উপেক্ষিত সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং বাঙালী মুসলিমের বিপর্যয়
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 21, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
উপেক্ষিত ফরজ বিধান
শুধু পানাহারে বাঁচার মধ্যে মাহত্ম্য বা শ্রেষ্ঠত্ব নাই। তেমন বাঁচা পশুরাও বাঁচে। মানবের বাঁচার মধ্যে লাগাতর যুদ্ধ থাকতে হয়। যুদ্ধ দুই রকমের। এক). অস্ত্রের যুদ্ধ; দুই). বুদ্ধিবৃত্তির যুদ্ধ তথা সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। অস্ত্রের যুদ্ধটি হয় গোলাবারুদ নিয়ে হয় রণাঙ্গণে। তাতে নিহত হয় আসংখ্য মানুষ; বিধ্বস্ত হয় বহু জনপদ। অপর দিকে বুদ্ধির যুদ্ধটি হয় কোটি কোটি মানবের চেতনার রাজ্য জুড়ে। বুদ্ধির যুদ্ধে বিনা রক্তপাতে একটি বিশ্বাস বিজয়ী হয়, এবং অনেক বিশ্বাস পরাজিত হয়। বিজয়ী বিশ্বাসটি কোটি কোটি মানুষের ভূবনে রাজত্ব করে। তাতে পাল্টে যায় বিজিত মানুষের বিশ্বাস, জীবনবোধ, রুচিবোধ ও সংস্কৃতি। অস্ত্রের যুদ্ধে বিরতি আছে। কিন্তু বুদ্ধির বা সাংস্কৃতিক যুদ্ধে বিরতি নাই। বুদ্ধির যুদ্ধটি যেমন অন্যের বিভ্রান্ত বিশ্বাস ও চেতনার বিরুদ্ধে করতে হয়, তেমনি করতে হয় নিজের বিশ্বাসের ভ্রষ্টতা, অসুস্থ্য চেতনা ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে। এটিকেই বলা হয় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। এ জিহাদ হলো মুসলিম রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠার লড়াই। বুদ্ধির যুদ্ধে অস্ত্রটি হলো ইসলামী জ্ঞান এবং সে জ্ঞানসমৃদ্ধ বই। পবিত্র কোর’আন হলো এ যুদ্ধে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। মানব সৃস্টির জন্য এটিই হলো মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান। এ অস্ত্রটির প্রয়োগ ছাড়া নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে বিজয়ী হওয়া অসম্ভব। অস্ত্রের যুদ্ধ জ্ঞানহীন মুর্খও করতে পারে। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ তার দ্বারা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহতায়ালা চান তাঁর প্রতিটি ঈমানদার বান্দা বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদে জয়ী হোক এবং জান্নাতের যোগ্য রূপে গড়ে উঠুক। এজন্যই তিনি প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর যে ইবাদতটি সর্ব প্রথম ফরজ করেছেন সেটি হলো পবিত্র কোর’আন থেকে জ্ঞানার্জন। পবিত্র কোর’আন “ইকরা” অর্থাৎ “পড়ো” নবীজী (সা:)’র উপর প্রথম হুকুম হওয়ার প্রেক্ষাপট তো এটাই।
পবিত্র কোর’আনের সুরা বালাদ’য়ে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, “লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি কাবাদ”। অর্থ: “নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করেছি লড়াই নিয়ে বাঁচার মধ্যে।” তাই যুদ্ধ নিয়ে বাঁচার মধ্যেই মানুষের ফিতরাত। সেটি যেমন সমাজের চলমান অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, তেমনি নিজের নাজায়েজ খায়েশাতের বিরুদ্ধে। তাই জালেমের দুর্বৃত্তি ও নিজের দুষ্ট প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লাগাতর যুদ্ধ না থাকলে মানবতা বাঁচে না। তখন অসম্ভব হয় সভ্যতর সভ্যতার নির্মাণ। যুদ্ধ তো সবাই করে। অসংখ্য যুদ্ধ হয় ভাষা, বর্ণ, গোত্র, অঞ্চল, রাজা ও দলের নামে এবং তাতে মৃত্যু হয়েছে কোটি কোটি নারী,পুরুষ ও শিশু। বিধ্বস্ত হয়েছে বহু নগর-বন্দর। কিন্তু ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদানটি হলো, মানুষ জীবনে বাঁচার লক্ষ্য যেমন বেঁধে দিয়েছে, তেমনি বেঁধে দিয়েছে যুদ্ধেরও একটি পবিত্র লক্ষ্য। সেটি হলো, প্রতিটি যুদ্ধটিকে হতে হয় একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার পথে। পবিত্র কোর’আনের পরিভাষায় ঈমানদারের প্রতিটি যুদ্ধকেই হতে হবে “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ”। এর অর্থ দাঁড়ায়, যুদ্ধ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’র সংজ্ঞায় উত্তির্ণ না হলে সে যুদ্ধটি গণ্য হয় শতভাগ হারাম যুদ্ধ রূপে। এমন হারাম যুদ্ধে জানমালের বিনিয়োগও হারাম; এবং সে হারাম বিনিয়োগ ব্যক্তিকে জাহান্নামে নেয়। কারণ, এরূপ হারাম যুদ্ধে ঘটে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া শ্রেষ্ঠ আমানতের নিকৃষ্ট খেয়ানত।
সার্বক্ষণিক যুদ্ধ নিয়ে বাঁচার ইসলামী দর্শনকে অতি সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন দার্শনিক কবি আল্লামা মহম্মদ ইকবাল। তিনি তাঁর এক কবিতায় লিখেছেন, “জিস মে না হো কাশমোকাশ, মউত হায় হো জিন্দেগী; রুহে উমাম কি হায়াত, কাশমোকাশই ইনকিলাব।” অর্থ: “যার মধ্যে লড়াই নাই, সে তো মৃত; উম্মাহর হায়াত ও বিপ্লব তো লড়াইয়ের মধ্যে।” মুসলিমকে তাই শুধু জালেমের বিরুদ্ধে অস্ত্রের যুদ্ধ করলে চলে না। তাঁকে লড়তে হয় নিজের এবং সে সাথে কোটি কোটি মানুষের চেতনার ভূমিতেও। এ লড়াইয়ে লড়াকু সৈনিকের কলমের কালীকে নবীজী (সা:)’র শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র বলেছেন। এ বিরামহীন যুদ্ধই হলো সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। প্রশ্ন হলো সংস্কৃতি কি? মানুষ যেভাবে ভাবে ও বাঁচে সেটিই সংস্কৃতি। সংস্কৃতি হাওয়ায় গড়ে উঠে না। সেটি গড়ে উঠে চেতনা রাজ্যে ও বাঁচার মধ্যে উচ্চতর ও সভ্যতর পরিশুদ্ধি আনার লাগাতর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। উচ্চতর সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠে পরিশুদ্ধ মানব এবং উচ্চতর সভ্যতা। পশুর জীবনে পরিশুদ্ধি নাই, ফলে পশু সমাজে সংস্কৃতিও গড়ে উঠে না। তবে পরিশুদ্ধির সে প্রক্রিয়াটি অচল বা বিলুপ্ত হতে পার মানব জীবনেও। তখন বন্ধ হয়ে যায় উন্নত মানুষ গড়ার সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্প। মানব সন্তান তখন পশুর চেয়েও নীচে নামতে পারে। পবিত্র কোর’আনে এমন মানবদেরকেই পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। পবিত্র কোর’আনের বর্ণনায় সেটি হলো: “উলাইয়িকা কা’আল আনয়াম, বাল হুম আদাল” অর্থ: এরাই হলো গবাদি পশু, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। গুম, খুন, গণহত্যা ও গণনির্যাত জঙ্গলে থাকে না, কিন্তু যখন সেটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়, তখন বুঝা যায় পশুদের চেয়েও মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে। এবং বুঝা যায়, সভ্য মানব নির্মাণের প্রক্রিয়া দেশটিতে কতটা অচল।
পানাহারে বাঁচা বা পেশায় সাফল্য নিয়ে বাঁচাটাই জীবনের সবকিছু নয়। বরং কীভাবে বাঁচা হলো এবং জীবনের পথচলাটি জান্নাতের পথে হলো না জাহান্নামের পথে হলো –সেটিই তো মূল প্রশ্ন। রোজ হাশরের বিচার দিনে মূল বিচারটি হবে বাঁচার সে পথ ও প্রক্রিয়া নিয়ে। তাই পরকালের পরীক্ষায় উত্তির্ণ হতে হলে বাঁচার পথ ও প্রক্রিয়ায় সঠিক হতে হয়। সংস্কৃতির অপরিসীম গুরুত্ব তো একারণেই। কারণ, বাঁচার পথ ও প্রক্রিয়ায় কাঙ্খিত পরিশুদ্ধি আনা এবং প্রতিপদে সিরাতুল মুস্তাকীম দেখানোই সংস্কৃতির কাজ। দেশের জলবায়ু, আবহাওয়া ও ভৌগলিক প্রকৃতি নির্ধারণ করে সেখানে কি ধরণের উদ্ভিদ ও প্রাণী বাঁচবে বা বেড়ে উঠবে। কিন্তু একটি জনগোষ্ঠির ধর্মীয়, নৈতিক ও চারিত্রিক পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠাটি নির্ভল করে সংস্কৃতির উপর। বস্তুত মানবের সবচেয়ে বড় পরিচয়টি হলো তার সাংস্কৃতিক পরিচয়। মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও ঈমান-আক্বীদা দেখা যায় না, সেগুলো দর্শনীয় হয় সংস্কৃতির মধ্যে। সে বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠার পরিবেশ নিশ্চিত করতেই প্রয়োজন পড়ে সাংস্কৃতিক যুদ্ধের। ঈমানদারের জীবনে সে যুদ্ধটি হলো মানব সৃষ্টির মূল্য উদ্দেশ্যটি নিয়ে বাঁচার। মুসলিম জীবনে একমাত্র তখনই সুযোগ আসে মুসলিম রূপে বাঁচার। তাই শুধু দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে মু’মিনের ঈমানী দায়ভার শেষ হয় না; এবং শেষ হয় না কাফের শক্তির বিরুদ্ধে শুধু সামরিক ও রাজনৈতিক বিজয়ের মধ্য দিয়েও। তাঁকে আরো বহুদূর এগোতে হয়। লাগাতর জিহাদে নামতে হয় ইসলামী সংস্কৃতির নির্মাণে। সে যুদ্ধটি না থাকলে বিলুপ্ত হয় বহু রক্তে অর্জিত সামরিক ও রাজনৈতিক বিজয়।
মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ও শয়তানের এজেন্ডা
প্রতিটি যুদ্ধেই দুইটি পক্ষ থাকে। দুইটি এজেন্ডাও থাকে। তেমনি দুইটি প্রতিদ্বন্দী এজেন্ডা আছে সাংস্কৃতিক যুদ্ধের অঙ্গণেও। একটি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা, অপরটি শয়তানের এজেন্ডা। মহান আল্লাহতায়ালার কোর’আনে ঘোষিত চুড়ান্ড এজেন্ডাটি হলো: “লি’ইয়ুযহিরাহু আলাদ্দিনি কুল্লিহি” অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপর তার দ্বীন তথা ইসলামের বিজয়। কীভাবে বাঁচা হয় সেটিই যেহেতু সংস্কৃতি –তাই সংস্কৃতি ইসলামীকরণ হলো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা। তাই শুধু কালেমা পাঠ ও নামায-রোযা শেখানোর মধ্য দিয়ে ইসলামের কাজ শেষ হয়না। কাউকে অন্ধকারে রেখে তাকে সঠিক পথ দেখানো যায় না। মানব মনের জাহিলিয়াত হলো সভ্যতর মানুষ গড়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তাই মহান আল্লাহতায়ালা চান, অন্ধকার থেকে আলোতে নিতে এবং জান্নাতের পথ দেখাতে। পবিত্র কোর’আনের সুরা বাকারায় মহান রাব্বুল আলামীনের সে অভিব্যক্তিটি ঘোষিত হয়েছে এভাবে: “আল্লাহু ওয়ালীউল্লাযীনা আমানু ইয়ুখরুজুহুম মিনাজ জুলুমাতে ইলান্নূর।” অর্থ: “আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের বন্ধু, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যান।” সুরা তাগুবুনে সেটি আরো সুস্পষ্ট করা বলা হয়েছে এভাবে: “ফা আ’মিনুবিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি ওয়া নূরিল্লাযী আনজালনা”। অর্থ: অতঃপর ঈমান আনো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর এবং সে নূর (কোর’আন)’র উপর -যা আমি নাযিল করেছি। অতএব সুস্পষ্ট, অন্ধকার থেকে আলোতে নেয়ার মূল মাধ্যমটি হলো পবিত্র কোর’আন। অপর দিকে শয়তানের এজেন্ডাটিও সুস্পষ্ট। সেটি হলো, আলো থেকে অন্ধকারে নেয়া। পবিত্র কোর’আনের ভাষায় সেটি হলো: “ইয়াখুরুজুনাহুম মিনান্নূরি ইলাজ জুলুমাত।” অর্থ: শয়তান তাদেরকে নেয় আলো থেকে অন্ধকারে।
মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার দায়িত্ব প্রতিটি ঈমানদারের। এ কাজের জন্যই তারা তাঁর খলিফা। অপরদিকে এবং শয়তানের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে তার খলিফা বেঈমানেরা। যে ভূমিতে ইসলাম আছে, সে ভূমিতে শয়তান থাকে এবং তার এজেন্ডা নিয়ে তার খলিফাও থাকে। ফলে যুদ্ধ অনিবার্য। এবং সে যুদ্ধটি যেমন রাজনৈতিক ও সামরিক, তেমনি সাংস্কৃতিক। রণাঙ্গণে যার হাতে অস্ত্র থাকে সেই যোদ্ধা। তেমনি সাংস্কৃতিক যুদ্ধে যার হাতে কলম থাকে এবং যে কথা বলে, লেখে ও বুদ্ধিবৃত্তির সামর্থ্য রাখে -সেও যোদ্ধা। বাংলাদেশে বহু বু্দ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক, আলেম এ রণাঙ্গণে কাজ করছে সাংস্কৃতিক যোদ্ধা রূপে। প্রশ্ন হলো, তারা যুদ্ধ লড়ছে কোন পক্ষকে বিজয়ী করতে? যুদ্ধের এ ময়দানে মূল শত্রু হলো অসত্য, অন্যায়, দুর্বৃত্তি ও তার নায়কেরা। দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতির ময়দানে শয়তান হাজির তার এজেন্ডা নিয়ে। দেশে গুম, খুন, দুর্নীতি, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি ও ধর্ষণের যে তান্ডব -তা কি প্রমাণ করে না দেশে বিজয়ী পক্ষটি হলো শয়তানের পক্ষ? এ পক্ষের বিজয়ের ফলে জনগণ আলোতে না এসে প্রবেশ করছে অন্ধকারে। দেশে কতখানি বই লেখা হলো, কত ঘন্টা বক্তৃতা দেয়া হলো, কতজন ডিগ্রি নিয়ে বের হলো –সেটিই বড় কথা নয়। বরং কতজন মানুষ সে লেখা পড়ে বা বক্তৃতা শুনে দুর্নীতিমুক্ত সৎ জীবন পেল সেটিই মূল।? বাংলাদেশে যারা সাংস্কৃতিক যোদ্ধা –এক্ষেত্রে তাদের সাফল্য কতটুক? আজ দেশে যেরূপ শয়তানী শক্তির বিজয়-উৎসব -তার জন্য কি তারা দায়ী নয়?
হয়নি সাংস্কৃতিক কনভার্শন
বাংলায় মুসলিমদের সামরিক বিজয় আসে ত্রয়োদশ শতকের গোড়ার দিকে। কিন্তু সে সামরিক বিজয়ের সাথে সাংস্কৃতিক বিজয় আসেনি। এর কারণ, ইসলামের বিজয় আসেনি বাঙালী মুসলিমের চেতনার ভূমিতে। এ সাংস্কৃতিক ব্যর্থতাই নানারূপ রাজনৈতিক সংকট জন্ম দিয়েছে। সাংস্কৃতিক ব্যর্থতার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। সেটি বাঙালী মুসলিম মহিলাদের পোষাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে তারা হিন্দু মহিলাদের থেকে ভিন্নতর হতে পারিনি। ফলে অন্য মুসলিম দেশ থেকে একজন অবাঙালী মুসলিমের কাছে অসম্ভব হয় হি্ন্দু মহিলা থেকে বাঙালী মুসলিম মহিলাকে চেনা। পানাহারে যেমন হারাম-হালাল আছে, পোষাকেও তেমন হালাল-হারাম আছে। পোষাকে হিজাবের ফরজ বিধানটি কতটুকু পালিত হলো –সেটির মধ্যে প্রকাশ পায় সত্যিকার ঈমানদারী। শাড়ি পরিধান করে পেট ও পিঠের কিছু অংশ উলঙ্গ রাখা হিন্দু মহিলাদের জন্য হারাম নয়। কিন্তু মুসলিম মহিলাদের জন্য মুখ ও হাতের কবজি ছাড়া এক ইঞ্চি উলঙ্গ রাখাও তো শতভাগ হারাম। এতে হয় কবিরা গুনাহ। পরিতাপের বিষয় হলো, সমগ্র মুসলিম বিশ্বে বাঙালী মহিলাগণই একমাত্র ব্যতিক্রম যারা পৌত্তলিক কাফেরদের পোষাককে পর্যন্ত বর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অথচ ইসলাম শুধু ধর্মান্তর চায় না, চায় পুর্ণ সাংস্কৃতিক