ালাকে ভয় করে চলার সংস্কৃতি।
রোযার লক্ষ্য শুধু তারাবিহ নামায, কোর’আন তেলাওয়া বা নফল নামযে মনযোগী করা নয়। বরং মনযোগী করবে ইসলামের প্রতিটি হুকুমে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দিনের ক্ষুদ্র অংশই ব্যয় হয়। রোযাতে ব্যয় হয় সমগ্র দিন। রোযা তাই ইসলামের সবচেয়ে দীর্ঘতম ইবাদত। নামায-রোযাসহ প্রতিটি ইবাদতই হলো মহান আল্লাহর যিকর তথা স্মরণ। যেমন হযরত মূসা (আ:)কে বলা হয়েছে, “আকিমুস সালাতি লিয যিকরি” অর্থ: নামায প্রতিষ্ঠা করো আমার যিকরের জন্য। রোযা থাকার অর্থই হলো পুরোদিন হৃদয়ে মহান আল্লাহর যিকর নিয়ে থাকা। একমাস রোযা রাখার ফলে যিকর তখন অভ্যাসে পরিণত হয়। সে যিকর নিয়েই ঈমানদার তখন রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অফিস-আদালতে যোগ দেয়। তখন বিলুপ্ত হয় দূর্নীতি ও অবাধ্যতার মোহ। ইবাদতের অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার গোলামী। ইবাদতকালীন সময়ে ব্যক্তির চেতনালোকে সে গোলামীর ধারণাই বদ্ধমূল হয়। এ চেতনাকে বদ্ধমূল করতে নামাযী ব্যক্তিকে প্রত্যহ ৫ বার মসজিদে হাজির করে। রোযা সেটিই করে দীর্ঘ একমাস ধরে। এক মাসের প্রশিক্ষণে ঈমানদার ব্যক্তি বাঁকি ১১টি মাস মহান আল্লাহর গোলামীতে নিষ্ঠাবান হবে -সেটিই তো কাঙ্খিত। যে আল্লাহভীতির কারণে রোযাদার পানাহার পরিত্যাগ করে সেই একই কারণে পরিত্যাগ করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনেও তাঁর অবাধ্যতা। ফলে রাষ্ট্র মুক্ত হয় তাঁর হুকুমের বিদ্রোহীদের থেকে।
রোযা রেখে যে ব্যক্তি সেক্যুলার রাজনীতি করে, সূদী লেনদেন করে, অফিসে বসে ঘুষ খায় এবং বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করে -তাকে কি রোযাদার বলা যায়? কোথায় সে তাকওয়া? কোথায় সে আত্মসমর্পণ? এতো সুস্পষ্ট বিদ্রোহ। বাংলাদেশকে যারা বিশ্বের দূর্নীতিগ্রস্ত দেশের শীর্ষে পৌঁছে দিল তাদের ক’জন অমুসলিম? দেশটিতে যারা সূদী ব্যাংক, পতিতাপল্লী, অশ্লিল সিনেমা জীবিত রেখেছে তাদেরই বা ক’জন কাফের? যারা সেদেশে ইসলামের শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করে রেখেছে তাদেরই বা ক’জন পৌত্তলিক? বাংলাদেশের মত দেশে সেক্যুলার রাজনৈতিক নেতাদের ভোট দিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় পৌঁছে দিচ্ছে তাদের সবাই কি হিন্দু? সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাইরাইন বা ওমানের মত মুসলিম দেশে যারা কাফের-সেনাবাহিনীকে ঢুকতে দিয়ে ইরাকের ন্যায় একটি মুসলিম দেশে আগ্রাসনের পথকে সহজ করে দিল -তাদেরই বা ক’জন ইহুদী বা খৃষ্টান? আফগানিস্তান, ইরাক ও পাকিস্তানে যারা মার্কিনী ক্রসেড বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করলো -তাদেরই বা ক’জন কাফের? অথচ এদেরই অনেকে রোযা রাখে, তারাবীহ নামায পড়ে এবং মহা ধুমধামে ইফতার পার্টিও করে। অথচ রাজনীতি, সংস্কৃতি, যুদ্ধবিগ্রহ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে এরা যা করছে তা সম্পূর্ণ হারাম। ফলে রোযা থেকে তাদের প্রাপ্তিটা কি? এদের উদ্দেশ্যেই কি রাসূল করীম (সাঃ) বলেছেনঃ “অনেক রোযাদার এমন আছে কেবল ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া তাদের ভাগ্যে অন্য কিছুই জোটে না। তেমনি রাত্রিতে ইবাদতকারী অনেক মানুষও আছে যারা রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারে না।” আর এমন রোযাদারদের ভাগ্যে আল্লাহর রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত জুটবে কীরূপে? আর জুটছে যে না – প্রমান তো প্রচুর। আজ বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মুসলিমের মধ্যে বহু কোটি মানুষ রোযা রাখে। তারাবীহ ও তাহাজ্জত নামাযও পড়ে। কিন্তু কোথায় সে তাকওয়া? পৃথিবীর এক বর্গমাইল এলাকায়ও কি আমরা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি? অথচ ৫৭টি মুসলিম দেশে আইন কানূন যে প্রতিষ্ঠিত নেই -তা নয়। বরং আইনের নামে যা আছে তা ইসলাম বিরোধী আইন। অর্থনীতির নামে যেটি চলছে সেটি সূদ-ভিত্তিক কুফরি অর্থনীতি। এভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্র জুড়ে চলছে আল্লাহর অবাধ্যতা। মহান আল্লাহতায়ালার রহমত আসবে কি তাঁর আইনের এ অবাধ্যতা আরো প্রবল ও দীর্ঘস্থায়ী করতে? সে রহমত কি শয়তানের বিজয়কে আরো বলবান করতে?
মাস কোর’আন নাযিলের
মাহে রামাদ্বান হচ্ছে পবিত্র কোর’আন নাযিলের মাস। কোর’আনের বরকতেই মাহে রামাদ্বানের ফজিলত ও বরকত। প্রতি তারাবীহতে আমরা কোরআনের তেলাওয়াত শুনে থাকি। ঈমানদারের গুণাবলী বলতে গিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, “ইন্নামাল মু’মিনুনাল্লাযীনা ইযা যুকেরাল্লাহু ওয়াজিলাত কুলুবুহুম ওয়া ইযা তুলিয়াত আলায়হীম আয়াতাতুহু যা’দাতহুম ঈমানাও ওয়া আলা রাব্বিহীম ইয়াতাওয়াক্কালুন।” -(সুরা আনফাল, আয়াত-২)। অর্থ: “যারা মু’মিন তারা এমন যে, যখন তাদের কাছে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় তখন তাদের অন্তর ভয়ে কেঁপে উঠে। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াত তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে।” আল্লাহর নাম শুনতেই ঈমানদারদের হৃদয় কেঁপে উঠবে, কোরআনের তেলাওয়াতে ঈমানে বাড়বে এবং আল্লাাহতে নির্ভরশীল হবে -সেটিই বর্ণীত হয়েছে উপরুক্ত আয়াতে। কিন্তু সেটি ক’জন মুসলিমের জীবনে? সারা মাস তেলাওয়াত শুনি, এবং সেটি প্রতি বছর। কিন্তু তাতে ঈমানে বৃদ্ধি ঘটে কি?
যে শিশু ভাষাই বুঝে না, তাকে জ্ঞানের কথা শুনিয়ে লাভ আছে কি? কারণ সে তো অর্থই বুঝে না। তেমনি যে ব্যক্তি কোর’আনের অর্থ বুঝে না, হাজার হাজার বার শ্রবনেও ঈমান-বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে কি? মহান আল্লাহতায়ালার ভয় তো কোর’আনের জ্ঞান থেকে সৃষ্টি হয়, শব্দের আওয়াজ থেকে নয়। তাই পবিত্র কোর’আনের অর্থ-উদ্ধার অত্য জরুরী, তেলাওয়াত নয়। তাই কোর’আনের জ্ঞানার্জন শুধু মাদ্রাসার শিক্ষকদের উপরই ফরজ নয়, প্রতিটি নরনারীর উপরও। ইসলামে আলেম হওয়ার দায়িত্ব সবার। ইসলামে এটিই প্রথম ফরয। নামায-রোযা ফরজ হয়েছে ১১ বছর পর। কোর’আন বুঝার ফরয পালন করার তাগিদে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, আলজিরিয়া, মরক্কো, সূদানসহ বিশাল ভূভাগের অনারব জনগণ সেদিন মাতৃভাষা দাফন করে কোর’আনের ভাষা শিখেছিলেন। বান্দাহর উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সর্বশ্রেষ্ঠ দানকে তাঁরা আত্মস্থ করেছিলেন। অথচ আমরা কাফেরদের ভাষা শিখতে বছরের পর বছর ব্যয় করলেও আল্লাহর আয়াত বুঝতে চেষ্টা করি না। বেঁচে থাকি এবং মারা যাই অজ্ঞতা নিয়ে। পালিত হচ্ছে না জ্ঞানার্জনের ফরয।
অথচ পবিত্র কোর’আনের মধ্য দিয়েই মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাহর সাথে কথা বলেন। মানব জীবনে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয় যখন তাঁর সে পবিত্র কথাগুলো কেউ বুঝতে ব্যর্থ হয়। অথচ আরবী ভাষা না জানায় কোটি কোটি মানুষ ব্যর্থ হচ্ছে তাঁর ওয়াজ থেকে ফায়দা নিতে। অথচ কোরআনের ভাষা জানা থাকলে খতম তারাবিহ’র বরকতে পূরা কোরআন শরিফ বছরে অন্তত একবার শোনা হত। এতে শ্রোতার মনে মহান আল্লাহতায়ালার ভয়ও জাগরিত হতো। তখন পালিত হতো জ্ঞানার্জনের গুরুত্বপূর্ণ ফরয। জীবনে সবচেয়ে বড় পাপটি অর্থহীন বা স্বাস্থ্যহীন থাকা নয়। বরং সেটি কোর’আনের জ্ঞানে জ্ঞানহীন থাকা। এ অজ্ঞতা অসম্ভব করে মুসলিম হওয়া। শয়তানের কাজ তাই মানুষকে সম্পদহীন করা নয়, বরং কোর’আন থেকে দূরে সরানো। শয়তান যে সে কাজে কত সফল তার প্রমাণ হলো আজকের মুসলিমগণ। অথচ কোর’আন হলো মহান আল্লাহতায়ালার রশি। যারা সে রশিকে ধরলো তারাই সিরাতুল মুস্তাকীম পেল। এবং পরকালে জান্নাতে পৌঁছলে। সুরা আল-ইমরানে তাই বলা হয়েছে, “মাই ইয়াতিছিম বিল্লাহি, ফাকাদ হুদিয়া ইলা সিরাতুল মুস্তাকীম।” অর্থ: “যে শক্ত ভাব ধরলো আল্লাহর রশিকে সেই পথপ্রাপ্ত হলো সিরাতুল মুস্তাকীমের।” তাই প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সে রশি তথা কোর’আনকে না ধরে কি জান্নাতে পৌঁছা যায়? কোর’আনকে ধরার অর্থ হলো তা থেকে শিক্ষা নেয়া। অথচ অধিকাংশ মুসলিম দেশে নারীপুরুষের হাতে পবিত্র কোর’আন ধরিয়ে দেয়ার তেমন আয়োজন নেই। আর এতে শয়তান পাচ্ছে সহজে শিকার ধরার সুযোগ। ফলে বিজয় পাচ্ছে শয়তান। মুসলিম ভুমিতে ইসলামে পরাজয়ের কারণ তো এটাই। মাহে রামাদ্বান বার বার আসলেও মুসলিমদের সিরাতুল মুস্তাকীমে চলাটি তাই সহজ হচ্ছে না। মুসলিম জীবনে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতাই বা কী হতে পারে? ১ম সংস্করণ ০২/১০/২০০৬; ২য় সংস্করণ ০৮/০১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018