দুর্বল থাকার আযাব ও শক্তিবৃদ্ধির ফরজ দায়ভার

ফিরোজ মাহবুব কামাল

দুর্বলের পাপ

 দুর্বল থাকা ভদ্রতা নয়। কোন মহৎ গুণও নয়। এটি শুধু অযোগ্যতাই নয়, বরং রুচিহীনতা, আত্মসন্মানহীনতা এবং কাপুরুষতাও। দেশে দুর্বল মানুষের সংখ্যা বাড়লে পরাজয় ও অসম্মানের পাশাপাশি বিপদগ্রস্ত হয় ইজ্জত-আবরু নিয়ে বেঁচে থাকাটিও। শক্তি নিয়ে বাঁচার মধ্যেই ব্যক্তির আত্মসন্মান ও বিবেকবোধ ধরা পড়ে। তখন বাড়ে জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা। কারণ, বন-জঙ্গলের চেয়েও বিপদজনক হলো এ মনুষ্য জগত। হাজার হাজার টন বোমা বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত বা পশুপাখির মাথায় নিক্ষিপ্ত হয় না, হয় ঘনবসতি পূর্ণ জনপদে। যেটি সম্প্রতি হয়েছে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান ও চেচনিয়ায়। বন-জঙ্গলে পাখির বাসার বা পশুর গুহায় কেউ আগুন দেয় না। সেখানে কেউ পশুকূলের নির্মূলেও নামে না। কিন্তু মানব গৃহে আগুন দেয়া হয় এবং জাতিগত নির্মূলের চেষ্টাও হয় –এরই উদাহরণ হলো মায়ানমার, ভারত ও শ্রীলংকার মুসলিম মহল্লা। তাই নিরাপত্তা নিয়ে বাঁচতে হলে বাঁচবার যথাযোগ্য প্রস্তুতিও চাই।

মানবের বুদ্ধি-বিবেক ও পেশীশক্তি নিছক উপার্জন বাড়ানোর জন্য নয়; বরং জীবন ও ইজ্জত বাঁচানোর জন্যও। তাই যাদের আত্মমর্যাদা আছে তারা শুধু উপার্জন ও পানাহার বাড়ায় না, প্রতিরক্ষাতেও গভীর মনযোগী হয়। শুধু ঘর গড়ে না, ভিটায় মজবুত দেয়ালও দেয়। শুধু চাষাবাদ বা ব্যবসা-বাণিজ্যই করেনা, যুদ্ধও করে। সে যুদ্ধে নিজের অর্থ ও জানের কোরবানীও পেশ করে। মুসলিম মাত্রই মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক। তার সৈনিকগণ দুর্বল হবে এবং যুদ্ধে পরাজিত হবে –সেটি তাঁর আদৌ কাম্য নয়। তাই তাঁর সৈনিকের শক্তিবৃদ্ধির বিষয়টিকে মহান আল্লাহতায়ালার অতি গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রমাণ পবিত্র কোর’আনের এ ঘোষণায়: “ওয়া আয়িদ্দুউলাহুম মাস্তাতা’তুম মিন ক্বুউওয়াতিঁও ওয়া মিন রিবাতিল খাইলি তুরহিবুনা বিহি আদু’আল্লাহি ওয়া আদু’ওয়াকুম ওয়া আখারিনা মিন দু’নিহিম লা তা’লামুনাহুম আল্লাহু ইয়ালামুহুম… ” (সুরা আনফাল, আয়াত ৬০) অর্থ: “এবং (শত্রুদের মোকাবেলায়) নিজেদের প্রস্তুত করো সকল শক্তি দিয়ে যা তোমাদের সামর্থে কুলায় এবং প্রস্তুত করো ঘোড়া তথা যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র ও উপকরণ এবং তা দিয়ে ভয় সৃষ্টি করো আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুদের মনে এবং তাদের মনে যাদের তোমরা জানোনা, কিন্তু আল্লাহ তাদের জানেন.. ।”

মহান আল্লাহতায়ালার উপরুক্ত ঘোষণাটি এসেছে নির্দেশের ভাষায় –যেরূপ দেয়া হয় সৈনিকদের। আর রাব্বুল আলামীনের প্রতিটি হুকুম পালন করা ফরজ তথা বাধ্যতামূলক। ফলে প্রতিরক্ষার কাজে সর্বশক্তি দিয়ে প্রস্তুত না থাকাটি হলো মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত উপরুক্ত নির্দেশের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ। ইসলামে এটি কুফর। এবং এটি মহাপাপ। আর প্রতিটি পাপই তো আযাব ডেকে আনে। তখন সে মহাপাপের শস্তি পেতে হয় জান-মাল, স্বাধীনতা ও ইজ্জত খুইয়ে। ১৭৫৭ সালে বাংলার মুসলিমগণ সে শাস্তি পেয়েছিল ১৯০ বছরের জন্য ব্রিটিশের গোলাম হয়ে। কারণ, সেদিন তারা ব্যর্থ হয়েছিল স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব পালনে। অক্ষম হয়েছিল সামরিক ভাবে শক্তিশালী হতে। মুসলিমগণ আজ যেভাবে জালেমের হাতে নিহত, আহত ও লুণ্ঠিত হচ্ছে এবং মুসলিম দেশগুলি যেভাবে একের পর এক অধিকৃত হচ্ছে -তার মুল কারণও হলো শক্তিহীনতা। তাদের নাই প্রতিরোধের সামর্থ্য। মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে বিপুল জনসম্পদ ও সম্পদ দিয়েছেন। কিন্তু সে নেয়ামতগুলোকে তারা কাজে লাগায়নি। সম্পদকে শুধু ভোগ-বিলাসেই কাজে লাগিয়েছে, প্রতিরক্ষায় নয়। ফলে দেহে মেদ বাড়লেও, বেড়েছে শক্তিহীনতা। ফলে ডেকে এনেছে দুর্বল থাকার আযাব।

 

দুর্বলতায় যে আযাব আনিবার্য

 বাস্তবতা হলো, বিশ্ব পরিস্থিতি দুর্বলের পক্ষে নয়। পরাজয়, প্রাণনাশ ও দুর্ভোগকে সবসময়ই শক্তিহীনের জন্য তার নিজ হাতের কামাই মনে করা হয়। নেকড়ে ভেড়া ধরলে তাই তা নিয়ে প্রতিবাদ হয়না। তেমনি নিন্দাবাদ হয় না দুর্বল দেশের উপর মার্কিন, রুশ, চীন, ভারত বা ইসরাইলী জবরদখলের বিরুদ্ধে। সবলকে সমীহ করাই এ বিশ্বের রীতি। হাজার হাজার টন বোমা ফেলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায়। ১০ লাখেরও বেশী মানুষের হত্যা করা হয়েছে; বহু লক্ষ মানুষকে উদ্বাস্তু করা হয়েছে। চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনী পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। ধ্বংস করা হয়েছে দক্ষিণ লেবাননকে। ধ্বংসকাজ চলছে ফিলিস্তিনে। গণহত্যা চলছে কাশ্মীরে। গণহত্যা হলো মিয়ানমারে। এসব নৃশংস বর্বরতার প্রতিরোধ দূরে থাক, মৌখিক নিন্দা করার সামর্থ্যও জাতিসংঘের নেই। বরং জাতিসংঘের কাজ হয়েছে এগুলিকে ন্যায্যতা দেয়া। ফলে ফিলিস্তিন ব্রিটিশদের হাতে অধিকৃত হলো, আদিবাসী ফিলিস্তিনীগণ নিহত বা নির্বাসিত হলো এবং অধিকৃত ভূমিতে যখন ইসরাইল নামের একটি অবৈধ রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত দেয়া হলো এবং সে অবৈধ রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ স্বীকৃত দিল। এ হলো ইতিহাস। একই ভাবে মার্কিন বাহিনীর হাতে আফগানিস্তান ও ইরাক অধিকৃত হওয়ার পর জাতিসংঘ সেখানে গেছে আফগান ও ইরাকীদের পোষ মানাতে। তাই ইজ্জত ও জানমালের নিরাপত্তার বিষযটি কখনোই ভিক্ষার সামগ্রী নয, বরং শক্তিবলে অর্জনের বিষয়। শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠা এ জন্যই এতো গুরুত্বপূর্ণ।  

খুনীকে খুনী বলা, হানাদারকে হানাদার বলতে যে ন্যূনতম মূলবোধ, বিবেকবোধ ও নৈতিকতা লাগে সেটি জাতিসংঘের মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর নাই। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট, ইসরাইল বা রাশিয়ার ন্যায় বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্য খুনী রাষ্ট্রগুলো জাতিসংঘের ফোরামে নিন্দিত না হয়ে বরং নন্দিত হয়। তাছাড়া জাতিসংঘ নিজেই বহু হত্যাকান্ডের নায়ক। বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে বসনিয়ার সেব্রেনিৎসা নগরিতে জাতিসংঘের দায়িত্বশীলেরা নিজেদের ক্যাম্প থেকে ৭ হাজার মুসলিমকে সার্বখুনীদের বাসে তুলে দিয়েছিল। সার্বরা তাদেরকে বধ্য ভূমিতে নিয়ে হত্যা করে। এতবড় হত্যা কান্ডের জন্য সার্ব খুনীদের কোনরূপ গোপন পরিকল্পনা করতে হয়নি। প্রয়োজন বোধ করেনি সে বর্বর কান্ডটি রাতের আঁধারে করার। জাতিসংঘের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল কফি আনানসহ জাতিসংঘের বহু কর্তা ব্যক্তি তখন বসনিয়ায় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্ত তাঁরা নিরীহ মানুষ বাঁচাতে কোন দায়িত্বই পালন করেননি। যেমন করেনি ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, চেচনিয়াসহ বিশ্বের কোনে কোনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যাগুলোর প্রতিরোধে।

 

দুর্বলের দুর্বলতায় বাড়ে শত্রুর নৃশংসতা

মজলুমের দুর্বলতা জালেমের মনে করুণা জাগায় না, বরং নৃশংসতা বাড়ায়। দূর্বল ও প্রতিরক্ষাহীন থাকার বিপদ যে কতটা নৃশংস রূপ নিতে পারে সেটির প্রমাণ মেলে থাইল্যান্ডে সংঘটিত একটি হত্যাকান্ডে। সেটি ঘটেছিল সেদেশের অসহায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর ৮৪ জন নিরীহ ও নিরস্ত্র থাই মুসলিমকে অতি নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়। জঘন্যতার বিচারে শুধু হত্যাকান্ডটিই নিষ্ঠুর ছিল না, বরং অতিশয় নিষ্ঠুর ও নৃশংস ছিল হত্যাকান্ডের প্রক্রিয়াটি। প্রায় ২ হাজার ছাত্রকে পিঠমোড়া করে হাত বেঁধে রাস্তায় উপুড় করে ঘন্টার পর ঘন্টা থাই পুলিশ লাথিয়েছে ও পিটিয়েছে। তারপর আধমরা করে আটার বস্তার ন্যায় গাদাগাদি করে ট্রাকে সাজিযেছে। ৬ ঘন্টার যাত্রা পথে দমবন্ধ হয়েই তারা মারা গেছে। তারা কাউকে খুন করেনি, কোথাও আগুন দেয়নি, ভাঙ্গচু্রও করেনি। তাদের অপরাধ, গ্রেফতারকৃত মুসলিম নেতাদের মূক্তি দাবি করেছিল।

পশুর সাথেও মানুষের আচরণ এতটা নিষ্ঠুর হয়না। এমনকি খুনী বা ডাকাতগণও এরূপ বর্বরতা প্রকাশ্য দিবালোকে করতে লজ্জাবোধ করে। কিন্তু সেটি করেছে থাই পুলিশ; এবং সেটি করেছে টিভি ক্যামেরার সামনে। সেটি করেছে রীতিমত স্পোর্টসরূপে। সেসবের ছবিও ছাপা হয়েছে। অসভ্যতা ও অপরাধপ্রবনতার এ হলো এক লোমহর্ষক বর্বরতা। থাই পুলিশ এরূপ বর্বরতায় সাহস পেয়েছে এজন্য যে, থাই মুসলিমদের প্রতিরোধের সামর্থ্য নাই; তারা যেমন দুর্বল তেমনি নিরস্ত্র। মজলুমের দুর্বলতা জালেমকে যে কতটা নির্দয় ও নৃশংস করে এ হলো তার নমুনা। অবাক করার বিষয় হলো, এরূপ বর্বর চিত্র টিভিতে দেখানোর পরও জাতিসংঘ বা অন্যদেশ দূরে থাক, খোদ মুসলিম দেশগুলোতেও এ নৃশংসতার বিরুদ্ধে কোনরূপ প্রতিবাদ হয়নি। রাজ পথে মিছিলও হয়নি।

 

মড়ক চেতনায়

অথচ মজলুমের বিপদে সাহায্য করা কোন চ্যারিটি বা সমাজকর্ম নয়। এটি প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ: “তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা যুদ্ধ করোনা আল্লাহর রাস্তায় এবং তাদের জন্য যারা দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশু; যারা ফরিয়াদ তুলছে এ বলে, হে আমাদের রব জালেম-অধিকৃত এ জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিন এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে পাঠান অভিভাবক ও সাহায্যকারী।” –(সুরা নিসা, আয়াত ৭৫)। প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার এ নির্দেশ কি মুসলিম মনে আদৌ কোন সাড়া জাগায়? সাড়া জাগলে তো মুসলিম দেশগুলোর রাজধানীতে থাই সরকারের বিরুদ্ধে অন্ততঃ লাখ লাখ মানুষের প্রতিবাদ মিছিল হ্তো। ভারতের গুজরাতে যেভাবে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হলো এবং শত শত মুসলিম নারীকে ধর্ষণ করা হলো -তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ হতো। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, মড়ক লেগেছে মুসলিমের চেতনার ভূমিতে। মুসলিম উম্মাহ যে আজ কতটা প্রাণহীন -এটি হলো তারই প্রমাণ। কারণ মৃত দেহে আগুণ দিলেও তাতে সাড়া জাগে না। অথচ কোন অমুসলিম নাগরিক মুসলিম দেশে সহিংসতায় আহত হলে বা মারা গেলে সমগ্র বিশ্ব তাতে তক্ষনাৎ সোচ্চার হয়।

প্রশ্ন হলো, দুর্বৃত্ত কবলিত এ বিশ্বে নিজেদের বাঁচাতে মুসলিমগণ নিজেরা কি করেছে? কোনকালেই এ বিশ্ব জালেমমূক্ত ছিল না। এ যুগের জর্জ বুশ, টনি ব্লেয়ার, ভ্লাডিমির পুটিন ও নেতিয়ানহুর ন্যায় অতীতেও বহু আবু লাহাব, আবু জেহেল, নমরুদ ও ফিরাউন ছিল। মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের অনুসারিদেরকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র যেমন অতীতে হয়েছে, তেমনি আজও হচ্ছে। জুলুমের বিরুদ্ধে ইসলামেরও নিজস্ব স্ট্রাটেজী রয়েছে। ইসলাম জালেমের কাছে আত্মসমর্পণ শেখায় না, শেখায় প্রতিরোধ। তাই কোর’আন শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতের তাগিদই দেয় না, জিহাদের হুকুমও দেয়। অতীতে মুসলিমগণ শুধু নামাযী, রোযাদার, হাজী ও দ্বায়ীই শুধু সৃষ্টি করেনি; মোজাহিদ এবং শহিদও জন্ম দিয়েছে। নেকড়ের দয়ার উপর ভরসা করে প্রাণ বাঁচে না। সভ্যতা নির্মানে তাই শুধু কৃষি, শিল্প, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা ও সংস্কুতিই গুরুত্বপূর্ণ নয়, অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো সামরিক শক্তি। শক্রর হামলা থেকে বাাঁচার এ ছাড়া ভিন্ন পথ নেই। হামলার মুখে লড়াই এজন্যই ইসলামে ফরয। এবং রণাঙ্গণ থেকে পলায়ন করা হারাম।

প্রতিরক্ষায় অমনযোগী হলে মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ গড়েও জানমাল বাঁচে না। হালাকু-চেঙ্গিজের হাতে যখন বাগদাদ ধ্বংস হয় এবং নিহত হয় বহু লক্ষ মুসলিম – মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা তখন কম ছিল না। তেমনি স্পেনের মুসলিমগণ যখন গণহত্যার শিকার হয় তখনও সেখানে মসজিদ মাদ্রাসা কম ছিল না। কিন্তু তাতে মুসলিমদের জানমাল ও ইজ্জত-আবরু বাঁচেনি। সামরিক শক্তির বিকল্প সামরিক শক্তিই। তাই সাহাবায়ে কেরাম যেমন নামায-রোযায় কাটিয়েছেন তেমনি অস্ত্র শান দিয়ে যুদ্ধেও নেমেছেন। পবিত্র কোর’আন মুমিনের সে বিশেষ গুণের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এ ভাষায়: “ফা ইয়াকতুলুনা ও ইয়ুকতালুন।” অর্থ: “তারা নিজেরা যেমন হত্যা করে তেমনি নিহতও হয়।”

           

খেয়ানত আমানতের

মুসলিমগণ পঙ্গু নয়। আকার-আকৃতি, শারীরিক বল, মগজ কোনদিক দিয়েই কাফেরদের থেকে তাদের কম দেয়া হয়নি। কম দেয়া হয়নি প্রাকৃতিক সম্পদও। বরং প্রাকৃতিক সম্পদে অতি সমৃদ্ধ হলো মুসলিমগণ। তেল, গ্যাস, টিন, রাবার, ইউরেনিয়াম, তুলা, গমসহ নানা প্রাকৃতিক ও কৃষি-সম্পদের বৃহৎ অংশ উৎপাদিত হয় মুসলিম দেশগুলোতে। বিশ্বের সর্বাধিক সৌর শক্তিও রয়েছে তাদের হাতে -যা অচিরেই শক্তির অতি গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হবে। মুসলিম বিশ্বের তেলে শুধু গাড়ীই চলে না, বিশ্বের অর্থনীতিও চলে। তেলের মূল্য বাড়লে তাই মন্দা দেখা দেয় বিশ্ব-অর্থনীতিতে। তাদের আরেক সম্পদ রাবারও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গাড়ি, বিমান ও সামরিক যানের টায়্যার এ ছাড়া নির্মিত হয় না। তাদেরই রয়েছে সর্বাধিক জনশক্তি, তথা আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। পরিচর্যা পেলে যাদের প্রত্যেকে তেলের বা সোনার খনির চেয়েও মূল্যবান হতে পারে।

জনশক্তির অভাবে মার্কিনীদের যেরূপ পার্টনার খুঁজতে হয় -সে সমস্যা মুসলিমদের নেই। তারা ছড়িয়ে আছে বিশ্বের সর্বত্র। মুসলিম দেশে মার্কিন বসতি নেই। অথচ কুয়েত, কাতার ও জর্দানের ন্যায় কয়েকটি রাষ্ট্রের সমুদয় জনসংখ্যার চেয়ে বেশী মুসলিম বাস করে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে। মুসলিম দেশে ইউরোপীয় বসতিও নেই। অথচ আফগানিস্তানের জনসংখ্যার সমান সংখ্যক মুসলমান রয়েছে ইউরোপে। মুসলমান রয়েছে এমনকি দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও চীনে। তেমনি বাংলাদেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশী মুসলমান রয়েছে ভারতে। মুসলিম দেশগুলোর ভূগোলসংলগ্ন হলো সুয়েজ, বসফরাস, জিব্রাল্টার ও মালাক্কা জলপথের ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যপথ। বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে এগুলি গুরুত্বপূর্ণ।

মুসলিমদের প্রাকৃতিক সম্পদ, জনশক্তি ও ভৌগলিক অবস্থান – এর সবগুলোই হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিশেষ আমানত। আর সর্বশ্রেষ্ঠ আমানত হলো পবিত্র কোর’আন। এ আমানতের দায়িত্ব পালনই মুসলিমদের সবচেয়ে বড় কাজ। নিছক মানুষ হওয়ার কারণে নয়, বরং এ দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার কারণেই মুসলিম পেয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার মর্যাদা। আরবী ভাষায় সম্পদের হেফাজত বা ওয়াদাপালনের অঙ্গিকারকে বলা হয় আমানত। এবং এর বিপরীত হলো খেয়ানত। আরবীতে খেয়ানতকারিকে বলা খা’য়েন বা গাদ্দার। বাংলা অর্থ হলো বিশ্বাসঘাতক। আল্লাহর উপর ঈমান আনার অর্থ: মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশালী পালনেও অঙ্গিকারবদ্ধ হওয়া। মু’মিনের প্রকৃত আমানতদারি হলো এটি। এবং এ আমানতদারি আল্লাহর রহমত বয়ে আনে। এবং  খেয়ানত আনে আযাব। অথচ মুসলিমগণ ইতিহাস গড়েছে খেয়ানতে। যে বিপুল আমানত তাদের দেয়া হয়েছে সেগুলো তার মুসলিমদের সামরিক শক্তি বাড়াতে কাজে লাগায়নি। বরং তা দিয়ে তারা শক্তি বাড়িয়েছে শত্রুদের। যেমন সৌদি আরবের তেল নিয়ে ব্যবসা করছে মার্কিন তেল কোম্পানীগুলো।

আমানতের দায়িত্ব পালনে হযরত মূসা (আঃ)কে ফিরাউনের দরবারে যেতে হয়েছিল। আজকের ফিরাউনদের চেয়ে সে আমলের ফিরাউন কম নিষ্ঠুর ছিল না। ইহুদীদের প্রতিটি পুরুষ শিশুকে সে হত্যা করতো এবং মহিলাদের দাসী বানাতো। সে নিজেকে খোদা বলে দাবী করতো। এমন নিষ্ঠুর জালেম শাসকের সামনে আল্লাহর ফরমান নিয়ে হাজির হওয়াই ছিল বিপদজনক। একালের ন্যায় সেকালের ফিরাউনের সামনে কথা বলতেও মানুষ ভয় পেত। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পালনে হযরত মূসা (আ:) শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত রেখেছেন। মহান আল্লাহপাক তাঁর সাহসিকতায় এতই মুগ্ধ হয়েছেন যে সেটিকে শিক্ষানীয় করতে পবিত্র কোর’আনে তাঁর কাহিনীকে বার বার বর্ণনা করেছেন। এ আমানতদারির পুরস্কার স্বরূপ তাঁকে ও তাঁর কওমকে বাঁচাতে আল্লাহপাক সাগরকে বিভক্ত করে মাঝখান দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছেন এবং ডুবিয়ে হত্যা করছেন ফিরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে। অপর দিকে আল্লাহতায়ার বাণী পৌঁছে দেওয়ার কাজ থেকে পিছু হটার কারণে নবী হয়েও মাছের পেটে ডুকতে হয়েছিল হযরত ইউনূস (আ:)কে।

সাহাবায়ে কেরামও আমানতের দায়িত্ব পালনে নিজেদের সকল সামর্থ্য বিনিয়োগ করেছিলেন। তাদের বিনিয়োগ দেখে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের বিনিয়োগটিও বাড়িয়েছিলেন। তাঁদের সাহায্য করতে নেমে এসেছিলেন অসংখ্য ফেরেশতা।  আরবের দরিদ্র ও মুষ্টিমেয় মুসলিমগণ সেকালের বিশাল বিশাল আরব, রোমান ও পারসিক বাহিনীর উপর বিজয়ী হয়েছেন তো সে সাহায্যের বলেই। আজও বিজয়ের ভিন্ন পথ আছে কি? মুসলিমগণ যখনই আল্লাহতায়ালার উপর ভরসা না করে নিজ সামর্থ্যের উপর ভরসা করেছে তখনই পরাজিত হয়েছে। তাই পাকিস্তানের বিশাল সেনাবাহিনী ও আনবিক বোমা তাদের ইজ্জত বাড়াতে পারেনি। বরং পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্টের কাছে আত্মসমর্পণকারি একটি দেশে। মার্কিনীদের নির্দেশে দেশটির সরকার নিজ দেশের নিরীহ নাগরিকদের তুলে দিয়েছে মার্কিনীদের হাতে। তেমনি মিশর, সিরিয়া, জর্দানের সম্মিলিত বাহিনী অতীতের যুদ্ধগুলোতে ইসরাইল-অধিকৃত একইঞ্চি ভূমিও উদ্ধার করতে পারিনি। অথচ গাজার ও দক্ষিণ লেবাননের ক্ষুদ্র জনগোষ্টি ইসরাইলকে পিছু হটতে বাধ্য করছে।

 

সাহায্যের পথ ও আযাবের পথ

মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য লাভে যেটি অপরিহার্য সেটি জনসংখ্যা বা সৈন্যসংখ্যা নয়, বরং সেটি খালেস নিয়ত ও আত্মবিনিয়োগ। এবং ঈমানদারের সে বিনিয়োগই মহান আল্লাহতায়ালার বিনিয়োগকে আসমান থেকে নামিয়ে আনে। জাতীয়তাবাদী বা বর্ণবাদী যুদ্ধে সেটি হয় না। কারণ, মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর দ্বীনের তরে আত্মদানকারিদেরকে সাহায্য করতে ওয়াদাবদ্ধ, কোন দেশের পতাকা, মাটি বা ভূগোলের জন্য নয়। মুসলিমদের পরাজয়ের শুরু তখন থেকেই যখন তারা মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের স্বার্থ ভূলে গোত্র, বর্ণ ও ভূগোলের জন্য লড়তে শুরু করেছে। এবং সে লক্ষ্য আর্জনে কাফেরদের সাথে আঁতাত গড়েছে।

যে কারণে হযরত ইউনূস (আ:) মাছের পেটে ঢুকেছিলেন, সেই অভিন্ন কারণে প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্বই আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেটে। তেল ও গ্যাসশিল্পই শুধু নয়, মুসলিম বিশ্বের অর্থনীতি, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সামরিক ও বেসামরিক প্রায় সকল স্থাপনা আজ মার্কিনীদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে নিজ দেশের উপর প্রতিষ্ঠিত মার্কিন প্রভাব থেকে মূক্ত হওয়ার সামর্থ্য নাই সৌদিআরব, মিশর, আমিরাত, কাতার, কুয়েত বাহরাইন, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, উযবেকিস্তান, তাযাকিস্তান ও পাকিস্তানসহ কোন মুসলিম দেশেরই। এমন কি এসব দেশগুলির সামর্থ্য নাই কোর’আন-সূন্নাহর আলোকে শিক্ষা ও আইন প্রণয়নের। অধিকার নেই স্বাধীন বানিজ্য নীতি বা পারমানবিক প্রকৌশল উন্নয়নের।

গোলামকে যেমন সবকিছূ মনিবের খেয়ালখূশী অনুযায়ী করতে হয়, তেমনি অবস্থা মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের। মুসলিমদের উপর এটিই হলো সবচেয়ে বড় আযাব। এ আযাব সবল রূপে বেড়ে না উঠার। এমন আযাব বনি ইসরাইলীদের জীবনেও এসেছিল যখন তারা মহান আল্লাহতায়ালার রাস্তায় যুদ্ধ করা থেকে বিরত থেকে আব্দার ধরেছিল মহান আল্লাহতায়ালা যেন নিজেই তাদের জন্য যুদ্ধ লড়ে দেশ শত্রুমূক্ত করে দেন। তাদের এ আচরণই তাদের উপর মহাআযাব ডেকে এনেছিল। শত শত বছর যাবত তাদেরকে নানা দেশের নানা পথে ঘুরতে হয়েছিল। প্রশ্ন হলো, আজকের মুসলিমদের আব্দারও কি তা থেকে ভিন্নতর?

মুসলিমগণ নিহত হচ্ছে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মায়ানমার, ভারত ও কাশ্মীরে। এককালে মুসলিমগণ জালেমের নির্যাতন থেকে হিন্দুদের বাঁচাতে যুদ্ধ করেছেন। যেমন মহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধুতে যুদ্ধ করেছেন রাজা দাহিরের বিরুদ্ধে। অথচ মুসলিম শাসকেরা আজ মজলুম মুসলিমদের সাহায্য না করে সাহায্য করছে হানাদারকে। মার্কিন অর্থনীতি বাঁচাতে সৌদি আরবসহ বহু আরব রাষ্ট্র তেলের উৎপাদন বার বার বাড়িয়েছে। হানাদার সৈনিকদের নিরাপত্তা বাড়াতে নিজ দেশে ঘাঁটি বানানোর অনুমতিও দিয়েছে। অথচ ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক ও ফিলিস্তিনের পুষ্টিহীন শিশুদের বাঁচাতে তাদের উদ্যোগই নেই। যারা নামাযী তারাও কর্মকান্ড সীমিত রেখেছে নিছক দোয়ার মধ্যে। তাদের দোয়া, মহান আল্লাহতায়ালা যেন ফিরেশতা পাঠিয়ে অধিকৃত ভুমিকে উদ্ধার করে দেন এবং পরাজিত করেন দখলদারদের। 

 

মু্ক্তি কীরূপে?

কোন কিছুই মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা ছাড়া হয় না। প্রতিটি মুসলিমকে বাঁচতে হয়, ইসলামের এ মৌল বিশ্বাস নিয়ে। প্রশ্ন হলো, মুসলিম বিশ্বে আজ যা কিছু হচ্ছে সে গুলোকে কি মহান আল্লাহতায়ালা রহমত বলা যায়? লক্ষ লক্ষ মানুষের এমন মৃত্যুকে রহমত বললে আযাব কোনটি? তাছাড়া এ আযাব যে মহান আল্লাহতায়ার নির্দেশ অনুসারে আসছে -তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? প্রতিটি আযাবাই তো অর্জিত আযাব, এবং আসে পাপের শাস্তি রূপে। এখন প্রশ্ন হলো, এ আযাব থেকে মুক্তির কীরূপে? মুক্তির উপায় একটিই। তা হলো, হযরত ইউনূস (আ:) যেমন তওবা করে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, মুসলিমদেরও অতীত অপরাধের জন্য তাওবা তাঁর যোগ্য খলিফা রূপে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে। নইলে বিজয় নয়, দিন দিন প্রতিশ্রুত আযাবের অংকই বাড়বে।

নামায-রোযা যেমন প্রতিটি মুসলিমদের উপর ফরয -তেমনি ফরয হলো আল্লাহর দ্বীন-প্রতিষ্টার লড়াই। এ পথে যেমন যুদ্ধ আছে, তেমনি নির্যাতনও আছে। দ্বীন-প্রতিষ্টার এ কাজ যেমন মৌলবাদ নয়, তেমনি সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদও নয়। বরং এটিই হলো অতি সরল ও সনাতন ইসলাম। অতীতে এ সরল ও সনাতন ইসলামের অনুসারিরাই মহান আল্লাহতায়ালার পথে যুদ্ধ করেছেন, নিহত বা আহতও হয়েছেন। এমন যুদ্ধ যেমন নবীজীর (সা:) আমলে ছিল, তেমনি প্রতি যুগেই থাকবে। এটিই ইসলামের জিহাদ। এবং জিহাদের মর্যাদা নামায রোযার চেয়েও শ্রেষ্ঠ। কারণ, এখানে বিনিয়োগ নিছক ক্ষণিকের রুকু-সেজদাতে নয়, বরং,মু’মিনের সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে। নামায-রোযায় জান ও মালের কোরবানী নাই; কিন্তু জিহাদে আছে। মহান আল্লাহতায়ালা তার পথে মুজাহিদের প্রাণদানে এতোই খুশী হন যে তার জীবন থেকে মৃত্যুকেই বিলুপ্ত করে দেন। সে পায়  মৃত্যূহীন জীবন। পায় অনন্তকালের রিযিক। পায় বিনা হিসাবে জান্নাত।

নামায-রোযা যেমন সকল ঈমানদারের ইবাদত, জিহাদও তেমনি সকল ঈমানদারের ইবাদত। তাই পেশাদার সৈনিকের যুদ্ধ-গমনে অন্য মুসলিমের ইবাদত পালিত হয়না। মুসলিমের প্রতিটি য্দ্ধু এ জন্যই গণযুদ্ধ। আফগানিস্তানের জিহাদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মুসলিমদের বিজয়ের বড় কারণ ছিল এ গণজিহাদ। পবিত্র কোর’আনে বলা হয়েছে: “ইনফিরু খিফাফাও ওয়া ছিকালাও ওয়া জাহিদু বি আমওয়ালিকুম ও আনফুসিকুম।” -(সুরা তাওবা)। অর্থ: “তোমাদের প্রস্তুতি কম হোক ও বেশী হোক, বেরিয়ে পড়; এবং জিহাদ কর নিজের সম্পদ ও প্রান দিয়ে।” নবীজী (সা:) অতি স্বল্প সংখ্যক সাহাবী নিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু করেছিলেন। যারা ভাবে আনবিক বোমা, বোমারু বিমান ও উন্নতমানের কামান ও ট্যাংক আবিস্কার না করে কি যুদ্ধে নামা যায়? এ চেতনা মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশের পরিপন্থি।

মুসলিমের প্রতিটি কর্ম যেমন ইবাদত, তেমনি প্রতিটি যুদ্ধই জিহাদ। ফিরিশতাগণ এমন জিহাদে সৈনিকের কাতারে হাজির হয়। কিন্তু সেটি সাদ্দামের দ্বারা হয়নি। সে এটিকে একটি জাতীয়তাবাদী যুদ্ধে পরিণত করেছিল। ফিলিস্তিনে গাজার মুসলিমগণ যেরূপ ইসরাইলী বাহিনীর বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে তার মুল কারণ, এটি  বেতনভোগী সৈনিকের যুদ্ধ নয়। এটি জান্নাতমুখী মোজাহিদের জিহাদ। কাফের যেমন জীবনকে ভালবাসে, মু’মিনগণ তেমনি শাহাদতকে ভালবাসে। শাহাদতকে তারা জান্নাতের প্রবেশের নিশ্চিত চাবি হিসাবে বিশ্বাস করে। একারণেই মার্কিন বাহিনী ইরাক বা আফগানিস্তানের রাস্তায় বেরুতে ভয় পায়। সেখানে মানুষ পরিণত হয়েছে চলমান বোমায়।

 

আশার কথা

প্রতিরোধের দায়িত্ব যখন প্রতিটি নাগরিক নেয়, তখন সে জাতিকে কি বিদেশী হানাদাররা পরাজিত করতে পারে? মার্কিন বাহিনী কোন কালেই এমন সৈনিকদের মুখোমুখী হয়নি যেমনটি হয়েছে ইরাকে ও আফগানিস্তানে। মার্কিন বাহিনীর যে ব্যর্থতা সেখানে শুরু হয়েছে সেটিই তাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা ডেকে আনবে। এবং বিলুপ্ত হবে বিশ্বনেতৃত্বের স্বপ্নসাধ। শত শত আনবিক বোমা, হাজার হাজার বোমারু বিমান ও অসংখ্য মিজাইল থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়া পরাজিত হয়েছে। এবং যুদ্ধ শেষে দেশটি বহু টুকরোয় খন্ডিতও হয়েছে। তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্টকেও বাঁচাতে পারবে না তার আনবিক বোমা, মিজাইল ও যুদ্ধ জাহাজ। বিজয়ের আশা ছেড়ে মার্কিন বাহিনী তাই ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে দেশে ফেরার রাস্তা খুঁজছে।

কারণ, যুদ্ধের জয়-পরাজয়ে শুধু সামরিক শক্তিরই হিসাব হয় না। এ হিসাব-নিকাশের বাইরেও আরেকটি অদৃশ্য শক্তি কাজ করে। এবং সেটিই মূল। সে অপরাজেয় অদৃশ্য শক্তি হলো মহান আল্লাহতায়ালা। তাঁর সে শক্তির বিরুদ্ধে কেউ কি দাঁড়াতে পারে? নমরুদ, ফিরাউন ও আবরাহার বাহিনীর বিনাশে তাই কাউকে একটি তীরও ছুড়তে হয়নি। সে শক্তি আজও বিদ্যমান, এবং অনিবার্য ভাবেই পাশে এসে দাঁড়ায় যখন একমাত্র মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য যুদ্ধ শুরু হয়। পবিত্র কোর’আনে সে প্রতিশ্রুতি বার বার এসেছে। মহান আল্লাহর এ প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস না করলে কি ঈমান থাকে? বহু পরাজয়ের পর আশার কথা হলো, আজ ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, মালি, আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনে তেমনই একটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। মানুষ সন্ধান পেয়েছে সনাতন ইসলামের। ফলে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে বহু ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট হিমসিম খাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অপরাজেয় নয় -সেটি যেমন ভিয়েতনামে প্রমাণিত হয়েছিল। নতুন করে সেটিই প্রমাণিত হচ্ছে ইরাকে ও আফগানিস্তানে। ইসলামের বিজয় তো যুগে যুগে এভাবেই অনিবার্য হয়। ১ম সংস্করণ ১৯/১১/২০০৬; ২য় সংস্করণ ১৯/০১/২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *