ইসলামপন্থীদের চেতনায় সেক্যুলারিজম এবং ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যর্থতা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

গাদ্দারী মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে

ইসলাম ব্যক্তির মাঝে আমূল বিপ্লব আনে। সেটি তাঁর বিশ্বাস, দর্শন, কর্ম, আচরন ও বাঁচবার তাড়নার মাঝে। কে কতটা মুসলিম -সেটি বুঝা যায় সে বিপ্লবের গভীরতা দেখে। কেন সে বাঁচবে এবং কিরূপে সে বাঁচবে -ইসলাম সে প্রশ্নের জবাব যেমন দেয়, তেমনি ঈমানদারকে গড়ে তোলে মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ, তাঁর থেকে মাগফিরাত লাভ এবং জান্নাত লাভের যোগ্য রূপে। একমাত্র সে লক্ষ্য অর্জনের মাঝেই সে জীবনের প্রকৃত সাফল্য। নইলে অনিবার্য হয় জীবনের ব্যর্থতা। সে লক্ষ্য অর্জনে ঈমানদারের বাঁচার মূল এজেন্ডাটি হয়, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে পুরোপুরি একাত্ম হওয়া। পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার সে মহান এজেন্ডাটি হলো: তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তী আইনের প্রয়োগ, দুর্বৃত্তির নির্মূল, সুবিচারের প্রতিষ্ঠা এবং দ্বীন হবে একমাত্র তারই মনোনীত ইসলাম।                                    

মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাঁর বাঁচার এজেন্ডা। জীবন সফল হবে না, পুরোপুরি বিফল হবে -সেটি নির্ভর করে সঠিক এজেন্ডা বেছে নেয়ার উপর। সে এজেন্ডাটিই পদে পদে পথ দেখায়। এবং বলে দেয়, কেন সে বাঁচবে, কেন সে প্রাণ দিবে, কেন সে যুদ্ধ করবে? এবং দেখিয়ে দেয় কোন পক্ষকে বিজয়ী করতে সে যুদ্ধ করবে? অথচ অধিকাংশ মানুষ এক্ষেত্রটিতেই সবচেয়ে বড় ভূলটি করে। সে ভূলের কারণে অধিকাংশ মানুষ বাঁচে, যুদ্ধ করে এবং নিজের সর্বশ্রষ্ঠ সামর্থ্যকে বিনিয়োগ করে ভূল এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে। এদের কারণেই নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় স্বৈরাচারি জালেম শাসকগণও যুগে যুগে বিপুল সংখ্যক অনুগত সৈনিক পেয়েছে। এমন কি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ পেয়েছে তাদের জন্য লড়াইয়ের জন্য ১০ লাখ আরব এবং আড়াই লাখ ভারতীয় মুসলিম সৈনিক। কে প্রকৃত ঈমানদার এবং কে কাফির বা মুনাফিক -সেটি ব্যক্তির নাম, পদবি, দাড়ি-টুপি, পোষাক-পরিচ্ছদ থেকে চেনা যায় না। এমন কি নামাজ-রোজা এবং হজ্জ-যাকাতের মাঝেও সেটি ধরা পড়ে না। সেটি নির্ভুল ভাবে ধরা পড়ে তাঁর বাঁচার এজেন্ডার মাঝে। নামাজ-রোজা এবং হজ্জ-যাকাত তো অনেক কাফির, মুনাফিক, ফাসিক, জালিম, সূদখোর, ঘুষখোর এবং স্বৈরচারি দুর্বৃত্তও  পালন করে। মু’মিনের পরিচয় হলো, সে শুধু নির্ভুল ঈমান-আক্বীদা নিয়েই বাঁচে না, বাঁচে নির্ভুল এজেন্ডা নিয়েও। কারণ, কিরূপে প্রকৃত ঈমানদার হতে হয় -মু’মিন সেটি জানে পবিত্র কুর’আন থেকে। তেমনি কোন এজেন্ডা নিয়ে বাঁচতে হয় -সেটিও সে শেখে পবিত্র কুর’আন থেকে। কারণ মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলি মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর মু’মিন বান্দার সীমিত সামর্থ্যের উপর ছেড়ে দেননা। তিনি পথ দেখান। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সে এজেন্ডাটি ঘোষিত হয়েছে সুরা আন’য়ামের ১৬২ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ

অর্থ: “বল (হে মহম্মদ) আমার নামাজ, আমার কুর’বানী, আমার বেঁচে থাকা ও আমার মৃত্যু -এসব কিছুই রাব্বুল আ’লামীন তথা বিশ্বপ্রতিপালকের জন্য।”

এজন্য যে ব্যক্তি প্রকৃত ঈমাদার -সে কখনোই কোন জালেমের বা কাফিরের এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে যুদ্ধ করে না। বরং তাঁর জীবনের মূল মিশন হয়, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। সে লক্ষ্য পূরণে  মু’মিন ব্যক্তি মাত্রই তাঁর নিজের জান, মাল, মেধা ও রক্তের বিনিয়োগ করে। এজন্যই মু’মিনের জীবনে জিহাদ অনিবার্য কারণেই এসে যায়। যেদেশে এমন ঈমানদার মানুষের সংখ্যা বেশী সেদেশে ইসলাম বিজয়ী হয়; এবং বিলুপ্ত হয় দুর্বৃত্তদের শাসন। এবং প্রতিষ্ঠা পায় ইসলামী রাষ্ট্র। কিন্তু যে দেশে ইসলামী রাষ্ট্র নাই, এবং সেরূপ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদও নাই -বুঝতে হবে সেদেশে জনগণের মূল ব্যর্থতাটি হলো প্রকৃত ঈমানদার রূপে বেড়ে ঊঠায়। ব্যর্থতা এখানে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হওয়ায়। এমন দেশে  মসজিদ, মাদ্রাসা এবং নামাজী-রোজাদের সংখ্যা যত বিশালই হোক -তাতে জনগণের ঈমান ধরে পড়ে না। বুঝতে হবে, এমন দেশে বিজয় শয়তান ও তার অনুসারীদের। বুঝতে এমন দেশের মানুষ নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দিলেও তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ও নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলাম নিয়ে বাঁচা। বস্তুত যে কর্ম, যে ভাবনা, যে রাজনীতি, যে বুদ্ধিবৃত্তি ও যে যুদ্ধ-বিগ্রহে মহান আল্লাহতায়ার এজেন্ডার সাথে কোন রূপ একাত্মতা নাই এবং তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার তাড়নাও নাই -বুঝতে হবে সেটিই হলো নিরেট সেক্যুলারিজম। সেটি পথভ্রষ্টতা। তাড়না এখানে পার্থিব স্বার্থপূরণের যুদ্ধ নিয়ে নিয়ে বাঁচার। তেমন একটি তাড়না নামাজী, রোজাদার, হাজী, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, পীর ও মাদ্রাসার মোহাদ্দেসদের মাঝেও দেখা যায়। মহান আল্লাহতায়ার এজেন্ডা হলো তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা দেয়া। কিন্তু যে ব্যক্তি তাঁর সার্বভৌমত্ব ও আইনকে বাদ দিয়ে কোন রাজা বা পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব ও কুফরি আইনের প্রতিষ্ঠা দেয় -তাকে কি মুসলিম বলা যায়? তেমনি মহান আল্লাহতায়ার এজেন্ডা হলো মুসলিমদের মাঝে একতাকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। কিন্তু যারা গোত্র, ভাষা ও ভূগোলের নামে মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে এবং সে বিভক্ত মানচিত্র নিয়ে উৎসব করে -তাদেরকে কি মুসলিম বলা যায়? জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, সমাজতন্ত্র, স্বৈরাচার ও রাজতন্ত্রের মাঝে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা পূরণে কোন সুযোগ থাকে না। তাই কোন ঈমানদার সেগুলির প্রতিষ্ঠার রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে অংশ নেয় না। সেটি হারাম। এবং হারাম যাদের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই -তাদের নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের কোন মূল্য থাকে কি? অথচ বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশের জনগণ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীগণ জড়িত এমন হারাম রাজনীতির সাথে। গাদ্দারী এখানে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে। মুসলিমদের আজকের ব্যর্থতার মুল কারণ এই গাদ্দারী।    

 

ইসলামপন্থী শিবিরে সেক্যুলারিজম                                                                         

মোল্লা-মৌলভী, পীর-দরবেশ ও টুপি-দাড়িধারী ব্যক্তিগণ কোন রাজনীতি গড়ে তুললেই সেটি ইসলামী হয়না। সেটি নিরেট সেক্যুলার এবং ধর্মব্যবসাও হতে পারে। যে রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও লড়াইয়ে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদ নাই -সেটিই হলো সেক্যুলারিজম।  সেক্যুলারিস্ট হওয়ার অর্থ, ইসলামী বিধানকে বিজয়ী করার রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও যুদ্ধ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। ইসলাম আখেরাতের কল্যাণের কথা বলে; কিন্তু সেক্যুলারিস্টগণ বাঁচে পার্থিব কল্যাণের ভাবনা ও কর্মকান্ড নিয়ে। তাই সেক্যুলারিস্টদের অনেককে কুর’আন পাঠ, নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালনে দেখা গেলেও তারা জিহাদে যোগ দেয়না। কারণ, জিহাদে থাকে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা যুদ্ধ। কিন্তু তারা সে পথে হাঁটতে রাজী নয়। বরং তারা বাঁচে নিজের, নিজ গোত্রের, নিজ জাতির বা নিজ দলের স্বপ্ন পূরণের এজেন্ডা নিয়ে। সেরূপ সেক্যুলার  লক্ষ্য পূরণে তারা যুদ্ধ করতে, এমন কি প্রাণ দিতেও রাজী। তারা সে লক্ষ্য অর্জনে গণহত্যাও সংঘটিত করে। অথচ এরাই ইসলামকে বিজয়ী করার পবিত্র জিহাদকে সন্ত্রাস বলে। এমনকি সেটিকে মধ্যযুগীয় বর্বরতাও বলে। তাদের চরিত্রের মূল বৈশিষ্ঠ হলো, তাদের জীবনে রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ থাকলেও সেটি কখনোই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লক্ষে নয়। বরং স্বার্থ হাছিলের সুযোগ দেখলে এরা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি সাধনে কাফির শক্তির সৈনিক বা তাদের পার্টনারে পরিণত হয়। ইসলামচ্যুৎ এরূপ সেক্যুলারিস্টদের ১৯১৭ সালে দেখা গেছে উসমানিয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং ব্রিটিশ বাহিনীকে বিজয়ী করতে। নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করলেও তাদের কাছে গুরুত্ব পায়না মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, তাঁর শরিয়তী আইন, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। এমন সেক্যুলারিস্টদের সংখ্যাটি যেদেশে বিশাল, সেদেশে মসজিদে, পীরের দরবারে, ওয়াজ মাহফিলে ও তাবলিগী এজতেমায় বিপুল লোকসমাগম দেখা গেলেও ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের লড়াই’য়ে সৈনিক মেলে না। অন্যান্য মুসলিম দেশের ন্যায় বাংলাদেশের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে প্রবল জোয়ারটি হলো এই সেক্যুলারিজমের। এ জোয়ার হানা দিয়েছে এমনকি তাদের শিবিরেও যারা নিজেদের ইসলামপন্থী রূপে দাবী করে।

ইসলামপন্থী দলগুলির নেতাকর্মীদের উপর সেক্যুলারিজমের প্রভাবটি চোখে পড়ার মত। তাদের উপর প্রভাব সৃষ্টির কাজটি যেমন বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থীদের হাতে। বামপন্থী বহু লেখক ও কলামিস্ট এখন ইসলামপন্থীদের মালিকাধীন পত্র-পত্রিকাগুলিকে নিজেদের মতামত প্রকাশের বাহন রূপে ব্যবহার করে। তারা সে কাজটি করছে বিশেষ একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে। সেটি হলো, ইসলামী দলগুলির নেতাকর্মী ও দেশের মুসলিম জনগণকে সেক্যুলারিজমে দীক্ষা দেয়া। এভাবে তাদেরকে দূরে সরাচ্ছে ইসলামের মূল মিশন থেকে। এটি হলো সেক্যুলারিস্টদের চিরাচরিত বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ। এ যুদ্ধে তাদের বিজয়টি বিশাল। এ বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে মূল পরাজয়টি ইসলামপন্থীদের। ইসলামপন্থী দলগুলির নেতাকর্মীদের উপর সেক্যুলারিস্টদের বিজয় কতটা প্রবল -সেটি স্পষ্ট বুঝা যায় একাত্তর প্রসঙ্গে তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত নতুন বয়ান শুনে -যা মূলত সেক্যুলারিস্টদের বয়ান। ফলে ইসলামপন্থীদের মুখে একাত্তরে যে বয়ানটি শোনা যেত, সেটি এখন আর তাদের মুখ থেকে শোনা যায় না। সেদিন তাদের মুখে প্যান-ইসলামের কথা শোনা যেত। জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজম হারাম গণ্য হতো। সত্য সব সময়ই সত্য। সত্য পরাজিত হতে পারে, কিন্তু কখনোই রূপ পাল্টায় না। বরং পাল্টে যায় সত্যবিবর্জিত স্বার্থান্বেষী মানুষ। যুগে যুগে এরাই একই ঘটনা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বয়ান খাড়া করে।

একাত্তরে দুটি পক্ষ ছিল। এক পক্ষে ছিল ভারত এবং ভারত-অনুগত বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্ট পক্ষ। অপর পক্ষে ছিল ইসলামী পক্ষ -যারা ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে। কোন যুদ্ধেই উভয় পক্ষই বিজয়ী হয় না। বিজয়ী হয় মাত্র একটি পক্ষ। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, একাত্তরে সামরিক, রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিজয়টি ছিল ভারতের এবং ভারত-অনুগত বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের। এবং পরাজয়টি ছিল পাকিস্তানের ও ইসলামপন্থীদের। যেমন ১৯১৭ সালে আরব বিশ্বে বিজয় লাভ ঔপনিবেশিক ইংরেজ বাহিনী ও ইংরেজদের সাহায্যপুষ্ট আরব জাতীয়তাবাদীরা। ফলে পরাজিত হয়েছিল খলিফার বাহিনী এবং তাতে আরব ভূ-খণ্ড খণ্ডিত হয়েছে ২২ খণ্ডে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, ইসলামপন্থী দলগুলির নেতা-কর্মীগণ নিজেদের একাত্তরের সে শোচনীয় পরাজয়কে আজ বিজয় রূপে প্রচার করে থাকে। সেটি বুঝা যায়, বছর ঘুরে ১৬ ডিসেম্বর এলে। এ দিনটিতে কোন কোন ইসলামী দল ও তাদের ছাত্র সংগঠন ঢাকার রাস্তায় বিশাল বিশাল বিজয় মিছিল বের করে। যে কোন সেক্যুলার দলের তুলনায় তাদের সে মিছিলগুলি বৃহৎ। মিছিলে স্লোগান দেয়া হয়, “স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো”। যেন একাত্তরের বিজয় তারাই এনেছে। অথচ সেসব মিছিলে ইসলামকে বিজয়ী করা ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে স্লোগান তোলা হয় না।

সদা সত্য বলা অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সত্য কথা বলার মধ্য দিয়েই শুরু হয় জান্নাতের পথে চলা। ঈমানদারকে তাই প্রতি পদে সত্যের পক্ষে এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে বাঁচতে হয়। সে সাক্ষদানের মাঝেই প্রকৃত ঈমাদারী। এখানেই ঈমানের মূল পরীক্ষা। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাতের মূল কাজ তো ঈমানদারের মাঝে সত্যের পক্ষে লাব্বায়েক বলার সামর্থ্য সৃষ্টি করা। যাদের মাঝে সে সামর্থ্য সৃষ্টি হয়, তারাই জিহাদে নামে নিজের রক্ত দিয়ে সাক্ষ্য দিতে। মিথ্যা বলা এবং মিথ্যার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া মহা পাপ। মিথ্যার এ পথটি হলো জাহান্নামের পথ। মানুষকে মিথ্যাচারী বানানোই শয়তানের এজেন্ডা। তখন সফল হয় বনি আদমকে জাহান্নামে নেয়ার শয়তানের প্রজেক্ট। সে প্রজেক্ট সফল করতে শয়তান বাজারে বহু মিথ্যা বয়ান ছাড়ে। বাংলাদেশের বাজারে তেমন এক বয়ান হলো একাত্তরের ৩০ লাখ নিহতের বয়ান। সে বয়ান এখন বাঙালির মুখে মুখে। এমনকি বহু আলেম ও ইসলামপন্থীদের মুখেও। সে বয়ানের গ্রহনযোগ্যতা থেকে বুঝা যায় বাংলাদেশের শয়তান ও তার অনুসারীদের বিজয় কত বিশাল। অথচ ভয়ানক পাপ হলো মিথ্যায় স্রোতে ভেসে যাওয়া। এরূপ স্রোতে ভাসা লোকেরা কি কখনো ঈমানদার হতে পারে? এরূপ ভেসে যাওয়ার মাঝে কাজ করে অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর স্বার্থপরতা। এরূপ পার্থিব স্বার্থপরতাই হলো সেক্যুলারিজম। অথচ আজ শুধু ভেসে যাওয়াই হচ্ছে না, মিথ্যার বিজয় তথা ইসলামের শত্রুশক্তির বিজয় নিয়ে উৎসবও করা হচ্ছে! এবং সেটি তথাকথিত ইসলামপন্থীদের পক্ষ থেকে।

 

যা হারাম তা চিরকালের জন্যই হারাম

প্রশ্ন হলো, কোন মুসলিম দেশ ভাঙ্গা কি উৎসবের বিষয়? ঘর ভাঙ্গার ন্যায় দেশ ভাঙ্গাও হারাম। কারণ তাতে মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হয়। তই মুসলিমদের বিভক্তি নিয়ে কি কোন মুসলিম বিজয় মিছিল করে? সেটি তো কাফির শত্রুদের কাজ। মুসলিম ভূমির ভৌগলিক বিভক্তি তো মহান আল্লাহতায়ার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। সে বিদ্রোহ নিয়ে আবার উৎসব? এটি সত্য যে মুসলিম বিশ্ব আজ ৫০’য়ের বেশী খণ্ডে বিভক্ত। কিন্তু সে বিভক্তি বেঁচে আছে বলেই মুসলিম দেশ ভাঙ্গার হারাম কাজ কখনো হালাল হয়ে যায়না। হাজার হাজার মুসলিম নামধারী ব্যক্তি মদ খায়। বহু লক্ষ ভন্ড মুসলিম সূদ খায়, ঘুষ খায় এবং বেশ্যালয়েও যায়। কিন্তু সে জন্য মদ, সূদ, ঘুষ ও জ্বিনা হালাল হয়ে যায়নি। আরব জাতীয়তাবাদী ও গোত্রবাদীরা খেলাফত ভেঙ্গে ২২টি আরব দেশ গড়েছে। সে জন্য কি মুসলিম দেশ ভাঙ্গার জাতীয়তাবাদী ও গোত্রবাদী রাজনীতি হালাল হয়ে যায়? হারাম রাজনীতি চিরকালের জন্য হারাম। তাই মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি নবীজী (সা:) ও সাহাবাদের যুগে যেরূপ হারাম ছিল, আজও সেরূপ হারাম। তাই সেদিন আরব, ইরানী, তুর্কি, কুর্দি, আফগানী ও মুর -এরূপ নানাভাষী মুসলিমগণ এক রাষ্ট্রে বসবাস করেছে। ভাষা ও অঞ্চলের নামে তারা বিভক্ত হননি। ফলে তারা বিশ্বশক্তির মর্যাদা পেয়েছেন। এটিই গৌরব ও স্বাধীনতার পথ।

বিভক্তির হারাম রাজনীতি কখনোই ঈমানদারের রাজনীতি হতে পারে না। সে নিষিদ্ধ রাজনীতির বিজয় দেশে দেশে যত বিশালই হোক -তা নিয়ে কোন ঈমানদার ব্যক্তি উৎসব করতে পারেনা।  এমন উৎসবে খুশি হয় শয়তান ও তার অনুসারীগণ। ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার নামে গড়ে তোলা বিভক্ত মানচিত্র নিয়ে জাতীয়তাবাদী ও গোত্রবাদী সেক্যুলারিস্টগণ উৎসব করবে -সেটি স্বাভাবিক। কারণ সেটিই তাদের রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজী। সেটি তাদের কাছে উৎসবের বিষয়ও। কিন্তু তাদের সে বিজয় কি ঈমানদারদের কাছেও উৎসবের বিষয়? একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজকে সকল ইসলামী দল ও সকল আলেমের কাছে হারাম গণ্য হয়েছিল। তা নিয়ে সে সময়ের প্রখ্যাত আলেমগণ ফতওয়াও দিয়েছিলেন। সে সময়ের পত্রিকাগুলি তার সাক্ষী।  সে হারাম কাজ আজ হালাল ও উৎসবযোগ্য হয় কি করে?

ইসলামের বিরুদ্ধে বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থীদের শত্রুটা আদৌ কোন গোপন বিষয় নয়। নিজেদের সে পুরনো মিশন থেকে তারা এক ইঞ্চি দূরে সরে নাই, বরং সব সময়ই তাদের লক্ষ্য অন্যদেরকে তাদের পথে টানার। সেটির প্রমাণ বহু। সম্প্রতি তাদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য প্রকাশেরর মঞ্চে পরিণত হয়েছে দৈনিক নয়া দিগন্তের ন্যায় ইসলামপন্থীদের পত্রিকা। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত বামপন্থী লেখক ফরহাদ মাজহারের একটি প্রবন্ধ থেকে উদাহরণ দেয়া যাক। তিনি লিখেছেন, “এ কালে ইসলামসহ ধর্মের কোন পর্যালোচনা বা গঠনমূলক ভূমিকা থাকতে পারে -আমরা তা মনে করি না। আমি সব সময়ই এই রাজনীতির বিরোধিতা করে এসেছি।” –(সংকট পেরুবো কিভাবে? ০১/০৩/২০১৫)। এটি তো সাংঘাতিক কথা। উক্ত নিবন্ধে ফরহাদ মাজহার ইসলামের ভূমিকার ব্যাপারে একাল ও সেকালের মাঝে বিভাজন টেনেছেন এবং একালে ইসলামের কোন ভূমিকা থাকতে পারে -সেটি তিনি অস্বীকার করেছেন। শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে এমন কোন ব্যক্তি কি এরূপ কথা বলতে পারে? বললে কি তার ঈমান থাকে? এ তো বিশুদ্ধ বেঈমানীর কথা। অথচ এই  আত্মস্বীকৃত বেঈমানকে দৈনিক নয়া দিগন্ত তার মতপ্রকাশের জন্য মুক্ত মঞ্চ দিয়েছে।    

ইসলাম হলো মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত শ্বাশ্বত বিধান –সেটি যেমন সেকালের জন্য, তেমনি একালের জন্যও। তাই কালের প্রবাহে এ কুর’আনী বিধান তামাদি তথা বাতিল হওয়ার নয়। পবিত্র কুর’আন নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতে যেমন পথ দেখায়, তেমনি পথ দেখায় রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও আইন-আদালতের ন্যায় জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে। মহান আল্লাহতায়ালার এরূপ ইসলামী নির্দেশনাকে কোন ঈমানদার ব্যক্তি কি ক্ষণিকের জন্যও অমান্য করতে পারে? সে কুর’আনী বিধানের প্রয়োগকে কি সীমিত করা যায় কালের সীমারেখায়? সেটি করলে সে ব্যক্তি কি মুসলিম থাকে? অথচ ইসলামের চিহ্নিত শত্রুপক্ষের ন্যায় ফারহাদ মাজহারও রাজনীতির ময়দানে ইসলামের জন্য আধুনিক যুগে কোন স্থান ছেড়ে দিতে রাজি নন। ইসলামের সকল শত্রুগণ তো সেটিই চায়। আর সে ঘোষণাটি তিন দিয়েছেন “নয়া দিগন্ত” য়ের ন্যায় ইসলামপন্থীদের পত্রিকায়। ইসলামপন্থীদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি যুদ্ধ লড়ছেন ইসলামের বিরুদ্ধে। অথচ ফারহাদ মাজহার শুধু বামপন্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক গুরু নন, তিনি গুরু বহু ইসলামপন্থীদেরও। ইসলামের শত্রু-মিত্রদের চিনতে এতো অজ্ঞতা নিয়ে কি ইসলামকে বিজয়ী করা যায়? ইসলামকে বিজয়ী করার যুদ্ধে কি মঞ্চে এমন লোকদের খাড়া করতে হবে? 

 

সেক্যুলারিজমের সংক্রমণ দেওবন্দী ফেরকায় ও তাবলিগ জামায়াতে

সেক্যুলারিস্টদের এজেন্ডা অতি সুস্পষ্ট। তারা রাজনীতি, প্রশাসন, আইন-আদালত ও শিক্ষা-সংস্কৃতির অঙ্গণে ধর্মের কোন দখল দিতে রাজী নয়। এখানেই হলো সেক্যুলারিস্টদের সাথে মু’মিনদের মূল দ্বন্দ। রাষ্ট্র হলো পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ছাড়া কোন ধর্ম বা মতবাদের বিজয় বা প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। তাই রাষ্ট্রকে যেমন সেক্যুলারিস্টগণ নিজ দখলে রাখতে চায়, তেমনটি চায় ইসলামে পক্ষের শক্তিও। এখানেই সেক্যুলারিস্টদের সাথে ইসলামপন্থীদের চিরকালের শত্রুতা ও লড়াই। আজ মুসলিম দেশগুলিতে মহান আল্লহতায়ালার রাজনৈতিকএজেন্ডা, তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন পরাজিত। এ পরাজয়ের কারণ, মসজিদ-মাদ্রাসার কমতি নয়। নামাজী ও রোজাদারের কমতিও নয়। বরং সে পরাজয়ের কারণ, তারা ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রের উপর দখল জমাতে এবং রাষ্ট্রের ড্রাইভিং সিট নিজ হাতে নিতে। একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া সবগুলি মুসলিম রাষ্ট্রই অধিকৃত ইসলামের শত্রু পক্ষের হাতে। তারা রাষ্ট্রের উপর দখলদারী নিয়ে ভাবে না। তারা মসজিদের ইমামতি এবং মাদ্রাসায় শিক্ষকের দায়িত্ব পেলেই খুশি। এর বাইরে তারা বেশী কিছু চায় না, বেশী কিছু ভাবেও না।  

তাবলিগ জামায়াতের লোকেরা চায়, মাগরিব বা এশার নামাজের পর মসজিদের মেঝেতে বসে ফাজায়েলে আমল পাঠ, মহল্লায় গাশত এবং বছরে একবার বিশ্ব ইজতেমার সুযোগ। সেগুলি পেলেই তারা সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রাষ্ট্র কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে তারা ভাবে না। সংবিধান থেকে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর আস্থা এবং দেশের আদালত থেকে শরিয়তী আইন বিলুপ্ত হলেও তা নিয়ে তাদের কোন ক্ষোভ নাই। মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, স্কুলে কুর’আন শিক্ষা এবং আদালতে শরিয়ত প্রতিষ্ঠা নিয়ে তারা কোন দিনও কোন দাবী তুলেনি। তা নিয়ে তারা কোন আন্দোলানও করে না। জনগণের ভোটের অধিকার ও স্বাধীন ভাবে কথা বলার অধিকার হরণ করা হলেও তা নিয়ে তাদের মুখে কোন প্রতিবাদ নাই। তারা বরং শেখ হাসিনার ন্যায় এক ফ্যাসিস্ট শাসকের উপর প্রচণ্ড খুশি। সেটি এ একারণে যে, তাবলিগের আখেরী মুনাজাতে সে হাজির হয়। হাসিনার প্রতি আরো খুশির কারণ, কউমী কউমী মাদ্রাসার শিক্ষা কোর্স সমাপ্তকারী  ছাত্রদেরকে এম,এ.ডিগ্রির সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে এবং জমি দেয়া হয়েছে হাটহাজারীর কউমী মাদ্রাসার জন্য। এরূপ পার্থিব স্বার্থ হাছিলের তাড়না নিয়ে বাঁচাই হলো নিরেট সেক্যুলারিজম। সে পথই বেছে নিয়েছে দেওবন্দী আলেমগণ।     

শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের  ৫ মে শাপলা চত্বরে হিফাজত ইসলামের উপর গণহত্যা চালায়। সে হামলায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং RAB’য়ের বহু হাজার সৈনিক অংশ নেয়। ঐদিন শত শত নিরীহ ও নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশগুলিকে ঢাকা মিউনিসিপালিটির ময়লা পরিবহনের গাড়িতে তুলে গায়েব করা হয়। এবং গ্রেফতার করা হয়, হিফাজত ইসলামের বহু শত আলেম ও কর্মীকে। অথচ আজও সে নৃশংস ঘটনার কোন বিচার হয়নি। সে ঘটনার দাবী নিয়ে হিফাজতে ইসলামও কোন আন্দোলনে নামেনি। হিফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমির মাওলানা শফি আহমেদ সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেন, তারা রাজনীতিতে নাই। তিনি আরো বলেন, তাদের কাজ শুধু দ্বীনের শিক্ষার দেয়া। প্রশ্ন হলো, যারা নিজেদেরকে দ্বীনের শিক্ষক রূপে দাবী করে, তাদের জীবনে নবীজী (সা:)’র সবচেয়ে বড় সূন্নতটি কই? নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নতটি দাড়ি, টুপি, মেছওয়াক ও মিষ্টি খাওয়া নয়; সেটি হলো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও ১০ বছর যাবত সে রাষ্ট্রের পরিচালনা। সে বিশাল কাজে অবশ্যই রাজনীতি লাগে। রাজনীতি থেকেই নির্ধারিত হয় দেশের প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, আইন-প্রণয়ন ও আইনের প্রয়োগ, প্রতিরক্ষা, দুর্বৃত্তির নির্মূল, সুবিচারের প্রতিষ্ঠা, জনকল্যাণ ও জননিরাপত্তা এবং শিক্ষা ব্যবস্থাসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  এগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না পেলে কি ইসলামের এজেন্ডা পূরণ হয়? এ জন্যই নবীজী (সা:)কে রাজনীতির ময়দানে নামতে হয়েছে। বার বার রণাঙ্গণে নামতে হয়েছে এবং ইসলামের শত্রুদের নির্মূল করতে হয়েছে। এবং রাষ্ট্র-প্রধানের আসনে বসেছেন তিনি নিজে। রাজনীতির ময়দানে এমন সফলতা আর কোন নবীর মেলেনি। নবীজী (সা:) এক্ষেত্রে তুলনাহীন; তাই তিনি সাইয়েদুল মুরসালীন অর্থাৎ নবীদের সর্দার।

প্রতিদেশে রাজনীতির লড়াই হলো সবচেয়ে ব্যয়বহুল খাত। এখানে ব্যয় হয় বিপুল সংখ্যক মানুষের অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের। মানব ইতিহাসের সবগুলি যুদ্ধই হলো রাজনৈতিক যুদ্ধ। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা আদৌ বিজয়ী হবে কিনা, কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তী আইন, কতটা নির্মূল হবে দুর্বৃত্তদের শাসন এবং কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে সুবিচার -সেগুলি পুরোপুরি নির্ভর করে রাজনৈতিক লড়াইয়ে ঈমানদারদের বিজয়ের উপর। নবীজী (সা:) ও সাহবায়ে কেরামের যুগে যেরূপ বিশাল বিশাল যুদ্ধজয় ঘটেছে এবং মুসলিমগণ পরিণত হয়েছে বিশ্বশক্তিতে -সে বিজয় ও মর্যাদা শুধু দোয়া-দরুদের বলে অর্জিত হয়নি। সে পর্যায়ে পৌঁছাতে অর্ধেকের বেশী সাহাবাকে শহীদ হতে হয়েছে। প্রশ্ন হলো,  যারা রাজনৈতিক লড়াইয়ে নাই এবং ইসলামের চর্চাকে শুধু মসজিদ ও মাদ্রাসাতে সীমিত রাখতে চায় -তাদের ইসলাম কি নবীজী (সা:) ও সাহবায়ে কেরামের ইসলাম? রাজনীতির ময়দান থেকে ইসলামকে দূরে রাখার নীতি তো সেক্যুলারিস্টদের নীতি। অথচ সেক্যুলারিস্টদের সে নীতি নিয়ে বাঁচে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের দেওবন্দী ঘরানার আলেমগণ। তাই তারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদে নাই। তারা আন্দোলনে নাই আদালতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে। এজন্যই ভারতের জাতীয় কংগ্রসের ন্যায় সেক্যুলারিস্ট রাজনৈতিক দলের সাথে দেওবন্দী আলেমদের কোন রাজনৈতিক সংঘাত নাই, বরং আছে দীর্ঘকালের মিতালি।    

ব্রিটিশ শাসনামলে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আান্দোলন শুরু হয় তখন দেওবন্দী আলেমগণ হিন্দুত্ববাদীদের সংগঠন কংগ্রেসের সহযোগীতে পরিণত হয় এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার তুমুল বিরোধীতা করে। অথচ প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তার শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠায় যারা আগ্রহী -তারা কি কখনো হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠ কোন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হতে পারে? প্রশ্ন হলো, মুসলিমদের রাজনৈতিক লড়াইটি কি শুধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য? বরং সেটি হলো এমন এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যেখানে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, তাঁর শরিয়তী আইন এবং ইসলামী বিধানের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা দেয়া সম্ভব। সেরূপ একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার কাজটি পবিত্র ইবাদত। নামাজ-রোজার ন্যায় এমন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দেয়া তাই ফরজ। একাজ জিহাদ। তবে সে কাজটি ভারতের ন্যায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূমিতে অসম্ভব; সে জন্য চাই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি ভূমি। সেটি ভাবা যেত একমাত্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই।

নবীজী (সা:) জানতেন, কাফির অধিকৃত আরব দেশে মহান আল্লাহতায়ার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা অসম্ভব। এমন অবস্থায় হিজরত ফরজ।  এজন্যই নবীজী (সা:)কে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছে। এবং বিপুল অর্থ, শ্রম ও রক্তব্যয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দিতে হয়েছে। নবীজী (সা:) এভাবে দেখিয়ে গেছেন ইসলাম শুধু মসজিদ, মাদ্রাসা ও নিজ গৃহে পালনের বিষয় নয়; পূর্ণ ইসলাম পালনের জন্য চাই পূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র। তেমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাই যারা মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় হওয়ার তাড়না নিয়ে বাঁচে, তারা কি কখনো ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারে? যাদের মাঝে আখেরাতের ভাবনা যত তীব্র -তাদের মাঝে ততই তীব্রতর হয় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদ। সে জিহাদ বিলুপ্ত হয় যখন চেতনার ভূমি সেক্যুলারিজমে আক্রান্ত হয়। তাই কোথাও ইসলামী রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি দেখে নিশ্চিত বলা যায়, সেক্যুলারিজমের জোয়ার সেখানে কতটা গভীর।        

 

আহলে হাদীসদের স্বৈরাচার-প্রেম এবং বিরোধীতা ইসলামী রাষ্ট্রের

সূন্নীদের মাঝে চারটি মাজহাব। সেগুলি হলো চার প্রসিদ্ধ ইমামের প্রতিষ্ঠিত হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মাজহাব। যারা আহলে হাদীস, তারা এ চারটি মাজহাবের কোনটিকেই অনুসরণ করে না। তারা নিজেদের  আহলে হাদীস তথা সরাসরি হাদীসের অনুসারী বলে দাবী করে। অথচ চারটি মাজহাব গড়ে উঠেছে হাদীসের উপর ভিত্তি করেই। চারটি ভিন্ন মজহাবের কারণ, ইমামগণ বিভিন্ন হাদীসের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখা দিয়েছেন প্রাপ্ত দলিলের ভিত্তিতে। যেহেতু প্রতিটি মাজহাবের পিছনেই সহিহ হাদীসের দলিল রয়েছে, ফলে প্রতিষ্ঠিত এই চার মাজহাবের কোনটিকেই ভূল বলা যাবে না। একটি হাদীসকে সহিহ বলতে গিয়ে অন্য হাদীসকে মিথ্যা বলাও যাবেনা। সেটি গুনাহ। কোন মাজহাবকে গালিও দেয়া যাবে না। এ নিয়ে চার মাজহাবের অনুসারীদের মাঝে রয়েছে সহমত।

যারা আহলে হাদীসের অনুসারী তারা নিজেদের সালাফী তথা পূর্ববর্তী বা প্রথম কালের বলে পরিচয় দেন। অথচ যাদের হাতে চারটি মাজহাবের সৃষ্টি তারা আহলে হাদীস ফিরকার সৃষ্টির বহু আগে মাজহাবগুলির প্রতিষ্ঠা দেন অর্থাৎ তারা অধিক সালাফী। তবে লক্ষণীয় হলো, আহলে হাদীসের অনুসারীগণ কোন ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষে নাই। তারা সমর্থণ করে সৌদি আরবের স্বৈরাচারী বাদশাহদের। কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে কোন জিহাদ শুরু হলে -তারা সেটির বিরোধীতা করে। এর কারণ হলো, ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণের জিহাদকে সৌদি আরবের নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক মনে করে। এটি তাদের নিজ কায়েমী স্বার্থের সুরক্ষা দেয়ার বিষয়। এটি নিরেট দুনিয়াদারী। আর এরূপ দুনিয়াদারীর নাম হলো সেক্যুলারিজম। বুঝতে হবে, নবীজী (সা:) এবং প্রকৃত আহলে সালাফগণ কোন স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা দিয়ে যাননি। তাদের হাতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল খেলাফায়ে রাশেদা। তাই খলিফার আসনে বসতে হযরত আবু বকর (রা:), হযরত উমর  (রা:), হযরত উসমান (রা:) এবং হযরত (রা:) কোন রাজপুত্র হতে হয়নি। তারা খলিফা হয়েছেন জনমতের ভিত্তিতে।

আহলে হাদীসের যুদ্ধ নাকি বিদ’য়াতের বিরুদ্ধে। অথচ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিদ’য়াত হলো রাজতন্ত্র। সে বিদ’য়াত প্রতিষ্ঠা পায় এজিদের ক্ষমতায় বসার মধ্য দিয়ে। সৌদি আরবের বাদশাহসহ প্রতিটি আরব শেখ, আমির বা বাদশাহ ক্ষমতায় টিকে আছে সে বিদ’য়াতকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে।  সে বিদ’য়াতের মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর দেহে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে রোমন ও পারসিক সম্রাটদের রীতি-নীতি, প্রথা ও সংস্কৃতি। নির্মিত হয়েছে বিশাল বিশাল রাজপ্রাসাদ। বেড়েছে আরাম-আয়াশ ও বিলাসিতা। ফলে নবীজী (সা:) মুসলিমদের মাঝে যে নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন  সামাজিক সুবিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন -তা বিলুপ্ত হয়েছে এই স্বৈরাচারী শাসকদের হাতে। ফলে রাজনীতি আর ইবাদত থাকেনি, পরিণত হয়েছে জনগণের অধিকার হরণের হাতিয়ারে -যেমন প্রতিটি স্বৈরাচারী শাসক প্রতি দেশে করে থাকে। এই রাজা বাদশাহরাই হলো মুসলিম বিশ্বে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের বড় শত্রু। তারা অসম্ভব করছে নবীজী (সা:)‌’র ইসলামের দিকে ফিরে যাওয়া।

 

বিকল্প নাই ইসলামী রাষ্ট্রের

গ্রামে আগুন লাগলে যদি গ্রামবাসী ঘুমায় বা নীরব দর্শকে পরিণত হয়, তবে সে গ্রামের মানুষ কি আগুন থেকে বাঁচে? সভ্য মানুষ এমন মুহুর্তে হাতের কাছে যা পায় তা দিয়েই আগুন নেভায়। জনগণের উপর সবচেয়ে বড় আযাবটি ভূমিকম্প, মহামারি বা সুনামী রূপে আসে না। সেটি আসে ফ্যাসিবাদী বেঈমান সরকারের শাসন রূপে। ভূমিকম্প, মহামারি বা সুনামী কাউকে জাহান্নামে নেয় না। কিন্তু জাহান্নামে নেয় ইসলাম বিরোধী স্বৈরাচারী শাসক নেয়। জাহান্নামে নেয়ার সে কাজটি করে জাহান্নামে নেয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, বই-পুস্তক ও মিডিয়ার মাধ্যমে মিথ্যার ব্যাপক প্রচার ঘটিয়ে এবং সে প্রচারের স্রোতে জনগণকে পরিকল্পিত ভাবে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে। তাছাড়া স্বৈরাচারী সরকারের যেহেতু গণসমর্থণ থাকে না, তারা ক্ষমতায় থাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণকে দাবিয়ে রেখে। এবং দাবিয়ে রাখার কাজে জনগণের বিরুদ্ধে জেল-জুলিম, গণহত্যা ও গণনির্যাতনের পথ বেছে নেয়।

ক্ষমতাপাগল একটি স্বৈরাচারী সরকার যে কতটা নৃশংস, অসভ্য ও বর্বর হতে পারে সেটি টের পাচ্ছে সিরিয়ার জনগণ। তিন লাখের অধিক মানুষের মৃত্যু ও ৬০ লাখ মানুষকে উদ্বাস্তু করার পরও নৃশংসতায় কোন কমতি আসছে না। ভূমিকম্প, মহামারি বা সুনামীর ন্যায় বিপর্যের বিরুদ্ধে জনগণের কিছু করার থাকে না। কিন্তু ফ্যাসিবাদী সরকারের আযাব থেকে মুক্তির পথ বের করে নিতে হয় জনগণকেই। মুক্তি পাওয়ার সে কাজটি অমুসলিমদের কাছে রাজনীতি, দেশপ্রেম ও ন্যায্য যুদ্ধ গণ্য হয়, কিন্তু ইসলামে এ কাজের মর্যাদা অতি উচ্চ। নিজের সৃষ্ট এই পৃথিবীর বুকে করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালা নিজের এজেন্ডা হলো, নেহী আনিল মুনকার তথা দুর্বৃত্তির নির্মুল এবং আমারু বিল মারুফ তথা ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। তাই স্বৈরাচারী শাসকগণ শুধু জনগণের শত্রু নয়, তারা শত্রু হলো মহান আল্লাহতায়ালারও। তাই যারা সে দুর্বৃত্ত শাসকদের নির্মূলে নামে তারা মূলত একাত্ম হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে। একাজ বিপুল অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের কুরবানী চায়।  অতি ত্যাগ ও কুরবানীর এই কাজকে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালা তাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কুর’আনে তিনি এটিকে জিহাদ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত রূপে চিত্রিত করেছেন। এটি গণ্য হয় সরাসরি জান্নাতে প্রবেশের চাবী রূপে। যারা এ জিহাদে শহীদ হয়, তাদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাতে নেয়া হয়। মহান আল্লাহতায়ালা এরূপ জান্নতপ্রাপ্তিকে “ফাউজুল আযীম” তথা সবচেয়ে বড় বিজয় রূপে অভিহিত করেছেন। এরূপ জিহাদে পরীক্ষা হয় ব্যক্তির ঈমানের। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত হয় বস্তুত এই জিহাদের পথ বেয়েই। তাই যে জনপদে জিহাদ নাই, সে জনপদে ইসলামী রাষ্ট্রও নির্মিত হয়না। মিথ্যা ও দুর্বৃত্তদের নির্মূল এবং সত্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার একাজটি বেশী বেশী মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ ও নামাজ-রোজা পালনে সাধিত হয়না। সে কাজে ইসলামী রাষ্ট্রের বিকল্প নাই।

বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ের উপর আজ নৃশংস ফ্যাসিবাদী সরকার। এ সরকার জনগণের সামনে হাজির হয়েছে একটি পরম পরীক্ষা নিয়ে। এ পরীক্ষায় পাশ করতে হলে জিহাদে নামতেই হবে। সে জিহাদে বিনিয়োগ ঘটাতে হবে নিজের শ্রম, অর্থ, মেধা ও রক্তের। ভোটে কখনোই সশস্ত্র ও নৃশংস ফ্যাসিবাদীদের হারানো যায় না। ফ্যাসিবাদী সরকার নির্বাচনে আয়োজন করে স্রেফ নিজেদের দখলদারীটি নবায়ন করার জন্য, পরাজিত হওয়ার জন্য নয়। তাছাড়া পরাজিত হওয়ার জন্য হাসিনা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করেনি। মিশরের ফ্যাসিবাদী শাসক জেনারেল আবুল ফাতাহ সিসি সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শতকরা ৮৯ ভাগ ভোট নিয়ে নিজের ফ্যাসিবাদী শাসনের নবায়ন ঘটিয়েছে। অতীতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে সাবেক প্রেসেডেন্ট হুসনী মোবারক। বিজয়ী হয়েছে সিরিয়ার বাশার আসাদ। তেমনি বাংলাদেশেও একই ভাবে বিজয়ী হয়েছে এবং আগামীতেও বিজয়ী হবে শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ সিটের মাঝে ২৯৩ সিটে বিজয়ী হয়েছে। ২০১৪ সালে ১৫৩ সিটে বিনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদীরা কোথাও নির্বাচনে হেরেছে – ইতিহাসে সে প্রমাণ নাই। পরাজয় অসম্ভব করেই তারা নির্বাচনে নামে। তাই কিছু স্বার্থান্বেষী দুর্বৃত্ত হাসিনার নির্বাচনী টোপ গিলতে পারে, কোন সুবোধ ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক কি এ পথে পা বাড়াতে পারে?

 

অপরাধ গণ্য হয় সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত

বাংলাদেশে চলছে এখন নৃশংস দুর্বৃত্ত শাসন। ক্ষমতাসীন এখন ভোটডাকাত ফ্যাসিস্ট সরকার। সমগ্র দেশ এখন একটি বদ্ধ খাঁচা। এবং খাঁচার বাসিন্দা হলো দেশের ১৮ কোটি জনগণ। খাঁচার মূল পাহারাদার হলো হিন্দুত্ববাদী ভারত এবং ভারতকে সাহায্য করছে ভারতসেবী হাসিনার তাঁবেদার সরকার। এদেশে অসম্ভব করা হয়েছে মানবিক অধিকার নিয়ে স্বাধীন ভাবে বাঁচা। এটিই বাংলাদেশের বাস্তবতা। পাকিস্তান আমলে মিটিং-মিছিল, স্বাধীন ভাবে কথা বলা ও লেখা-লেখী, ইচ্ছামত ভোটদানের যে অবাধ স্বাধীনতা ছিল -সে স্বাধীনতা এখন কবরে শায়ীত। স্বাধীনতা বলতে এখন যা বুঝায় তা হলো আওয়ামী ফাসিস্টদের নৃশংসতা, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ও চুরিডাকাতির স্বাধীনতা। জনগণ বাঁচছে নিরেট পরাধীনতা নিয়ে। এই পরাধীনতারই জনক হলো শেখ মুজিব। মুজিবের বাকশালী ফ্যসিবাদকে গণতন্ত্র বলা যেমন বড় মাপের মিথ্যাচার, তেমনি বিশাল মিথ্যাচার হলো মুজিবের ন্যায় পরাধীনতার জনককে স্বাধীনতার জনক বলা। অথচ বাংলাদেশে সে মিথ্যাচারকেই বিশাল ভাবে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে।

নির্বাচনের মাধ্যমে এ দুর্বৃত্তদের সরানো যে অসম্ভব -সে প্রমাণ প্রচুর। তারা গড়ে তুলেছে ভোটডাকাতির বিশাল এক রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো। পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নির্বাচনী কমিশন ও আদালতের বিচারক পরিণত হয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার চাকর-বাকরে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশছাড়তে হয়েছে শেখ হাসিনার লাথি খেয়ে -যা তিনি তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন। ভোটডাকাতদের একমাত্র গণবিপ্লবের মাধ্যমেই সরাতে হয়। তাই প্রস্তুতিটি নিতে হয় গণবিপ্লবের। সভ্য ও স্বাধীন ভাবে বাঁচার এ ছাড়া ভিন্ন পথ নাই। এ দুর্বৃত্তদের ত্বরিৎ সরাতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো অধিক রক্তব্যয় হবে। তখন জনজীবনে স্বৈরাচারী নৃশংসতা প্রতি মুহুর্তের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আজ  সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে তাদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে, ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদের ঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে। এসবই দুর্বৃত্ত শাসনের নাশকতা। কিন্তু সে আগুন যে অচিরেই অন্যদের ঘরেও ছড়িয়ে পড়বে –তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? বাংলাদেশ তখন দ্রুত পরিণত হবে পুরোপুরি ব্যর্থ রাষ্ট্রে।

ইসলামে সর্বশ্রষ্ঠ নেক কর্মটি মসজিদ গড়া, মাদ্রাসা গড়া বা দান-সাদকা দেয়া নয়। এরূপ কর্মে স্বৈরাচারী জালেমদের নির্মূল করা যায়না। সভ্য ও শান্তিময় সমাজও নির্মিত হয় না। মহান আল্লাহতায়ালার “অন্যায়ের নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা”র এজেন্ডাও তাতে বিজয়ী হয়না। যে কারণে মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন সেটি বেশী বেশী মসজিদ গড়া, মাদ্রাসা গড়া ও দান-খয়রাত করার কারণে নয়। সেটি “অন্যায়ের নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা”র জন্য। সে ঘোষণা এসেছে সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে। সেরূপ একটি বিজয় সম্ভব একমাত্র জিহাদের মাধ্যমে। জিহাদ না থাকলে মহান আল্লাহতায়ালা শরিয়তী বিধান শুধু কুর’আনেই থেকে যায়। তখন ব্যর্থ হয় ইসলামকে বিজয়ী করার এজেন্ডা। সেরূপ ব্যর্থতায় কি মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হন? কোন মু’মিন কি এরূপ পরাজয় নিয়ে খুশি থাকতে পারে? একমাত্র জিহাদের মাধ্যমেই বিজয়ী হয় ইসলামের এজেন্ডা। একমাত্র এপথেই মানব জাতির জন্য সবচেয়ে বড় কল্যাণটি ঘটে। তাই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাজটি হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। এ কাজ বিপুল কুরবানী চায় জান, মাল, শ্রম ও মেধার। সিরিয়া, ইরান ও মিশরের অঢেল সম্পদ দিয়ে অন্যরা প্রাসাদ গড়েছে। কিন্তু মুসলিমগণ সে সম্পদ জিহাদে ও জনগণের কল্যাণে বিনিয়োগ করেছেন।

 

জনগণের জীবনে সেক্যুলারিজম

                                                                                                                                                মানবের যে অতি ক্ষতিকর বদগুণকে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে বার বার উল্লেখ করেছেন এবং সকল বিপর্যয়ের কারণ রূপে চিহ্নিত করেছেন সেটি হলো, অনন্ত কালের আখেরাতকে ভূলে স্রেফ দুনিয়ার জীবনকে সফল করার তাড়না নিয়ে বাঁচা। এটিই হলো নিরেট সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজমের অর্থ হলো পরকালের চিন্তা বা ধর্মীয় ভাবনাকে পরিহার করা এবং পার্থিব স্বার্থচেতনা নিয়ে কিছু ভাবা বা করা। একজন ব্যক্তি ব্যক্তি জীবনে যেমন সেক্যুলার হতে পারে, তেমনি সেক্যুলার হতে পারে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও। রাজনীতিতে সেক্যুলারিজমের অর্থ হলো, রাষ্ট্রের বিবিধ অঙ্গণে ধর্মকে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিজয়ী করার অঙ্গীকারধারীদের স্থান না দেয়া। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় নীতিকে পারলৌকিক কল্যাণের ভাবনা থেকে মুক্ত রাখা। সেক্যুলারিস্টদের কথা, পরকালের কল্যাণে কিছু ভাবা বা কিছু করা রাষ্ট্রের কাজ নয়। সেকাজ গীর্জার পাদ্রীদের বা মসজিদের মোল্লা-মৌলভীদের। এখানেই সেক্যুলারিজমের সাথে ইসলামের বিরোধ। ইসলামে সেক্যুলারিজমের কোন স্থান নাই। মহান আল্লাহতয়ালা চান, মানুষ তাঁর জীবনের প্রতিক্ষেত্রে -সেটি রাজনীতি, প্রশাসন, আইন-আদালত, বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতি যাই হোক, বাঁচবে আখেরাতের ভাবনাকে চেতনায় ধারণ করে। প্রতি কাজে বাঁচতে হবে মহান আল্লাহতায়ালার যিকর তথা স্মরণকে নিয়ে। যাত্রাপথে চালক যেমন তার গন্তব্যস্থলের কথা কখনোই ভূলে থাকতে পারে না, তেমনি কোন ব্যক্তিও বাঁচতে পারে না আখেরাতকে ভূলে।  নইলে অনিবার্য হয় বিচ্যুতি ও বিপর্যয়। আখেরাতকে ভূলে থাকার সে ক্ষতিকর রোগটি নিয়ে সুরা আলা’র ১৬ এবং ১৭ নম্বর আয়াতে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতয়ালার সতর্কবাণী হলো:

بَلْ تُؤْثِرُونَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا ١٦

وَٱلْـَٔاخِرَةُ خَيْرٌۭ وَأَبْقَىٰٓ ١٧

অর্থ: “কিন্ত তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দাও। অথচ আখেরাতের জীবনই উত্তম এবং স্থায়ী।”

একই রূপ সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে সুরা ক্বিয়ামার ২০ ও ২১ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:  

كَلَّا بَلْ تُحِبُّونَ ٱلْعَاجِلَةَ ٢٠

وَتَذَرُونَ ٱلْـَٔاخِرَةَ ٢١

অর্থ: “না, তোমরা আসলে দুনিয়ার জীবনকেই ভালবাস। এবং উপেক্ষা কর আখেরাতকে।” একই রোগের কথা বলা হয়েছে সুরা দাহর বা ইনসানের ২৭ নম্বর আয়াতে। সে ঘোষণাটি হলো:

إِنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ يُحِبُّونَ ٱلْعَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَآءَهُمْ يَوْمًۭا ثَقِيلًۭا ٢٧

অর্থ: “নিশ্চয়ই তারা ভালবাসে দুনিয়ার জীবনকে এবং উপেক্ষা করে পরবর্তী কঠিন জীবনকে।”

 

সর্বশ্রেষ্ঠ জনকল্যাণমুলক কাজ

মানুষ মাত্রই স্বার্থপর। নিজের ও নিজ পরিবারের সুখশান্তি বাড়ানোই অধিকাংশ মানুষের জীবনে মূল এজেন্ডা। সে পার্থিব স্বার্থ চেতনা নিয়ে বাঁচাই হলো সেক্যুলারিজম। ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও অঞ্চল ভিত্তিক লড়াইয়ের মধ্যেও থাকে একই রূপ স্বার্থপরতা। সে লড়াই’য়ে থাকে অন্য ভাষা, অন্য বর্ণ, অন্য গোত্র ও অন্য অঞ্চলের মানুষের স্বার্থ কেড়ে নেয়া ও তাদের উপর দখলদারী প্রতিষ্ঠার তাড়না। সত্য, সুবিচার ও সামাজিক কল্যাণে কেউ কি নিজের জান ও মালের বিনিয়োগে নামতে চায়? মহান আল্লাহতায়ালার কাজে সেটি অজানা নয়। এ জন্যই তিনি সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি রেখেছেন তাদের জন্য যারা ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদে নিজেদের অর্থ, শ্রম, রক্ত ও বু্দ্ধির বিনিয়োগ করে। ইসলামে এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। জিহাদে নিহত হলে জুটে বিনাবিচারে জান্নাত। এবং সেটি সাথে সাথে। শহীদের জীবনে কোন কবরের আযাব, পুল সিরাত, রোজ হাশর নাই।

ঈমানদারদের বিনিয়োগের বিশাল সুফলটি হলো, দেশবাসী তখন দুর্বৃত্ত শাসন থেকে মুক্তি পায়। কারণ, যে ব্যক্তি আখেরাতে সফল হতে নিজের অর্থ, শ্রম ও রক্ত বিলিয়ে দিতে রাজী -সে কি কখনো দুর্বৃত্ত হতে পারে? তাছাড়া শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠা পায় এবং জনগণ শান্তি ফিরে পায় তো জিহাদের বরকতেই। ফলে জিহাদ শুধু সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতই নয়, এ পৃথিবী পৃষ্ঠে সর্বশ্রেষ্ঠ জনকল্যাণ মূলক কাজও। গৌরব যুগে মুসলিমদের দ্রুত বিশ্বশক্তিতে পরিণত হওয়ার পিছনে ছিল এই জিহাদের মোজেজা। তাই অন্যদের কাছে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজটি হলো স্রেফ দেশপ্রেম ও রাজনীতি, কিন্তু ঈমানদারের কাছে সেটি শুধু দেশপ্রেম ও রাজনীতি নয়, বরং সেটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাই মুসলিমের  কাজ হলো, তার রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ জিহাদে পরিণত করা। তখন তাতে জুটে মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য। তখন শয়তানী শক্তির নির্মূলে বিনিয়োগ বাড়ে মহান আল্লাহতায়ার পক্ষ থেকেও।

 

যে পথে ঈমানের পরীক্ষা

দেশের মানুষ কতটা ঈমান নিয়ে বাঁচে -সেটির বিচার কি কখনো মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা দিয়ে হয়? সে বিচার কি তাবলীগ জামায়াতে এজতেমায় কত লাখ মানুষ জমা হলো বা কতজন নামাজ, রোজা ও হজ্জ আদায় করলো –তা দিয়ে হয়? নামাজ, রোজা ও হজ্জ আদায় করার পরও একজন ব্যক্তি যেমন মুনাফিক হতে পারে, তেমনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ও দুর্বৃ্ত্ত শাসকের সৈনিকও হতে পারে। দুর্বৃত্ত শাসকের কাছে আত্মসমর্পণ ও তাকে সমর্থন করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির বেঈমানী আসল রূপ নিয়ে বেড়িয়ে আসে। তাতে বিজয়ী হয় শয়তানের এজেন্ডা। তখন বিজয়ী হয় দুর্বৃত্তি ও ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার। এতে গাদ্দারি হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে। তাই পৃথিবী পৃষ্ঠে  সবচেয়ে বড় অপরাধটি চুরিডাকাতি বা কোন ব্যক্তিকে খুন করা নয়, বরং সেটি হলো শয়তানের কোন দাস বা এজেন্টকে বিজয়ী করা।

কিছু ঘরে চুরি-ডাকাতি এবং কিছু মানুষের খুনের কারণে ইসলাম পরাজিত হয়না। বরং ইসলাম পরাজিত হয় রাজনীতির লড়াইয়ে শয়তানী শক্তির বিজয়ী হওয়াতে। সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধ তাই ইসলাম বিরোধী শক্তির সৈনিক বা সমর্থক হওয়া। গুরুতর অপরাধ এখানে শয়তানী এজেন্ডাকে বিজয়ী করার। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের মুসলিমদের নিদারুন অবহেলাটি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল তথা জিহাদ নিয়ে। এবং তাদের অপরাধ হলো, তারা বাঁচছে ইসলামী শত্রুশক্তির শাসনকে বিজয়ী করে এবং সে শাসনকে মেনে নিয়ে। চোরডাকাত, ভোটডাকাত ও স্বৈরাচারীদের ক্ষমতায় বসিয়ে বাঁচার মধ্যে কোন সম্মান নাই, কোন কল্যাণও নাই। সেটি না ইহকালে, না পরকালে। গরু-ছাগলের জীবনের ভিশন ও ভাবনা থাকে না। সেগুলি বাঁচে স্রেফ বাঁচার তাড়না নিয়ে। বাঁচার তাড়না নিয়ে তারা পানাহার করে। কিন্তু মুসলিমকে শুধু বাঁচলে চলে না, তাকে ভাবতে হয় এবং লড়তে হয় ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ এবং সে রাষ্ট্রে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা নিয়ে। মহান আল্লাহতায়ালা শুধু ব্যক্তির আমলের হিসাবেই রাখেন না, হিসাব রাখেন তার ভাবনারও। তাই শুধু নেক আমলই শুধু ইবাদত নয়, গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো মু‌’মিনের নিত্যকার চিন্তা-ভাবনাও।

 

ব্যর্থতা ঈমান নিয়ে বাঁচায়

ঈমানদারদের জীবনের মূল মিশনটি হলো “আমিরু বিল মারুফ” তথা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও “নেহী আনিল মুনকার” অর্থাৎ অন্যায় নির্মূলের মিশন নিয়ে বাঁচা। এ মিশনে আত্মনিয়োগের কারণে সে চিহ্নিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার দলের সৈনিক রূপে। এ মিশনের বাইরে যারা বাঁচে, তারা বাঁচে শয়তানের দলের সৈনিক রূপে। তাই যে দেশে ঈমানদার আছে, সে দেশে শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদও থাকে। ইসলামের গৌরব যুগে সে অনিবার্য জিহাদটি দেখা গেছে প্রতিজন সাহাবার জীবনে। রোজ হাশরের বিচার দিনে এ হিসাব অবশ্যই দিতে হবে, জানমালের কতটা বিনিয়োগ ছিল অন্যায়ের নির্মূলে ও ইসলামের প্রতিষ্ঠায়। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিমগণ যে সে বিনিয়োগে নাই -সে প্রমান কি কম? সেরূপ বিনিয়োগে আগ্রহ থাকলে তারা কি ইসলামের পরাজয় এবং ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয় দেখে ঘরে বসে থাকতো? তখন কি লক্ষ লক্ষ লড়াকু মুজাহিদে ঢাকার রাজপথ ভরে উঠতো না?সেরূপ লড়াই থাকলে ১৭ কোটি মুসলিমের দেশে ইসলাম পরাজিত হয় কিরূপে? আদালত থেকেই বা শরিয়তী আইন বিলুপ্ত হয় কিরূপে? স্কুল-কলেজে কেন বিলুপ্ত কুর’আন শিক্ষা? শাসনক্ষমতা কেন ইসলামের শত্রুপক্ষের? বিপুল বিজয় কেন শয়তানী এজেন্ডার?

বাংলাদেশের মুসলিমগণ মুসলিম রূপে বাঁচতে কতটা ব্যর্থ হয়েছে –সেটি বুঝতে কি এই ব্যর্থতাগুলিই যথেষ্ট নয়? ইসলাম পালনে এ বিশাল ব্যর্থতা কি পরকালেও কোন সফলতা দিবে? এমন ব্যর্থ মানুষেরা কি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের ন্যায় মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমলটি করার সামর্থ্য রাখে? সে কাজের জন্য তো প্রথমে পরিপূর্ণ ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠতে হয়। অথচ ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠার সে কাজটিই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে হচ্ছে না। নবীজী (সা:) সে কাজের শুরুটি পবিত্র কুর’আন বুঝার মধ্য দিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটি হয়না। শুরু কাজটিই শুরুতে বাদ দেয়া হয়েছে। এ দেশটিতে ঘরে ঘরে না বুঝে কুর’আন তেলাওয়াতের কাজ হলেও কুর’আন বুঝার কাজটি হয়না। মুসলিম উম্মাহর সকল ব্যর্থতার শুরু তো এখান থেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *