তীব্রতর হোক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জিহাদ

স্বৈরাচারের নাশকতা

স্বৈরাচারের নাশকতা শুধু মানুষের মৌলিক অধিকার হনন নয়। শুধু শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি বা দেশধ্বংস নয়। বরং সবচেয়ে বড় অপরাধটি হলো মানুষের ঈমানধ্বংস।তাদের হাতে কোন দেশ অধিকৃত হলে তখন মানুষের ঈমাননাশে প্রচন্ড মহামারি দেখা দেয়। নমরুদ, ফিরাউনদের শাসনামালে তাই তাদেরকে খোদা বলার মত বিবেকশূণ্য বিশাল জনগণ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষকে মানবতাশূণ্য ও ঈমান শূণ্য করা তখন রাষ্ট্রের মূল এজেন্ডায় পরিণত হয়। ফিরাউনদের আমলে বিশাল বিশাল পিরামিড নির্মিত হলেও কোন উন্নত মানব সৃষ্টি হয়েছে বা উচ্চতর আইন বা মূল্যবোধ নির্মিত হয়েছে -তার প্রমাণ নাই। অথচ খোলাফায়ে রাশেদার আমলে একখানি প্রাসাদ নির্মিত না হলেও তাদের আমলে যে মহামানব নির্মিত হয়েছে তারাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। সে আমলে যে মানের আইন,সাম্য, সুবিচার ও সামাজিক পলিসি প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছিল সমগ্র মানব ইতিহাসে সেগুলিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তখন উঠের পিঠে চাকরকে বসিয়ে খলিফা নিজে রশি ধরে টেনেছেন। সমগ্র মানব ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত কি অন্যরা দেখাতে পেরেছে?

স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তদের শাসন প্রতিযুগেই এক ভয়ানক বিপদের কারণ। সীমাহীন জুলুম, মিথ্যাচার ও চুরিডাকাতি তখন রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়। বাংলাদেশীদের মাথায় আজ তেমনি এক শাসন চেপে বসেছে। ইসলামের এ শত্রুদের যুদ্ধ তাই স্রেফ মানুষের মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং তাদের মূল লড়াইটি হলো মহান আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর শরিয়তি বিধানের বিরুদ্ধে। তারা নিষিদ্ধ করত চায় জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর পথে জিহাদ। রুখতে চায় কোরআনের চর্চা। কোন ঈমানদার কি ইসলামের এমন শত্রুর সামনে নীরব থাকতে পারে? আর তাতে কি ঈমান থাকে? তাদের দখলদারির কারণে সমগ্র রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে পড়ে শয়তানের হাতিয়ারে। তারা অসম্ভব করে সিরাতুল মোস্তাকীমে চলা। অসম্ভব করে ইসলামের শরিয়তি বিধানের পূর্ণ অনুসরণ। তখন মুসলিম জীবনে শুরু হয় সূদ, ঘুষ, বিপর্দাগীর ন্যায় আল্লাহর বিরুদ্ধে গুরুতর বিদ্রোহ। পতিতাপল্লির জ্বিনাও তখন বানিজ্য রূপে স্বীকৃতি পায়।

মহান আল্লাহতায়ালার কাছে অতি ঘৃনার কাজটি হলো মানব হত্যা। কিন্তু তাঁর কাছে তার চেয়েও জঘন্য হলো ফিতনা। পবিত্র কোরআনে তিনি ফিতনাকে “আশাদ্দু মিনাল কাতলি” বলেছেন। অর্থাৎ মানব হত্যার চেয়েও এটিকে তিনি জঘন্য বলেছেন। “ফিতনা” একটি বিশেষ কোরআনী পরিভাষা। এর অর্থ হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে এমন এক বিদ্রোহাত্মক ও গোলোযোগপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি যার ফলে সমাজে বা রাষ্ট্রে ইসলামের অনুশাসন পালনই অসম্ভব হয়ে পড়ে। অসম্ভব হয় ধর্মপালন। ফলে এমন সমাজে প্রচন্ড মহামারি ঘটে ঈমানের। ঈমানের প্রচন্ড মহামারির কারণেই একটি মুসলিম সংখ্যারিষ্ঠ দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে। বাংলাদেশ সেটি ৫ বার অর্জন করেছে। মহান আল্লাহতায়ালা কি দুর্বৃত্তদের কখনো জান্নাতে স্থান দেন? দুনিয়াতে যারা এত ঘৃনীত হয় তাদেরকে কি জান্নাত দিয়ে সম্মানিত করবেন? ঈমানের মৃত্যুতে এভাবেই ভয়ানক ক্ষতিটি হয়।দেহের মৃত্যুর কারণে এতবড় ক্ষতি হয় না। নিছক মৃত্যুর কারণে জাহান্নামে পৌছাটি কারো জন্যই অনিবার্য নয়। বরং শহীদ রূপে নিহত হলে জান্নাতেও পৌঁছার দরজা খুলে যায়। মুজাহিদগণ তাই মৃত্যুকে ভালবাসেন,যেমন কাফেরগণ ভালবাসে দুনিয়াকে। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে রাজনীতির মুরতাদ নায়কেরা ফিতনার যে প্লাবন খাড়া করেছে তাতে মূল আয়োজনটি তো ঈমাননাশের। এবং সে অসম্ভব করেছে ইসলামের পথে তথা সিরাতুল মোস্তাকীমে চলা। ইসলামে সূদ হারাম, ঘুষ হারাম। জ্বিনাও হারাম। অথচ বাংলাদেশে কি সূদ বা ঘুষ না দিয়ে কোন কাজ উদ্ধার করা সম্ভব। নিজের হলাল রুজিতে জমি কিনে বা গাড়ি কিনে সেটিকে নিজ নামে রেজিস্ট্রি করার কাজটি কি ঘুষ না দিয়ে সম্ভব? অর্থাৎ মানুষ বাধ্য করা হচ্ছে আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে। ইসলামে অতি ফরজ হলো কোরআনের জ্ঞানার্জন। সেটি সম্ভব না হলে অসম্ভব হয় মুসলমান হওয়া। অথচ ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তগণ সেটিও হতে দিতে রাজি নয়। বরং তাদের শিক্ষানীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মূল লক্ষ্যই হলো ইসলাম থেকে মানুষকে দূরে সরানো। বাংলাদেশে এজন্যই জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করা হয়। অপর দিকে রাষ্ট্র এমন এক অবস্থা সৃষ্টি করে যাতে আল্লাহর শরিয়তি হুকুমের বিরুদ্ধে বিশাল বিদ্রোহও তখন অতি সহজ হয়ে পড়ে। অনৈসলামিক রাষ্ট্রে বসবাসের এটি এক ভয়াবহ বিপদ। কোন ঈমানদার কি এমন শাসন মেনে নেয়?

 

বাংলাদেশে মুরতাদদের রাজনীতি

ইসলামের উপর বিশ্বাস ও তার শরিয়তি বিধান থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় বা আল্লাহতায়ালার কোরআনী হুকুমের বিদ্রোহ করে ইসলামে তাদেরকে মুরতাদ বলা হয়। ইসলামে এটি গুরুতর অপরাধ। মুরতাদদের বড় অপরাধ, তারা শুধু মানুষের চেতনার ভূমিতে নয়, রাষ্ট্র ও সমাজ জুড়েও বিশাল ফিতনা তথা বিদ্রোহাত্মক পরিবেশ সৃষ্টি করে। ইসলামের অর্থ হলো মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমের কাছে পূর্ণ আনুগত্য। এবং যে কোন কোরঅানী হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই হলো কাফেরের কাজ। বাংলাদেশে রাজনীতির নামে যা চলছে তা হলো ফিতনা সৃষ্টি তথা ইসলামে বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটিত করার রাজনীতি। তবে এমন বিদ্রোহের চেষ্টা যে পূর্বে হয়নি তা নয়। এমন কি খোলাফায়ে রাশেদার আমলেও হয়েছে। তবে সে বিদ্রোহীদের দমনে চেষ্টাও হয়েছে। হযরত আবু বকর (রাঃ)র আমলে কিছু মুসলিম নামধারি ব্যক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝান্ডা নিয়ে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। ইসলামের হুকুমের বিরুদ্ধে সেটি ছিল প্রথম বিদ্রোহ। সে মুরতাদদের সেদিন হত্যা করা হয়েছিল। নামাজ-রোযা, হজ-যাকাত ও কালেমা পাঠ তাদেরকে সে শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারিনি। তাছাড়া বিদ্রোহী হওয়ার জন্য কি সব হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে?

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে করুণাময় ইসলামের বিধান যে কত কঠোর সেটি বুঝা যায় বনি ইসরাইলের সাথে মহান আল্লাহর আচরণ দেখে। বনি ইসরাইলকে তিনি সমগ্র মানব জাতির উপর মর্যাদা দিয়েছিলেন। ফিরাউনের হাত থেকে বাঁচাতে লোহিত সাগরকে তিনি দ্বিখন্ডিত করেছিলেন এবং তাদের চোখের সামনে ফিরাউনের বিশাল বাহিনীকে ডুবিয়ে হত্যা করেছিলেন। সিনা মরুভূমির মাঝে সূর্যের প্রখর উত্তাপ থেকে বাঁচাতে তাদের মাথার উপর মেঘের সামিয়ানা লাগিয়েছিলেন। আসমান থেকে খাদ্য রূপে মান্না ও সালওয়া নাযিল করেছিলেন। পানির তৃষ্ণা মেটাতে হযরত মূসা (আঃ)র লাঠির আঘাতে পাথর ফাটিয়ে পানির ১২টি ঝর্ণা বের করা হয়েছিল। সব কিছু ঘটেছিল তাদের চোখের সামনে। কিন্তু তারাই হযরত মূসা (আঃ)র অবর্তমানে বাছুরকে খোদা বানিয়ে পুজা শুরু করেছিল। হযরত মূসা (আঃ) ফিরে আসলে তারা সে পাপের জন্য অনুশোচনা করেছিল। এবং তাওবাও করেছিল। কিন্তু আল্লাহতায়ালা তাদের সে তাওবা কবুল করেন নি। তাওবা কবুলের শর্ত রূপে তাদেরকে বলা হয়েছিল নিজেদের হত্যা করতে। সেটি ছিল তাদের অবাধ্যতার কাফফারা। প্রখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা ইবনে কাছির (রহঃ)য়ের মতে তাতে ৬ লাখ ইহুদীদের মধ্য থেকে ৭০ হাজারকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর তাদের তাওবাকে কবুল করা হয়েছিল। (সুরা তা-হার তাফসির দ্রষ্টব্য)।এতে বুঝা যায়,জনগণের মাঝে আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যখন প্রবলতর হয় তখন সে বিদ্রোহীগণ মুখে যতই মুসলমান রূপে জাহির করুক,তাদের তাওবা বা দোয়া কোনটাই তখন কবুল হয় না। আল্লাহতায়ালার কাছে মাগফিরাহ পেতে হলে প্রথমে বিদ্রোহের পথ ছেড়ে পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণের পথ ধরতে হয়,সে সাথে বিদ্রোহের কাফফরাও দিতে হয়। বনী ইসরাইলীগণ সে কাফফরা দিয়েছিল ৭০ হাজার মানুষের প্রাণ নাশের মধ্য দিয়ে।

 

অনিবার্য জিহাদ

মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বনি ইসরাইলীদের বিদ্রোহটি ঘটেছিল বাছুর পুজার মধ্য দিয়ে। তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিল সামেরী। তবে আজকের মুসলমানগণ বাছুর পুজায় না নামলেও তাদের জীবনে বিদ্রোহটি হচ্ছে অন্যভাবে। এবং সেটিই কম ভয়ানক নয়। সেটি হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত শরিয়তি বিধানের বিরুদ্ধে অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে। বাছুর পুজা যেমন কাফেরের কাজ, তেমনি আল্লাহর শরিয়তি বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে আদালতে মানুষের তৈরী আইনকে প্রতিষ্ঠা দেয়াও কাফেরদের কাজ। সুরা মায়েদায় বলা হয়েছে, “মান লাম ইয়াহকুম বিমা আনযালাল্লাহু ফা উলায়িকা হুমুল কাফিরুন .. উলায়িকা হুমুয যালিমুযন .. উলায়িকা হুমুল ফাসিকুন। এ ঘোষণা এসেছে উক্ত সুরার আয়াত ৪৪, ৪৫, ৪৭য়ে)। অর্থঃ আল্লাহতায়ালার নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী যারা বিচারকার্য করে না তারাই কাফের, .. তারাই জালিম…. তারাই ফাসিক। বনী ইসরাইলের বাছুর পুজার চেয়ে আজকের মুসলমানদের বিদ্রোহ কি কম জঘন্য? মুসলিম ভূমিতে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে এ বিদ্রোহে নেতৃত্ব হিন্দু,খৃষ্টান বা বৌদ্ধরা দিচ্ছে না, দিচ্ছে মুসলিম নামধারি সেক্যুলার রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীগণ। আল্লাহর আইনকে ১৪ শত বছরের পুরোন আইন বলে তারা উপহাসও করছে। আলেমদের অপরাধ, তারা এ বিদ্রোহ ও উপহাসের শুধু নীরব দর্শক নয়,বরং বহু ক্ষেত্রে তারা এ বিদ্রোহী রাজনৈতীক নেতাদের মিত্রও। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে এসব আলেমগণও ময়দানে নেই। এ মুরতাদীরা আল্লাহর আইনকে অমান্য করে বেছে নিয়েছে কাফের ব্রিটিশদের তৈরী কুফরি আইনকে। যে আইনে ব্যাভিচার কোন অপরাধই নয় যদি তা উভয় পক্ষের সম্মতিতে হয়। অপরাধ নয় সূদ, ঘূষ এবং মদ্যপানও। এমন বিদ্রোহীদের হাতে দখলদারির কারণে সমগ্র রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে পড়েছে শয়তানের হাতিয়ারে। তারা অসম্ভব করে রেখেছে সিরাতুল মোস্তাকীমে চলা। অসম্ভব করেছে ইসলামের জ্ঞানলাভ করা। অসম্ভব হয়েছে ইসলামের শরিয়তি বিধানের পূর্ণ অনুসরণ। মুসলিম জীবনে ঢুকেছে সূদ, ঘুষ, বিপর্দাগীর ন্যায় আল্লাহর বিরুদ্ধে নানাবিধ বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহের বিস্তার এতই ব্যাপক যে পতিতাপল্লির জ্বিনাকে নিরাপত্তা দিতে রাতদিন যে পুলিশ পাহারা তার খরচ জোগাতে দেশের নামাজী ও রোযাদারগণও বিনাপ্রতিবাদে রাজস্ব দেয়।

নিজ ঘরে আগুন লাগলে সে আগুন থামানোর দায়িত্ব সে গৃহে বসবাসকারী সবার। সে সাথে পাড়ার লোকেরও। চোখের সামনে ঘর জ্বলতে দেখেও সে পরিবারের বা পাড়ার কেউ যদি আগুন নিভাতে উদ্যোগী না হয় তবে কি তাদেরকে সুস্থ বলা যায়? এমন বিবেকহীনদের কি মানুষ বলা যায়? মদিনার ক্ষুদ্র নগরীতে ইসলামি রাষ্ট্রের যখন সবেমাত্র শুরু তখন আরবের অসভ্য কাফেরগণ জোট বেঁধেছিল সে রাষ্ট্রকে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিলুপ্ত করার। ১০ হাজারের অধিক মানুষ সেদিন মদিনাকে ঘিরে ধরেছিল। ইতিহাসে সে যুদ্ধকে জঙ্গে আহযাব বলা হয়। বলা হয় খন্দকের যুদ্ধও। কাফেরদের সে সম্মিলিত হামলা রুখতে প্রতিটি মুসলিম পুরুষই শুধু নয়, নারীগণও মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শত্রুর সে হামলার মুখে মুসলমানদের অংশগ্রহণ ছিল শতকরা শতভাগ। তারা রাতদিন পরিশ্রম করে মদিনা ঘিরে গভীর পরিখা খনন করেছিলেন। আল্লাহতায়ালাও তাদের জানমালের বিনিয়োগ দেখে ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন। ফলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র সেদিন আসন্ন বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

 

শহীদের মর্যাদা

বাংলার মুসলিম ভূমি আজ অধিকৃত। অধিকৃত হয়েছে ভারতের সেবাদাস ও ইসলামের ঘোরতোর দুষমণদের হাতে। ইসলামের এমন দুষমনদের হটানোর দায়ভার কি শুধু বিএনপি,জামায়াত বা কিছু রাজনৈতীক দলের? এটি কি স্রেফ রাজনীতি? ইসলামে এমন দুর্বৃত্তদের হটানোর কাজা তো ইবাদত। এটি পবিত্র জিহাদ। এ দায়িত্ব তো প্রতিটি ঈমানদারের। মহান আল্লাহর কাছে এ প্রশ্নের জবাব অবশ্যই দিতে হবে, যখন দেশ ইসলামের শত্রুদের হাতে অধিকৃত হয়েছিল তখন তোমার ভূমিকা কি ছিল? তুমি কি সে সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ না করে বরং রাজস্ব দিয়ে সাহায্য করনি? ইসলামের স্বঘোষিত এ শত্রুদের হটানোর কাজে যে ঈমানদার প্রাণ দিবে তারা তো শহীদ। এমন শহীদদের জীবনে মৃত্যু নেই। তাদেরকে মৃত বলাকে মহান আল্লাহতায়ালা হারাম করে দিয়েছেন। তাদের জীবনে কবরের আযাব নাই। রোজ হাশরের বিচারের অপেক্ষায় হাজর হাজার বছরের ইন্তেজারও নাই। বিচারের দিনে “ইয়া নফসি, ইয়া নফসি”র আর্তনাদও নাই। আল্লাহর পথে যুদ্ধ নিহত হলে তারা সরাসরি ঢুকবে জান্নাতে। তাদের জীবনে কবরবাস নাই, আলমে বারযাখে বসবাসও নাই। কবরে তাদের লাশ থাকবে বটে কিন্তু তারা চলে যাবে জান্নাতে। শাহাদত প্রাপ্তির সাথে সাথে তারা মহান রাব্বুল আলামিনের মর্যাদাবান মেহমান হবেন। অন্যরা মারা গেলে সাথে সাথে তাদের খাদ্যপানীয় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু শহীদগণ পাবেন রেজেক –যার প্রতিশ্রুতি পবিত্র কোরআনে দেয়া হয়েছে। এমন মর্যাদা, সরাসরি এরূপ জান্নাতে প্রবেশের সুখবর কি কোন সুফি দরবেশ,বুজুর্গ আলেম,হাফেজ, ক্বারি, মোহাদ্দেস, মোফাচ্ছের বা পীরকে দেয়া হয়েছে? কিয়ামতের দিনে বরং “ইয়া নফসি, ইয়া নফসি” বলতে বলতে তাদের গা দিয়ে ঘাম ছুটবে। মহান আল্লাহর দরবারে তাদেরকে চুলচেরা হিসাব দিতে হবে।পিতামাতা সেদিন নিজ সন্তানদের ভূলে যাবে। ভাই ভাইকে ভূলে যাবে। সবাই তখন নিজেকে বাঁচানো নিয়ে দিশেহারা হবে। শহীদের জীবনে সে দিন আসবে না। তারা তখন থাকবে জান্নাতের আনন্দভূমিতে।

 

মুমিনের দোয়া

দোয়ার মধ্যেই নিখুঁত ভাবে ধরা পড়ে ব্যক্তির জীবনের মূল প্রায়োরিটি। মানুষ সে প্রায়োটি নিয়েই আজীবন বাঁচে। সে অনুযায়ী শিক্ষা নেয়;এবং কর্ম, পেশা বা ব্যবসা গড়ে তোলে। যা যে চায় না তা কখনোই দোয়াতে আনে না। তাই দুনিয়াদার ব্যক্তির সবচেয়ে বড় দোয়াটি ডিগ্রি লাভ, সন্তান লাভ, অর্থ লাভ,চাকুরি লাভ বা স্বাস্থ্যলাভ নিয়ে। সে জন্য মৌলবী ডেকে দোয়ার আসরও বসায়। সে দোয়ায় শাহাদত লাভ গুরুত্ব পায় না। অথচ প্রকৃত মু’মিনের দোয়াতে গুরুত্ব পায় শাহাদত লাভের কামনা। সাহাবাগণ শাহাদত লাভের জন্য অন্যদেরকে দিয়ে দোয়া করাতেন। দোয়ার সাথে তাদের মনের গভীর সংযোগও ছিল। তাই শতকরা ৭০ভাগের বেশী সাহাবী রণাঙ্গণে শহিদও হয়ে গেছেন। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের থেকে আজকের মুসলমানদের পার্থক্য অনেক। তবে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো, আজকের মুসলমানগণ যেমন জিহাদবিমুখ, তেমনি শাহাদতবিমুখ। জান্নাতমুখি চেতনা যাদের মধ্যে অতি প্রচন্ড তারাই শাহাদতমুখি হয়।ব্যক্তির জান্নাতমুখিতা টুপিপাগড়ি,লম্বা দাড়ি ও নামায-রোযায় ধরাপড়া না। লাখ লাখ সূদখোর-ঘুষখোর ও মুনাফিকও লম্বা দাড়ি রাখে।মাথায় টুপি-পাগড়ি লাগায়।নিয়মিত নামায-রোযাও আদায় করে। ব্যক্তির জান্নাতমুখিতা ধরা পড়ে রাতের আঁধারে হাত তুলে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে শাহাদতের আকুতি পেশের মধ্যে। যারা দুনিয়ামুখি তাদের মুখে সে দোয়া আসে না। তাদের ভয়,এমন দোয়া কবুল হলে তো সাধের দুনিয়া ছাড়তে হবে। দুনিয়ার জীবনে জৌলুস বাড়াতে তারা বরং জালেম শাসকের ভাড়াটে সৈনিকে পরিণত হয়। যুগে যুগে এরূপ দুনিয়ামুখি আলেমদের মধ্য থেকে জালেম শাসকেরা লক্ষ লক্ষ তাঁবেদার পেয়েছে। দুনিয়াকে আঁকড়ে ধরে বেশী দিন বেঁচে থাকাই তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য। তাদের ধর্মপালন স্রেফ নামায-রোযা ও তাসবিহ পাঠে সীমিত। এমন বকধার্মিকদের কারণেই প্রতিটি মুসলিম ভূমি আজ ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত।সে অধিকৃতি থেকে মুক্তির লড়াইয়ে সৈন্য নাই। কারণ লড়াই তো জানমালের বিনিয়োগ চাই। ফলে দেশে দেশে আল্লাহর দ্বীন ও তার শরিয়তি বিধান আজ পরাজিত। মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম শুধু কিতাবেই রয়ে গেছে, আাইন-আদালতে নাই। ফলে কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের মানমর্যদাও। পবিত্র কোরআনে  মুসলমানদের অভিহিত করা হয়েছিল “কুনতুম খায়রা উম্মাতিন” (তোমরাই হলে শ্রেষ্ঠ জাতি)রূপে, অথচ তারাই আজ বিশ্বমাঝে সবচেয়ে পরাজিত ও অপমানিত।

আজকের বিশ্বের প্রায় ১৩০ কোটি মুসলমানের যে পতিত দশা তার কারণ তো এই স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের শাসন।বাংলাদেশ তো এ কারণেই বিশ্বমাঝে মর্যাদাহীন। সাহাবায়ে কেরামের যুগে ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে এরূপ বিদ্রোহ হলে বা মুসলিম ভূমি স্বঘোষিত ইসলামের শত্রুদের হাতে অধিকৃত হলে কি ঈমানদারগণ কি ঘরে বসে থাকতেন? সাহাবায়ে কেরামগণ একটি একটি দিনও শরিয়তের হুকুম ছাড়া বেঁচেছেন? রাষ্ট্রের নির্মাণে, উন্নয়নে ও প্রতিরক্ষায় অংশ নেয়া ইসলামে কোন পেশাদারিত্ব নয়, চাকুরিও নয়; এটি স্রেফ রাজনীতিও নয়। এটি অতি পবিত্র জিহাদ। শুধু শ্রম ও অর্থ দানই নয়,অনেক সময় সে কাজে প্রাণদানও অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এরূপ চেতনা বলেই প্রাথমিক কালের মুষ্টিমেয় দরিদ্র মুসলমানেরা সে আমলের দুটি বৃহৎ শক্তিকে পরাজিত করে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এযুগের মুসলিম শাসকেরা নানা বাহানায় সে ইবাদত পালনকে অসম্ভব করে রেখেছে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জিহাদে অংশগ্রহণকে তারা ফৌজদারী অপরাধে পরিণত করেছে। অথচ রাজনীতির জিহাদ হলো রাষ্ট্রের উন্নয়নের প্রচেষ্ঠা। এমন আত্মনিয়েোগ প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। অথচ স্বৈরাচার কবলিত বহুদেশে এটি মৃত্যুদন্ডনীয় অপরাধ। শেখ মুজিবও এটি নিষিদ্ধ করেছিল ইসলামপন্থীদের জন্য। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ অবধি দেশের ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক দলগুলোকে মুজিব বেআইনী ঘোষিত করেছিল এবং ১৯৭৪ এ এসে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজকে পরিণত করেছিল তার পরিবার ও দলের নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বিষয়ে। প্রতিষ্ঠা করেছিল একদলীয় বাকশালী শাসন। যে কোন স্বৈরাচারী শাসকের ন্যায় মুজিবও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দর্শকে পরিণত করেছিল। কোন টীমের শতকরা নিরানব্বই ভাগ খেলোয়াড়কে দর্শকের গ্যালারীতে বসিয়ে কোন দলই বিজয়ী হতে পারে না। তেমনি পারেনি মুজিব আমলের বাংলাদেশও। তার হাতে রাজনীতি পরিণত হয়েছিল লুণ্ঠনের হাতিয়ারে। ফলে নিঃস্ব হয়েছিল সরকারি তহবিল ও জনগণ, এবং তার কুশাসনে বাংলাদেশ অর্জন করেছিল লজ্জাজনক তলাহীন ঝুড়ির খেতাবটি। তার শাসনামলে দরিদ্র মানুষ কাপড়ের অভাবে মাছধরা জাল পরে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। বাংলার ইতিহাসে আর কোন কালেই এরূপ ঘটনা ঘটেনি।

 

সরকারের নৃশংস বর্বরতা

যে দেশের সেনাবাহিনীর লোকেরা নিজদেশের নাগরিকদের খুন করে লাশ নদীতে ফেলে অর্থ কামায় সে দেশকে কি সভ্য দেশ বলা যায়? সে সরকারও কি সভ্য সরকার,যে সরকার নিরস্ত্র মানুষের উপর সশস্ত্র সেনা লেলিয়ে দিয়ে শতশত মানুষকে হতাহত করে এবং নিহতদের লাশ ময়লার গাড়িতে তুলে গায়েব করে দেয়? অথচ রাজধানীর শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ই মে তারিখে তো সেটিই হয়েছিল। কোন সভ্য সরকার কি নিজ দেশের নাগরিকদের ঘরবাড়ির উপর বুলডোজার চালিয়ে দেয়? রানা প্লাজার ন্যায় ভবন ধ্বস ও হত্যাকান্ড কি কোন সভ্যদেশে ঘটে।সারিবদ্ধ বালিবুঝাই ট্রাক দিয়ে অবরোধ করে কি বিরোধী দলীয় নেত্রীর বাসা? সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,বালির গাড়ি দেয়া হয়েছে বিরোধী দলীয় নেত্রীর নিরাপত্তা বাড়াতে। প্রশ্ন তবে কেন প্রধানমন্ত্রীর বাসার সামনে বালির গাড়ি নাই? বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা,গুম করা,রিমান্ডের নামে নির্যাতন সেলে নিয়ে দৈহীক অত্যাচার করা -কোন ধরণের সভ্যতা? বিরোধী দলের অফিসে ভাংচুর করা,তাদের অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়া,বিরোধী পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া,বিরোধীদের দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে সমাবেশ করতে না দেয়া,এমন কি তাদেরকে নিজ অফিসে মিটিং করতে না দেয়াও কি সভ্যতা? অথচ বিরোধী দল দমনে এরূপ নৃশংস বর্বরতাই হলো শেখ হাসিনা সরকারের নীতি। কোন সভ্য সরকার কি কখনো নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি করে? ২০১৩ সালের জানুয়ারির যে নির্বাচনে সংসদ গঠন করা হলো সে নির্বাচনে ১৫৪ সিটে কোন ভোটদানের ঘটনাই ঘটেনি। এবং যেখানে ভোটদান হয়েছে সেখানে কি শতকরা ৫ জনও ভোট দিয়েছে? বিশ্বের কোন সভ্যদেশে কি এমন ঘটনা কোনকালেও ঘটেছে? কোন সভ্যদেশের আদালত কি দলীয় ক্যাডারদের দাবীতে বিচারের রায় পাল্টায়? অথচ বাংলাদেশের আদালত শুধু রায়ই পাল্টানো হয়নি,ক্যাডারদের খুশি করতে সংসদের সদস্যগণ আইনও পাল্টিয়েছে।এবং সে আইনের মাধ্যমে নিরপরাধ মানুষদের হত্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।এরূপ নানা অসভ্যতার পাশাপাশি দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হওয়াটিও কি কম বর্বরতা? সভ্যদেশে চুরি-ডাকাতি,সন্ত্রাস ও খুনখারাবী করে কিছু চোর-ডাকাত,খুনি ও নরপিশাচ,এবং সে ভয়ানক অপরাধীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেয় সরকার। কিন্তু অসভ্য দেশে সে ভয়ানক অপরাধগুলি করে খোদ সরকার। সরকারি দলের চুরি-ডাকাতির কারণেই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অবকাঠামা নির্মাণের প্রজেক্ট পদ্মাসেতু বহু বছরের জন্য পিছিয়ে গেল। অসভ্য দেশে আইন-আদালত,পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাজ হয় দুর্বৃত্ত সরকারকে দিবারাত্র প্রটেকশন দেয়া। হালাকু-চেঙ্গিজদের আমলে সেটিই হতো।আজ  সেটিই হচ্ছে বাংলাদেশে।

 

যে ব্যর্থতা জনগণের 

জাতীয় জীবনে কদর্যতা স্রেফ সরকারের ব্যর্থতার কারণে আসে না। সেটি অনিবার্য হয় সর্বসাধারণের ব্যর্থতায়। জাতির অর্জিত সফলতার কৃতিত্ব যেমন প্রতিটি নাগরিকের,তেমনি ব্যর্থতার দায়ভারও প্রতিটি নাগরিকের। দেশগড়ার কাজে সমগ্র দেশবাসী একটি দলবদ্ধ টিম রূপে কাজ করে। টিম হারলে যেমন সে টিমের সবাই হারে, তেমনি জাতির বেলায়ও। দেশ গড়া, শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও দেশের প্রতিরক্ষার দায়-দায়িত্ব তাই কিছু নিছক রাজনৈতিক নেতা,দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্মচারীদের নয়। এ কাজ সমগ্র দেশবাসীর। এটি খেলার বিষয় নয় যে,মুষ্টিমেয় খেলোয়াড়গণ খেলবে এবং আমজনতা দর্শকরূপে তা দেখবে। বরং এ কাজ রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী, আলেম-উলামা, ছাত্র-শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মচারি, সেনাসদস্য, কৃষক-শ্রমিকসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের। কোন জাতি যখন নীচে নামতে থাকে তখন সে নীচে নামার কারণ বহু। তবে মূল কারণটি হলো,দেশ গড়া ও দেশের প্রতিরক্ষার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে জনগণের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনা না করা। জাতির ঘাড়ে যখন দুর্বৃত্ত্ব সরকার চেপে বসে তখন পাড়া থেকে চোর-ডাকাত তাড়ানোর মত ঘাড় থেকে সে দুর্বৃত্ত্ব সরকার নামানোর  দায়িত্বটিকে জনগণকে নিজ হাতে নিতে হয়। সে জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে হয়। কিন্তু জাতি বিপদে পড়ে যখন সে কাজগুলি মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির হাতে সীমাবদ্ধ হয় এবং বাঁকিরা দর্শকে পরিণত হয়। সকল বিফলতার জন্য তখন শুধু সেই মুষ্টিমেয় ব্যক্তিদের দায়বদ্ধ করা হয়।পলাশির যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা যখন অস্তমিত হলো তখন শুধু সিরাজুদ্দৌলার পরাজয় হয়নি বরং পরাজিত হয়েছিল বাংলার সমগ্র মানুষ। এ পরাজয়ের জন্য শুধু মীর জাফরকে দায়ী করে অসুস্থ চেতনার মানুষই শুধু নিজের দায়ভার ও দুঃখ কমাতে পারে,বিবেকবান মানুষ তা পারে না। সে পরাজয়ের জন্য দায়ী ছিল বাংলার সমগ্র মানুষ।

একটি দেশ কতটা সভ্য সে বিচারটি দেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, গাছপালা, ক্ষেত-খামার দিয়ে হয় না। ইট-পাথর ও লোহালক্কর দিয়ে নির্মৃত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট বা কলকারখানার সংখ্যা দিয়ে হয় না। বরং সে বিচারটি হয় সেদেশের মানুষের মান, শাসকের মান এবং আদালতের আইনের মান দিয়ে। হালাকু-চেঙ্গিজের ন্যায় চোরডাকাতের হাতে দেশ গেলে সেখানে ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট ও প্রাসাদ নির্মিত হলেও সভ্যতা নির্মিত হয়না। ইসলাম তার প্রাথমিক কালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা জন্ম দিয়েছে কোন তাজমহল,পিরামিড বা কোন বিস্ময়কর প্রাসাদ না গড়েই। তারা জন্ম দিয়েছিল এমন বিবেকমান শাসকের যারা চাকরকে উঠের পিঠে চড়িয়ে নিজে উঠের রশি ধরে সামনে চলাকে নিজের নৈতীক দায়িত্ব মনে করেছে। প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল এমন উন্নত আইনের যে আইনের স্রষ্টা কোন মানুষ ও পার্লামেন্ট ছিল না, ছিলেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। সে শরিয়তি আইনে নারী-পুরুষ তার মৌলিক স্বাধীনতা ও অধিকার পেয়েছিল। বিলুপ্ত হয়েছিল আদি আমল থেকে চলে আসা দাসপ্রথা। নারী শিশুরা সেদিন জীবন্ত দাফন হওয়া থেকে বেঁচেছিল। সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল চোর-ডাকাতেরা। বিলুপ্ত হয়েছিল মদ্যপান, জুয়া ও ব্যাভিচারের ন্যায় আদিম অপরাধ। নানা ধর্মের মানুষ সে সমাজে নিরাপদে বাস কবতে পারতো। সে রাষ্ট্রে কোন কালেই কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটেনি।অথচ বাংলাদেশ আজ হালাকু-চেঙ্গিজের ন্যায় বর্বর চোর-ডাকাত ও খুনিদের হাতে অধিকৃত। এদের হাতে যে শুধু ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে বা শেয়ার বাজার লুট হচ্ছে তা নয়, ডাকাতি হচ্ছে ভোটের বাক্সতেও। হাত পড়ছে মানুষের ইজ্জত-আবরু ও জানের উপরও। সাধারণ মানুষ আজ পথে-ঘাটে লাশ হচ্ছে। মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্র আজ আস্তাকুঁরে গিয়ে পড়েছে। স্বৈরাচার আাজ মুজিব আমলের বাকশালী নিষ্ঠুরতার চেয়েও ভয়ংকর রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে। ডাকাতেরা যেমন গৃহকর্তার হাত-পা বেঁধে বা তাকে খুন করে লুন্ঠন করে, তেমনি দেশবাসীকে বন্দি করে এবং তাদের উপর অত্যাচার ও হত্যাকান্ড চালিয়ে অতিশয় দুর্বৃত্ত্বরা আজ দেশ শাসন করছে। দেশ অসভ্যতায় রেকর্ড গড়ছে তো একারণেই।

তবে এরূপ ভয়াবহ অবস্থায় দেশ একদিনে পৌঁছেনি। রোগ ধীরে ধীরে বেড়ে অবশেষে একদিন শরীরের পতন ঘটায়। যে চোর-ডাকাত ও খুনিদের হাতে আজ বাংলাদেশ অধিকৃত তারা ইংরেজদের মত বিদেশ থেকে আসেনি। আসমান থেকেও পড়েনি। তারা তো বেড়ে উঠেছে জনগণের মাঝেই।মানুষকে শুধু চাষাবাদ বা ব্যবসাবাণিজ্য জানলে চলে না। স্রেফ বিষাক্ত শাপ ও হিংস্র বাঘ-ভালুকদের চিনলেও চলে না। সেগুলি জানার পাশাপাশি সমাজের চোর-ডাকাত ও খুনিদেরও চিনতে হয়। তাদের ঘৃনা করার সামর্থও থাকতে হয়। সেটিই তো বিবেকের সুস্থ্যাতা। সেটিই তো চেতনার বল। বাংলাদেশের মানুষ সে সুস্থ্যতা নিয়ে তেমন বেড়ে উঠেনি। চেতনায় সে বলও পায়নি। সে অসুস্থ্যতা যে শুধু স্বল্পসংখ্যক মানুষের -তা নয়। বরং সে রোগ বিপুল সংখ্যক মানুষের। এবং সে রোগটি নিখুঁত ভাবে ধরা পড়ে নির্বাচন কালে। এমন অসুস্থ্যতা মানুষের আধিক্যের কারণে কোন বিবেকমান সৎ মানুষের পক্ষে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া অসম্ভব। বিলেতে কোন এমপি একবার মিথ্যুক প্রমাণিত হলে তার আর এমপি পদ থাকে না। অথচ বাংলাদেশে শুধু মিথ্যুক নয়, চোরডাকাত প্রমাণিত হলেও বিপুল ভোটে সে নির্বাচিত হয়।সেটি চেতনায় চরম অসুস্থ্যতার কারণে।বস্তুতঃ এমন এক অভিন্ন অসুস্থ্যতার কারণে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মহম্মদ (সাঃ)কেও মক্কার কাফেরদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে জন্মভূমি ছাড়তে হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছিল হযরত ইব্রাহীম (আঃ)ও হযরত মূসা (আঃ)র মত মানব ইতিহাসের অন্যান্য শ্রেষ্ঠ মানবদের।

 

অর্জিত আযাব  ও কাফফারা

অন্যায় ও অসত্যকে ঘৃণা,আর ন্যায় ও সত্যকে ভালবাসার সামার্থই মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সামর্থ। এমন সামর্থের বলেই মানব ফেরেশতাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হয়। সে সামর্থটি দৈহীক বলে আসে না, সে জন্য নৈতীক বল লাগে। সে জন্য লাগে চেতনায় সুস্থ্যতা। লাগে চিন্তা ও দর্শনর বল। বাংলাদেশের মানুষের সে নৈতীক বল অতি সামান্যই। তাদের মূল সমস্যাটি তো নৈতীক অসুস্থ্যতার।সে অসুস্থ্যতাটি ছড়িয়ে গেছে সমগ্র দেশ জুড়ে। আওয়ামী লীগ কি আজ হঠাৎ করে চোর-ডাকাত ও খুনিদের দলে পরিণত হয়েছে? এ রোগটি তো দলটির জন্মলগ্ন থেকেই।পাকিস্তান আমলেও কি এ দলের লোকজন চুরিডাকাতি কম করেছে? সরকারি অর্থচুরির অপরাধে ঢাকার আদালতে খোদ শেখ মুজিবের সাস্তি হয়েছিল, যদিও পরে ঢাকার উচ্চ আদালত তাকে ছেড়ে দেয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর বহুলক্ষ অপরাধী বহু খুনখারাবী ও চুরিডাকাতি করে। কিন্তু ঢাকার উচ্চআদালত তাদের ক’জনকে শাস্তি দেয়? মুজিবকেও তারা দেয়নি। মুজিব ও তার অনুসারিরা কি পাকিস্তান আমলেও কোন বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ সভা করতে দিয়েছে? তারা তো সংসদের অভ্যন্তরে ডিপুটি স্পীকার শাহেদ আলী হত্যা করেছে শতাধিক সংসদ সদস্যের সামনে।কিন্তু সে হত্যাকান্ডের অপরাধে কোন আদালত কি কাউকে একদিনেরও জেল দিয়েছে? ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামি ও নুরুল আমীন সাহেবের পাকিস্তান ডিমোক্রাটিক পার্টিসহ কোন দলকেই মুজিব শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচনি জনসভা করতে দেয়নি। সর্বত্র গুন্ডা লেলিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের আগেই তারা রাজপথের রাজনীতির উপর নিজেদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছিল। শাপলা চত্বরের নৃশংস ভয়াবহতা নিয়ে তারা হাজির হয়েছিল ১৯৭০ সালে ১৮ই জানুয়ারিতে ঢাকার পল্টন ময়দানে জামায়াতে ইসলামির নির্বাচনি জনসভায়। সেদিন পল্টন ময়দানের পাশের রাস্তাগুলো উপর দাঁডিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের খুনিরা বৃষ্টির মত পাথর নিক্ষেপ সমাগত জনতার উপর। অবশেষে জনসভার অভ্যন্তরে ঢুকেও তারা মানুষ খুনে নেমেছিল। সেদিন জামায়াতের তিনজন নিরাপদ কর্মীকে তারা শহীদ করেছিল এবং আহত করেছিল বহুশত মানুষকে। অথচ সে নৃশংস হত্যাকান্ডের নিন্দার সামর্থ যে কোন সাধারণ মানুষেরই থাকে। এমন কি শিশুদেরও থাকে না। থাকে না শুধু অসভ্য খুনিদের। অথচ সে হত্যাকান্ডকে নিন্দা করে সে সময়ের বাঙালী বুদ্ধিজীবীগণ কোন বিবৃতি দেয়নি। কেউ রাজপথেও নামেনি। বরং পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক সংবাদ খবর ছেপেছিল জামায়াতের কর্মীরাই সমবেত শ্রোতাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এই হলো বিপুল সংখ্যক বাঙালীর বিবেকের মান! বাংলাদেশের সে বিবেকশূণ্য জনগণ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সে নৃশংস খুনিদেরই বিপুলভাবে বিজয়ী করেছিল। মুজিবের শাসনামলেও কি এসব চোর-ডাকাত ও খুনিগণ কম অপরাধ করেছে? মুজিবের রক্ষি বাহিনীর হাতে তিরিশ হাজারের বেশী রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছে। সিরাজ শিকদারকে খুন করে পার্লামেন্টে দাড়িয়ে কোথায় আজ সিরাজ শিকদার বলে হুংকার শুনিয়েছে। গণতন্ত্র কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করাই যে মুজিবের শিক্ষা ও সে সাথে আওয়ামী লীগের গর্বের ঐতিহ্য -সেটি কি এতই পুরনো বিষয়? তারপরও জনগণ এ খুনি ও স্বৈরাচারি বর্বরদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। সেটি যেমন ১৯৯৬ সালে, তেমনি ২০০৮ সালে। নেকড়ে যেখানে যাই সেখানে তার হিংস্রতা নিয়েই হাজির হয়। তেমনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীগণও পারে না স্বৈরাচারি দস্যুতা থেকে দূরে সরতে।

কোন সুস্থ্য মানুষের পা একই গর্তে বার বার পড়ে না। কিন্তু বাংলাদেশীরা জেনে বুঝে সে গর্তে বার বার পা দেয়। এটিই বাংলাদেশীদের বড় ব্যর্থতা। ফলে যে চোর-ডাকাত ও খুনিদের হাতে দেশ আজ অধিকৃত তারা বেড়ে উঠেছে জনগণের সাহায্য-সমর্থণ নিয়েই। তাই নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, বাংলাদেশের উপর আজ যে অসভ্য বর্বরতা চেপে বসেছে সেটি জনগণের নিজস্ব অর্জন। এটি জনগণের নিজস্ব পাপ। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে শুধু আওয়ামী নেতাকর্মদেরই তোলা হবে না। জনগণকেও তোলা হবে। জিহাদবিমুখ আলেমদেরও তোলা হবে। মহান আল্লাহতায়ালা শুধু ফিরাউনকে ডুবিয়ে হত্যা করেননি, তার সাথে তারা বহু লক্ষ অনুসারিকেও ডুবিয়ে মেরেছেন। তবে পাপ যত বিশালই হোক,সে পাপমোচনের পথ কোন কালেই বন্ধ হয় না। পাপ মোচনের পথ স্রেফ তাওবা নয়, ঘরে বসে স্রেফ তাসবিহ পাঠও নয়। বরং মহান আল্লাহর পথে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোরবানি। আর সে কোরবানি পেশ করতে হয় ইসলামের শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে জিহাদে। মহান আল্লাহর রহমত ছাড়া বাংলাদেশের বুকে কি শান্তি ও কল্যাণ আসতে পারে? আর সে রহমত তো আসে ঈমানদারের জানমালের বিনিয়োগের পর।   ০৬/০১/২০১৫

                        

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *