আখেরাতের ভয়ঃ মানবকে যা মহামানব করে
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 26, 2018
- ইসলাম
- No Comments.
বিপ্লব আনে চেতনায়
ঈমানের অর্থ স্রেফ আল্লাহতায়ালা,তাঁর রাসূল,তাঁর কিতাব ও ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস নয়,বরং অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো আখেরাতের উপর ঈমান।আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয় আমূল বিপ্লব আনে মু’মিনের সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে। মক্কার কাফেরদের মূল সমস্যাটি আাল্লাহর উপর বিশ্বাস নিয়ে ছিল না।আল্লাহকে তারা নবীজী (সাঃ)র জন্মের পূর্ব থেকেই বিশ্বাস করতো।হযরত ইব্রাহীম (আাঃ)এবং হযরত ইসমাঈল (আাঃ)যে আল্লাহর নবী ছিলেন -তা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। সন্দেহ ছিল না ক্বাবা যে আল্লাহর ঘর -তা নিয়েও। কিন্তু বিশ্বাস করতো না আখেরাতকে। তাদের মনে ভয় ছিল না আল্লাহর কাছে জবাবদেহীতার। তারা বিশ্বাস করতো না যে,মৃত্যুর পর মাটিতে মিশে যাওয়া হাড্ডি-গোশতে আবার প্রাণ সঞ্চার হবে। মক্কার কাফেরগণ যে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখতো সে সাক্ষ্যটি দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা।পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন,“বল!এ পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সেগুলি কার জন্য,জানলে জবাব দাও। তারা বলবে,“আল্লাহর”। জিজ্ঞেস করো (হে নবী),“কে সপ্ত আকাশ এবং মহা আরশের অধিপতি?” ওরা বলবে,“আল্লাহ”।–জানলে বল,“সকল কিছুর কতৃত্ব কার হাতে -যিনি আশ্রয় দেন এবং যাঁর উপর কোন আশ্রয়দাতা নেই? ওরা বলবে,“আল্লাহর”। বল,তবুও কি তোমরা এ নিয়ে মোহগ্রস্ত?” –(সুরা মু’মিনুন আয়াত ৮৪-৮৯)।
নিছক আল্লাহর উপর ঈমান মানুষকে পাপকর্ম থেকে বাঁচায় না। সে জন্য চাই আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয়। সে ভয় না থাকায় আল্লাহর উপর বিশ্বাস নিয়েও আরবের কাফেরগণ নির্ভয়ে সর্বপ্রকার পাপকর্মে লিপ্ত হতো। তারা আখেরাতের পুনরুত্থানকে শুধু যে অবিশ্বাস করতো তা নয়,সেটিকে তারা আদিম কেচ্ছাকাহিনী বলে মস্করা করতো।পবিত্র কোরআনের সে বর্ণনাটি এসেছে এভাবে,“ওরা বলে,“আমাদের মৃত্যু হলে এবং আমরা মাটি ও অস্থিতে পরিণত হলেও কি আমরা উত্থিত হবো?—এ তো পূর্ববর্তীদের কল্পকথা ছাড়া কিছুই না” –(সুরা মু’মিন আয়াত ৮২-৮৩)। ফলে তাদের মধ্যে আখেরাতের বিশ্বাস যেমন ছিল না,তেমনি জবাবদেহীতার ধারণাও ছিল না।সর্বশক্তিমান এক খোদা,ঈশ্বর বা প্রভুর উপর বিশ্বাস বিশ্বের বহু মানুষের। এমনকি বহু হিন্দুও এক ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে। কিন্তু সে বিশ্বাসের সাথে রোজ-হাশরের বিচারদিনের ধারণা নেই। বরং আছে পুনজর্ন্মের ধারণা।আল্লাহতায়ালা,তাঁর রাসূল ও তাঁর কিতাবের উপর খৃষ্টানগণও বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করে আখেরাতের উপরও। কিন্তু তাদের সে বিশ্বাসে চরম গোঁজামিল রয়ে গেছে আখেরাতের জবাবদেহীতা নিয়ে। খৃষ্টানদের বিশ্বাস,যীশুখৃষ্টের উপর ঈমান আনার কারণে তারা সকল প্রকার গুণাহর শাস্তি থেকে মুক্ত। আল্লাহর দরবারে তাদের দাঁড়াতে হবে না। জাহান্নামের শাস্তির প্রশ্নও উঠেনা। জান্নাত তারা পাবেই। তারা মনে করে,তাদের সকল পাপের প্রায়শ্চিত্ত বা কাফ্ফারা হয়ে গেছে,সেটি খোদ যীশু খৃষ্টের শূলে চড়ার মধ্য দিয়ে। তাদের বিশ্বাস,যীশুখৃষ্ট খোদার পুত্র এবং নিজেও খোদা। খৃষ্টান হওয়ার মূল দায়বদ্ধতা শুধু এটুকুই,যীশুখৃষ্টকে ঈশ্বর রূপে বিশ্বাস করা এবং তার কাছে প্রার্থণা করা। তারা মনে করে,এ বিশ্বাস ও প্রার্থণার কারণে খৃষ্টান নরনারীগণ তাদের সকল পাপের জবাবদেহীতা ও শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।
মানুষ যা কিছু তার হাত দিয়ে করে বা মুখ দিয়ে বলে সেগুলির সিদ্ধান্তটি তার হাত বা মুখ নেয় না। সিন্ধান্ত আসে তার মগজ থেকে। মগজে কাজ করে জীবন ও জগত নিয়ে তার নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস। তাই মানুষের কর্মে ও আচরণে বিপ্লব আনতে হলে তার ধ্যাণ-ধারণা ও বিশ্বাস হাত দিতে হয়। ইসলামে সে ধ্যান-ধারণা বা বিশ্বাসকেই বলা হয় ঈমান। আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয় না থাকায় আল্লাহ,তাঁর রাসূল ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও খৃষ্টানদের জীবনে কোনরূপ চারিত্রিক বিপ্লব আসেনি। বরং আচার-আচরণ,কর্ম ও চরিত্রে তারা রয়ে গেছে খৃষ্টানধর্ম-পূর্ব ইউরোপীয় পৌত্তলিক বা প্যাগানদের মতই। মদ্যপান,সূদ,জুয়া,অশ্লিলতা,ব্যাভিচার,সমকামিতা,মানুষ খুন ও ইথনিক ক্লিনজিংয়ের ন্যায় ভয়ংকর অপরাধগুলোকেও তারা হালাল করে নিয়েছে। অবস্থা দাঁড়িয়েছে,খৃষ্টানদের কাছে হারাম কর্ম ও হারাম আচরণ বলে যেমন কিছু নাই,তেমনি হারাম খাদ্য ও পানীয় বলেও কিছু নেই। ইবাদত বলতে যা বুঝায় তা হলো,গলায় ক্রশচিহ্ন ঝুলানো,বড় বড় চার্চ নির্মান,এবং সেখানে সপ্তাহে মাত্র একদিন জমা হয়ে স্রষ্টার নামে সমবেত কন্ঠে গান গাওয়া।তবে সেসবের আয়োজনও আজকাল বহুল ভাবে কমে গেছে। চার্চগুলো হয়ে পড়েছে জনশূণ্য। দেশের আইন-আদালত থেকে ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্নীত আইনগুলোকে তারা বহু পূর্ব থেকেই রহিত করে দিয়েছে। ধর্মকে খৃষ্টানগণ শুধু রাষ্ট্র থেকেই বিদায় দেয়নি,বিদায় করেছে খোদ চার্চ থেকেও। অথচ হযরত ঈসা (আঃ) কোন নতুন শরিয়ত নিয়ে আসেননি,তাঁর আগমনই ঘটেছিল হযরত মূসা (আঃ)এর উপর অবতীর্ণ তাওরাতের আইনগুলোর দিকে ফিরিয়ে নিতে।
শুধু সাধারণ খৃষ্টানগণই নয়,খৃষ্টান ধর্মীয় নেতা পোপ ও বড় বড় ধর্মযাযকগণও ব্যর্থ হয়েছে উন্নত চরিত্রের প্রমাণ দিতে। তাদের বীভৎস বর্বর চরিত্রের ইতিহাস ধরা পড়ে পোপের পরিচালিত ক্রসেডারদের হাতে জেরুজালেম অধিকৃত হওয়ায়। সেসময় জেরুজালেমের রাস্তায় মুসলমানদের রক্তে হাঁটুসমান প্লাবন ছুটেছিল। শিশু,বৃদ্ধ,মহিলাগণও সে গণহত্যার কবল থেকে রেহাই পায়নি। রক্ষা পায়নি তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। সে বীভৎসতার বিবরণ পাওয়া যায় এমনকি ইউরোপীয়দের লেখা ইতিহাসের বইতেও। নিষ্ঠুরতায় তারা হালাকু-চেঙ্গিজের বর্বরতাকেও অতিক্রম করেছিল। অথচ এ শহরটির উপর মুসলমানগণও একসময় বিজয়ী হয়েছিল। সেটি হযরত ওমর (রাঃ)র আমলে। সে বিজয়কালে কোন ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের ক্ষতি হয়নি,একবিন্দু রক্তও মাটিতে পড়েনি।উচ্চতর ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টিতে খৃষ্টান ধর্মের অনুসারিগণ সামান্যতম সফল হলেও কি সাম্রাজ্যবাদ,ঔপনিবেশবাদ,বর্ণবাদ,জাতীয়তাবাদ,বস্তুবাদ,পুঁজিবাদ,কম্যুনিজম এবং এথনিক ক্লিনজিংয়ের ন্যায় মানবতাবিরোধী ঘাতক মতবাদগুলো কি খৃষ্টান পাশ্চাত্যে জন্ম নিত?
আনে প্যারাডাইম শিফ্ট
যে কোন বিপ্লবই সর্বপ্রথম বিপ্লব আনে মানুষের চেতনা রাজ্যে।তাতে পাল্টে যায় ধ্যান-ধারণা ও চিন্তার মডেল। চেতনার মানচিত্রে সে বিপ্লবটি না এলে চারিত্রিক,রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক বিপ্লব অসম্ভব। বিপ্লব তখন বইয়ের পাতায় থেকে যায়। ইউরোপে আজ যে রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও শিল্প বিপ্লব তার পিছনেও রয়েছে চিন্তার মডেলে বিপ্লব। এক সময় ইউরোপের মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবীটা থালার মত সমতল,এবং নীচে নরক। এটি ছিল টলেমীর ধারণা। ফলে মানুষ বিশ্বাস করতো,সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর দিয়ে লাগাতর জাহাজ চালালে রাতের আঁধারে তারা এক সময় কেনারা ডিঙ্গিয়ে নীচে নরকে গিয়ে পড়বে। ফলে তারা সমুদ্র যাত্রায় ভয় পেত। কিন্তু সে ধারণা পাল্টে দেন কোপারনিকাস। তিনি বলেন, পৃথিবী থালার মত নয়,ডিমের ন্যায় গোলাকার। ফলে লাগাতর চললেও নীচে পড়ার সম্ভাবনা নেই,বরং যেখান থেকে যাত্রা শুরু সেখানে আবার ফিরে আসা যায়। বরং পিঁপড়া যেমন কোন বলের নীচের দিক দিয়ে হাঁটলেও পড়ে যায় না,মানুষও তেমনি পৃথিবীর অপর পৃষ্ঠ দিয়ে চললেও নীচে পড়বে না। সে বিপ্লবী ধারণা বিপ্লব আনে কলম্বাস ও কুকের ন্যায় শত শত সমুদ্রগামী নাবিকের মনে। পাশ্চাত্যবাসীর চিন্তার মোড়ই তাতে পাল্টে যায়। ফলে সে নতুন বিশ্বাস নিয়ে তারা সমুদ্র জয়ে নামে। ফলে আবিস্কৃত হয় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড এবং আরো বহু দেশ ও দ্বীপ। ফলে ইউরোপ জুড়ে আসে সম্পদের প্রাচুর্য,আসে অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও সামরিক বিপ্লব। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় চিন্তাজগতের এ বিপ্লবই হলো প্যারাডাইম শিফ্ট।
ইসলামও আরবের বর্বর মানুষদের জীবনে এক মহাবিপ্লব এনেছিল। সে বিপ্লবের কারণ,পরকালে জবাবদেহীতার ভয়।মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের জীবন হারিয়ে যাবে,আর কোন পুনরুত্থান নেই,হিসাব-নিকাশও নেই –আরবদের সে পুরোন বিশ্বাসের স্থলে জন্ম নেয় কিয়ামত,আখেরাত, দোযখ-বেহেশত এবং আল্লাহর সামনে নিজ নিজ কর্ম নিয়ে হিসাব দেয়ার ধারণা। ফলে তাদের জীবনের মোড়ই তখন পাল্টে যায়। জাহান্নামমুখি মানুষগুলি তখন রাতারাতি জান্নাতমুখি হয়। তখন আমূল বিপ্লব আসে তাদের ধর্ম,কর্ম,চরিত্র,আচরণ,সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে। ইসলাম কবুলের অর্থ তাই নামের বদল নয় বরং জীবনের বদল। অপর দিকে যেখানে সে জবীবদেহীতার ভয় নাই,সেখানে আগ্রহ নাই চারিত্রিক পরিশুদ্ধির। জবাবদেহীতার ভয়ই মানুষকে তার প্রতিটি কর্ম,প্রতিটি কথা ও প্রতিটি আচরণে সার্বক্ষণিক সাবধানতা দেয়। কারণ সে জানে,আল্লাহর কাছে সেগুলি যেমন মহামূল্যবান পুরস্কার আনে,তেমনি শাস্তিও আনে। সে পুরস্কারের মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা দিয়ে বিচার হয় না। আখেরাতের শাস্তি বা ক্ষতির বিচার কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি দিয়ে হয় না। জান্নাতের এক ইঞ্চি ভূমিও কি হাজার হাজার কোটি টাকা বা পৃথিবীর সমান সোনা দিয়ে কেনা যায়? হিমালয়-সমান সম্পদ দিয়ে জাহান্নামের একদিনের শাস্তি থেকেও নাজাত মিলবে? কিন্তু বিশাল জান্নাত ও তার প্রাসাদ কেনা যাবে ভাল কর্ম,ভাল কথা ও ভাল আচরণের মধ্য দিয়ে। সেগুলি কিনতে অর্থ লাগে না। লাগে নেক নিয়েত,লাগে নেক আমল, লাগে আল্লাহর পথে লাগাতর প্রয়াস। ফলে সেটি সম্ভব হয় একজন ভূমিহীন কৃষক,গৃহহীন দুস্থ্য বা নিঃস্ব দিনমুজুরের পক্ষেও। আখেরাতে বিচার দিনের ভাবনা এভাবেই মানুষের প্রতিটি কর্ম,প্রতিটি কথা বা প্রতিটি আচরনকে বহু হাজার কোটি টাকার চেয়েও মূল্যবান করে গড়ে তোলে। আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিটি তখন নেক কর্মে রাতদিন ব্যস্ত হয়। হাজার কোটি টাকার লাভের ব্যবসায়ে মানুষ আর কতোই বা ব্যস্ত হয়? তার চেয়ে বহুগুণ বেশী ব্যস্ত হয় আখেরাতে বিশ্বাসী মানুষটি। কারণ তার প্রতি মিনিটের কামাই হাজার কোটি দিয়ে কেনা যাবে না। ঈমানদারের জীবনে তখন প্রচণ্ড গতিময়তা আসে নেক কর্মে। পবিত্র কোরআনেও মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সে উপদেশটি এসেছে এভাবেঃ “বেগবান হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও জান্নাত লাভে,যার প্রশস্ততা জমিন এবং আসমানের সমান,যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৩৩)।
আজকের মুসলমানদের বড় ব্যর্থতা,ইসলাম তাদের জীবনে পূর্ব-আমলের ন্যায় প্যারাডাইম শিফ্ট তথা চিন্তার জগতে বিপ্লব আনতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ব্যর্থ হয়েছে প্রকৃত মুসলমান রূপে বেড়ে উঠায়। একারণে ব্যর্থ হয়েছে ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে। ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাতে মনযোগী হওয়া নয়,বরং প্রতি মুহুর্তে আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয় নিয়ে বাঁচা। মু’মিন ব্যক্তি তখন নেককর্মে আমৃত্যু বেগবান হয়। মু’মিন ব্যক্তি তখন বিছানায় শুয়ে দিবাস্বপ্ন দেখে না। মসজিদ,মক্তব,পীরের দরবার বা নিজের ঘরে বসে আলস্যে সময় কাটায় না। বরং প্রতিটি দিনের প্রতিটি মুহুর্তকে সে সৃষ্টিশীল করে। একারণেই ঈমানদারদের দেশে সৎকর্মে দ্রুত মহাজোয়ার আসে,আসে সুনীতির প্রচণ্ড প্লাবন। আসে সম্পদের প্রাচুর্য।গড়ে উঠে জ্ঞানের মহাভূবন। তখন দেশ গড়তে বেতনভোগী বিশাল সরকারি বাহিনী লাগে না। দেশের প্রতিরক্ষায় বেতনভোগী সৈনিকও লাগে না। জনগণ নিজ খরচে ও নিজের জানমাল দিয়ে সে কাজে লেগে যায়। জনগণ নিজেরাই পরিণত হয়ে নিবিদিত-প্রাণ সৈনিক ও পুলিশে। কারণ,তারা জানে জানমালের এমন বিনিয়োগে জান্নাত পাবে পরকালে। সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটাতে হাজার মোজাহিদ তাদের বহু হাজার মাইল দূরের নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিজ অর্থ ব্যয়ে আফগানিস্তানে ছুটে এসেছিলেন,সেখানে তারা নিজ অর্থ,নিজ শ্রম ও নিজ প্রাণের কোরবানী দিয়েছেন তো এমন একটি আখেরাতমুখি চেতনার কারণেই। অথচ আফগানিস্তান তাদের নিজেদের জন্মভূমি ছিল না। কোন সেক্যুলার সামরিক বা বেসামরিক কর্মকর্তা কি নিজ দেশের জন্যও এমন কোরবানী দিবে?
ঈমানদার ব্যক্তি জানে,মাগফেরাত বা জান্নাত লাভের মূল চাবিটি অলস বিশ্বাসে নয়,বরং নেক নিয়েত ও নেক আমলে। এমন চেতনায় মুসলিম ভূমিতে জ্ঞানের রাজ্যে আসে মহাবিপ্লব। কারণ নেক আমলের শুরুটি তো কোরআনী জ্ঞানার্জন থেকে। কারণ,কোরআনের জ্ঞান ছাড়া ব্যক্তির আক্বিদা-বিশ্বাস যেমন সঠিক হয়না,ইবাদত-বন্দেগী বা কাজকর্মও সঠিক ভাবে হয় না। তাই মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ নেক কর্ম হলো কোরআনী জ্ঞানার্জন। একারণেই নামায-রোযার আগে জ্ঞানার্জনকে ইসলাম ফরয করা হয়েছে। মুসলমানদের জীবনে নেক আমলের সে জোয়ারটি অতীতে এতটাই প্রকাণ্ড ভাবে এসেছিল যে আরবের মুর্খ মানুষগুলো অতি অল্প সময়ে সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে সুশিক্ষিত মানুষে পরিণত হয়েছিল। অথচ কোরআনের আগে আরবী ভাষায় কোন বই ছিল না। জ্ঞানচর্চায় তৎকালীন মুসলমানদের অতিশয় নিষ্ঠার কারণে দ্রুত সমৃদ্ধি আসে আরবী ভাষায়। তাফসির, ফিকাহ, হাদীস,ইতিহাস,ভূগোল,ভাষা,দর্শনসহ সর্বক্ষেত্রে দ্রুত গড়ে উঠে জ্ঞানের বিশাল ভূবন।
তবে নিজে মুসলমান হওয়া বা নিজে জ্ঞানী হওয়ার মধ্য দিয়ে ঈমানদারের দায়িত্ব শেষ হয় না। বরং বাড়ে। সেটি অন্যদের কাছে সে দাওয়াত ও সে জ্ঞানকে পৌঁছে দেয়ার। মুসলমান হওয়ার অর্থ মূলতঃ দায়িত্ববান মানুষ রূপে বেড়ে উঠা। ঈমান গভীরতা যার মধ্যে যত বেশী,ততই বাড়ে তার মধ্যে এ দায়িত্ববোধ। ব্যক্তির ঈমান তো এভাবেই দৃশ্যমান হয়। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের জীবনে তাই জ্ঞানচর্চার সাথে প্রচণ্ড গতি এসেছিল ইসলামের দাওয়াত অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে তারা দ্রুত পৌছেছিলেন এশিয়া,আফ্রিকা ও ইউরোপের বিশাল ভূ-ভাগে। সে কাজে শত্রুর বাধা সরাতে তারা জানমালের কোরবানীও দিয়েছেন। ফলে জোয়ার এসেছিল সর্বশ্রেষ্ঠ নেকআমল জিহাদেও। নবীজী (সাঃ)র আমলে এমন কোন মুসলমানই ছিল না যে জিহাদে শরীক হননি। ফলে অতি দ্রুততার সাথে বেড়েছিল সামরিক শক্তি। মাত্র কয়েক দশকে মুসলমানগণ পরিণত হয় প্রধান বিশ্বশক্তিতে। মাগফেরাত ও জান্নাত লাভে বেগবান হওয়ার যে কোরআনী নির্দেশ,সেটি পালনে সেকালের মুসলমানগণ সামান্যতম গাফলতি দেখাননি।
মানব যেভাবে মহামানব হয়
আখেরাতে মুক্তির ভাবনা মু’মিনের জীবনে সর্বসময়ের ইঞ্জিন। সে ভাবনা তাকে প্রতি কদমে সৎ পথে চালিত করে। ধাবিত করে নেক আমলের দিকে। মু’মিনের কর্মগুলি তো একারণেই সৎকর্ম হয়। তাঁর প্রতিটি কথা ও প্রতিটি লেখনিও তখন জ্ঞানপূর্ণ ও কল্যাণমুখি হয়। এমন ব্যক্তিগণ আজীবন মিশনারি হয়। ইসলামের শত্রু পক্ষের মোকাবেলায় এমন ব্যক্তি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে ও প্রতি মুহুর্তে লড়াকু সৈনিক। আমৃত্যু সে যোদ্ধা। সেটি যেমন নিরস্ত্র বুদ্ধিবৃত্তির জিহাদে,তেমনি সশস্ত্র জিহাদে। এমন ব্যক্তির সমগ্র জীবন জুড়ে থাকে আল্লাহর পথে দৌড়ানোর এক প্রচণ্ড গতিময়তা। নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ তো তেমন এক প্রচণ্ড তাড়াহুড়া নিয়েই নিজ নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তের দিকে ছুটেছিলেন। বহু পাহাড়,বহু নদনদী ও বহু মরুভূমি পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার মাইল দূরের দেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘুরেছেন,জিহাদ লড়েছেন এবং শহীদও হয়েছেন। তাদের ক’জনের কবর মক্কা-মদিনায় বা আরব ভূমিতে পাওয়া যাবে? আখেরাতের ভাবনায় ঈমানদারের প্রতিটি কর্ম,প্রতিটি ভাবনা,প্রতিটি দৌড়,প্রতিটি মুচকি হাঁসিও তখন পরিণত হয় মহামূল্য ইবাদতে। নদীর স্রোত যখন থেমে যায় তখন নদীর বুক চড়ায় ভরে উঠে। তেমনি মু’মিনের জীবনে যখন আল্লাহর পথে দৌড়ের গতিময়তা থেমে যায় তখন নেক আমলও থেমে যায়। তখন বাড়ে দুর্বৃত্তি।ইসলামের শত্রুনির্মূলের জিহাদ তখন সন্ত্রাস মনে হয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তখন দুষ্কর্মে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। যেমনটি ঘটেছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। নবীজী (সাঃ)র জিহাদ এবং তাঁর রাষ্ট্রপরিচালনা,ইসলামের শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদে বিপুল সংখ্যক সাহাবার শাহাদাত,খোলাফায়ে রাশেদার রাষ্ট্রশাসন ও রাজ্যবিস্তার,বিশ্বশক্তি রূপে মুসলিম উম্মাহর উত্থান –ইসলামের ইতিহাসের এসব গৌরবময় বিষয়গুলো তখন দুর্বৃত্ত্বকবলিত দেশগুলিতে মৌলবাদ মনে হয়। তখন আলস্য বাড়ে,বাড়ে বিলাসিতা।শরীরে জমে মেদ এবং চেতনায় বাড়ে মুনাফেকি। ইবাদতের নামে তখন বাড়ে ভন্ডপীরের প্রতি ভক্তি,বাড়ে মাযার-জিয়ারত এবং না বুঝে কোরআন তেলাওয়াত। তখন আসে লাগাতর পরাজয়,বাড়ে অপমান।আজকের মুসলমানগণ তো এমন পরাজয়ে ও অপমানে ইতিহাস গড়ে চলেছে।
মু’মিনের জীবনে আল্লাহর বড় নেয়ামত হলো সময়। নেয়ামত হলো তাঁর দেয়া মেধা,সম্পদ ও শারিরীক সুস্থতা। কোন ভাল কৃষক নিজের কোন ক্ষুদ্র জমিকেও অনাবাদী রাখে না। তাতে বীজ বুনে ও ফসল ফলায়। যেমনি আখেরাতের সঞ্চয় বাড়াতে ঈমানদার মাত্রই সে নেয়ামতের বিনিয়োগ বাড়ায়। জীবনের প্রতি মুহুর্ত থেকে মুনাফা তুলতে নবীজী (সাঃ)র ন্যায় মাসুম রাসূলও নিজের পানি নিজে টেনেছেন। তেমনি বিরাট রাষ্ট্রের খলিফা হয়ে হযরত ওমর (রাঃ) চাকরকে উঠের পিঠে চড়িয়ে নিজে উঠের রশি ধরে টেনেছেন। রাতের আঁধারে আটার বস্তা নিজে কাঁধে নিয়ে দরিদ্র্য মানুষের ঘরে পৌছে দিয়েছেন। সাহাবাগণ নিজে অভূক্ত থেকে মেহমানদের ভাল খাবার খাইয়েছেন। আখেরাতের জবাবদেহীতার ভাবনায় মানুষ তো এভাবেই যুগে যুগে মহামানবে পরিণত হয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোন তাজমহল নির্মিত হয়নি,বড় বড় শিল্পকারখানা ও বৈজ্ঞানিক আবিস্কারও হয়নি। কিন্তু সত্যকে চেনায় এবং সে সত্যের পক্ষে সৈনিকে পরিণত হওয়ায় তাদের কৃতিত্ব তো অনন্য।মানবকে মহামানব বানানোর সবচেয়ে বড় কৃতিত্বতো তাদেরই। মানুষের জ্ঞানগরিমা ও প্রজ্ঞার সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি তো এক্ষেত্রটিতে। সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাভে যেমন হয় না,তেমনি নোবেল প্রাইজ বা অলিম্পিকে পদক লাভেও হয় না। একমাত্র তখনই গড়ে উঠেছেন মানব ইতিহাসের সর্বাধিক সংখ্যক মহামানব। ইসলামের সমগ্র ইতিহাসে গর্বের সন্তান তো তারাই। বাকী ১৪০০ শত বছরে কি তার শত ভাগের একভাগও নির্মিত হয়েছে। তাঁরা গড়ে উঠেছেন কুঁড়ে ঘরে,প্রাসাদে নয়। এর কারণ,নবীজী (সাঃ) তাঁর সাহাবাদের মাঝে যেরূপ আখেরাতের ভয় সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন সে কাজটি পরে আর সেরূপ হয়নি।
নবীজী(সাঃ)র শিক্ষার মূল জোরটি ছিল আখেরাতের জবাবদেহীতার উপর। পবিত্র কোরআনের মক্কী সুরাগুলোর প্রধান বিষয়গুলো ছিল এই আখেরাত। ফলে সে সময় যারা নবীজী(সাঃ)র সাথে কাটিয়েছেন তাঁরা বেড়ে উঠেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবা রূপে। আশারায়ে মোবাশ্মেরাগণও এসেছেন তাঁদের মধ্য থেকে। কিন্তু পরবর্তীতে দ্বীনি শিক্ষায় ঢুকেছে দুনিয়াদারি বা পার্থিব স্বার্থচেতনা -আধুনিক পরিভাষায় যা হলো সেক্যুলারিজম।এটি মানুষকে উল্টোদিকে তখা পার্থিব স্বার্থের দিকে টানে।সেক্যুলারিজমের জোয়ারে ভাসা দেশগুলিতে আলেম হওয়া,মুফতি হওয়া বা মুফাচ্ছির হওয়ার মাঝেও সেক্যুলারিজম তথা দুনিয়াদারি থাকাটিও অসম্ভব নয়। কারণ আলেম বা মুফতি হওয়াতে যেমন সন্মান জুটে,তেমনি পদবী,অর্থ এবং বাহবাও জুটে। আর এগুলোতো পার্থিব বিষয়। এমন দুনিয়াদার আলেমদের মধ্য থেকে তখন শহীদ সৃষ্টি হয় না। শরিয়তের প্রতিষ্টায় লড়াকু সৈনিকও পয়দা হয় না। ইলমের ময়দানে তাদের দ্বারা কোন বিপ্লবও আসে না। এমন দুনিয়াদার আলেমদের দেহ থেকে আল্লাহর দ্বীনের পথে কঠোর শ্রমে ঘাম ছুটে না,বরং বিনাশ্রমে ও অতি ভোজে জমে মেদ। বহু ক্ষেত্রে সে ভোজ অন্যের গৃহে বা অন্যের অর্থে।স্বৈরাচারি শাসক,সেক্যুলার রাজনীতিবিদ,দুর্বৃত্ত ব্যবসয়ী বা ঘুষখোর সরকারি কর্মচারিরাও এদের বন্ধুরূপে পায়।এরূপ আলেমদের অধিকাংশের মৃত্যু জিহাদের ময়দানে ঘটে না,বরং ঘটে মেদজনীত রোগভোগের কারণে।অথচ সাহাবাদের জীবনে ঘটেছিল উল্টোটি।
দেয় চুড়ান্ত সাফল্য
আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয়ে মু’মিনের জীবনে শুধু নামায-রোযা ও হজ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতে নিষ্ঠা বাড়ে না। বরং বিপ্লবী পরিবর্তন আসে তাঁর রাজনীতিতেও। রাজনীতি তখন অর্থ ও ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার বিবেচিত না হয়ে পরিণত হয় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জিহাদে। তখন আমূল বিপ্লব আসে সমাজে ও রাষ্ট্রে। সে রাজনীতিতে শুধু সরকারই বদলে যায় না,বদলে যায় সমাজের আইন-কানূন,শিক্ষা-সংস্কৃতি,অর্থনীতি ও মূল্যবোধ। আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয়ে মু’মিন ব্যক্তির কাছে জীবনের প্রতি মুহুর্তের ন্যায় রাষ্ট্রের বিশাল অবকাঠামো ও তার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আল্লাহর নিয়ামত মনে হয়। রাষ্ট্র-পরিবর্তনের কাজে অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মনে হয় তখন রাজনীতি। রাজনীতি গণ্য হয় জিহাদ রূপে। শিক্ষা,চিকিৎসা,কৃষি বা ব্যবসার মাধ্যমে কিছু লোকের কল্যাণ সাধন হলেও তা দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে একটি বিজয়ী শক্তি বা বিশ্বশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তাতে প্রতিষ্ঠা ঘটে না শরিয়তের। সে জন্যই আখেরাতের ভয়ে ভীতু ব্যক্তির জীবনে অনিবার্য কারণেই আসে রাজনীতি। আসে জিহাদ। সে জিহাদে বিনিয়োগ ঘটে মুসলমানের অর্থ,রক্ত,শ্রম ও মেধার। মুসলমানগণ বিজয়ী হয় এবং ইজ্জত পায় তো এ পথ ধরেই। জান্নাতে পৌছারও কি এছাড়া ভিন্ন পথ আছে?
নামায-রোযা, হজ-যাকাত পালনের ন্যায় ইবাদতগুলো কম যোগ্যতা ও দুর্বল ঈমানদারদের দ্বারাও সম্ভব। বহু মুনাফিক,বহু জালেম এবং বহু ফাসেক বা পাপী ব্যক্তি যেমন নামাযী হতে পারে,তেমনি হাজীও হতে পারে। নীতিহীন,ধর্মহীন ও নেকআমলহীন ব্যক্তিও তাদের পেশাতে অতি সফল হতে পারে। কিন্তু রাজনীতির ময়দানের প্রয়োজন পড়ে সবচেয়ে অগ্রসর ঈমানদারদের।কারণ এখানে কোরবানীটি শুধু অর্থ,শ্রম বা মেধার নয়,বরং রক্তের বা প্রাণের। এখানে চাই আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে আপোষহীন নিষ্ঠা। এজন্যই রাজনীতির ময়দানে সম্মুখ ভাগে হাজির হয়েছিলেন সাহাবায়ে কেরামের আমলের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ। হাজির হয়েছিলেন খোদ নবীজী (সাঃ),হাজির হয়েছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ),হযরত ওমর (রাঃ),হযরত উসমান(রাঃ),হযরত আলী(রাঃ),হযরত যুবায়ের(রাঃ),হযরত তালহা(রাঃ), হযরত আবি উবায়দা (রাঃ),হযরত সাদ বিন আবিওক্কাস(রাঃ),ইমাম হাসান (রাঃ)ও ইমাম হোসেন (রাঃ)এর ন্যায় ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সারির ব্যক্তিবর্গ। তাদের বেশীর ভাগ এ রাজনীতিতে শহীদও হয়েছেন। আশারায়ে মোবাশ্শেরা(জীবদ্দশাতেই যারা জান্নাতে সুসংবাদ পেয়েছিলেন) তাঁরাও এসেছেন এদের মধ্য থেকেই। ইসলামের সর্বশেষ্ঠ সন্তানদের এটি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত। অন্যকর্ম বা পেশায় অর্থ,শ্রম বা মেধার যে বিনিয়োগ তাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের খেদমতের সাথে নিজের উপার্জনের ভাবনাও থাকে। কিন্তু রাজনীতির জিহাদে বিনিয়োগটি ঘটে একমাত্র আল্লাহর পথে। এমন রাজনীতিতে থাকে না নিজের উপার্জন বৃদ্ধি বা স্বার্থ হাছিলের ভাবনা। এখানে একমাত্র ভাবনা আল্লাহকে খুশি করা। তখন বাঁচার নিয়েতটি পাল্টে যায়। তাঁর ভাবনাতে সর্বক্ষণ যেটি গুরুত্ব পায় সেটি তাঁর দ্বীন তথা শরিয়তি বিধানের বিজয়। “আমার নামায, আমার ত্যাগ ও কোরবানী, আমার বাঁচা ও মৃত্যু অবশ্যই রাব্বুল আ’লামীনের জন্য” -হযরত ইব্রাহীম(আঃ)এর এ অমর মিশনটি তখন মু’মিনের জীবনে মূল মিশন হয়ে দাঁড়ায়।
আখেরাতে জবাবদেহীতার রাজনীতিতে যে ব্যক্তি শহীদ হয় -এ জীবনে প্রকৃত সফলতা মূলত তাঁরই। কারণ,তখন আল্লাহর সামনে তাঁর আর জবাবদেহীতার ভয় থাকে না। কারণ,তিনি তো আল্লাহর রাস্তায় নিজের জীবনটাকেই কোরবানী করে দিয়েছেন। এমন প্রাণদানের ফলে তাঁর জন্য প্রতিশ্রুত পুরস্কারটি হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল পাপের মাগফেরাত। সে সাথে বিনাবিচারে জান্নাতপ্রাপ্তি। ফলে ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং সবচেয়ে বড় বড় মহামানব সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতি তথা জিহাদের ময়দান থেকে,পীরের খানকা বা দরবেশের আস্তানা থেকে নয়। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর পথে প্রাণদানকারি শহীদদের মৃত বলতে বার বার নিষেধ করেছেন। অন্যদের থেকে এখানে শহীদদের এক বিশিষ্ঠ মর্যাদা। অন্যরা মৃত্যুর সাথে সাথে মৃত হয়ে যায়। সে মৃত অবস্থা থেকে বড় বড় আলেম,ফকিহ,মুফতি ও সুফি-দরবেশগণও পরিত্রাণ পায় না। কিন্তু শহীদগণ মৃত নন,তারা চির জীবিত। নিহত হওয়ার পরও তারা আহার পেয়ে থাকেন।সে মর্যাদাটি কি কোন দুনিয়াদার ব্যক্তির ভাগ্যে জুটে? জ্ঞানের পরিচয় শুধু অগাধ জানাশুনায় নয়, বরং জ্ঞানলদ্ধ সত্যের পক্ষে ত্যাগ স্বীকারে। শহীদগণ অধিক মর্যাদা পান তো একারণেই। দুনিয়াদার ব্যক্তির বাঁচার নিয়েত যেমন ভিন্ন,তেমনি মরার বিষয়টিও। এখানে আখেরাত গুরুত্ব পায় না।সে বাঁচে নিজের পার্থিব স্বার্থে। এবং মরে নিজের জন্য;বা নিজ দল,নিজ ভাষা,নিজ গোত্র,নিজ দেশ বা নিজ শ্রেণীর জন্য। বাঁচার ন্যায় তার মৃত্যুর মধ্যেও আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা এবং আল্লাহকে খুশি করার ভাবনা থাকে না। সে ভাবনাটি তো আসে আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস এবং তাঁর কাছে জবাবদেহীর ভাবনা থেকে। আখেরাতে জবাবদেহীর ভাবনা তাই ব্যক্তিকে যেমন মহত্তর গুণ নিয়ে বাঁচতে শেখায়,তেমনি আল্লাহর দরবারে চুড়ান্ত সাফল্যটি দেয় সে ভাবনা নিয়ে মৃত্যু বরণে। ১০/১১/১২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018