প্রসঙ্গ জঙ্গি ইসলাম ও মডারেট ইসলাম
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 22, 2020
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিজয় শত্রুশক্তির
নবীজী (সাঃ)র যুগে ইসলামের নানা রূপ ও নানা ফেরকা ছিল না। ছিল না শিয়া ও সূন্নী ইসলাম, সূফী ইসলাম এবং ওহাবী ইসলামের অস্তিত্ব। তেমনি মডারেট ইসলাম, জঙ্গি ইসলাম বা চরমন্থি ইসলাম বলেও কিছু ছিল না। সেদিন ছিল ইসলামের একটি মাত্র রূপ। ইসলামের সে সনাতন রূপটি কোথাও বেঁচে নাই। বেঁচে াবেআছে স্রেফ কোরআন-হাদীসের মাঝে। আজকের মুসলিমদের বড় সমস্যা হলো, কোরআন- হাদীসের সে শিক্ষা থেকে তারা দূরে সরেছে। তাদের কাছে সবচেয়ে অপরিচিত ও অজানা রয়ে গেছে নবীজী (সাঃ)’র ইসলাম। ফলে তারা বিস্মিত হয় ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কথা শুনে। এবং আরো বিস্মিত হয় জিহাদের কথা শুনে। কারণ, তারা যে ইসলামের সাথে পরিচিত সে ইসলামে মসজিদ-মাদ্রাসা, খানকা, দরগাহ, তাবলিগ, ছিল্লাহ, গাশত, তাসবিহ-তাহলিল, তরিকত, মারেফত, পীর-মুরিদী, ইসলামী দল ও দলীয় ক্যাডারের কথা আছে। নির্বাচনের কথাও আছে। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কথা নেই। জিহাদও নাই। ইসলামের নামে প্রাণদানের কথাও নাই। তারা কোরআন হাদীস পড়লেও তা পড়ে তাদের নিজ ফিরকা, নিজ দল ও নিজ মজহাবের ইসলামকে অন্য মজহাব, অন্য দল, অন্য পীর ও অন্য ফিরকার মোকাবেলায় উত্তম রূপে প্রমাণ করার লক্ষে। ইসলামকে রাষ্ট্রের বুকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে যেমন নয়, তেমনি নবী করীম (সাঃ)’র আমলের ইসলামকে জানার জন্যও নয়। এবং সেটি হলে নবীজী (সাঃ)’র আমলের ইসলাম তাদের কাছে এতো অপরিচিত থাকে কি করে? মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামের শরিয়তী বিধানই বা এতো অপরাজিত হয় কি করে?
মানব সমাজে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানটি হলো রাষ্ট্র। সেটি যদি ইসলামের শত্রু পক্ষের দখলে যায় তখন কি সে সমাজে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ঘটে? সম্ভব হয় কি পূর্ণদ্বীন পালন? বিজয়ী হয় কি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা? ইসলামের মিশন হলো অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। মুসলিম মাত্রই এ মিশনে আত্মনিয়োগ করে বলেই পবিত্র কোর’আনে তাদেরকে সর্বশ্রষ্ঠ জাতি বলা হয়েছে। কিন্তু সেটি কি স্রেফ নামায-রোযা পালন ও মসজিদ গড়ার মধ্য দিয়ে সম্ভব? একাজে চাই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি। চাই, তাদের নির্মূলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের সহযোগিতা। এজন্যই জরুরি হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নেয়া। সে লক্ষ্যে মূল লড়াইটি হয় রাজনীতির ময়দানে। এবং সে লড়াইয়ে মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারের সামর্থ্যের বিনিয়োগটি দেখতে চান। রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে থেকে অলীক স্বপ্ন দেখা যায়, কিন্তু তাতে ইসলামের বিজয় আসে না। এমন স্বপ্ন নিয়ে এককালে সুফী দরবেশগণ খানকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং রাজনীতিতে অনীহা ও নির্লিপ্ততা বাড়িয়েছিলেন সাধারণ মুসলিমদের। আর তাতে একচ্ছত্র আধিপত্য ও দুর্বৃত্তি বেড়েছিল স্বৈরাচারি রাজা-বাদশাহদের। স্বৈরাচারি শাসকগণ তো সেটিই চায়। তারা চায় রাজনীতির ময়দান প্রতিদ্বন্দীমুক্ত হোক। রাজনীতির ময়দান থেকে প্রতিদ্বন্দীদের দূরে সরাতেই ব্রিটিশ সরকার ভারতে আলীয়া মাদ্রাসা নির্মাণ করেছিল। আজও মুসলিম দেশগুলিতে একই ঘটনা ঘটছে। ধর্মপালন ও ধর্মীয় শিক্ষার নামে আজও একই ভাবে মুসলিমদের মাঝে রাজনীতিতে অনীহা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে তার কুফলও ফলছে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অনীহার কারণে বাংলাদেশের মত একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠার কাজ যে শুধু ব্যহত হচ্ছে -তা নয়, বরং তাতে বাড়ছে স্বৈরাচারি শাসকগোষ্ঠির দুর্বৃত্তি এবং ইসলামের পরাজয়।
সুবিধাবাদীদের কুতর্ক ও কুকৌশল
ইসলামের ইতিহাসে যে বিষয়টি অতীত কাল থেকেই সবসময়ই চলে আসছে তা হলো, যেখানেই যুদ্ধ-বিগ্রহ ও আত্মত্যাগের কঠিন পরীক্ষা সেখানেই বিতর্ক খাড়া হয় সেটি এড়ানোর। সেটি নবীজী (সাঃ)’র আমলে যেমন হযেছে তেমনি নবীজী (সাঃ)’র পূর্বেও হয়েছে। এবং আজও হচ্ছে। বদরের যুদ্ধের প্রাক্কালে নবীজী (সাঃ)’র সাথেও তা নিয়ে অনাকাঙ্খিত বিতর্ক করেছিলেন কিছু সাহাবী। সাহাবাদের মধ্যে তখন দুটি ভাগ দেখা দিয়েছিল। একদল চাচ্ছিলেন যুদ্ধকে পরিহার করতে। আরেক দল জিহাদে প্রস্তুত ছিলেন। মহান আল্লাহতায়ালা সে বিভেদটি দেখেছেন এবং সে চিত্রটিও তুলে ধরেছেন সুরা আনফালের প্রথম রুকুতে। পবিত্র কোর’আনে বলা হয়েছে,“এটি এরূপ, তোমার প্রতিপালক যেরূপ ন্যায়ভাব তোমাকে তোমার গৃহ হতে বের করেছিলেন, মু’মিনদের একটি দল সেটি পছন্দ করেনি। সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাওয়ার পরও তারা তোমার সাথে বিতর্ক করেছিল। মনে হচ্ছিল তারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে, আর তারা যেন তা প্রত্যক্ষ করছে। স্মরণ কর! আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, দুই দলের একদল তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে। (অথচ) তোমরা চাচ্ছিলে নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তাধীন হোক। অথচ আল্লাহ চাচ্ছিলেন, তাঁর বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কাফেরদের শিকড় নির্মূল করবেন। এজন্য যে, তিনি সত্যকে সত্য এবং অসত্যকে অসত্য রূপে প্রতিপন্ন করবেন, যদিও অপরাধীগণ এটি পছন্দ করে না। -(সুরা আনফাল, আয়াত ৫ -৮)।
মহান আল্লাহতায়ালা স্রেফ নামায-রোযা-হজ-যাকাতের ন্যায় ইবাদত নিয়ে খুশি নন। ঈমানদারদের থেকে এগুলিই তাঁর একমাত্র চাওয়া-পাওয়া নয়। উপরুক্ত আয়াতগুলিতে তাঁর যে লক্ষ্যটি ঘোষিত হয়েছে তা হলো, ঈমানদারদের দিয়ে তিনি “সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কাফেরদের শিকড় নির্মূল করবেন” এবং “সত্যকে সত্য এবং অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করবেন”। মু’মিনদের উপর প্রকৃত ঈমানী দায়ভারটি তাই মহান আল্লাহতায়ালার সে অভিপ্রাযের সাথে পুরাপুরি সম্পৃক্ত হওয়া। “সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা”, “কাফেরদের শিকড়কে নির্মূল করা” এবং “সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য রূপে প্রতিপন্ন করা”র মিশনটি তাই শুধু মহান আল্লাহতায়ালার মিশন নয়, ঈমানদারদের মিশনও। সাহাবাগণ সেটি বুঝতে ভূল করেননি। ফলে নিজেদের জানমাল দিয়ে সে কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। কোর’আন শিক্ষা এবং নামায-রোযা-হজ-যাকাতের ন্যায় সর্বপ্রকার ইবাদতের মূল লক্ষ্যটি হলো, সে আত্মনিয়োগে ঈমানদারদের সামর্থ্য বাড়ানো। সে সামর্থ্যটি যে ইবাদতে বাড়ে না, বুঝতে হবে সে ইবাদত মেকী। এমন মূল্যহীন মেকী ইবাদতে যারা অভ্যস্থ ছিল তারাই আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের নেতৃত্বে ওহুদের ময়দান থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। এবং বদরের যুদ্ধের প্রাক্কালে যাদের মধ্যে সামান্য গড়িমসি এসেছিল, তাদের সে গড়িমসি মহান আল্লাহতায়ালার কাছে কতটা অপছন্দের ছিল –সেটিই প্রকাশ পেয়েছে পবিত্র কোরআনের উপরুক্ত আয়াতগুলি।
বিভ্রাটটি জ্ঞানের ময়দানে
আজকের সমস্যাগুলি শুধু নিরক্ষর মুসলিমদের নিয়ে নয়। বরং সেটি ডিগ্রিধারী বুদ্ধিজীবী ও আলেমদের নিয়ে। এবং সেটি জ্ঞানের ময়দানে বিকট বিভ্রাটের কারণে। সে বিভ্রাটের কারণে তারা যেমন মহান আল্লাহর কোর’আনী অভিপ্রায় বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তেমনি ব্যর্থ হচ্ছেন সে অভিপ্রায়ের সাথে পুরাপুরি একাত্ম হতে। ফলে সেদিনের মুষ্টিমেয় সাহাবাগণ কাফের-অধ্যুষিত আরবের বুকে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় আনতে সমর্থ হলেও আজকের লক্ষ লক্ষ আলেম ও ইবাদতকারি ব্যর্থ হচ্ছেন এমন কি শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিমের দেশে। এর কারণ, তারা ইসলাম শিখছেন ফিরকাপরস্ত, পীরপরস্ত ও দলপরস্ত আলেমদের থেকে। ফলে তাদের জীবনে আল্লাহপরস্তির বদলে বেড়েছে পীরপরস্তি, ফেরকাপরস্তি ও দলপরস্তি। এখানে আখেরাতের ভাবনার বদলে কাজ করছে ইহকালীন ভাবনা। এটিই হলো আলেমদের সেক্যুলারিজম। এমন সেক্যুলারিজমের প্রভাবে ইহুদী আলেমরা আল্লাহর বানী বিক্রয় করতো। আজও ধর্ম নিয়ে বাণিজ্য বেড়েছে বহু মুসলিম আলেমের মাঝে। তাদের চাকুরির ক্ষেত্র বাড়াতে বহু মাদ্রাসাও নির্মিত হচ্ছে। তারা ওয়াজ করেন অর্থলাভ দেখে। ফলে বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলিতে আওয়ামী লীগের ন্যায় ইসলামের বিপক্ষ শিবিরেও ইসলামের লেবাসধারী আলেমের অভাব হচ্ছে না। তাই শাপলা চত্ত্বরে শেখ হাসিনা বহু শত হিফাজতে ইসলামের কর্মীকে হত্যা করলে কি হবে তাকে “কওমী জননী”র খেতাব দেযা হয়েছে। পবিত্র কোর’আনকে তারা রেখে দিয়েছে তেলাওয়াতের জন্য, সেখান থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য নয়। নিজেদের ওস্তাদ বা শিক্ষকদের মত তাদেরও কাজ হয়েছে নিজ নিজ মজহাব, ফিরকা বা তরিকতকে বিজয়ী করা। ওস্তাদ বা পীরদের অভিপ্রায় কি সেটিই তাদের কাছে বড়, আল্লাহর অভিপ্রায় কি তা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। ফলে মাথাব্যাথা নেই ইসলামী রাষ্ট্র গড়া নিয়েও।
কীরূপে সৃষ্টি হলো জঙ্গি ইসলাম ও মডারেট ইসলামের বিভাজন
বসবাসটি একই স্থানে বা একই ঘরে হলেও সবাই যেমন একই ভাবে দেখে না, তেমনি একই রূপে ভাবে না। দেখা ও ভাবনার সামর্থ্যটি গড়ে উঠে ব্যক্তির ধ্যান-ধারণার মডেল বা প্যারাডাইম অনুযায়ী। ফলে ভিন্নতা গড়ে উঠে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্মকর্মে। কোর’আনী জ্ঞান থেকে যারা দূরে সরেছে এবং যাদের উপর প্রভাব পড়েছে পাশ্চত্যের লিবারেল ধ্যান-ধারণার, তাদের কাছে নবীজী (সাঃ)’র ইসলাম –যাতে রয়েছে জিহাদ, ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা এবং ভাষা ও অঞ্চলের নামে গড়ে উঠা বিভক্তির দেয়ালগুলি ভাঙ্গার লড়াই -সে ইসলাম তাদের কাছে অদ্ভুদ ও অসহ্য লাগে। সে ইসলামকে তারা ৭ম শতাব্দীর ইসলাম বা জঙ্গি ইসলাম বলে পরিত্যাগ করে। নবীজী (সাঃ)’র সে সনাতন ইসলামের বদলে তারা গড়ে তোলে ইসলামের এক ভিন্ন মডেল। এবং সেটিকে তারা নিজেদের চিন্তা-চেতনার মডেল অনুযায়ী গড়ে তোলে। সেটিকে তারা বলে আধুনিক ইসলাম বা মডারেট ইসলাম। অথচ ধ্যান-ধারণার মডেলটি সবার অভিন্ন কোর’আনী মডেল হলে এরূপ জঙ্গি ইসলাম ও মডারেট ইসলামের বিভাজনটি কখনোই দেখা যেত না। নবীজী (সাঃ)’র যুগে এরূপ বিভাজন ছিল না। কারণ, ঈমানদারদের চেতনায় তখন একটি মাত্রই মডেলই কাজ করতো এবং সেটি ছিল পবিত্র কোর’আনের। কিন্তু পরবর্তীতে দূরত্ব বেড়েছে কোর’আনের সাথে এবং ধ্যান-ধারণার অঙ্গণে উদ্ভব ঘটেছে নানারূপ মডেলের।
কোরআন বুঝার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা নিয়ে খেদোক্তি করেছেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন এবং দারুল উলুম দেওবন্দর প্রধান শায়খুল হাদীস জনাব মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাহেব। ভারতের তৎকালীন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসক প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কালে তাঁকে গ্রেফতার করে ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ মাল্টাতে রেখেছিল। মূক্তি পেয়ে তিনি দেওবন্দে আলেমদের এক সম্মেলন ডেকেছিলেন। সেখানে বলেছিলেন, “মুসলিমদের ব্যর্থতার কারণ নিয়ে কয়েক বছর ধরে আমি বহু চিন্তাভাবনা করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে মুসলিমদের ব্যর্থতার কারণ দু’টি। এক). কোরআন শিক্ষায় গুরুত্ব না দেয়া। দুই. মুসলিমদের মাঝে অনৈক্য। আমরা বেশী জোর দিয়েছি হাদীস শিক্ষায়। এবং সেটিও অন্য মজহাবের তুলনায় হানাফী মজহাবকে শ্রেষ্ঠ প্রমানিত করতে। আমরা কোর’আন বুঝায় তত জোর দেয়নি।” কোর’আন থেকে দূরে সরার কারণেই নবীজী (সাঃ)’র ইসলাম –যাতে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র, খেলাফত, জিহাদ, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিমদের মাঝে প্যান-ইসলামিক ঐক্য, তা গণ্য হচ্ছে জঙ্গি ইসলাম রূপে। এভাবে মুসলিম দেশে অপরিচিত রয়ে গেছে কোর’আনের ইসলাম।
কোর’আনের আনুগত্য কি জঙ্গি ইসলাম?
ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু এ নয়, মুখে কালেমা পাক পাঠ করা হবে, মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস ঘোষিত হবে এবং পালিত হবে নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত। এর বাইরে ঈমানদারকে আরো বহু দূর যেতে হয়। চুক্তিবদ্ধ হতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার সাথে। সে চুক্তির ঘোষণাটি এসেছে এভাবে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মোমেনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল, এই মূল্যে যে তাদের জন্য নির্ধারিত থাকবে জান্নাত। তাঁরা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়, অতঃপর (আল্লাহর শত্রুদেরকে) হত্যা করে ও নিজেরাও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে ঘোষিত এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে তিনি অবিচল। এবং আল্লাহর চেয়ে আর কে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর যা তোমরা করছো তাঁর সাথে। আর এটিই হলো মহা সাফল্য।” –(সুরা তাওবাহ, আয়াত ১১১)। অর্থাৎ এ চুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার উপরই ঈমানদারের মহা-সাফল্য। আর সে সাফল্যই মোমেনের জীবনে মহা-আনন্দ আনে।
উপরুক্ত আয়াতে যেমন জিহাদের কথা আছে, তেমনি আছে জান ও মালের কোরবানীর কথা। আছে সে জিহাদে শত্রুকে হত্যা করা এবং নিজে নিহত হওয়ার কথা। যারা জিহাদ-বিমুখ তারা মহান আল্লাহতায়ালার এ ঘোষণার মাঝে জঙ্গিবাদের গন্ধ পাবে -সেটিই স্বাভাবিক। কারণ, যার মধ্যে যুদ্ধ থাকে সেটিই তো জঙ্গি। অথচ উপরুক্ত আয়াতের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে ইসলামের প্রকৃত রূপ; এবং সেটি মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব বর্ণনায়। প্রশ্ন হলো, কোর’আনের এ আয়াতগুলি মেনে চলা কি উগ্র ইসলাম? তবে স্বাভাবিক ইসলাম কি? সেটি কি তবে উক্ত আয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ? সেরূপ বিদ্রোহ তো কাফের বানায়। পবিত্র কোর’আনে এরূপ আয়াত তো বহু। নিছক রাজনৈতিক স্বার্থে ইসলামের শত্রু শক্তির হাতে অধিকৃত দেশগুলিতে পবিত্র কোর’আনের এ আয়াতগুলি পড়ানো হয়না। তাদের ভয়, এতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদ শুরু হবে। ফলে ছাত্রদের দৃষ্টি থেকে এরূপ আয়াতগুলি আড়াল করা হয় স্রেফ নিজেদের আবিস্কৃত মডারেট ইসলামকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে। প্রশ্ন হলো, যুদ্ধ থাকলেই যদি তাকে জঙ্গি বলা জায়েজ হয় তবে বিশ্বের সবচেয়ে জঙ্গিধর্ম হলো খৃষ্টান ধর্ম। কারণ এ ধর্মের অনুসারি ব্রিটিশ, এ্যামেরিকান, ফরাসী ও স্প্যানিশগণ বহুশত যুদ্ধ করেছে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার দেশগুলিতে। তাছাড়া এরা যেমন অতীতে ক্রসেডের জন্ম দিয়েছে তেমনি দুটি বিশ্বযুদ্ধেরও জন্ম দিয়েছে। এবং বিগত শত বছরে সবচেয়ে বেশী যুদ্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অতএব দেশটিকে অবশ্যই জঙ্গি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলা উচিত। জঙ্গি ধর্ম তো হিন্দু ধর্মও। কারণ হিন্দু ধর্মের অনুসারিগণ যেমন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বারা বার যুদ্ধ করেছে তেমনি অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে কাশ্মিরে।
পবিত্র কোরআন এজন্য নাযিল হয়নি যে মানুষ তা শুধু সুললিত কন্ঠে বার বার পাঠ করবে এবং মুখস্থ করবে। বরং দায়িত্ব হলো, কোর’আনের শিক্ষাকে যেমন নিজেরা পালন করবে তেমনি সকল ধর্মের উপর সেটিকে বিজয়ী করতেও অগ্রণী হবে। একাজে বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপোষহীনও হবে। সেটি যে শুধু কোর’আনের ঘোষণা -তা নয়, অনুরূপ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলিতেও। ইসলামে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো রাষ্ট্রীয় বিপ্লব ও অন্যান্য ধর্মের উপর ইসলামের বিজয়। কারণ, ইসলামে অন্য ধর্মের সত্যতা ও বৈধতা নাই। এগুলি মানুষকে জাহান্নামে নেয়ার হাতিয়ার। সেগুলিকে বৈধতা দেয়ার অর্থ মানুষকে জাহান্নামে নেয়ার শয়তানী প্রজেক্টকে সহায়তা দেয়া। তাই মানব কল্যাণে অতি জরুরী হলো ইসলামের বিজয়। এবং এখানে আপোষ চলে না। মহান আল্লাহতায়ালা তো সেটিই চান। মুসলিম রাষ্ট্রে অন্য ধর্মগুলি বেঁচে থাকে ইসলামের বিজয় মেনে নিয়েই। পবিত্র কোরআনে সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে, “তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, অপর দ্বীনের উপর সেটিকে বিজয়ী করার জন্য। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।” অপর দিকে ঈমানদারদের গুণাবলী নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের বর্ণনাটি হলো, “মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবে। তাদের লক্ষণ, তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার প্রভাব পরিস্ফুট থাকবে, তাদের এরূপ বর্ণনা যেমন তাওরাতে রয়েছে, তেমনি রয়েছে ইঞ্জিলেও।”–(সুরা ফাতহ, আয়াত ২৮ -২৯)। ফলে কোথায় সে আপোষমুখিতার নসিহত? কোথায় সে মডারেশন?
যারা মডারেট ইসলামের প্রবক্তা তাদের কাছে জিহাদ হলো জঙ্গি ইসলামের প্রতীক। অথচ জিহাদই যে পরকালে জাহান্নামের আগুণ থেকে মূক্তি দেয় সে ঘোষনাটি এসেছে খোদ মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। বলা হয়েছে “হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব যা তোমাদেরকে (জাহান্নামের) যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? আর তা হলো, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝ। -(সুরা সাফ, আয়াত ১০-১১)। বিষয়টি সুস্পষ্ট। মু’মিনের আখেরাতে মূক্তির পথটি নিছক কালেমা পাঠ, নামায-রোযা ও হজ-যাকাত পালনের মাঝে রাখা হয়নি। সেটি রাখা হয়েছে জিহাদে। আর যেখানে জিহাদ থাকে, সেখানে সে জিহাদের বরকতে ইসলামী রাষ্ট্রও গড়ে উঠে। তখন সে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা ঘটে শরিয়তের। তাই যে ভূমিতে ইসলামী রাষ্ট্র নাই এবং ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদ নাই -বুঝতে হবে সে সমাজে ইসলামের সঠিক উপলব্ধি এবং প্রাকটিসও নাই। এমন দেশে মুসলিমদের জীবন কাটে ইসলাম ছাড়াই।
নিষ্ক্রীয়তা ও নির্লিপ্ততা কি জায়েজ?
ঈমানদারের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী, সমাজবাদী বা সেক্যুলার রাজনীতিকে বিজয়ী করতে ভোটদান, অর্থদান, শ্রমদান বা রক্তদান অচিন্তনীয়। সেটি কীরূপ হবে সেটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহতায়ালা। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সে সুস্পষ্ট ঘোষণাটি নবী করীম (সাঃ)’কে শুনানো হয়েছে এভাবে,“তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করে দিয়েছেন, যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মুসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। -(সুরা আশ-শুরা, আয়াত ১৩)। নানা যুগে ও নানা ভূখণ্ডে প্রেরীত নবী-রাসূলদের মাঝে বহুবিধ ভিন্নতা সত্ত্বেও যে অভিন্ন উদ্দেশ্যটি সর্বযুগে ছিল সেটি হলো দ্বীনের প্রতিষ্ঠা। শরিয়তে ভিন্নতা থাকলেও অভিন্ন ছিল দ্বীনের ধারণা। দ্বীনের সে মূল কথাটি হলো, আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য। প্রতিটি বিদ্রোহ বা অবাধ্যতা গণ্য হতো কুফরি রূপে। এমন কুফরির পথ বেছে নেয়ার কারণে শুধু যে ইবলিস ও কাফেরগণ অভিশপ্ত হচ্ছে তা নয়, অভিশপ্ত হচ্ছে মুসলিম নামধারি বিদ্রোহীরাও। কারণ নিছক নামে মুসলিম হলে সে অভিসম্পাত থেকে বাঁচা যায় না।
প্রশ্ন হলো দ্বীন কি? শরিয়তই বা কি? দ্বীন হলো মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া জীবন-বিধান। যারা সে বিধানের পূর্ণ আনুগত্য করে তাদেরকে বলা হয় মুসলিম। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সে চুড়ান্ত বিধানটি হলো পবিত্র কোরআন। আর শরিয়ত হলো কোর’আনে ঘোষিত আইন-কানূন। রাজনীতির অঙ্গণে কোরআনের বিধানটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার পূর্ণ সার্বভৌমত্ব, এ ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করাটি শিরক। আল্লাহতায়ালার দ্বীন ও তাঁর শরিয়ত পালনের সর্বশেষ উদাহরণ রেখেছেন শেষ নবী হযরত মহম্মদ (সাঃ)। সেটিই সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ। নবীজী (সাঃ)’র সে প্রক্রিয়ায় যেমন দাওয়াত ছিল, তেমনি জানমাল নিয়ে জিহাদ এবং সে জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাও ছিল। এটিই হলো নবীজী (সাঃ)র শ্রেষ্ঠ সূন্নত –যা কল্যাণ আনে কোটি কোটি মানুষের জীবনে। ঈমানদার হওয়ার দায়বদ্ধতা হলো, সে সূন্নতের অনুসরণ। মুসলমানদের মাঝে সে সূন্নতের কতটা অনুসরণ হচ্ছে সেটি বুঝা যায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং সে রাষ্ট্রে শরিয়তের প্রয়োগে সফলতা ও ব্যর্থতা দেখে। এদিক দিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা শুধু ব্যর্থতাতেই পরিপূর্ণ নয়, বরং মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মকও।
মানদণ্ডটি আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত
কোনটি সত্য এবং কোনটি মিথ্যা, কোনটি ন্যায় এবং কোনটি অন্যায়, কোনটি ধর্ম এবং কোনটি অধর্ম -তা নিয়ে সবার বাছবিচার এক নয়। অশ্লিলতা, ব্যভিচার এবং পর্ণোগ্রাফিও তাই বহু দেশে অপরাধ নয়। এরূপ ভিন্নতা থেকেই জন্ম নিয়েছে নানা ধর্ম, নানা দর্শন ও নানা মতবাদ। প্রতিটি সভ্য-সমাজেই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সত্য-মিথ্যা, ধর্ম-অধর্ম এবং ন্যায়-অন্যায়ের সঠিক মানদণ্ড স্থির করা। এবং সে অনুযায়ী সুষ্ঠ বিচার করে। নইলে সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা আসে না। সভ্যতাও গড়ে উঠে না। তবে কী হবে সে সত্য-মিথ্যা, ধর্ম-অধর্ম ও ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ড? ইসলামে সেটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহতায়ালা। তাঁর দেয়া সে মানদণ্ডটি হলো পবিত্র কোর’আন। এখানে নতুন কিছু আবিস্কারের সুযোগ নেই। আবিস্কার গণ্য হয় বিদয়াত রূপে এবং তা হাজির করে জাহান্নামে। ঈমানদার হওয়ার দায়বদ্ধতা হলো, সে কোর’আনী মানদণ্ডের পূর্ণ অনুসরণ। মুসলিমকে তাই শুধু মুর্তিপুজা ও নাস্তিকতার গোনাহ থেকে বাঁচলে চলে না, আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত বিধানের অবাধ্যতা থেকেও বাঁচতে হয়।
নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতের বিধানগুলি তো ব্যক্তিগত ভাবেই পালন করা যায়। কিন্তু অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার ন্যায় শরিয়তের বহু বিধান পালনে অপরিহার্য হয়ে পড়ে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো। এজন্যই সচেষ্ট হতে হয় এবং প্রয়োজনে কোরবানী পেশ করতে হয় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায়। তেমন এক ঈমানী দায়বদ্ধতা থেকেই জন্ম নেয় মুসলিম জীবনে রাজনীতি। তাই এ রাজনীতিতে ইহজাগতিক মুনাফা লাভের ভাবনা থাকে না, বরং থাকে আল্লাহর কাছে পরকালে জবাবদেহীতার ভয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “..যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচারের ফয়সালা করে না তারা কাফের। -(সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৪৪)। পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছেঃ “…যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচারের ফয়সালা করে না তারা জালেম। -(সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৪৫)। আবার বলা হয়েছে “…যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচারের ফয়সালা করে না তারা ফাসেক তথা পাপী। -(সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৪৭)। তাই শুধু নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত পালন করলেই কাফের, জালেম ও ফাসেক হওয়া থেকে মুক্তি মেলে না। তাকে রাষ্ট্র ও সমাজের বুকে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠাতেও সচেষ্ট হতে হয়। রাষ্ট্রে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ইসলামে এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সেটি বুঝাতে মহান আল্লাহতায়ালা সুরা মায়েদায় উপরুক্ত তিনটি আয়াত একত্রে নাযিল করেছেন। অথচ এভাবে একই সুরায় পরপর তিনটি আয়াত নামায-রোযা বা হজ-যাকাতের গুরুত্ব বোঝাতেও নাযিল হয়নি।
রাষ্ট্র সেক্যুলার বা নাস্তিকদের হাতে গেলে পাল্টে যায় ন্যায়-অন্যায় ও পাপ-পূণ্যের বিচার বোধ। সেক্যুলার সমাজে নারী-পুরুষের ব্যাভিচারও তখন প্রেম রূপে নন্দিত হয়। শত্রুদের অস্ত্র কাঁধে নিয়ে মুসলিম দেশকে ভাঙ্গাও তখন রাজনীতি গণ্য হয়। উলঙ্গতা তখন সংস্কৃতি, পতিতাবৃত্তি তখন পেশা এবং সূদও তখন অর্থনীতি মনে হয়। বাংলাদেশসহ অনেক মুসলিম দেশে তো সেটিই ঘটছে। অথচ শরিয়তের বিচারে এগুলি শুধু জঘন্য পাপই নয়, শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধও। আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠায় যারা অনাগ্রহী তাদের প্রকৃত পরিচয়টি যে কি, সেটিও উক্ত তিনটি আয়াতে সুস্পষ্ট ভাবে বলে দেয়া হয়েছে। একটি মুসলিম রাষ্ট্রের চরিত্র কতটা ইসলামী সে বিচারটি দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা বা মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা গুণে হয় না। সেটি হলে বাংলাদেশে বিখ্যাত ইসলামি রাষ্ট্র হতো। বরং সে বিচারটি হয় সেদেশে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও আল্লাহর শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠা আছে কিনা -সেটি দেখে। তবে আখেরাতে বিচারের কাঠগড়ায় খাড়া করা হবে কোন দেশকে নয়, বরং সে দেশের প্রতিটি নাগরিককে। তখন বিচার হবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে রাষ্ট্রকে গড়ে তোলার কাজে কার কি অবদান ছিল সেটির। ফলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনাগ্রহী ও তা থেকে নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ আছে কি? মডারেট ইসলামের ঢাল কি সেদিন কাজে লাগবে? সেদিন তো মানদণ্ড হবে পবিত্র কোর’আনের ইসলাম। ২২/১১/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018