একাত্তরে কারা সঠিক ছিল?

ফিরোজ মাহবুব কামাল

কারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং কারা বিপক্ষে?

একাত্তরে বাঙালি মুসলিমদের মাঝে দুটি পক্ষ ছিল। এক পক্ষে ছিল অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি। অপর পক্ষে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি। এ শেষাক্ত পক্ষটি ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গার যুদ্ধ করে এবং বিজয়ী হয়।  কিন্তু কারা সঠিক ছিল? বহু শত বছর পরও এ নিয়ে বহু আলোচনা হবে। আজকের এ নিবন্ধের আলোচনা তা নিয়েই। যে কোন বিচারের রায় নির্ভর করে বিচারকের conceptual paradigm তথা চেতনার মডেলের উপর। চেতনার মডেলটি পাল্টে গেলে বিচারের রায়ও পাল্টে যায়। বিচারক যদি সেক্যুলার হয় তবে নারী-পুরুষের জ্বিনাও তার কাছে প্রম রূপে  প্রশংসিত হয়। আর মডেলটি কুর’আন ভিত্তিক হলে সেটি গুরুতর শাস্তি যোগ্য অপরাধ গণ্য হয়। জ্বিনাকারী দুইজন বিবাহিত হলে পাথর মেরে তাদেরকে হত্যা করা হয়। এবং অবিবাহিত হলে ৮০টি বেত্রাঘাত করা হয় মহল্লার ময়দানে জনসম্মুখে নিয়ে। শরিয়তের এ বিচার অতি কঠিন। তবে এটির প্রয়োগ এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে, যে ব্যক্তি এ বিচারে বিশ্বাস করেনা সে কাফির। এবং সে কাফির ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলিম রূপে দাবী করে তবে বুঝতে হবে সে মুনাফিক -যা কাফিরদের চেয়েও জঘন্য। তেমনি একাত্তরের বিচারেও চিন্তার দুটি মডেল কাজ করে। একটি হলো সেক্যুলার মডেল এবং অপরটি ইসলামী।  উল্লেখ্য যে, এ আলোচনায় ইসলামী মডেলকে গ্রহণ করা হয়েছে। সেক্যুলার মডেলটি বাংলাদেশের বামপন্থী, বাকশালী ফ্যাসিস্ট ও হিন্দুত্ববাদীদের। ফ্যাসিস্ট মুজিব ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তাদের অনুসারীরা হলো এ দলের।   

একাত্তরে ইসলামপন্থী বাঙালিগণ পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষ নিয়েছে; অপর দিকে পাকিস্তান ভাঙ্গতে সেক্যুলারিস্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদীগণ হিন্দুত্ববাদী ভারতের সৈন্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ নেমেছে। অথচ মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব ও এজেন্ডা হতে হয় দেশ থেকে স্বৈরাচার, অবিচার, বৈষম্য ও দুর্বৃত্তির নির্মূল – ইসলামে এটি ফরজ। অপর দিকে হারাম হলো দেশের ভূগোলকে খণ্ডিত করা। মুসলিম দেশের ভূগোল ভাঙ্গলে শয়তান ও তার অনুসারীগণ খুশি হয়। ভারতের রাজনীতিতে তাই তাদের একাত্তরের বিজয় নিয়ে এতো গর্ব ও অহংকার। কারণ, একাত্তরে তারা শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গেনি, শক্তিহানী করেছে উপমহাদেশের মুসলিমদের। একাত্তরের সে বিশাল অর্জনের পর ভারত এখন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। এবং ভারতের হাতে সে বিশাল অর্জন তুলে দিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও বাঙালি বামপন্থীগণ।

পাকিস্তানপন্থী বাঙালিগণ বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতার শত্রু ছিল -বিষয়টি আদৌ তা নয়। বরং পাকিস্তানপন্থী বাঙালি মুসলিমগণ বিশ্বাস করতো, বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা সুরক্ষা পাবে যদি তারা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক রূপে সে দেশে অন্তর্ভুক্ত থাকে। কারণ তারা জানতো, আগ্রাসী ভারতের সামনে স্বাধীন ভাবে বাঁচানোর খরচটি বিশাল। সে জন্য যেমন জনবল চাই, তেমনি চাই সামরিক বল, বুদ্ধিবৃত্তিক বল ও অর্থনৈতিক বল।  সেগুলি বাঙালি মুসলিমদের একার পক্ষে যোগানো অসম্ভব ছিল। ফলে অখণ্ড বৃহৎ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক হওয়াকে তারা ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচার একটি কৌশল রূপে দেখতো। ১৯৪৭ সালে সেরূপ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার ভাবনাই বাংলার মুসলিম লীগ নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে পাকিস্তানে যোগ দিতে উদবুদ্ধ করেছিল।  একই কারণে জার্মান, ফরাসী, ইতালীয়, পোলিশ ইত্যাদি ইউরোপীয়দের ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে একতাবদ্ধ করেছে। বাঙালি মুসলিমদের কাছে যেমন ভারতভীতি, তেমনি ইউরোপীয়দের হলো রুশ ভীতি।

তাছাড়া পাকিস্তানপন্থী বাঙালিদের কাছে হারাম গণ্য হয়েছিল ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলের নামে মুসলিমদের মাঝে বিভক্ত গড়া। কারণ, একতাবদ্ধ থাকার নির্দেশটি কোন রাজনৈতিক নেতার নয়, বরং সেটি খোদ মহান আল্লাহতায়ালার।  তাঁর সে ঘোষণা এসেছে সুরা আল-ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে। এবং সকল প্রকার বিভক্তি থেকে বাঁচার নির্দেশ এসেছে সুরা আল-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। তাই মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি গড়ার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা -যা ব্যক্তিকে কাফির বানায়। উপরিউক্ত আয়াতের আলোকে ইসলামপন্থী বাঙালিদের কাছে হারাম গণ্য হয়েছিল পাকিস্তান ভাঙ্গা। কিন্তু ইসলাম থেকে দূরে-সরা বাঙালি সেক্যুলারিস্ট মুসলিমদের মাঝে একাত্তরের ঘটনাবলীর বিচারে ইসলামের সে শরিয়তী রায় আদৌ গুরুত্ব পায়নি। বরং একাত্তর নিয়ে যে বয়ানটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয় সেটি হলো ভারতসেবী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের বয়ান। এ বয়ানটি দিল্লির হিন্দুত্ববাদী শাসক শ্রেনী ও কলকাতার হিন্দু বাবু শ্রেণীর বয়ান। সে বয়ান কোন ঈমানদার গ্রহণ করতে পারে না। যেসব বাংলাদেশী সে বয়ানকে গ্রহণ করেছে তারা ব্যর্থ হয়েছে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানলব্ধ প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে। বানের জলে ভাসার মত তারা ভেসে গেছে ইসলাম বিরোধী সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদের স্রোতে। সেরূপ ভেসে যাওয়ার কারণেই ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের সাথে সুর মিলিয়ে ইসলামপন্থীদেরকে তারা স্বাধীনতার শত্রু বলে গালি দেয়। এ গালির মধ্যে কোন ঈমানদারী নাই। বরং রয়েছে ভারতসেবী অজ্ঞতা। 

১৯৪৭’য়ে কোন সামরিক শক্তির জোরে কেউ পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করেনি। বরং সেটি হয়েছে এক গণতান্ত্রিক প্রক্রিযার মাধ্যমে। পাকিস্তানভূক্তির মাঝে বাঙালি মুসলিমের কল্যাণ ও স্বাধীনতার সুরক্ষা ভেবেছিলেন শেরে বাংলা ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দীন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আকরাম খাঁ, মৌলভী তমিজুদ্দীন খান, নূরল আমীনের ন্যায় তৎকালীন শীর্ষ বাঙালি মুসলিম নেতৃবৃন্দ। ১৯৭১’য়ে উপমহাদেশের সে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যায়নি। প্রশ্ন হলো, যে ভারতভীতি নিয়ে ১৯৪৭’য়ের মুসলিম নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানে যোগ দিল সেরূপ ভারতভীতি নিয়ে কোন ভাবনা কি শেখ মুজিব ও ১৯৭১’য়ের অন্যানই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের মাথায় ছিল? তারা কিরূপে নিশ্চিত হলো যে, ভারত বাংলাদেশের উপর ভবিষ্যতে আগ্রাসন চালাবো না? কোন দেশ কি চিরকাল বন্ধু থাকে? সম্ভাব্য সে ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষার কৌশল কি ছিল? এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসে যায়। সেটি হলো ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের কি চরিত্র কিরূপ হবে সেটি ১৯৪৭’য়ের বাংলার মুসলিম লীগ নেতাগণ জানার সুযোগ পাননি। তারা ১৯৪৭ পরবর্তী সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসন নিয়ে একটি :ধারণা করেছিলেন মাত্র। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর ভারতীয় আগ্রাসন দেখার সুযোগ পেয়েছে ১৯৭১ সালের শেখ মুজিবসহ সকল বাঙালি নেতৃবৃন্দ। ভারত তার আগ্রাসী চরিত্রটি তারা দেখেছিল কাশ্মীর, হায়দারাবাদ, গোয়া, মানভাদর দখলের মধ্য দিয়ে। চোকের সামনে নেকড়ে শিকার ধরতে দেখেও তাকে কি নিরাপদ ভাবা যায়? নেকড়ে থেকে বাঁচার জন্য তো স্ট্রাটেজী থাকতে হয়। কিন্তু সে স্ট্রাটেজী স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির ছিল না। তাই মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নিজামী ইসলামী, নূরুল আমীন সাহেবের পাকিস্তান ডিমোক্রাটিক পার্টি,  খেলাফতে রাব্বানী পার্টি, কৃষক-শ্রমিক পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মত যেসব সংগঠন ১৯৭১’‌য়ে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদের সে স্ট্রাটেজীর মধ্য প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার ভাবনা ছিল।             

ইতিহাসের সাক্ষ্য এখন সামনে এসেছে। ১৯৪৭’য়ের মুসলিম লীগ নেতাগণ যে ভারতভীতির কারণে পাকিস্তানে যোগ দেয়া জরুরি ভেবেছিলেন এবং ১৯৭১’য়ে যেসব সংগঠন পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধীতা করেছিলেন -তাদের সে সিদ্ধান্ত ১৯৭১’য়ের পর শতকরা শতভাগ সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, ভূ-সীমান্ত, সমুদ্র-সীমান্ত, নদ-নদী, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক বাজার ও শিক্ষা-সংস্কৃতি আজ ভারতীয় আগ্রাসনের শিকার। বাংলাদেশের সীমান্তে বহুশত বাংলাদেশীকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর গুলিতে নিহত হতে হয়েছে। ভারতের চাপে বাংলাদেশের বুক চিড়ে করিডোর দিতে বাধ্য হতে হয়েছে। ভারতকে দিতে হয়েছে সড়ক পথ, রেল পথ ও সমুদ্র বন্দরের সুযোগ। ভারত বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা অসম্ভব করেছে। সমর্থন দিয়েছে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার নৃশংস ফ্যাসিবাদী শাসনকে। বাঁধ দিয়ে ভারত তুলে নিচ্ছে পদ্মা, তিস্তা, গোমতি, ফেনি নদীসহ ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদীর পানি। ২৩ বছরের পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান কি কখনো এরূপ ভারতী আগ্রাসনের শিকার হয়েছে? হয়নি। তখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল স্বাধীন পাকিস্তানের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ। পাকিস্তানের অন্য প্রদেশের ন্যায় এ প্রদেশেরও পুর্ণ স্বাধীনতা ছিল। সে স্বাধীনতা প্রকট ভাবে খর্বিত হয়েছে ১৯৭১’য়ে।  পাকিস্তান আমলের সাথে তুলনা করলে ১৯৭১’য়ে পূর্ব পাকিস্তানীদের, জন্য কোন স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি, বরং অর্জিত হয়েছে ভারতের অধীনতা।      

স্বাধীনতা বাঁচানোর খরচটি বিশাল। আগ্রাসী প্রতিবেশীর সামনে ক্ষুদ্র দেশের সে সমার্থ্য থাকে না। স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে দেশের বৃহৎ ভূগোল, বিশাল লোকবল, শক্তিশালী অর্থনীতি ও সামরিক বল লাগে। দেশের ভৌগলিক আয়োতন ছোট হলে এবং সামিরক বাহিনী ক্ষুদ্র হলে স্বাধীনতা বাঁচে না। তাই সিকিমের স্বাধীনতা বাঁচেনি। সে বিষয়টি বুঝেই ১৯৪৭’য়ের প্রজ্ঞাবান মুসলিম লীগ নেতাগণ ক্ষুদ্র পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করেছিলেন। তাই সেদিন স্বাধীনতা বেঁচেছিল। সুবিশাল উসমানিয়া খেলাফতে অন্তর্ভুক্ত ছিল বলেই ইসলামের কেন্দ্রভূমি আরব মধ্যপ্রাচ্য বহুশত বছর যাবত ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী হায়েনাদের আগ্রাসন থেকে নিরপত্তা পেয়েছিল। ঔপনিবেশিক ইউরোপীয়গণ তাদের সাম্রাজ্য বাড়াতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলা, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় আসলেও দীর্ঘকাল যাবত অতি কাছের কোন আরব ভূমিকে দখলে নিতে পারিনি। সে সুযোগ আসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানিয়া খেলাফত ভেঙ্গে যাওয়ায়। তখন ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়ার ন্যায় আরব ভূমি ব্রিটিশ ও ফরাসীদের দ্বারা অধিকৃত হয়।

খেলাফত বাঁচানোর গুরুত্ব ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ গভীর ভারে বুঝেছিলেন। খেলাফতের মাঝে তারা মুসলিম উম্মাহর ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা দেখতেন। তাই তারা ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের হামলা থেকে খেলাফত বাঁচাতে ভারত জুড়ে তুমুল গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সেটিই ছিল ভারতের বুকে প্রথম গণ-আন্দোলন। ইতিহাসে সেটি খেলাফত আন্দোলন রূপে পরিচিত। খেলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার গভীর বেদনা নিয়ে ভারতীয় মুসলিমগণ স্বপ্ন দেখেছিল দক্ষিণ এশিয়ার বুকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র নির্মাণের। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ এশিয়াতেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠির বাস। ফলে সে ভাবনার বৈধতা ছিল। তারা উদ্যোগ নেন খেলাফতের বিকল্প মুসলিমদের জন্য একর্টি  civilisational state নির্মাণের। সেটিই হলো ১৯৪৭‌’য়ে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান। মুসলিমদের কাছে civilisational state’য়ের অর্থ হলো, সে রাষ্ট্রের এজেন্ডা হবে শুধু বিশেষ কোন ভাষা, বর্ণ ও ভূগোলের মুসলিমদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও স্বার্থের সুরক্ষা দেয়া নয়, বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও স্বার্থের  সুরক্ষা দেয়া। পাকিস্তানের মিশন হবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ‍” অর্থাৎ আল্লাহর এজেন্ডার সাথে একাত্মতা। সে সময় মুসলিম লীগের স্লোগান ছিল: “‍পাকিস্তান কা মতলব কিয়া? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ‍”। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল সেরূপ একটি civilisational state নির্মাণের ভাবনা থেকেই।

এটি স্মরণীয় যে, পাকিস্তান আন্দোলনের প্রথম সারির বাঙালি মুসলিম নেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি, সততা এবং বাংলার মুসলিমদের নিয়ে তাদের কল্যাণ-চিন্তা শেখ মুজিব, তাজুদ্দীন, জিয়াউর রহমান ও সিরাজুল আলম খানদের চেয়ে বহুগুণ অধিক ছিল। দেখা যাক তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা। খাজা নাজিমুদ্দীন লেখাপড়া করেছেন ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। হোসেন শহীধ সোহরাওয়ার্দী লেখাপড়া করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। মৌলভী তমিজুদ্দীন খান লেখাপড়া করেছেন কলকাতার প্রসিডেন্সি কলেজে। শেরে বাংলা ফজলুল হক ও নূরল আমীন লেখাপড়া করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরূপ শিক্ষাগত যোগ্যতা একাত্তরের কোন শীর্ষ নেতারই ছিল না। তাছাড়া পাকিস্তানপন্থী এসব নেতাদের কেউই মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের শত্রু ছিলেন না। তাদের কেউ মুজিবের ন্যায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বেতনভোগী চাকর ছিলেন না এবং ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের সাথে নিয়ে তারা কখনোই কোন ষড়যন্ত্র করেননি -যেমনটি করেছে শেখ মুজিব। পাকিস্তান ভাঙ্গা এবং দেশটিকে অধীনত করার এজেন্ডা নিয়ে ভারত ১৯৪৭’য়ে দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই ছিল সক্রিয়। কারণ, ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতাগণ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা যেমন চায়নি, তেমনি দেশটি বেঁচে থাকুক -সেটিও চায়নি।  

শেখ মুজিবের ছিল যে কোন উপায়ে গদিতে বসার অদম্য লিপ্সা। পাকিস্তান আন্দোলন কালে মুজিব মুসলিম লীগের কর্মী হলেও তার মগজে Muslim civilisational state’য়ের ভিশন ও মিশন স্থান পায়নি। তার রাজনীতি পরিচালিত হয় বিকট স্বার্থপরতা থেকে -যা পরবর্তী কালে তার শাসনামলে সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পায়। সে স্বার্থলিপ্সাই মুজিবকে ভারতীয় এজেন্ডার সাথে একাকার করে দেয়। ক্ষমতার লিপ্সা পূরণে মুজিব গণতন্ত্রকে কবরে পাঠায় এবং একদলীয় বাকশালের প্রতিষ্ঠা দেয়। অপর দিকে মুজিব শুরু থেকেই জানতেন, ভারতের পাকিস্তান ভাঙ্গার এজেন্ডা। শেখ মুজিব তা থেকে ফায়দা নেয়। ভারতের সে এজেন্ডাপূরণে শেখ মুজিব ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW’য়ের ষড়যন্ত্রের সাথে একাত্ম হয়ে যায়। ইতিহাসে সেটিই আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত।  কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য এবং বিশিষ্ট লেখক বদরুদ্দীন উমর লিখেছেন, তাজুদ্দীন ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য। পাকিস্তান আমলে কম্যুনিস্টদের নানা দলে ঢুকানো হয়েছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রকল্প বিজয়ী করার লক্ষ্যে। সে পরিকল্পনার অংশ রূপেই তাজুদ্দীনকে ঢুকানো হয়েছিল আওয়ামী লীগে।  তাই একাত্তরের যুদ্ধটি ১৯৭০ নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর না করার কারণে শুরু হয়নি,বরং পাকিস্তান ভাঙ্গার শুরুটি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই। সে যুদ্ধই চুড়ান্ত রূপ পায় ১৯৭১’য়ে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে।

শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রকল্পটির শুরু যে ১৯৪৭ সাল থেকেই -সে কথাটি মুজিব নিজে বলেছেন পাকিস্তান থেকে ফেরার পর ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্দানের জনসভায়। এ বইয়ের লেখক তাঁর সে উক্তি সেদিন নিজ কানে শুনেছেন। সেটি ছিল বিস্ময়ের বিষয়। তিনি ১৯৭০ নির্বাচনে ভোট নিয়েছিলেন অখণ্ড পাকিস্তানের শাসন ও শাসনতন্ত্র নির্মাণের লক্ষ্যে। তিনি নির্বাচন লড়েছেন ৬ দফা ভিত্তিক শাসনতন্ত্র নির্মাণের লক্ষ্যে। তিনি যে পাকিস্তান ভাঙ্গাতে চান -সে কথাটি পাকিস্তান ভাঙ্গার আগে একবারও বলেননি। বরং নির্বাচনি জনসভাগুলিতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিতেন। এটি ছিল বাঙালি মুসলিমদের সাথে মুজিবের মিথ্যাচারীতা ও ধোকাবাজী। তার মনের গোপন কথাটি জনগণ জানালে জনগণ কি তাকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী করতো?     

 

স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে ভূগোল বাঁচাতে হয়

স্বাধীনতা বাঁচানোর খরচটি বিশাল। সে সামর্থ্য ক্ষুদ্র আয়তন, ক্ষুদ্র জনসংখ্যা ও দরিদ্র অর্থনীতির দেশের থাকে না। সে সামর্থ্য নাই বলেই স্বাধীনতা বাঁচাতে জার্মানী, ফ্রান্স, ইতালির মত উন্নত দেশগুলিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও NATO’তে যোগ দিয়েছে। দেশের ভূগোল বাড়লে সে খরচ জুগানোর সামর্থ্যও বাড়ে। এজন্যই সাহাবায়ে কেরাম অবিরাম ইসলামী রাষ্ট্রের আয়োতন বাড়িয়েছেন। এবং ভূগোল বাড়ানোর প্রয়োজনেই নবীজী (সা:) সাহাবাদের নসিহত করে যান, রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটান্টাইন দখলে নেয়ার। এখানে নবীজী (সা:)’র তাগিদ ভূগোল বাড়ানোর। সে নীতি ভারতেরও। ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের সাধ বিশ্বশক্তি হওয়ার, সেজন্যই চায় অখণ্ড ভারত। এজন্যই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা তারা কখনোই চায়নি। দেশটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে; এবং কখনোই চায়নি, দেশটি বেঁচে থাকুক। তারা শুধু স্বাধীন পাকিস্তানের বিলুপ্তি চায় না, স্বাধীন বাংলাদেশেরও বিলুপ্তি চায়। অধুনা নির্মিত ভারতের লোকসভা ভবনের দেয়ালে উপমহাদেশের যে মানচিত্র আঁকা হয়েছে তাতে স্বাধীন পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ রূপে কোন দেশ নাই। এমন কি নাগপুরে RSS’য়ের কেন্দ্রীয় অফিসে টাঙ্গানো মানচিত্রেও নাই। এরপরও ভারতের ভু-রাজনৈতিক এজেন্ডায় কি কোন অস্পষ্টতা থাকে? অথচ তাদের সে ভু-রাজনৈতিক এজেন্ডার সাথে একাত্ম হয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট ও বামধারার লোক।

তাই যারা কোন মুসলিম দেশের আয়োতন ক্ষুদ্রতর করতে চায় -বুঝতে হবে তারা মুসলিমদের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে ভাবে না।  তারা ভাবে না মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা ও কল্যাণ নিয়ে। মু’মিনের ঈমানদারীকে তারা সাম্প্রদায়িকতা ভাবে। তারা যেমন প্রতারক, তেমনি স্বার্থপর। তারা নিজেরা বসতে চায় শাসকের আসনে। এদের লালসা পূরণ করতেই আরব ভূমিকে ২২ টুকরোয় বিভক্ত করা হয়েছে। এবং মুসলিম বিশ্ব খণ্ডিত হয়েছে ৫০টির বেশি টুকরোয়। মুজিবও তেমনি একটি লালসা নিয়ে পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। সে নিজে বাংলাদেশের আমৃত্যু প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিল। বাঙালির স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবিক অধিকার নিয়ে সামান্যতম আগ্রহ থাকলে মুজিব কি কখনো গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা দিত? 

বৃহৎ ভারত দ্বারা ঘেরাও ক্ষুদ্র বাংলাদেশে বাঙালি মুসলিমগণ স্বাধীনতা ও জান-মালের নিরাপত্তা পাবে -সে সম্ভাবনা দেখলে ১৯৪৭ সালেই মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দ পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত না করে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা দিতেন। সেটি করতে একাত্তরের ন্যায় যুদ্ধ করতে হতো না। শুধু দাবী করলেই চলতো। ১৯৪০’য়ের ২৩ মার্চ সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি পাঠ করেন বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা ফজলুল হক। সে প্রস্তাবে বাংলার অন্তর্ভুক্তি ছিল না। বাংলাকে পাকিস্তান প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৪৬ সালে দিল্লির মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী পার্টির সম্মেলনে। সে সম্মেলনে বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করার প্রস্তাব পেশ করেন মুসলিম লীগ নেতা এবং বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সেদিন সে প্রস্তাব সে সভাতে সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। স্মরণীয় হলো, কোন বাঙালি মুসলিম নেতাই সেদিন বাংলার পাকিস্তান-ভূক্তির বিরোধীতা করেননি। কারণ, তাদের মনে ছিল প্রচণ্ড ভারত-ভীতি। সে সাথে ছিল উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠি রূপে মুসলিম উম্মাহর -বিশেষ করে ভারতীয় মুসলিমদের কল্যাণে কিছু করার গভীর দায়বোধ। শুধু কায়েদে আজম মহম্মদ আলী জিন্নাহ নন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা ফজলুল হকের ন্যায় অধিকাংশ বাঙালি মুসলিম নেতাই তাদের রাজনীতির শুরুটি করেন কংগ্রেসে যোগ দিয়ে। ফলে তারা পরিচিত হন হিন্দু মানসের সাথে। এতে তারা সরাসরি জানতে পারেন ভারতীয় হিন্দু নেতাদের গভীর মুসলিম বিদ্বেষ। 

পাকিস্তানভূক্তির ফলেই বাঙালি মুসলিমগণ পেয়েছিল পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রের এবং সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের  সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি রূপে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার অপূর্ব সুযোগ। এমন সুযোগ বাঙালিগণ অতীতে কোন কালেই পায়নি।  ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮’য়ের গণতান্ত্রিক শাসনামলে তিন জন বাঙালি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কায়েদে আজম মহম্মদ আলীর ইন্তেকালের পর তাঁর আসনে যিনি বসেছিলেন -তিন হলেন ঢাকার খাজা নাজিমুদ্দিন। প্রশ্ন হলো, শক্তিশালী একটি বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র নির্মাণের বদলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র নির্মিত হলে কি সেগুলি মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর হতো? কাশ্মীর, হায়দারাবাদ, গোয়া,মানভাদর, সিকিমের স্বাধীনতা যেমন বাঁচেনি, স্বাধীনতা বাঁচতো না স্বাধীন বাংলাদেশেরও। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি বামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্টদের অপরাধ হলো, তারা ১৯৭১’য়ে ভারতের হাতে অধিকৃত হওয়ার পথটি বেছে নেয়।

তাছাড়া কোন একটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কি কখনো সে দেশের সংখ্যালঘিষ্টদের থেকে পৃথক হয়? সমগ্র ইতিহাসে এমন কান্ড কি কখনো হয়েছে? সে কাজ তো কান্ডজ্ঞান-শূণ্য পাগলদের। সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভয়ে সংখ্যালঘুরা পৃথক হয়। যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু শাসনের ভীতি নিয়ে মুসলিমগণ পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে।  ১৯৪৭’য়ে বাঙালি মুসলিম নেতাদের মাঝে যে প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে সেটি ১৯৭১’য়ের ভারতসেবী বাকশালী ফ্যাসিস্টদের মাঝে দেখা যায়নি। বাকশালীরা ধরা দিয়েছে ভারতের ফাঁদে। বুঝতে হবে, মহান আল্লাহতায়ালা শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের বিধান দেননি, বিধান দিয়েছেন রাজনীতি বা রাষ্ট্র নির্মাণেরও। হারাম-হালালের সে বিধান ইসলাম থেকে দূরে-সরা মুসলিম নামধারী সেক্যুলারিস্ট, ন্যাশনালিস্ট, সোসালিস্ট, কম্যুনিস্ট এবং নাস্তিকদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। পৌত্তলিকদের বন্ধরূপে গ্রহণ করা যে হারাম -সে বিধানও তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। ফলে একাত্তরে তারা হিন্দুত্ববাদীদের কোলে গিয়ে উঠেছে এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে একটি মুসলিম দেশকে ক্ষু্দ্রতর ও দুর্বল করার জন্য যুদ্ধ করেছে।

কোন ঈমানদার কি কখনো মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে পারে? মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিম দেশের ভূগোলের বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাবদ্ধ থাকাকে ফরজ করেছেন। ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চল ভিত্তিক বিভক্তি নিয়ে কি কখনোই বিশ্বশক্তির জন্ম দেয়া যায়? একক ভাষা, একক বর্ণ ও একক অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে বড়জোর একটি ট্রাইবাল রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া যায়, কিন্তু সে পথে ইসলামী রাষ্ট্র দূরে থাক, মানবতাবাদী কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠা দেয়া যায়না। ঈমানদারকে তাই শুধু ভিন্ন বর্ণ, ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন এলাকার মানুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে একই জামায়াতে নামাজ পড়ার সামর্থ্য থাকলে চলে না, সামর্থ্য থাকতে হয় নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা এলাকার মানুষদের নিয়ে একই রাষ্ট্রে একতাবদ্ধ বসবাসের সামর্থ্য। এরূপ একতা নিয়ে বাঁচাটি ইসলামে ফরজ। সে সামর্থ্যটি যেমন নবীজী (সা:) ও খোলাফায়ে রাশেদার আমলে দেখা গেছে। তেমনি  দেখা গেছে উমাইয়া, আব্বাসী ও উসমানিয়া খেলাফত কালে। ফলে বিশ্বের বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে খেলাফত বেঁচেছে প্রায় ১৩ শত বছর যাবত। খেলাফত হলো, ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইনস্টিটিউশন। মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি জান-মালের খরচ হয়েছে এই খেলাফতকে গড়তে ও বাঁচিয়ে রাখতে।  সে খেলাফত বেঁচেছিল বলেই মুসলিম উম্মাহর হৃৎপিন্ডের উপর ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের কলোনী এবং ইসরাইল নির্মিত হয়নি। গাজার ন্যায় গণহত্যা ও নৃশংস ধ্বংসকান্ডও সেদিন ঘটেনি।  ২৭/০৮/২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *