নিষিদ্ধ জিহাদ ও সন্ত্রাসের আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 12, 2021
- Bangla Articles, মুসলিম জাহান
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ঈমানদারের মিশন ও জিহাদ
একমাত্র পাগল ছাড়া এ জীবনে সবাই নিজ নিজ লক্ষ্য ও মিশন নিয়ে বাঁচে। সেরূপ লক্ষ্য ও মিশনটি যেমন দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীর থাকে, তেমনি থাকে ঈমানদারেরও। মানুষ মূলত বাঁচে সে মিশন পূরণের লক্ষ্যে; পানাহার সে বাঁচায় সহায়তা দেয় মাত্র। তবে অলস ভাবে আমোদ-ফুর্তি নিয়ে বাঁচা যেমন মিশন হতে পারে, তেমনি হতে পারে বিশেষ একটি মহত্তর লক্ষ্যে নিজের জান, মাল ও সমুদয় সামর্থ্য বিলিয়ে দেয়া। সে লক্ষ্য ও মিশনটি নিজ খেয়াল-খুশিতে বেছে নেয়ার অধীকার কাফেরদের থাকলেও মু’মিনের নেই। মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ভূলটি হয় বাঁচার সামগ্রী অর্জনে নয়, বরং সেটি জীবনের এজেন্ডা বা লক্ষ্য স্থির করায়। অথচ এখানে ভূল হলে বাঁচার সকল কষ্ট ও প্রচেষ্টাই অনর্থক হয় –অবিকল ভূল পথে দৌড়ানোর মত।
প্রতিটি মানবকে সে মহাক্ষতি বাঁচানো ও তার প্রতিটি প্রচেষ্টাকে অর্থময় করার জন্যই হারাম-হালালের ন্যায় মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূ্র্ণ সে এজেন্ডাটি সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। পবিত্র কোরআনে মানব জীবনের সে মূল এজেন্ডাটি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এভাবে, “বলো (হে মুহাম্মদ) আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন-ধারন ও আমার মৃত্যু জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশ্যে। -(সুরা আন’আম, আয়াত ১৬২)। এ এজেন্ডা পূরণে মু’মিনের জন্য বেঁধে দেয়া মিশনটি হলো “আ’মারু বিল মারুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার”। অর্থ: ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল। সে মিশনটি আরো সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে এভাবে, “তোমরাই হচ্ছো শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদের খাড়া করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য। এ জন্য যে, তোমরা প্রতিষ্ঠা করবে ন্যায়ের এবং নির্মূল করবে অন্যায়ের এবং ঈমান আনবে আল্লাহর উপর।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১১০)। বস্তুত এ মিশনটি নিয়ে বাঁচাই হলো প্রকৃত মুসলিম রূপে বাঁচা। এখানে ভূল বা অবাধ্যতা হলে তা জাহান্নামে পৌঁছার কারণ হয়।
মহান আল্লাহতায়ালা মু’মিনের জীবনে স্রেফ আইন-কানূন ও মিশনই বেঁধে দেননি। বরং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলের কাজে শক্তি ও সামর্থ্য বাড়াতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীও দান করেছেন। তিনি যেমন দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য দিয়েছেন, তেমনি দিয়েছেন নানারূপ সম্পদ ও সামগ্রিক সামর্থ্য। এবং পরীক্ষা হয় কীরূপে সে সামর্থ্যের বিনিয়োগ হয় –তা থেকে। মহান আল্লাহতায়ালা সুরা হাদিদে ধাতব লোহাকে সেরূপ এক কল্যানকর নেয়ামত রূপে উল্লেখ করেছেন। সে আমলে কামান, বন্দুক বা গোলা-বারুদ ছিল না। যুদ্বাস্ত্র বলতে বুঝাতো ঢাল-তলোয়ার, বর্শা-বর্ম ও তীর-ধনুক। সেগুলো নির্মিত হতো লৌহ থেকেই। মু’মিনদের তাগিদ দেয়া হয়েছে কোর’আনী বিধানের প্রয়োগে এ লৌহদন্ডকে ব্যবহার করতে। তাই বলা হয়েছে, “আমি রসূলদের প্রেরণ করেছি সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়ে, তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি -যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ যাতে রয়েছে প্রচণ্ড রণশক্তি এবং মানুষের জন্য রয়েছে বহুবিধ উপকার। এটি এজন্য যে আল্লাহ জেনে নিবেন কারা তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে না দেখে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর ও পরাক্রমশালী।” –(সুরা হাদীদ, আয়াত ২৫)।
ইসলামের মূল মিশনটি বুঝতে হলে অতিশয় জরুরী হলো সুরা হাদীদের এ আয়াতটির মর্মার্থ বুঝা। যাদের ধারণা, ইসলামে জিহাদ বা যুদ্ধ-বিগ্রহ নাই, আছে জিহাদ-বর্জিত সুফিবাদ, আছে দোয়াদরুদ, নামায-রোযা, হজ-যাকাত ও তাবলিগ -তাদের সে দাবী এ আয়াত পুরাপুরি রদ করে দেয়। ইসলাম চায় বিশ্বজুড়ে ন্যায়-নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে। ইসলাম যে শা্ন্তির ধর্ম সেটি দোয়া-দরুদ, নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতে প্রমাণিত হয়। সেজন্য দুর্বৃত্তির নির্মূল ও ন্যায়-ইনসাফের প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এবং সে লক্ষ্যে পৌঁছতে যুদ্ধ অনিবার্য। কারণ, অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা নিয়ে ময়দানে নামলে সশস্ত্র শয়তানী শক্তিও তাদের অস্তিত্ব বাঁচাতে ধেয়ে আসে। কারণ, জুলুম ও অন্যায় নিয়ে যাদের কারবার তারা নিরস্ত্র নয়, এবং বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণে রাজী নয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে চাই প্রচণ্ড রণশক্তি, চাই লড়াকু জনশক্তিও। মহান আল্লাহতায়ালা দেখতে চান, কে সে লড়াই’য়ে তাঁর ও তাঁর রাসূলের পক্ষে দাঁড়ায় এবং কে দাঁড়ায় তাঁর বিপক্ষে তথা শয়তানের দলে। ঈমানের এটিই চুড়ান্ত পরীক্ষা। সে পরীক্ষায় কে ব্যর্থ হয়, আর কে সফল হয় -সেটি দেখতেই মু’মিনদের জীবনে জিহাদকে অনিবার্য করা হয়েছে। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার এ পরিকল্পনাটি অতি স্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত হয়েছে। বলা হয়েছে, “তোমরা কি মনে করেছে নিয়েছো এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ জানলেন না তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদ করলো এবং ছবর ধারণ করলো।” – (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৪২)।
তাই যারা ঈমান আনে তাদের শুধু নামাযের জায়নামাযে দাঁড়ালে চলে না; ঈমাদারীর প্রমাণ দিতে তাদেরকে জিহাদের ময়দানেও দাঁড়াতে হয়। তাই নবীজী (সাঃ)র শাসনামলে ইসলাম দোয়া-দরুদ, নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতে সীমিত ছিল না; সে ইসলামে বহু রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধও ছিল। সাহাবায়ে কেরামগণ তাই নবীজী (সাঃ)’র পিছনে স্রেফ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব সারেননি, বার বার রণাঙ্গণেও হাজির হয়েছেন। জিহাদের ময়দানে দাঁড়ানো যে অতি গুরুত্বপূর্ণ, উপরুক্ত আয়াতে বস্তুত সেটিই বুঝানো হয়েছে। জিহাদের নামে কেউ গর্হিত কিছু করলে তাকে গালাগালাজ করায় নিজের উপর অর্পিত জিহাদের দায়ভার শেষ হয় না, বরং বৃদ্ধি পায়। তখন সে ব্যক্তির উপর বাড়তি দায়ভারটি হয়, নিজে ময়দানে নেমে জিহাদের সঠিক নমুনা পেশ করা। কিন্তু মুসলিম বিশ্বজুড়ে সেটি হচ্ছে না। বরং অধিকাংশ মুসলিমগণ কাফেরদের সাথে গলা মিলিয়ে এমনকি সত্যিকার মুজাহিদদেরও বদনাম করছে। ইসলামের শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যারা নিজেদের প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে তাদেরকেও এরা সন্ত্রাসী বলছে। জিহাদের নামে ইসলামের বদনাম হচ্ছে -এ কথা তাদের মুখে মুখে। কিন্তু তাদের নিজেদের জীবনে কোথায় সে জিহাদ? সাহাবায়ে কেরামের ন্যায় তাদের মাঝে কোথায় সে জান-মাল বিনিয়োগের প্রেরণা? প্রশ্ন হলো, দেশে দেশে ইসলাম ও ইসলামের শরিয়তি বিধান যেভাবে পরাজিত, বিজয়ীর বেশে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত স্বৈরাচারীদের দুর্বৃত্ত শাসন –তারপরও মুসলিম জীবনে জিহাদ না থাকলে জিহাদ আর কোথায় থাকবে?
ঈমানী দায়ভার
ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিছক রাজনীতি নয়, খেয়াল-খুশির বিষয়ও নয়। প্রতিটি মুসলিমের জীবনে এটি গুরুতর ঈমানী দায়ভার। সে ঈমানী দায়ভার পালনে সামর্থ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলামে রয়েছে নামায-রোযা, হজ-যাকাত, যিকর-ফিকরের ন্যায় ইবাদতের ট্রেনিং প্রোগ্রাম। সে সামর্থ্যের বলে মু’মিন ব্যক্তি জীবনের প্রতি পদে এবং রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের প্রতি অঙ্গণে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে দাঁড়ায়; এবং কখনোই মিথ্যা, অন্যায় ও জুলুমের পক্ষ নেয় না। সে সামর্থ্য সৃষ্টি না হলে বুঝতে হবে তার সকল ইবাদত-বন্দেগী কার্যতঃ নিস্ফল হয়েছে। ব্যক্তির ঈমানদারি স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোয়; এবং বেঈমানী ও মুনাফেকি বেরিয়ে আসে যখন সে ইসলামের শত্রুপক্ষে দাঁড়ায়, ভোট দেয় বা অস্ত্র ধরে। নিস্ফল ইবাদতকারীগণ এভাবেই শয়তানের পক্ষ নেয় এবং মুসলিম দেশে ইসলামকে পরাজিত রাখে।
শরিয়তের বিধানে গুরুতর অপরাধ শুধু নিরস্ত্র মানুষের মাথার উপর বোমাবর্ষন, নাশকতা, গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনই নয়। বরং অতি গুরুতর অপরাধ হলো, মুসলিম রাষ্ট্র ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার কাজে যুদ্ধবিমান, মিজাইল, ট্যাংক, কামান ও বোমা নির্মাণে বা ক্রয়ে অর্থ জোগানো। কাফের দেশের নাগরিকগণ সে অর্থ জোগায় রাজস্ব দিয়ে। সে গোনাহ থেকে বাঁচতেই ইসলামে হিজরতের বিধান দেয়া হয়েছে। শরিয়তের বিধানে শাস্তিযোগ্য ভয়ানক অপরাধ হলো ইসলামের চিহ্নিত শত্রুদের রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহকে নীরবে বা সরবে সমর্থন দেয়া; বা তাদের সাথে জোটবদ্ধ হওয়া। মহান নবীজী (সাঃ)র শাসনামলে সে গুরুতর অপরাধের কারণে মদিনার ইহুদী গোত্র বনু কোরাইজার সকল সাবালক পুরুষকে হত্যা ও তাদের নারী-শিশুকে বন্দী করা হয়েছিল। অথচ তারা যে অস্ত্র হাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধ যুদ্ধে নেমেছিল –তা নয়। তাদের অপরাধ, খন্দকের যুদ্ধকালে সদ্য বেড়ে উঠা মুসলিম উম্মাহর নির্মূলে তারা হামলাকারী আরবের কাফের কোয়ালিশনের সাথে একাত্ম হয়েছিল। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে এরূপ অপরাধীদের সংখ্যা কি কম? যারা কাশ্মীর, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়ার ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে গণহত্যায় ব্যস্ত তাদের সাথে একাত্মতা হওয়াটিই হলো এ অপরাধীচক্রের রাজনীতি। একাত্তরের যুদ্ধে এরাই বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় কাফের সেনাবাহিনীকে ডেকে এনেছিল তাদের ঘরে বিজয় তুলে দিয়েছিল।
প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়ভার হলো, জীবনের প্রতিপদে, প্রতি যুদ্ধে এবং রাজনীতির প্রতি লড়াই’য়ে সে ইসলামের পক্ষ নিবে। যে কোন বিষয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটি কবিরা গুনাহ। মহান আল্লাহতায়ার পক্ষ থেকে নির্দেশিত মিশনটি নিয়ে বাঁচার মধ্যেই শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার মর্যাদা। অন্যথায় পতন, পরাজয় ও অপমান অনিবার্য। তখন নেমে আসে কঠিন আযাব –সেটি যেমন দুনিয়ার জীবনে, তেমনি আখেরাতের জীবনে। এ পবিত্র মিশন পূরণে মু’মিন ব্যক্তি তার সামগ্রিক শারিরীক, আর্থীক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যের বিনিয়োগ করে। এমনকি প্রাণও দান করে। তখন ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলে মু’মিনের জীবনে আমৃত্যু লড়াই শুরু হয়। মুসলিমের জীবনে সেটিই হলো পবিত্র জিহাদ। এ পথে চলার মাঝেই সে মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাপূরণ ও পরকালে জান্নাতপ্রাপ্তির স্বপ্ন দেখে। তাই ঈমানদার ব্যক্তি কখনোই স্বৈরাচারী, সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী, জাতীয়তাবাদী বা ফ্যাসিবাদী দুর্বৃত্তদের দলে শামিল হয় না। তাদের সমর্থক বা সৈনিক হয় না। ইসলামে শাস্তিযোগ্য গুরুতর হারাম কর্ম শুধু মানবহত্যা, মদ্যপান, সূদ-ঘুষ ও ব্যাভিচার নয়, বরং অপরাধ হলো ইসলামের শত্রুপক্ষের সৈনিক বা সমর্থক হওয়া।
ইসলাম নিয়ে অজ্ঞতা যখন গভীর এবং পথভ্রষ্টতা যেখানে বিশাল –একমাত্র তখনই কোন মুসলিম এরূপ হারাম কাজে লিপ্ত হতে পারে। অথচ বাংলাদেশে ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে মানবহত্যা, মদ্যপান, সূদ-ঘুষ ও ব্যাভিচারই শুধু বাড়েনি, বরং বিপুল ভাবে বেড়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয়ে জান-মাল বিনিয়োগের ন্যায় অতিশয় নিষিদ্ধ ঘৃণ্য কর্ম। এভাবে বিপুল ভাবে বেড়েছে কবিরা গুনাহ ও মীর জাফরদের সংখ্যা। এসব মীর জাফরদের কারণে মুসলিম দেশে বিদেশী কাফেরগণই শুধু বিজয়ী হয়নি, দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে তাদের অধিকৃতিও। এবং শক্তি ও অধিকৃতি বেড়েছে ইসলামের দেশী শত্রুদেরও। তাতে বিলুপ্ত হয়েছে জিহাদ, খেলাফত, হদুদ ও শরিয়তের ন্যায় ইসলামের অতি মৌল বিধান। এভাবে ইসলাম তার নিজ ভূমিতেই পরাজিত হয়েছে। এবং অপরিচিতি বেড়েছে নবীজী (সাঃ)র ইসলামের।
সন্ত্রাসের আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন ও অধিকৃতি
ত্রাস সৃষ্টির প্রতি চেষ্টাই সন্ত্রাস। সত্যের শত্রুগণ নিরস্ত্র নয়। যুদ্ধহীনও নয়। তাদের রয়েছে ত্রাস সৃষ্টির তথা সন্ত্রাসের বিপুল সামর্থ। তাদের মধ্য থেকেই জন্ম নিয়েছে নমরুদ, ফিরাউন, হিটলার, বুশ, ব্লেয়ারের ন্যায় মানবহত্যার নৃশংস নায়কগণ। তারা শুধু ধর্মশূণ্যই নয়, আদর্শশূণ্যও। ধর্ম ও আদর্শের শূণ্যতা পূরণ করেছে মিথ্যাচার ও সহিংসতা দিয়ে। নিজেদের গড়া মিথ্যাচার দিয়ে গড়েছে নিত্যনতুন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট –যেমন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার গড়েছিল ইরাক যুদ্ধের বেলায়। লক্ষ্য একটিই; সেটি বিশ্বময় শোষণ ও আধিপত্য বিস্তার। সন্ত্রাসের সামর্থ্যই তাদের মূল সামর্থ্য। যুগে যুগে সামরিক দখলদারি, বর্ণবাদী ক্লিন্জিং, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, শত শত যুদ্ধ ও বিশ্বযুদ্ধ জন্ম দিয়েছে তারাই। আধিপত্যবাদ, সন্ত্রাস ও শোষণপ্রক্রিয়া নিয়ে বাঁচাই তাদের সংস্কৃতি। তাদের সন্ত্রাসের ভান্ডারে রয়েছে হাজার হাজার পারমানবিক অস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্র, যুদ্ধ বিমান, বিমানবাহী জাহাজ, সাবমেরীন ও লক্ষ লক্ষ সৈন্য। তাদের কারণে সন্ত্রাস এখন আর কোন বিশেষ দেশ বা মহাদেশে সীমিত নয়, বরং তা পেয়েছে বিশাল এক আন্তর্জাতিক রূপ। বিশ্ব রাজনীতি বস্তুত এরূপ সন্ত্রাসীদেরই কবজায়।
বিশ্বব্যাপী নিজেদের অধিকৃতি বাঁচাতে সাম্রাজ্যবাদী শাসকচক্র গড়েছে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন। গড়েছে জাতিসংঘ। দুর্বল দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অধিকৃতি এবং মুসলিম উম্মাহর উপর চাপিয়ে দেয়া বিভক্তির মানচিত্রের উপর তারা বৈধতার সিল লাগায় জাতিসংঘের হাত দিয়ে। তাদের কারণেই ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আফগানিস্তানসহ কোন দেশের সমস্যার সমাধানই আজ আর সম্ভব নয়। অসম্ভব হয়েছে মুসলিম বিশ্বের বুক থেকে বিভক্তির দেয়াল নির্মূল করা। জাতিসংঘের কাজ হয়েছে যুদ্ধ ও আগ্রাসনের রাজনীতিকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখা এবং সে সাথে আগ্রাসী শক্তির আগ্রাসন ও অপকর্মের দ্রুত ন্যায্যতা দেয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও ইরাক দখলের বিষয়টি তাই নিন্দিত না হয়ে বরং বৈধতা পেয়েছে। বৈধতা পেয়েছে এমনকি আবু গারিব ও গোয়ান্তো নামো বে’র ন্যায় বর্বর নির্যাতন প্রক্রিয়াও। আধিপত্য বাঁচানোর লক্ষ্যে তারা শত শত যুদ্ধ এবং দুটি বিশাল বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। হাজার হাজার টন বোমার পাশাপাশি পারমানবিক বোমাও নিক্ষেপ করেছে। যুদ্ধ, সন্ত্রাস, হত্যা, ধর্ষণ, অধিকৃতি ও লুণ্ঠন তাদের হাতে বিশ্বময় বিস্তার-লাভ করেছে। প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষকে হত্যা করেছে দু’টি বিশ্বযুদ্ধে।
জিহাদের অনিবার্যতা
সাম্রাজ্যবাদী কোয়ালিশনের কামানের মুখ এখন মুসলিম বিশ্বের দিকে। খৃষ্টান জগতের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হয়েছে। তাদের সম্মিলিত যুদ্ধ এখন এখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া –এ উভয় দেশের হাজার হাজার বোমা পড়ছে এখন মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রভূমি সিরিয়ায়। হাজার হাজার বোমা বর্ষিত হচ্ছে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের নগর, বন্দর ও গ্রামগঞ্জের উপর। বিধ্বস্ত হয়েছে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনী। তারা বিশ লাখের বেশী নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে একমাত্র আফগানিস্তান ও ইরাকে। বিদেশী আগ্রাসনের পাশাপাশী অধিকাংশ মুসলিম দেশ এখন অধিকৃত তাদের খলিফা দেশী স্বৈরাচারীদের হাতে। “ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল” যাদের জীবেনর মূল মিশন, তারা কি নিজ দেশে এরূপ নৃশংস দুষ্কর্মের নীরব দর্শক হতে পারে? মু’মিনের জীবনে জিহাদ তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। সেটিরই বাস্তব আলামত হলো সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও কাশ্মীরের রনাঙ্গণ। মু’মিনের জীবনে ঈমান যে বেঁচে আছে সেটি বুঝা যায় মূলত এই জিহাদ থেকেই।
ঈমানদারের জীবনে ঈমান ও জিহাদ একত্রে অবস্থান করে। ঈমান থাকলে জিহাদ থাকবেই। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা জিহাদের সে অনিবার্যতা বুঝিয়েছেন এভাবে, “একমাত্র তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে এবং তারপর আর কখনোই সন্দেহ পোষণ করে না; এবং আল্লাহর রাস্তায় নিজের জান ও ধনসম্পদ দিয়ে জিহাদ করে। ঈমানের দাবীতে তারাই সাচ্চা। ” – ( সুরা হুজরাত, আয়াত ১৫ )। জিহাদ যে প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ, মুফাস্সিরগণ সেটির পক্ষে দলিল রূপে পেশ করেন সুরা হুজরাতের এই আয়াত। তবে জিহাদের অনিবার্যতা বুঝাতে এ আয়াতটিই একমাত্র আয়াত নয়। পবিত্র কোর’আনে এরূপ ঘোষণা বার বার এসেছে। সুরা নিসায় বলা হয়েছে, “সুতরাং পরকালের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে যারা দুনিয়ার এ জীবনকে বিক্রয় করেছে তারা যেন অবশ্যই আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে এবং অতঃপর নিহত হয় কিংবা বিজয় অর্জন করে, তাদেরকে নিশ্চয়ই আমি মহা প্রতিদান দান করবো। -(সুরা নিসা, আয়াত ৭৪।) বলা হয়েছে, “যারা ঈমানদার তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়, আর যারা কাফির তারা যুদ্ধ করে তাগুত তথা শয়তানের পথে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল। -(সুরা নিসা, আয়াত ৭৬)। উপরুক্ত আয়াতের অর্থঃ যুদ্ধ আসে কাফের বা মুসলিম –সবার জীবনেই। তবে মুসলিমের জীবনে সে যুদ্ধটি স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালার পথে। জিহাদ যে প্রতিটি মু’মিনের জীবনে ফরজ, সে ঘোষনাটি যেমন পবিত্র কোর’আনে এসেছে, তেমনি এসেছে হাদীসেও। মুসলিম শরীফের হাদীসঃ নবীজী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জীবনে কখনোই জিহাদে অংশ নেয়নি এবং জিহাদের নিয়েতও করেনি সে ব্যক্তি মুনাফিক। তাই কারো জিহাদ ও প্রাণের কোরবানীকে স্রেফ নিন্দা করার মধ্য দিয়ে জিহাদের দায়ভার থেকে মুক্তি মেলে না। অন্যের জিহাদ ভাল না লাগলে দায়িত্ব তো নিজে উত্তম জিহাদের নমুনা পেশ করা।
জিম্মি ইসলাম ও অধিকৃতি শত্রুপক্ষের
মুসলিম দেশগুলিতে ইসলাম নিজেই আজ জিম্মি। সে জিম্মিদশাটি মুসলিম নামধারী ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে। জিম্মি মানুষ যেমন তার নিজের অধীকার হারায়, তেমনি ইসলাম হারিয়েছে তার নিজস্ব বিধান প্রয়োগের অধীকার। শরিয়তি বিধান তাই স্থান হারিয়েছে মুসলিম দেশের আদালতে। কোন দেশ যখন ইসলামের দেশী বা বিদেশী শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত হয় এবং আইন-আদালত থেকে যখন বিলুপ্ত হয় শরিয়তি বিধান –তখন ইসলামের জন্য ঘটে এক বিশাল পরাজয়। এমন দেশে জিহাদ না থাকাটাই অভাবনীয়। সেটি সম্ভব দেশটি মুসলিমশূণ্য এবং মুসলিমগণ ঈমানশূণ্য হলে। একটি দেশ কতটা ইসলামশূন্য এবং মুসলিমগণ কতটা ঈমানশূণ্য -সেটি পরিমাপের জন্য সেদেশের মসজিদ ও মাদ্রাসার সংখ্যা গণনার প্রয়োজন আছে কি? সেদেশে জিহাদ, শরিয়ত, হুদুদ ও খেলাফতের উপস্থিতি কীরুপ -সেটিই চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মাত্র একটি জেলায় যতগুলি মসিজদ আছে খোলাফায়ে রাশেদার সময় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তা ছিল না। টঙ্গির তাবলীগ এজতেমাতে যত লোকের জমায়েত হয় তা সে আমলে কোথাও সেটি হয়নি। অথচ সে আমলই ছিল ইসলামের সবচেয়ে গৌরব যুগ। কারণ তখন দেশের আইন-আদালত, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রণাঙ্গণসহ সর্বত্র পবিত্র কোর’আন বিজয়ী বিধান রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
অথচ বাংলাদেশের ন্যায় দেশে ইসলামশূণ্যতা ও ঈমানশূণ্যতা সর্বত্র। মু’মিনের জীবনে “ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল” মিশন হলে কী হবে, দেশটি দুর্নীতিতে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে ৫ বার। যারা মসজিদ গড়ে বা তাবলীগের এজতেমাতে উপস্থিতি বাড়ায় বা ইসলামের নামে দল গড়ে -এ বিশাল ব্যর্থতা নিয়ে তাদের কোন পেরেশানী নাই। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় তাদের বিবেক “বোতাম আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান”। তারা এতটাই বিবেকশূণ্য যে দেশের আইন-আদালত থেকে শরিয়তের বিলুপ্তি নিয়ে তাদের মাঝে কোন মাতম বা দুঃখবোধ নাই। দুঃখবোধ নাই, ১০ বা ১৫ বছরের শিক্ষা জীবনে ছাত্র-ছাত্রীদের কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা শোনানোর যে ব্যবস্থা নেই -তা নিয়েও। অথচ মুসলিম দেশে শিক্ষাব্যবস্থার মূল দায়িত্ব তো ছাত্রদের মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাটি নিশ্চিত করা। ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে মুসলিম শিশুদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে। এভাবে জাহান্নামে নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে অতি পরিকল্পিত ভাবে। অথচ অনেকের গর্ব টঙ্গির এজতেমায় লোকসংখ্যা ও দেশে মসজিদ ও মাদ্রাসার সংখ্যা নিয়ে। আলেমদের মাঝে আগ্রহ নেই শরিয়তে প্রতিষ্ঠা নিয়েও। অথচ পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার সুস্পষ্ট ঘোষণা “যারা আমার নাযিলকৃত বিধান তথা শরিয়ত অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেনা তারা কাফের। …তারা জালেম। …তারা ফাসেক। -(সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪, ৪৫ ও ৪৭)। বাংলাদেশের মত দেশগুলিতে ইসলামের নামে যা বেড়েছে সেটি ব্যবসা। ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে জনগণের পকেটে যত সহজে হাত দেয়া যায় সেটি অন্যভাবে সম্ভব নয়। তখন নানারূপ দল, সমিতি বা প্রতিষ্ঠান গড়ে নিজের ও নিজ আপনজনদের আয়-উপার্জন বাড়ানো যায়। মুসলিম দেশগুলোতে দ্বীনের প্রতিষ্ঠা না বাড়লে কি হবে, এরূপ আয় বাড়ানো নিয়ে শুরু হয়েছে দিন-রাত প্রতিযোগীতা। ইসলাম মূলত এদের হাতেই আজ জিম্মি।
মিথ্যচার কেন জিহাদের বিরুদ্ধে?
ঈমানশূন্যতার পথ ধরেই মুসলিমের মাঝে আসে জিহাদশূণ্যতা। ইসলামের শত্রুপক্ষ চায়, বীনা যুদ্ধে বা সামান্য যুদ্ধে মুসলিম ভূমিতে বিজয়লাভ। চায়, নিজেদের প্রতিষ্ঠিত অধিকৃতিকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখতে। এজন্যই তাদের লক্ষ্য, মুসলিমদের শক্তিহীন ও প্রতিরোধহীন করা। মুসলিমগণ যেহেতু প্রতিরোধের প্রেরণা পায় ঈমান ও ঈমানের গভীরতা থেকে উত্থিত জিহাদ থেকে, তাদের মূল স্ট্রাটেজী তাই মুসলিমদের ঈমানশূণ্য ও জিহাদশূণ্য করা। ঈমানশূণ্যতা ও জিহাদশূণ্যতা বাড়াতে ইসলামের শত্রুপক্ষ যেমন কোরআন শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রন করে, তেমনি নিষিদ্ধ করে জিহাদকেও
শয়তান ও তার অনুসারীগণ নিজদের শত্রুকে চিনতে ভূল করেনা। ভূল করেনি জিহাদের শক্তি ও গুরুত্বকে বুঝতেও। যেখানেই মহান আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদ, সেখানেই তারা নিজ দর্শন, সংস্কৃতি, রাজনীতি, আইন-আদালত ও ইন্সটিটিউশনের মৃত্যু দেখে। এমন ভয় তারা নামায-রোযা, হজ-যাকাতের মাঝে দেখে না। জিহাদই হলো মহান আল্লাহতায়ালার পথে মু’মিনের জানমাল বিনিময়ের পবিত্র ক্ষেত্র। এখানেই ঈমানের চুড়ান্ত পরীক্ষাটি হয়। ধরা পড়ে কে কতটা মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন ও তাঁর দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় কোরবানী পেশে আগ্রহী। অতীতে দেশে দেশে ইসলামের বিজয় এসেছে জিহাদের ময়দানে বিশাল বিনিয়োগের বিনিময়েই। ইসলামের শত্রুপক্ষ তাই মসজিদে, হজে বা তাবলিগ জামায়াতের এজতেমায় লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েতে ভয় পায় না। তারা প্রচন্ড ভয় পায় জিহাদের ময়দানে মুজাহিদদের হাজিরা দেখে। তাই নামায-রোযা, হজ বা তাবলিগের উপর তারা বিধিনিষেধ আরোপ করে না। কিন্তু জিহাদকে চিত্রিত করে সন্ত্রাস রূপে। সেটি করে জিহাদের পবিত্রতা ও গুরুত্ব বিনষ্টের লক্ষ্যে।
জিহাদ কখনোই সন্ত্রাস নয়। জিহাদ জিহাদই। ঈমানদার মাত্রই মুজাহিদ হয়, কখনোই সে খুনি বা সন্ত্রাসী হয়না। সন্ত্রাসের যেমন নিজস্ব সংজ্ঞা রয়েছে, তেমনি সংজ্ঞা রয়েছে জিহাদেরও। জিহাদের গুরুত্ব ও পবিত্রতা তার নিয়তের মাঝে। জিহাদের লক্ষ্য মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাপূরণ। জিহাদে যারা নিজেদের জানমালের কোরবানী পেশ করে তারা ফেরেশতা নেয়; তাদের জীবনেও ভূল-ভ্রান্তি ঘটে। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠা ও তাঁর শরিয়তি বিধানকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে নিজেদের প্রাণের কোরবানীই তাদের সকল ভূলত্রুটি ও গোনাহকে পাকসাফ করে দেয়। ফিরাউনের দরবারে যে ক’জন যাদুকর প্রতিযোগীতায় নেমেছিল তারা সত্ত্বর নিজেদের ভ্রষ্টতা বুঝতে পেরেছিল। তাদের চোখে ধরা পড়েছিল হযরত মূসা (আঃ)এর প্রচারিত দ্বীনের সত্যতা। তারা সাথে সাথে মহান আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান এনেছিল। কিন্তু সে সত্যকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছিল ফিরাউন ও তার সহচরগণ। ফলে যাদুকরদের শান্তিপূর্ণ ইসলাম কবুলের বিরুদ্ধে ফিরাউন নৃশংস সন্ত্রাসে নেমেছিল। তাদের হাত-পা কেটে ও শূলে চড়িয়ে হত্যায় নেমেছিল। কিন্তু যাদুকরগণ তাতে দমেনি। ফিরাউনের কাছে আত্মসমর্পণের বদলে নির্মম ভাবে নিহত হওয়াকে তারা শ্রেয় মনে করেছিল। কারণ তারা বুঝেছিল, নির্যাতন সয়ে ও নিজের জান দিয়ে যদি জান্নাত জুটে তবে সেটিই হবে শ্রেষ্ঠ পাওয়া। এটিও জেনেছিল, ফিরাউনের কাছে আত্মসমর্পণে তাদের প্রাণ বাঁচালও তা অনন্ত-অসীম কালের জন্য নিশ্চিত করবে জাহান্নামের আগুণকে।
সর্বশ্রেষ্ঠ সামর্থ্য ও সেরা পুরস্কার
সত্য আবিস্কার ও সত্যের পক্ষে ত্যাগ ও প্রাণদানের সামর্থ্যই হলো মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সামর্থ্য। সে সামর্থ্য আনে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার। সেটি অনন্ত-অসীম কালের জন্য জান্নাতপ্রাপ্তি। এক্ষেত্রে ব্যর্থতাই জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। সে ব্যর্থতা আনে লক্ষ কোটি বছর তথা অসীম কালের জন্য জাহান্নামের আগুণ। লক্ষ্যণীয়, বহু নামাযী-রোযাদার, এমন কি বহু আলেমের জীবনে এরূপ কোরবানীর সামর্থ্য দেখা যায় না। সত্যের আবিস্কারে ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতার আলামতটিই বিশাল। ফিলে মুসলিম দেশে এরূপ আলেমদের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়লেও ইসলামের বিজয় ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা একটুও বাড়েনি। সারা জীবন ধর্মকর্ম করার পরও এমন সামর্থ্য বনি ইসরাইলের বহু বৃদ্ধ আলেমের মাঝেও সৃষ্টি হয়নি। তারা বরং ইতিহাস গড়েছে মিথ্যার কাছে আত্মসমর্পণ ও জালেমের পক্ষে প্রাণ কোরবানীর। তাদের হাতে এজন্যই হযরত মূসা (আঃ)এর নাযিলকৃত শরিয়তি বিধান প্রতিষ্ঠা পায়নি। তারা হযরত ঈসা (আঃ)কে জেরুজালেমের কাফের রোমান গর্ভনরের হাতে তুলে দিয়েছিল এ দাবী নিয়ে, যেন তাঁকে হত্যা করা হয়। বনি ইসরাইলের এরূপ আলেমদের মহান আল্লাহতায়ালা ভারবাহী গাধা বলেছেন। একই পথ ধরেছে মুসলিম উম্মাহর বর্তমান আলেমগণ।
অথচ ইসলাম কবুলের পূর্বমুহুর্তেও ফিরাউনের দরবারের যাদুকরগণ যাদুর ন্যায় কবিরা গুনাহতে লিপ্ত ছিল। ইসলাম কবুলের সাথে সাথে তারা মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের পক্ষে সাক্ষ্যদান ও সে পথে প্রাণদানের মাঝেই মহা সাফল্য দেখেছেন। এরাই প্রকৃত শহীদ। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা এমন শহীদদের মৃত বলা হারাম ঘোষণা দিয়েছেন; এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিনা হিসাবে জান্নাতপ্রাপ্তির। সুসংবাদ দিয়েছেন নিহত হওয়ার সাথে সাথে গায়েব থেকে খাদ্যপ্রাপ্তির। সত্য আবিস্কার, সত্যের উপর অটল বিশ্বাস ও সত্যের পক্ষে তাদের কোরবানীর সামর্থ্যে মহান আল্লাহতায়ালা এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে পবিত্র কোরআনে সে ঘটনা তিনি বার বার উল্লেখ করেছেন। এভাবে বিশ্ববাসীর সামনে তাদেরকে আদর্শ ঈমানদারীর মডেল রূপে খাড়া করেছেন। ঈমানের দাবীতে এরাই সাচ্চা। মহান আল্লাহতায়ালার বাহিনীর এরূপ সাচ্চা সৈনিকগণ প্রতি যুগেই শয়তানী শক্তির কাছে হত্যাযোগ্য শত্রু গণ্য হয়েছে। অথচ সত্যের পক্ষে সাক্ষ্যদান ছাড়া এ নিরস্ত্র ব্যক্তিগণ কোনরূপ অপরাধই করেনি। দুর্বৃত্ত ফিরাউন এরপরও তাদেরকে অতি নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল। তাদেরকে দেশের নিরাপত্তার শত্রু রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। সে অভিন্ন স্ট্রাটেজী ইসলামের আধুনিক শত্রুদেরও। সে স্ট্রাটেজীর অংশ রূপেই মুসলিম দেশে জিহাদ নিষিদ্ধ হয়; এবং অপরাধ রূপে গণ্য হয় শত্রুপক্ষের অধিকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। অপরদিকে যারা দেশে দেশে সামরিক আগ্রাসন, শত শত শহর ধ্বংস ও লক্ষ লক্ষ মানব হত্যার সাথে জড়িত -সেসব সন্ত্রাসীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন। ০৪/০৮/২০১৬
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018