ছাত্রশিবিবের বিজয় মিছিল ও জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংশোধন
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 1, 2019
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
এ মিছিল কাদের বিজয়ে?
পত্রিকায় প্রকাশ,গত ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে ইসলামি ছাত্রশিবির বিশাল বিজয় মিছিল বের করেছে। এটি এক বিস্ময়। এ মিছিল কোন বিজয়ের? ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয়ী হয়েছিল সেকুলারিস্ট, ন্যাশনালিস্ট, সোসালিস্টসহ ইসলামের বিপক্ষ শক্তি। বিজয়ী হয়েছিল আগ্রাসী ভারত। পূর্ব সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর বিজয় এবং পাকিস্তান ভাঙ্গার আনন্দে দিল্লিতে ভারতীয় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি সেদিন অতিউল্লাসে বলেছিলেন, “হাজার সাল কি বদলা লে লিয়া” অর্থঃ “হাজার বছরের প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম”।আজও ভারতে সে হাজার বছরের প্রতিশোধ নেয়ার আনন্দে উৎসব হয়। বাংলাদেশের মুসলমানগণ কি ভারতের সে প্রতিশোধ নেয়ার আনন্দে নিজেরাও উৎসব করবে? সেদিনটি ছিল ঈমানদারদের অশ্রুবর্ষণের দিন। শুধু বাংলাতে নয়,শুধু পাকিস্তান বা ভারতের মুসলমানগণই নয়, বরং সেদিন হৃদয় শোকাহত হয়েছিল সমগ্র বিশ্বের মুসলমানগণ। ঈমানদার মাত্রই তো মুসলমানদের একতা চায়, চায় মুসলমানগণ আবার বিশ্বমাঝে মাথা উঁচুকরে দাঁড়াক। নিজেদের বিভক্তি সেটি অসম্ভব করে। মুসলিম দেশের পরাজয় ও বিভক্ত সেজন্যই প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তিকে শোকাহত করে।
মুসলমানদের বিভক্তি তো একমাত্র কাফের ও তাদের মিত্রদেরই উৎসব মুখর করতে পারে, কোন ঈমানদারকে নয়। কাফেরদের ষড়যন্ত্রে আফ্রিকার সর্ববৃহৎ দেশ সূদানের ভেঙ্গে যাওয়াতে কোন মুসলিমই খুশি হয়নি। পাকিস্তান তো সূদানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পাকিস্তান ভাঙ্গার সে স্মৃতি নিয়ে যেসব প্রবীন মুসলমান বিশ্বের নানা দেশে এখনও জীবিত আছেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে সে বিষাদের কথা আজও জানা যাবে। (নিবদ্ধের লেখক সেটি জেনেছেন)। একাত্তরের এ বিশেষ দিনটিতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশটি ভেঙ্গে যায়। এবং সেটি কাফের শক্তির হাতে,যারা শুরুতেই দেশটির প্রতিষ্ঠার প্রবল বিরোধীতা করেছিল। মুসলমানরা আজ প্রায় দেড়শত কোটি। তারা বিভক্ত ৫৫টির বেশী মুসলিম দেশে বিভক্ত। সে বিভক্তি নিয়ে আজ নানা মানচিত্র, নানা পতাকা, নানা সরকার। মুসলমানদের পচন আজ এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে,সে বিভক্তি নিয়ে আজ দেশে দেশে উৎসবও হচ্ছে! অথচ প্রকৃত মুসলমানদের মাঝে তো এ নিয়ে প্রতিদিন মাতম হওয়া উচিত। বিভ্ক্তির অর্থই তো আল্লাহর অবাধ্যতা, তা নিয়ে আবার উৎসব?
মুসলমানদের আজকের সবচেয়ে বড় দৈন্যতা সম্পদের নয়, জনসংখ্যার কমতিও নয়। সেটি তো একতার। বিভক্তির কারণেই মুসলমানগণ আজ শক্তিহীন। নিছক মসজিদ-মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, কলকারখানা বা ইসলামি সংগঠনের ক্যাডার বাড়িয়ে কি সে দৈন্যতার সমাধান হবে? ইসলামি ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দ কি এ সমস্যাটি বুঝে? কোমড়ভাঙ্গা মানুষকে বেশী বেশী খাইয়ে তার মেদ বাড়ানো যায়, কিন্তু সে কি কখনোই আর নিজ পায়ে খাড়া হতে পারে? মুসলমানদের খণ্ডিত ভূগোল কোমড় ভেঙ্গে দিয়েছে মুসলিম উম্মাহর এজন্যই তো দেশে দেশে এমন বিভক্তির কাজে কাফের শক্তির এত বিনিয়োগ। এক আরব ভূখন্ড ভেঙ্গে ২২টি আরব রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে তো সাম্রাজ্যবাদী শত্রু শক্তি। মুসলমানদের কাজ কি শত্রুর গড়া সে খণ্ডিত মানচিত্র নিয়ে উৎসব করা?
মুসলমানকে শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত, মসজিদ-মাদ্রাসা ও দাওয়াতী কাজ নিয়ে বাঁচলে চলে না। দেশের ভূগোলও বাড়াতে হয়। নইলে রাজনৈতীক শক্তি বাড়ে না। অতীতের মুসলিম দেশের ভূগোল বাড়াতে তাই বহু অর্থ ও বহু রক্ত ব্যয় হয়েছে। কুয়েত ও কাতারের মাথাপিছু আয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অধিক। সেটি যদি আরো শত গুণ বৃদ্ধি পায় তবুও কি বিশ্ব রাজনীতিতে এ দেশ দুটির কোন গুরুত্ব বাড়বে? ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যা কিছু হচ্ছে সে ঘটনাবলি প্রভাবিত করতে তাদের কি কোন সামর্থ বাড়বে? বাড়বে না। কারণ দেশ দুটির সামর্থ বন্দী হয়ে আছে ক্ষুদ্র ভূগোলে। বাংলাদেশেরও একই অবস্থা। নবীজী (সাঃ) তাই ইসলামকে শুধু আরবভূখন্ডে সীমাবদ্ধ রাখার বিরোধী ছিলেন। সাহাবাদেরকে তিনি রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানি কন্সটান্টিনোপল দখলের নসিহত করেছিলেন। আজ সেটি ইস্তাম্বুল। সে জামানায় সে নসিহতটি ছিল, আজকের ওয়াশিংটন দখলের নসিহত। কিন্তু মুসলমানগণ নবীজী (সাঃ)র সে নসিহত পুরা করে ছেড়েছেন। নবীজী(সাঃ) ও তাঁর অনুসারি মুসলমানেরা কতটা স্ট্রাটেজিক চিন্তুা করতেন এ হলো তার নমুনা। উপমহাদেশের নানা ভাষাভাষি মুসলমানেরা সে স্ট্রাটেজিক চিন্তা নিয়েও বৃহৎ ভূগোলের পাকিস্তান গড়েছিলেন। কিন্তু প্রকল্পের শুরু থেকেই চরম বিরোধী ছিল ভারত। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তারা সে প্রকল্পে সফল হয়।
শিবিরের নেতাকর্মীরা ইসলামি আন্দোলনের কথা বলে, জিহাদের কথা বলে, ইসলামের প্রতিষ্ঠার কথাও বলে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় মিছিলটি কিসের নমুনা? বাংলার খাজা নাজিমুদ্দিন, শহীদ সহরোয়ার্দী, মাওলানা আকরাম খাঁ, নূরুল আমীন, মৌলবী তমিজুদ্দীন, আব্দুস সবুর খান, ফজলুল কাদের চৌধুরি, শাহ আজিজুর রহমান, মাহমুদ আলী, আব্দুর রহমান বিশ্বাস –এদের কেউই ইসলামের আন্দোলনের নেতাকর্মী ছিলেন না। তারা মাওলানা মওদূদী, শহীদ কুতুব, হাসানূল বান্নাহর কেতাব পড়েননি। অথচ তারা নিজেদের ভাষা, ক্ষুদ্র ভোগাল,জলবায়ু, নিজেদের খাদ্য ও পোষাক-পরিচ্ছদ নিয়ে যে পরিচয় সেটি নিয়ে গর্ব না করে প্যান-ইসলামিক চেতনা নিয়ে রাজনীতি করেছেন। পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ, বিহারী –এরূপ নানা অবাঙালীদের সাথে মিলে বিশাল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অথচ ছাত্রশিবির ভেসে গেল বাঙালী বা বাংলাদেশী জাতিয়াতবাদের স্রোতে? মুসলমানদের কাজ তো স্রোতে ভাসা নয়, উজানে চলা। স্রোতের বিপরীতে স্রোত সৃষ্টি করা। আব্দুস সবুর খান, শাহ আজিজুর রহমান, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, আব্দুল আলীমের ন্যায় নেতারা বিজয় মিছিল না করেও নির্বাচনে বার বার জিতেছেন। ১৯৭১য়ের ১৬ই ডিসেম্বর কাদের বিজয় এবং এদিনে কারা শহীদ হয়েছিল সে হুশ কি তাদের আছে? আজ যে সন্ত্রাসী পক্ষের হাতে শিবির কর্মিরা শহীদ হচ্ছে, তাদের হাতেই একাত্তরে ইসলামী আন্দোলনের হাজার হাজার কর্মী শহীদ হয়েছেন। সে শহীদদের নির্যাতিত চেহারাগুলো কি তাদের স্মৃতীতে একবারও ভাসে না? ভাসলে তারা আজ বিজয় উৎসব করে কীরূপে? কতো নিষ্ঠুর নির্যাতনের মধ্য দিয়েই না তাদের হত্যা করা হয়েছিল। কথা হলো, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে বাঁচার জন্য কি জরুরী হয়ে পড়েছিল বিজয় মিছিল করতেই হবে? তারা কি মনে করে নিয়েছে, এ বিজয় মিছিল করলেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে তাদের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে?
হিকমত না আত্মসমর্পণ?
বুদ্ধিবৃত্তিক ও আদর্শিক বিচ্যুতি শুধু যে শিবিবের মধ্যে -তা নয়। আরো উপরে। সম্প্রতি নির্বাচনি কমিশনের কাছে জামায়াতে ইসলামীকে রেজিস্ট্রী করার প্রয়োজনে দলটির গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের অঙ্গিকারটি আস্তাকুরে ফেলে দিয়েছে। কথা হলো,দল তো বাঁচে একটি আদর্শকে বাস্তবায়ীত করার লক্ষ্যে। মুসলমান রাজনৈতীক দল গড়ে আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী করতে তথা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা করতে। ইসলামি দল তো এই একটি মাত্র কারণেই অন্যান্য সেক্যুলার দল থেকে ভিন্ন। সে অঙ্গিকার আস্তাকুরে ফেললে আর রাজনীতি এবং দলগড়ার প্রয়োজনটাই কি? এটি হিকমত না আত্মসমর্পণ? দলটির গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি আস্তাকুরে ছুড়ে না ফেলার কারণে জামায়াত যদি নিষিদ্ধও হতো বা নেতাদের জেলে যেতে হতো তবুও তো আল্লাহর আইনের উপর তাদের ঈমান বেঁচে যেত। মহান আল্লাহতায়ালা থেকে তখন পরকালে পুরস্কারও পেতেন। বাংলাদেশের ইসলামপ্রেমি মানুষের স্মৃতিতেও তাঁরা যুগ যুগ বেঁচে থাকতেন আল্লাহর শরিয়তি বিধানের প্রতি গভীর অঙ্গিকারের কারণে। এখন হয়তো তাদের দল বেঁচে যাবে, তারা নিজেরাও হয়তো বেঁচে যাবেন। কিন্তু তারা যা করলেন তাতে আল্লাহর শরিয়তের প্রতি তাদের অঙ্গিকার তো বাঁচলো না। আদর্শ বিসর্জন দিয়ে দল বাঁচানোর চেষ্টা কি শুধু এমপি হওয়া ও মন্ত্রী হওয়ার স্বার্থে? মুসলমানের রাজনীতি তো পরকালমুখি,এমন রাজনীতিতে গুরুত্ব পায় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে কোনটি প্রিয় সেটি। এর বিপরীতে যে দলীয় স্বার্থচেতনা সেটি তো নিরেট সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজমে গুরুত্ব পায় জনগণের ভাবনা,সরকারের ভাবনা,দলীয় নেতাদের নিরাপত্তা ও সুখশান্তির ভাবনা। মিশরে ইখওয়ানূল মুসলীমূনকে বিগত ৬০ বছরের বেশী কাল নিষিদ্ধ রাখা হয়েছিল। নেতাদের বছরের পর বছর জেলে নিদারুন নির্যাতন চালানো হয়েছে।যয়নব আল গাজালীর বই কি তার পড়েননি? গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দলটির প্রতিষ্ঠাতা হাসানূল বান্নাকে। শহীদ কুতুবদের ন্যায় প্রথমসারির নেতাদেরকে ফাঁসীতেও ঝুলতে হয়েছে। কিন্তু তাতে কি তাদের অঙ্গিকার ও আন্দোলনে ছেদ পড়েছে? সে কোরবানী ও ত্যাগের বিনিময়েই তো তারা পেয়েছে মহান আল্লাহর সাহায্য।বেড়েছে জনগণের মাঝে বিপুল গ্রহনযোগ্যতা। ফলে এখন তারা বিজয়ী এবং ক্ষমতাসীন।
আন্দোলনের জন্য কি দল লাগে? লাগে উন্নত আদর্শ। লাগে সে আদর্শের পতাকাবাহি আপোষহীন নেতা।দল ছাড়াই আয়াতুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালি স্বৈরাচারি শাসক মহম্মদ রেজা শাহকে হঠিয়ে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হয়ে গেল। দল ছাড়াই এ উপমহাদেশে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বড় বড় আন্দোলন হয়েছে। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে উপমহাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যে গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল সেটি কংগ্রেস বা মুসলিম লীগের ন্যায় কোন রাজনৈতীক দলের নেতৃত্বে নয়। সেটি ছিল খেলাফত আন্দোলন। সে আন্দোলনের পিছনে কোন দল ও দলীয় ক্যাডার বাহিনী ছিল না। ছিল মাওলানা মহম্মদ আলী,মাওলানা শওকত আলীর ন্যায় নেতা ও তাদের প্যান-ইসলামিক আদর্শ। জামায়াত কি শুধু দল নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়? এবং সেটি কি যে কোন মূল্যে?
কেন এ স্মৃতিবিলু্প্তি?
দলটির নেতারা আদালতে দাঁড়িয়ে যা কিছু বলেছেন সেটিই কি কম বিস্ময়কর? জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জনাব আলী আহসান মোজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভূয়সী শ্রদ্ধা জানিয়ে আদালতে বক্তব্য শুরু করেছেন। কাউকে শ্রদ্ধ জানানোর অর্থ তার নামকে নয়, বরং তার আদর্শ, কর্ম ও চরিত্রকে সমর্থন করা। অথচ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা এসেছে, সকল ইজ্জত একমাত্র আল্লাহর, তাঁর রাসূল এবং তাঁর অনুসারি ঈমানদারদের। আল্লাহর কাছে তাঁর দ্বীনের বিজয়ে অঙ্গিকারহীন সেক্যুলারিস্টদের কোন সন্মান নেই। আছে ঘৃনা। ইসলামি শক্তিকে পরাজিত করা,মুসলিম ভূমিকে দ্বিখন্ডিত করা ও ইসলামপন্থিদের হত্যার শপথ নিয়ে যারা একাত্তরে কাফেরদের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলো,শত শত আলেমকে যারা শহীদ করলো, শহীদ করলো ইসলামী আন্দোলনের হাজার হাজার কমীকে, খোদ জামায়াতসহ সকল ইসলামী দলকে যারা নিষিদ্ধ করলো তাদের শ্রদ্ধা জানালে সে নেতার ইসলামি নীতি বা আদর্শ কি ড্রেনে গিয়ে পড়ে না? এমন ব্যক্তিগণ আদালতে দাঁড়িয়ে,“আমি রাজাকার ছিলাম না” বলবে, সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? রাজাকারগণ কি চোরডাকাত? তারা কি ছাত্রলীগ কর্মীদের ন্যায় খুনি-সন্ত্রাসী? তারা তো একটি আদর্শের প্রতীক। তাদের সে আদর্শটি ছিল ভাষা, বর্ণ, আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতার উর্দ্ধে উঠে প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্বের। সে আদর্শটি মুসলিম ভূমির উপর কাফের হামলার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধের। হাজার হাজার বাঙালী মুসলিম যুবক একাত্তরে সে আদর্শ নিয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছিল।
একই সুরে একই কথা বলেছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। আদালতে রাজাকার বলায় তিনি যে রাজাকার ছিলেন না সেটি প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগে যান। বিস্ময়ের বিষয়, তিনি যে রাজাকার ছিলেন না সে প্রমাণ করতে সাক্ষীসাবুদ খুঁজে খুঁজে খাড়া করেছেন মুক্তি বাহিনীর লোকদের থেকে। অথচ একাত্তরে তাদের চোখের সামনে বহু রাজাকার শহীদ হয়েছেন। রাজাকারদের অনেকে তাদের সহকর্মীও ছিলেন। অনেকের জানাজাও তারা পড়েছেন। সে রাজাকারদের অপরাধটি কি ছিল? কোন শহীদ রাজাকারের রক্তমাখা ক্ষতবিক্ষত চেহারা কি এসব নেতাদের চোখের সামনে ভাসে না? কেন এ স্মৃতিবিলুপ্তি? অপর দিকে জামায়াতেরর আরেক নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা তো আদালতে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন,তিনি মু্ক্তিবাহিনীর ট্রেনিংও নিয়েছিলেন। এই হলো জামায়াতে ইসলামীর প্রথম সারির নেতাদের নৈতীক অবস্থা! জামায়াতের মধ্যে সেক্যুলারাইজেশন প্রজেক্ট কতটা সফল হয়েছে সেটির মাপকাঠি স্রেফ এ নয় যে,দলটি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ন্যায় সেক্যুলার দলগুলির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বহু বছর একসাথে আন্দোলন করেছে, বরং সেটি হলো নেতাদের এরূপ সেক্যুলার বচন ও মানসিকতা।
জামায়াত নেতারা ভূলে যান, তাদেরকে রাজাকার হওয়ার জন্য আদালতে তোলা হয়নি। তোলা হয়েছে আজকের আওয়ামী বাকশালীদের রাজনৈতীক শত্রু হওয়ার কারণে। একাত্তরে লক্ষাধিক ব্যক্তি রাজাকারের পোষাকে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের ক’জনকে আজ আদালতে তোলা হয়েছে? ভারতসেবী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে রাজাকার হলো একটি প্রতিকী শব্দ। যার মধ্যে ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার আছে, প্যান-ইসলামি চেতনা আছে এবং ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জজবা আছে -তারাই ভারত ও তার সেবাদাসদের কাছে রাজাকার। এ সহজ সত্যটি কি জামায়াত নেতারা বুঝেন না? শাহ আজিজুর রহমানকে সংসদে বার বার রাজাকার বলা হয়েছে। রাজাকার বলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে। রাজাকার বলা হয়েছে মেজর আব্দুল জলীলকে। রাজাকার বলা হয়েছ সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরিকে। কিন্তু তারা কি তা খন্ডনের চেষ্টা করেছেন?
একাত্তরের অর্জন
ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেতনা নিয়ে যাদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি,তাদের জন্ম একাত্তরের পরে হলেও ভারতসেবী সেক্যুলারিস্টদের দৃষ্টিতে তারা প্রত্যেকেই রাজাকার। যতদিন বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ থাকবে ততদিন তারা বাংলাদেশের মাটি থেকে সে রাজাকারদের নির্মূলের্ চেষ্টাও চালাবে।আওয়ামী বাকশালী চক্র রাজাকার নির্মূলের সে প্রচেষ্ঠায় একাত্তরে যেমন ভারতের সহায়তা দিয়েছিল,এখনও তারা তা দিবে। কারো কি তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ আছে? মুসলমান রূপে বাংলাদেশে বাঁচতে হলে রাজাকারের ন্যায় ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা নিয়েই বাঁচতে হবে। নইলে ভারতের সেবাদাস হওয়া ছাড়া ভিন্ন পথ নাই। এটিই হলো বাংলাদেশীদের জন্য একাত্তরের অর্জন।সেটি শুধু শেখ হাসিনাই বুঝেন না, এরশাদ এবং খালেদা জিয়াও বুঝেন। তাই সবাই দিল্লিতে দরবারে হাজিরা দেন এবং তাদের খুশি করাটি জরুরী মনে করেন। মনে হচ্ছে জামায়াতও সেটি বুঝতে শুরু করেছে। তাই একাত্তরে রাজাকার হয়েও “রাজাকার ছিলাম না” –সেকথাটি দলের নেতাকর্মীগণ জোর গলায় বলতে শুরু করেছে। অথচ রাজাকার বললে প্রতিটি ঈমানদারকে তা নিয়ে গর্ব করা উচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার তারাই তো আগামী দিনের রক্ষক। সেটি অন্যরা না বুঝলেও, ভারত শতভাগ বুঝে।
গ্রামের ভীতু মানুষটি বাঘ দেখলে বাঘ বাঘ বলে চিৎকার দিবে,সেটিই তো স্বাভাবিক। তেমনি ভারতীয় সেবাদাসগণও রাজাকার দেখলে আতংক নিয়ে রাজাকার বলে চিৎকার তুলবে এতে ঘাবড়ানোর কি আছে? রাজাকার শব্দটিকে তারা যদি গালি হিসাবে ব্যবহার করতে চায় তাতেই বা দুঃখের কি আছে? ইসলামের শত্রুপক্ষের গালি খাওয়া তো নবীজী (সাঃ)র মহান সুন্নত। এতে বিশাল প্রতিদান মিলবে পরকালে। সে সাথে একাত্তরে যারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাদের কোরবানীর প্রতিও সম্মান প্রদর্শণ হবে। আল্লাহর কাছে তাঁর বন্ধু রূপে গণ্য হতে হলে তো তাঁর দ্বীনের শত্রুদের কাছেও শত্রু রূপে গণ্য হওয়া চাই। পরকালে পুরস্কার লাভের তো এটি এক বুনিয়াদি শর্ত। নইলে দুনিয়াতেও কি আল্লাহর সাহায্য জুটবে? ইসলামের বিপক্ষশক্তির কাছে তাই গ্রহনযোগ্য হওয়ার জন্য এত প্রচেষ্ঠা কেন? ফলে ১৬ই ডিসেম্বরে কেন এ বিজয় মিছিল? কেনই বা দলীয় সংবিধান থেকে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকারকে আস্তাকুরে ফেলার আয়োজন? ২৫/১২/১২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018