আগ্রাসনের ভারতীয় অবকাঠামো এবং আত্মঘাতী বাংলাদেশ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on April 20, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
দাবী করিডোরের
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত যা চায় সেটি মূলত করিডোর, ট্রানজিট নয়। ট্রানজিট ও করিডোর –এ দুটি এক নয়। বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়; এবং ব্যবহৃত হয় দুটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে। ট্রানজিট কখনো অন্য দেশের মধ্য দিয়ে নিজ দেশে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় না। ট্রানজিট ব্যবহৃত হয় এক দেশের মধ্য দিয়ে তৃতীয় আরেকটি দেশে যাওয়ার জন্য, এক অনিবার্য প্রয়োজনে। যেমন বাংলাদেশ ভারতের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট চায় নেপাল ও ভূটানে যাওয়ার জন্য,এবং সেটি কখনই নিজ দেশের অন্য কোন এলাকায় যাওয়ার জন্য নয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পরিবহন ও লোক-চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রানজিট শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, অপরিহার্যও। কারণ নেপাল বা ভূটানের ন্যায় বিশ্বের বহুদেশই অন্যদেশের স্থলাভূমি দ্বারা আবদ্ধ, সমূদ্র পথে বেরুনোর কোন রাস্তাই নেই। এমন দেশগুলোকে অন্যদেশে যেতে হয় অবশ্যই আরেকটি দেশের বুকের উপর দিয়ে। সেটি যেন বিমান পথে, তেমনি স্থল ও জলপথে। অথচ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত যা চায় তা নিজ দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ৭টি প্রদেশে পৌঁছতে, অন্য কোন দেশে যেতে নয়। তাছাড়া ভারতের এ সাতটি প্রদেশ বাংলাদেশ বা অন্যকোন দেশ দ্বারা ঘেরাও নয়,তাই ভৌগলিক কারণে ট্রানজিট অনিবার্য প্রয়োজনও নয়। ভারতের দাবী এখানে নিছক করিডোরের।এবং সেটি রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে। আর এটিকে তারা বলছে ট্রানজিট। ট্রানজিট নিয়ে ভারতের এ এক আরেক প্রতারণা।
আফগানিস্তান, নেপাল ও ভূটানের ন্যায় দেশগুলির জন্য করিডোর এতটাই অপরিহার্য যে সেটি ছাড়া এ দেশগুলির পক্ষে অন্য দেশে যাওয়াই অসম্ভব। আফগানিস্তানে তাই করিডোর নিয়েছে পাকিস্তানের উপর দিয়ে। আর নেপাল ও ভূটান নিয়েছে ভারত থেকে। বাংলাদেশের জন্যও করিডোর অপরিহার্য হল অঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম -ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত এ দুটি ছিট মহলে যাওয়ার জন্য। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী ভারত এমন করিডোর দিতে বাধ্য। কারণ, করিডোর ছাড়া এ দুটি ছিট মহলের লোকজন অন্যদেশে যাওয়া দূরে থাক, নিজ দেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাই অসম্ভব। ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধির মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে করিডোরের সে দাবী মেনেও নেয়া হয়। সে চুক্তি মোতাবেক ভারতের পক্ষ থেকে তিন বিঘা পরিমাণ জমি বাংলাদেশকে দেয়ার কথা। বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতকে দেয় দক্ষিণ বেরুবাড়ীর বহুগুণ বৃহৎ ভূমি। কিন্তু ৪০ বছর অতিক্রান্ত হলেও ভারত সরকার বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত সে তিন বিঘা জমি দেয়নি। তাদের যুক্তি, ভারতীয় সংবিধানে নিজ দেশের এক ইঞ্চি জমিও অন্য দেশকে দেয়ার বিধান নেই। অথচ বাধা নেই অন্যদেশ গ্রাসের! তাই প্রতিশ্রুত তিন বিঘার বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশের ভূমি দক্ষিণ বেরুবাড়ীর উপর নিজ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে ভারত এক মুহুর্তও দেরী করেনি।
মালিকানা পেতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুত তিন বিঘা জমি লিজ হিসাবে দেয়ার জন্য ভারতের কাছে দাবী করে। ভারত তাতেও রাজি হয়নি। বলে, করিডোর দিলে ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। নিরাপত্তা রক্ষার সে যুক্তি দেখিয়ে ভারত সে তিন বিঘা জমির উপর বসায় দিবারাত্রী কড়া প্রহরা। ফলে আঙ্গরপোতা ও দহগ্রামের প্রায় বিশ হাজার মানুষের জীববে নেমে আসে জেলখানার বন্দিদশা।বছরের পর বছর ধরে চলে আলোচনা, কিন্তু সে সহজ বিষয়টিও ভারতকে বুঝানো কঠিন হয়ে পড়ে। বহু বছরব্যাপী বহু দেন-দরবারের পর অবশেষে ভারত দিনের কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশেী নাগরিকদের জন্য উক্ত করিডোর দিয়ে চলাচলের সুযোগ দিতে রাজি হয়।এই হল ভারতের বিবেক এবং বাংলাদেশীদের প্রতি তাদের দরদ!অথচ সে ভারতই করিডোর চায় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। এবং সেটি দিনের কিছু সময়ের জন্য নয়, বরং সারা বছরের প্রতিদিন, প্রতি রাত, প্রতি ঘন্টা ও প্রতি মুহুর্তের জন্য। তাছাড়া যে ভূখণ্ডের জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডোর চায় তা অঙ্গরপোতা ও দহগ্রামের ন্যায় বিদেশী ভূমি দ্বারা ঘেরাওকৃত ভূমি নয়, বরং ভারতের মূল ভূমির সাথে তা স্থলপথে ও বিমান পথে সংযুক্ত।
ভারতের বিনিয়োগ রাজনীতিতে
প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডোর লাভে ভারত এত বেপরোয়া কেন? কেনই বা সেটির উন্নয়নে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ? কেনই বা সে করিডোর দিতে রাজী হয় নি আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার? বিগত সরকারগুলোর এরূপ সিদ্ধান্তের পিছনে কারণগুলো কি? এ প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় অভিলাষ ও স্ট্রাটেজী বুঝার জন্য এ বিষয়টি বুঝা শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, অপরিহার্য। বাংলাদেশে বিনিয়োগের খাত শুধু রাস্তাঘাট বা করিডোর নয়। অথচ শিল্প-কৃষি-বিদ্যুৎসহ বিনিয়োগের অন্য কোন খাতেই ভারত আজ অবধি কোন বিনিয়োগ করেনি। অতএব করিডোর খাতে কেন তার এত আগ্রহ? ভারত নিজেও কোন ধনি দেশ নয়। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে প্রকাশ, আফ্রিকার ২২টি দেশে যত গরীব মানুষের বাস,তার চেয়ে বেশী গরীবের বাস ভারতের ৮টি প্রদেশে। আফগানিস্তান বা ইরাকে মার্কিনীদের বিরুদ্ধে যত আত্মত্যাগী যুবক বোমা হামলায় প্রাণ দেয়,ভারতে তার চেয়ে শত গুণ বেশী কৃষক বা গৃহবধু দারিদ্র্য ও হতাশায় আত্মহত্যা করে। হাজার হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের বদলে নিজ দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে উক্ত এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হলে দেশটির দরিদ্র মানুষের অনেক উপকার হত। অথচ সে পথে না গিয়ে ভারত আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডোর খাতে,হেতু কি?
বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে করিডোরের বিষয়টি বুঝতে হলে বুঝতে হবে ভারতের উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মনদের আসমুদ্র-হিমাচল ব্যাপী এক হিন্দু সাম্রাজ্য গড়ার আগ্রাসী মানসিকতাকে। নিজ দেশের দরিদ্র মানুষদের প্রতি এসব বর্ণবাদী আগ্রাসী হিন্দুদের দরদ অতি সামান্যই। তারা বেছে বেছে সেখানেই বিনিয়োগ বাড়ায় যা তাদের সে আগ্রাসী অভিলাষ পুরণে জরুরী। আর সেচিত্রটিই ফুটে উঠে বাংলাদেশের প্রতি তাদের বিদেশ নীতি ও স্ট্রাটেজীতে। বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। এদেশের উন্নয়নে বহু দূরবর্তী দেশের পূঁজিপতিও বিনিয়োগ করেছে। পাকিস্তান আমলে বিনিয়োগ করেছে আদমজী, বাওয়ানী, ইস্পাহানী, আমিনের ন্যায় বহু অবাঙালীও। কিন্তু বাংলাদেশের ভারতীয়দের বিনিয়োগ যে ছিল না তা নয়। তবে সেটি কখনই শিল্প বা অর্থনীতিতে নয়,ছিল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মিডিয়ার ময়দানে। ভারত আজও বিনিয়োগের সে ধারাই অব্যাহত রেখেছে। ফলে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় শিল্প-পণ্য উৎপাদিত না হলে কি হবে, বিপুল ভাবে বেড়েছে ভারত-ভক্ত ও ভারতীয় স্বার্থের সেবাদাস।
ভারতের যুদ্ধে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ছিল একাত্তরের যু্দ্ধে। সেটি ছিল যেমন বিপুল অর্থের, তেমনি রক্তেরও। এ বিষয়টি অস্বীকারের উপায় নেই,ভারতীয়দের সে বিনিয়োগ না হলে বাংলাদেশ সৃষ্টিই হত না। তবে ভারতের সে বিনিয়োগ কি ছিল বাংলাদেশের স্বার্থে? ভারত কোন বিদেশীদের স্বাধীনতার স্বার্থে কখনো কি একটি তীরও ছুঁড়েছে? একটি পয়সাও কি ব্যয় করেছে? বরং ভারতের ইতিহাস তো অন্যদেশে সামরিক আগ্রাসন ও স্বাধীনতা লুন্ঠনের। সে লুন্ঠনের শিকার কাশ্মির, সিকিম, মানভাদর, হায়দারাবাদের স্বাধীনতা। ভারতীয়দের কাছে একাত্তরের যুদ্ধটি ছিল শতকরা শতভাগ ভারতীয় যুদ্ধ। তাই সে যুদ্ধের ঘোষণা যেমন শেখ মুজিব থেকে আসেনি, তেমনি কোন বাংলাদেশী জেনারেলের পক্ষ থেকেও আসেনি। এবং সে যুদ্ধের কমাণ্ড শেখ মুজিব বা তার অনুসারিদের হাতেও ছিল না। ভারতীয় অর্থ, নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা দ্বারা পরিচালিত এ যুদ্ধটি ছিল সর্বক্ষেত্রেই একটি ভারতীয় যুদ্ধ। মুজিব স্বাধিনতার ঘোষনা দিল কি দিল না, মূক্তি বাহিনী যুদ্ধ করলো কি করলো না – ভারত সে অপেক্ষায় ছিল না। এ যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল ভারতীয় ভূমি থেকে,এবং ভারতীয় জেনারেলদের নেতৃত্বে। সে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে ভারতীয় সেনানিবাস, বহু লক্ষ ভারতীয় সৈন্য এবং বহু ভারতীয় বিমান, কামান, ট্যাংক এবং গোলাবারুদ। ভারতীয়দের বরং সফলতা, তাদের বহুদিনের কাঙ্খিত সে যুদ্ধটিকে তারা বাংলাদেশীদের ঘাড়ে চাপাতে সমর্থ হয়েছিল। মুক্তিবাহিনীকে তারা নিজ অর্থে গড়ে তুলেছিল স্রেফ নিজস্ব প্রয়োজনে। তারা সেদিন কইয়ের তেলে কই ভেজেছিল। বিশ্ববাসীর কাছেও সে সত্যটি কখনই গোপন থাকেনি। বরং সেটি প্রকাণ্ড ভাবে প্রকাশ পায় যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেলদের কাছে, কোন বাংলাদেশী জেনারেল বা মুক্তি যোদ্ধার কোন কমাণ্ডারের কাছে নয়। আরো প্রকাশ পায়, যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমান যুদ্ধাস্ত্র যখন ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। একাত্তরে সে যুদ্ধটি যদি বাংলাদেশীদের দ্বারা বাংলাদেশের যুদ্ধ হত তবে পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া বিপুল যুদ্ধাস্ত্র ভারতে যায় কি করে? পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদেরকেই বা কেন ভারতে নেয়া হবে?
একাত্তরে ভারতের অর্থ, রক্ত, শ্রম ও মেধার বিনিয়োগটি ভারতের কোন খয়রাতি প্রকল্পও ছিল না, ছিল নিজ সাম্রাজ্য বিস্তারের অনিবার্য প্রয়োজনে। ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার লক্ষে। এবং সে সাথে সামরিক দিক দিয়ে পঙ্গু, রাজনৈতিক ভাবে অধিকৃত এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারতনির্ভর এক বাংলাদেশ সৃষ্টির। এমন একটা যুদ্ধ নিজ খরচে লড়ার জন্য ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই দুপায়ে খাড়া ছিল। ভারত পাকিস্তানের সৃষ্টি যেমন চাইনি, তেমনি দেশটি বেঁচে থাকুক সেটিও চায়নি। তাই ভারতের সে বিনিয়োগটি যেমন একাত্তরে শুরু হয়নি, তেমনি একাত্তরে শেষও হয়নি। সেটির শুরু হয়েছিল সাতচল্লিশে, এবং চলছে আজও। তবে চলছে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ও ভিন্ন ভিন্ন রণাঙ্গনে। বিশেষ করে সে সব খাতে যা আঞ্চলিক শক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য তারা জরুরী মনে করে। করিডোর হল তেমনই এক গুরুত্বপূর্ণ খাত। তাই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে করিডোরের দাবী, চট্রগ্রাম ও চালনা বন্দরসহ বাংলাদেশের নৌ ও বিমান বন্দর ব্যবহারের দাবি, বাংলাদেশের মিডিয়া খাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগ, শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে আওয়াম লীগ ও তার মিত্রদের লাগাতর প্রতিপালন –এবিষয়গুলো বুঝতে হলে ভারতের সে আগ্রাসী মনভাব ও সামরিক প্রয়োজনটি অবশ্যই বুঝতে হবে। তখন সুস্পষ্ট হবে, যে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে ভারত এগিয়ে আসছে সেটিও কোন খয়রাতি প্রজেক্ট নয়। ভারত এর চেয়ে অনেক বেশী বিনিয়োগ করে তার পূর্ব সীমান্তের সামরিক বাহিনীর পিছনে। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের এ বিনিয়োগ আসছে দেশটির সে আগ্রাসী স্ট্রাটেজীর অবিচ্ছিন্ন অংশ রূপে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশীদের যে যাই বলুক,ভারতীয়দের মাঝে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কোন অস্পষ্টতা নেই। সেটি তার খোলাখোলী ভাবেই বলে। এবং সেটিই ফুটে উঠেছে “ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিভিউ” জার্নালের সম্পাদক মি. ভরত ভার্মার লেখা সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে। এ প্রবন্ধে মি. ভার্মার সে নিবদ্ধ থেকে উদ্বৃতি দিয়ে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করা হবে। তবে এ নিয়ে কোন রূপ রাখঢাক নাই তাদের সহযোগী বাংলাদেশী আওয়ামী বাকশালীদের মনেও। তারাও চায় বাঙালীর জীবনে একাত্তর বার বার ফিরে আসুক। এবং বাঙালী আবার লিপ্ত হোক ভারতীয়দের নেতৃত্বে এবং ভারতীয়দের অস্ত্র নিয়ে আরেকটি যুদ্ধে।
ভারত চায় আগ্রাসনের অবকাঠামো
বিশ্ব রাজনীতিতে যে অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, ভারত সেটিই হতে চায় সমগ্র এশিয়ার বুকে। আর সে অবস্থায় পৌঁছতে হলে অন্যদেশের অভ্যন্তরে শুধু দালাল বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ প্রতিপালন করলে চলেনা। আগ্রাসনকে বিজয়ী ও স্থায়ী করতে নিজেদের বিশাল দূতাবাস, ঘাঁটি,সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় স্পাই নেটওয়ার্কের পাশাপাশি সেনা ও রশদ সরবরাহের অবকাঠামোও গড়ে তুলতে হয়। প্রয়োজনে সামরিক আগ্রাসনও চালাতে হয়। শুধু হামিদ কারজাইদের মত ব্যক্তিদের কারণে আফগানিস্তান মার্কিনীদের হাতে অধিকৃত হয়নি। এলক্ষে ঘাঁটি, বন্দর ও সড়ক নির্মানও করতে হয়েছে। অবিরাম গতিতে রক্তক্ষয়ী একটি যুদ্ধও চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ভারতও তেমনি শুধু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিপালন নিয়ে খুশি নয়। পাকিস্তান ভাঙ্গার ভারতীয় প্রজেক্ট শুধু আগরতলা ষড়যন্ত্রের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখলে তা কখনই সফল হত না। এ জন্য ভারতকে নিজের বিশাল বাহিনী নিয়ে একাত্তরে প্রকান্ড একটি যুদ্ধও লড়তে হয়েছে।
এটি এখন আর লুকানো বিষয় নয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভারত শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল তার অনুগত পক্ষকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। সম্প্রতি সে তথ্যটিই বিশ্বময় ফাঁস করে দিয়েছে ব্রিটিশ প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্ট। তবে ভারতের এ বিনিয়োগ শুধু ২০০৮ সালে নয়, প্রতি নির্বাচনেই। যেমন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে, তেমনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও। তবে শুধু নির্বাচনী বিনিয়োগের মধ্য দিয়েই ভারতের আসল লক্ষ্য পূরণ হওয়ার নয়। ভারত ভাল ভাবেই জানে, শুধু নিজ দেশের সেনবাহিনীতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার সম্ভব নয়। সে জন্য চাই,বাংলাদেশের রাজনীতি, মিডিয়া, বুদ্ধিবৃত্তি ও যোগাযোগসহ নানা ক্ষেত্রে লাগাতর বিনিয়োগ। তাছাড়া তাদের কাছে যুদ্ধ আগামী দিনের কোন বিষয় নয়,বরং প্রতি দিনের। দেশটি এক আগ্রাসী যুদ্ধে লিপ্ত তার জন্ম থেকেই। উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম -এ দুই প্রান্তে দুটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শুরু আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে। এখন তা অবিরাম গতিতে চলছে। ভারতে বহু সরকার ক্ষমতায় এসেছে, বিদায়ও নিয়েছে। কিন্তু সে যুদ্ধ দুটি থামার নামই নিচ্ছে না। ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে চলমান যুদ্ধের প্রতিবেশী দেশ হল বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে সংশ্লিষ্ট করা ছাড়া আফগান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্টের পক্ষে বিজয় দূরে থাক টিকে থাকাই যেমন অসম্ভব তেমনি অবস্থা ভারতের জন্য বাংলাদেশের। পাকিস্তানের রাজনীতি, মিডিয়া, সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধ-অবকাঠামোতে এ কারণেই মার্কিনীদের বিশাল বিনিয়োগ। জেনারেল মোশাররফকে হটিয়ে পিপলস পার্টিকে ক্ষমতায় বসানোর মূল কারণ তো মার্কিনীদের সে যুদ্ধে পাকিস্তানীদের শামিল করার বিষয়টিকে নিশ্চিত করা। একই কারণে উত্তর-পূর্বের রণাঙ্গণে ভারত অপরিহার্য মনে করে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা।সে লক্ষেই বাংলাদেশের রাজনীতি, মিডিয়া, বুদ্ধিবৃত্তিতে ভারতের এত বিনিয়োগ। “শেখ হাসীনার ফারাক্কার পানিচুক্তিতে পদ্মায় পানি বেড়েছে বা টিপাইমুখ বাঁধের ফলে সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনায় পানি থৈ থৈ করবে, বা একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার” –বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীরা তো এমন কথা বলে সে পুঁজি বিনিয়োগের ফলেই। একাত্তরের হাতিয়ার যে ছিল ভারতীয় হাতিয়ার সে কথা কি অস্বীকারের উপায় আছে? এবং সে হাতিয়ার নির্মিত হয়েছে যে স্রেফ ভারতীয় বিজয় ও ভারতীয় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে তা নিয়েও কি কোন বিতর্ক আছে?
ভারতীয়দের ভয় ও স্ট্রাটেজী
সাম্রাজ্য বিস্তারে ভারতের যেমন স্বপ্ন আছে, তেমনি ভয়ও আছে। দেশটির সাম্রাজ্য-লিপ্সু নেতাদের মাঝে যেমন রয়েছে প্রচণ্ড পাকিস্তানভীতি ও ইসলামভীতি,তেমনি রয়েছে চীনভীতিও। চীন দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিসঞ্চয় করছে। প্রতিবেশী নেপালও এখন চীনের পক্ষে। মধ্য ভারতের কয়েকটি প্রদেশে জুড়ে লড়াই করে চলেছে হাজার হাজার মাওবাদী বিপ্লবী। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ভাষায় মাওবাদীদের এ যুদ্ধই ভারতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে বর্তমান কালের সবচেয়ে বড় হুমকি। অপরদিকে পাকিস্তানও এখন আর একাত্তরের দুর্বল পাকিস্তান নয়। তার হাতে এখন পারমাণবিক বোমা। রয়েছে দূরপাল্লার শত শত মিজাইল। রয়েছে হাজার হাজার আত্মত্যাগী ইসলামী বোমারু যোদ্ধা – যাদের মাত্র কয়েকজন মোম্বাই শহরকে কয়েকদিনের জন্য অচল করে দিয়েছিল। ১৯৪৮, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধের কারণে অসম্ভব ও অচিন্তনীয় হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের সাথে দেশটির বন্ধুত্ব। সম্প্রতি আফগানিস্তানে মার্কিনীদের সাথে ভারতের সহযোগী ভূমিকা ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানীদের সে ঘৃনা আরো তীব্রতর করছে। তাছাড়া লাগাতর যুদ্ধ চলছে কাশ্মীরে। সে যুদ্ধে ভারতের পক্ষে বিজয় দিন দিন অসাধ্য হয়ে উঠছে। এবং সে সত্যটি ভারতীয় সমরবিদদের কাছেও দিন দিন স্পষ্টতর হচ্ছে। বিজয় একই ভাবে অসাধ্য হয়ে উঠছে উত্তরপূর্ব সীমান্তের প্রদেশগুলির যুদ্ধেও। ভারতের আরো ভয়, আফগানিস্তানের যুদ্ধেও মার্কিন বাহিনী ও তাদের মিত্ররা দ্রুত পরাজিত হতে চলেছে। ফলে তাদের আশংকা, দেশটি পুনরায় দখলে যাচ্ছে তালেবানদের হাতে -যারা পাকিস্তানের মিত্র। ভারতীয়দের ভয়,তালেবানগণ কাবুলের উপর বিজয় অর্জনের পর মনযোগী হবে ভারত থেক কাশ্মীর আজাদ করতে। কাশ্মীরের মজলুল মুসলমানদের দুর্দশায় আফগানিস্তানের সেকুলার নেতৃবৃন্দ নিশ্চুপ থাকলেও ধর্মপ্রাণ তালেবানগণ সেটি সইবে না। বরং তাদের পক্ষে যুদ্ধ লড়াটি তারা ধর্মীয় ফরজ জ্ঞান করবে। সে সাথে ভারতীয়দের আতংক ধরেছে দেশটির উত্তর-পূর্ব সীমান্তের যুদ্ধে চীনের ক্রমঃবর্ধমান আগ্রহ দেখে।
ভারতীয়দের ভয়ের আরো কারণ, উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ৭টি প্রদেশ তিনদিক দিয়েই শত্রু দ্বারা ঘেরাও। প্রদেশগুলি মূল ভারতের সাথে সংযুক্ত মাত্র ১৭ মাইল চওড়া শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে। মুরগির ঘাড়ের ন্যায় সরু এ করিডোরটি চীন যে কোন সময় বন্ধ করে দিতে পারে। বন্ধ করতে পারে পূর্ব সীমান্তের বিদ্রোহী বিচ্ছিন্ততাবাদীরাও। ভারতীয়দের সে ভয় ও আতংকের ভাবই প্রকাশ পেয়েছে মি. ভরত ভার্মার প্রবন্ধে। তবে তার লেখায় শুরুতে যেটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো আগ্রাসী ভারতীয়দের নিজ অভিলাষের কথা। তিনি লিখেছেন, “India has the potential to be to Asia, what America is to the world… Possibly India is the only country in Asia that boasts of the potential to occupy the strategic high ground gradually being vacated by the retreating western forces, provided it develops offensive orientation at the political level. অর্থঃ “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে মর্যাদা অর্জন করেছে সমগ্র পৃথিবীতে, ভারতের সামর্থ রয়েছে এশিয়ার বুকে সে অবস্থায় পৌঁছার।… সম্ভবতঃ ভারতই এশিয়ার একমাত্র দেশ যার সামর্থ রয়েছে পিছেহঠা পশ্চিমা শক্তিবর্গের ফেলে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজিক ক্ষেত্রগুলো দখলের। তবে সেটি সম্ভব হবে যদি দেশটি রাজনীতির ময়দানে আক্রমণাত্মক ছকে নিজেকে গড়ে তোলে।”
কোন বৃহৎ শক্তির একার পক্ষেই এখন আর বিশ্ব-রাজনীতি নিজ নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব নয়। একাজ অতি ব্যয়বহুল। আফগানিস্তানকে কবজায় রাখার বিপুল খরচ সোভিয়েত রাশিয়াকে শুধু পরাজিতই করেনি, টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। তেমনি ইরাক ও আফগানিস্তান দখলদারির খরচ বিপাকে ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। দেশটি আজ প্রচন্ড ভাবে বিপন্ন অর্থনৈতিক ভাবে। ফলে বিজয় দূরে থাক, তারা এখন পিছু হটার রাস্তা খুঁজছে। ভারতের খায়েশ, তারা সে শূণ্যস্থান দখলে নিবে। আর সে জন্য তারা এখন আগ্রাসী স্ট্রাটেজী নিয়ে এগুচ্ছে। অথচ একটি এশিয়ান শক্তি হওয়ার খরচও কম নয়। তবে এমন বাতিক শুধু হঠকারিই করে না, বিবেকশূণ্যও করে। তাই বিশ্বের সর্বাধিক দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে হলে কি হবে, দেশটির বাতিক উঠেছে শত শত কোটি টাকার অস্ত্র কেনার। এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে একটি প্রকান্ড যুদ্ধের। এ জন্যই প্রয়োজন পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে করিডোরের। কারণ, ভারতীয় সমরবিদদের বিবেচনায় শিলিগুরি সরু করিডোরটি আদৌও নিরাপদ নয়। সম্ভব নয় এ পথ দিয়ে কোন যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতের পূর্ব সীমান্তে লাগাতর রশদ সরবরাহ। সংকীর্ন এ গিরিপথের উপর ভরসা করে দীর্ঘকাল ব্যাপী কোন যুদ্ধ পরিচালনা অসম্ভব। ভারতীদের আতংক যে এ নিয়ে কতটা প্রকট সে বিবরণও পাওয়া যায় মি. ভার্মার লেখায়। তিনি লিখেছেন, “By 2012, to unravel India, Beijing is likely to para-drop a division of its Special Forces inside the Siliguri Corridor to sever the Northeast. There will be simultaneous attacks in other parts of the border and linkup with the Special Forces holding the Siliguri Corridor will be selected. All these will take place under the nuclear overhang. In concert Islamabad will activate the second front to unhook Kashmir by making offensive moves across the IB in the plains… Meanwhile the fifth columnists supporting these external forces will unleash mayhem inside. অর্থঃ “ভারতকে বিপাকে ফেলার জন্য ২০১২ সালের মধ্যে বেইজিং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে শিলিগুরি করিডোরে এক ডিভিশন স্পেশাল ফোর্সকে প্যারাসুট যোগে নামাতে পারে। শিলিগুরি করিডোরের উপর স্পেশাল ফোর্সের দখলদারি বলবৎ রাখার জন্য সে সময় সীমান্তের অন্যান্য ক্ষেত্রেও একযোগে হামলা হতে পারে। সব কিছুই হবে এমন এক সময় যখন আনবিক বোমার ভয়ও মাথার উপর ঝুলতে থাকবে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে ইসলামাবাদ কতৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর দ্বিতীয় রণাঙ্গণ খুলবে। দেশের অভ্যন্তরে একই সময় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে পঞ্চম বাহিনীর লোকেরা।”
ভারতীয়দের মাথাব্যাথা শুধু শিলিগুড়ি, কাশ্মির বা আভ্যন্তরীন মাওবাদীদের নিয়ে নয়, আতংক বেড়েছে আফগানিস্তানকে নিয়েও। ভয়ের বড় কারণ, একমাত্র ব্রিটেশদের হামলা বাদে দিল্লি অভিমুখে অতীতের সবগুলি হামলা হয়েছে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে। আর আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হল মধ্য এশিয়ার দেশগুলির যাওয়ার রাস্তা। সে আফগানিস্তান আজ দখলে যাচ্ছে পাকিস্তানপন্থি তালেবানদের হাতে! ভারতীয় এটি ভাবতেও ভয় হয়। মি. ভার্মা লিখেছেন, “With Afghanistan being abandoned by the West, beginning July 2011, Islamabad will craft a strategy to take over Kabul with the help of Islamic fundamentalist groups. The Taliban will initially concentrate on unraveling a soft target like India in concert with Beijing -Islamabad -Kabul or Chinese Communists- Pakistan Army- Irregular Forces axis.” অর্থঃ ২০১১ সালের জুলাইয়ের দিকে পশ্চিমা শক্তিবর্গ যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে তখন ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষ ইসলামী মৌলবাদীদের সাথে মিলে পরিকল্পনা নিবে কাবুল দখলের। তালেবানগণ তখন বেইজিং-ইসলামাবাদ-কাবুল অথবা চীনা কম্যুনিষ্ট-পাকিস্তান সেনাবাহিনী-অনিয়মিত সৈন্য –এরূপ অক্ষীয় জোটের সাহায্য নিয়ে শুরুতে ভারতের ন্যায় সহজ টারগেটের উপর আঘাত হানতে মনযোগী হবে।”
ভারতীয়দের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত প্রতিরক্ষা সীমানার বাইরের কোন দেশ নয়। বাংলাদেশকে সে পরিকল্পিত প্রতিরক্ষা বুহ্যের বাইরের দেশ ধরলে ভারতের জন্য কোন মজবুত ডিফেন্স স্ট্রাটেজী গড়ে তোলাই অসম্ভব। সেটি ভারত হাড়ে হাড়ে বুঝেছে ১৯৬২ সালে যখন চীনের সাথে ভারতের যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে ভারত চরম ভাবে পরাজিত হয়। চীনের বিশাল বাহিনীর মোকাবেলায় ভারত প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্যসমাবেশই করতে পারেনি। কারণ সেরূপ রাস্তাই ভারতের জন্য সে সময় ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে ভারত তখন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের উপর চাপ দিয়েছিল যাতে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে সৈন্য সমাবেশের সুযোগ দেয়। কিন্তু আইয়ুব খান সে চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। কিন্তু একাত্তরে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ভারতের সামনে সম্ভাবনার রাস্তা খুলে যায়। এশিয়ায় প্রভূত্ব বিস্তারে ভারত আজ যে স্বপ্ন দেখছে সেটি মুলতঃ একাত্তরের বিজয়ের ফলশ্রুতিতেই।
আফগানিস্তানের কারজাই তার জনপ্রিয়তা নিয়ে ভাবে না। তার ভাবনা মার্কিনীদের খুশি করা নিয়ে। সে জানে, জনগণের সমর্থণ নিয়ে সে ক্ষমতায় আসেনি। অধিকৃত দেশে সেটি জরুরীও নয়। ক্ষমতায় বসানোর পর তাঁকে ক্ষমতায় রাখার দায়ভারও তাই মার্কিনীদের। তেমনি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা হারানো নিয়ে কোন দুর্ভাবনা নেই। সে দুর্ভাবনা ও দায়ভার ভারতীয়দের। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যারা তাঁকে বিজয়ী করেছিল তাকে ক্ষমতায় অব্যাহত রাখার দায়ভারও তাদের। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত। তখন বিপদে পড়বে তাদের ৪ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার। বিপদে পড়বে উত্তর-পূর্ব ভারতে তাদের যুদ্ধ। চট্টগ্রাম বন্দরে আটককৃত ১০ট্রাক অস্ত্র নিয়ে হাসিনা সরকার প্রমাণ করে ছেড়েছে তাঁর সরকার ভারতীয়দের কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ। বলা হচ্ছে, সে ১০ট্রাক চীনা অস্ত্র আনা হয়েছিল উলফা বিদ্রোহীদের হাতে পৌছানোর জন্য। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুৎ হলে ভবিষ্যতে ১০ ট্রাক নয় আরো বেশী অস্ত্র যে বিদ্রোহীদের হাতে পৌছবে তা নিয়ে কি ভারতীয়দের মনে কোন সন্দেহ আছে? ভারতীয় নেতারা কি এতই শিশু যে তারা সেটি বুঝে না? তাই ভারত চায়, শেখ হাসিনার আওয়ামী-বাকশালী সরকার শুধু ক্ষমতায় থাকুক তাই নয়, বরং ভারতের সাথে উলফা বিরোধী যুদ্ধে পুরাপুরি সংশ্লিষ্ট হোক। এ যুদ্ধে যোগ দিক সক্রিয় পার্টনার রূপে, যেমনটি দিয়েছিল একাত্তরে। মার্কিন সরকার এমনই একটি যুদ্ধ চাপিয়েছে পাকিস্তানের উপরও।সে যুদ্ধের ফল পাকিস্তানে যেমন ভাল হয়নি, বাংলাদেশেও তা সুফল বয়ে আনবে না।
ভারতীয় হস্তক্ষেপ অনিবার্য যে কারণে
কাউকে নিজ ঘরে দাওয়াত দিলে তাকে নিরাপত্তাও দিতে হয়। মেহমানদারির এ এক মহা দায়ভার। নিজ গৃহে অন্যের উপর হামলা হলে সেটি আর তখন আভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না। তাকে বাঁচাতে অন্যরা তখন ঘরে ঢুকার বৈধতা পায়। তাছাড়া শত শত মাইল ব্যাপী করিডোরে শত শত ভারতীয় যানবাহন ও হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়ভার কি এতই সহজ? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চেয়ে বহুগুণ বিশাল হলো পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। কিন্তু ন্যাটো বাহিনীকে করিডোর দিয়ে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। কোন দেশ কি পারে তার হাজার হাজার মাইল লম্বা রাজপথকে দিবারাত্র নিরাপত্তা দিতে? অথচ সে ব্যর্থতার কারণে পাকিস্তানকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র বলার সুযোগ পাচ্ছে। অভিযোগ তুলেছে, পাকিস্তান তার সামরিক বাহিনীকে ন্যাটোর নিরাপত্তায় যথাযথ কাজে লাগাচ্ছে না। এখন নিজেদের নিরাপত্তার দায়ভার মার্কিনীরা নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। এখন লাগাতর মার্কিনী ড্রোন হামলা এবং সে সাথে সামরিক হামলা হচ্ছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। এর ফলে ভূলুন্ঠিত হয়েছে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব। কথা হল, পাকিস্তানের চাইতে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী কি বেশী শক্তিশালী? কিছুদিন আগেও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দক্ষতা নিয়ে খোদ মার্কিনীরাই প্রশংসা করতো। আর সেই সেনাবাহিনীকেই এখন তারা ব্যর্থ বলছে। ফলে করিডোর দিলে এবং সে করিডোরে চলমান ভারতীয় যানবাহনের উপর হামলা হলে তখন নিরাপত্তার দায়ভারও ভারতীয়রা নিজ হাতে নিতে চাইবে। তখন বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্য সমাবেশ যেমন বাড়বে,তেমনি বাড়বে তাদের উপর হামলাও। এর ফলে তীব্রতর হবে যুদ্ধও। এভাবেই বাংলাদেশের কাঁধে চাপবে ভারতের যুদ্ধ।
ভারত জানে, করিডোর দিলে ভারতের যুদ্ধে বাংলাদেশকে নামানো সহজতর হবে। কারণ করিডোর দিয়ে চলমান ভারতীয় যানের উপর হামলা রোধে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী তখন সীমান্ত ছেড়ে কামানের নলগুলি নিজ দেশের জনগণের দিকে তাক করতে বাধ্য হবে। দেশটি তখন পরিণত হবে আরেক ইরাক,আরেক আফগানিস্থান বা কাশ্মীরে। করিডোর দিলে এবং সে করিডোরে চলমান ভারতীয় যানবাহনের উপর হামলা হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় হস্তক্ষেপ যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে ভারতীয় সৈন্য সমাবেশ। পাকিস্তানের মহাসড়কে যতই বাড়ছে ন্যাটোর তেলবাহি ট্যাংকারের সংখ্যা ততই বাড়ছে সেগুলির উপর হামলা। সেখানে হাইজ্যাক হচ্ছে মার্কিনী নাগরিক। তেমনি একটি অবস্থা যে বাংলাদেশেও রশদবাহি ভারতীয় যানবাহন ও নাগরিকদের ক্ষেত্রেও হবে তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? আর ভারতীয় যানবাহন ও নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে ভারত কি চুপচাপ বসে থাকবে? ভারত তখন বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে নিজেদের যানবাহন ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিজ হাতে নিতে আগ্রহী হবে। যে অজুহাতে মার্কিনী বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে যাকে ইচ্ছা তাকে গ্রেফতার করছে বা হত্যা করছে, এবং যখন তখন ড্রোন হামলা করছে, সেটিই যে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে করবে তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? ভারতীয় বিএসএফ যেটি বাংলাদেশের সীমান্তে করছে সেটিই করবে দেশের ভিতরে ঢুকে। আর সে কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও তার পশ্চিমা মিত্ররা যে ভারতকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিবে তা নিয়েও কি কোন সংশয় আছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক শক্তি রূপে দায়িত্ব পালন করুক। অর্থাৎ আফগানিস্তান এবং ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা কিছু করছে সেটিই ভারত বাংলাদেশ এবং পাশ্বর্ব্তী অন্যান্য দেশে পালন করুক। ভারত একই ভাবে মার্কিনীদের পাশে দাড়িয়েছে আফগানিস্তানে। বরং ভারতের আব্দার,মার্কিন বাহিনী যেন আফগানিস্তান ত্যাগ না করে।
ভারতের বিদেশ নীতিতে সম্প্রতি আরেক উপসর্গ যোগ হয়েছে। ভারতের যে কোন শহরে বোমা বিস্ফোরণ হলে তদন্ত শুরুর আগেই ভারত সরকার পাকিস্তানীদের পাশাপাশি বাংলাদেশীদের দায়ী করে বিবৃতি দিচ্ছে। যেন এমন একটি বিবৃতি প্রচারের জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুত থাকে। কিন্তু এ অবধি এমন কাজে বাংলাদেশীদের জড়িত থাকার পক্ষে আজ অবধি কোন প্রমান তারা পেশ করতে পারিনি। এমন অপপ্রচারের লক্ষ্য একটিই। করিডোরসহ ভারত যে সুবিধাগুলো চায় সেগুলি আদায়ে এভাবে প্রচন্ড চাপসৃষ্টি করা। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির এটিই হলো এখন মূল স্ট্রাটেজী। লক্ষ্যনীয় হল, সেদেশে বার বার সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের প্রতি তাদের এ নীতিতে কোন পরিবর্তন নেই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বিপদ বাড়বে যদি এ লড়ায়ে বালাদেশ ভারতের পক্ষ নেয়। পণ্যের পাশাপাশি সৈন্য ও সামরিক রশদ তখন রণাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। ফলে পূর্ব এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রতিপক্ষ রূপে চিহ্নিত হবে বাংলাদেশ। আজ অবধি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারা একটি তীরও ছুঁড়েনি তারাই পরিণত হবে পরম শত্রুরূপে। তখন সসস্ত্র হামলার লক্ষ্যে পরিণত হবে বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা। তখন অশান্ত হয়ে উঠবে দেশের হাজার মাইল ব্যাপী উত্তর ও পূর্ব সীমান্ত। অহেতুক এক রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। কথা হলো, যে গেরিলা যোদ্ধাদের মোকাবিলা করতে গিয়ে বিশাল ভারতীয় বাহিনীই হিমসিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের মত দেশ কি সফলতা পাবে? তখন বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা বিদ্রোহীগণ বন্ধু ও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবে এ এলাকায়। এ কারণেই বাংলাদেশের জন্য অতিশয় আত্মঘাতি হলো ভারতের জন্য ট্রানজিট দান।
খাল কাটা হচ্ছে কুমির আনতে
খাল কাটলে কুমির আসাবেই। সেটি শুধু স্বাভাবিকই নয়, অনিবার্যও। অথচ বাংলাদেশ সরকার সে পথেই এগুচ্ছে। করিডোর দিলে আগ্রাসী শক্তির পদচারণা হবেই। তখন শুধু মালবাহী ভারতীয় ট্রাকই আসবে না, সৈন্যবাহী যানও আসবে। তাদের বাঁচাতে ড্রোন হামলাও হবে। যেভাবে পাকিস্তানে আজ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করা হয়েছে, এবং সে অজুহাতে সেদেশে মার্কিনী ড্রোন হামলা ও সামরিক অনুপ্রবেশকে যে ভাবে জায়েজ করা হচ্ছে সেটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হবে। তখন বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থেই ভারতের এক অধিকৃত দেশে পরিনত হবে। ফলে আজকের আফগানিস্তান ও কাশ্মীরের যে অধিকৃত দশা সেটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ঘটবে। আর সে পরাধীনতাকে স্বাধীনতা বলার মত লোকের অভাব যেমন আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে হয়নি, তেমনি বাংলাদেশেও হবে না। “ফারাক্কার পানিচুক্তির ফলে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে”, “টিপাই মুখ বাঁধ দেয়াতে সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনায় পানি থৈ থৈ করবে” এবং “ভারতকে করিডোর দিলে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ লাভ হবে” এমন কথা বলার লোক কি বাংলাদেশে কম? তারাই সেদিন ভারতের পক্ষে তাদের গলা জড়িয়ে প্রশংসা গীত গাইবে।
আরো লক্ষ্যণীয় হলো, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এ এলাকাটিতে ভূ-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তন হচ্ছে অতি দ্রুতগতিতে। মেঘালায়, মিজোরাম ও ন্যাগাল্যান্ড রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই পরিণত হয়েছে খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে। খৃষ্টান ধর্ম জোরে সোরে প্রচার পাচ্ছে পাশ্ববর্তী প্রদেশগুলিতেও। ফিলিপাইনের পর সমগ্র এশিয়ায় এটিই এখন সর্ববৃহৎ খৃষ্টান অধ্যুষিত এলাকা। তাছাড়া ভারতীয় সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের আচরণে এ ধর্মমতের অনুসারিরাও অতি অতিষ্ট। উগ্র হিন্দুদের কাছে হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মে দীক্ষা নেওয়া এক অমার্জনীয় অপরাধ। ফলে অতি জোরদার হচেছ খৃষ্টান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি অখন্ড খৃষ্টান রাষ্ট্র নির্মানের ধারণা। পশ্চিমা খৃষ্টান জগতে এমন রাষ্ট্রের পক্ষে আগ্রহ দিন দিন বাড়বে সেটিই স্বাভাবিক। ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে আলাদা করার পিছনে যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল সে যুক্তির প্রয়োগ হবে ভারতের বিরুদ্ধেও। ফলে খৃষ্টান জগত এবং চীনের ন্যায় বৃহৎ শক্তিবর্গও তখন নিজ নিজ স্বার্থে স্বাধীনতাকামীদের পক্ষ নিবে।
এ অবস্থায় ভারতের পক্ষ নেওয়ার খেসারত দিতে হবে অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৃহৎ শক্তির বিরাগ-ভাজন হয়ে। বাংলাদেশের জন্য সেটি হবে আত্মঘাতি। কিন্তু ভারতের জন্য চরম সুখের বিষয়টি হল, বাংলাদেশের মানুষের গলায় এ ঘাতক ফাঁসটি তাকে নিজে পড়িয়ে দিতে হচ্ছে না। দেশবাসীর গলায় সে ফাঁসটি পড়ানোর সে দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশের সরকার নিজে। ভারতীয়দের সৌভাগ্য যে,সে কাজে তারা একটি সেবাদাস সরকারও পেয়ে গেছে। এ মুহুর্তে ভারত সরকারের কাজ হয়েছে, সে পরিকল্পিত ফাঁসটি এ নতজানু সরকারের হাতে তুলে দেওয়া। একাত্তরের যুদ্ধের ফসল যেভাবে তারা নিজেরা ঘরে তুলেছিল,তারা একই কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে এবারও। একাত্তরের যুদ্ধ শেষে তারা বাংলাদেশীদের উপহার দিয়েছিল স্বাধীনতার নামে ভারতের পদানত একদলীয় একটি বাকশালী সরকার, রক্ষিবাহিনীর নৃশংসতা, “ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়ি” এবং ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। উনিশ শ’ সত্তরের নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে হলেও দেশবাসীর ভাগ্যে সে গণতন্ত্র জুটেনি। সে নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তার বাংলাদেশীদের ভবিষ্যত নিয়ে একাত্তরে একদিনের জন্যও কোন বৈঠকে বসেননি। তারা স্বাধীনতার ঘোষনা যেমন দেননি, তেমনি একাত্তরের যুদ্ধের ঘোষণা ও সে যুদ্ধের পরিচালনাও করেননি। সবই করেছে ভারত সরকার, ভারতীয় পার্লামেন্ট, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ও সেনাবাহিনী। মুজিবামলে গণতন্ত্রকেই বধ করা হয়েছিল শেখ মুজিবের স্বৈরাচারি বাকশালী শাসনকে স্থায়ীরূপ দিতে। একই ভাবে গণতন্ত্র অকার্যকর করা হয়েছে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরও। বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং তাদের উপর অত্যাচার, এমন কি সংসদ সদস্যদের রাজপথে পিটানো এখন রাজনীতির সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে।
লড়াই দেশ ও ঈমান বাঁচানোর
একাত্তরে যুদ্ধ থেকে ৯ মাসে মুক্তি মিললেও এবারে সেটি মিলছে না। বরং বাংলাদেশীদের কাঁধে চাপানো হচ্ছে এমন এক লাগাতর যুদ্ধ যা সহজে শেষ হবার নয়। তাছাড়া এ যুদ্ধটি আদৌ তাদের নিজেদের যুদ্ধ নয়। বরং সর্ব অর্থেই ভারতীয় এবং সেটি ভারতের স্বার্থ সংরক্ষণের।একাত্তরের যুদ্ধে ভারতের যে উদ্দেশ্য অসম্পূর্ণ থেকে যায়, ভারত এবার কোমর বেঁধেছে সেটিই পুরণ করতে। তাই ভারতের লক্ষ্য শুধু করিডোর লাভ নয়। সীমান্ত চুক্তি, সীমান্ত বাণিজ্য বা রাস্তাঘাট নির্মানে কিছু বিনিয়োগও নয়ও। বরং তার চেয়ে ব্যাপক ও সূদুর প্রসারী। সেটি যেমন দেশের ইসলামি চেতনার নির্মূল ও ইসলামপন্থি দেশপ্রেমিকদের কোমর ভাঙ্গার,তেমনি দেশটির উপর পরিপূর্ণ অধিকৃতি জমানোর। মি. ভার্মার ন্যায় ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা সে অভিলাষের কথা গোপন রাখেনি, তেমনি গোপন রাখছেন না বহু ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাও। সম্প্রতি বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা তো সিলেট থেকে খুলনা বরাবর বাংলাদেশের অর্ধেক দখল করে নেয়ার দাবীও তুলেছেন। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, জিহাদের ন্যায় ইসলামের মৌল শিক্ষার প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং ইসলামী সংগঠনগুলির নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে বস্তুত একই ভারতীয় স্ট্রাটেজীর অবিচ্ছেদ্দ অংশরূপে। বাংলাদেশীদের সামনে লড়াই এখন তাই শুধু গণতন্ত্র উদ্ধারের নয় বরং তার চেয়েও গুরুতর। সেটি দেশ বাঁচানোর। এবং সে সাথে ঈমান ও ইসলাম বাঁচানোর। ০৯/০৯/১১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018