প্রসঙ্গ স্বাধীনতার সুরক্ষা ও আশু স্বৈরাচার নির্মূল
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on October 21, 2020
- Bangla Articles
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
লগ্ন স্বৈরাচার নির্মূলের
বাংলাদেশ আজ চরম রাজনৈতীক সংকটে।দেশ আজ রক্তাত্ব গৃহযুদ্ধের মুখে। সংকটের কারণ,গদি ছাড়তে রাজী নয় হাসিনা। হাসিনা চায় না,একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক এবং সবাই একই সমতলে দাঁড়িযে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাক। হাসিনার এ কৌশলটি গোপন নয়,দুর্বোধ্যও নয়। হাসিনা চায়,নিজ তদারকিতে নির্বাচন দিয়ে নিজের স্বৈরশাসনের মেয়াদ বৃদ্ধি। সেটি যেমন বিরোধী দল বুঝে। তেমনি বুঝে সাধারণ জনগণও। স্বৈরাচারি সরকারকে যে নির্বাচনে পরাজয় করা যায় না সেটিও জনগণ বুঝে। জনগণ সেটি বুঝেছে স্বৈরাচারি এরশাদের ১১ বছরের শাসন থেকে।এরশাদ নির্বাচন দিলেও সেটি ছিল তার স্বৈরশাসনের মেয়াদ বাড়নোর কৌশল। সমগ্র প্রশাসন ময়দানে নামতো তাকে বিজয়ী করার কাজে। ভোট জালিয়াতি তখন একটি প্রশাসনিক শিল্পে পরিণত হয়েছিল। এরশাদের মত ধিকৃত দুর্বৃত্তকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র রাজপথেই। হাসিনার বিরুদ্ধেও বিকল্প পথ নাই। তাকেও পরাজিত করতে হবে রাজপথেই।
র্যাব ও পুলিশের গুলিতে চারিদিকে নিয়মিত লাশ পড়ছে। যখন নিরীহ জনগণের লাশ পড়া শুরু হয় তখন জনগণ কি বসে বসে আঙুল চুষবে? জনগণ এখন রাস্তায় নেমেছে। ঝড় তো এভাবেই শুরু হয়। প্রচন্ড ঝড়ে প্রথমে গাছের পাতা পড়ে,পরে গাছও পড়া শুরু হয়। জনগণ গত এক যুগে ধরে আওয়ামী দুঃশাসন অতি কষ্ট করে সইছে। এখন তারা মুক্তির দিন গুনছে। হাসিনার কুরসী ইতিমধ্যেই হেলে পড়েছে। এখন সে হেলা পড়া কুরসির গায়ে শক্ত ধাক্কা দিলে সে ধাক্কা সহ্যের সামর্থ শেখ হাসিনার নেই। জনগণ প্রচন্ড ভাবে আহত।। সেটি যেমন দৈহীক ও অর্থনৈতীক ভাবে তেমনি মানসিক ভাবে। এ অবস্থা থেকে তারা ত্বরিৎ মুক্তি চায়। কিন্তু সরকার দেশের আহত জনগণকে সহজে মুক্তি দিতে রাজী নয়। বরং জনগণের ক্ষতে তারা মরিচ লাগানোর আয়োজন করছে। হাসিনা ও তার সহযোগীদের মনে ঢুকেছে প্রচন্ড জনভীতি। কারণ,জনগণের বিরুদ্ধে তাদের কৃত অপরাধগুলো অন্যরা যা জানে তার চেয়ে বেশী জানে হাসিনা ও তার সহচরেরা। এমন এক জনভীতির কারণেই চোর-ডাকাতেরা দিনের আলোয় রাস্তায় নামে না। স্বৈরাচারি সরকারও তেমনি গদি থেকে নামতে চায় না।
প্রচন্ড জনভীতির কারণেই হাসিনার লক্ষ্য,যে কোন ভাবে হোক নিজের স্বৈর দুঃশাসনকে দীর্ঘায়ীত করা। বিরোধী দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করছে। কিন্তু হাসিনার আস্ফালন, প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেই তিনি নির্বাচন করবেন এবং আবারো নির্বাচিত হবেন। এ অবস্থান থেকে তিনি এক চুল নড়তে রাজি নয়। তিনি বলে থাকেন,দেশের জন্য তিনি তার পিতার ন্যায় সব কিছু ত্যাগ করতে রাজী। কিন্তু এটি যে নিরেট মিথ্যাচার সেটি বুঝতে কি বেশী বিদ্যাবুদ্ধি লাগে? মুজিব কি চাইতেন,জনগণ কি সেটি ভুলে গেছে? ইতিহাস আজও তার সাক্ষি। শেখ মুজিব কোন অবস্থাতেই ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে লাশ হয়ে কবরে যাওয়ার কারণে। আজীবন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মোহই মুজিবকে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম স্বৈরাচারি শাসকে পরিণত করেছিল।স্বৈরাচারি খায়েশ পূরণে তিনি সংবিধানে সংশোধনী এনেছিলেন এবং গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশালী শাসনের প্রবর্তন করেছিলেন। কাটাছেঁড়া করা সে সংবিধানকে মুজিবও পবিত্র বলতো এবং নিজের বাকশালী স্বৈরশাসনকে চালু রাখার স্বার্থে সে সংবিধানের পবিত্রতার দোহাইও দিত। মুজিবের সে ধোকাবাজির পথ ধরেছেন শেখ হাসিনা।হাসিনাও জনসভার বক্তৃতায় বার বার সবকিছু ত্যাগের কথা বললেও প্রধানমন্ত্রীর পদটি কখনোই ছাড়তে রাজী নন। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনটিও তিনি ছাড়তে রাজী হননি। বরং সেটি নিজ নামে লিখে নেয়ার ষড়যন্ত্রও করেছিলেন। জনগণ কি সেসব ভূলে গেছে? নির্বাচনী ফলাফলের উপর দখলদারি বজায় রাখার স্বার্থেই তিনি রিলিফখোর এক বিচারপতিকে দিয়ে পছন্দমত রায় আদায় করে নিয়েছেন এবং সে রায়ের দোহাই দিয়ে সংবিধানে ১৫তম সংশোধন এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে বিলুপ্ত করেছেন। এখন সে কাটাছেঁড়া সংবিধানকে আবার পবিত্র বলছেন। সেটি যে শুধু নিজের ক্ষমতায় থাকাটি নিরাপদ করার স্বার্থে তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে?
এ সংকট হাসিনার সৃষ্টি
বাংলাদেশের আজকের সংকট মূলত হাসিনার সৃষ্টি।এ সংকট সৃষ্টির জন্যই তিনি সংবিধানে ১৫তম সংশোধনী এনেছেন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করেছেন।অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এক আন্দোলনের ফসল হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। খোদ হাসিনা এর জন্য ১৭৩ দিনের হরতাল দিয়েছেন। সে আন্দোলনের সাথে শরিক ছিল তার নেতৃত্বধীন ১৪ দল। এমন একটি সর্বদল স্বীকৃত প্রথাকে বিলুপ্ত করলে দেশবাসী যে পুনরায় আন্দোলনে নামবে সেটি কি তিনি কি জানতেন না? আর না জানলে এতো অল্প বুদ্ধি ও দুরৃষ্টি নিয়ে তিনি ১৬ কোটি মানুষের দেশে রাজনীতি করেন কি করে? সংবিধানে ১৫তম সংশোধনী এনে যে ভাবে তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিলুপ্তি করা হলো সেটি যে স্রেফ হাসিনার স্বৈরাচারি শাসনকে দীর্ঘায়ীত করার ষড়যন্ত্র সেটি কি জনগণ বুঝে না?
অতিশয় বেওকুফ স্বৈরাচারি শাসকেরাও নিজেদেরকে বুদ্ধিমান মনে করে। এবং বোকা মনে করে জনগণকে। তাদের ধারণা,সংবিধানকে পবিত্র ও তার বিধানকে অলংঘনীয় বললে জনগণ মাথা নত করে সেটি মেনে নিবে। কিন্তু জনগণ তো জানে,বাংলাদেশের সংবিধানকে সবচেয়ে নোংরা ও পদদলিত করেছে শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিব। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মতামত প্রকাশ করা, দল করা ও দলের নামে সভা-সমিতি করা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব শুধু দেশ শাসন করা নয়,জনগণের সে মৌলিক অধিকারটিকে পাহারা দেয়া। সংবিধানের ইজ্জত তো এভাবেই রক্ষা পায়। কিন্তু মুজিব বা হাসিনা –এ দুজনের কেউ কি জনগণকে সে মৌল অধিকারটি দিয়েছে? বাংলাদেশের মাটিতে মুজিব কোন বিরোধী দলকেই বরদাশত করেননি। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মুজিব জেলে তুলেছেন। বন্দী সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার পর পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার” বলে উল্লাসও করেছেন। তার আমলে দল ছিল মাত্র একটিই,সেটি ছিল মুজিবের নিজ দল বাকশাল। সকল বিরোধী দলীয় পত্রিকাকে তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন। মুজিবের কন্যা হাসিনাও পিতার সে স্বৈরাচারি পথ ধরেছেন। হাসিনা নিষিদ্ধ করেছেন “আমার দেশ”। বন্ধ করে দিয়েছেন দিগন্ত টিভি ও ইসলাম টিভি। বহু সাংবাদিক তার আমলে যেমন নিহত হয়েছেন তেমনি কারারুদ্ধও হয়েছেন। মুজিবের আমলে ইসলামি পুস্তকের প্রকাশনা ছিল অপরাধ। সেটি হাসিনার আমলেও। হাসিনা তো গৃহে গৃহে ইসলামি বই-পুস্তক বিশেষ করে জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করতে র্যাব ও পুলিশ নামিয়েছে। শেখ মুজিব যেমন কোন ইসলামি দলকে রাজনীতিতে নামতে দেননি,হাসিনা তেমনি ময়দানে নামতে দিচ্ছে না জামায়াতে ইসলামি, ইসলামি ছাত্র শিবির,হেফাজতে ইসলাম,হিযবুত তাহরিরের ন্যায় ইসলামি দলগুলোকে। এসব দলের হাজার হাজার কর্মীদের হাসিনা গ্রেফতার করে বিনা বিচারে বছরের পর আটক রেখেছে।সংবিধান অবমাননাকারি এমন এক নেত্রী যখন সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষার বাহানাটি খাড়া করে তখন কি জনগণ সেটি মেনে নেয়? এটি যে নিছক ধোকাবাজি সেটি বুঝতে কি জনগণ ভূল করে? পৌত্তলিকতার ন্যায় আদিম অজ্ঞতাকে বাঁচিয়ে রাখতে পুরোহিতগণ নিজেদের হাতে গড়া মাটির মুর্তিগুলোকেও পবিত্র ও পুঁজনীয় বলে আখ্যায়ীত করে। তেমনি দশা হাসিনা বা মুজিবের ন্যায় স্বৈরাচারি শাসকদেরও। নিজেদের স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়ীত করার গরজে নিজেদের দ্বারা পদদলিত সংবিধানকেও তারা পব্ত্রি বলে।
যে অত্যাসন্ন বিপদ হাসিনার
জনগণ আশা করেছিল, বাংলাদেশে তারা গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচবার সুযোগ পাবে। কিন্তু সে অধিকার কেড়ে নিয়েছিল শেখ মুজিব। কেড়ে নিয়েছে হাসিনা। দীর্ঘদিনের আশাটি হঠাৎ মাঠে মারা পড়লে গভীর হতাশা নেমে আসে। সে হতাশায় মানুষ তখন চরমপন্থা গ্রহণ করে। অনেকে আত্মহত্যাও করে। অনেকে প্রচন্ড প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠে। রাজনীতিবিদদের কাজ তো জনগণের আশা পূরণের পথ দেখানো,সেটিকে হত্যা করা নয়। অথচ শেখ হাসিনা তার পিতার ন্যায় জনগণের মনের সে স্পর্শকাতর ক্ষেত্রটিতেই হানা দিয়েছেন। মানুষকে আশাহত করে মুজিবও বাঁচেনি। মুজিব বাংলার মানুষের স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতি করেছেন,কিন্তু কখনোই সেগুলি পূরণ হতে দেননি। তিনি আট আনা সের চাউল খাওয়ানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন,স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন গণতন্ত্রের ও সোনার বাংলার। কিন্তু ডেকে এনেছেন ভারতের গোলামীর অভিশাপ। উপহার দিয়েছেন নির্মম দুর্ভিক্ষ। গণতন্ত্রের বদলে দিয়েছেন নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার। মুজিবের সর্বশেষ অপরাধটি হলো,সরকার পরিবর্তনের সকল শান্তিপূর্ণ পথকে তিনি রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তার নিজের জন্য একটি মাত্র পথই খোলা রেখেছিলেন এবং সেটি ছিল সহিংস পথে কবরে যাওয়ার পথ। অবশেষে সে পথেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
মুজিবের অন্ধ অনুসারি হাসিনাও তার পিতার সে স্বৈরাচারি পথটিই ধরেছেন। তিনি আঘাত হেনে চলেছেন জনগণের আশার ভূবনে। জনগণের এতদিনের লালিত আশাকে চুরমার করার চেষ্ঠা হওয়াতে জনগণও যে অতিশয় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে তার আলামত ইতিমধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। এতে আঘাত পড়বে যে শুধু শেখ হাসিনার সরকারের উপর তা নয়,বরং হামলা হবে তার সমর্থকদের ঘরবাড়ি,ব্যাবসা-বাণিজ্য ও পত্র-পত্রিকার উপরও। কারণ রাজার গায়ে হাত পড়ার আগে তো ময়দানে লাশ পড়ে তার অনুগত সেপাইদের। সরকার বুঝতে ভূল করছে যে,বিদায়ী সরকারের পক্ষে কিছু বেওকুফ ছাড়া কোন বুদ্ধিমান সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশ লাঠি ধরে না। তখন তারা সরকারের স্বার্থ ছেড়ে নিজেদের স্বার্থ দেখে। তারা জানে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরা কোটি কোটি টাকা কা্মাই করে নিয়েছে। সে অর্থ নিয়ে তারা অন্যদেশে রাজার হালে থাকতে পারবে। কিন্তু সরকারি কর্মচারিদের তো নিজেদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচতে হবে বাংলাদেশে। চাকুরি করতে হবে জনগণের চোখের সামনে। বিদায়ী সরকারের পক্ষে লাঠি ধরার কারণে তাদের চাকুরিতে যে হাত পড়বে সেটিও তারা জানে। এমন একটি স্বার্থ চেতনার কারণেও সরকারি কর্মচারিদের পক্ষ থেকে শুরু হয় বিদায়ী সরকার প্রতি সক্রিয় অসহযোগিতা। সে অসহযোগিতার কারণেই লিবিয়ার গাদ্দাফী,আফগানিস্তানের নজিবুল্লাহ বা রোমানিয়ার চেশস্কির ন্যায় দুর্বৃত্ত সরকারেরা পালানোরও রাস্তা পায়নি। ভিযেতনাম থেকে মার্কিনীদের পালাতে হয়েছে দূতাবাসের ছাদের উপর থেকে হেলিকপ্টার যোগে। বুদ্ধিমান স্বৈরাচারিরা তাই ইরানের শাহের মত আগে ভাগে দেশ ছাড়ে। এরূপ এক ক্রান্তিলগ্নে যারা হাসিনা সরকারের পক্ষে লাঠি ধরবে ও প্রতিবাদী নাগরিকদের হত্যা করবে তারা মূলত কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন কোন সরকারি কর্মচারি নয়,দেশপ্রেমিকও নয়। বরং সরকারি কর্মচারির পোষাকে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বা শত্রুদেশের এজেন্ট।
বিপদ বিদেশী ষড়যন্ত্রের
বাংলাদেশে যতই রাজনৈতীক সংকট ঘনিভূত হচ্ছে ততই বাড়ছে বিদেশী ষড়যন্ত্র। এখন বিদেশীরা ব্যস্ত নিজেদের ঘরে ফসল তোলায়। তারা চায় তাদের কাঙ্খিত গোলাম ব্যক্তিটিকে ক্ষমতায় রাখতে। সে লক্ষ্যেই তাদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। ভারত চায়, নির্বাচিত সরকারের অধীনে অর্থাৎ হাসিনার অধীনে নির্বাচন। অতীতে কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা গল্প ফেঁদেছিল,বিলেতে অবস্থানরত বিএনপি নেতা জনাব তারেক জিয়া নাকি পাকিস্তানের আইএসআইয়ের দ্বারা পরিবেষ্ঠিত। ভারত সরকার নাকি তা নিয়ে বড়ই চিন্তিত। প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদ যে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র’য়ের এজেন্টদের দ্বারা প্লাবিত -সে খবরটি কি আনন্দবাজারের জানে না? ভারতের দুশ্চিন্তা,হাসিনার পতন হলে বাংলাদেশ ইসলামপন্থিদের ঘাটিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশ শতকরা ৯১% ভাগ মুসলমানের দেশ। আর মুসলমান থাকলে ইসলাম থাকবে তাতে ভারতের আপত্তি কেন? ভারতে যদি মৌলবাদি বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে তবে ইসলামি মৌলবাদীরা বাংলাদেশে কেন ক্ষমতায় আসবে না?
ভারতীয় নেতাদের ইসলামভীতি এবং সে সাথে আইএসআই ভীতি এতটাই প্রবল যে বাংলাদেশের বুকে ইসলামি দলের কর্মী বা আওয়ামী লীগ বিরোধ কোন নেতাকে ভারতীয় নেতারা আইএসআইয়ের লোক ভিন্ন অন্য কিছু ভাবতে পারে না। এমন কি সেটি ভারতের অভ্যন্তরে বসবাসরত মুসলমানদের বেলায়ও। কিছুকাল আগে মোজাফফর নগরসহ উত্তর প্রদেশের বহু জেলায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার মুসলিম পরিবার এখনও নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরতে পারিনি। কিন্তু প্রতিবারের ন্যায় ভারত সরকার সে এলাকায় মুসলিম নিধনকারি কোন অপরাধিকেই খুঁজে পায়নি। যেন এত বড় হত্যাকান্ড কোন স্থানীয় অপরাধি ছাড়াই সংঘটিত হয়েছে। তবে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি অপরাধি খুঁজে পেয়েছেন,এবং সেটি ভারতে নয় বরং ভারতের বাইরে। তার মতে সে অপরাধিটি হলো পকিস্তানি আইএসআই।। রাহুল গান্ধি এক সভায় বলেছিলেন,আইএসআই’য়ের লোক মোজাফ্ফর নগরের মুসলিম পরিবারের সাথে যোগযোগ রেখেছিল। লক্ষণীয় হলো, অপরাধী তখনও খুঁজে পায়নি যখন দিন-দুপুরে লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখের সামনে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলো। এই হলো ভারতীয় মানস। প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ হলো বাঘ-ভালুকের ন্যায় হিংস্র জীবদের স্বভাবটি বুঝা। তেমনি প্রতিটি বাংলাদেশীর জন্য ফরজ হলো ভারতের হিংস্র আগ্রাসী চরিত্রটি বুঝা। কিন্তু মুজিবের ন্যায় হাসিনার কাজ হলো ভারতের সে হিংস্র ও ধুর্ত চরিত্রকে আড়াল করা। তাই সেটি যেমন ১৯৭১’য়ে দেখা গেছে, এখনো সেটি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী বিদেশী শক্তিগুলি ২০১১ সালে আওয়ামী লীগকে একটি সাঁজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এনেছিল। সে বিদেশীদের মধ্যে ছিল ভারত,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেন। এরাই যেন বাংলাদেশের কিং মেকার, বাংলাদেশের জনগণ নয়। তারা যে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিবে তার কারণটি সুস্পষ্ট। আওয়ামী লীগ ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর বর্বরতার মধ্য দিয়ে বিদেশীদের কাছে প্রমাণিত করেছে রক্তেমাংসে বাংলাদেশের হলেও চিন্তা-চেতনায় তারা তাদেরই লোক।এ বিদেশী কোয়ালিশনটিও চায়,যে কোন মূল্যে বাংলাদেশে ইসলামের জাগরন প্রতিহত করা।সেটি গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে হলেও।এসব ইসলাম দুষমন সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে গণতন্ত্রের মূল্য নাই্। তাই মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসীকে হটাতে সামরিক জান্তাদের সমর্থণ দিতে তাদের বিবেকে দংশন হয়নি। তাদের একই রূপ নীতি দেখা গেছে ইরানে,আলজিরিয়া ও ফিলিস্তিনে। ইরানে স্বৈরাচারি শাহের অপসারণ যেমন তাদের পছন্দ হয়নি,তেমনি আলজিরিয়া ও ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের বিপুল বিজয়ও তাদের পছন্দ হয়নি। বাংলাদেশে ইসলাম রুখতে যাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তারা যুদ্ধ করতে চায় তারা আর কেউ নয়,তারা হলো ইসলামের শত্রুপক্ষ। সেটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। বিদেশের এ দাসগণ ইসলাম-বিরোধী আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনে অংশ নিতে রাজী। এরা বাংলাদেশকে ভারতের একটি প্রদেশ ভিন্ন অন্য কিছু ভাবে না। এদের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে কতটা বিপন্ন সেটি বুঝে উঠা কি এতটাই কঠিন?
আওয়ামী রাজনীতির মূল চরিত্রটি হলো, তারা বিদেশী প্রভু নির্ভর। এবং সেট ভারত-নির্ভর। দেশের রাজনীতিতে বিদেশী প্রভুদের ডেকে আনাই তাদের স্বভাব।একাত্তরে বাংলাদেশের রাজনীতি তাই আর বাংলাদেশে থাকেনি, সেটি চলে যায় দিল্লিতে। এখনো সেটিই চলছে। তাদের রাজনীতিতে তাই যে শুধু গণতন্ত্র বিপন্ন হয় তা নয়,দেশের স্বাধীনতাও বিপন্ন হয়। মুজিব আমলে তো সেটিই হয়েছিল। বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক জনগণের ঘাড়ে এ মুহুর্তে তাই বিশাল দায়ভার। সেটি শুধু জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা নয়,দেশের স্বাধীনতা রক্ষাও। যে গণজাগরণ আজ শুরু হয়েছে,এখন সবার দায়িত্ব হলো সেটিকে চুড়ান্ত বিজয় অবধি অব্যাহত রাখা। লড়াইয়ের এখনই সময়। স্বাধীনতার শত্রু নির্মূলের এখনই মোক্ষম সুযোগ। তবে এ লড়াই শুধু হাসিনার অপসারণ নিয়ে নয়,বরং বিদেশের সেবাদাসদের শিকড় নির্মূল। নইলে তারা বার বার ফিরে আসবে এবং বিপদ বাড়াবে। একাজ শুধু বিএনপি,জামায়াত-শিবির বা হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের নয়,প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের। এটি শুধু রাজনীতির সংগ্রাম নয়,বরং পবিত্র জিহাদ। জোটবদ্ধ শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে এ জিহাদে একতার গুরুত্ব সর্বাধিক। সতর্ক থাকতে হবে,ঘাটে এসে লড়াইয়ের এ তরী যেন ডুবে না যায়।সেটি হলে শত্রু শিবিরে প্রচন্ড উৎসব শুরু হবে এবং ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে বাংলাদেশের বুকে। এতে বহুকালের জন্য বিপন্ন হবে ইসলাম,স্বাধীনতা ও মানবাধিকার। ১ম সংস্করণ ২৭/১০/২০১১; দ্বিতীয় সংস্করণ ২১/১০/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018