ঈমান যে বেঁচে আছে সেটি ভোট দিয়ে প্রমাণ করুন

ফিরোজ মাহবুব কামাল

ভোট দেওয়া মানে কোন প্রার্থীর পক্ষে সাক্ষী দেয়া। এ সাক্ষী দেওয়ার মধ্য দিয়ে একজন ভোটার যেমন ভয়ানক কবিরা গুনাহ করতে পারে, তেমনি বিশাল সওয়াবের কাজও করতে পারে। কবিরা গুনাহ তখন হয় যখন কোন কোন খুনি, ধর্ষক, গণহত্যাকারী ও দুর্বৃত্ত জালিমকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করা হয়। একটি ইসলামে হারাম এবং শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ। অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে নিজ হাতে খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি করার অপরাধে নয়, বরং খুনি,‌‌ ধর্ষক, জালেম, দুর্বৃত্ত ও গণহত্যাকারীদের পক্ষে স্বাক্ষ্য দেওয়ার কারণে। ফিরাউন হওয়াই শুধু অপরাধ নয়, ফিরাউনের সমর্থক হওয়াও গুরুতর অপরাধ। উভয় পক্ষই জাহান্নামে যাবে। তাই গুরুতর অপরাধী তারাও যারা গণহত্যাকারী ইসরাইলের সমর্থক। গণহত্যার সমর্থণকারীরা বিপুল সংখ্যায় আছে বলেই নৃশংস গণহত্যায় ইসরাইল আজ এতোটা বেপরোয়া। থামবার নাম নিচ্ছে না।                                             

ভোট দেয়ার মধ্য দিয়ে বিশাল সওয়াবের কাজটি তখন হয় -যখন জুলুম, দুর্বৃত্তি ও গণহত্যার নায়কদের ও তাদের সমর্থকদের পরাজয় ঘটনা হয়। ‌এবং বিজয়ী করা হয় সত্য, সুবিচার ও ন্যায়ের পক্ষের লোকদের। মহান আল্লাহতায়ালা, তাঁর রাসূল ও তাঁর সত্য দ্বীনের পক্ষে সাক্ষী দেওয়ার মধ্য দিয়ে মুসলিম জীবনের শুরু হয়। এরপর আমৃত্যু চলতে হয় প্রতি পদে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এবং জুলুমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে। এটি ইসলামে ফরজ ইবাদত। মুসলিম নির্বাচনে অংশ নেয় -সে পবিত্র ইবাদতের তাড়না নিয়ে।

বিলেতে সামনে নির্বাচন হতে চলেছে। এ নির্বাচনে পরীক্ষা হবে -কে কতটুকু ঈমান, বিবেক ও মানবতা নিয়ে বেঁচে আছে সেটির। এ পার্লামেন্টারি নির্বাচনে এমন বহু প্রার্থী খাড়া হয়েছে -যারা গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার পক্ষে। তারা অর্থ, অস্ত্র ও কুটনীতি দিয়ে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলকে। ইসরাইল ইতিমধ্যেই ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনীদের হত্যা করেছে। বহু শিশুকে তারা জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। গাজা’র শতকরা ৭০ ভাগের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সে ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে আছে বহু হাজার শিশু ও নারী-পুরুষ -যারা গণনায় আসেনি।

লেবার পার্টি এবং কনজারভেটিভ পার্টি -বিলেতের এ দুটি প্রধান দলই ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইলী গণহত্যাকে সমর্থন করে যাচ্ছে। অতএব এ দুটি পার্টিকে সমর্থন করার অর্থ, ইসরাইলের গণহত্যাকে সমর্থন করা। যার মধ্যে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে এবং বেঁচে আছে বিবেক -সে কি কখনো এই গণহত্যার সমর্থকদের ভোট দিতে পারে? তাদেরকে ভোট দেয়ার অর্থ ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধে উৎসাহ দেয়া।

কোন বিবেকবান ও ঈমানদার মানুষই পশুর ন্যায় বোবা ও নিষ্ক্রিয় হয় না। পশুর সামনে খুন, ধর্ষণ বা গণহত্যা হলেও পশু নিন্দা করে না। ফিলিস্তিনে চলছে নৃশংস গণহত্যা। একত্র পশুরাই এরূপ নৃশংসতা দেখে নিশ্চুপ থাকতে পারে। বিবেকবান ও ঈমানদার মানুষেরা সাধ্যমত প্রতিবাদে নামে। আগামী নির্বাচনে ঈমানের পরীক্ষা হবে বিলেতে বসবাসকারী প্রতিটি মুসলিম ভোটারের। এ পরীক্ষায় যদি তারা পাস করতে চায় তাহলে অবশ্যই সেসব প্রার্থীদের ভোট দিতে হবে -যারা ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ করতে চায়। যাদের বিবেক মৃত এবং যারা ঈমান শূন্য -একমাত্র তারাই ইসরাইলের সমর্থক লেবার ও কনজারভেটিভ প্রার্থীদের ভোট দিতে পারে । 

নির্বাচন মানেই ঈমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় পাশের মধ্যেই প্রকৃত ঈমানদারী। যারা ইসরাইলী গণহত্যার পক্ষে -সেসব অপরাধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে প্রমাণ রাখুন যে, আপনার ঈমান এখনও বেঁচে আছে। বিজয়ী করুন ফিলিস্তিনের পক্ষের ও গণহত্যার বিরুদ্ধের প্রার্থীকে। খুঁজে বের করুন, কে আপনার এলাকায় ফিলিস্তিনের পক্ষের প্রার্থী। তাকে বিজয়ী করায় সাধ্যমত চেষ্টা করুন। এটি কোন মামূলী বিষয় নয়। ‌বিলেতে মাটিতেই এটিই হলো আপনার পবিত্র লড়াই। মনে রাখবেন, আপনি কার পক্ষে ভোট দিচ্ছেন সেটি মহান আল্লাহতায়ালা দেখছেন। গণহত্যার পক্ষের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিজের উপর আল্লাহর আযাব ডেকে আনবেন না।  ২৭/০৬/২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *