দর্শনের বল এবং আত্মঘাতী বাঙালী মুসলিম
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on May 22, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
রোগটি চেতনার ভূমিতে
দেহে পচন ধরলে এবং সে পচনের দ্রুত চিকিৎসা না হলে তা দিন দিন গুরুতর হয়। সে রোগ সারা দেহে ছড়ায় এবং দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে। সেটি ঘটে চেতনার রোগের ক্ষেত্রেও। মানুষ তার নেক কর্ম ও দুষ্কর্মে উৎসাহ পায় হাত-পা থেকে নয়, বরং তার চেতনার ভূমি থেকে। সেটি রোগাস্ত্র হলে দুর্বৃত্তি বা দুর্নীতি সিম্পটম রূপে দেখা দেয়। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশের পরিচিতি আজ বিশ্বময়। এ শতাব্দীর শুরুতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব মাঝে ৫ বার প্রথম হয়েছে। কোন দেশের নির্বাচনে কি দিনের ভোট রাতে ডাকাতি হয়? অথচ সেটিই হয়েছে বাংলাদেশের ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। দুর্বৃত্তির অঙ্গণে এ হলো বিস্ময়কর রেকর্ড। যে কোন সভ্য দেশের সরকারের মূল দায়িত্বটি রাস্তাঘাট ও কলকারখানা গড়া নয়, বরং জনগণের জানমাল ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা দেয়াও। সুরক্ষা দিতে হয় জনগণের ভোটদান ও মত প্রকাশের অধিকারকে। কিন্তু বাংলাদেশীদের সে মৌল নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা দেয়া দূরে থাক, বরং সে অধিকারের উপর ডাকাতি করে খোদ সরকার। ফলে দুর্বৃত্তি আজ আর শুধু দেশটির চোরডাকাতদের পেশা নয়, সেটিই এখন সরকারের নীতি।
দুর্নীতিতে এ চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে হলে দুর্নীতির গভীরে অনেক দূর নীচে নামতে হয়। সে নীচে নামার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য যে কোন দেশ থেকে অনেক এগিয়ে আছে। নানা দেশে উন্নয়নের মডেল রূপে যেখানে আলোচিত হয় জাপান, কোরিয়া বা সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ সেখানে নৈতিক ব্যর্থতা তথা দুর্বৃত্তির মডেল। বাংলাদেশে যে অর্থনীতি, রাজনীতি ও প্রশাসন গড়ে উঠেছে তা মূলত দুর্নীতি-নির্ভর। দেশের অর্থনীতি হয়ে পড়েছে বিদেশী ঋণনির্ভর। বিদেশ থেকে চড়া সূদে বিপুল অংকের ঋণ নেয়ার মধ্যে শাসক দলের নেতাদের বিশাল স্বার্থ থাকে। সেটি সে ঋণের অর্থের উপর বিরাট অংকের কমিশন নেয়ার উদ্দেশ্যে। ফলে দেশ ডুবছে বিদেশী ঋণের ভারে।
বাংলাদেশের এ বহুমুখী ব্যর্থতার মূল কারণ হলো, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় ভাল মানুষ গড়ার কারখানা গুলোই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেখানে সুনীতির বদলে পরিচর্যা পাচ্ছে দুর্নীতি। ফলে ভাল মানুষের জোগান পাচেছ না দেশের প্রশাসন, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, অর্থনীতি, সেনাবাহিনী ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রগুলি। মানব গড়ার ক্ষেত্রে এ নিদারুন ব্যর্থতার সাথে সমান ভাবে তীব্রতা পেয়েছে গুম, খুন, ফাঁসি, সন্ত্রাস ও ভোটডাকাতির রাজনীতি। অসুস্থ্য নৈতিকতা ও অসুস্থ্য রাজনীতি নিয়ে কি দেশের সুস্থ্যতা বাড়ে? মহান আল্লাহতায়ালা প্রত্যেককেই কিছু না কিছু শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা দেন। অনেকের দেন আবিস্কারের বিস্ময়কর সামর্থ্য। দেন গভীর চিন্তাভাবনা মানসিক বল। কিন্তু সেসব সামর্থ্য তো তখনই ফল দেয় যখন সামর্থ্যের বিনিয়োগে ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু সে স্বাধীনতা কেড়ে নেয় স্বৈরাচারি শাসক; ফলে মানব-উন্নয়ন এবং সে সাথে দেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধাটি হলো স্বৈরাচারী শাসন। ব্যক্তির সে স্বাধীনতা কেড়ে নেয়াই হলো মানবতাবিরোধী সবচেয়ে অপরাধ। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশ শাসিত হচ্ছে সে ফ্যাসিবাদী অপরাধীদের হাতে। ফলে নিদারুন পরাধীনতা নেমে আসে জনগণের জীবনে। ফলে মানুষ ব্যর্থ হচ্ছে নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠতে।
প্রতিটি মুসলিমের উপর ঈমানী দায়ভার হলো, জীবন চালনা ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্র সে নির্দেশনা নিবে পবিত্র কুর’আন থেকে। পবিত্র কুর’আনই হলো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনারও একমাত্র বৈধ রোডম্যাপ। দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিচার-আচারে এই কুর’আনী রোডম্যাপের অনুসরণ করা না হলে এবং নির্দেশনা অন্যত্র থেকে নিলে সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা হয় না। তখন সে অনুসৃত পথটি হয় জাহান্নামের। সে কাজটি কাফের, ফাসেক ও জালেমদের। তাই শুধু পানাহার হালাল হলে চলে না, শুধু নামাজ-রোজা পালন করলেও চলে না। সে সাথে শতভাগ বিশুদ্ধ ও হালাল হতে হয় ধ্যান-ধারনা ও দর্শনকে। সে সাথে জীবনের পথ চলা ও রাষ্ট্র পরিচালনাটি হতে হয় কুর’আনী রোডম্যাপ অনুসারে। তখন দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনের মূল নীতি হতে হয় “দুর্বৃত্তির নির্মূল (নেহী আনিল মুনকার) ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা (আ’মিরু বিল মারুফ)। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটছে উল্টোটি। এখানে পরিত্যক্ত হচ্ছে কুর’আনী রোডম্যাপ। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পবিত্র কুর’আনের সাথে এভাবে হচ্ছে সবচেয়ে বড় অবমাননা। পরকালের বিচার দিনে কি এর জবাব দিতে হবে না?
অনেকেই বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে উন্নয়নের পথে বড় রকমের বাধা মনে করে। চেতনার ভূমিটি গুরুতর রুগ্ন হলে এবং ঈমান বিলুপ্ত হলেই একজন মানুষ এমন কথা বলতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রশ্নটি নিছক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমাজনীতির বিষয় নয়, এটি গুরুত্বপূর্ণ ঈমান-আক্বিদার বিষয়ও। এর সাথে জড়িত ঈমান থাকা না থাকার প্রশ্ন। মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তথা আশরাফুল মাখলুকাত হলো মানুষ; সোনা-রূপা, হীরা-জহরত, তেল-গ্যাস নয়। মানুষ শুধু মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিই নয় বরং তাঁর নিজের পক্ষ থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত খলিফাও। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর খলিফা রূপে নিয়োগ পাওয়ার মর্যাদাটি ফেরেশতাদের চেয়েও উর্দ্ধে। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালনের ন্যায় নিজেকে নিয়ে এরূপ বিশেষ মর্যাদার ধারণটি মগজে রাখাটি ফরজ, নইলে মুসলিম হওয়া যায় না। যে তার নিজের মর্যাদার বিষয়টি জানে না, সে ব্যক্তি তার নিজের সে মর্যাদা রক্ষা করবে কী করে? নিজের উচ্চ মর্যাদার ধারণটি দেয় মহান আল্লাহতায়ালার প্রদত্ত দায়িত্ব নিয়ে বাঁচার প্রেরণা।
রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ঝাড়ুদার উভয়ই মানুষ। তাদের হাত-পা, হৃৎপৃন্ড, কিডনি, কলিজাতে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু তাদের মাঝে মূল পার্থক্যটি চেতনার ভূমিতে। উভয়ের চেতনার গভীরে কাজ করে ভিন্ন দায়বদ্ধতা ও ভিন্ন মর্যাদার বিষয়। সে ভিন্ন দায়বদ্ধতার কারণে প্রেসিডেন্ট এবং ঝাড়ুদারের কর্ম, চরিত্র ও আচরণ এক হয় না। তেমনি দুটি ভিন্ন চেতনা কাজ করে ঈমানদার ও কাফেরের চেতনায়। ঈমানদারের চেতনায় কাজ করে মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার হওয়ার বিশাল পদমর্যাদা। সে কি তাই ইসলাম পালনে অঙ্গীকারশূণ্য, দায়িত্বশূণ্য ও কর্মশূণ্য হয়? তখন সে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তার শরিয়তী আইনের শাসন বাঁচাতে জিহাদ করে এবং সে জিহাদে নিজের অর্থ, রক্ত, মেধা ও শ্রমের বিনিয়োগ করে। এবং প্রয়োজনে শহীদ হয়। এমন খলিফাদের নিয়েই তো মহান আল্লাহতায়ালা ফিরেশতাদের দরবারে গর্ব করেন এবং তাদেরকে নিয়ামত ভরা জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করে। পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা এদেরকেই “খায়রুল বারিয়া” (পৃথিবী পৃষ্ঠে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি) এবং “খায়রুল উম্মাহ” (শ্রেষ্ঠ উম্মত) খেতাবে ভূষিত করেছেন। অপরদিকে কাফেরের চেতনায় কাজ করে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি অবিশ্বাস ও বিদ্রোহ। তারা বাঁচে তাঁর শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে অবাধ্যতা নিয়ে।
কোন শিল্পীর শ্রেষ্ঠ শিল্পকে তুচ্ছ বলার অর্থ সে শিল্পীকে অবমাননা করা। তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবকে আপদ বললে ক্ষমাহীন অবমাননা হয় মহান আল্লাহতায়ালার। হেয় করা হয় তাঁর কুদরতকে। সারা জীবন নামাজ পড়ে বা রোজা রেখে কি সে অবমাননার অপরাধ মোচন হয়? অথচ বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যাকে দেশের জন্য সংকট বা আপদ ভাবাই রাষ্ট্রীয় নীতি। পরিবার পরিকল্পনা দফতরের কর্মীগণ সে কথাটি ঘরে ঘরে গিয়ে বার বার শোনাচ্ছে। এবং সন্তানের সংখ্যা কম করতে বলছে। কিন্তু মানব সন্তান নিয়ে এই বয়ান যে কতটা কুফরিপূর্ণ ও ঈমান-বিরুদ্ধ -সে কথাটি ক’জন ভেবে দেখেছে? যে কোন দেশে আদালতের অবমাননা করলে শাস্তি পেতে হয়। ফলে যারা মহান আল্লাহতায়ালার অবমাননা করে তারা কি তাই শাস্তিমুক্ত থাকতে পারে? তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির প্রতি এমন অবজ্ঞা নিয়ে কেউ কি পেতে পারে মহান আল্লাহতায়ালার রহমত? এরূপ বিশ্বাস পোষণ করা তো ঈমান-পরিপন্থী। এটি কবিরা গুনাহ। এতে জন্ম নেয় খলিফার মর্যাদার বদলে আত্মঘৃণা । আনে আত্মবিনাশ। মানব সন্তানেরা এভাবেই মানবেতর পর্যায়ে নামে। সে তখন হিংস্র পশুর চেয়েও হিংস্রতর হয়। তাই ব্যক্তির কর্ম ও আচরণে বিপ্লব আনতে হলে তার নিজের মনের গভীরে নিজেকে নিয়ে যে রুগ্ন ইমেজ বা ধারণাটি বাসা বেঁধে বসে আছে -সেটিকে পাল্টাতে হয়। কর্ম, চরিত্র ও চেতনায় অন্য পরিবর্তনগুলো আসে একমাত্র সে ইমেজটি পাল্টে যাওযার পরই। ব্যক্তি একমাত্র তখনই পায় আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে বেড়ে উঠার প্রেরণা।
নিজের শত্রু নিজেই
রুগ্ন দর্শনের নাশকতা দুষ্ট ভাইরাসের চেয়েও ভয়ানক ও সংক্রামক। ভাইরাস মৃত্যু ঘটায় দেহের। ভাইরাস জাহান্নামে নেয় না, কিন্তু দুষ্ট দর্শন নেয়। অসুস্থ্য দর্শনের সংক্রমণে মৃত্যু ঘটে লক্ষ লক্ষ মানুষের চেতনার, বিবেকের, চরিত্রের, মূল্যবোধের এবং সে সাথে মানবিক সভ্যতার। অতীতের কোন এক কালে কোন এক ভ্রান্ত দর্শনের মহামারীতে ভারতের অধিকাংশ মানুষ মুর্তিপূজারীতে পরিণত হয়েছিল। সে ব্যাধী দিন দিন এতোটাই গভীরে পৌঁছেছে যে, চিত্তের সে সনাতন ব্যাধী থেকে এখন আর ভারতীয়গণ মুক্তির পথ পাচ্ছে না। কি বিস্ময়কর ও ভয়ংকর মিথ্যাচার? তারা বিশ্বাস করে তাদের ভগবানের জন্ম হয় কোন এক পুরুষের বীর্যে এবং কোন এক নারীর গর্ভে। খৃষ্টানগণ একজন নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া যীশুকে খোদা বলে। এ বিষয়টিও তারা ভাবলো না, খোদাকে যদি ৯ মাস মাতৃগর্ভে থাকতে হয় তবে এ বিশ্বকে সে সময় চালালো কে? কি অদ্ভুত অলীক মিথ্যা! অলীক মিথ্যাও যে কোটি কোটি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং কীরূপে তা বিবেকের মৃত্যু ঘটায় -এ হলো তারই নমুনা। অথচ সে অলীক ও সনাতন মিথ্যাই ধর্ম রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কয়েক শত কোটি হিন্দু ও খৃষ্টানদের মাঝে। কোটি কোটি মানব সন্তানের এ এক নিদারুন ব্যর্থতার দলিল।
মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির সামর্থ্য নিয়ে একজন পৃথিবীবাসী ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে সঠিক ধারণা করাই অসম্ভব। তিনি শুধু এ পৃথিবী ও তার সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত ও কোটি কোটি প্রাণীকূল ও উদ্ভিদকূলের স্রষ্টাই নন, লক্ষ কোটি নক্ষত্ররাজী, ধুমকেতু ও গ্রহ-উপগ্রহের স্রষ্টাও তিনি। অথচ যীশুর ন্যায় এক জন ক্ষুদ্র মানবকে তাঁর পুত্র বানানো হয়েছে। এ মিথ্যাটি এতোই জঘন্য ও ভয়ানক যে এতে রয়েছে আকাশ ফেটে যাওয়া, দুনিয়া বিদীর্ণ হওয়া ও পাহাড় ভেঙ্গে পড়ার ভয়াবহতা – মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা সেটিই বলেছেন পবিত্র কুর’আনের সুরা মরিয়মের ৯০ নম্বর আয়াতে। চেতনা রোগাগ্রস্ত হলে পাপ-পূণ্য, ন্যায়-অন্যায়, দুর্নীতি-সুনীতির ধারণাগুলিও পাল্টে যায়। বিশাল আকারের মিথ্যাও বলা হওয়াও তখন সহজ হয়ে যায়। রোগাগ্রস্ত চেতনার কারণেই সূদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতির ন্যায় হারাম কর্মও বাংলাদেশে সিদ্ধ আচারে পরিণত হয়েছে। ব্যাভিচারের পাপকে বৈধ দেহব্যবসা রূপে আইনগত বৈধতা দিয়ে পতিতাপল্লী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশের সরকার জনগণের জানমাল, ভোট, মানবাধিকার ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে কি হবে, সফল ভাবে পাহারা দিচ্ছে হাজার হাজার পতিতাপল্লী ও পতিতাদের দেহব্যবসাকে। এভাবে জনগণের রাজস্বের অর্থে আল্লাহতায়ালার ক্রোধ বাড়ানো হচ্ছে।
মানুষ নিদারুন ব্যর্থ হয়েছে শুধু আল্লাহকে জানতেই নয়, তার নিজের পরিচয়কে জানতেও। দেশে গবাদি পশুকে আপদ ভাবা হয় না। বরং সবাই তার বংশ-বিস্তার চায়। কারণ তাতে উপার্জন বাড়ে। কিন্তু সে মর্যাদা মানুষের নেই। নিজেদের কাছেই আপদে পরিণত হয়েছে খোদ মানব সন্তান। এভাবে মানব তার নিজের মূল্য নিজের কাছেই হারিয়ে ফেলেছে। ফলে লক্ষ লক্ষ মানব শিশু জন্মানোর আগেই শত্রু রূপে গণ্য হচ্ছে এবং এ্যাবরশনের নামে তাদের বিরুদ্ধে নীরবে গণহত্যা চলছে। এভাবে গণহত্যার মহোৎসব হচ্ছে। বিপুল অংকের দেশী-বিদেশী অর্থে পুষ্ট হয়ে অসংখ্য এনজিও কর্মী এ কাজে খুনীর বেশে গ্রামে গ্রামে ও মহল্লায় মহল্লায় নেমেছে। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় অমুসলিম দেশেগুলিতেও এ্যাবরশনের নামে এরূপ গণহারে মানব হত্যা। মানব শিশুর এরূপ গণহত্যার বিরুদ্ধে সেখানে প্রতিবাদ হয়। প্রবল আন্দোলনও হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালতে বিচারকদের মাঝে এ নিয়ে চিন্তাভাবনাও হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে সে সবের বালাই নাই। সরকার, বিচারক, জনগণ, মসজিদের ইমাম, আলেম, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব ভয়ংকর পাপের কথা জেনেও না জানার ভান করে। বরং এভাবে জনসংখ্যা কমানোতে অনেকেই প্রচণ্ড খুশি। ভাবে সংসার পালন, চাকুরি-বাকুরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ময়দানে আগামী দিনের প্রতিদ্বন্দী শত্রুদের নিধন করা হচ্ছে। ভ্রুণহত্যার নামে গণহত্যা এভাবে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে সরকারি নীতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে জন্ম নিচ্ছে না মায়ের পেটে জন্ম নেওয়া অসহায় শিশুদের বাঁচানোর পক্ষে আন্দোলন। একাজ যে জঘন্য হারাম -তা নিয়েও কারো কোন ভয়-ভাবনা নাই। জনগণ ইসলাম থেকে কতটা দূরে সরেছে –এ হলো তার প্রমাণ।
শিশুহত্যার পাশাপাশি খুনীদের হাত পড়ছে জীবিতদের গলায়ও। বেড়ে চলেছে গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের রাজনীতি। আগুন দেয়া হচ্ছে যাত্রীভর্তি বাসে। দিন-দুপুরে শত শত মানুষের সামনে পিটিয়ে মানুষ মারা হয়। উল্লাসভরে নাচা হয় মৃত লাশের উপর –যেমনটি হয়েছে ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর ঢাকার বায়তুল মোকাররামের উত্তরের রাজপথে। সেদিন ১২ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির খুনিরা। ভাংগচুর করা হয় আদালতে। ধর্ষণে উৎসবও হয়। কি সভ্যতা! বিপদের আরো কারণ, খুনি ও ধর্ষক ও সন্ত্রাসীদের বিচার না করাই সরকারের নীতি। যত্র তত্র আগুন লাগানোর আজাদী রয়েছে, কিন্তু আগুন থামানোর কোন উদ্যোগ নেই। এমন কি যে আগুন লাগায়, তাকে শাস্তি না দেয়াই সরকারি নীতি। এমন কি ভোটডাকাতদেরও শাস্তি হয়না। এবং এ অসভ্য নীতি নিয়েই চলছে বাংলাদেশ। এবং সেটির শুরু শেখ মুজিবের আমল থেকেই। শেখ হাসিনার কাজ হয়েছে শেখ মুজিবের জ্বালানো সে আগুনে লাগাতর ঘি ঢালা। ভয়ানক রোগটি এখানে চেতনার। দেহে রোগ ধরলে মানুষ ডাক্তারের কাছে ছুটে। কিন্তু চেতনায় যে ভয়ানক রোগ –সে রোগের চিকিৎসার আয়োজন কই? এভাবে ভয়ানক নৈরাজ্য বাড়ছে মানবের চেতনার ভূমিতে।
সম্পদের অভাবকে যারা সকল ব্যর্থতার কারণ বলেন -তাদের বিভ্রান্তিও কি কম? তাদের কথা, অভাব থেকেই স্বভাব নষ্ট হয়েছে। অথচ বাস্তব চিত্রটি বিপরীত। সবচেয়ে নষ্ট চরিত্র ও সবচেয়ে নষ্ট স্বভাব হলো বাংলাদেশের ধনীদের। দেশের অধিকাংশ ঘুষখোর, সূদখোর, মদখোর, ব্যভিচারি, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ ও ঋণখেলাফী এসেছে ধনীদের মধ্য থেকে। অথচ বহু অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি স্বভাব-চরিত্রে অতি উত্তম দৃষ্টান্ত রাখছে। কথা হলো দর্শন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রতি পদে যারা ব্যর্থ তারা কি সম্পদ সৃষ্টি করে? বরং তারা আনে দারিদ্র্য। সম্পদ মানুষের সৃষ্টি এবং এ জন্য চাই সৃষ্টিশীল মানুষ। এমন মানুষ গড়ে উঠে শুধু দেহের গুণে নয়, মনের গুণে। আর এমন মানবিক ভাবে বেড়ে উঠার জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষা ও দর্শন। অশিক্ষা, অপসংস্কৃতি ও দুর্নীতি একটি জনগোষ্টিকে শুধু সৃষ্টিহীনই করে না, ভয়ানক অনাসৃষ্টির জনকও করে। দারিদ্র্য ও দূর্ভিক্ষ এমন দেশের নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের বেলায় সেটিই হয়েছে। এদেশে দারিদ্র্য জন্ম নিয়েছে জনগণের নানাবিধ ব্যর্থতা থেকে। জাতীয় জীবনের ব্যর্থতাগুলি দারিদ্র্যের কারণে নয়। বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র দেশ হলো সিঙ্গাপুর। আয়তন মাত্র ২৪০ বর্গ মাইল। জনসংখ্যা ৪৫ লাখ। লোকসংখ্যায় ঢাকা শহরের তিন ভাগের এক ভাগ। প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বাংলাদেশের চেয়ে বহুগুণ বেশী। অথচ দেশটির বাৎসরিক বৈদেশিক রফতানি ৪৪১ বিলিয়ন ডলার (২০২০ সালের পরিসংখ্যান মতে)। অথচ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক রফতানি ছিল মাত্র ৪০.৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের তূলনায় সিঙ্গাপুরের রফতানী ১০ গুণেরও অধিক। সোনার খনি বা তেলের খনি নিয়ে সিঙ্গাপুর এ অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেনি। বরং এ সাফল্য এনেছে দেশটির সৃষ্টিশীল মানুষ। মানুষকে তারা আপদ ভাবেনি বরং সোনার বা তেলের খনির চেয়েও মহামূল্যবান ভেবে তাদের উন্নয়নে মনযোগী হয়েছে। প্রতিটি মানব সন্তানের উপর তাদের বিনিয়োগটি বিশাল। ফল দাঁড়িয়েছে, তাদের একজন ব্যক্তির একদিনের উৎপাদন ক্ষমতা বাংলাদেশের বহু হাজার মানুষের চেয়েও অধিক। অথচ জনগণের মাঝে অনুরূপ সৃষ্টির সামর্থ্য বাড়াতে বাংলাদেশে সে বিনিয়োগ হয়নি। বিনিয়োগ হচ্ছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, ফ্লাইওভার ও কারখানা নির্মাণে, উন্নত মানুষ নির্মাণে নয়। বরং কোটি কোটি এমন মানুষও আছে যাদের উপর সরকারের পক্ষ থেকে একটি পয়সাও বিনিয়োগ করেনি। বরং শাসক দলের গুণ্ডা রূপে গড়ে তুলার প্রয়োজনে তাদের চরিত্র ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ চরিত্র গড়লে তো চরিত্রবানদের নিজ দলের গুণ্ডা বানানো যায় না।
নাশকতা অসুস্থ্য দর্শনের
বাংলাদেশের অভাব সম্পদে নয়, সেটি দর্শন বা ফিলোসফিতে। অভাবটি এখানে নিজেকে, স্রষ্টাকে ও বিশ্বকে জানার সামর্থ্যে। হাত,পা, মাথা ও দৈহিক বল পশুরও থাকে। কিন্তু পশুর জীবনে দর্শন বা ফিলোসফি নাই। তাই সে ইতর। এবং এরূপ ইতর হওয়ার কারণেই কুকুর-শৃগাল রাস্তায় হানাহানি করে। তবে মানুষ পশুর চেয়েও অধিক ইতর হতে পারে। পশু গণহত্যা, গণধর্ষণ ও বর্ণগত নির্মূল করে না, কিন্তু মানুষ করে। সেটি হয় দর্শনের অভাবে। দর্শন দেয় ভাবনার সামর্থ্য, দেয় ভাল-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায় চেনার সামর্থ্য। পবিত্র কুর’আনে এরূপ ভাবনাশূণ্যদের পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। সে ইতর পর্যায় থেকে উপরে উঠার একমাত্র মাধ্যম হল ইলম বা জ্ঞান। এবং সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান হলো সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান। সে জ্ঞানের ভূমিতে ব্যক্তির জীবনে গড়ে উঠে বিশুদ্ধ দর্শন বা ফিলোসফি। ব্যক্তি বা জাতির জীবনে উত্থান ও বিজয় শুরু হয় এখান থেকেই। তাই যারা দেশ গড়তে চায় তারা মানুষের বিশ্বাসে বা দর্শনে হাত দেয়। ইসলামে জ্ঞানার্জন এ জন্যই ফরজ। দর্শনই মানুষকে যেমন নিজেকে জানতে শেখায়, তেমনি জানায় তার স্রষ্টা ও স্রষ্টার সৃষ্ট বিশ্বজগতকেও। তাই এই ক্ষেত্রটিতে অজ্ঞতা তথা অন্ধকার বিরাজ করলে পুরাটা জীবনটি অন্ধকারে কাটে। জ্ঞানীগণ তাই বলেন,‘‘মান আরাফা নাফসাহু, ফাক্বাদ আরাফা রাব্বাহু।’’ যে তার নিজেকে জানতে পেরেছে, সে তার প্রভূকেও জেনেছে।
বাংলাদেশের মানুষের বড় ব্যর্থতা এ ক্ষেত্রটিতে। আর এই ব্যর্থতা থেকেই জন্ম নিয়েছে অন্য অসংখ্য ব্যর্থতা। ইসলামের আগমনে আরবের ভূগোলে বা জলবায়ুতে পরিবর্তন আসে নি। মাটির তলায় সোনার খনি বা তেলের খনিও আবিস্কৃত হয়নি। পরিবর্তন আসেনি মানুষের দৈহিক আকার-আকৃতি বা অবয়বে। বরং বিপ্লব এসেছিল তাদের জীবন দর্শনে। পরিবর্তন এসেছিল চিন্তার মডেলে। সে পরিবর্তনের ফলে জীবন ও জগত নিয়ে মানুষের ধ্যানধারণাই পাল্টে গিয়েছিল। পরিবর্তন এসেছিল তাদের কর্মে ও আচরণে। সে পরিবর্তনের পথ ধরে পাল্টে গিয়েছিল মধপ্রাচ্যের ভূগোল, ভাষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি তথা সবকিছু। দর্শনের শক্তির কাছে পারমানবিক শক্তিও অতি তুচ্ছ। পারমানবিক শক্তি বলে আলোকিত হয় কিছু শহর, চালিত হয় কিছু কলকারখানা বা জাহাজ। অথচ দর্শন আলোকিত করে এবং পাল্টে দেয় কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জগত। পাল্টে দিতে পারে বিশ্বের মানচিত্র। ইসলামের দেওয়া দর্শনের বলেই নিঃস্ব আরবেরা বিশ্বের সুপার পাওয়ারে পরিণত হয়েছিল। পাল্টে দিয়েছিল তাদের সংস্কৃতি, রাজনীতি ও রুচিবোধ। ইসলামের পূর্বে আরবের মানুষ ভাবতো জীবনের শুরু ও শেষ ইহলোকেই, পরকাল বা বিচার দিন বলে কিছু নেই। ভাবতো, মৃত্যুর পর তাদের হাড্ডিমাংস মাটিতে মিশে যাবে এবং ধুলায় হারিয়ে যাবে চিরতরে। ফলে সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত করতো এ দুনিয়ার জীবনকে আনন্দময় করতে। বাংলাদেশে আজ যারা ঘুষ খায়, সূদ খায়, ব্যভিচারি করে বা এ্যাবরশন করে নিজ সন্তান হত্যা করে -তাদের মত আরবগণও সেদিন সন্ত্রাস করতো, মদ খেতো, ব্যভিচারি করতো, এমনকি নিজ সন্তানদেরকেও জীবন্ত করব দিত। কুর’আন তাদের সে জাহিলী অসভ্যতা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ চলছে উল্টো দিকে। তারা কুর’আন ছেড়ে জাহিলী অসভ্যতার গভীরে ডুবছে। এবং এভাবেই দুর্বৃত্তিতে তারা বিশ্ব রেকর্ড গড়ছে।
কুর’আনী দর্শনের শক্তি
যে দর্শনটি জাহেলী আরবদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল সেটি হলো পবিত্র কুর’আনের দর্শন। সে আমলে তারা গ্রহ-নক্ষত্রের পরিচয় না জানলেও তাঁরা নিজেদের পরিচয়কে জেনেছিলেন সঠিক ভাবেই। এবং সেটি জেনেছিলেন যিনি তাদের স্রষ্টা এবং স্রষ্টা সমগ্র বিশ্বজগতের ও সকল সৃষ্টিকূলের -সেই মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালার নিকট থেকে। এবং সেটি তাঁর দেয়া গ্রন্থ পবিত্র কুর’আন থেকে। সেটি মহান নবী করীম (সা:) মারফত। ফলে তারা সঠিক ভাবেই জেনেছিলেন, ইহকালীন এই স্বল্প কালের জীবনটি অনন্ত অসীম জীবনের শুরুর পর্ব মাত্র। এ জীবন শেষে যেমন পুরস্কার বা প্রমোশন আছে, তেমনি শাস্তি বা ডিমোশনও আছে। প্রমোশন ও ডিমোশন নির্ধারণে পরীক্ষাও আছে। দুনিয়ার এই জীবন মূলত সেই পরীক্ষাকেন্দ্র। পরীক্ষা নেওয়াটিই হলো ইহকালীন জীবনের মূল লক্ষ্য। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরীক্ষার সমাপ্তি হয়, তবে তাতে জীবনের সমাপ্তি ঘটে না। শুরু হয় ফলাফল ভোগের পালা। মহান আল্লাহতায়ালার সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে: “আল্লাযী খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়াতা লি ইয়াবলুয়াকুম আইয়োকুম আহসানা আমালা।” -(সুরা মুলক, আয়াত ১)। অর্থ: তিনি মৃত্যু ও জীবনকে এজন্য সৃষ্টি করেছেন যে তিনি পরীক্ষা করবেন তোমাদের মধ্যে কে আমলের দিক দিয়ে উত্তম। বস্তুত মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হলো কুর’আনের এ ঘোষণা। এটুকু জানা না হলে জীবনে সব জানাশোনাই ব্যর্থ হয়ে যায়। পরীক্ষার হলকে তখন শুধু নাট্যশালা, পানশালা বা কর্মশালা মনে হয়। মানুষ মত্ত হয় তখন ফূর্তিতে। কর্মজীবী, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী বা পেশাদার রূপে জীবনে সফল হওয়াটাই জীবনের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়। উপার্জন, আনন্দ-উল্লাস বা নিছক সময় কাটানোই বাঁচবার উদ্দেশ্য মনে হয়। জানাই হয় না যে, এ জীবন একটি পরীক্ষা কেন্দ্র মাত্র। পরকাল হলো ফলাফলের জায়গা। তখন নিদারুন অজ্ঞতা থেকে যায় কিসে সফলতা এবং কিসে বিফলতা -সে বিষয়েও। এ পরম সত্যটুকু জানাতেই নবী-রাসূলগণ এসেছিলেন। এবং সে সত্য নিয়ে তাদের উপর নাযিল হয়েছিল আসমানি কিতাব এবং সর্বশেষে এসেছিল পবিত্র কুর’আন।
পরীক্ষাকালে কেউ নাচগান, আমোদ-ফুর্তি করে না। অলস অবকাশে অনর্থক সময়ও কাটায় না। তখন প্রতি মুহুর্তের চেষ্টাটি হয়, পরীক্ষার খাতায় কি করে নাম্বার বাড়ানো যায়। সাহাবায়ে কেরাম এ জীবনকে পরীক্ষাপর্ব রূপে গ্রহন করেছিলেন বলেই তারা দিবারাত্র নেক আমলে ব্যস্ত থাকতেন। নেক আমলে তাড়াহুড়া ছিল তাদের সর্ব-অস্তিত্ব জুড়ে। পবিত্র কুর’আনেও সেটিরই তাগিদ এসেছে এভাবে: “সা’রিয়ু ইলা মাগফিরাতিম মির রাব্বিকুম” (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৩৩)। অর্থ: “তাড়াহুড়া করো তোমার রব থেকে মাগফিরাত লাভে।” কারণ, পরীক্ষার শেষ ঘন্টাটি যে কোন সময় বীনা নোটিশে বেজে উঠতে পারে। তাই সন্নাসী সেজে সমাজ-সংসার, অর্থনীতি-রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, দাওয়াত ও জিহাদের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ ইসলামে নেই। সাহাবায়ে কেরাম যেমন অবিরাম দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন, তেমনি রাজনীতি ও প্রশাসনে নেমেছেন। জ্ঞানচর্চা যেমন করেছেন তেমনি জিহাদেও নেমেছেন। তারা কর্মময় ছিলেন প্রতি ক্ষেত্রে। রাতে না ঘুমিয়ে অভাবী মানুষ খুঁজেছেন। খলিফা হয়েও পিঠে আটার বস্তা নিয়ে গরীবের ঘরে পৌঁছে দিতে ছুটেছেন। উটের পিঠে চাকরকে বসিয়ে নিজে পায়ে হেঁটে শত শত মাইল রশি টেনেছেন। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, মরুভূমি ও সাগর অতিক্রম করেছেন। যখন কাগজ-কলম আবিস্কৃত হয়নি তখনও তারা জ্ঞানচর্চায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তাঁরা প্রতিটি মুহুর্ত কাটিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার কাজে এবং পরকালের এ্যাকাউন্টে সঞ্চয় বাড়াতে। যখন প্রতিটি মানুষ জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে এরূপ সৃষ্টিশীল হয় তখন তো দেশে সমৃদ্ধি ও শান্তি আসবেই। উচ্চতর ও সভ্যতর সভ্যতা তো এভাবেই নির্মিত হয়।
বিকল পাওয়ার হাউস
ঈমানদারের কল্যাণধর্মী প্রতিটি কর্মই হলো ইবাদত। এগুলিই হলো নেক আমল। একমাত্র নেক আমলের মাধ্যমেই সঞ্চয় বাড়ে আখেরাতের এ্যাকাউন্টে। নেক আমল বৃদ্ধির লাগাতর চেষ্টায় সৃষ্টিশীল প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ পরিণত হয় শক্তিশালী পাওয়ার হাউসে। ঈমানদার কখনোই কর্মহীন ও অলস হতে পারে না। এজন্য দেশে প্রকৃত ঈমানদার বাড়লে দেশে উন্নয়নের প্লাবন আসে। অথচ সে পাওয়ার হাউস বিকল হলে, বিপর্যয় শুরু হয় জাতীয় জীবনে। জাতি তখন ভিক্ষুকে পরিণত হয়। প্রকৃত ঈমানদারের এ সৃষ্টশীলতা বলিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরেছেন আল্লামা ইকবাল তার ফার্সি কবিতায়। লিখেছেন: “হরকে উ’রা লিয্যাতে তাখলিক নিস্ত, পিশে মা জুজে কাফির ও যিনদিক নিস্ত।” অর্থ: “যার মধ্যে নাই সৃজনশীলতা, আমাদের কাছে সে কাফির ও নাস্তিক ভিন্ন অন্য কিছু নয়।” পবিত্র কুর’আনে বলা হয়েছে, ‘ওয়া লি কুল্লি দারাজাতিন মিম্মা আমিলু’ অর্থ: এবং মানুষের সকল মর্যাদা নির্ধারিত হবে তার কর্মের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ যার জীবনে কর্ম নেই, মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তার মর্যাদাও নেই। তাই ধর্মের লেবাসধারি কোন ব্যক্তির কর্মহীন পরগাছা জীবনটি আদৌ কোন দ্বীনদারি নয়, সেটিই হলো ধর্মহীনতা। বরং ঈমানের সাথে কর্মশীলতা বাড়বে –সেটিই তো স্বাভাবিক। অথচ বাংলাদেশে সেটি অতীতে যেমন হয়নি, এখনো হচ্ছে না।
মুসলিমকে প্রতি মুহুর্ত মহান আল্লাহতায়ালার যিকর নিয়ে বাঁচতে হয়। সেটি যেমন ইবাদতে, তেমনি পানাহারে, কর্মে ও বিশ্রামকালে। এভাবেই মু’মিনের জীবনে আল্লাহভীরুতা ও সততা আসে। মহান আল্লাহতায়ালার যে যিকর সূদ-ঘুষ বা হারাম থেকে বাঁচাতে পারে না -তাকে কি যিকর বলা যায়? মু’মিন ব্যক্তি শুধু উত্তম চাষাবাদ ও বীজই ছিটায় না, কাজের মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে রহমতও চায়। যুদ্ধে বিজয় চায় শুধু নামাজের জায়নামাযে নয়, বরং জিহাদের ময়দানে শত্রুর সামনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমে। সাহায্যদানের পূর্বে মহান আল্লাহতায়ালা বান্দাহর নিজের বিনিয়োগটি দেখতে চান। তাই তাঁর সাহায্য পেতে হলে নিজের বিনিয়োগ বাড়াতে হয়। বিশাল বিশাল শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলিমগণ তখনই বিজয়ী হয়েছেন যখন সে লক্ষ্যে তারা নিজেদের প্রাণ কুর’বানীতে দু’পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মুসলিমদের সে বিনিয়োগ দেখে মহান আল্লাহতায়ালা তাদের বিজয় বাড়াতে ফেরেশতা পাঠিয়েছেন। জিহাদ ছেড়ে স্রেফ জায়নামাযে যখন বিজয় চাওয়া শুরু হয়েছে, তখন থেকেই পরাজয় শুরু হয়েছে। সেরূপ বিনিয়োগহীন তথা জিহাদহীন দোয়া বনি ইসরাইলীদের জন্য আযাব নামিয়ে এনেছিল। তারা চেয়েছিল, তাদের ঘরে বিজয় এনে দিক খোদ মহান আল্লাহতায়ালা নিজে এবং তাঁর ফেরেশতারা। একই পথ ধরেছে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম। বিনিয়োগের বদলে তারা দোয়া করে, মহান আল্লাহতায়ালা যেন তাঁর নিজ শক্তি বলে শত্রুদের ধ্বংস করে দেন। তাদের নিজেদের ভূমিকা যেন শুধু দর্শকের। এরূপ দোয়া এমন কি আরাফতের ময়দানে দাঁড়িয়ে করলেও যে কবুল হয় না –সে প্রমাণ তো অনেক। বুঝতে হবে, ঈমানদারের কোন কর্মই দুনিয়াদারী নয়, বরং তার প্রতিটি কর্মই হলো নেক আমল। দুনিয়াদারী নয় তাঁর যুদ্ধবিগ্রহ, জ্ঞানার্জন, রাজনীতি, ব্যবসা-বানিজ্য, চাষাবাদ, শিক্ষকতা, চিকিৎসাবৃত্তি এবং লেখালেখি। পথের কাঁটা সরানো যেখানে উত্তম নেক আমল, সেখানে গলা থেকে বা সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে কাঁটা সরানোর চেষ্টা দুনিয়াদারী হয় কি করে?
মুক্তি কীরূপে?
ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরবের বিরান মরুভূমিতে যে বিশ্ব-শক্তির জন্ম হয়েছিল -সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে আজও সেটিই সর্বাধিক গৌরবের। সেটি সম্ভব হয়েছিল কয়েক লাখ সৃষ্টিশীল মানুষের কারণে। তাদের মাত্র একজনের যে রূপ সৃষ্টিশীল সামর্থ্য ছিল তা বাংলাদেশের একটি ইউনিয়নের সবগুলো মানুষের মাঝেও সৃষ্টি হয়নি। তারা শুধু সম্পদেই সমৃদ্ধি আনেননি, বিপুল সমৃদ্ধি এনেছিলেন মানবতায় ও জীবনদর্শনে তথা ফিলোসফিতে। আজকের দেড়শত কোটি মুসলিমের অর্জন সে তুলনায় অতি তুচ্ছ। ভ্যাকসিন যেমন যক্ষা বা কলেরা থেকে বাঁচায়, তেমনি কুর’আনী দর্শন দেয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইম্যুউনিটি বা প্রতিরোধশক্তি। দেয় চারিত্রিক বল। নির্মাণ করে নৈতিক মেরুদন্ড। নিছক কৃষি, শিল্প, পশু ও মৎস্যের চাষ বাড়িয়ে দর্শনের এ দারিদ্র্য দূর করা যায় না। অর্জিত হয় না চারিত্রিক সুস্থ্যতাও। এজন্যই বাংলাদেশে কৃষি বা শিল্প-উৎপাদন বাড়লেও ডুবছে দুর্নীতির প্লাবনে। ধ্বসে যাচ্ছে মেরুদন্ড। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পত্র-পত্রিকা ও মসজিদ-মাদ্রাসা এবং বুদ্ধিজীবীদের মূল কাজ ছিল দর্শনে সমৃদ্ধি আনা। প্রতিটি নর-নারীর উপর জ্ঞানার্জন ইসলামে ফরজ একারণেই। কারণ এর মাধ্যমেই ব্যক্তি পায় তাকওয়া এবং পুষ্টি পায় তাঁর রুহ বা আত্মা। নবীপাক (সা:) এজন্যই এক মুহুর্তের জ্ঞানার্জনকে সারা রাতের নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলেছেন। জ্ঞানীর কলমের কালীকে শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র বলেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া এজন্যই শ্রেষ্ঠ সাদকায়ে জারিয়া।
কিন্তু বাংলাদেশে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বিতরণের সে কাজটিই হয়নি। এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যর্থ খাত। চাষিরা ও শ্রমিকেরা ক্ষেতে খামারে ও কারখানায় যতটুকু অগ্রগতি এনেছে -সেরূপ অগ্রগতি বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ে ও বুদ্ধিবৃত্তিতে আনতে পারেননি। মসজিদ-মাদ্রাসা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দেশে প্রচুর বেড়েছে। বেড়েছে শিক্ষিতের হার। কিন্তু জনগণের মন সমৃদ্ধ হয়নি সুস্থ্য দর্শনে। ফলে বাড়িনি চারিত্রিক বল। শিক্ষালাভ ঈমানদারের জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামাজ-রোজার আগে এ ইবাদতকেই প্রথম ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু যে শিক্ষা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও পাপাচার বাড়ায় -তাকে কি ইবাদত বলা যায়? এটি তো পাপাচার। অথচ বাংলাদেশে শিক্ষাদানের নামে সেটিই হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের মূল পাঠটিও শেখাতে পারিনি। ফলে বেড়ে উঠেনি নৈতিক মেরুদন্ড-সম্পন্ন সাহসী সৈনিক যারা দেশকে দুর্বৃত্তমূক্ত করবে এবং গড়বে সৃষ্টিশীল রাজনীতি। বরং কুশিক্ষা দেশকে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি ও সন্ত্রাসের ক্ষেত্র রূপে ভাবতে শিখিয়েছে। শিক্ষাঙ্গণ থেকে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য দুর্বৃত্ত -যারা দখল জমিয়েছে দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, আদালত, পুলিশ বাহিনী, সেনা বাহিনী, অর্থনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ সর্বক্ষেত্রে। আজ বাংলাদেশে যেরূপ গুম, খুন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির প্লাবন –তার জন্য দায়ী কিছু ব্যক্তি নয়, বরং দায়ী এরা সবাই।
দুর্বৃত্তি ও ব্যর্থতা প্লাবনের পানির ন্যায সর্বস্তরে ছেয়ে গেছে। ভ্রষ্টতার শিকার আলেম সম্প্রদায়ও। মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়ত প্রতিষ্ঠার রাজনীতি ফরজ। সে ফরজ পালনে অর্থদান, শ্রমদান এমনকি জীবন দানে এগিয়ে এসেছেন প্রতিজন সাহাবী। অথচ সে জিহাদের রাজনীতিকে বহু আলেম দুনিয়াদারী বলছেন। এবং দ্বীনদারি বলছেন দুর্বৃত্ত শক্তির সাথে আপোষ, সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান। ফলে দেশ সর্বার্থেই বিপর্যের পথে। এ ব্যর্থতার জন্য অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। যে দেশবাসী নিজেরাই আত্মহননের পথে ধেয়ে চলছে সে দেশের বিনাশে কি বিদেশী শত্রুর প্রয়োজন আছে? এমূহুর্তে বাঁচতে হলে প্রথম বাঁচতে হবে ভ্রান্ত পথে চলা থেকে। ফিরতে হবে জীবনের মূল পাঠের দিকে –যার ছবক মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নবী-রাসূলদের মারফত মানব জাতিকে বার বার দিয়েছেন। সেটি হলো পবিত্র কুর’আনের পথ। সে জন্য কু’রআন বুঝা সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। সে পথই আত্মাবিনাশী আরবদের বিশ্বশক্তির মর্যাদা দিয়েছিল। এটিই একমাত্র পরীক্ষিত সফলতার পথ। তাই একমাত্র এ পথটিই আত্মহনন থেকে বাঁচাতে পারে আজকের বাংলাদেশীদের। পবিত্র কুর’আনের পথ ছাড়া বাঁচার ও বেড়ে উঠার বিকল্প পথ আছে –সেটি বিশ্বাস করলে কেউ কি মুসলিম থাকে? ২২/১২/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018