গণতন্ত্রের কবর ও সন্ত্রাসে আওয়ামী মনোপলি

ফিরোজ মাহবুব কামাল

নগ্ন বেশে সরকার

গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার ভাবনা নাই। গণতন্ত্র আজ কবরস্থ্য। ফলে ভাবনা নাই জনগণের কাছে জবাবদেহীতা নিয়েও। জনগণ কি ভাববে বা আন্তর্জাতিক মহলে দেশ কতটা কলংকিত হবে -সেদিকেও সামান্যতম ভ্রুক্ষেপ নাই। মুজিবের আমলে দেশ তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি রূপে পৃথিবী ব্যাপী প্রচার পেয়েছিল। কিন্তু তাতে মুজিব ও তার অনুসারিদের একটুও লজ্জা হয়নি। বরং সে অপমান নিয়ে আজও  আওয়ামী বাকশালীদের অহংকার। লোকলজ্জা লোক পেলে কোন কুকর্মতেই বিবেকের পক্ষ থেকে বাধা থাকে না। নির্বাচনের নামে প্রহসন, যৌথবাহিনী ও অস্ত্রধারি দলীয় গুন্ডাদের দিয়ে শত শত বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম,হত্যা ও নির্যাতনে শেখ হাসিনা ও দলীয় কর্মীদের বিবেকে সামান্যতম দংশনও হয় না। যেন দেশে কিছুই হয়নি। মহান নবীজী (সাঃ) তাই লজ্জাকে ঈমানের অর্ধেক বলেছেন। এর অর্থ দাঁড়ায়, যার লজ্জা নাই তার ঈমানও নাই। আর ঈমান না থাকলে তার জন্য ফাসেক, জালেম বা কাফের হওয়া সহজ হয়ে যায়।

সরকার জনগণকে গাছপালা বা গরু-ছাগলের চেয়ে বেশী কিছু ভাবছে না। একই রোগ সব স্বৈরাচারির। তাদের ধারণা, গরু-ছাগলের জন্মই তো অধিকারহীন ও জবাই হওয়ার জন্য। তাই হিটলার ও স্টালিনের ন্যায় স্বৈরাচারিরা গ্যাস চেম্বার বা ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। ফিরাউন বনি ইসরাইলের প্রতিটি পুরুষ শিশুকে হত্যা করতো। হাসিনাও তেমনি নিরপরাধ মানুষদের ক্রস ফায়ারে দিচ্ছে। একই কাজ করেছে তার পিতা শেখ মুজিব। তারা জানে,গাছপালা ও গরু-ছাগলের সামনে সন্ত্রাস করলে বা ঘরবাড়িতে আগুন দিলে প্রতিবাদ উঠে না। কাপড় খুললেও ধিক্কার দেয় না। দেশ যেন গভীর জঙ্গল। জঙ্গলে লাশ পড়লে বিচার হয়না। তেমনি শত শত লাশ পড়লেও বাংলাদেশে কারো বিচার হয় না,শাস্তিও হয় না। শাপলা চত্বরে এত নিরীহ মুসল্লির প্রাণ গেল, কিন্তু কোন খুনির গায়ে কি কোন আঁচড় লেগেছে? একদিনের জন্যও কি কারো কারাবাস হয়েছে? হাসিনা ও তার বাকশালী সহকর্মীরা শুধু গণতন্ত্রকেই কবর দেয়নি, কবর দিয়েছে নিজেদের বিবেককেও। চোরডাকাত, খুনি ও পতিতারা বিবেক ও লজ্জা-শরম নিয়ে রাস্তায় নামে না। বিবেক ও লজ্জা-শরম নিয়ে রাজনীতিতে নামেনি শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী সহযোগীরা। একই রূপ অবস্থা ছিল হাসিনার পিতা মুজিবের। সামান্যতম বিবেক ও লজ্জা-শরম থাকলে কি মুজিবের হাতে গণতন্ত্র নিহত হত? প্রতিষ্ঠিত হত কি বাকশালী স্বৈরাচার? নিহত হত কি ৩০-৪০ হাজার মানুষ? স্বাক্ষরিত হত কি ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তি? দেশ হারাতো কি বেরুবাড়ী? মুজিবের আমলে যারা নিহত হলো –তাদের হত্যার অপরাধে একদিনের জন্যও কারো জেল হয়নি। ইতিহাসের আরেক শিক্ষা, ফিরাউন-নমরুদদের ন্যায় নৃশংস স্বৈরাচারিদের ভগবান বলার মত বিবেকহীন লোকের অভাব কোন কালেই হয়নি। তাই অভাব নেই শেখ মুজিব স্বৈরাচারিদের জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু এবং হাসিনার ন্যায় ভোটচোরকে মানণীয় বলার মত লোকেরও। যেদেশের কোটি কোটি মানুষ শাপশকুন ও গরুবাছুরকে দেবতা বলে পুজা দেয়, সে দেশের বহু কোটি মানুষ এসব স্বৈরাচারিদের নেতা বা পিতা বলবে -তাতেই বা বিস্ময়ের কি?

 

বিবেকধ্বংসী নাশকতা

প্রাণনাশী শুধু রোগজীবাণূই নয়, বরং ভয়ংকর নাশকতা বিবেকহীন রাজনীতিবিদদের। রোগজীবাণূ প্রাণ নাশ ঘটায়, আর বিবেকহীন রাজনীতিবিদেরা বিনাশ ঘটায় বিবেকের। কারণ সেটি তাদের জন্য অপরিহার্য। কারণ বিবেক বিনাশের কাজটি যথার্থ ভাবে না হলে জনগণের কাতার থেকে উপাসনা জুটে না। যুগে যুগে নমরুদ-ফিরাউনরা তাই সুস্থ্য বিবেকবোধ ও সঠিক ধর্মচিন্তা নিয়ে মানুষকে বেড়ে উঠতে দেয়নি। তেমন একটি রাজনৈতিক প্রয়োজনেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করেছিল। আর ফিরাউন ধাওয়া করেছিল হযরত মূসা (আ:)’র পিছনে। স্বৈরাচারের জেলে যেতে হয়েছে ইমাম আবু হানিফা (রহ:),ইমাম মালেক (রহ:),ইমাম হাম্বলী (রহ:)’র মত মহান ব্যক্তিদের। মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারি শাসকেরা এভাবেই যুগে যুগে চ্যালেঞ্জ খাড়া করেছে। ইসলাম নিয়ে বাঁচতে হলে স্বৈরাচার নির্মূল তাই অনিবার্য হয়ে পড়ে। এজন্যই ইসলামে বড় ইবাদত হলো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জিহাদ। এ জিহাদে প্রাণ গেলে মহান আল্লাহতায়ালা নিহত ব্যক্তিকে মৃত্যুহীন জান্নাত দেন।

বিবেকহীন রাজনীতিবিদদের কারণেই নৈতিক মহামারি লেগেছে বাংলাদেশের প্রশাসন,পুলিশ ও আদালতে। ফলে আজ থেকে ৫০ বছর আগের পাকিস্তান আমলে রাজনীতি,আদালত, প্রশাসন ও পুলিশে যে বিবেকবোধ দেখা যেত সেটি আজ কল্পনাই করা যায় না। ভয়াবহ বিবেকহীনতার কারণে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবী এখন আর মিছিল থামাতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে না। লাঠিচার্জও করে না। বরং সরাসরি গুলি চালায়। লাঠিচার্জ বা গ্রেফতারে নয়,লাশ ফেলাতেই তাদের আনন্দ। আরো আনন্দ পায় বিরোধীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে বা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিতে। ফলে বেশুমার মানুষ আজ  যত্রতত্র লাশ হচ্ছে। বাংলাদেশের পুলিশ ও র‌্যাব পরিণত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ খুনি বাহিনীতে। একমাত্র মিশর ও সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাথেই তাদের তুলনা চলে। পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরে পুলিশের হাতে ২৩ জন মানুষও নিহত হয়নি। ১৯৫২ সালের ২১ই ফেব্রেয়ারিতে মাত্র ৩ জন মারা গিয়েছিল। অথচ সেটিই ইতিহাস হয়ে গিয়েছিল।তাতেই সরকার পরিবর্তন হয়েছিল।৩ জনের হত্যাকে নিয়ে পাকিস্তানের বাঙালীরা সেদিন থেকে “আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রেয়ারি,আমি কি ভূলিতে পারি” বলে গান গাওয়া শুরু করেছিল। আজও  সে গান গা্ওয়া শেষ হয়নি।অথচ আজ এক দিনে ৩ জন নয়, ৩ শত খুন হয়। সমগ্র দেশ এখন শাপলা চ্ত্বর। কিন্তু তা নিয়ে আওয়ামী ঘরানার আব্দুল গাফফারদের গলায় আজ  আর বেদনাশিক্ত গান আসে না। বরং আসে আনন্দ-উৎসব। আব্দুল গাফফারদের হাতে রচিত হয় খুনি হাসিনার পক্ষে অসংখ্য প্রশংসাগীত। একটি দেশে বিবেকের মৃত্যূ যে কতটা ভয়ানক হতে পারে এ হলো তার নজির।

১৯৫২ সালের ২১ই ফেব্রেয়ারিতে মাত্র ৩ জন মারা যাওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী জনাব নুরুল আমীন নিহত পরিবারের কাছে মাফ চেয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত গলায় বেতার ভাষণ দিয়েছিলেন।তিনি নিজে যে পুলিশকে গুলিচালনোর হুকুম দেননি এবং সে খুনের সাথে যে তিনি নিজে জড়িত ছিলেন না, সে কৈফিয়তটিও জনগণের সামনে বার বার দিয়েছিলেন। অথচ আজ  পুলিশ,র‌্যাব ও বিজিবীর হাতে শত শত মানুষ খুন হচ্ছে। কিন্তু সে খুন নিয়ে হাসিনার মুখে কোন অনুশোচনা নেই। বরং আছে প্রচন্ড আত্মতৃপ্তি। সে আত্মতৃপ্তি নিয়ে “লাশরা পুলিশের তাড়া খেড়ে উঠে দৌড়িয়েছে” সে কৌতুকও তিনি শোনান। এক খুনের বদলে তিনি ১০ খুনের হুমকি দেন। তেমনি এক অপরাধি চেতনা নিয়ে শাপলা চত্বরের শহীদদের লাশ ময়লার গাড়িতে তোলা হয়ছে। গণতন্ত্রের হায়াত মওত নিয়েও হাসিনার সামান্যতম ভাবনা নেই। সে ভাবনা হাসিনার পিতা শেখ মুজিবেরও ছিল না।মুজিব তাই বহুদলীয় গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল।এবং সকল বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ ও সকল বেসরকারি পত্রপত্রিকার অফিসে তালা ঝুলিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উৎসব করেছিল।

 

কুফল লজ্জাহীনতার

লজ্জাহীনতার কুফল অতি ভয়ানক। তাতে বিলুপ্ত হয় মানবিক গুণ।  চোর-ডাকাত ও পতিতাদের মূল সমস্যাটি হলো, তাদেরে হায়া-শরম থাকে না। একই সমস্যা গণতন্ত্রের শত্রুদের। লজ্জাশরম থাকলে মানুষ কি এমন অপরাধে নামে? সব যুগে ও সব দেশেই গণতন্ত্রের শত্রুদের একই অবস্থা। গণতন্ত্র হত্যা, পত্রিকার অফিসে তালা লাগানো ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হত্যায় যেমন শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার লজ্জা হয়নি, তেমনি হচ্ছে না মিশরের স্বৈরাচারি শাসকদের। লজ্জাহীনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মিশরের সামরিক বাহিনী নিজেই আগামী নির্বাচন লড়তে যাচ্ছে। অন্য কোন বেসামরিক ব্যক্তিকে নয়, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল সিসিকে তারা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী খাড়া করেছে। সমগ্র দেশ এখন সেনা বাহিনীর হাতে অধিকৃত। বিরোধী দলের নেতাকর্মীগণ এখন কারারুদ্ধ। তারা শুধু বেশরমই নয়,কত বড় বেপরওয়া যে, সেনাবাহিনীর প্রধান সিসি ও তার সমর্থকগণ এরূপ সামরিক অধিকৃতিকে বলছে তাহরির স্কোয়ার থেকে শুরু হওয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবেরর ধারাবাহিকতা। ড. মুরসীর আমলে নাকি গণতন্ত্র হাইজ্যাক হয়েছিল,এখন তারা পথে এনেছে। মিথ্যাচার আর কাকে বলে! জেনারেল সিসির পক্ষে প্রচার চালাতে বাধ্য করেছে সে দেশের সকল টিভি চ্যানেল ও পত্রপত্রিকাগুলোকে।সেনাবাহিনীর কাছে যে কোন নিরপেক্ষ প্রচারনাই অসহ্য। প্রচারনা হতে হবে শুধু তাদের পক্ষে। তাই আল -জাজিরার সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী বলে জেলে তুলেছে। নিরেট তাঁবেদার ও পাহারাদারে পরিণত করেছে দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বিচারকগণ। সেনাবাহিনী এক রাতে কায়রোর এক ময়দানে হাজারের বেশী নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করেছে। অথচ এরপরও নিজেদেরকে তারা গণতন্ত্রি বলছে।এবং এরূপ নৃশংস হত্যাকান্ডকে বলছে আইনের শাসন। অপর দিকে জেলে তুলেছে ও হত্যা মামলার আসামী বানিয়েছে সেদেশের ইতিহাসের সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসেডেন্ট ড.মুরসীকে। সন্ত্রাসী দল বলে নিষিদ্ধ করেছে মুরসীর দল ইখওয়ানুল মুসলিমুনকে। এরূপ স্বৈরাচারি কুকর্মে জেনারেল সিসির লজ্জা-শরমে একটুও বাধেনি। যেমন বাধছে না শেখ হাসিনারও। ফলে তার কাছে ৫ই জানুয়ারির ভূয়া নির্বাচন গণ্য হচ্ছে গণতন্ত্রের বিজয় রূপে। শতকরা ৫ জন ভোট না দিলে কি হবে,সে নির্বাচনকে বৈধ বলে আরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পক্ষে যুক্তি পেশ করছে।

 

সন্ত্রাসে মনোপলি

সব স্বৈরাচারি শাসকেরাই সন্ত্রাস, লুটতরাজ ও খুন-খারাবীতে নিজেদের নিরংকুশ মনোপলি চায়। এককালে একই রূপ মনোপলি ছিল ব্রিটিশ,স্পানিশ, ডাচ ও পর্তুগীজসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশিক শক্তির। অধিকৃত দেশগুলিতে নিজেদের সে হিংস্র মনোপলিকে বলতো আইনের শাসন। ভারত যখন তাদের হাতে অধিকৃত,এ দেশের নাগরিকদেরকে নিজ বাড়ীতে তীর-ধনুক,তলোয়ার রাখাকেও তারা সন্ত্রাস বলতো। সে অপরাধে তাদেরকে জেলেও তুলতো। আর নিজেরা নির্বিচারে লক্ষ লক্ষ মানুষকে খুন করতো। খুন করে লাশকে বাজারে, নদীর ঘাটে বা লোকালয়ে উঁচু খুঁটিতে লটকিয়ে রাখাটি তাদের কৌশল ছিল। লক্ষ্য, সাধারণ মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করা। তাদের সন্ত্রাসে আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানগণ প্রায় নির্মূল হয়ে গেছে। প্রায় নির্মূল হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আদিবাসীগণ। বাংলাদেশের বুকে সন্ত্রাসে একই রূপ মনোপলি হলো আওয়ামী লীগের। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একই ভাবে শুরু হয়েছে রাজনৈতীক শত্রু নির্মূলকরণ। ডাকাত সর্দার যেমন ডাকাতীর স্বার্থে অন্যান্য ছোটখাটো ঢাকাতদের সাথে নেয়, শেখ হাসিনাও তেমনি এরশাদের ন্যায় আরো কিছু স্বৈরাচারিকে সাথে নিয়েছে।

সন্ত্রাসীরা কখনোই নিরস্ত্র মানুষের কাকুতি-মিনতি বা নসিহতে কান দেয় না। এমন কি নবী-রাসূলদের মত মহান ব্যক্তিদের নসিহত্ও তাদের উপর কোন আছড় করেনি। তাদের নজর তো নিরস্ত্র নরনারীর পকেট ও ইজ্জতের দিকে। জনগণকে নিরস্ত্র ও প্রতিরোধহীন দেখাতেই তাদের আনন্দ। তারা বরং নিরস্ত্র মানুষের অসহায় অবস্থাকে উপভোগ করে। তারা তো চায় সারা জীবন তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম থাকুক। নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় মুজিব যেমন সেটি চেয়েছিল, হাসিনাও সেটি চায়। সেটি শুধু হাজার হাজার নয়,লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তপাতের মধ্য দিয়ে হলেও। কাশ্মীরে লক্ষাধিক মানুষের লাশ পড়লেও ভারতীয় স্বৈরাচার দখলদারি সেখানে ছাড়েনি। ভারত তার অনুগতদের দিয়ে আজ যে অধিকৃতি বাংলাদেশের উপর প্রতিষ্ঠা করেছে সেটি শুধু রাজপথের কিছু মিটিং-মিছিল, কিছু ধর্মঘট ও কিছু অবরোধের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার নয়। সিরিয়ার হাফেজ আল আসাদ বা ক্যাম্বাডিয়ার সাবেক কম্যুনিস্ট শাসক পলপটের চেয়ে হাসিনা কম ক্ষমতা লিপ্সু নয়। পলপট সরকারের হাতে সে দেশের সিকি ভাগ মানুষ নিহত হয়েছিল। নিহতদের সংখ্যা ছিল ২০ লাখের বেশী। অপর দিকে স্বৈরাচারি আসাদের হাতে ইতিমধ্যে নিহত হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার নিরস্ত্র মানুষ।

 

লড়াই জান্নাত ক্রয়ে

স্বৈরাচারিরা কখনোই কোন দেশে একাকী আসে না। শুধু গণতন্ত্র হত্যা ও চুরি-ডাকাতিই তাদের একমাত্র হত্যা নয়। তাদের বড় অপরাধ যেমন মানব হত্যা,তেমনি ধর্ম ও সভ্যতার হত্যা। ফিরাউন, নমরুদের ন্যায় ইসলামের বড়শত্রু চিরকালই ছিল স্বৈরাচারিরা।আজ যেমন সেটি মিশরে, তেমনি সিরিয়া ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশে সে হত্যার পর্বটি শুরু হয়েছে মাত্র। তাই হাসিনার স্বৈরাচারি সরকার যতই দীর্ঘায়ু পাবে ততই বাড়বে খরচের বিশাল অংক। একারণেই কোন সভ্য মানুষ এরূপ স্বৈরাচারি সরকারকে মেনে নিতে পারে না। সমগ্র ইতিহাসে মানবের জানমালের সবচেয়ে বড় খরচটি বনের হিংস্র পশু তাড়াতে হয়নি। বরং সেটি হয়েছে মানুষ রূপী এ হিংস্র জীবদের তাড়াতে। মহান আল্লাহতায়ালা দ্বীনের এ শত্রুদের তাই পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। তাদের নির্মূলে নবীজীর আমলে শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবাকে শহীদ হতে হয়েছে।

যে কোন নির্মাণ কাজই বিপুল বিনিয়োগ চায়। উচ্চতর সভ্যতা নির্মাণের চেয়ে ব্যয়বহুল নির্মাণ কাজ মানব ইতিহাসে আর কিছু আছে কি? এ কাজ তো মুসলিমদের বিশ্বশক্তি রূপে দাঁড় করানোর। ঈমানদার তো সে বিপুল ব্যয়ের মধ্য দিয়েই জান্নাত ক্রয় করে। মহান আল্লাহতায়ালা এর চেয়ে সহজ কোন রাস্তা মু’মিনের জন্য খোলাও রাখেননি। বাংলাদেশে বর্তমান লড়াই তাই স্রেফ গণতন্ত্র বাঁচানোর নয়, মানুষের জানমাল ও ইসলাম বাঁচানোর। মু’মিনের জীবনে এ লড়াই জান্নাত ক্রয়ের। দেশে দেশে মুসলিমদের মাঝে সে লড়াই আজ তীব্রতর হচ্ছে। বহু গাফেল মুসলিম সেটি না বুঝলেও শয়তানি শক্তি সেটি বুঝতে পেরেছে। হাসিনার পিছনে ভারতসহ সকল কাফের শক্তির বিনিয়োগ তো সে কারণেই এত অধিক। ০৮/০২/২০১৪

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *