আল্লাহর বিধান বনাম শয়তানী সংবিধান
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on October 24, 2020
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিদ্রোহ আল্লাহর বিরুদ্ধে
ঈমানদারের কাছে মহান আল্লাহতায়ালার বিধান ভিন্ন অন্য কোন বিধানের বৈধতা নাই। মান্যতাও নাই। কারণ, ভূ-পৃষ্ঠের উপর দুটি পক্ষ। একটি মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ, অপরটি শয়তানের। তেমনি বিধানও দুই প্রকার। মহান আল্লাহতায়ালার কোর’আনী বিধান ভিন্ন অন্য সকল বিধানই হলো শয়তানী বিধান। শয়তানী বিধানগুলিকেই দেশে দেশে সেক্যুলারিস্টগণ রাষ্ট্রীয় সংবিধান বলে অভিহিত করে। তাদের এ সংবিধানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর বিধানের বিরুদ্ধে প্রকট শত্রুতা। বরং সত্য তো এটাই, শয়তান ও তার অনুসারীদের যতটা শত্রুতা ঈমানদারের নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত নিয়ে, তার চেয়ে বহুগুণ অধিক হলো মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তি বিধানের বিরুদ্ধে। কারণ ঈমানদারের নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত কখনোই বেঈমানদের মিথ্যাচার, চুরি-ডাকাতি, গুম-খুন, মদ্যপান ও ধর্ষণের শাস্তি দেয় না, কিন্তু শরিয়তের বিধান দেয়। তাই মুসলিম দেশের অতি দুর্বৃত্ত শাসকও নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত বন্ধ করে না। মসজিদ-মাদ্রাসা গড়তেও বাধা দেয় না। কিন্তু তারা প্রকান্ড এক যুদ্ধ লড়তে প্রস্তুত শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখতে। এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে রাস্তায় নামলে তাদের কারারুদ্ধ করে বা ফাঁসিতে চড়ায়। এরই প্রমাণ, শেখ মুজিব ও তার অনুসারিদের শাসনামলের বাংলাদেশ। শেখ মুজিব ক্ষমতা হাতে পাওয়ার সাথে সাথে দেশের সকল ইসলামী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল এবং সে দলগুলির নেতাদের কারাগারে তুলেছিল। এবং মুজিব অপেক্ষা অধিক নৃশংস নীতি হলো শেখ হাসিনার। সে নৃশংস নীতি নিয়েই হাসিনা জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসিতে চড়িয়েছে এবং হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের ২০১২ সালের ৫’মে তারিখে মশামাছির ন্যায় হত্যা করেছে শাপলা চত্ত্বরে।
মুসলিম হওয়ায় কোন জবরদস্তি নাই। কিন্তু মুসলিম হলে তখন মৌলিক দায়বদ্ধতাটি হয়, আল্লাহর শরিয়তী বিধানের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য। এখানে আপোষ চলে না। আপোষ হলে সে আর মুসলিমই থাকে না। পবিত্র কোর’আনে সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে এরূপ অবাধ্যদের কাফের, জালেম ও ফাসেক বলা হয়েছে। অথচ সে অবাধ্যতা হচ্ছে বাংলাদেশে। তার প্রমাণ, বাংলাদেশের সংবিধানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শরিয়তের প্রয়োগ। এ সংবিধানে এমন অনেক বিধান বিধিবদ্ধ করা হয়েছে যা মেনে নেয়ার অর্থ, মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেয়া। অথচ ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু মহান আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বকে স্বীকার করা নয়। স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালনও নয়। বরং তাঁর সর্বসময় সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রতিপদে অনুগত থাকা। তিনি শুধু স্রষ্টা ও রেযেকদাতা নন; আইনদাতাও। ঈমানদারকে তাই প্রতিকর্মে তাঁর দেয়া সে শরিয়তি আইনকে মেনে চলতে হয়। ইবাদতের তথা মহান আল্লাহতায়ালার দাসত্বের মূল স্পিরিট তো এটাই। এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার বয়ান অতি সহজ-সরল। অথচ বাংলাদেশে সে পূর্ণাঙ্গ ইবাদতকে সাংবিধানিক ভাবে অবৈধ ও অসম্ভব করা হয়েছে। এভাবেই এ সংবিধাটি ব্যবহৃত হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের হাতিয়ার রূপে। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ জনগণ মুসলিম। অথচ মহান আল্লাহর সে সার্বভৌম ক্ষমতার স্বীকৃতি নেই বাংলাদেশের সংবিধানে। কোনরূপ মর্যাদাই দেয়া হয়নি তাঁর আইনকে। এমনকি সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাঁর উপর আস্থার ন্যায় মৌলিক বিষয়টিও। মহান আল্লাহতায়ালার সাথে এর চেয়ে বড় গাদ্দারি আর কি হতে পারে?
ঈমান ও ইবাদতের একটি সর্বব্যাপী রূপ আছে। মুসলিমকে শুধু আল্লাহ, আখেরাত, নবী-রাসূল, বিচার-দিন, জাহান্নাম-জান্নাত –এসব বিষয়ে ঈমান আনলে চলে না। তাকে মেনে চলতে হয় রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, আইন-আদালত ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সাথে সম্পৃক্ত বহু কোরআনী হুকুমকেও। ঈমান-আক্বিদার ন্যায় ঈমানদারের ধর্ম-কর্ম, আচরন, রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ সব কিছুতেই থাকতে হয় এক অভিন্ন সুর। থাকতে হয় এক অভিন্ন চেতনা। এবং সেটি তাওহিদের। আল্লাহ ও তাঁর দেয়া জীবন-বিধানের পূর্ণ আনুগত্যই ঈমানদারের জীবনের মূল মিশন। নানারূপ পেশা নিছক বেঁচে থাকার স্বার্থে, কিন্তু বাঁচার লক্ষ্যটি সে মিশনকে নিয়ে সামনে এগুনোর। তাই মুসলিম হওয়ার সাথে সাথে তাঁকে শুধু মুখে আল্লাহর দ্বীনের পক্ষ নিলে চলে না, সে দ্বীনের বিজয়ে জানমাল, মেধা ও শ্রমের বিনিয়োগও ঘটাতে হয়। প্রয়োজনে প্রাণও দিতে হয়। মুসলিমের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়াটি তাই বেঈমানী। ঈমানদার বরং ইসলামের বিজয়ে প্রবল এক পক্ষ রূপে আত্ম-বিনিয়োগ করে। একারণেই সে যেমন জাতীয়তাবাদের পক্ষ নেয় না, তেমনি পক্ষ নেয় না পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া অর্থনৈতিক বিধানের চেয়ে পুঁজিবাদী বা মার্কসীয় বিধান শ্রেষ্ঠ বা কল্যানকর -এটি বিশ্বাস করাই হারাম। এরূপ বিশ্বাসে মহান আল্লাহর প্রতি শুধু অসম্মানই হয় না, বরং তাতে উদ্ধত বিদ্রোহও ঘটে। আল্লাহর বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহে কি কোন ঈমানদার জড়িত হতে পারে? এ পথ তো জাহান্নামের। অথচ সে বিদ্রোহটি বাংলাদেশের সংবিধানে মৌল নীতি রূপে ঘোষিত হয়েছে।
ধর্ম-কর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনীতির ন্যায় মুসলিম দেশের সংবিধানেও ইসলামের প্রতিফলন ঘটাতে হয়। জীবনের প্রতিটি কথা ও আচরণকে কোর’আনের সাথে মিলিয়ে নিতে হয়। তাই মুসলমান ও কাফের –এ দুই ব্যক্তি একই দেশ ও একই মহল্লায় বসবাস করলেও তাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও আচরন একই রূপ হয় না। তেমনি একটি মুসলিম দেশ এবং একটি কাফের দেশের রাজনীতি,আইন-আদালত, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও শিক্ষা-সংস্কৃতি এক নয়। আর সে ভিন্নতর পরিচয়টি তো ফুটে উঠে দেশের সংবিধানেও। কিন্তু শেখ মুজিব ও তাঁর অনুসারিরা জাতিয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার ন্যায় মতবাদকে সংবিধানে সংযোজিত করেছিল বাংলাদেশের সে মুসলিম পরিচয়কে বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে। অথচ ইসলামে জাতিয়তাবাদী হ্ওয়া যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া। কারণ তাতে অসম্ভব হয় পরিপর্ণ ইসলাম পালন। তাছাড়া সংবিধানের বিধি-বিধান কোরআনী বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে মুসলিম দেশে বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত অনিবার্য। কারণ তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, আনুগত্যটি হবে কার? মহান আল্লাহর হুকুমের, না দেশের সংবিধানের? অথচ মুসলিম দেশে এরূপ প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়াটিই অনাকাঙ্খিত। এমন প্রশ্ন সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিমদের দেশে সাজে। কিন্তু এমন প্রশ্ন কেন মুসলিম দেশে দেখা দিবে? এটি তো ফিতনা। এমন ফিতনা কি রাষ্ট্রে শান্তি আনে? মহান আল্লাহতায়ালা ফিতনাকে হত্যার চেয়েও গুরুতর বলেছেন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল,এমন ফিতনা থেকে মুসলিম জনগণকে রক্ষা করা। মুসলিম দেশে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি স্রেফ অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়,রাজনৈতিক বা সামরিক শক্তির বৃদ্ধিও নয়। বরং সেটি দেশবাসীর সামনে আল্লাহ-প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকিমকে সুস্পষ্ট করা। সিরাতুল মোস্তাকিম চেনার কাজটি যথার্থ ভাবে না হলে, জনগণের পক্ষে তখন কঠিন হয়ে পড়ে জান্নাতের পথে চলা। অথচ বাংলাদেশে সে কাজটি যথার্থ ভাবে হয়নি। বরং সরকারি খরচে বাড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তি। ফলে বাড়ছে সিরাতুল মোস্তাকিম থেকে পথভ্রষ্টতা। এতে বাড়ছে ধর্ম নিয়ে বিভ্রাট; এবং অসম্ভব হচ্ছে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ও কোরআনের পূর্ণ অনুসরণ।
সংবিধান যেখানে দুর্বৃত্ত-শাসনের হাতিয়ার
স্বৈরাচারি শাসকগণ কখনোই পরিকল্পনাহীন, হাতিয়ারহীন বা বন্ধুহীনও নয়। সিদ্ধসাধনে তারা সব সময়ই একটি বিধিবদ্ধ পরিকল্পনা বা রোড ম্যাপ নিয়ে অগ্রসর হয়। সে বিধিবদ্ধ পরিকল্পনা বা রোড ম্যাপটিকেই তারা গঠনতন্ত্র বা সংবিধান বলে। সেটির মূল লক্ষ্য, অন্যদের উপর অর্জিত বিজয়কে শক্ত ভাবে ধরে রাখা। সে সাথে রাজনৈতিতক শত্রুদের সব সময় পরাজিত রাখা তথা তাদেরকে ক্ষমতার বলয় থেকে দূরে রাখা। সে সাথে কাকে শাস্তি দিতে হবে এবং কাকে শাস্তি দেয়া যাবে না –সেটিকেও সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা। এমন একটি সংবিধান হিটলার ও মুসোলিনিরও ছিল। অবিভক্ত ভারত ভূমি যখন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের দখলে যায়, তেমন একটি সংবিধান তাদেরও ছিল। সে সংবিধান অনুযায়ী এদেশে শত শত আদালত ছিল, বহুশত বিচারকও ছিল।বিচার-কার্য পরিচালনার জন্য শত শত বিধি-বিধানও ছিল। আইনের প্রয়োগের নামে তখন বিচারকদের মূল কাজ ছিল, ব্রিটিশের অর্থনৈতিক লুন্ঠন, রাজনৈতিক স্বার্থ ও সামরিক দখলদারিকে সুরক্ষিত করা।এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বা প্রতিবাদী ব্যক্তিদেরকে আদালতে তুলে বিচারের নামে শাস্তির ব্যবস্থা করা। এভাবে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষনের ধারাকে অব্যাহত রাখা।
স্বৈরশাসনের এসব বিচারকগণ যে পেশাদার দৃর্বৃত্ত -তা নয়। বরং সমাজে তাদের পরিচিতিটি শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান রূপে। কিন্তু তাদের বিবেচনায় ঔপনিবেশিক শাসন, লুন্ঠন, হ্ত্যা ও জুলুমবাজীর বিরুদ্ধে কথা বলা বা লেখালেখি করা গণ্য হয় শাস্তিযোগ্য সন্ত্রাস বা অপরাধ রূপে। আদালতের বিচারকগণ তখন কাজ করে স্বৈরাচারি শাসকের পুলিশ, জল্লাদ ও লাঠিয়ালদের পাশাপাশি তাদেরই সহযোগীরূপে।এরূপ হাজার হাজার বিচারক যেমন হিটলারের সাথে কাজ করেছে, তেমনি হালাকু ও চেঙ্গিজের ন্যায় ভয়ানক খুনিদের সাথেও কাজ করেছে। তাদের হাতে তরবারি বা লাঠি না থাকলেও ছিল কলম। সে কলমের খোঁচায় হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে তারা ফাঁসীতে ঝুলিয়েছে বা বধ্য ভূমির লাশ হতে বাধ্য করেছে। লক্ষণীয় হলো, সেসব দুর্বৃত্ত বিচারকদেরও সেদিন আদালতে মহামান্য বলার রীতি ছিল। তাদেরকে মান্য করার আইনগত বাধ্যবাধকতাও ছিল।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররাও লক্ষ্যহীন নয়। পরিকল্পনাহীন বা বন্ধুহীনও নয়। তাদের যেমন একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে এবং তেমনি রয়েছে সে লক্ষ্য পূরণে একটি সুস্পষ্ট রোড ম্যাপও। সে রোডম্যাপের অংশ রূপেই তারা ১৯৭২ সালে একটি উপযোগী সংবিধান তৈরী করেছিল। এবং সেটি শেখ মুজিবের নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডার,পুলিশ ও রক্ষিবাহিনীর সন্ত্রাসীদর দ্বারা শুধু রাজপথের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শেখ মুজিব আদৌ খুশি ছিল না। তাঁর লক্ষ্য ছিল, রাজনৈতিক বিপক্ষ শক্তিকে দমন করা বা নির্মূল করা; এবং সাংবিধানিক বিধি-বিধানের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বেড়ে উঠাকে অসম্ভব করা। কোন কিছুকে সংবিধানে বিধিবদ্ধ করার বাড়তি সুবিধাটি হলো, সেগুলির রক্ষায় তখন পুলিশ, আদালত ও সেনারাহিনীকে বৈধ ভাবে ব্যবহার করা যায়। শেখ মুজিবের পরিকল্পনা ছিল,নিজের ও তাঁর দলের স্বৈরাচারি শাসনকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখা। মুজিবের মনে ইসলামবৈরীতা এতটাই তীব্র ছিল যে, ভারতপন্থি, রুশপন্থি, চীনপন্থি ও নানারূপ শয়তানপন্থিদের রাজনীতির অঙ্গণে অংশ নেয়ার সুযোগ দিলেও ইসলামপন্থিদের রাজনীতিকে তিনি সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন। কেড়ে নিয়েছিলেন তাদের মৌলিক অধিকার। দণ্ডনীয় অপরাধ রূপে ঘোষিত করেছিলেন ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল গড়া বা রাজপথে নামাকে। কিন্তু তারপরও নিজ শাসনকে তিনি নিরাপদ ভাবতে পারেননি। সে দুর্ভাবনা নিয়ে ১৯৭৪ সালে এসে শুধু ইসলামপন্থিদের নয়, সকল বিরোধী দলীয় রাজনীতিকেই নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সংসদ সদস্য রূপে; কিন্তু নিজেকে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট রূপে। এজন্য জনগণের রায় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। সে কাজে তিনি সংবিধানকেও ইচ্ছামত পরিবর্তন করেছেন। খেলা শুরু হলে আর খেলার রুল পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না। নিজ দলের গুরুতর অপরাধীকেও তখন সে রুল অনুযায়ী লাল কার্ড দেখাতে হয়। কিন্তু শেখ মুজিব দেশের রাজনীতিকে খেলার চেয়েও তুচ্ছ বিষয়ে পরিনত করেছিলেন।বার বার তিনি রুল পাল্টিয়েছেন, এবং সেটি নিজ দলের অপরাধীদের লাল কার্ড না দেখিয়ে পুরস্কৃত করার স্বার্থে। সংবিধানে বার বার পরিবর্তন এনেছেন যাতে তাঁর একদলীয় বাকশালী শাসন দীর্ঘজীবী হয়। সংবিধান রচনায় শয়তানের পক্ষ নিলে এরূপ আচরণটি স্বাভাবিক। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া বিধানে সেরূপ রদবদলের সুযোগ নেই।
যে মহাবিপদ সেক্যুলার সংবিধানের
মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিম জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মতের মর্যাদা দিয়েছেন। তবে সেটি এজন্য নয় যে,তারা রাস্তাঘাট, কলকারখানা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়বে বা তাজমহল নির্মাণ করবে। বরং সেটি এজন্য যে,তারা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলে আপোষহীন হবে। পবিত্র কোরআনের ভাষায় মহান আল্লাহর সে ঘোষণাটি হল,“কুনতুম খায়রা উম্মাতিন উখরিজাত্ লিন্নাছ,তা’মুরুনা বিল মা’রুফি ও তানহাওনা আনিল মুনকার।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১১০)। অর্থঃ “তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য; তোমরা নির্দেশ দান কর সৎ কাজের এবং নির্মূল কর অন্যায়ের।” তবে সমস্যা হলো কোনটি অন্যায় আর কোনটি অন্যায় -সেটির নির্ণয় নিয়ে। সেটি নির্ণয় করে দিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালার তাঁর শরিয়ত বিধান দিয়ে। কিন্তু সেক্যুলার সংবিধান ও আইন অনুসরণ করলে সেটি অসম্ভব হয়। তখন জ্বিনা বা ব্যভিচারের ন্যায় অপরাধও বৈধ গণ্য হয়। তখন বাধাগ্রস্ত হয় মহান আল্লাহতায়ালার কাঙ্খিত সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রূপে বেড়ে উঠা। বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে এভাবেই সংঘটিত হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অপরাধটি। এতে ত্বরান্বিত হচ্ছে জাহান্নামের পথে চলা।
মানব ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ বা ক্ষতিগুলো কোন জন্তু-জানোয়ারের দ্বারা হয়নি। বরং হয়েছে দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারি শাসকদের হাতে। সেটি ঘটেছে নিজেদের গড়া আইনের শাসন ও সংবিধানের নামে। খুনির হাতে একজন বা কয়েক জন মানুষ নিহত হয়, কিন্তু স্বৈরাচারি শাসকের হাতে নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। তখন ছিনতাই হয় সমগ্র দেশবাসীর স্বাধীনতা। অথচ মানব জীবনে স্বাধীনতা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সেটি বাঁচাতেই আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হয়। এবং সে যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশ শুধু বিদেশী শত্রুর হাতেই অধিকৃত হয় না, দেশী শত্রুরাও হাজির হয় বর্বর স্বৈরাচারি শাসক রূপে। অভিন্ন কৌশল উভয়েরই। জার্মানীদের জীবনে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় এসেছিল তো স্বদেশী শাসকের হাতে। হিটলারের আমলে জার্মানীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন কম হয়নি, কিন্তু তাতে মানবতা বাঁচেনি। প্রাণে বেঁচে থাকার যে ন্যূনতম মৌলিক অধিকার সেটিও সেদিন রক্ষা পায়নি। জ্যান্ত মানুষকে তখন দলে দলে গ্যাস চেম্বারে যেয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহর বিধান যদি জীবনের রোডম্যাপ রূপে গৃহিত হয়, ইতিহাসটি তখন ভিন্নতর হয়। সেটি দেখা গিয়েছিল আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে। তখন মুসলিমদের হাতে সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। এবং সেটি তাজমহল বা পিরামিড গড়ার মধ্য দিয়ে নয়। রাস্তাঘাট বা কলকারখানা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়েও নয়। বরং মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে। দিয়েছিল সকলকে নিজগুণে বেড়ে উঠার স্বাধীনতা। দিয়েছিল সমতার বিধান। খলিফার উটের পিঠে বসেছে তার চাকর, আর খলিফা সে উঠের রশি ধরে সামনে হেঁটেছে। নারীরা পেয়েছিল পুরুষের সমান অধিকার। শাসক ও প্রজা তখন একই সারিতে জায়নামাজে দাঁড়াতো। অথচ স্বৈরশাসকেরা নিজেদের গদি বাঁচানোর গরজে সে মৌলিক মানবিক অধিকার কেড়ে নেয়। কেড়ে নেয় বাক স্বাধীনতা ও সংগঠন গড়ার স্বাধীনতা। বাংলাদেশে সেটি করেছে শেখ মুজিব ও তার অনুসারিগণ।
সংবিধান-অবমাননা বনাম আল্লাহর অবাধ্যতা
শয়তানের প্রধান এজেন্ডা, মানব সমাজে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে অবাধ্যতা বাড়ানো। কোন দেশ সেক্যুলারিস্টদের দখলে গেল সে অবাধ্যতাটি তখন সাংবিধানিক বিধানে পরিণত হয়। বাংলাদেশ তারই উদাহরণ। দেশটিতে সংবিধানের অবমাননা নিয়ে সচারচারই প্রশ্ন উঠে। যেন সংবিধান একটি পবিত্র বিষয়। অথচ যখন মহান আল্লাহতায়ালার কোর’আনী বিধানের অবমাননা হয় তখন সে প্রশ্ন উঠে না। প্রশ্ন হলো, সংবিধানের যে ধারাগুলো মুজিবামলে বা পরবর্তীতে বিলুপ্ত হয়েছে, সেগুলির প্রতি সংশোধনের নায়কদের কি সামান্যতম সন্মান ছিল? থাকলে সেগুলো বিলুপ্ত হলো কেন? সেরূপ বিলুপ্তিতে কি সংবিধানের অবমাননা হয়নি? বহু বিলুপ্তযোগ্য বিধান যে এখনও সংবিধানে থাকতে পারে, সেটি নিয়েও তো প্রশ্ন উঠতে পারে। বিরোধী দলীয় কোন কোন নেতা সংবিধানের সে সব বিধানকে আবর্জনার স্তুপে ফেলার কথা বলছেন –তা তো এরই প্রেক্ষিতে। কিন্তু ইসলামের বিপক্ষীয় দলগুরি সংবিধানের ত্রুটি নিয়ে অন্যদের কথা বলতে দিতে রাজী নন। সেটিকে অভিহিত করছেন সংবিধানের অবমাননা রূপে। প্রশ্ন