আল্লাহর আউলিয়া ও শয়তানের আউলিয়া

মূল বিভক্তিটি মাত্র দ্বি-ভাগে

আরবী ভাষায় “আউলিয়া” শব্দটি “ওলি”র বহুবচন।“ওলি”র অর্থ বন্ধু,মিত্র,প্রেমিক বা অনুসারি। কখনো শব্দটির অর্থ হয় শাসক,অভিভাবক বা কর্তা।(সূত্রঃ আরবী-বাংলা অভিধান,প্রকাশনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ,ঢাকা)।প্রসিদ্ধ আরবী-ইংরেজী অভিধান “আল মাওয়ারিদ” অনুসারে ওলি শব্দের অর্থঃ guardian, patron, friend, companion,associate,defender custodian ইত্যাদী।পবিত্র কোরআনে “ওলি” এবং “আউলিয়া” এ উভয় শব্দটির ব্যবহার হয়েছে অসংখ্যবার।যারা ঈমানদার তারা যেমন চিত্রিত চিত্রিত হয়েছে আল্লাহর আউলিয়া তথা বন্ধু বা মিত্র রূপে,তেমনি যারা কাফের তারা চিত্রিত হয়েছে শয়তানের আউলিয়া রূপে। প্রচলিত বাংলা ভাষায় “ওলি” বা “আউলিয়া” বলতে বুঝায় সুফি,দরবেশ বা আধ্যাত্মীক ব্যক্তি। কিন্তু “ওলি” বা “আউলিয়া” যে পাপীষ্ঠ হতে পারে এবং শয়তানের একনিষ্ঠ বন্ধু বা মিত্রও হতে পারে সে ধারণা বাংলা ভাষায় নেই।অথচ সে বিবরণ রয়েছে পবিত্র কোরআনে। আলোচ্য নিবন্ধে কোরআনের বহু আয়াত থেকে তার উদাহরণ দেয়া হবে। ইসলামের মূল আক্বীদা-বিশ্বাস ও দর্শনে “ওলি” ও “আউলিয়া”র ব্যবহার এতই ব্যাপক যে ইসলাম যে দেশেই গেছে সে দেশে এ শব্দ দুটি সাথে নিয়ে গেছে। তাই শব্দ দুটি এখন আর শুধু আরবী ভাষার শব্দ নয়,মাতৃভাষায় পরিনত হয়েছে ফার্সি,উর্দু,হিন্দি,বাংলা,তুর্কি,কুর্দি,মালয়ী,ভাষা-ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের তাবত মুসলমানদের ভাষায়।

নানা ভাষা,নানা ভূগোল,নানা বর্ণ ও নানা গোত্রের নামে মানব জাতি বহুশত ভাগে বিভক্ত। কিন্তু এ বিভক্তিতে মানুষের মানবিক মহৎ গুণের প্রকাশ ঘটে না। তার নেক আমল ও ঈমানদারিও ধরা পড়ে না। মানুষের নিজ-অর্জিত মহৎ গুণাবলি ও ঈমানদারি যেমন তার মুখের ভাষা ও গায়ের রঙে প্রকাশ পায় না,তেমনি তার ভৌগলিক বা গোত্রীয় পরিচয়েও নয়। ভাষা,বর্ণ ও ভৌগলিকতা –এর কোনটাই ব্যক্তির অর্জিত গুণাবলি নয়,বরং নির্ধারিত হয় জন্মসূত্রে। আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে পরিচয়ের এ সূত্রগুলি ও সেগুলির ভিত্তিতে বিভক্তি তাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষ তো একমাত্র তা নিয়েই গর্ব করতে পারে এবং আল্লাহর কাছে পুরস্কার পেতে যা তার নিজের চেষ্টায় অর্জিত। তাই বর্ণ,গোত্র,ভাষা বা ভৌগলিক পরিচয় নিয়ে মানুষ অহংকার করবে এবং কলহ-বিবাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হবে -সেটি আল্লাহতায়ালার কাম্য নয়।

ইসলামের পূর্বে ও পরে ভাষা,বর্ণ,গোত্র ও ভৌগলিক পরিচয়ের গৌরব বাড়াতে হাজার হাজার যুদ্ধ হয়েছে। সেটি ছিল নিরেট জাহিলিয়াত। আরব ভূমি ছিল এমন জাহিলী যুদ্ধের উর্বর ক্ষেত্র। নবীজী (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারি সাহাবাগণ এমন যুদ্ধ একটি বারও লড়েননি। ভাষা,বর্ণ ও গোত্রের নামে তাঁরা কোন রাজনৈতিক দল গড়েননি,রাষ্ট্রও নির্মান করেননি। অথচ নবীজী সাঃ) যা জীবনে করেননি,মুসলমানদের মাঝে তেমন বিদ’আতের সংখ্যা আজ বহু। তবে সবচেয়ে বড় এবং ক্ষতিকর বিদ’আত হলো ভাষা,বর্ণ,গোত্র ও ভূগোলের পরিচয় নিয়ে রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্র নির্মান। এবং সেগুলির জন্য জানমালের কোরবানী পেশ। মুসলিম উম্মাহর জীবনে এটিই সবচেয়ে আত্মঘাতি বিদ’আত।। এ বিদ’আতের কারণেই বিলুপ্ত হয়েছে নবীজীর রেখে যাওয়া অতি গুরুত্বর্পূণ প্রতিষ্ঠান খেলাফত। খেলাফতের স্থলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কাফেরদের অনুসরণে বহু জাতীয় ও গোত্রীয় রাষ্ট্র। প্রতিটি বিদ’আতই হলো নবীজীর সূন্নত থেকে বিচ্যুতি। এমন বিচ্যুতি কোন কল্যাণ আনে না। মুসলিম উম্মাহর জীবনে আজ যে বিভক্তি ও শক্তিহীন দশা তা তো এ আত্মঘাতি বিদ’আতের কারণেই। তবে আলেমদের ব্যর্থতা হলো, সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচলিত ছোটখাটো বিদ’আত নিয়ে তাদের মাঝে প্রচুর শোরগোল উঠলেও আত্মবিনাশী এ বিশাল বিদ’আত নিয়ে তাদের মাঝে কোন প্রতিবাদ নেই।

মহান আল্লাহর কাছে ভাষা,ভূগোল,বর্ণ বা গোত্রের ভিত্তিতে কারো মর্যাদা নির্ধারিত হয় না, সেগুলির কারণে সামান্যতম সাজা বা পুরস্কারও জুটে না। কারণ,এ পরিচয়গুলি তো আল্লাহর নিজেরই দেয়া। মহান আল্লাহর কাছে যা গুরুত্ব পায় এবং পরকালে যার ভিত্তিতে মানুষের সমুদয় সফলতা বা পুরস্কার মিলবে সেটি হলো তাঁর হুকুমের কাছে সে কতটা অনুগত হলো এবং ইসলামকে কতটা মেনে চললো। তাই নানাবিধ বর্ণ,গোত্র,দেশ,ও সহস্রাধিক ভাষা এবং নানা ধর্ম ও মতবাদের নামে যে বহুশতাধিক বিভক্তি সেটি মানব জাতির মূল বিভক্তি নয়,বরং আসল বিভক্তিটি মাত্র দ্বি-ভাগে। একটি আল্লাহতায়ালার অনুগতদের দল,অপরটি বিদ্রোহীদের।যারা অনুগত তাদেরকেই কোরআনে চিত্রিত করা হয়েছে আল্লাহর আউলিয়া রূপে। আর যারা বিদ্রোহী তারা শয়তানের আউলিয়া। উল্লেখ্য হলো,পবিত্র কোরআনে শয়তানকে ব্হুস্থানে তাগুত রূপেও অভিহিত করা হয়েছে।

 

দায়বদ্ধতা আল্লাহর আউলিয়া হওয়ার

মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর নবীরাসূলকে বিশ্বাস করাই মুসলমান হওয়ার একমাত্র দায়বদ্ধতা নয়। বরং গুরুত্বপূর্ণ দায়বদ্ধতা হলো,আল্লাহতায়ালার দলকে চেনা এবং সে দলের সাথে পুরাপুরি একাত্মও হওয়া। অর্থাৎ মহান আল্লাহর আউলিয়া হওয়া। আল্লাহর আউলিয়াদের তেমন একটি দল নবীজী (সাঃ)র আমলে ছিল। সে আমলে মুসলমান নর-নারীদের কেউই সে দলের বাইরে ছিল না। তাই আল্লাহতায়ালার আউলিয়া হওয়ার কাজটি স্রেফ সাহাবায়ে কেরাম,বড় বড় আলেম বা সুফি-দরবেশদের কাজ নয়,বরং সে দায়ভার প্রতিটি মুসলমানের। ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো,নিজের অবাধ্য প্রবৃত্তি ও শয়তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে একমাত্র মহান আল্লাহর অনুগত হয়ে যাওয়া। এমন অনুগত ব্যক্তিদের আউলিয়া হয়ে যান স্বয়ং আল্লাহ। আল্লাহ ও তাঁর নবী-রাসূলের উপর মুখে ঈমান আনবে অথচ রাজনীতিতে আল্লাহদ্রোহীদের দলে শামিল হয়ে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করবে –সেটি তো ঈমানদারি নয়,বরং মহান আল্লাহর সাথে গাদ্দারি।

ইসলামের আভিধানিক অর্থ আল্লাহতে আত্মসমর্পণ।এখানে বিদ্রোহ,অবাধ্যতা ও গাদ্দারি চলে না। বরং আত্মসমর্পণটি যাতে পরিপূর্ণ ও বিরামহীন হয় সে জন্য মু’মিনের মনপ্রাণ জুড়ে থাকে সর্ব সময়ের ভাবনা। ইসলামের পরিভাষায় সে ভাবনাটিই হলো তাকওয়া। আত্মসমর্পণটি কতটা খালেছ মু’মিনকে সেটি পরীক্ষাটিও লাগাতর দিতে হয়। বস্তুত পার্থিব জীবনের সবটুকুই হলো পরীক্ষা পর্ব। এ পরীক্ষায় কীতকার্য হওয়াটি নির্ভর করে সিরাতুল মুস্তাকীমে লাগাতর টিকে থাকার উপর। বিচ্যুতি বা বিদ্রোহ ব্যর্থতা ডেকে আনে। ডেকে আনে জাহান্নামের আযাব। মু’মিন ব্যক্তি তাই আল্লাহ-প্রদর্শিত পথ থেকে থেকে যেমন বিচ্যুত হয় না, তেমনি তাঁর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীও হয় না। বিদ্রোহ হলো শয়তান ও তার অনুসারিদের কাজ। ইসলামে এমন বিদ্রোহীরা হলো কাফের।

কোন লক্ষ্যটি বুকে ধারণ করে মানুষ বাঁচবে -ইসলাম শুধু সেটাই বলে না। বরং কীরূপে বাঁচবে সে পথটিও দেখিয়ে দেয়। সে প্রদর্শিত পথটি হলো কোরআনের পথ। ইসলামে সেটিই সিরাতুল মোস্তাকীম। মুসলমানের জীবনে সিরাতুল মোস্তাকীম বেয়ে পথচলাটি এজন্যই এতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ পথ হলো আল্লাহর আউলিয়াদের পথ,আর এর বাইরে যত পথ তা বিভ্রান্তির পথ। সে পথে চলেস শয়তান ও তার অনুসারিগণ। আজকের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কৃষি,শিল্প,বানিজ্য বা সম্পদের আহরণে নয়। বরং সে ব্যর্থতাটি সিরাতুল মোস্তাকীম বেয়ে পথ চলায়। এখানে ভ্রষ্টতা ঘটেছে পদে পদে।সেটি যেমন শিক্ষা-সংস্কৃতি,আচার-আচরণ ও পোষাক-পরিচ্ছদে,তেমনি রাজনীতি ও প্রশাসনে। তারা যে পথ বেয়ে রাজনীতি,অর্থনীতি,সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বিচার-আচার করছে সেটি নবীজীর পথ নয়,বরং পথভ্রষ্টদের পথ। আর ভ্রষ্টতায় যা বৃদ্ধি পায় তা তো দুর্বৃত্তি। ফলে বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশ ইতিহাস গড়েছে বিশ্বের তাবত রাষ্ট্রগুলিকে দুর্বৃত্তিতে ৫ বার হারিয়ে প্রথম হওয়ার মধ্য দিয়ে। দেশটি অধিকৃত আল্লাহর বিদ্রোহীদের হাতে। তাদের বিদ্রোহটি ঘটেছে জাতীয়তাবাদ,সমাজবাদ,সেক্যুলারিজম,কুফরি আইন, দুর্নীতি ও পুঁজিবাদের নামে। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এখানেই ঘটছে শয়তানের সবচেয়ে বড় বিজয়। শয়তানের এতবড় বিজয় ইংল্যান্ড,ফ্রান্স বা ভারতের ন্যায় সংখ্যাগরিষ্ট অমুসলিমদের দেশেও আসেনি। সেসব দেশে ইসলামপন্থিদের পায়ে ডাণ্ডা বেড়ি পড়ানো হয় না,সেনাবাহিনীর সেপাইরা ঘরে ঘরে ঢুকে ইসলামী বইও বাজেয়াপ্ত করে না। অথচ সেটি বাংলাদেশে হয়। এরূপ বিশাল বিজয় নিয়ে শয়তানী শক্তির উৎসব তাই বছরের একটি বা দু’টি দিনে নয়,বরং প্রতিটি দিন জুড়ে। মুসলমানদের মন থেকে এরা ভূলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর দলে শামিল হয়ে শরিয়তি বিধানকে বিজয়ী করার মিশন। এবং এভাবেই বেড়েছে শয়তানের আউলিয়াদের বিজয়। এবং সেটিও মুসলমানদের নিজ রক্ত,অর্থ ও শ্রমের বিনিময়ে। বাংলাদেশের ন্যায় বহু মুসলিম দেশ আজ  তাদের হাতেই অধিকৃত।

 

ঈমানের পরিচয় বন্ধু নির্বাচনে

বন্ধু নির্বাচনটি মামূলী বিষয় নয়,বরং মানব জীবনে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।বন্ধু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ধরা পড়ে ব্যক্তির ঈমান। প্রকাশ পায় জীবনের মূল এজেণ্ডা। এখানে ধরা পড়ে,কি তাঁর জীবনর্শন এবং কি তার বাঁচবার লক্ষ্য। তাই ব্যক্তির ঈমান চিন্তা-চেতনা,ধর্ম,দর্শন এবং মনের আসল রূপটি বুঝার জন্য গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। রোয হাশরের বিচার দিন পর্যন্ত অপেক্ষাও করতে হয় না। সেটা অতি স্পষ্ট ভাবেই ধরা পড়ে তার বন্ধুদের দেখে। তাই মদিনার মুনাফিকদের হাতে নাতে ধরতে সে জামানার সাহাবাদের কোনরূপ বেগ পেতে হয়নি।সেটি প্রকাশ পেয়েছে তাদের বন্ধু মক্কার কাফের আর মদিনার ইহুদীর দেখে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষ কেবল তার মনের মত লোকটিকেই বেছে নেয়। মানুষ এলক্ষ্যে ব্যক্তির চেহারার দিকে তাকায় না, বরং দেখে চিন্তা-চেতনা,আচার-আচরণ,শিক্ষা-সংস্কৃতি,রাজনৈতীক ও অর্থনৈতিক চরিত্র। এক্ষেত্রে মানুষ আপোষ করে না। তাই কোন দুর্বৃত্ত যেমন কোন সজ্জনকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে না,তেমনি সজ্জনও গ্রহণ করে না দুর্বৃত্তকে। ফলে আগ্রাসী ভারতীয়দের সাথে হাতে হাত এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা মৈত্রী গড়ে তারা যে কোন পক্ষের সেটি বুঝতে কি মহাজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে? ঈমানদার ব্যক্তিটি প্রকৃত ঈমানদারকে বন্ধু রূপে বেছে নিবে সেখানেই ঈমানের মূল পরিচয়। সে তো বাঁচে দুর্বৃত্ত বেঈমানের প্রতি চরম ঘৃণা এবং তার দুর্বৃত্তির নির্মূলের বাসনা নিয়ে। তার জীবনের মূল মিশন তো “আমারু বিল মা’রুফ” এবং “নেহী আনিল মুনকার”। অর্থাৎ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের নির্মূল। মু’মিনের জীবনে এ মিশনটি নির্ধারিত করে দিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালা। কোরআনে বর্ণিত সে মিশন থেকে একজন মু’মিন তাই বিচ্যুত হয় কি করে? ফলে দুর্বৃত্তের সাথে তার বন্ধুত্ব বা সহ-অবস্থানই বা কীরূপে সম্ভব? যদি সেটি ঘটে,তখন বুঝতে হবে সেখানে ঈমানদারি নেই। আছে মুনাফেকি।

কে কাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করলো সেটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে পরকালে সে পরিচয় নিয়েই মানুষ মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। নবীজীর প্রসিদ্ধ হাদীস,রোজ হাশরের দিনে প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ দল বা বন্ধুদের সাথে উত্থিত হবে। মু’মিনগণ সেদিন হাজির হবে মু’মিনদের সহচর রূপে। অপরদিকে পার্থিব জীবনে যারা পাপাচারি কাফের,ফাসেক,নাস্তিক,সেক্যুলারিস্ট ও দুর্বৃত্তদের সাথে দল গড়েছে ও বন্ধুত্ব করেছে পরকালে তারা তাদের সাথেই জমায়েত হবে। প্রশ্ন হলো, আল্লাহর দরবারে দুর্বৃত্তদের বন্ধু রূপে হাজির হওয়া কি কম অপমানের? এরা তো জাহান্নামের ইন্ধন। কোন মু’মিন বান্দাহ এমন শাস্তি ও অপমানে পড়ুক মহান আল্লাহ সেটি চান না। তাই এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বার বার হুশিয়ার করে দেয়া হয়েছে,ঈমানদার ব্যক্তি যেন বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনরূপ ভূল না করে। সুরা আল-ইমরানের ২৮ নম্বর আয়াতে তাই হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে,“মু’মিনগণ যেন মু’মিনদের ছাড়া কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করলে তার সাথে আল্লাহর কোনরূপ সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম হলো যদি তোমরা তাদের থেকে আত্মরক্ষা জন্য সতর্কতা অবলম্বন করো।” আরো বলা হয়েছে,“হে ঈমানদারগণ!তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে আউলিয়া (বন্ধু)হিসাবে গ্রহণ করো না,তারা পরস্পরের বন্ধু।তোমাদের মধ্য থেকে কেউ তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন রূপে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। -(সুরা মায়িদা,৫১)। মুসলমানের জীবনে তাঁর বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাপকাঠি হবে আল্লাহর উপর বিশ্বাস এবং তার হুকুমের প্রতি আনুগত্যের বিষয়। তাই কোন অবাধ্য,বিদ্রোহী বা মুনাফিক মুসলমানের বন্ধু হতে পারে না। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারি,“হে মু’মিনগণ!তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে বন্ধ রূপে গ্রহণ করো না।” –(সুরা মুমতাহানা,আয়াত ১)।আরো বলা হয়েছে,“বলে দাও (হে মুহাম্মদ)! তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তোব আমাকে অনুসরণ করো,(এবং আমাকে অনুসরণ করলে)আল্লাহ তোমাদেরকে ভাল বাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন।আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।”–(সুরা আল-ইমরান,আয়াত ৩১)। সুরা কাহাফের ১০২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,“যারা কুফরি করেছে তার কি মনে করে নিয়েছে যে,আমার পরিবর্তে আমার বান্দাহদেরকে আউলিয়া রূপে গ্রহণ করবে? আমি (এরূপ) কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নাম।” মহান আল্লাহতায়ালা চান,ঈমানদারগণ যেমন একমাত্র তাকেই মা’বুদ বা উপাস্য রূপে গ্রহণ করুক,তেমনি একমাত্র তাঁকেই ওলি বা অভিভাবক রূপে গ্রহন করুক। ফলে আল্লাহ ছাড়া অন্য ব্যক্তি ও শক্তিকে ওলি বা আউলিয়া রূপে গ্রহণ করা ইসলামে হারাম।এমন কাজ কোন মু’মিনের নয়,বরং সে কাজ কাফেরদের।

কুফরি কারো জীবনেই একাকী আসে না,আসে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের বিরুদ্ধে নানারূপ অপরাধ প্রবনতা নিয়ে।কুফরির মূল রূপটি স্রেফ আল্লাহর অস্তিত্বের অস্বীকার করা নয়,বরং তার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নামা।কুফরি শক্তির বিদ্রোহে তাই শরিয়তী বিধানের বিরুদ্ধে। বিদ্রোহের সে পথ বেয়ে তারা মিত্রতা গড়ে আল্লাহর দুষমনদের সাথে;এবং কাফের মিত্রদের সাথে নিয়ে দুষমনি করে আল্লাহর আউলিয়াদের বিরুদ্ধে। আউলিয়া বা বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এরূপ বিদ্রোহীরা ব্যক্তির ঈমানদারির বদলে কুফরিকে গুরুত্ব দেয়। তাদের কাছে তখন গুরুত্ব পায় কে কতটা ইসলামের দুষমন,কে কতটা নাস্তিক,কে কতটা কম্যুনিস্ট,এবং কে হিন্দু,খৃষ্টান বা বৌদ্ধ সেটি। গুরুত্ব পায় তাদের নিজেদের পার্থিব স্বার্থটি। পাপ যেমন পাপের পথে টানে,তেমনি আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে প্রতিটি বিদ্রোহই তাদেরকে অন্যান্য বিদ্রোহীদের সাথে একীভূত করে। ফলে যে দেশেই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ,এবং যে দেশে বিজয়ী হয় সূদ-ঘুষ-সন্ত্রাস এবং মদ-জুয়া-নাচগান ও পতিতাবৃত্তি-ভিত্তিক সংস্কৃতি,তখন সে বিদ্রোহীদের কাছে আউলিয়া রূপে গৃহীত হয় বিশ্বের তাবত কাফেরগন। মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামের শত্রুপক্ষের বিপুল সংখ্যক মিত্র গড়ে উঠার মূল রহস্যটি তো এখানে। তেমন একটি দেশের উজ্বল উদাহরণ হলো বাংলাদেশ।

 

শ্রেষ্ঠতম ও নিকৃষ্টতম প্রাপ্তি

মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ দান হলো হিদায়েত। সে হিদায়েতটি আসে আল্লাহকে ওলি বা অভিভাবক রূপে গ্রহণ করার বরকতে। পবিত্র কোরআনে তাই ঘোষিত হয়েছে,”আল্লাহ যাকে হিদায়েত দেন সেই হিদায়েত পায়। আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তখন তার জন্য তুমি কোন পথপ্রদর্শনকারী ওলি বা অভিভাবক খুঁজে পাবে না।”–(সুরা কাহফ,আয়াত ১৭)। পবিত্র কোরআনের আরো ঘোষণা,“যারা ঈমান আনে তাদের “অলি” তথা বন্ধু বা অভিভাবক হলেন আল্লাহ। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফুরি করে তাদের “অলি” হলো তাগুত তথা শয়তান। এরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারাই আগুণের অধিবাসী,সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।”-(সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৭)।

ঈমানদার হওয়ার নিয়ামত বিশাল। তবে সবচেয়ে বড় নিয়ামতটি হলো,মহান আল্লাহতায়ালার বন্ধুত্ব লাভ। মহাদয়াময় মহান আল্লাহতায়ালা তখন তাদের অভিভাবক হয়ে যান। আর আল্লাহ যার অভিভাবক হয়ে যান তার কি কোন ভাবনা থাকে? মু’মিনের জীবনে তখন মহাশান্তি, মহাতৃপ্তি ও প্রবল আত্মবিশ্বাস নেমে আসে। সে তখন দ্বীনের পালন ও প্রতিষ্ঠায় অকুতোভয় ও আপোষহীন হয়। মু’মিনের জীবনে সেটাই শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।এমন ঈমানদার ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালা তিনি নিজ ইচ্ছায় নিজের বন্ধু রূপে গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ যেমন তাদের ওলি বা অভিভাবক তারাও তেমনি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু। মানব জীবনে এর চেয়ে বড় অর্জন এবং বড় সম্মান আর কি হতে পারে? অর্থলাভ,সন্তানলাভ বা বিশাল রাজ্যলাভ কি আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভের চেয়ে লাভজনক বা গৌরবজনক হতে পারে? অর্থলাভ,সন্তানলাভ বা বিশাল রাজ্যলাভের মধ্য দিয়ে এ জীবনে কি এমন শান্তি ও সফলতা মেলে? এবং সেটি কত বছরের? পরকালে জান্নাতের এক ইঞ্চি ভূমিও কি জীবনের সকল সঞ্চয় দিয়ে কেনা সম্ভব? অথচ নিয়ামত ভরা বিশাল জান্নাত অর্জিত হয় করুণাময় মহান আল্লাহর বন্ধু হওয়ার মধ্য দিয়ে। সফলতার সে পথের দিকে চলতে তাগিদ দিয়ে ঈমানদারদের উদ্দেশ্যে তাই বলছেন,“তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে যা কিছু তোমাদের কাছে অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো। এবং তাকে ছাড়া আর কাউকে আউলিয়া রূপে অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করো। -(সুরা আ’’রাফ, আয়াত ৩)। বলা হয়েছে “আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন  ওলী নাই, সাহায্যকারিও নাই।”-(সুরা তাওবা, আয়াত ১১৬)। “নিশ্চয়ই যালিমগণ একে অপরের আউলিয়া,আর যারা মুত্তাকী তাদের ওলী হলেন আল্লাহ।” –(সুরা জাছিয়া, আয়াত ১৯)।

অপরদিকে শয়তানের বন্ধু বা সহচর হওয়ার চেয়ে এজীবনে কি বড় ব্যর্থতা আছে? এরচেয়ে নিকৃষ্টতম প্রাপ্তিই বা জীবনে কি হতে পারে? মানব জীবনের সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো এটি। তাই বলা হয়েছে, “যারা ঈমান আনে না,শয়তানদেরকে আমি তাদের আউলিয়া নিযুক্ত করি। -(সুরা আ’’রাফ ২৭)। দেহের রোগ যেমন প্রতিদিন বৃদ্ধি পায়,শয়তানও তেমন তাদের মনের রোগে দিন দিন বৃদ্ধি ঘটায়। এই হলো বেঈমানীর পুরস্কার! শয়তানের সাথে বন্ধুত্ব শুধু এ জীবনে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও সিরাতুল পথ থেকে ভ্রষ্টতা বাড়ায় না,মৃত্যুর পর জাহান্নামেও নিয়ে পৌঁছায়। এবং সেটি দু-চার কোটি বছরের জন্য নয়,বরং অনন্ত-অসীম কালের জন্য। সম্পদহানি, সন্তানহানি বা রাজ্যহানির মধ্য দিয়ে কি এতবড় ক্ষতি হয়? মানব জাতির দুটি বিভক্ত ধারা এভাবেই দুটি ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে প্রতি সমাজে,প্রতি রাষ্টে এবং ইতিহাসের প্রতিপর্বে ধাবিত হচ্ছে। মানবজীবনে সবচেয়ে বড় সফলতাটি এ নয় যে,সে কোন পেশা বেছে নিল,কোথায় ঘর বাঁধলো,কতটা ক্ষমতাশালী হলো বা কতবেশী উপার্জন করলো। বরং সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি হয়, মানব-ইতিহাসের চলমান এ দুটি ধারার কোনটি বেছে নিল। জীবনের সব পরীক্ষার শেষ ফলাফলটি হয় এ বিচার নিয়ে,সে কি আল্লাহকে বন্ধ রূপে পেল না শয়তানকে পেল। আল্লাহতায়ালা তার নিজের বন্ধুদের অভয় বাণী শুনিয়েছেন এভাবে,“নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নাই,এবং তারা দুঃখিতও হবে না।-(সুরা ইউনুস, আয়াত ৬২)।

তবে শয়তানের আউলিয়াদের ব্যর্থতা যে কতটা বিশাল যে বিবরণও মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে পেশ করেছেন। বলেছেন,“যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে আউলিয়া বা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়,যে নিজের জন্য ঘর বানায় এবং ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো দুর্বলতম যদি তারা জানতো।-(সুরা আনকাবুত,আয়াত ৪১)। আরো বলা হয়েছে, “তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে আউলিয়া রূপে গ্রহণ করেছো -যারা (এমন কি)নিজেদের লাভ বা ক্ষতি সাধনে সক্ষম নহে?” সুরা রা’দ, আয়াত ১৬।”

আউলিয়া বা অভিভাবক পাওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ নিরাপত্তা খুঁজে। তাই আউলিয়ার খুঁজে মানুষ যেমন ভন্ড পীর-দরবেশ ও সাধু-সন্যাসীকে আঁকড়ে ধরে,তেমনি ক্ষমতাধর রাজা-বাদশাহ ও রাজনৈতীক শক্তিকেও আঁকড়ে ধরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন,রাশিয়া ও ভারতের শাসকচক্রের আউলিয়া হওয়ার মধ্য দিয়ে অনেকে নিজেদের কল্যাণ খুঁজে তো একারণেই। এমন এক চেতনা নিয়েই নমরুদ,ফিরাউনের ন্যায় স্বৈরাচারি শাসককে অনেক সাধারণ আউলিয়া রূপে গ্রহণ করেছিল। অনেকে তাদেরকে পুজণীয়ও মনে করেছিল। কিন্তু মাকড়সার জাল যেমন কাউকে ঘরের নিরাপত্তা দিতে পারে না,তেমনি নিরাপত্তা দিতে পারেনি এসব মিথ্যা আউলিয়াগণও।তারা নিজেরাই তো নিজেদেরকে বিপদ থেকে বাঁচাতে পারিনি,অন্যদের কি বাঁচাবে?  তারা ইজ্জতই বা কি বাড়াবে? তাই বলা হয়েছে,“মু’মিনদের পরিবর্তে যারা কাফিরদের বন্ধুদের গ্রহণ করে তারা কি তাদের থেকে ইজ্জত চায়? সমস্ত ইজ্জত তো আল্লাহরই।” -(সুরা নিসা, আয়াত ১৩৯)। বরং এসব যালেম শাসকগণ যে কতটা অসহায় সে ঘোষণাটি মহান আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন এভাবে,“আর যালিমগণ! তাদের কোন আউলিয়া নাই,কোন সাহায্যকারিও নাই।” –(সুরা শূরা, আয়াত )।

 

শয়তান কীরূপে কাঁধে চাপে?

আল্লাহর উপর অবিশ্বাস এবং তাঁর হুকুমের অবাধ্যতা মানুষের কাঁধে নানাভাবে বিপর্যয় আনে। সেটি শুধু আখেরাতেই নয়,এ দুনিয়াতেও। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন রোগকে আলিঙ্গণ করে,তার দেহে দিন দিন শুধু সে রোগটিরই বৃদ্ধি ঘটে না,রোগাগ্রস্ত দেহটি অন্য আরো রোগকেও ডেকে আনে। রোগের কাজই হলো দেহের প্রতিরোধ শক্তির বিনাশ। সেটি শুধু দেহের ক্ষেত্রে নয়,মনের রোগের ক্ষেত্রেও। মনের সবচেয়ে ভয়ানক রোগটি হোল বেঈমানি। দেহের রোগ কবরে টানে,আর বেঈমানি জাহান্নামে টানে। বেঈমানের বিপদটি যে কতটা ভয়ানক সেটি বুঝা যায় পবিত্র কোরআনের এ আয়াতে যাতে বলা হয়েছে,“তোমাদেরকে কি জানিয়ে দিব,কাদের উপর শয়তান নাযিল হয়? তারা তো নাযিল হয় প্রতিটি মিথ্যাবাদী ও পাপীর উপর। ওরা কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।” –(সুরা শুরা,আয়াত ২২১-২২৩)। আরো বলা হয়েছে,“যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয় আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি,অতঃপর সে তার সহচর হয়। এবং নিশ্চয়ই এ শয়তানেরাই মানুষকে সৎপথ থেকে বিরত রাখে,অথচ মানুষ মনে করে তারা সৎপথে চলছে।অবশেষে সে যখন আমার নিকট উপস্থিত হবে তখন সে শয়তানকে বলবে,“হায়!তোমার এবং আমার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিমের ন্যায় ব্যবধান থাকতো।” কত নিকৃষ্ট সহচর সে। আজ (তোমাদের এ অনুতাপ)কোন কাজে আসবে না,কারণ তোমরা সীমালংঘন করেছিলে,তোমরা তো সকলেই শাস্তিতে শরীক।” –(সুরা জুখরুফ, আয়াত ৩৬-৩৯)। আর বলা হয়েছে,“আল্লাহর পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। -(সুরা নিসা, আয়াত ১১৯)।

আল্লাহর অবাধ্যতার মাধ্যমে মানুষ যেমন আল্লাহতায়ালা থেকে দূরে সরে,তেমনি কাছে পৌঁছে পাপীষ্ঠ শয়তানের। এভাবে সে পরিণত হয় শয়তানের আউলিয়ায়। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পিতার ব্যাপারে সেটাই আশংকা করেছিলেন। কারণ তাঁর পৌত্তলিক পিতা ছিল আল্লাহর অবাধ্যতায় আপোষহীন। তাই তিনি তাঁর পিতাকে বলেছিলেন,“হে আমার পিতা! আমি তো আশংকা করি,তোমাকে দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করবে। তখন তুমি হয়ে পড়বে শয়তানের ওলি তথা বন্ধু।” –(সুরা মারইয়াম, আয়াত ৪৫)।আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধে বেঈমানের কাঁধের উপর যে নিশ্চিত ভাবে শয়তান নেমে আসে -পবিত্র কোরআনে বার বার সে সাক্ষ্যটি দিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালা নিজে। কোন ঈমানদারের মনে কি এ নিয়ে সামান্যতম সংশয় থাকতে পারে? অথচ বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে কি সে বিদ্রোহীরাই বিজয়ী নয়? এ বিদ্রোহীদের দল ভারী হওয়ার কারণে অসম্ভব হয়েছে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা।

 

প্রাপ্তি যখন আল্লাহর ক্রোধ

আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহ করে তাদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর ক্রোধ যে কত তীব্র সেটি নবীজী(সাঃ)র বহু হাদীসেও সেটি প্রকাশ পেয়েছে। নবীজী (সাঃ) বলেছেন,“আল্লাহ বলেন,যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর বিরুদ্ধে শত্রুতা করলো,বাস্তবে সে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো।” বোখারীর শরিফের একটি হাদীসঃ আল্লাহতায়ালা বলেন,আমার বন্ধুর বিরুদ্ধে যার শত্রুতা আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার কোন বান্দাহ কখনই আমার এতটা কাছে পৌঁছতে পারে না যতটা সে পারে আমি যা তার উপরে ফরয করেছি সেটি পালনের মধ্য দিয়ে। এবং আমি যা পছন্দ করি এমন নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে আমার বান্দাহ আমার আরো কাছে পৌঁছার কাজ অব্যাহত রাখে।

তিরমিযি শরিফের হাদীস,“ঈমানের সবচেয়ে গভীর বন্ধনটি হলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই কাউকে ভাল বাসা এবং একমাত্র আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃনা করা।” আল্লাহর প্রতি ঈমান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে পিতামাতা, ভাইবোনও যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে মু’মিনের উপর আল্লাহতায়ালার হুকুম হলো তাদেরকে পরিত্যাগ করা। এবং আল্লাহকেই গ্রহণ করা। নইলে সে যালিম রূপে গণ্য হবে। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে, “হে মু’মিনগণ!তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের পরিবর্তে কুফরিকে শ্রেয়জ্ঞান করে তবে তাদেরকে নিজেদের আউলিয়া বা অন্তরঙ্গ রূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ রূপে গহণ করে তারাই যালিম।–(সুরা তাওবা,আয়াত ২৩)।

আল্লাহর উপর ঈমান আনার সাথে সাথে মু’মিনের জীবন ও জগত জুড়ে শুরু হয় মহাবিপ্লব। তখন শুধু তার খাদ্যপানীয় ও পোষাক-পরিচ্ছদই পাল্টে যায় না,পাল্টে যায় জীবনের মূল মিশনও। পাল্টে যায় তার রাজনীতি,শিক্ষা-সংস্কৃতি,অর্থনীতি ও রুচীবোধ। নিজের কাফের বাপদাদার সংস্কৃতি এবং আচার-আচরণ তখন তার কাছে আপন না হয়ে বরং বিজাতীয় ও বর্জনীয় মনে হয়। পাল্টে যায় যুদ্ধবিগ্রহের এজেণ্ডা।সে তখন ক্ষমতালিপ্সা, অর্থলিপ্সা বা সাম্রাজ্যলিপ্সার কারণে যুদ্ধ করেনা। এবং যুদ্ধ করে না ভাষা,বর্ণ,ভূগোল বা বংশের গর্ব বাড়াতেও। শত্রুপক্ষের বেতনভুগী ভাড়াটিয়া সৈন্য হওয়া ও তাদের বিজয় আনতে যুদ্ধ করাটি তার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় অপচয় মনে হয়। গাদ্দারি মনে হয় মহান আল্লাহর নির্দেশিত জীবনের মূল মিশনটির সাথে। মু’মিন তো বাঁচবে এবং যুদ্ধ করে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশিত পথে। তাঁর জীবনের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা হবে আল্লাহর শরিয়তী বিধানকে বিজয়ী করায়। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে,“যারা ঈমান এনেছে তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে,আর যারা কুফরি করে তারা লড়াই করে তাগুতের তথা শয়তানের পথে। অতএব তোমরা যুদ্ধ করো এবং শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। অবশ্যই শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। -(সুরা নিসা, আয়াত ৭৬)।

অথচ অধিকাংশ মুসলিম দেশে সেটি ঘটেনি। ফলে বাংলাদেশে ভারতীয় কাফের বাহিনী বা ব্রিটিশ বাহিনী যত দালাল মুসলিম সহযোদ্ধা পেয়েছে বাংলাদেশে সেটি কোন মুসলিম পক্ষ আজ অবধি পায়নি। সেটি যেমন ১৯৭১সালে পায়নি, তেমনি ১৭৫৭ সালেও পায়নি। তেমনি আজ।ও পাচ্ছে না। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ যেমন অতীতে বিপুল সংখ্যক মীর জাফর পেয়েছে,তেমনি লক্ষ লক্ষ মীর জাফর পেয়েছে আগ্রাসী ভারতও। সেটি যেমন পেয়েছে ১৭৫৭ সালে,তেমনি ১৯৭১য়েও। পাচ্ছে আজও । ফলে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে লাগাতর পরাজয় ঘটেছে ইসলামের। তাই ১৯৭১ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের ধ্বংসে বিজয়ী হয়েছে কাফেরদের প্রজেক্ট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের হাতে যখন জেরুজালেম ও ইরাক অধিকৃত হয় তখন সে বাহিনীতে যত ইংরেজ ছিল তার চেয়ে বেশী ছিল অ-ইংরেজ। বিপুল সংখ্যক ছিল মুসলমান।সে বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানই শুধু নয়,কবি কাজী নজরুল ইসলামের মত ব্যক্তিও। এ হলো মুসলমানদের চেতনার মান! রাজনীতিতে বা যুদ্ধবিগ্রহে কোন পক্ষে যোগ দিতে সে সামান্যতম হুশ তাদের মাঝে নেই। হুশ শুধু অর্থলাভে। পশু যেমন যেখানে সেখানেই ঘাস পায় সেখানেই মুখ দেয়। কে তার মালিক সে খেয়াল করে। হালাল-হারামের বিচারও করে না। তেমনি অবস্থা মানুষরূপী এসব পশুদেরও। তাই ভারতীয় হোক, ব্রিটিশ হোক বা মার্কিনী হোক অর্থলাভের প্রতিশ্রুতি পেলে তারা শ্রম,মেধা এমনকি প্রাণ দিতেও তারা প্রস্তুত। পবিত্র কোরআন এমন মানুষদেরকে অভিহিত করেছে “উলায়িকা কা আল আনয়াম বাল হুম আদাল অর্থাৎ “পশু বা পশুর চেয়েও অধম” রূপে। বাংলাদেশে বিদেশী স্বার্থের এনজিওদের এজন্যই সেবাদাস পেতে অসুবিধা হয় না। ১৭৫৭ সালে পলাশির বিপর্যয়ের পর সিরাজুদ্দৌলাকে কোন কাফের গ্রেফতার করেনি বা হত্যাও করেনি। বরং সে কাজটি করেছিল মুসলমান নামধারিগণ।

প্রশ্ন হলো,মুসলমানদের মাঝেও যখন কাফেরদের এত আউলিয়া তখন কি সে মুসলিম ভূমিতে কোন কাফের শত্রুকে ময়দানে নামার প্রয়োজন পড়ে কি? আজ ও যারা বাংলাদেশে মুসলমানদের ঘর ঘর থেকে ইসলামি বই বিশেষ করে জিহাদ বিষয়ক বইগুলি বাজেয়াপ্ত করছে এবং ইসলামপন্থিদের উপর নির্যাতন করছে তারাও কি স্বঘোষিত কাফের? তারা তো মুসলিম নামধারি বাঙালী। এরা কাজ করছে কাফেরদের বিশ্বস্ত আউলিয়া রূপে। এদের কারণেই বাংলাদেশে আজ  ভারতীয় সংস্কৃতির আদলে গড়ে উঠা যতটা সহজ,ততই কঠিন হলো জিহাদী সংস্কৃতি নিয়ে বেড়ে উঠা বা শরিয়তে দাবী নিয়ে রাজনীতি করা। এদের কারণেই বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশে কাফের শক্তিকে নিজ বাহিনীতে সৈনিক পেতে কোন কালেই কোন বেগ পেতে হয়নি। আজও  নয়। বাংলাদেশের ন্যায় বহু মুসলিম দেশের মূল বিপদটি এখানেই। এমন শয়তানী বাহিনী শুধু ইসলামের পরাজয়ই আনে না,আল্লাহর ভয়ানক আযাবও ডেকে আনে। এ আযাবটি আসে নিজ অর্থ ও নিজ রক্তে ইসলামকে পরাজিত করার শাস্তি রূপে।এমন আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হলো শয়তানের বাহিনীর নির্মুলে লাগাতর লড়াই। মুসলমান হওয়ার সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়বদ্ধতা। তখন শুধু আযাবই দূর হয় না, মহান করুণাময়ের রহমতও নেমে আসে। তেমন এক ঈমানী দায়বদ্ধতার কারণে মুসলিম সমাজে শুধু লাগাতর নামায-রোযাই প্রতিষ্ঠা পায় না,লাগাতর জিহ্দও শুরু হয়। তাই তো নবীজীর ১৩ বছরের শাসনকালে ৫০টির বেশী যুদ্ধ ছিল।যুদ্ধ ছিল খোলাফায়ে রাশেদার আমলেও। মু’মিনদের লাগতর এ লড়াই তখন মুসলিম ভূমিতে আল্লাহ প্রতিশ্রুত রহমত নামিয়ে আনে। জনবিরল আরবভূমি এ রহমতের বরকতেই রোমান ও পারসিক সাম্রাজ্যের নায় দুটি বিশাল বিশ্ব-শক্তিকে হারিয়ে মদিনায় হিজরতের মাত্র বিশ বছরের মধ্যে বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। শুধু নামায-রোযায় যেমন মহান আল্লাহর রহমত আসে না,তেমনি বিজয়ও আসে না। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে কোটি কোটি নামাযী বাড়লেও ইসলাম বিজয়ী হচ্ছে না তো এ কারণেই।

 

আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও মুমিনের দায়ভার

মুসলমানদের উপর ঈমানী দায়ভার হলো কাফের বাহিনী বা ইসলামের প্রতি অঙ্গিকারশূণ্য সকল দল বা বাহিনীর সাথে সম্পর্কছেদ। কোরআনে বলা হয়েছে,“যারা তাঁর (আল্লাহর) দ্বীনকে ক্রীড়া-কৌতুক রূপে গ্রহণ করে,এবং যাদেরকে প্রলুদ্ধ করেছে পার্থিব জীবন (হে মুহম্মদ) তুমি তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ কর। এবং তাদেরকে এর (কোরআন) দ্বারা উপদেশ দাও যাতে তারা কেউ নিজ কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়। (সত্য হলো) আল্লাহ ছাড়া তার কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারি থাকবে না।” পার্থিব জীবন যাদের প্রলুদ্ধ করে তারাই মূলতঃ সেক্যুলারিস্ট। সেক্যুলারিজমের অভিধানিক অর্থ হলো ইহজাগতিকতা। অথচ মুসলমানের জীবনে মূল চালিকাশক্তি হলো তার পরকালমুখিতা। তাঁর রাজনীতি,সংস্কৃতি,যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং জীবন-মৃত্যুরর ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি নির্দেশিত হয় পরকালীন কল্যাণ চিন্তাকে মাথায় রেখে। অথচ সেক্যুলারিস্টগণ সে চেতনাটিকেই বিলুপ্ত করতে চায়। কারণ এমন চেতনার বিলুপ্তির মধ্যেই তাদের বিজয়। উপরুক্ত আয়াতে মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা নবীজী (সাঃ)কে নির্দেশ দিচেছন এরূপ ইহজাগতিক মানুষদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। কারণ এমন রোগ কলেরা-যক্ষা ন্যায় মারাত্মক রোগের চেয়েও সংক্রামক এবং ক্ষতিকর। সে রোগ থেকে বাঁচানোর স্বার্থে শুধু নিষেধ নয়,পবিত্র কোরআনে কঠোর হুশিয়ারিও শুনানো হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা ইহজাগতিকতায় প্রলুদ্ধ তারা আল্লাহতায়ালাকে অভিভাবক বা বন্ধু রূপে পাবে না। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো,আল্লাহর পক্ষ থেকে এতবড় কড়া হুশিয়ারির পরও বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশে ঘটছে তার উল্টোটি। তারা বরং সেক্যুলারিস্টদের দলে লাখে লাখে শামিল হচ্ছে এবং তাদেরকে রাজনৈতিক ভাবে বিজয়ীও করছে। বাংলাদেশে ইসলামের চিহ্নিত শত্রুপক্ষটি তো নিজ বাহুবলে আসেনি, বরং ক্ষমতাসীন হয়েছে তো দেশবাসীর ভোটেই। ফলে ইসলামের এমন একটি বিপক্ষ শক্তিকে বিজয়ী করার আযাব থেকে কি দেশবাসী মুক্তি পেতে পারে?

যারা ইসলামের শত্রুপক্ষ তারা এ পৃথিবীতে একা নয়। বরং তাদের সাথে রয়েছে বিশ্বের তাবত শয়তানী শক্তি। তাই আরাকানে বা আসামে বা কাশ্মীরে হাজার হাজার মুসলমান নিহত হলেও তাদের পক্ষে কেউ এগিয়ে আসে না। জাতিসংঘে কোন প্রস্তাবও পাশ হয় না। কিন্তু পূর্ব তিমুর, দক্ষিণ সূদান বা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্ট্রগ্রামের অমুসলমানদের পক্ষে সমর্থণ দানে সমগ্র বিশ্ব একতাবদ্ধ। ইসলামের শত্রুপক্ষটি বাংলাদেশেও একা নয়। তাদের পক্ষে শুধু প্রতিবেশী ভারতই নয়,বরং তাবত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। সে বাস্তবতাটি নবীজী(সাঃ) জামানাতেও ছিল। সে বাস্তবতাটি সামনে রেখেই মহান আল্লাহতায়ালা মু’মিনদের অভয় বাণী শুনাচ্ছেন এভাবে,“এরাই শয়তান,তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়, সুতরাং তোমরা যদি মু’মিন হও তবে তোমরা তাদেরকে ভয় করবে না,আমাকেই ভয় কর।” -(সুরা ইমরান, আয়াত ১৭৫)।

কাফেরদের মাঝে যে বন্ধন ও মৈত্রী তার প্রতিরোধে মু’মিনদের কর্তব্য হলো তাদেরও সীসা ঢালা প্রাচীরসম ঐক্য গড়ে তোলা। নইলে শুধু পরাজয়ই নয়,চরম বিপর্যয়ও অনিবার্য। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাই ঘোষণা,“যারা কুফরি করেছে তারা পরস্পরের আউলিয়া। যদি তোমরাও (ঈমানদারগণ) সেরূপ না করো (অর্থাৎ পরস্পরের আউলিয়াতে পরিণত না হও)তবে দেশে ফিতনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দিবে। -(সুরা আনফাল, আয়াত ৭৩)। মু’মিনদের বিষয়ে মহান আল্লাহর বর্ণনাটি হলো, “মু’মিন পুরুষ এবং মু’মিন নারী একে অপরের বন্ধু,তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য নিষেধ করে,সালাত কায়েম করে,যাকাত দেয় এবং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, এদেরকে আল্লাহ কৃপা করবেন।নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়।”-(সুরা তাওবা,আয়াত ৭১)। রাষ্ট্রের বুকে বিপর্যয় রোধের উপায় তাই নিছক ঈমান আনা নয়। নামায-রোযা,হজ-যাকাত পালন বা তাসবিহ পাঠও নয়।বরং রাষ্ট্রের বুকে শয়তানের আউলিয়াগণ যেরূপ সম্মিলিত ভাবে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তার প্রতিরোধে মু’মিনদের উপর দায়িত্ব হলো পরস্পরে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এবং দুর্বৃত্তদের নির্মুলে “আ’’মিরু বিল মা’রুফ এবং নেহি আনিল মুনকার” (অর্থঃ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের নির্মূল)কে জীবনের মিশন রূপে গ্রহণ করা।

মহান আল্লাহতায়ালা যখন মুসলমানদের বন্ধু হযে যান তখন কি তাদেরকে কেউ হারাতে পারে? তাই সংখ্যা ও সম্পদে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও সাহাবাদের জীবনে পরাজয় আসেনি। সমগ্র ইতিহাসে মুসলিম বাহিনীর যত বিজয় এসেছে সেগুলি এসেছে মূলত মহান আল্লাহর রহমতের বরকতে। আর সে রহমত এসেছে আল্লাহর আউলিয়া হওয়ার কারণে। কারণ তখন তাদের সাহায্য করা এবং তাদেরকে বিজয়ী করাটি মহান আল্লাহতায়ালা নিজ দায়িত্বে নিয়ে নেন। আল্লাহর হুকুমে তখন ক্ষুদ্র পাথরও মিজাইলে পরিণত হয়,মশাও ড্রোনে পরিণত হয়। এবং গভীর সমুদ্র পরিনত হয় মহা সড়কে। অতীতে আবরাহার বিশাল হস্তি বাহিনী বিধ্বস্ত হয়েছে এবং নমরুদ ও ফিরাউনের বিনাশ হয়েছে তো আল্লাহর সে অপরাজেয় শক্তির কারণেই।মহান আল্লাহতায়ালা তো আজ ও তাঁর বাহিনী ও কুদরত নিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত। পবিত্র কোরআনে সে প্রতিশ্রুতি তো অসংখ্য। কোন ঈমানদারের কি সে প্রতিশ্রুতি নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ থাকতে পারে। আর সন্দেহ থাকলে কি ঈমান বাঁচে? কিন্তু প্রশ্ন হলো,আল্লাহর আউলিয়াদের সে প্রস্তুতি কই? শয়তানের আউলিয়াদের বিজয়ে অর্থদান,ভোটদান ও রক্তদানের মধ্য দিয়ে কি সে সাহায্য জুটে? ৩০/০৮/১২

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *