এ কি মোজেজা ঘটলো আফগানিস্তানে?
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on August 16, 2021
- Bangla Articles, মুসলিম জাহান
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
তালেবানদের বিস্ময়কর বিজয় ও মানবিক গুণ
গতকাল ১৫ আগষ্ট রবিবার তালেবানদের হাতে রাজধানী কাবুলের পতন ঘটেছে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে দেশের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি ও তার সরকারের কিছু উচ্চপদস্থ্ কর্মকর্তা। সমগ্র আফগানিস্তানের উপর এখন তালেবানদের দখল। যে কোন বিচারে এ বিজয় এক বিস্ময়করর মোজেজা। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণির অধীনে ছিল ৩ লাখ সৈন্যের বিশাল সেনাবাহিনী। তারা ছিল উচ্চ বেতনভোগীও। তারা প্রশিক্ষণ পেয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাদল মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষকদের থেকে। প্রশিক্ষণ দিয়েছে ব্রিটিশ ও জার্মান সেনাবাহিনীর সদ্যরাও। তাদের হাতে ছিল বহু ট্যাংক, দূরপাল্লার বহু কামান, বহু হেলিকপ্টার গানশিপ, এবং যুদ্ধবিমানসহ বিপুল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। আফগান সৈন্যরা বেড়ে উঠেছিল আধুনিক ক্যান্টনমেন্টে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য ছিল মার্কিনীদের তৈরী আর্মি এ্যাকাডেমি। তাদের ছিল আধুনিক সামরিক পোষাক। ব্যবহার করতো বহু দূর অবধি দেখা যায় এমন দূরবীন, রাতে পড়তো উন্নত প্রযুক্তির নৈশকালীন চশমা -যা রাতকেও দিনের মত দেখায়। অপর দিকে তালেবানদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৫ হাজার। তারা কোন ক্যান্টনমেন্টে প্রশিক্ষণ পায়নি। তাদের ছিল না সামরিক পোষাক, ছিল না চামড়ার জুতা। অনেকের পায়ে স্যান্ডেল। গায়ে লম্বা কামিজ ও ঢোলা স্যালোয়ার। মাথায় হেলমেটের বদলে পাগড়ি। অস্ত্র বলতে যা বুঝায় তা হলো একে-৪৭ রাইফেল এবং রকেটি চালিত গ্রেনেড। এ নিয়েই একটি বিশাল দেশ জয়। এ অস্ত্র নিয়েই তারা যুদ্ধ করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ৬০টির বেশী দেশের সৈন্যদের বিরুদ্ধে। ২০ বছরের এ যুদ্ধে তারা শত্রুদের বিজয় রুখেছে এবং অবশেষে নিজেরাই বিজয়ী হয়েছে। এর চেয়ে বড় মোজেজা আর কি হতে পারে?
আরেক মোজেজা হলো, ৫০ লাখ অধ্যুষিত কাবুল দখলকালে একজন মানুষেরও মৃত্যু হয়নি। তালেবানদের হাতে একজন মানুষও মারধরের মুখে পড়েনি। কোন ঘরবাড়ি বিজয়ী সৈনিকদের হাতে দখল হয়নি। কোন নারীও ধর্ষিত হয়নি। আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, যারা বিগত ২০ বছর যাবত তালেবানদের হত্যায় মার্কিন সৈনিকদের সাথে কাজ করেছে তাদের সবার প্রতি সার্বজনীন ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান নেতৃবৃন্দ। এমন কি যারা দোভাষী রূপে মার্কিন সৈনিকদের সাথে কাজ করেছে ও তাদেরকে পথঘাট চিনিয়েছে –তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেছে। সমগ্র মানব ইতিহাসে এমন বিজয় বিরল। একমাত্র নবীজী (সা:)’র নেতৃত্বে মক্কা বিজয়ের সময় এমনটি ঘটতে দেখা গেছে। যারা নবীজী (সা:) ও ইসলামকে নির্মূল করতে যুদ্ধ করেছিল তাদেরকেও তিনি মাফ করে দেন। অথচ পাশ্চাত্য জগতে শান্তিপূর্ণ বিজয়ের এ বিশাল মোজেজাটি প্রচার পায়নি। বরং দিবারাত্র তাদের টিভি ও পত্রিকাগুলি মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে তালেবানদের বিরুদ্ধে। প্রচার করছে, তালেবানরা বর্বর ও নৃশংস। ক্ষমতায় গিয়ে তারা নারী নির্যাতন করবে, কঠোর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা দিবে, স্কুল-কলেজে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করবে, স্বাধীনতা কেড়ে নিবে –ইত্যাদি নানা কল্পিত বিষয় নিয়ে তাদের প্রচার।
বাঙালীদের জন্য যা শিক্ষণীয়
খাঁচার সিংহকে ছেড়ে দিলে বুঝে যায় তার হিংস্রতা। তেমনি মানুষের নৃশংস অসভ্যতাটি বুঝা যায় তার হাতে অস্ত্র দিলে। তালেবানদের হাতে অস্ত্র ছিল, ফলে তাদের ছিল নৃশংসতা ঘটানোর সামর্থ্য। কিন্তু সে পথে না গিয়ে তারা নিজেদের মানবিক গুণের শ্রেষ্ঠত্বই প্রকাশ করেছে। অথচ বাংলাদেশে সে নৃশংস অসভ্যতাটি দেখা গেছে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বরের পর। বহু হাজার নিরস্ত্র মানুষকে স্রেফ তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। জেলা শহর ও থানা শহরগুলিতে স্থানীয় মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নিজামে ইসলামী, ও পিস কমিটির নিরস্ত্র সদস্যদের হত্যার নৃশংস তান্ডব হয়েছে। কে কতটা নৃশংস হতে পারে -তার প্রতিযোগিতা করেছে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা। দেশ পরিণত হয়েছে বধ্যভূমিতে। বিলুপ্ত হয়েছে আইন-কানূন। কাদের সিদ্দিকী ঢাকা স্টেডিয়ামে তিনজন নিরস্ত্র ও হাত-পা বাঁধা রাজাকারকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। নৃশংস অসভ্যতার সে করুণ চিত্রটি বিশ্বব্যাপী সেদিন খবর হয়েছিল। বহু বিবেকমান মানুষকে সে নৃশংসতা ব্যাথিত করেছিল। কাদের সিদ্দিকীর এ যুদ্ধ-অপরাধ নিয় শেখ মুজিবকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন প্রখ্যাত ইটালিয়ান সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাসী। শেখ মুজিব সেদিন কাদের সিদ্দিকীর পক্ষেই সাফাই গেয়েছিল। এ হলো মুজিবে বিবেকবোধ!
সে সময় সারা বাংলাদেশ জুড়ে হাজার হাজার অবাঙালী নারী, পুরুষ ও শিশুকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ধর্ষণ করা হয়েছিল হাজার হাজার বিহারী মহিলাদের। প্রায় সকল বিহারীর ঘরবাড়ী, দোকানপাট ও কলকারখানা দখল করে তাদেরকে রাস্তায় বসানো হয়েছে। এই হলো একাত্তরে বাঙালীর বিজয়ের চিত্র। বাঙালীরা পাক সেনাবাহিনীর অপরাধ নিয়ে বহু বই, বহু সিনেমা ও বহু নাটক লিখেছে। কিন্তু বাঙালীর একাত্তরের অসভ্য নৃশংসতা নিয়ে আজও বাঙালী বুদ্ধিজীবীরা যেমন নিশ্চুপ, তেমনি নিশ্চুপ সাধারণ বাঙালীগণ। ডাকাত পাড়ায় যেমন ডাকাতদের নৃশংসতা নিয়ে আলোচনা হয় না, তেমনি হয়েছে বাংলাদেশের অবস্থা। রোগকে গোপন করলে কি তার চিকিৎসা হয়? তখন রোগ আরো গভীরতর হয়। একাত্তরের যুদ্ধ ৫০ বছর আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু ভারতসেবীদের আজও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হত্যার কাজ শেষ হয়নি। তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এটি এখন সুস্পষ্ট যে, দেশের রাজনীতিতে যত দিন তাদের প্রতিপক্ষ থাকবে ততদিন প্রতিপক্ষদের হত্যার কাজও চলতে থাকবে। জীবাণু থাকলে রোগও থাকে। ভারতসেবী আওয়ামী লীগ থাকবে অথচ দেশে অসভ্যতা ও নৃশংসতা থাকবে না থাকবে না -তা কি ভাবা যায়? সভ্য ভাবে বাঁচার দিন যে বাংলাদেশ সহসা আসছে না – এ হলো তারই আলামত।
বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের যা করণীয়
যারা বাঙালীর চারিত্রিক, সামাজিক ও নৈতিক বিপ্লব নিয়ে ভাবে -তাদের উচিত বাঙালী চরিত্রের এ অসভ্য দিকগুলোকে অবশ্যই হাই-লাইট করা। এভাবেই বাঙালীকে বুঝাতে হবে, কতো নীচু অবস্থা থেকে তাদের উপরে উঠতে হবে। পবিত্র কুর’আনে মহাজ্ঞানী মহান আল্লাতায়ালা এক শ্রেণীর মানুষকে গবাদী পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। বাংলাদেশে এমন মানুষদের সংখ্যাটি যে বিশাল -তা কি অস্বীকার করা যায়? যে দেশ বিশ্বের সকল দেশকে পিছনে ফেলে দুর্নীতিতে পর পর ৫ বার প্রথম হয় তাদের মাঝে এমন মানুষ না থাকলে তাদের বসবাস আর কোথায় হবে? মুজিবপন্থী ও ভারতপন্থীদের সাথে সুর মিলিয়ে একাত্তরের নৃশংস অপরাধীদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বললে কি বাঙালীর মনে পরিশুদ্ধি অর্জনের সাধ জাগবে? তখন বরং খুনি, সন্ত্রাসী, চোর-ডাকাত ও ভোটডাকাত হওয়ারই প্রবল বাসনা জাগবে। এমন দেশে ভোটডাকাতকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলা হবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? গুরুতর কান্সার রোগীকে স্বাস্থ্যবান বললে সে কি চিকিৎসা নেয়? রোগীকে রোগী, পশুকে পশু এবং কোদালকে কোদাল বলার অভ্যাস গড়তে হবে। দেখতে চারিত্রিক ও নৈতিক বিপ্লবের পথ। ইসলামে এটিই কবিরা জিহাদ তথা বড় জিহাদ। এবং এ জিহাদে অস্ত্র হলো পবিত্র কুর’আন।
আরো প্রশ্ন হলো, তালেবানগণ সামরিক বিজয়ের সাথে চারিত্রিক বিজয়ের যে মোজেজা দেখালো -সেটি কি বাঙালীগণ পারে না? দেশে দেশে অন্যরা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের যে ইতিহাস গড়ছে -সেটিও কি বাংলাদেশীরা পারে না? ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পথে চলে কি এতোই কঠিন? পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। গতকাল পূর্ব আফ্রিকার দেশ জা্ম্বিয়াতে শান্তিপূর্ণ ভাবে একটি নির্বাচন হলো। সে নির্বাচনে দেশের প্রেসিডেন্ট হেরে গিয়ে প্রমাণ করলো নির্বাচন কতটা সুষ্ঠ হয়েছে। সেরূপ নির্বাচন কেন বাংলাদেশে হয়না? বাংলাদেশে আজ চলছে হাসিনার ন্যায় এক নৃশংস ও অসভ্য ভোটডাকাতের সরকার। দেশের উপর ভোটডাকাত ফ্যাসিস্টের দখলদারী মেনে নিলে কি সভ্যতা বাঁচে? সভ্য বিবেকবোধের পরিচয় তো চোর-ডাকাতকে ঘৃণা করার মধ্যে। অথচ কি বিস্ময়ের বিষয়, হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, আদালতের বিচারপতি, সরকারের সচিব, সংসদ সদস্য, উকিল, এমন কি বহু আলেম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে! কোন সভ্য মানুষ কি কখনো ডাকাতকে মাননীয় বলে? এটি তো নিরেট অসভ্যতা। কি বিস্ময়ের বিষয়, এরূপ অসভ্য মানুষদের সংখ্যাটি বাংলাদেশে কত বিশাল! ডাকাতকে মাননীয় বলার কান্ড কোন সভ্য দেশে হলে সেদেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক কর্মী ও সকল প্রকার বিবেকমান মানুষের মাঝে প্রতিবাদের তুফান উঠতো। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হয়না।
ইসলামপন্থীদের জন্য যা শিক্ষণীয়
তালেবানদের থেকে ইসলামপন্থীদেরাও বহু কিছু শেখার আছে। তালেবানরা চায়, মহান নবীজী (সা:)’র শেখানো পূর্ণাঙ্গ ইসলাম নিয়ে বাঁচতে। নবীজী (সা:)’র ইসলাম বলতে শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত বুঝায় না। সে ইসলামে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত ও হুদুদের প্রতিষ্ঠা, জিহাদ, শুরা ভিত্তিক শাসন, ও প্যান ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশে নবীজী (সা:)’র সে ইসলাম পালিত হয় না। এসব দেশের মানুষ বেঁচে আছে নিজেদের মনগড়া এক অপূর্ণাঙ্গ ইসলাম নিয়ে। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম হলো, পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশের (উদখুলো ফিস সিলমে কা’ফফা)। অপূর্ণাঙ্গ ইসলাম পালনে অবাধ্যতা হয় মহান আল্লাহতায়ালার এই হুকুমের।
আরেকটি বিষয় অতি গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষেতখামার ও কারখানায় সেরা পণ্যের উৎপাদন বাড়ালেই চলে না। সে পণ্যের বাজারজাত করণে বিশাল দোকান খুলতে হয়। একমাত্রই তখনই ক্রেতারা সে পণ্যের সাথে পরিচিত হয়। বাজারজাত করণের সে কাজটি না হলে জনগণ ব্যর্থ হয় সে উৎপাদিত পণ্য থেকে ফায়দা নিতে।বিষয়টি অবিকল সত্য ইসলামের বেলাতেও। ইসলামের বিধান সর্বশ্রেষ্ঠ ও কল্যাণকর -সে কথাটি হাজার হাজার ওয়াজে বা কিতাবের মাঝে বয়ান করলে চলেনা। সে শ্রেষ্ঠত্বটিকে রাষ্ট্রের প্রশাসন, সমাজনীতি, বিচার-আচার, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ প্রতিটি অঙ্গণে প্রতিষ্ঠা দিয়ে প্রমাণ করতে হয়। একেই বলে showcasing। সে কাজে ইসলামী রাষ্ট্র গড়াটি অতি অপরিহার্য। এবং সেটি করলে বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচারের কাজটি অতি সহজ হয়ে যায়। ইসলামের সুবিচার ও কল্যাণমূলক কর্মই তখন ইসলামের পক্ষে প্রবল ভাবে কথা বলে। তখন মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তাবলিগ করার প্রয়োজন হয়না। রাষ্ট্র নিজেই তখন ইসলামের প্রচারে বিশাল মনুমেন্টে পরিণত হয়। সেটি দেখে দলে দলে মানুষ তখন ইসলামে প্রবেশ করে। নবীজী(সা:)’র আমলে সেটিই হয়েছিল। তাই সে সময় তাবলিগ জামায়াতের প্রয়োজন পড়েনি। নবীজী (সা:) মদিনায় হিজরতের পর পরই ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দেন। এবং নবীজী (সা:) যা কিছু করেছেন তা করেছেন মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহাতায়ালার নির্দেশেই। তিনি স্বয়ং ১০ বছর যাবত সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে ইসলামের যেরূপ প্রচার নবীজী (সা:) দিতে পেরেছেন সেরূপ প্রচার হযরত মূসা (আ:) ও হযরত ঈসা (আ:)’র ন্যায় মহান রাসূলগণ দিতে পারেননি।
অতি বিস্ময়ের বিষয় হলো, বাংলাদেশের মোল্লা-মৌলভীগণ ইসলামের ইতিহাসের এ গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলি বলে না। নবীজী (সা:)’র বহু সূন্নতের কথা বল্লেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায় বিশাল সূন্নতটির কথাটি তারা মুখে আনে না। সম্ভবত একারণে যে, এ সূন্নত পালনে লাগাতর জিহাদ আছে ও শহীদ হওয়ারও প্রয়োজন থাকে। কিন্তু অন্যান্য সূন্নত পালনে সেটি নাই। অথচ নবীজী (সা:)’র এ মহান সূন্নতটিই মুসলিমদের বিশ্বশক্তির মর্যাদা দিয়েছে। এবং এ সূন্নতের পথ বেয়েই তাঁরা গড়তে পেরেছিলেন মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা।
পবিত্র কুর’আনে শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়নি। সুরা হাদীদের ২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছ, “লাকাদ আরসালনা রুসুলানা বিল বাই’য়েনাতি ওয়া আনযালনা মায়াহুমুল কিতাবা ওয়াল মিযানা লি ইয়াকুমা নাসু বিল কিসত।” অর্থ: “নিশ্চয়ই আমরা প্রেরণ করেছি সুস্পষ্ট বয়ানসহ আমাদের রাসূলদের, এবং তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও ন্যায় বিচারের মানদন্ড যাতে তারা প্রতিষ্ঠা দিতে পারে ন্যায় বিচার।” অর্থাৎ ইসলামের মূল এজেন্ডা শুধু নামায-রোযার প্রতিষ্ঠা দেয়া নয়, বরং ন্যায় বিচারের প্রতিষ্ঠা দেয়াও। আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কাজটি ধর্মপালনকে নামায-রোযায় সীমিত রাখলে চলে না। শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা গড়লেও চলে না। শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্রও গড়তে হয়। পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার আরেকটি নির্দেশ হলো, “আমারু বিল মা’রুফ ওয়া নেহী আনীল মুনকার” অর্থাৎ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং দুর্বৃত্তি ও অন্যায়ের নির্মূল। সেকাজটিও রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের মধ্যে পড়ে। তাই মুসলিমের কাজ কোন সেক্যুলার রাষ্ট্র গড়া নয়, সেটি পূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্রগড়া। নবীজী (সা:)কে তাই ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে হয়েছে। আর ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার পথে নামলে জিহাদ অনিবার্য হয়ে উঠে। কারণ ইসলামের শত্রুপক্ষ কখনোই এমন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা চায়না।
যে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে
তালেবানদের বিজয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে তাদের জন্যও যারা মুসলিম দেশগুলির প্রতিরক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার বিষয়টি ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদত। এটি পবিত্র জিহাদ। একাজ প্রতিটি ঈমানদারের। মুসলিমদের পরাজয়ের শুরু তখন থেকেই যখন সর্বশ্রেষ্ঠ এ ইবাদতকে কিছু বেতনভোগী স্বার্থপর চাটুকরের প্রফেশনে পরিণত করা হয়েছে। এবং প্রতিরক্ষার পবিত্র জিহাদকে জনগণের স্তরে বিলুপ্ত করে সেটিকে কিছু বেতনভোগীর সেক্যুলারিস্টের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। এসব বেতন ভোগীরাই পরিণত হয় দুর্বৃত্ত শাসকের পদসেবী চাকর-বাকরে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হলো তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এরা প্রতিপালিত হয় জনগণের অর্থে, কিন্তু পাহারা দেয় তাদেরকে যারা ডাকাতি করে জনগণের ভোট ও সম্পদের উপর। এরা আদৌ রাষ্ট্রের রক্ষক নয়, বরং রক্ষক দুর্বৃত্তদের। অথচ এদের প্রতিপালনে দেশের বাজেটের বিশাল অংশ ব্যয় হয়। এরাই হাসিনার ন্যায় ভোট ডাকাতকে ভক্তি ভরে কুর্ণিশ করে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে। এমন দুশ্চরিত্র চাকর-বাকরদের দিয়ে কি জিহাদের ন্যায় পবিত্র কাজ হয়? বরং এদের কাজ হয়েছে মাঝে মধ্যে সামরিক অভ্যুত্থান করে দেশকে দখলে নেয়া এবং দেশের মূল্যবান জায়গাজমির উপর দখলদারী প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, তুরস্ক, মিশর, সূদান, নাইজিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার ন্যায় মুসলিম দেশগুলি তো তাদের হাতেই বার বার অধিকৃত ও লুন্ঠিত হয়েছে।
অথচ মুসলিমগণ যখন বিজয়ের পর বিজয় এনেছে এবং রোম সাম্রাজ্য ও পারস্য সাম্রাজ্যের ন্যায় তৎকালীন বিশ্বের দুটি বিশ্বশক্তিকে পরাজিত করেছে, তাদের কোন ক্যান্টনমেন্টই ছিল না। লড়াকু সৈনিকগণ তখন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও বেড়ে উঠেছেন নিজ নিজ মহল্লার অলি-গলিতে। সেদিন প্রতিটি মহল্লা পরিণত হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টে। এবং প্রতিটি গৃহ পরিণত হয়েছিল যুদ্ধের বাংকার তথা পরিখাতে। খালেদ বিন ওয়ালিদ, সাদ বিন আবি আক্কাস, তারিক বিন জিয়াদের ন্যায় মানব ইতিহাসের সেরা জেনারেলগণ কোন ক্যান্টনমেন্ট বা মিলিট্যারি এ্যাকাডেমীতে গড়ে উঠেননি। তারা গড়ে উঠেছিলেন নিজ নিজ মহল্লা থেকে। অথচ তাদের রণকৌশলগুলো আজ পাশ্চাত্য দেশের মিলিট্যারি এ্যাকাডেমীতে পড়ানো হয়। আজকের আধুনিক যুগেও যারা সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় দু’টি বিশ্ব শক্তিকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করলো তারাও কোন ক্যান্টনমেন্ট বা মিলিট্যারি এ্যাকাডেমীতে গড়ে উঠেননি। তারা বেড়ে উঠেছে মহল্লার অলি-গলিতে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিশর, সিরিয়া ও জর্দানের সন্মিলিত সেনাবাহিনী ১৯৬৭ সালে মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে পুরাপুরি পর্যুদস্ত হয়েছিল। মিশর হারিয়েছিল তার বিশাল সাইনাই। সিরিয়া হারিয়েছিল গোলান হাইট। জর্দান হারিয়েছিল জর্দান নদীর পূর্বতীরস্থ ভূমি। অথচ ইসরাইলের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হামাসের যে মুজাহিদগণ ৫০ দিন বীর দর্পে লড়লো এবং রুখে দিল ইসরাইলকে তারাও কোন ক্যান্টনমেন্ট ও মিলিট্যারি এ্যাকাডেমীতে প্রশিক্ষণ পায়নি। তারাও বেড়ে উঠেছে মহল্লার অলিগলি ও নিজ গৃহে। তাই দেশকে সুরক্ষা দিতে হলে প্রতিরক্ষার পবিত্র জিহাদকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী না রেখে প্রতিটি জনপদে জনগণের স্তরে নামিয়ে আনতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার চেয়ে ভারত শক্তিশালী নয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যা আফগানিস্তানের তূলনায় ৪ গুণের বেশী। অতএব ভয় কিসের?
সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ
তালেবানদের সামনে এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিজয় আসলেও যুদ্ধ শেষ হয়নি। ত্বরিৎ পরাজয় দেখে শত্রুগণ আজ দিশেহারা। তারা ষড়যন্ত্র আটছে কি করে তালেবানদের বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়া যায়। শত্রুর যুদ্ধ কখনোই শেষ হয়না, তারা শুধু কৌশল পাল্টায়। বুঝতে হবে, মহান আল্লাহছাড়া এ বিশ্বে কোন দেশই তাদের বন্ধু নয়। তবে মহান আল্লাহতায়ালা পক্ষে থাকলে কেউ কি হারাতে পারে? তাই মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সম্পর্ককে মজবুত করতে হবে। চিনতে হবে শত্রুদের। আফগানিস্তানে তাদের সংখ্যাটি বিশাল। বুঝতে হবে, ২০ বছর দখলকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা একটি দিনও বসে থাকেনি। প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির অঙ্গণে তারা অনেক পরিবরর্তন এনেছে। পরিবর্তন এনেছে জনগণের ভাবনা ও রুচিতে। সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় পরিবরর্তনের এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় social, educational and political engineering। সে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের সর্বাঙ্গণে বিপুল সংখ্যায় শত্রু উৎপাদিত হয়েছে। কাফের শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার এটিই হলো বিপদ। ঔপনিবেশিক শাসনের কুফলগুলি নিয়ে এখনো ভুগছে মুসলিম দেশগুলি।
এ যাবত কাল আফগানিস্তানের বাজেটের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ আসতো বিদেশীদের দেয়া সাহায্য থেকে। এখন সেটি বন্ধ হয়ে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রগণ যুদ্ধে জিততে না পারলেও অর্থনীতিকে তারা অস্ত্র রূপে ব্যবহার করবে। উত্তর কোরিয়া, ভিনিজুয়েলা ও কিউবার বিরুদ্ধে যে রীতি, সে রীতিই প্রয়োগ করবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। বিগত ২০ বছরে তারা অনেক পরজীবী, ভোগবাদী ও পাশ্চাত্যসেবী লক্ষ লক্ষ মানুষ সৃষ্টি করেছে। তাদের চেননার ভূমি পশ্চিমা শক্তির হাতে এখনো অধিকৃত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় এবং তালেবানদের বিজয় নিয়ে এরা শোকাহত। এরাই এখন আফগানিস্তানের ঘরের শত্রু। তারাই ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে লাগাতর সেক্যুরিটি ক্রাইসিস সৃষ্টি করবে।
ফলে তালেবানদের লড়াই এখন নতুন অঙ্গণে প্রবেশ করলো। মু’মিনের জীবনে জিহাদের শেষ নাই। নবীজী (সা:) যখন মৃত্যু শয্যায় তখনও যুদ্ধ চলছিল রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে। তালেবানদের এ জিহাদেরও শেষ নাই। ঈমান নিয়ে বাঁচতে হলে জিহাদ নিয়েও বাঁচতে হয়। ইতিমধ্যেই পাশ্চাত্য দুনিয়ার মিডিয়াগুলি তালেবানদের বিরুদ্ধে নেগেটিভ প্রচরণাকে তীব্রতর করেছে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্বের নানা ভাষাভাষী মুসলিমদের দায়িত্বটিও বিশাল। এ যুদ্ধটি শুধু তালেবানদের বিরুদ্ধে নয়, বরং বিশ্ব মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইসলামের সকল শত্রুদের সম্মিলত যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শত্রু পক্ষের ইসলামকে পরাজিত রাখার যুদ্ধ। এটি হলো দুটি ভিন্ন বিশ্বাস এবং দুইটি সভ্যতার যুদ্ধ। ইসলামের সাথে অনৈসলামের। এ যুদ্ধটি দিন দিন প্রবলতর হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে। কোন মুসলিম কি এ যুদ্ধে নিরপেক্ষ ও দর্শক হতে পারে? ১৬/০৮/২০২১ ৃ
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
স্যার কমিউনিজম ও সমাজতন্ত্র নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই.কমিউনিস্টরা কিভাবে পাকিস্তান ভাঙলো সেই ব্যাপারেও জানতে চাই। প্লিস এই ব্যাপারে লেখবেন।