ইসলাম ও অনৈসলামের লড়াই এবং ধর্মনিরপেক্ষতার লেবাসে নাশকতা
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 4, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
গাদ্দারী নিরপেক্ষতার লেবাসে
ইসলাম-অনৈসলামের দ্বন্দটি নিত্যদিনের। কখনো সেটি রাজনৈতিক অঙ্গণে, কখনো বা বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে। আবার কখনো বা যুদ্ধের রক্তাত্ব রণাঙ্গণে। এ দ্বন্দের মাঝে কি নিরপেক্ষতা চলে? অন্যায়কে ন্যায়ের, অসত্যকে সত্যের এবং জালেমকে মজলুমের সমকক্ষতা দিলে কি তাকে ন্যায়পরায়ণ বলা যায়? এমন নিরপেক্ষতা তো অন্যায়, অসত্য ও জালেমের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব। নিরপেক্ষতার খোলসে এটি জালেমকে বিজয়ী করার ষড়যন্ত্র। মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিস্টগণ এমন কর্মে লিপ্ত রয়েছে নিছক ইসলামকে পরাস্ত করার স্বার্থে। নিরপেক্ষতা এ লক্ষে বাহানা মাত্র। নিরপেক্ষতার গুরুত্ব আছে; সেটি ঘটনা, পরিবেশ, পরিস্থিতি ও তথ্যের বস্তুনিষ্ঠ বিচারে। এমনকি পবিত্র কোরআনেও নিরপেক্ষ নিরীক্ষণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামে কবুলের পর ইসলাম ও অনৈসলামের দ্বন্দে কোন মুসলিমই নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ থাকতে পারে না; তাকে ইসলামের পক্ষ নিতে হয়। নইলে গাদ্দারী হয় মহান আল্লাহতায়ালা এবং তাঁর দ্বীনের বিরুদ্ধে। প্রতিটি মুসলিমকে এ প্রবল বিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে হয় যে, ইসলামের পক্ষ নেয়ার অর্থ ন্যায় ও সত্যের পক্ষ নেয়া এবং অন্যায় ও অসত্যের পক্ষটি হলো শয়তানের।
পবিত্র কোর’আনে মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ পরিচিতি রয়েছে। সেটি হলো “হিযবুল্লাহ” তথা আল্লাহতায়ালার দলের সদস্য রূপে। কথা হলো, যাকে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজ দলের সদস্য রূপে গ্রহণ করলেন, সে কি তাঁর দ্বীনের পরাজয় চাইতে পারে? দাঁড়াতে পারে কি শয়তানে পক্ষে? হতে পারে কি ইসলাম ও অনৈসলামের লড়াইয়ে নিরপেক্ষ। বরং ঈমানদারের জীবনে সর্বোচ্চ বাসনা হয়, মহান আল্লাহতায়ালা দ্বীনের বিজয়। এমন বিজয়ে শুধু সে শুধু ভোটই দেয় না, অর্থ-শ্রম এবং মেধাও দেয়। এমনকি নিজের রক্তও দেয়। ঈমানদার হওয়ার শর্তই হলো, নিজের মন থেকে বিলুপ্ত করতে হয় নিরপেক্ষতার নামে ইসলামকে অন্য ধর্মের সম-পর্যায়ভূক্ত করার প্রবণতা। কারণ, এমন সমকক্ষতা দিলে ঈমানই থাকে না। মুসলিম হওয়ার শর্তই হলো ইসলামকে মহান আল্লাহতায়ালার মনোনীত একমাত্র সত্য ধর্ম রূপে কবুল করা।
ধর্ম গ্রহনে জবরদস্তি নেই। কিন্তু ইসলাম কবুলের পর ইসলাম-অনৈসলামের দ্বন্দে নিরপেক্ষ থাকার সামান্যতম অবকাশ নেই। সেনা বাহিনীতে যোগ দেওয়াটি যে কোন ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়। কিন্তু যোগ দেওয়ার পর যুদ্ধরত দুইটি পক্ষের মাঝে নিরপেক্ষ থাকা বা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার অনুমতি বিশ্বের কোন সেনাবাহিনীই দেয় না। কারণ নিরপেক্ষ লোকদের দিয়ে আর যাই হোক সেনাদল গড়া যায় না। তাতে দেশের প্রতিরক্ষাও বাড়ে না। এজন্যই সেনাবাহিনী গড়তে হয় তাদের দিয়ে যারা দেশের জন্য সর্বসামর্থ্য দিয়ে শুধু যুদ্ধই লড়বে না, প্রয়োজনে প্রাণও দিবে। সৈনিকদের থেকে প্রতিদেশে এটিই ন্যূনতম প্রত্যাশা। তাই কোন সৈনিকের যুদ্ধত্যাগ প্রতি দেশেই জঘন্য রকমের গাদ্দারী। এর জন্য সৈনিকের কোর্ট-মার্শাল হয়, এবং কঠোরতম শাস্তিও হয়। তেমনি একটি শাস্তি মহান আল্লাহতায়ালার সেনাদলেও। যারা ইসলামের পক্ষ ত্যাগ করে, শরিয়তের দৃষ্টিতে তারা মুরতাদ। তাদের গাদ্দারীটি শুধু ইসলাম বা মুসলিম উম্মাহর সাথে নয়, বরং মহান রাব্বুল আ’লামিনের সাথে। তাদের শাস্তিও তাই সর্বোচ্চ, এবং সেটি মৃত্যুদন্ড। আলেমদের মাঝে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকলেও অন্ততঃ এ নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।
মহান আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাসের পূর্বে অন্যসব “ইলাহ” বা উপাস্যকে অবশ্যই অবিশ্বাস করতে হয়। তেমনকি ইসলামকে দ্বীন রূপে কবুল করার সাথে সাথে অন্য সকল ধর্ম, মতবাদ ও বিধানকে বাতিল রূপে বিশ্বাস করতে হয়। বিষয়টি এতোই মৌলিক যে এখানে আপোষ হলে ঈমান থাকে না। এজন্যই কোন ঈমানদারের পক্ষে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টান ধর্মের উপর বিশ্বাস রাখা যেমন হারাম তেমনি হারাম হলো জাতীয়তাবাদী, সেক্যুলারিস্ট, সোসালিস্ট, ফ্যাসিস্ট বা পুঁজিবাদী হওয়া। শুধু কথায় নয়, কাজের মধ্য দিয়েও সেটির প্রকাশ ঘটাতে হয়। জঘন্য অপরাধীও নিজেকে মুসলিম রূপে দাবী করতে পারে। মুসলিম রূপে তারাও দাবী করে, যাদের হাত রঞ্জিত মুসলিমদের রক্তে এবং যাদের রাজনীতির কারণে শরিয়ত বিলুপ্ত হয়েছে মুসলিম দেশের প্রশাসন ও বিচারালয় থেকে। অথচ এরাই আবার নিজেদের পরিচয় পেশ করে সেক্যুলারিস্ট রূপে। সেক্যুলারিজমকে এরা সংজ্ঞায়ীত করে ধর্মের প্রভাবমুক্তি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে। অথচ ক্ষমতায় গিয়ে এরাই রাষ্ট্রের সকল অবকাঠামো ও সামর্থ্যকে ব্যবহার করে ইসলামকে দাবিয়ে রাখা ও পরাজিত রাখার যুদ্ধে।
বিজয়ী হারাম রাজনীতি
রাজনীতির অঙ্গণটি ব্যক্তির ঈমান ও আমল যাচায়ের নিখুঁত ক্ষেত্র। এখানে প্রকাশ পায়, কে কতটা ইসলামের পক্ষের বা বিপক্ষের –তা নিয়ে আসল রূপটি। ব্যক্তির ঈমান তার মনের বিষয়। কিন্তু সেটি সুস্পষ্ট দেখা যায় তার পছন্দের রাজনৈতিক দল, ভোটদান, অর্থদান, রাস্তার শ্লোগান ও রাজনৈতিক অঙ্গিকারের মধ্য দিয়ে। এটি এমন এক ক্ষেত্র যেখানে অতি কপট মুনাফিকও তার কপটতাকে গোপন রাখতে পারে না। অথচ সে কপটতা মসজিদের জায়নামাজে ধরা পড়ে না। ধরে পড়ে না রোযা ও হজ্বে। এমনকি নবীর যুগেও বহু মুনাফিক তাদের কপট বিশ্বাসকে বছরের পর বছর লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু সে মুনাফিকি তখন ধরা পড়ে, যখন ইসলাম ও অনৈসলামের লড়ায়ে রণাঙ্গণে হাজির হওয়ার নির্দেশ আসে। নবীজী (সা:)’র যুগে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার অনুসারি মুনাফিকগণ ধরা পড়েছিল জিহাদের এ ময়দানে। নিরপেক্ষতার ভান করলেও তারা চেয়েছিল কাফের শক্তির বিজয়।
রাষ্ট্রীয় অঙ্গণে আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার পবিত্র জিহাদ হলো রাজনীতি। মুসলিম জীবনে একমাত্র জিহাদের এ রাজনীতিই হালাল। কিন্তু রাজনীতিতে যে জিহাদ নাই, বরং আছে শরিয়তকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা এবং লক্ষ্য যেখানে ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল ও দলের ভিত্তিতে মুসলিমদের বিভক্তি গড়া –সে রাজনীতি শতভাগ হারাম। হারাম পানাহারে দেহের ক্ষতি হয়, কিন্তু হারাম রাজনীতিতে নাশকতাটি ভয়ানক। সেটি শুধু ব্যক্তির চিন্তা-চরিত্রেই পচন ধরায় না, বরং বিনাশ ঘটায় সমগ্র দেশের। দেশ জুড়ে তখন চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসে সুনামী আসে। এবং এরই উদাহরণ হলো আজকের বাংলাদেশ। কারণ, দেশটিতে বিজয় পেয়েছে হারাম রাজনীতি। এ রাজনীতির মূল চরিত্রটি শুধু ইসলামশূণ্যতাই শুধু নয় বরং তীব্র ইসলামবৈরীতা। সে সাথে রয়েছে নিষ্ঠুর স্বৈরাচার ও দুর্বৃত্তি।
নাশকতা ঘটে শুধু হারাম রাজনীতিতেই নয়, বরং ভয়ানক নাশকতা হয় জনজীবনে রাজনীতি না থাকাতেও। পশুর জীবনে রাজনীতি থাকে না। কারণ, পশু কখনোই সমাজ বা রাষ্ট্র নির্মাণ নিয়ে ভাবে না। তাই দেশে পশুত্ব বিজয়ী হলে সে দেশ রাজনীতিশূণ্য হয়। কেড়ে নেয়া হয় জনগণের মৌলিক অধিকার। অপরাধ গণ্য হয় সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা। ক্ষমতাসীনগণ তখন হিংস্র পশুর চেয়েও নৃশংস রূপ ধারণ করে। দেশ তখন জঙ্গলে পরিণত হয়। এবং চেষ্ঠা হয় জনগণকেও চেতনাশূণ্য পশু বানানোর। ফলে প্লাবন আসে দুর্বৃত্তির। তখন বিলুপ্ত হয় আইনের শাসন। তখন বিচারকদের কাজ হয় সরকার বিরোধীদের ফাঁসিতে ঝুলানো। এবং সেটিরই উদাহরণ হলো আজকের বাংলাদেশ।
মুসলিমের এজেন্ডা ও কাফেরের এজেন্ডা
যার জীবনে রাজনীতি নাই, বুঝতে হবে তার জীবনে ইসলামী এজেন্ডাও নাই। সে আগ্রহী নয় মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করায়। রাজনীতি থেকে এভাবে দূরে থাকায় বিজয়ী হয় শয়তানের এজেন্ডা। কারণ, ইসলামী এজেন্ডা থেকে মুসলিমদেরকে সরানো বা তাদেরকে নিষ্ক্রীয় করার মধ্যেই শয়তানের বিজয়। বাস্তবতা হলো, রাজনীতিতে বহু দল-উপদল থাকলেও মূল পক্ষ মাত্র দুটি। একটি পক্ষ মহান আল্লাহতায়ালার, অপরটি শয়তানের। তৃতীয় কোন পক্ষ নাই। ফলে যারাই আল্লাহর পক্ষ নয়, তারাই শয়তানের পক্ষ। দুটি পক্ষের জীবনে দুটি বিপরীতমুখী এজেন্ডা এবং যুদ্ধও থাকে। সে ভিন্ন এজেন্ডা ও যুদ্ধের কথাটি সুস্পষ্ট ভাবে ধ্বনিত হয়েছে সুরা নিসা’র ৭৬ আয়াতে। উক্ত আয়াতে ঈমানদারদের কি job description তথা করণীয় -সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও বলা হয়েছে। মুসলিম ও কাফের জীবনের এজেন্ডা বুঝতে এ আয়াতটিই যথেষ্ট। এবং সেটি হলো, “যারা ঈমান আনে তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়, এবং যারা কাফের তারা যুদ্ধ করে শয়তানের পথে। অতঃপর যুদ্ধ করো শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে; নিশ্চয়ই শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল।” তাই ঈমানদারকে শুধু কালেমা পাঠ করে মহান আল্লাহতায়ালার দলে নাম লেখালে চলে না। ঈমানী দায়িত্ব স্রেফ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতেও পালিত হয় না। বরং ইসলামকে বিজয়ী করার লাগাতর জিহাদও থাকতে হয়। এবং সে জিহাদে জান ও মালের কোরবানীও পেশ করতে হয়।
পরকালেও মানব জাতির বিভাজনটি হবে মাত্র দুটি দলে: জান্নাতীদের এবং জাহান্নামীদের। সেখানেও তৃতীয় কোন দল নাই; এবং তৃতীয় কোন স্থানও নাই। তবে পরকালে কে কোন দলে যাবে -সে সিদ্ধান্ত হয় দুনিয়াতেই। এবং সেটি হয় কে কোন দলে যোগ দিল এবং লড়াই করলো সে আমলনামার ভিত্তিতে। তাই শুধু কালেমা পাঠ ও নামায-রোযায় জান্নাত মেলে না। সে লক্ষ্যে জরুরি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার দলে শামিল হওয়া এবং তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করতে যুদ্ধ করা। নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরাম তো সে ইসলামই পালন করে গেছেন। সে ইসলামে ঈমানদারদের জন্য নিরপেক্ষ বা নিষ্ক্রীয় থাকার পথ খোলা রাখা হয়নি। জান্নাত কখনোই নিরপেক্ষ ও নিষ্ক্রীয়তায় জুটে না; অর্জন করতে হয় জিহাদে যোগ দিয়ে। তাই কোন সাহাবী নিরপেক্ষ বা নিষ্ক্রীয় ছিলেন –সে প্রমাণ নাই। বরং শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবা শহীদ হয়ে গেছেন।
জিহাদের সে পথটি ছাড়া অন্য যে পথটি খোলা সেটি হলো শয়তানের দলে শামিল হওয়া এবং জাহান্নামে হাজির হওয়া। গাড়ী চালনায় সব সময় নজর রাখতে হয়, রাস্তা ঠিক আছে কিনা। তেমনি জীবন চালনায় প্রতি মুহুর্তে ভাবতে হয়, কোন দলের সেপাহী সে। তার সামর্থ্যের বিনিয়োগই কোন দলকে বিজয়ী করতে হচ্ছে? মহান আল্লাহতায়ালার দলে, না শয়তানের দলে? মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো এটি। শেষ ঠিকানা জান্নাত হবে না জাহান্নামে হবে –সে ফয়সালাটি হয় কোন পথে জীবন কাটলো তা থেকে। বাংলাদেশে ইসলামের পরাজয় দেখে বলা যায়, মহান আল্লাহতায়ালার দলে লোকবল সামান্যই। ফলে রাজনীতিতে বিজয়ী হয়েছে শয়তানের দল এবং পরাজয় বেড়েছে ইসলামের।
চেতনায় “লিল্লাহ” এবং অনিবার্য লড়াই
মুসলিম হওয়ার শর্তই হলো, বাঁচতে হয় প্রতি পদে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ নিয়ে। পবিত্র কোর’আনে সে কথাটি আরো সুস্পষ্ট করা হয়েছে এ বয়ানে: “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিয়ুন” অর্থ: “আমরা নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই ফিরে যাবো তাঁর কাছে।” উপরুক্ত বয়ানে যা বুঝানো হয়েছে তা হলো, মুসলিমের সবকিছুই “লিল্লাহ” তথা আল্লাহর জন্য। এভাবে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে মুমিনের বাঁচা ও মরার এজেন্ডা। এ বিষয়টি আরো পরিস্কার করা হয়েছে পবিত্র কোর’আনের আরেকটি আয়াতে, “ইন্নাস সালাতি ও নুসুকি ওয়া মাহ’হিয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।” অর্থ: নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার বেঁচে থাকা ও আমার মৃত্যু –এসবই আল্লাহ রাব্বিল আলামীনের জন্য। এই যখন মুসলিমের বাঁচা ও মরার এজেন্ডা -তখন তাঁর রাজনীতি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, শিক্ষা-সংস্কৃতি “লিল্লাহ” হওয়ার গন্ডি থেকে বাদ পড়ে কি করে? নিরপেক্ষ হওয়ার প্রশ্নই বা উঠে কি করে? অমুসলিম থেকে মুসলিমের মূল পার্থক্য তো এখানেই। চেতনায় “লিল্লাহ” থাকায় মুসলিম কখনোই কোন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সৈনিক হয় না, তেমনি ইসলামশূণ্য কোন দলের কর্মী বা নেতাও হয় না। সেগুলো গণ্য হয় শতভাগ হারাম রূপে।
বাঁচার প্রেরণা “লিল্লাহ” হওয়ায় মুসলিম শুধু নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাতের ন্যায় ইবাদতে ক্ষান্ত দেয় না। তাঁকে বাঁচতে চায় পূর্ণ ইসলাম নিয়ে। লক্ষ্য হয়, যে ইসলাম নিয়ে নবীজী (সা:) বেঁচেছিলেন -সে ইসলাম নিয়ে বাঁচা। নবীজী (সা:)’র সে ইসলামে ছিল ইসলাম রাষ্ট্র, কোর’আন লব্ধ গভীর জ্ঞান, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, জিহাদ, খেলাফা, শুরা ও প্যান-ইসলামিক ঐক্য। আর এরূপ পূর্ণ ইসলাম নিয়ে বাঁচতে গেলে শত্রু শক্তির সাথে লড়াই অনিবার্য। মুসলিম যতই শান্তিবাদী হোক -এ লড়াই এড়িয়ে চলা অসম্ভব। এড়াতে পারেননি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তিবাদী নেতা শেষ নবী হযরত মহম্মদ (সাঃ)। ইসলাম পালন শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতে সম্ভব হলে জিহাদের ন্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের প্রয়োজন হতো না। নবীজী (সা:)’কে তখন বদর, ওহুদ, খন্দক, হুনায়ুনের ন্যায় রণাঙ্গণে হাজির হতে হতো না। মৃত্যৃর মুখোমুখীও দাঁড়াতে হতো না।
কিন্তু যারা ইসলামের বিজয় চায় না, তাদের কাছে জিহাদ গুরুত্বহীন। নবীজী (সা:)র আমলের ইসলাম নিয়েও তারা ভাবে না। নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত নিয়েই তারা খুশি, পূর্ণ ইসলাম পালন নিয়ে তাদের আগ্রহ নাই। যুদ্ধে নেমে নিজেদের জীবনকে তারা বিপন্ন করতে চায় না। জান্নাতের যাত্রী বাছাইয়ে জিহাদ ফিল্টার বা ছাঁকুনীর কাজ করে। জায়নামাজে অসংখ্য মুনাফিকের অনুপ্রবেশ ঘটলেও জিহাদের কাতারে সেটি ঘটে না। দ্বন্দ-সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকাটি মহৎ গুন – এ কপট স্লোগানে মুনাফিকগণ শান্তির অবতার সাজে এবং আড়াল করে নিজেদের ইসলাম-বিরোধী শত্রুতাকে। অথচ সুযোগ পেলে এরাই হালাকু-চেঙ্গিজ সাজে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে এদের নৃশংস বর্বরতা হিংস্র পশুদেরও হার মানিয়েছে।
সত্য ও মিথ্যার মাঝে লড়াইয়ে মহান নবীজী (রাঃ) শুধু পক্ষই নেননি, বরং সত্যের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন ইসলামের শত্রুদের হত্যায়। মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্যত যে শয়তানী প্রতিপক্ষ -তার বিরুদ্ধে কঠোরতাই মুমিনের গুণ। ইসলামী বিধান ও মুসলিম উম্মাহ হামলার মুখে পড়বে এবং সে হামলার মুখে মুসলিমগণ প্রতিবাদহীন উদ্ভিদ জীবন পাবে -ইসলামের আগমন সে জন্য ঘটেনি। ইসলাম এসেছে সভ্যতর মানব ও সমাজ নির্মাণে। আর নির্মাণের কাজে অপশক্তির আবর্জনাকে সরাতে হয়। ফলে অনিবার্য হয় সংঘাত। সে সংঘাতে প্রতিটি সভ্য মানুষ সত্যের পক্ষ নিবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই নবীজী (সাঃ)’র আমলে মুসলিম দূরে থাক, মুনাফিকরাও প্রকাশ্য লোকালয়ে নিজেদেরকে ধর্ম-নিরপেক্ষ বলার সাহস পায়নি। কারণ, এমন নিরপেক্ষতা ছিল ইসলামের প্রকাশ্য বিরোধীতা। সেটি গণ্য হতো গুরুতর অপরাধ রূপে। নিছক ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মুসলিমগণ যেখানে নির্মূল হয়, লাখে লাখে আহত ও নিহত হয় এবং বিতাড়িত হয় ঘরবাড়ী থেকে -সেখানে কি নিরপেক্ষতা চলে? সেটি তো সুস্পষ্ট বেঈমানী। পবিত্র কোর’আনে ঈমানদারের গুলাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে তারা হলো “আশাদ্দু আলাল কুফ্ফার” অর্থাৎ কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর। আগাছা ও আবর্জনার বিরুদ্ধে কঠোর না হলে কি ফলবান বৃক্ষের চাষ হয়? তাছাড়া উম্মাদ ও মৃতরা ভিন্ন এ সমাজে কেউ কি নিরপেক্ষ? যে ব্যক্তির স্বার্থ আছে, তার একটি পক্ষও আছে। তাই ইসলাম-বিরোধীদের যেমন একটি পক্ষ আছে, তেমনি পক্ষ আছে ইসলামপন্থিদেরও। প্রকৃত ঈমানদারী তো ইসলামের পক্ষে লড়াই করায়।
নিরপেক্ষতা কি আত্মসমর্পণকারীর সাজে?
মুসলিম ও ইসলাম এ শব্দ দু’টি এসেছে আরবী ক্রিয়াপদ “আসলামা” থেকে। “আসলামা”র অর্থ আত্মসমর্পণ করা। যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করলো মহান আল্লাহতায়ার কাছে, তাকেই বলা হয় মুসলিম। আর আত্ম-সমর্পিত ব্যক্তি নিরপেক্ষ বা শত্রু পক্ষের হয় কি করে? মহান আল্লাহতায়ালার সকল নির্দেশের প্রতি আনুগত্যই হলো আত্মসমর্পণের মূল কথা। এখানে নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা চলে না, মানতে হয় একমাত্র তাঁর কথা -যার কাছে আত্মসমর্পণ। বুঝতে হবে, নিজের দ্বীন নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালারও নিজস্ব এজেন্ডা আছে। সেটি হলো সকল ধর্ম ও মতবাদের উপর তার বিজয়। পবিত্র কোর’আনে সে ঘোষণাটি হলো,”লি’ইয়ুযহিরাহু আলা দ্বীনে কুল্লিহি”। মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি আত্মসমর্পণের অর্থ হলো তাঁর সে ঘোষিত এজেন্ডার কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। তখন ঈমানদারের কাজ হয়, সে এজেন্ডাকে বিজয়ী করায় নিজের সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগ।
কাফের হওয়ার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার সকল নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়া জরুরি নয়। ইবলিস অবাধ্য শয়তানে পরিণত হয়েছিল একটি মাত্র হুকুম অমান্য করায়। হুকুমটি ছিল হযরত আদম (সা:)কে সিজদার করার। অথচ এর পূর্বে তার জীবন কেটেছিল মহান আল্লাহতায়ালার বন্দেগীতে। কিন্তু সে ইবাদত তাকে অভিশপ্ত শয়তান হওয়া থেকে বাঁচায়নি। পবিত্র কোর’আনে বার বার নির্দেশ এসেছে জানমাল দিয়ে জিহাদের। নির্দেশ এসেছে শরিয়তের পূর্ণ প্রয়োগের। নির্দেশ এসেছে অন্যায়ে নির্মূলের এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায়। কোন মুসলিম কি সে নির্দেশগুলো অমান্য করতে পারে? অমান্য করলে সে কি মুসলিম থাকে?
সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধ
রাজনীতির ময়দানে অতি কপট মতবাদ হল সেক্যুলারিজম। ইসলামের প্রচণ্ড ক্ষতি করেছে সেক্যুলারিস্টগণ। প্রতিটি মুসলিম দেশে এরাই শয়তানের বিশ্বস্থ সৈনিক। প্রায় সবগুলি মুসলিম দেশই এদের হাতে অধিকৃত। এদের যুদ্ধ ইসলামকে মুসলিম ভূমিতে পরাজিত রাখায়। তাদের অপরাধের তালিকাটি বিশাল। ৫৭টি রাষ্ট্রে বিভক্ত মুসলিম উম্মাহর মানচিত্রটি তাদেরই সৃষ্টি। ধর্মনিরপেক্ষতার স্লোগান দিলেও এরা পক্ষ শয়তানের। তাদের কাজ, মুসলিম জনগণকে ঈমানশূণ্য করা এবং ইসলামের বিজয়ে তাদেরকে অঙ্গিকারশূণ্য করা। ইসলামের বিজয় তাদের কাছে সাম্প্রদায়িকতা। মুসলিম রূপে পরিচয় দিলেও ইসলামের পরাজয়ে তাদের বিবেকে মাতম জাগে না। আগ্রহ নাই ইসলামকে বিজয়ী করায়। বরং তাদের সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগ হয় রাষ্ট্রীয় ময়দানে ইসলামকে পরাজিত করায়। এরাই মুসলিম ভূমিতে কাফের শক্তির বিজয় বাড়ায়–যেমনটি ১৯৭১’য়ে দেখা গেছে বাংলাদেশে। ১৯১৭ সালে দেখা গেছে আরব ভূমিতে। সেক্যুলারজিম মানুষকে যে কতটা ঈমানশূণ্য, মানবতাশূণ্য করে এবং দেশপ্রেমশূণ্য করে –এসব হলো তারই প্রমাণ।
অথচ ব্যক্তির ঈমানদারী তো ইসলামের পক্ষ নেয়াতে। এ গুণের জন্যই মুসলিম তার মুসলিম পরিচিতিটি পায়। এবং সেটি তাঁর চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। দেহ থেকে ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আলাদা করা গেলেও চেতনাকে আলাদা করা যায় না। জীবন্ত ব্যক্তি যেখানেই যায়, চেতনাকে সাথে নিয়েই যায়। সেটি দৃশ্যমান হয় তাঁর কর্ম, চরিত্র, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, প্রশাসনসহ জীবনের প্রতি অঙ্গে। এমন ব্যক্তির পক্ষ ধর্মনিরপেক্ষ বা ইসলামে অঙ্গিকারহীন হওয়া অসম্ভব। অপরদিকে চেতনা ইসলামশূণ্য হলে সেটিও ধরা পড়ে ব্যক্তির কর্ম, চরিত্র, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, প্রশাসনে। তার পক্ষেও অসম্ভব হয়ে ইসলামের পক্ষে দাঁড়ানো। এমন ব্যক্তি যতই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলুক, তার চরিত্রে ও রাজনীতিতে ধর্ম-বিরোধীতা প্রকাশ পাবেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পেলে এ পক্ষটি ধর্মবিরোধী কর্মেরই ব্যপ্তি ঘটায়। ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে কামাল পাশা ও তার অনুসারিরা তুরস্কে ইসলামের বিরুদ্ধে এমন নাশকতা ঘটিয়েছে -যা বহু কাফেরদের হাতেও ঘটেনি। তারা আরবীতে আযান দেওয়া নিষিদ্ধ করেছিল। পানির ন্যায় অবাধ করেছে মদকে। বাণিজ্যরূপে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে বেশ্যাবৃত্তিকে। মুর্তি গড়েছে পথে ঘাটে। নিষিদ্ধ করেছে মহিলাদের মাথায় স্কার্ফ পড়াকে, এবং অশ্লিলতাকে আর্ট বা শিল্প রূপে চালু করেছে। ইসলামী অনুশাসনের এমন উগ্র বিরোধীতার পরও তাদের দাবী, তারা ধর্ম-নিরপেক্ষ। তথাকথিত এ সেক্যুলার পক্ষটি যে দেশেই ক্ষমতায় গেছে সেখানেই ধর্মের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর এ পক্ষপাতদুষ্টতারই তারা নাম দিয়েছে নিরপেক্ষতা! এপক্ষটি মুজিবামলে বাংলাদেশে ইসলামের পক্ষের শক্তির রাজনীতিকে আইন করে নিষিদ্ধ করেছিল। মুজিব কণ্যা হাসিনা ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা চালিয়েছে। অনেক ইসলামপন্থি নেতাদের ফাঁসিতেও চরিয়েছে। তারা কঠোর বিরোধী শরিয়তী আইনের। পবিত্র কোরআনের আয়াতকে তারা মনোগ্রাম ও পাঠ্যবই থেকে তুলে দিয়েছে। শাসনতন্ত্র থেকে বিলুপ্ত করেছে মহান অল্লাহতায়ালার উপর আস্থার বাণী। হিন্দুদের ন্যায় শুধু মুর্তি বা স্তম্ভই গড়ছে না, মুর্তি ও স্তম্ভের পায়ে ফুল দেওয়া বা সন্মান প্রদর্শনের ন্যায় শিরককে রাষ্ট্রীয় রীতিতে পরিণত করেছে।
সেক্যুলারিস্টদের লক্ষ্য শুধু রাজনীতি, প্রশাসন ও আইনআদালত থেকে ইসলামের অপসারণ নয়, ইসলাম থেকেও ইসলামের বহু মৌল বিধানের অপসারণ। তারা জিহাদমুক্ত করতে চায় ইসলামকে। এমন এক অভিন্ন লক্ষ্যে সেক্যুলার রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশী আবির্ভূত হয়েছে সেক্যুলার চরিত্রের ধর্মীয় দল। এদের অনেকে দ্বীনের তাবলীগ করেন বটে, তবে রাজনীতিতে ইসলামের বিজয় বা শত্রুশক্তির হামলার বিরুদ্ধে জিহাদের কথা মুখে আনে না। অথচ মুসলিম তো তাদেরকেই বলা হয় যারা ইসলামের তাবলীগের পাশাপাশি অর্থ ও রক্ত ব্যয় করে ইসলামের প্রতিষ্ঠায় ও শত্রুর প্রতিরোধে। যেমনটি নবীজীর (সাঃ) যুগে দেখা গেছে। নেকী অর্জনের পথ এ নয়, মুখে দ্বীনের তাবলীগ করবে অথচ ধর্মের সাথে অধর্মের লড়াইয়ে নিজেকে নিরপেক্ষ বলবে। তাবুক যুদ্ধের কালে যে কয়েকজন সাহাবী নিছক গড়িমসির কারণে যুদ্ধে যোগ দেননি তাদেরকে তৎকালীন মুসলিম সমাজ বর্জন করেছিল। অথচ কাফেরদের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধে তারা নিরপেক্ষ ছিলেন না। প্রশ্ন হলো, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আজ যারা ইসলামের বিজয় রোধে কোয়ালিশন গড়ে নাস্তিক ও অমুসলিমদের সাথে -তাদেরকে কি বলা যাবে?
অসম্ভব করে রাজনীতিতে ইবাদত নিয়ে বাঁচা
পবিত্র কোরআনের ঘোষণা,“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা কাফের…তারা জালেম…..তারা ফাসেক” (সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪, ৪৫, ৪৭)। ফলে কাফের হওয়ার জন্য পুতুল-পুজারি বা নাস্তিক হওয়া জরুরি নয়। আল্লাহর নির্দেশিত বিধান প্রতিষ্ঠায় অমনোযোগী হওয়াই সে জন্য যথেষ্ট। এরপরও কি রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার অবকাশ থাকে? মসজিদ যেমন ইবাদতের স্থান, রাজনীতিও তেমনি জিহাদের পবিত্র ময়দান। ইবাদত করতে হয় উভয় স্থানেই। নামাযের যেমন রুকু-সিজদা ও বিধি-বিধান আছে, তেমনি রাজনীতিতেও ইসলামের রীতি-নীতি আছে। নবীজী (সা:) নিজ হাতে সেগুলো শিখয়ে গেছেন। মানবকে এজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে যে সে মহান আল্লাহর ইবাদত করবে। বলা হয়েছ, “ওয়া মা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসানা ইল্লা লি’ইয়াবু্দুন” অর্থ: “ইবাদত ভিন্ন অন্য কোন উদ্দেশ্যে জ্বিন ও মানবকে সৃষ্টি করা হয়নি”।–(সুরা আদ দারিয়া, আয়াত ৫৬)। অর্থাৎ মানব তার প্রতিটি কর্মকে ইবাদতে রূপ দিবে। শুধু নামাজ রোযা নয়, তার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, রাজনীতিসহ সকল কর্মকান্ডই হবে ইবাদত। রাজনীতির ন্যায় বিস্তৃত গুরুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রকে ইবাদতের বাইরে রেখে কি সেটি সম্ভব? অথচ সেক্যুলারিস্টগণ সেটিই চায়। প্রশাসনের বিশাল অঙ্গণে ইবাদতকেই এরা নিষিদ্ধ করে। এভাবে প্রতিবন্ধকতা গড়ে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনে। এর পরও কি এ মতবাদকে জায়েজ বলা যায়?
সেক্যুলারিজম ভয়ানক বিপদজনক আরেকটি কারণেও। ঈমানদার মাত্রই মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা। খেলাফতের এ দায়িত্বপালন মসজিদের চার দেওয়ালে সীমাবদ্ধ হলে রাষ্ট্রের বাঁকী অংশে কর্তৃত্ব পায় শয়তান ও তার অনুসারিগণ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির মত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলো তখন শয়তানের আজ্ঞাবহ হয়। তখন প্রচন্ড গতিতে বাড়ে জাহিলিয়াত। বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশে আদিম অজ্ঞতা বা জাহিলিয়াত ফিরে এসেছে বস্তুতঃ একারণেই। দূর্নীতি, ধর্ষণ, সস্ত্রাস ও অশ্লিলতা ও অসভ্যতায় দেশটি ইতিহাসের সকল কদর্যতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছ। অন্য দলের সমর্থকদের পিটিযে হত্যার ন্যায় অতি বর্বর নৃশংস কর্মটিও গন্য হচ্ছে রাজনীতির উৎসব রূপে। উৎসব হয় এমন কি ব্যভিচার নিয়েও। নারীরা পণ্যরূপে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের বিবস্ত্র করে উল্লাস করা হয়।
রাষ্ট্রের প্রশাসন জাতীয় জীবনে ইঞ্জিনের কাজ করে। এটি যেদিকে যায় জাতিও সেদিকে যায়। মুসলিম দেশগুলী আজ যে ধর্ম ছেড়ে বিপথে এগিয়েছে সেটি ধর্মপরায়নদের দখলে প্রশাসন না থাকার ফলে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাফল্যের বড় কারণ, চালকের সিটে স্বয়ং নবীজী (সাঃ) বসেছিলেন। এবং তাঁর মৃত্যুর পর খোলাফায়ে রাশেদার ন্যায় মহান ব্যক্তিগণ বসেছিলেন। এটিই ইসলামের বিশাল ঐতিহ্য। আজকের মুসলিমদের প্রচণ্ড ব্যর্থতা হলো, ইসলামের সে মহান ঐতিহ্যকে তারা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। যে আসনে বসেছেন খোদ নবীজী (সা:), সে আসনে বসেছে ভোটচোর ও স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তরা। ফলে ব্যর্থতা উপচে পড়ছে প্রতি ক্ষেত্রে। এটি সত্য, ধর্মের নামে অধর্ম ইতিহাসে প্রচুর হয়েছে। অনেক সময় খাদ্যের নামে অখাদ্যেরও তান্ডব হয়। তাই বলে খাদ্যকে অস্বীকার করলে দেহ বাঁচে না। তেমনি ধর্মকে অস্বীকার করলে মানবতাও বাঁচে না। তখন বিধস্ত হয় মূল্যাবোধ, নীতিবোধ, শান্তি ও শৃঙ্খলা। আরবের অসভ্য মানুষগুলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হয়েছিল ইসলামের কারণেই।
রাষ্ট্রের ভাগ্য পরিবর্তনে মহান আল্লাহতায়ারও নীতি আছে। যারা তাঁর পক্ষ নেয়, তিনিও তাদের পক্ষ নেন। যারা তাকে সাহায্য করে তিনিও তাদের সাহায্য করেন। পবিত্র কোর’আনে সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে,“ইয়া আয়য়ুহাল্লাযীনা আমানু ইন তানছুরুল্লাহা ইয়ানছুরুকুম ওয়া ইউছাব্বেত আকদামাকুম”; অর্থ: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের প্রতিষ্ঠা দিবেন।” –(সুরা মুহম্মদ, আয়াত ৭)। অতএব মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য পাওয়ারও শর্ত আছে। শর্তটি হলো তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে সাহায্যকারী হতে হবে। তার এজেন্ডাকে নিজেদের এজেন্ডা রূপে গ্রহণ করতে হবে। আর যারা মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য পায় তাদের বিজয় কি কেউ রুখতে পারে? কারণ সকল বিজয় তো একমাত্র তাঁর থেকেই আসে। যেমন বলা হয়েছে, “ওয়া মা নাছরু ইল্লা মিন ইন্দিল্লাহ” অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো থেকে বিজয় আসে না।” –(সুরা আনফাল, আয়াত ১০ )। অথচ ধর্মনিরপেক্ষের প্রবক্তাদের পক্ষ থেকে জঘন্য অপরাধটি সংঘটিত হয় এ ক্ষেত্রটিতে। তারা বাধা দেয় মুসলিমদের মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ নিতে ও তার সাহায্যকারী হতে। এবং নিষিদ্ধ করে তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ। কাফেরদের সাথে সুর মিলিয়ে জিহাদকে বরং বলে সন্ত্রাস। এভাবে বিফলে করে দেয় মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যপ্রাপ্তি। বরং উল্টো, জনগণকে তারা শয়তানী প্রজেক্টের সাহায্যকারী করে। ফলে ডেকে আনে পরাজয় ও অপমান।
একটি দেশ কখনোই মশামাছি, হিংস্র জন্তু-জানোয়ার বা কোন জীবাণূ-বাহিত মহামারীর কারণে ধ্বংস হয়না। বরং ধ্বংস হয়, মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিপক্ষ রূপে এবং শয়তানে পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে। একারণেই আদ-সামুদের ন্যায় বহু জাতি অতীতে ধ্বংস হয়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশে ন্যায় দেশগুলোতে সেক্যুলারিস্টগণ সেরূপ ভয়ানক বিপদ ডেকে আনছে ধর্মনিরপেক্ষতার লেবাসে। ফল দেশ পরিণত হয়েছে জনগণকে জাহান্নামে টানার বাহনে। ফলে জনগণের দায়ভারটি মশামাছি, হিংস্র জন্তু বা জীবাণূ নির্মূল নয়, বরং দেশের শাসন ক্ষমতা থেকে সেক্যুলারিস্টদের নির্মূল। মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা, তাঁর দ্বীনের বিজয় আনা এবং মুসলিমদের গৌরব বৃদ্ধির এছাড়া ভিন্ন পথ আছে কি? ১ম সংস্করণ ০৫/১১/২০০৬; ২য় সংস্করণ ০৩/০১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018