উম্মাদিনী জঙ্গি হাসিনা এবং বাংলাদেশীদের জন্য মহাবিপদ সংকেত

ফিরোজ মাহবুব কামাল

হাসিনার উম্মাদিনী রূপ

বাংলাদেশের চালকের সিটে এখন উম্মাদিনী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা যে বহু আগেই সুস্থ্য কাণ্ডজ্ঞান হারিয়েছে -সে প্রমাণ প্রচুর। তাঁর উম্মাদিনী জঙ্গি রূপের কারণ মুলতঃ দুটি। এক). ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে তার পিতামাতা,ভাই ও বহু আত্মীয়স্বজনের করুণ মৃত্যু। আপনজনদের এমন করুণ মৃত্যু যে হাসিনার মগজের ভূমিতে তীব্র আঘত হানবে -সেটিই স্বাভাবিক। দুই).তার দুর্দমনীয় ক্ষমতা-লিপ্সা। ক্ষমতার অতিলিপ্সা মানুষকে যেমন অতি নিষ্ঠুর করে, তেমনি জ্ঞানশূণ্য উম্মাদেও পরিণত করে। ইতিহাসে সে নজিরও অনেক। তবে মস্তিষ্কবিকৃত মামূলী পাগলগণ গুম,খুন,সন্ত্রাস বা গণহত্যায় নামে না। তাদের হাতে বাকস্বাধীনতা-হরন ও গণতন্ত্র-খুনও হয় না। কারণ তাদের সে ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু ক্ষমতা-পাগল শাসকদের হাতে সেগুলি অতি বীভৎস ভাবে হয়। রাজক্ষমতা পাওয়ার স্বার্থে বহু রাজপুত্র অতীতে এমন কি নিজ পিতাকে হত্যা বা অন্ধ করেছে। এমন ক্ষমতা-পাগলরাই দেশে দেশে মীর জাফর হয়। নিজ-গদি নিরাপদ করতে গিয়ে এরা গণতন্ত্রকে যেমন হত্যা করে, তেমনি দেশবাসীকেও গুলির খাদ্য বানায়। বাংলাদেশে বড় বড় বিপদগুলো তো এসেছে এরূপ ক্ষমতালিপ্সু উম্মাদদের হাতে। ক্ষমতা-পাগল শেখ মুজিব একাত্তরে দেশবাসীকে প্রকাণ্ড একটি যুদ্ধ উপহার দিয়েছিল। নিজের ক্ষমতালাভকে সহজ করতেই মুজিব ভারতীয় হানাদার সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ডেকে এনেছিল। আর তাতে হাজার হাজার কোটি টাকার যুদ্ধাস্ত্র ও সম্পদ ভারতীয় সেনাদের হাতে লুট হয়েছিল। মুজিবের হাতে ক্ষমতা যাওয়ায় স্বাধীনতা আসেনি, বরং গণতন্ত্র লাশ হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাকশাল। নিজের গদি বাঁচাতে মুজিব হত্যা করেছিল তিরিশ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে। এবং স্বাধীনতার নামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ভারতের গোলামী। মুজিব-কন্যা হাসিনা সে গোলামীকে আরো তীব্রতর করেছে এবং অসম্ভব করেছে গণতন্ত্রচর্চা।

মুজিবের পথ ধরে হাসিনাও জন্ম দিচ্ছে আরেক যুদ্ধের। এবং সেটি আসছে গৃহযুদ্ধ রূপে। গৃহযুদ্ধের জন্য যা জরুরী তা হলো জনগণের মাঝে তীব্র বিভাজন ও ঘৃণা। আর হাসিনা তার দীর্ঘ দুঃশাসনে বিভাজন ও ঘৃণা -এ দুটিই সবচেয়ে বেশী বাড়িয়েছে। জনগণে ঘৃণার সে উত্তাপ যে কতটা তীব্র সেটি আওয়ামী লীগের কিছু নেতারা নিজেরাও টের পাচ্ছে। তারাও বলছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুৎ হলে বহু লক্ষ আওয়ামী লীগ কর্মীর প্রাণ যাবে। এতো ঘৃনার মাঝে তারা যে এখনো বেঁচে আছে -সেটি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাহারাদারীর কারণে। নিজেদের বাঁচাটি নিশ্চিত করতে তাই ক্ষমতায় থাকতেই তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে চায়। চায় একটি যুদ্ধ। তেমন একটি যুদ্ধের প্রস্ততিতে আওয়ামী লীগের ক্যাডারগণ কিছু কাল আগে পুলিশী ও র‌্যাব প্রহরায় ঢাকায় শাহাবাগের মোড় দখল করে ধ্বনি তুলেছিল,“একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেক বার”।

উদ্দেশ্যটি এখানে সুষ্পষ্ট। তারা শত্রু মনে করে ইসলামপন্থিদের। একাত্তরে যেসব ইসলামপন্থিদের নির্মূল করতে পারিনি,এবার নেশা চেপেছে তাদের নির্মূলের। শ্লোগান তুলেছে রাজাকার হত্যার। এ এজেন্ডা ভারতীয়দেরও। রাজাকারের সংজ্ঞাও তারা বেঁধে দিয়েছে। একাত্তরের পর জন্ম নেয়া কোন বালকও যদি ইসলামের পক্ষে ও ভারতীয় দখলদারির বিরুদ্ধে কথা বলে –তাদের সংজ্ঞায় সে নির্মূলযোগ্য রাজাকার। তেমন একটি পরিচয় এঁটে দিয়ে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে অতি নৃশংস ভাবে হত্যা করা হলো। এর আগে ঢাকার রাজপথে লগি-বৈঠা নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বহু নিরীহ ইসলামপন্থিদের।

 

‘হট হেডেড’ শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার ভয়ংকর উম্মদনার পিছনে যেটি কাজ করছে সেটি শুধু ক্ষমতার লিপ্সা নয়, বরং সেটি হলো প্রচণ্ড প্রতিশোধ-লিপ্সা। প্রতিশোধ নিতে চায় তারা তার পিতা-মাতা,ভাই-ভাবী ও আত্মীয়স্বজন হত্যার। তার রাজনীতির এটিই হলো মূল এজেন্ডা, বাংলাদেশের উন্নয়ন বা কল্যাণ নয়। শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাও নয়। দেশবাসী চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসী মূক্ত নিরাপদ জীবন পাক, শিক্ষাঙ্গণে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হোক, গ্রামেগঞ্জে শিল্পকরখানা গড়ে উঠুক বা দেশে পদ্মাসেতুর ন্যায় আরো বহু সেতু নির্মিত হোক -সেটি তার প্রায়োরিটি নয়। মনের সে প্রবল আখাঙ্খাটি হাসিনা কখনো গোপন রাখেনি। এজন্যই দেশ চুরি-ডাকাতি, গুম,খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণে ডুবে গেলেও সেগুলি দমনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। আগ্রহ শুধু নিজের নিরাপত্তায়।মানসিক দিক দিয়ে একজন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে ক্ষমতায় রাখার বিপদ যে কতটা ভয়ানক হতে পারে –চুরিডাকাতি, গুম, খুন ও ধর্ষণের বাংলাদেশ হলো তারই প্রমাণ।

মানুষ সুস্থ্যতা পায় শুধু দেহের সুস্থ্যতায় নয়, বরং সে জন্য জরুরী হলো মনের সুস্থ্যতাও। অধিক শোকে এবং প্রতিশোধের প্রচণ্ড নেশায় মনের সে সুস্থ্যতা বিনষ্ট হয়। সুস্থ্যতার লক্ষণ কি শুধু পানাহার,চলাফেরা ও কথাবলার সামর্থ্য? সে সামর্থ্য বহু পাগলেরও থাকে। মনের অসুস্থ্যতা শারিরীক বল,দেহের বসন ও সাজ-সজ্জাতে ধরা পড়ে না। কে পাগল বা পাগলিনী সেটি কারো গায়ে লেখা থাকে না। ধরা পড়ে তার কথা,আচরণ ও কর্মের ভারসাম্যহীনতায়। উন্মাদের দেহীক বল থাকলেও থাকে না মানসিক সুস্থ্যতা বা ভারসাম্যতা। কথায় কথায় সে ডিগবাজি দেয়। তাই সে উন্মাদ। শেখ হাসিনার আচরণে কি সেটিই ধরা পড়ে না? সে অসুস্থ্যতার সাক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চ। আদালত অবমাননার এক রায়ে বিচারকগণ তাকে “হটহেডেড” বলে  অভিহিত করেছিলেন। “হটহেডেড” হওয়াটি মানসিক সুস্থ্যতার সার্টিফিকেট নয়। সুস্থ্য মানুষ যেমন পথ চলায় এদিক-ওদিক হেলে পড়ে না, তেমনি কথা বলাতেও উলোট পালোট করে না। কিন্তু সেরূপ ভারসাম্যতা মানসিক অসুস্থ্যতায় অসম্ভব।

শেখ হাসিনা যে মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন তার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। এরশাদ-বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সে সময় শেখ হাসিনা ঘোষণা দেয়, এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের সাথে গাদ্দারি করলে সে চিহ্নিত হবে জাতীয় বেঈমান রূপে। অথচ এ ঘোষণার পরের দিন হাসিনা নিজেই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়। পরে এরশাদের পাতানো নির্বাচনে যোগ দিয়ে গৃহপালীত বিরোধী দলের সংসদীয় নেত্রীর দায়িত্ব নেয়। এটি কি কোন সুস্থ্য ব্যক্তির কাজ হতে পারে? তার মনের ভারসাম্যহীন চরম অস্থিরতা দেখা যায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ নিয়েও। পদ্মা সেতু প্রকল্পটি ছিল ৪ মাইল দীর্ঘ লম্বা এক বিশাল সেতু নির্মাণের। প্রস্তাবিত ঋণ ছিল প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের, যার মধ্যে ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। বাংলাদেশের ইতিহাসেই এটিই ছিল সবচেয়ে বৃহৎ প্রকল্প। বাংলাদেশ সরকারের একার পক্ষে এতবড় প্রকল্পের জন্য অর্থ জোগান দেয়া ছিল অসম্ভব। এর পূর্বে এর অর্ধেক খরচের প্রকল্পের জন্যও বিদেশীদের কাছে হাত পাততে হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মাসেতুর গুরুত্বটি বিশাল। কিন্তু মন্ত্রীদের দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক ঋণদান স্থগিত করে দেয় এবং দাবী করে মন্ত্রী ও অফিসারদেতর বিরুদ্ধে দূর্নীতি তদন্তের। শেখ হাসিনা প্রথমে দূর্নীতিবাজদের বিচার দূরে থাক, দূর্নীতি যে হয়েছে সেটাই অস্বীকার করে। বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাগণ দূর্নীতর প্রমাণ পেশ করলেন এবং দাবী করলেন ঋণ পেতে হলে দূর্নীতিপরায়নদের বিচার করতে হবে। অন্য দিকে পদ্মাসেতু ছিল তার নির্বাচনি ওয়াদা,এবং সেতু গড়তে হলে ঋণও জরুরী। বাধ্য হয়ে শেখ হাসিনা তখন বিচারে রাজী হয়,এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য দেনদরবারের কাজে লোকও পাঠায়। কিন্তু দূর্নীতির দুই মূল হোতা এবং তাঁর সরকারের দুই সাবেক মন্ত্রীকে বিচারের বাইরে রাখে। বিশ্বব্যাংক তাতে খুশি হয়নি। ফলে বাতিল করে দেয় সম্পন্ন ঋণদান প্রকল্পটি। মুখে চুনকালি লাগলো শুধু শেখ হাসিনার সরকারের শুধু নয়, সমগ্র বাংলাদেশীদেরও। বিশ্বব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী চিত্রিত হলো চোরডাকাতের দেশরূপে। চোরডাকাতকে কে ঋণ দেয়? দেশটি অর্থ কর্জ পাওয়ারও যে অযোগ্য -সেটিও বিশ্ববাসীর কাছে বিশ্বব্যাংক জানিয়ে দিল। ফলে ঋণদান থেকে পিছিয়ে গেল জাপান,এশিয়ান ডেভোলপমেন্ট ব্যাংক ও ইসলামি ডেভোলপমেন্ট ব্যাংক। কিন্তু এতবড় বেইজ্জতির পরও শেখ হাসিনার লজ্জা হয়নি। বরং নতুন সুরে বলা শুরু করলো, তার সরকারই বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরা বলছে,তারা দেশের অর্থে পদ্মা সেতু গড়বে। ভাবটা যেন, ব্শ্বি ব্যাংক ঋণ দিতে দু’পায়ে খাড়া ছিল এবং বাংলাদেশই সেটি নিবে না বলে তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাংক থেকে সেতু নির্মাণ হলে আজ থেকে অন্ততঃ ৫ বছর আগেই সেতুর  উপর দিয়ে গাড়ি চলতো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নিয়েও কি হাসিনার ডিগবাজিটা কম ভারসাম্যহীন? একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে তাকে রাজপথে দেখা গেছে। অথচ ক্ষমতায় গিয়ে নিজেই সে বিধানকে আদালতের মাধ্যমে বাতিল করার ব্যবস্থা নিল। এখন দোষ খুঁজছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালের ৫ই মে তার শাসনামলে শাপলা চত্ত্বরে গুলি চালিয়ে শত শত মানুষকে নিহত ও আহত করা হয় এবং রক্তাত্ব হয় মতিঝিলের রাজপথ। কিন্তু হাসিনা বললো, সেখানে কোনরূপ গুলি চালানো হয়নি। কৌতুকের সুরে হাসিনা আরো বললো, হেফাজতের লোকেরা গায়ে রং মেখে রাস্তায় শুয়ে ছিল, পুলিশ দেখে তাঁরা দৌড়িয়ে পালিয়েছে। প্রশ্ন হলো, মানসিক ভাবে সুস্থ্য হলে কোন ব্যক্তি কি সেদিনের সে বীভৎস ও অতি নৃশংস হত্যাকান্ড নিয়ে এরূপ প্রলাপ বকতে পারে?

 

দেশধ্বংসী জঙ্গিবাদ

দেহের বেদনার চেয়ে মনের বেদনাটি বড়ই তীব্র। এবং প্রিয়জনদের মৃত্যুটা যদি নৃশংস ও মর্মন্তদ রূপে হয় তখন সে শোক সহ্য করা আরো কষ্টকর হয়ে পড়ে। দেহের ব্যথা ঔষধে সারে,কিন্তু মনের ব্যথা সারে না। হারানো আপনজনদের সে স্মৃতিটি মনের পর্দায় বার বার অসংখ্যবার হাজির হয়। মৃতদের প্রাণহীন করুণ মুখগুলি তখন আরো অস্থির করে তূলে। যখন তখন তাদের সে স্মৃতি সমগ্র চেতনা জুড়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়। ধারালো ছুড়ির ন্যায় সে স্মৃতিগুলো মনের পটে দিবারাত্র খোঁচাতে থাকে। ফলে বাড়ে মানসিক অস্থিরতা,বাড়ে ভারসাম্যহীনতা এবং সে সাথে বাড়ে উম্মাদনা। এরূপ স্মৃতি তাদেরকে অতি প্রতিহিংসাপরায়ন করে তোলে। তখন মারা পড়ে বিবেকবোধ ও মানবতা। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে কি সেটিই ঘটছে না? একমাত্র আল্লাহর উপর প্রবল আস্থাশীল ব্যক্তিই মনের সে যাতনা থেকে মুক্তি পায়।

সেক্যুলার ব্যক্তিদের রাজনীতিতে যেমন ইসলাম থাকে না,তেমনি চেতনাতেই আল্লাহর উপর আস্থাও থাকে না। ফলে সে প্রচণ্ড প্রতিহিংসা থেকে মুক্তির পথ পায় না। মানব-ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বড় গণহত্যাগুলি হয়েছে এরূপ প্রতিহিংসায়। প্রতিহিংসতার সে লেলিহান আগুনে  বিগত দুটি বিশ্বযুদ্ধে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানী বিমান হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে দুটি আনবিক বোমা নিক্ষেপ করে। নিউয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের বদলা নিয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়া –এ তিনটি মুসলিম দেশ ধ্বংস করে। তিন হাজার মানুষের হত্যার বদলা নিতে তারা প্রায় ১৫ লক্ষ মুসলিমকে হত্যা ও পঙ্গু করেছে। বহু লক্ষ মানুষকে উদ্বাস্তু করেছে। একই রূপ প্রতিহিংসা পরায়নতার কারণে হাসিনাও তাই নিজ দলের ক্যাডারদের এক লাশের বদলে দশ লাশ ফেলতে বলেছে। শরিষার দান পরিমাণ ঈমান থাকলে কেউ কি এমন কথা বলতে পারে?

গাড়ীর সকল যাত্রী অস্থির,অসুস্থ্য ও উদভ্রান্ত হলেও গাড়ী খাদে পড়ে না। কিন্তু ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যদি ভারসাম্যহীন অস্থির মতির উম্মাদ চালকের সিটটি দখলে নেয়। তেমনি মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গৃহিনী বা সাধারণ নাগরিক হলে দেশের ক্ষতি হয় না। কিন্তু দেশ মহাবিপর্যয়ে পড়ে যদি দেশের প্রশাসন,বিচার বা রাজনীতি এমন অসুস্থ্য ব্যক্তির হাতে যায়। এবং  খোদ প্রধানমন্ত্রী ভারসাম্যহীন হলে চরম বিপর্যয়ে পড়ে সমগ্র দেশ। বাংলাদেশের আজকের বিপদের মূল কারণ তো এখানেই। উন্নত দেশের সমাজবিজ্ঞানীগণই শুধু নয়,সাধারণ নাগরিকগণও এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বুঝে। তাই প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর আগে শুধু দেহের স্বাস্থ্য পরীক্ষাই শুধু জরুরী নয়, অতি অপরিহার্য হলো মনের স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি যাচাই করা। শোক-কাতর অসুস্থ্য মানুষতো নিজ ঘরেও বাসের অযোগ্য হয়; ফলে তাকে মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তার জন্য বিরিভমেন্ট কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। একমাত্র মানসিক ভাবে পুরাপুরি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক করার পরই এমন ব্যক্তিকে পরিবারে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু হাসিনার ক্ষেত্রে সে বিচার আদৌ হয়নি। সে যে মুজিবের কন্যা, শুধু সে বিষয়টিই গুরুত্ব পেয়েছে, তার উম্মাদনা নয়। ফলে দখলে নিতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রীর আসনটি। ফলে দেশবাসীর বিপদও তাতে দিন দিন ভয়ানক রূপ নিচ্ছে।

 

প্রতিশোধের জঙ্গি রাজনীতি

পশুর নৃশংস লড়াইয়ে দর্শন বা বিচারবোধ কাজ করে না।পশু মাফ করতেও জানে না। আহত বাঘ-ভালুক তাই লড়ায়ে আরো হিংস্রতর হয়। পশুর জীবনে যেটি অতি হিংস্র রূপে কাজ করে সেটি হলো প্রতিশোধের স্পৃহা। মানব জীবন থেকে ধর্ম ও মানবতা বিলুপ্ত হলে মানুষও পশুর ন্যায় প্রতিহিংসা পরায়ন হয়। কিন্তু যাদের কাছে আল্লাহর ভয় আছে,শরিয়তী বিধান আছে,পরকালের পুরস্কার ও শাস্তির ধারণা আছে,তাদের কাছে প্রতিশোধের উর্দ্ধে উঠে মহত্তর কিছু করার প্রেরণা থাকে। প্রতিশোধের চেয়ে মাফ করতে তারা বেশী আগ্রহী হয়।ফলে শত্রু অধিকৃত মক্কা বিজিত হওয়ার পর মুসলিমদের হাতে শহরটিতে রক্তপাত হয়নি। কিন্তু যারা সেক্যুলার ও পরকালে বিশ্বাসহীন, তাদের পক্ষে শত্রুর সাথে আচরণে এরূপ সদয় হওয়াটি অসম্ভব। দলীয়,গোত্রীয় বা বর্ণবাদী বন্ধনের উর্দ্ধে উঠে উন্নত মানবিক মূল্যবোধ,বিচারবোধ বা চিন্তাভাবনা নিয়ে বিচার-বিবেচনার সামর্থ্য তাদের থাকে না। তাদের জীবনে বড় বিকলঙ্গতা হলো এটি। দৈহিক বিকলঙ্গতায় ব্যক্তির শক্তি-সামর্থ্য কমলেও তাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের তেমন ক্ষতি হয় না, অথচ ভয়ানক ক্ষতি হয় মানসিক বিকলঙ্গতায়। বিপদের আরো কারণ, পশু সমাজের  ন্যায় অসভ্য সমাজে এমন বিকলঙ্গতা নিয়ে বিচার হয় না। বরং প্রবলতর করা হয়, প্রতিশোধ-পরায়নতাকে। প্রতিশোধের জজবাকে বেশী বেশী উস্কে দেয়াই তখন গোত্রীয় বা দলীয় নেতাদের প্রধান এজেন্ডা হয়ে দাঁড়ায়। এরূপ প্রতিশোধের মাঝে তারা নিজেদের গৌরব খুঁজে। এমন সমাজে তাই অনিবার্য হয়ে উঠে রক্তাত্ব সংঘাত। সেক্যুলার রাজনীতির এটিই হলো সবচেয়ে ভয়ংকর দিক। তাদের হাতে তাই ভয়ানক রক্তপাতগুলি শুধু যুদ্ধে হয় না, বরং হয় প্রতিপক্ষের আত্মসমর্পণের পরও। বিনা রক্তপাতে মুসলিমদের হাতে যেরূপ শহরের পর শহর বিজিত হয়েছে, সেক্যুলারিস্টগণ সেটি ভাবতেও পারে না। বরং আত্মসমর্পণে উদ্যত রাষ্ট্রের উপরও তারা আনবিক বোমা ফেলে। যেমনটি জাপানের উপরে হয়েছে। একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয়ের পর লক্ষ লক্ষ অবাঙালী ও ইসলামপন্থিদের উপর যেরূপ নৃশংস হত্যা,লুটতরাজ ও নির্যাতন নেমে আসে সেটি তো ইসলাম থেকে দূরে সরা বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের বিজয়ী হওয়ার পর।

যুগে যুগে মানুষের জানমালের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রতিশোধের সে ধারাকে অব্যাহত রাখতে। ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে আরবের কাফেরগণ শত শত বছর ধরে চালু রাখতো প্রতিশোধের যুদ্ধ। নিজ গোত্রের একজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে যুদ্ধ শুরু হতো তা আর থামতো না, যুগ যুগ তা বেঁচে থাকতো। অসংখ্য গান, কবিতা ও কিচ্ছা লেখা হতো প্রতিশোধের সে স্পৃহাকে আরো তীব্রতর করতে। এমন সমাজে আপোষ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার যে কোন উদ্যোগ গণ্য হতো ভীরুতা ও কাপুরষতা রূপে। একই কান্ড ঘটেছে ইউরোপে। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে যুদ্ধ চলেছে শতবছর ধরে। ইউরোপের ইতিহাসে এ যুদ্ধটি শতবছরের যুদ্ধ রূপে পরিচিত।বাংলাদেশেও আজ  শুরু হয়েছে একই তাণ্ডব। খোদ একাত্তরে ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ভারতপন্থিদের শিবির থেকে যে ঘৃণা সৃষ্টি করা হয়েছিল এখন সে ঘৃনায় আরো ঘি ঢালা হচ্ছে। ফলে সে ঘৃণা আজ একাত্তরের চেয়েও তীব্রতর। আর এরূপ ঘৃণা থেকে কখনোই সৌহার্দ্য বা সম্প্রীতি জন্ম নেয় না; জন্ম নেয় যুদ্ধ। ফলে গৃহযুদ্ধের যে সম্ভাবনাটি একাত্তরে ছিল না, এখন সেটি প্রবল। ফলে ভারতপন্থিদের রাজনীতিতে বেড়েছে ইসলামপন্থিদের নির্মূলের সুর। একাত্তরে শেখ মুজিব ও তাঁর অনুসারিগণ ভারতীয়দের অস্ত্র নিয়ে রক্তঝরানোর যে রাজনীতি শুরু করেছিল সেটি আর থামতে দেয়া হচ্ছে না। বরং সেটিকে কি করে আরো তীব্রতর করা যায় বেড়েছ সে আয়োজন। নর্দমার কীট যেমন আবর্জনায় বাঁচে, বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টগণও তেমনি বেঁচে আছে ঘৃণা ছড়ানোর সংস্কৃতিতে। তাদের মন যে কত বিষপূর্ণ সেটিই বেরিয়ে এসেছে ২০১৩ সালৈল ফেব্রেয়ারি মাসে ঢাকার শাহবাগের চৌরাস্তার বক্তৃতা-বিবৃতি,ব্যানার,কার্টুন ও ছবি থেকে। সেটি আরো বুঝা যায় বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগে ইসলামের বিপক্ষ ব্যক্তির লেখা থেকে।

বাংলাদেশের মানুষদের বিরুদ্ধে মুজিবের অপরাধ অনেক। তবেই বাংলাদেশীদের মাঝে ঘৃণার বীজ রোপনই হলো তার সবচেয়ে বড় অপরাধ। সে বীজ এখন বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে। মুজিব মরে গেছে, কিন্তু দিয়ে গেছে রক্তপাতের আত্মঘাতি রাজনীতি। সে রাজনীতির মূল এজেন্ডা হলো, একাত্তরের ন্যায় বাংলার মাটিতে ভারতের অস্ত্র আবার গর্জে উঠুক এবং লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীর প্রাণ যাক। তাই এবার ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ নির্মূলে হাত দিয়েছে তাদের যারা একাত্তরে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল। তবে আওয়ামী লীগের নির্মূলের টার্গেট শুধু একাত্তরের পাকিস্তানপন্থিরা নয়। একাত্তরে পরে যারা তাদের রাজনৈতীক শত্রুতে পরিণত হয়েছে নির্মূল করতে চায় তাদেরও। কারণ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষগণ যে শুধু একাত্তরে ছিল -তা নয়। একাত্তরের পর যেমন পঁচাত্তরে ও একানব্বইয়ে ছিল,তেমনি ২০০১য়েও ছিল। এবং আজও  আছে। তাই প্রতিশোধমূলক আঘাত থেকে কাউকে তারা ছাড় দিতে রাজী নয়। তাই শুধু জামায়াত বা মুসলিম লীগ নেতাগণ নয়ই, বিএনপি, হিজবুত তাহরির,ইসলামি ঐক্যজোটের নেতাগণও তাদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

 

বিপদ বাড়ছে বাংলাদেশের

হাসিনার জীবনে শোকের দিনটি হলো ১৯৭৫যের ১৫ই আগষ্ট। সেদিনই তার বহু আপনজন নিহত হয়। খুনের ঘটনা কোন জাতির জীবনেই নীরবে যায় না। সে স্মতি থেকে প্রতিশোধ-পরায়ন বহু হিংস্র মানুষের জন্ম হয়। বাংলাদেশেও সেটি হয়েছে।সেটি যেমন একাত্তরের খুন থেকে হয়েছে,তেমনি হয়েছে পরবর্তি আমলের খুন থেকেও। আজও  যে গুম-খুন গুলো হচ্ছে, সেগুলোও নীরবে হারিয়ে যাবে না। তাই যারা শান্তি চায়, তাদের কাজ হয় যে কোন ভাবে রক্তপাত কমানো। শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর চেয়ে বড় হাতিয়ার নাই। অথচ মানসিক অসুস্থ্যদের আচরণটিই ভিন্ন। চারিদিক শোক আর আহাজারি ছড়িয়ে তারা আনন্দ পেতে চায়। শেখ হাসিনাও আনন্দ পেতে চায়,বাংলাদেশীদের জীবনে লাগাতর শোক সৃষ্টি করে। একেই বলা হয় উম্মাদিনীর উল্লাস। তাই সে এক লাশের বদলে দশটি লাশ ফেলতে বলে। এভাবে কেড়ে নেয়া হচ্ছে অসংখ্য মানুষের পিতা, পু্ত্র, স্বামী, ভাই ও আপনজন। একাজে মাঠে নামানো হয়েছে দলীয়কর্মীদের পাশে পুলিশ ও র‌্যাব বাহিনীকে। ইলিয়াস আলী গুম হলো,সাগর-রুনি খুন হলো, বহু জামাত-শিবিরকর্মীগণ নিহত হলো -তা তো সে পরিকল্পনার অংশরূপেই। অথচ তার আপনজনদের মৃত্যুর সাথে কোন রাজাকার জড়িত ছিল না,বরং তাদের খুনে জড়িত ছিল তার পিতার অনুসারি ও মুক্তিবাহিনীর লোকেরা। তবে কোন উম্মাদিনীর টার্গেট হওয়ার জন্য কি কোন অপরাধ করার প্রয়োজন পড়ে? সামনে পড়াটাই তো অপরাধ। পাকিস্তান আর্মির লোকেরা আজ হাসিনা সামনে নাই,তাই তারা টার্গেটও নয়। সামনে যেহেতু বিএনপি-জামায়াত-শিবির, হিজবুত তাহরির ও হেফাজতে ইসলাম, ফলে তারা রেহাই পাচ্ছে না।

 

প্রতিশোধের রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি

শেখ হাসিনা আজ ক্ষমতাসীন। ফলে তার হুকুমের আঁওতায় পুলিশ, প্রশাসন, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীসহ বিশাল রাষ্ট্রীয় মেশিনারি। একারণে তার প্রতিশোধের সামর্থ্যও প্রচুর। ইসলামপন্থিদের নির্মূল ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখতে আরব কাফের গোত্রদের যে সামর্থ্য ছিল তার চেয়ে হাসিনার সামর্থ্য অনেক বেশী। আরবের যুদ্ধ-পাগল গোত্রগুলোর কাছে ইসলামের নির্মূলে লক্ষাধিক পুলিশ ছিল না,বিশাল র‌্যাব-বাহিনী ছিল না,হাজার হাজার দলীয় কর্মীও ছিল না। তাদের হাতে ছিল না বিশাল সামরিক বাহিনী বা বহুলক্ষ মানুষ নিয়ে গড়া প্রশাসন ও কোর্টকাচারি। শেখ হাসিনার হাতে এর সব কিছুই রয়েছে। তাছাড়া তার পাশে রয়েছে সর্ববৃহৎ মুশরিক কবলিত দেশ ভারত। তবে যে নিরীহ ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আঘাত হানা হচ্ছে তাদের আহত ও ক্ষত-বিক্ষত করুণ মুখগুলোও ইতিহাসে নীরবে হারিয়ে যাবে না। প্রতিশোধমুখি বহু মানুষের জন্ম সে স্মৃতি থেকেও হবে। ফলে অনিবার্য হবে সংঘাত। এখানেই শেখ হাসিনা ও তার অনুসারিদের ভয়। তাই শেখ হাসিনাও বাংলাদেশকে আর নিরাপদ ভাবছে না, সেটি বুঝা যায় নিজের পুত্র-কন্যাদের বিদেশে রাখাতে। যে কোন গণদুষমন স্বৈরাচারির ন্যায় হাসিনাকেও বাইরে বেরুতে হয় দেশবাসীর জন্য দেশের রাস্তাঘাট ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ করে। পিতার ন্যায় একদিন সে সুযোগটুকুও যে তার জুটবে না – তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? তবে তার নিজের জন্য এবং সে বাংলাদেশীদের জন্য মহা বিপদটি হলো কোন উম্মাদিনীরই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার সামর্থ্য থাকে না।  ১ম সংস্করণ ১০/০২/১৩; ২য় সংস্করণ ২৮/১০/২০২০।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *