আওয়ামী শাসন এবং বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 26, 2018
- বাংলাদেশ
- No Comments.
বিপর্যয়টি মুসলমান থাকা নিয়ে
বাংলাদেশ আজ ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে। সেটি শুধু রাজনৈতিক নয়। নয় নিছক সামরিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতি, অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে। বরং সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টি ঘটছে মুসলমানদের মুসলমান থাকা নিয়ে। আওয়ামী লীগ শুধু দেশের সরকার, পার্লামেন্ট, প্রশাসন বা রাজনীতির ময়দান দখল নিয়ে খুশি নয়, তারা প্রবল ভাবে দখলে নিচ্ছে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানও। দখলদারি প্রতিষ্ঠা করছে মুসলমানদের ঈমানের ভূবনেও। আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং আবির্ভুত হয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আদর্শিক শক্তি রূপে। তারা এখন ইসলামেরও ব্যাখা দেওয়া শুরু করেছে। কোনটি জিহাদ আর কোনটি জিহাদ নয়, কোনটি ইসলাম-সম্মত আর কোনটি অনৈসালিক সে ব্যাখাও দেওয়া শুরু করেছে। তারা সে ব্যাখা দিচ্ছে ভারত ও মার্কিনীদের সাথে অভিন্নতা রেখে।
বাংলাদেশে এখন প্রচন্ড ভাবে অধিকৃত নিজদেশের ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে। তারা সে অধিকার পেয়েছে নির্বাচনের মাধমে। তাদের সে বিপুল বিজয়ে শুধু যে দেশের আভ্যন্তরীন ইসলামের বিপক্ষ শক্তিই খুশি হয়েছে তা নয়, খুশি হয়েছে ইসলাম-বিরোধী চিহ্নিত বিদেশী শক্তিও। প্রতিবেশী ভারত সরকার ও তার মিডিয়া সে খুশি গোপন রাখেনি। সরকারি ভাবে ভারত যে কতটা খুশি হয়েছে সেটি বুঝা যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রনব মুখার্জির বক্তব্য থেকে। প্রণব মুখার্জি বলেছেন, ভারত সরকার শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কোন হুমকি আসলে ভারত নিশ্চুপ বসে থাকবে না। লক্ষ্যণীয় হলো, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের অতি কঠিন বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল। ক্ষুদার্ত মানুষ তখন প্রাণ বাঁচাতে আস্তাকুড়ে উচ্ছিষ্ট খুঁজেছে, কুকুর বিড়ালের সাথে লড়াই করেছে, রাস্তায় বুমিও খেয়েছে। লজ্জা ঢাকতে তখন মহিলারা মাছধরা জাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের সে বিপদের দিনে এগিয়ে আসেনি। কোন আর্থিক সাহায্যও পেশ করিনি। বরং দেশটির সীমান্ত ফুটো করে বিদেশ থেকে প্রাপ্ত খয়রাতী মাল টেনে নিয়েছে নিজ দেশে। মুজিব তখন কয়েক কোটি ছাপার কাজ দিয়েছিল ভারতের ছাপাখানায়। ভারত তখন তার চেয়ে বহুগুণ বেশী গুণ বেশী নোট ছেপে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে রশাতলে ডুবিয়ে দেয়। এভাবে বাড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষের যাতনা ও মৃত্যু। বাংলাদেশ পরিণত হয় আন্তর্জাতিক ভিক্ষার ঝুলি। বিশ বছরের যুদ্ধেও দরিদ্র আফগানিস্তানের ভাগ্যে এমন খেতাব জুটেনি। জুটেনি ভিয়েতনামের ভাগ্যেও। একটি দেশকে ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত হতে যে শুধু যুদ্ধ লাগে না, বরং লাগে অবিরাম শোষণও -সেটিই সেদিন বাংলাদেশে সত্য রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। ভারত যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বন্ধু নয়, বরং রক্ষক হলো একটি বিশেষ পক্ষের, প্রনব মুখার্জি সেটিই প্রকাশ করেছে। তার সে বক্তব্যে এটিই প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশে ভারতের নিজস্ব এজেন্ডা রয়েছে। এবং সে এজেন্ডারে বাস্তবায়নে ভারতের কাছে আওয়ামী লীগ যে অপরিহার্য প্রনব মুখার্জি সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
নিজেদের রাজনৈতিক দখলদারিটা স্থায়ী করতে আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশের মানুষের মনের ভূবনে আমূল পরিবর্তন আনছে। ইসলামী সভ্যতার নির্মানে শুরুতে ইরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ বিশাল ভূ-খন্ডটি এক সময় মুসলিম উম্মাহর একটি শক্তিশালী অংশ ছিল। খোলাফায়ে রাশেদার পর আরবগণ যথন ভাতৃঘাতি সংঘাতে লিপ্ত হয় তখন কোরআনের বড় বড় মোফাচ্ছের, বিজ্ঞানী, চিকিৎস্যক, কবি-সাহিত্যিক ও দার্শনিক জন্ম নেয় ইরানে। ইমাম আবু হানিফা, আব্দুল কাদের জিলানী, আল ফারাবী, আল রাজি, ইবনে সিনা, ইমাম আল গাজ্জালী, শেখ সাদী, মাওলানা রুমী সহ বহু প্রতিভার জন্ম ইরানে। তারা শুধু মুসলিম উম্মাহর গৌরব ছিল সমগ্র মুসলিম উম্মাহর। প্রখ্যাত সমাজ-বিজ্ঞানী ইবনে খুলদুনের অভিমত, ইসলামের উদ্ভব আরবে হলেও ইসলামি সভ্যতার নির্মান ঘটে ইরানে। আব্বাসী খলিফার দুর্বল সময়ে সে ইরানই বিচিছন্ন হয়ে মুসলিম উম্মাহ থেকে। আর সে বিচ্ছিন্নতাকে স্থায়ী রূপ দিতেই ইরানের জাতিয়তাবাদী শাসকেরা পাল্টে দেয় দেশটির ধর্মীয় চেতনা। জন্ম দেয় শিয়া মতবাদ। সাফাভী শাসকদের সে বলপূর্বক ধর্মীয় পরিবর্তনে লক্ষ লক্ষ সূন্নী মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ফলে নিছক এক রাজনৈতিক প্রয়োজনে এককালের সূন্নী ইরান পরিণত হয় শিয়া রাষ্ট্রে। প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র থেকে এভাবেই গড়া হয় ইরান ঘিরে বিভক্তির বিশাল প্রাচীর। ইরানীরা মুখে যাই বলুক আজও তারা সমগ্র মুসলিম উম্মাহ থেকে বস্তুতঃ পৃথক সে ঐতিহাসিক পৃক্ষাপটে। এদেশটির শিয়া শাসকেরা ইউরোপীয় শাসকদের সামরিক সহয়তা নিয়ে বার বার হামলা চালিয়েঠেছ উসমানিয়া খেলাফতের পূর্ব সীমান্তে। মুসলিম সেনাবাহিনী যখন সমগ্র বলকান, গ্রীস, ক্রিমিয়াসহ বিশাল পূর্ব ইউরোপ দখল করে অস্ট্রিয়ার রাজধানী অবরুদ্ধ করে ফেলে সেসময় ইরান বিশাল চাকু ঢুকিয়ে দেয় উসমানিয়া খেলাফতের পিঠে। পূর্ব সীমান্তে শুরু হয় শিয়া হামলা। মুসলিম সেনাদল তখন ভিয়েনা থেকে অবরোধ তুলে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ইরানের সে হামলা না হয়ে ইউরোপের ইতিহাস হয়তো ভিন্ন ভাবে লিখিত হতো। সে সময় থেকেই ইরানের প্রতিভা ও সামর্থ নানা ভাবে ব্যয় হয়ে আসছে মুসলমানদের রক্ত ঝরাতে। সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাকে যে মার্কিন হামলা হলো তাতে সাহায্য ও সর্বাত্মক সমার্থণ দিয়েছে ইরান। এখন তারা সাহায্য দিচ্ছে ভারত ও পাশ্চাত্যের পাকিস্তান বিরোধী আগ্রাসনে। বাংলাদেশও একই ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে উপমহাদেশে মুসলিম শক্তির উত্থান রুখবার কাজে। অথচ ১৯৪৭য়ে বাংলাদেশের মুসলমানদের কারণেই জন্ম নিয়েছিল বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ও সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। এ রাষ্ট্রটি গড়ায় যে সংগঠনটি কাজ করেছিল সেটি হলো মুসলিম লীগ। এবং সে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল ঢাকায়। পাকিস্তান প্রস্তাবটিও উত্থাপন করেছিল বাংলার ফজলুল হক। কিন্তু পরবর্তিতে আওয়ামী লীগ আবির্ভুত হয় কাফের শক্তিবর্গের অতি বিশ্বস্ত মিত্ররূপে। তাদের কাছে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধতা চিত্রিত হয় সাম্প্রদায়িকতা রূপে।এজন্যই তাদের বিজয়টি ভারতসহ সকল মুসলিম বিরোধী শক্তির কাছে এতটা উৎসব পরিণত হয়। এমন একটি ইসলাম বিরোধী চেতনার কারণে প্রতিবেশী দেশে হাজার হাজার মুসলিমকে পুড়িয়ে হত্যা বা সেদেশের মুসজিদ ধ্বংস করা হলেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখে কোন প্রতিবাদের ধ্বনি উঠে না, প্রতিবাদে রাজপথেও নামে না। পত্রিকায় কোন বিবৃতিও দেয় না।
লক্ষ্য ইসলামি চেতনাবিনাশ
ইসলামি চেতনা থেকে ভিন্নতর এক চেতনা-রাজ্য নির্মানেরই স্বার্থেই আওয়ামী লীগ সরকার তার সকল সামর্থ বিণিয়োগ করছে ইসলামি চেতনার বিনাশে। ইরানের স্বৈরাচারি শাসকেরা যেখানে রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচর্যা দিয়েছিল শিয়া ধর্মমতের, এরা শেখানে দিচ্ছে সেকুলার চেতনার। এজন্যই মুসলিম জনগণের দেওয়া রাজস্বের বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে নাচগাণ শেখানোর কাজে। অথচ ইসলামে নাচগান হারাম। কারণ মানুষের এ পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। নারীপূরুষ এখানে ব্যস্ত তাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিতে। এ পরীক্ষায় ফেল করলে তারা কোন চাকুরি হারাবে বা ডিগ্রি পেতে ব্যর্থ হবে তা নয়। বরং পরিণতিটি হবে অতি ভয়ংকর। নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামের দাউদাউ করে জ্বলা বিশাল আগুণে। পরীক্ষার কোন হলে কি নাচগানের আয়োজন চলে? তাই প্রকৃত মুসলমানদের হাতে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মিত হলেও নাচগান পরিচর্যা পায়নি। যখন পেয়েছে তখন মুসলমান আর প্রকৃত মুসলমান থাকেনি। তারা পরিনত হয়েছে শয়তানের সেবকে। ইসলামের সত্যপথ থেকে মুসলমান তরুন-তরুনীদের বিভ্রান্ত করার কাজে নাচগান সব সময়ই একটি সফল হাতিয়ার। শয়তানী শক্তিবর্গ অতীতের ন্যায় আজও সেটি সর্বত্র প্রয়োগ করছে। বাংলাদেশে যতই বাড়ছে কাফেরদের পুজি বিণিয়োগ ততই বাড়ছে এ শয়তান হাতিয়ারটির ব্যাপক প্রয়োগ। কাফেরদের অর্থে এনজিওগুলি এখন নাচগানের চর্চাকে মাঠপর্যায়ে নিয়ে গেছে। পাপচর্চার এ ক্ষেত্রগুলো এখন প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউশন রূপে গড়ে উঠেছে। ফলে এনজিওগুলোর প্রতিষ্ঠিত স্কুলের হাজার হাজার মেয়েরা এখন আর নেচেগেয়ে আনন্দ প্রকাশে কোনরূপ সংকোচ বোধ করে না। আর যেখানে নাচগাণ বাড়ে সেখানে বাড়ে মদ্যপান ও ব্যাভিচার। আর বাংলাদেশে সেগুলিও বাড়ছে সমান তালে। বেশ্যাবৃত্তি তাই এখন আর পতিতাপল্লিতে সীমাবদ্ধ নয়, সেটি উপচিয়ে আবাসিক মহল্লায় নেমে এসেছে। ফল দাড়িয়েছে এই ব্যভিচার এখানে সংক্রামিত করছে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষকে। প্রায় দশ বছর আগের এক জরীপে প্রকাশ, বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশী যুবক বিবাহের আগেই যৌন কর্মে লিপ্ত হয়। বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম দেশের জন্য এটি এক ভয়াবহ খবর।
ইসলামি চেতনার বিনাশ যে কতটা মহামারি রূপ পেয়েছে এ হলো তার নজির। পাশ্চাত্য-করণের এটিই হলো স্বাভাবিক রূপ। পাশ্চাত্য দেশে এটি আর কোন হারাম কর্ম নয়, বরং স্বীকৃতি পেয়েছে বৈধ-কর্ম রূপে। তাদেরকে বলা হয় সেক্স-ওয়ার্কার। সে অভিন্ন পাশ্চাত্য মূল্যবোধই বিশ্বের কাফের শক্তিবর্গ এখন বাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সে লক্ষ্যেই শুরু করেছে সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিং। একাজে লিপ্ত এমন কি জাতিসংঘও। ইঞ্জিনীয়ারগন এতকাল রাস্তাঘাট-ব্রিজ নির্মান করতো, আর এখন সোসাল ইঞ্জিনীয়ারীংয়ের নামে তারা তাদের অর্থ, মেধা ও প্রযুক্তির বিণিয়োগ করছে সেকুলার ধাঁচের সমাজ-সংস্কৃতি, চেতনা ও রাষ্ট্র নির্মানের। আর একাজে প্রথম প্রয়োজন হলো, জনগণের চেতনা রাজ্য থেকে ইসলামের অপসারণ। যাকে বলা হয় ডি-ইসলামাইজেশন। বাংলাদেশের বহু টিভি নেট-ওয়ার্ক, অসংখ্য পত্র-পত্রিকা, শত শত এনজিও কাজ করছে সে সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিং প্রজেক্টের আঁওয়াতায়। ইসলামের নবজাগরণ প্রতিরোধের এটিই হলো তাদের মূল স্ট্রাটেজি। একাজে কাফের দেশ থেকে আসছে হাজার হাজার কোটি টাকার পুঁজি। আল্লাহর দ্বীনের প্রচার ও প্রসার রূখতে এটিই এখন কাফের শক্তিবর্গের সম্মিলিত গ্লোবাল স্ট্রাটেজী। এলক্ষ্যে তারা মুসলিম দেশের ইসলামে অঙ্গিকার-শূন্য দলগুলোর সাথে গড়ে তুলেছে কোয়ালিশন। বাংলাদেশের সরকার ও তার সহযোগী সেকুলার এনজিওগুলো হলো সে কোয়ালিশনেরই অংশ।
নারী রপ্তানীর অর্থনীতি
সরকারের ইসলামি চেতনা বিনাশের কাজ দ্রুত ফল দিচ্ছে। বাংলাদেশে ইসলামি চেতনাধারীদের নানা ভাবে হেয় করা বা নির্যাতন করা এখন তাই উৎসবকর্ম। রাজপথে তাদের লগি বৈঠা নিয়ে দাড়ি-টুপিধারিদের হত্যা করলেও পত্রিকার পাতায় সেটি নিন্দনীয় না হয়ে বরং প্রশংসনীয় হয়। এরই আরেক সফলতা হলো, বাংলাদেশ এখন বাজার ধরেছে নারী রপ্তানিতেও। দেশেটি এখন থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনের ন্যায় দেশেল পথ ধরেছে। বিদেশী দুর্বৃত্তদের গৃহেই শুধু নয়, বাঙ্গালী পতিতাদের ভিড় বেড়ে চলেছে কোলকাতা, বোম্বাই ও করাচীর পতিতাপল্লিতেও। অর্থের পিছে দৌঁড়াতে থাকলেও সেটি যে কত দ্রুত জাহান্নামের পথে নিয়ে যায এ হলো তার নমুনা। অথচ বাংলাদেশের সেকুলারদের মূল এজেন্ডা হলো নরনারীদের অর্থের পিছে দৌড়াতে শেখানো, সত্যদ্বীন বা ইসলামের পিছে নয়। ইসলামের পিছে দৌড়ানোকে বরং তার মৌলবাদ বলে শুধু নিন্দনীয় নয়, নির্মূলযোগ্যও ঘোষণা করছে। জনগণের মন থেকে ইসলামি চেতনা বিলুপ্তির লক্ষ্যেই এখন ২১শে ফেব্রেয়ারি, ২৫ শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর, পহেলা বৈশাখ, রবীন্দ্র জয়ন্তির ন্যায় দিবসগুলি আর ঐ বিশেষ দিনে পালিত হয় না, পালিত হচ্ছে মাসাধিক কাল ব্যাপী। তখন ইসলামি চেতনা বিনাশের পাঠদানে পাঠশালা পরিণত হয় সারাদেশ। অথচ ইসলামের পরিচিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ একটি আলোচনা সভা বা সেমিনারের আয়োজন করেছে তার নজির নেই। অথচ এরাই বলে “আমরাও মুসলমান”। ইসলামি চেতনা বিনাশের কাজে রাষ্ট্রীয় পুঁজি বিণিয়োগের বিপুল পুঁজি বিণিয়োগ হচ্ছে বিশ্বের কাফের দেশগুলোর। সে পুঁজিতে দেশের নগর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে বিপুল ভাবে ফুলে ফেঁপে উঠছে বাংলাদেশের হাজার হাজার এনজিও। কাফের রাষ্ট্রগুলোর ইসলাম-বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে এরাই হলো তাদের ঘনিষ্ট মিত্রপক্ষ। সে অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে গড়ে তুলেছে এক নিরেট পার্টনারশিপ।
সাংস্কৃতিক আধিপত্য থেকে রাজনৈতিক আধিপত্য
আদর্শিক বা সাংস্কৃতিক আধিপত্যের পথ ধরেই আসে রাজনৈতিক আধিপত্য। তখন সে রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপনে শত্রু পক্ষের আর যুদ্ধ লড়তে হয়নি। শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের স্ট্রাটেজী ছিল অন্যদের অভ্যন্তরে নিজেদের সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক দ্বীপ গড়া। তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তানসহ অধিকাংশ মুসলিম সে দ্বীপগুলো হলো ক্যান্টনমেন্ট, অফিসপাড়া, আদালত, পতিতালয় ও ব্যাংকিং সেক্টর। এগুলোর সীমান্ত পাশ্চাত্য চেতনা ও মূল্যবোধের সাথে একাকার। ইসলামের হারাম-হালালের বিধান এসব জাগায় অচল। তারাই এখন পাশ্চাত্যের কাফের শক্তির একনিষ্ঠ মিত্র। পাকিস্তানে তারাই হাজার হাজার মুসলমানদের হত্যা করছে অতিশয় আনন্দ চিত্তে। তুরস্কে তার স্কুলের মেয়েদের মাথায় রুমাল বাধতে দিতেও রাজী নয়। মিশরে এরা ইসলামপন্থিদের রাজনীতির ময়দানে আসতে দিতেও রাজী নয়। এখন তারা সেরূপ অভিন্ন দ্বীপ গড়ছে রাজনীতির অঙ্গনেও। আর বাংলাদেশের রাজনীতির আওয়ামী লীগ হলো তাদের সে দ্বীপ। একজন পশ্চিমা দুর্বৃত্ত বাংলাদেশের পতিতালয়ে যে সমাদার সেটি চেতনাগণ অভিন্নতার কারণেই। তেমনি এক অভিন্নতার কারণেই ভারতীয় নেতারাও অতি আপনজন রূপে গৃহীত হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আসরে। এ সম্পর্ক অতি গভীরতা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের আমলেই। ভারতীয় স্বার্থের সেবক রূপে দায়িত্ব-পালনের অঙ্গিকার নিয়ে ষাটের দশকেই তিনি আগড়তলা গিয়েছিলেন। ভারতীয় গুপ্তচর চিত্তরঞ্জন সুতোর বা কালিপদ বৈদ্যরা ছিলেন সে আমল থেকেই ছিলেন তারা ঘনিষ্ঠ সহচর। তিনিই ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের “তিন বিঘা” ভূমি । সীমান্ত বাণিজ্যের নামে তিনিই দেশের সীমান্ত তুলে দিয়েছিলেন, এবং এভাবে সুযোগ করে দিয়েছিলেন অবাধ লুণ্ঠনের। যার ফলে দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল বাংলাদেশীদের জীবনে। তিনিই অনুমতি দিয়েছিল ফারাক্কা বাঁধ চালুর। এখন ভারত পরিকল্পনা নিচ্ছে ব্রম্মপুত্র নদীর উজানে “টিপাই বাধ” দেওয়ার। দখলে নিচ্ছে বঙ্গপোসাগরে জেগে উঠা তালপাট্টি দ্বীপ। ভারত বাংলাদেশের জন্য নেপালে যাওয়ার জন্য ২০-৩০ মাইলের করিডোর দিতে রাজি হচ্ছে না, অথচ বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে ৫০০ মাইলের করিডোর চায়। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভূটানে যাওয়ার করিডোর বাংলাদেশের যতটা অপরিহার্য অবস্থা সেরূপ নয় ভারতের জন্য। ভারত তার পূর্বাঞ্চলে যেতে পারে তার নিজ ভূমির মধ্য দিয়ে। অথচ এরপর চাপ দি্চ্ছে সে করিডোর আদায়ে এবং আওয়ামী লীগ তা নিয়ে বিবেচনাও করছে।
আওয়ামী লীগের বিজয় ও বিপর্যয়ের কবলে বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগের বিজয়ে বাংলাদেশের উপর বিপর্যয় আসছে নানা ভাবে। যখনই এ দলটি ক্ষমতায় গেছে তখনই বিপর্যয় এসেছে দেশের সেনাবাহিনীর উপর। মুজিব আমলে সেনাবাহিনীর চেয়ে বেশী গুরুত্ব পেয়েছিল রক্ষিবাহিনী। আওয়ামী লীগের এবারের বিজয়ে দেশের রাজধানীতে নিহত হলো ৫৭ জন সেনা অফিসার। রক্তাত্ব শত্রুতা সৃষ্টি হলো সেনাবাহিনী ও বিডিআরের মাঝে। পিলখানার রক্ত শুকালেও মনের মাঝে যে বিভক্তি ও ঘৃনা সৃষ্টি হলো সেটি কি দূর হবার? এখন কথা উঠছে বিডিআরের বিলুপ্তির। সরকার ভাবছে, বিডিআরের নাম ও লেবাস পাল্টিয়ে আরেকটি বাহিনী গড়ার। সরকারের ধারণা, সমস্যা শুধু বিডিআর নামটি নিয়ে। ভাবটা যেন, ফাইলপত্র ও অফিস আদালতের গা থেকে ‘বিডিআর’ নামটি বা তাদের লেবাসটি উঠে গিয়ে সেনা-অফিসারদের বুকে গুলি চালালিয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ ‘বিডিআর’ নামটি ও তার লেবাসটি বিলূপ্ত করতে চায়। কিন্তু যারা গুলি চালালো, যারা সে হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দিল তাদের বিচারে অগ্রগতি কোথায়?
দুর্যোগ নেমেছে দেশের শিক্ষাঙ্গনে। চরদখলের ন্যায় সেখানে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর। শুধু ভিসি বা প্রিন্সিলের অফিসেই নয়, দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবাসিক হলগুলোর সিটগুলোর উপরও। আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর অনুমতি ছাড়া সেখানে কেউ থাকতে পারবে না। একই রূপ হাত পড়েছে দেশের কৃষি ও শিল্পাঙ্গনেও। সরকারের বাণিজ্যনীতির কারণে ভারত থেকে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় নিম্মমানের সস্তাপন্য। ফলে বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। বাংলাদেশের কৃষকগণ তাই বাজার না পেয়ে রাস্তায় উপর তাদের দুধ ঢেলেছে। বন্ধ হয়েছে দেশের নিজস্ব সূতা তৈরীর কারখানা। হাত পড়েছে দেশের তাঁতীদের গায়েও। মুজিবামলেও এমনটিই ঘটেছিল। তখন দেশী কারখানায় তালা লাগানো শুরু হয়েছিল। আগুনে ভস্মিভূত হয়েছিল বহু পাটের গুদাম। ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া দেশের জন্য তখন আর রাস্তাই খোলা রাখা হয়নি।
আক্রোশ ইসলামের বিরুদ্ধে
তবে আওয়ামী সরকারের মূল আক্রোশ শুধু শিক্ষা, শিল্প, কৃষি বা সেনাবাহিনীর উপর নয়, বরং সেটি ইসলাম ও তার মৌল-বিশ্বাসের প্রতি। এটিকেই তারা তাদের রাজনীতির মূল শত্রু ভাবে। ইসলামের সে বিশ্বাসকে মৌলবাদ বলে সেটির নির্মূলে তারা কোঁমড় বেধেছে। সম্প্রতি তারা উদ্যোগ নিয়েছে, দেশের শাসনতন্ত্র থেকে “সর্বশক্তি মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি উচ্ছেদ করবে। এ উচ্ছেদ কাজে তারা দেশের সেকুলার আদালতকে হাতিয়ার রূপে বেছে নিচ্ছে। অতীতে দেশের সেকুলার আদালত থেকে এ রায় হাসিল করেছিল যে “সর্বশক্তি মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি দেশের শাসতনন্ত্র বিরোধী। বিএনপি সরকার ঢাকা হাইকোর্টের সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করিছিল। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সে রায়টি এতটাই মনঃপুত হয়েছে যে সে রায়ের বিরুদ্ধে তারা আর আপিল করবে না। “সর্বশক্তি মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। এভাবেই বাতিল হবে ইসলামের একটি মৌলিক বিশ্বাস। সরকার এখন উদ্যোগ নিয়েছে দেশের সেকুলার আদালতের সাহায্যেই তারা সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করবে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”। বাংলাদেশের আদালতে ব্যভিচার কোন হারাম কর্ম নয় যদি সেটি দুইপক্ষের সম্মতিতে হয়। হারাম নয় সূদও। কিন্তু সে আদালতেই নিষিদ্ধ হলো “সর্বশক্তি মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস”। এমন আদালত থেকে মুসলমান আর কি আশা করতে পারে? এজন্য তো কোরআনে শুধু নামায-রোযা-হজ-যাকাদের তাগিদ দেওয়া হয়নি। তাগিদ দেওয়া হয়েছে শরিয়ত ভিত্তিক আদালতের প্রতিষ্ঠায়। ইসলামে এটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জমিনের উপর কাফেরদের দখলদারীর বিলুপ্তি ও আল্লারহর সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো এ শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কাজ। একাজে যার উদ্যোগ নাই মহান আল্লাহতায়ালা তাকে কাফের, জালেম ও ফাসেক এ তিনটি বিশেষণে আখ্যায়ীত করেছেন। সুত্রঃ সুরা মায়েদার পর পর তিনটি আয়াত (৪২,৪৩ ও ৪৪)। চোর-ডাকাত, ব্যাভিচারী, সূদখোর বা খুনীকেও কোরআনের কোথাও তিনি এভাবে আখ্যায়ীত করেননি। এ দায়িত্ব তাই শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সাধিত হতে পারে না। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা এখানে অপরিহার্য। শয়তানের মূল শত্রুতাটিও মূলতঃ এখানে, নামায-রোযা-হজ-যাকাত নিয়ে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের তাবত কাফের দেশ মুসলমানদের মসজিদ স্থাপনে বাধা দেয় না। বরং জমি ও অর্থ দিয়ে সাহায্যও করে। ব্রিটিশ সরকার এককালে ভারতে আলিয়া মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছে। হোটাইস হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইফতারির দাওয়াতও দেয়, ঈদের পূর্ণঃমিলনী করে। কিন্তু বিশ্বের কোথাও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার সামান্য প্রমান পেলে তারা সেখানে তৎক্ষনাৎ যুদ্ধ শুরু করে। আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার মূল কারণ তো এটিই। একই লক্ষে তারা এখান মিজাই মারছে পাকিস্তানের অভ্যন্তুরে। এবং কোয়াশিন গড়ছে পাকিস্তানের সেকুলার সরকার ও আর্মির সাথে।
সব গরুই যেমন ঘাস খায়, তেমনি সবদেশের সেকুলারদের আচরণ একই রূপ ইসলাম বিরোধী। তুরস্কের আদালতে কতজন ব্যাভিচারী বা সূদখোর দন্ডিত হয়েছে সে খবর নেই। কিন্তু সেদেশের একজন শিশুও আদালত থেকে মাথায় রুমাল বাধার অনুমতি পায়নি। রুমাল বাধা সেখানে অপরাধ। অথচ মহিলাদের মাথা না-ঢাকা বা বিপর্দা হওয়া হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ। এমন বিদ্রোহীর নামায-রোযা কি কবুল হয়? কবুল হয় কি কোন দোয়া। সম্ভব হয় কি তার পক্ষে মুসলমান হওয়া? কারণ, মুসলমান হওয়ার অর্থই আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য। আর বিদ্রোহীকে বলা হয় কাফের। আল্লাহর বিরুদ্ধে সে বিদ্রোহের সে ধ্বনিই এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সরকারের এ্যাটর্নি জেনারেল সম্প্রতি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” সংবিধানের কোন অংশই নয়। তার াভাষায় তাই সেটির সংবিধানে থাকার কোন অধিকারই নাই। যেখানে ইসলাম ও আল্লাহর নাম, তাদের কাছে সেটিই সাম্প্রদায়ীকতা। আল্লাহর উপর আস্থা তাদের কাছে যেমন সাম্প্রদায়িক কুসংস্কার, তেমনি প্রগতি-বিরোধীও। তাদের সাফ জবাব, এমন কুসংস্কার (?) ও প্রগতি-বিরোধী (?) বিশ্বাসকে তারা শাসনতন্ত্রে স্থান দিতে রাজি নয়। শুধু তাই নয়, তারা বাদ দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় ধর্ম রূপে ইসলামকেও। কথা হলো, এমন কাজ কি কোন ঈমানদারের হতে পারে? মুসলমানের কাজ তো শুধু শাসনতন্ত্রে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম রূপে ঘোষনা দেওয়া নয়, বরং দায়িত্ব হল আল্লাহর বিধানের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা করা। সে শুধু মুখেই আল্লাহু আকবর বলবে না, কর্মের মধ্য দিয়েও সে সাক্ষী দিবে। সেটি শুধু মসজিদে নয়, শাসতন্ত্রেও ধ্বণিত হবে। মার্কিনীরা ডলারের নোটের উপর বড় বড় হরফে লিখে “WE TRUST IN GOD” অর্থ আমরা আল্লাহর উপর আস্থা রাখি। আল্লাহর নির্দেশকে তারা কতটুকু মানে এখানে সেটি বড় কথা নয়, আল্লাহর প্রতি এটি তাদের ণ্যূনতম ভদ্রতা বা শালীনতা। কিন্তু মহান আল্লাহর সাথে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সে শালীন আচরণটুকুও করতে রাজী নয়। আল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের অশালীন ও অভদ্র আচরণের মাত্রা এতটাই তীব্র যে, আল্লাহর আইন তথা শরিয়তকে তারা বাংলাদেশের আদালত-গৃহে ঢুকতে রাজী নয়। এমন কি বরদাশত করতে রাজি নয় শাসনতন্ত্রে আল্লাহর নামকেও। আল্লাহর সাথে এর চেয়ে বড় অশালীন ও উদ্ধত আচরন আর কি হতে পারে? আরও লক্ষণীয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামের সাথে এমন অশালীন আচরনের পরও তা নিয়ে রাজপথে কোন প্রতিবাদ নেই, কোন আন্দোলন নাই। এরপরও কি একটি দেশের জনগণ আল্লাহর নেয়ামত পেতে পারে? এটি তো আযাবপ্রাপ্তির পথ। কোরআনে বর্নিত আদ-সামুদ গোত্র, বনি ইসরাইল ও মাদাইনের অধিবাসীদের অবাধ্যতা বা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কি এর চেয়েও গুরুতর ছিল। তাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট কোরআন ছিল না যা বাংলাদেশীদের কাছে আছে। কিন্তু সে কোরআনী বিধানের প্রয়োগটি কোথায়?
মুসলিম হওয়ার দায়বদ্ধতা
মুসলিম হওয়ার সবচেয়ে দায়বদ্ধতা হলো, সে হবে আল্লাহর অতি অনুগত খলিফা বা প্রতিনিধি। রাষ্ট্রের প্রতিনিধির কাজ হলো রাষ্ট্রের আইনের সর্বত্র অনুসরণ ও প্রয়োগ। সে দায়িত্ব “আমিও মুসলমান” -শুধু এ কথা বলার মধ্য দিয়ে পালিত হয় না। আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হওয়ার চেতনা মুসলিম মনে প্রচন্ড এক বিপ্লবী চেতনার জন্ম দেয়। সরকারের ডিসি, এসপি বা কমিশনার হওয়ার চেয়েও এ চেতনার শক্তি এবং দায়িত্ববোধ অনেক বেশী। কারণ সরকারের ডিসি, এসপি বা কমিশনার হওয়ায় কিছু বেতন বা বাড়ী-গাড়ী জুটে, বেহেশত পাওয়ার প্রতিশ্রুতি তো মেলে না। এমন এক চেতনা নিয়ে ঈমানদার যখন জায়নামাযে দাঁড়াবে তখন সে আনুগত্যে সেজদায় লুটিয়ে পড়বে। আর যখন সে রাজনীতিতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইন তথা শরিয়তকে প্রতিষ্ঠার কাজে নিজের জানমাল বিলিয়ে দিবে। নবীজীর শতকরা ৬০ ভাগ সাহাবা সে কাজে শুধু অর্থ ও শ্রম-দানই করেননি, প্রাণও দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীগণের বিপুল ভাগ নিজেদের মুসলমান রূপে দাবী করলেও সে বিণিয়োগটি কই? দায়িত্ব-পালন দূরে থাক, তারা এখন কোমড় বেঁধেছে সে দায়িত্বপালনের চেতনাকে বিলুপ্ত করায়। খেলাফতের দায়িত্বপালনের চেতনাকে তারা বলছে মৌলবাদ। বলছে রাজাকারের চেতনা। আর সে ইসলামি চেতনার বিলুপ্তি সাধনের চেতনাকে বলছে একাত্তরের চেতনা। মহান আল্লাহতায়ালার সাথে এমন অশালীন ও অবাধ্য আচরণ কি ব্যক্তি ও জাতির জন্য কোন কল্যাণ ডেকে আনে? আল্লাহর বিরুদ্ধে মুজিবের অবাধ্য আচরণ সত্তরের দশকে বাংলাদেশের বুকে আযাব ডেকে এনেছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ তখন না খেয়ে বা প্রলয়ংকরি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে মরেছে। আদ-সামুদ গোত্র, মাদানের অধিবাসী, নমরুদ বা ফিরাউনের বাহিনীরও এত লোকক্ষয় হয়নি যতটা বাংলাদেশের বুকে ঘটে যাওয়া সেসব প্রলয়ংকরি আযাবে। প্রচন্ড তান্ডব নেমে এসেছিল মুজিবের পরিবারের উপরও। এমন ঘটনা গাছের ঝরা-পাতা পড়ার ন্যায় মামূলী ব্যাপার ছিলনা। অথচ ঝরে পড়া পাতাটিও মাটিতে পড়ে আল্লাহর অনুমতি নিয়ে। আল্লাহর অনুমিত ছাড়া কোন সামুদ্রীক ঝড়ের কি সামর্থ আছে মানুষ হত্যা দূরে থাক গাছের একটি মরা পাতা ফেলার? মানুষ তো বাচে মরে তো আল্লাহর অনুমতি নিয়েই। প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগ নেতাদের কি সে বিশ্বাস আছে? আল্লাহর নিয়ামতকে নিয়ামত আর আযাবকে আযাব বলার সামর্থ সবার থাকে না। সে সামর্থ আসে একমাত্র ঈমানের বলে। সেটিই হলো ইসলামি চেতনা। সেকুলার চেতনায় সে সামর্থ নির্মিত হয় না। এজন্যই আল্লাহর আযাবকে তারা আযাব বলতে চায় না। বলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর এভাবে আযাবকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে আল্লাহর কুদরতকেই তারা আড়াল করতে চায়। আড়াল করতে চায় আল্লাহর সাথে তাদের কৃত কদর্য আচরণকেও। অথচ ঈমানদার হওয়ার জন্য চেতনার এ সামর্থটুকু অতি ণ্যূনতম প্রয়োজন। এটুকু না থাকলে কি তাকে মুসলমান বলা যায়? আর তেমন একটি বিশ্বাস থাকলে কোন ব্যক্তি কি “সর্বশক্তি মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস” এর ন্যায় কথাটি শাসতন্ত্র থেকে বিলুপ্তি করতে পারে? আওয়ামী ক্ষমতায় এসেছিল নতুন প্রতিশ্রুতিতে। কিন্তু কার্যতঃ তারা অনুসরণ করছে শেখ মুজিবের সেই পুরনো নীতিকেই। ফলে মুজিবী আমলের ন্যায় আজও চলছে আল্লাহর আযাবকে অতি দ্রুত নীচে নামিয়ে আনার কাজে। সে লক্ষ্যেই আজ তীব্রতা পাচ্ছে আল্লাহর প্রকাশ্য অবাধ্যতায়। ষড়যন্ত্র হচ্ছে ইসলাম ও ইসলামের অনুসারিদের বিরুদ্ধে। ইসলামপন্থিদের নির্মূলে আঁতাত গড়া হচ্ছে ইসলাম-বিরোধী কাফেরদের সাথে। ফলে বিপর্যয় যে অনিবার্য তা নিকে সামান্যতম সন্দেহ আছে? তবে কথা এহলো এ অবস্থায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোন পথটি বেছে নিবে? আল্লাহর বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহের মুখে জনগণের নীরবতা কি আদৌ ঈমানদারীর লক্ষণ? আল্লাহর খফিফার দায়িত্ব কি এ বিদ্রোহের নীরব দর্শক হওয়া। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহ হতে দেখলে কোন রাজকর্মচারি কি সেটি নীরবে দেখে? তাতে কি তার চাকরি থাকে? অথচ মুসলমানদের অপরাধ আজ এরচেয়েও গুরুতর। আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানগণ আল্লাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত এ বিদ্রোহের মুখে নীরব বা নিরপেক্ষ থাকছে তা নয়, বরং ভোট দিচ্ছে, অর্থ দিচ্ছে, মেধা ও শ্রম দিচ্ছে সে বিদ্রোহী শক্তিটির পক্ষে। ফলে আযাব শুধু সরকারকে নয়, জনগণকেও যে ঘিরে ধরবে তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে। তখন শান্তি, সুখ, নিরাপত্তা বিদায় নেয় প্রতিটি ঘর থেকে। নিরাপত্তার খোজে মানুষ তখন ঘর ছেড়ে বনে জঙ্গলেও আশ্রয় নেয়। বাধ্য হয় দেশ ছাড়তেও। মুজিব আমলে তো সেটিই ঘটেছিল। আজও কি বাংলাদেশ অতি দ্রুততার সাথে সেদিকেও ধেয়ে চলছে না?
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018