হলো, সংবিধানের ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা যদি সংবিধানের অবমাননা হয়, তাহলে সংবিধানের বহু বিধানকে যারা আস্তাকুঁরে ফেলেছে -তাদেরকে কি বলা যাবে? বর্তমান সরকার সংবিধানে বার বার সংশোধন এনেছে নিজেদের রাজনৈতিক প্রয়োজনে। তারা চায়, সংবিধান অক্ষত থাকুক তার ক্ষত-বিক্ষত চরিত্র নিয়েই। কারণ, নিজেদের রাজনৈতিক প্রকল্পের বাস্তবায়নে এ সংবিধানকে তারা অপরিহার্য ভাবে। শেখ হাসিনা ভেবেছেন,জাতির পিতা রূপে তার পিতার স্মৃতিকে স্থায়ী করার এটাই একমাত্র পথ। সেটি রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক সঙ্গিতকে জাতীয় সঙ্গিত রূপে চালু রাখার প্রয়োজনে। আরো লক্ষ্য, শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকে সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ রাখা। এগুলি নিশ্চিত করতেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সংবিধানের কোন কোন বিধানকে আর কোন সময়ই সংশোধন করা যাবে না। যে সংবিধান জন্ম থেকেই নানা জনের দ্বারা পদদলিত হল এবং আস্তাকুঁরে নিক্ষিপ্ত হল এর বহু বিধান -সেটির প্রতি এরূপ প্রগাঢ় ভক্তির কারণ তো এটাই।
পৌত্তলিক ধর্মে পুতুল নির্মাতাগণ তাদের নিজহাতে তৈরী পুতুলকে পবিত্র ও পুজনীয় মনে করে। সেটি ধর্ম বাঁচানোর তাগিদে। অনুরূপ অবস্থা এসব সেক্যুলারদেরও। তারা চায়, তাদের নির্মিত সংবিধান বেঁচে থাকুক। এবং জনগণকে এটিকে মান্যতা দিক। সংবিধানের সমালোচনা বা সংশোধনীর যে কোন উদ্যোগকে তারা অভিহিত করছে সংবিধানের অবমাননা বলে। এখানে ভক্তি সংবিধানের প্রতি নয়, গরজটি নিজেদের রাজনৈতিক বিশ্বাস ও দুর্বৃত্ত শাসন বাঁচানোর। শেখ মুজিব তাঁর বাকশালী সংবিধানকেও পবিত্র বলতেন। অথচ মুসলমানের কাছে একমাত্র পবিত্র ও সম্মানিত গ্রন্থটি হল আল কোরআন।একমাত্র এ কোরআনী বিধানেই কোন পরিবর্তন আনা যায় না।পবিবর্তনের উদ্যোগ নিলে সে ব্যক্তি মুসলিম থাকে না। অথচ আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার বিদ্রোহটি লাগাতর। কিন্তু সে বিদ্রোহটি নিজ হাতে গড়া সংবিধানের বিরুদ্ধে হতে দিতে রাজী নয়। আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে নিজেদের রচিত সংবিধান গণ্য হচ্ছে অলংঘনীয় দলিল রূপে। অথচ আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের দমনে সেক্যুলার রাজনৈতিক কর্মীর ন্যায় দেশের পুলিশ বাহিনী, আদালতের বিচারক ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাথা ব্যথা নেই । বরং তারাও অতন্দ্র প্রহরীতে পরিনত হয়েছে এ সেক্যুলার সংবিধানের। অথচ তারা প্রতিপালিত হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের রাজস্বের অর্থে। বাংলাদেশের ন্যায় ১৭ কোটি মুসলিমদের দেশে ইসলামের পরাজয়কে দীর্ঘায়ীত করতে এরপরও কি কোন বিদেশী শত্রুর প্রয়োজন আছে? ১ম সংস্করণ ৩১/০৭/১১; ২য় সংস্করণ।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018