মুসলিম জীবনে যুদ্ধ ও অরক্ষিত দুর্গ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 24, 2019
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
অনিবার্য যে লড়াই মুসলিম জীবনে
মুসলিম জীবনে লড়াই অনিবার্য। কারণে এ পৃথিবীতে সত্যিকারেরর ঈমানদার ছাড়া সবাই ইসলামের নির্মূল চায়। শত্রুদের মাঝে কোয়ালিশনটি বিশ্বজুড়ে। ইসলামের অনুসারি নারী-পুরুষ এবং শিশুরাও তাই হত্যার টার্গেট হয়। নামাজরত মুসল্লীদেরও হত্যা করা হয় মসজিদে ঢুকে –যেমনটি ১৫ই মার্চ নিউজিল্যান্ড হলো। এর আগে ইহুদীদের হাতে হয়েছে ফিলিস্তানে। এমনকি মুসলিম দেশেও হচ্ছে। ২০১৩ সালে শত শত মুসল্লীকে হত্যা করা হয়েছে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে। শান্তির বার্তাবাহী নবীজী (সাঃ)কেও তাই ইসলাম ও মুসলিম অস্তিত্ব বাঁচাতে অসংখ্য যুদ্ধের মোকাবেলা করতে হয়েছে। সুরক্ষিত দুর্গ ও সে দুর্গের লড়াকু সৈনিক ছাড়া ইসলামের অস্তিত্ব ও সুরক্ষা অসম্ভব। স্রেফ ইসলামের প্রচার ও নামায-রোযার ন্যায় ইবাদতের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের বাঁচানো যায় না। মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বও সুরক্ষা পায় না। এজন্যই ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো জিহাদ। তবে জিহাদকে লাগাতর বাঁচিয়ে রাখার জন্যও ইসলামী অবকাঠামো চাই। চাই দুর্গ। চাই প্রশিক্ষণ। চাই লাগাতর রিক্রুটমেন্ট। প্রতিটি শাসকই রাজ্য-শাসনে শুধু প্রাসাদ গড়ে না, সুরক্ষিত দুর্গ, থানা,কোট-কাছারি,কারাগার, অস্ত্রাগার,বিদ্যালয়, সচিবালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানও গড়ে। এগুলি হল রাজ্যশাসনের অবকাঠামো। সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় অতি অপরিহার্য হল এগুলি। এগুলি হাতছাড়া হলে শাসন-কাজ চলে না, সরকারও বাঁচে না। একই কারণে বিশ্বের স্রষ্টা এবং প্রকৃত শাসক মহান আল্লাহতায়ালার তেমনি একটি স্ট্রাটেজী রয়েছে। তিনি শুধু সর্বশক্তিমান প্রভুই নন, সর্বশ্রেষ্ঠ আইন প্রনেতাও। তাঁর সে প্রনীত আইনই ইসলামে শরিয়তরূপে পরিচিত। মহান আল্লাহতায়ালার কাম্য শুধু এ নয়, মানুষ শুধু তার উদ্দেশ্যে নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত পালন করবে এবং তার শরিয়ত অবহেলিত হবে। তিনি চান, সমগ্র বিশ্বজুড়ে সে আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা। যেমন তাঁর প্রিয় রাসূল হযরত মহম্মদ (সাঃ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটিই তো নবীজী (সাঃ)র লিগ্যাসী। মুসলিম রূপে বাঁচতে হলে এ লিগাসী নিয়ে বাঁচা ছাড়া ভিন্ন পথ নেই।
তাঁর নিজের সৃষ্ট পৃথিবী শয়তানের অনুসারিদের হাতে অধিকৃত হোক এবং ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন বিধান, ধর্ম, মতবাদ বা দর্শন প্রতিষ্ঠা পাক -সেটি মহান আল্লাহতায়ালার কাম্য নয়। তাছাড়া তাতে মানবের কল্যাণও নেই। মানুষের সফলতা ও কল্যাণ একমাত্র মহান আল্লাহর আনুগত্যে। অবাধ্যতায় যেটি অনিবার্য হয় সেটি অশা্ন্তি। সে অবাধ্যতা ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে নামিয়ে আনে মহা-আযাব। সে অশান্তি শুধু দুনিয়ার জীবনেই শেষ হয় না, আযাবের পথে ব্যক্তি জাহান্নামে গিয়ে পৌঁছায়। আল্লাহতায়ালা চান, মানুষ বেড়ে উঠুক তাঁর অনুগত বান্দাহ রূপে। এবং সে আনুগত্যের প্রমাণ করুক আল্লাহর সে বিধানের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। সেটির প্রতিষ্ঠায় অনাগ্রহ বা বিরুদ্ধাচারণের অপরাধ সারা জীবন নামায-রোযা পালন করেও দূর করা যায় না। সেটি গণ্য হয় আল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকান্ড বিদ্রোহ বা অবাধ্যতা রূপে। যা শুধু আযাবেই বৃদ্ধি ঘটায়। এমন অবাধ্যতায় একমাত্র শয়তান ও তার অনুসারি কাফেরগণই খুশি হতে পারে। আল্লাহতায়ালা তাঁর দ্বীনের প্রতিষ্ঠার মহান কাজটি একমাত্র মানুষের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন, ফেরেশতাদের জন্য নয়। শরিয়তী বিধানের প্রতিষ্ঠার কাজটি যে কত গুরুত্বপূর্ণ সটি বুঝা যায় পবিত্র কোরআন পাঠে। বলা হয়েছে, “তিনিই সেই মহান আল্লাহ যিনি সঠিক পথনির্দেশনা ও সত্য দ্বীনসহ রাসূল পাঠিয়েছেন যেন তাঁর দ্বীন (অর্থাৎ ইসলামী বিধান)সকল ধর্ম ও সকল মতের উপর বিজয়ী হয়। যদিও সেটি কাফেরদের কাছে অতি অপছন্দের।”- সুরা সাফ। মহান আল্লাহর এ মহান অভিপ্রায়টি পবিত্র কোরআনে একবার নয়, তিনবার ঘোষিত হয়েছে। এবং অবিকল অভিন্ন ভাষায়।
ইসলামের দুর্গ: আল্লাহর ঘর
মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের সুরক্ষায় তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠানটি হল মসজিদ। জমিনের উপর এটিই আল্লাহর একমাত্র ঘর। এটিই ইসলামের দুর্গ। এমন একটি দুগের্র নির্মান যে ইসলামে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটির প্রথম স্বাক্ষর রাখেন মুসলমানদের আদি পিতা হযরত ইবরাহীম খলিলুল্লাহ(আঃ)। তিনি মক্কায় তাঁর শিশু পুত্র ঈসমাইলকে সাথে নিয়ে ক্বাবা গড়েছিলেন। মানবের হাতে এ পৃথিবীতে বহু হাজার বছর ধরে বহু বিস্ময়কর কীর্তিই নির্মিত হয়েছে। কিন্তু হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পুত্র ইসমাইলকে সাথে নিয়ে কাঁচা মাটির ইট দিয়ে যে ক্ষুদ্র ঘরটি নির্মান করেছিলেন সেটিই হল এ দুনিয়ায় মানবকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ ইন্সটিটিউশন। কারণ এটি গড়কার মুলে যে মহান লক্ষ্য ছিল তেমন একটি লক্ষ্য বিস্ময়কর পিরামিড বা তাজমহলের নির্মাণে মধ্য ছিল না। “মানুষের কর্মের মূল্যমান নির্ধারণ হয় তার নিয়েত থেকে।” –হাদীস। নবীজীর হাজার হাজার হাদীস ঘেঁটে ইমাম বোখারী (রহঃ) ঈমানদারের নিত্যদিনের বাঁচার সাথে সম্পৃক্ত এর চেয়ে মূল্যবান আর কোন হাদীস খুঁজে পাননি। এ পবিত্র হাদীসটি তিনি বর্নীত করেছেন অমিরুল মোমেনীন হযরত উমর ফারুক (রাঃ) থেকে। ইমাম বোখারী (রহঃ) সেটিকে তিনি স্থান দিয়েছেন তাঁর সংকলিত হাদীস গ্রন্থের শুরুতে। যে ব্যক্তি নিজের ঘর না গড়ে সর্ব-সামর্থ্য দিয়ে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে আল্লাহর ঘর গড়েন তার চেয়ে নিয়তে আর কে শ্রেষ্ঠ হতে পারে? মৃতের কবরে উপর বছরে পর বছর ধরে বিপুল অর্থবল, লোকবল ও মেধা ব্যয়ে তাজমহল বা পিরামিডের নির্মাণে মানব-সমাজের কোন কল্যাণটি হয়েছে? অথচ ক্বাবার কল্যাণ হলো, কোটি কোটি মানুষের জীবনে বছরের পর বছর ধরে সত্যের পথে পথ চলায় দিক-নির্দেশনা দিচেছ। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ সেখানে এসে লাব্বায়েক বলছে এবং আল্লাহর হুকুমের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিচ্ছে। মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের আর কোন সৃষ্টিতে এতটা খুশি হননি যা হয়েছিলেন এ ক্বাবার নির্মানে। বিণিময়ে সর্বকালে ও সমগ্র জাহানে এ ঘরটিকে তিনি সবচেয়ে সম্মানিত ঘর রূপে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। সামর্থ্যবান লোকদের উপর এ ঘরে অন্ততঃ একবার হাজিরা দেওয়াকে বাধ্যতামূলক করেছেন। এ বিশ্বে বহু অর্থ ব্যয়ে বহু প্রাসাদ এবং বহু ঘর নির্মিত হয়েছে, কিন্তু কোন ঘরের কি এত সম্মান আছে?
নিয়েতের শ্রেষ্ঠত্ব একটি কর্মকে যে কতটা শ্রেষ্ঠত্ব দেয় ক্বাবা হল তার এক উজ্বল দৃষ্টান্ত। হযরত ইবরাহীম (আঃ)র সমগ্র বাঁচার মধ্যেই অতি শ্রেষ্ঠতর ও পবিত্রতর নিয়েত ছিল। সেটি সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই বাঁচার নিয়েত। সে নিয়েতের প্রকাশ বা প্রতিফলন ঘটতো তাঁর প্রতিটি কর্মে ও উচ্চারণে। ঈমানদারের নিয়তটি কীরূপ হবে সেটি শিখিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। নবীজী (সাঃ)কে সে নিয়েতটি বলে দেয়া হয়েছে এভাবেঃ “ক্বোল,ইন্নাস সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহহিয়া ও মামাতি লিল্লাহে রাব্বিল আলামিন।” অর্থ: “বলো হে মহম্মদ, নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার ত্যাগ ও কোরবানী, আমার জীবন-ধারণ ও মরণ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই।” এমন একটি নিয়েত নিয়ে বেঁচেছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) এবং নির্মাণ করেছিলেন ক্বাবা। একই রূপ নিয়েতের প্রকাশ ঘটেছিল নবীজীর হাতে মদীনায় মসজিদে নববীর নির্মানে। মহান নবীজী (সাঃ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর নিজের ঘর না গড়ে মসজিদ গড়েছিলেন। মহান আল্লাহতায়ালা নবীজীর নির্মিত এ মসজিদটিকেও এতটাই পছন্দ করেছেন যে ক্বাবার পর ইসলামের দ্বিতীয় সম্মানিত ঘর রূপে সেটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মসজিদের নির্মানে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত মহম্মদ (আঃ) যে আদর্শ স্থাপন করেছেন আজও মুসলমানদের কাছে সেটিই শ্রেষ্ঠতম আদর্শ। আল্লাহর দ্বীনের প্রচার বা প্রতিষ্ঠার নির্ভেজাল নিয়েতে মসজিদ নির্মিত হলে একমাত্র তখনই প্রকৃত আল্লাহর ঘরে পরিণত হবে। নইলে সেটি ফিতনা সৃষ্টির ঘরে পরিণত হয়। মদিনার বুকে মুনাফিকদের গড়া মসজিদে জ্বিরার ন্যায় তেমন একটি ঘরে নবীজী(সাঃ)র নির্দেশে আগুণ দেওয়া হয়েছিল।
অরক্ষিত দুর্গ
মসজিদ যেমন মহান আল্লাহর দুর্গ, প্রতিটি নামাযী হলো তেমনি আল্লাহতায়ালার সৈনিক। তাঁরা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়। মসজিদের কাজ শুধু নামাযের আয়োজন নয়, জিহাদের আয়োজনও। জনৈক তুর্কি কবি তাই লিখেছেন, “মসজিদ আমাদের দুর্গ, মিনার আমাদের বেয়োনেট, গম্বুজ হল ঢাল আর মসজিদের মুসল্লীরা আমাদের সৈনিক।” কবিতার এ চরণ ক’টি এক জনসভাতে বলাতে তুরস্কের বর্তমান প্রধানমন্ত্রি জনাব রজব তৈয়ব আরদোগানকে জেলে যেতে হয়েছিল। ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল জেনারেল ও সৈনিকের জন্ম হয়েছে মসজিদের এ জায়নামায থেকে। যোদ্ধার বড় হাতিয়ার তার অস্ত্র নয়, বরং তার আত্মবল ও আত্মত্যাগের স্পৃহা। আর সেটিই বেশী গড়ে উঠে এ জায়নামাজে। মসজিদ নববীর দুর্গ থেকে যতজন বিখ্যাত জেনারেল ও সৈনিক জন্ম নিয়েছেন তা কি পরবর্তিকালে হাজার বছরেও সম্ভব হয়েছে? রাষ্ট্র, পরিবার ও ব্যক্তির মাঝে মসজিদই হল সংযোগস্থল। খোলাফায়ে রাশেদার আমলে খলিফা স্বয়ং রাজধানীর মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন। প্রাদেশিক গভর্নরগণ তেমনি ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন প্রাদেশিক নগরীতে। নগর শাসকগণ সে দায়িত্ব পালন করতেন নিজ নিজ শহরে।
আজ মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়েছে, জনসংখ্যাও বেড়েছে। বেড়েছে সেনানীবাস ও সৈন্যসংখ্যা। কিন্তু তারা বিজয় দুরে থাক কোন পরাজয়ও কি রুখতে পেরেছে? রুখতে পেরেছে কি ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, কাশ্মীরসহ কোন মুসলিম ভূমিতে মুসলিম নিধন? পারিনি। কারণ, ইসলামের আসল দুর্গ মসজিদের মেঝেতে সৈনিক গড়ার সে কাজ বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। মসজিদ নির্মানের মাঝে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার, প্রতিষ্ঠা ও বিজয়ের কোন নিয়েতই নেই। আল্লাহর এ দুর্গগুলিকে পরিকল্পিত ভাবে পরিণত করা হয়েছে নেহাত নামায-ঘরে। এখানে নামায পড়া হয়, কিন্তু নামাযের বাইরেও নামাযীর যে বহু কিছু করণীয় রয়েছে সে শিক্ষা দেয়া হয় সামান্যই। মুসলিম ভূমি একের পর এক অধিকৃত হলেও নেই ভূভজিহাদের অনুপ্রেরণা ও তালিম। জুম্মাহর খোতবায় সেটি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই নয়। ফলে কাফের শক্তির হামলার মুখে প্রতিরোধে যুদ্ধে নামা যে ফরয সে শিক্ষাটি নামাযীরা সেখানে পায় না। ফলে ১৭৫৭ সালে বা্ংলা যখন ইংরেজ কাফেরদের হাতে অধিকৃত হলো তখন মসজিদগুলো থেকে কোন জিহাদই সংগঠিত হয়নি। একই অবস্থা অন্যান্য মুসলিম দেশেও। অথচ বিশাল বিশাল মসজিদের নির্মানে মুসলমানদের অর্থব্যয়, শ্রমব্যয় ও মেধাব্যয় কম হয়নি। বরং এতটাই অধিক হয়েছে যে মসজিদগুলো পরিণত হয়েছে দর্শনীয় স্থানে। এরই প্রমাণ, উমাইয়া, আব্বাসীয়, মোঘল, মুর ও উসমানীয় বাদশাহদের মসজিদগুলো পরিণত হয়েছে প্রশিদ্ধ পর্যটন কেন্দ্রে। মুজাহিদশূণ্য হয়েছে মসজিদের মেঝে। ফলে একের পর এক মুসলিম রাষ্ট্র পরাজিত ও অধিকৃত হয়েছে শত্রুদের হাতে।
আজও একই অবস্থা। নিজ দেশে বা প্রতিবেশী দেশে আল্লাহর শরিয়তি বিধানের পরাজিত দশা দেখে নামাযীদের মাঝে সংগ্রামের চেতনা জাগে না। দেশে দেশে মুসলিম নারী-পুরুষ নিহত, নির্যাতিত বা ধর্ষিত হতে দেখেও তাদের মনে জিহাদের জজবা জেগে উঠা দুরে থাক, মজলুমদের জন্য সহানুভূতিও জাগে না। এরই উদাহরণ, গাজায় ফিলিস্তিনীদের মাথার উপর যখন ইসরাইলের শত শত বোমা বর্ষিত হয় তখন সহায়তায় কোন ভিনদেশী মুসলিম সেখানে ছুটে যায়নি। বরং মিশর তার গাজা সীমান্তে আরোপিত পাহারাদারিকে আরো মজবুত করেছে যেন আহত উদ্বাস্তুরা প্রাণ বাঁচাতে মিশরে পৌঁছতে না পারে। মিশর সরকারের দায়বদ্ধতা যেন ইসরাইলীদের নিরাপত্তা বিধান,ইসলাম বা মুসলমানদের নয়। একই অবস্থা জর্দানসহ অন্যান্য আরবদেশের। একই অবস্থা বাংলাদেশেও। ফলে বার্মার স্বৈরাচারি সামরিক সরকারের হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয় পায় না। বরং হামলা হয়েছে তাদের উদ্বাস্তু শিবিরে। আশ্রয় পায় না হতভাগ্য অবাঙ্গালীরাও। যুগের পর যুগ ধরে তারা বস্তিতে থাকছে। এনিয়ে কোন নামাযীর মনেও কি দংশন হয়? এই হল মুসলমানদের ঈমানের মান?
নবীজী (সাঃ) মসজিদের যে মডেল খাড়া করেছিলেন সেটি কি শেখায়? সেটি হল, রাষ্ট্র বা সমাজে ইসলামের মূল বুনিয়াদ বা ফাউন্ডেশন হল মসজিদ। আল্লাহর দ্বীনের বিশাল বৃক্ষ এখান থেকেই শত দিকে শত শাখায় বিকশিত হয়। দ্বীনের চেরাগ এখানেই প্রথম জ্বলে এবং অসত্য ও আঁধারের মাঝে মহল্লার মানুষকে সত্য-ন্যায়ের পথ দেখিয়ে থাকে। আল কোরআন যেমন আল্লাহর কেতাব, মসজিদ তেমনি আল্লাহর ঘর। অসত্য ও আঁধারের মাঝে একটি প্রজ্বলিত আলো, অপরটি সে পবিত্র আলোরই সমুন্নতকারী আলোঘর। তাই আল্লাহর নবী (সাঃ) যেমন আল্লাহর কেতাব কোরআন নিয়ে এসেছেন তেমনি আল্লাহর ঘরও গড়েছেন। তিনি যেমন আল্লাহ-প্রদত্ত জ্ঞান পেয়েছেন, তেমনি সে জ্ঞানের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রজুড়ে মসজিদ ভিত্তিক এক ব্যাপক অবকাঠামোও গড়েছেন। এটিই নবীজী(সাঃ)র মহান সূন্নত যা সমাজ ও রাষ্ট্রজুড়ে বিপ্লব এনেছিল। কিন্তু আজকের অবস্থা ভিন্নতর। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে আজ গভীর অন্ধকার। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতি ও প্রশাসন গেছে দুর্বৃত্তদের হাতে। বিদেশী কাফেরদের হাতে একের পর এক অধিকৃত হচ্ছে মুসলিম ভূমি। অন্ধকার কবলিত একটি জনপদকে দেখে অন্ততঃ এ কথা নিশ্চিত বলা যায়, সেখানে কোন বাতিই জ্বালানো হয়নি। তেমনি যে রাষ্ট্র জুড়ে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তির জয়জয়াকার এবং আল্লাহর শরিয়তী বিধান বিতাড়িত আইন-আদালত থেকে, সে রাষ্ট্রে আল্লাহর দুর্গ যে বিধ্বস্ত তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ থাকে?
সুরক্ষিত দুর্গ ছাড়া যে শাসনের সুরক্ষা হয় না তা প্রতি শাসকই বুঝে। বুঝে আল্লাহর অবাধ্য শয়তানি শক্তিও। তাই দুর্গ বা রাজকীয় প্রাসাদ গড়া শুধু অতীত কালের নমরুদ বা ফিরাউনের কাজ নয়। বরং প্রতি যুগের ফিরাউন ও নমরুদেরা সেটিই করছে। তাদের হাতেই যুগে যুগে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রাজপ্রাসাদ ও দুর্গ। আজও প্রতি দেশে রাজধানি থেকে শুরু করে দূরের নির্ভৃত পল্লি অবধি গড়ে উঠা যে বিশাল প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো সেটি তো একটি বিশেষ গোষ্ঠির স্বার্থ,সংস্কৃতি ও জীবনদর্শনের হেফাজতে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশেরা এক কালে তাদের শাসন ও শোষনকে সুদৃঢ় করতে শুধু নিজ দেশে নয়,বিশ্বের বহু দেশে বহু দুর্গ ও বহু প্রতিষ্ঠান নির্মান করেছে। মাকিন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠি ও তাদের ন্যাটো মিত্ররা সে অভিন্ন লক্ষে পৃথিবীর নানা দেশে শত শত দুর্গ করে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
জাপান,কোরিয়া,ফিলিপাইন,জার্মান,ব্রিটেন,ইরাক,আফগানিস্তানসহ বহুদেশে বহু লক্ষ সৈন্যও মোতায়েন করেছ। আফগানিস্তানে তেমনি এক আধিপত্যকামী অবকাঠামো নির্মানে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীরা বিপুল অর্থব্যয় করছে। তাদের লক্ষ্য শুধু পুঁজিবাদী শাসন ও শোষণ প্রক্রিয়াকে হেফাজত করা নয়,বরং পাশ্চাত্যের সেকুলার ধ্যান-ধারণা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিরক্ষা দেওয়া। আন্তর্জাতিক ভাবে বিস্তৃত সে অবকাঠামো গড়ায় যারা বাধা দেয় তাদেরকে তারা শত্রুর তালিকায় রাখে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও শুরু করে। ইরাকে ও আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার মূল কারণ তো সেটিই। তাদের আগ্রাসনের লক্ষ্য শুধু কোন দেশের ভূগোল নয়। হামলার লক্ষ্য শুধু তাদের নিজ দেশের সীমান্তের সুরক্ষাও নয়। বরং সেটি হলো তাদের দর্শন, সংস্কৃতি ও জীবন-দর্শনের সুরক্ষা। আর এক্ষেত্রে তারা শত্রু জ্ঞান করে ইসলামকে। কারণ একমাত্র ইসলামই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে তাদের সৃষ্ট মতবাদকে সম্পূর্ণ ভূয়া ও প্রতারণামূলক বলে। হযরত মূসা (আঃ)র কোন রাজ্য ছিল না, কোন লোক লস্করও ছিল না। কিন্তু ছিল একটি নির্ভূল ধর্ম ও দর্শন। ছিল একটি ভিন্ন জীবনপদ্ধতি ও সংস্কৃতি। সেটিই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল ফিরাউনের ধর্ম, জীবন-দর্শন ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। আর তাতেই ফিরাউন তার বিশাল লোকলস্কর নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হযরত মূসা (আঃ) ও তাঁর লোকদের উপর। আজও যারা ইসলামের প্রতিষ্ঠা চায় তাদের কোন রাষ্ট্র নাই, তাই কোন রাষ্ট্রীয় সীমান্ত বা সেনানীবাসও নেই। কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আল্লাহদ্রোহী শক্তি তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তবে শত্রুর এ আগ্রাসী হামলার সফল প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে মসজিদ থেকে। পারসিক ও রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদ গড়ে উঠেছিল এখান থেকেই।
মসজিদে কেন হামলা?
বিশ্বের মুসলমানগণ আজ সংখ্যায় প্রায় দেড় শত কোটি হওয়া সত্ত্বেও পরাজিত। তাদের এ পরাজয় ইসলামের প্রতিষ্ঠায়। পরাজয়, নিজ জীবনে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণে। আর এ পরাজয়ই সকল পরাজয়ের মা। তবে এ পরাজয়ের কারণ এ নয় যে, ইসলামের মূল উৎস কোরআন মুসলিম সমাজ থেকে বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়েছে। বরং এজন্য যে দ্বীনের মূল দুর্গ বা প্রতিষ্ঠানগুলি আজ বিধ্বস্ত বা অকার্যকর। আর সবচেয়ে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানটি হলো মসজিদ। মসজিদে নববী থেকে আজকের এসব মসজিদের পার্থক্য বিশাল। কোন বিদেশী শত্রু-শক্তি যখন কোন দেশকে আক্রমণ করে তখন প্রথম হামলাতেই সে দেশের সেনানীবাস, বিমান-ঘাঁটি, নৌ-ঘাঁটি, রাস্তাঘাট, ব্রিজসহ আভ্যন্তরীণ অবকাঠামোকে তারা ধ্বংস করে দেয়। কারণ যে কোন হামলার বিরুদ্ধে প্ররিরোধ গড়ে উঠে সেখান থেকেই। এগুলো ধ্বংস হলে সে দেশের প্রতিরোধের সামর্থ এমনিতেই লোপ পায়। একই কারণে শত্রুশক্তি ইসলামের শক্তিবিনাশে আল্লাহর দুর্গ মসজিদকে ধ্বংস করে। সোভিয়েত রাশিয়ায় কমিউনিষ্ট বিপ্লব বিজয়ী হওয়ার সাথে সাথে বন্ধ করে দেওয়া হয় সে দেশের হাজার হাজার মসজিদ। আর মুসলিম দেশগুলির সেকুলার ও স্বৈরাচারি সরকারগুলো মসজিদে তালা না লাগালেও ব্যবস্থা নিয়েছে যেন সেগুলো মসজিদে নববীর আদর্শে গড়ে না উঠে। তাই নবীজী(সাঃ)র মসজিদে রাজনীতি চর্চা ও শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও আজকের মসজিদগুলোতে তা নিষিদ্ধ।
আজও পাশ্চাত্য দেশগুলিতে মসজিদ নির্মানের বিরুদ্ধে নানা বাধা আসছে মূলতঃ সে কারণেই। এসব দেশে অমুসলিমদের মনে প্রচন্ড ইসলাম ভীতি জেগেছে মসজিদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে। তারা জানে, মুসলমান জন্মসূত্রে ইসলামের মৌল শিক্ষাগুলো শিখে না। সেটি শেখে মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে। এ যুগে মাদ্রাসা মসজিদ থেকে পৃথক হলেও নবীজী (সাঃ)র যুগে জ্ঞানচর্চার সে কাজটি হত মসজিদের জায়নামাযে। নামায-রোযার চেয়ে জ্ঞানচর্চাকে সে কালে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়নি। অথচ কাফের দেশে সে সুযোগ থাকে না। দেশের প্রজাদের কে কি খাবে তার উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোন দেশের সরকারই মাথা ঘামায় না। কারণ, খাদ্যের সাথে সম্পর্ক ব্যক্তির দেহের বলের। প্রজাদের দেহের গুণে কোন দেশেই কোন সরকারের পতন হয় না। সেটি ঘটে জনগণের মনের গুণের কারণে। মনের গুণই ব্যক্তিকে প্রচন্ড বিদ্রোহী করে তোলে। মার্কস ও লেলিনের লিখনী সেগুণটিই বাড়িয়েছিল রাশিয়ার কম্যুনিষ্টদের। তাই একজন ছাত্র কি শিখবে এবং কি শিখবে না সেটি নির্ধারণ করে দেয় প্রতিটি সরকার। মার্কিনীরা সে কাজে হাত দিয়েছে সমগ্র মুসলিম জুড়ে। কাফের বা সেকুলারিষ্টদের শাসিত দেশে সরকারি উদ্যোগে ইসলামর জ্ঞানার্জনের সুযোগ সামান্যই। সে জ্ঞান-বিতরনের দায়িত্ব নিতান্তই আল্লাহর ঘর মসজিদের। সেটি ছাত্র ও অছাত্র –উভয়ের মাঝে। মসজিদই সিমেন্ট লাগায় জায়নামাজে হাজির মুসলমানদের মাঝে, তাদের মাঝে গড়ে তোলে সীসাঢালা দেওয়ালসম ঐক্য। অমুসলিম দেশে ইসলামি বিপ্লব বা মুসলিম সভ্যতার নির্মানে মসজিদের ভূমিকা এজন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে মসজিদই যখন নিষ্ক্রীয় ও প্রাণহীন হয় তখন মুসলমান সন্তানদের কি প্রকৃত মুসলমান রূপে বেড়ে উঠার সম্ভাবনা থাকে? আজকের মুসলমানদের সামনে এটি এক প্রকট সমস্যা। চিন্তা-চেতনায় কোন ব্যক্তি যতই ইসলামি হোক না কেন,পরিবার, রাষ্ট্র ও মসজিদের ন্যায় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সঠিক ভাবে কাজ না করে তবে তার পক্ষে প্রকৃত মুসলমান রূপে বেড়ে উঠা বা দায়িত্বপালন করা অসম্ভব। অসম্ভব হয় অনৈসলামি পরিবেশে তার সন্তানদের প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাকে সুনিশ্চিত করা। আর এরূপ এক বৈরী পরিবেশে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে মসজিদ।
অবহেলিত দুর্গ
মসজিদের মূল শক্তি বিপুল সংখ্যায় নয়। বিশাল আয়তন বা সৌন্দর্যেও নয়। বরং মূল শক্তি হল ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। এবং সে শিক্ষার শিক্ষক হল মসজিদের ইমাম। ইসলামের শিক্ষাকে তি্নিই জনগণের মাঝে পৌঁছে দেন। সাধারণ মুসলমানদের সামনে তিনিই অণুকরণীয় আদর্শ। তাই ইমাম অযোগ্য হলে মসজিদও নিষ্ক্রীয় বা শক্তিহীন হতে বাধ্য। মসজিদের ইমামের আসনে বসেছিলেন স্বয়ং নবীজী (সাঃ)। তাই যারা সে আসনে বসেন সে বিষয়টি তাদের স্মরণে রাখা উচিত। তাদের কর্ম বা আচরণ পরিচালিত হওয়া নবীজী (সাঃ)র সে আদর্শ থেকেই। আজ মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে। জৌলুসও বেড়েছে। কিন্তু যেটি বাড়েনি সেটি হল মসজিদের শক্তি। বেড়ে না উঠার কারণ, সেখানে প্রতিষ্ঠা পায়নি নবীজী (সাঃ)র সূন্নত। ইসলামের প্রচারে নবীজী নির্যাতন সইছেন,গালী খেয়েছেন। নিজের অর্থ খরচ করে তায়েফের ন্যায় দুর্বৃত্তকবলিত জনপদে গিয়েছেন এবং সেখানে পাথর খেয়ে রক্তাত্ব হয়েছেন। ইমামের আসনে বসে নবীজী (সাঃ) জনগণ থেকে অর্থ নিয়েছেন সে নজির নেই। একই আদর্শ তাঁর মহান সাহাবাদের। অথচ বাঁচার স্বার্থে অর্থের প্রয়োজন তো তাঁদেরও ছিল। অর্থ উপার্জনে তার অন্য কোন হালাল উপায় বেছে নিয়েছেন, ইমামতি নয়। কিন্তু আজকের ইমামদের মাঝে সে সূন্নত কোথায়? ইমামতি আজ অর্থ-উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ওয়াজের বিণিময়ে তারা অর্থ নেন। ধর্ম নিয়ে এর চেয়ে নগ্ন ব্যবসা আর কি হতে পারে? অথচ এটিকেও তারা জায়েজ করে নিয়েছেন। আজকের ইমামেরা নবীজী (সাঃ)র আদর্শে নিজেদেরকে না বদলিয়ে বরং নবীজী (সাঃ)র শিক্ষাকেই বদলিয়ে দিয়েছেন। আল্লামা ইকবাল এমন আলেমদের বিষয়েই বলেছেন, “খোদ বদলতে নেহী, কোরআন কো বদল দেতে হেঁ।” অর্থঃ এরা নিজেরা বদলায় না, বদলে দেয় কোরআনের শিক্ষাকে। নবীজীর (সাঃ) যুগে মুসলমানেরা নিজ খরচে অস্ত্র গড়ে নিজের উঠ,নিজের ঘোড়া ও নিজ-খাদ্যসম্ভার নিয়ে শত শত মাইল দূরে যুদ্ধে যেতেন। সাহাবাগণ নিজ নিজ খরচে দ্বীনের প্রচারে নামতেন। অথচ আজ অবস্থা এমন, নিজ খরচে শত মাইল দূরের জিহাদে যাওয়া দুরে থাক, নিজ গ্রামে বা নিজ মহল্লার মসজিদে বিনা বেতনে নামায পড়ানোর লোকই জুটেনা। এরূপ অবস্থায় কি মুসলিম দেশের কোন কল্যাণ বা বিজয় আশা করা যায়? আর এই যখন ইমামদের আদর্শ তখন সাধারণ মুসলমানদের মাঝে ইসলামের প্রচার, প্রসার বা প্রতিষ্ঠা বাড়বে কেমনে?
আল্লাহতায়ালার দুর্গের এ এক নিদারুন করুণ অবস্থা। অথচ নবীজীর আমলে মসজিদ ছাড়া মুসলমানদের কোন সেনানীবাস ছিল না। কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ-কেন্দ্রও ছিল না। তখন জিহাদের সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতির জন্য মুসলমানদের কোন সচিবালয়ও ছিল না। ছিল মসজিদ। কিন্তু মসজিদ সেকাজ থেকে আজ ইস্তাফা দিয়েছে। মসজিদগুলোর এরূপ করুণ অবস্থার পাশাপাশি শয়তানী প্রতিষ্ঠানগুলোর আজ রমরমা অবস্থা। সেকুলার টিভি,সেকুলার পত্রপত্রিকা,নাটকপাড়া, সিনেমা হল, মদ্যশালা, জুয়া ও নাচের আসরে আজ প্রচন্ড জৌলুস। শয়তানী শক্তিবর্গ তাদের প্রতিষ্ঠানগুলির সংখ্যাই শুধু বাড়ায়নি,নগর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে সেগুলির প্রসারও বাড়িয়েছে। অথচ মুসলিম শিবিরে বেহাল অবস্থা। তাদের হুশই নেই। কোথায় তাদের কোথায় দুর্বলতা, কি ভাবে তাদের শক্তি বাড়াতে হবে –সে ভাবনাও নাই। অনেকে ভাবছে, দেশে শিল্প, কল-কারখানা, রাস্তাঘাট ও চাষাবাদ বাড়ালেই দেশের ইজ্জত বাড়বে। অথচ মুসলমানের প্রকৃত ই্জ্জত শিল্প, রাস্তাঘাট ও চাষাবাদের উন্নয়নে নয়, বরং প্রকৃত মুসলমান রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠার মধ্যে। পাশ্চাত্য দেশের মানুষ শিল্প,বিজ্ঞান ও চাষাবাদে বিপুল উন্নয়ন করেছে। কিন্তু মানুষ রূপে বেড়ে উঠাতে তাদের সফলতা কতটুকু? দুইটি বিশ্বযুদ্ধে ৬ কোটির বেশী মানব হত্যা, হিরোশিমা ও নাগাসাকীতে আনবিক বোমার প্রয়োগ, ইরাক ও আফগানিস্তানে অবিরাম মানব হত্যা –এগুলি কি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না যে, মানুষ রূপে বেড়ে উঠাতেই তাদের চরম ব্যর্থতা? ফিরাউনদের বিস্ময়কর পিরামিড দেখে তাদের অনুসরণের হেতু নেই। কারণ ফিরাউনেরা পিরামিড গড়তে পারলেও ব্যর্থ হয়েছে মানুষ গড়তে। এক্ষেত্রে ব্যর্থতাও বিস্ময়কর। পিরামিড গড়ার কাজেই হাজার হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। মানবিক গুণের আকাল যে কতটা গভীর ছিল সেটি কি এ থেকে প্রমাণিত হয় না? অনুরূপ অবস্থা পাশ্চাত্য সভ্যতা ও জীবন-দর্শনের ক্ষেত্রেও। সভ্যতার বিচার হয়, একটি মানুষ কতটা গুণাগুণ নিয়ে বেড়ে উঠলো তা থেকে। কলকারখানা, রাস্তাঘাট বা যান্ত্রিকতার গুণাগুণ দিয়ে নয়। মানুষ যদি আন্তর্জাতিক আগ্রাসী, খুণি বা লুটেরাতে পরিণত হয় তবে তাকে কি মানুষ বলা যায়? অথচ পাশ্চাত্য সভ্যতার ক্ষেত্রে সেটিই হয়েছে। উপনিবেশবাদ, পুঁজিবাদ, আন্তর্জাতিক দস্যুতা ও সন্ত্রাস এবং দেশে দেশে আদিবাসী নির্মূল পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গে পরিণত হয়েছে। আজকের মুসলমানরাও একই ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে উন্নত মানুষ রূপে বেড়ে উঠায়। এটিই তাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। দারিদ্র্য, দুর্নীতি বা সন্ত্রাস এ ব্যর্থতার মূল কারণ নয়, বরং সিম্পটম মাত্র। মূল কারণ, তারা ব্যর্থ হয়েছে ইসলামের পূর্ণ অনুসরণে। এ ব্যর্থতা বেড়েছে মসজিদের জায়নামাজে ইসলামের সঠিক চর্চা না হওয়ায়। নবীজী (সাঃ)র শিক্ষা ও আদর্শ আর কোথাও এতটা পদদলিত হয়নি যতটা হয়েছে মসজিদে মিম্বরে ও মেঝেতে। এবং সেটি খোদ মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিদের হাতে। ০৪/০৭/২০১০; নতুন সংস্করণ ২৪/০৩/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018