কোর’আন শিক্ষায় অনাগ্রহ এবং ভণ্ড আলেমদের নাশকতা
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 24, 2020
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ব্যর্থতাটি কোর’আন শিক্ষায়
পবিত্র কোর’আন শিক্ষার দিক দিয়ে বাঙালী মুসলিমের ব্যর্থতাটি বিশাল। সে ব্যর্থতার পরিনামটি দ্রুত ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। অসম্ভব হয়ে উঠছে মুসলিম রূপে তাদের বাঁচা ও বেড়ে উঠা। ব্যর্থতার কারণ এই নয় যে, মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা বাঙালী মুসলিমের মগজে পর্যাপ্ত ঘেলু দেননি ও জন্ম দিয়েছেন বুদ্ধিহীন রূপে। ব্যর্থতার মূল কারণ, আরবী ভাষা না জানা। অবস্থা এমনও নয়, তাদের হাতে সময় নেই বা ভাষা শিক্ষার জন্য বইপত্র কেনার সামর্থ্য নেই। বরং বাস্তবতা হলো, কোটি কোটি বাঙালী কিশোর-কিশরী মাতৃভাষার বাইরে অন্যান্য বিদেশী ভাষা শিখায় যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাচ্ছে্। অনেকে ভাল ইংরেজী বলতে এবং লিখতে পারে, অনেকে হিন্দিও বুঝে ও বলতে পারে। ইংরেজী ভাষা শিক্ষায় আগ্রহটি এতই অধীক যে হাজার হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে প্রাইভেট শিক্ষকের পিছনে। অনেকে জাপানী, কোরিয়ান এবং চাইনিজ ভাষাও শিখছে। এমনকি গ্রামের অনেক নিরক্ষর মহিলারাও হিন্দি সিনেমার ডায়লোগ বুঝে। কিন্তু ক’জন কোর’আনের নাযিলকৃত মহান আল্লা্হতায়ালার ভাষা বুঝে। বড় কথা, ক’জনের রয়েছে সে ভাষা শিক্ষায় আগ্রহ। অনেকেরই বিশ্বের নানা দেশে বেড়াতে অর্থ ও সময়ের অভাব হয় না। কিন্তু অভাব দেখা দেয় হজ্বের বেলায়। তেমনি বিশ্বের নানা ভাষা শিখতে সময়, শ্রম ও আগ্রহের অভাব হয় না। কিন্তু অভাব দেখা দেয় কোরআনের ভাষা শেখার ক্ষেত্রে। পরকালে কি এর জবাব দিতে হবে না?
পবিত্র কোরআনের ভাষা বুঝায় অনাগ্রহের মূল কারণটি বাঙালীর বুদ্ধির কমতি নয়, সময় ও সামর্থ্যেরও অভাবও নয়। বরং কমতিটি হলো, মহান আল্লাহাতায়ালার প্রতি এশক ও ভালবাসার। প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ ইসলাম কবুলের সাথে সাথে মহান আল্লাহাতায়ালার প্রতি তারা এতটাই আশেকে পরিণত হতেন যে নিজেদের মাতৃভাষা চর্চা ত্বরিৎ দাফন করে কোরআনের ভাষা শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করতেন। আজ সেরূপ এশক ও আরবী ভাষা শিক্ষায় সেরূপ আগ্রহ দেখা যাচ্ছ ইউরোপ-আমেরিকার নওমুসলিমদের মাঝে। অআরবী শিখতে তাদের অনেকে কয়েক বছরের জন্য আরব দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। কারণ একটাই্। যে মহান আল্লাহাতায়ালার সাথে আত্মার এশক, তাঁর ভাষা না বুঝলে সে এশক গভীরতর হয় কি করে? তৎকালে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, মরক্কো, সূদান, লিবিয়া, আলজিরিয়া, তিউনিসিয়ার, মালীর ন্যায় বহু দেশের ভাষাই আরবী ছিল না। কিন্তু এসব দেশের মানুষ মাতৃভাষা দাফন করে আরবী ভাষাকে নিজের ও নিজ সন্তানদের ভাষা রূপে গ্রহণ করেছেন।
এশকের কমতি সাথে আরো কমতি হলো, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লা্হতায়ালা যেসব নির্দেশাবলি দিয়েছেন –সেগুলি জানার ক্ষেত্রেও। পবিত্র কোরআনকে মহান আল্লা্হতায়ালা তাঁর নিজের ভাষায় ভূষিত করেছেন “বায়ানুল লিন্নাস” তথা মানব জাতির জন্য বয়ান, “হুদা” তথা রোডম্যাপ এবং “মাওয়েজাতুল হাসানা” অর্থাৎ সর্বোত্তম ওয়াজ বলে। এ ওয়াজে রয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য অসাধারণ জ্ঞানপূর্ণ নসিহত ও হিদায়েত। বস্তুতঃ দয়াময় মহান আল্লা্হতায়ালা পক্ষ থেকে মানবসৃষ্টির জন্য এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ নসিহত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হিদায়েত। প্রশ্ন হলো, এ নসিহত ও হিদায়েত না বুঝে কেউ কি মুসলিম হতে পারে? পায় কি জান্নাতের পথ? সেটি কি কখনো ভাবা যায়? সেটি অসম্ভব জেনেই পৃথিবীর বিশাল ভূ-ভাগের মানুষ সেদিন নিজেদের মাতৃভাষা পাল্টিয়েছিল। বলা যায়, এটি ছিল সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশেষ্ঠ বিপ্লব। ছিল বিশাল সামষ্টিক নেক কর্ম। আরবী ভাষা জানার ফলে সরাসরি সংযোগ গড়ে উঠেছিল মহান আল্লাহতায়ালার সাথে। ফলে ইসলাম শিখতে তাদেরকে কোন ধর্মব্যবসায়ী-চক্রের খপ্পড়ে পড়তে হয়নি। ফলে ঘরে ঘরে তখন সাচ্চা আলেম গড়ে উঠেছিল। ফলে তারা সামর্থ্য পেয়েছিল মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মাণে মিছিলে শামিল হওয়ার। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত সে ওয়াজ বুঝায় আগ্রহ ক’জন বাঙালীর? বরং তাদের জীবনে যেটি প্রবল তা হলো, পবিত্র কোর’আনের অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড তাচ্ছিল্যতার।
অজ্ঞাতর পরিনাম তো ভয়াবহ
মানবের জন্য সবচেয় ভয়াবহ বিপদের কারণটি খাদ্যাভাব নয়, সেটি জ্ঞানাভাব। খাদ্যাভাবে কেউ জাহান্নামে যায় না। কিন্তু জ্ঞানের অভাব জাহান্নামে নেয়। মানুষ জীবনের সবচেয়ে বড় অযোগ্যতাটি হলো জাহিলিয়াত। মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত জান্নাত জাহেলদের জন্য নয়। তাদের জন্য যা বরাদ্দ তা হলো জাহান্নাম। ফলে মানব জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদটি ঘটে জ্ঞানার্জনে তাচ্ছিল্যের কারণে। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লা্হতায়ালার যে হুশিয়ারিটি এসেছে এভাবে, “ইন্নামা ইয়াখশাল্লাহ মিন ইবাদিহিল উলামা” অর্থঃ একমাত্র (কোরআনের জ্ঞানে) জ্ঞানীরাই আমাকে ভয় করে।” তাঁকে ভয়ের মধ্যেই তো প্রকৃত ঈমানদারি তথা মুসলিম হওয়ার সামর্থ্য। আরবের পৌত্তলিক কাফেরগণ যে আল্লাহতায়ালাকে অবিশ্বাস করতো – বিষয়টি তা নয়। তারা বরং নিজ সন্তানের নাম আব্দুল্লাহ বা আব্দুর রহমান তথা আল্লাহর দাস রাখতো। কিন্তু তাদের মাঝে পবিত্র কোরআনের জ্ঞান ছিল না, ফলে ছিল না মহান আল্লাহতায়ালার ভয়। ফলে তারা ব্যর্থ হয়েছে মুসলিম হতে। ভয় না থাকার কারণে তারা চলেছে বিদ্রোহের পথে। আল্লাহর ভয়ের সাথে আসে রোজ হাশরের বিচার দিনের ভয়, আসে জাহান্নামে আগুণে দগ্ধিভূত হওয়ার ভয়। ফলে সে ভয়ের সাথে আসে মহান রাব্বুল আ’লামিনের প্রতিটি শরিয়তি হুকুমের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ। প্রকৃত মুসলিম তো তারা্ই যারা আত্মসমর্পিত। অপর দিকে কাফেরগণ বাঁচে বিদ্রোহ নিয়ে। প্রশ্ন হলো, আজকের মুসলিমদের জীবনে সে বিদ্রোহ কি কম? মুসলিম দেশগুলিতে শরিয়ত, হুদুদ, মুসলিম ঐক্য, ও খেলাফতের বিলুপ্তি এবং সুদ, ঘুষ, দূর্নীতি, মিথ্যাচার, স্বৈরাচার, গুম, খুন, ব্যাভিচার, বেশ্যাবৃত্তির প্রবল উপস্থিতিই বলে দেয় জনগণের মাঝে আখেরাতের ভয় কতটা বিলুপ্ত। এর কারণ, কোরআনী জ্ঞানের অভাব। খাদ্যের অভাবে যেমন দেহনাশ হয়, তেমনি ঈমাননাশ হয় ওহীর জ্ঞানের অভাবে। মুসলিম দেশগুলির সেক্যুলার সরকারদের এজেন্ডা হয়েছে সে নাশকতাকে আরো তীব্রতর করা। অনৈসলামী রাষ্ট্রের এটিই হলো বড় বিপদ।
আলেমদের জাহিলিয়াত
আলেম তো তারাই যাদের মধ্যে রয়েছে ইলম। ইলম যে আছে সেটি বুঝা যাবে কেমনে? আগুনকে যেমন দেখা যায় এবং তার উত্তাপকে যেমন অনুভব করা যায়, তেমনি ব্যক্তির ইলম’কে দেখা যায় ও অনুভব কর যায়। ইলমকে অনেক বিজ্ঞ আলেম সংজ্ঞায়িত করেছেন “মুখাওয়াফুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহর ভয় রূপে। তাই যার মধ্যে আল্লাহর ভয় নাই তার মধ্যে ইলমও নাই। এবং ইলম সৃষ্টি হলে আল্লাহর ভয়ও সৃষ্টি হয়। কথা হলো, মহান আল্লাহতায়ালার ভয় কি করে দেখা যায়? সে ভয়টি দেখা যায় আলেমের আমলের মধ্য। তার মধ্যে দেখা যায় প্রতি মুহুর্তে ও প্রতি কর্মে মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার পেরেশানী। তার মুখ থেকে ওয়াজ শুনতে অর্থ দেয়া লাগে না, বরং সে নিজ খরচে ও নিজ উদ্যোগে ওয়াজের ফুরসত খুঁজে। কারণ সেটিকে সে ব্যবসা নয়, ইবাদত মনে করে। সে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ফিরকার নামে বিভক্তি গড়ে না, বরং একতা গড়ে। তার ব্যস্ততা থাকে অন্যায়ের নির্মূল, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং শরিয়ত প্রতিষ্ঠার লাগাতর জিহাদে।
অথচ বাংলাদেশে জ্ঞানের ময়দানে বিপ্লব না আসলেও সংখ্যা বেড়েছে আলেম, আল্লামা ও মাওলানাদের। বেড়েছে আলেম নামধারী জাহেলদের। বেড়েছে জ্ঞানের নামে মুর্খতা? জ্ঞান মানুষকে বিনম্র করে। এবং মুর্খতা বাড়ায় অহংকার। তাই ধর্মের লেবাসধারী এক শ্রেণীর মানুষের মাঝে বেড়েছে নিজেদের ধার্মিকতা নিয়ে প্রচণ্ড অহংকার ও আত্মপ্রচার। বাংলাদেশে ইলমের ময়দানে এটি এক ভয়ানক রোগ যা ব্যহত করছে কোরআনী জ্ঞানের প্রসার। এরাই আজ দলে দলে নৃশংস স্বৈরাচারের সেপাহীতে পরিণত হচ্ছে। তাদের কারণে শাপলা চত্ত্বরের গণহ্ত্যার সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র দেশ জুড়ে।
প্রশ্ন হলো, মুসলিমদের মাঝে যারা এক সময় কোরআনী জ্ঞা্নের বিশাল বিপ্লব এনেছিলেন তাদের কেউ কি নিজেদের নামের পাশে আলেম, আল্লামা ও মাওলানা লিখেছেন। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম হাম্বলী, ইমাম বোখারী, ইমাম মুসলিম, হাসান আল বাসরী, আত্ তিরমিজী, আবু দাউদ, আত্ তাবারী, আল রাযী, আল কুরতুবী, ইবনে কাসীর, রাগিব ইস্পাহানী, গাজ্জালী, ইবনে তায়মিয়া, ইবনে কাইয়েম –ইনাদের সবাই ছিলেন জ্ঞানের রাজ্যে বিশাল বিশাল নক্ষত্র। কিন্তু তাদের কেউ-ই নিজেদের নামের আগে মাওলানা্ ও আল্লামা লিখেন নাই। নিজেদের জীবদ্দশাতে শাগরেদদেরও সেরূপ কিছু লিখতে অনুমতি দেননি। কোন সরকার থেকে তারা কোন সনদের দাবীও করেননি। তাদের চাওয়া-পা্ওয়া ছিল একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার কাছে। মহান আল্লাহতায়ালারও তো সেটিই ফরমান। তারা চাইবে একমাত্র তাঁর থেকে, বান্দাহ থেকে নয়।
জ্ঞানার্জনের বদলে মুসলিমদের মাঝে যখনই সনদ হাসিল এবং আল্লামা ও মাওলানা লেখার হিড়িক শুরু হয়েছে তখন থেকেই মুসলিম দেশগুলিতে জ্ঞানের বদলে জাহিলিয়াতের গভীরতা বেড়েছে। সেটির নমুনা হলো বাংলাদেশ। এক সময় সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে মাত্র একজন ব্যক্তিকে জনগণ আল্লামা বলতো। তিনি ছিলেন কবি ও ডক্টর ইকবাল। কবিতা লিখতেন উর্দু ও ফার্সীতে। ফলে অনুবাদ ছাড়াই ভারত, আফগানিস্তান ও ইরানে তাঁর সাহিত্য পাঠ করা হতো। তাঁর কবিতা ও লেখনির মাঝে ছিল জ্ঞানের বিশাল গভীরতা। সে গভীরতা দেখেই উপমহাদেশের শিক্ষিত মহল তাঁকে আল্লামা উপাধিতে ভূষিত করেছিল। অবিভক্ত ভারতের মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব মূলতঃ তিনিই দিয়েছিলেন। ফলে তুমুল বিরোধীতার মুখে সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান।
অথচ বাংলাদেশে বইছে ভিন্ন স্রোত। জ্ঞানের বন্যা না বইলে কি হবে, প্লাবন এসেছে আল্লামাদের। হাট হাজারীর ন্যায় কোন কোন মাদ্রাসার শিক্ষকের তালিকায় নজরে পর মাদ্রসার সকল শিক্ষকই আল্লামা। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, এরূপ শত শত আল্লামা থাকতে বাংলাদেশে মৌলিক কোন তাফসির লিখেছেন -এমন কোন বিজ্ঞ আলেম খুঁজে পাওয়া যায় না। বাস্তবতা হলো, বাংলা ভাষায় যে কয়খানি তাফসির গ্রন্থ বাজারে পা্ওয়া যায় তা উর্দু বা আরবী থেকে অনুদিত। এসব আল্লামাদের হাতে রচিত হয়নি একখানি নবী-চরিত্রও। এই হলো বাংলাদেশে স্বঘোষিত আল্লামাদের অবদান! এরূপ আল্লামাগণ যে স্বৈরাচারি নৃশংস জালে শাসকের কাছে নিজেদের বিদ্যাবুদ্ধির সনদ দাবি করবে এবং সে সনদ হাতে পেলে জালেমকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে প্রচারে নামবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? আশীর দশকে ভারতে এমন শ্রেণীর আল্লামাগণই দেওবন্দ মাদ্রাসায় ইন্দিরা গান্ধির ন্যায় এক বেপর্দা কাফেরকে মঞ্চের মধ্যখানে বসিয়ে ধর্মীয় জলসা করেছে!
যে বিপদ জাহেল আলেমদের নিয়ে
তাই বাংলাদেশে মুসলিমদের বিপদের মূল কারণ শুধু দুর্বৃত্ত ও নৃশংস স্বৈরশাসক নয়, ভণ্ড আলেমগণও। এরাই এক সময় মসজিদে রাজনীতি চর্চাকে নিষিদ্ধ ঘোষিত করেছিল। এবং রাজনীতিকে অপবিত্র ঘোষণা দিয়ে নিজেরাও তা থেকে দূরে থেকেছে। অথচ রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটি কি ইসলামে জায়েজ? এর অর্থ তো সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে দূরে থাকা। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা এবং অসত্য ও অন্যায়ের নির্মূলের জিহাদ তো মসজিদ-মাদ্রাসার চার দেয়ালের মাঝে হয় না, সেটি হয় রাজনীতির অঙ্গণে। তাই রাজনীতির ময়দান থেকে ইসলামপন্থিগণ নিজেদের সরিয়ে নিলে শূণ্য ময়দান পায় ইসলামের দুষমনেরা। তখন পরাজিত হয় ইসলামের পক্ষের শক্তি। এবং বিজয়ী হয় শয়তানের পক্ষ। এমন পলায়নপর আলেমদের প্রতিপালনে স্বৈর-শাসকদের বিনিয়োগটি তাই বিশাল। তারা ভূলে যায়, স্বয়ং নবীজী(সাঃ) ছিলেন রাষ্ট্র প্রধান। তিনি নিজে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। শুধু ধর্মীয় নেতা রূপে নয়, বরং নিজেকে আদর্শ রূপে খাড়া করেছেন মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক নেতা রূপে। তাই আলেমের কাজ শুধু কোর’আন ও শরিয়তের বিধান শেখানো নয় বরং সে শরিয়তকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে জিহাদে নামাও। এটিই তো নবীজী (সাঃ)র সূন্নত। তাই শরিয়তী বিধানকে প্রতিষ্ঠিত না করার অর্থ, মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর ইচ্ছাকে শুধু অসম্মান করা নয়, বরং নবীজী (সাঃ) যে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন সে ইসলাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া। একাজ তো কাফের ও মুনাফিকদের। মুসলিমের কাজ শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা নিয়ে বাঁচা নয়, বরং সেটি শরিয়ত পালনের মধ্যে বাঁচা। অথচ বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা ও বহু লক্ষ আলেম নামধারীর বসবাস হলেও শরিয়ত পালন নাই। শরিয়ত রয়ে গেছে কোর’অআন ও হাদীসের কিতাবে, আদালতে নয়্। আদালতে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে কাফেরদের প্রণীত আইনকে। অথচ যারা শরিয়ত পালন করে না মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে মুসলিম না বলে কাফের, জালেম ও ফাসেক বলেছেন। সে সুস্পষ্ট ঘোষণাটি এসেছে সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে।
তাই প্রশ্ন হলো, রাজনীতিতে না নামলে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা কীরূপে সম্ভব? সে কাজ কি দোয়া-দরুদে সম্ভব? দোয়া-দরুদে সম্ভব হলে জিহাদের বিধান দেয়া হবে কেন? শহীদদের মর্যাদাই বা কেন? শরিয়তের প্রতিষ্ঠা না দিয়ে কি সম্ভব মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান ও এশকের প্রমাণ পেশ করা? এটি দ্বীনের সাথে গাদ্দারী। ইসলামের বিপক্ষ শক্তি তো সেটিই চায়। তারা চায়, আলেমগণ রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে থাক এবং রাষ্ট্রের উপর দখলদারী তাদের হাতের ছেড়ে দিক। এ পথ তো শয়তানকে বিজয়ী করার পথ। রাজনীতি থেকে দূরে থেকে বাংলাদেশের ভণ্ড আলেমগণও তো সেটিই চায়। এজন্যই বাংলাদেশ আজ ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে অধিকৃত, কিন্তু সে অধিকৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য কোন জিহাদ নাই। বরং যে খুনি শক্তি শাপলা চত্ত্বরে মুছল্লীদের হত্যা করলো এবং পণ্ড করে ওয়াজের মাহফিল -তাদের বিজয়ী করতে তারা ময়দানে নামে। ইসলামের শত্রুদের তারা মাননীয়ও বলে। মহান আল্লাহতায়ালার উপর যার শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে, সে কি কখনো শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায় না এমন ব্যক্তিকে মাননীয় বলতে পারে? মহান আল্লাহতায়ালার শত্রু হওয়ার জন্য কি মুর্তপূজারী হওয়ার দরকার আছে? তাঁর শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরোধী হওয়াই তো সে জন্য যথেষ্ট। তাদের সাথে সহযোগিতা কি মুসলিমের রাজনীতি হতে পারে? তবে কোরআনী জ্ঞান এবং নবীজী (সাঃ)’র ইসলাম থেকে দূরে সরলে কি এর চেয়ে ভিন্নতর কিছু কি আশা করা যায়? ১ম সংস্করণ ২০.১১.২০১৮; ২য় সংস্করণ ২৪/১২/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018