দুর্বৃত্তদের অধিকৃতি, রাজনীতিতে ইসলাম নিষিদ্ধকরণ এবং মু’মিনের দায়ভার
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 3, 2021
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের মুখোশটি ধর্মনিরপেক্ষতার। তারা দেশে জোয়ার এনেছে দুর্বৃত্তি ও দুঃশাসনের। অতীতে দুর্নীতিতে দেশটিকে এরা ৫ বার বিশ্বে প্রথম করেছিল। কিন্তু রাজনীতির অঙ্গণে তাদের যুদ্ধটি ইসলামের বিরুদ্ধে। তারা বলে, রাজনীতিতে তারা ধর্মের ব্যবহার হতে দিবে না। কিন্তু তারা ভাল করেই জানে রাজনীতিতে ধর্ম নিষিদ্ধ হলে হিন্দু, খৃষ্টান বা বৌদ্ধধর্মের কোন ক্ষতি হবে না। কারণ, বাংলাদেশে হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্য কোন ধর্মের অনুসারিদের ধর্মভিত্তিক কোন রাজনৈতিক দল নাই। বাংলাদেশে নিজেদের ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তাদের লক্ষ্যও নয়। ফলে রাজনীতিতে ধর্ম নিষিদ্ধ হলে তাদের আদৌ কোন ক্ষতি নাই। তাছাড়া অমুসলিমগণ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, বরং দলটির মিত্র ও ভোটার। ফলে বর্তমান শাসক মহলে তাদের বিরুদ্ধে আক্রোশ থাকার কথা নয়। তাছাড়া শেখ হাসিনার মনে তার মিত্রদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ইচ্ছা জাগবে –সেটিও কি ভাবা যায়? সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধটি ইসলামের বিরুদ্ধে। রাজনীতিতে ধর্ম নিষিদ্ধ হলে ক্ষতি হবে একমাত্র ইসলামের। কারণ, ইসলাম শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতের বিধানই দেয় না। বিধান দেয় রাজনীতি, বিচার-আচার, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, যুদ্ধ-বিগ্রহের বিধানও। সে বিধানগুলোর প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজনীতিতে অংশ নেয়া মুসলিম জীবনে ফরজ। নইলে অসম্ভব হয় পূর্ণ ইসলাম পালন; এবং তাতে জাহান্নামে যাওয়ার বিপদ বাড়বে আখেরাতে। পবিত্র কোর’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার বিধানগুলো তখন শুধু কিতাবেই থেকে যায়। অথচ সে বিধানগুলো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই নবীজী (সা:)’কে শাসকের আসনে বসতে হয়েছে। সে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দিতে আমৃত্যু যুদ্ধ লড়তে হয়েছে। উনার ইন্তেকালের পর শাসকের আসনে বসেছেন তাঁরই শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ। তাই ঈমানদারদের উপর ফরজ হলো, নবীজী (সা:)’র সে মহান সূন্নতকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। এবং যে রাজনীতি সে সূন্নতের প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে -সেটিই বরং মুসলিম ভূমিতে নিষিদ্ধ করা ফরজ।
পানাহারে যেমন হালাল-হারাম আছে, তেমনি হালাল-হারাম আছে রাজনীতিতে। শুধু হালাল নয়, ফরজ হলো শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দেয়া। এবং হারাম হলো শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকে বাধা দেয়া। এটি বিদ্রোহ ও প্রকান্ড যুদ্ধ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। কোন মুসলিম দেশেই পতিতাবৃত্তি, মদ, জুয়া, সূদ, জুয়া হালাল হতে পারে না। তেমনি হালাল বা বৈধ হতে পারে না শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকে বাধা দেয়ার রাজনীতি। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে হচ্ছে উল্টোটি। সরকার আইন করেছে, ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার আছে এমন কোন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া যাবে না। ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার গণ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা রূপে। কথা হলো, ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার যদি হয় সাম্প্রদায়িকতা, তবে সবচেয়ে বেশী সাম্প্রদায়িক ছিলেন নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ। মুসলিম জীবনের দায়ভার তো নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের নীতি নিয়ে রাজনীতি করা।
বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ শুরু করে শেখ মুজিব। এবং সেটিও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। মুজিবের আমলে সকল ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং কারাবন্দী করা হয়েছিল সকল ইসলামপন্থী নেতাদের। মুসলিম ভূমিতে কাফেরগণ যা চায় -মুজিব তাই করেছিল। শেখ মুজিব নিজেকে মুসলিম রূপে দাবী করলেও তার লক্ষ্য মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা ছিল না, বরং সেটি ছিল ভারতীয় কাফের শাসকদের খুশি করা। কারণ তারাই ছিল তার রাজনীতির প্রভু। ভারতসেবার সে রাজনীতি নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা। তাই কাশ্মীরে ও ভারতে মুসলিমগণ হত্যা, ধর্ষণ, নির্মম নির্যাতনের মুখে পড়লে কি হবে –হাসিনা ভারতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উগ্র হিন্দুগণ মসজিদ মাটিতে মিশিয়ে দিলেও শেখ হাসিনা নিন্দা করেনা। অপর দিকে ভারতীয় কাফেরদের খুশি করতে তার রাজনীতিতে অনিবার্য হয়ে উঠেছে ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও নির্যাতন।
নীতিটি নমরুদ ও ফিরাউনের
সমাজ ও রাষ্ট্রের চত্বরে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকে নিষিদ্ধ করার এ নীতিটি যেমন নমরুদ ও ফিরাউনের ছিল, তেমনি শেখ মুজিবেরও ছিল। এখন সে নীতি নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে শেখ হাসিনা। ইসলাম ও ইসলাপন্থিদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার যু্দ্ধটি বহুদিনের। হাসিনা দেশের সংবিধানে মহান আল্লাহতায়ালার উপর আস্থার ঘোষণাটি পর্যন্ত বরদাশত করতে রাজী নয়। ফলে সে দেশের রাজনীতিতে মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়ত প্রতিষ্ঠার রাজনীতি থাকতে দিবে -সেটিই বা কি করে আশা করা যায়? ফলে হযরত ইব্রাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে যেমন নিজেদের জন্মভূমিতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার অধিকার দেয়া হয়নি, তেমনি সে অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের থেকেও। দেশের মানচিত্র ও ইতিহাস বার বার পাল্টে যায়। কোটি কোটি নতুন মানুষও জন্ম নেয়, কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিরুদ্ধে শয়তান ও তার অনুসারিদের নীতি যে বিন্দুমাত্র পাল্টায় না -এ হলো তার নমুনা।
শয়তান কোন কালেই তার মূল শত্রুকে চিনতে ভূল করেনি। সে ভূলটি যেমন ফিরাউন-নমরুদের আমলে করেনি। তেমনি আধুনিক আমলেও নয়। শয়তান জানে, আল্লাহতায়ালার পবিত্র কালাম কোর’আনই হলো পৃথিবী পৃষ্টে মহান আল্লাহতায়ালার একমাত্র রশি -যা অটুট বন্ধন গড়ে ঈমানদারদের সাথে। মু’মিন ব্যক্তি তো সে রশির টানেই সিরাতুল মুস্তাকীমে চলে। তাই পবিত্র কোর’আনের ঘোষণা: “ওয়া মাই ইয়া’তিছিম বিল্লাহ ফাকাদ হুদিয়া ইলা সিরাতুল মুস্তাকীম।” অর্থ: “এবং যারা আঁকড়ে ধরলো আল্লাহকে তথা তাঁর রশি পবিত্র কোর’আনকে তারাই পেল সিরাতুল মুস্তাকীমের হিদায়েত।” কিন্তু শয়তানের পক্ষের শক্তি সে বন্ধনটি চায় না। তারা তো চায় মানব সন্তানদের জাহান্নামে নিতে। এবং সেটি একমাত্র সম্ভব কোর’আনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
এ জমিনের বুকে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে সবচেয়ে বলিষ্ঠ সাক্ষ্যটি পেশ করে পবিত্র কোর’আন। কোর’আনই হলো ইসলামের মূল উৎস্য। এই কোর’আনই কোটি কোটি মানুষকে মহান আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব ও আইন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের জানমাল কোরবানীতে অনুপ্রাণীত করে। তাছাড়া ইসলাম কোথাও স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত নিয়ে হাজির হয় না, হাজির হয় কোর’আনের শরিয়তি বিধান নিয়েও। দেশের আদালতে শরিয়তি বিধান প্রতিষ্ঠা পেলে শয়তানের এজেন্টদের অপরাধের বিচার হয় এবং তাদের জেলে যেতে হয়। জেলে যেতে হয় সেক্যুলারিস্টদেরও। তাই শয়তানী শক্তির স্ট্রাটেজীটি হলো, কোর’আন নিষিদ্ধকরণ। আর কোর’আন নিষিদ্ধকরণ সম্ভব না হলে স্ট্রাটেজী হয়, কোর’আন শিক্ষায় বিকৃত আনা যাতে মুসলিমগণ ইসলামের মূল পরিচয় পেতে ব্যর্থ হয়। শয়তান ও তার অনুসারিগণ অতীতে সে স্ট্রাটেজীর প্রয়োগ করেছে সকল আসমানী কিতাবের বিরুদ্ধে। ফলে জাব্বুর, তাওরাত ও ইঞ্জিল তার অবিকৃত রূপ নিয়ে কোথাও বাঁচেনি। বিকৃতি এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ঈসা (আঃ)’র ন্যায় একজন মরণশীল মানবকে খোদার পুত্র ও খোদায় পরিণত করেছে। কিন্তু কোর’আনের ক্ষেত্রে সেটি পারিনি। কিন্তু সে ব্যর্থথতা সত্ত্বেও শয়তানের প্রজেক্ট থেমে যায়নি। এখন চায়, সে অবিকৃত কোর’আনের প্রতিষ্ঠা রুখতে। চায়, জমিনের বুকে মহান আল্লাহতায়ালার সে রশিটি কেটে দিতে।
কেন নিষিদ্ধ করতে চায় ইসলামপন্থিদের রাজনীতি?
ইসলামী রাজনীতির মূল কথা, মহান আল্লাহতায়ালার সাথে বান্দার সম্পর্ককে মজবুত করা, তাঁর প্রতি আনুগত্য বাড়ানো এবং প্রতিষ্ঠা দেয়া তাঁর শরিয়তী বিধান। সে রাজনীতিকেই নিষিদ্ধ করতে চায় শয়তান ও তার অনুসারিগণ। তারা জানে, রাষ্ট্রের বুকে কোর’আনী বিধান প্রতিষ্ঠা পেলে তাদের সৃষ্ট বিভ্রান্তি ও দুর্বৃত্তির পথ বন্ধ করে দেয়াই হবে রাষ্ট্রের নীতি। মানুষ তখন সত্যদ্বীনের আলো পাবে, তাতে সহজ হবে জান্নাতের পথে চলা। তাতে ব্যর্থ হবে জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার শয়তানী প্রকল্প। শয়তান ও তার অনুসারিরা এজন্যই বাঁচাতে চায়, জাহেলিয়াতের তথা অজ্ঞানতার কালো অন্ধকার। এবং সেটি কোর’আনের আলো নিভিয়ে দিয়ে। চায় শরিয়ত প্রতিষ্ঠার প্রতিরোধ। তাই যুগে যুগে শয়তানের মূল যুদ্ধটি হলো পবিত্র কোর’আন ও তার রচিয়েতা খোদ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। তাই ইসলামের আন্তর্জাতিক শত্রুগণ মুসলিম দেশগুলিতে অতিশয় নৃশংস স্বৈরাচারিদের শাসন যুগের পর যুগ মেনে নিলেও শরিয়ত প্রতিষ্ঠাকামী কোন সরকারকে একদিনের জন্যও মানতে রাজি নয়। আলজিরিয়া, আফগানিস্তান, সোমালিয়া ও মিশরসহ যেখানেই শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকামীগণ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে -সেখানেই তারা নিজেদের সেক্যুলারিস্ট মিত্রদের নিয়ে প্রতিরোধে নেমেছে। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে শয়তান ও তার অনুসারিদের সাফল্যের মূল কারণ, পবিত্র কোরআনের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে তারা পুলিশ, প্রশাসন, বিজেবী, সেনাবাহিনী ও আদালতের ন্যায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের হাতিয়ারে পরিণত করতে পেরেছে।
শয়তান ও তার অনুসারিগণ জানে, মসজিদ-মাদ্রাসায় ইসলামের জ্ঞানচর্চা হলেও তার প্রতিষ্ঠা ঘটে রাজনীতির পথ ধরে। ফলে ইসলামের প্রতিষ্ঠা রুখতে রাজনীতির ময়দানে ইসলাম নিষিদ্ধ করাকে তারা অপরিহার্য মনে করে। তাই ইসলামের শত্রুপক্ষটির কাছে মসজিদ-মাদ্রাসা, নামায-রোযা, তাবলিগী ইজতেমা বা পীর-মুরিদী কোন ইস্যু নয়। তারা বন্ধ করে রাজনীতির অঙ্গণে ইসলামের প্রবেশ। বাংলাদেশের মত দেশে রাজনীতিতে গুম, খুন, সন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছে এ সেক্যুলারিস্টগণ। অথচ ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদ বলে সেটিকে নিষিদ্ধ করতে চায়। দেশের উপর পূর্ণ দখলদারীর লক্ষ্যে ইসলামপন্থিদের গ্রেফতার করা, গ্রেফতারের পর অত্যাচার করা ও হত্যার লক্ষ্যে ক্রসফায়ারে দেয়ার বিধানও চালু করেছে। তবে সেক্যুলারিস্টদের বড় কাপুরুষতা হলো, ঘোষণা দিয়ে কোরআন নিষিদ্ধ করার সাহস তাদের নাই। ফলে কোর’আনের এ চিহ্নিত শত্রুরা নেমেছে ভিন্ন কৌশলে। কোর’আন নিষিদ্ধের ঘোষণা না দিয়ে তারা বরং নিষিদ্ধ করতে চায় যে কোন রাজনৈতিক উদ্যোগ -যা কোর’আনের তথা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায়। এবং নির্মূল করতে চায় সে রাজনীতির নেতাকর্মীদের। সে নির্মূলকর্মকে জায়েজ করার লক্ষ্যে তাদের গায়ে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থির লেবেল এঁটে দিচ্ছে। শরিয়ত বাদ দিয়ে ইসলাম হয় না এবং যে ইসলামে শরিয়তের বিচার রয়েছে সে ইসলামই যে নবীজী সাঃ)র ইসলাম -সে প্রকান্ড সত্যটি তারা ইচ্ছা করেই বলে না।
সবচেয়ে সশস্ত্র ও চরমপন্থি পক্ষ
শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে জঙ্গি, সবচেয়ে সশস্ত্র ও সবচেয়ে চরমপন্থি হলো ইসলামের শত্রুপক্ষ। নিরস্ত্র জনগণকে রাজপথে শান্তিপূর্ণ মিছিল বা জনসমাবেশ করতে দিতেও তারা রাজী নয়। অথচ তারা নিজেরা রাজপথে নামছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী রূপে। নিরস্ত্র মানুষ খুনে তারা নামছে বন্দুক, বুলেট ও কামান নিয়ে। সেটি যেমন মিশর, সিরিয়া, সৌদি আরব, আলজিরিয়া ও নাইজিরিয়ায় দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় বাংলাদেশের রাজপথেও। গণহত্যার নৃশংস কান্ড ঘটেছে ঢাকার শাপলা চত্বরে। তাদের হাত সর্বত্রই রক্তে রঞ্জিত। গণদাবির মুখে কোথায়ও এরা গদি ছাড়তে রাজি নয়। বরং নিজেদের গদি বাঁচাতে সর্বত্রই এরা ভয়ংকর গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। ইসলামের এ শত্রুপক্ষটি সিরিয়ার বুকে ইতিমধ্যেই এক লাখ চল্লিশ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। সে হত্যাকান্ড দিন দিন আরো ব্যাপকতর হচ্ছে। তিরিশ লাখের বেশী মানুষকে তারা ইতিমধ্যেই গৃহহীন করেছে। মিশরে এরাই সে দেশের ইতিহাসের সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মদ মুরসীকে বন্দুকের জোরে হটিয়েছে এবং তাঁকে কারারুদ্ধ করেছে। কারারুদ্ধ অবস্থায় তাঁর হত্যারও ব্যবস্থা করেছে। সামরিক ক্যুর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ রুখতে কায়রোর রাজপথে প্রায় দেড় হাজার নিরস্ত্র ও নিরপরাধ মানুষকে তারা এক রাতে হত্যা করেছে। অস্ত্র ও সন্ত্রাস –উভয়ই সামরিক বাহিনীর হাতে, অথচ সন্ত্রাসী দল রূপে অভিযুক্ত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে নিরস্ত্র রাজনৈতিক দল ইখওয়ানূল মুসলিমূনকে। এরা এতটা নির্লজ্জ যে, ড. মুরসীর নিরস্ত্র গণতান্ত্রিক দলকে জঙ্গি বলে নিষিদ্ধ করলেও সে দেশের সশস্ত্র সামরিক বাহিনীকে পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক দলে। রাজনৈতিক দলের প্রধানের ন্যায় সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবুল ফাতাহ সিসি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদেও দাঁড়িয়েছে। সমগ্র প্রশাসন ও প্রচারযন্ত্র পরিণত হয়েছে নতজানু চাটুকারে। একই স্ট্রাটেজী নিযে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশের ইসলামের শত্রুপক্ষও। সশস্ত্র পুলিশ, RAB, বিজিবী ও সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে রাজনীতির উপর পুরা দখলে নিয়েছে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডারেরা। অপর দিকে রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র হচ্ছে নিরস্ত্র ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে।
সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধ ও ঈমানদারের জিহাদ
মহান আল্লাহতায়ালার নাযিলকৃত বিধানগুলো যতদিন কোর’আনের পৃষ্ঠায় বন্দী থাকবে এবং সেগুলির প্রতিষ্ঠা বাদ দিয়ে মুসলিমগণ যতদিন নিছক তেলাওয়াত নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, ততদিন সে কোর’আনের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুপক্ষের কোন আপত্তি নেই। বরং তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত মহফিলের আয়োজন করতেও তারা রাজি। কার্পণ্য নাই ক্বারিদের বিপুল অংকের পুরস্কার দিতেও। মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র দুর্বৃত্ত শাসকদের সেটাই সংস্কৃতি। কিন্তু বিপত্তি ও বিরোধ শুরু হয় তখনই যখন সে কোর’আনী বিধানের প্রতিষ্ঠা নিয়ে জিহাদ শুরু হয়। রাজনীতির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং মিছিলও তখন সন্ত্রাস রূপে চিত্রিত হয়। হত্যাযোগ্য সন্ত্রাসী গণ্য করা হয় সে সমাবেশ বা মিছিলে যোগদানকারিগণ। এভাবেই ইসলামের শত্রুপক্ষ নিরস্ত্র ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে একটি রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এবং সেটি বাংলাদেশের ন্যায় শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিমদের দেশে! প্রতিযুদ্ধেই দুটি সশস্ত্র পক্ষ থাকে। কিন্তু এখানে সশস্ত্র পক্ষ মাত্র একটি। এবং সেটি হামলাকারি সরকারি পক্ষ।
প্রশ্ন হলো, ইসলামের শত্রুপক্ষ যখন এতটাই যুদ্ধাংদেহী ও নির্মূলমুখী, সে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ থেকে ঈমানদারের পরিত্রাণ কীরূপে? দূরে থাকারও সুযোগ কি আছে? খোদ নবীজী (সাঃ) মনের দুঃখে মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে গেলেও কাফেরগণ তাঁর পিছু ছাড়েনি। ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর নির্মূলে ২৫০ মাইল দূরের মদিনাতেও তারা ধেয়ে গিয়েছিল।একবার নয়, তিনবার। মদিনার ক্ষুদ্র একটি গ্রামভিত্তিক মুসলিম উপস্থিতিকে চিরতরে নির্মূলের লক্ষে আরব ভূমির নানা গ্রোত্রের কাফেরগণ বিশাল কোয়ালিশনও গড়েছিল। তারা ১০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে শেষবার মদিনাকে ঘিরে ধরেছিল। ইতিহাসে এ যুদ্ধ জঙ্গে আহযাব বা খন্দকের যুদ্ধ নামে পরিচিত। শয়তান ও তার অনুসারিদের এজেন্ডা প্রতিযুগে একই। ইসলামের নির্মূল ছাড়া তারা থামতেই রাজি নয়। ফলে প্রতিযুগেই মুসলিমদের বাঁচতে হয়েছে লড়াই করে। তাই শুধু কালেমা পাঠ বা নামায-রোযা ও হজ-যাকাতের যোগ্যতা নিয়ে মুসলিমের বাঁচাটি নিশ্চিত হয় না, জিহাদের নামার যোগ্যতাটিও চাই।
কোন ব্যক্তির জীবনে ইসলামের জোয়ার এলে সে জোয়ারটি শুধু নামায-রোযা ও হজ-যাকাতে সীমিত থাকে না, জোয়ার আসে জিহাদের অঙ্গণেও। ঈমান ও জিহাদ বস্তুত প্রতিটি ঈমানদারের জীবনে একত্রে চলে। এবং সে জিহাদের লক্ষ্য হয়, শত্রুশক্রির মোকাবেলা করা এবং আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী করা। তাছাড়া ইসলামের বিজয়, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ও মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা -কোন কালেই কি লড়াই ছাড়া ঘটেছে? অসংখ্য লড়াই লড়তে হয়েছে খোদ নবীজী (সাঃ)কে। শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবাকে শহীদ হতে হয়েছে তো সেসব লড়াইয়ে। নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালনে কি এত অর্থ ও রক্ত ক্ষয় হয়? জিহাদ যে ইসলামের প্রধানতম অঙ্গ নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম তো সেটিই প্রমাণিত করে গেছেন। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মু’মিন ব্যক্তির এ জিহাদ যে কত প্রিয় সেটি তিনি গোপন রাখেননি। পবিত্র কোর’আনের নানা ছত্রে সেটি তিনি বার বার বর্ণনা করেছেন। যেমন বলেছেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভাল বাসেন যারা তার রাস্তায় যুদ্ধ করে সিসাঢালা মজবুত দেয়ালের ন্যায় সারিবদ্ধ ভাবে।”–(সুরা সাফ, আয়াত ৪)। আর যারা জিহাদ থেকে দূরে থাকে তাদের প্রতি সাবধান বানীও উচ্চারণ করেছেন। বলেছেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হলো যে যখন তোমাদের বলা হলো আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়ো, তথন তোমরা মাটি আঁকড়ে ভূতলে পড়ে থাকলে? তোমরা কি আখেরাতের বদলে পার্থিব জীবনের প্রতি রাজী হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী তো অতি সামান্যই।”–(সুরা তাওবা, আয়াত ৩৮)। বিশাল প্রস্তুতির অপেক্ষায় জিহাদকে বিলম্বিত করাকেও আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেননি।বরং বলেছেন,“তোমাদের প্রস্তুতি কম হোক বা বেশী হোক, বেরিয়ে পড়ো। জিহাদ করো তোমাদের মাল ও প্রাণ দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে।”–(সুরা তাওবা, আয়াত ৪১)।
মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হৎপিন্ড, মগজ, ফুসফুস, কিডনি, লিভার ইত্যাদি। এর কোন একটি বিকল হলে মানুষ বাঁচে না। তেমনি মুসলিম জীবনে ইসলাম ও ঈমান বাঁচাতে হলে শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত হলে চলে না। বাঁচাতে হয় ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধান জিহাদকেও। নইলে ইসলাম বাঁচে না। তখন মুসলিম দেশে বিজয়ী হয় ইসলামের শত্রুপক্ষ। মুসলিম ইতিহাসে শয়তানি শক্তির এমন বিজয় বার বার এসেছে। তাই নবীজীর প্রসিদ্ধ হাদীসঃ “যে ব্যক্তি জিহাদ করলো না এবং জিহাদের নিয়েতও করলো -সে ব্যক্তি মুনাফিক।” আর মুনাফিকের বাসস্থান হবে জাহান্নামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থানে। কোন মুসলিম দেশে এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়লে সে দেশে ইসলামের বিজয় আসে না। বরং বাড়ে পরাজয় ও অপমান। শয়তান ও তার অনুসারিগণ এজন্যই মুসলিমের জীবন থেকে জিহাদ হটাতে চায়। মুসলিমদের প্রতিরক্ষাহীন করার লক্ষ্যে এটিই হলো তাদের মূল এজেন্ডা। তাই জিহাদের ন্যায় এ শ্রেষ্ঠ ইবাদতকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ আখ্যায়ীত করে মুসলিম জীবন থেকে বিদায় দিতে চায়। তাই বাজেয়াপ্ত করে জিহাদ বিষয়ক বই। জিহাদকে নিষিদ্ধ করার কাজটি ঔপনিবেশিক কাফের শাসন আমলে থেকে শুরু হয়। এরই ফল হলো, বাঙালী মুসলিমের জীবনে নামায-রোযা আছে। হজ্ব-যাকাতও আছে। কিন্তু যেটি নাই সেটি হলো এই জিহাদ। মদিনায় মাত্র ১০ বছর অবস্থান কালে নবীজী (সাঃ) যতগুলো জিহাদ করেছেন বাঙালী মুসলিমগণ বিগত ৮শত বছরেও করেনি। ফলে সে আমলে ক্ষুদ্র মদিনা বিশ্বশক্তিতে পরিণত হলেও বাংলাদেশে বেড়েছে শত্রুশক্তির দখলদারি।
জিহাদের প্রকারভেদ
জিহাদ তিন প্রকারেরঃ এক).বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ, দুই).রাজনৈতিক জিহাদ এবং তিন).সামরিক বা সশস্ত্র জিহাদ বা কিতাল। তবে শুরুটি হয় বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ দিয়ে। এ জিহাদটি হয় চেতনার ভূমিতে। এ যুদ্ধে হাতিয়ার হলো কোর’আনের জ্ঞান, দর্শন ও বিদ্যাবুদ্ধি। লক্ষ্য শুধু ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা ও দর্শন থেকে চেতনাকে মুক্ত করা নয়, সে সাথে নাজায়েজ প্রবৃত্তির অধিকৃতি থেকে মুক্ত করাও। একেই বলা হয় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। এ জিহাদে বিজয়ী না হলে অন্য দুটি জিহাদে সৈনিক জুটে না। তখন রাজনৈতিক ও সামরিক জিহাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গণে ইসলামের বিজয় জুটে না। নবীজী (সাঃ) তাঁর মক্কি জীবনের ১৩ বছর ধরে সে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদটি লাগাতর করেছেন।এ বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদটি হলো আল্লাহ¸ তাঁর রাসূল ও তাঁর সত্য দ্বীনের পক্ষে কথা, কলম ও বিদ্যাবু্দ্ধি দিয়ে সাক্ষ্য দেয়া। সে সাক্ষ্যদানটি শুরু হয় কালেমায়ে শাহাদাত পাঠের মধ্য দিয়ে। পবিত্র কোর’আনে তাই মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর পক্ষে খাড়া হয়ে যাও এবং সাক্ষি দাও ন্যায় বিচারের প্রতিষ্ঠায়।”-(সুরা মায়েদা, আয়াত ৮)। মু’মিনের জীবনে আল্লাহর পক্ষে সাক্ষিদানের এ কাজটি শুরু হলে প্রবেশ ঘটে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের ময়দানে। একই রূপ নির্দেশ দেয়া হযেছে সুরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়ে যাও, স্বাক্ষি রূপে খাড়া হয়ে যাও আল্লাহর পক্ষে।” তাই যুগে যুগে ঈমানদারগণ শুধু নামাযের জায়নামাজেই খাড়া হননি, দৃঢ় ভাবে খাড়া হয়েছেন জিহাদের ময়দানেও। সেটি যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের ময়দানে, তেমনি রাজনীতিতে ও সশস্ত্র জিহাদের ময়দানে।
মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের পক্ষে সাক্ষ্যদানে খাড়া হওয়ার অর্থই হলো শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। সশস্ত্র শয়তানি শক্তি তখন নিরস্ত্র সাক্ষিদাতার উপর আঘাত হানে। আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের পক্ষে সাক্ষ্যদানের কারণেই হযরত ইয়াসির (রাঃ), হযরত সুমাইয়া (রাঃ), হয়রত খাব্বাব(রাঃ) ও হযরত বেলাল (রাঃ)’র ন্যায় বহু নিরস্ত্র মানুষের জীবনে সীমাহীন নির্যাতন নেমে এসেছিল। অনেককে নির্মম ভাবে শহীদও হতে হয়েছে। নমরুদের দরবারে ইব্রাহিম (আঃ) এবং ফিরাউনের দরবারে হযরত মূসা (আঃ) তো সে নিরস্ত্র জিহাদটি দিয়েই দ্বীনের প্রচার শুরু করেছিলেন। নমরুদ নিজেকে খোদা দাবি করতো। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন,“আমার আল্লাহ পূর্ব দিক থেকে সূর্যোদয় ঘটান।তুমি সেটি পশ্চিম দিকে ঘটাও।” ইব্রাহিম (আঃ)এর এরূপ বুদ্ধিবৃত্তি মহান আল্লাহতায়ালার এতই ভাল লেগেছিল যে তিনি তার কথাগুলোকে পবিত্র কোরআনে নিজের কালামের পাশে স্থান দিয়েছেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধটি করেছেন এমন কি তাঁর মুর্তিনির্মাতা পিতার বিরুদ্ধেও। কিন্তু সে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের শাস্তি স্বরূপ তাঁর মত নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ ব্যক্তিকে জলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে সে জ্বলন্ত আগুণ থেকে মহান রাব্বুল আলামীন তাঁকে ফিরেশতা পাঠিয়ে উদ্ধার করেছেন এবং ব্যর্থ করে দিয়েছেন শয়তানের কৌশল। ফিরাউনের দরবারে আল্লাহর পক্ষে স্রেফ সাক্ষি দেয়ার কারণে হযরত মূসা (আঃ)’এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রে বিদ্রোহ সৃষ্টির অভিযোগ আনা হযেছিল এবং তাঁকে এবং তার নিরস্ত্র অনুসারিদের হত্যার জন্য ফিরাউনের বিশাল বাহিনী সমূদ্র পর্যন্ত ধাওয়া করেছিল। এই হলো নিরস্ত্র মানুষের শান্তিপূর্ণ বুতবে বাংলাদেশেও কি নিরস্ত্র ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষের কৌশলটি ভিন্নতর?
মুসলিম শহীদ হয় শুধু সশস্ত্র জিহাদে নয়। বরং বহু নিরস্ত্র মুসলিম মান যুগে যুগে শহীদ হয়েছেন এবং আজও হচ্ছেন বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক অঙ্গণের নিরস্ত্র জিহাদে। মিশরের প্রখ্যাত মোফাচ্ছেরে কোরআন শহীদ কুতব কারো বিরুদ্ধে একটি তীঁরও ছুড়েননি। কিন্তু তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করা হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তির জিহাদে আপোষহীন মুজাহিদ হওয়ার কারণে। একই কারণে মাওলানা মওদূদীকেও ফাঁসীর হুকুম শোনানো হয়েছিল। অতীতে ইমাম মালিক (রহ:), ইমাম আবু হানিফা (রহ:), ইমাম শাফেয়ী (রহ:), ইমাম হাম্বলী (রহ:), ইমাম তাইমিয়া (রহ:)’র ন্যায় মুসলিম ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকেও জেলে নেয়া হয়েছে এবং তাদের উপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে এবং অনেককে শহীদ করা হয়েছে এই বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদে মুজাহিদ হওয়ার কারণে। রাজনৈতিক অঙ্গনে যারা নিরস্ত্র মুজাহিদ তাদের লাশও কি দেশে দেশে পড়ছে? বিগত মাত্র এক বছরে ৪ হাজারের বেশী নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছে মিশরের সামরিক শাসক। ৭০ হাজারের বেশী নিরীহ মানুষকে তারা জেলে তুলেছে। শত শত নিরস্ত্র মানুষকে শহীদ করা হয়েছে এবং এখনো সে হত্যাকান্ড অবিরাম ভাবে চলছে বাংলাদেশে। সেটি যেমন ঢাকার শাপলা চত্বরের সমাবেশে হয়েছে, তেমনি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে। হত্যা ও গুমের পাশাপাশি হাজার হাজার নিরস্ত্র নেতাকর্মীকে শুধু ইসলামের পক্ষে কথা বলার অপরাধে জেলা তোলা হচ্ছে এবং তাদের উপর নৃশংস নির্যাতন করা হচ্ছে।
মূল ব্যর্থতাটি জিহাদে
দেহে প্রাণ থাকলে হৃদয়ে স্পন্দন থাকে, তেমনি হাত-পা’য়ে নড়াচড়াও থাকে। তেমনি অন্তরে ঈমান যে বেঁচে আছে সেটির প্রমাণ দেয় জিহাদ। আল্লাহর পথে পবিত্র জিহাদই মুনাফিক থেকে মু’মিনকে পৃথক করে। মুসলিম দেশের আইন-আদালত, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও যুদ্ধবিগ্রহে ইসলাম বেঁচে থাকে তো এ জিহাদের বরকতেই। হৃৎপিন্ড কয়েক সেকেন্ড বন্ধ থাকলে দেহ বাঁচে না। তেমনি মুসলিমগণ জিহাদ বিমুখ হলে খোদ মুসলিম দেশেও ইসলাম তার কোরআনী রূপ নিয়ে বাঁচে না। তখন ইসলামের নামে যে ধর্মকে বাঁচতে দেখা যায় সেটি নবীজী (সাঃ)’র ইসলাম নয়। গৃহের মালিক কখন ঘুমিয়ে পড়বে, সে মুহুর্তের অপেক্ষায় থাকে চোরগণ। মুসলিমগণ কখন জিহাদ-বিমুখ হয় এবং অস্ত্র ছেড়ে ভোগলিপ্সায় লিপ্ত হয় – শয়তানও সে মুহুর্তের অপেক্ষায় থাকে। তখন সে মুসলিম দেশের উপর তারা ত্বরিৎ দখলদারিত্ব নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের উপর তো সেটিই ঘটেছে।
বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতা অনেক। তবে মূল ব্যর্থতাটি জিহাদের অঙ্গনে। মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো: সর্বসময়ের জন্য আল্লাহর দ্বীনের জাগ্রত প্রহরী হয়ে যাওয়া। এ প্রহরার কাজে কোন বিরতি চলে না। নামায-রোযায় ক্বাজা আছে, কিন্তু জিহাদে ক্বাজা নেই। এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো,“তাদের মোকাবেলায় তোমরা প্রস্তুতি নাও সর্বশক্তি দিয়ে এবং (সর্বদা) প্রস্তুত রাখো তোমাদের ঘোড়াকে।এবং এভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত রাখবে তোমাদের শত্রুদের এবং (সে সাথে) আল্লাহর শত্রুদের।”–(সুরা আনফাল, আয়াত ৬০)। এমন জিহাদের গুরুত্ব বুঝাতে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি এমন এক ব্যবসার কথা বলে দিব যা তোমাদেরকে বেদনাদায়ক আযাব থেকে রেহাই দিবে? সেটি হলো, তোমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করো,এবং আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ও প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে। (এরূপ জিহাদে অংশ নেয়ার পুরস্কার স্বরূপ) আল্লাহ তোমাদের পাপ মার্জনা করে দিবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে যার পাদদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত, এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটিই তো মহাসাফল্য।”–(সুরা সাফ,আয়াত ১০-১২)।
মু’মিনের ঈমানদারিটা এজন্যই স্রেফ নামায-রোযা ও হজ-যাকাত পালনে শেষ হয় না। ঈমানদারির প্রকাশ ঘটে শত্রু-হামলার প্রাণপণ প্রতিরোধেও। সারা রাত নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে সীমান্ত প্রতিরক্ষায সামান্য মুহুর্তের সময় দানকে।–(হাদীস)। তাই ইসলাম ও মুসলিমদের উপর যখনই হামলা হয়, ইসলামের এ অতন্দ্র প্রহরীরা সে হামলার মোকাবেলায় বীরদর্পে খাড়া হয়। অথচ বাঙালী মুসলিমদের দ্বারা সেটি ঘটেনি। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীগণ তাই সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে নিরাপদ ভূমি রূপ বেছে নিয়েছিল বহু হাজার মাইল দূরের জিহাদ-বিমুখ বাঙালী মুসলিম অধ্যুষিত দেশকে। আফগানিস্তান, ইরান বা কাছের তুরস্কের উপর হামলাকে সতর্কতার সাথে পরিহার করেছে। তবে আফগানিস্তান, ইরান বা তুরস্কের উপর পরবর্তিতে যে হামলা হয়নি -তা নয়। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী হামলার বিরুদ্ধে সে দেশগুলিতে তুমুল জিহাদ গড়ে উঠেছিল, এবং শত্রুদেরকে তারা শোচনীয় ভাবে পরাজিতও করেছিল।পলাশির ময়দানে যতজন ইংরেজ সৈনিক হাজির হয়েছিল তার চেয়ে বেশী সৈনিক নিয়ে তারা কাবুলের উপর হামলা করেছিল। কিন্তু সেখানে তাদের বিজয় জুটেনি, বরং আফগান মুজাহিদদের হাত থেকে একজন মাত্র ইংরেজ সৈনিক প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসতে পেরেছিল। অথচ পলাশীর প্রান্তরে প্রায় ৫০ হাজার মুসলিম সৈন্য মাত্র কয়েক হাজার ইংরেজ সৈন্যের সামনে নীরবে দাঁড়িয়েছিল। তারা কোন যুদ্ধই করেনি।বাঙালী মুসলমানদের স্বাধীনতা এভাবেই সেদিন নিরবে অস্তমিত হয়েছিল। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সাথে এ গাদ্দারিটা কি শুধু মীর জাফরের? সে যুদ্ধে দেশের বাঁকি মুসলিমদের ভূমিকাই বা কি ছিল? গাদ্দারি তো শত্রু্র দখদারির মুখে নিরব থাকাটাও। অথচ সে গাদ্দারিটি চলেছে ১৯০ বছর ধরে। বাঙালী মুসলিমগণ নিজেদের এ গুরুতর অপরাধটি ভূলেছে সব দোষ মীর জাফরের উপর চাপিয়ে। এবং বিপদের আরো কারণ, নিজেদের এ প্রকান্ড অপরাধ ও ঈমানী ব্যর্থতা থেকে আজও তারা কোন শিক্ষা নিতে রাজি নয়।
ষড়যন্ত্র জিহাদ নিষিদ্ধের
শয়তান জিহাদের সামর্থ্যটি বুঝে। শয়তানের মূল কৌশলটি তাই জিহাদ থেকে মুসলিমদের অমনযোগী করা। শয়তানের এজেন্টগণ তাই মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ায বাধা দেয় না। নামায-রোযা, হজ-যাকাত বা দোয়া-দরুদের উপর লেখা বইও বাজেয়াপ্ত করে না। তাবলিগ জামায়াতের ইজতেমাতেও তারা কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে না। বরং সে ইজতেমার নিরাপত্তা বাড়ায় ও নিজেরাও তাতে যোগ দেয়। কিন্তু বাজেয়াপ্ত করে জিহাদ বিষয়ক বই। এবং নিষিদ্ধ করে কোরআনের তাফসির। ইংরেজগণ জিহাদ নিষিদ্ধ করতেই গোলাম আহম্মদ কাদিয়ানিকে ভন্ড নবীর বেশে ভারতে নামিয়েছিল। মুসলমানদের জিহাদ থেকে দূরে রাখার কাজে প্রয়োজন পড়েছিল ভন্ড-আলেম তৈরীর। আর সেজন্যই ইংরেজগণ নিজ হাতে গড়েছিল মাদ্রাসা। জিহাদকে বদনাম করার কাজে বাংলাদেশেও সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে। সে কাজে ময়দানে নামানো হচ্ছে, তরিকত, মারেফত, সুফিবাদের নামে হাজার হাজার ভন্ডদের। লোক-সমাগম বাড়াতে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে পীর, সুফি ও আউল-বাউলদের মাজারে। এজেন্ডা একটিই, জিহাদের ময়দান থেকে মুসলমানদের দৃষ্টি ফেরানো। এভাবে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়কে প্রতিহত করা।
বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে ইসলামের শত্রুশক্তির ষড়যন্ত্রটি বিশাল। কারণ, দেশটিতে বসবাস ১৬ কোটি মুসলিমের। প্রতিটি মুসলমানই ইসলামি বিপ্লবের বিশাল শক্তি। শক্তির সে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বাংলাদেশেও। সে বিস্ফোরণ শুধু বাংলাদেশেরই রাজনীতিই নয়, সমগ্র দক্ষিণ-এশিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। সেটি ইসলামের শত্রু পক্ষ বুঝে –বিশেষ করে ভারত। এজন্যই সে বিজয় রুখতে ইসলামের শত্রুপক্ষের বিনিয়োগটি বিশাল। ইসলামি বিপ্লবের সে বিস্ফোরণটি রুখতেই তারা রাজনীতির অঙ্গণে ইসলামকে নিষিদ্ধ করতে চায়। এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চায় নিজেদের একচ্ছত্র দখলদারি। রাজনীতির সে অঙ্গণটিতে ইসলামপন্থিদের তারা সামান্যতম স্থান দিতেও রাজি নয়। একই কারণে নবীজী (সাঃ)কে স্থান দিতে চায়নি আবু জেহেল ও আবু লাহাবের দল। রাজনীতির অঙ্গণে ঈমানদারদের প্রবেশ ঘটুক এবং সে ক্ষেত্রের দখলদারি নিয়ে মুসলিমদের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ খাড়া হোক -সেটি ইসলামের শত্রুপক্ষ চায় না। সেটি মুজিব যেমন চায়নি, হাসিনাও চায় না। চায় না ভারত ও ইসলামের আন্তর্জাতিক শত্রুপক্ষও। মিশরের নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পাওয়া ইখওয়ানূল মুসলিমীনকে নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষাপট তো সেটিই। নিরস্ত্র সে দলটিকে সন্ত্রাসী দল বলে নিষিদ্ধ করা হলো ও গ্রেফতার করা হলো দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। লক্ষণীয় হলো, গণহত্যায় সামরিক বাহিনীর সে স্বৈরাচারি আচরণের বিরুদ্ধে পাশ্চত্য মহলে কোন প্রতিবাদ উঠেনি। কারণ তারাও মিশরের রাজনীতির অঙ্গণে ইসলামপন্থিদের বিশাল উপস্থিতিতে খুশি হতে পারেনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও ইসলামপন্থিদের দ্রুত উত্থান নিয়ে চিন্তিত। তাই তারা আইন করে সে উত্থান রুখতে চায়। রাজনীতিতে ইসলাম নিষিদ্ধের মূল হেতু তো সেটিই।
ঈমানদারের দায়ভার
কিন্তু কথা হলো, ইসলামকে বিজয়ী করার দায়ভার তো প্রতিটি ঈমানদারের। মিশরে যা কিছু হলো বা বাংলাদেশে যা কিছু হচ্ছে –তা কি অপ্রত্যাশীত? ইসলামের শত্রুপক্ষটি রাজনীতি বা বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে ঈমানদারদের জন্য নিরাপদ স্থান করে দিবে সেটি কি ভাবা যায়? অতীতে কোথাও কি সেটি ঘটেছে? এবং ভবিষ্যতেও কি তা আশা করা যায়? বরং তাদের পক্ষ থেকে নানারূপ বাধাবিপত্তি আসবে, হত্যা ও নৃশংসতা চাপিয়ে দেয়া হবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া বিজয় তো আসে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। ঈমানদারের দায়ভার তো শুধু তাঁর দ্বীনের রাস্তায় লাগাতর জিহাদ করে যাওয়া। জান্নাতলাভের পূর্ব শর্ত হলো সেই জিহাদ। তাই পবিত্র কোরআনে রাব্বুল আ’লামিনের অতি সুস্পষ্ট ঘোষণা: “তোমাদের ভেবে নিয়েছো, (তোমরা এমনিতেই) জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ তো এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে ধৈর্যশীল।”–(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৪২)। প্রতিটি ঈমানদারের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এটি এক ভয়ংকর সাবধানবানী। জান্নাত প্রবেশের পূর্ব শর্ত কি -সেটি এ আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে। সেটি হলো জিহাদের রাস্তায় যোগদান এবং সে রাস্তায় ধৈর্যশীলতা। জিহাদের ময়দানে মু’মিনের বিনিয়োগ কতটুকু সেটি তিনি অবশ্যই পরিক্ষা করবেন। আর সে রাস্তায় অবিরাম টিকে থাকায় তার ধৈর্যই বা কতটুকু -সেটুকুও তিনি যাচাই করবেন। বলা হয়েছে: “তোমাদের কি ভেবে নিয়েছো যে তোমাদের এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হবে, এবং আল্লাহ জেনে নিবেন না তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুসলমানদের ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে? তোমরা যা করো সে বিষয়ে তো আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।”–(সুরা তাওবা,আয়াত ১৬)। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আরো সাবধানবানী হলো: “তোমরা কি হাজিদের পান করানো ও মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তাদের সমান মনে করো যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও আখেরাতের উপর এবং জিহাদ করে আল্লাহর রাস্তায়? আল্লাহর নিকট তারা সমান নয়। আল্লাহ জালেমদের হেদায়েত করেন না।”–(সুরা তাওবা, আয়াত ১৯)। ফলে যাদের জীবনে নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত, কোরআন-তেলাওয়াত, দরুদপাঠ, হাজিদের সেবা, মসজিদের খেদমত ও দান-খওরাত গুরুত্ব পেল অথচ গুরুত্ব পায়নি জিহাদ, তাদের জন্য উপরুক্ত আয়াতগুলিতে রয়েছে ভয়ানক দুঃসংবাদ।
আল্লাহতায়ালা হাশর দিনের প্রশ্নপত্র গোপন রাখেননি। কোর’আনের ছত্রে ছত্রে সেটি প্রকাশ করে দিয়েছেন। কিসে পাশ মার্ক আর কিসে ফেল মার্ক -সেটিও বলে দেয়া হয়েছে। তাই যারা কোর’আন বুঝে তারা সে প্রশ্নপত্র অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেয়। এমন ঈমানদারগণ শুধু নামায আদায়ের জন্য মসজিদই খোঁজে না, জিহাদের ময়দানও খোঁজে। তাই হাজার হাজার যুবক এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশ থেকে বহু হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এখন সিরিয়ায় ছুটেছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে ছুটেছিল আফগানিস্তানে। সাহাবায়ে কেরামের যুগে এজন্যই শতাধিক জিহাদে লোকবলের কোন কমতি পড়েনি। প্রায় ৮ শত বছর আগে জিহাদ লড়তে তুর্কি যুবকেরা হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলার মাটিতে ছুটে এসেছিল। বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন থেকে মুর্তিপুজার ন্যায় আদিম অসভ্যতা দূর হয়েছিল তো সে জিহাদের বরকতে।
কিন্তু আজ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলিমের জীবনে সে বিনিয়োগ কই? নদীর স্রোত থেমে গেলে নদীর বুক জুড়ে বিশাল চরা জেগে উঠে। নদী তখন ছোট ছোট মরা নদীতে পরিণত হয়। তেমনি উম্মাহর জীবনে জিহাদ থেমে গেলে মুসলিম ভূমি কাফের, ফাসেক, জালেম, মুনাফিক ও স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তদের দখলদারিতে চলে যায়। বাংলাদেশ তো সেটিই ঘটেছে। ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে কোন মুসলিম দেশ এরূপে অধিকৃত হতে দেখে নিঃসন্দেহে বলা যায়, দেশটির মুসলিমদের জীবনে জিহাদের সংস্কৃতি স্থান পায়নি। তাছাড়া জিহাদের ময়দানে মুসলিমদের মাঝে যতটা ঐক্য গড়ে উঠে সেটি জিহাদশূণ্য রাজনীতির ময়দানে গড়ে উঠে না। জিহাদে অবস্থান কালে গভীরতর হয় পরকালের ভাবনা, গুরুত্ব পায় আল্লাহকে খুশি করার আধ্যাত্মিকতা। অপর দিকে ক্ষমতালিপ্সার রাজনীতিতে যা গুরুত্ব পায় তা হলো পার্থিব স্বার্থ শিকার। ফলে বাড়ে বিরোধ। তাই মুসলিম উম্মাহর জীবনে যতদিন জিহাদ ছিল, ততদিন একতাও ছিল। এবং ছিল এশিয়া,আফ্রিকা ও ইউরোপ ব্যাপী এক বিশাল ভূগোল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এত বিরোধ ও বিভক্তি তো মুসলিম জীবনে জিহাদ না থাকার কারণে।
ইসলামের বিপক্ষ শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলাম নিষিদ্ধ করতে পারে। নিষিদ্ধ করতে পারে জিহাদ বিষয়ক বইপুস্তকও। কিন্তু ইসলাম ও মুসলিমগণ তো কোন কালেই শয়তান ও তার অনুসারিদের অনুমতি নিয়ে বাঁচেনি। তাছাড়া সে অনুমতি কি তারা কখনো পেয়েছে? বরং শত্রুশক্তির নানারূপ বাধাবিপত্তির মুখে মুসলিম তো বেঁচেছে লাগাতর জিহাদ করে। নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালনে মুসলিম কি কারো অনুমতি নেয়? তাই বুদ্ধিবৃত্তি ও রাজনীতির অঙ্গণে জিহাদের ন্যায় ফরজ ইবাদত পালনেও কি তারা কারো অনুমতির অপেক্ষায় থাকে? মুসলিমদের ভরসার স্থল তো একমাত্র সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ। আর আল্লাহতায়ালা যাদের সহায় হন, তাদের কি আর কোন সহায়তার প্রয়োজন পড়ে? তখন বিজয় কি কেউ রুখতে পারে? ঈমানদারির দায়ভার তো সে আল্লাহনির্ভর চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠা। তাতে লোপ পায় যেমন শত্রুশক্তির ভয়, তেমনি বিলুপ্ত হয় গায়রুল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা। মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য তো এভাবেই অনিবার্য হয়ে উঠে। মুসলমানের বিজয় তো এপথেই আসে। ১ম সংস্করণ ২২/০৩/২০১৪; ২য় সংস্করণ ০৩/০২/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018