কনভার্শন। চায় ,পানাহার, পোষাক-পরিচ্ছদ ও আচার-আচরণে ইসলামের সাথে পূর্ণ সঙ্গতি। তাই কোন হিন্দু মুসলিম হলে শুধু মুর্তিপূজা ছাড়লে চলে না; তাকে পোষাক-পরিচ্ছদসহ চিন্তা-চেতনার পুরা মডেলটিও পাল্টাতে হয়। ঈমানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পূর্ণ-বিপ্লব চাই সংস্কৃতির অঙ্গণেও। অথচ বাঙালী মুসলিমের জীবনে সে বিপ্লব আসেনি। ফলে দারুন অপূর্ণাঙ্গতা রয়ে গেছে মুসলিম হওয়ায়। বাঙালী মুসলিম জীবনে জাতপাতের নামে হিন্দু বৈষম্যের রীতিকে যে কতটা বিজয়ী তার একটি উদাহরণ দেয়া যাক। সেটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। যার কাজ সব সময় হেঁসেলে সে হেঁসেলের গন্ধ টের পায়না। অথচ অন্যরা ঘরে ঢুকলেও টের পায়। মুসলিম সংস্কৃতি নিয়ে বাঙালী মুসলিমের বেড়ে উঠায় ব্যর্থতা আমার চোখে প্রকট ভাবে প্রথম ধরা পড়ে ইরানে গিয়ে। বাংলাদেশে থাকতে বিষয়টি আমার মনে এতটা জোরে কখনোই ধাক্কা দেয়নি। সেটি ১৯৮০ সালের মাঝামাঝির কথা। তখন আমি ইরানের এক জেলা হাসপাতালের ডাক্তার। আমার এলাকার এমপি ছিলেন ইরানে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডক্টর হাসান রুহানী। উনার সাথে একদিন প্রায় ৫ ঘন্টা একত্রে কাটানোর সুযোগ আসে। এক সাথে একই গাড়িতে ভ্রমনও করি।
ঐ সময়ের মধ্যে তিনি উনার পৈত্রিক বাড়াতি নিয়ে পিতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। রাতের দাওয়াতে উনার এক কাজিনের বাসায় নিয়ে যান। সে রাতে আমার কালচারাল শক হয় -যখন উনি উনার কাজিনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন এ বলে যে, তিনি এ শহরের একজন নাপিত। আমার বিস্ময়ের কারণ, আমি বাংলাদেশে কখনোই কোন বাঙালী মুসলিমকে নাপিতের কাজ করতে দেখেনি। এ কাজ করে নিন্ম বর্ণের হিন্দুরা। অনুরূপ কালচারাল শক হয়েছিল আরেক দিন। যখন আমার হাসপাতালের এ্যাকাউনটেন্ট বল্লেন, তাঁর পিতা হাসপাতালের একজন ঝাড়ুদার। বাংলাদেশে ঝাড়ুদার বা জমাদারের কাজও কোন বাঙালী মুসলিমকে কোন দিন করতে দেখেনি। প্রতিটি কাজই যে মর্যাদা আছে –বাঙালী মুসলিমগণ ইসলামে সে সনাতন সংস্কৃতি নিয়ে বেড়ে উঠতে যে কতটা ব্যর্থ হয়েছে –সেটিই সেদিন আমার কাছে অতি সুস্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। নামায-রোযা সত্ত্বেও হিন্দু চেতনা বেঁচে আছে সংস্কৃতিতে। মুর্তি নির্মাণ ও পূজা বাঙালী মুসলিমে মাঝে অবার যেভাবে ফিরে আসছে -তা তো সংস্কৃতিতে হিন্দুত্বের প্রভাব থাকার কারনেই। তাছাড়া কাজ না করে বরং ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি লক্ষ লক্ষ বাঙালী মুসলিমের যে আকর্ষণ –সেটির মূল কারণও হিন্দু সাধু-সৈন্যাসীদের প্রভাব। শ্রী চৈতন্যদেব থেকে স্বামী বিবেকান্দ পর্যন্ত অধিকাংশ সাধু-সৈন্যাসীই ছিলেন ভিক্ষুক। অথচ ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তি হলো সবচেয়ে ঘৃণ্যতম পেশা। উত্তম রিযিক তো তাই যা ব্যক্তি নিজে উপার্জন করে খায়। নবীজী (সা:)’র কোন সাহাবী ভিক্ষুক ছিলেন -তার কোন প্রমাণ নেই।
শূণ্যতা সাংস্কৃতিক যুদ্ধের হাতিয়ারে
সংস্কৃতি হলো মানুষকে সভ্যতর করার শিল্প। মানুষ সভ্যতর হয়, সমাজ সামনে এগোয় এবং রাষ্ট্র সমৃদ্ধতর হয় -এ মহৎ শিল্পটির গুণেই। বাংলাদেশে আজ যে অবাধ ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন এবং সন্ত্রাসের সয়লাব -এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও যে ভাবে মানুষ খুন হয়, সেটিই প্রমাণ করে এ সৃষ্টিশীল শিল্প দেশটিতে গড়ে উঠেনি। বরং চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, দেশে মানুষকে অসভ্য, অশ্লিল ও খুনি করার শিল্প অর্থাৎ অপসংস্কৃতি কতটা বিজয়ী। এবং সে অপসংস্কৃতি হাওয়ায় গড়ে উঠেনি, বরং জন্ম দিয়েছে এবং প্রতিপালন পেয়েছে দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং সে সাথে দেশের রাজনীতিতে। ডাকাত সর্দার যেমন ডাকাত জন্ম দেয়, তেমনি ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তগণ দুর্বৃত্তের উৎপাদন বাড়িয়েছে।
দেশের অস্ত্রের ভান্ডারে গোলাবারুদ, ট্যাংক, যুদ্ধ বিমান ইত্যাদির আয়োজন দেখেই বুঝা যায় যুদ্ধের জন্য দেশটির প্রস্তুতি কতটুকু। তেমনি সাংস্কৃতিক যুদ্ধের অস্ত্রের ভান্ডারের সামগ্রী দেখে বুঝা যায় সাংস্কৃতিক যুদ্ধের প্রস্তুতি কতটুকু। সাংস্কৃতিক যুদ্ধের মূল অস্ত্রটি হলো বই। এ দিক দিয়ে বাঙালী মুসলিমদের ভান্ডারটি প্রায় শূণ্য। সাংস্কৃতিক যুদ্ধের এ কাজটি কখনোই গোলাবারুদে হয়না। সামরিক, রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ক্যাডারদের দিয়েও হয় না। সে জন্য চাই জ্ঞান-সমৃদ্ধ বইয়ের বিশাল ভান্ডার। চাই জ্ঞানবান মানুষের বিশাল লড়াকু বাহিনী। জ্ঞানই মনের রাজ্যে বিপ্লব আনে। এবং মনের রাজ্যে বিপ্লব আসলেই বিপ্লব আসে চরিত্র, আচরণ, কর্ম ও সংস্কৃতিতে। মুসলিমগণ অতীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রের মানব রূপে যে ভাবে বেড়ে উঠতে পেরছিলেন -তার মূলে ছিল জ্ঞানের রাজ্যে অভূতপূর্ব বিপ্লব। ইসলামের প্রথম দিন থেকেই মুসলিমগণ যত্নবান ছিলেন জ্ঞানের ভূবনে লাগাতর সমৃদ্ধি আনায়। পবিত্র কোর’আনের পূর্বে আরবী ভাষায় কোন গ্রন্থ্যই ছিল না। অথচ শত বছেরর মধ্যেই মুসলিমগণ আরবীকে ভাষাকে পরিণত করেন বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষায়। নবীজী(সা:)’র হাদীস: তার জন্য ধ্বংস, যার জীবনে ২টি দিন অতিবাহিত হলো অথচ তাঁর জ্ঞানের ভান্ডারে কোন সমৃদ্ধি এলোনা।” তিনি আরো বলেছেন, জ্ঞানলাভে সম্ভব হলে চীনে যাও। চীনে ইসলামী জ্ঞানের ভান্ডার ছিল না। ইসলাম শুধু কোর’আন-হাদীসের গবেষণার উপর গুরুত্ব দেয় না, গুরুত্ব দেয় ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল, চিকিৎসা শাস্ত্র, কারিগরী ও অন্যান্য শাখায় জ্ঞানার্জনেও -নবীজী (সা:)’র উপরুক্ত হাদীস তো সেটিই দলীল। তাছাড়া বদরের যুদ্ধের কাফের বন্দীদের মুক্তি দিয়েছিলনে এ শর্তে যে তারা মুসলিমদের জ্ঞানদান করবে। সেটিও কোন ইসলামী জ্ঞান ছিল। ইসলাম শুধু কোর’আনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ মুসলিমই গড়তে চায়না, গড়তে চায় সমৃদ্ধ সভ্যতার নির্মাণ। লড়াই এখানে অন্যান্য প্রবল জাতিগুলির সাথে। এ লড়াইয়ে জিততে হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোন শাখায় কি পিছিয়ে থাকা যায়?
অথচ বাংলা ভাষায় বিগত ৮ শত বছরের মুসলিম ইতিহাসে জ্ঞানের ভান্ডারে তেমন কিছুই যোগ হয়নি। মাত্র ৭০ বছর আগেও ইসলামী সাহিত্যের ভান্ডার বলতে বুঝা তো নামায শিক্ষার বই মকছুদোল মো’মিনীন, দোয়া-দরুদের বই নেয়ামুল কোর’আন, নজিবুল্লাহর আনোয়ারা উপন্যাস এবং কিছু পুথি সাহিত্য। মীর মোশাররফ হোসেন বিষাদ সিন্ধু লিখলেও সেটি কে ইসলামী সাহিত্য বলা যায় না। সেটি ছিল কল্পকাহিনী-নির্ভর সাহিত্যের খাতিরে সাহিত্য। বইটি মুসলিমদের চেতনাকে ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে লেখা হয়নি। অতিশয় পরিতাপের বিষয়, ৭ শত বছরে মুসলিম ইতিহাসে বাংলা ভাষায় পবিত্র কোর’অআনের কোন অনুবাদও লেখা হয়নি। তরজমা হয়নি কোন হাদীস গ্রন্থ্য। ফলে বাঙালী মুসলিমের চেতনার ভূমি অনাবাদীই রয়ে গেছে। কোর’আন থেকে জ্ঞান সংগ্রহের মাত্র দুটি পথ: হয় আরবী ভাষা শিখে অথবা কোর’আনকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনটিই হয়নি। না হয়ছে আরবী ভাষা শিক্ষা, না হয়েছে কোর’আনের অনুবাদ। বাংলা ভাষায় পবিত্র কোর’আনের প্রথম অনুবাদ কোন আলেম করেননি, বরং করেছেন ভাই গিরিশ চন্দ্র নামক একজন হিন্দু। অথচ আলেমদের গর্ব এবং সে সাথে অহংকারও যে, তাদের জন্যই বাংলাদেশে ইসলাম বেঁচে আছে। কিন্তু কোথায় সে নবীজী (সা:)’র ইসলাম? নবীজী (সা:)’র ইসলাম বাঁচলে তো ইসলামী রাষ্ট্র বাঁচতো। বাঁচতো শরিয়তী বিধান, জিহাদ, শুরা-ভিত্তিক শাসন ও ঐক্য। এবং আদালত থেকে বিলুপ্ত হতো কাফেরদের প্রণীত আইন, বিলুপ্ত হতো পতিতাপল্লী, জুয়া, ঘুষ ও নানারূপ দুর্বৃত্তি। এর কোনটাই তো অর্জিত হয়নি। বরং সে লক্ষ্যে কোন চেষ্টাও নাই। ইসলামের নামে যা বেঁচে আছে তা হলো তাদের নিজেদের গড়া পীরতন্ত্র, ফিরকাতন্ত্র, মাজারপূজা, মসজিদ-মাদ্রাসা-মকতবে চাকুরীবাজী এবং ইসলামের নামে রাজনৈতিক দল গড়ে সংসদ সদস্য হওয়ার ফিকির। সাহাবাগণ নিজ অর্থে ঘোড়া, অস্ত্র ও খাদ্য সংগ্রহ করে জিহাদে যেতেন। অথচ আলেমদের অবস্থা এমন অর্থ না দিলে ওয়াজও করেন না। ফলে বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে ইসলামের পরাজয় বাড়লে কি হবে, দেশটিতে রম রমা ব্যবসা হচ্ছে ইসলামের নামে।
শয়তানের মিশন ও স্ট্রাটেজী
মানব জাতির ইতিহাসে শয়তান একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ইসলামের নির্মূলই এর মূল এজেন্ডা। মানব সন্তানদের জাহান্নামে টানাই তার মিশন। সে লক্ষ্যে ধর্ম, রাজনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতির অঙ্গণে রয়েছে শয়তানের নিজস্ব স্ট্রাটেজী। তাই ইসলামের পথে চলতে হলে শয়তানের স্ট্রাটেজীকেও জানতে হয়। শয়তানের ধর্ম কিতাব-নির্ভর নয়, বরং সংস্কৃতি-নির্ভর। সংস্কৃতির ছদ্দবেশে সে ব্যক্তির পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়াকে চিরতরে রুখতে চায়। বাংলাদেশে ইসলামের উপর জঘন্যতম হামলা আসছে এই শয়তানী বাহিনী সাংস্কৃতিক কর্মীদের পক্ষ থেকেই। মৌলবাদ নির্মূল করার নামে এরাই ইসলামকে নির্মূল করতে চায়। এদের কারণে জাতিকে সভ্যতর করার মাধ্যমগুলো আজ বিপর্যস্ত। কবিতা-উপন্যাসের নামে, যাত্রা-নাটক, সিনেমা ও নানারূপ বিনোদনের নামে এরা মানুষের চিন্তা-চেতনাকে দিন দিন অসুস্থ্যতর করছে। ফলে বাড়ছে উলঙ্গতা, বাড়ছে অশ্লিললতা, বাড়ছে নেশাগ্রস্ততা। ফলে বখাটেরা নানারূপ অসভ্য কর্মে উৎসাহ পাচ্ছে। ফলে পাড়ায় পাড়ায় যতই বাড়ছে নাট্যদল, ক্লাব, ভিডিও, সিনেমা হল ততই বেড়ে চলেছে সমাজে অসুস্থ্য মানুষের ভিড়। এদের কারণে ৫০ বছর পূর্বে জাতি নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধের মানদন্ডে যে পর্যায়ে ছিল তার চেয়ে অনেক নীচে নেমেছে। সংস্কৃতি চর্চার নামে এ পতন-প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ইসলামের নির্মূলে শত্রুর একটি তীর ছোড়ার প্রয়োজন পড়বে না। বিপদের আরো কারণ, সাংস্কৃতিক ভিন্নতাই রাজনৈতিক ভিন্নতার জন্ম দেয়। বাংলাদেশ ভারত থেকে পৃথক মানচিত্র পেয়েছে তো সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে। সেটি বিলুপ্ত হলে ভারত থেকে বাংলাদেশের পৃথক থাকার যুক্তি বা ভিত্তিই বিলুপ্ত হবে। ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে স্বাধীন অস্তিত্ব। বাংলাদেশের ভারতপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মীরা বস্তুত সে কাজেই দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এদের প্রতিপালনে একারণেই ভারতের বিপুল বিনিয়োগ।
রণাঙ্গণের যুদ্ধে বিরতী আছে, কিন্তু সংস্কৃতির অঙ্গণের যুদ্ধ বিরামহীন। শয়তানের আগ্রাসন এক্ষেত্রে লাগাতর। লক্ষ্য, মুসলিম সন্তানদের মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাকে বন্ধ করা। লক্ষ্য, চেতনার ভূবনে দুষিত দর্শনের বীজ রোপন। সংস্কৃতির রণাঙ্গণে শয়তানের বাহিনীটি বিশাল। যুদ্ধের ফ্রন্টিয়ারও অনেক। যুদ্ধ চলছে বুদ্ধিবৃ্ত্তি, পত্র-পত্রিকা, টিভি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অঙ্গণে। বাংলাদেশে যত বই লেখা হয়, তার প্রায় ৯০ ভাগের বইয়ের লেখক তারাই। দেশে যত পত্র-পত্রিকা ও টিভি নেটওয়ার্ক তার প্রায় সবগুলোর মালিক তারাই। তাদের লাউড স্পিকার মানুষের শয়ন কক্ষে। সেগুলো কাজ করে দিবারাত্র। বাংলাদেশে ন্যায় মুসলিম দেশগুলোতে ইসলাম যেভাবে পরাজিত এবং শরিয়তের বিধান যেরূপে বিলুপ্ত –সেটি কোন অস্ত্রের যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে হয়নি। সেটি ঘটেছে সাংস্কৃতিক যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে। সে পরাজয়ের ফল হলো, সাংস্কৃতিক অঙ্গণে প্লাবন এসেছে ইসলাম-বিরোধী সংস্কৃতির।
প্রশ্ন হলো, শত্রুর সংস্কৃতি কী রূপে আগ্রাসী হয়? এবং কী রূপে পরিচালিত হয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন? সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের নাশকতাই বা কী? বাস্তবতা হলো, সামরিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসনের চেয়েও অধিক আগ্রাসী হতে পারে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। নিছক সামরিক আগ্রাসনে লুন্ঠিত হয় দেশের সম্পদ, নিহত হয় নারী-পুরুষ এবং বিধ্বস্ত হয় নগর-বন্দর। কিন্তু তাতে জনগণের নিজ ধর্ম ও নিজ সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচা ও বেড়ে উঠাটি পুরাপুরি মারা পড়েনা। এটি গৃহে ডাকাত পড়ার মত। ডাকাতগণ অর্থলুট নিয়েই খুশি হয়। কিন্তু শয়তান শুধু অর্থলুট বা ঘর-বাড়ী ধ্বংস করা নিয়ে খুশি হয়। তার প্রজেক্ট তো মানব সন্তানদের জাহান্নামে নেয়া। তাই সামরিক আগ্রাসনে শয়তানের প্রজেক্ট শেষ হয়না। শয়তান এগোয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে। তখন বিলুপ্ত বা দূষিত হয় একটি জাতির বিপুল সংখ্যক মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও নীতি-নৈতিকতা। এতে মানুষ অযোগ্য হয় জান্নাতের জন্য; এবং যোগ্যতর করে জাহান্নামের জন্য। এজন্যই শয়তানী শক্তির বিশাল বিনিয়োগটি সাংস্কৃতিক অঙ্গণে। সাংস্কৃতিক সে আগ্রাসনে দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পত্র-পত্রিকা, টিভি কেন্দ্রগুলো ব্যবহৃত হয় শয়তানের সৈনিকদের ঘাঁটি রূপ। বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে লাগাতর হামলা হচ্ছে এ ঘাঁটিগুলো থেকেই।
ব্যক্তির অমূল্য সম্পদটি হলো তার আদর্শিক বা নৈতিক সম্পদ। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে একমাত্র এ সম্পদই মূল্য পায়। ব্যক্তির মুসলিম পরিচয়টিও মূলত একটি আদর্শিক বা নৈতিক পরিচয়। আদর্শ বা নীতি এখানে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচার। ঘরবাড়ী, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ অন্যরাও করে। কিন্তু একজন মুসলিমকে প্রতিক্ষণ বাঁচতে হয় তাঁর মুসলিম পরিচয়টি নিয়ে। মুসলিমগণ গৌরবময় যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সেটির মূলে জনবল বা সম্পদের বল ছিল না। সেটির মূলে ছিল তাদের আদর্শিক বা নৈতিক বল। এবং সেটি তারা পেয়েছিল মসজিদ-মাদ্রাসার ন্যায় সাংস্কৃতিক কারখানা থেকে। কিন্তু অপসংস্কৃতির জোয়ারের বিপদটি হলো, তাতে বিধ্বস্ত হয় মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার সে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠাগুলো। পানে সরিয়ে নিলে মাছ মারা যায়, তেমনি মসজিদ-মাদ্রাসা অচল করলে ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠাও বন্ধ হয়। বাংলাদেশে সেটিই হয়েছে। বাংলাদেশী মুসলিমদের জন্য বিপদ হলো নবীজী (সা:)’র আমলের ইসলাম যেমন বেঁচে নাই, তেমনি বেঁচে নাই নবীজী (সা:)’র আমলের মসজিদগুলোও। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ন্যায় মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিষ্ঠানগুলোও অধিকৃত এমন ব্যক্তিদের হাতে -যারা ইসলামের বিজয় নিয়ে ভাবে। তারা বাঁচে নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা নিয়ে নয়। অপর দিকে বিপুল ভাবে এবং দেশে কোনে কোনে বেড়েছে শয়তানের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ইন্ডাস্ট্রী। সেটি বুঝা যায় দেশে চোর-ডাকাত, খুনি, ধর্ষক ও সন্ত্রাসীদের বিপুল উৎপাদন দেখে। ফলে জনগণ বাঁচছে স্রেফ মুসলিম নাম নিয়ে, মুসলিম চরিত্র নিয়ে নয়।
ইসলামের সাংস্কৃতিক এজেন্ডা এবং বাঙালী মুসলিমের ব্যর্থতা
রণাঙ্গনে যেমন অস্ত্রধারী যোদ্ধা চাই, তেমনি সংস্কৃতির নির্মাণ ও পরিচর্যায় চাই বিপুল সংখ্যক কলমধারী যোদ্ধার। চাই, ইসলামী প্রতিষ্ঠান। চাই, কোর’আনী জ্ঞানের গভীরতা। ইসলামী সংস্কৃতি নির্মিত হয় পরিবার, স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদ্রাসায়। সংস্কৃতির নির্মাণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিহার্য। ছেলে মেয়েরা ভালো-মন্দ, শিষ্ঠ-অশিষ্ঠ, শ্লিল-অশ্লিলের পার্থক্য এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে শেখে। এসব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠা উন্নত চরিত্রের মডলগুলোই নীরবে ছেলেমেয়েদের পথ দেখায়। তখন একজন শিশু জানতে পারে, এ জীবনে বাঁচার মূল লক্ষ্যটি কি? শেখে, কি ভাবে সে লক্ষ্যে বাঁচতে হয়? শেখে, বড়দের কিভাবে সমীহ করে চলতে হয়? শেখে, অতিথিকে কিভাবে স্বাগত জানাতে হয় এবং বিদায় দিতে হয়? এরূপ শিষ্ঠাচার শিখতে স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনা। কিন্তু আগ্রাসী অপসংস্কৃতি ইসলামী সংস্কৃতির এ প্রতিষ্ঠানগুলোকেই বিনষ্ট করে দেয়। এবং শয়তানী পক্ষ পাল্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে সংস্কৃতির অঙ্গণে তাদের নিজেদের ধারাকে প্রতিষ্ঠা দিতে। বাংলাদেশে সে শয়তানী ধারাটি এতই বিজয়ী যে কাউকে দেখে “আসসালামু আলাইকুম” বলার ইসলামের অতি মৌলিক রীতিও বহু মুসলিমের সংস্কৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে।
যুদ্ধে জিততে হলে শত্রুর স্ট্রাটেজীকে অবশ্যই বুঝতে হয়। ইসলামের শত্রুপক্ষের প্রধান স্ট্রাটেজীটি ইসলামের মূল বিশ্বাসের উপর হামলা নয়। বরং তারা বিনষ্ট করে ইসলামের বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া বা সংস্কৃতিকে। হামলার লক্ষ্য, ইসলামের সাংস্কৃতিক পাওয়ার হাউসকে বিকল করে দেয়া। বীজকে গজাতে দেওযার পর তাকে বেড়ে উঠার সুযোগ না দিলে সেটি নিস্ফল আয়ু পায় মাত্র, ফল দেয় না। মুসলিমের জন্ম বন্ধ করতে না পারলেও মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাকে তারা বন্ধ করেছে। এবং সেটি ইসলামের সাংস্কৃতিক পাওয়ার হাউসকে বিকল করার মধ্য দিয়ে। শত্রুর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের এটিই হলো বড় সফলতা। ফলে দেড়শত কোটির অধিক মুসলিম ইসলামের বিজয়ে কোন অবদানই রাখতে পারছে না। এহেন নিস্ফল জীবনের সবচেয়ে জ্বাজল্যমান ও নিকৃষ্টতর উদাহরণ হলো বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলমান। মানব উন্নয়নের সফল রোডম্যাপ হলো কোর’আন। বাংলাদেশে সে পবিত্র কোর’আন অক্ষত থাকলেও দেশটি রেকর্ড গড়েছে পশ্চাদপদতায়। ঘিরে ধরেছে ভয়ংকর নৈতিক বিপর্যয়।
পবিত্র কোর’আনের জ্ঞানই ব্যক্তিকে মুসলিম বানায়। সে জ্ঞানের বলে জন্ম নেয় সংস্কারপ্রাপ্ত একটি বিশুদ্ধ মন। পবিত্র কোর’আন পাকে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা: “একমাত্র জ্ঞানীরাই আমাকে ভয় করে।” এ আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহতায়ালার ভয় কতোটা অর্জিত হলো সেটিই নির্ভূল পরিমাপ দেয় জ্ঞানের। সে ভয় না থাকলে বুঝতে হবে, অভাবটি জ্ঞানের। এবং বুঝা যায়, অজ্ঞতা কতটা গভীর। সেরূপ ভয়শূণ্যতা নিয়ে একটি সঠিক ধারণা করা যায় বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে দুর্নীতির জোয়ার দেখে। মহান আল্লাহতায়ালার ভয় থাকলে জনগণ দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতো। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের হাজার হাজার স্কুল-কলেজ যে জ্ঞান দিচ্ছে তাতে উপার্জনের সামর্থ্য বাড়লেও মহান আল্লাহতায়ালার ভয় সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে দুর্নীতিও কমছে না। ফলে শিক্ষা খাতের এ বিশাল বিনিয়োগ ব্যয় হচ্ছে দেশের বিপর্যয় বাড়াতে।
যে ব্যর্থতা ইসলামপন্থী দলগুলোর
অপসংস্কৃতির জোয়ার রোধে ইসলামপন্থীদের যে বিশাল ব্যর্থতা, সে জন্য ইসলামী দলগুলো কি কম দায়ী? রাজনীতির যুদ্ধে দেখা গেলেও সাংস্কৃতিক যুদ্ধে তারা নাই। সাংস্কৃতিক যুদ্ধ তাদের কাছে গুরুত্ব না পাওয়ায় সাংস্কৃতিক যোদ্ধাও তারা গড়েনি। গুরুত্ব পায়নি বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই। তারা বরং জোর দিয়েছে রাজনৈতিক ক্যাডার গড়ায়। ক্যাডারদের কাজ হয়েছে, দেয়ালে পোষ্টার লাগানো, মিছিলে যোগ দেয়া এবং পার্টির জন্য চাঁদা সংগ্রহ করা। বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে তারা নাই্। চিন্তা-ভাবনার জগতেও তারা নাই। অথচ চিন্তা-ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এমন কি চিন্তা-ভাবনার সামর্থ্যও তাদের মাঝে গড়া হয়নি। নেতারা মনে করে চিন্তাভাবনার কাজটি শুধু নেতাদের, কর্মীদের নয়। কর্মীদের কাজ শুধু নেতাদের হুকুমের আনুগত্য। চিন্তাভাবনার সামর্থ্যকে বরং নেতাদের জন্য হুমকি মনে করা হয়। সেনাবাহিনীর সেপাইরা যেমন চিন্তা-ভাবনার কাজ জেনারেলদের উপর ছেড়ে দেয়, তেমনি অবস্থা ইসলামী দলগুলোর ক্যাডারদের। একই রূপ চিন্তুাশূণ্যতা ভর করেছে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্য।
অথচ রাজনীতির যুদ্ধের মূল ক্ষেত্রটি হলো সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। সাংস্কৃতির অঙ্গণ থেকেই রাজনীতির যুদ্ধ শুরু হয়। রাজনীতির যুদ্ধে জিততে হলে সাংস্কৃতিক যুদ্ধে জিততে হয়। ইসলামের সৈনিকগণ ক্ষেত-খামারে গড়ে উঠেনা, গড়ার সে ক্ষেত্রটি হলো ইসলামী সংস্কৃতি নির্মাণের প্রতিষ্ঠানগুলো। যারা ইসলামী সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ্য হয়, একমাত্র তারাই রাজনীতির ময়দানে ইসলামের সৈনিক হয়। তাই নবীজী (সা:)’র জামানা থেকেই বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মর্যাদা পেয়েছে শুধু অস্ত্রের যুদ্ধের মুজাহিদগণই নয়, বুদ্ধিবৃত্তির যুদ্ধের মুজাহিদগণও। নবীজী (সা:) জ্ঞানীর কলমের কালীকে শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র বলেছেন। অথচ ইসলামী দলগুলোর নেতাদের পক্ষ থেকে কর্মীদের জ্ঞানের সাধক বানানোর কাজটি হয়নি। নফল নামাযের উপর তাগিদ দেয়া হলেও কোর’আনের ভাষা বুঝার উপর ততটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। অথচ সাংস্কৃতিক অঙ্গণে ইসলামের শত্রুদের সৈন্যসংখ্যাটি বিশাল। তারা শুধু রাজনীতির ময়দানে ক্যাডারদের সংখ্যাই বাড়ায়নি, বরং সাংস্কৃতিক যুদ্ধের ময়দানে বিপুল ভাবে বৃদ্ধি ঘটিয়েছে লড়াকু কলম যোদ্ধার। দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে তাদের যে বিজয় -তার কারণ তো এই বিপুল সংখ্যক কলম যোদ্ধা। অবস্থা দেখে মনে হয়, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীগণ ইসলামের বিজয় নিয়ে ভাবে না। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও তারা ভাবে না। বরং দেশের পতন যাত্রায় ভেসে যাওয়াকেই নিজেদের নিয়তি রূপে মেনে নিয়েছে। ২১/০১/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018