আখেরাতের ভয়ঃ যা অনিবার্য করে রাষ্ট্রীয় বিপ্লব
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 26, 2018
- ইসলাম
- No Comments.
আখেরাতে ভাবনা ও বিনিয়োগ
শুধু পাওয়ার আশাতেই নয়,ভয়েও মানুষ প্রচণ্ড সৃষ্টিশীল ও বিপ্লবী হয়। ঈমানদারের জীবনে তেমনি এক সৃষ্টিশীল ও বিপ্লবী ভূমিকা রাখে আখেরাতের ভয়। সে ভয় মু’মিনকে তাড়িত করে অর্থ,শ্রম,রক্তের বিনিয়োগে। সে তাড়নায় বিপ্লব আসে শুধু ব্যক্তি-জীবনে নয়,বরং সমাজ ও রাষ্ট্র জুড়ে। তখন মু’মিনের জানমালের বিনিয়োগের সাথে যোগ হয় মহান আল্লাহতায়ালার বিনিয়োগ। আল্লাহর ফেরেশতাগণ তখন দলবেঁধে জিহাদের ময়দানে হাজির হয়। মুসলিম ইতিহাসে অতীতে সেটি বার বার ঘটেছে। উত্তাল সমুদ্র,ঝড়ো হাওয়া,ক্ষুদ্র পাখি,মশা-মাছি এমনকি প্রানহীন পাথরও তখন আল্লাহর সৈনিকে পরিণত হয়। নমরুদ,ফিরাউন ও আবরাহার বিশাল সেনাবাহিনী বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব সৈনিকদের হাতে। মুসলিম বাহিনী তো এভাবেই অপরাজেয় হয়,এবং বিজয় আসে আল্লাহর দ্বীনের। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাদের আমলে শুধু যে আরবের কাফেরদের উপর বিজয় এসেছিল তা নয়,বিজয় এসেছিল রোমান ও পারসিক –এ দুই বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধেও। বিজয়ের কারণ ছিল মহান আল্লাহর সাহায্য। মুসলমানগণ সে সাহায্যের বলেই অতি অল্পসময়ে বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল।
আখেরাতে ভয়শূণ্য ব্যক্তির লক্ষ্য হয় যুগ যুগ বেঁচে থাকায়। এমন ব্যক্তির জীবনের মূল মিশন এবং সেসাথে আমৃত্যু চেষ্টা হয় বেশী বেশী সম্পদের অর্জন,সঞ্চয় এবং ভোগ। আল্লাহর পথে বিনিয়োগ ও কোরবানী তখন অপচয় বা অর্থহীন মনে হয়। এটিই হলো নিরেট সেক্যুলার চেতনা। এ চেতনায় আক্রান্ত হলে মুসলমান আর প্রকৃত মুসলমান থাকে না। তখন বিলুপ্ত হয় আখেরাতের ভয়,এবং কমে যায় আল্লাহর পথে জানমালের সে বিনিয়োগ। অথচ আল্লাহতায়ালার সূন্নত হলো,তিনি নিজের বিনিয়োগের আগে তাঁর পথে জিহাদে বান্দাহর বিনিয়োগটি দেখেন। যেখানে সে বিনিয়োগ নাই,আল্লাহর সাহায্যও সেখানে আসে না। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কি বিজয় সম্ভব? আল্লাহতায়ালা সে সত্যটি সুস্পষ্ট করেছেন এভাবে,“তোমরা যা চাও তা হয় না,আল্লাহরাব্বুল আ’লামীন যা চান সেটিই হয়।”-(সুরা তাকবীর আয়াত ২৯)। আল্লাহর বিনিয়োগ বাড়াতে অতীতের মুসলমানগণ তাই নিজেদের বিনিয়োগটি বাড়িয়েছেন। অথচ আজ মুসলমানদের অর্থ,শ্রম,মেধা ও রক্তের বিনিয়োগের প্রধান খাতটি আল্লাহর পথে নয়। বরং খরচের সে খাতটি ব্যক্তি স্বার্থ,পারিবারিক স্বার্থ,রাজার স্বার্থ,দলীয় স্বার্থ,গোত্রীয় স্বার্থ,ভাষার স্বার্থ বা দেশের স্বার্থে যুদ্ধ-বিগ্রহ। স্বার্থসিদ্ধির সে রক্তাক্ষয়ী লড়াইয়ে মুসলিম দেশগুলিতে জানমালের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে। জাহিলী যুগে এটিই ছিল কাফেরদের রীতি। অথচ সে জাহিলী রীতিই আজ ফিরে এসেছে মুসলমানদের মাঝে। ফলে বিজয় নয়,আসছে পরাজয়।এবং গৌরব না বেড়ে বাড়ছে অপমান।
ঈমানদারের জীবনে আখেরাতের ভয় এতই প্রকট যে তাঁর সমগ্র জীবনকে তা উলটপালট করে দেয়। পাল্টে দেয় তাঁর বেঁচে থাকার মূল লক্ষ্য ও এজেণ্ডা। বলে দেয় কোন পথে চলতে হবে। বদলিয়ে দেয় জীবনের গতিপথ। তাঁর কর্ম,চরিত্র ও চেতনায় আনে এক নতুন বিন্যাস। আরবী ভাষায় সে উলোটপালটকে বলা হল ইনকিলাব বা বিপ্লব। তাই ইসলাম কবুলের সাথে সাথে প্রচণ্ড বিপ্লব এসেছিল আরব মুসলমানদের জীবনে। মুর্তিপুজা ছেড়ে তারা যে শুধু নামায-রোযা ও হজ-যাকাতের পথ ধরেছে তা নয়,বরং পাল্টে গেছে তাদের রুচী,পানাহার,পোষাক-পরিচ্ছদ,সামাজিক প্রথা,রাজনীতি,অর্থনীতিসহ সবকিছু।তাই সমাজ থেকে মদ্,জুয়া,অশ্লিলতা,সূদ,দাসপ্রথা,শিশুহত্যা,ভ্রুনহত্যা,সন্ত্রাস,চুরিডাকাতি,লুন্ঠন যেমন বিলুপ্ত হয়েছে,তেমনি বিলুপ্ত হয়েছে বর্ণবাদ,সামন্ত্রবাদ ও রাজতন্ত্র। মুসলিম শিশু তখন শুধু নামাযী ও রোযাদার রূপে বেড়ে উঠেনি,গড়ে উঠেছে সার্বক্ষণিক মুজাহিদ রূপে। কিন্তু যখনই সে ভয়ে ভাটা পড়েছে তখনই মুসলমানদের জীবনে ধীরে ধীরে পুরনো জাহিলীয়াতও ফিরে এসেছে। আগুন থাকলে উত্তাপ থাকবেই। তেমনি আখেরাতের ভয় থাকলে মু’মিনের জীবনে বিপ্লবও আসে।সে বিপ্লবের ফলে জিহাদও আসে।সে জিহাদে জান-মালের বিপুল কোরবানীও আসে। প্রবল প্লাবনের পানি যেমন নদীনালা,মাঠঘাট,গ্রামগঞ্জ সর্বত্র প্লাবিত করে,ইসলামের প্লাবনও তেমনি প্লাবিত করে মানব জীবনের প্রতিটি অঙ্গন।সে প্লাবন তখন মসজিদ-মাদ্রাসায় আটকা থাকে না।রাজনীতি, অর্থনীতি,শিক্ষা-সংস্কৃতির ন্যায় কোন অঙ্গণই তখন ইসলামের প্লাবন থেকে বাদ পড়ে না।
কিন্তু আখেরাতের ভয় লোপ পেলে,থেমে যায় ইসলামের সে কাঙ্খিত বিপ্লব। ভাটার পানির ন্যায় ইসলামের জোয়ারও তখন দ্রুত নীচে নামতে থাকে। মুসলিম দেশের রাজনীতি,অর্থনীতি,সংস্কৃতি ও আইন-আদালত থেকে ইসলামের জোয়ার তো সে কারণেই নেমে গেছে। বরং এসেছে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জোয়ার।সে জোয়ারে ভেসে গেছে শুধু মুসলিম দেশের রাজনীতি,অর্থনীতি,সংস্কৃতি,আইন-আদালতই নয়,এমনকি ধর্মকর্মও।এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কুফরি ব্যবস্থা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী যারা বিচার-ফয়সালা করে না তারা কাফের ..তারা যালিম .. তারা ফাসেক। -(সুরা মায়েদা ৪৪ -৪৭)। মুসলমান হওয়ার অর্থ তাই শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাত পালন নয়,আল্লাহর আইন তথা শরিয়তের পূর্ণ অনুসারি হওয়া। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আদালতেও কোরআনী বিধানের প্রতিষ্ঠা দেয়া। মুসলমানের জিহাদ তো শরিয়ত প্রতিষ্ঠার জিহাদ। তাই কোন সমাজে আখেরাতের ভয় কতটা বেঁচে আছে সেটি যাচায়ে বড় রকমের গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। সেটি সঠিক ভাবে ধরা পড়ে সে সমাজে ও রাষ্ট্রে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দেখে, আর শরিয়ত প্রতিষ্ঠিত না থাকলে সেটির প্রতিষ্ঠায় জিহাদের আয়োজন দেখে।
ঈমানদারদের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ পুরস্কারটি হলো জান্নাত। সেটি অনন্ত অসীম কালের জন্য। তবে সে পুরস্কারটি শুধু কালেমা পাঠে জোটে না। ইবাদতকে শুধু নামায-রোযা ও হজ-যাকাতে সীমাবদ্ধ রাখলেও জোটে না। সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কারটির জন্য কোরবানীটিও সবচেয়ে বড় হতে হয়। মহান আল্লাহতায়ালা সে সত্যটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এভাবেঃ “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো,এমনিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তোমাদের পরীক্ষা করা হবে না? অথচ তোমাদের পূর্বের লোকদের পরীক্ষা করা হয়েছে এবং অবশ্যই আল্লাহতায়ালা জেনে নিয়েছেন ঈমানের দাবীতে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী।”–(সুরা আনকাবুত আয়াত ২)। ঈমানের দাবীতে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী -মু’মিনের জীবনে সে পরীক্ষাটি তাই পদে পদে হয়।তবে চুড়ান্ত পরীক্ষাটি হয় মূলত জিহাদের ময়দানে। এ পরীক্ষার ময়দানে ধর্মকর্মের নামে নিজের পছন্দমত কোন আমল বেছে নেয়ার কোন সুযোগ নাই। আল্লাহর দরবারে সব নেক-আমল সম-মানের নয়। দূর-দূরান্ত থেকে আগত পিপাসার্ত হাজিদের পানি পান করানো নিসন্দেহে নেক আমল।। নেক আমল আল্লাহর পবিত্র ঘরের খেদমতও। কিন্তু সে কর্মগুলি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সমকক্ষতা পায় না। মহান আল্লাহতায়ালা সে বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন এভাবে,“তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে হাজীদের পান করানো এবং ক্বাবা শরিফের খেদমত সে ব্যক্তির সমান যে আল্লাহ ও আখেরাতের উপর ঈমান আনলো এবং জিহাদ করলো আল্লাহর রাস্তায়? আল্লাহর কাছে এ দুটি কাজ সমান নয়। আল্লাহ যালেম কাওমকে সৎপথ দেখান না। যারা ঈমান আনে,হিজরত করে এবং নিজেদের জানমাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ। এবং তারাই সফলকাম। তাদের প্রভূ তাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের -যেখানে রয়েছে তাদের জন্য স্থায়ী সুখশান্তি।সেখানে তারা চিরস্থায়ী থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের বদলে কুফরিকে প্রশ্রয় দেয়,তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করবে তারাই যালিম। বল (হে মুহাম্মদ)!তোমাদের পিতা,তোমাদের সন্তান,তোমাদের ভাই,তোমাদের পত্নী,তোমাদের স্বগোষ্ঠী,তোমাদের অর্জিত সম্পদ,তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার তোমরা আশংকা করো,তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা ভালবাস –এসব যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ,আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ থেকে তোমাদের কাছে প্রিয়তর হয় তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর ফয়সালা না আসা পর্যন্ত। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সত্যপথ দেখান না।” -(সুরা তাওবা আয়াত ১৯-২৪)। প্রশ্ন হলো,কোরআনের এ বানীর উপর বিশ্বাস রেখে যখন কোন জনগোষ্ঠি বেড়ে উঠে, তারা কি দূরে থাকতে পারে জিহাদের ময়দান থেকে? অবহেলা দেখাতে পারে শরিয়তের প্রতিষ্ঠায়? সেটি হলে তো মুসলমান হওয়া এবং আখেরাতে জান্নাত পাওয়ার সকল সম্ভাবনাই তো ব্যর্থ হয়ে যায়।
অনিবার্য জিহাদ
মু’মিনের জীবনে মূল এজেণ্ডাটি কি? ঈমানের পরীক্ষাটিই বা কীরূপে? কীরূপে আল্লাহর করুণাপ্রাপ্তি? জান্নাতপ্রাপ্তি এবং প্রকৃত সাফল্যই বা কীভাবে? আল্লাহর ক্রোধ এবং আযাবই বা কীরূপে জুটে? মুসলমানদের মাঝে এ প্রশ্নগুলো অতি সনাতন। কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়েছে রয়েছে প্রচণ্ড অবহেলা,অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তি। সে অজ্ঞতা ও অবহেলার থেকে জন্ম নিয়েছে ইবাদত ও নেক আমলের নামে নানারূপ বিভ্রান্তি। সিরাতুল মোস্তাকিম থেকে বিচ্যুত করতে ধর্মের নামে যেমন নানা মিথ্যা পথ আবিস্কৃত হয়েছে,তেমনি জিহাদ থেকে দূরে হঠাতেও নানা কর্মকে পূর্ণকর্ম রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে।
ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু আল্লাহ ও তার দ্বীনকে বিশ্বাস করা নয়,বরং সে বিশ্বাসক কর্মে পরিণত করা। সেটি না হলে বিশ্বাসের কোন মূল্য থাকে না। এবং সেটি ঘটে মহান আল্লাহর এজেণ্ডা পূরণে তাঁর অনুগত খলিফা হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। আল্লাহতায়ালার নিজের ভাষায় সে এজেণ্ডাটি হলো “লিউযহিরাহু আলাদ্দিনি কুল্লিহী” অর্থঃ সকল ধর্মের উপর তাঁর নিজ ধর্ম ইসলামকে বিজয়ী করা। দ্বীনের এমন বিজয় হলো আল্লাহতায়ালার ভিশন। ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো আল্লাহর সে ভিশনের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়া। ফলে মুমিনের জীবনে ঈমান একাকী আসে না,সাথে আনে আল্লাহর ইচ্ছাপূরণে আপোষহীন জিহাদ। সে জিহাদ ভাষা,বর্ণ,ভূগোল বা গোত্র দ্বারা সীমিত হয় না, বরং তা বিশ্বময়ী হয়। এমন জিহাদে সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা পাল্টে গেল সেটি মূল বিষয় নয়,সমাজ ও রাষ্ট্র পাল্টে না গেলেও তাতে পাল্টে যায় সে জিহাদে অংশগ্রহনকারি মোজাহিদের নিজের জীবন ও জগত। এবং কতটা পাল্টে গেল তার উপর ভিত্তি করে জান্নাত মিলবে। এমন একটি আমৃত্যু জিহাদ গড়ে উঠেছিল প্রতিটি সাহাবীর জীবনে। সে জিহাদে তারা নিজেরা যেমন বদলে গেছেন,সে সাথে পাল্টিয়ে দিয়েছেন আরবের জাহেলী সমাজকে। মু’মিনের নিজ জীবনের বিপ্লব আর রাষ্ট্রীয় বিপ্লব তখন একত্রে এগিয়ে চলে। পুরাতন জাহিলী সমাজের বদলে সাহাবগণ তাই সম্পূর্ণ নতুন ধরণের সমাজ,সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র গড়েছিলেন। সে বিপ্লবের ঝাণ্ডা নিয়ে তারা নানা দেশের নানা জনপদে ঘুরেছেন।
কোরআন শুধু মানব জীবনের টার্গেটটিই নির্ধারণ করে দেয় না,সে টার্গেটে পৌছার পথও দেখিয়ে দেয়।এ পথে চলা পূ্র্ববর্তী যাত্রীদের ইতিহাসও বলে। সে টার্গেটটি হলো জান্নাত। বস্তুত মু’মিনের জীবনে পথচলার মূল রূপরেখাটি নির্ধারিত হয় জান্নাত পাওয়ার সে বাসনা থেকে। জান্নাতে পৌঁছার পথে পরীক্ষা যে কঠিন ও লাগাতর পবিত্র কোরআন সে হুশিয়ারিটিও শোনায়। যেমন বলা হয়েছে,“তোমরা কি এমন ধারণা করে বসেছো,এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ সে অবস্থা তোমাদের উপর এখনও আসেনি যা এসেছিল তোমাদের পূর্বে যারা অতীত হয়েছে তাদের উপর। তাদের উপর এসেছিল এমন (কঠোর)বিপদ ও কষ্ট, তাতে রাসূল এবং তাঁর উপর যারা ঈমান এনেছিল তাঁরা এতটাই শিহরিত হয়েছিল যে তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছিল,“কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য?” তোমরা শুনে নাও,আল্লাহর সাহায্য অতীব নিকটবর্তী।”–(সুরা বাকারা আয়াত ২১৪)। আল্লাহতায়ালার যে হুশিয়ারিটি উপরুক্ত আয়াতে সুস্পষ্ট তা হলো,ঈমান এনেছি,নামায-রোযা নিয়মিত করি,হজ-যাকাতও পালন করি -শুধু এ টুকুতেই পরকালে সাফল্য জুটবে না।জান্নাতও মিলবে না। সে জন্য তাকে লাগাতর পরীক্ষা দিতে হবে এবং সেসব পরীক্ষায় পাশও করতে হবে। সে পরীক্ষা থেকে পাশ কাটানোর কোন রাস্তা নেই। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণও সে পরীক্ষার মধ্য দিয়েই অগ্রসর হতে হয়েছে।
স্ট্রাটেজী মহান আল্লাহর
অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো,ইসলামের বিজয় আনতে মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব স্ট্রাটেজীটি কি? নবীজী (সাঃ) ইসলামী বিপ্লবের সফল নেতা হলেও তিনি এ বিপ্লবের উদ্ভাবক বা আবিস্কারক নন।বরং মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এ বিপ্লবের মূল স্ট্রাটেজী ও নির্দেশনা এসেছে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। নবীজী (সাঃ) সে স্ট্রাটেজীর একনিষ্ঠ অনুসারী মাত্র। মানুষের সামনে কখন কি বলতে হবে,কোন বিষয়কে কখন গুরুত্ব দিতে হবে, ইসলামের প্রসারে কতদিন গোপনে কাজ চালাতে হবে,দাওয়াত কখন প্রকাশ্যে দিতে হবে,কখন নামায,রোযা ও হজ শুরু করতে হবে,কখন হিজরত এবং কখন জিহাদ শুরু করতে হবে –এরূপ নানা জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলিও নবীজী (সাঃ)র নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিল না,সেগুলি এসেছিল মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। সে নির্দেশগুলি লিপিবদ্ধ রয়েছে পবিত্র কোরআনে। কোরআন তাই শুধু ইবাদতের গাইড বুক নয়,বরং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের গাইডবুকও। নবীজী (সাঃ)র মৃত্যু হয়েছে। তার সাহাবাগণও চলে গেছেন। কিন্তু যে কোরআন তাদেরকে মহামানব রূপে বেড়ে উঠার পথ দেখালো -সে কোরআন আজ ও অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান। মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ তেল,গ্যাস বা অন্য কোন সম্পদ নয়,বরং এই কোরআন। এ কোরআনই তাদেরকে নিঃস্ব অবস্থা থেকে বিশ্বশক্তির মর্যাদা দিয়েছিল। কোরআনে প্রদর্শিত এ পথটা হলো সিরাতুল মোস্তাকীম। একমাত্র এ পথটিই সংযোগ গড়ে পার্থিব জীবনের সাথে জান্নাতের। আখেরাতে যারা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চায় তাদের সামনে আজও কি এ ছাড়া ভিন্ন পথ আছে?
আজকের মুসলমানদের বড় ব্যর্থতা,তারা ব্যর্থ হয়েছে মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালার দেয়া গাইডবুক অনুসরণ করায়। গৃহ নির্মানের ছাদ দিয়ে শুরু করা যায় না।প্রথমে ভিঁত গাঁথতে হয়। তেমনি ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানের প্রকল্পটি শুরু হয় উচ্চমানের মানুষ গড়ার মধ্য দিয়ে। আর সে উচ্চমানের মানুষ গড়ার মূল উপকরণটি হলো আখেরাতে ভয়। আখেরাতের ভয়শূণ্য মানুষ তাজমহল গড়তে পারে। পিরামিডও গড়তে পারে। সাহিত্যে বা বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজও পেতে পারে। বড় বড় রাজনৈতীক দল ও ক্যাডার বাহিনীও গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু সে পথে প্রকৃত ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠা কি সম্ভব? মানুষের মাঝে আখেরাতের জবাবদেহীতার ভয় না গড়ে ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানের প্রচেষ্ঠা অনেকটা ভিত না গড়ে প্রাসাদ গড়ার ন্যায়। বহু দেশে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
নবীজী (সাঃ)তাই তাঁর নবুয়তী জীবনের প্রথম ১৩টি বছর দিবারাত্রি খেটেছেন আখেরাতের ভয়পূর্ণ মানুষ গড়ে তোলার কাজে। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত এটিই অতি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজী। সে স্ট্রাটেজী ধ্বণিত হয়েছে মক্কায় নাযিলকৃত সুরা গুলির মাঝে। সে সময়ে নাযিলকৃত ওহীগুলোর মূল জোর ছিল আখেরাতের ভয়। খোদ নবীজী(সাঃ)কে আখেরাতের আয়োজন দেখাতে মিরাজে তুলে নেয়া হয়। অন্যকোন নবীরাসূলের সে সৌভাগ্য হয়নি। ফলে এতদিন যা ছিল ইলমুল ইয়াকীন তথা বিশ্বাসলব্ধ জ্ঞান,তা পরিণত হয় ইলমুল আ’’য়ীন তথা স্বচক্ষে দর্শনলব্ধ জ্ঞান। তাই আখেরাতের জ্ঞান ও আখেরাতের ভয় –এ দুটিতে নবীজী(সাঃ) ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ। ফলে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈমানের গভীরতাতেও। আখেরাতের সে ভয়কেই নবীজী(সাঃ) তাঁর সাহাবাদের মাঝে জাগিয়ে তুলতে আজীবন চেষ্ঠা করেছেন। নবীজী (সাঃ) সে চেষ্টায় সফলও হয়েছিলেন। ফলে সে সময় গড়ে উঠেছিল আল্লাহর শ্রেষ্ঠ মহামানবদের বিশাল বাহিনী।তারা সদাপ্রস্তুত ছিলেন আল্লাহর রাস্তায় সর্বস্ব কোরবানীতে। কোন যুদ্ধের প্রাক্কালে মূস (সাঃ)এর সাহাবাদের ন্যায় তারা একথা কখনো বলেননি,“যান আপনি এবং আপনার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করেন,আমরা অপেক্ষায় রইলাম।”
মুসলিম দেশগুলির আজকের সমস্যাগুলো যতটা না অর্থনৈতীক,সামাজিক বা রাজনৈতীক,তার চেয়ে বহুগুণ নৈতীক। নৈতীক সমস্যা থেকেই জন্ম নিয়েছে অন্যান্য সমস্যা। আর এ নৈতীক সমস্যাগুলোকে সৃষ্টি হয়েছে আখেরাতের ভয় বিলুপ্তির ফলে। আল্লাহর উপর বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও আরবের কাফেরগণ দূর্নীতিতে ডুবেছে। কারণ তাদের ছিল না আখেরাতের ভয়। আখেরাতের ভয় বিলুপ্তির লক্ষ্যে মুসলিম দেশগুলিতে শয়তানী প্রজেক্ট যেমন বহু,এজেন্টও অগণিত। এ ক্ষেত্রটিতেই শয়তানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এ লক্ষে মুসলিম দেশে বহু কাফের রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগও বিপুল। তবে ইসলামপূর্ব জাহিলী আরব সমাজও একই রূপ জটিল নৈতীক ব্যাধীতে রুগ্ন ছিল। মদ্যপান,উলঙ্গতা,অশ্লিলতা,ব্যাভিচার,সন্ত্রাস,চুরি-ডাকাতি,যুদ্ধ-বিগ্রহ ও গোত্রীয় স্বৈরাচারে আচ্ছন্ন ছিল সমগ্র আরবভূমি। সেখানে রাষ্ট্র বলে কিছু ছিল না। ছিল সামন্ত নেতাদের সীমাহীন স্বৈরাচার। কিন্তু সেখানেও বিপ্লব এসেছিল। বরং অনুষ্ঠিত হয়েছিল মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লব। নৈতীক সে অসুস্থ্যতা থেকে আরবগণ যে শুধু সুস্থ্যতা পেয়েছিল তা নয়,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতারও জন্ম দিয়েছিল। মানব পরিণত হয়েছিল মহামানবে। পেয়েছিল ন্যায়-অন্যায়,পাপ-পূর্ণ,হক-বাতিল চেনার মানদণ্ড। আল্লাহর বিধান যে অতি অসুস্থ্য সমাজকেও সুস্থ্য ও মহীয়ান করতে পারে – এ হলো তার ঐতিহাসিক প্রমাণ।
গড়ে উঠে সমৃদ্ধ সভ্যতা
ইসলাম যে শুধু পরকালে জান্নাত দেয় তা নয়। সুখ-সমৃদ্ধি আনে ইহকালের জীবনেও। গড়ে তোলে শ্রেষ্ঠতম সভ্যতা। কিন্তু সেটি কীরূপে? সে সুখ-সমৃদ্ধি ও অনাবিল শান্তি আসে চারিত্রিক বা নৈতীক উন্নয়নের মাধ্যমে। স্রেফ আর্থিক পুঁজি ও সম্পদের প্রাচুর্যে সমাজে সে সমৃদ্ধি আসে না। এ কাজে অতি অপরিহার্য হলো নৈতীক পুঁজি। অর্থনীতির ভাষায় এটিকে বলা হয় সোসাল ক্যাপিটাল।মানবোন্নয়ন এজন্য জরুরী।আর মানবোন্নয়নের জন্য চাই চারিত্রিক উন্নয়ন। আর সে চারিত্রিক উন্নয়নটি আসে আখেরাতের জবাবদেহীতা থেকে। আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয়ের কারণে ঈমানদার ব্যক্তির সামনে অন্যের কোটি টাকা পড়ে থাকলেও সে পকেটে তুলে না। কারণ সে জানে,সে টাকা পকেটে তুলাতে আখেরাতে জান্নাত হারাবে। এবং পৌঁছতে হবে জাহান্নামে। তখন যে শাস্তি জুটবে,হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েও তা থেকে মুক্তি মিলবে না। আখেরাতের সে ভয়ে চুরির মধ্য দিয়ে ধনি না হয়ে বরং দরিদ্র থাকাকেই সে প্রাধান্য দিবে। মু’মিন ব্যক্তি তো এভাবেই নিজের খায়েশের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক পুলিশে পরিণত হয়। সে তখন শুধু নিজের সম্পদের নয়,অন্যের ও রাষ্ট্রের সম্পদের পাহারাদার হয়। এমন চরিত্রবান মানবদের দিয়ে রাষ্ট্রে গড়ে উঠে সমৃদ্ধ সামাজিক পুঁজি বা সোসাল ক্যাপিটাল।
আখেরাতের ভয়ের বিস্ময়কর সৃষ্টি ক্ষমতা হলো ব্যক্তির জীবনে ভ্যালুএ্যাড বা মূল্য-সংযোজনে। কোন দেশে সবচেয়ে বেশী ভ্যালুএ্যাড বা মূল্য-সংযোজনটি সে দেশের সোনা-রূপা,হিরা-জহরত, খনিজ সম্পদ বা পশুসম্পদের গায়ে হয় না। গরুছাগল মোটা-তাজা করে,সোনারূপা দিয়ে গহনা বানিয়ে বা খাম তেল শোধিত করে বিপুল মূল্য সংযোজন করা যায়,আর্থিক মুনাফাও অর্জিত হয়।কিন্তু তাতে জান্নাত জুটে না। সেটি হয় মানবসৃষ্টিতে মূল্য বাড়িয়ে। সে কাজটি করতে বিশাল পুঁজি বা উন্নত প্রযুক্তি লাগে না। সেটি সম্ভব এমন কি জীর্ণ কুঠিরেও। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), হযরত ঈসা (আঃ)ও হযরত মূসা (আঃ)র ন্যায় রাসূলগণই শুধু নয়,মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠমানুষগুলোও তো গড়ে উঠেছে জীর্ণ কুঠিরেই। সে কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ওহীর জ্ঞান বা কোরআনী জ্ঞান। আর সে কোরআনী জ্ঞানের সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান হলো আখেরাতের ভয়। মানবগর্ভে জন্ম নেয়ার কারণেই কেউ মহামানব রূপে বেড়ে উঠে না। বরং নিকৃষ্ট পশুর চেয়েও সে নিকৃষ্টতর হতে পারে। মানবিক গুণের বিপ্লবটি আসে আখেরাতের ভয়ে। মানব জীবনের এটিই সবচেয়ে বড় বিপ্লব। মানব তখন আশরাফুল মাখলুকাত বা শ্রেষ্ঠসৃষ্টিতে পরিণত হয়। মহান মানবিক সভ্যতা গড়ে উঠে তো এমন মহা মানবদের দিয়েই।
নবীজী (সাঃ)র সময় মুসলিম বিশ্বে আজকের মত শত শত বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। তখন মানব জীবনে মূল্য সংযোজনের সে কাজটি হয়েছে পরিবারে ও মসজিদ-মাদ্রাসা। ফলে সে কালে কয়েক লাখ মুসলমানদের মাঝে যত মহামানব গড়ে উঠেছে এবং তাদের হাতে যে মাপের সভ্যতা ও বিশ্বশক্তি গড়ে উঠেছে,আজকের দেড়শত মুসলমানগণ সেটি কল্পনাও করতে পারে না। কারণ মুসলিম দেশগুলোতে আজ হচ্ছে উল্টোটি। হচ্ছে মানব গুণের বিনাশ। সেটি যেমন পরিবারে তেমনি নানা প্রতিষ্ঠানে। এক্ষেত্রে উজ্বল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ। দেশটির গ্রাম থেকে নিরীহ ছাত্রকে তুলে নিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদেরকে পেশাদার চোরডাকাত,সন্ত্রাসী,মদ্যপায়ী,ব্যাভিচারি ও ধর্ষণকারিতে পরিণত করা হচ্ছে। সেটি আখেরাতে জবাদহীতার ভয় লোপ করে। সেক্যুলারিজম এ নাশকতায় বিশাল রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার। দেশের পুলিশ বিভাগ,শিক্ষাবিভাগ,রাজনীতি,আইন-আদালত,ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রশাসন পূর্ণ হয়ে গেছে মানবরূপী অমানুষদের দিয়ে। দেশ তাই বিশ্বমাঝে বারবার দুর্বৃত্তিতে রেকর্ড গড়ছে। যারা এ বিনাশী প্রক্রিয়া থেকে কোন মত প্রাণ বাঁচিয়ে আছে তার সে সামর্থটি পেয়েছে নিজেদের চেষ্টায়,সেক্যুলার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারণে নয়।
ইসলামের রাষ্ট্রবিপ্লব কেন অপরিহার্য?
আখেরাতের ভয়শূণ্যতায় সেক্যুলার মানুষগুলো যে জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও ভয়ংকর জীবে পরিণত হয় সে প্রমাণ কি কম? মানবরূপী এ জীবগুলিই দু’টি বিশ্বযুদ্ধে ৭ কোটির বেশী মানুষকে হত্যা করেছিল। যাদের নেতৃত্বে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ দুটি হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল তাদের কেউ মুর্খ ছিল না। ছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রিধারি। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের জীবন থেকে আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয় ছিনিয়ে নিয়ে হিংস্র দানবে পরিণত করেছিল। মুর্খ হালাকু-চেঙ্গিজের গণহত্যা তাদের কুকর্মের তুলনায় অতি তুচ্ছ। যারা জনপদে এ্যাটম বোমা ফেলতে পারে তাদেরকে পশু বললে পশুর অবমাননা হয়। এতবড় ক্ষতি কোন পশু করেনি। মানুষের উপর ভ্যালুএ্যাডের কোরআনী প্রক্রিয়াটি কাজ না করলে মানবসৃষ্টি যে কতটা নাশকতা ঘটাতে পারে এ হলো তার প্রমাণ।গাড়ীতে ব্রেক না থাকলে সে গাড়ী দুর্ঘটনা ঘটাবেই। আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয় তেমনি ব্রেকের কাজ করে। কর্ম,আচরণ ও বিবাদে কোথায় থামতে হবে সেটি জানিয়ে দেয়। কিন্তু যার মধ্যে সে ভয় নেই তারে জীবনে সে ব্রেক বা বাধানিষেধও নাই। তখন রাজনীতিতে সে স্বৈরাচারি,অর্থনীতিতে শোষক,সংস্কৃতিতে অশ্লিল এবং ধর্মপালনে সে চরম ভন্ড হয়।যুদ্ধকে এমন ব্যক্তিরাই গণহত্যার হাতিয়ারে পরিণত করে।ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ,পুঁজিবাদ,জাতিয়তাবাদ,বর্নবাদ,ফ্যাসীবাদ,সমকামিতা,ভ্রণহত্যার ন্যায় পাপকর্মে পাশ্চাত্যে যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সেটি তো মূলত আখেরাতের ভয় বিলুপ্ত হওয়ার ফলে।আখেরাতে ভয় বিলুপ্তির অর্থ বিবেক ও ন্যায়পরায়নতার মৃত্যু। এমন মৃত বিবেকের মানুষের দেহে কি আর মানবিক গুণ বাড়ানো যায়? ফাউন্ডেশন ধ্বসিয়ে দেলে পুরা প্রাসাদ ধ্বসে পড়ে,তেমনি আখেরাতের ভয় ধ্বসিয়ে দিলে ধ্বসে পড়ে মানবতাও।
পবিত্র কোরআন কৃষি,শিল্প বা বিজ্ঞান শেখাতে নাযিল হয়নি। বরং নাযিল হয়েছে মানব চরিত্রে কিভাবে ভ্যালুএ্যাড বা মূল্যসংযোজন করা যায় সেটি শেখাতে। অর্থাৎ মানবকে মহামানব করতে। সাহাবাগণ তাই প্রাসাদ গড়ায় বা সৌধ গড়ায় ইতিহাস গড়েননি। ইতিহাস গড়েছেন মহামানব গড়ায়। ফলে সে আমলে যত মহামানব গড়ে উঠেছে সমগ্র মানব ইতিহাসে তা হয়নি। মাথা টানলে কান-নাক-মুখ-চোখ সবই এক সাথে আসে,তেমনি মানব-উন্নয়ন হলে অন্যসব খাতেও বিপুল উন্নয়ন আসে। ইসলামি বিপ্লবের দেশে নৈতীক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লব তো এভাবেই অনিবার্য হয়। ফলে অর্থনৈতীক প্রগতির সাথে আসে সামাজিক শান্তি। অপর দিকে মানব-উন্নয়ন না হলে চরম দৈন্যতা দেখা যায় চারিত্রিক বা সামাজিক সম্পদে। তখন বাড়ে দুর্বৃত্ত মানুষের সংখ্যা। তখন আবিস্কৃত হয় মানববিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র,বায়োলজিক অস্ত্র,রাসায়নিক অস্ত্র,দূরপাল্লার মিজাইল,ইত্যাদী। বাড়ে এডস। ফলে ক্ষমতা বাড়ে ধ্বংসকারিতায়।আখেরাতে ভয়শূণ্য হওয়ার বিপদগুলি এভাবেই নানা রূপে দেখা দেয়। আল্লাহর নানারূপ আযাবও তখন ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। মু’মিন মাত্রই সে আযাব থেকে মুক্তি চায়। মুক্তি দিতে চান মহান আল্লাহও। আর মুক্তির সে পথটি হলো ইসলামী রাষ্ট্র বিপ্লবের পথ। নবীজী (সাঃ) ও তার সাহাবায়ে কেরাম তো সে কারণেই ইসলামি রাষ্ট্র গড়েছিলেন। আল্লাহতায়ালা তো সেজন্যই তার প্রতিরাষ্ট্রে ইসলামের বিজয় চান। সাহাবায়ে কেরামের জানমালের সবচেয়ে বড় কোরবানী হয়েছিল সে খাতে।প্রশ্ন হলো,কোন ঈমানদারও কি সে বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকতে পারে? ২৩/১১/১২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018